Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Memories of Another day

Memories of Another day
While my Parents Pulin babu and Basanti devi were living

Saturday, April 30, 2011

অস্ত্রবর্ষণের রহস্য

অস্ত্রবর্ষণের রহস্য

১৬বছর পরে ফাঁস হলো পুরুলিয়ায় বিমান থেকে অস্ত্রবর্ষণের আসল রহস্য। ১৯৯৫ সালের ১৭ই ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে পুরুলিয়ার ঝালদার কাছে জয়পুরে একটি বিমান থেকে প্রচুর পরিমাণ অত্যাধুনিক অস্ত্র ফেলা হয়। সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আনন্দমার্গীদের ব্যবহারের জন্যই এই অস্ত্র বিমান থেকে ফেলা হয়। এই অস্ত্র সরবরাহের নেপথ্যে ছিলো মারাত্মক একটি লক্ষ্য। চক্রান্তকারীরা চেয়েছিলো ঐ অস্ত্রের সাহায্যে সি পি আই (এম)-র বিরুদ্ধে হিংসাত্মক অভিযান চালাতে। আনন্দমার্গী সন্ত্রাসবাদীদের মাধ্যমে ঐ অস্ত্র ব্যবহার করে গোটা পশ্চিমবঙ্গকে অস্থির করে দিতে চেয়েছিলো চক্রান্তকারীরা। কেন্দ্রীয় শাসক দলের নেতারা চেয়েছিলেন ঐ অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে। ঐ কুচক্রীরা চেয়েছিলেন রাজ্যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত বামফ্রন্ট সরকারকে উৎখাত করতে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দপ্তর, প্রতিরক্ষা বিভাগ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সকলে যুক্ত ছিলো এই পরিকল্পনার সঙ্গে। মূল অপরাধী কিম ডেভিকে পা‍‌লিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলো দিল্লির কর্তারা এবং একজন সাংসদ। সামগ্রিকভাবে আন্তর্জাতিক অস্ত্র কারবারীদের সাহায্য করেছিলো দিল্লিতে ক্ষমতাসীন তৎকালীন কংগ্রেস সরকার।

পুরুলিয়ার যে অঞ্চলে অস্ত্র ফেলা হয় সেই জয়পুর ছিলো আনন্দমার্গীদের প্রধান ঘাঁটি। যে পরিধির মধ্যে অস্ত্র ফেলার কথা ছিলো তার বাইরে অস্ত্র পড়ায় তা মানুষের চোখে পড়ে যায়। স্থানীয় মানুষের সাহায্য নিয়ে পুলিস ঐ অস্ত্রগুলি আটক করে। অস্ত্র ফেলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জানা যায়, লাটভিয়ার একটি অস্ত্র কারবারীদের বিমান থেকে ঐ অস্ত্রশস্ত্র ফেলা হয়। লাটভিয়ার ঐ বিমানে ছিলো কিম ডেভি, পিটার ব্লিচ, দক্ষিণ আফ্রিকার আনন্দমার্গী দয়ানন্দ অবধূত এবং ৫জন বিমানকর্মী। এই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব সি বি আই'র হাতে তুলে দেয় রাজ্য সরকার। পরবর্তী সময়ে তদন্ত ‍‌ও বিচারে ব্লিচ ও পাঁচ লাটাভিয়ানের কারাদণ্ড হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করায় ২০০০ সালে লাটাভিয়ানরা এবং ২০০৪ সালে পিটার ব্লিচ মুক্তি পান। ২০০৪ সালে ব্লিচের মুক্তির ব্যাপারে উদ্যোগ নেন এন ডি এ সরকারের পক্ষে এল কে আদবানি। সেই সরকারের অন্যতম মন্ত্রী ছিলেন মমতা ব্যানার্জি। কিন্তু ডেনমার্কের নাগরিক কিম ডেভিকে ধরা যায়নি। ধরার চেষ্টাও হয়নি। ২০০৭ সাল থেকে ডেভিকে প্রকাশ্যে ডেনমার্কে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে। সি বি আই ডেভিকে গ্রেপ্তার করে দেশে ফেরত আনার ব্যাপারে কোনো তৎপরতা দেখায়নি। এই ঘটনা নিয়ে, রাজ্য সরকারের কাছে 'আগাম' সতর্কবার্তা পাঠানো হয় সাধারণ ডাক পাঠানোর পদ্ধতিতে। ফলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বার্তা রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরে পৌঁছোয় ঘটনার দু'দিন পর। পরিকল্পনামাফিকই এই বার্তা জরুরী ভিত্তিতে পাঠানো হয়নি।

১৯৮৮ সালে ত্রিপুরায় বিভিন্ন উগ্রপন্থী সংগঠনকে অস্ত্র দেওয়া হয়েছিলো। তারপর কেন্দ্র নিজেই সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে দি‍‌য়েছিলো। পশ্চিমবঙ্গেও একই কায়দা ব্যবহার করতে চেয়েছিলো কেন্দ্রের শাসক দল। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) তথা বামপন্থীদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির রাজনৈতিক চক্রান্ত চালিয়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। এদেশে প্রথম নির্বাচিত কমিউনিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হয় কেরালায়। পরবর্তীকালে ১৯৬৭ ও ১৯৬৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে যুক্তফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হয়েছে। ১৯৭৭ সালে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদ্ধতিতে চক্রান্ত চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে সেই চক্রান্ত চরমে উঠেছে। এই চক্রান্তের অঙ্গ হিসেবে এবারের নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা আসছে বামফ্রন্ট-বিরোধী কাজে ব্যবহারের জন্য। মাওবাদীদের অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করা হচ্ছে সি পি আই (এম) কর্মীদের হত্যা করার জন্য। ১৫ বছর আগের পুরুলিয়ার মতো এখনও চক্রান্ত চলছে বামপন্থীদের বিরুদ্ধে। এরাজ্যের মানুষই এই চক্রান্তকে ব্যর্থ করবেন।

অস্ত্র বর্ষণ হতে চলেছে, দিল্লিতে
তিন বার বার্তা দিয়েছিল ব্রিটেন

নিজস্ব প্রতিনিধি

নয়াদিল্লি, ২৯শে এপ্রিল- পুরুলিয়া অস্ত্র বর্ষণের আগের ৩৭দিনে ব্রিটিশ সরকার তিন বার ভারত সরকারকে জানিয়েছিল এমন ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। ১৯৯৫-র ১০ই নভেম্বর, ১৭ই নভেম্বর, ১৫ই ডিসেম্বর তিনটি বার্তা ভারত সরকারকে পাঠানো হয়েছিল। অথচ রহস্যজনক ভাবে ভারত সরকারের তরফ থেকে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি এই বিপজ্জনক বার্তা পাবার পরেও যে আন্তোনভ বিমানে অস্ত্র এসেছে তাকে ভারতে উড়ানের অনুমতি দেওয়া হয়। ভারতের কোনো বিমানবন্দরে তল্লাশিও হয় না। 

পুরুলিয়া কাণ্ডের দুই মূল অভিযুক্ত কিম ডেভি ও পিটার ব্লিচের সাক্ষাৎকার এক টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত হবার পরে ১৬বছর আগের ওই ঘটনা নিয়ে ফের আলোড়ন ওঠায় দিল্লির সরকারের ভূমিকা নিয়ে আবার প্রশ্ন উঠেছে। ব্রিটিশ সরকার যে বার্তা পাঠিয়েছিল তা তেমন গোপন কোনো সংবাদ না হলেও বারবারই দিল্লির তরফে তা ঢেকে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। শুক্রবার নির্দিষ্ট ভাবে এই তথ্য আবার সামনে এসেছে। 

অস্ত্র বর্ষণে অভিযুক্ত হয়ে ব্রিটিশ নাগরিক পিটার ব্লিচ যখন ভারতে কারাবন্দী, তখন তাঁর প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয় ব্রিটেনের হাউস অফ কমন্সেও। ২০০২সালের ২৭শে নভেম্বর কমনসের সদস্য টেডি টেলর ব্লিচের ঘটনা নিয়ে বিশদে বক্তৃতা দিয়ে তাঁর মুক্তির ব্যাপারে উদ্যোগ নেবার জন্য ব্রিটিশ সরকারকে অনুরোধ করেন। সেই ভাষণের জবাব দিতে গিয়ে সরকারের তরফে ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অ্যাফেয়ার্সের পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি অফ স্টেট বিল র‌্যামেল বলেছিলেন, ' ব্লিচ নর্থ ইয়র্কশায়ার পুলিসকে অস্ত্র ফেলার খবর দিয়েছিলেন, এই কথা সত্য। আমি এর সত্যতা জানাচ্ছি। ১৯৯৫-র ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২২শে সেপ্টেম্বর এবং ৮ই ডিসেম্বর তিন বার পুলিসকে তিনি বিশদ তথ্য দেন। ২২শে সেপ্টেম্বর এবং ৮ই ডিসেম্বর পুলিস ব্লিচকে ভারতে যেতে বারণ করে। ব্লিচের দেওয়া তথ্য তিন বার পৃথক ভাবে ভারত সরকারকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ১০ই নভেম্বর, ১৭ই নভেম্বর, ১৫ই ডিসেম্বর তিনটি বার্তা ভারত সরকারকে পাঠানো হয়েছিল।'

হাউস অফ কমনসের কার্যবিবরণীতে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের এই বয়ান লিপিবদ্ধ আছে। 

বিমান বোঝাই অস্ত্র আসছে, বিদেশ থেকে এই সতর্কবার্তা পাবার পরে ভারত সরকারের যা যা করা উচিত ছিলো, তা করা হয়েছিল কি? 

ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তদানীন্তন যুগ্ম সচিব শশী প্রকাশ ১২ই ডিসেম্বর তারিখ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে একটি চিঠি লেখেন। চিঠিটি বিস্ময়কর ভাবে সাধারণ ডাকে পাঠানো হয়। চিঠি এসে পৌঁছোয় ১৯শে ডিসেম্বর, অস্ত্র বর্ষণ হয়ে যাবার পরে। চিঠিটির তারিখ ১২ই ডিসেম্বর হলেও আদৌ তা ওইদিনই লেখা কিনা, তা নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্ন আছে। আরো গুরুত্বপূর্ণ হলো নিয়ম অনুযায়ী সরকারী পদাধিকারী এমন কোনো ধরনের তথ্য পেলে সঙ্গে সঙ্গেই নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেট বা থানায় ফৌজদারি বিধির ৩৯নং ধারা অনুযায়ী লিপিবদ্ধ করতে বাধ্য। এমনকি কোনো অপরাধ হতে চলেছে খবর পেলেই তিনি এফ আই আর দায়ের করতে বাধ্য। শশী প্রকাশ তা করেননি। অনেক পরে, ২০০০সালের ২৩শে অক্টোবর শশী প্রকাশের এই আচরণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এবং সি বি আই-র জবাব চায় দিল্লি হাইকোর্ট। শশী প্রকাশের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চেয়েছিল দিল্লি হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। 

এদিকে, এদিন সি বি আই দাবি করেছে, পুরুলিয়া অস্ত্র বর্ষণ মামলায় কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি বা ভারত সরকারের কোনো সংস্থার যোগাযোগের 'কোনো প্রমাণ' তাদের হাতে নেই। বৃহস্পতিবার এক টেলিভিশন চ্যানেলে ওই ঘটনার প্রধান দুই অভিযুক্তের সাক্ষাৎকারে ভারত সরকার, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং ভারতের রাজনৈতিক দলও এক প্রাক্তন সাংসদের যোগাযোগের অভিযোগ ওঠায় তা নিয়ে প্রবল আলোড়ন ওঠে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে। ১৯৯৫-র ডিসেম্বরে পুরুলিয়ায় ওই অস্ত্র বর্ষণে প্রধান অভিযুক্ত ডেনমার্কের নাগরিক কিম ডেভি ও ব্রিটিশ নাগরিক পিটার ব্লিচ তাঁদের বয়ানে জানিয়েছেন, অস্ত্র ফেলার ঘটনা ঘটেছে ভারত সরকারের জ্ঞাতসারেই। পশ্চিমবঙ্গে সি পি আই (এম)-র বিরুদ্ধে সশস্ত্র তৎপরতা ও বামফ্রন্ট সরকারকে উৎখাত করার লক্ষ্যে আনন্দমার্গকে ওই অস্ত্র দেওয়া হচ্ছিল। গোটা অভিযান পরিচালিত হয়েছে ভারত সরকারের সবুজ সংকেত নিয়ে, ভারতীয় গোয়েন্দারা সব জেনেও কোনো বাধা দেয়নি। বরং দিল্লির তরফে সাহায্য করা হয়েছে। ডেভি এমনও দাবি করেছেন তদানীন্তন সাংসদ বিহারের পাপ্পু যাদবের গাড়িতেই তিনি নেপাল সীমান্ত দিয়ে পালিয়েছিলেন। 

কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে এই অভিযোগের যথাযথ উত্তর দাবি করেছে সি পি আই (এম)-সহ বামপন্থীরা। শুক্রবার সি পি আই (এম) সুপ্রিম কোর্টের কর্মরত বিচারপতিকে দিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবিও তুলেছে। বি জে পি-ও এই প্রশ্নে সরকারের জবাব দাবি করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কোনো ব্যাখ্যা এখনও দেওয়া হয়নি। শুক্রবার সি বি আই-র মুখপাত্র ধরিনী মিশ্র বলেছেন, কিম ডেভির বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট প্রমাণ সি বি আই-র হাতে আছে। কীভাবে পুরুলিয়ায় অস্ত্র বর্ষণ ঘটানো হয়েছিল তার বিশদ তথ্যও আছে। ভারতের কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি বা সরকারী সংস্থা তাকে সাহায্য করেছিল বলে প্রমাণ আমাদের হাতে নেই। ডেভিকে ভারতে আনার জন্য সি বি আই সব রকমের চেষ্টা করছে। ভারতের আদালতে এবং ডেনমার্ক সরকারের কাছে সি বি আই প্রমাণ করতে পেরেছে যে ডেভির কাজ সন্ত্রাসবাদী কাজের শামিল। 

১৯৯৫-র ১৭ই ডিসেম্বর মধ্যরাত পেরিয়ে পুরুলিয়ার ঝালদার কাছে জয়পুরে অস্ত্র ফেলে যায় কিম ডেভিদের বিমান। নিশ্চিন্তেই এরপর থাইল্যান্ড চলে যায়। ফেরার পথেও চেন্নাই হয়ে করাচি ফেরার পথে মুম্বাই বিমানবন্দরের আকাশ থেকে বিমানটিকে নামতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু কিম ডেভি বিমানবন্দর থেকেই পালিয়ে যান। শুক্রবার সি বি আই মুখপাত্র এই অভিযানের 'বিশদ' জানে বলে দাবি করলেও তাদের তদন্ত চলাকালীন বহু প্রশ্নেরই কোনো জবাব দিতে পারেনি। ১৬বছর ধরে কিম ডেভিকে ভারতে নিয়ে এসে বিচার করতেও পারেনি। বরং তাদের বিরুদ্ধে বারেবারেই অভিযোগ উঠেছে তদন্ত শ্লথ করা হচ্ছে। কিম ডেভি যে ডেনমার্কে রয়েছেন এবং প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন তার তথ্য জানা থাকা সত্ত্বেও সি বি আই আদালতকে জানিয়েছে তাদের কাছে কোনো খবর নেই।

পুরুলিয়ার কাণ্ডে নতুন
তদন্তের দাবি পলিট ব্যুরোর

নিজস্ব প্রতিনিধি

নয়াদিল্লি, ২৯শে এপ্রিল- পুরুলিয়া অস্ত্রবর্ষণের তদন্ত নতুন করে শুরু করার দাবি জানালো সি পি আই (এম)। সুপ্রিম কোর্টের কর্মরত কোনও বিচারপতিকে দিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করার দাবি জানিয়েছে পার্টি। সেই অভিমুখে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে পলিট ব্যুরো। শুক্রবার এই বিবৃতি প্রকাশ করে সাংবাদিক সম্মেলনে পার্টির সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাত বলেছেন, গোড়ার দিন থেকে পশ্চিমবঙ্গে হিংসা তৈরি করে বামফ্রন্ট সরকারকে অস্থির করার চক্রান্ত হয়ে চলেছে। আজ কেন্দ্রে সরকারের শরিক তৃণমূল কংগ্রেসের মদতে সেই একই কাজ করে চলেছে মাওবাদীরা। সেদিনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই অস্ত্র ফেলা হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার 'টাইমস নাউ' চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকারে এই অস্ত্রকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত কিম ডেভি বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। ডেভির দাবি অনুযায়ী, অস্ত্রকাণ্ডের পুরো পরিকল্পনা জানতো সরকার। পরিকল্পিতভাবে তা করানো হয়। আবার ডেভিকে দেশের বাইরে সংগোপনে নিয়ে যাওয়া হয় সরকারের ছক অনুযায়ী। ডেভি প্রাক্তন সাংসদ পাপ্পু যাদবের নামও জানিয়েছেন। 

এই বিবৃতিতে এই প্রসঙ্গে পলিট ব্যুরো বলেছে, কিম ডেভির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পাপ্পু যাদবকে জেরা করতে হবে। কিম ডেভিকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার গোটা প্রক্রিয়ায় কে বা কারা কীভাবে যুক্ত ছিল তা প্রকাশ করতে হবে। একই সঙ্গে, সুপ্রিম কোর্টের কর্মরত কোনও বিচারপতিকে দিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু করতে হবে। কোন পরিস্থিতিতে পুরুলিয়ায় একটি বিদেশী বিমান থেকে অস্ত্রবর্ষণ করা হলো এবং যে চক্র তার সঙ্গে জড়িত ছিল তা খতিয়ে দেখতে হবে। কারাত বলেন, তথ্য থাকা সত্ত্বেও কেন কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তা কেন্দ্রকে ব্যাখ্যা করতে হবে।

পলিট ব্যুরো বলেছে, পুরুলিয়ার ওই ঘটনা দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাতের শামিল। তদন্তে এবং আদালতে বিচার প্রক্রিয়ায় প্রমাণিত যে আনন্দমার্গীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার জন্যই অস্ত্র ফেলা হয়। আসল উদ্দেশ্য ছিল, পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকারকে অস্থির করার জন্য হিংসাত্মক পরিবেশ তৈরি করা।

পলিট ব্যুরো বলেছে, নিলস ক্রিশ্চিয়ান নিয়েলসেন ওরফে কিম ডেভি, যে এখনও ফেরার এবং আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত পিটার ব্লিচের স্বীকারোক্তিতে এই ঘটনা ঘিরে নতুন প্রশ্ন সামনে এসেছে। এক, অস্ত্র ফেলার সময় কলাইকুন্ডা বায়ুসেনা ঘাঁটির রাডার বন্ধ থাকার তথ্য এসেছে। দুই, অস্ত্র ফেলার পর ওই বিমান কীভাবে থাইল্যান্ডের ফুকেতে গিয়ে ফের উড়ে এল চেন্নাইতে। বিমানটি নিয়ে সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও তা চেন্নাই থেকে উড়ে গেলই বা কীভাবে। তিন, কিম ডেভি ডেনমার্কে রয়েছে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। কেন্দ্রীয় সরকার ডেভিকে ভারতে নিয়ে আসার প্রশ্নে অতি শ্লথ ভূমিকা নিয়েছে।

কারাত বলেন, এর আগে ব্যাখ্যা ছিল যে বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে আনন্দমার্গীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে ওই ঘটনা হয়েছিল। তার জন্য দায়ী ছিল কেন্দ্রের ব্যবস্থাগ্রহণে অবহেলা। কিন্তু চক্রান্তকারীরা বলছে যে সরকারের মদত ছিল। সে জন্যই গোটা বিষয়টি নতুন করে তদন্ত করা প্রয়োজন।

এই প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ১৯৯৫সালের ১৭ই ডিসেম্বরের ওই ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রের হাতে তথ্য ছিল নভেম্বর মাসেই। ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা 'এম আই ৫' ভারতের 'র'-কে ওই আশঙ্কা জানিয়েছিল। অথচ, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে কেন্দ্র যে চিঠি দেয়, তা এসে পৌঁছায় অস্ত্রবর্ষণের পর। কারাত বলেন, সেই সময়ে মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুও একই কথা বলেছিলেন।

কিম ডেভির বক্তব্য অনুযায়ী, মুম্বাই বিমানবন্দর থেকে নেপালে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছিল পাপ্পু যাদব। পলিট ব্যুরো বলেছে, এই পাপ্পু যাদব এখন সি পি আই (এম) বিধায়ক অজিত সরকারকে খুনের দায়ে জেলে বন্দী। ডেভি এবং ব্লিচ দু'জনেরই বয়ানে যে বিষয়টি রয়েছে তা হলো, দেশের সরকারের মদতেই এই ষড়যন্ত্র কার্যকর হয়েছে। তা চেপে দেওয়ার জন্যই সরকারের তরফেই কলকাঠি নাড়া হয়েছে। সেই পরিপ্রক্ষিতে পলিট ব্যুরো বলেছে, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচিত বামপন্থী সরকার দেশের মধ্যে ও বাইরে অনেক শক্তির বিরক্তির কারণ। তার প্রতিফলন রয়েছে আজও। বামফ্রন্ট সরকারকে অস্থির করতে হিংসার আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। এমনকি, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গকে 'নিধন ক্ষেত্র' বলে আখ্যা দিয়ে সি পি আই (এম)-কে দায়ী করেছেন। বাস্তবে, তৃণমূল কংগ্রেসের মদতে হিংসা চালাচ্ছে মাওবাদীরা। আর এই তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেঁধে কেন্দ্রে সরকার চালাচ্ছে কংগ্রেস। 

