দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলাগুলিতেও চলছে শৈত্যপ্রবাহ। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে তাপমাত্রার পারদ নামতে নামতে এক ডিগ্রিতে এসে ঠেকেছে। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে পা রাখছেন না কেউ। স্কুলের ছুটি দুদিন করে বাড়ানো হয়েছে। এই মুহূর্তে তীব্র শীতের কবলে গোটা উত্তরভারত। শুকনো আবহাওয়ার কারণে বায়ুমণ্ডলে ঢুকছে ঠাণ্ডা উত্তুরে হাওয়া। যার জেরেই তাপমাত্রার এই রেকর্ড পতন বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। আগামী কয়েকদিন দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়ার পরিস্থিতি একইরকম থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক রাজ্যের কোথায় কত শীত পড়ল--
জলপাইগুড়ি-- ৪ ডিগ্রি, দমদম-- ৬.৫ ডিগ্রি,পুরুলিয়া--৩.৮ ডিগ্রি, বাঁকুড়া--৪.৮ ডিগ্রি, উত্তর দিনাজপুর-- ১ডিগ্রি।
রাজ্যের মন্ত্রীর গলায় স্পষ্ট শাসানির সুর। মাইক হাতে জোর গলায় মদন মিত্র বললেন, রজ্জাক মোল্লা পাগল। সেই সঙ্গে আরাবুল ইসলামকে ক্লিনচিট দিয়ে বললেন, "আরাবুল তাজা একজন নেতা। ও মার খেলে কি আমরা রসগোল্লা খাব!"সেই সঙ্গে মদন মিত্রের ঘোষণা, "বামনঘাটায় অশান্তি হলে দায়ী থাকবে সিপিআইএম, প্রশাসন কোনও দায়িত্ব নেবে না"। সঙ্গে শাসানি দিলেন "শেষ হয়ে যাবে সিপিআইএম, শেষের সেদিন ভয়ঙ্কর"।
কেউ পাঁচ মিনিটে সিপিআইএমকে শেষ করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। আবার কেউ রেজ্জাক মোল্লাকে বলছেন ভাঙড়ের সবচেয়ে বড় গুণ্ডা। একটু পরেই আরেক নেতার গলায় শোনা যাচ্ছে, সুস্থ থাকতে হলে সিপিআইএম যেন ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন না দেখে। আজ বামনঘাটায় তৃণমূলের সভার সুর এমনই ছিল। একদিকে সিপিআইএমের উদ্দেশ্যে চরম শাসানি। অন্যদিকে দলের নেতা আরাবুলের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও নিঃশর্ত সমর্থন।
বামনঘাটায় গোলমালের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে বুধবার সেখানেই সভা করে তৃণমূল কংগ্রেস। প্রতিবাদ সভা। নেতাদের গলায় ছিল সিপিআইএমের উদ্দেশ্যে শাসানি। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বার্তা দিলেন, "শেষের সে দিন ভয়ঙ্কর।"
দিনকয়েক আগেই হাসপাতালে রেজ্জাক মোল্লাকে দেখতে গিয়েছিলেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এদিন অবশ্য প্রবীণ সিপিআইএম নেতার উদ্দেশ্যে তাঁর আক্রমণ বাঁধ ভেঙেছে যাবতীয় শালীনতার।
মঞ্চে ছিলেন মুকুল রায়ও। সিপিআইএমকে সুস্থ থাকার উপায় বাতলেছেন তিনি।
একসময়ের জোটসঙ্গী কংগ্রেসও বাদ যায়নি আক্রমণের নিশানা থেকে। এদিন মঞ্চ থেকে কখনও চোর, কখনও আবার মূর্খের দলের তকমা জুটেছে কংগ্রেসের কপালে।
এবার টার্গেট প্রতি-পক্ষ৷ একেবারে সরাসরি অনুষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে৷ ভাঙড়ের সভা থেকে এবিপি আনন্দের জনপ্রিয় প্রতি-পক্ষ অনুষ্ঠানের নাম করে ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র যা বললেন, তাকে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে হুমকি বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল৷ প্রতি-পক্ষ অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গ তোলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও৷ সম্প্রতি পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শিশির অধিকারীরাও প্রতি-পক্ষের নাম করে কটাক্ষ করেছেন৷এবার সরাসরি হুমকি দিলেন মদন মিত্র। বললেন, প্রতিপক্ষের আয়োজকরা শুনে রাখুন, 'মানুষ' ক্ষেপে যাচ্ছে।সেই 'মানুষরা' লাঠি-সোঁটা নিয়ে রাস্তায় বেরোলে তাঁদের কিছু করার থাকবে না।
আজ ভাঙড়ে দলীয় সভায় তৃণমূলের বক্তারা আরাবুলের পাশে দাঁড়িয়ে যেভাবে একটি নির্দিষ্ট চ্যানেলের একটি অনুষ্ঠানকে টার্গেট করেছেন, তা নজিরবিহীন বলেই মনে করা হচ্ছে। বৈদিক ভিলেজ কাণ্ড, ভাঙড় কলেজে অধ্যাপিকাকে জলের জগ ছুঁড়ে মারা থেকে শুরু করে সম্প্রতি সিপিএম বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লার ওপর হামলা, পরদিন সিপিএমের মিছিলে আসার পথে গাড়িতে বোমা,বন্দুক নিয়ে হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুলের বিরুদ্ধে। এই সব ঘটনাকে বামফ্রন্ট আমলের সিঙ্গুর,নন্দীগ্রাম ও নেতাইকাণ্ডের মতোই এবিপি আনন্দে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়। পাছে তাঁদের বিরুদ্ধে জনমত সংগঠিত হয়,এই ভয়েই তৃণমূলের প্রথম সারির কিছু নেতা ইদানিং প্রতি-পক্ষ-এর বিরুদ্ধে সরব। গতকালই শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আরাবুলকে সমর্থনের ব্যাপারে প্রতি-পক্ষকে কটাক্ষ করেন। এর আগে তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারীও পূর্ব মেদিনীপুরে দলের এক অনুষ্ঠানে প্রতি-পক্ষ অনুষ্ঠানের সমালোচনা করেন।
এদিন ভাঙড়ে কার্যত ফিল্মি কায়দায় হুঁশিয়ারি দিয়ে মদন বলেছেন, আরাবুলকে হেনস্থা করার চক্রান্ত চলছে। তাঁর দাবি, প্রতি-পক্ষ আয়োজকদের বিরুদ্ধে গণ অভ্যূত্থান হতে পারে। সরকারের এক মন্ত্রী বললেন, দলীয় কর্মীদের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকলেও ক্ষুব্ধ মানুষ বড়সড় লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় নামলে তাঁদের কিছু করার থাকবে না। মন্ত্রীর গলায় ছিল রীতিমতো শাসানির সুর।
দর্শকদের সুবিধার জন্য বিশেষ কিছু অংশ চ্যানেলের পর্দায় গোল দাগ দিয়ে দেখানো হয়। যেমন দেখানো হয়েছিল- রেজ্জাকের ওপর হামলার সময় ঘটনাস্থলে এবিপি আনন্দের ক্যামেরায় ধরা আরাবুলের ছবি। অনেক মানুষের ভিড়ে আরাবুলকে সঠিকভাবে দেখানোর জন্য গোল চিহ্ন পর্দায় দেওয়া হয়েছিল। এতে চরম ক্ষুব্ধ মদন। তিনি বললেন, আরাবুলকে নাকি ব্র্যাকেট করার চেষ্টা হচ্ছে। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, আপনাদেরও গোল করে দেখানোর লোক আছে। আপনাদের ছবিও লোকের পকেটে পকেটে ঘুরছে। এভাবে মন্ত্রী কার্যত দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে পর্যবেক্ষক মহলের অভিমত। তিনি বলেছেন, গোটা পার্টি দলের 'মশাল' আরাবুলের পাশেই আছে। আরাবুলের বিরোধিতামূলক কোনও সংবাদ প্রচারেই কার্যত আপত্তি জানিয়ে বলেছেন, এভাবে বিরোধিতা ভাঙড়ের মানুষ সহ্য করবে না। সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত, তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে মন্ত্রীর এই হুঙ্কার বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, তাঁরা কতটা অসহিষ্ণু।
ভিডিওতে দেখুন -- তৃণমূলের টার্গেট প্রতি-পক্ষ
http://abpananda.newsbullet.in/state/34-more/32306-2013-01-09-13-20-55
এবার টার্গেট প্রতি-পক্ষ৷ একেবারে সরাসরি অনুষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে৷ ভাঙড়ের সভা থেকে প্রতি-পক্ষ অনুষ্ঠানের দিকে ইঙ্গিত করে ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র যা বললেন, তাকে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে হুমকি বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল৷ প্রতি-পক্ষ অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গ আনেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও৷ সম্প্রতি পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শিশির অধিকারী প্রতি-পক্ষের নাম করে কটাক্ষ করেন৷
সভা শেষে বামনঘাটা থেকে ভোজেরহাট পর্যন্ত মিছিল করে তৃণমূল কংগ্রেস।
পরিবহণমন্ত্রী বলেছেন, 'বামুনঘাটায় অশান্তি হলে দায়ী থাকবে সিপিএম। প্রশাসন কোনও দায়িত্ব নেবে না।' বিরোধী দলের উদ্দেশে তাঁর হুঁশিয়ারি, 'একদিন শেষ হয়ে যাবে সিপিএম। শেষের সে দিন ভয়ঙ্কর।'
এদিকে, গোলমালের পর রাতভর ভাঙড়ের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আরও ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় আরও ২২জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধৃতদের থেকে চারটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ছ'রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে দশটি তাজা বোমাও। এলাকায় বসানো
মঙ্গলবার ১০ তারিখের মহাকরণ অভিযানের নীল নক্সা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাঁদের এই মনোভাবের কথা জানিয়েছেন প্রদীপবাবু৷ তিনি বলেন, 'রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি ক্রমশ উচ্ছন্নে যাচ্ছে৷ আমরা উদ্বিগ্ন৷ কাল কী হবে কেউ জানি না৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিস্তারিত চিঠি দিয়ে আমরা অনুরোধ জানাব একটি বিশেষ দল পাঠিয়ে রাজ্যের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখে যেতে৷' রায়গঞ্জে এইমস গড়তে জমি অধিগ্রহণ শুরু করার দাবিতে ১০ জানুয়ারি কলকাতা অচল করে দেওয়ার প্রস্ত্ততিও সেরে ফেলেছে কংগ্রেস৷ সুসজ্জিত ট্যাবলোয় রায়গঞ্জে এইমসের দাবি লেখা থাকলেও প্রদেশ নেতারাই মনে করছেন, দক্ষিণবঙ্গে বিশেষ করে কলকাতায় উত্তরবঙ্গ কেন্দ্রিক ইস্যুতে যতটা সাড়া পাওয়া যাবে তার চেয়ে ঢের বেশি সাড়া মিলবে রাজনৈতিক সংঘাত এবং সরকারের 'নিষ্ক্রিতার' বিষয়টি৷ তাই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে ফিয়ার্স লেন, ব্র্যাবোর্ণ রোড এবং রানি রামণি অ্যাভিনিউ থেকে মিছিল করে আইন অমান্যই করবে কংগ্রেস৷ উল্লেখ্য, পুলিশ প্রশাসন কিন্ত্ত কংগ্রেসকে তিন জায়গায় পৃথক জমায়েতের অনুমতি দেয়নি৷
দু'দিন আগে রেজ্জাক মোল্লা প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে 'আপত্তিকর' মন্তব্য করলেও প্রদেশ কংগ্রেস কিন্ত্ত তাঁর শারীরিক নিগ্রহকে 'বদল নয়, বদলা হিসেবেই দেখছে৷ মমতার সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের অভিযোগকে প্রতিষ্ঠা দেবে ভাঙড় পরিস্থিতি৷ প্রদেশ কংগ্রেস সূত্রে খবর, শ্যামপুকুরের পারিবারিক বিবাদে তৃণমূল কাউন্সিলরের ছেলের শালিশি থেকে শুরু করে বিধানসভার ভিতরে বাইরে বিধায়কদের নিরাপত্তাহীনতা সবই স্থান পাবে প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির চিঠিতে৷
২০১১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে নেতাই হত্যাকান্ডের পর কেন্দ্রীয় সরকার তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে পত্রবোমা পাঠানোয় বাম সরকারের বিড়ম্বনার একশেষ হয়েছিল৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এখনও বলেন, নেতাই ছিল বামেদের কফিনে শেষ পেরেক৷ অনেকেই মনে করেন, সেসময় মমতার সঙ্গে জোটের পথ মসৃণ করতে 'হার্মাদ' শব্দটিকেও সরকারি স্বীকৃতি দিয়েছিলেন তত্কালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পালানিয়াপ্পান চিদাম্বরম৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার কয়েকমাস পর সেই চিদাম্বরমই কলকাতায় এক বণিকসভার অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছিলেন,'পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হিংসার ঐতিহ্য বন্ধ করা যায়নি৷' তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোট ভেঙে কেন্দ্রীয় সরকার ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর, বিশেষ করে কেন্দ্রে সরকার ফেলতে তিনি বাম বিজেপির সাহায্য চাওয়ার পর সনিয়া মনমোহনেরও 'জোটধর্মের' দায় নেই৷ বহুদিন পর রাজ্যে কংগ্রেসের বিবদমান গোষ্ঠীগুলিকেও একমঞ্চে নিয়ে আসার কৃতিত্ব অবশ্য দেওয়া যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই৷ এমতাবস্থায়, পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসার গ্রাফ উর্ধমুখি হলে দিল্লি প্রদেশ কংগ্রেসের দাবিতে সায় দিয়ে প্রশাসক মমতার বিরুদ্ধে বিবৃতি দিতেই পারে৷ মাত্র ক'দিন আগে ধর্মতলায় কংগ্রেসের এফডিআই সমাবেশে হাইক্যান্ডের প্রতিনিধি শাকিল আহমেদ কিন্ত্ত নারি নির্যাতনের প্রশ্নে রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন৷ মঙ্গলবারও দিল্লিতে মমতা বিরোধী বিবৃতি দিয়েছেন তিনি৷
মঙ্গলবার সকালে রেজ্জাক মোল্লার উপর আক্রমণের প্রতিবাদে আলিপুরে জেলাশাসকের দপ্তরের সামনে কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা বামফ্রন্টের অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল৷ সেই সভায় যোগ দিতে সিপিএম কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়েই বেলা আড়াইটা নাগাদ জ্বরে কাহিল মুখ্যমন্ত্রী মহাকরণে ছুটে আসেন৷ সোমবার তিনি অসুস্থতার জন্যই মহাকরণে আসেননি৷ মহাকরণে এসেই তিনি বৈঠক করেন পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে৷ বৈঠকে মুখ্যসচিব ছাড়াও স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজি, অতিরিক্ত ডিজি (আইনশৃঙ্খলা) প্রমুখ৷ মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ কর্তাদের নির্দেশ দেন, 'ভাঙড়ে সিপিএমের হাতে কবে এত বেআইনি অস্ত্র এল, দেখুন৷ গ্রেন্তার করুন৷ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিন৷'
শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় হলদিয়া গিয়েছিলেন বেঙ্গল লিডস্ নিয়ে বৈঠক করতে৷ মুখ্যমন্ত্রী তাঁকেও তলব করেন মহাকরণে৷ পার্থবাবু মহাকরণে পৌঁছলে মমতা প্রশাসনিক বৈঠক সেরে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও আবাসনমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, কলকাতার মেয়র শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে নিজের ঘরেই দলীয় বৈঠক করেন৷ তবে সন্ধ্যায় মহাকরণ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে ভাঙড় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কথার উত্তর না দিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে গাড়িতে উঠে পড়েন৷ এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত ডিজি (আইন শৃঙ্খলা) সুরজিত্ কর পুরকায়স্থও৷ দু'জনেরই বক্তব্য 'জেলা পুলিশকে জিজ্ঞাসা করুন, তারা বলবে৷' দিনের শেষে মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র বলেন, 'ঘটনার বিস্তারিত খবর নেই৷ তদন্ত হচ্ছে৷ পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেলেই বলতে পারব৷ তবে ১০-১২ জন গ্রেপ্তার হয়েছে বলে শুনেছি৷ যেহেতু মন্ত্রীরা প্রশাসনেরই অঙ্গ৷ তাই তাঁরা যেটা বলছেন সেটাই চূড়ান্ত৷ তাঁরা কী বলেছেন জানি না৷' মুখ্যসচিবের এই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, রাজ্য সরকার প্রশাসনিক ভাবে নয়, রাজনৈতিক ভাবেই ভাঙড় পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে চাইছে৷
