Latest News Video : পরাণ থেকে প্রতিক্রিয়া
নবারুন ভট্টাচার্য | |
|
শিশুরা শুধু... ~ নবারুণ ভট্টাচার্য
শিক্ষাক্ষেত্রে তাণ্ডব, বিশিষ্টরা যা বললেন
রাজ্যে লুম্পেন রাজ চলছে বলে মন্তব্য করে নবারুণবাবু বলেন, "লুম্পেন পাওয়ারের উত্থান ঘটেছে। তৃণমূল ক্ষমতায় আছে বলে এখন বেশী করছে। তবে মাঝদিয়ায় তো এসএফআই করেছে বলে শুনলাম।" লুম্পেনদের ক্ষমতায় অলিন্দে নিয়ে আসার পিছনে সিপিএম এবং তৃণমূল সমান ভাবে দায়ী বলে মনে করেন তিনি। যে লুম্পেনরা ছাত্র সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদেরকে কড়া হাতে দমন করার পক্ষে সওয়ালও করেন নবারুণবাবু।
পাশাপাশি রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলকে পরিবর্তন আক্ষা দেওয়াকেও কড়া ভাষায় আক্রমণ করে তিনি বলেন, " আমি এই পরিবর্তন চাওয়া চাইয়ের মধ্যে ছিলাম না। ওসব তো কিছু বিদ্দ্বজন করতেন।" ভবিষ্যৎ এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর মতে, "পরিবর্তন আসে একমাত্র সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে।"
প্রশাসনের দুই মুখ : ক্যাম্পাসে অশান্তি রুখতেও দলতন্ত্রের অভিযোগ
আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন প্রিয়ব্রতও
ছবিতে একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কবীর সুমনও। ছবিটিতে সিঙ্গুরের টাটাবিরোধী আন্দোলন, মুখ্যমন্ত্রীর শপথগ্রহণ ও বিভিন্ন সরকারি কমিটি নিয়ে কিছু দৃশ্য রয়েছে। টালিগঞ্জে গুঞ্জন, ওই দৃশ্যগুলির কারণেই ছবিটি আটকে দেওয়া হয়েছে। কারণ সেন্সর কমিটিতে বর্তমান শাসকদলের ঘনিষ্ঠ বেশ কিছু লোক রয়েছেন বলে খবর। ছবিটি আপাতত, ফিল্ম সার্টিফিকেশন অ্যাপিলেট ট্রাইবুনালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায় এ খবরে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, ছবিতে পরিবর্তনের পর নতুন সরকারকে নিয়ে কিছু কথা বলাতেই আপত্তি৷ কোনও আপত্তিজনক ভাষা ব্যবহার হয়নি৷ নবারুণ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ছবিটা নিয়ে ওভার-রিঅ্যাক্ট করা হচ্ছে৷ রাজনৈতিক কারণেই 'কাঙাল মালসাট'কে আটকে দেওয়া হয়েছে৷
| ||||
স্তালিনের প্রতি অসম্মানসূচক মন্তব্য রয়েছে বলে অভিযোগ। তাই সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশনের কলকাতা অফিস একটি বাংলা ছবির সার্টিফিকেশন আটকে দিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রি জুড়ে গুঞ্জন, বাম আমল হলেও না-হয় কথা ছিল! কিন্তু পরিবর্তনের জমানায় খামোখা স্তালিনকে নিয়ে এত মাথাব্যথা কেন? এক দল ফুট কেটে বলছেন, এ যেন মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি! অন্য দলের বক্তব্য, স্তালিন তো উপলক্ষ মাত্র! আসল কারণটা...। সুমন মুখোপাধ্যায় পরিচালিত 'কাঙাল মালসাট' ছবিটা নিয়ে অতএব জোর বিতর্ক! নবারুণ ভট্টাচার্যের গল্প অবলম্বনে বানানো এই ছবিকে 'রিফিউজাল অফ সার্টিফিকেট' দিয়েছেন সেন্সর কর্তৃপক্ষ। ভাগ্য নির্ধারণের জন্য ছবিটি পাঠানো হয়েছে ফিল্ম সার্টিফিকেশন অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল (এফসিএটি)-এ। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, প্রধান সমস্যা বেধেছে ছবির তিনটি অংশ নিয়ে। যেখানে সিঙ্গুরে টাটা-বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথগ্রহণ নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক দৃশ্য রয়েছে। সরকারি কমিটি নিয়ে কটাক্ষ রয়েছে। সেন্সরের আপত্তি তাই নিয়েই। পাছে বিষয়টা একপেশে দেখতে লাগে, তাই স্তালিন-প্রসঙ্গ নিয়েও আপত্তি তুলে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ। ছবিতে গালাগালির প্রাচুর্য নিয়েও আপত্তি উঠেছে। সেন্সরের কমিটিতে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা বেশির ভাগই শাসক দলের কাছের লোক বলে পরিচিত। সুতরাং রাজ্য সরকারের অপছন্দের কোনও কথা যাতে ছবিতে না থাকে, সেটাই তাঁরা নিশ্চিত করতে চেয়েছেন বলে মনে করছেন ইন্ডাস্ট্রির অনেকে। | ||||
ছবিতে দণ্ডবায়স চরিত্রে কবীর সুমন। —নিজস্ব চিত্র | ||||
সেন্সরের রিভাইজড কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন হরনাথ চক্রবর্তী। প্রভাত রায়, মনীশ মিত্ররাও ছিলেন। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে হরনাথ ছবিটি নিয়ে তাঁর আপত্তির কথা গোপন করেননি। তিনি বলেন, "টাটা কোম্পানি, দিদির শপথগ্রহণ এগুলো গল্পে ছিল না। সুমন কেন ওগুলো রাখল, বুঝছি না।" কিন্তু চলচ্চিত্র-অনুরাগীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন গল্পের চেয়ে সিনেমা বহু ক্ষেত্রেই বদলে যায়, বদলে ফেলা হয়। পরিচালক গল্পের সঙ্গে অনেক কিছু জোড়েন, অনেক কিছু বাদও দেন। বিভূতিভূষণের উপন্যাস থেকে 'অপু ট্রিলজি' তৈরির সময় যেমন সত্যজিৎ রায় নানা রকম বদল ঘটিয়েছিলেন। লীলা চরিত্রটি বাদ গিয়েছিল, আবার অপুর বন্ধু পুলু-র চরিত্রটি অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল। সে ব্যাপারে সত্যজিৎ অনেক স্বাধীনতাও নিয়েছিলেন। 'কাঙাল মালসাটে' কেন নতুন নতুন প্রসঙ্গ ঢুকল, সেন্সরের রিভাইজড কমিটি তাই নিয়ে সুমনকে প্রশ্ন করেছিল। সুমন জানাচ্ছেন, "আমি বলেছিলাম, আমি তো গল্প অবলম্বনে ছবিটা করেছি। গল্পে সব কিছু থাকতে হবে কে বলেছে? ফিল্মমেকার হিসেবে আমি তো গল্পটা কনটেম্পোরারি করবই!" হরনাথ নিজে এক জন পরিচালক হয়ে গল্পে রদবদল নিয়ে আপত্তি করলেন কেন? হরনাথের জবাব, ''কেন আপত্তি তোলা হয়েছে, সেটা ছবিটা দেখলেই বুঝতে পারবেন। একটা ছবি যদি আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা তৈরি করে, তার দায়িত্ব কে নেবে?" হরনাথের যুক্তি মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই ছবিটাকে রিফিউজাল অফ সার্টিফিকেট দিয়েছেন এখানকার রিজিওনাল সেন্সর অফিসার। যদিও ইন্ডাস্ট্রির অনেকেরই অভিযোগ, সেন্সর অফিসের নিজস্ব ভূমিকা এখানে খুব বড় নয়। তাঁদের দাবি, শাসক দলের ঘনিষ্ঠ যাঁরা কমিটিতে রয়েছেন, তাঁরাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সেন্সর বোর্ডকে ব্যবহার করে ছবি আটকানোর চেষ্টা করছেন। "এটা গণতন্ত্রবিরোধী। আগে বাম জমানাতেও একই জিনিস ঘটেছে। এখানেও তারই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে," বলছেন অপর্ণা সেন। হরনাথ এই অভিযোগ মানতে রাজি নন। তাঁর দাবি, "রাজনৈতিক চাপের কোনও প্রশ্নই নেই। যেখানে যা আপত্তি তোলার, সেটা সেন্সরের আইন মেনেই তোলা হয়েছে।" | ||||
