Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Memories of Another day

Memories of Another day
While my Parents Pulin babu and Basanti devi were living

Saturday, January 10, 2015

মুক্তিযুদ্ধকালীন কলকাতা ​: ​ আহমদ ছফা ​ ও ​ ​ ​ মেজর জলিল​

মুক্তিযুদ্ধকালীন কলকাতা
​:
আহমদ ছফা
ও ​
মেজর জলিল​


কোলকাতার ৫৮ বালিগঞ্জ বাড়িটি ছিল প্রবাসী সরকারের আবাসিক কার্যালয়।
​​
ওই ভবনেই বসবাস ও দাপ্তরিক কাজ করতেন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি নজরুল ইসলাম। প্রয়োজনের তুলনায় ছোট এ বাড়িটিতে সারাক্ষন "জয় বাংলা"র লোকের ভিড় লেগেই থাকত। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা আওয়ামীলীগ দলীয় এমপি, নেতা, আমলা, কর্মী, আত্মীয়স্বজন, আমত্য, চামচা সবার জন্য এ বাড়িটি ছিল অবারিত। ঢালাওভাবে ভাত-গোশত দিয়ে ভুড়ি ভোজ এমনকি নিশি যাপনেও কোনো কার্পণ্য ছিল না। অভ্যাগতদের প্রত্যেকের হাতে দেখা যেত একটা নতুন ব্রিফকেস কিংবা ছোট এট্যাচী, কোন কোন নেতার কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ। আহার নিদ্রা, এমনকি প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদনের সময়ও এসব ব্যাগ কাছছাড়া করতো না কেউ। এমন একটি ঘটনায় সেনা কর্মকর্তারা একজন অতিথির ব্রিফকেস পরীক্ষা করে ১২ লাখ পাকিস্তানী রুপী (বর্তমান মূল্য প্রায় ৪৩ কোটি টাকা) উদঘাটিত হয়। ঘটনার আকস্মিকতায় কর্নেল ওসমানীর জেরার মুখে ভদ্রলোকটি টাকার কথা চেপে যান। পরে উদ্ধারকৃত বিপুল টাকা প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে জমা করে দেয়া হয়। মূলত: দেশ ছাড়ার আগে প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতারা পূর্ব বাংলার ব্যাংক ট্রেজারীগুলো সব উজাড় করে অর্থ ও সোনাদানা নিয়েই পাড়ি জমান ভারতবর্ষে।

​​
আহমদ ছফা এ জাতীয় আরেকটি ঘটনার কথা বর্ণনা করেন এভাবে, "এই সোনা তো বাংলাদেশের জনগনের সম্পত্তি।…যে তিনজন আমরা সোনা নিয়ে এসেছিলাম তারমধ্যে একজন এমপি'র আপন ছোট ভাই। আরেকজন স্থানীয় আওয়ামীলীগ প্রেসিডেন্টের শালা। তারা এখন কোথায় আছে কি করছে, কিছু জানিনে। অথচ এদিকে শুনতে পাচ্ছি সেই সোনা ইতোমধ্যে ভাগভাটোয়ারা হয়ে গেছে।.....সত্যিই তো এরকম একজন মানুষ দেড় মন সোনা বয়ে নিয়ে এসেছে শুনলে এখন কে বিশ্বাস করবে? (অলাতচক্র, পৃষ্ঠা ৬২)।

বিভিন্ন শরনার্থী শিবির পরিচালনার দায়িত্বে ভারত সরকারের লোকের পাশাপাশি আওয়ামী নেতারাও ছিলেন। এসব নেতাদের বেশীরভাগই পরিবার পরিজন সমেত বেশ আয়েশী জীবন যাপন করতেন। তখন পশ্চিম বাংলায় "জয় বাংলা"র লোক মানেই বাড়তি খাতির। এ নিয়ে ৮নং সেক্টর কমান্ডার
​​
মেজর জলিল লিখেছেন,"আমি যখন তাদেরকে দেখেছি কোলকাতার অভিজাত এলাকার হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোতে জমজমাট আড্ডায় ব্যস্ত। একাত্তরের সেই গভীর বর্ষায়ত দিনরাতে কোলকাতার অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলোতে বসে গরম কফির কাপে চুমুক দিতে গিয়ে হাটুতক কাদা জলে ডোবান্ত মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং শিবিরগুলোতে অবস্থানরত হাজার হাজার তরুনের বেদনাহত চেহারাগুলো তারা একবারও দেখেছে কিনা তা আজও আমার জানতে ইচ্ছা করে। আমার জানতে ইচ্ছে করে কোলকাতার পার্ক স্ট্রীটের অভিজাত নাইট ক্লাবগুলোতে  আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের মনোমুকুরে একবারও ভেসে উঠেছে কিনা সেই গুলিবিদ্ধ কিশোর কাজলের কথা যে মৃত্যুর পূর্বক্ষণ পর্যন্ত চীৎকার করে ঘোষণা করেছে 'জয় বাংলা'।