রাজ্য পুলিশের ডিআইজি (প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ) অনিল কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন 'জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলুন৷ তিনি বলবেন৷' দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠীর বক্তব্য, 'সরকারি ভাবে কিছু বলব না৷' আর রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখাই করতে চাননি৷ অতিরিক্ত ডিজি (আইনশৃঙ্খলা) সুরজিত্ কর পুরকায়স্থ মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে যাওয়ার সময় বলেন, 'জেলায় খোঁজ নিন৷'রাজ্য পুলিশের উচ্চপদস্থ অফিসাররা কি ভাঙড় যাচ্ছেন? প্রশ্ন শুনে তিনি বলেন, 'জেলার সিনিয়ার অফিসাররাই যথেষ্ট৷' পুলিশ সূত্রের খবর, গঙ্গাসাগর মেলার নিরাপত্তার জন্য গোটা জেলার প্রায় সর্বত্রই পুলিশবাহিনীর অভাব রয়েছে৷ মঙ্গলবার ঘটনাস্থলেও মাত্র চারজন পুলিশ কনস্টেবল থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি তাদের পক্ষে৷
দশ বছরে প্রথমবার বাড়ল রেলের ভাড়া। চলতি মাসের ২১ তারিখ মধ্যরাত থেকে নতুন ভাড়া কার্যকর হবে। আজ এক সাংবাদিক বৈঠকে রেলে ২০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করলেন রেলমন্ত্রী পবন কুমার বনশল। চলতি বছরের বাজেটে রেলের ভাড়া আর বাড়বে না বলেও জানান মন্ত্রী। প্রতি কিলোমিটারে ২ পয়সা থেকে ১০ পয়সা পর্যন্ত বাড়বে ভাড়া।
এই ভাড়া বৃদ্ধির জন্য ৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আয় হবে বলে মনে করছে রেল মন্ত্রক। রেলমন্ত্রী এদিন বলেন ২০১০-১১তে ভারতীয় রেলের প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।
গত বছর, তৎকালীন রেলমন্ত্রী তৃণমূলের দীনেশ ত্রিবেদী রেল বাজেটে রেলের ভাড়া বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেন। তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রবল বাধায় শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করে কেন্দ্র।
এক নজরে দেখে নেব কোথায়, কত ভাড়া বাড়ল
শহরতলির দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রতি কিমিতে ২ পয়সা
শহরে কিমি প্রতি বাড়ল ৩ পয়সা
দূরপাল্লার সেকেন্ড ক্লাসে ৪ পয়সা বৃদ্ধি
স্লিপার ক্লাসে প্রতি কিমিতে ১০ পয়সা
এসি চেয়ার কারে প্রতি কিমি ১০ পয়সা
এসি টু টায়ারে প্রতি কিমি ৬ পয়সা
আগামী দু'বছরের মধ্যে ভারতের সার্বভৌম রেটিং কমতে পারে বলে জানাল আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা, ফিচ৷ কারণ, ২০১২-১৩ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে৷ আর এতেই সকালে প্রায় ৬০ পয়েন্ট পড়ে যায় বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ার সূচক, সেনসেক্স৷ বিকালে অবশ্য অর্থমন্ত্রকের পক্ষ থেকে বলা হয়, 'ফিচের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি ভারতের রেটিং কমানোয় বিচলিত নয় সরকার৷ কারণ, আর্থিক ঘাটতির যে লক্ষ্যমাত্রা সরকার ঘোষণা করেছে সেই লক্ষ্যে এখনও ঠিক পথেই চলছে সরকার৷' অর্থমন্ত্রকের এই বিবৃতির পর আবার শেয়ার বাজার বাড়তে শুরু করে এবং শেষমেশ ৫১ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৭৪২.৫২ পয়েন্টে সেনসেক্স বন্ধ হয়৷
রেটিং কমার অর্থ বিদেশিদের কাছে ভারতবর্ষের বিনিয়োগযোগ্যতা কমে যাওয়া৷ রেটিং কমানো হলে, ভারতে বিদেশি বিনিয়োগই শুধু কমবে তাই নয়, বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় সরকারকে বেশি হারে সুদ দিতে হবে৷
অক্টোবর মাসে ভারতের ক্রেডিট রেটিং সম্পর্কে ঠিক একই মনোভাব জানিয়েছিল মার্কিন সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস (এসঅ্যান্ডপি)৷ তখন এসঅ্যান্ডপি বলেছিল, আগামী দু'বছরে ভারতের রেটিং কমার সম্ভাবনা ৩৩ শতাংশ৷
অথচ, নভেম্বর মাসে আরেক মার্কিন সংস্থা, মুডিজ, ভারত সম্পর্কে তাদের বার্ষিক বিশ্লেষণে বলেছিল এই দেশের জন্য তাদের 'বিএএথ্রি' রেটিং অদূর ভবিষ্যতে পরিবর্তিত হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই৷ কারণ, ভারতের সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের হার অন্য দেশের তুলনায় যথেষ্ট ভালো৷ তাছাড়া, ভারতে জাতীয় উত্পাদনের হারও অনেক দেশের তুলনায় অনেক বেশি৷
তবে, ক্রেডিট রেটিং সংস্থাগুলি ভারতের বিনিয়োগযোগ্যতা কমানোর যে কথা বলছে তার প্রধান কারণ দেশের বিশাল আর্থিক ঘাটতি৷ কোনও সরকারের মোট ব্যয় যদি মোট রাজস্বের (ঋণ বাদ দিয়ে) থেকে বেশি হয় তাহলে ওই ঘাটতিকে বলে আর্থিক ঘাটতি৷ ২০১২-১৩ অর্থবর্ষের বাজেটে কেন্দ্রীয় সরকারের এই আর্থিক ঘাটতি মোট জাতীয় আয়ের ৫.১ শতাংশ ধরা হলেও, পরে সেই অনুমান পরিবর্তন করে ৫.৩ শতাংশ করা হয়৷ অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, মার্চে বছর শেষে এই ঘাটতির প্রকৃত পরিমাণ আরও বেশি হবে৷ আন্তর্জাতিক শেয়ার ব্রোকারেজ সংস্থা সিএলএসএ-র অর্থনীতিবিদ রাজীব মালিকের মতে, ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে ভারতের আর্থিক ঘাটতি বাস্তবে জাতীয় উত্পাদনের ৫.৫ থেকে ৬ শতাংশ হতে পারে৷
মঙ্গলবার অর্থসচিব অরবিন্দ মায়ারাম বলেন, 'আমরা বিচলিত নই (ফিচ রেটিং কমানোর কথা বলায়)৷ আমরা বলে আসছি যে আর্থিক ঘাটতি সংশোধিত সীমার মধ্যে রাখার লক্ষ্যে আমরা সঠিক পথেই হাঁটছি৷ কিন্ত্ত, আমাদের কথা লোকে বিশ্বাস করতে চাইছে না৷ অনেকে প্রশ্ন তুলছেন আমরা আথিক ঘাটতি ৫.৩ শতাংশে সীমাবদ্ধ রাখতে পারব কিনা৷ আমি আবার বলছি, আর্থিক সংহতির জন্য যে রোডম্যাপ আমরা প্রকাশ করেছি আমরা সেই পথেই চলব৷'
৩১ ডিসেম্বর কন্ট্রোলার জেনেরাল অফ অ্যাকাউন্টস-এর (সিজিএ) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি আর্থিক বছরে এপ্রিল থেকে নভেম্বর অবধি কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪.১৩ লক্ষ কোটি টাকায়, যা বাজেট অনুমানের ৮০.৪ শতাংশ৷ কিন্ত্ত, ২০১১-১২য় ওই সময়ে আর্থিক ঘাটতির পরিমাণ ছিল বাজেট বরাদ্দের ৮৫ শতাংশ৷ সেদিক থেকে বিচার করলে, চলতি অর্থবর্ষে ঘাটতির পরিমাণ এখনও কিছুটা কম৷
কিন্ত্ত, ৫.৩ শতাংশ আর্থিক ঘাটতি যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয়৷ আর্থিক ঘাটতি বেশি থাকলে টাকার বৈদেশিক মুদ্রায় বিনিময় দর কমবে৷ ফলে, রপ্তানি বেশি ব্যয়সাপেক্ষ হবে৷ যেহেতু, আমাদের দেশে রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি, তাই বৈদেশিক বাণিজ্যখাতে ঘাটতি আরও বাড়বে যা টাকার দর আরও কমিয়ে আনবে৷
আমদানি ব্যয়সাপেক্ষ হলে মুদ্রাস্ফীতিও বাড়বে৷ কারণ, উত্পাদনের খরচ বাড়বে৷ মুদ্রাস্ফীতি বেশি হলে রির্জাভ ব্যাঙ্ক সুদের হার কমাবে না এবং টাকার দরও কমবে৷ টাকার দর ক্রমশ কমলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পক্ষে সেটা ক্ষতির৷ কারণ, বৈদেশিক মুদ্রায় তাদের লাভ কমবে৷
তাছাড়া, এবছর দ্বিতীয়ার্ধে ন'টি রাজ্যে বিধানসভায় এবং ২০১৪ সালে সংসদের সাধারণ নির্বাচন লক্ষ্য করে ইউপিএ সরকার যদি জনমুখী বাজেট করতে চায় এবং বিভিন্ন খাতে দেয়া ভর্তুকি যথেষ্ট পরিমাণে না কমায়, তাহলে আর্থিক ঘাটতি আগামী দিনে আরও বাড়তে পারে৷
এই সব কারণেই বিভিন্ন ক্রেডিট রেটিং সংস্থা ভারতের বিনিয়োগযোগ্যতা (রেটিং) কমানোর সম্ভাবনার কথা বলছে৷ ভারতের বর্তমান রেটিং একধাপ কমলেই বিনিয়োগযোগ্যতার ন্যূণতম সন্মান হারিয়ে 'জাঙ্ক' স্টেটাসে পরিণত হবে, যেমনটা হয়েছে গ্রীস৷
ধর্মতলা থেকে শুরু হল বামেদের মহা মিছিল। ভাঙড়কাণ্ডের প্রতিবাদে ও আরাবুল ইসলামকে গ্রেফতারের দাবিতে রাজ্যজুড়ে ধিক্কার মিছিল করবে বামেরা। কলকাতার মিছিলে উপস্থিত আছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, মঞ্জুকুমার মজুমদার সহ অন্যান্য বাম নেতারা। ধর্মতলা থেকে শুরু হবে বিকেল পাঁচটা নাগাদ। লেনিন সরণী, মৌলালি হয়ে শিয়ালদহে এই মিছিল শেষ হওয়ার কথা।
ভাঙড়ে রেজ্জাক মোল্লার ওপর আক্রমণের ঘটনায় অভিযুক্ত আরাবুল ইসলাম। তাঁর গ্রেফতারের দাবিতে মঙ্গলবার আলিপুর দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার প্রশাসনিক সদর দফতরে অবস্থান বিক্ষোভের ডাক দেয় বামেরা। বিক্ষোভে যোগ দিতে আসা বাম কর্মী সমর্থকদের ওপর ফের আক্রমণের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ভাঙড়ের বামনঘাটায় আরাবুল ইসলামের নেতৃত্বে বাম কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালানো হয়। বাম কর্মীদের গাড়িগুলিতে আগুন লাগানোর পাশাপাশি, তাঁদের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগও উঠেছে।
গুলিতে পাঁচ বাম কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন। তৃণমূলের তরফে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। গোটা ঘটনাকে সিপিআইএমের অপপ্রচার বলে দাবি করে, ১০ জানুয়ারি থেকে পাল্টা প্রচার মিছিলের ডাক দিয়েছে তৃণমূলের।
ভাঙড়ের বামনঘাটায় হামলায় আহত সিপিআইএম সমর্থকদের চিকিত্সা চলছে কলকাতার দুটি বেসরকারি হাসপাতালে। তাঁদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ পাঁচজন। তিনজনের অস্ত্রোপচার হয়েছে।
ভাঙড়ের বামনঘাটায় সিপিআইএমের মিছিলে হামলায় অনেকেই আহত হন। জখমদের সোজা আর এন টেগোর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সুজিত দাস, হাসিম আলি মোল্লা এবং মনসুর আলি শিকারি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কুতুব আলি মোল্লার কানের লতিতে গুলি লেগেছে। সইদুল মোল্লার তলপেটে ও রহিম মোল্লার চোখে ইটের আঘাত লেগেছে।
প্রাথমিক চিকিত্সার পর ছেড়ে দেওয়া হয় হারুণ ঘোষ মল্লিককে। রহিম মোল্লা, কুতুব মোল্লা এবং সইদুল মোল্লাকে পাঠানো হয় পিয়ারলেস হাসপাতালে। অস্ত্রোপচারের পর হাসিম আলি মোল্লা ও মনসুর আলি শিকারিকেও সেখানে পাঠানো হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আর এন টেগোর হাসপাতালে ভর্তি সুজিত দাস। আরও অনেকেই অল্পবিস্তর জখম হয়েছেন।
আতঙ্কের সেই স্মৃতি ভুলতে পারছেন না আহতরা। একই সঙ্গে নতুন করে অশান্তি ছড়ানোর আশঙ্কাও করছেন তাঁরা।
সিপিআইএম নয়, বামনঘাটায় তৃণমূল কর্মীরাই আক্রান্ত হয়েছেন। হামলা চালিয়েছে সিপিআইএম। গুলি চলেছে আরাবুল ইসলামকে লক্ষ্য করে। মহাকরণে দীর্ঘ বৈঠকের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে এই অভিযোগ করলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
বামনঘাটায় গিয়ে ২৪ ঘণ্টার প্রতিনিধি দেখেনপোড়া গাড়ির সারি। হাসপাতালে ভর্তি গুলিবিদ্ধ সিপিআইএম কর্মীরা। কিন্তু সে সম্পর্কে কোনও মন্তব্য নেই। মহাকরণে দীর্ঘ বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের সামনে বরং উল্টো কথাই শোনা গেছে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গলায়। তিনি অভিযোগ করেন, "সিপিআইএম সমর্থকেরাই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে আরাবুলের ওপর। আহত হওয়ায় আরাবুলকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। সিপিআইএম রাজ্যজুড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে"। মহাকরণে আজ আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বৈঠকে হাজির ছিলেন পুলিস-প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তারা। অন্যদিকে নার্সিংহোমের বেডে শুয়ে আরাবুল ইসলামও দাবি করেছেন, বামনঘাটায় হামলা চালিয়েছে সশস্ত্র সিপিআইএম সমর্থকেরা। তাঁকে লক্ষ্য করে তিন-চার রাউন্ড গুলি চালানো হয়। ওই সময়ই গাড়ি থেকে পড়ে গিয়ে তাঁর বুকে আঘাত লাগে।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও আরাবুল ইসলামের বক্তব্য থেকে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে বামনঘাটায় কীভাবে আক্রান্ত হলেন তৃণমূল কর্মীরা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত তৃণমূলের কর্মীদের বয়ানে মিলেছে ভিন্ন ভিন্ন বিবরণ। এমনকী বয়ানে ফারাক মিলেছে মহাকরণেও। তিন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাসকে পাশে নিয়ে শিল্পমন্ত্রী যা বললেন, তার সঙ্গে মেলেনি পরিবহণমন্ত্রীর বক্তব্যও।
আরাবুল ইসলাম ও ভাঙড়ের তৃণমূল নেতাদের মতোই শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বললেন আক্রমণ করেছে সিপিআইএম। আক্রান্ত তৃণমূল। কিন্তু পরিবহণমন্ত্রীর কথায় স্পষ্ট ফুটে উঠেছে আক্রান্ত সিপিআইএম। আক্রমণকারী তৃণমূল। বয়ানে কেন এই ফারাক? প্রশ্ন আছে। উত্তর নেই।
বামনঘাটার বাম কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনায় আরাবুল ইসলামের পাশেই দাঁড়ালেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, সিপিআইএম সমর্থকেরাই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে আরাবুলের ওপর। আহত হওয়ায় আরাবুলকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। সিপিআইএম রাজ্যজুড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে বলে তাঁর অভিযোগ। মহাকরণে আজ আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বৈঠকে হাজির ছিলেন পুলিস-প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তারা।
অথচ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। একইসঙ্গে মহাকরণ থেকেই তিনি ঘোষণা করলেন দলের কর্মসূচি। তিনি জানান, নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টার বিরুদ্ধে আগামী দশ থেকে আঠোরই জানুয়ারি রাজ্যজুড়ে পথে নামবে তৃণমূল কংগ্রেস।
চাপে পড়েই গুলি আরাবুল বাহিনীর | |||||||||||||||
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা | |||||||||||||||
ঘটনার সূত্রপাত দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ। রেজ্জাককে মারধরে অভিযুক্ত আরাবুলকে গ্রেফতারের দাবিতে বালিগঞ্জ থেকে মিছিল করে গিয়ে আলিপুরে জেলা প্রশাসনের দরবারে ধর্নার যে কর্মসূচি সিপিএম নিয়েছিল, তাতে যোগ দিতে ৬০টি গাড়িতে কর্মী-সমর্থকেরা আসছিলেন। সামনের গাড়িতে ছিলেন দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সাত্তার মোল্লা। আবার এ দিন সকালেই কাঁটাতলা থেকে পাল্টা মিছিল করেছিলেন আরাবুল। সেই মিছিল শেষে ৪০-৫০ জন জড়ো হয়েছিলেন বামনঘাটায়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রথম পাঁচ-ছ'টি গাড়ি বেরিয়ে যাওয়ার পরেই তৃণমূলের লোকজন গাড়ি লক্ষ করে ইটবৃষ্টি শুরু করে। ছোড়া হয় বোমাও। পিছনের গাড়িগুলি দাঁড়িয়ে পড়ে। সিপিএমের গাড়িগুলি যাতে নিরাপদে ভাঙড় পেরিয়ে যেতে পারে, তার জন্য পুলিশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজা হয়েছিল। সোনারপুর, কাশীপুর, বারুইপুর, ভাঙড়, বাসন্তী থানা থেকে বাহিনী আনা ছাড়াও আলিপুর থেকে অতিরিক্ত পুলিশবাহিনী পাঠানো হয়। তাদের সামনেই শুরু হয় বোমাবাজি। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, "ব্যারিকেড করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু হামলা রুখতে পারিনি।" | |||||||||||||||
জ্বলছে মিনি ট্রাক। মঙ্গলবার ভাঙড়ে। —নিজস্ব চিত্র | |||||||||||||||