ছবিতে অভিনয় করেছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। | ||||
যেমন? সেন্সরের রিভাইজড কমিটি সুমনের ছবিতে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম নিয়ে নাগরিক সমাজের আন্দোলনকে অসম্মান করা হয়েছে বলে দাবি করেছে। অপর্ণা নিজে ওই আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন, সুমনের ছবিটিও দেখেছেন। তাঁর কথায়, "আমি সিঙ্গুরের বিরোধিতা করে রাস্তায় নেমেছিলাম। কিন্তু সিনেমায় তার রেফারেন্স নিয়ে আপত্তি হবে কেন? আপনার খারাপ লাগলে আপনি দেখবেন না ছবিটা।" অপর্ণা মানছেন, ছবিতে গালাগালি আছে। "কিন্তু যে শ্রেণির মানুষকে সুমন দেখিয়েছে, তাঁরা ওই ভাবেই কথা বলেন। আমারও খুব শকিং লেগেছিল। কিন্তু অ্যাম লিবারাল এনাফ টু অ্যাকসেপ্ট দ্যাট।" সেন্সর-কর্তারা তবে এতটা বিচলিত হলেন কেন? ছবিতে দন্ডবায়স চরিত্রে অভিনয় করা কবীর সুমনের সংলাপ রয়েছে, "দেখলি টাটারা পর্যন্ত ধেড়িয়ে গেল এখানে এসে! শুনলাম এখন নাকি ভিতরে ভিতরে কী সব হয়েছে। কী সব কমিটি-ফমিটিতে বসে। কলকাতাকে নাকি লন্ডন বানাবে! বলদ কোথাকার!" আর একটি দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে, একটি চরিত্র রীতিমতো বিতৃষ্ণা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথ অনুষ্ঠান দেখছে টিভির পর্দায়। দু'টি ক্ষেত্রেই আপত্তি তুলেছে সেন্সর। তাদের বক্তব্য, "টাটা-বিদায় নিয়ে যে ভাবে মন্তব্য করা হয়েছে, তাতে নাগরিক সমাজের আন্দোলনকে হেয় করা হয়েছে। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর শপথ গ্রহণের দৃশ্যটি যে ভাবে রাখা হয়েছে, তাতে ইতিহাসের বিকৃতি ঘটেছে। বহু মানুষের মনে তা আঘাত করতে পারে, উত্তেজনা ছড়াতে পারে।" আর স্তালিন? সিনেমায় আছে স্তালিন পার্টি লিডারকে বলছেন, "কতগুলোকে মারলাম। নামের লিস্ট আসত! নামের পাশে লিখতাম, 'ফর এগজিকিউশন'। এক বার দু'বার নামের পাশে শুধু 'টু দ্য ক্যাম্পস্' লিখেছিলাম।" সংলাপটি নিয়ে সেন্সর অফিসের বক্তব্য, "ছবিতে স্তালিনের উপস্থাপনা অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাবে করা হয়েছে। এ রকম একপেশে সংলাপ বহু স্তালিনপন্থীর ভাবাবেগে আঘাত করবে! ছবিটি দেখালে এই নিয়ে হাঙ্গামাও হতে পারে।" স্তালিন নিয়ে ভাবাবেগের প্রসঙ্গে অনেকেরই মনে পড়েছে, ক'বছর আগে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে 'টরাস' ছবিটি দেখানো নিয়ে সমস্যার কথা। আলেকজান্দার সকুরভ পরিচালিত সেই ছবিতে লেনিনের উপস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ছবিটি দেখানোর বিরোধিতা করে রাস্তায় নেমেছিল কিছু বাম সংগঠন। শেষ পর্যন্ত তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হস্তক্ষেপে ছবিটি দেখানো হয়। বাম-ঘনিষ্ঠ অভিনেতা বাদশা মৈত্র বলেন, "সিপিএম আমলে সব ঠিক ছিল, তা নয়। কিন্তু এই সরকার রোজই অসম্ভব অসহিষ্ণুতার পরিচয় দিচ্ছেন।" পুরো