প্রশ্ন ছিল, কংগ্রেস কি এই ঘটনার মদতদাতা? কারাত বলেন, কোনও ব্যক্তির দিকে আঙুল তোলার বিষয় নয়। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে, সেই সময়ের কংগ্রেস সরকার চক্রান্ত বাস্তবায়িত হতে দেওয়ার জন্য দায়ী।

অস্ত্রবর্ষণের ঘটনায় বিচারবিভাগীয়
তদন্ত দাবি জানালেন মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ২৯শে এপ্রিল—পুরুলিয়া অস্ত্রবর্ষণের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানালেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শুক্রবার এক বিবৃতিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ১৬বছর আগে এই অস্ত্রবর্ষণের নেপথ্যে রাজনৈতিক চক্রান্ত সংবাদমাধ্যমের মারফত প্রকাশিত হয়েছে। এই ঘটনার গভীরতার পরিপ্রেক্ষিতে এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার স্বার্থে বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য আমি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। 

এদিন প্রেস বিবৃতিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৫সালের ১৭ই ডিসেম্বর মধ্যরাতে পুরুলিয়ায় একটি বিমান থেকে আনন্দমার্গীদের জন্য প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র ফেলা হয়। এই সংক্রান্ত একটি সতর্কবার্তা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্রদপ্তরে এসে পৌঁছায় ঘটনা ঘটে যাওয়ার কয়েকদিন পরে। ১২ই ডিসেম্বর তারিখের ঐ বার্তাটি ডাক বিভাগ মারফত অত্যন্ত মামুলি পদ্ধতিতে দিল্লি থেকে কলকাতায় পাঠানো হয়। ঘটনার গুরুত্ব অনুসারে জরুরী ভিত্তিতে কোনো আগাম তারবার্তা রাজ্যের কাছে পাঠানো হয়নি। ডাক বিভাগ মারফত পাঠানোয় চিঠিটি এসে পৌঁছায় পুরুলিয়ায় অস্ত্রবর্ষণ ঘটে যাওয়ার পর। 

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই অস্ত্রবর্ষণের ঘটনার গুরুত্ব উপলব্ধি করে রাজ্য সরকার তদন্তের দায়িত্ব সি বি আই-এর হাতে তুলে দেয়। বিমান থেকে ফেলা এই সমস্ত অত‌্যাধুনিক অস্ত্র রাজ্য পুলিস সি বি আই-এর হেফাজতে দেয়। এই ঘটনার তদন্ত শুরু থেকে বাজেয়াপ্ত করা সমস্ত অস্ত্রই সি বি আই-এর হেফাজতে রয়েছে। ঘটনার গভীরতার পরিপ্রেক্ষিতে এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার স্বার্থে বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানান মুখ্যমন্ত্রী।

প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী  
শুক্রবার আরামবাগ মায়াপুর হাটে বামফ্রন্ট প্রার্থীদের সমর্থনে ডাকা সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছবি: দিলীপ সেন

পুরুলিয়ায় অস্ত্রবর্ষন নিয়ে চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি

১৯৯৫ সালের ১৮ই ডিসেম্বর পুরুলিয়ায় রহস্যজনক অস্ত্রবর্ষনের ঘটনা সম্পর্কে ১৫ বছর বাদে মুখ খুললেন ঐ অপারেশনের চাঁই কিম ডেভি। তিনি 'টাইমস নাউ' সংবাদ চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কেন্দ্রের মদতে ঐ অস্ত্রবর্ষনের উদ্দেশ্য ছিল গ্রামবাসীদের সশন্ত্র করা। পশ্চিমবঙ্গে 'কমিউনিষ্ট সন্ত্রাস' ঠেকানোর জন্য নাকি ঐ ভাবে অস্ত্র ফেলা হয়েছিল।

কিম জানিয়েছেন, ঐ অভিযানের পিছনে কেন্দ্রের রাজনৈতিক শক্তিগুলির মদত ছিল। 'র' আগেই ঐ অস্ত্রবর্ষন পরিকল্পনার কর্মসূচী অনুমোদন করেছিল। এ ব্যাপারে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এম – ১৫ এবং 'র' – র মধ্যে যোগাযোগ ছিল। কেন্দ্রের তৎকালীন রাজনৈতিক শক্তিগুলি তাদের রাজনৈতিক স্বার্থপূরণের জন্য এ ব্যবস্হায় সায় দিয়েছিল। ১৯৮৮ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার ত্রিপুরায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করেছিল। তার আগে তারা ঐ রাজ্যের বৈরী গোষ্ঠীগুলির হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গেও একইরকমভাবে নয়ের দশকের প্রথম দিকে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সে কারনেই স্থানীয় মানুষকে সশস্ত্র করার জন্য ঐ অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়।কিম ডেভি জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে আনন্দমার্গীদের যোগাযোগ ছিল।

তৃণমূলের বেআইনী ব্যাঙ্ক ড্রাফটের
কথা মানলো ইউ বি আই

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ২৯শে এপ্রিল— নির্বাচনে তৃণমূলের কালো টাকার ব্যবহারের যে অভিযোগ করেছিলেন সি পি আই (এম) নেতা গৌতম দেব, তা এবার পরিষ্কার দিনের আলোর মতো এক এক করে সত্যি বলে প্রমাণিত হচ্ছে। তৃণমূলের চাপে ১কোটি ২৩লক্ষ টাকার ব্যাঙ্ক ড্রাফট যে অবৈধভাবে করা হয়েছে তা একরকম প্রকাশ্যেই স্বীকার করে নিয়েছেন ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর ভাস্কর সেন। শুক্রবার এক সাংবাদিক বৈঠকে ভাস্কর সেন বলেন, ওই ঘটনার তদন্ত চলছে। দুজন উচ্চপদস্থ কর্মীকে 'প্রশাসনিক বদলি'ও করা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের কোথায় বদলি করা হলো সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছুই বলেননি ভাস্কর সেন। এর থেকে পরিষ্কার ওই দুই আধিকারিককে 'বাধ্যতামূলক বরখাস্ত' করা হয়েছে। সমস্ত কৈফিয়ত রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও ইলেকশন কমিশনকে নির্দিষ্ট সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। 

ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিটের শাখায় গত ২৩শে মার্চ দুপুর দুটোর পর ১কোটি ২৩লক্ষ টাকার ড্রাফট করাতে যান তৃণমূল নেতা মুকুল রায়ের রাজনৈতিক সচিব দেবপ্রিয় দে সরকার। দলীয় প্যাডে লেখা মুকুল রায়ের চিঠি দেখিয়ে আ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজারকে ড্রাফট করার জন্য চাপ দেন ওই সচিব। ভিস্যুয়াল অডিও'র নামে ওই পরিমাণ টাকার পাঁচটা পে অর্ডার দেওয়ার কথা বলা ছিলো চিঠিতে। লেখা ছিলো তৃণমূলের প্যান কার্ড নম্বরও। সেদিন অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজারের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে ড্রাফটে সই করে দেন জনৈক জুনিয়র অফিসার। শুক্রবার ভাস্কর সেন জানান, ইউ বি আই ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিট শাখার এ জি এম এবং দক্ষিণ কলকাতা শাখার রিজিওনাল ম্যানেজারকে প্রশাসনিক বদলি করা হয়েছে।

নির্বাচনে তৃণমূলের কালো টাকা ব্যবহার নিয়ে বেশ কিছুদিন আগেই সরব হয়েছিলেন রাজ্যের আবাসন মন্ত্রী গৌতম দেব। প্রমাণ হিসেবে কুপনের পোড়া অংশ দেখিয়েছিলেন তিনি। বিভিন্ন উৎস থেকে এই কালো টাকার জোগান আসছে বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। অবশেষে সমস্ত অভিযোগেরই এক এক করে সত্যতা প্রমাণিত হচ্ছে। সি পি আই সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের কাছে মুকুল রায়ের লেখা চিঠিটি দেখিয়ে ফের একবার দুর্নীতির অভিযোগ আনেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তিনি মুকুল রায়কে এবং ইউ বি আই-এর চেয়ারম্যানকে এই ঘটনা সত্য বা মিথ্যা তা বলতে বলেন। সত্যি হলে তা স্বীকার করার চ্যালেঞ্জ জানান। তৃণমূল শিবির নিশ্চুপ থাকলেও এদিন ঘটনার সত্যতা এক রকম স্বীকার করলেন ইউ বি আই-এর চেয়ারম্যান ম্যানেজিং ডিরেক্টর ভাস্কর সেন। ঘটনার তদন্ত চলছে বলে তিনি বিষয়টি এড়ানোর চেষ্টা করেন এদিন।

এরই সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন ওঠে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিধি ভেঙে, নির্বাচন কমিশনের বিধি লঙ্ঘন করে কীভাবে এই অন্যায় করে পার পেয়ে যাচ্ছে তৃণমূল। গোপন সূত্রের খবর, সেদিন ইউ বি আই-এর প্রাক্তন কর্মী দেবপ্রিয় দে সরকার এ জি এম-এর সঙ্গে পূর্ব পরিচয়ের সূত্রেই ব্যাঙ্কে গিয়ে ড্রাফট করানোর জন্য চাপ দেন। সঙ্গে দেখান চিঠিটি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম অনুযায়ী ৫০হাজার টাকার বেশি নগদ টাকায় ড্রাফট করা যাবে না। এক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে হবে। নির্বাচনে ১লক্ষ টাকার বেশি নগদ ব্যবহার করা যাবে না বলে নির্দেশ ছিলো নির্বাচন কমিশনেরও। এগুলির কোনোটাই মানা হয়নি বলে সাংবাদিকদের জানান বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুও। তিনি অভিযোগ করেন, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে এই বেআইনি কাজ করা হয়েছে যথেষ্ট সুপরিকল্পিতভাবে। টেলিফোনে নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্মীদের সঙ্গে আগে থেকেই কথাবার্তা বলা ছিলো। 

অন্যদিকে শুক্রবারের সাংবাদিক বৈঠকে ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের বার্ষিক আর্থিক ফলাফল প্রকাশ করেন চেয়ারম্যান ম্যানেজিং ডিরেক্টর ভাস্কর সেন। মুনাফা ও ব্যবসার পরিমাণ বেড়েছে ইউ বি আই-এর। ২০১০—১১ আর্থিক বছরে মোট মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫২৩ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা। গত বছরের তুলনায় বৃদ্ধি হয়েছে ৬২.৫ শতাংশ। ব্যবসা বৃদ্ধি হয়েছে ১৮.৮ শতাংশ। সব মিলিয়ে ২০১১ সালের ৩১শে মার্চ পর্যন্ত ইউ বি আই-এর মোট ব্যবসার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৩১ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা। ব্যাঙ্কে জমা বা ডিপোজিটের হার ১৪.২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৭ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকায়। কার্যকরী মুনাফার পরিমাণ ১৫০৬.৯৯ টাকা। গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ৭২.১ শতাংশ। অ্যাডভান্সেস বা অগ্রিম ২৬.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকায়। ইন্টারেস্ট ইনকাম গত আর্থিক বছরের তুলনায় বেড়েছে ২০.৮ শতাংশ। এর পরিমাণ ৬৩৪১ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা। চেয়ারম্যান জানান, আরো সম্প্রসারণ হচ্ছে ইউ বি আই-এর। ২০১০—১১ আর্থিক বছরে আরো ৬৩টি শাখা খোলা হয়েছে। ২২৫টি অতিরিক্ত এ টি এম খোলা হচ্ছে। উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটায় একটি আর্সেনিক ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট গড়ে তুলেছে ইউ বি আই। দেশের গ্রামীণ এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পেও গত কয়েক বছর ধরে জোর দিয়েছে ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া।

কং-ডি এ‌ম কে'র আচরণ সমর্থন করা যায় না : কারাত

সংবাদ সংস্থা

ন‌য়াদিল্লি, ২৯শে এপ্রিল — গত বৃহস্পতিবার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (পি এ সি)-র বৈঠকে কংগ্রেস এবং ডি এম কে সাংসদেরা যে ধরনের আচরণ করেছেন তা সি পি আই (এম) সমর্থন করে না। শুক্রবার এখানে এ কথা বলে সি পি আই (এ‌ম)-র সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাত মন্তব্য করেন, বোঝাই যাচ্ছে কংগ্রেস এবং ডি এম কে ২জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত যে কোনো রিপোর্ট বানচাল করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।

কারাত জানান, পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটিতে যে সি পি আই (এম) সাংসদ আছেন তিনি ২জি রিপোর্ট নিয়ে কংগ্রেস এবং ডি এম কে-র অবস্থান সমর্থন করেন না। য‍‌দি কোনো সদস্য কোনো রিপোর্ট সম্পর্কে একমত না হন তাহলে কি হবে সে সম্পর্কে পি এ সি-র নিয়মকানুন আছে।

এদিকে রিপোর্ট শনিবার লোকসভার অধ্যক্ষ মীরা কুমারের কাছে জমা দেওয়ার ব্যাপারে পি এ সি চেয়ারম্যান মুরলীমনোহর যোশী শুক্রবার কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। মীরা কুমার উপস্থিত না থাকলেও তাঁর দপ্তরে পি এ সি-র রিপোর্ট জমা দেওয়া যায়। পি এ সি-র মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩০শে এপ্রিল।

এদিকে পি এ সি সদস্য ও প্রবীণ বি জে পি নেতা যশবন্ত সিং শুক্রবার অভিযোগ ক‍‌রেছেন, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং তৎকালীন অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।


নন্দীগ্রামে বামফ্রন্ট প্রার্থী পরমানন্দ ভারতীকে নিয়ে প্রচার মিছিল। ছবি: শ্যামল মজুমদার

জমির প্রশ্ন উধাও,সেই সামাদের
মুখেও এখন গণতন্ত্রের দাবি

চন্দন দাস

নন্দীগ্রামে ভোট হচ্ছে। কিন্তু তৃণমূলের প্রচারে কোথাও জমির প্রশ্নই নেই! কারণ, তৃণমূলই এখন জমি দখল করছে নন্দীগ্রামে।

মাওবাদী-তৃণমূল জোট এখানেই আরো পাকাপোক্ত হয়েছিল। ৩৬জন সি পি আই (এম) কর্মী শহীদ হয়েছেন। সেখানে, প্রতি গ্রামে পৌঁছে বামফ্রন্টের প্রার্থী, কর্মীরা প্রচার করতে চাইছেন। কৃষকের বাড়ি বাড়ি যেতে চাইছেন। কিন্তু অন্তত ৫টি পঞ্চায়েতে একজন কৃষকের সামনেও বামফ্রন্ট বা অন্য কোন পক্ষকে পৌঁছোতে দিচ্ছে না তৃণমূলের কর্মীরা। 

কারণ সৈয়দ আবদুস সামাদের কথায় — 'গ্রামবাসীরা যদি ভোট দিতে পারে, জেনে রাখুন, নন্দীগ্রাম গোটা রাজ্যকে চমকে দেবে। নন্দীগ্রাম বদলাচ্ছে, এখানে অন্য পরিবর্তন চান মানুষ।' 

কে এই সৈয়দ আবদুস সামাদ? তৃণমূল, বিজেপি, নকশাল, মাওবাদী এবং কংগ্রেসের সঙ্গে মিলে ২০০৭-র জানুয়ারি থেকে নন্দীগ্রামে অবরোধ গড়ে তোলায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল জামাতে-উলেমা-হিন্দের। তার রাজ্য কমিটির সদস্য, নন্দীগ্রামের বাসিন্দা সামাদ পরিচালিত একটি এতিমখানা ছিল নন্দীগ্রামে 'জমির অন্দোলন'-র সদর দপ্তর। সামাদের এতিমখানায় তৈরি হয়েছিল ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি। মাওবাদীরাই জানিয়েছে সেই কমিটির সঙ্গে মিলেই, বিশেষত তৃণমূলের সঙ্গে আলোচনা করেই 'অ্যাকশনের' পরিকল্পনা হতো। এখন সেই কমিটির অস্তিত্ব নেই। মাওবাদীদের অস্ত্র আর প্রশিক্ষণের ফল রয়ে গেছে তৃণমূলেরই শিবিরে।

তীব্র বামফ্রন্ট-বিরোধী সেই সামাদ জানাচ্ছেন, 'নন্দীগ্রামে এখন তৃণমূলের স্বৈরতন্ত্র চলছে। সেই আন্দোলনের পুরো নির্বাচনী ফায়দা তুলতে তৃণমূল যা খুশি করছে। গত বিধানসভা উপনির্বাচনে, লোকসভা নির্বাচনে ব্যাপক রিগিং করেছে তৃণমূল— নন্দীগ্রামের সবাই জানে। খোঁজ নিন। মানুষ মানতে পারছেন না।' তাঁর আরো দাবি —'আমরাও প্রার্থী দিয়েছি। নির্বাচন কমিশনের উচিত নন্দীগ্রামের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা।'

তৃণমূল জানে, শুধু বামফ্রন্টের কর্মীরাই নন, সামাদের মতো বামফ্রন্ট বিরোধী অনেক গ্রামবাসীও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে মুখিয়ে আছে। তৃণমূলের অস্ত্র তাই সন্ত্রাস। ফলে পর পর দু'বার মার খেতে হয়েছে বামফ্রন্ট প্রার্থী, প্রবীণ শিক্ষক পরমানন্দ ভারতীকে। বামফ্রন্টের প্রচার-গাড়ি ভাঙা হয়েছে সোনাচূড়ায়। সাতেঙ্গাবাড়ি, জালপাই, গাংড়া, জেলিঙহ্যামের চর, সোনাচূড়া বাজার, গড়চক্রবেড়িয়া, ভুতার মোড় — নন্দীগ্রামের প্রায় ৪৮টি বুথের দখল সরাসরি খোকন শীট, কাজেহার, সৈয়ম কাজী, বসুদেব গিরিদের মতো দুর্বৃত্তদের হাতে। এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে ২০০৭ থেকেই সোচ্চার ছিল সি পি আই (এম) তথা বামফ্রন্ট। ৩৬জন পার্টিকর্মী শহীদ হয়েছেন তৃণমূল-মাওবাদী হামলায়। ঘরছাড়া হয়েছিলেন ৩০০০-র বেশি মানুষ। কয়েকদিন আগেই সাতেঙ্গাবাড়িতে গরিব গ্রামবাসীদের বাড়িতে মারাত্মক হামলা চালিয়ে তরোয়ালের আঘাতে প্রায় ১৫জন মহিলা-পুরুষকে রক্তাক্ত করেছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। 

এলাকার হাল অন্যরকম বুঝে নন্দীগ্রামে এবারের ভোটে দলের কাণ্ডারী তৃণমূল নেতা মেঘনাদ পালের মুখে এখন অন্য কথা। দুটি ব্লকের ১৭টি পঞ্চায়েত নিয়ে নন্দীগ্রাম বিধানসভা এলাকা। নির্বাচনী কাজে নন্দীগ্রামের তৃণমূল ব্লক সভাপতি মেঘনাদ পালই দলের হর্তাকর্তা। প্রশ্ন ছিল—এবারের ভোটে নন্দীগ্রামে তৃণমূলের প্রধান ইস্যু কী? ন্যূনতম সময় নষ্ট না করে হরিপুরের বাসিন্দা মেঘনাদ বললেন, '৩৪ বছরে বামফ্রন্ট কোনো উন্নয়ন করেনি। সেটাই বলছি।' পরের প্রশ্ন স্বাভাবিক এবং অবশ্যম্ভাবী— আর জমি অধিগ্রহণের প্রশ্ন? থমকে গেলেন মেঘনাদ। বললেন, হ্যাঁ, সিঙ্গুরে সরকার আবার কারখানা করবে বলছে। আবার প্রশ্ন— কিন্তু নন্দীগ্রামের জমি নিয়ে সরকারের কোনো ভাবনাই নেই। আপনারা বরং রেলের লাইনের জন্য বিরুলিয়ায় জমি দখলের চেষ্টা করছেন। তাই কি জমির প্রশ্ন বাদ? মেঘনাদ এবার বললেন, 'উন্নয়নটাই প্রধান বিষয়। সেটাই বলা হচ্ছে।'

অর্থাৎ নন্দীগ্রামে তৃণমূলের প্রচারের তালিকায় জমি বাদ! 