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, রাস্তার দু'পাশ থেকে প্রচুর লোক এসে লাঠি-রড দিয়ে গাড়িগুলোতে ভাঙচুর চালাতে থাকে। ইট-বোমার মধ্যেই সিপিএম কর্মীরা গাড়ি থেকে নেমে এ দিক-ও দিক দৌড়তে থাকেন। অনেকে ঢুকে পড়েন গাড়ির নীচে। ঠিক তখনই গুলি চলে। কয়েক জন রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। একের পর এক আটটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। আরাবুলের ছেলে, ভাঙড় মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হাকিবুলও গাড়িতে আগুন লাগান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন। তৃণমূল সূত্রে খবর, সিপিএমের গাড়ি আটকাতে হামলা চালানোর ছক সোমবার রাতেই কষা হয়েছিল। কিন্তু এত গাড়ি যে এক সঙ্গে আসবে, সেই খবর আরাবুলদের কাছে ছিল না। গাড়িগুলি দাঁড়িয়ে যাওয়ায় প্রচুর সিপিএম কর্মী রাস্তায় নেমে পড়েন। আরাবুলের গাড়ি ছাড়াও আরও দুই তৃণমূল সমর্থকের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। তাতেই আতঙ্কিত হয়ে তৃণমূল কর্মীরা গুলি ছুড়তে শুরু করেন। খবর পেয়েই সাত্তার মোল্লা গাড়ি ঘুরিয়ে ঘটনাস্থলে ফিরে আসেন। তিনি বলেন, "এসে দেখি, গাছের আড়াল থেকে আরাবুল আর তার এক বেঁটে সঙ্গী গুলি চালাচ্ছে। আর ছ'জন রাস্তায় পড়ে কাতরাচ্ছে। খবর নিয়ে জেনেছি, বেঁটে লোকটির নাম সামাদ মোল্লা।" আহতদের পুলিশের গাড়ি ও অ্যাম্বুল্যান্সে করে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ জানায়, আহতদের নাম সুজিত দাস, মইদুল মোল্লা, হাসেম আলি মোল্লা, রহিম মোল্লা, মনসুর শিকারি ও হারুন ঘোষ মল্লিক। প্রথম তিন জনেরই গুলি লেগেছে। বছর সতেরোর সুজিতের অবস্থা গুরুতর। হারুন ও হাসেমকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সিপিএমের প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে আহতদের বাইপাসের ধারে দু'টি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তৃণমূলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সহ-সভাপতি শক্তি মণ্ডল অবশ্য বলেন, "সোমবার রাতে বামনঘাটা এলাকায় আমাদের কিছু পতাকা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার প্রতিবাদে আরাবুলের নেতৃত্বে মিছিল হয়। আরাবুল মিছিল করে বামনঘাটায় দলীয় কার্যালয়ে বসে ছিলেন। সিপিএম তাঁকে মারধর করে রাস্তায় ফেলে দেয়। উনি অচৈতন্য হয়ে পড়েছিলেন। স্থানীয় কিছু সমর্থক তাঁকে মোটরবাইকে তুলে ঘটকপুকুরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। সেখান থেকে নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে। শ্বাসকষ্ট রয়েছে। কথা বলার অবস্থায় নেই।" আরাবুলের বয়ান অন্য রকম। তাঁর কথায়, "গাড়িতে ছিলাম। সিপিএমের গাড়ি থেকে গুলি চালাচ্ছিল। নীচে পড়ে গেলাম। তখনও গুলি চলছে। দলের ছেলেরা বাঁচায়।" প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অন্য একটি গাড়িতে চড়েই আরাবুল ঘটকপুকুরের দিকে যান। হামলায় সিপিএম কর্মীদের একটা বড় অংশ ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁরা যে যার মতো এলাকা ছেড়ে পালান। পরে পুলিশ গিয়ে খালপাড়ে কয়েক জন সিপিএম কর্মীকে উদ্ধার করে। সিপিএম কর্মীদের নিয়ে ২০টা গাড়ি কলকাতার দিকে রওনা হয়। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক গৌতম দেব ঘটনাস্থলের দিকে যান। উত্তেজনা থাকায় পুলিশ তাঁকে বানতলা মোড়েই আটকে দেয়। http://www.anandabazar.com/9pgn2.html
|
বিক্ষোভ, পথ অবরোধ | |||||||
ফের আগুন হাবরায় তৃণমূল কার্যালয়ে | |||||||
নিজস্ব সংবাদদাতা • হাবরা | |||||||
ফের তৃণমূলের কার্যালয়ে আগুন। ফের সেই হাবরায়। এ বারের ঘটনাস্থল স্থানীয় বেড়গুম-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। সোমবার রাতে এলাকার তৃণমূল কার্যালয়ে কে বা কারা আগুন লাগায়। দলীয় কার্যালয় উদ্বোধনের জন্য যে তোরণ ও মুখ্যমন্ত্রীর কাটআউট লাগানো হয়েছিল, তার একাংশ পুড়িয়ে দেওয়া হয় শনিবার রাতে। তবু রবিবার ওই কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন দলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ওই দিনই সিপিএমের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছিলেন, "সাহস থাকলে দিনের বেলা আগুন লাগান। আগুন নিয়ে খেলবেন না। ওই আগুনে পুড়ে মরবেন!" গত ৪ জানুয়ারি রাতেও হাবরার ফুলতলায় ভস্মীভূত হয়েছিল তৃণমূলের কার্যালয়। সব মিলিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছিল যথেষ্টই। এ দিন বেড়গুমার পার্টি অফিস পুড়ে যাওয়ার খবর ছড়াতেই শয়ে শয়ে তৃণমূল নেতা-কর্মী ভিড় করেন সেখানে। ঘটনার প্রতিবাদে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দলীয় কার্যালয়ের কাছে নকপুল মোড়ে শুরু হয় পথ অবরোধ। রাস্তায় বাঁশের ব্যারিকেড বেঁধে শুরু হয় প্রতিবাদসভা। অবরোধের ফলে প্রবল যানজটের সৃষ্টি হয় বনগাঁ-বসিরহাট ও হাবরা-বসিরহাট রোডে। কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ওই অঞ্চল। | |||||||
কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে হাবরার নকপোল এলাকায় তৃণমূলের রাস্তা অবরোধ। ছবি: শান্তনু হালদার। | |||||||
অবরোধ চলাকালীন কিশোর ঘোষ-সহ তাদের তিন কর্মীকে তৃণমূলের লোকজন মারধর করে বলে অভিযোগ করা সিপিএমের পক্ষ থেকে। সকাল দশটা নাগাদ ঘটনাস্থলে আসেন আইসি অনিল রায় এবং বারাসতের এসডিও সুবীর চট্টোপাধ্যায়। আইসি দুষ্কৃতীদের দ্রুত গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই তিনটি ঘটনায় কারা আগুন লাগালো তা এখনও পরিষ্কার নয়। এ দিন পুড়ে যাওয়া দু'টি কার্যালয়ে পরীক্ষা করতে যান ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল। ঘটনার পর চার জনের বিরুদ্ধে হাবরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বেড়গুম-১ অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি অসিত নাগ। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ দুপুরেই গ্রেফতার করে কাজল সেন ও রবীন দে নামে দুই সিপিএম কর্মীকে। মঙ্গলবার বিকেলে এলাকায় তৃণমূলের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ মিছিল বার করা হয়। পুলিশ সুপারকে চিঠি লিখে প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ অমিতাভ নন্দী এবং বেড়গুম ১ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান অসীম ঘোষকে অবিলম্বে গ্রেফতার করার দাবি করেছেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, "আমরা এখনও ধৈর্য্যসীমার মধ্যে রয়েছি। কিন্তু এবার ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙছে আমাদের। স্থানীয় সিপিএম নেতা অসীম ঘোষ ও জেলা সিপিএম নেতা অমিতাভ নন্দীর ইন্ধনে এই ঘটনা ঘটিয়েছে সিপিএম। আমরা নিশ্চিত,ওরাই এই ঘটনায় জড়িত। অবিলম্বে অসীম ঘোষ এবং অমিতাভ নন্দীর গ্রেফতারের দাবি করছি আমরা।" অমিতাভাবাবু অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অসীমবাবুর দাবি, "নির্বাচনের আগে সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে চাইছে তৃণমূল। আমরাই নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি।" http://www.anandabazar.com/9pgn6.html
|
আরাবুলই গুলি চালান, নালিশ সিপিএমের | ||||||||||||
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা | ||||||||||||
একটা করে কাণ্ড ঘটান। দলীয় নেতৃত্ব পাশে দাঁড়ান। নেতৃত্বের বরাভয় পেয়ে আরও নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি! তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক এই আরাবুল ইসলামের সৌজন্যেই ভাঙড় আপাতত ভয়ঙ্কর! দু'দিন আগে ভাঙড়ের কাঁটাতলায় হামলা হয়েছিল প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএমের প্রবীণ বিধায়ক আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার উপরে। মূল অভিযুক্ত আরাবুল। তাঁকে গ্রেফতার করার দাবিতে মঙ্গলবার আলিপুরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ অবস্থান ছিল বামেদের। তার জন্য মিছিল করতে দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে বালিগঞ্জে আসার পথে সেই ভাঙড়েরই বামনঘাটায় আক্রান্ত হলেন সিপিএম কর্মীরা। পড়ল বোমা। গুলিবিদ্ধ তিন জন। এক কিশোরের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ বার আরাবুলের বিরুদ্ধেই গুলি ছোড়ার অভিযোগ! ঘটনাস্থলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অন্তত আটটি গাড়ি। | ||||||||||||
অগ্নিগর্ভ ভাঙড়। পরপর ট্রাক জ্বলছে রাস্তার ধারে। —নিজস্ব চিত্র | ||||||||||||
তৃণমূলের অবশ্য পাল্টা অভিযোগ, আরাবুল নিজেই আহত হয়েছেন। তিনি ভর্তি হয়েছেন চিনার পার্কের একটি নার্সিং হোমে। তাঁর গাড়িও ভাঙচুর হয়েছে। ভাঙড়ের বুকে দিনদুপুরে তাণ্ডবের পরে মহাকরণে দাঁড়িয়ে তৃণূমূলের মহাসচিব তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দরাজ ঘোষণা, "আরাবুল উদ্যমী ছেলে। খুব কাজের! মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, এত এনার্জি ও কোত্থেকে পায়! ভাঙড়ে রেজ্জাকের সঙ্গে লড়তে গেলে কি যুধিষ্ঠির দিয়ে হবে!" কিন্তু বিরোধীদের দিকে গুলি ছোড়া, তাদের গাড়ির উপরে হামলার নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগের কী হবে? পার্থবাবুর জবাব, "আগে আরাবুলকে কে মারল, সেটা দেখি! বাকি পরে দেখব!" | ||||||||||||
| ||||||||||||
তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতা জানান, আরাবুলের ব্যাপারে আপাতত কিছু দেখা হবে না! তাঁর কথায়, "সামনে পঞ্চায়েত ভোট। জেলায় দুর্গ আগলাতে হবে। তার উপরে সংখ্যালঘু ছেলে, দলের পক্ষে কাজের।" বস্তুত, ভাঙড়ের ঘটনার পরে এ দিন বাইপাসের ধারে তৃণমূল ভবন নয়, খাস মহাকরণেই মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দীর্ঘ শলাপরামর্শ করে চার মন্ত্রী একযোগে জানিয়ে দিয়েছেন দলের বক্তব্য এবং দলীয় কর্মসূচি। বুঝিয়ে দিয়েছেন, দল ও সরকারের তফাত নিয়ে তাঁরা আদৌ ভাবিত নন! ক্ষমতায় এসে মমতা বলেছিলেন, মহাকরণ থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচি চলবে না। কিন্তু তাঁর ১৯ মাসের জমানায় বাস্তব সেই ঘোষণার বহু দূর দিয়ে হেঁটেছে। তবু এ দিন যে ভাবে মহাকরণকে দলীয় মঞ্চ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত খারাপ দৃষ্টান্ত বলে বিরোধীদের অভিযোগ। রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ জানিয়ে এসে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, "অতীতে কোনও দিন এ জিনিস হয়নি! মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার পরে মন্ত্রীরা মহাকরণ থেকে দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, প্রতিদিন সন্ধ্যায় মিছিল করা হবে। সাধারণ মানুষের কাছে এটা আতঙ্কের কারণ!" অথচ এ দিনের ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় এবং এজিডি (আইনশৃঙ্খলা) সুরজিৎ করপুরকায়স্থ। সন্ধ্যার পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র কেবল বলেন, "তদন্ত রিপোর্ট এখনও পাইনি। পেলে বলা যাবে।" তবে জানান, এ পর্যন্ত ১২-১৩ জন গ্রেফতার হয়েছে বলে তিনি জেনেছেন। | ||||||||||||
| ||||||||||||
সরাসরি আরাবুলের নাম না-করে সূর্যবাবুর অভিযোগ, "যিনি রেজ্জাক মোল্লার উপরে হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, সেই খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্বই আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে এ দিন গুলি ছুড়েছেন!" যদিও স্বয়ং আরাবুল-সহ তৃণমূল নেতৃত্ব আগের দিনের মতোই গোটা ঘটনার দায় সিপিএমের উপরে চাপাতে চেয়েছেন। এবং সে জন্য প্রশাসনিক তদন্তের অপেক্ষা করেননি পার্থবাবুরা! শিল্পমন্ত্রীর কথায়, "সিপিএম গণতান্ত্রিক ভাবে বাতিল। তারা নীতিহীন হয়ে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে!" মহাকরণ থেকে বামেদের পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে, আরাবুলকে 'ক্লিনচিট' দিয়ে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন, আরাবুলই আক্রান্ত। সোমবার যিনি হাসপাতালে রেজ্জাককে দেখতে গিয়েছিলেন, সেই পার্থবাবুর দাবি, "আরাবুলের উপরেই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। আমাদের ১০ জন কর্মী আহত হয়েছেন।" যা শুনে সূর্যবাবুর মন্তব্য, "ওঁকে কে আক্রমণ করবে? তৃণমূলে কেউ থাকতে পারে, বিরোধীদের নেই!" ভাঙড়ের ঘটনা শোনার পরে এ দিন অসুস্থ শরীর নিয়েই মহাকরণে চলে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমে প্রশাসন এবং পরে দলের কয়েক জন শীর্ষ নেতার সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে দু'পক্ষের অভিযোগ নিয়ে প্রশাসন কার্যত কোনও কথা না-বললেও মহাকরণের প্রেস কর্নার থেকে দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেন পার্থবাবু, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ, অরূপ বিশ্বাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী এবং দলের প্রথম সারির নেতারা। পার্থবাবু বলেন, "১০ থেকে ১৮ জানুয়ারি সিপিএম এবং কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের যৌথ অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রাজ্য জুড়ে সন্ধ্যে ৬টার পরে প্রতিবাদে নামব। ১৮ তারিখ কেন্দ্রীয় মিছিল হবে।" আজ, বুধবার বামনঘাটায় সকাল ১১টায় সভা করবে তৃণমূল। সেখানে মুকুল রায়-সহ তৃণমূলের অন্য নেতারা থাকবেন। | ||||||||||||
| ||||||||||||
২৪ ঘণ্টা আগে হাসপাতালে গিয়ে যাঁকে ফুলের তোড়া দিয়ে এসেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে পার্থবাবুর অভিযোগ, "বিছানায় শুয়ে রেজ্জাক প্ররোচনা ছড়াচ্ছেন। বিগত দিনে তাঁর বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি অভিযোগ সকলের জানা।" শিল্পমন্ত্রী বলেন, "আরাবুলের উপরে যে ভাবে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা হয়েছে, আমরা জানতে চাই এত অস্ত্র এল কোথা থেকে? প্রশাসনের কাছে আমরা এই দাবি জানিয়েছি।" কিন্তু গুলি কারা চালাল, আগুনই বা কারা লাগাল, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে শিল্পমন্ত্রী বলেন, "এ সব তো প্রশাসন দেখবে। পুলিশকে বলা হয়েছে। পুলিশের যদি কোনও গাফিলতি থাকে, সেটাও দেখা হবে।" লাভপুরে মুকুলবাবু বলেছেন, "আলিপুরের একটি সভায় অস্ত্র নিয়ে যাওয়ার সময়ে সিপিএম কর্মীরা ধরা পড়েছেন। ভাঙড়ে গুলি চলেছে। সিপিএমের দুষ্কৃতীরা রাজ্যে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করতে চাইছে। তা বরদাস্ত করব না।" শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু পুরুলিয়ায় বলেছেন, "কে বা কারা গুলি চালিয়েছে, সেটা তদন্তসাপেক্ষ। যে-ই গুলি চালাক, তা নিন্দনীয়।" এ দিন ভাঙড়ের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠি। সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীর দাবি, "যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁরা সকলেই আমাদের দলের। কেউ কেউ গাড়ির চালক! যাঁদের গাড়ি আজ আগুনে পুড়েছে। অথচ অভিযুক্তেরা কেউ ধরা পড়ল না!" | ||||||||||||
আরাবুলের সমর্থনে চার মন্ত্রী। মঙ্গলবার মহাকরণে সুব্রত মুখোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিম। | ||||||||||||
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম দেবের প্রশ্ন, "একের পর এক গাড়ি জ্বলল সিপিএমের। একের পর এক আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন সিপিএমের লোকজন। আর আমরাই আক্রমণ করলাম?" এই ঘটনার পরে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হবে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বিশেষ প্রতিনিধি দল পাঠানোর অনুরোধ করবেন তাঁরা। প্রদীপবাবুর কথায়, "সব দলেরই সংযত হওয়া উচিত। কিন্তু প্রথমে তৃণমূলের সংযত হওয়া উচিত। কারণ তারা শাসক।" অন্য দিকে, বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিন্হা ভাঙড়ে সেনা নামানোর দাবি তুলেছেন! ভাঙড়-কাণ্ড নিয়ে আজ, বুধবার রাজ্যপালের কাছেও যাবেন তাঁরা। | ||||||||||||
http://www.anandabazar.com/9pgn1.html—নিজস্ব চিত্র | ||||||||||||
বাড়ানো হল রেলের ভাড়া, একদশকে এই প্রথম
শহরতলির তথাকথিত লোকাল ট্রেনে কিলোমিটার পিছু ২ পয়সা করে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। দূরপাল্লার ট্রেনে দ্বিতীয় শ্রেণিতে কিলোমিটার প্রতি ৩ পয়সা করে ভাড়া বেড়েছে। স্লিপার ক্লাসের ক্ষেত্রে বর্ধিত ভাড়ার পরিমাণ কিলোমিটার পিছু ৬ পয়সা। এসি চেয়ার কার এবং এসি থ্রি টিয়ারে কিলোমিটার প্রতি ১০ পয়সা করে ভাড়া বেড়েছে। এসি প্রথম শ্রেণি এবং এসি টু টিয়ারে কিলোমিটার পিছু ভাড়াবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ৩ এবং ৬ পয়সা।
রেলভাড়া বৃদ্ধির নেপথ্যে যুক্তি হিসেবে বনসল বলেছেন, 'খরচ বেড়েছে বহুলাংশে। অথচ গত একদশকে ভাড়া বাড়েনি। উল্টে নিচু শ্রেণির ক্ষেত্রে ভাড়া কমেছে। আর্থিক সঙ্কটের কারণে আমরা চলতি অর্থবর্ষের টার্গেট পূরণ করতে পারিনি।' তাঁর মতে, এই বৃদ্ধি যথাযথ এবং যুক্তিসঙ্গত।
কত বাড়ল
লোকাল ট্রেন-- ২ পয়সা প্রতি কিলোমিটার
দূরপাল্লার ২য় শ্রেণি-- ৩ পয়সা প্রতি কিলোমিটার
দূরপাল্লার ২য় শ্রেণি (মেল বা এক্সপ্রেস)-- ৪ পয়সা প্রতি কিলোমিটার
দূরপাল্লার স্লিপার -- ৬ পয়সা প্রতি কিলোমিটার
এসি চেয়ার কার-- ১০ পয়সা প্রতি কিলোমিটার
এসি থ্রি টিয়ার -- ১০ পয়সা প্রতি কিলোমিটার
এসি ১ম শ্রেণি-- ১০ পয়সা আগেই বেড়েছিল+ ৩ পয়সা প্রতি কিলোমিটার
এসি ২ টিয়ার -- ১৫ পয়সা আগেই বেড়েছিল+ ৬ পয়সা প্রতি কিলোমিটার
এসি ফার্স্ট ক্লাস এগজিকিউটিভ-- ৩০ পয়সা আগেই বেড়েছিল+১০ পয়সা প্রতি কিলোমিটার
শ্যামপুকুরেও পথে নামার প্রস্ত্ততি নাগরিক সমাজের
বাপ্পা চৌধুরীর অনুগামীদের কার্যকলাপে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকার মানুষ পথে নামার সিদ্ধান্ত নিলেও, বাপ্পা কিন্ত্ত বহাল তবিয়তেই আছেন৷ এ দিনও ৭ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল পার্টি অফিসের বাইরে তৃণমূল নেতাদের জমজমাট আড্ডা বসেছিল বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি৷ তৃণমূলের একাংশই এখন বাপ্পা-বাহিনীর বিরুদ্ধে সরব৷ তাদের অভিযোগ, কাশিমবাজার পলিটেকনিক স্কুলে 'সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্প'-এর দুর্নীতিতেও জড়িয়ে পড়েছেন বাপ্পার অনুগামীরা৷ ওই স্কুলের এক শিক্ষকের বক্তব্য, 'সরকার থেকে সর্বশিক্ষা অভিযান খাতে দুই খাতে কুড়ি লাখ টাকা পেয়েছে স্কুল৷ এই টাকায় একটি নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছে৷ সেই বাড়ি তৈরির বরাত পেয়েছে বাপ্পার দলবল৷' ওই শিক্ষকের প্রশ্ন, কুড়ি লক্ষ টাকার প্রকল্প, অথচ কোনও টেন্ডার না ডেকেই কী ভাবে বরাত দেওয়া হল তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের?
পাশাপাশি, বাপ্পার খাসতালুকে পুরসভার একশো দিনের কাজের প্রকল্প নিয়েও বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে৷ স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, তৃণমূলের একটি শিবিরের ঘনিষ্ঠ না হলে একশো দিনের কাজ পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই৷ দলের এই অংশই ঠিক করে দেয়, ওই কাজ কাকে দেওয়া হবে, আর কাকে দেওয়া হবে না৷ তৃণমূল সূত্রেই জানা গিয়েছে, ৭ নং ওয়ার্ডের এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার দুই ভগ্নীপতি একশো দিনের কাজ দেখভাল করেন৷ তাঁদের 'খুশি' না করতে পারলে কাজ পাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই৷
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই এলাকায় যে কোনও ইস্যুতে খবরদারি করা শুরু করেছে স্থানীয় তৃণমূলের একাংশ৷ জোর করে 'নজরানা' নেওয়ায় অভিযোগও রয়েছে প্রচুর৷ শাসকদলের বিষনজরে পড়ে যাওয়ার ভয়ে কেউ থানায় অভিযোগ জানানোর সাহস দেখাতে পারেনি৷ কিন্ত্ত শনিবারের ঘটনায় 'ঐক্যবদ্ধ' হতে শুরু করেছে এলাকার মানুষ৷ মঙ্গলবার গ্যালিফ স্ট্রিট থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ছোটেলাল সাউয়ের সঙ্গে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের একাংশের সখ্য ছিল বলেও জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা৷ এলাকাবাসীর বক্তব্য, 'ছোটেলাল সাউয়ের বাবা রামানন্দ সাউ তৃণমূল কাউন্সিলর মঞ্জুশ্রী চৌধুরীর বাড়ির সামনে ঠেলাগাড়িতে চা বিক্রি করতেন৷ সেই সুবাদে তাঁর বাড়ির তলায় পার্টি অফিসে নিয়মিত আনাগোনা ছিল ছোটেলালের৷'
শুভেন্দুবাবুর মৃত্যুতে আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে ছোটেলালের দুই ভাই বিজয় ও গোপীনাথ ও এক ভাইয়ের স্ত্রী সুলেখাকে৷ লিখিত অভিযোগে বাপ্পা চৌধুরীর নামই না থাকায় তাঁকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি৷ ছোটেলাল অবশ্য দাবি করেছেন, ঘটনার সঙ্গে তিনি কোনও ভাবেই জড়িত ছিলেন না৷ শনিবার ঘটনার দিন রাত ৮টা ২০-তে হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে বেনারসে আত্মীয়ের বাড়ি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চলে যান বলে দাবি তাঁর৷ পুলিশ অবশ্য সে দাবি খারিজ করে দিয়ে জানিয়েছে, ঘটনার পর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন ছোটেলাল৷
মৃতদেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে৷ যদিও তাঁর পরিবারের অভিযোগ, তৃণমূলের অফিসে নিয়ে গিয়ে মারধরের পরই হূদরোগে আক্রান্ত হন শুভেন্দুবাবু৷
রাজপথেই শুরু সম্মুখ সমর
কিন্ত্ত সেসবের তোয়াক্কা না করে বিরোধীদের পাশাপাশি শাসক দলওভাঙড়ের ঘটনাকে হাতিয়ার করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ ভাঙড়ের ঘটনাস্থলেই আজ বুধবার, সকাল থেকে মিছিল ও জনসভার ডাক দিয়েছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস৷ দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা ওই কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন৷ বলাই বাহুল্য আরাবুল ইসলামের পাশে দাঁড়াচ্ছে গোটা তৃণমূল৷ অন্যদিকে আরাবুলের গ্রেপ্তারির দাবিতে অনড় বিরোধী দল সিপিএম৷ এইদিন সন্ধ্যায় রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের সঙ্গে দেখা করেও বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রর নেতৃত্বে বাম পরিষদীয় দল একই দাবি জানিয়েছে৷ এর আগে এই দাবিতে দুপুর থেকে আলিপুরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা শাসকের দন্তরের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করে বামফ্রন্ট৷ সেখানে আগামী দিনে রাজ্যে বন্ধ ডাকার ইঙ্গিত দিয়ে সূর্যবাবু বলেন, 'সামনে সাগর মেলা৷ তাই এখন বনধ্ ডাকছি না৷ ১৬ তারিখের পর দু'তিন দিন অপেক্ষা করব তারপর যা কর্মসূচি নেওয়ার নেব৷'
সিপিএম ও তৃণমূলের বিবাদ হাতিয়ার করে নতুন উদ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় সামিল হয়েছে কংগ্রেস৷ তারা ভাঙড়ের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অবিলম্বে রাজ্যে কেন্দ্রীয় পরিদর্শক দল পাঠানোর দাবি জানিয়েছে৷ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, 'রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ উচ্ছন্নে যাচ্ছে৷ আমরা এই ভেবে উদ্বিগ্ন, কাল কী হবে৷' জবাবে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'কংগ্রেস আগে দিল্লি সামলাক, পরে বাংলার কথা ভাববে৷'
রাজনৈতিক দলগুলি যখন পরিস্থিতির সুযোগ নিতে ব্যস্ত তখন উন্নয়ন, শিল্পায়নসহ রাজ্যের ভবিষ্যত্ নিয়ে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের বৃহত্তর অংশ৷ বছর দেড়েক আগে রাজ্যে বহু কাঙ্খিত রাজনৈতিক পালাবদলের সময় মানুষের বিপুল প্রত্যাশা ছিল নতুন সরকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সংঘাত, সন্ত্রাসের সংস্কৃতির অবসান হবে৷ উন্নয়নে সামিল হবে শাসক ও বিরোধী দুপক্ষই৷ কিন্ত্ত পালাবদলের পর থেকেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে সিপিএমের পার্টি অফিস দখল, ওই দলের নেতা কর্মীদের ঘরছাড়া করার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠতে থাকে৷ কয়েক জায়গায় প্রতিরোধও শুরু করেছে বিরোধীরা৷ তবে এসবই সীমাবদ্ধ ছিল কলকাতা থেকে দূরের জেলাগুলিতে৷ মঙ্গলবার, তা হানা দিল একেবারে মহানগরীর দোরগোড়ায়৷ আর কয়েকমাস পরেই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট৷ গ্রামবাংলা দখলের সেই ভোটে সবপক্ষই নিজেদের শক্তি প্রদর্শনে প্রস্ত্তত হচ্ছে৷ রাজ্যের ২০টি জেলা পরিষদের ১৬টি'ই এখন সিপিএমের দখলে৷ পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম প.ঞ্চায়েতেরও অর্ধেকের বেশি বামেদের হাতে৷ ফলে বিধানসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে রাজ্য শাসন করলেও গ্রাম বাংলার দখল নিতে তৃণমূলের কাছে পঞ্চায়েত ভোট এই মূহুর্তে সব চেয়ে বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ৷ অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা দিতে পঞ্চায়েতকেই পাখির চোখ করেছে সিপিএমও৷ কংগ্রেস-তৃণমূলের জোট ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী রাজনৈতিক সমীকরণও অশান্তির সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে৷
এদিন মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ভাঙড় নিয়ে আলোচনার পর পার্থবাবু জানান, 'আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সিপিএমের সন্ত্রাসের প্রতিবাদে প্রতি সন্ধ্যায় তৃণমূলকর্মীরা মিটিং মিছিল করবেন৷ ১৮ তারিখ কলকাতায় কেন্দ্রীয় মিছিল ও সমাবেশ হবে৷' আগামীকালই কলকাতায় মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়েছে কংগ্রেস৷ ফলে মহানগরীতেও অশান্তির আশংকা উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ প্রশাসন৷
ভাঙড়ের ঘটনা নিয়ে সিপিএমের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব সরব হয়েছে৷ পাটির সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট এদিন বলেন,'ভাঙড়ের অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা না-হলে আমরা দেশজুড়ে আন্দোলন করব৷ এই ঘটনা নিয়ে সিপিএম পলিটব্যুরো সমস্ত গণতন্ত্রপ্রিয় শক্তিকে তৃণমূলের হামলার বিরুদ্ধে সরব হতে আবেদন জানিয়েছে৷
কংগ্রেসের পাশাপাশি এদিন সিপিএমকেও তীব্রভাষায় আক্রমণ করেছে তৃণমূল৷ পার্থবাবুর হুঁশিয়ারি, 'দেখব ওরা পঞ্চায়েতে প্রার্থী দিতে পারে কিনা৷' তাঁর অভিযোগ, আরাবুলের উপর অস্ত্র নিয়ে ভয়ংকর আক্রমণ হয়েছে৷ এত অস্ত্র আসছে কোথা থেকে পুলিশকে তা খোঁজ নিতে হবে৷' তাঁর বক্তব্য, 'পুলিশের তরফে গাফিলতি থাকলে তা-ও খতিয়ে দেখা হবে৷' পালটা তোপ দেগেছে সিপিএমও৷ জেলা শাসকের দন্তরের বাইরের সভায় দলের নেতা মহম্মদ সেলিম বলেন, 'আজ আমরা চলে যাব ঠিকই৷ কিন্ত্ত কাল যদি সূর্যকান্ত মিশ্র রাস্তায় বসে পড়েন তাহলে ডিএম-এসপিরা অফিসে আসতে পারবেন না৷ প্রশাসন ব্যবস্থা না-নিলে আমরা বারবার রাস্তায় নামব৷ দেখব যাঁরা এই রাস্তায় যাতায়াত করেন তাঁরা তখন কী করেন৷ উল্লেখ্য এই পথেই রোজ মহাকরণ থেকে বাড়ি ফেরেন মুখ্যমন্ত্রী৷ আলিপুরের সভার আগে সিপিএমের কর্মী সমর্থকরা বালিগঞ্জ থেকে মিছিল করে আসেন৷ সেই মিছিলে যোগ দিতে আসা সিপিএম সমর্থকদের গাড়ির উপরে এদিন হামলা হয় বামনঘাটায়৷
পাল্টা হামলার অভিযোগ, নার্সিংহোমে আরাবুল
স্থান এবং কাল একই, শুধু পাত্র আলাদা৷ স্থান ভাঙর৷ আর সময় প্রায় একই, সেই দুপুর বারোটা৷ প্রথমজন যদি রেজ্জাক মোল্লা হন দ্বিতীয় জনআরাবুল ইসলাম৷ তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সি পি আই এম বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লা৷ ঠিক দুদিন পর সি পি আই এমের হাতে মার খাবার অভিযোগ তুলে হাসপাতালে যেতে হল ভাঙরের তৃণমূল কংগ্রেস নেতা আরাবুল ইসলামকে৷ রেজ্জাক মোল্লা ভর্তি বাইপাসের ধারে বেসরকারি নাসিংহোমে৷ আরাবুল ইসলাম অবশ্য ঘটনাস্থল থেকে আরও দূরে নিউটাউনের চিনার পার্কের একটি বেসরকারি নাসিংহোমে৷ সি পি এমের প্রবীন নেতা রেজ্জাক মোল্লা সম্পর্কে তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক,পুরমন্ত্রী ববি হাকিম সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন, 'ওনি নাটক করছেন৷' সি পি এম নেতা নেপালদেব ভট্টাচার্য এদিন পাল্টা বলেছেন, 'আরাবুলের পিঠে আঁচড় ছাড়া কিছুই লাগেনি বলে শুনেছি৷ তবু ওঁর আরগ্য কামনা করি৷''চিকিত্সা-নাটক' ঘিরে অবশ্য দুই নেতার বিবৃতি দুরকম৷ রেজ্জাক মোল্লা সোমবারে নাটক প্রসঙ্গে জানান, 'কে বলেছে, ববি হাকিম? আমি জানি ওনি শুধু ববি, হাকিম নন৷' তাঁর বেসরকারি নাসিংহোমে যাওয়া নিয়ে এদিন ফোনে প্রশ্ন করা হয়েছিল ভাঙরের তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামকেও৷ আপনি কেন সরকারি হাসপাতালের ওপর ভরসা রাখতে পারলেন না? বিরক্ত আরাবুল ফোন লাইন কেটে দেওয়ার আগে মন্তব্য করেন, 'যতসব ফালতু প্রশ্ন৷' দলীয় নেতার ভর্তি সম্পর্কে অবশ্য তৃণমূল নেতারা এদিন নাটকের প্রসঙ্গ আর উল্লেখ করেননি৷ শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় মহাকরণে জানিয়েছেন, 'আহত আরাবুল ইসলাম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন৷' ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় তৃণমূল নেতা বিপ্লব নস্কর এদিন বামুনঘাটা তৃণমূল দলীয় দপ্তরে দাঁড়িয়ে বলেন,' আরাবুলের মাথায় বাঁশ দিয়ে আঘাত করা হয়েছে৷ তাই তাকে নাসিংহোমে ভর্তি করতে হয়েছে৷' নিউটাউনের চিনার পার্কে যে নার্সিংহোমে আরাবুলকে ভর্তি করা হয়েছে সেই হাসপাতালের চিকিত্সক সুভাষ বসু এদিন বিকেলে জানান,'তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের দুবার ই সি জি করা হয়েছে৷ কিন্ত্ত কিছু পাওয়া যায়নি৷ উত্তেজনা থেকে তার রক্তের চাপ কিছুটা বেড়েছে৷ তবে এক্সারনাল ইনজুরি নেই৷' চিকিত্সা পরিভাষায় বলা যেতে পারে তিনি বাড়ি যাওয়ার মতো সুস্থ রয়েছেন৷ তবে এদিন বিকেলের পর থেকে সংবাদ মাধ্যমকে এই তৃণমূল নেতার সঙ্গে দেখা করতে দিতে চাননি তৃণমূলের নেতারা৷ ফোনে অবশ্য তিনি কথা বলেছেন৷ জানিয়ে দিয়েছেন, আমার শরীর ভাল নেই৷ রেজ্জাক মোল্লার মার খাওয়া প্রসঙ্গে ববি হাকিম বলেছিলেন, কয়েক হাজার লোক মারলে উনি কি হাসপাতালে ভর্তি হতে পারতেন? এদিন পাল্টা জবাবে ভাঙরের সি পি এম নেতা সাত্তার মোল্লা জানিয়েছেন, আমরা সংখ্যায় ছিলাম তিনহাজার৷ আর ওরা সংখ্যায় ছিল ৪০৷ আমাদের হাতে আজ অস্ত্র থাকলে কী আর আমাদেরই গাড়ি জ্বলত?
