বদলাচ্ছে পথ, প্রথা ভেঙে খুলছে মন্দির গৌতম চক্রবর্তী • গুপ্তকাশী | ||||||||||||||||||
৯/১১-র দিকে হাঁ করে তাকিয়ে উত্তরাখণ্ড! বিপর্যয়ের কেদারধামে বিপুল ব্যস্ততা। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর থেকেই মন্দিরে ফের শুরু হচ্ছে পুজো। "দিনটা পবিত্র," বললেন মন্দিরের প্রধান পূজারী, কর্নাটকের রাওয়াল ব্রাহ্মণ ভীমশঙ্কর লিঙ্গ। শুনলাম, এ বছর ৯/১১-তেই 'সর্বার্থসিদ্ধি অমৃতযোগ'! মন্দির খোলার পর প্রথমে মৃতদের উদ্দেশে জলতর্পণ। তার পর আড়াই ঘণ্টা হোমযজ্ঞ, 'মহামৃত্যুঞ্জয়' মন্ত্রপাঠ ও মন্দিরের শুদ্ধিকরণ। ডেটলাইন স্থির হয়েছিল দিন কয়েক আগেই। জোশীমঠের শঙ্করাচার্য স্বরূপানন্দের প্রতিনিধি এবং বদ্রী-কেদার মন্দির সমিতির সঙ্গে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণার বৈঠকে। মন্দির সমিতির চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার (সিইও) বি ডি সিংহ জানিয়েছেন, বৈঠকে ১১ তারিখে পুজো শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আশাবাদী ৩০ তারিখ থেকে হয়তো যাত্রীরাও যেতে পারবেন কেদার মন্দিরে। | ||||||||||||||||||
ধ্বংসস্তূপ গৌরীকুণ্ড। | ||||||||||||||||||
কেদারনাথের রাস্তায় তাই এখন জোর তৎপরতা। নিশ্চিহ্ন গৌরীকুণ্ড ও রামওয়াড়ার আকাশে উড়ছে এমআই-১৭ হেলিকপ্টার। উদ্ধারকাজ নয়, লোহার তৈরি বেলি ব্রিজের বিভিন্ন অংশ নিয়ে কেদারের আগে জঙ্গলচটিতে উড়ে যাচ্ছে সেটি। তৈরি হচ্ছে পায়ে-হাঁটা পথের নতুন সেতু। আসছে বিশালকার এমআই-২৬ কপ্টারও। পে-লোডার ও ভারী নির্মাণ-যন্ত্র নিয়ে যাওয়া হবে তাতে। মেঘ-ভাঙা বর্ষণে চোরাবারি তাল উপচে ১৭ জুন ভেসে গিয়েছিল কেদারনাথ। ২০ জুন সরকারি বদ্রী-কেদার মন্দির সমিতির তরফে মন্দিরের দরজায় তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। ৮৩ দিন পর ফের পুজো শুরু হবে সেই মৃত্যু-উপত্যকায়। "তালা লাগানো হয়েছিল নিরাপত্তার খাতিরে। কিন্তু মন্দির এ ভাবে বন্ধ থাকা তো ইতিহাসে নেই," বলছিলেন সিইও বি ডি সিংহ। কেদারে এমনিতেই ছ'মাসের পুজো। ভ্রাতৃদ্বিতীয়ায় মন্দির বন্ধ হলে নেমে আসেন সবাই। শিবলিঙ্গের নাগমুকুট নামিয়ে এনে রাখা হয় উখীমঠে। তার পর অক্ষয় তৃতীয়ায় ফের ডোলিতে বসে ভক্তের কাঁধে চেপে মন্দিরে রওনা হয় সেই দেবচিহ্ন। এই নিয়মিত রুটিনেও নানা লোকশ্রুতি আছে, আছে রহস্য। প্রধান পূজারী নাকি দরজা বন্ধ করার আগে মন্দিরে একটি প্রদীপ জ্বালিয়ে যান। ছয় মাস পরে দরজা খুললে দেখা যায়, দীপ সেই ভাবেই জ্বলছে। এ বার মিথ নেই, ভক্তের কাঁধে ডোলি নেই। জায়গায় জায়গায় এখনও বোল্ডারের স্তূপ। প্রশাসনের পরিকল্পনা, রামওয়াড়ার রাস্তা বন্ধ করে মন্দাকিনী