কারণ বিরুলিয়ায় মুখ পুড়েছে।

বিরুলিয়া সেই এলাকা, যেখানে জমি দিতে অনিচ্ছুক কৃষকদের উপর বারবার হামলা চালিয়েছে তৃণমূলের সশস্ত্রবাহিনী। জমি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে মমতা ব্যানার্জির রেলমন্ত্রক। বিরুলিয়ার গ্রামবাসীদের মাথা নত করে রাখতে সাতেঙ্গাবাড়ির কাজেহার শেখ, হিমাংশু বারিকদের সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা আক্রমণ করে মাথা ফাটিয়ে, রক্ত ঝরিয়েছেন সেই নন্দীগ্রামের কৃষকদেরই। তবু, সেই নন্দীগ্রামেই তৃণমূলের সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের হুমকি অগ্রাহ্য করে 'অন্নদাতা ভূমি রক্ষা কমিটি' গড়েছেন কয়েক হাজার কৃষক, খেতমজুর।

বিরুলিয়া তাই তৃণমূলের বড় যন্ত্রণা। তৃণমূল কিছুতেই বিরুলিয়া নিয়ে আলোচনা চায় না। তাই মেঘনাদও চান না।

মেঘনাদ পালকে করা প্রশ্নই রাখা হয়েছিল আবু তাহেরের সামনে। তাহের নন্দীগ্রাম তৃণমূলের প্রথম সারির নেতা। তৃণমূলের সাংসদ, মাওবাদীদের বর্ণনায় 'যুব-সেনাপতি' শুভেন্দু অধিকারীর খুবই ঘনিষ্ঠ তাহের। সেই তাহের বললেন, 'আমি ঠিক জানি না কী বলা হচ্ছে নন্দীগ্রামে।' তাহের এড়িয়ে গেলেন। ২০০৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকে নন্দীগ্রামে, তাঁর নিজের এলাকায় তৃণমূলের হাতে চার-চার বার মার খাওয়া কংগ্রেস নেতা মিলন প্রধান বললেন, 'একটু অসুবিধা আছে। কিছু বলা যাবে না।' তৃণমূলের মার্কামারা দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবের আতঙ্ক এখন তাঁকেও চুপ করিয়ে রেখেছে। 

ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির হয়ে সভা, মিছিল করা ৪-৫ যুবক রীতিমত ট্রেকারে চড়ে আরো জনাপঁচিশের সঙ্গে হাজির হয়েছিলেন মিছিল করতে রেয়াপাড়ায়। সবার বাড়ি গোকুলনগরে। তাঁদেরই একজনের কথাই এবারের নন্দীগ্রামের মনের কথা— 'আমরা পালটাতে চেয়েছিলাম। তৃণমূলের পরিবর্তন মানে কী তা জানতে রাজ্যের সবার নন্দীগ্রামে আসা উচিত।'

নন্দীগ্রাম তাই একটি শিক্ষা। সি পি আই (এম) নেতা অশোক গুড়িয়ার ব্যাখ্যা একদম সহজ, সরল —'জমির আন্দোলন ছিল অজুহাত। সেই অজুহাতে মাওবাদীরা ঘাঁটি বানিয়েছিল। তৃণমূল তা ব্যবহার করে। আমাদের ঘর পুড়িয়ে, ৩৬জনকে খুন করে, কয়েক হাজার মানুষকে গ্রামছাড়া করে নন্দীগ্রামের দখল নিয়েছে। কংগ্রেস, জামাতে, নকশালরা ভেবেছিল তারাও দখলদারীর কিছুটা ভাগ পাবে। কিন্তু তৃণমূল সবাইকে পিটিয়ে চুপ করিয়েছে। এমনই তো হওয়ার কথা ছিল।'

এন্ডোসালফানের সার্বিক নিষিদ্ধকরণ নয়
মিনি ভোপাল তৈরির পথই বেছে নিলো ভারত

সংবাদ সংস্থা

তিরুবনন্তপুরম, ২৯শে এপ্রিল- বহুজাতিক কোম্পানির মারণ কীটনাশক 'এন্ডোসালফান' দেশজুড়ে নিষিদ্ধ করার দাবিতে শুক্রবার কেরালায় সি পি আই (এম) সহ বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এল ডি এফ)-এর ডাকা হরতালে কার্যত থমকে গেলো গোটা রাজ্যের স্বাভাবিক জীবন। এদিনই জেনেভায় এই সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশন শেষ হয়েছে। তাই গোটা দুনিয়ার নজর কাড়তে হরতালের দিন হিসেবে শুক্রবারকেই বেছে নিয়েছে বামপন্থীরা। এদিন রাজ্যজুড়ে হরতাল পালন করে কেন্দ্রের উদাসীনতার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে এন্ডোসালফানের অন্যতম শিকার কেরালা রাজ্য। আর অন্যদিকে তখন দুনিয়াজুড়ে এন্ডোসালফান নিষিদ্ধ করার দাবি সত্ত্বেও, এক্ষুণি সার্বিক নিষিদ্ধকরণের দাবি তুললো না ভারত। বরং ভারত এবং কিছু উন্নয়নশীল দেশ স্টকহোম কনভেনশনে কিছু ছাড় আদায় করে নিয়েছে মাত্র। যেমন আদায় করেছে, ধাপে ধাপে 'এন্ডোসালফান' নিষিদ্ধ করার জন্য ১১বছরের সময়সীমা। যার অর্থ, ১১বছর ধরে বহুজাতিক কোম্পানির মারণ কীটনাশক 'এন্ডোসালফান' গিলে খাবে গোটা ভারত ভূখণ্ড। আর 'ছাড় আদায়'-এর ধোঁকা দিয়ে যাবে কেন্দ্রের সরকার।

এন্ডোসালফান নামে বিষাক্ত কীটনাশকটিকে দেশজুড়ে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই আন্দোলন চালাচ্ছেন বামপন্থীরা এবং বিভিন্ন বিজ্ঞানকর্মী ও কৃষক সংগঠন। কেরালার শুধু কাসারগড় জেলাতেই এই কীটনাশকের প্রভাবে মারা গেছেন কমপক্ষে ৫০০জন। শারীরিকভাবে নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৪হাজারেরও বেশি মানুষ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিশুরা। কৃষিক্ষেত্রের বাইরেও জনজীবনে কীটনাশকটির বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ক্ষমতা দেখে ২০০৫সালেই কেরালার বামপন্থী সরকার তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেয়। 

এন্ডোসালফানের মারণ চেহারা প্রকাশ্যে আসার পরেও তা নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে উদ্যোগী হচ্ছে না কেন্দ্রের ইউ পি এ সরকার। দেশজোড়া চাপের মুখে গতকাল বাধ্য হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এক বিবৃতি প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, 'ইণ্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ'-এর রিপোর্ট দেখেই এসম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।' এব্যাপারে 'দেশজোড়া সহমত'-এর প্রয়োজনীয়তার কথাও শোনানো হয়েছে বিবৃতিতে। এন্ডোসালফান নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে দেরি করার যে কৌশল কেন্দ্রীয় সরকার নিয়েছে, তা স্পষ্ট হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের এই বিবৃতিতে। গত তিন দশকে এই কীটনাশকের প্রভাবে কেরালায় কমপক্ষে ৪০০ জনের মৃত্যুর ঘটনা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট এলাকায় শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্ম নিচ্ছে কৃষক পরিবারের সন্তান। বিষাক্ত কীটনাশকের প্রভাবে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন ক্যান্সারের মতো মারণব্যাধিতে। মৃগীরোগ, স্নায়ুরোগের কবলে সাধারণ মানুষ থেকে কৃষকরাও এখন আক্রান্ত। অধিকাংশ আক্রান্ত জনগণ চিরতরে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। দেশের দক্ষিণ প্রান্তের কেরালার কাসারগড় জেলাকে এজন্য এখন তাই অনেকে বলছেন 'মিনি ভোপাল'। 

শুধু এন্ডোসালফানের মতো বিপজ্জনক কীটনাশকই নয়, এদেশে কৃষকের সর্বনাশ করে কেন্দ্রীয় সরকার কীভাবে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানিগুলির মুনাফার স্বার্থে পরপর পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে, তা আজ সকলেরই জানা। সার, বীজ, কৃষিপণ্য বিপণন— কৃষিক্ষেত্রের প্রতিটি পর্যায়েই আজ বহুজাতিকদের সুবিধা করে দিচ্ছে কেন্দ্র। কেন্দ্রের ইউ পি এ সরকারের এই বহুজাতিক প্রীতির বিরুদ্ধে লড়াইও তীব্র হচ্ছে দেশে।

মহম্মদ আমিনের সঙ্গে বৈঠকে প্রবীণ মুসলিমরা শান্তি, 
নিরাপত্তা বামফ্রন্ট সরকারে‍‌রই অবদান

নিজস্ব প্রতিনিধি

রানীগঞ্জ, ২৯শে এপ্রিল— 'সুকুন আউর আমন বাঁয়াবাজু সরকার কা দেন হ্যায়'' অর্থাৎ শান্তি ও নিরাপত্তা বামফ্রন্ট সরকারেরই অবদান। শুক্রবার রানীগঞ্জে মুসলিম সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চল চুড়িপট্টিতে ঘরোয়া বৈঠকে নিজের অভিমত এভাবেই ব্যক্ত করলেন প্রবীণ মহম্মদ কলিলউদ্দীন। এদিন প্রবীণ সংখ্যালঘু মুসলিমদের সঙ্গে বৈঠক করলেন পলিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ আমিন। অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক মহম্মদ কলিম সহ অনেকেই মেলে ধরলেন তাদের মনের কথা। মহম্মদ আমিনের সঙ্গে চলে প্রশ্নোত্তর পর্বও।

মহম্মদ আমিন সংখ্যালঘু উন্নয়নে বামফ্রন্ট সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মসূচী মেলে ধরেন। পশ্চিমবঙ্গের দু'কোটি মুসলিম সংখ্যালঘু মানুষের কাছে এই রাজ্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রাজ্য। বামফ্রন্ট সরকার সংখ্যালঘু মুসলিমদের জন্য যা কাজ করেছে তা সারা দেশে হয়নি। সারা রাজ্যে ভূমিসংস্কারের মধ্য দিয়ে ৪০ লক্ষ বিঘা জমি ভূমিহীনদের মাধ্যে বণ্টিত হয়েছে। ১০ লক্ষ বিঘা জমি বণ্টিত হয়েছে মুসলিমদের মাধ্যে। মাদ্রাসায় ৪০ হাজার মুসলিম শিক্ষকতা করছেন। বামফ্রন্ট সরকার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে চলা বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গির সরকার। সারা দেশের কাছে উদাহরণ তৈরি করেছে।

প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি বামফ্রন্ট সরকারের উচ্ছেদ চায়। বারে বারে ষড়যন্ত্র হয়েছে। আজও ষড়যন্ত্র থেমে নেই। এবারের নির্বাচনে কোটি-কোটি কালো টাকা নিয়ে নেমেছে বামবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি জোটবদ্ধ হয়েছে। বামফ্রন্ট সরকারের সাফল্যকে নস‌্যাৎ করা হচ্ছে। বল্গাহীন কুৎসা-অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমিন প্রশ্ন তোলেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ, যাঁরা ভোট দিয়ে সাতবার বামফ্রন্ট সরকার গড়ে তুললেন তাঁরা কি কিছুই বোঝেন না? তৃণমূল দলের দ্বিচারিতা ‍‌মেলে ধরে তিনি বলেন এই দল সুযোগ সন্ধানী। প্রয়োজনে বি জে পি'র সঙ্গে ঘর করে। আবার কংগ্রেসের সঙ্গেও ঘর করে। গুজরাত দাঙ্গার পরে দাঙ্গার নায়ক মোদী মুখ্যমন্ত্রী হলে তৃণমূল নেত্রী মোদীর জন্য ফুলের তোড়া উপহার দেন।

দল হিসাবে কংগ্রেস ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করে। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে আপসও করে।

আমিন বলেন, বামপন্থীরা দুর্বল হলে গণতন্ত্র দুর্বল হয়। সাতের দশকে বামপন্থী নিধন কর্মসূচী চালিয়েছিলো কংগ্রেস। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়েছিলো। বিনা দোষে গ্রেপ্তার, জেল, খুন, সন্ত্রাসের বাতাবরণ। স্বৈরশক্তির আস্ফালন আবার শোনা যাচ্ছে। গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে বামপন্থীদের মজবুত করে তুলতে হবে।

