Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Memories of Another day

Memories of Another day
While my Parents Pulin babu and Basanti devi were living

Thursday, April 11, 2013

সহবাগ প্রজন্ম আন্দোলনের জন্য সবচেয়ে বড় সমর্থন হবে, ভারতবর্ষে ধর্মান্ধ জাতিয়তার বিরুদ্ধে গণ প্রতিরোধ গড়ে তোলা।ভারতে ধর্মান্ধ হিন্দূ জাতীয়তাবাদের বিরোধিতা করব না, অথচ বাংলাদেশে মৌলবাদী ইসলামি জাতিয়তাবাদের বিরুদ্ধে গলা ফাটাব, সিপিএম তৃণমুল ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক রাজনীতিতে দ্বিধা বিভক্ত পশ্চিমবঙ্গের এই দ্বচারিতার কোনো তুলনা হয় না। পলাশ বিশ্বাস

 সহবাগ প্রজন্ম আন্দোলনের জন্য সবচেয়ে বড় সমর্থন হবে, ভারতবর্ষে ধর্মান্ধ জাতিয়তার বিরুদ্ধে গণ প্রতিরোধ গড়ে তোলাভারতে ধর্মান্ধ হিন্দূ জাতীয়তাবাদের বিরোধিতা করব না, অথচ বাংলাদেশে মৌলবাদী ইসলামি জাতিয়তাবাদের বিরুদ্ধে গলা ফাটাব, সিপিএম তৃণমুল ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক রাজনীতিতে দ্বিধা বিভক্ত পশ্চিমবঙ্গের এই দ্বচারিতার কোনো তুলনা হয় না

পলাশ বিশ্বাস


দেখূনঃ

দেখুনঃ

THE HIMALAYAN VOICE: PALASH BISWAS DISCUSSES AYODHYA RAM MANDIR


Published on 10 Apr 2013

Palash Biswas spoke to us from Kolkota and shared his views on Visho Hindu Parashid's programme from tomorrow ( April 11, 2013) to build Ram Mandir in disputed Ayodhya.


http://www.youtube.com/watch?v=77cZuBunAGk

<iframe width="560" height="315" src="http://www.youtube.com/embed/77cZuBunAGk" frameborder="0" allowfullscreen></iframe>

দেখুনঃ

इस्लामी राष्ट्रवाद और हिन्दू साम्राज्यवाद का विजय अभियान और नरसंहार संस्कृति का शंखनाद

सुनियोजित तरीके से बहुजन आन्दोलन पर संघ परिवार का कब्जा हो गया है

सत्ता दखल की खूनी लड़ाई में आज बंगाल और बांग्लादेश एकाकार है

पलाश विश्वास

http://basantipurtimes.blogspot.in/2013/04/blog-

post_10.html


http://hastakshep.com/?p=31361



হেফাজতের দাবি অনুযায়ী ধর্মদ্রোহিতা রোধ আইন হচ্ছে না বাংলাদেশে
।বাংলাদেশে ধর্মান্ধ ইসলামি জাতিসত্তার প্রবল চাপ সত্বেও গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলন চলছে

কিন্তু ভারতবর্ষে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও সঙ্ঘ পরিবার যে ভাবে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য আবার নূতন করে রামমন্দির আন্দোলন শুরু করছে, বাংলাদেশে ক্ষমতাদখলের লড়াইয়ে মৌলবাদিরা সফল হোক্ না হোক্, বাংলাদেশে এখনো থেকে যাওয়া এক কোটি সংখ্যালঘু হিন্দুদের আর ওখানে থাকা সম্ভব হবে না

তসলিমা নাসরিনের লজ্জা, সালাম আজাদের বাংলাদেশে সংখ্যলঘু উত্পীড়ন, শহরিয়ার কবীর ও অন্যান্যদের লেখায় পরিস্কার 1992 সালে বাবরি বিধ্বংস শুধু বাংলাদেশে নয়,শুধু পাকিস্তানে নয়, বরং পৃথীবীর বিভিন্ন দেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের জন্য কি মহা বিপর্যয়ের কারণ হয়েছিল

ভারতের ধর্মান্ধ হিন্দূ জাতীয়তা বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে প্রচন্ড ধাক্কা দিয়ে ইসলামি জাতীয়তাবাদের হাতই মজবুত করছে

সঙ্ঘ পরিবার ভারতে হিন্দু রাষ্ট্র স্থাপনা কল্পে ভারতের বাইরে সমস্ত হিন্দুদের বলি দিতে পিছপা হবে না, পরিস্কার

আমি বার বার লিখে আসছি জায়নবাদী করপোরেট সাম্রাজ্যবাদ ও হিন্দু ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক বর্ণবিদ্বেষী আধিপাত্যবাদী সাম্রাজ্যবাদ একই মুদ্রার এ পিঠ ও পিঠ

 মনে রাখা দরকার, ভারতকে মুক্ত বাজারে  পরিণত করতে চারটি ঘটনার অবদান সবচেয়ে বেশি- একঃ ভুপাল গ্যাস দুর্ঘটনা, দুইঃ শিখ গণসংহার, তিনঃ রামমন্দির আন্দোলন এবং চার গুজরাত গণসংহার। 

এই চারটি মামলায় মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ অপরাধীদের কোনো সাজা হয় নি ওবং তাঁদের শাস্তির জন্য ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষে কোনো শহবাগ আন্দোলন ঘটিত হয় নি।তাঁরাই আবার প্রধাণমন্ত্রিত্বের মুখ।বাংলার বুকে যে ভাবে বুক বাজিয়ে হিন্দুত্বে মার্কেটিং করে গেলেন শুধু পরিবর্তন ও মমতাব্যানার্জির সমর্থন করে, তার পরে বাঙ্গালির বোধ বুদ্ধি নিয়ে এত গর্ব করার কি কারণ, বুঝি না।   

 ভারতবর্ষের রাজনীতি, সমাজ  ও অর্থ ব্যবস্থায় বহুসংখ্য মানুষ ব্রাত্য, অপাংক্তেয়, অস্পৃশ্য অবস্থানে দরিদ্র সীমার নীচে বসবাস করলে কি হয়, বিজ্ঞান ও টেকনোলজিতে ভারতবর্ষ সত্যিই সুপার পাওয়ার

ভারতবর্ষে মীডিয়া অনেক শক্তিশালী।সোশাল মীডিয়াও কম শক্তিশালী নয়, মোবাইল বিপ্লবের জন্য নেট ইউজাও বাংলাদেশের  তুলনায় দশ গুন বেশি

কিন্তু ভারতবর্ষে নেটইউজার ও সোশাল মীডিয়া, ব্লগাররা হিন্দুত্বের মগজধোলাইয়ে গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য কোনো লড়াই করার অবস্থায় নেই

পৃথীবীর আর কোনো দেশ মাতৃভাষার জন্য এত রক্ত দেয় নি যমন সত্যি, তেমনই এটাও সত্য আর কোনো দেশে গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য এত আত্মবলিদানের নজির নেই

মুক্ত বাজার ভারতবর্ষের ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক রাজনীতি মনুস্মৃতি বর্ণবিদ্বেশী ব্যবস্থা কায়েম রাখার জন্য একজোট। 

ভারতে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন এবং বায়োমেট্রিক নাগরিকত্ভের আধার যোজনা ধর্মাধিকারি প্রণব  মুকার্জি ও সঙ্ঘী লৌহমানব লাল কৃষ্ণ আডবানীর যৌথ উদ্যোগ

যাবতীয় গণবিরোধী আইণ প্রণয়ণে পূনা প্যাক্ট অনুযায়ী নির্বাচিত ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রে প্রতিনিধিরা একজোট

 অবাধ পুঁজি প্রবাহ ও উন্নয়নের নামে চলছে মুলনিবাসী বহুসংখ্য জনগণের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের যুদ্ধ। অশ্বমেধ যজ্ঞে ছারখার কৃষি নির্ভর গ্রামীণ ভারতবর্ষ

চলছে অবাধ বেদখলী উচ্ছেদ অভিযান

চলছে বিল্ডার প্রোমোটার মাফিয়া কালো টাকার রাজত্ব

দুর্নীতির সমস্ত অভিযোগে যেহেতু রাষ্ট্রপতি নিজে জড়িত, তাই কোনও তদন্ত সম্ভব নয়। 

এইজন্য, রামমন্দির আন্দোলনের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ প্রতিরোধ নেই

সীমান্তপার থেকে উদ্বাস্তু সুনামি নিয়ে তাই ভারত সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই

ভারতের হিন্দুবাদী দল বিজেপি ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারলে আবার রামমন্দির প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে। উত্তর প্রদেশে যে বিধানসভা নির্বাচন হতে যাচ্ছে তাতে অংশ নিতে নির্বাচনী ইশতেহারে দলটি বলেছে, ভারতের কোটি কোটি মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অযোধ্যায় বিশাল রামমন্দির নির্মাণ করা হবে।


বিজেপির কাছে রাম হচ্ছে ভারতের গর্ব, অহংকার ও মর্যাদার প্রতীক। তাই রামমন্দির প্রতিষ্ঠার পথে সব অন্তরায় দূর করে এগিয়ে যাবে বিজেপি। তবে অন্যান্য রাজনৈতিক দল সেক্যুলারিযম নির্ভর রাজনীতি ও ভোট ব্যাংক সামলানোর জন্যে এ বিষয়টিকে অস্বীকার করে বলেও অভিযোগ বিজেপির।

উত্তর প্রদেশের রাজধানী লক্ষ্ণৌয়ে শুক্রবার বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে দলের নেতা উমা ভারতি, কলরাজ মিশ্র, মুখতার আব্বাস নাকাভি, নরেন্দ্র সিং, সুদ্ধেন্দ্র কুলকার্নি এবং বিজেপি'র রাজ্য শাখার প্রধান সূর্য প্রতাপ সাহি উপস্থিত ছিলেন।
 
অনুষ্ঠানে রামমন্দির নির্মাণের ব্যাপারে সূর্য প্রতাপ সাহি সাংবাদিকদের জানান, বিজেপি বিশ্বাস করে ভারতে হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠা জনগণের প্রাণের দাবি।

বিজেপি ও আরএসএস'র নেতৃত্বে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় চারশ' বছরের পুরনো বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হয়। উগ্র হিন্দুত্ববাদী দলটি ওই মসজিদের স্থানে রামমন্দির নির্মাণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে।


অযোধ্যা আন্দোলন নিয়ে বিজেপি ক্ষমা চাওয়ার কোন প্রশ্ন নেই, বরং এটা দলের গর্বের বিষয়। বিজেপি ৩৩তম জন্মদিনে দিল্লিতে একথা বললেন লালকৃষ্ণ আদবানি।


গত মাসেই সমাজবাদি পার্টির নেতা মুলায়ম সিং যাদব আদবানির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। শ্রী যাদব বলেন, 'আদবানি সৎ ব্যক্তি তিনি কখনও মিথ্যা কথা বলেন না।' বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা বলেন, 'যখনই মুলায়ম সিং প্রশংসা করেন তখনই সতর্ক থাকতে হয়। তুমি যদি সত্য কথা বল বিশ্ববাসী তোমাকে মেনে নেবে। কোনরকম দ্বিধা করবে না। নিজের মধ্যে কোনরকম দুর্বলতার স্থান দিও না। দরকার হলে এরজন্য আন্দোলন কর।' 


প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালে আদবানি রথযাত্রা করেন। অযোধ্যায় বিতর্কিত জমি যেখানে রামমন্দির ছিল ৬ ডিসেম্বর বিজেপির সমর্থিত হাজারজন কর সেবকেরা তা ধ্বংস করে। এদিন বিজেপির সঙ্গে ছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সমর্থক ও রাষ্ট্রিয় স্বয়ং সেবকের সংঘের সমর্থকেরা।


 সহবাগ প্রজন্ম আন্দোলনের জন্য সবচেয়ে বড় সমর্থন হবে, ভারতবর্ষে ধর্মান্ধ জাতিয়তার বিরুদ্ধে গণ প্রতিরোধ গড়ে তোলাভারতে ধর্মান্ধ হিন্দূ জাতীয়তাবাদের বিরোধিতা করব না, অথচ বাংলাদেশে মৌলবাদী ইসলামি জাতিয়তাবাদের বিরুদ্ধে গলা ফাটাব, সিপিএম তৃণমুল ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক রাজনীতিতে দ্বিধা বিভক্ত পশ্চিমবঙ্গের এই দ্বচারিতার কোনো 
তুলনা হয় না

লক্ষ্য লোকসভা ভোট,
এবার গঙ্গা দিয়ে
ধর্মীয় বিভাজন তৈরির
কর্মসূচী সঙ্ঘের

নিজস্ব প্রতিনিধি

নয়াদিল্লি, ১৩ই আগস্ট— পরবর্তী‍‌ লোকসভা নির্বাচনের বছর দুয়েক বাকি। ওই নির্বাচনকে সামনে রেখে আবার দেশে হিন্দুত্ববাদী কর্মসূচী নিচ্ছে আর এস এস। লক্ষ্য, লোকসভা নির্বাচনকে ঘিরে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের জিগির তুলে কেন্দ্রে বি জে পি-কে ক্ষমতায় আনার ব্যবস্থা করা। প্রায় কুড়ি বছর আগে একই লক্ষ্য নিয়ে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আর এস এস) এবং তার সহযোগীরা। সেই আন্দোলন যে কিছুটা সফল হয়নি, তা নয়। রামমন্দিরের নামে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের ঘাড়ে পা রেখেই প্রথমে ১৩ দিন, তারপর ১৩ মাস এবং শেষে ৫ বছরের জন্য কেন্দ্রে ক্ষমতায় থেকেছে বি জে পি। এবার অবশ্য রামমন্দির নয়, গঙ্গা নদীকে ভিত্তি করে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের ছক কষা হচ্ছে। জানা গেছে, গত মাসে দিল্লির এক ধর্মশালায় বৈঠকে বসে এর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে আর এস এস, বি জে পি এবং তাদের অন্যান্য সহযোগী সংগঠন। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আর এস এস'র শীর্ষস্তরের নেতৃবৃন্দ, বি জে পি-র সভাপতি নীতিন গড়কড়ি সহ ওই দলের প্রথম সারির বেশ কয়েকজন নেতা এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভি এইচ পি) উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের নেতারা। পশ্চিমবঙ্গের আর এস এস এবং বি জে পি নেতাদের মধ্যেও বেশ কয়েকজন বৈঠকে ছিলেন বিশেষ আমন্ত্রিত হিসাবে। আর এস এস পরিকল্পনা করেছে, 'গঙ্গা বাঁচাও' নামে এই আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের দাবিকে সামনে রেখে আদবানি যেমন রথযাত্রা করেছিলেন, এবার তেমনই 'গঙ্গা বাঁচাও যাত্রা'র কর্মসূচী নেওয়া হবে। গঙ্গার গতিপথ ধরেই গঙ্গাসাগর থেকে গঙ্গোত্রী পর্যন্ত তা চলবে। তাই পশ্চিমবঙ্গের আর এস এস এবং বি জে পি নেতাদেরও গত মাসে দিল্লির ওই ধর্মশালার বৈঠকে ডেকে নেওয়া হয়েছিল। বৈঠকে আরো ঠিক করা হয়েছে, সঙ্ঘ পরিবারের নামে নয়, একটি অরাজনৈতিক ব্যানারে এই কর্মসূচী রূপায়ণ করা হবে। বৈঠকে অবশ্য এই যাত্রা শুরুর দিনক্ষণ স্থির হয়নি। তবে বি জে পি সূত্রে জানা গেছে, আগামী দু-তিন মাসের মধ্যেই এর সূচনা হবে। কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেত্রী উমা ভারতীকে এর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে, যাতে শুরু থেকেই এই কর্মসূচী সাম্প্রদায়িক জিগিরকে তীক্ষ্ণ মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে। সঙ্ঘ পরিবারের এই সিদ্ধান্ত থেকে স্পষ্ট, শাসন ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে দেশে হিন্দুত্ববাদী প্রচার ছড়িয়ে দিতে ফের মরিয়া উঠেছে আর এস এস, ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করাই যে সংগঠনের আসল উদ্দেশ্য। আবার সেই সঙ্গে এও পরিষ্কার যে, অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ কর্মসূচীর উপরে সঙ্ঘ পরিবারের সদস্যরা নিজেরাই আর ভরসা রাখছে না।


এই সময়: দু'দিনের সফরে কলকাতায় এসেছেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সোমবারই দিল্লি পাড়ি দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই দু'জনের সাক্ষাত্‍ হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই। কিন্তু মঙ্গলবার বণিকসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে মমতা-সরকারেরই প্রশংসা করলেন তিনি। 

এদিন বক্তৃতা দেওয়ার সময়ে তিনি বলেন যে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সরকার উন্নয়নের পথেই চলছে। মমতাকে 'মু-বোলে বহেন' বলেও সম্ভাষণ করেন মোদী। মমতার কথার রেশ টেনেই মোদী বলেন যে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার অকংগ্রেস রাজ্যগুলির সঙ্গে বৈমাতৃক আচরণ করছে। একই সঙ্গে তিনি বিগত বাম সরকারের সমালোচনা করে বলেন যে ৩২ বছরে বাংলার যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে বহুদিন সময় লাগবে। 

এখন রাজনৈতিক মহলে ঘোরাফেরা করছে একটাই প্রশ্ন--আগামী সাধারণ নির্বাচনে মমতাকে পাশে পাওয়ার জন্যেই কি বিজেপি-র তরফ থেকে মোদীর এই পদক্ষেপ?

নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত! মমতার পাশে নরেন্দ্র মোদী


কলকাতা করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত! মমতার পাশে নরেন্দ্র মোদী
কলকাতায় বক্তব্য পেশ করছেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: অভিজিত মন্ডল, স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট, বাংলানিউজ

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সরকার উন্নয়নের পথেই চলছে। মমতা ব্যানার্জীর সঙ্গে সঙ্গে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের ইঙ্গিত দিয়ে 'মু-বোলে বহেনের'ই পাশে দাঁড়ালেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

দক্ষিণেশ্বরে পুজো সেরে মঙ্গলবার কলকাতায় মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে দিল্লির ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন নরেন্দ্র মোদী।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর সুরে সুর মিলিয়ে তিনি বলেন, দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার অকংগ্রেস রাজ্যগুলির সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে। তাঁর দাবি এনডিএ আমলে পশ্চিমবঙ্গও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ আনতে পারেনি। 

পাশাপাশি তিনি পশ্চিমবঙ্গে বাম জমানার সমালোচনা করে বলেন, "৩২ বছরে বাংলায় যে অবক্ষয় হয়েছে তা মেটাতে বহুদিন সময় লাগবে। মমতা ব্যানার্জীর সরকার দারুণ কাজ করছে।"

গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কলকাতা সফরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখায় ভাষা ও চেতনা সমিতি। এদিন সকালে ধর্মতলা গ্র্যান্ড হোটেলের সামনে কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখান তারা। পুলিশ লাঠি চালিয়ে তাদের হটিয়ে দেয়।
Narendra-Modi-at-Grand
দুদিনের সফরে সোমবার কলকাতায় এসেছেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার সকালে তিনি দক্ষিণেশ্বরে পুজো দেন। এরপর যান বেলুড় মঠে। পুজো দেওয়ার পর ঘুরে দেখেন মঠ। বিকেল কলকাতার মহাজাতি সদনে বিজেপির কর্মীসভায় বক্তৃতা দেন মোদী।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে ভারতের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গুজরাটের মুখামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখে প্রচার শুরু করেছে বিজেপি। নরেন্দ্র মোদী গুজরাট মডেল সামনে রেখে বৈঠক করছেন শিল্পপতিদের সঙ্গে। কলকাতার শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক করতে সোমবার রাতে তিনি শহরে আসছেন। যোগ দেবেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির কর্মী সভায়ও।

এর আগে দিল্লিতে শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠকে মোদী বলেছিলেন গুজরাট মাতার ঋণ শোধ করেছি, এবার মানুষ চাইছে ভারত মাতার ঋণ শোধ করি। এরপরই জল্পনা তুঙ্গে ওঠে, বিজেপি ক্ষমতায় এলে নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবেন নরেন্দ্র মোদী।

তবে নরেন্দ্র মোদীর কলকাতা সফরে দেখা হলো না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর সঙ্গে। মমতা ব্যানার্জীর সোমবার রাতেই দিল্লি গেছেন পশ্চিমবঙ্গের জন্য টাকা আদায়ে যোজনা কমিশনের বৈঠকে যোগ দিতে। রাজনৈতিক মহলের অভিমত, পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন আসন্ন। পশ্চিমবঙ্গে ২৯ শতাংশ মুসলিম ভোটার। সেই ভোট বাচাতেই মোদীর সঙ্গে দেখা করা এড়ালেন মমতা ব্যানার্জী।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৩


মোদীর রাজ্যে নর্মদার জলে অধিকার নেই দলিত শ্রেণির

চিতালিয়া: একেই বোধহয় বলে প্রদীপের নীচের অন্ধকার! রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেশ-বিদেশে 'গুজরাট মডেল'এর সাফল্যের খতিয়ান শুনিয়ে দেশের ভাবী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজের স্থান পাকা করতে চাইছেন, অথচ সেই গুজরাটেরই দুর্ভিক্ষপীড়িত বেশ কয়েকটি অঞ্চলের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন নর্মদা নদীর জল থেকে৷ তাঁদের অপরাধ, তাঁরা দলিত৷ সমাজের নীচু তলার মানুষ হওয়ার জন্যই উচ্চবর্ণের মানুষদের ক্রমাগত অবজ্ঞা ও অন্যায়ের শিকার হন তাঁরা৷ 

সৌরাষ্ট্রের মতো এলাকায় জলকষ্ট কোনও নতুন ঘটনা নয়, তবে তা অনাবৃষ্টির কারণের থেকেও বেশি জাতিগত বিদ্বেষের কারণে৷ অথচ উচ্চবর্ণের অধিকাংশের বাড়িতেই রয়েছে গভীর কুয়ো, ফলে জলের জন্য মোটেই নর্মদার জলের উপর নির্ভরশীল নন তাঁরা৷ কিন্ত্ত অস্পৃশ্যতার দোহাই দিয়ে এই একবিংশ শতাব্দীতেও দলিত মানুষগুলোকে নর্মদার জল নিতে দেন না তাঁরা৷ উচ্চবর্ণের এই মানুষগুলোর বিরুদ্ধে মুখ খুলতেও চান না অসহায় দলিত মানুষগুলো৷ তাঁদের আতঙ্ক, মুখ খুললে উচ্চবর্ণের মানুষরা আবার অত্যাচার চালাবে তাঁদের উপর৷ 

জাসদান তালুকের মতো দুর্ভিক্ষ পীড়িত এলাকায় বৃষ্টির জল ধরে রাখার জন্য বা নদীর জল সংগ্রহের জন্য গভীর নালা কাটা থাকে৷ নদী থেকে মাঝে মাঝে জল ছাড়া হয় সেখানে৷ সরাসরি নদীর জলে তো দূরের কথা, এই নালার জলেও অধিকার নেই দলিত মানুষগুলোর৷ ওই তালুকের এক দলিত পরিবারের অভিযোগ, 'উচ্চবর্ণের মানুষগুলো জাত তুলে কথা বলে অপমান তো করেই, উপরন্ত্ত জল সংগ্রহের জন্য নালার কাছে গেলে খুনের হুমকিও দেওয়া হয়৷' ফলে গ্রীষ্মের প্রখর রোদে মহিলাদের প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে যেতে হয় খাওয়ার জল আনতে৷ 

গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কয়েকদিন আগেই ফিকির এক সম্মেলনে নারী শক্তির প্রশংসার পাশাপাশি তাঁদের আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা ঘোষণা করে প্রচুর হাততালি কুড়িয়েছিলেন৷ অথচ তাঁর রাজ্যেই এই বিতর্কিত চিত্র৷ তাঁর রাজ্যের অসহায় দলিত মহিলারা ডেপুটি কালেক্টরের কাছে গিয়েও সুবিচার পাননি৷ উল্টে উচ্চতর কর্তৃপক্ষের কাছে যাওয়ার জন্য গ্রামে ফেরার পর হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে৷ লাভ বলতে, আগে সন্তাহে এক দিন নদীর জল ছাড়া হতো, যা এখন ছাড়া হয় পাঁচ দিন অন্তর, কিন্ত্ত সেই জলে তো অধিকার নেই দলিত পরিবারের, ফলে তাঁরা যে আঁধারে ছিলেন, রয়ে গিয়েছেন সেই আঁধারেই৷ 

কোঠি গ্রামের অবস্থা আরও খারাপ৷ সেখানের পাইপ লাইনের সঙ্গে নর্মদার জলের কোনও যোগ নেই৷ সেখানকার মানুষকে নির্ভর করতে হয় হ্যান্ড পাম্পের উপর৷ গরম পড়ার কয়েকদিনের মধ্যেই যার জলের নাগাল আর পাওয়া যায় না৷ ডেপুটি কালেক্টর আর এইচ গাদাভি জানান, জাতিবিদ্বেষের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে৷ কিন্ত্ত উচ্চমহলের এই আশ্বাস কি দলিত মানুষগুলোর মুখে তেষ্টার জল জোগাতে পারবে? প্রশ্ন কিন্ত্ত রয়েই যাচ্ছে৷ - সংবাদসংস্থা 

নয়াদিল্লি: সংখ্যালঘু ভোটের প্রশ্নে এ বার প্রকাশ্যে আসছে বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব৷ কিছু দিন আগে পর্যন্তও ২০১৪-এর লোকসভা নির্বাচনে মোদীকে সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিল বিজেপির বিভিন্ন মহল৷ এই প্রসঙ্গে নীতীশ ও অন্যান্য মোদী-বিরোধী নেতাদের এনডিএ ছেড়ে চলে যাওয়ার সম্ভাবনাও ঘনীভূত হচ্ছিল৷ এরই মধ্যে দলীয় এক বৈঠকে বিজেপি নেতা অরুণ জেটলির মন্তব্য বুঝিয়ে দিল মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার প্রশ্নে সংখ্যালঘু ভোট হারানোর জুজু দেখছে বিজেপি৷ 

রবিবারের এই বৈঠকে জেটলি জানান, ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনে যদি সংখ্যালঘুদের ভোট আঞ্চলিক দলগুলির পক্ষে যেত, তবে কংগ্রেস কখনই ক্ষমতায় আসতে পারত না৷ তাঁর কথাতেই পরিষ্কার এ বারের লোকসভা নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের ভোট হারাতে ইচ্ছুক নয় বিজেপি, যদিও এ প্রসঙ্গে এখনই প্রকাশ্যে কোনও কথা বলতে চাইছেন না বিজেপি নেতৃত্ব৷ সেক্ষেত্রে মোদী কখনই নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে প্রমাণ করতে পারেননি৷ সম্প্রতি, বিজেপির অন্দরে লালকৃষ্ণ আদবানিকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার দাবিও ক্রমশ জোরদার হচ্ছে৷ শত্রুঘ্ন সিনহা ও বিজয় গোয়েলের পর বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও আদবানির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন৷ বিজেপি মুখপাত্র মুখতার আব্বাসও জানান, বিজেপির মধ্যে ঐক্য অটুট রয়েছে৷ উন্নয়নের প্রশ্নকে সামনে রেখেই এগিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা৷ 

মতবিরোধের এই প্রশ্নেই বিজেপিকে এক হাত নিয়েছে কংগ্রেস৷ কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি জানান, বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসছে৷ এই ঘটনাই প্রমাণ করে, এই মুহূর্তে ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা নেই তাদের৷ - সংবাদসংস্থা 

নরেন্দ্র মোদী:টু বি অর নট টু বি...

বিষয়টি থেকে: আমেরিকা – হিন্দুস্থান: সম্পর্ক ও সমস্যা সম্বন্ধে রাশিয়ার অবস্থান (47 বর্ণনা গুলি )
 
7.02.2013, 20:13
প্রবন্ধটি ছাপানোর জন্য বন্ধুকে ইমেইল করুন এই পাতাটি ব্লগে যোগ করুন
Гуджарат Нарендра Моди Narendra Modi
Фото: EPA

ভারতের সর্বজনীন লোকসভা নির্বাচনের আরও এক বছরের বেশী সময় দেরী রয়েছে, কিন্তু নির্বাচনের জন্য প্রচারের সবচেয়ে প্রধান ব্যক্তিত্বকে এখনই দেখা যেতে শুরু করেছে. যদিও প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি এখনও তাদের তরফ থেকে প্রধানমন্ত্রী পদ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে নি, তবুও বোঝাই যাচ্ছে যে, এই এবং আগামী বছর চলাকালীণ সময়ে মনোযোগের কেন্দ্রে থাকবেন বর্তমানে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী.

বুধবারে দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন ভাষণ দিতে, তা নিয়ে ছাত্র সমাজের মধ্যে একটা মেরু বিভাজন হয়ে গিয়েছে. প্রেক্ষাগৃহে হাজার খানেক ছাত্র তাঁকে দাঁড়িয়ে উঠে হাততালি দিয়ে সম্বর্ধনা জানিয়েছে আর তার বাইরে শদুয়েক ছাত্র, যারা বিশেষ করে বাম পন্থী ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের সমর্থক, আন্দোলন করেছে. ছাত্ররা তাঁকে দূর হয় যেতে বলেছে. প্রসঙ্গতঃ, তারা এমন ভাবে এই দাবী জানিয়েছে যে, পরে পুলিশ বাধ্য হয়েছে লাঠি চালাতে.

এতটাই পরস্পর বিপরীত নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে ভারতের বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক মহলের মনন. বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রাক্তন প্রধান অশোক সিংহল মোদীকে তো একেবারে জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে তুলনা করেছেন, তিনি বুধবারে বলেছেন: "জওহরলাল নেহরুর পরে ভারতের রাজনীতিতে নরেন্দ্র মোদীই প্রথম ব্যক্তিত্ব, যাঁকে সারা দেশের লোক প্রিয় মনে করেছে".

আর সেই একই দিনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সরকারি মুখপাত্র নিজের টুইটারের ব্লগে লিখেছেন যে, "নরেন্দ্র মোদী নিজের লোকদের সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, গুজরাতের মানুষদেরই রক্ত ঝরিয়েছেন".

নরেন্দ্র মোদী নামটিই নানা রকমের পরস্পর বিপরীত আবেগ ডেকে আনে, এই কথা উল্লেখ করে রাশিয়ার স্ট্র্যাটেজিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ বরিস ভলখোনস্কি বলেছেন:

"এক দিক থেকে গুজরাত মোদীর এগারো বছর ধরে শাসনের সময়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাক লাগানো সাফল্য দেখাতে সক্ষম হয়েছে. আর এই সাফল্যের সম্বন্ধেই মোদী দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিয়েছেন ও আশ্বাস দিয়েছেন, সারা ভারত বর্ষকেই নিজের রাজ্যের মতো সমৃদ্ধ এলাকায় পরিণত করে দেবেন.

সারা বিশ্ব ভারতের দিকে তাকিয়ে রয়েছে একটা বিশাল বাজার মনে করে. কেন? কারণ অন্য সব দেশের লোকরা ভাবেন যে, তাঁরা এখানে সহজেই নিজেদের জিনিষ বেচতে পারবেন. সময়ের দাবী হল যে, ভারতকে উত্পাদনের ক্ষেত্রে নেতৃত্বে পৌঁছে দিতে হবে ও আমাদের জিনিষ দিয়ে বিশ্বের বাজারকেই বোঝাই করতে হবে. – বলেছেন মোদী.

অন্য দিক থেকে মোদীর প্রশাসনের শুরুর সময়েই গুজরাতে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা হয়েছে, যা হাজারেরও বেশী মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়েছে, প্রধানতঃ মুসলিমদের. মোদীকে এই কারণে সরাসরি দাঙ্গায় যুক্ত থাকার অভিযোগ না করা হলেও অন্তত তা উস্কে দেওয়ার জন্য অভিযোগ করা হয়েছে. মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীণ তিনি পারতেন সহজেই এটা দ্রুত থামাতে, কিন্তু তিনি তা করেন নি".

অবশ্যই প্রশ্ন রয়েছে যে, মোদী কি লোকসভা নির্বাচনের পরে প্রধানমন্ত্রী হবেন আর তা নিয়েও অসংখ্য পক্ষে ও বিপক্ষে মত রয়েছে. যদি বিজেপি দল তাঁকে প্রার্থী নির্বাচন করে, যদি দেশের লোক তাঁকে ভোট দেয়... কিন্তু বর্তমানের পরিস্থিতিতে মোদীর জনপ্রিয়তা দেখে দুটি হয়তো ব্যাপারকেই বাস্তব মনে হচ্ছে.

আর তখনই একটা দ্বিতীয় প্রশ্নের উদ্রেক হয়, মোদী নির্বাচিত হলে, তা ভারত শুধু নয়, বরং সমস্ত এলাকা ও সারা বিশ্বের জন্য এটা কি হতে চলেছে? আর এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়াই আগেরটির চেয়ে অনেক কঠিন, এই মনে করে ভলখোনস্কি যোগ করেছেন:

"একদিকে বিজেপি দলকেই মনে করা হয় ইসলাম বিরোধী দল বলে. মোদীকে এই সম্পর্কে একজন প্রধান নেতাই মনে করা হয়. সুতরাং আশা করা যেতেই পারে যে, ভারতের সামাজিক মতামতে একটা মেরু বিভাজন দেখা দেবে ও পাকিস্তানের সঙ্গে এমনিতেই জটিল সম্পর্ক আরও জটিল হবে.

অন্যদিকে বিশ্বে ইসলামের প্রধান শত্রু বলে বিগত বছর গুলিতে নিজের আত্ম পরিচয় ঘোষণা করা সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেই মোদীর জটিল সম্পর্ক রয়েছে. সেখানের পররাষ্ট্র দপ্তর একাধিকবার তাঁকে দেশে আসার ভিসা প্রত্যাখ্যান করেছে ও আপাততঃ, কোন রকমের অবস্থান পরিবর্তন করেছে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে না".

কিন্তু এমনও হতে পারে যে, দেশের ভিতরের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে মোদী নিজের দেওয়া আশ্বাস মতো মনোযোগ দিলে ও দেশের জনতার তাতে সত্যিকারের জীবনের মান উন্নত হতে থাকলে বিদেশের রাজনীতিতে সমস্যা নিয়ে কি আর কেউ মাথা ঘামাবেন? অন্তত পক্ষে বিগত কিছু কাল ধরে মোদীর বাইরের দেশের সঙ্গে সম্পর্ক, বিশেষ করে তাঁর গত বছরের নভেম্বর মাসে চিন সফর, বলে জেয় যে, এশিয়ার অন্য একটি বড় রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে তাঁর কোনও অসুবিধা হয় নি. আর হতে পারে যে, এটাতেই ভবিষ্যতের সাফল্যের জন্য ভিত্তি থাকতে পারে? যদি অবশ্যই উপরোক্ত শর্ত গুলি পালিত হয় ও মোদী সারা ভারতের হিসাবে ক্ষমতায় আসতে পারেন.