ঘটনাটায় বিরক্ত পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়ও। তিনি জানান, ছবিটি ডিসেম্বরে সেন্সর সার্টিফিকেটের জন্য জমা দেওয়া হয়। প্রথম কমিটি ছবিটি দেখার পর সেটাকে রিভাইজড কমিটির কাছে পাঠায়। "রিভাইজড কমিটিতে ছিলেন হরনাথ চক্রবর্তী, প্রভাত রায়, মণীশ মিত্র-রা। তাঁরা ছবিটির চারটে জায়গা নিয়ে আপত্তি তোলায় এখন ট্রাইব্যুনালের কাছে পাঠানো হয়েছে। আমি বলেছি, ফিল্মের কোনও অংশ কাটব না।" সুমনের বয়ান অনুযায়ী, রিভাইজড কমিটির সঙ্গে কথোপকথনে প্রথমে ওঠে ছবিতে গালাগালির প্রসঙ্গ। সুমনের বক্তব্য, 'গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর' বা '২২শে শ্রাবণ'য়েও গালাগালি ছিল। আর 'কাঙাল মালসাটে'র ফ্যাতাড়ুরা যে শ্রেণির মানুষ, তারা ওই ভাষাতেই কথা বলেন। তার পর প্রশ্ন ওঠে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটা এক জন বিতৃষ্ণার চোখে কেন দেখছেন? সুমনের জবাব, "এটা গণতন্ত্র। কেউ যদি উল্লসিত না হয়, সেটা তার অধিকার।" এতেই শেষ নয়। "হরদা আমায় বলেন, আপনি বলেছেন সব 'বলদে'রা কমিটিতে বসেছে। কিন্তু কমিটিতে তো বহু গণ্যমান্য ব্যক্তিত্বও আছেন।" হরনাথ আনন্দবাজারকে ফোনেও বলেন, "কমিটিতে সবাই 'বলদ' বলা নিয়ে আমাদের আপত্তি ছিল। মানুষের মনে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে বাধ্য।" সুমনের দাবি, মনীশ-প্রভাত-হরনাথরা প্রশ্ন করেছিলেন, কলকাতাকে লন্ডন বানানো হবে এই প্রসঙ্গই বা কেন তোলা হয়েছে ছবিতে। "লন্ডন বানানোর কথা শুনে এক জন হাসে, এমনটাই ছিল ছবিটাতে। তাতেই ওঁদের আপত্তি। আমি বলি, কেউ যদি হাসে তাকে আপনি আটকাবেন কী করে?" হরনাথ বলছেন, "আমরা তো ছবিটা আটকাইনি। ট্রাইব্যুনাল যদি আপত্তি না করে, তা হলে ছবিটা যেমন আছে, তেমন ভাবেই মুক্তি পাবে!" 'চলো পাল্টাই'-এর পরিচালক উদাহরণ দিচ্ছেন, 'ভূতের ভবিষ্যৎ' ছবিতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুরে নতুন কথা বসানো নিয়ে আপত্তি করেছিল সেন্সর কমিটি। রিভাইজড কমিটি-র মনে হয়েছিল, ভূতেদের গানে এই স্বাধীনতা নেওয়া যেতেই পারে। ফলে সমস্যা মেটে। "আমাদের আপত্তি মেনে সুমন ওঁর ছবি পরিবর্তনে রাজি ছিলেন না। ফলে ছবিটা ট্রাইব্যুনালে গিয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ওঁরাই নেবেন! এটাই তো নিয়ম!" বাম আমলে সুমনের প্রথম ছবি 'হারবার্ট' নন্দনে দেখানোর ব্যাপারে এক প্রস্ত বাধা পেয়েছিল। পরিবর্তনের পরে বাধা এল সেন্সর-পর্বেই। সুমন অবশ্য পরবর্তী পদক্ষেপ ভেবে রেখেছেন। বললেন, "ইন্টারনেটে বিভিন্ন মুভি সাইট আছে। যদি 'কাঙাল মালসাট' রিলিজ করতে না-ই দেওয়া হয়, সেখানেই ছবিটা দেখাব আমরা।" |
পরাণ যায় জ্বলিয়া রে
লিখেছেন দময়ন্তী (তারিখ: রবি, ২৫/১০/২০০৯ - ৪:৩৯অপরাহ্ন)ক্যাটেগরি:
আমার ভেতরে যে বিভিন্নরকম "আমি' আছে, তাদের মধ্যে মাঝেমাঝেই বেশ ধুন্ধুমার যুদ্ধ লেগে যায় বিভিন্ন গোলমেলে বিষয়পত্তর নিয়ে৷ তার মধ্যে একটা অন্যতম ঝামেলার জায়গা হল "শব্দের ব্যবহার'৷ এমনিতে অনেকসময়ই আমি শব্দ সম্বন্ধে একটু বেশীইই সংবেদনশীল৷ হাংরি জেনারেশানের লেখাপত্তর বিশেষ টানে নি৷ ওদিকে আবার বন্ধুবান্ধবরা যখন যত্ন করে "খিস্তির উত্পত্তি ও ব্যবহার' শিখিয়েছে, সেটা বেশ মন দিয়ে শিখেছি৷ যদিও ব্যবহার করিনা কখনও৷ ফলে যেটা হয়েছে, এমনিতে আমার বেশ সুশীলা টাইপ একটা ইমেজ থাকলেও দু:শীল/ দু:শীলাদের কথাবার্তার মধ্যে অস্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করি না৷ কিন্তু আবার দুম করেই কোন শব্দের ব্যবহার নিয়ে বেদম খচে গিয়ে কঠোরভাষায় ধমকে দিই৷ স্বাভাবিকভাবেই কেউ কেউ খুব আহত হয়, কেউ রেগে যায়৷ আর তারপরই আমার ভেতরের "আমি'গুলো নিজেদের মধ্যে ঝটাপটি লাগিয়ে দেয়৷
তো, এহেন আমি নব্বইয়ের দশকে নবারুণ ভট্টাচার্য্যের 'ফ্যাতাড়ুর বোম্বাচাক' পড়ে পুরো ব্যোমকে গেছিলাম৷ এমন অজস্র শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে যাকে আমরা তখন বলতাম "অসংসদীয়', অথচ তারপরেও বইটা কোথায়ও একটা চেতনার ঘেঁটি ধরে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে৷এরপরে খুঁজে খুঁজে আরও সব বইপত্তর পড়ে ফেলা গেল৷ তা আজ আর বই নিয়ে আলোচনায় যাব না৷ হিমুর দাবীমত নবারুণ সৃষ্ট চরিত্র কবি শ্রীপুরন্দর ভাট মশাইয়ের কিছু কাব্যনমুনা এখানে টুকে দেব৷এতক্ষণের আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই বুঝতেই পারছেন হে সুধী পাঠক, যে এবারে এখানে প্রচুর ভুলভাল কথাবার্তা লেখা হবে৷ আমি বলি কি, আপনার যদি শব্দ সম্পর্কে সংস্কার থাকে, এবার বরং একদম নীচে চলে যান গানটা দেখতে৷
প্রথমটা হল গাছের ডালে গলায় দড়ি দিয়ে পুরন্দরের সুইসাইডাল অ্যাটেমপ্টের পরে-
কেহই বোঝেনি মোরে
কেহই বাঁধেনি ডোরে
কেহই দেয়নি গলে মালা,
সকলেই লাথায়েছে
বঁড়শিতে গাঁথায়েছে
বলিয়াছে, মর্ তুই শালা।
তাই আমি বলি ধিক্!
হাসি শুধু ফিক্ ফিক্
গোপনে করিয়া যাই ট্রাই,
কবে সব শালাগণে
জড়ো করি কচুবনে
একযোগে করিব জবাই!
দুই নম্বরটা -"কবির আলখাল্লা"। রবীন্দ্রজয়ন্তীতে, 'অ্যাকোয়া' ভন্ডুল করে -
কানা পালোয়ান সনে শিখেছিলে কুস্তির প্যাঁচ
সেই প্যাঁচে পরে দেখি অন্য যতেক কবি ঘ্যাঁচ্
জাহাজ-ক্যাপ্টেন তুমি ,বাকি সব মাঝি আর মাল্লা
সকলে জাঙ্গিয়া পরা,তুমি শুধু পরে আলখাল্লা৷
সকলে কুড়োয় বেল,তুমি একা বাগাও নোবেল
ইস্কুলে না পরিয়া ফার্স্ট তুমি, বাকি সব ডাহা ফেল
তোমার ওজনে ভারি একদিকে হেলে দাঁড়ি-পাল্লা
সকলে জাঙ্গিয়া পরা, একা তুমি পরে আলখাল্লা৷
তিন নম্বরটা মদন ও ডি . এস . এর সাথে প্রথম পরিচয়ে-
ঘুমোলে হবে না ক্লান্তি দূর
ঐ দেখা যায় বরোবুদুর
আনাচে কানাচে নাচে ইঁদুর
............. কুম্ভীপাক
ঠিকে লেখা লিখে চালাই পেট
বহুত্ দাদাকে দিয়েছি ভেট
জেনে শুনে সব শালা গবেট
............... চুলোয় যাক
মস্তির নামে খাই চোলাই
ব্যাডলাক হলে রামধোলাই
স্বপ্নে ঠকেছি ,কতো ভোলাই
............... চিচিং ফাঁক
হামাগুঁড়ি রেসে হয়েছি লাস্ট
কবিকুলে আমি আউট্কাস্ট
ভবহাটে দেখি হাঁড়ির বার্স্ট
................. জবরজাঁক
এবার সহজে নিজের কথা-
নমো, নমো নমো
এ প্রশ্ন মম
কভু কি পুরন্দর হবে রবিসম?
অথবা , ধরুন ,খুবই করুণ সুরের,
...................
হেভি শীত
গরিব ব্রাহ্মণ যায়
কিছুই নাই তো গায়
শুধু উপবীত!
এবার একেবারে হালের কবিতায় আসার আগে-
সবাই বাগায়
সবাই লাগায়
সকলেরই হবে অন্ত
আজ ঐ শিশু
করিতেছে হিসু
কালই ক্যালাবে দন্ত।
এরপর হালের ফার্স্ট কবিতা-
বড়লোকের ছেঁয়া
করছে টেঁয়া টেঁয়া
বড়লোকের ছেঁয়ি
করছে টেঁয়ি টেঁয়ি
ভোট উপলক্ষে-
আয় মোরা সব গরিব যত
বাঁধব জবর জোট
একসুরে আয় বলব তেড়ে
ভোটমারানি ফোট্
দেশপ্রেমের কবিতাও আছে-
কারগিলে হাড়গিলে
ঠোকরাতে আসে
বাজপেয়ী বাজপাখি
ছেড়ে দিয়ে হাসে।
মাল্টিন্যাশনালের বিরুদ্ধে-
ঢেপসিরা পেপসিতে
লাগায় চুমুক
ইয়া বড় পাছা আর
তত বড় বুক
আবার একই ঢঙে-
বোকাছেলে পুচু পুচু
কোকাকোলা খায়
বোকাচোদা বাপ তার
পয়সা যোগায়।
একটি বিদ্রোহমূলক এবং গরীবদরদী-
বড় লোকের গাড়ির টায়ার
ফুটো করে লাগাও ফায়ার
নজরটুকু রাখবে যেন
আঁচটুকু না লাগে আয়া-র।
বুঝতেই পারছেন "আয়া' এখানে প্রলেতারিয়েতদের প্রতিনিধিমাত্র৷
ডি এসের সাথে সাপলুডো খেলার সময় পুরন্দর লেখে
সাপ বেশী মই কম
দহরম মহরম৷
দিল্লীতে সাধু সেজে কিছু বৈদেশিক মুদ্রা রোজগারের পর পুরন্দর লেখেন
ছিলাম চোদু হলাম সাধু
হতেই দেখি আজব বাঁড়া!
হিপ পকেটে বুক পকেটে
ফাকিং ফরেন নোটের তাড়া!
দিল্লী থেকে ফেরার টাকা যোগাড় করার ধান্ধায় কাঁদতে কাঁদতে
বাঙালির তরে যদি
......... বাঙালি না কাঁদে
চুতিয়া বলিয়া তারে
......... ডাকো ভীমনাদে।
আবার দেখুন মলত্যাগের পদ্ধতিতেও কেমন গরীব-বড়লোক বিভাজন-
চেয়ার পায়খানাতে হাগে বড়লোক
বড়লোক কাগজেতে হেগো পোঁদ মোছে
গরিবেরা মাঠে হাগে, তেড়ে আসে জোঁক
গরিব নালার জলে রোগা পোঁদ ছোঁচে৷
পার্কে বসতে গিয়ে পিঁপড়ে কামড়ানোর সম্ভাবনায় পুরন্দর যে মাস্টারপিসটি লেখে
দু-দুখানি নিতম্ব দুরু দুরু কাঁপে
পিঁপিড়া কামড় দিয়ে যায় কোন ফাঁকে
লাল আছে, ডেঁয়ো আছে, আরো আছে হায়
ঠাকুরের নামে পোঁদ লক কিয়া যায়৷
গতবছর বইমেলায় প্রকাশিত হল "ফ্যাতাড়ুর কুম্ভীপাক'৷ তার থেকে একটি নমুনা৷ কবিতায় প্যাথোজটা খেয়াল করবেন-
একটি ক্লান্ত সিকি
রয়েছে ধনের কাছে
পকেটের কোণে
দু-তিনটে বিড়ি হবে
লাথ মেরে এই ভবে
সেঁটে যাব মানকচু বনে৷
তবে এই বইটা পড়তে গিয়ে দেখলাম যেরকম প্রতিবাদ বা বক্তব্য রাখতে এগুলি ব্যবহার হচ্ছে, তাতে আর সেরকম জোরালো লাগছে না এগুলো৷ "ফ্যাতাড়ুর কুম্ভীপাক' পড়ার আগেই ঘটে গেছে নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুরে পুড়ে আংরা হয়ে গেছে তাপসী মালিক৷ "আমরা-ওরা'র বিভাজন ঢুকে পশ্চিমবঙ্গের ঘরে ঘরে৷ চতুর্দিক অদ্ভুত ঝাপসা ও ঘোলাটে৷ তারমধ্যে এইসব শব্দের ব্যবহার আর প্রতিবাদের তীব্রতা যোগাচ্ছে না, বরং একঘেয়ে ও কখনও কখনও একটু বিরক্তিকর লাগছে৷ যাই হোক, সে তো নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ৷ থাক সেসব কথা, বরং একটা গান শোনেন, সাম্প্রতিক বাংলা ছবি থেকে৷ এটাই এবারে পুজায় হিট গান ছিল৷
কবিতাগুলো আসলে যেখান থেকে চোথা মারলাম
http://www.sachalayatan.com/tdamayanti/28222
হারবার্টের ত্রিকাল দর্শন