তৃণমূলের বাধায় নিজের কেন্দ্রেই থমকে মুখ্যমন্ত্রীর সৌন্দর্যায়ন অভিযান
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী কেন্দ্র ভবানীপুরে নিজেরই দলের কর্মী-সমর্থকদের বাধায় থমকে দাঁড়াল সৌন্দর্যায়নের কাজ৷ তৃণমূলের বাধার মুখে রণে ভঙ্গ দিতে বাধ্য হয়েছেন পুরকর্তারা৷
পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের সৌন্দর্যায়ন কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে বিভিন্ন রাস্তায় ফুটপাথ সাজানোর কাজে হাত দিয়েছে কলকাতা পুরসভা৷ পুরোনো ইট এবং কংক্রিটের বদলে সুদৃশ্য 'পেভার ব্লক' দিয়ে ফুটপাথ সাজানো হচ্ছে৷ কোথাও আবার ফুটপাথের পাশে সবুজ উদ্যান বানানো হচ্ছে৷ পার্ক স্ট্রিট, জওহরলাল নেহরু রোড, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড, রাজা সুবোধচন্দ্র মল্লিক রোড-সহ বিভিন্ন রাস্তায় এই সৌন্দর্যায়নের কাজ চলছে৷ আর সেই কাজ করতে গিয়েই ভবানীপুরে খোদ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের প্রবল বাধার মুখে পড়ছেন পুরকর্মীরা৷
পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, তৃণমূলের বাধাতেই ভবানীপুরে জগুবাজারের (যদুবাবুর বাজার) কাছে ফুটপাথ সাজানোর কাজ শুরুই করতে পারছেন না তাঁরা৷ জগুবাজারের কাছে ফুটপাথের সিংহভাগ দখল করে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছেন হকাররা৷ শুধু জগুবাজারের আশপাশেই প্রায় একশোর উপর হকার স্টল রয়েছে৷ প্রথম থেকে এখানকার হকাররা তৃণমূলের সঙ্গেই ছিলেন৷ কিন্ত্ত সম্প্রতি কলকাতা পুরসভা থেকে হকারদের জানানো হয়, ওই এলাকায় ফুটপাথ সাজানোর কাজ শুরু হবে৷ তার জন্য রাস্তার দিক থেকে সাড়ে তিন ফুট জায়গা ছেড়ে বসতে হবে হকারদের৷ এতেই আগুনে ঘৃতাহুতি পড়ে৷ হকাররা সাফ জানিয়ে দেন, তাঁরা একচুলও জায়গা ছাড়বেন না৷ গত শুক্রবার পুরসভার নিযুক্ত ঠিকাদার সংস্থার কর্মীরা সেখানে মাপজোক করতে গেলে হকাররা তাঁদের বাধা দেন৷ হকারদের প্রতিনিধি হিসেবে তৃণমূলের কয়েক জন স্থানীয় নেতাও সেখানে হাজির হন৷ তাঁরা প্রস্তাব দেন, হকারদের সঙ্গে আলোচনা না করে কিছু করা যাবে না৷ অবস্থা বেগতিক দেখে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হন ঠিকাদারের লোকেরা৷
সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলার তথা পুরসভার চেয়ারম্যান সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সোমবার তিনি বলেন, 'ফুটপাথ সাজানোর জন্য হকারদের কিছু জায়গা খালি করতে বলা হয়েছিল৷ কিন্ত্ত তাতে কিছু লোক বাধা দিচ্ছেন৷ যারা বাধা দিচ্ছে, তারা সবাই আইএনটিইউসি-র লোক৷ আমাদের দলের কেউ সৌন্দর্যায়ন কাজে বাধা দিচ্ছেন না৷'
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'এ রকম কোনও ঘটনার কথা আমার জানা নেই৷ তবে খোঁজখবর নেব৷' সিভিল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষও জানিয়েছেন, তিনিও বিষয়টি জানেন না৷
হকার নেতারা অবশ্য দলের কোপে পড়ার ভয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি হননি৷ নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক হকার নেতা অভিযোগ করেন, 'আমরা এখানে কয়েক দশক ধরে ব্যবসা করছি৷ এর সঙ্গে আমাদের রুটি-রুজি জড়িত৷ পুরসভা যতটা জায়গা ছাড়তে বলছে, সেটা হলে এখানে আর ব্যবসাই করা যাবে না৷ আমরা প্রথম থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছি৷ দলের যে কোনও প্রোগ্রামে টাকা দিই৷ অথচ, আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই সৌন্দর্যায়নের নামে হকার উচ্ছেদে নেমেছে পুরসভা৷ আমরা এটা মেনে নেব না৷ দরকার হলে পথে দাঁড়িয়ে মোকাবিলা করব৷'
বাজার ক্রমশই ভরছে বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনে
সত্যিই কী এমনটা হয়? খবরের কাগজ, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রায়ই বিভিন্ন সংস্থার নানান পণ্যের রকমারি বিজ্ঞাপন দেখা যায়৷ বিজ্ঞাপনগুলিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নানান অবিশাস্য প্রতিশ্রীতি দেয় সংস্থাগুলি৷ যেমন, দু'সপ্তাহে গায়ের রং ফর্সা হওয়া, এক সন্তাহে তিন-চার কেজি ওজন কমানো, জীবানুবিহীন পানীয় জল, এমন কত কী!
আসলে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুল তথ্য দিয়ে পণ্য বিক্রির চেষ্টা৷ সম্প্রতি হিন্দুস্থান ইউনিলিভার লিমিটেড (এইচইউএল)-এর বিরুদ্ধে এমনই এক অভিযোগ উঠেছে৷ সংস্থাটি তাদের জল পরিশোধন করার যন্ত্র 'পিওর ইট'-এর বিজ্ঞাপণে বলেছে, যন্ত্রটি এক লিটার জল থেকে এক কোটি ভাইরাস মারতে পারে এবং বাজারে অন্য কোনও জল পরিশোধনকারী যন্ত্রের এমন ক্ষমতা রয়েছে তা যদি কোনও ব্যক্তি প্রমাণ করতে পারেন, তাকে সংস্থার তরফ থেকে এক কোটি টাকা পুরষ্কার দেওয়া হবে৷
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের জুন মাসে এইচইউএলকে ভুল তথ্য পরিবেশন করতে নিষেধ করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি (এনআইভি)৷ নিষেধ মেনে তাদের বিজ্ঞাপন সংশোধন না করলে সংস্থাটির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানায় এনআইভি৷
এর পরেই অরবিন্দ সেনয় নামে এক রসায়ন বিজ্ঞানী এইচইউএল এবং সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার (ওয়াটার) বিক্রম সুরেন্দ্রনের বিরুদ্ধে মেজিস্ট্রেট আদালতে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন৷ সেনয়ের অভিযোগ, বিজ্ঞাপনটি সম্পূর্ণভাবে কল্পনাপ্রসুত এবং সংস্থার দাবি মিথ্যা৷ সেনয় আরও অভিযোগ করেন, পিওর ইট-এর ক্ষমতা সম্পর্কে সংস্থার দাবি ভুল তা সুরেন্দ্রন এবং সংস্থার অন্যান্যরাও ভালো ভাবেই জানেন৷
ওই আদালত শেনয়-এর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশকে নির্দেশ দেয় এইচইউএল বিজ্ঞাপণে যা দাবি করছে তার সত্যতা যাচাই করতে৷
এর পরই সুরেন্দ্রন মুম্বই হাইকোর্টে আপীল করেন যেন এই পুলিশি তদন্ত বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়৷ সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি কেইউ চণ্ডিওয়াল সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে বলেন, 'কেবলমাত্র পুলিশি অনুসন্ধানে কোনও সংস্থার বিচলিত হওয়ার কোনও কারণ নেই৷ এতে ওই সংস্থার বা তার কোনও কর্মীর কোনও সন্মানহানীও ঘটে না৷ তাছাড়া, ম্যাজিস্ট্রেট তো কেবল ঘটনার সত্যতা জানার জন্য পুলিশকে রিপোর্ট দিতে বলেছেন, তদন্ত করার কোনও নির্দেশ দেননি৷'
মিস-লিডিং বা বিপথেচালিত করে এমন বিজ্ঞাপণের সংখ্যা এখন ক্রমশ বাড়ছে৷
গত বছর মে থেকে অক্টোবর এই ছয় মাসে ২০৫ টি মিস-লিডিং বিজ্ঞাপণ বাতিল করে ভারতে বিজ্ঞাপন পর্যবেক্ষনকারী সংস্থা, অ্যাডভার্টাইজিং স্ট্যান্ডার্ড কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এএসসিআই)৷ ২০১১-১২ অর্থবর্ষে একই কারণে বাতিল হওয়া বিজ্ঞাপনের সংখ্যা ছিল ১৭৭ টি৷ এএসসিআই তাদের ন্যাশনাল অ্যাডভার্টাইজিং মনিটরিং সার্ভিস (এনএএমএস) এর মাধ্যমে শুধু অক্টোবর মাসেই ভুল তথ্যের অভিযোগ ওঠা ২৩ টি বিজ্ঞাপনের মধ্যে ১৬ টি বাতিল করে৷ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বেশ কিছু অগ্রনী সংস্থার বিজ্ঞাপনও এর মধ্যে রয়েছে৷ গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন কনজিউমার হেলথকেয়ার লিমিটেড-এর হরলিক্স, ক্যাডিলা হেলথকেয়ারের এভারইয়ুথ ন্যাচারাল ফেয়ারনেস ফেস ওয়াশ, এইচইউএল-এর পেপসোডেন্ট এক্সপার্ট প্রোটেকশন টুথ পেস্ট, প্রভৃতি এই তালিকায় রয়েছে৷
মধ্যবিত্ত যা ভাবতে অভ্যস্ত, তাকে ছাপিয়ে যান লালন শাহ
শোভন: বার বার লালনের কাছে ফিরে যাচ্ছেন কেন?
সুদীপ্ত: ফিরে যাওয়ার একটা খুব বাহ্যিক কারণ আছে, একটা খুব গভীর কারণ আছে৷ বাহ্যিক কারণ আছে, যে কথাটা লাল (সুমন মুখোপাধ্যায়) বলছিল, এই যে চেঞ্জ চোখে পাকাবাড়ি তৈরি হচ্ছে তা নয়, ফকিরদের মানসিকতা পালটে যায়, অনেক বৃদ্ধ ফকির যাদের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়েছিল, যাদের ভিডিও নাটকে দেখতে পাবে, তাঁরা এখন গতায়ু, নতুন ফকিররা কী বলছেন, পুরোনো ফকিরদের ছেড়ে দেওয়া স্থান অন্য ফকিররা নিচ্ছেন, ফকিরের মধ্যে কতটুকু ফিকিরি ঢুকছে, এগুলো তো চোখে পড়ার মতো জিনিস, আর পলিটিসাইজড হয়ে যাচ্ছেন লালন, আস্তে আস্তে৷ যেমন, আমরা প্রথম যখন গেলাম, তখন মাজার বলছে৷ এক সময় কিন্ত্ত আখড়া বলা হত৷ আখড়াটা মাজার হয়ে গেছে, মাজারটাকে কবে দরগা বলবে! এই যে পরিবর্তনটা, আখড়া থেকে মাজার থেকে দরগা, এটা বিরাট পরিবর্তন, এবং ৯৭-এ যখন আমরা গেছি, লালের মনে থাকবে, আমরা একদিন রিকশা করে যাচ্ছি, গান গাইতে গাইতে, ভ্যান রিকশা করে, দুজন বাউল বন্ধু আমাদের সঙ্গে, হঠাত্ মগরিবের আজান ডাকছে, আমরা গান গেয়ে যাচ্ছি, এক জন হঠাত্ পাশ থেকে চেঁচিয়ে বলল, এই গান থামাও! আমি সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেছি, আমাদের সঙ্গে ছিলেন এক ফকির৷ তিনি বললেন দাদা আমরা ওসব মানি-টানি না৷ আপনি গান করেন, মনের আনন্দে করেন৷ ২০০৮-এ যখন গেলাম, ওই একই ফকিরকে জিজ্ঞেস করলাম, সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটা কী? তাঁর সেই ঘটনাটা মনে ছিল৷ তিনি বললেন, দাদা, ৯৭ সালে গান থামাতে বলি নাই, এখন কিন্ত্ত আমাদেরও গান থামাতে হয়৷ আজানের টাইমে আমাদেরও গান থামাতে হয়৷ এই পরিবর্তনগুলো কিন্ত্ত ভীষণ লক্ষণীয়৷
আর গভীরে কোনও কারণ?