মমতার মাটিতে নরেন্দ্র মোদী

কলকাতা: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্বীকার করে জানিয়ে দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে তেমন কোনও লগ্নি প্রস্তাব আসছে না৷ ভিনরাজ্য থেকে তো দূর, এমনকি রাজ্যের কোনও শিল্পপতি বা সংস্থাও বড় বিনিয়োগে সেভাবে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না৷ সেই খরার রাজ্যেই নিজের শিল্পমুখী উন্নয়ন মডেল তুলে ধরতে সোমবার কলকাতায় পা রাখছেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির নরেন্দ্র মোদী৷

শুধু উন্নয়ন মডেল নিয়ে বক্তৃতা করা নয়, মোদীর উদ্দেশ্য গুজরাটের জন্য অন্তত বিনিয়োগের আশ্বাস নিয়ে ফেরা৷ আর তাই এ রাজ্যের শিল্পপতিদের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করবেন তিনি৷ ঘটনাচক্রে সেই বৈঠকে আমন্ত্রিত শিল্পপতিদের কেউই রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আসার পর নতুন করে কোনও বিনিয়োগের ঘোষণা করেন নি৷ বরং শিল্পমহলের তরফে সরকারের সেচ ও জমি নীতি বদলের দাবি উঠেছে বহুবার৷
ঘটনাচক্রে এ দিনই যোজনা কমিশনের বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লি রওনা দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ লক্ষ্য, ঋণভারে জর্জরিত রাজ্যের জন্য আর্থিক সাহায্য আদায়৷ মমতার শহর ছাড়ার কথা সোমবার বিকেলে৷ আর নরেন্দ্র মোদী শহরে আসছেন রাত ৯টা নাগাদ৷ তাই সৌজন্য সাক্ষাত তো দূর, বিমানবন্দরেও মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা নেই দু'জনের৷ তা ছাড়া মোদীর সফরকে ঘিরে রাজনীতির পারদ চড়ছে কয়েক দিন আগে থেকেই৷ রাজ্য বিজেপির তরফে মোদীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের জন্য নেতাজি ইন্ডোর ভাড়া চাওয়া হয়েছিল সরকারের কাছ থেকে৷ কিন্ত্ত সঙ্গীত মেলা চলবে-এই কথা জানিয়ে সেই আবেদন খারিজ করে দেয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার৷ এর পর মোদীও মমতার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য কোনও সময় চাননি৷ ফলে মঙ্গলবার বিকেলে ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হবে মহাজাতি সদনে৷

সোমবার রাতে শহরে পৌঁছুনোর পর মঙ্গলবার মধ্য কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে তিনটি বণিকসভার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক সভায় বক্তব্য পেশ করবেন মোদী৷ সেখানে ইতিমধ্যেই চাহিদার তুলনায় দর্শকাসনের অপ্রতুলতার জেরে সভাগৃহের বাইরে স্ক্রিন বসানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে৷

তার পরেই বাংলার হাতে গোনা কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে মোদীর বৈঠকে বসার কথা৷ এই তালিকায় রয়েছেন সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, সুনীল কানোরিয়া, দীপক জালান, মহেন্দ্র জালান, সঞ্জয় আগরওয়াল-সহ বেশ কিছু শিল্পপতি৷ এ রাজ্যে বিনিয়োগে খরার বাজারে রাজ্যেরই শিল্পপতিদের সঙ্গে মোদীর এই বৈঠক তাত্পর্যপূর্ণ৷ বিশেষ করে যখন মোদীর সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করতে বণিকসভাগুলির উপর চাপ এসেছে মূলত রাজ্যের শিল্পপতিদের থেকেই৷

এমসিসি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর জেনারেল শুভাশিস রায় জানান, কিছু শিল্পপতির তরফে প্রথমে আমাদের বলা হয়, মোদীর সঙ্গে আলাদা করে কোনও বৈঠকের ব্যবস্থা করা যায় কি না৷ আমরা তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরের সঙ্গে কথা বলি৷ তাদের থেকে সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পর ঠিক হয়েছে মঙ্গলবার মধ্যাহ্নভোজের আগে মোদী তিন দফায় হাতে গোনা কয়েক জন শিল্পপতির সঙ্গে দেখা করবেন৷

প্রাথমিকভাবে মোদীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকের তালিকায় সেই শিল্পপতিদেরই নাম রয়েছে যাঁরা ইতিমধ্যেই গুজরাটে বিনিয়োগ করেছেন, বা অদূর ভবিষ্যতে করতে চান৷ আরপি-সঞ্জীব গোয়েঙ্কা গোষ্ঠী ইতিমধ্যেই গুজরাটে সৌর বিদ্যুতক্ষেত্রে লগ্নি করেছে৷ গুজরাটে বিদ্যুত ক্ষেত্রে লগ্নি রয়েছে শ্রেয়ি গোষ্ঠীরও৷ অন্যদিকে গুজরাটে বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে সেঞ্চুরি প্লাইউডের৷ তাই এই সমস্ত সংস্থার কর্ণধাররা বৈঠকে আমন্ত্রিত৷

লিঙ্ক পেনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর দীপক জালানের কথায়, এটা ঠিকই যে গুজরাটে বিনিয়োগের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা করে দেখা করার প্রয়োজন পড়ে না৷ ওই রাজ্যের ব্যবস্থা অত্যন্ত ভাল৷ কিন্তু হাতের সামনে মোদীকে পেলে কিছু সমস্যার কথা জানানো যায়৷ সে কারণেই মোদীর সঙ্গে বৈঠক করার ব্যাপারে শিল্পপতিদের মধ্যে এত উত্সাহ বলে আমার মনে হয়৷


হেফাজতের দাবি অনুযায়ী ধর্মদ্রোহিতা রোধ আইন প্রণয়নের কোনও পরিকল্পনা নেই বাংলাদেশ সরকারের। সোমবার এক সাক্ষাত্‍‍‍কারে একথা স্পষ্ট জানিয়ে দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে অন্যের ধর্মের অনুভূতিতে কেউ আঘাত করলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান শেখ হাসিনা। 

গত কয়েক মাস ধরে অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ। যুদ্ধপরাধিদের বিচারের বিরোধীতায় দেশ জুড়ে হিংসা চালাচ্ছে জামাতপন্থী কয়েকটি সংগঠন। ধর্মদ্রোহিতা রোধ আইন প্রণয়নের জন্য সরকারের ওপর চার বাড়াচ্ছিল বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন। গত শনিবার রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম নামের একটি সংগঠন। ধর্মদ্রোহিতা রোধ আইন প্রণয়ন সহ তেরো দফা দাবি সরকারের কাছে পেশ করা হয়। সোমবার এক সাক্ষাত্‍‍‍কারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, হেফাজতের কোনও দাবিই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। 

জামাতপন্থীদের হিংসা রুখতে বাংলাদেশ সরকার অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে বলে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের অভিযোগ। সাক্ষাত্‍‍কারে সেই অভিযোগও অস্বীকার করেন শেখ হাসিনা। 

যুদ্ধাপরাধিদের বিচারের নামে আওয়ামী লিগ সরকার রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে বলে যে অভিযোগ বিএনপি-জামাত জোট করছে, তারও তীব্র নিন্দা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। 


বুধবার প্রেসিডেন্সির ভিতরে যে নজিরবিহীন হামলার ঘটনা ঘটে তা যে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকদের মিছিলের পরই ঘটেছিল তা এখন রাজ্যের প্রায় সবাই জানেন । শুধু কিছু মন্ত্রী কাল থেকেই অস্বীকার করে আসছিলেন, তৃণমূল নয়, বহিরাগতরাই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে । পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় আজ একধাপ এগিয়ে বলেন, গেটের বাইরে তৃণমূল বিক্ষোভ করছিল বটে, ভিতরে গিয়ে তারা যে হামলা চালিয়েছে, তার প্রমাণ কোথায়? আমাদের হাতে আছে এক এক্সক্লুসিভ ছবি যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে , তৃণমূলের পতাকা হাতে , তৃণমূলের স্লোগান মুখে নিয়ে একদল বিক্ষোভাকারী ঢুকে যাচ্ছে প্রেসিডেন্সির ভিতরে। এরপরই শুরু হবে ঐতিহ্যমণ্ডিত বেকার ল্যাবরেটরিতে ভাঙচুর।

দেখুন তার প্রমাণ
(এক্সক্লুসিভ ভিডিও)


প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করল জোড়াসাঁকো থানার পুলিস। ধৃতদের নাম শুভজিত বর্মণ এবং জয়ন্ত হাওলাদার। বৃহস্পতিবার সন্ধেয় দুজনকে কলেজ স্ট্রিট এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

ধৃতদের বিরুদ্ধে ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯ ধারায় হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে বলে পুলিস সূত্রে খবর। ধৃত শুভজিত বর্মণ হাওড়া বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকার বাসিন্দা। জয়ন্ত হাওলাদারের বাড়ি ক্যানিংয়ের শক্তিপল্লী এলাকায়। ধৃতদের জেরা করছে পুলিস। ধৃতরা তাদের সংগঠনের কেউ নয় বলে দাবি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের। 

প্রসঙ্গত, বুধবার বল্লম-বর্ষার সঙ্গে পতাকা হাতে প্রেসিডেন্সির গেট ভেঙে হামলা চালায় তৃণমূলের কর্মী -সমর্থক-নেতারা।

http://zeenews.india.com/bengali/kolkata/presidency-college-attack-two-arrested_12675.html


গতকাল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল ছাত্রপরিষদের তাণ্ডবের প্রতিবাদে আজ মৌনমিছিলে পা মেলালেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই বর্তমান, প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে অধ্যাপক-অধ্যাপিকারাও। বুধবারই প্রেসিডেন্সির বর্তমান ছাত্রছাত্রীরা বৃহস্পতিবারকে প্রতিবাদ দিবস হিসাবে ঘোষণা করেন। মাথায় কালো কাপড় বেঁধে আজ মিছিলে পা মেলালেন দলমত নির্বিশেষে সকলেই। কলেজ ক্যাম্পাস থেকে শুরু হওয়া এই মিছিল শেষ হওয়ার কথা ছিল রাজভবনের সামনে। কিন্তু রাণি রাসমনি অ্যাভেনিউতেই এই মিছিল থামিয়ে দিল পুলিস।  সেখানে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে ডেপুটেশন জমা দিতে রওনা দিয়েছেন ছাত্র-ছাত্রী, অধ্যাপকদের প্রতিনিধিদল।  

আজকের মিছিলে উপস্থিত রয়েছেন অরুণাভ ঘোষ, রতন খাশনবীশ, অসীম চ্যাটার্জিত মতন প্রাক্তনীরা। আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ জানান ''প্রেসিডেন্সি আমাদের মায়ের মত। এই মিছিলে ব্রাত্য বসু, সৌগত রায়, অমিত মিত্রের মত প্রাক্তনীরা উপস্থিত থাকলে প্রতিবাদ আরও জোরালো হত।''  

বুধবার একবার নয়, দু-দুবার তৃণমূলের ছাত্র পরিষদ সমর্থকদের তাণ্ডবের শিকার হয় প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। অভিযোগ, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দলীয় পতাকা হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন গেটের তালা ভেঙে ছাত্রছাত্রী ও অধ্যাপকদের মারধর করে টিএমসিপি সমর্থকরা। পদার্থবিজ্ঞানের ঐতিহ্যশালী বেকার ল্যাবরটরিতে ভাঙচুর চালানো হয়। আক্রান্ত হন ছাত্র-ছাত্রীরা। এমনকী শ্লীলতাহানির অভিযোগও আনেন ছাত্রীরা। প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানিয়েছেন হামলাকারী দুষ্কৃতীদের হাতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পতাকা ছিল। প্রেসিডেন্সির উপাচার্য মালবিকা সরকারও বিভিন্ন বৈদুত্যিন মাধ্যমের কাছে সরাসরি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। জানান পুলিসি নিষ্ক্রিয়তার কথাও।  তবে, হামলার ঘটনায় দলের কেউ যুক্ত নয় বলে দাবি করেন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।  

আজকের মিছিলে মৌনতার মধ্যেই ভাষা খুঁজে নিয়েছে প্রতিবাদ। ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে  ''তোমরা যত মারবে, মিছিল তত বাড়বে'', ''আইডিয়াস আর বুলেট প্রুফ, প্রেসিডেন্সি ইজ অ্যান আইডিয়া।''-র মতন পোস্টার। রাজ্যের অন্যতম ঐতিহ্যমণ্ডলী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শাসক দলের ছাত্র পরিষদের হামলা বার বার ধিক্কৃত হল এই মিছিলের প্রতি পদক্ষেপে।


দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী-সহ চার মন্ত্রীকে ঘিরে বিক্ষোভ, অর্থমন্ত্রীকে হেনস্থা আর তারপর থেকে রাজ্যজুড়ে চলতে থাকা সন্ত্রাস, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাণ্ডবে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন কবি শঙ্খ ঘোষ, সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী। শঙ্খ ঘোষের কথায়, গুণ্ডামির প্রতিযোগিতা চলছে। গত মঙ্গলবার দিল্লিতে হেনস্থার শিকার হন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তার প্রতিবাদে সরব হলেন প্রবীণ সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী।

দিল্লির ঘটনার পর থেকেই রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে `তাণ্ডব`। বুধবার হামলা হয়েছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে, হামলা হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের গ্রন্থাগারে। তাণ্ডবে বিধ্বস্ত প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়।

মঙ্গলবারের ঘটনার পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বাম দলগুলির কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, আগুন, বাম নেতা-কর্মীদের উপর হামলার তালিকাটা ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। আক্রান্ত হয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী, প্রাক্তন বিধায়করাও। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করেও ওইসব হামলারও নিন্দা করেছেন মহাশ্বেতা দেবী।

প্রায় একই ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কবি শঙ্খ ঘোষও। দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে হেনস্থা, রাজ্যজুড়ে সন্ত্রাস, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাণ্ডবে উদ্বিগ্ন, মর্মাহত শঙ্খ ঘোষ বলেছেন,  রাজ্যজুড়ে গুণ্ডামির প্রতিযোগিতা চলছে। 


দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী-সহ চার মন্ত্রীকে ঘিরে বিক্ষোভ, অর্থমন্ত্রীকে হেনস্থা আর তারপর থেকে রাজ্যজুড়ে চলতে থাকা সন্ত্রাস, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাণ্ডবে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন কবি শঙ্খ ঘোষ, সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী। শঙ্খ ঘোষের কথায়, গুণ্ডামির প্রতিযোগিতা চলছে। গত মঙ্গলবার দিল্লিতে হেনস্থার শিকার হন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তার প্রতিবাদে সরব হলেন প্রবীণ সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী।

দিল্লির ঘটনার পর থেকেই রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে `তাণ্ডব`। বুধবার হামলা হয়েছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে, হামলা হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের গ্রন্থাগারে। তাণ্ডবে বিধ্বস্ত প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়।

মঙ্গলবারের ঘটনার পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বাম দলগুলির কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, আগুন, বাম নেতা-কর্মীদের উপর হামলার তালিকাটা ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। আক্রান্ত হয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী, প্রাক্তন বিধায়করাও। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করেও ওইসব হামলারও নিন্দা করেছেন মহাশ্বেতা দেবী।

প্রায় একই ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কবি শঙ্খ ঘোষও। দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে হেনস্থা, রাজ্যজুড়ে সন্ত্রাস, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাণ্ডবে উদ্বিগ্ন, মর্মাহত শঙ্খ ঘোষ বলেছেন,  রাজ্যজুড়ে গুণ্ডামির প্রতিযোগিতা চলছে। 


টাকা দিয়ে মার্কিন আমন্ত্রণ? কংগ্রেসের নিশানায় নরেন্দ্র মোদী

Update: March 30, 2013 10:28 IST

অর্থের বিনিময়ে আমেরিকা যাওয়ার আমন্ত্রণ `কিনেছেন` নরেন্দ্র মোদী। রাজ্যের কংগ্রেস নেতা অর্জুন মোদওয়াদিয়া এমনই অভিযোগ করেন। মার্কিন প্রতিনিধি দলের গুজরাটে আসা `আসলে লোক দেখানো` এবং পি আর সংস্থার আরোপিত `নাটক` বলেও অভিযোগ করে রাজ্য কংগ্রেস। অর্জুন মোদওয়াদিয়া বলেন এমন ঘটনা রাজ্যের পক্ষে লজ্জার। 

বিজেপি এই অভিযোগ খারিজ করে জানিয়েছে অর্থের বিনিময় আমন্ত্রণ তাদের `সংস্কৃতি বিরুদ্ধ`। 

হাউস অফ রিপ্রেসেন্টেটিভের চার সদস্য, মারলিন স্টুৎসমান, সিন্থিয়া উইদরসপান, ক্যাথি রজারস এবং অ্যারন শোক, প্রত্যেকেই রিপাবলিকান। গুজরাটের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে তাঁরা নরেন্দ্র মোদীকে আমেরিকায় আমন্ত্রণ জানান। 

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, গুজরাটে দাঙ্গার পর বুশ আমলেই মোদীর ভিসা প্রত্যাখ্যাত হয়। তার পর থেকে আর আমেরিকার যেতে পারেননি নরেন্দ্র মোদী। 

মার্কিন এই প্রতিনিধি দল আমেদাবাদে মোদীর সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের এর পরে উদয়পুরে বিলাসবহুল লেক প্যালেস, রনথম্বোরের ব্যাঘ্র প্রকল্প, অমৃতসরে স্বর্ণ মন্দির, এবং তাজমহল যাওয়ার কথা। কর্নাটক এবং পঞ্জাবে রাজ্যের অতিথি হয়ে তাঁদের যাওয়ার কথা। 


দিল্লির মসনদে এ বার কি নরেন্দ্র মোদী?



