Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Memories of Another day

Memories of Another day
While my Parents Pulin babu and Basanti devi were living

Tuesday, May 30, 2017

ভারতের জন্য একটি আত্মার খোঁজে কর্নেল ভূপাল লাহিড়ী

ভারতের জন্য একটি আত্মার খোঁজে

                     

                                কর্নেল ভূপাল লাহিড়ী

    

      সমস্ত বিশ্বজুড়ে একদিকে যেমন টেকনোলজির উন্নতি হচ্ছে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে এবং লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিলাসবহুল দ্রব্যের চাহিদা ও ব্যবহার, অপর দিকে তারই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের অনৈতিকতা, হিংসা ও হিংস্রতা। এই মানবিকতার অবনমনের চিত্র আমাদের দেশ ভারতবর্ষেও অত্যন্ত স্পষ্ট। একজন ধর্ষিতা মহিলা উলঙ্গ হয়ে দিন দুপুরে দিল্লির রাজপথ দিয়ে চিৎকার করে ছুটছে - অসংখ্য পথচারি  সে দৃশ্য দাঁড়িয়ে দেখছে, কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছে না। ছত্তিশগড় রাজ্যে রায়পুরের রেভিনিউ বিভাগের আধিকারিকরা বাধ্য করছেন পঁচানব্বই বয়সের এক অসুস্থ বৃদ্ধাকে এই গ্রীষ্মের দাবদাহের মধ্যে চল্লিশ কিলোমিটার পথ ঠেলাগাড়িতে চড়ে সশরীরে তাদের দফতরে উপস্থিত হতে, যাতে করে তিনি তার তিন মাসের বকেয়া পেনসন-এর ১০৫০ টাকা পান। সম্প্রতি উড়িষ্যার হাসপাতাল থেকে এক পিতাকে তার মৃত কন্যার শব দশ কিলোমিটারের বেশি পথ কাঁধে করে বয়ে নিয়ে যেতে আমরা দেখেছি। প্রতিদিন এরকম অসংখ্য ঘটনা খবরের কাগজের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় আর টেলিভিসনের পর্দায়।

     বিশ্ববিখ্যাত সমাজ বিজ্ঞানীরা ও মনোস্তত্ববিদ্‌রা এই সমস্যার চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন এবং কারণগুলো দেখিয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে ভোগবাদজনিত লোভের আধিক্য, একদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও অপরদিকে প্রয়োজনীয় ভোগ্য বস্তুর অপ্রতুলতা, বেকার সমস্যা, তীব্র ও অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা, হতাশাজনিত মনোবিকার ইত্যাদি ইত্যাদি। আধুনিক কালের পণ্ডিতেরা নানা কারণ দেখিয়েছেন বটে, কিন্তু এই সর্বগ্রাসী ও সর্বনাশা সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে, সে রাস্তা দেখাতে পারেননি।

   আমরা ভারতবাসীরা নেহাতই হতভাগা, নইলে এই সমস্যার যে সমাধানসূত্র আমাদের প্রাচীন কালের মুনি ঋষিরা বেদ উপনিষদে লিখে গেছেন, সেদিকে আমরা ফিরেও তাকাইনি। বেদান্তের যে অমৃতকুম্ভ স্বামী বিবেকানন্দ আমেরিকা ও ইউরোপে বয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং মানুষের চৈতন্যবিকাশের জন্য যে আধ্যাত্মিকতার বানী বিশ্ববাসীকে শুনিয়েছিলেন, সেই মহাজাগরণের স্বদেশি মন্ত্রকে আমরা স্বেচ্ছায় বিসর্জন দিয়েছি। সেই সাথে আমদানি করেছি বিদেশি মন্ত্র - power flows through the barrel of the gun! রক্তাক্ত বিপ্লবের মধ্য দিয়েই আসবে দেশের ক্রান্তি!     

     স্বামী বিবেকানন্দের জন্মভূমি এই আধ্যাত্মিক ভারতবর্ষে দীর্ঘদিন ধরে দেখলাম বন্দুকের ব্যারেল গরম করা সেই ইম্পোর্টেট বিপ্লবের ছবি আমাদের চোখের সামনে সেই হিংসাত্বক রাজনীতি সমাজের সর্বস্তরে ধীরে ধীরে সঞ্চারিত হয়ে সর্বত্র এক হিংস্র ও অমানবিক বাতাবরণ সৃষ্টি করলরাজনৈতিক নেতাদের পোষা সমাজবিরোধীর দল বন্দুক আর বোমা হাতে নিয়ে বুক চিতিয়ে দিন রাত দাপিয়ে বেড়াল শহরের অলি গলিতে আর গ্রামের মাঠে ঘাটে।

   সম্প্রতিকালে এই ছবিটা অবশ্য পাল্টেছে। এখন বন্দুক বোমা নয়। হাতে তরোয়াল আর ত্রিশূল হাতে নিয়ে গৈরিক বস্ত্রধারীদের রাজপথে মিছিল! ভারতবাসীর চৈতন্যবিকাশের জন্য স্বামীজীর আধ্যাত্মিক শিক্ষার পরিকল্পনা এখন তরোয়াল ও ত্রিশূলধারীদের পায়ের তলায় রাজপথে গড়াগড়ি।

    স্বাধীনতার পর থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলেছে রক্তক্ষয়ী ক্ষমতা দখলের লড়াই, আর সেই  লড়াইয়ে চারিদিকে সৃষ্টি  হয়েছে হিংস্রতার বাতাবরন। এক প্রতিবেশী আর এক প্রতিবেশীর ঘরে আগুন দিচ্ছে। দেওর দাদাকে খুন করে রক্তমাখা ভাত বৌদিকে খেতে দিচ্ছে।

   নোংরা ভোটের রাজনীতিতে আর সর্বগ্রাসী দুর্ণিতীতে সংবিধান রচয়িতাদের ওয়েলফেয়ার স্টেটের স্বপ্ন কবে উবে গেছে কর্পুরের মতোদুর্নিতিগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতা, মেরুদণ্ডহীন পদলেহনকারী প্রশাসন ও সম্পদ-লুন্ঠনকারী মাফিয়াদের আঁতাতের ফলে রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিণত হয়েছে আত্মাহীন এক বিশাল শোষণযন্ত্রেসাধারণ মানুষের অধিকার, আশা, আকাঙ্ক্ষা এই অমানবিক যন্ত্রদানবের চাকার তলে আজ পিষ্ট।  

   এসব দেখে শুনেও, আমরা সমাজের শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ চাতকের মতো চেয়ে আছি, কবে এই হৃদয়হীন যন্ত্রে একটি আত্মা প্রতিস্থাপিত হবে, কবে কোন রাজনৈতিক দল কৃপা করে  আমাদের মাথায় দুফোঁটা শান্তিজল ছেটাবে!

  আমরা জানি, নৈতিকতা না থাকলে, ব্যক্তি বা সমাজের সমৃদ্ধি সম্ভব নয়। আমাদের ব্যক্তিজীবনে, সমাজে ও রাষ্ট্রে যদি নৈতিকতা, শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনতে হয়, তাহলে আমাদের আর্থিক উন্নয়ন ও ভোগবিলাসের দ্রব্য আহরণের সাথে সাথে চেতনাবিকাশের দিকেও নজর দিতে হবে। আর এই চেতনাবিকাশের একমাত্র পথ আধ্যাত্মিকতা। সেই পথের কথা লেখা আছে আমাদের প্রাচীন বেদে ও উপনিষদে। এবং সেই পথের কথাই আমাদের সরল ভাষায় একদিন বুঝিয়েছেন স্বামী বিবেকানন্দ।

  আধ্যাত্মিকতার উদ্দেশ্য ঈশ্বর-প্রাপ্তি নয় - উদ্দেশ্য আত্মার উন্নয়ন, চৈতন্যের উন্মেষ, ব্যক্তি ও ব্যষ্টির (সমাজ ও রাষ্ট্রের) উন্নত জীবন দর্শন। সেই জীবন-দর্শনের তত্ত্ব সকল ধর্ম-গ্রন্থেই লেখা আছে, এক্ষেত্রে ধর্মে ধর্মে কোনও বিভেদ নেই। কিন্তু মুশকিলটা হয়েছে কট্টরবাদীদের নিয়ে। তারা ধর্ম নামক দর্শনকে দুমড়িয়ে মুচড়িয়ে এমন ভয়ঙ্কর রূপ দিয়েছে, ধর্ম থেকে আধ্যাত্মিকতাটাই উধাও হয়ে হয়ে গেছে। এখন ধর্ম কথাটা শুনলেই সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়, গায়ে কাঁটা দেয়। ওই ভয়ঙ্কর বস্তুটি থেকে দশ হাত দূরে থাকো!

   কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে নৈতিকতার ক্রমাগত অবক্ষয় ও অমানবিকতার এই মহামারিকে প্রতিরোধ করতে হলে আধ্যাত্মিকতা ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। তাই ধর্মনির্বিশেষে আধ্যাত্মিকতার প্রকৃত অর্থ ও উদ্দেশ্য অনুধাবন করে সেটিকে আমাদের ব্যক্তি ও সমাজ-জীবনে সামিল করতে হবে। আর সেটি যাতে করে আমাদের প্রত্যেকের আত্মার গভীরে প্রবেশ করে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে যায়, শুরুটা করতে হবে সেই ছোটোবেলা থেকে।

  এভাবেই একদিন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে ভারতের আত্মা। প্রত্যেক ভারতবাসীর মনে আবার ভেসে উঠবে ভারতমাতার সেই ছবি যাকে শৃঙ্খলমুক্ত করতে একদিন হাজার হাজার স্বদেশপ্রেমী তাঁর পদাম্বুজে অঞ্জলি দিয়েছে তাদের বুকের তাজা রক্ত।

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...