[এপিলোগ : ২০০৮ সালের জানুয়ারির কোন এক সন্ধ্যায় আমি ও আমার বন্ধুরা বেমক্কা নিজেদের নাম ভুলে বসলাম ! কেউ কাউকে আর কোন নামে ডাকছিলাম না। আমাদের বোধিতে নতুন নাম খঁচিত হয়ে গিয়েছিল ততক্ষণে: এবার আকিকা ছাড়াই আমাদের নাম হয়ে গেলো হারবার্ট! জাতীয় জাদুঘরে সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে সুমন মুখোপাধ্যায়ের ডেব্যু সিনেমাটা দেখতে গিয়ে এই নব-পরিচয়ের উত্থান_তখন একটা চলচ্চিত্র উৎসব চলছিল, উৎসবের শ'খানেক সিনেমার ভীড়ে এক কোণে দর্শক আকর্ষণের আড়ালে থাকা মুখাজ্জী মশাইয়ের সিনেমাটা আল্টপকা আমাদের অদ্য দর্শনীর জন্য নির্ধারিত হলে আমরা বেশ হালকা চালে সিনেমাটা [শুধু] দেখতে বসেছিলাম। কিন্তু নির্মাতা আমাদের হারবার্ট এর কারবার দর্শনে মাফ না করে ভাসিয়ে নিলেন উজান স্রোতে ।
ঘন্টা দু'য়েক বাদে যখন 'দ্য এন্ড' দেখা গেলো তখন মনে হচ্ছিলো এইটা কি সিনেমা ছিল নাকি আমরা একটা সাইকোডেলিক ট্রিপে ছিলাম! বেশ নেশা-নেশা ঘোর আমেজ মস্তিষ্কের কোষগুলিকে আয়েশি চালে অবশ করে দিচ্ছে, আমার পাতি বুর্জোয়া শুঁয়োপোকাটা কতক্ষণ ধস্তাধস্তি করে আপনা থেকেই খ্যামা দিলে আমরাও বাড়ির পথ না ধরে পথে পথে চাঁদের আলোয় কি জানি খুজতে থাকি কিন্তু পাইনা কিছুই; পাই শুধু মোনাফেকি রাজনৈতিক বাস্তবতা। এর মাঝে হারবার্ট ভ্রমণ আমাদের মগজে এক চিরস্থায়ী নিঃসঙ্গতা-প্রেম-মৃত্যু-ভালবাসার বিবমিষা বোধের বন্দোবস্ত করে দেয়...]
'আনন্দনগর' কোলকাতা বললেই দ্যোতিত হয় বাম আন্দোলন । ইংরেজ খেদাও কর্মসূচী হতে শুরু করে ষাটের দশকের উত্তাল সময় এমনকি সাম্প্রতিককালের নন্দীগ্রামের ঘটনা নগরের এই চরিত্রকে প্রক্ষিপ্ত করে। লেখক অশোক মিত্র বলেন- কোলকাতা ভারত উপমহাদেশের বাম আন্দোলনের সূতিকাগার । হালে এই দ্যোতনাটি ক্ষয়িষ্ণু হলেও সাধারনের মাঝে এই প্রতীকটির প্রচলনই অধিক।
ষাটের দশকের কোলকাতা আর একুশ শতকের কোলকাতার প্রত্ন-মানষিক তফাত চোখে পড়ার মত । কোলকাতা এখন আইটি কোম্পানি আর বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের রমরমা বাজার, মধ্যবিত্তের ঘর হতে খোঁচা দাড়ি মুখের কোন যুবক ঝোলা কাঁধে বেরোয় না আর, কথায় কথায় লালবই থেকে ক্যোট করে না; এখন তারা ঝকঝকে বেশে সাইবার কুলিগিরি আর মার্কিন ঢঙে চোস্ত ইংরেজি বোলচালে সাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
এহেন সামাজিক বাস্তবতায় প্রখ্যাত মঞ্চনাট্য পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায় বেছে নিলেন ১৯৯৭ সনের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত নবারুণ ভট্টাচার্যের 'হারবার্ট' উপন্যাসটি । 'হারবার্ট' হারবার্ট সরকারের ছুতোয় কোলকাতা-জনজীবনের ছাইচাপা, বিগত পাচ দশকের বদলে[পাল্টানোর নয়] যাবার বয়ান হাজির করে।
কোলকাতাকে কেন্দ্র করে সুমন গাঢ় বাদামি[সেপিয়া] ও রঙ্গীন ছবিমালার যে বৃত্তটি রচনা করেছেন তা হারবার্ট সরকার নাম্নী জ্যা এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিয়ে আকস্মিক বদলে যাওয়া [তথাকথিত] আধুনিক কলকাতার সঙ চরিত্রখানি মেলে ধরে । 'হারবার্ট' আমার কাছে ধরা দেয় শিল্পী রশীদ চৌধুরীর আধো-রঙ্গীন ইমেজের ঠাসবুনোটের জটিল ট্যাপেস্ট্রির চেহারায়: যা পাঠে-অবলোকনে দর্শকের মনঃকল্পিত অভ্যস্ত পৃথিবীর আরশ কেপে উঠে কেননা ঐ মূহুর্তমালাগুলি নিয়মিত র্যাশনালিটির প্রতি শুধু তাচ্ছিল্য করে না, আমাদের জ্ঞানকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।
'হারবার্ট' কে?