দিল্লির মসনদে এ বার কি নরেন্দ্র মোদী?
গৌতম হোড় 

নয়াদিল্লি: জয়টা প্রত্যাশিতই ছিল৷ আর জয়ের পর কী প্রশ্ন উঠতে চলেছে সেটা নিয়েও সংশয় ছিল না কারও৷ নরেন্দ্র মোদী তৃতীয় বারের জন্য গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দলের অন্দরেই তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী করা নিয়ে দাবি জোরালো হয়ে উঠল৷ আর আমেদাবাদে জয়ের পর প্রথম জনসভায় সেই দাবিকেই কৌশলে আরও উস্কে দিলেন খোদ মোদী৷ 

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আমেদাবাদ-সহ সারা গুজরাটে বিজেপি অফিসের সামনে দিনভর স্লোগান উঠেছে, 'আজ কা সিএম, ২০১৪ কা পিএম৷' মোদীই কি আগামী দিনে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী? দিল্লিতে বিজেপি নেতারা এই প্রশ্ন শুনে ক্লান্ত৷ দলের শীর্ষ নেতারা অবশ্য এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন, অথবা বলেছেন, গুজরাতের নির্বাচনটা মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রশ্নকে ঘিরে হয়নি৷ আর যাঁরা এ ব্যাপারে চড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন, সেই নাগপুরের আরএসএস নেতারা এখনও পর্যন্ত মুখে কুলুপ এঁটেছেন৷ 

প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নিয়ে জল্পনাটা সকালেই উস্কে দিয়েছিলেন রাজ্যসভা সাংসদ স্মৃতি ইরানি৷ তিনি বলেন, 'নরেন্দ্র মোদীকেই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা উচিত৷' তবে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এ ব্যাপারে যারপরনাই সতর্ক৷ লালকৃষ্ণ আডবাণী বলেছেন, 'গুজরাটের ফলাফল সন্তোষজনক৷ ভেবেছিলাম, হিমাচলে আরও ভাল ফল করব৷' আর দলের সভাপতি নীতিন গড়করির মন্তব্য, 'গুজরাট উন্নয়নের পক্ষে ভোট দিয়েছে৷ মোদীর নেতৃত্বে গুজরাট আরও এগিয়ে যাবে৷' মোদীর প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়া নিয়ে অরুণ জেটলি বলেন, 'এটা এই মুহূর্তে আলোচনার বিষয়ই নয়৷ মোদী প্রবীণ নেতা৷ দলের কর্মীদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়৷' 

সঙ্ঘের ঘনিষ্ঠ নেতা শেষাদ্রিচারী বলেছেন, কে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন তা ঠিক করার সময় এটা নয়৷ দলের মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদ জানিয়েছেন, 'বিজেপি-তে এমন অনেক নেতা আছেন যাঁরা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য৷' 

তবে শীর্ষ নেতৃত্ব যা-ই বলুন না কেন, মোদী নিজে কিন্ত্ত বুঝিয়ে দিয়েছেন টানা তিনবার গুজরাটে এই বিপুল জয়ের পর তাঁকে উপেক্ষা করা কঠিন হবে৷ জয়ের পর বিকেলে আমেদাবাদে দলের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে তাঁর প্রথম জনসভায় তিনি বলেন, উন্নয়ন ও সুশাসনের প্রশ্নে ভোট দিয়েছে গুজরাটের মানুষ৷ আর গুজরাটের এই দৃষ্টান্ত দেখে উদ্বুদ্ধ হবেন দেশের বাকি জনতা৷ কংগ্রেসকে খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, 'আমার এই জয়ের পর আজ অনেকেরই ভাল করে ঘুম হবে না৷' কিন্ত্ত প্রকাশ্যে কংগ্রেসকে এ কথা বললেও এই মন্তব্যে কি দলে তাঁর বিরোধীদের বিঁধলেন মোদী? প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও৷ 

গুজরাটে সাফল্য প্রশ্নাতীত হলেও, তাঁর কাজের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে৷ সে কথা বুঝেই সম্ভবত এই প্রথমবার কিছুটা স্বভাববিরুদ্ধ ভাবেই কথা বলেন মোদী৷ 'যদি কোনও ভুল করে থাকি ক্ষমা করবেন৷ আমার আচরণে যদি কর্মীরা আহত হন, তাঁদের কাছেও ক্ষমা চাইছি৷' মোদীর মুখে এমন বার্তার পিছনে থাকতে পারে রাজনীতির সূক্ষ্ম হিসেব৷ মোদী জানেন হাজার চেষ্টা করেও ২০০২ দাঙ্গার কলঙ্ক তিনি মুছতে পারবেন না৷ তাই মণিনগরে জয়লাভের পরই তিনি বলেন, 'আর পিছু ফিরে তাকানোর প্রয়োজন নেই৷' তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস প্রার্থী শ্বেতা ভাটের স্বামী সঞ্জীব ভাট দাঙ্গায় মোদীর ভূমিকার সমালোচনা করে জেলে গিয়েছিলেন৷ সেই অতীতকেই বারবার প্রচারে তুলে এনেছেন শ্বেতা৷ জাতীয় মঞ্চে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে মোদী সেই কারণেই এ দিন বলেন, 'সাম্প্রদায়িকতা ও প্রাদেশিকতার ঊর্ধে উঠে ভোট দিয়ে দেশের সামনে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন গুজরাটের মানুষ৷' 

আসলে মোদীও জানেন প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হতে গেলে তাঁকে শুধু বিজেপির নেতা হলে চলবে না, এনডিএ-র কাছেও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে হবে৷ সেই কারণেই নিজের ভাবমূর্তি অনেক নমনীয় করে তুলতে চাইছেন মোদী৷ হয়তো তাই জয়ের পরই গান্ধীনগরে গিয়ে তিনি দেখা করেছেন তাঁর পরাজিত প্রতিপক্ষ কেশুভাই প্যাটেলের সঙ্গে৷ 

তবে, জয়ের আনন্দের মধ্যেও দিল্লির শীর্ষ নেতৃত্ব ও নাগপুরের সঙ্ঘ পরিচালকদের নীরবতা চাপে রাখতে পারে মোদীকে৷ তাঁকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে জেডিইউ জানিয়ে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী পদে নীতীশকুমার মোদীর চেয়েও যোগ্যতর ব্যক্তি৷ গুজরাটে তাঁর বিপুল সাফল্য সত্ত্বেও জাতীয় মঞ্চে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সংশয় রয়েছে নানা মহলে৷ তবে দলের নিচুতলার কর্মীদের দাবি উপেক্ষা করে মোদীকে কত দিন গান্ধীনগরে আটকে রাখতে পারবে বিজেপি তার উত্তর দেবে ভবিষত্‍৷ 


অযোধ্যার সাধুদের অভিযোগ

রামমন্দির আন্দোলন বিজেপি'র ব্যবসা

সংগ্রাম ডেস্ক : 'আমাকে কোন ও দিন এমন কথা বলতে হবে ভাবিনি। কিন্তু বলতেই হচ্ছে, বিজেপি হল ধান্দাবাজ, ধাপ্পাবাজদের পার্টি। রাম মন্দির আন্দোলন ওদের ব্যবসা।'

এটুকু বলে গা থেকে খসে পড়া শালটা ভালো করে জড়িয়ে নিলেন মহন্ত জ্ঞানদাসজি। অযোধ্যায় তখন সন্ধ্যা নামছে। ঠান্ডা থেকে বাঁচতে দর্শনার্থী থেকে দোকানি সকলেই ঘরমেুখো। হনুমানগড়ি মন্দিরের অদূরে নিজের আখড়ায় বসে আরাম করছিলেন অখিল ভারতীয় আখড়া পরিষদের অধ্যক্ষ বছর ষাটের জ্ঞানদাসজি। দিন পনেরো হল সাগরদ্বীপ থেকে ফিরেছেন। কপিলমুনির আশ্রম তিনিই দেখভাল করেন।

অযোধ্যায় কোনও সাধুসন্তের মুখে বিজেপির এমন নিন্দামন্দ শুনব, কল্পনাও করিনি। এই তো বছর দেড়েক আগের কথা, হাইকোর্ট সেদিন অযোধ্যার বিতর্কিত জমি রামের জন্মস্থান বলে রায় দিল, এই সাধুদের মুখেই বিজেপি নেতাদের নামে সেদিন জয়ধ্বনি শুনেছি।

হনুমান গড়িতে পদাধিকার বলে জ্ঞানদাসজির সিনিয়র কিন্তু বয়সে ছোট বছর পঞ্চান্নর মহন্ত রমেশ দাসজি। একটু আগেই পাঁয়চারি করতে করতে যিনি মন্তব্য করেছেন, 'অযোধ্যা আর বিজেপির দখলে থাকবে কি না নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। রামমন্দির নিয়ে বিজেপি মানুষকে ঠকিয়েছে। আর কত ঠকবে মানুষ?

রমেশ দাসজি হনুমানগড়ির প্রধান। মহন্তদের ভাষায় তিনি গদ্দিনসিন মহন্ত। সাধুদের নিজস্ব পঞ্চায়েত ব্যবস্থার নিয়ম অনুসারে গদ্দিনসিন মহন্ত আমৃত্যু হনুমানগড়ির ৫২ বিঘা এলাকার বাইরে আর পা রাখতে পারেন না। ডাক্তারবদ্যি তো বটেই, মামলা মোকদ্দমা হলে সপরিষদ বিচারককেই আখড়ায় হাজির হতে হয়, এমনই নিয়ম, জানান মহন্ত।

আখড়ার বাইরে পা রাখেন না, এমন সাধু অযোধ্যায় আরও আছেন। আর এক জায়গায় তাঁদের আশ্চর্য মিল। কথার শুরুতে সকলেই বলে নেন, 'রাজনীতিসে হামারা কোই লেনাদেনা নেহি।' তারপর অবশ্য রাজনীতি নিয়েই মুখে খই ফোটে তাঁদের। যেমন বললেন দুই মহন্ত। জ্ঞানদাসজির কথায়, জানতাম কমিউনিস্টরা নাস্তিক। বিজেপি দেখছি কমিউনিস্টদের থেকে বড় নাস্তিক। রাম ভগবানের নামে তা না হলে এমন বজ্জাতি করে?'

অযোধ্যা-ফৈজাবাদ রোডের বাঁ হাতে বিতর্কিত বাবরি মসজিদ-রামজন্মভূমিস্থল। ৫৪ একর জমির মাঝে বিক্ষত বাবরি মসজিদের ইট-কাঠ-পাথরের স্তূপের উপর কয়েক ইঞ্চির যে রামলালার মূর্তি পূজিত হয়, নিরাপত্তার মাপকাঠিতে তার থেকে ভিভিআইপি আর কমই আছে। আধা সামরিক বাহিনীর কয়েক শো জওয়ান ৩৬৫ দিন ঘিরে রেখেছে ওই মূর্তি। কমান্ডোর নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থাকেন জ্ঞানদাস, রমেশ দাসের মতো মহন্তরাও। ডানহাতে সরযুর দিকে খানিক এগুলেই করসেবকপুরম। রামজন্মভূমি ন্যাসের উদ্যোগে যেখানে রামমন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়েও থেমে আছে বছর দশেক হতে চলল। কয়েক কোটি টাকার পাথরে শেওলা জমছে। এসব দেখেই সাধুরা ক্ষিপ্ত।

মহম্মদ হাসিম আনসারি তাই নিশ্চিত, যতই রামলালার পূজা পান, রামমন্দির কোনও দিনই হবে না। হিন্দু প্রতিবেশীদের তিনি বলেন, বিজেপি আর কংগ্রেসে ফারাক নেই।

মন্দিরের তালা খুলে দিয়ে কংগ্রেস একবার ফায়দা লুটেছে। আর রামমন্দির নির্মাণের কথা বলে ভোট লুট করেছে বিজেপি। '৯২ বছরের এই হতদরিদ্র বৃদ্ধের মামলাই লখনউ হাইকোর্ট হয়ে এখন সুপ্রিমকোর্টের বিচারাধীন। বিতর্কিত স্থানে বাবরি মসজিদ নির্মাণ করে দেয়ার দাবি নিয়ে আদালতে গিয়েছেন তিনি। তার কথায়, 'ওই জমিতে শুধু রাম মন্দির হোক আমি চাই না। কিন্তু বিজেপি যেভাবে লোক ঠকাল, সেটাও মেনে নেয়া যায় না।'

বুধবার রাতে অযোধ্যার পাজিটোলার বাড়িতে বসে বৃদ্ধ বলেন, 'কোনও রাজনৈতিক দলই আমার ভোট পাবে না।' পিস (শান্তি) পার্টি নামে এক সদ্য গজিয়ে ওঠা স্থানীয় দলের একমাত্র প্রার্থী রাজেশ মিশ্র'র হয়ে গলা ফাটাচ্ছেন হাসিম আনসারি। শুধু কি মহন্তবৃন্দ, অযোধ্যা হনুমানগড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নন্দলাল গুপ্তার মতোই মন্দির শহরের ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষ, কেউ ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন, কেউ আবার হাসাহাসি করছেন বিজেপির মুখে ফের রামমন্দির গড়ার কথা শুনে। তাদের বক্তব্য বিজেপি রাজ্যে এবং কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল। তা সত্ত্বেও রামমন্দির পুনঃনির্মাণে কিছুই করেনি। ভোট এলেই এই পার্টি রামনাম করে। বর্তমান পত্রিকা।

মন্দির নিয়ে ইস্তাহারে বলা কথাই এখানে এসে শুনিয়ে গিয়েছেন। এই নির্বাচনে ছত্তিশগড় থেকে বিজেপির ধার করা মুখ উমা ভারতীয়, ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের আনন্দে যিনি আদবানির পিঠে চড়েছিলেন বলে বিরোধীদের অভিযোগ। সেউ উমাকে নামিয়েও অযোধ্যা ধরে রাখতে বিজেপিকে এবার যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে।

এক কথায় হিন্দুকার্ড, মন্দির-মসজিদ ইস্যু আর কাজ করছে না। এখানে তাদের একমাত্র ভরসা টানা ২০ বছর মন্দির শহরে দলের বিধায়ক লাল্লু, সিং। যার সম্পর্কে মহন্ত থেকে সাধারণ মানুষ সকলের মুখেই প্রশংসা শোনা গেল। নিজেকে মন্দির-মসজিদ বিতর্কের বাইরে রাখায় মুসলিমরাও তার প্রতি বিরূপ নন।

তার দাবি, কাজের জন্যই মানুষ আমাকে ভোট দেবে। বিজেপি ছাড়াও মন্দির শহরের দখল নিতে কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজবাদী পার্টি লড়ছে। প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূলও। ৪ তারিখ আদবানি অযোধ্যা প্রচারে যাচ্ছেন।

http://eisamay.indiatimes.com/articleshow/17704123.cms


দেশের ঋণ মেটাতে বলছে জনতা, দাবি মোদীর



বাবরি ধ্বংসের সময় পুজোয় ব্যস্ত ছিলেন নরসিংহ রাও

Update: July 5, 2012 18:11 IST

জনশ্রুতি আছে, রোম নগরী যখন ভয়াবহ আগুনে ছারখার হয়ে যাচ্ছিল, সম্রাট নিরো নাকি প্রাসাদে বসে বেহালা বাজাচ্ছিলেন! আর ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় সরযূ নদীর তীরে কয়েক হাজার করসেবকের তাণ্ডবে যখন ধীরে ধীরে গুঁড়িয়ে যাচ্ছিল সাড়ে চারশো বছরের `বাবরি ধাঁচা` কী করছিলেন পামুলাপর্তি ভেঙ্কট নরসিংহ রাও? প্রখ্যাত সাংবাদিক তথা রাজনৈতিক ভাষ্যকার কুলদীপ নায়ারের সদ্য প্রকাশিত বই `বেয়ন্ড দ্য লাইনস` জানাচ্ছে, সে সময় নিজের সরকারি বাসভবনে পূজার্চনায় ব্যস্ত ছিলেন ভারতের তত্‍কালীন প্রধানমন্ত্রী!

বাবরি ধ্বংসে পরোক্ষ মদতের অভিযোগটা আগেও উঠেছে বারবারই। আদালতের কাছে অযোধ্যার বিতর্কিত রাম জন্মভূমি এলাকার বাইরে প্রতীকী করসেবার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও যখন গেরুয়া ঝাণ্ডাধারীরা পুলিসি বেষ্টনী অতিক্রম করে বাবরি মসজিদের গম্বুজের উপর উঠে পড়ে, তখনই নয়াদিল্লিতে সে খবর পৌঁছে গিয়েছিল। হনুমানগড়ির অনতিদূরে `সীতা কা রসুই`-এর মঞ্চে থাকা লালকৃষ্ণ আডবাণী-মুরলী মনোহর যোশি-অশোক সিঙ্ঘলদের পক্ষে যে উন্মত্ত করসেবকদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না, পত্রপাঠ সে ব্যাপারে অবহিত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী কল্যান সিংয়ের কথায় ভরসা করে(?) নিশ্চেষ্ট ছিলেন নরসিংহ রাও। সময়োচিত কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের পরিবর্তে দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ধরে বাবরি মসজিদের ধূলিসাত্‍ হওয়ার প্রতীক্ষা করছিলেন। আর স্বাধীন ভারতবর্ষের অন্যতম কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর নেহাতই নিয়মরক্ষার খাতিরে কল্যান সরকারকে বরখাস্ত করেন তিনি।

কুলদীপ নায়ারের অভিযোগ, ৬ ডিসেম্বর দুপুরে অযোধ্যোয় বাবরি ধ্বংস শুরু হওয়ার খবর পেয়েই নিজের বাসভবনে পুজোয় বসেছিলেন তেলুগু বিড্ডা। বিকেলে প্রথম মোগল সম্রাটের সেনাপতি মীর বাঁকির তৈরি সৌধের তৃতীয় গম্বুজটির পতনের পরই পুজো ছেড়ে উঠেছিলেন তিনি। প্রয়াত সোশ্যালিস্ট নেতা মধু লিমায়েকে উদ্ধৃত করে কুলদীপ লিখেছেন, পুজো ছেড়ে ওঠার আগে প্রধানমন্ত্রীর কানে বাবরি ধ্বংসের কথা জানিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর এক অনুচর।


বাবরি ধ্বংসের পর সাফাই দিতে গিয়ে নরসিংহ রাও ও তত্‍কালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এস বি চহ্বান জানিয়েছিলেন, সরযূ-তীরের ঐতিহাসিক সৌধ রক্ষার জন্য দিল্লি থেকে বিমান যোগে সিআরপিএফ-এর বিশেষ দল পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছিল কেন্দ্র কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে নাকি এই পরিকল্পনা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু `বেয়ন্ড দ্য লাইনস`-এর রাও-জমানা সংক্রান্ত পরিচ্ছেদে এই যুক্তি ফুত্‍কারে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও কুলদীপ নায়ারের বইয়ে উল্লিখিত অভিযোগকে এদিনও `অবিশ্বাস্য এবং ভিত্তিহীন` বলে বর্ণনা করেছেন নরসিংহ রাওয়ের ছেলে পি ভি রঙ্গা রাও। 

তবে তাত্‍পর্যপূর্ণভাবে প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ খণ্ডনের কোনও চেষ্টাই করা হয়নি। সম্ভবত সেটা হবেও না। কারণ, বছরকয়েক আগে উত্তরপ্রদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে বাবরি ধ্বংসের জন্য নরসিংহ রাওকে দায়ী করে স্বয়ং রাহুল গান্ধীই তো বলেছিলেন, নেহরু-গান্ধী পরিবারের কোনও সদস্য প্রধানমন্ত্রী পদে থাকলে ইতিহাসের পাতায় কালো দাগে চিহ্নিত হত না, ৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২।


বাবরি মসজিদ ধ্বংস কোনো বিখ্যাত ঘটনা নয়

Tue 17 Jan 2012 4:16 AM BdST

rtnnবিশ্ব ডেস্ক, ১৬ জানুয়ারি (আরটিএনএন ডটনেট)-- ভারতে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা শুধু একটি স্বাভাবিক ঘটনা বলে মন্তব্য করেছে দেশটির সর্ব্বোচ্চ আদালত।

এ মসজিদ নিয়ে ভারতের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই আদালতে বিজেপি নেতা এলকে আদভানি ও শিবসেনা প্রধান বাল থ্যাকারে সহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলে শুনানীতে আদালত এধরনের মন্তব্য করে।

বাবরি মসজিদ ধংসের ঘটনায় ভারতের হাইকোর্টের দেয়া আদেশের বিরুদ্ধে করা এক রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে এ শুনানি হয়।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট মনে করে, বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার বিষয়টি কোনো বিখ্যাত কিংবা কুখ্যাত ঘটনাও নয়।

বিচারপতি এইচ এল দত্ত ও বিচারপতি সি কে প্রসাদের সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের ঐ বেঞ্চ বাবরি মসজিদ ধংসের ঘটনাকে স্রেফ ঘটনাই বলে মনে করছে।

বাবরি মসজিদ ধংসের ঘটনার সাথে জড়িত থাকার দায়ে কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে না- জানতে চেয়ে আদালত এল কে আদভানি, বাল থ্যাকারে, কল্যাণ সিং, উমা ভারতিসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে রুল জারি করে।

এর আগে সিবিআই এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ধারায় বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার ঘটনায় অভিযোগ দাখিল করে।

আরটিএনএন ডটনেট/ওয়েবসাইট/আরআই_ ২১১১ ঘ. 