রানীগঞ্জ কেন্দ্রে বামফ্রন্টের প্রার্থী রুণী দত্তের সমর্থনে আমিন বৃহস্পতিবার রাত্রে রানীগঞ্জ বাজারে এতোয়ারি মোড়ে একটি সভাও করেন। ব্যাপক উপস্থিতি ছিলো। এদিনের বৈঠকে সি পি আই (এম)-র অনুপ মিত্র সভাপতিত্ব করেন।

নির্বাচনী প্রচারে এসে গ্রামবাসীদের মারধর করলো 'জোট প্রার্থী'

নিজস্ব প্রতিনিধি

জয়পুর, ২৯শে এপ্রিল — নির্বাচনী প্রচার করতে এসে গ্রামের ঢুকে বহিরাগত দুষ্কৃতীদের দিয়ে গ্রামবাসীদের মারধর করলেন কংগ্রেস প্রার্থী। তারপর থানায় গিয়ে আব্দার ধরলেন ওই গ্রামের লোকেরা সবাই সি পি এম তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।

শুক্রবার সকাল থেকেই গেলিয়া অঞ্চলের জামশোলা বেলতলা এলাকায় জোটপ্রার্থী সৌমিত্র খাঁ ও বহিরাগত তৃণমূলীরা পানভোজন সেরে টানাদিঘি গ্রামে প্রচারে যায়। সমর্থকহীন গ্রামটির প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে প্রচার দলটি বচসায় মাতে। প্রার্থী হেঁটে যাবে না গাড়িতে যাবে এই নিয়ে হাতাহাতি এবং খিস্তিখেউড় শুরু করে। গ্রামের একটি কিশোর মহাদেব মিদ্দে মেয়েদের জল আনতে যাবার পথে খিস্তি দেওয়ার প্রতিবাদ করলে মহাদেবকে উন্মত্তভাবে মারতে শুরু করে। তাকে বাঁচাতে মা-বাবা ছুটে এলে দুষ্কৃতীরা তাদেরও বেধড়ক মারে। এদিকে সম্বিৎ ফিরে পেতেই প্রার্থী দলবল নিয়ে সরে পড়ে।

ফোন করে ডেকে আনার হয় স্টার আনন্দের সাংবাদিককে। দুটি লোককে সাজিয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটিয়ে হাঁটতে বলা হয় ক্যামেরার সামনে। বলা হয় তাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন। তারপর থানায় গিয়ে হম্বিতম্বি। গ্রামবাসীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। এদিকে গ্রামবাসীদের পক্ষে ৭ জন দুষ্কৃতীর নাম দিয়ে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে এলাকায় ঢুকে অশান্তি বাধানোর জন্য। এলাকার মানুষের অভিযোগ, কংগ্রেস প্রার্থী ও তার বহিরাগত দলবল কোতুলপুর-জয়পুর এলাকায় সমর্থন নেই দেখে আক্রান্ত হওয়ার নাটক করেই চলেছেন।

Image

Back Previous Pageমতামত 

বোমা ফাটলেই সন্তানদের ঘরে
ঢুকিয়ে রাত জাগেন জারিনা বিবি

জয়দীপ সরকার

মনিকা মাঝি, জারিনা বিবি, পদ্মা দাস, মীরা বিবি, সন্তোষী মেটে, আরজিয়া বিবি, উজেলা বিবি, সেরুকুন বিবি,ফজিলা বিবি, মালু বিবি, বাসন্তী হেমব্রম, ঝারু দাস, পুর্ণিমা মির্ধা, কমলা বাউড়ি, পূর্নিমা বাউড়ি, তহুরা বেগম,খান্দুবালা বাউড়ি, তাপসী মেটে এতসব নামগুলো একসঙ্গে শুনলে অবাক হতেই পারেন। এঁরা সি পি আই (এম)-র সমর্থক। এঁরা সাম্প্রতিক অশান্ত সময়ে তৃণমুল-মাওবাদী খুনে বাহিনীর হাতে হারিয়েছেন প্রিয়জনদের। এঁরা সকলেই বীরভূমের। কেউ বা থাকেন নানুরে, কেউ খয়রাশোলে, কেউ লাভপুরে, কেউ দুবরাজপুরে। এলাকার মানুষরা আর পার্টি তাঁদের আগলে রেখেছে, এই বাজারে বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু সহায়তা করা যায়-তা করে চলেছেন তাঁরা।

কিন্তু কেমন আছেন তাঁরা? প্রিয়জন হারালে কেউ ভালো থাকবেন না, এটাই স্বাভাবিক। কেউ একমাত্র সন্তানের জন্য বুক চাপড়ান, কারো গোঙানি ভাসে স্বামীর জন্য। তবু বেঁচে থাকার লড়াই চলছেই। 

বুনিয়াডাঙ্গার জারিনা বিবির তিন সন্তানকে খুন করেছে যে তৃণমুলী নেতা , সেই নেতা জামিনে মুক্ত হয়ে এবার তৃনমুলের প্রার্থী হয়েছেন। বৃদ্ধা জারিনা বিবি বলেন, বাবা এবার আমার বাকি সন্তানদেরও খুন করবে ওরা । সেই হুমকি দিয়ে যাচ্ছে ওরা। রাত হলে বুনিয়াডাঙ্গায় বোমা ফাটে ,আর জারিনা বিবি তার বাকি সন্তানদের, মেয়েদের জোর করে ঘরে ঢুকিয়ে শিকল তুলে দিয়ে রাত জাগেন।

মণিকা মাঝির কান্না থামে না। যুবক স্বামী বাসুদেব মেটের ছবিটা শিশু সন্তানকে দেখান আর বলেন এটাই তার বাবা। সদ্য হাঁটতে শেখা শিশু অবাক হয়ে দেখে তার মায়ের কান্না। নানুরের জলুন্দী গ্রামের বাসুদেব মেটে আর ইদ্রিশ শেখকে গুলি করে খুন করে তৃণমুল। ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, আমরা স্বামী স্ত্রী আর গ্রামের সবাই মিলে একসঙ্গে সর্ষে কাটছিলাম, হঠাৎ তৃণমুলের লোকজন জমির চারদিক ঘিরে ধরে হামলা শুরু করলো। আমার কোল থেকে বাচ্চাটা টেনে নিয়ে সর্ষে খেতের মধ্যে ছুড়ে ফেললো। মারতে শুরু করলো আমাদের। বলছিলো, সিপিএম করার মজা দেখ, তারপর বোমা মেরে গুলি করে বাসুদেবকে খুন করলো, বাধা দিলো ইদ্রিশ। তাঁকেও বাড়ির সামনে খুন করলো। জাত ধর্মের আগল ভেঙ্গে গরিব মানুষরা এক হয়ে লড়ছেন, জান কবুলের সেই লড়াই কোনো রুপকথা নয়। মাত্র একবছর আগে নানুর থানার জলুন্দী গ্রামের সেই স্মৃতি নিয়ে আজও লড়ছেন মানুষ। সরবালা দাসের সাথে দেখা জয়নাল শেখের দাওয়ায়, ৭০ বছরের ঐ বৃদ্ধা একমাত্র সন্তান অভিজিৎকে হারিয়ে কথা বলেন না। শুধু লালপতাকার মিছিল দেখলে আগ বাড়িয়ে ছুটে যান, বুঝেছেন ঐ মিছিলেই বেঁচে আছে তার একমাত্র সন্তান। গত বছরের ১৪ই ফেব্রুয়ারি নানুরের জলুন্দী গ্রামে তৃণমুলের পাশবিকতার বলি মানুষগুলোর পাশে এখন গোটা গ্রাম এক হয়ে কোমর বেঁধে লড়ছে।

খয়রাশোলের তারাপুর গ্রাম, গ্রামের ক্লাবে বসে গ্রামের যুবকরা বলছেন, আমরা ভয় পাই খুন জখমে, কিন্তু মাওবাদী-তৃণমূলীরা মিলে যেভাবে গ্রামের গরীব মানুষ বসুদেব দাসকে খুন করলো তাকে ঘৃণা করি সবাই। ভাবুন কি হবে ঐ পরিবারের। একটু এগিয়ে বসুদেব দাসের বাড়ি, ৬বছরের শিশুকন্যা রতি দেখেছে তার বাবাকে কিভাবে খুন করা হলো, রতি দেখেছে তার মা বাবার প্রাণ ভিক্ষা করতে যখন জহ্লাদ বাহিনীর পা ধরে মাথা ঠুকছিলো তখন জহ্লাদ বাহিনী তার মাকে কীভাবে মারধর করেছে। ঐ শিশুকন্যা বড় হচ্ছে তার বাবার খুনীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার শপথ নিয়ে, পাশে গ্রামের সবাই। তারাপুরে বসুদেব দাসের পর্ণকুটীরের সামনে বসুদেবের বৃদ্ধা বাবা মা ঘোলাটে চোখে বলেন কি লাভ হলো গো আমার ছেলেটার জীবন কেড়ে নিয়ে?

খয়রাশোলের কেষ্টপুর গ্রামের ষষ্টী বাউড়ীর বৃদ্ধা মা খান্দুবালা ছেলেকে পাঠিয়েছিলেন মানুষের জন্য রাজনীতি করতে,গরীবের হয়ে লড়াই করতে । ষষ্ঠী বাউড়ী খুনের পর খান্দুবলার প্রশ্ন গরিব মেরে ওরা কাদের ভালো করলো? গোটা গ্রাম এককথা বলছে। আনন্দ দাস, প্রথম বাউড়ি, মহাদেব বাউড়ি, নূরউদ্দিন, ফজলুল করিম সমরেন্দ্র কোনাই, নন্দলাল মিস্ত্রী, শ্রীদাম দাস, সুকুমার দাস, সুনীল হেমব্রম, শেখ সানাই যাঁর পরিবারেই যাই এক কথা, এক ছবি। জবাব দেব ২৩শে এপ্রিল। চোখের জল বাঁধ মানে না। গোঙানি কান্না থামে না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সদস্য না থাকায় বাঁচার চ্যালেঞ্জ আরও তীব্র। সংখ্যালঘু তফশীলী আদিবাসী পরিবারের সদস্যারা তৃণমুল-মাওবাদীদের হানায় প্রিয়জন হারিয়েছেন, কিন্তু শপথ হারাননি।

Image

Back Previous Pageমতামত 

রুটি-রুজি যেন ছিনিয়ে নিতে না পারে
তাই জোট বেঁধেছেন মহিলারা

শঙ্কর ঘোষাল

'ছ'মাস পরেই ক্ষমতায় আসছি আমরা, তারপর তোদের পাড়াছাড়া করবো।' সামান্য কলে জল নেওয়া নিয়ে বিবাদ, তারপরেই তৃণমূলের দাদারা অশোকা কুণ্ডুকে হুমকি দিয়ে গেছে, মারতেও গিয়েছিলো কিন্তু প্রতিরোধ করেছেন স্থানীয় মহিলারা, দুষ্কৃতীরা পিছু হটেছে। বর্ধমান শহরের ২৫নম্বর ওয়ার্ডের লাকুড্ডি কাটরাপোতা এলাকায় এই তৃণমূলী হুমকিতে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। গত পৌরসভা নির্বাচনে তৃণমূল এই ২৫নম্বর ওয়ার্ডে জিতেছে, তারপরই শুরু হয়েছে লুঠেপুটে খাওয়ার রাজ। বিধবাভাতা থেকে ভোটের এপিক কার্ড তৈরি সব ক্ষেত্রেই টাকা দিতে হচ্ছে তৃণমূলীদের।

