Saradindu reports.half pant to Full pant with Ambedkar
মঞ্চে অশোক, সাজাহান, নিবেদিতা, আম্বেদকরের ছবি
বিশেষ প্রতিবেদন, শরদিন্দু উদ্দীপন :
https://m.facebook.com/story.php…
হাপ প্যান্ট থেকে ফুল প্যান্টঃ
কনুইয়ের কাছে ভাজ করা সাদা ফুলসার্ট, খাকী হাপপ্যান্ট, লম্বা কালোজুতো, চামড়ার বেল্ট, মাথায় খাকির টুপি আর হাতে লাঠি নিয়ে ১৯২৫ সালে শুরু হয়েছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের কুচকাওয়াজ। এদের ভাগুয়া নিশানে জায়গা পায় স্বস্তিক চিহ্ন। হিন্দু মহাসভা ভেঙ্গে ওই বছর তৈরি হয় এই সঙ্ঘ। শুরু থেকেই এদের দৃষ্টিভঙ্গিতে ছিল জঙ্গিপনা। আরএসএস এর প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলিরাম হেজোয়ারের বিরুদ্ধে ছিল দেশদ্রোহিতার মামলা।
আরএসএস এর এই পোশাকে প্রথম পরিবর্তন আসে ১৯৩০ সালে। খাকী টুপির পরিবর্তে আসে হিটলারের অনুকরণে কালো টুপি। এদের কিংবদন্তী নেতা মাধব সদাশিব গোলোয়ারকার হিটলারের সঙ্গে দেখা করে জঙ্গিবাদে অনুপ্রাণিত হন এবং খোলাখুলি হিটলারের আর্য তত্ত্বকে সমর্থন করেন। গোলওয়ার্কর এবং আর এক কিংবদন্তী নেতা সাভারকর দুজনেই ছিলেন হিটলারের অন্ধ ভক্ত। সম্ভবত এই কারনেই হিটলারের কালো টুপি এবং স্বস্তিক চিহ্ন আরএসএস এর প্রতীক চিহ্ন হয়ে দাঁড়ায়।
১৯৭৩ সালে আবার পরিবর্তন আসে। ভারি চামড়ার জুতোর বদলে আসে হালকা এবং স্টাইলিশ জুতো। কিন্তু চামড়ার বেল্ট নিয়ে শুরু হয় প্রশ্ন। গোমাতার চামড়া যে! অহিংস আন্দোলনের পক্ষে পশুর চামড়া ঠিক মানান সই নয়। ফলে রাতারাতি পশুর চামড়ার বেল্টের বদলে আসে ক্যানভাসের মোটা বেল্ট।
এর পরে আবার পরিবর্তন। এই পরিবর্তন এল ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে। পরিবর্তনটা বেশ বিপ্লবাত্মক। ৯১ বছর ধরে এই হাটুর উপরে হাপ প্যান্ট নব্যদের ঠিক মনপূত নয়। এতে নিজেকে কেমন একেবারে সেকেলে মনে হয়। নাগপুরের হেড অফিস নব্যদের কথা ভেবে বিষয়টিকে মেনে নিল।
গতকাল ১৪ই জানুয়ারী ২০১৭ এই নতুন ফুল প্যান্ট পরা আরএসএস ক্যাডারদের কুচকাওয়াজ দেখার সুজোগ পেল কোলকাতা। কিন্তু আরএসএস এর মঞ্চ শয্যায় এমন পরিবর্তনের আশা ঘুণাক্ষরেও করেননি কোলকাতাবাসি! তাদের মূল মঞ্চের ব্যানারে সম্রাট অশোক, সাজাহান, সিস্টার নিবেদিতা এবং বাবা সাহেব আম্বেদকর! হ্যা, আপনি যদি আরএসেসকে চেনেন তবে এই ছবি দেখে অন্তত বার দশেক চোখ কচলাতে হবে! ঠিক দেখছেন তো? মঞ্চের সামনে কেশব বলিরাম হেজোয়ার আর গোলোয়ারকার তো ঠিক আছে। নাথুরাম থাকলেও আপত্তি ছিল না, কিন্তু আম্বেদকর!!