শুক্রবার, 01 অক্টোবার 2010 15:56

বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা ছিল অপরাধ ; আদালতের রায়ে তা মুছে যায়নি : চিদাম্বারাম

বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা ছিল অপরাধ ; আদালতের রায়ে তা মুছে যায়নি : চিদাম্বারাম
১ অক্টোবর (রেডিও তেহরান) : ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি.চিদাম্বারাম বলেছেন, অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা ছিল একটি মারাত্মক অপরাধ এবং আদালতের রায়ের ফলে সে কলঙ্ক মুছে যায়নি। তিনি আরো বলেছেন, যারা বাবরি মসজিদ ভেঙ্গেছিল, তারা সেদিন আইন নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছিল।
এলাহাবাদ হাইকোর্টের লক্ষ্ণৌ বেঞ্চ গতকাল বাবরি মসজিদের ভূমি হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে রায় দেয়ার পর আজ প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। রায় ঘোষণার পর ভারতের কোথাও কোন সহিংসতা না হওয়ায় তিনি জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। চিদাম্বারাম বলেছেন, নিঃসন্দেহে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল হবে এবং সুপ্রিম কোর্ট গতকালের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দেবে। ফলে তার ভাষায় যে রায় বাস্তবায়িত হবে না, তা নিয়ে বৃথা গণ্ডগোল সৃষ্টি করা উচিত হবে না। 
১৯৯২ সালে ভারতীয় হিন্দুরা মুসলমানদের প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো সম্পদ 'বাবরি মসজিদ' ধ্বংস করে। কিন্তু এলাহাবাদ হাইকোর্ট গতকালের রায়ে সেই মসজিদের জমি তিনভাগ করে দুইভাগ হিন্দুদের দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ভারতীয় মুসলমানরা ওই রায় প্রত্যাখ্যান করে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।


রাহুলকে জবাব দিলেও গদির দৌড়ে মোদীর কাঁটা দল-সঙ্ঘ
বিজেপি-র ৩৩ম প্রতিষ্ঠা দিবসে রাহুল গাঁধীকে আক্রমণ করে ফের এক বার নিজেকে জাতীয় স্তরে তুলে ধরতে উদ্যোগী হলেন নরেন্দ্র মোদী। দেশের ঋণ শোধ করার কথা বলে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী পদের দৌড়ে থাকার সঙ্কেত দিয়েছেন যিনি।
সম্প্রতি ভারতকে ১০০ কোটি মানুষের এক মৌচাক বলেছেন রাহুল গাঁধী। সেই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে মোদীর বক্তব্য, "কংগ্রেস নেতাদের ভারত সম্পর্কে ধারণার কথা শুনে আমি আশ্চর্য। আমাদের দেশ হল মা।" এই মন্তব্যকে রাহুল বনাম মোদীর একটি পর্ব হিসেবেই দেখছেন অনেকে।
১৯৮০ সালে বিজেপি-র যাত্রা শুরু। মাঝে বিজেপি-র নেতৃত্বে কেন্দ্রে রাজত্ব করেছে এনডিএ সরকার। কিন্তু এখন দলে অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলে রীতিমতো শোচনীয় অবস্থা বিজেপি-র। নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তূলে ধরার জন্য চাপ রয়েছে কর্মী-সমর্থকদের। কিন্তু এখনও দলেরই একটি অংশের চাপে সে পথে এগোতে পারেননি শীর্ষ নেতৃত্ব। 
আজ আমদাবাদে বিজেপি-র প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন মোদী। দিল্লিতে দলের সদর দফতরেও অনুষ্ঠান হয়েছে। সেখানে লালকৃষ্ণ আডবাণীর নেতৃত্বেই ২০১৪ সালের ভোটে লড়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্য সভাপতি বিজয় গয়াল। অযোধ্যায় রামমন্দির আন্দোলন নিয়ে গর্বিত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে আডবাণীও বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি জাতীয় স্তরে প্রাসঙ্গিক থাকতে চান।

স্বাগত। বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ ও মুখমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার আমদাবাদে। ছবি: পিটিআই 
কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে একমাত্র দলীয় সভাপতি রাজনাথ সিংহকেই আমদাবাদে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মোদী। দিল্লির অনুষ্ঠানের পরেই বিমানে আমদাবাদ পাড়ি দিয়ে মোদীর পাশে দাঁড়ান রাজনাথ। ফলে, নেতৃত্ব নিয়ে টানাপোড়েনের বিষয়টি একেবারে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বিজেপি-র একটি অংশের বক্তব্য, মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করলে বিপাকে পড়বে দল। কারণ, গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গার প্রেক্ষিতে মোদীর ভাবমূর্তি নিয়ে সমস্যা রয়েছে শরিক নীতীশ কুমারের। মোদী প্রার্থী হলেই নীতীশকে হারাবে এনডিএ। আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে নবীন পট্টনায়ক কেউই মোদীর নেতৃত্বে এনডিএ জোটে যোগ দিতে চাইবেন না। জোট রাজনীতির এই যুগে শরিকদের সাহায্য থেকে বঞ্চিত হবে বিজেপি। 
নরেন্দ্র মোদী শিবিরের পাল্টা বক্তব্য, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীকে দল প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা না করলে কখনওই বিজেপির আসন সংখ্যা বাড়বে না। দক্ষিণে বিজেপি দুর্বল, পূর্বেও তাই। যে সব এলাকায় বিজেপি শক্তিশালী, সেখানে আসন সংখ্যা বাড়াতে গেলে মোদীকে সামনে রেখে এগোনো ছাড়া উপায় নেই। বিহারে সি পি ঠাকুরের মতো বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, নীতীশের পক্ষে এনডিএ ছাড়া সহজ হবে না। বরং মোদীকে সামনে রেখে চললে চাপে পড়বেন নীতীশই। 
৩৩তম প্রতিষ্ঠা দিবসে বিজেপি-র সামনে আর একটি সমস্যা আরএসএসের নিয়ন্ত্রণ। গাঁধীজীর হত্যার পরে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল আরএসএস-কে। কিন্তু শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জনসঙ্ঘ যাত্রা শুরু করার সময়ে আরএসএসের দেশব্যাপী সংগঠনের সাহায্য নিয়েছিল।
জয়প্রকাশ নারায়ণের ইন্দিরা গাঁধী-বিরোধী আন্দোলনের সময়ে জনতা পার্টিতে মিশে যায় জনসঙ্ঘ। কিন্তু আরএসএসের সদস্য থাকলে জনতা পার্টির সদস্য থাকা যাবে না বলে সরব হয় ওই দলের একটি অংশ। শেষ পর্যন্ত ভারতীয় জনতা পার্টি তৈরি করেন অটলবিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আডবাণীরা। 
দলের সংগঠন বাড়াতে গিয়ে আরএসএসের সাহায্য নেওয়ায় এখন বিজেপি-র মধ্যে কার্যত সমান্তরাল সংগঠন চালায় আরএসএস। প্রতি রাজ্যেই সাংগঠনিক সচিব হিসেবে সভাপতির পাশেই থাকেন আরএসএস মনোনীত এক ব্যক্তি। সঙ্ঘের প্রিয়পাত্র হওয়াতেই অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজের বদলে দলের সভাপতি হয়েছিলেন নিতিন গডকড়ী। বর্তমান সভাপতি রাজনাথ সিংহও সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ। কিন্তু দলের দৈনন্দিন কাজকর্মে সঙ্ঘের হস্তক্ষেপে বিরক্ত অনেক শীর্ষ নেতাই। এর প্রতিবাদও করেছিলেন খোদ লালকৃষ্ণ আডবাণী। তাই শুধু রাহুলকে জবাব নয়, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে গেলে নাগপুরে সঙ্ঘের সদর দফতরের আশীর্বাদও পেতে হবে মোদীকে।
মোদী সব দিক সামলাতে পারেন কি না, সেটাই এখন দেখার।
http://www.anandabazar.com/archive/1130407/7desh2.html