সুদীপ্ত: গভীরে যদি বল, লালনের অন্তত ৬৭৫টা গান আমরা ম্যানুস্ক্রিপ্টে পাই, কিন্ত্ত তার বাইরে লোকমুখে ছড়ানো যে গানগুলো, লালনের গান বলে প্রচলিত এবং কিছুটা সেমিভেরিফায়েবল সব মিলিয়ে হাজার খানেক গান৷ সে গানগুলোর গভীরে ঢুকছি, প্রত্যেক বার যাচ্ছি নতুন নতুন গান শুনছি, সেই গানগুলো আগে কখনও শুনিনি, কখনও কখনও দেখছি, আগে শুনেছি কিন্ত্ত সুরটা পাল্টে গেছে, পাল্টে গিয়ে বীরভূমের প্রভাব ঢুকে পড়ছে, কুষ্টিয়ার গানে আমরা ৯৭ সালে খমকের ব্যবহার দেখিনি কখনও, এখন খমকের ব্যবহার দেখছি, ভোলা মন বলে টান শুনছি, যেগুলো আগে ছিল না, এই সমস্ত খুব সাটল কিন্ত্ত সিগনিফিক্যান্ট চেঞ্জ! ২০০৮-এ যখন গেলাম, কুষ্টিয়া আমূল বদলেছে৷ ২০০৯-এ কেটে গেল সুমন আর আমার শুধু তথ্য আদানপ্রদানে৷ পঁচিশ ঘণ্টার ভিডিও ফুটেজ, আর প্রায় ৪০ ঘণ্টার গানের ফুটেজ৷ পাঁচ শতাধিক গান৷
সুমন: লালন প্রসঙ্গে সুদীন্তর অ্যাকাডেমিক একটা ইন্টারেস্ট ছিল, এখনও রয়েছে, ফলত ওর এই গান সংগ্রহ, ফকির বাউলদের সঙ্গে কথা বলা, এর একটা সমাজতাত্ত্বিক দিক নিশ্চয়ই আছে৷ আমার কাছে সবটাই ছিল পারফর্ম্যান্স-কেন্দ্রিক৷ সুদীন্ত তখন ক্যালিফোর্নিয়ায়, বার্কলে ইউনিভার্সিটিতে পড়াচ্ছে৷ একটা যোগাযোগ তৈরি হয়৷ আমিও তিন মাস যাই, তখন একটাই ইচ্ছে, আমরা এটা নিয়ে কিছু করব, নাটক তৈরি করব একটা, পারফর্ম্যান্স পিস বলো, নাটক বলো, ডকুড্রামা বলো! ও এক লাইনও লেখেনি, আমিও কিছু ভেবে যাইনি, জাস্ট অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে, যে কটা বই পড়াশুনা করেছি তার ওপরে ভিত্তি করে, ও এক লাইন দু লাইন, এক স্তবক লিখত, আমি সেটাকে পারফর্ম্যান্স পিস হিসাবে করতাম৷ প্রসেসটা খুব ইন্টারেস্টিং ছিল৷
সুদীপ্ত: আমি এক পাতার একটা সিন লিখলাম, সিনও নেই কিন্ত্ত নাটকটাতে, পর্ব, না আছে চরিত্র, না আছে কাহিনি, প্লট, প্রথাগত কোনও কিছুই উপাদান নাটকটার মধ্যে নেই৷ আমি কিন্ত্ত মঞ্চে কখনও লালন হই না, আমার নাম কিন্ত্ত পারফর্মার, দ্যাটস ইট! যার ফলে একটা দুটো পাতা লেখা হচ্ছে, কবিতার মতো করেই ইমেজ থেকে কিছু যোগ করছি৷ আমি অভিনয় করতে করতে বুঝতে পারছি, এই তো কয়েকটা আইডিয়া আসছে, আবার সেই রাত্রে গিয়ে পরের পাতাটা লেখা হচ্ছে, একটা অদ্ভুত চক্রের মতো চলেছে৷ আমরা সাধারণত text থেকে image-এ যাই, কিন্ত্ত এখানে অনেক সময় উল্টো৷
সুমন: বার্কলে-র লোকজন লালন সম্বন্ধে অনেক কিছুই জানেন না, তাঁদের জন্য একটা টেক্সট তৈরি করা৷ কলকাতায় সেই টেক্সটটাই যদি অবিকল এনে ফেলি, তখন অনেকটাই একটা ছোটোদের নাটক হয়ে যাবে, যেমন ওই এবিসি অফ গোছের জিনিসপত্র হয় না,৷ সে রকম! সেটা অনেকটা বদলাতে হল৷ আবার যখন আমরা লন্ডনে ফিরে গেলাম, তখন দুটো চ্যালেঞ্জ ছিল, আবার নতুন তথ্য যেগুলো ও এনেছে, সেগুলো ঢোকানো হল নাটকের শরীরে, এইটা একটা যেমন ছিল, আবার ছিল, পুরো জিনিসটাই পাল্টে গেল লন্ডনে৷ লন্ডনে যেখানে অভিনয়, সেখানে দুপাশে বসবে দর্শক, মাঝখানে এক ফালি মঞ্চে অভিনেতা৷ আবার কলকাতায় যখন ফিরে এলাম, তখন পুরনো ফরম্যাট-এ৷
সুদীপ্ত: কিন্ত্ত ওই নাটকটা যে ভাবে ভাবা হয়েছিল, টেক্সট-এর যেমন অনেক খোলা মুখ রয়েছে, আমি আমার পারফরমেন্সটা যেভাবে বেঁধেছিলাম, তারও অনেক খোলামুখ রয়েছে, আমাদের একদিন দুটো শো কলকাতায়, প্রথম শো-এর পর, রেস্টুরেন্ট-এ খেতে গেলাম, শিবাজীদা, শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু কথা বললেন৷ লাল আমাকে পাঁচটার সময় বলল, দুটো ডায়লগ চেঞ্জ করতে হবে৷ আমি বললাম, খেপেছিস? বলল, না, করতেই হবে৷ পাল্টালাম এবং রাত্রে ফিরে এসে স্ক্রিপ্ট-এ ঢুকিয়ে দিলাম৷
একটা কথা জিজ্ঞেস করি৷ লালন শাহকে নিয়ে আপনারা যে কাজটা করছেন, নানা হাই আর্বান এরিয়াতে, লন্ডন, বার্কলে, বার্লিন, ঈষত্ কম হলেও কলকাতা, তো সেখানে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া পাচ্ছ? এমন সব স্পেস, যার থেকে কুষ্টিয়ার লালন শাহের দূরত্ব আলোকবর্ষ প্রায়৷
সুদীপ্ত: লালনের একটা দার্শনিক দিক আছে, আমি খুব সাবধানে বলছি যে, লালনের দর্শনের একটা ইউনিভার্সাল দিক আছে৷ জানি, ইউনিভার্সাল শব্দটা খুব প্রবলেম্যাটিক! তাই একটু সন্তর্পণে ব্যবহার করছি৷ লালন যে কথাটা বেসিকালি বলছেন, মন্দিরে নয় মসজিদে নয় নয় কাবা কৈলাসে, যেটা কবিরও বলেছেন, যা আছে সব হৃদয়ে৷ এই কথাটা কিন্ত্ত ইউনিভার্সাল৷ যিশু বলেছেন, বুদ্ধ বলেছেন, নেটিভ মার্কিন দর্শনেও এই কথাটা পাই৷ আর, লালনের গানের যে মাদকতা, যেটা ভাষার বাঁধন মানে না৷ এই দুটোই আমাদের তুরুপের তাস৷ আমরা যখন কাজটা করি, তখন হান্সথিস লিয়েমান ফ্রাঙ্কফুর্ট-এ বসে জার্মান-এ একটা বই লেখেন৷, তার পর ওটা অনূদিত হয়ে বেরিয়েছে, পোস্টড্রামাটিক থিয়েটার নাম দিয়ে৷ আমাদের এই কাজটা হচ্ছে পোস্টড্রামাটিক থিয়েটার৷ ফকিরদের যে সামাজিক অবস্থান, এরা তো তস্য প্রান্তিক৷ আর আমরা পারফর্ম্যান্স দিয়ে পারফর্ম্যান্সকে প্রকাশ করার চেষ্টা করছি, টেক্সট দিয়ে নয়৷ কেননা লালন বলেছেন, মুন্সি লোকের মুন্সিগিরি আমি কি ছাই বুঝতে পারি, আকার নাই কো যার কীসের আবার যোগ তার, তারে যে যা ভাবে সে তাই হয়৷
সুমন: এটা অস্বীকার করে নিতে কোনও অসুবিধে নেই যে আমরা একদম নাগরিক একটা মনন থেকে, একটা নাগরিক অবস্থান থেকে এই জিনিসটার সঙ্গে নেগোশিয়েট করেছি, আদান প্রদান করেছি এবং যাঁরা আমাদের দর্শক, ধরেই নেওয়া হয়েছে তারা মূলত নাগরিক মানুষ৷ একদম ব্যক্তিগত ভাবে বলতে পারি, আমার পুরো নেগোসিয়েশনটা ইন্টেলেকচুয়াল নেগোসিয়েশন৷ এটা শুধুমাত্র একটা প্রজেক্ট নয়, মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে লালন হয়ে উঠেছিল সর্বধর্ম সমন্বয়ের একটা প্রতীক মাত্র৷ লালন যে তার বাইরেও কতটা বড়, নাগরিক জনমানুষের কাছে শুধু এইটুকু দেখানোর দায়িত্বই আমরা নিয়েছিলাম, এবং আমরা এইটুকুই যদি করতে পারি, তাহলে অনেকটা কাজ করতে পেরেছি বলে মনে হয়৷ ইংরিজিতে লেখা, ইংরিজিতে অভিনীত, ফলত আমরা ধরেই নেব অডিয়েন্স ইংরিজি বোঝে, ফলত প্রজেক্টটাই কিন্ত্ত আরবান অডিয়েন্স-এর জন্য৷ এটা অস্বীকার করার কিছু নেই৷
সুদীপ্তদা আপনি 'আকার নাই কো যার'-এর কথা বললেন! লালন শাহকে নিয়ে একটা ছবি বাংলাতেই কিছু কাল আগে হয়েছে, সেখানে আকারের একটা বড় ভূমিকা ছিল৷ আপনি বললেন, অভিনয়ের সময় লালন শাহ হন না, এক জন পারফর্মার থাকেন৷ ছবিটায় কিন্ত্ত লালন শাহ হয়ে উঠতে পারার একটা ব্যাপার ছিল৷
সুদীপ্ত: এটা খুব ইন্টারেস্টিং একটা বিষয়৷ লালনের ক্ষেত্রে তুমি যে ছবিটার কথা বললে, সেটা গৌতম ঘোষের 'মনের মানুষ', যেটার ভিত্তি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা একটি উপন্যাস৷ সেখানে লালন শাহকে এক ভাবে জীবন চরিত দিয়ে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে৷
সুমন: তুমি যেটা বলছ, লালন শাহ দেখতে কীরকম ছিল- বায়োপিক করতে গেলে মুশকিল হয়, সিনেমার ন্যাচরালিস্টিক কোড-এর বিষয়টা চলে আসে৷ লালনের মতো দেখতে লাগছে কি না৷ আমরা যখন প্রজেক্টটা করি, সেই অর্থে একদম ব্রেখটিয়ান, আমরা অভিনেতা, কিন্ত্ত আমরা করে দেখাব লালনকে৷ সিনেমার পক্ষে এরকম একটা ভঙ্গি নেওয়াটা খুব মুশকিল৷ সিনেমায় অ্যাজ অ্যান আর্ট ফর্ম এ সব নিয়ে ভীষণ একটা এক্সপেরিমেন্ট করতে পারেন কেউ, কিন্ত্ত আমার মনে হয় সেই দিকে ওই ছবিটা যায়নি৷ কিন্ত্ত ২০০০ সালে যখন আমরা কাজটা করছি, তখন লালনকে নিয়ে উত্তর আধুনিক তত্ত্ব-বিশ্ব যে প্রশ্নগুলো তুলেছে, সেগুলোর কিছু প্রতিফলন আমি পাব৷
মধ্যবিত্ত বাঙালি লালনকে নিয়ে আনন্দ, উল্লাস, যাই বলো, সেটা বড় অর্থে খুব অ্যাপলিটিক্যাল, লালন শাহের আখড়া একটা ইউটোপিয়া৷ অদ্ভুত জায়গা, কোনও মালিন্য নেই, শুধু গান৷ আর একটা আশ্চর্য রোমান্স অব এক্সোটিকা! তো, তোমরা যখন নাটকটা নিয়ে বাইরে যাও, লালন কি এক্সোটিকাই হয়ে ওঠেন? আমেরিকার কাছে? বার্লিন-এর কাছে? বিলেতের কাছে?
সুমন: এটা আমাদের অভিপ্রায় নয়৷ কিন্ত্ত দর্শকের কাছে কিছুটা হতেই পারে৷ এটা আমি স্বীকার করতে বাধ্য৷ শুধু এক্সোটিকা নয়, একটা এরোটিকাও তৈরি হয়৷
সুদীপ্ত: আমাদের নাটকে একটা সিন আছে, যেটাতে দেহতত্ত্বের সাধনপদ্ধতি, গুহ্যসাধন পন্থা, সেটা রেখে ঢেকে যতটা বলা সম্ভব, কোনও এথিক্যাল গ্রাউন্ড কোড না ভেঙে, সেটা করার চেষ্টা করেছি৷ আমাদের একটু ভয়ও ছিল, কলকাতায় এই সিনটা কী ভাবে যাবে৷ খুবই পরিণত প্রতিক্রিয়া পেয়েছি৷ কিন্ত্ত একই সঙ্গে, একটা ওরিয়েন্টালিজম চলে আসে৷ এটা হবেই৷ হিপি মুভমেন্ট, জর্জ হ্যারিসন এ সব মিলে নব ওরিয়েন্টালিসম-এর একটা পথ খুলে দিয়ে গেছে৷ সেইটাতে কিছুটা ট্র্যাপ্্ড হয়ে যায় নাটক৷ কিন্ত্ত ওইটাকে আমরা একটা সুগার কোটেড পিল-এর মতো ব্যবহার করি, যেটা স্পিভাক বলছেন, স্ট্যাটেজিক এসেনসিয়ালিজম, যদি আমরা এই এসেনসিয়ালিজমটাকে স্ট্যাটেজিক্যালি ব্যবহার করতে পারি, তা হলে তো কোনও ক্ষতি নেই৷
সুমন: এই এক্সোটিকা বা এই ধরনের নুয়ান্সেস, আমি নিজে দেখেছি যেমন তিস্তাপারের বৃত্তান্ত, বাঘারুকে নিয়ে যে একটা এক্সোটিকা তৈরি হয়, ওই একটা ল্যাঙট পরা মানুষ- তো, রাজনীতিটা এখানেই যে, এই এক্সোটিক স্পেসগুলো থাকুক! এটা যেমন একটা প্রজেক্ট৷ তেমনই, রবি ঠাকুরকে দেবতা করাও একটা প্রজেক্ট৷
আর এরোটিকা?