প্রবাসী সরকারের একজন মন্ত্রী মারামারি করে কলকাতা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে অবশেষে মুজিবনগর সরকারের কাছে হস্তান্তরিত হয়। আহমদ ছফা ঘটনাটিকে এভাবে বর্ণনা করেছেন, "যে সকল মানুষকে দেশে থাকতে শ্রদ্ধা করতাম, কলকাতায় অনেকের আচরণ দেখে সরল বাংলায় যাকে বলে কিংকর্তব্যবিমুঢ়- তাই হতে হচ্ছে। এখনও তোমরা স্যার ডাকছ তার বদলে শালা বললেও অবাক কিছু ছিল না। এখানকার একটা সাপ্তাহিক খবরটা ছেপেছে। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের একজন মন্ত্রী নাকি  পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।পুলিশ অফিসারের জেরার মুখে ভদ্রলোককে কবুল করতেই হল, তিনি ভারতে প্রবাসী সরকারের একজন মন্ত্রী। (ছফা, ১৯৯৩, পৃষ্ঠা ২০-২১)।

 এসব নেতাদের কীর্তিকলাপ নিয়ে যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র ঘৃনা উঠে এসেছে আহমদ ছফার কলমে, "কলকাতা এলে মাথায় খুন চেপে বসে। ইচ্ছা জাগে এই ফর্সা কাপড় পরা তথাকথিত নেতাদের সবকটাকে গুলি করে হত্যা করি। এ্যায়াসা দিন নেহি রয়েগা। একদিন আমরা দেশে ফিরে যাব। তখন সব কয়টাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে গুলি করে মারব, কলকাতার নরম বিছানায় ঘুমিয়ে পোলাও-কোর্মা খাওয়ার মজা ভাল করে ‍দেখিয়ে দেব" (ছফা, ৮১)।

"স্টপ জেনোসাইড" খ্যাত চলচ্চিত্রকার কাজী জহির রায়হান যুদ্ধকালে পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন স্থানে কাজ করতে গিয়ে উদ্বাস্তু শিবিরে আওয়ামীলীগ নেতাদের অপকর্মের অনেক ফুটেজ ও ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেন, যা দিয়ে তিনি ডকুমেন্টারী বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যুদ্ধপরবর্তী সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট পাপিষ্ঠরা এসব কারনে জহির রায়হানকে গায়েব করে দেয়, তার লাশটিও খুঁজে পাওয়া যায় নি। জহির রায়হান সংবাদ সম্মেলন করে এসব চিত্র প্রকাশের হুমকি দিয়েছিলেন। আর এ হুমকির পরই তাঁর অন্তর্ধানের ঘটনা ঘটে। জহির রায়হানের ভাই শহীদুল্লাহ কায়সার যুদ্ধকালে ১৪ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনীর দ্বারা অপহৃত হন। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারী ভাইকে খোঁজার নাম করে জহির রায়হানকে ডেকে নেয় স্বাধীন বাংলার প্রশাসন পরিচিতরা। এরপর থেকে জহির নিখোঁজ। তার লাশও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

জহির রায়হানের নিখোঁজ হওয়া প্রসঙ্গে ৯নং সেক্টর কমান্ডার মেজর এম.এ. জলিল লিখেছেন, "মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের আওয়ামীলীগ নেতাদের কুকীর্তি ফাঁস করে দিতে চাওয়ায় নিখোঁজ হন সাংবাদিক জহির রায়হান। ভারত অবস্থানকালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের অনেক কিছুই জানতে চেয়েছিলেন স্বনামধন্য সাহিত্যিক এবং চিত্র নির্মাতা কাজী জহির রায়হান। তিনি জেনেছিলেন অনেক কিছু, চিত্রায়িতও করেছিলেন অনেক দুর্লভ দৃশ্যের। কিন্তু অতসব জানতে বুঝতে গিয়ে তিনি বেজায় অপরাধ করে ফেলেছিলেন। স্বাধীনতার ঊষালগ্নেই তাকে সেই অনেক কিছু জানার অপরাধেই প্রাণ দিতে হয়েছে।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ৩ নম্বর আসামী স্টুয়ার্ড মুজীবেরও ঘটেছিল এই পরিণতি। এই দায়িত্বশীল নিষ্ঠাবান তেজোদীপ্ত যুবক স্টুয়ার্ড মুজীব ৯ নম্বর সেক্টরের অধীনে এবং পরে ৮ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেছে। তার মত নির্ভেজাল ত্বরিতকর্মা একজন দেশপ্রেমিক যুদ্ধা সত্যিই বিরল। মুজীব ভারতে অবস্থিত আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেক কুকীর্তি সম্পর্কেই ছিল ওয়াকিফহাল। এতবড় স্পর্ধা কি করে সইবে স্বার্থান্বেষী মহল। তাই স্বাধীনতার মাত্র সপ্তাহ খানিকের মধ্যেই ঢাকা নগরীর গুলিস্তান চত্তর থেকে হাইজ্যাক হয়ে যায় স্টুয়ার্ড মুজীব। এভাবে হারিয়ে যায় বাংলার আর একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। (পৃষ্ঠা ৫৫, ৫৬)
​(internet)​

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...