হ্যা, এটাই আরএসএস এর পরিবর্তন। খাঁদির চরকাতে গান্ধীর পরিবর্তে নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি আর ওং ভারতমাতা এবং ভাগুয়া ধ্বজের সাথে অশোক, সাজাহান ও আম্বেদকর।
বন্ধুরা এই পরিবর্তন কি কাকতালীয়। আমরা জানি এটা হঠাৎ তাল পড়ার মত কোন বিষয় নয়। "গর্ব করে বল আমি হিন্দু" এই ছিল যাদের শ্লোগান তাদের এই রাতারাতি পরিবর্তন আসলে একটি রণকৌশল। এটা হিন্দুত্ববাদ এবং মনুবাদেরই পুনর্জাগরণ। আর সেই সাথে বাবা সাহেব আম্বেদকরকে হাইজ্যাক করে ভাগুয়া শিবিরের আইকন বানানোর ষড়যন্ত্র।
বিজেপির আড়াই বছরের শাসন কালকে মূল্যায়ন করলেই বুঝতে পারবেন এই পরিবর্তনটি আসলে একটি ধাঁধাঁ।
২০১৬ সালের ১৭ই জানুয়ারী রোহিত ভেমুলার প্রাতিষ্ঠানিক হত্যাকাণ্ডের পরে ঘোরতর বিপদে পড়ে গেছে ব্রাহ্মন্যবাদ। প্রমান হয়েছে তারা ভারত বিধ্বংসী বিষ। মুজাপফরনগর, দাদরি, উনা, কালাহান্ডি সর্বত্র চলছে ব্রাহ্মন্যবাদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ। গো-রক্ষকদের নৃশংস ডাণ্ডাকেও ক্লান্ত করে ছেড়েছে দলিত-বহুজনের সার্বিক উত্থান। উনার ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সর্বত্র। চর্মকার ভাইদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে দলিত মুসলিম ভাইয়েরা। তাদের সম্মিলিত বিপুল প্রতিরোধের কাছে নতিস্বীকার করে গদি ছাড়তে হয়েছে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীকে। ভারতের প্রতি কোনে কোনে সংঘটিত হয়েছে দীপ্ত মিছিল। দেশের জনগণের মধ্যে সংহতির চেতনা জাগ্রত কারার জন্য জাতপাতের ভেদভাবকে উপেক্ষা করে মিছিলে মিলিত হয়েছে অগণিত মানুষ। তারা দীপ্ত ভাবে ঘোষণা করেছে ব্রাহ্মন্যবাদ নিপাত যাক, জাতপাত নিপাত যাক, মনুর শাসন ধ্বংস হোক। তারা হুঁশিয়ার করেছে সেই সব দাঙ্গাবাজদের যারা নিজের হাতে আইন তুলে নিয়ে ভারতীয় শাসনব্যবস্থাকে ভেঙ্গে ফেলার চক্রান্তে সামিল হয়েছে। তারা দাবী করেছে যে সব কাজের জন্য জাতপাত নির্ণয় করা হয় সেই কাজ আর তারা করবেনা। তারা দাবী করেছে সরকারকে তাদের প্রাপ্য জমি ফেরত দিতে হবে এবং সেই জমিতে খাদ্য উৎপাদন করে তারা মর্যাদার সাথে জীবনযাপন করবে।
দলিত-বহুজন মানুষেরা বুঝতে পেরেছেন যে বাবা সাহেবের Social inclusive doctrine বা ভাগিদারী দর্শনই ৮৫% মূলনিবাসী বহুজন সমাজকে কেন্দ্রীভূত করে তুলবে এবং এই ভাগিদারী সামাজিক শৈলী বহুজনদের রাষ্ট্র ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে নিয়ে আসবে। স্বাধিকার এবং ভাগিদারীর সুষম বন্টন নিশ্চিত হলে শ্রেণি-সংগ্রামহীন, হিংসাশ্রয়ী রক্তরঞ্জিত যুদ্ধ ছাড়াই সংঘটিত হবে এক নিঃশব্দ রাষ্ট্র বিপ্লব। সর্বজনের কল্যাণে সর্বজনের রাষ্ট্রীয় উত্থান। এই রাষ্ট্রীয় উত্থানে হাপ প্যান্টের দর্শন সেকেলে হয়ে যাবে। তাই দলিত বহুজনের চোখের সামনে বাবা সাহেবের ছবির প্রলেপ লাগিয়ে ভাগুয়া ধ্বজ ওড়াতে চাইছে আরএসএস।
--
No comments:
Post a Comment