সুদীপ্ত: আমার মনে হয় অনুশীলন ছাড়া এই যৌনতার মধ্যে শুধু ওপর ওপরই ঢোকা যায়৷ এটা আমি একাধিক ফকিরের সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে দেখেছি, এবং তারা প্রত্যেকে বলে দিয়েছেন এর বেশি বলতে পারব না, আপনাকে এই পর্যন্ত আসতে দিতে পারি, তার পর কিন্ত্ত আর নয়৷ কথাটা এই কারণেই বলছি, আমার এই মনোভাবটা আমার নাটকেও যদি থাকে, এর বেশি যাওয়া বোধ হয় আমার সন্ধানেতে পড়ে না৷ কাজেই আমি সেই জায়গাটায় যাবই না৷ যখন আমরা ম্যাক্সমুলার-এর শো করলাম, লাল কানাডায় ছিল, আসতে পারেনি, তখন প্রথম আমরা কুষ্টিয়ার ফকিরদের পারফর্মেন্সের মধ্যে টেনে আনি৷ তেমনই এক ফকির, নজরুল, একটা দারুণ মন্তব্য করেছে৷ সিনটা মহড়ায় করার পর, আমি একটু সাবধানে ওদের দিকে তাকাচ্ছি, নজরুল আমার দিকে হেসে বললেন, দাদা আপনি সবই বললেন, কিন্ত্ত কিছুই বললেন না৷ ব্যক্তিগত ভাবে এর থেকে বড় কমপ্লিমেন্ট আমি পাইনি৷
মজা হচ্ছে মধ্যবিত্ত বাঙালি লালন শাহকে যৌনতার সঙ্গে জড়িয়ে ভাবতে চান না৷ আর, লালনের কোনও রাজনীতি নেই, লালন মানেই গান৷
সুদীপ্ত: লালনের গানের তো অন্তত চারটে পর্যায় রয়েছে- স্থল, প্রবর্ত, সাধন, সিদ্ধি৷ কিছু গান আছে, এ দিকেও যেতে পারে, ও দিকেও যেতে পারে, এবং লালনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, বাংলায় বাউল ফকির পরম্পরায় যত পদকর্তা আছেন সবাই এই চারটে ক্যাটেগরির মধ্যে কাজ করেন৷ আবার আর একটা পর্যায়ও ধরা হয়, প্রার্থনা পর্যায়, সাধন ও সিদ্ধি মিলিয়ে প্রার্থনা পর্যায় ধরা হয়, আবার দৈন্য গান বলে আবার একটা সাব-ক্যাটেগরি আছে, কিন্ত্ত এই চারটে ক্যাটেগরির মধ্যে সাব-এর মধ্যে পড়ে৷ লালন চারটে পর্যায়েই সমান দক্ষতার নিদর্শন রেখেছেন, যার জন্য, লালনকে শ্রেষ্ঠ পদকর্তা বলা হয়৷ এমনকী কিছু কিছু বৈষ্ণব ভাবাপন্ন গান আছে, যা তার থেকে দেড়শো-দুশো বছর আগের পদকর্তাদের টেক্কা মারে, কিছু গোষ্ঠ গান আছে, কিছু কৃষ্ণের বাল্যলীলা নিয়ে গান আছে...
সুমন: এখানে আমার একটা প্রশ্ন জাগে সুদীপ্ত, থিয়োরিটিক্যাল অ্যাসপেক্ট থেকে, এই যে ভাগ করা হচ্ছে, ভাগটা কারা করছেন?
সুদীপ্ত: ফকিররাই করছেন, এটা ফকিরদের করা ভাগ, এটা অনেক পরে ঘটছে, এই ভাগটা, এটা অনেক দিন ধরে আছে, এই ভাগটা, এই ভাগটা ইনফ্যাক্ট চর্যাপদে চলে যায়, চর্যাপদে আমরা প্রথম প্রবর্ত পর্যায়ের কথা শুনি, এই ট্যাক্সোনমিটা বিভিন্ন সময় তত্ত্বায়নের সঙ্গে বদলেছে৷
সুমন: এই তাত্ত্বিক কাঠামোটাকে আমার মনে হয় একটা তত্ত্ববিশ্বের মধ্যে ফেলা! এটা কিন্ত্ত পরবর্তীকালে তাত্ত্বিকরাই করছেন৷ রবীন্দ্রনাথের গানেরও পর্যায় ভাগ আছে, লালনের গানেরও পর্যায় ভাগ থাকতে হবে৷ আমাদের এখানে গোটা তত্ত্ববিশ্বের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে লালন৷ ফলে যেই তােঁক ঘিরে একই ধরনের তত্ত্ব বিশ্ব তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে, সেই একই ক্যাটেগরির মধ্যে পড়ে গেলে মুশকিল৷
সুদীপ্ত: লালন নিজেই বলছেন, 'দুগ্ধে জলে মিশাইলে বেছে খায় রাজহংস হইলে, কারও সাধ যদি যায়, সাধন বলে হয় সে হংসরাজের ন্যায়, সামান্যে কী তার মর্ম জানা যায়,' লালন নিজেই বলছেন এ কথাটা৷ প্রথম লালনের যে গানটি আমরা আমাদের নাটকে ব্যবহার করি, সেটা হচ্ছে এটা, করি হে পাগলপারা, নিল তারা সব লুটে, শহরের ষোলজনা বোম্বেটে৷ শহর কেন? ষোলজনাই বা বলছেন কেন? বোম্বেটেই বা কেন? বোম্বেটে কথাটা আসছে স্প্যানিশ থেকে, ষড়রিপুর কথা উনি বলছেন, কিন্ত্ত একই সঙ্গে ঔপনিবেশিক সিস্টেমটাকে কিন্ত্ত ক্রিটিক করছেন- রাজ্যেশ্বর রাজা যিনি, চোরেরও শিরোমণি, নালিশ করিব আমি কার কাছে কার নিকটে, শহরের ষোলজনা বোম্বেটে৷ সব সময় মিক্সড মেটাফর, সব সময় হেটেরোগ্লসিক, সব সময় এই জন্য ওরাল হতেই হবে, মুখের কথা, যে মুহূর্তে লিখে ফেললে, টেক্সটাকে তুমি বদ্ধ করে ফেললে! আমার মনে হয় যে লালন বোধহয় লিখতে পড়তে জানতেন, কিন্ত্ত উনি লিখবেন না সিদ্ধান্ত নিয়েই লেখেননি৷ নাটকটা হচ্ছে একটা কাচের প্রিজমের মতো৷ তুমি সেটাকে দেখতে পার৷ কিন্ত্ত আমি যদি তোমার আমার মধ্যিখানে রাখি তা হলে কিন্ত্ত প্রিজমের মধ্যে দিয়েও দেখতে পাব, ইউ ক্যান লুক থ্রু ইট অ্যাজ ওয়েল৷ এইটা আমাদের মেটাফর৷ আমরা এই ভাবে নাটকটাকে দেখবার চেষ্টা করেছি৷ তথাকথিত নাটকের রীতিবিধির তোয়াক্কা করিনি৷ বলতে পারো ডকু ড্রামা, বা পারফরমেন্স রিসার্চ৷ বাংলায় এটা সুন্দর সমাপতন হয়৷ গবেষনাটক৷
লালনকে নিয়ে নানা ছবিতে তাঁকে ধরার চেষ্টা করা হয়েছিল৷ অথচ, আপনারা বলছেন, তাঁকে ধরা যায় না৷
সুদীপ্ত: লালন বার বার বলছেন আমি কে আমি কী? এইটা নিয়ে তোমরা অবসেসড কেন? সবে বলে লালন ফকির হিন্দু কি যবন? লালন বলে আমার আমি না জানি সন্ধান৷ আমার নিজের কিছু যায় আসে না, আমি সেটাকে বন্ধ করতে চাইছি, তোমার কেন এত খোঁজ নেওয়ার দায় হে? বাঙালি মধ্যবিত্ত বিশেষ করে শিক্ষিত হিন্দুদের মধ্যে বকলমে সাবটেক্সচুয়ালি কোথাও এই মনোভাবটা কাজ করেছে যে, সে হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিল বলেই মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও এই মণি-মাণিক্যগুলো তার হাত দিয়ে বেরিয়েছে৷ তার প্রতিক্রিয়া কী হল? ষাটের দশকে পূর্ব পাকিস্তানে, রুত্ফুল রহমান এবং আনওয়ারুল করিম এরা কয়েকজনে, ধরে বসলেন যে হতেই পারে না, লালন আসলে মুসলমান৷ এর ফলে লালন কমিউনালাইজড হলেন৷ আমাদের অ্যাকাডেমিক ডিসকোর্সের একটা মেজর প্রবলেম, ক্যাটেগরাইজ না করলে হয় না, একটা লেবেল চড়াতেই হয়৷ কিন্ত্ত, লালনকে ধরা অসম্ভব বলে আমার মনে হয়৷ বড় জোর ইঙ্গিত দিতে পারি, আমরা সেটাই চেষ্টা করেছি, ইঙ্গিতগুলো দিয়ে গিয়েছি৷
বাজারে মন্দা নাই থাকে যদি, চা-বাগান তবু ধুঁকছে কেন?
দেবজিত্ : দুটো আলাদা আলাদা অঞ্চল৷ কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার পথে পশ্চিমবঙ্গের তরাই অঞ্চল শুরু হয় দার্জিলিং জেলার বিধান নগরের পর থেকেই৷ আর শিলিগুড়ি পার করে সেবকের পর মূলত জলপাইগুড়ি জেলার একেবারে ভুটান সীমানা অবধি এলাকাটা ডুয়ার্স৷ তরাই আর ডুয়ার্সের চা-বাগানগুলো কিন্ত্ত সমতলেই৷ আর 'দার্জিলিং টি' বলতে যেটা আমরা বুঝি তা কিন্ত্ত হয় পাহাড়ে৷ সেটা আরও অনেক উত্কৃষ্ট, মূলত প্রাকৃতিক কারণে৷ একটা কথা প্রথমেই বলতে চাই, চা উত্পাদন কিন্ত্ত পুরোপুরি কৃষি-নির্ভর শিল্প৷ এবং তা অত্যন্ত শ্রমনিবিড় শ্রমিককে বাদ দিলে এতে কিছুই সম্ভব নয়৷ এই একটা শিল্প যা কখনও 'মেকানাইজ' করা যাবে না৷ ভৌগোলিক পার্থক্য ছাড়াও এই তিনটি এলাকার শ্রমিকদের মধ্যেও কিন্ত্ত বিরাট পার্থক্য আছে৷ তরাইয়ের বাগানগুলোতে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক এক সময় বিহার থেকে আনা হয়েছে৷ তা ছাড়া মদেশিয়ারা আছেন৷ ডুয়ার্সে এবং দার্জিলিংয়ের পাহাড় অঞ্চলে প্রচুর নেপালি শ্রমিক আছেন আবার আদিবাসীরাও আছেন৷
বিক্রমজিত্ : পাহাড় এবং সমতলের চা বাগানের শ্রমিকদের সমস্যা কি আলাদা?
সুশোভন : দেখুন শ্রমনিবিড় শিল্প হওয়ায় এখানে আসলে লোক খাটিয়ে ব্যবসাটা হয়৷ তবে এটাও মাথায় রাখা দরকার এই শ্রমিকদের পিছনে যে খরচাটা হয় সেটা কিন্ত্ত একটা টি-এস্টেট-এর ৫০ থেকে ৬০ শতাংশের বেশি নয়৷ বিরাট একটা খরচ হয় অফিস চালাতে বা অন্যান্য খাতে৷ চা-বাগানের শ্রমিকরা যদিও খাতায় কলমে সংগঠিত শ্রমিকের মধ্যেই পড়েন কিন্ত্ত তাঁদের যে ভাবে ব্যবহার করা হয় তা অনেকটাই অসংগঠিত শ্রমিকদের মত৷ 'প্ল্যান্টেশন অ্যাক্ট' ইত্যাদি আছে ঠিকই কিন্ত্ত চা শ্রমিকদের সঙ্গে ব্যবহার করা হয় ইটভাঁটা, রাজমিস্ত্রি বা বিড়ি শ্রমিকদের মতো৷ শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা না দেওয়ার বিষয়টা সব এলাকার চা বাগানেই এক৷ আরেকটা বিষয় হল এখানে শিশুশ্রমের ব্যবহার মারাত্মক ভাবে চলে৷ কম পয়সায় বাচ্চাদের দিয়ে কাজ করানো হয়৷
বিক্রমজিত্ : এটা তো হওয়ার কথা নয়৷ 'টি প্ল্যান্টেশন অ্যাক্ট' অনুযায়ী তো আসলে চা-বাগানের শ্রমিকদের আর পাঁচটা শিল্পের শ্রমিকদের থেকে ভালো থাকার কথা? সুশোভন: আইন আছে৷ কিন্ত্ত, এক, তা কতটা লাগু করা হয় সেটা দেখার এবং দুই, শিল্পের বর্তমান মালিকদের যা চরিত্র তার উপর শ্রমিকদের পরিস্থিতি জড়িত৷ একসময় 'প্ল্যানটার্স' বলতে একটা বিশেষ ধরণের মানুষকে বোঝাত৷ তাঁরা অনেক শোষণ করে বহু পয়সা-কড়ি করেছেন ঠিকই৷ কিন্ত্ত 'প্ল্যানটেশন'-এর প্রতি তাঁদের একটা ভালোবাসা ছিল৷ তাঁরা অনেকেই বাগানে থাকতেন৷ কিন্ত্ত স্বাধীনতার কিছুদিন পর থেকেই একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হতে থাকে৷ বাগানগুলো এমন এক ধরনের মানুষের হাতে চলে যেতে থাকে যাঁদের এই ব্যবসায় কোনও দীর্ঘ মেয়াদি ইন্টারেস্ট নেই৷ সে সময় ওই 'প্ল্যান্টার্স' তকমাটা পাওয়ার জন্যে বহু বাঙালি চা-বাগান কেনেন৷ পরে তাঁদের হাত থেকে অন্যান্য কমিউনিটির মানুষদের হাতে বাগানগুলো চলে যায়৷ এঁদের সকলেরই উদ্দেশ্য দ্রুত কিছু অর্থ রোজগার করে বেরিয়ে যাওয়া৷ এক ধরণের ফড়ে পুঁজিপতি৷ এই সব মালিক তার সঙ্গে প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক দল-পরিচালিত ট্রেড ইউনিয়ন - এই সব মিলিয়ে যে যোগসূত্র তৈরি হয়েছে সেটা শ্রমিকদের স্বার্থের পক্ষে যায়নি৷
দেবজিত্ : চা-বাগানের সামাজিক বিন্যাসের একটা দিক হল: সাহেব, মানে ম্যানেজার ডেপুটি ম্যনেজার ইত্যাদি, বাবু আর শ্রমিক এদের মধ্যে একটা সামাজিক দূরত্ব৷ কিন্ত্ত একটা অন্য কথা বলতে চাই, চা-বাগানের শ্রমিকের সঙ্গে অন্য শিল্পের শ্রমিকদের তফাত্ হল একটা কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে সেখানকার শ্রমিকরা অন্তত কোথাও একটা চাকরি খুঁজতে পারেন৷ চা-বাগানের শ্রমিকদের সেই সুযোগটাই নেই৷ বহু শ্রমিক আছেন যাঁরা কখনও তাঁদের বাগানের এলাকার বাইরে পা-ই রাখেননি৷ পুরুষানুক্রমে তাঁরা একই বাগানে কাজ করছেন এবং সেখানেই আছেন৷ তাঁর দুনিয়াটাই ওটা৷ বুঝতেই পারেন ম্যানেজমেন্ট-এর থেকে স্বাভাবিক ভাবেই একটা বাগানের প্রতি শ্রমিকের দরদ অনেক বেশি৷ যাই হোক সুশোভনের কথা আমি পূর্ণ সমর্থন করি যে বহু চা-বাগানই এখন 'বানিয়া'-দের হাতে চলে গেছে যাঁরা প্রথমেই ঠিক করে নেন - এত বছর থাকব, এতটা মুনাফা করে চলে যাব৷ বহু চা-বাগানেই এখন তাড়াতাড়ি পাতা বার করার জন্য কোনও নিয়ম না মেনেই এমন ভাবে কেমিকাল স্প্রে করা হচ্ছে যে মূল 'বুশ'গুলোর খুব ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে৷
বিক্রমজিত্ : বানিয়াদের হাতে কবে থেকে চা-বাগানগুলো চলে যাওয়া শুরু হয়?
দেবজিত্ : মোটামুটি ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০-এর মধ্যে৷
বিক্রমজিত্ : কেন হল এমনটা?
দেবজিত্ : দেখুন চা বিক্রি করে লাভ হচ্ছে না- এই গপ্পোটায় আমি একেবারে বিশ্বাস করি না৷ চা ব্যবসায় কোনওদিন ক্ষতি হয়নি৷ হয়তো প্রফিট কিছু কমতে পারে৷ কিন্ত্ত ক্যাপিটাল লস হতেই পারে না৷ অত্যন্ত প্রফিটেবল ব্যবসা৷ তার উপর ওই সময়টা থেকে সরকার ও প্রশাসনের সঙ্গে এই বানিয়াদের একটা যোগসাজস শুরু হয়৷ ফলে শ্রমিক শোষণও সহজ হয়ে যায়৷ এর সঙ্গে শুরু হয় শুধুমাত্র পাতাটা পাইকারি হারে বিক্রি করে দেওয়ার ব্যবসা৷ কোনও ক্রমে একটা বাগান মেনটেইন করে পাতা তুলে একটা 'বট-লিফ ফ্যাকটরি'-কে তা বিক্রি করে দাও, ব্যাস্৷
বিক্রমজিত্: এমনও শুনেছি অনেকে কোনও অর্থ বিনিয়োগ না করেই শুধু পাতা বিক্রি করার জন্যেই বন্ধ চা-বাগান নিয়ে নেন৷
দেবজিত্ : সেটা তো ঢেকলাপাড়া চা-বাগানেও হচ্ছে৷ বাধ্য হয়ে তাঁরা পাতা বিক্রি করছেন ৩৫ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম৷
বিক্রমজিত্ : বিভিন্ন বাগানে যে অপারেটিভ ম্যানেজিং কমিটি (ও এম সি) তৈরি হয়েছে, সে সম্পর্কে আপনাদের কী বক্তব্য?