একটি ঐতিহাসিক রায়ের ইতিবৃত্ত


রেযাউল করীম

সুদীর্ঘ পাঁচশত বছর ধরে চলে আসা বাবরি মসজিদ রামমন্দির বিতর্ক ভারতের জাতীয় জীবনে সর্বাধিক সমালোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। পলাশীর যুদ্ধ ও ভারতে ইংরেজ শাসনের সূত্রপাত, বঙ্গভঙ্গ, '৪৭-এর ভারতবিভাগ ইত্যাদি থেকে এ বিতর্ক কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভারতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, সামাজিক এমনকি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল, গত মাসের এলাহাবাদ হাইকোর্টের এক উদ্ভট রায়ে তা অমরতা লাভ করেছে। রায়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, 'যেহেতু বাবরি মসজিদের ভূমিতে রাম জন্মগ্রহণ করেন এবং ঐ স্থানে প্রতিষ্ঠিত রামমন্দির ভেঙ্গে সম্রাট বাবরের সেনাপতি মীর বাকী ১৫২৮ খ্রিষ্টাব্দে বাবরি মসজিদ নির্মাণ করেন, সেহেতু এ মসজিদ নির্মাণ হিন্দু সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে অবৈধ। হিন্দু মহাসভা ও নির্মোহী আখড়া নামের দু'টি সংগঠন উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ হাইকোর্টে রামমন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য জমি স্বত্ব চেয়ে মামলা করে। অন্যদিকে উত্তর প্রদেশের সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড মসজিদের স্বত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য একই আদালতে মামলা (Title suit) করে। কারণ ১৯৩৬ সালে মসজিদ এবং তৎসংলগ্ন জমি ওয়াকফ সম্পত্তি হিসাবে এ বোর্ডের নামে নিবন্ধন করা হয়। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সে মামলার এক ঐতিহাসিক রায় প্রদান করা হয়।
এ রায়ে বিরোধপূর্ণ ২.৭৭ একর জমি তিন ভাগে ভাগ করে দেয়া হয়। যার দুই ভাগ পাবে হিন্দু সংগঠন দু'টি এবং অবশিষ্ট এক ভাগ পাবে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড অর্থাৎ জমিটি আদালত ২:১ অনুপাতে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ভাগ করে দেন। তবে রায়টির প্রাতিস্বিকতা এখানে নয়, বরং ভিন্ন তিনটি কারণে রায়টি বহুমাত্রিক প্রাসঙ্গিকতা লাভ করেছে। কারণগুলো হ'ল-
১. প্রায় ৬০ বছর পরে রায়টি প্রদান করা হয় এবং ৮ হাযার ৫০০ পৃষ্ঠার এক মহাকাব্যিক রায় তৈরী করা হয়। (১৯৪৯ সালে হিন্দু-মুসলিম উভয়ে প্রথম আদালতে মামলা করে বাবরি মসজিদ নিয়ে)।
২. যুক্তি-প্রমাণ নয়, হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস, মিথ ও সংখ্যাগরিষ্ঠের আবেগের ওপর নির্ভর করে এ রায় দেয়া হয়। 
৩. এ রায়টি সর্বাধিক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
এলাহাবাদ হাইকোর্টের লক্ষ্মৌ বেঞ্চ বাবরি মসজিদের যে বিতর্কিত রায় দেন সমালোচকগণ তাকে আধুনিক 'রামায়ণের এলাহাবাদ সংস্করণ' বলে মন্তব্য করেছেন। রায়টি যে ৮ হাযার ৫০০ পৃষ্ঠার এক মহাকাব্যিক কলেবর ধারণ করেছে তার জন্য নয়, একবিংশ শতাব্দীতে এসে এলাহাবাদ হাইকোর্টের দুই মহামান্য হিন্দু বিচারক নতুন করে যে রামায়ণ লিখলেন তা পাঠ করে মহর্ষী বাল্মীকিও হয়ত একটু মৃদু হাস্য করতেন। আমরা এলাহাবাদী রামায়ণ নয়, বরং বাল্মীকির রামায়ণের নায়ক রামচন্দ্রের জীবনী সংক্ষেপে উল্লেখ করে আলোচনার অবতারণা করতে চাই। কেননা আমাদের চিন্তাসূত্রের গ্রন্থি উন্মোচিত হ'তে শুরু করে যখন ভারতের বিশিষ্ট সাংবাদিক স্বপন দাশগুপ্ত বাবরি মসজিদের রায়ে তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় উল্লেখ করেন-
ভারতের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদদের দাবী, রামের জন্মভূমি আফগানিস্তানে বা অন্য কোথাও এবং বাবরি মসজিদের কাঠামো ফাঁকা পাথুরে জমিতে নির্মিত  হয়েছে (প্রথম আলো, ২ অক্টোবর ২০১০)
চিন্তার রাজ্যে আমাদের একটু হোঁচট খেতে হয়। কারণ ভারতীয় হিন্দুরা  যে রামের জন্ম অযোধ্যায় বলে জিগির তুলছে সেখানে ঐতিহাসিকরা এমন কথা বললেন কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, রাম ছিলেন আর্য। পাঁচ হাযার বছর পূর্বে ভারতীয় উপমহাদেশে আর্যদের আগমন শুরু হয়। তারা ইরান ও আফগানিস্তান দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। এদেশে অনার্যদের (আদিবাসী) সঙ্গে আর্যদের সংঘর্ষ হয়। উন্নত  ভাষা,  সংস্কৃতি  ও অস্ত্র দিয়ে তারা  এদেশে রাজ্য বিস্তার করে অনার্যদের শাসন করে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রায় ২০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে রামের পিতা রাজা দশরথ উত্তর ভারত দখল করেন। এজন্য রামকে আর্য পুত্র বলা হয়। আবার হিন্দুদের মতে, রামচন্দ্র হ'লেন, বিষ্ণুর সপ্তম অবতার। মহামুণি বাল্মীকি খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে আদর্শ চরিত্র রামচন্দ্রকে নিয়ে রামায়ণ রচনা করেন (বাংলাপিডিয়া, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত)
গোদাবরী নদীর তীরে বসে বাল্মীকি রামায়ণের শে­াক রচনা করলেও রামচন্দ্রের জন্মস্থানের কোন উল্লেখ নেই সেখানে। পরিণত বয়সে রাম কিভাবে পিতৃ আদেশ শিরধার্য করে বনবাসে গেলেন সেই কাহিনী বর্ণিত হয়েছে রামায়ণে। এ সূত্রে বলা যায়, রামচন্দ্র একটি পৌরাণিক চরিত্র, ঐতিহাসিক নয়। অন্যদিকে সম্রাট বাবর ১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইবরাহীম লোদিকে পরাজিত করে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। বাবরের সে ঐতিহাসিক বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সেনাপতি মীর বাকী ১৫২৮ খ্রিষ্টাব্দে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ নির্মাণ করেন। এ কারণে এ মসজিদটি ঐতিহাসিক স্থাপত্যের নিদর্শনও বটে। আদালত অযোধ্যাকে রামের জন্মস্থান হিসাবে নির্ধারণ করে যে রায় প্রদান করেছেন সে রায়কে সমালোচনা করে ভারতের স্বনামধন্য সাংবাদিক সিদ্ধার্থ ভারাদারাজন বলেন, 'কবি তুলসীদাস তার 'রামচরিতমানস' (সংস্কৃত রামায়ণের হিন্দি অনুবাদ) লিখেছিলেন ষোল শতকে অযোধ্যায় বসে। কিন্তু রামের জন্মস্থান নিয়ে তিনি কিছু না বললেও ৫০০ বছর পরে আদালত সেই জন্মস্থানটি এত নিশ্চিত করেন কিভাবে?
এ একটি বিষয়ই আদালত আমলে নিলে বাবরি মসজিদের রায়টি অন্যরকম হ'তে পারত। আবার হিন্দুদের যে দাবী, 'রামমন্দির ভেঙ্গে বাবরের সেনাপতি বাবরি মসজিদ নির্মাণ করেন' সেটাও অসার প্রমাণিত হয়, যদিও আদালত এত কিছু বুঝতে চেষ্টা করেননি। সেনাপতি মীর বাকী যদি রামমন্দির ভেঙ্গে মসজিদ তৈরি করতেন, তাহ'লে সে বিষয়ে ইতিহাস নীরব কেন? তাছাড়া উক্ত স্থানে যদি রামের মন্দির থাকত তাহ'লে সে মন্দির কারা তৈরি করে বা কার আমলে তৈরি হয়েছিল তাও জানা যেত। মন্দির ধ্বংস করে মসজিদ তৈরি করলে সমসাময়িককালের হিন্দুদের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হওয়ার কথা এবং তৎকালের ঐতিহাসিকগণও মুঘলদের শাসন-ত্রাসনের বর্ণনায় এর উল্লেখ করতেন। সম্রাট বাবরের মত ধার্মিক ও বিজ্ঞ শাসকের পক্ষে কিভাবে মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ তৈরির অনুমতি দেয়া সম্ভব হ'ল তা আমাদের বোধগম্য হয় না। বরং ভারতীয় হিন্দুরা-ই যে মুঘল শাসকদের বেশি পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছে সেটা ঐতিহাসিক সত্য। হাইকোর্টের কাছে ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগের রিপোর্ট ও রাডার সমীক্ষার যে সচিত্র প্রতিবেদন ছিল তাতে মন্দির থাকার কোন চিহ্নই পাওয়া যায়নি। যদিও ভারতের মত বৃহৎ রাষ্ট্রে প্রাগৈতিহাসিককাল থেকে মানব সভ্যতার যে নিরন্তর ভাঙ্গাগড়া চলে এসেছে, একবিংশ শতাব্দীতে এসে তার হিসাব মেলানো সত্যি খুবই দুরূহ ব্যাপার। ইতিহাস যেখানে নীরব, সেখানে সাক্ষ্য প্রমাণ ও যুক্তিকে পাশ কাটিয়ে সম্প্রদায় বিশেষের প্রতি অযৌক্তিক পক্ষপাত প্রদর্শন করা আদালতের পক্ষে প্রাগৈতিহাসিক ঘটনা বৈ কিছু নয়।
বাবরি মসজিদের ট্রাজিক পরিণতি তখনই নিশ্চিত হয়ে যায় যখন এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু হয়। গত শতকের ৮০ দশকে বিশ্বহিন্দু পরিষদ বিজেপি ও আরএসএস রামের জন্মস্থানকে মুক্ত করার জন্য রাজনৈতিকভাবে পদক্ষেপ নেয়। এটা তাদের পক্ষে সম্ভব, কারণ তারা নিজেদের কট্টর হিন্দুত্ববাদী বলে প্রমাণ করেছে। কিন্তু কংগ্রেসের ভূমিকা আমরা ঠিক মেলাতে পারি না। ১৯৯২ সালে মসজিদ ভাঙ্গার পূর্বে কংগ্রেসের মত ধর্মনিরপেক্ষ দলের প্রধান রাজীব গান্ধীর ভূমিকা এবং ভাঙ্গার সময় প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাওয়ের ভূমিকা কংগ্রেসের দর্শন সম্পর্কে আমাদের সন্দিহান করে তোলে। এবারের রায়েও যার ব্যতিক্রম হয়নি।
কংগ্রেস যে ধর্মনিরপেক্ষতার আবরণে হিন্দুত্ববাদকে প্রতিষ্ঠা করছে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কংগ্রেস শুধু চেয়েছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এড়িয়ে চলতে, তাই বিচারের নামে সালিশ করে একজনের সম্পত্তিতে অন্যদের শরীক বানিয়ে দিতে দ্বিধা করেননি। এ কারণে লেখিকা ও সমাজকর্মী অরুন্ধতি রায় এ রায়কে 'Political statement' বলে কঠোর সমালোচনা করেছেন।
এই রায়ের মধ্যে ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের প্রতিফলন ঘটেছে বলেও আমরা মনে করি। দ্বিজাতিতত্ত্বের নামে ভারত বিভাগ হ'লেও আসলে ভারত বিভক্ত হয়েছে সাম্প্রদায়িক সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। মূলতঃ সেখানেই ২:১ থিউরির উৎপত্তি হয়, ভারত বিভাগের সকল দায় জিন্নাহর ঘাড়ে চাপানো হ'লেও তা প্রাপ্য অংশ থেকে তৎকালীন কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ অত্যন্ত  সুকৌশলে বঞ্চিত করেন। বাংলা, পাঞ্জাব, কাশ্মীর, সিন্ধু প্রভৃতি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ হওয়া সত্ত্বেও আধাআধি ভাগ করে জন্ম দেয়া হয় এক দীর্ঘস্থায়ী রক্তক্ষয়ী বিবাদের। পুরো উপমহাদেশের ৩ ভাগের ২ ভাগের থেকেও বেশী কংগ্রেস এবং অবশিষ্ট ১ ভাগের থেকেও কম মুসলিম লীগের জন্য দেয়া হয়। বাবরি মসজিদের সেই বিভাগ কংগ্রেসের সে ২:১ থিউরিকে পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেয়।
এখন একই জমিতে দুই উপাসনালয় তৈরি করে কংগ্রেস যতই তাদের অসাম্প্রদায়িক মনোভাব প্রকাশ করুক না কেন তার মূলে যে ২:১ থিউরির মানসিকতা একেবারে নেই এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না।  এটা আসলে দীর্ঘস্থায়ী সাম্প্রদায়িক বিবাদের একটা স্থায়ী ব্যবস্থা মাত্র। তাই জওহর লাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিবেদিত মেনন এ রায়ের সমালোচনায় বলেন,
"It is a 'second demolition' of The Babri Mosque. By accepting the claim that Ram was born at the Babri site, the judjes have don grane injustice to the original owners of the property. It has legitimised and justified the wanton destruction of a place of Muslim worship in secular India." (The Daily star, 8 October 2010)
সমালোচকগণের মতে, সংখ্যালঘু মুসলমানদের প্রতি সরকার ও হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর বৈরী মনোভাব ভারতের অগ্রগতির পথে প্রধান প্রতিবন্ধক। এ রায়ে প্রমাণিত হয়, ভারতের মুসলমানরা বহিরাগত এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। তাদের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা দেয়া ভারত সরকারের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। বস্ত্ততঃ মুসলমানদের পিছে ঠেলে দিয়ে ভারত নিজেই পিছিয়ে যাচ্ছে। ভারতের নৃতাত্ত্বিক ও ভাষাগত ইতিহাস পর্যালোচনাকালে প্রমাণিত হয়, আজ আর কেউ বহিরাগত নয় আজ সকলেই স্থানীয় ও ভারতীয়। পাঁচ হাযার বছর পূর্বে আর্যদের আগমনের মধ্য দিয়ে ভারতে বাহিরাগতদের আধিপত্য বিস্তারের যে লড়াই শুরু হয়েছিল, সে স্রোতে বৈদিক ব্রাহ্মণেরা যেমন এসেছেন,  তেমনি মুসলমান ধর্ম প্রচারক, শাসকগণও এসেছেন। ক্রমান্বয়ে ইউরোপীয় বণিক বেশে এসেছে ইংরেজরা। ইংরেজরা না পারলেও হিন্দু-মুসলমানরা এদেশকে নিজেদের দেশ হিসাবে গ্রহণ করেছে।  ফলে সরকারের মনে রাখা উচিত, মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির তৈরি করে ভারতের তেত্রিশ কোটি দেবতাকে (?) হয়ত সন্তুষ্ট করা যেতে পারে, কিন্তু তেত্রিশ জন জাগ্রত বিবেককেও সন্তুষ্ট করা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়।
তাই ভারত সরকারের উচিত সাম্প্রদায়িক অচলায়তন থেকে মুক্ত হয়ে হিন্দুত্ববাদী অপশক্তির হিংস্র থাবা থেকে বাবরি মসজিদের সম্পত্তিকে উদ্ধার করে বৈধ মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া। সরকারের নিরপেক্ষরতা ও আন্তরিকতাই এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট হবে বলে আমরা মনে করি।
[সংকলিত]

http://www.at-tahreek.com/march2011/2-5.html

রক্তস্নানের বছর কুড়ি পর অযোধ্যার পথে

Update: December 6, 2012 09:11 IST


উনিশশো বিরানব্বইয়ের ৬ ডিসেম্বর। আজ থেকে ঠিক ২০বছর আগে ধুলোয় মিশেছিল গণতান্ত্রিক ভারতের ধর্ম নিরপেক্ষতার অহংকার। ধর্মের জিগির তুলে অযোধ্যায় বহু শতাব্দী প্রাচীন এক ধর্মীয় স্থাপত্যকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিল কিছু উন্মাদ। ধর্মীয় আবেগকে কেন্দ্র করে জ্বলে ওঠা সেই আগুনে পুড়েছিল গোটা দেশ। তারপর কেটে গিয়েছে দুটি দশক। পায়ে পায়ে হাজির আরেকটা ছই ডিসেম্বর। রক্তস্নানের ২০ বছর পর কেমন আছে অযোধ্যা? 

দাঙ্গার পড়েই মুখ থুবড়ে পড়েছিল ধর্মনগরী অযোধ্যার অর্থনীতি। অশান্তির আশঙ্কায় দিনে দিনে কমেছে পর্যটকের সংখ্যা। তুলসীর মালা বা সাদা পাথরের মূর্তি কিনতে আজ আর ভিড় চোখে পড়ে না দোকানের সামনে। স্বচ্ছল থেকে ক্রমশ সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন এইসব শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। এক সময় পর্যটকরা আসতেন। মন্দির নগরীতে তাঁরা থাকতেন, ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করতেন দেব-দেবীর মূর্তি, তুলসী বা রূদ্রাক্ষের মালা। কিন্তু ৯২ সালের ৬ ডিসেম্বরের পর সবই অতীত। এখন আর পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় নেই অযোধ্যা।  

তুলসীর মালা আজও অবশ্য বিক্রি হয় অযোধ্যা শহরের পথের ধারের দোকানে। কিন্তু আগের তুলনায় চাহিদা অনেকটাই কম। তাই ব্যবসায়িদের মধ্যে অনেককেই গ্রাস করেছে হতাশা। এঁরা প্রত্যাকেই চান, এগিয়ে আসুক সরকার।

এই শিল্পীদের বাঁচাতে, অযোধ্যার শিল্পগুলিকে বাঁচাতে প্রশাসনের অবশ্য কোনও হেলদোল নেই। এক সময় এই শিল্পীরা মনে করতেন, রাম মন্দির তৈরি হলে তাঁদের অবস্থার উন্নতি হবে। কিন্তু বাবরি-কাণ্ডের বিশ বছর পরে রাম মন্দির বিশ বাঁও জলে। মানুষ বুঝতে পেরেছেন, আসল রাজনীতিটা ঠিক কোথায়। রাজনৈতিক ইস্যুই যে প্রভাব ফেলেছে তাঁদের জীবন এবং জীবিকার ওপর।   

ধর্মের জিগির তুলে যারা দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে চেয়েছিল, অযোধ্যা তাদের সফল হতে দেয়নি। মন্দির-মসজিদের শহরে হিন্দু-মুসলিম উভয়েই পরস্পর পরস্পরের ওপর নির্ভরশীলতায় বেঁচে রয়েছেন। ধর্মনগরী অযোধ্যা। পর্যটক, তীর্থযাত্রী থেকে শুরু করে সাধু-সন্ত, পুজারী-পুরোহিতদের নিত্য আসা-যাওয়া। এসবের জেরে জমে উঠেছে ব্যবসাও। দীর্ঘদিন ধরেই অযোধ্যায় মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ খড়ম তৈরি করে আসছেন। মালা গাঁথেন মন্দিরের জন্য। অযোধ্যায় এ সবে কোনও বাধা নেই। সমস্যা তৈরি করে শুধু বাইরের লোকেরা। রাজনীতির কারবারিরা। এখানকার মানুষ আর মন্দির-মসজিদের নামে ধর্মের জিগির তোলার পক্ষে নন। অযোধ্যায় অশান্তির আগুন জ্বললে মানুষ আর এ মুখো হবেন না। পর্যটকরা না এলে ব্যবসাও যে মার খাবে একথা বিলক্ষণ জানেন এখানকার সাধারণ অধিবাসীরা। 

শুধু অযোধ্যায় নয়, ১৯৯২-এ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রভাব পড়ে গোটা ভারতে। ধাক্কা খায় দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তি। আজ কুড়ি বছর পর প্রশ্ন উঠছে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যেই কি সেদিন অযোধ্যায় ধর্মের জিগির তুলেছিল বিজেপি ? উত্তর খুঁজছেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষই।
দুদশক পরেও বন্ধ হয়নি কমুণ্ডলের রাজনীতি। গো-বলয়ে তাদের পৃথক অস্তিত্বের লড়াইয়ে বিজেপি এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ রাম মন্দির ইস্যুকে এখনও জাগিয়ে রাখতে চাইছে। যদিও, তারা স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দুদশক আগের আন্দোলন বর্তমানে অনেকটাই  প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। রাম মন্দির একসময় ছিল বিজেপির অন্যতম প্রধান ইস্যু। ধর্মের ভিত্তিতে ভোটারদের মেরুকরণ ঘটানোর উদ্দেশ্যও অনেকটাই সফল হয়েছিল। মসজিদ ভেঙে মন্দির নির্মাণের উন্মাদনা উস্কে দিয়ে একসময় যে তারা রাজনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছিল, তা মেনে নিচ্ছে বিজেপি।

এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চের রায়ে বর্তমানে তিনভাগে বিভক্ত অযোধ্যার বিতর্কিত জমি। যদিও, এই রায়ে সন্তুষ্ট নয় বিজেপি, ভিএইচপি। তারা চাইছে সর্বোচ্চ আদালতে যত দ্রুত সম্ভব চূড়ান্ত মীমাংসা।

আর, মন্দির-মসজিদ বিতর্কের মধ্যে না গিয়ে অযোধ্যার সাধারণ মানুষ চাইছেন শান্তি। তাঁরা আর চাইছেন না স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষের হাতের পুতুল হতে। 

গত ২০ বছর ধরে নিরাপত্তার চাদরে মোড়া ধর্মনগরী অযোধ্যা। বিতর্কিত জমি থেকে অনেক দূরেও ব্যারিকেডের বাধা। সমস্যায় তীর্থযাত্রী থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা। দুদশক ধরে নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনি দেখতে দেখতে হাঁফিয়ে উঠেছেন তাঁরা। মন্দির-মসজিদ নয়। চাই একটু শান্তিতে বাঁচার সুযোগ। উন্নয়ন। কর্মসংস্থান। বলছে নতুন শতকের অযোধ্যা। কেন অযোধ্যায় ভাল কলেজ নেই ? কেন যেতে হবে লখনউ ? প্রশ্ন তুলছে অযোধ্যার যুবসমাজ। 

অযোধ্যা বদলে যাচ্ছে। কিন্তু, রাষ্ট্র যাঁরা চালান, তাঁদের মনে ভয় দূর হয়নি। হঠাত্‍ করে যদি জ্বলে ওঠে অশান্তির আগুন ? তাই সর্বত্র নিরাপত্তার কড়াকড়ি। ভারী বুটের শব্দ। বিতর্কিত জমির চারপাশে পাঁচিল। অসংখ্য নিরাপত্তারক্ষী। জমি থেকে৫ কিলোমিটার পর্যন্ত ঘোষিত হয়েছে ইয়োলো জোন। এই এলাকায় ঢুকতে গেলে পেরোতে হবে ব্যারিকেডের বাধা।

ধর্মের জিগির তুলে সেদিন যাঁরা ধ্বংসের খেলায় মেতেছিলেন সময়ের সঙ্গে তাঁদের অনেকেই মত বদলেছেন । বিতর্কিত জমিও আদালতের বিচারধীন। তবু, আজও চলছে মন্দিরের জন্য পাথর খোদাইয়ের কাজ। কিন্তু কেন? সবই রাজনীতি,বলছে অযোধ্যা। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের আগে ১৯৯০ সালে শিলান্যাস হয়েছিল রামমন্দিরের। সেসময় দেশজুড়ে প্রচারে নেমেছিল বিজেপি ও ভিএইচপি। রামমন্দির সমর্থকদের প্রত্যেককে একটি করে ইট সঙ্গে আনার আহ্বান জানানো হয়। সারাদেশ থেকে রামমন্দির সমর্থকদের বয়ে আনা ইট স্তুপাকারে জমতে থাকে বিতর্কিত জমির আশেপাশে। শুধু ইট নয়, মন্দির তৈরির জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে রাজস্থান থেকে আনা হয় পাথর। আসেন খোদাই শিল্পীরাও। মন্দিরের জন্য তৈরি হয় অসংখ্য স্তম্ভ। সেই স্তম্ভের গায়ে এখন শুধুই শ্যাওলার পুরু আস্তরণ।

অযোধ্যায় বহু শতাব্দী ধরে পাশাপাশি শান্তিতে বাস করেছিল দুই সম্প্রদায়। কোনওরকম বিরোধ ছাড়াই। সেই কালো শুক্রবারেও সম্প্রীতির বন্ধন ছিল অটুট। তাহলে কী করে রাতারাতি বদলে গেল সেই শান্তির পরিবেশ? অযোধ্যাবাসীর ধারণা, এর পিছনে কাজ করেছিল গভীর কোনও ষড়যন্ত্র। তবে কুড়ি বছর আগের সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি আর নেই। ধীরে ধীরে ফিরে এসেছে শান্তি। ফিরেছে সম্প্রীতি। মসজিদের দাবি ছাড়েননি মুসলিমরা। হিন্দুরাও অনড় তাঁদের মন্দিদের দাবিতে। তবে এই সমস্যার এখন আইনি সমাধানই চায় দুই সম্প্রদায়। আরেকটা কালো শুক্রবার চান না অযোধ্যাবাসী। 

http://zeenews.india.com/bengali/nation/after-20-years-of-violance-in-ayodhya_9779.html


News Details - Full Banner_Above

যুক্তি তর্ক গল্প

এবার বিএনপির আওয়ামীকরণ!

আবুল মোমেন | তারিখ: ১০-১১-২০১২


রাজনীতির নিয়ম অনুযায়ী, এ সফরকে অত্যন্ত সফল বলে প্রচার করছে বিএনপি। এদিকে এতকালের ভারত-বন্ধু একমাত্র দল হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ শিবিরে, প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসার ভাষায়, 'নার্ভাসনেস' দেখা দিয়েছে। তাঁরা কেউ কেউ এ সফরকে গুরুত্বহীন ও ব্যর্থ প্রমাণ করার জন্য নানা কথা বলছেন। 
বিএনপি যদি আন্তরিকভাবে তাদের নীতিতে পরিবর্তন ঘটায় এবং তা যদি কেবল ভারতের স্বার্থরক্ষায় সীমিত না থেকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও অন্যান্য স্বার্থরক্ষায় কার্যকর হয়, তবে দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির লাভ হবে। কারণ, বিএনপির এ পরিবর্তনকে, একটু লঘুচালে বলা যেতে পারে—এ হলো বিএনপির আওয়ামীকরণ। তাতে তো আওয়ামী লীগের খুশি হওয়ারই কথা, অবশেষে তাদের অনুসৃত নীতি মানতে বিএনপি বাধ্য হচ্ছে। তাতে তাদের নীতিই যে ঠিক ছিল এবং তারাই অনুসরণীয় রাজনীতি করে এসেছে, সেটাই তো প্রমাণিত হয়।
আমরা দেখেছি ভারতবর্ষে হিন্দুত্ববাদের ধ্বজা উড়িয়ে অনেক দাঙ্গাহাঙ্গামার পটভূমিতে ভারতীয় জনতা পার্টি যখন দিল্লির ক্ষমতায় এসেছিল এবং যখন এককালের জনসংঘ নেতা অটল বিহারি বাজপেয়ি প্রধানমন্ত্রী ও রামমন্দির আন্দোলনের পুরোধা লালকৃষ্ণ আদভানি উপপ্রধানমন্ত্রী, তখন কিন্তু ভারত রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির বাইরে গিয়ে কিছু করা তাদের জন্য দুষ্কর ছিল। তারা পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তনের চেষ্টা করেছিল কিন্তু তা ব্যাপক সমর্থন পায়নি, স্থায়ীও হয়নি। বাংলাদেশে বিষয়টা ছিল বিপরীত। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বারবার প্রমাণ করতে হয়েছে, তারা প্রকৃত মুসলমানদের দল। আওয়ামী লীগ বরাবরই মুসলিমপ্রধান দল এবং ধর্মবিশ্বাসী ও ধর্ম পালনকারীদেরই দল ছিল। কিন্তু দলটি গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ থেকে রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি গ্রহণ করেছিল। তারা দেশের সব সম্প্রদায়ের সমন্বয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা বলত, একসময় সমাজতন্ত্রের কথাও বলেছে। তদুপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতিবেশী ভারতের ব্যাপক সহযোগিতায় দেশ স্বাধীন হয়েছে বলে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে তাদের সঙ্গে ভারত সরকার, বিশেষত কংগ্রেস দলের ভালো সখ্য গড়ে উঠেছিল। এই সমঝোতাকে তারা রাজনীতিতে বরাবর মর্যাদা দিয়েও এসেছে। ফলে ভারতের সঙ্গে আস্থা ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে আওয়ামী লীগের। এ কারণেই এতকাল বিএনপি ও মুসলিম জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী দলগুলো নির্বাচনী রাজনীতিতে ঘায়েল করার জন্য আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বরাবর ইসলামবিরোধিতা ও ভারতপ্রীতির অভিযোগ এনেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মসজিদ থেকে উলুধ্বনি হবে, এমনকি নামাজ পড়া যাবে না এমন অপপ্রচারণাও নির্বাচনের সময় শোনা যায়। পার্বত্য চুক্তির পর খালেদা জিয়া এমন কথাও বলেছিলেন যে, দেশের ওই অংশ ভারতের অংশ হয়ে যাবে। ফেনী থেকে চট্টগ্রামে যেতে পাসপোর্ট লাগবে। ভারতের সঙ্গে যেকোনো চুক্তি হলেই তারা বলত, দেশকে ভারতের করদ রাজ্য বানানোর গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। বিএনপির এ রাজনীতি একেবারে বিফলে যায়নি। দু-দুবার নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার পেছনে তাদের এ রাজনীতির কিছু ভূমিকা তো মানতেই হবে।
ইসলাম নিয়ে রাজনীতির ফল বিএনপি একচেটিয়া ভোগ করে যাবে, সেটা মুসলিমপ্রধান ও ধর্মপ্রাণ আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব কেন হতে দেবে। তারা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের বিষয়গুলো প্রকাশ্যে নিয়ে এল। দল বেঁধে মসজিদে যাওয়া, সভা মুলতবি রেখে জামাতে নামাজ আদায়, হজ করা ও নামের আগে আলহাজ ব্যবহার, টুপি মাথায় দেওয়ার পাশাপাশি অনেকে দাড়ি রাখতেও শুরু করলেন। এসব কিন্তু ভান নয়, তাঁরা আগেও ধার্মিক ছিলেন, কেবল তা প্রকাশ্যে এতটা লোক দেখিয়ে জাহির করতেন না। আজ অবস্থা এমন হয়েছে যে যাঁরা রাজনীতিতে প্রকৃত সেক্যুলার প্ল্যাটফর্ম খোঁজেন, যাঁরা রাজনীতি থেকে ধর্মকে দূরে রাখতে চান, তাঁরা একটু হতাশই হয়ে পড়েছেন। রাজনীতির মাঠে প্রকৃত সেক্যুলার গণতান্ত্রিক দল আজ কোথায়?
এ কথা ভাবলে দোষ দেওয়া যাবে না যে দীর্ঘদিন রাষ্ট্রীয় পীড়নের শিকার হয়ে এবং ক্ষমতার বাইরে থাকতে বাধ্য হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ক্ষমতার জন্য আওয়ামী লীগ বিএনপি, এমনকি জামায়াতের রাজনৈতিক কালচারকে গ্রহণ করে ফেলেছে। ফলে একে সীমিত পরিসরে আওয়ামী লীগের বিএনপিকরণ (কট্টরপন্থীরা বলবেন জামায়াতীকরণ) বলতে চাইবেন অনেকে।
কথাটা কিন্তু একদম ফেলনা নয়। ক্ষমতার রাজনীতির বৃত্তে যেসব পরিবর্তন ঘটে, তার প্রভাব ক্ষমতাকেন্দ্রে কিছু তো পড়েই, কিন্তু বৃহত্তর সমাজে তা পড়ে আরও ব্যাপক ও গভীরভাবে। আজকে আমরা যদি দেশের গ্রামসমাজের এবং মফস্বলের দিকে তাকাই, তা হলে দেখব, গ্রামগুলো সাংস্কৃতিকভাবে নির্জীব হয়ে পড়েছে। এর পেছনে অর্থনৈতিক কারণ এবং বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসনের কথা বলা যাবে। কিন্তু তার চেয়ে কোনো অংশে কম নয় জামায়াত ও অন্যান্য ধর্মব্যবসায়ীর তৎপরতা। তারা সুপরিকল্পিত কর্মতৎপরতা চালিয়ে গ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক জীবনকে রুদ্ধ করে দিয়েছে। যে গ্রামে আগে বছরে পাঁচটি নাটক হতো, যাত্রা হতো, নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো, সেখানে এখন ওয়াজ নসিহত ছাড়া কিছুই হয় না। স্কুল-কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় না। রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী নিয়ে অনেক হইচই হলো, কিন্তু সবই ঢাকা ও দু-একটি শহরে গণ্ডিবদ্ধ। অতীতে স্কুল-কলেজে যে রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তী হতো, এখন সেসব স্মৃতি। ফলে আমাদের অজান্তে, বাঙালি জাতীয়তাবাদের বড় দল আওয়ামী লীগের ঔদাসীন্যে সমাজের বিএনপি-জামায়াতীকরণের কাজ কিন্তু অনেক দূর হয়ে গেছে। এতে ইসলামের লাভ হয়নি, বাংলাদেশের তো নয়ই।
দেশে সাম্প্রতিক কালে সাম্প্রদায়িক যেসব হামলা, লুণ্ঠন, ধ্বংসের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়, তা প্রতিরোধে স্থানীয় পর্যায়ের আওয়ামী নেতারা বিশেষ ভূমিকা নেন না, আর কর্মীদের কেউ কেউ তো অপকর্মে যুক্ত হয়ে যান। বর্তমানে বিশ্বরাজনীতিতে আমেরিকার প্রতিপত্তি বেড়েছে, আঞ্চলিক রাজনীতিতে মার্কিনবান্ধব ভারতের প্রভাব বাড়ছে। ভারত বিএনপির কাছে যা চায়, তাতে আমেরিকার সমর্থন আছে। সৌদি আরব ও পাকিস্তানের অন্তরে যা-ই থাক, প্রকাশ্যে বিএনপির এই পরিবর্তন তাদের মানতে হবে।
তবে বিএনপিতে আশ্রয় নেওয়া দ্বিজাতিতত্ত্বে বিশ্বাসী রাজনীতিকেরা এখন কী বলবেন। ভারত সফরের পটভূমিতে বিএনপি যদি তার প্রচারণার কৌশল বদলে প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ইসলাম গেল ও ভারতপ্রীতির প্রচারণা চালাতে না পারে, জামায়াতকে সঙ্গে রাখতে না পারে, তা হলে তার হাতে ধারালো অস্ত্র আর কী থাকে? দলের এই অংশ নেহাত ছোট নয়, সমর্থক ও ভোটারদের মধ্যেও এরা সংখ্যায় বেশি। এদের খালেদা জিয়া কী জবাব দেন, কী ব্যাখ্যা দেন বা কীভাবে সামলান, সেটাই হবে এখন দেখার বিষয়। আমার মতো মানুষের পক্ষে সহজেই বলা সম্ভব, বিএনপি সামনে চলার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাকে নিয়েই এগোলে দেশ ও বিএনপির উপকার হবে। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের ফসল বাংলাদেশ কোনোকালেই এ যুদ্ধ এবং এর রাজনৈতিক উত্তরাধিকার অস্বীকার করতে পারবে না। এত মানুষ যুদ্ধে যুক্ত হয়েছেন, দেশের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন, অপরিসীম কষ্ট ভোগ করেছেন যে আওয়ামী লীগ হাল ছাড়লে বা ঢিলে দিলেও তাঁরা দেবেন না। বাংলাদেশের সরকারি দল, বিরোধী দল—সবারই আদর্শিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হতে হবে। এটা ন্যূনতম চাহিদা।
ধর্ম ও ভারত বাদ দিয়েও বর্তমান সরকারকে চেপে ধরার জন্য এত ইস্যু ছড়িয়ে আছে যে ইস্যুর জন্য বিএনপিকে হাতড়াতে হবে না। কিন্তু ইসলাম ও ভারত কার্ড নিয়ে খেলতে চাইলে মানুষ এখন বিরক্ত হবে বলেই আমার বিশ্বাস। কারণ, মানুষ মাত্রই পেছনে যেতে চায় না। তারা চায় দুর্নীতিমুক্ত দক্ষ প্রশাসনের এক সরকার। সেটা দিতে অতীতে যেমন বিএনপি পারেনি, তেমনি আওয়ামী লীগও পারছে না। 
দুই দলই দুর্নীতি রোধে, দক্ষ সুশাসনের এবং অগ্রাধিকার কর্মসূচির প্রস্তাব নিয়ে মানুষের কাছে আসুক। দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প থেকে মুক্ত এক বাংলাদেশই আজ মানুষের স্বপ্ন।
 আবুল মোমেন: কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-11-10/news/304116


বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনায় অনুতপ্ত নই: ভগবত

তারিখ: ০৬-১২-২০০৯


ভারতীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভগবত বলেছেন, ১৭ বছর আগে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনায় সংঘের অনুতাপ করার প্রশ্নই আসে না। বরং ওই মসজিদের স্থানে রামমন্দির স্থাপনের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। গতকাল শনিবার ভারতীয় শহর চণ্ডীগরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। 
সম্প্রতি বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনায় গঠিত লিবারহান তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে অভিযোগ করা হয়েছে, উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত ছিল এবং এতে তত্কালীন রাজ্য সরকার, আরএসএস ও ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) শীর্ষনেতারা জড়িত। বিজেপি ও আরএসএসের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মোহন ভগবত বলেন, কোনো ষড়যন্ত্র নয়, বরং জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমেই বাবরি মসজিদের পতন হয়েছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেক লোকও এতে জড়িত ছিলেন। যা কিছুই ঘটেছে, তা রামমন্দির নির্মাণ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাই এ নিয়ে আরএসএসের অনুতপ্ত হওয়ার কিছু নেই। কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, 'যাদের আফসোস করার তারা আফসোস করুক।'
বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনায় অংশগ্রহণকারী কয়েকজন মুসলিম নেতার নাম জানতে চাইলে আরএসএসের প্রধান জানান, ওই দিন প্রবীণ বিজেপি নেতা মুখতার আব্বাস নাকভি ও মুজাফফর হুসাইনের মতো মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকে উপস্থিত ছিলেন। রামমন্দির আন্দোলনে সংঘের সমর্থন অব্যাহত রাখার কথা জানিয়ে মোহন ভগবত বলেন, সংঘ নিজস্ব নির্দেশনা অনুসারে কাজ করে যাচ্ছে। 'সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বা আদালতের আদেশে অথবা জনগণের মতৈক্যের ভিত্তিতে—যেভাবেই হোক রামমন্দির নির্মাণ করার ব্যাপারে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।' 
বাবরি মসজিদ ভাঙার পরে মুসলিম ও খ্রিষ্ট সম্প্রদায়সহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংঘের নৈকট্য বেড়েছে দাবি করে মোহন ভগবত বলেন, 'আমাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার। অন্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই।' বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা সংঘের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে বলেও দাবি করেন তিনি। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়। টাইমস অব ইন্ডিয়া।

অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বিশ বছর পালন

সর্বশেষ আপডেট বৃহষ্পতিবার, 6 ডিসেম্বর, 2012 13:13 GMT 19:13 বাংলাদেশ সময়
অযোধ্যা মসজিদ

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বিশতম বার্ষিকীতে মুসলমান সম্প্রদায় মসজিদে তুলেছে কালো পতাকা

ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের অযোধ্যায় ঠিক কুড়ি বছর আগে ৬ই ডিসেম্বর কয়েক হাজার উগ্র হিন্দুত্ববাদীর আঘাতে ধ্বংস হয়েছিল ষোড়শ শতাব্দীতে তৈরি বাবরি মসজিদ৻

আজ অযোধ্যায় মুসলমানরা মসজিদে কালো পতাকা তুলে শোক পালন করেছেন, আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একাংশ পালন করেছেন শৌর্য দিবস৻

এই হিন্দুরা মনে করেন তাঁদের ভগবান, রামের জন্মস্থান ভেঙ্গে দিয়ে জোর করে মসজিদ বানিয়েছিলেন বাবর৻

অযোধ্যা শহরে ঢুকতেই রাস্তায় পড়ে রামজন্মভূমি থানা আর তার পর থেকেই কয়েক মানুষ উঁচু হলুদ আর কালো রঙয়ের মোটা লোহার বেড়া৻ বেড়ার ওপরে কাঁটা-তার আর মাঝে মাঝে নজরদারি চালানোর টাওয়ার৻

ওটাই বিতর্কিত বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমির জমি৻

প্রতিটা মোড়েই পুলিশ চৌকি - গাড়ি আর মানুষের যাতায়াতের ওপরে কঠোর নিয়ন্ত্রণ৻ স্থানীয় বাসিন্দাদেরও প্রবেশ পাস নিয়ে চলাফেরা করতে হয় কুড়ি বছর ধরেই৻

একাধিক নিরাপত্তা বলয়ের একেবারে ভেতরেরটার দায়িত্ব আধা সামরিক বাহিনীর৻ আর বাইরের বলয়গুলোতে থাকে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী৻

আজ, ছয়ই ডিসেম্বর, যেদিন ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল মসজিদ। আজ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আরও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে৻ কয়েক হাজার পুলিশ আর আধা সেনা নিয়ে আসা হয়েছে বাইরে থেকে৻

ওই বিতর্কিত এলাকার পাশেই থাকেন হাজী মেহবুব আহমেদ, যাঁর বাবা বিতর্কিত স্থানটি যে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মস্থল, সেই দাবি জানিয়ে একটি মামলা করেছিলেন ষাট বছর আগে ।

হাজী মেহবুব আহমেদ ওই কালো দিনটার কথা মনে না করানোর অনুরোধ করেও বলছিলেন, "পরিবারের সঙ্গে আমি বাড়িতেই ছিলাম সেদিন৻ দুপুরের মধ্যে মসজিদ ভেঙ্গে পড়তে শুরু করলো৻ সরকার ভেঙ্গে দিয়ে কার্ফু জারি করার সময় অবধিও বাড়িতেই ছিলাম৻ তারপরে সামনের থানায় চলে যাই৻ রাতের মধ্যেই পুলিশ সরিয়ে দিয়েছিল আমাদের মতো আরও অনেককে৻ আর তার পরেই হামলা শুরু হয়েছিল অযোধ্যার মুসলমানদের ওপরে৻ বহিরাগতদের সঙ্গে স্থানীয়রাও সেই হামলায় ছিল৻ পরিস্থিতি একটু ঠান্ডা হলে অযোধ্যায় ফিরেছিলাম৻ গোটা বাড়িটাই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল, জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল সব কিছু৻"

"বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার পরে মুসলমানদের মনে যে গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে, তা সারিয়ে তোলার জন্য সরকারের যা করণীয় ছিল, সেটা করা হয় নি৻ "