নদীর অন্য তীরে পায়ে-চলা রাস্তা হবে। গৌরীকুণ্ড নয়, হাঁটা শুরু হবে সোনপ্রয়াগ থেকেই। তার পর পুল পেরিয়ে চলে যেতে হবে মন্দাকিনীর অন্য পারে। ১৪ কিলোমিটারের চিরাচরিত পয়দল-রাস্তা বেড়ে অন্তত ২০ কিলোমিটার। গুপ্তকাশীর আশপাশের গ্রামগুলিতে কেদারের অন্তত ১০০ পুরোহিত-সহ শ'চারেক মন্দির-কর্মীর বসবাস। তাঁদের মধ্যে ২৪ জনকে বাছা হয়েছে। আগামী রবি ও সোমবার তাঁদের কপ্টারে চড়িয়ে কেদার নিয়ে যাওয়া হবে। যাচ্ছেন প্রধান পুরোহিতও। এমনটা আগে কখনও হয়নি। আগামী 'নাইন ইলেভেন' তাই বদলে দিতে চলেছে কেদারের পথ, প্রথা অনেক কিছুই। প্রবোধকুমার সান্যাল থেকে উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, শঙ্কু মহারাজের মতো বাঙালি ভ্রমণার্থীরা গৌরীকুণ্ড থেকে রামওয়াড়া হয়ে কেদারের যে পথ চিনিয়েছিলেন, এ বার তা হয়ে যাবে ধূসর, পরিত্যক্ত। এখন গৌরীকুণ্ড যেতে হচ্ছে চড়াই বেয়ে, অচেনা হাঁটা পথে। এর নীচেই ভারত সেবাশ্রমের অতিথি নিবাস, কালীকমলি ধর্মশালা ছিল না? তিন মাস আগেও ভোর থেকেই এখানে শুরু হয়ে যেত যাত্রার প্রস্তুতি। পথে নেমে ধনী-নির্ধন, চেনা-অচেনা সবাই মিলে সমস্বরে 'জয় কেদার' হাঁক। 'গৌরীকুণ্ড থেকে চড়াই, চার মাইল দূরে রামওয়াড়া। ১৯২৮ সালে সেখানে প্রথম রাত কাটাই। মাত্র খান তিন চার চালাঘর, আশপাশে বরফ পড়ে,' লিখেছিলেন উমাপ্রসাদ। এখন রামওয়াড়াকে এড়িয়ে মন্দাকিনীর উল্টো দিক হয়ে কেদারে রাস্তা তৈরির কাজ। সেই সঙ্গে প্রশাসনের তরফে আরও দুটো বিকল্প রাস্তার চিন্তা রয়েছে। একটি ত্রিযুগীনারায়ণ ঘুরে, অন্যটি গুপ্তকাশীর আগে কালীমঠ দিয়ে। "কালীমঠের রাস্তাটা সাঙ্ঘাতিক চড়াই," বলছিলেন উখীমঠের ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সুধীর মহারাজ। চড়াই-উৎরাই নিয়ে তিনটি রাস্তাই অবশ্য পয়দল-মার্গ। ঘোড়াওয়ালা, ডান্ডিওয়ালাদের ভোটব্যাঙ্কে কে আর ঘা দিতে চায়! তবে ঠিক হয়েছে, কেদারে কোনও স্থায়ী কাঠামো এখন আর তৈরি হবে না। অমরনাথের মতো দর্শন করে ফিরে আসা। উত্তরাখণ্ডের পর্যটনমন্ত্রী অমৃতা রাওয়াত বলছিলেন, কেদারের পাঁচ-সাত কিমি আগে পাহাড়ে কোথাও জনপদ তৈরির জায়গা আছে কি না খতিয়ে দেখতে জিওলজিক্যাল সার্ভেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। 'ইঞ্জিনিয়ার্স প্রোজেক্ট ইন্ডিয়া' মন্দির পরিষ্কার ও সংরক্ষণের কাজ করবে। পয়দল-মার্গ ও ছোট ছোট রোপ ব্রিজের দায়িত্বে রাজ্যের পূর্ত দফতর। কিন্তু ১১ সেপ্টেম্বরের জন্য তাড়াহুড়ো কেন? অক্টোবরেই তো ফের মন্দির বন্ধ করে সবাইকে উখীমঠে নেমে আসতে হবে! | ||||||||||||||||||
জঙ্গলচটিতে মন্দাকিনীর ওপর তৈরি হচ্ছে সেতু। | ||||||||||||||||||