ভাই-বোনের পারিবারিক ঝগড়া। তার মধ্যে ঢুকে রেশমা বিবিকে মেরে গেছে তৃণমূলের কর্মীরা। অশ্লীল বদনাম দিয়ে পাড়ায় এক ঘরে করার চেষ্টা হয়েছিলো। কিন্তু স্থানীয় মহিলারা এর প্রতিবাদ করেন। দুষ্কৃতীদের এখন বিচার চাইছেন তাঁরা।

জহুরা বিবি বলেছেন, শুধুমাত্র পৌরসভায় দুই-একটি ওয়ার্ড জিতেই বি‍‌ পি এল কার্ড, বিধবাভাতা, বার্ধক্যভাতা নিয়ে দুর্নীতি চরমে উঠে‍‌ছে, রাস্তার কলের পাইপ পর্যন্ত ওরা বেঁচে খেলো। ঘুষছাড়া কোনো কাজ হয় না। টাকা নিয়ে পৌরসভার অনুমতি ছাড়া বিনা প্ল্যানে বাড়ি তৈরিরও নির্দেশ দিয়ে দিচ্ছে তৃণমূলীরা। বেআইনী বাড়ি তৈরি হয়েছে অনেক। এতেই যদি এই হয়, তবে তো বিধানসভায় জিতে গরিব মানুষের মাথা কেটে নেবে ওরা। রীনাবিবি বলেছেন, এই পরিবর্তন আমরা চাই না। যে নিরাপত্তা, শান্তি নিয়ে মেয়েরা রাস্তায় চলা ফেরা করতে পারছি, তাদেরকেই ভোট দিয়ে জেতাবো।

বৃদ্ধা সাবিত্রী মাহাতো বলেছেন, আগে বর্ধমান শহরের কার্জন গেট থেকে লাকুড্ডি জলকল অঞ্চলে সন্ধ্যা হলেই পথে হাঁটতে গা ছমছম করতো। সারাদিন কাজ করে গরিব মানুষ যা নিয়ে ঘরে ফিরতো সেগুলি বন্দুক দেখিয়ে কেড়ে নিতো। অনেক মহিলার ইজ্জতও খোয়াতে হয়েছে। সেইসব অন্ধকারের জীবরা কংগ্রেস থেকে তৃণমূল হয়েছে। দিনে নয়, পাছে ওদের চিনে ফেলি, রাতে আসছে মুখে কাপড় দিয়ে 'পরিবর্তন'-এর স্লোগান নিয়ে।

সাবিত্রী মাহাতো খেতমজুরের কাজ করতেন, স্বামী-স্ত্রী কাজ করে ছেলেকে মানুষ করেছেন। বড় ছেলে বি-কম পাস করেছে, ছোটটা উচ্চমাধ্যমিক পাস করলো। ওদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন বাবা-মা'র। একটা ছেলে উপনগরীতে কাজ পেয়েছে, ওদের আশা বামফ্রন্টকে জেতালে বর্ধমানে যা শিল্প, পরিষেবা গড়ে উঠছে তাতে কর্মসংস্থান হবে ছেলেমেয়েদের। 

এখানকার মহিলারা স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে তুলেছেন। টাকাও জমাচ্ছেন ব্যাঙ্কে। লক্ষ্য মুড়ির কারখানা করবেন। তাছাড়া এখানে বেশিরভাগ সংখ্যালঘু পরিবারের বাস। তালপাতার পাখা, রাজমিস্ত্রি, বিড়ি শ্রমিক নানান পেশায় নিযুক্ত মানুষ। মেহেরুন্নেসা বিবি বলেছেন, তিনি স্কুলে মিড‍‌ ডে মিলের রান্না করেন। ছেলেরা কলেজে পড়ে, সেই কাজ কেড়ে নেবে বলে দিনরাত হুমকি দিচ্ছে তৃণমূলের কর্মীরা।

লক্ষ্মী তফাদার, কল্পনা সেনগুপ্ত, রূপা মালিকরা বলেছেন, স্বাধীনভাবে আমরা যাতে চলা ফেরা করতে পারি, মেয়েদের স্বাধীনতা বজায় থাকে সেই জন্য এখানকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করছি, যারা আমাদের মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখিয়েছে, রুজি-রুটির আন্দোলনে পাশে থেকেছে, পাড়ায় শান্তি এসেছে তাদেরকেই জেতাতে হবে। মেয়েরা দল বেঁধে বেরিয়েছি, লালঝাণ্ডাকে জিতিয়েই নিজেদের জয়ী করার জন্য। 

জামেদা বিবি, হালিমা বিবি বলেছেন, আমরা এই পরিবর্তন চেয়েছিলাম? ভোটের আগে নেত্রী বললো এত দাম খাবো কি? ভোটে জিতে মন্ত্রী হলেন তিনি এখন মুখে কুলুপ এঁটেছেন। এখন আমাদের মতো গরিবরা চিৎকার করছে এতো দাম খাবো কী? সাতজন তৃণমূলের মন্ত্রী কেউ গরিবের কথা বলছে না।

ফরিদা বেগম বলেছেন, বামফ্রন্ট সরকার আছে বলেই আমরা গরিবরা দু'মুঠো খেয়ে বেঁচে আছি। ওদের পরিবর্তন মানে আমাদের সর্বনাশ। পৌরসভা, আই সি ডি এস, গোষ্ঠী গড়ে মিড ডে মিলের রান্নার কাজ, ছোট ছোট অনেক কাজের মধ্যে যুক্ত হয়েছেন মহিলারা। হুমকি আসছে, পরিবর্তন আসছে, তোদের দেখে নেবো! আমরা মেয়েরা জোট বেঁধেছি, বলছি, মানুষের কাজ, রুজি-রুটি ছিনিয়ে নেয় এমন পরিবর্তন কিছুতেই যাতে আসতে না পারে বাড়ি বাড়ি ঘুরছি, মানুষকে বোঝাচ্ছি, পৌরসভার কাউন্সিলর ভোটে জিতেই পুকুরচুরি, তাহলে ছাগল তাড়াতে গিয়ে আমরা যেন বাঘ না ডেকে আনি। তৃণমূল জিতলে সর্বনাশ হবে গরিবদের। নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে পাড়ায় বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি, বোঝাচ্ছি সরকার পরিবর্তন বড় বিষয় নয়, প্রশ্ন গরিবের অধিকার, গণতন্ত্র থাকবে তো? 

ক্যাপশন

নিজেরা উদ্যোগ নিয়েই জহুরা বি‍‌বি, রূপা মালিক, সাবিত্রী মাহাতোরা বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন, গোষ্ঠীর মহিলাদের গ্রুপ সভাতে বোঝাচ্ছেন, বিপজ্জনক খুনে শক্তি যেন ক্ষমতায় না আসতে পারে।

৩৪বছরের পরিবর্তন

তৃণমূল কংগ্রেস এবং কংগ্রেস বার বার বর্বর আক্রমণ নামিয়ে এনেছে মহিলাদের উপর। ১৯৭০-৭২সালে কংগ্রেস এবং গত কয়েক বছর ধরে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় মহিলাদের উপর পাশবিক আক্রমণ চালাচ্ছে। খোদ তৃণমূল নেত্রী যথেচ্ছভাবে মহিলাদের মান সম্মানের বিন্দুমাত্র মর্যাদা রাখার চেষ্টা করেননি। গণশক্তির চিঠিপত্র বিভাগে নদীয়ার বাদকুল্লা থেকে সুপ্রতীপ রায় তৃণমূলের আদি দল কংগ্রেসের হিংস্র আক্রমণগুলি নিয়ে চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠি সামান্য সম্পাদনা করে প্রকাশ করা হলো এই বিভাগে।



৩৪বছরে মহিলাদের অবস্থার পরিবর্তন

নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততোই তৃণমূলের মেকি মহিলা-দরদ বাড়ছে। কংগ্রেস-তৃণমূল জোট করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। শ্রেণীগত দিক থেকে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে প্রভেদ নেই। আমাদের রাজ্যে কংগ্রেস প্রায় তিন দশক সরকার পরিচালনা করেছে। কংগ্রেসী রাজত্বে মহিলাদের অবস্থা কেমন ছিল? মা-বোনেদের মান-সম্মান বলে কিছু ছিল না। সাতের দশকের অন্ধকারাচ্ছন্ন দিনগুলিতে বাংলার নারীদের উপর হত্যা, আক্রমণ, নির্যাতন, সম্মান হানির ঘটনা নিত্যদিনের ঘটনাতে পরিণত হয়েছিল। সেরকমই বেশকিছু ঘটনা উল্লেখ করছি।

১৯৭০সাল

১৮ই মার্চ মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদ, ঘোষপাড়া, মল্লিকপাড়া, কুলবেড়িয়া প্রভৃতি অঞ্চলে কংগ্রেসী দুষ্কৃতীরা এবং পুলিসবা‍‌হিনী কৃষক রমণীদের ওপর অত্যাচার নামিয়ে আনে। ২০শে মার্চ থেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত জলপাইগুড়ির সোনাগাছি চা বাগানে কৃষক মহিলাদের ওপর পুলিস পাশবিক অত্যাচার করে। ১২ই এপ্রিল কাকদ্বীপ থানার কাশিয়াবাদ গ্রামে পুলিস সশস্ত্র হামলা চালায় মহিলাদের ওপর। ২২শে এপ্রিল মালদহের নদাশিক গ্রামে আজিমুদ্দিনের ১৪বছরের মেয়েকে কংগ্রেস আশ্রিত সমাজবিরোধীরা ধর্ষণ করে। ২রা মে কলকাতার শ্রদ্ধানন্দ পার্কের একটি জনসভায় মহিলারা যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। ঐ মিছিলের উপর কংগ্রেসীরা বোমা ছোঁড়ে। উমা আঢ্য নামে এক মহিলা আহত হন। তাঁর ডান পা বাদ দিতে হয়। ১৮ই মে বরানগরে কংগ্রেসী দুষ্কৃতীদের বোমায় সরমা ব্যানার্জি এবং স্বর্ণ দাস নিহত হন। ১লা জুন ধাপায় মহারানী সাঁতরাকে হত্যা করা হয়। ১০ই জুন বর্ধমানের হরিসভা বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রাজলক্ষ্মী মুখার্জির ওপর ছাত্র পরিষদের দুষ্কৃতীরা বোমা ছোঁড়ে। ১৮ই জুন পুলিস নামখানা থানার মৌসুমী দ্বীপের কুসুমতলা গ্রামে যশোধা ধারাকে ধর্ষণ করে। ২৭শে জুন আউশগ্রাম থানার পুলিস এবং সি আর পি এবং কংগ্রেসীরা পুবার গ্রাম, দীপচন্দ্রপুর, বনফুল গ্রামে মহিলাদের উপর আক্রমণ চালায়। ২৫শে জুলাই বর্ধমান জেলার মেমারি থানার বিজুর গ্রামে পুলিস মণি বাস্কে নামে এক আদিবাসী রমণীকে উলঙ্গ করে অত্যাচার করে। ২৮শে নভেম্বর বর্ধমানের সুলতানপুরে গভীর রাতে সি আর পি এবং কংগ্রেসী দুষ্কৃতীরা মহিলাদের ওপর আক্রমণ নামিয়ে আনে। 