জাফরিয়াব জিলানী, বাবরি মসজিদ একশন কমিটি

বাবরি মসজিদ – রাম জন্মভূমি বিতর্কের শুরু ১৯৪৯ সালের এক রাতে – যখন কেউ মসজিদের মধ্যেই হিন্দুদের ভগবান রামচন্দ্রের মূর্তি বসিয়ে দিয়ে আসে৻

তালা বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই ধর্মস্থলে৻

তার পরেই মি: আহমেদের বাবা মামলাটি করলেও ষাট বছর ধরে চলতে থাকা সেই মামলার এখনও নিষ্পত্তি হয় নি – শুনানি চলছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে৻

যদিও বছর দুয়েক আগে রাজ্য স্তরের হাইকোর্ট বিতর্কিত জমিটিকে রামচন্দ্রের জন্মভূমি বলে মেনে নিয়েও দেড় হাজার বর্গ মিটার জমিটিকে তিনভাগে ভাগ করে এক ভাগ মুসলমানদের, এক ভাগ রামচন্দ্রের যে মূর্তি রয়েছে– তাঁর নামে আর তৃতীয় ভাগটি হিন্দুদেরই একটি গোষ্ঠীর নামে দিয়ে দেওয়ার আদেশ দিয়েছিল৻

ওই রায়ের বিরুদ্ধে সব পক্ষই আপিল করেছে সুপ্রিম কোর্টে৻

আর জমির অধিকার নিয়ে চলা ওই মামলার মধ্যেই ১৯৮৬ সালে এক স্থানীয় আদালতের নির্দেশে ধর্মস্থলের তালা খুলে দেওয়া হয়। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো শুরু করে রামমন্দির তৈরির এক ব্যাপক পরিকল্পনা৻

সারা দেশ থেকে শ্রীরাম লেখা ইঁট নিয়ে এসে পুজো করে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয় ওই বিতর্কিত জায়গাতেই৻ কয়েক বছরের মধ্যেই হিন্দু সংগঠনগুলো রামমন্দির তৈরির সেই পরিকল্পনাকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যায়, যার ফল ৬ ডিসেম্বরের ধ্বংসলীলা আর তার পরবর্তী জাতি দাঙ্গা৻

ষাট বছরে যেমন চূড়ান্ত হয় নি জমির অধিকারের প্রশ্নটি, তেমনই, মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা আর দাঙ্গায় উস্কানি দেওয়ার জন্য বিজেপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে যে ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়েছিল, তাতেও কারও সাজা হয় নি এখনও৻ কুড়ি বছর ধরে সেই মামলা চলছে৻

বাবরি মসজিদ একশন কমিটির নেতা ও আইনজীবী জাফরিয়াব জিলানী এই বিলম্বের জন্য সরকারকেই দোষ দিচ্ছেন।

মি. জিলানী বলছিলেন, "বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার পরে মুসলমানদের মনে যে গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে, তা সারিয়ে তোলার জন্য সরকারের যা করণীয় ছিল, সেটা করা হয় নি৻ হাজার হাজার মানুষের চোখের সামনে যাঁরা মসজিদ ভেঙ্গে ফেলায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁদের কোনও সাজা কুড়ি বছরেও হল না৻ কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো বা সিবিআই ওই মামলার দায়িত্বে। একের পর এক সরকার এসেছে, কিন্তু সিবিআইকে দিয়ে ওই অভিযুক্তদের বিচার শেষ করাতে পারে নি সরকার৻ সরকার তো মুসলমানদের ভরসা দেওয়ার মতো কিছু করে দেখাতে পারে নি গত কুড়ি বছরে৻"

অযোধ্যা ইঁট

করসেবকপুরমে কুড়ে বছর ধরেই চলছে মন্দিরের বিভিন্ন অংশ তৈরির কাজ।

ওদিকে মসজিদ ভেঙ্গে ফেলে মন্দির গড়ার আন্দোলন গড়ে তুললেও বিতর্কিত স্থানে মন্দির কিন্তু এখনও বানাতে পারে নি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো৻ তবে অযোধ্যায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রধান দপ্তর করসেবকপুরমে কুড়ে বছর ধরেই চলছে মন্দিরের বিভিন্ন অংশ তৈরির কাজ। সাজিয়ে রাখা হয়েছে হাজার হাজার ইঁট আর নকশা খোদাই করা পাথর।

যে দ্রুততায় মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল, বেশ কয়েক বছর কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন হওয়া স্বত্ত্বেও কেন রামমন্দির বানাতে পারলো না হিন্দুত্ববাদী বিজেপি?

"এবারে যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে, তাহলে মন্দির তৈরি হবেই৻ বি জে পি রামমন্দির তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৻"

হৃদয় নারায়ণ দীক্ষিত, উত্তর প্রদেশ বিজেপি প্রধান

দলের উত্তরপ্রদেশের প্রধান মুখপাত্র হৃদয় নারায়ণ দীক্ষিত বলছিলেন, "যে সময়ে বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন সরকার ছিল, তখন এত বিস্তারিত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায় নি যে ওই জায়গাতে রামচন্দ্রের জন্ম হয়েছিল বা পুরনো মন্দির ভেঙ্গেই মসজিদ তৈরি হয়েছিল৻ এখন তো আর্কিওলজিকাল সার্ভে সে কথা স্পষ্ট করে বলেছে৻ এ ছাড়া কেন্দ্রে তো একটা জোট সরকার ছিল, অন্য জোট সঙ্গীদের নিয়েই বিজেপি-কে চলতে হয়েছে৻ তাদের বাধায় মন্দির তৈরি করতে পারা যায় নি৻ কিন্তু এবারে যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে, তাহলে মন্দির তৈরি হবেই৻ বি জে পি রামমন্দির তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৻"

হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএসের আরেকটি শাখা সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বিজেপি-র মতো কোনও রাজনৈতিক দল নয়, তাই তাদের রাজনৈতিক দায়বদ্ধতাও সীমিত। সেজন্যই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মুখপাত্র শরদ শর্মা বলতে পারেন যে মন্দির নিয়ে রাজনীতি করেছে সব দলই৻

"ভারতীয় জনতা পার্টি হোক বা যে কোনও দল, তারা যখন সরকার বানায়, তাদের ভোটের দিকে নজর দিতে হয় – প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হয়৻ কিন্তু রামমন্দির নির্মাণ আন্দোলন হিন্দুসমাজের আন্দোলন – হিন্দুরা যখনই চাইবে, তখনই মন্দির তৈরি হয়ে যাবে৻ রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে যাঁদের, তাঁদের জন্যই মন্দির তৈরিতে দেরী হচ্ছে, সরকারে গেলেই সব দল মুসলিমদের তোষণ করতে শুরু করে৻ মুসলিম তোষণ বন্ধ হলেই মন্দির তৈরি হয়ে যাবে৻ " বলছিলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতা শরদ শর্মা৻

অযোধ্যা নিরাপত্তা

অযোধ্যায় জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা

তবে হিন্দুত্ববাদী দলগুলোর কোনও দিনই রামমন্দির তৈরি করাটা আসল উদ্দেশ্য ছিল না৻ ভগবান রামের নাম করে সাধারণ মানুষের সমর্থন আদায় আর ভোটে জিতে সরকার তৈরি – এটাই আসল উদ্দেশ্য ছিল বিজেপি-র ৻ এমনটাই মনে করেন লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক রমেশ দীক্ষিত।

মি: দীক্ষিতের কথায়, "ভারতে এমন কিছু রাজনৈতিক শক্তি রয়েছে, যারা ধর্মের নামে মানুষকে উস্কিয়ে ভোট পেতে চায়৻ বিজেপি এমনই একটা দল৻ ধর্ম নিয়ে সাধারণ মানুষের যে আবেগ রয়েছে, সেটাকেই কাজে লাগায় বিজেপি। অযোধ্যার পরে হয়তো কাশী, মথুরার দিকে তারা নজর দেবে৻ মন্দির বানানো নয়, ভোট পাওয়া আর সরকার গড়াই তাদের আসল উদ্দেশ্য৻ মানুষ কিন্তু এই চালাকিটা ধরে ফেলেছে৻ সেজন্যই রামমন্দির এখন আর বড় ইস্যু নয় – বরং মূল্যবৃদ্ধি, বেকারীর মতো সাধারন মানুষের প্রতিদিনের ইস্যুগুলোই বড় ইস্যু, মানুষ সেগুলো নিয়েই বেশি চিন্তিত৻"

তাহলে দীর্ঘদিন ধরে যে অযোধ্যা ইস্যু ভারতের রাজনীতিতে অন্যতম প্রধান হয়ে থেকেছে, ৯২-র পরে একের পর এক রক্ত ঝরানোর ঘটনা ঘটিয়েছে, সেটার কি এখন আর কোনও গুরুত্বই নেই?

"ভারতে এমন কিছু রাজনৈতিক শক্তি রয়েছে, যারা ধর্মের নামে মানুষকে উস্কিয়ে ভোট পেতে চায়৻ বিজেপি এমনই একটা দল৻"

রমেশ দীক্ষিত, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক

লক্ষ্ণৌতে বিবিসির সংবাদদাতা রামদত ত্রিপাঠির বলছিলেন, "বিতর্কিত জায়গাটি নিয়ে এখনও হিন্দু আর মুসলমান – দুই পক্ষের মধ্যেই আবেগ রয়েছে, এটা অস্বীকার করা যায় না৻ তবে ৯২-এর থেকে পরিস্থিতি পাল্টেছে অন্য কারণে৻ হিন্দুত্ববাদী দলগুলো যেভাবে উচ্চবর্ণের হিন্দু থেকে শুরু করে পশ্চাদপদ জাতিগোষ্ঠী বা দলিত – সবাইকে রামমন্দির আন্দোলনে সামিল করতে পেরেছিল, এখন সেই সমীকরণটা বদলে গেছে৻ দলিত বা পশ্চাদপদ জাতিগোষ্ঠীর নিজের নিজের রাজনৈতিক দল রয়েছে – যথেষ্ট শক্তিশালী সংগঠন সেগুলো৻ তারা এখন আর বি জে পি-র রামমন্দির আন্দোলনের সামিল হয় না৻ তবে ইস্যুটা থেকেই গেছে, তার সঙ্গে আবেগও জড়িয়ে রয়েছে মানুষের৻ তবে সব মানুষই এটা বুঝেছে যে এ নিয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা করার মানে হয় না৻ আদালত যা নির্দেশ দেবে, সেটাই সব পক্ষ মেনে নেবে৻ "

অযোধ্যার সাধারণ মানুষও বলছেন ঢের হয়েছে দাঙ্গা হাঙ্গামা। দুই পক্ষই একসঙ্গে মিলে মিশে থাকতে চান তাঁরা এখন৻

অনেকে বলছেন মন্দির বা মসজিদের থেকেও অযোধ্যায় দরকার ভালো স্কুল কলেজ, চিকিৎসা ব্যবস্থা আর নাগরিক পরিষেবা৻

কয়েক দশক ধরে চলতে থাকা এই দীর্ঘ লড়াইতে কে লাভবান হল, কারই বা ক্ষতি হল – সেই প্রশ্নের উত্তরে জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম প্রধান নেতা প্রমোদ তিওয়ারী বলছিলেন, "এটা প্রমাণিত যে ৬ই ডিসেম্বরের ঘটনায় কারা লাভবান হয়েছে৻ ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে যে দল – সেই বিজেপি-র সংসদ সদস্য দুই থেকে বেড়ে ৮০-রও বেশি সাংসদ জিতিয়ে আনতে পেরেছে৻ তার পর কেন্দ্রেও তারা সরকার তৈরি করতে পেরেছিল৻ তাই হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোরই লাভ হয়েছে এটা পরিস্কার এবং সবসময়েই নির্বাচনের আগে এটা পরিকল্পিতভাবে করা হয়। অন্যদিকে, ধ্বংস হয়েছে মসজিদ, এটাও ঘটনা৻"

কিন্তু মি: তিওয়ারী বলছেন বড় ক্ষতির কথা যদি বলতে হয়, তাহলে সেটা হয়েছে ভারতের৻ দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে যে অবিশ্বাস, যে ফাটল তৈরি হয়েছে, সেটাই ক্ষতি৻

http://www.bbc.co.uk/bengali/news/2012/12/121206_mb_ayodhya_20yrs.shtml


উন্নয়নের সঙ্গে নরম হিন্দুত্বের কৌশল

 

আজ দিল্লিতে মোদী, কুম্ভে সিঙ্ঘলরা
কংগ্রেসকে বিঁধে হিন্দুত্বের সুর আরও চড়াচ্ছে বিজেপি
হিন্দুত্বের আন্দোলন ফের জাগিয়ে তুলতে আগামী কাল মহাকুম্ভে সাধু-সন্তদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)। আবার আগামী কালই উন্নয়নের পাঠ পড়াতে দিল্লির এক কলেজে আসছেন মোদী। এর ঠিক এক দিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দের 'গেরুয়া-সন্ত্রাস'-এর পাল্টা জবাব দিতে নয়া কৌশল নিল বিজেপি। 
সঙ্ঘের নির্দেশে বিজেপি নেতা মুরলী মনোহর জোশীকে দিয়ে দলের সদর দফতরে এক সাংবাদিক বৈঠক হল। যেখানে সঙ্ঘের নির্দেশিত পথে হেঁটেই জোশী দাবি করলেন, সমঝোতা বিস্ফোরণের পিছনে আসলে হাত ছিল পাকিস্তানের মদতপুষ্ট লস্কর-ই-তইবা, আল-কায়দা, সিমি ও ডেভিড কোলম্যান হেডলির। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের ২০০৯ সালের প্রস্তাব ও মার্কিন রাজস্ব বিভাগের ঘোষণাতেও তা বলা হয়েছে। পাক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ২০১০ সালে তা কবুলও করেন। তাঁর অভিযোগ, এ সব জানার পরেও কেন্দ্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলির সাহায্যে ওই ঘটনা নিয়ে গেরুয়া-শিবিরকে আক্রমণ করছে কংগ্রেস।
সমঝোতা বিস্ফোরণের তদন্তে যখন সঙ্ঘের সঙ্গে জড়িত নেতাদের গ্রেফতার করা শুরু হয়, তখন থেকেই আরএসএস-ভিএইচপি নেতারা দাবি করেছেন, এর সঙ্গে সঙ্ঘ কোনও ভাবেই জড়িত নয়। পরে অবশ্য বিজেপি নেতারা এর থেকে দূরত্ব তৈরি করেন। কিন্তু রাজনাথ সিংহ সভাপতি হওয়ার পরেই আরএসএস-বিজেপি-ভিএইচপি-র মহাবৈঠকে ঠিক হয়, বিজেপিকেও হিন্দু ভাবনার প্রচার শুরু করতে হবে। সঙ্ঘ যেমন রামমন্দির আন্দোলন ফের জাগিয়ে তুলতে চাইছে, তেমনই গো-বলয়ে ভোটব্যাঙ্ক বাড়ানোর জন্য বিজেপিও রাজনৈতিক ভাবে হিন্দুত্বকে কাজে লাগাক। সেই পথ ধরেই কুম্ভের বৈঠকের আগে জোশীর মতো নেতা আজ সুর চড়ালেন।
হিন্দুত্বের পাশাপাশি বিজেপি উন্নয়নের মডেলটিকেও তুলে ধরতে চায়। বিজেপির কাছে নরেন্দ্র মোদীই এক মাত্র ব্যক্তি, যিনি একাধারে হিন্দুত্বের 'পোস্টার বয়', আবার উন্নয়নেরও প্রতীক। ভিএইচপি নেতা অশোক সিঙ্ঘল ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, গোটা দেশ মোদীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায়। কিন্তু ভিএইচপি-র আর এক নেতা প্রবীণ তোগাড়িয়ার সঙ্গে মোদীর সম্পর্ক ভাল নয়। আজ তোগাড়িয়াকে মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি তা এড়িয়ে যান। তোগাড়িয়ার সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক বেধেছে সঙ্ঘ পরিবারের অন্দরে। কিন্তু বিজেপির অনেক শীর্ষ নেতাই এ ধরনের উগ্র হিন্দুত্বে ফিরতে চান না। দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, "এটি ঠিক, সংখ্যালঘু ভোটের তেমন প্রত্যাশা আমাদের নেই। কিন্তু রাজনীতির মেরুকরণ হলে আমাদের লাভ না ক্ষতি, সেটিও পর্যালোচনা করা দরকার। কিন্তু সঙ্ঘ এখন হিন্দুত্ব ও উন্নয়নের মধ্যে ভারসাম্য রেখেই এগোনোর দাওয়াই দিচ্ছে।" 
উন্নয়নের সেই পাঠ পড়াতেই আগামিকাল দিল্লির শ্রীরাম কলেজে আসছেন মোদী। উন্নয়ন মন্ত্রে গুজরাত জয়ের পর দিল্লিতে এটাই তাঁর প্রথম প্রকাশ্য সভা। রাহুল গাঁধী যখন যুবকদের কংগ্রেসের দিকে টানতে উদ্যোগী হচ্ছেন, তখন মোদীও নিজেকে যুব সম্প্রদায়ের আশার আলো হিসেবে তুলে ধরতে চান। এই লক্ষ্যেই দিল্লির কলেজে গিয়ে তিনি সরাসরি যুবদের মুখোমুখি হবেন। মোদী বিলক্ষণ জানেন, তাঁকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করা নিয়ে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের ভিতরে-বাইরে কথা চললেও এ নিয়ে দ্বিধা কাটছে না। 
এই পরিস্থিতিতে মোদী ধীরে ধীরে গুজরাতের বাইরে নিজেকে প্রচারের মুখ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন। কুম্ভে ভিএইচপি-র বৈঠকে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী করার দাবি ওঠার সম্ভাবনা থাকলেও মোদী সেই বৈঠক এড়িয়ে যাচ্ছেন। কুম্ভযাত্রা আপাতত কিছু দিন পিছিয়ে দিতে চান মোদী। আগামী সপ্তাহে কুম্ভে যেতে পারেন তিনি।
http://www.anandabazar.com/archive/1130206/6desh2.html

 

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...