ভারতের এক লাখ গ্রামে রামমন্দির নির্মাণের পরিকল্পনা,আবার রামজন্মভূমি আন্দোলন।
কেন্দ্রে ও উত্তরপ্রদেশে বিজেপি ক্ষমতাসীন হওয়ায় এ বার চূড়ান্ত আন্দোলনে নামতে চাইছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।মীডিয়ার খবর।
রাম-নবমীর দিনে যেন গ্রামে গ্রামে রাম দরবারের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়, তা নিশ্চিত করতে এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছেন তারা। গ্রামে গ্রামে মূর্তি সরবরাহের কাজ চলছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের একজন নেতা ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, রাম নবমীর দিন গ্রামে গ্রামে রামমন্দির নির্মাণের তৎপরতার মধ্য দিয়ে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের প্রয়োজনীয়তাকে সামনে আনা হবে।
চলতি সপ্তাহের চতুর্থ দিনে পড়েছে রাম নবমী। রাজ্যের সব জেলাগুলিতেই এবার রাম নবমী উপলক্ষ্যে মিছিল হবে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ।
হিন্দু ধর্মের এই উৎসবের শোভাযাত্রা ঘিরে গোলমালের আশঙ্কা করছে প্রশাসনের একাংশ। সেই কারণে বহু জায়গায় সংঘ পরিবারের মিছিলের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। যদিও সব বাধা অতিক্রম করে রাজ্যের প্রতিটি জেলার সদর শহরে মিছিল করা হবে বলে জানান হয়েছে সংঘ পরিবারের তরফ থেকে। স্বাভাবিকভাবেই পরিবেশ উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের সব থেকে ব্র মিছিলটি হবে মেদিনীপুরে। বিদ্যাসাগর স্মৃতি সদন থেকে শুরু হওয়া ওই মিছিল প্রদক্ষিণ মেদিনীপুর শহরের বিস্তীর্ণ অংশ। মিছিলের শেষে বিদ্যাসাগর স্মৃতি সদনেই হবে একটি ধর্মসভা। প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে জানা গিয়েছে। পুলিশের তরফ থেকে অনুমতি দেওয়া হয়নি এই মিছিলের। সকল হিন্দু ধর্মের লোকেদের আহ্বান জানান হয়েছে এই অনুষ্ঠানে।
রাম নবমী নিয়ে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এই আশঙ্কা করেছিলেন সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। দলীয় কর্মীদের বার্তা দিয়ে ট্যুইট করেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। অন্যদিকে রবিবার রাম নবমীর মিছিলের সমর্থনে আওয়াজ তুলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। পুলিশ অনুমতি না দিলেও রাম নবমীর মিছিল করার এবং প্রয়োজনে অস্ত্র নিয়ে শোভাযাত্রা করার কথা বলেছেন দিলীপবাবু।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর মঙ্গলবার রামমন্দির মামলা প্রসঙ্গে বলেছেন, 'এর সঙ্গে দুই পক্ষের ভাবাবেগ জড়িয়ে রয়েছে। এই বিষয়টি বাদী-বিবাদী দু'পক্ষেরই সহমতের ভিত্তিতে সমাধান করা উচিত। যদি কোর্টের বাইরে সমাধান না হয়, তখন সুপ্রিম কোর্ট তো আছেই।' প্রয়োজনে তিনি নিজে মধ্যস্থতা করতে রাজি আছেন বলেও জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ অবশ্য আলোচনার মাধ্যমে সহমতের অপেক্ষা না করে আইন বদল করে রামমন্দির নির্মাণের দাবি জানিয়ে এসেছে বরাবর। যদিও বিজেপি এখনও আলোচনাকেই গুরুত্ব দিতে চায়। এ দিন বিজেপির কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা গিরিরাজ সিংহও বলেন, 'আলোচনার পরিবেশ তৈরি করার জন্য সব রাজনৈতিক দলেরও এগিয়ে আসা উচিত।' এর পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, 'রামমন্দির কি ভারতে না হয়ে পাকিস্তানে বা বাংলাদেশে হবে?' সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা সংখ্যাগুরুর ভাবাবেগকে সম্মান দেবেন বলেও আশা প্রকাশ করেছেন গিরিরাজ।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ অবশ্য, আলোচনায় নয়, রামমন্দির নির্মাণ করে 'যুদ্ধ' জয় চাইছে। ৪০০ বছরের বেশি সময় ধরে এই মন্দির-মসজিদ বিতর্কের অমীমাংসিত থেকেছে। এ বার কেন্দ্র ও উত্তরপ্রদেশে বিজেপির সরকার গঠনের পরে মন্দির নির্মাণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন পরিষদ নেতারা। রামমন্দির আন্দোলনের একেবারে গোড়া থেকে যুক্ত থেকেছে গোরক্ষনাথ মঠ। পরিষদের আন্দোলনেও মার্গদর্শক মণ্ডলীর শীর্ষে ছিলেন মহন্ত অবৈদ্যনাথ। তাঁর শিষ্যই এখন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। আগামী দিনে বিজেপি রাজ্যসভায় শক্তি অর্জন করলে সংসদে আইন পাশ করেই রামমন্দির নির্মাণ সম্ভব বলে মনে করেছেন তোগাড়িয়ারা। এখন থেকেই তাই মোদী এবং যোগীর উপরে চাপ তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।
পরিষদের পূর্ব ক্ষেত্রের সংগঠন সম্পাদক শচীন সিংহ এবেলা ওয়েবসাইটকে বলেন, 'সরকারকে চাপ দেওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই। কেন্দ্রীয় সরকার বা উত্তরপ্রদেশ সরকারের এই ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়াটা দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি।' আগামী কর্মসূচি সম্পর্কে তিনি বলেন, '১৯৯০ সালে রামশিলা পূজন, করসেবা কিংবা '৯২ সালে যে আন্দোলন হয় সে সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্ম সবটা জানে না। কত মানুষ সেই সময়ে আত্মত্যাগ করেছেন, রামমন্দির নির্মাণ কেন সমাজের জন্য প্রয়োজন— সে সব বর্তমান প্রজন্মকে জানানোই প্রথম কাজ। রাম নবমীর দিন থেকে গোটা দেশে শুরু হবে প্রচারাভিযান। এর পরের কর্মসূচি ঠিক হবে শীঘ্রই।'
২৫ বছর আগে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশ-সহ গোটা দেশে ঠিক কী হয়েছিল, তা মনে করানোর মধ্য দিয়ে ফের ধর্ম নিয়ে উত্তেজনা তৈরি করতে চাইছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। তাতে নরেন্দ্র মোদীকেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। উত্তরপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেই বোঝা গিয়েছে সঙ্ঘ পরিবারের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছেন মোদী। এ বার প্রশ্ন, তিনিও কি এই মন্দির রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেবেন ও অংশ নেবেন, নাকি উন্নয়নের স্লোগানকেই সামনে রাখবেন?
No comments:
Post a Comment