দেবজিত্ : ও এম সি কিন্ত্ত ভালো উদ্দেশ্য নিয়েই তৈরি হয়েছিল৷ মালিক যখন কিছু করছেন না তখন বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধি এবং প্রশাসনের প্রতিনিধিদের নিয়ে ও এম সি তৈরি হয়৷ ঢেকলাপাড়া মেন গার্ডেন-এও হয়েছিল৷ পরে সেখানে প্রবল ভাবে দুর্নীতি ঢুকে পড়ে৷ এর উপর ভিজিল্যান্স রাখতে হবে৷ এবং এই দুর্নীতিতে শ্রমিকদের কোনও হাত নেই৷ এর সঙ্গে বাবুদের কয়েকজন এবং প্রধানত ইউনিয়নগুলোর প্রতিনিধিরা জড়িত৷
বিক্রমজিত্ : দলমোর বাগানে আপনাদের অভিজ্ঞতা কী?
রাজেশ: দলমোর গার্ডেন ১৯১১-মে শুরু হুয়া৷ জলপাইগুড়ি জিলা, মাদারিহাট ব্লকমে৷ ভুটান বর্ডার কে পাস৷ আমার ঠাকুর্দা, বাপ-মা সবাই ওখানেই কাম করেছেন৷ সেই থেকে আজ তক দো'বার বন্ধ হয়েছে৷ পহেলা বার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১১-মে৷ মালিক বহুত দফা বদল হয়েছে৷ লেকিন চলেছে৷ তারপর দো-তিন মহিনার জন্য খুলে ছিল৷ ফির ২৯ জুলাই, ২০১২-মে বন্ধ হওয়ার পর অভি তক বন্ধই আছে৷ আমি মাঝে মাঝে ভাবি কিঁউ অ্যাইসা হাল হুয়া৷ এক তো বহুত বার ম্যানেজমেন্ট বদলানোর পরে বাগান নিয়ে ম্যানেজমেন্ট-এর বাগান চালানোর 'নলেজ' ধীরে ধীরে কম হোতা গয়া৷
বিক্রমজিত্ : এখন কী অবস্থা?
রাজেশ: বস্৷ বাগান বন্ধ৷ মালিক-উলিক কুছ নহি হ্যায়৷ তংখা নহি মিল রাহা হ্যায়৷ পি এফও জমা হয়নি বহুত সাল৷ দশ-গেয়ারা সাল জমা হয়নি৷
বিক্রমজিত্ : কত কর্মী আছেন?
রাজেশ: আভি ১১২৪ আদমি৷ পহলে ১২০০-সে ভি বেশি ছিল৷
বিক্রমজিত্ : চা-বাগান তো বন্ধ আছে৷ এন আর এ জি এ-র কোনও কাজ হচ্ছে?
রাজেশ: কিচ্ছু না৷
সুশোভন: তবে এখানে একটা আইনি সমস্যা আছে৷ এন আর জি এ-র টাকায় কিন্ত্ত চা-বাগানের নিজস্ব কাজ করা যায় না৷ চা-বাগানের কোন কাজ এই অর্থে করা যায় তা নিয়ে একটা নিয়মাবলি ঠিক করা দরকার৷ যেমন শ্রমিকরা যেখানে থাকেন, যেটাকে লেবার লাইন বলে, সেখানের রাস্তা সারানোর কাজ কিন্ত্ত এই অর্থে করা যাওয়া উচিত৷
বিক্রমজিত্ : রামঝোরা চা-বাগান তো আট বছর বন্ধ ছিল? এখন কী অবস্থা?
রমেশ: অভি তো বাগান খুলা হ্যায়৷ কিন্ত্ত বন্ধ থাকারই বরাবর৷ ১৯৮৪-৮৫ সাল থেকে থোড়া থোড়া সমস্যা শুরু৷ পহলে আমাদের পি এফ কাটা হত লেকিন জমা হত না৷ আরও সব সমস্যা ধীরে ধীরে শুরু হয়৷ ফির ২০০২-মে বাগান বন্ধ হুয়া৷ ২০১০-তক বন্ধ ছিল৷ ২০০৩-এ ও এম সি তৈয়ার হয়৷ কমিটি কিন্ত্ত খারাপ কাম করছিল না, যাঁহা তক আমি দেখেছি৷ খারাপ করল যারা কাচ্চা পাত্তি কিনত৷ তারাই কমিটির কোনও কোনও মেম্বারকে লালচ দেখিয়ে কম দামে পাত্তি কেনা শুরু করে৷ কিন্ত্ত সেটা খুব বেশি কিছু না৷ শিকারপুরে তো কমিটি দারুণ কাম করেছে৷ কাঁঠালগুড়িমে কমিটি বহুত খারাপ কাম কিয়া৷ কিন্ত্ত রামঝোরায় নয়৷ কোনও আন্দোলন করলেই মালিকরা বলে- চায় কা মার্কেট নহি হ্যায়৷ আমি জানতে চাই দেশের সব আদমি কি চায় ছেড়ে দারু খাচ্ছে? মালিকরা মজদুরদের ঠকাতে এ সব কথা বলে৷
বিক্রমজিত্ : তারপর বাগান খুলল কবে?
রমেশ: ১১ অক্টোবর, ২০১০৷ খোলার আগে চুক্তি হল৷ কিছু তো আমাদেরও ছাড়তে হল৷ আমরা বোনাস নিলাম না৷ বাগান শুকিয়ে যাচ্ছিল৷ সেই দেখে হাত মে পানি পকড়কে নিজেদের রেশন আরও অনেক কিছু মেনে নিলাম৷ শ্রমিক কমিয়ে ৮৪৬ করা হল৷ চুক্তি ছিল বাকিদের ধীরে ধীরে নেওয়া হবে৷ আভি তক প্রায় ৮০ জনকে নেওয়া হয়েছে৷ কিন্ত্ত চুক্তিতে হাজিরা, মানে রোজ না বাড়ানোর কথা ছিল না৷ আমরা দাবি করে ছিলাম৷ কিন্ত্ত মালিক মানেনি৷
বিক্রমজিত্ : হাজিরা?
সুশোভন: ডেইলি ওয়েজ৷
রমেশ: মালিক বলেছেন, এখন খরচা তো আমাকেই করতে হচ্ছে৷ লেকিন আমরা বাগান একদম হরা-ভরা করে ফেলেছি৷ ১৪০ হেক্টর৷ কিন্ত্ত হাজিরা সেই ২০১১-র ৬৭ রুপিয়াই আছে৷ বলুন তো এক পরিবারে ঘরমে বইঠনেওয়ালা পাঁচ-পাচ আদমি, ৬৭ রুপিয়াতে চলে? মেডিকাল কা কুছ সুবিধা নহি হ্যায়৷ রাস্তাঘাট কিছু নেই৷ বীরপাড়া সে লঙ্কাপাড়া ১০ মিনটের রাস্তা, এক ঘণ্টা লাগে৷
বিক্রমজিত্ : আর ক্যাজুয়াল ওয়ার্কারদের কী অবস্থা?
সুশোভন: এখানে আমি একটু বলি৷ চায়ের চাহিদা আর দাম নিয়ে কথা হচ্ছিল৷ ১৯৭৬-৭৭-এ ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টকে দিয়ে টি বোর্ড একটা স্টাডি করায়৷ সেখানে তারা বলে চায়ের ডিমান্ড ৩.২৫ শতাংশ হারে বাড়ছে অথচ উত্পাদন বাড়ছে ২.৭৫ হারে৷ মানে চাহিদা বাড়ার হার বেশি৷ মনে রাখতে হবে ডুয়ার্স-এর পুরো চা-টাই আভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রি হয়৷ এখানে শ্রীলঙ্কা, কেনিয়া ইত্যাদির সঙ্গে প্রতিযোগিতার কোনও ব্যাপারই নেই৷ টি বোর্ডের আরও একটা ইন্টারেস্টিং হিসেব পাওয়া যাচ্ছে৷ ২০০৭-এ চায়ের যা চাহিদা ছিল তা মেটানো হয়ে ছিল তার আগের বছর আমদানি করা চা-এর স্টক থেকে৷ মানে চাহিদা যত ছিল উত্পাদন তত ছিল না৷ ওই ২০০৭-এই টি-বোর্ড জানিয়ে ছিল আগামী দিনে চায়ের দাম বাড়বে প্রায় ৩.৫ শতাংশ৷ শুধু তাই নয় চায়ের চাহিদা বাড়বে আট হাজার আটশো পঞ্চাশ লক্ষ কিলোগ্রাম৷ মোট কথা চায়ের বাজার নেই এটা ঠিক নয়৷ চায়ের দাম পড়ছে না৷
ও এম সি নিয়ে রমেশজিরা যা বললেন, তাতে একটা সংযোজন করব- রামঝোরায় তখন ১২টা রাজনৈতিক ইউনিয়ন ছিল৷ তাতে নানা সমস্যা হচ্ছিল৷ শেষে রমেশজিরাই সকলে মিলে একটা বাগান বাঁচাও কমিটি করেন৷ আর তার ফলেই ও এম সি ঠিকঠাক চলে৷ কিন্ত্ত ঢেকলাপাড়া বাগানে আমরা তা দেখছি না৷
বিক্রমজিত্ : একটা জিনিস বুঝে নেওয়া দরকার, একটা চা-বাগানে কত শতাংশ বিঘা শ্রমিক মানে ক্যাজুয়াল ওয়ার্কার আর কত শতাংশ মাস-মাইনে পান?
সুশোভন: তিন রকমের শ্রমিক কাজ করেন - ১০ শতাংশ মাস মাইনে পান৷ ৯০ শতাংশ হাজিরায় বা ডেলি ওয়েজ-এ কাজ করেন৷ এ ছাড়া বিঘা শ্রমিকদের কেবল যখন প্রয়োজন পড়ে তখনই ডাকা হয়৷ এঁরা কোনও সুযোগ সুবিধাই পান না৷
রাজেশ: বিঘা লেবার কাম করে সালে চার-পাঁচ মহিনা৷ আমিও বিঘা লেবার হয়ে কাম করেছি৷
বিক্রমজিত্ : একটা ব্যাপার বলুন এই ডুয়ার্স-তরাই অঞ্চলে চা-বাগানগুলো বন্ধ হয়ে গেলে তার আর্থ-সামাজিক প্রভাব কতটা হতে পারে?
দেবজিত্ : একটা ধারণা দিতে পারি - চা-বাগান মানে কিন্ত্ত শুধু শ্রমিক-কর্মচারীই নয়৷ আমার মনে হয় এর ওপর ওই অঞ্চলের অন্তত দেড় কোটি মানুষ কোনও না কোনও ভাবে নির্ভরশীল৷ এটা ওখানকার সম্পূর্ণ অর্থনীতি৷ ট্রাক ডাইভার থেকে সবজি বিক্রেতা সকলেই এর অন্তর্গত৷
বিক্রমজিত্ : 'বট লিফ ফ্যাক্টরি'-র বিষয়টা একটু ভেঙে বলুন৷
সুশোভন: 'বট লিফ ফ্যাক্টরি'-র ডাইনামিক্সটা হল - আমি কোনও দায়িত্ব নেব না৷ কিন্ত্ত চা প্রসেস করে বিক্রি করব৷ এটা ঠিক হওয়ার কথা না৷ চা-বাগানের সঙ্গেই ফ্যাক্টরি থাকার কথা, যেখান থেকে চা উত্পাদিত হওয়ার পর তা নিলামে চলে যাবে৷
বিক্রমজিত্ : কারখানা থাকা কি বাধ্যতামূলক? আইন কি বলে?
দেবজিত্ : না, তেমন কোনও আইন নেই৷
সুশোভন: কিন্ত্ত প্ল্যান্টেশন অ্যাক্টে শ্রমিকরা কভারেজ পাবেন না যতক্ষণ না ওই কারখানাটি থাকবে৷ তা ছাড়া নিয়ম মত চা বাগান টি-বোর্ডের অনুমতি ছাড়া সবুজ পাতা বিক্রি করতেই পারে না৷
বিক্রমজিত্ : যাতে শ্রমিকদের কোনও সুযোগ-সুবিধা না দিতে হয় তাই জন্যই এখন 'গ্রিন লিফ গার্ডেন' এত গজিয়ে উঠছে৷
দেবজিত্ : এ ভাবেই তো ফড়ে মালিকরা গজিয়ে উঠছে৷
সুশোভন: আর একটা বিষয় তুলতে চাই৷ চা শ্রমিকদের রেশন৷ এটা মালিকদের দেওয়ার কথা৷ শেষ চুক্তি অনুযায়ী দৈনিক ক্যাশ ওয়েজ হল ৯০ টাকা৷ এবং নন-ক্যাশ ওয়েজ ৩৬ টাকা, যার মধ্যে রেশনও পড়ে৷ প্রথমত অনেক ক্ষেত্রেই মালিকরা রেশন দেন না৷ সব থেকে বড় কথা বন্ধ চা-বাগানের শ্রমিকদের রেশন কে দেবে? তারা কি ২৫ টাকা কিলো চাল কিনবে? আমরা দাবি করছি চা-বাগান শ্রমিকদের সাধারণ রেশন ব্যবস্থার আওতায় আনা হোক৷
বিক্রমজিত্ : শেষ একটা বিষয় তুলবো - চা-বাগান শ্রমিকদের সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে বামফ্রন্ট সরকারের সঙ্গে বর্তমান তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের কি কোনও পার্থক্য আছে?
সুশোভন: এত অল্প সময়ে বলা মুশকিল৷ কিন্ত্ত এঁরা সমস্যাগুলো শুনছেন৷ রিলিফ মেজারের ব্যবস্থা করছেন৷ বামফ্রন্ট সরকারের সময় এই সাড়াটা পেতাম না৷ আমরা একটা স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন করি৷ আমরা আগের জমানায় সে ভাবে চাবাগানে কাজ করতে পারতাম না৷ এখন পারছি৷
দেবজিত্ : এখানে আমায় ঢেকলা পাড়ার অভিজ্ঞতার কথা বলতেই হবে কারণ এত খারাপ অবস্থা কোনও চা-বাগান শ্রমিকের হয়নি৷ দশ বছরের বেশি বাগানটা বন্ধ৷ বাগানের নেরপানিয়া ডিভিশনে মানুষ আর মানুষের মত বাঁচছে না৷ ভয়াবহ৷ প্রতি দিন হাতি এসে ঘরদোর ভাঙচুর করে যায়৷ কোনও চিকিত্সা ব্যবস্থা নেই৷ কঙ্কালসার চেহারা৷ কারুর কোনও মাথা ব্যথা নেই৷ ছিল না৷ নভেম্বর মাসে গিয়ে ওখানের উপপ্রধান সখি খড়িয়ার সঙ্গে কথা বলেছি৷ সে বলেছে - না, না আমরা কিছু করতে পারি না৷ এটা তো আজকের সৃষ্টি নয়৷ দীর্ঘ দিনের৷ সেই সময় শুধু ওই বাগানে নয়, গোটা এলাকা জুড়েই রেজিমেন্টেশন এমন ছিল যে কাজ করা যেত না৷ কিন্ত্ত এখন আলোচনা খুব ভালো হচ্ছে৷ পরে কী হবে বলা মুশকিল৷ তবে একটা সদিচ্ছা দেখছি৷ কিন্ত্ত ওই কলুষিত রক্ত বার করা খুব মুশকিল৷ আমরা ঢেকলাপাড়া যাওয়ায় ওখানকার ভারপ্রান্ত মন্ত্রী গৌতম দেব জনসমক্ষে বললেন এরা এখানে গণ্ডগোল করতে এসেছেন৷ আমার সন্দেহ সব খবর উপরে যাচ্ছে না৷
বিক্রমজিত্ : আমি একটু দ্বিমত একটা ব্যপারে - আমি চা বাগানের ওপর দীর্ঘ কাজ করেছি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দপ্তরের অনুরোধে৷ সব দলকেই যথেষ্ট সমালোচনা করেছিলাম৷ সেটা ভালো ভাবেই নেওয়া হয়ে ছিল৷ আমি বিশ্বাস করিনা তখনকার অর্থমন্ত্রীর বা অন্যান্যদের কোনও সদিচ্ছা ছিল না৷ স্থানীয় পর্যায়ে যে দুর্নীতি ছিল সেটা তখনও ছিল এখনও আছে৷ কোনও তফাত্ হয়নি৷
রাজেশ: দেখিয়ে বাগান মে আদমি মর রহা হ্যায়৷ ইয়ে ঝুট বাত নহি হ্যায়৷ ইয়ে সচ বাত হ্যায়৷
সংযোজনা: নীলাঞ্জন হাজরা
No comments:
Post a Comment