কারণটা যত না ধর্মের, তার চেয়ে ঢের বেশি অর্থনীতি আর রাজনীতির। কেদার-বদ্রী-গঙ্গোত্রী-যমুনোত্রীর চার ধামই পর্যটন-নির্ভর এই রাজ্যের সব চেয়ে জনপ্রিয় সার্কিট। জুনের বন্যা সব কিছু ওলোটপালোট করে দিয়েছে। বণিকসভা 'অ্যাসোসিয়েটেড চেম্বার অফ কমার্স'-এর হিসেব, এ বার পর্যটন বাবদ আয় থেকে প্রায় ৪১৭০ কোটি টাকা হারাবে উত্তরাখণ্ড। পুজোর ট্যুরিস্ট সিজন শুরুর আগেই তাই কপ্টারের ওড়াউড়ি বেড়েছে, বেড়েছে প্রশাসনিক ব্যস্ততাও। "কেদারই তো আসল চ্যালেঞ্জ! দুটো কাজ পাশাপাশি চলবে। এক দিকে মন্দির খুলে ফের পুজো, অন্য দিকে নতুন রাস্তা তৈরি," বলছিলেন পর্যটনমন্ত্রী। আবার রাজনীতির অঙ্কে লোকসভা ভোটের আগে এই কেদার-চ্যালেঞ্জ দিয়েই বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদীকে বার্তা দিতে চাইছে কংগ্রেস। বিপর্যয়ের পরই গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব ছিল, তিনি ক্ষতিগ্রস্ত কেদার মন্দির নতুন করে গড়ে দেবেন। কংগ্রেসশাসিত উত্তরাখণ্ড সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। প্রথম পুজোর দিনই কেদার যাচ্ছেন উখীমঠ এলাকার 'দেবশালী' ও 'যশলোকী' ব্রাহ্মণেরা। অযোধ্যার মতো সাধুসন্ত জড়ো করার রাজনীতি নয়, বরং স্থানীয় ব্রাহ্মণ্য ঐতিহ্যকে গুরুত্ব! "বিধি অনুযায়ী ওঁরাই মন্দিরের স্থানীয় স্বত্বাধিকারী," বলছিলেন মন্দির সমিতির সদস্য এ এস নেগী। মন্দির খোলার তারিখ নির্ধারণের বৈঠকে ছিলেন শঙ্করাচার্যের প্রতিনিধিও। শঙ্করাচার্য স্বরূপানন্দ কংগ্রেসমনস্ক হিসেবেই পরিচিত। ছেলেবেলায় স্বাধীনতা আন্দোলনে জেল খেটেছেন, রাম জন্মভূমি আন্দোলনেও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ-বিজেপির সঙ্গে তাল মেলাননি। রাজনীতিতে অবশ্য দলীয় হিসেবনিকেশের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ধ্যানধারণার দিকটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কেদারভূমের অনেক মানুষের ধারণা, বহুগুণা-সরকারের উপরে রুষ্ট হয়েই শিব পুজো নিতে চাইছেন না। তাই বিপর্যয়। হতে পারে সংস্কার, হতে পারে বিজেপি-ই কৌশলে এই বার্তা ছড়াচ্ছে। ঘটনা যাই হোক, এই ধারণাকে সমূলে উৎখাত করতে তড়িঘড়ি পুজো শুরু করাটা কাজে দেবে বলেই মনে করছে শাসক দল। রুদ্ধদ্বার মন্দিরের অবস্থা এখন কী রকম? উখীমঠের মহকুমাশাসক রাকেশ তিওয়ারি জানাচ্ছেন, পুরো গর্ভগৃহ গলা পর্যন্ত জল-বালি-কাদা-নুড়িপাথর মেশানো 'মালবা'য় ভরে গিয়েছিল। ২১ জন শ্রমিক প্রায় এক মাস ধরে সেখানে সাফাই চালিয়েছেন। শহরে বোল্ডার, ভাঙা ব্রিজের ধ্বংসাবশেষ পড়ে থাকলেও মন্দির এখন পরিষ্কার। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পারেটিভ রিলিজিয়ন-এর অধ্যাপক ডায়না এক গত বছরেও তাঁর বই 'ইন্ডিয়া: সেক্রেড জিওগ্রাফি'য়ে লিখেছিলেন কেদারের পিছনের চারটি উষ্ণ-কুণ্ডের কথা। মন্দির কমিটির সিইও জানাচ্ছেন, "একটি কুণ্ডই অবশিষ্ট রয়েছে। মন্দাকিনী ভাসিয়ে নিয়েছে বাকি তিনটি।" আগে মন্দিরের ঠিক সামনে সরস্বতী নদী এসে মিশত মন্দাকিনীতে। বিপর্যয়ের পরে গতিপথ বদলেছে সরস্বতী, মন্দাকিনীতে মিশেছে মন্দিরের বহু পিছনে। ১৭ জুনের বন্যায় দু'টি ঘটনা শুধু কেদার মন্দিরটিকে বাঁচিয়ে দেয়। এক, মন্দিরের পূর্ব দিকে যে দরজা সব সময় বন্ধ রাখা হতো জলের তোড়ে সেটির আচমকা খুলে যাওয়া। ওই দরজা না খুললে সে দিন জলের ধাক্কায় মন্দির মুখ থুবড়ে পড়ত। দুই, প্রবল তোড়ে ভেসে আসা বিশাল এক পাথরের চাঁই সেদিন মন্দিরের পিছনে থিতু হয়ে যায়। অতঃপর সব বোল্ডার ওই পাথরেই ধাক্কা মারে, ফলে দাঁড়িয়ে থাকে মন্দির। কেন্দ্রীয় সরকারের 'ইঞ্জিনিয়ার্স প্রোজেক্ট ইন্ডিয়া' ভাবছে, সেই বড় পাথরটি উপড়ে ফেলে দেবে। পূর্ত দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ার গজগজ করছেন, "দূর! নদীতেই তো ফেলতে হবে। ওখানেই বরং পাথরটা রেখে ল্যান্ডস্কেপিং করা যেত।" মন্দির এলাকায় হন্যে হয়ে একটা শিলালিপির খোঁজ করে বেড়াচ্ছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। ওই লিপি হাতে এলে বোঝা যাবে, কবে তৈরি হয়েছিল কেদার মন্দির। রাহুল সাংকৃত্যায়ন তাঁর বইয়ে এই শিলালিপির কথা লিখেছিলেন। কিন্তু তার পর থেকে কেউ দেখেনি সে লিপি। এখন এই বিপুল ওলোটপালোটে সে কি উঁকি দেবে কোথাও? উমাপ্রসাদের রাস্তা থাকল না ঠিকই, কিন্তু ৯/১১-উত্তর কেদারে রয়ে যেতেও পারে রাহুলের লিপি-দর্শন! এত বিপর্যয়ের পরও হয়তো বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখবেন কেদারনাথ! | ||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||
পুরনো খবর: কেদারনাথ বিধ্বস্ত, নিশ্চিহ্ন গৌরীকুণ্ড http://www.anandabazar.com/5desh1.html |
This Blog is all about Black Untouchables,Indigenous, Aboriginal People worldwide, Refugees, Persecuted nationalities, Minorities and golbal RESISTANCE. The style is autobiographical full of Experiences with Academic Indepth Investigation. It is all against Brahminical Zionist White Postmodern Galaxy MANUSMRITI APARTEID order, ILLUMINITY worldwide and HEGEMONIES Worldwide to ensure LIBERATION of our Peoeple Enslaved and Persecuted, Displaced and Kiled.
Thursday, September 5, 2013
নয় এগারোয় নতুন কেদার বদলাচ্ছে পথ, প্রথা ভেঙে খুলছে মন্দির
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment