Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Memories of Another day

Memories of Another day
While my Parents Pulin babu and Basanti devi were living

Monday, July 8, 2013

'লৌহবাসরে' তৃণমূল, বাকিরা কালনাগিনী

'লৌহবাসরে' তৃণমূল, বাকিরা কালনাগিনী

'লৌহবাসরে' তৃণমূল, বাকিরা কালনাগিনী
ছন্নছাড়া সংসার. ছত্রধর মাহাতের স্ত্রী নিয়তি -- সমীর মণ্ডল
অনিমেষ বৈশ্য

লালগড়: কাঁটাপাহাড়ির নাটমন্দিরে তৃণমূলের কর্মিসভা৷ বিপুল কর্মী৷ আরও বিপুল বাহিনী৷ সঙ্গিন উঁচিয়ে৷ নাটমন্দিরের দেওয়াল জুড়ে লেখা, হরে কৃষ্ণ হরে রাম, হরে কৃষ্ণ হরে রাম৷ সাঁঝের বেলায় কীর্তন হবে কি? খবর নেই৷ তবে দোহারের দল ধুয়ো তুলতে তৈরি৷ হরে মা, হরে মাটি, হরে মানুষ৷ খোল-করতাল বাজছে না, এই যা৷

কাঁটাপাহাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিএম নেই৷ আছে ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টি৷ তৃণমূলের সরাসরি লড়াই ওদের সঙ্গে৷ সিপিএম নেই কেন? পাশের একটা ছোট ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন সুকুমার হাঁসদা৷ পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী৷ সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি৷ মুখে স্মিত হাসি৷ তাঁকে ঘিরে জনা পঞ্চাশেক ছেলেছোকরা৷ ঝিরঝিরে বৃষ্টি হচ্ছে৷ পিয়ালশাখের ফাঁকে ডানা ঝাপটাচ্ছে শ্রান্ত পাখি৷ মন্ত্রীমশাই বললেন, 'সিপিএম নেই কে বলল? কাঁটাপাহাড়িতে ঝাড়খণ্ড পার্টিই তো সিপিএম৷ আমরা হলাম লোহার বাসরে লখিন্দর৷ ওই সাপটার নাম যেন কী?' পাশে দাঁড়ানো এক যুবক বললেন, 'ঢ্যামনা৷' 'আরে দূর, ঢ্যামনা নয়, কেউটে৷' বললেন আরও এক যুবক৷ তৃতীয় জন বললেন, 'কালনাগিনী৷' উত্তরদাতার মুখে প্রশান্তি৷ মঙ্গলকাব্যটা একমাত্র তিনিই মনে রেখেছেন যে! সুকুমার বললেন, 'হ্যাঁ, কালনাগিনী৷ সিপিএম-কংগ্রেস, এসইউসি, ঝাড়খণ্ড সবাই জোট বেঁধে আমাদের ছোবল মারতে চাইছে৷ কিন্ত্ত ফুটো তো ছোট৷ এত সাপ ঢুকবে কোথায়? জঙ্গলমহলে কাজ হচ্ছে৷ নার্সিং কলেজ, পলিটেকনিক কলেজ মাথা তুলছে৷ চাল-ডাল-কেরোসিন কম দামে মিলছে৷ জোট বেঁধে সুবিধা হবে না৷'

কর্মিসভায় দুপুরের খাওয়া সেরে দাঁত খুঁটছিলেন দিলীপ মাহাতো৷ জনগণের কমিটির প্রাক্তন নেতা৷ অধুনা তৃণমূল৷ বললেন, 'সিপিএমের এখন স্বর্ণযুগ চলছে৷' স্বর্ণযুগ? 'হ্যাঁ, হ্যাঁ, স্বর্ণযুগ৷ লালগড়ের সব জায়গাতেই সিপিএম প্রার্থী দিয়েছে৷ কাঁটাপাহাড়িতেও দিয়েছে৷ ঝাড়খণ্ড পার্টির নামে৷' যদিও লালগড় ব্লকের (বিনপুর ১) প্রায় ৫০টি আসনে সিপিএম প্রার্থী দেয়নি৷ দেয়নি? নাকি দিতে দেয়নি? মস্ত প্রহেলিকা৷ কিন্ত্ত দিলীপবাবু আপনি তৃণমূলে কেন? কমিটির অনেক নেতাই তো এখন তৃণমূলে৷ দিলীপবাবুর ঝটিতি জবাব, 'আমরা তো তৃণমূলেই ছিলাম৷ তখনও৷ এখনও৷ এই তো অসিত (মাহাতো), ওঁকেই জিজ্ঞেস করুন না৷' হঠাত্‍ ভিড় ঠেলে হাজির এক যুবক (অসিত নন)৷ ঈষত্‍ লাল চোখ৷ মন্ত্রীর সামনেই গলা চড়িয়ে বললেন, 'একটা বুড়ি আছে৷ ৮০ বছর বয়স৷ কিন্ত্ত বার্ধক্যভাতা পায় না৷ লিখবেন তাকে নিয়ে? লিখবেন না৷ গরিবের কথা কেউ শোনে না৷ একমাত্র মাওবাদীরা শোনে৷'

তবে এখনও তৃণমূলে নাম লেখাননি নিয়তি মাহাতো৷ ছত্রধরের স্ত্রী৷ 'দিদি'র উপর খুব ভরসা ছিল৷ কিন্ত্ত তাতে ভাটার টান৷ লালগড়ের আমলিয়া গ্রামে ছত্রধরের মাটির দোতলা বাড়ি৷ আঙিনায় ঘুরঘুর করছে হাঁস-মুরগির ছানা৷ খাটিয়ায় শুয়ে ছত্রধরের বুড়ো বাপ৷ উঠতে পারেন না৷ বুকে ঘরঘর আওয়াজ৷ হাঁপানি৷ ভাতের হাঁড়িটা উনুন থেকে নামিয়ে হাত মুছতে মুছতে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন নিয়তি৷ স্বামী জেলে৷ মামলা-মোকদ্দমার জন্য সদরে ছুটে ছুটে হাসিখুশি মুখটায় বিস্তর ঝুলকালি৷ তাঁর কথায়, 'ভেবেছিলাম দিদি ওকে জেল থেকে ছেড়ে দেবে৷ কিন্ত্ত কোথায় কী! ওর বন্ধুরা সব দিদির দলে ভিড়েছে৷ কিন্ত্ত আমার আর ও-সব ভাল্লাগে না৷ কী হবে ভোট দিয়ে!'

লালগড় বাজারের কাছেই নিবাস তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ অনুজ পাণ্ডের মহানিষ্ক্রমণের পর থেকে সিপিএমের জোনাল কমিটি তিনিই সামলান৷ নিজের বাড়ির সামনে মাওবাদীদের গুলি খেয়েছেন৷ হাসপাতালে কেউ দেখতে যাননি বলে শহুরে নেতাদের উপর প্রভূত ক্ষিপ্ত৷ বললেন, 'একটু লাল চা বলি?' চা ছাড়া তো লালের কোনও চিহ্নই নেই৷ প্রচার নেই, পোস্টার নেই৷ হাসলেন তরুণবাবু৷ তাঁর কথায়, 'জনগণের কমিটি এখন তৃণমূলে ভিড়েছে কেন জানেন? না-ভিড়লে মেরে পিঠের চামড়া তুলে দেবে৷ মামলায় ফাঁসাবে৷ ছত্রধর তো জেলেই আছেন৷ ওঁর স্ত্রী তাই তৃণমূলে যাননি৷' কিন্ত্ত আপনারা তো লড়াইয়েই নেই৷ একটা দেওয়াল লিখনও তো চোখে পড়ল না! আগেই হেরে বসে আছেন নাকি? চায়ে চুমুক দিয়ে তরুণবাবুর দার্শনিক জবাব, 'ধীর পানি পাথর কাটে৷' মানে? 'মানে আর কী? ভোটের পরেই বুঝবেন, কতটা পাথর কাটল৷ তৃণমূলের যখন এতই ক্ষমতা, তা হলে মন্ত্রী এনে কর্মিসভা করতে হচ্ছে কেন?'

তাতে দোষের কী হল? সিপিএম নেতারা তো লালগড়ে আসেনই না!

নেতারা জানেন, জনগণই সব করে দেবে৷ তাই বোধহয়...৷ যাক গে, আমার ওই একটাই কথা৷ ধীর পানি পাথর কাটে৷

পাথর কাটতে শেষমেশ ঝাড়খণ্ড পার্টির সঙ্গে আঁতাঁত? ঝাড়খণ্ড পার্টির নেতা অসিত খাটুয়ার অবশ্য সাফ কথা, 'জোট-ফোট কিছু নয়৷ সিপিএম বহু জায়গায় প্রার্থীই খুঁজে পায়নি৷' সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের উত্তর, 'দু'টো দুষ্ট গ্রহ৷ তার মধ্যে যেটা কম ক্ষতিকর তাকে আমরা তার পাশে আছি৷ যদিও ওদের সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক মিত্রতা নেই৷' তা হবে হয়তো৷

তরুণবাবুর পূর্বসূরি অনুজ পাণ্ডের বাড়ি ধরমপুরে৷ বাড়িটাই আছে৷ লোক নেই৷ জনগণের কমিটি শাবল-গাঁইতি নিয়ে ভেঙে দিয়েছিল অনুজের বাড়ি৷ তাঁর নামের আগে 'জনদরদি' লিখে ফেস্টুন ছেপেছে সিপিএম৷ অনুজের বাড়ির পাশেই বিমল পাণ্ডের বাড়ি৷ বাড়ির বারান্দায় লুঙ্গি ও গেঞ্জি পরে পোস্টাপিস চালান বিমলবাবু৷ টেবিলে ছড়িয়ে খাম-পোস্টকার্ড, গালা৷ লোহার ডান্ডায় নীল কালি লাগিয়ে ঝপাং করে কাগজে মারলেন বিমলবাবু৷ বললেন, 'এই তো মাত্র ক'দিনেই পোস্টাপিস থেকে ২৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে৷ লালগড়ের সুদিন ফিরছে৷'

সুদিন? কে জানে! লালগড়ের সুদিন যে বহুদিন আগেই কংসাবতীতে ডুব দিয়েছে!

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...