১৯৭১সাল

২৯শে জানুয়ারি ছাত্রী মালতী মজুমদারকে যুব কংগ্রেসীরা খুন করে। ৪ঠা মার্চ মণিপাড়া চ্যাটার্জিপাড়া স্টেশন পল্লী এলাকায় সি আর পি এবং পুলিস বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালানোর নামে মহিলাদের ওপর আক্রমণ চালায়। ১৮ই মার্চ কোচবিহারের শিক্ষিকা লতিকা নিয়োগীকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয়। ২৪শে মার্চ বলাগড় থানার ঘোষপুকুর এলাকার সেলিমা খাতুনকে পুলিস বিবস্ত্র করে অত্যাচার চালায়। ঐদিনই আসানসোল মহকুমার চাঁদমারি অঞ্চলের বাবুতলাতে পুলিস অন্তত ২০০জন মহিলার সম্ভ্রমহানি করে। ২৬শে মার্চ আসানসোলের মহিলানেত্রী অনিমা চক্রবর্তীর্ ওপর বোমা ছোঁড়ে কংগ্রেসী দুষ্কৃতীর দল। ২০শে এপ্রিল হুগলীর মহিলানেত্রী মুক্তা কুমারের মেয়ের ওপর পুলিস এমন অত্যাচার চালায় যে তাঁর মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। ২৫শে এপ্রিল কাশীপুরে রাইবালা দাসকে খুন করা হয়। ২৭শে এপ্রিল বিজয়গড়ে সি আর পি'র গুলিতে নিহত হন কল্যাণী গুহ। ৩রা মে উত্তর ২৪পরগনার গাড়ুলিয়ায় কংগ্রেসী সমাজবিরোধীরা সত্যবতী বর্মণ, মালতী রায়, রেণুবালা বর্মণের ওপর আক্রমণ চালায়। ২২শে মে কংগ্রেসী দুষ্কৃতীরা বর্ষীয়ান মহিলানেত্রী জ্যোতি চক্রবর্তীর উপর আক্রমণ করে। ১৬ই জুলাই বীরভূমের সিউড়ি থানার ভুরকুনা গ্রামে সরস্বতী বাগদী এবং সুভদ্রা বাগদীর ওপর আক্রমণ চালায় সামরিকবাহিনী। ২৯শে জুলাই নকশালরা গুলি করে ক্ষমা ভট্টাচার্যকে। ২রা নভেম্বর বেলেঘাটায় রেণুকা চন্দ এবং ছন্দা চক্রবর্তীর ওপর পুলিস অমানুষিক অত্যাচার চালায়। ৩রা নভেম্বর বেলেঘাটার মিঞাবাগানের বস্তিতে পুলিস পার্বতী শীল নামে এক মহিলাকে গুলি করে হত্যা করে। ৪ঠা নভেম্বর কলকাতার দেশবন্ধু বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা পারুল বসু স্কুলের ভিতরেই ছুরিকাহত হন। ৬ই নভেম্বর বেলেঘাটার মিঞাবাগানে সি আর পি এফ গুলি করে হত্যা করে শিপ্রা সাহাকে। অসীমা পোদ্দার নামে ২৫বছরের এক যুবতীকে নারকেলডাঙ্গা থানায় ধর্ষণ করা হয়। ৭ই নভেম্বর নবগ্রাম থানার পাশলা গ্রামে কংগ্রেসী জোতদারবাহিনীর আক্রমণে ঠাকুর দাসী নামে এক মহিলা আহত হন। ২৬শে নভেম্বর নেতাজীনগর কলোনিতে গৌরী রায়চৌধুরীকে বুটের লাথি দিয়ে মারে সি আর পি এবং কংগ্রেসী দুষ্কৃতীরা।

১৯৭২সাল

১৬ই ফেব্রুয়ারি সোনারপুরের কামালগাজির কুমারধালির গীতা চ্যাটার্জির ওপর পাশবিক অত্যাচার চালায় কংগ্রেসীরা। ১৩ই নভেম্বর দুর্গাপুর থানার কাঁটাবেরিয়া গ্রামের বাউড়িপাড়ায় ফণি বাউড়ির স্ত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে পুলিস। এই ধরনের অসংখ্য ঘটনার উল্লেখ করা যায়। কংগ্রেসী আমলে মহিলাদের নিরাপত্তা, মান-সম্মান বলে কিছুই ছিল না।

।। ২ ।।

পরিবর্তনের সূচনা হলো ১৯৭৭সালের পর থেকে। বামফ্রন্ট সরকার মা-বোনদের শুধু সম্মানই ফিরিয়ে দিয়েছে, তা নয়। অর্থনৈতিক দিক থেকেও স্বনির্ভর করে তুলেছে। ১৯৯৯সাল থেকে 'স্বর্ণজয়ন্তী গ্রাম স্বরোজগার যোজনা' প্রকল্প চালু হয়। এই প্রকল্পের আওতায় উপকৃত হয়েছেন মহিলারা। রাজ্যে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের বার্ষিক রিপোর্ট (২০০৩-০৪ এবং ২০০৬-০৭) থেকে স্পষ্ট, ২০০৩-০৪সালে গড়ে গ্রাম পঞ্চায়েত-পিছু এস জি এস ওয়াই গ্রুপের সংখ্যা ছিল ২৪, ২০০৬-০৭ সালে তার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৫৮ এবং ২০০৯-১০সালে(জানুয়ারি অবধি)তার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৭। এছাড়া অন্যান্য গোষ্ঠীও আছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মারফত ঋণ নিয়ে মহিলারা নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছেন। স্বনির্ভর ও স্বনিযুক্তি দপ্তরের উদ্যোগে প্রতিটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী তাদের প্রকল্পের ঋণের উপর দেয় সুদের অর্থে সর্বোচ্চ ৭% অনুদানও দেওয়া হচ্ছে। ২০১০সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে মোট ৫৮৮কোটি ৯৪লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে।

পঞ্চায়েতে বিকেন্দ্রীকরণের মধ্য দিয়ে মহিলাদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে অনেক বেশি ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ১৯৮০ এবং ১৯৯০'র দশকজুড়ে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত সদস্যদের এক-তৃতীয়াংশ মহিলা ছিলেন। ৭৩তম সংশোধনী গৃহীত হওয়ার অনেক আগে থেকেই রাজ্যে পঞ্চায়েতগুলিতে নির্বাচিত মহিলাদের ভূমিকা উজ্জ্বল ছিল। পঞ্চায়েতী ব্যবস্থার মাধ্যমে মহিলাদের কাজের সুযোগও বৃদ্ধি পেয়েছে। ৩২৪২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে অধিকাংশ জায়গায় গড়ে দু'জন করে সম্পদকর্মী, ৩৪১টি ব্লকে জেলা সম্পদকর্মী যুক্ত করা হয়েছে—যাঁরা প্রধানত মহিলা। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে গ্রামের মহিলারা রেগা প্রকল্পের সুপারভাইজার, মিড-ডে মিলের রাঁধুনির কাজ করছেন। এছাড়া মহিলাদের কাছে বামফ্রন্ট সরকার কাজের সুযোগ পৌঁছে দিতে পেরেছে। মহিলারা এখন বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির সহভাগী অংশীদার হিসেবে মহিলারা কাজ করছেন, আই সি ডি এস কেন্দ্রে খাবার সরবরাহ করছেন স্বনির্ভর দলের সদস্যারা, তথ্যচিত্র কেন্দ্রে কাজ করছেন, হাসপাতালে খাবার সরবরাহ প্রভৃতির কাজ করছেন গোষ্ঠীর মহিলারা। যা মহিলাদের নিজের পায়ে দাঁড়াবার সুযোগ করে দিয়েছে বামফ্রন্ট সরকার।

ভূমিসংস্কারের সুফলও মহিলারা ভোগ করছেন। নয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে স্বামী ও স্ত্রীর নামে যৌথ পাট্টা দেওয়া শুরু হয়েছে। রাজ্যে ভূমিসংস্কারের মারফত বণ্টিত জমির প্রায় ৩০% মহিলারা পেয়েছেন। কেবলমাত্র মহিলাদের পাট্টার পরিমাণ ১লক্ষ ৬১হাজারেরও বেশি। আমাদের রাজ্যে এমন কোনো গ্রাম পাওয়া যাবে না, যে গ্রামের মেয়েরা শিক্ষার আঙিনায় প্রবেশ করেননি। ২০১০সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৪লক্ষ ৮৩হাজার ১৫৮জন। ২০০৯সালে স্কুল সার্ভিস কমিশন নিযুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে ৪১.১০শতাংশই শিক্ষিকা।

মহিলাদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার এবং অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের ফলে শিশু ও মহিলাদের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে চিত্রের পরিবর্তন ঘটেছে। ২০০২-০৩সালে সরকারের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ১৯৮১সালে পশ্চিমবাংলায় শিশুমৃত্যুর হার ছিল ৯১, ভারতবর্ষে এই হার ছিল ১১০; ২০০২সালে পশ্চিমবাংলায় শিশুমৃত্যুর হার ছিল ৪৯, ভারতে এই হার ছিল ৬৪; মাতৃমৃত্যুহার ভারতবর্ষে ২৫৪, রাজ্যে ১৪১। প্রসূতি মৃত্যুর হারও কমেছে। পশ্চিমবাংলায় ২০০৪-০৬সালে প্রসূতিমৃত্যুর ঝুঁকি ছিল ০.৩%, সেখানে ভারতে এই ঝুঁকির হার ০.৭%। রাজ্যে মহিলাদের গড় আয়ু ৭০.৯% (দেশের ক্ষেত্রে ৬৮.১%)। স্বাভাবিক BMI (Low Body Mass Index)-এর নিচে-থাকা মহিলার সংখ্যা রাজ্যে ৩৯.১%, সেখানে জাতীয় হার ৩৫.৬%।

অর্থাৎ মহিলাদের জীবনে নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা বেড়েছে। ৭৭সাল পর্যন্ত এবং ৭৭সালের পরবর্তী অবস্থার মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক আছে, তা পরিষ্কার।

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...