হারবার্টের পরিচয় কি? সে একজন হাতুড়ে বৈদ্য নাকি জোকার? অপরাধী নাকি কুচক্রী ? নাকি সন্ত্রাসবাদী বা গোলমালকারী ?
অনেকভাবেই হারবার্ট সরকারকে সনাক্ত করার সুযোগ রয়েছে; এতিম হারবার্টের বেড়ে ওঠা দক্ষিন কোলকাতার এক ক্ষয়িষ্ণু অভিজাত পরিবারে। হারবার্টের ডাকসাইটে সিনেমাওয়ালা বাবা পিচ্চি হারবার্টের পয়লা জন্মদিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ধরাধাম ছাড়লে একলা মা হারবার্টকে নিয়ে যৌথ সংসারে কায়ক্লেশে দিন গুজরান করে। কিন্তু চৈত্রের এক দুপুরে মাও খুব জলদি ওপারের ট্রেনে ওঠে পড়ে । এরপর তার সঙ্গী হয় একটা ছোট্ট পেটরা, কাকা-কাকীমার প্রাণান্তকর ফুটফরমাশ, বাড়ির বড় দা ধন্নার জ্বলাতন! বন্ধু বলতে বিনু[তার ছোট কাকার ছেলে, নকশাল্বাদী] । স্কুলের ঝক্কি থেকেও একসময় ছাড়িয়ে দোকানে ফুলটাইম কাজে লাগিয়ে দেয়া হয়। এতসব অযাচিত পরিণতির মধ্যেও বাড়ির চিলেকোঠা, কবুতরগুলিকে খাবার ছিটানো আর ঘুড্ডি ওড়ানোর সুখ হারবার্টকে যাবতীয় কষ্ট থেকে খানিকের মুক্তি দিত। ছেলেবেলা থেকেই হারবার্টের খেয়ালিপনা পাড়ার লোকদের কাছে তাকে ঠাট্টার বস্তুতে পরিণত করেছিল।
হারবার্টের নবুয়্যতপ্রাপ্তি হলে মানে বয়স যখন চল্লিশ, একদিন এলান করে দিল যে প্রয়াত ব্যক্তির সাথে আলাপ করার ঐশ্বরিক ক্ষমতা তার আছে! প্রমাণরূপে, স্বপ্নে পাওয়া পুলিশ এনকাউন্টারে নিহত বিনুর ডায়েরীর হদিস দিলে আস্তপাড়া খানিকের তরে বিস্মিত হলেও পরমূহুর্তেই নিয়মকার বিদ্রুপে মশগুল হয়। কিন্তু, এই ভবিষদ্বাণী যখন ফলে যায়_ রাতারাতি পাড়ায় হারবার্ট সরকার তারকা মর্যাদা অর্জন করে। এবার সে একটি সাইনবোর্ড ঝোলায়— 'মৃতের সাথে আলাপ করা হয়'
এবং বিফলে মূল্যফেরত সহ পরলৌকিক ক্ষমতার চর্চা শুরু করে। এতে টু-পাইস/যশ ভালোই হচ্ছিল। প্রায় বছর তিনেক রমরমা ব্যবসা কাটানোর পর হঠাৎ ইন্টারন্যাশনাল র্যাশনালিস্ট সোসাইটি, কোলকাতা হারবার্টের কন্সাল্ট্যান্সিকে জোচ্চুরি সাবস্ত্য করে _ব্যবসা বন্ধ না করলে পুলিশে দেয়ার হুমকি দিয়ে যায়। যুক্তিবাদীদের হুমকি তার অহমে মারাত্মক চোট পৌছায়; ফলাফল সে রাতেই আত্মহত্যা ।
দক্ষিণ কোলকাতার স্বল্প-পরিচিত হারবার্টের কদর নজিরবিহীন মাত্রায় বেড়ে যায় মৃত্যুর পর, যখন তার শবদেহ চুল্লীতে ঢোকানোর মিনিটপাঁচেকের মধ্যে বিকট বিস্ফোরণে চুল্লীঘর ভষ্মীভূত ও অত্রস্থ জনাদশেক মানুষ আহত হয় ।
স্বাভাবিকভাবেই, দ্বিতীয় প্রতুষ্যে সব কাগজে রটে যায় আধ্যাত্মিক/তান্ত্রিক/ রহস্যপুরুষ হারবার্ট সরকারের গল্প। ঐদিকে আইন-শৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ এটিকে জঙ্গী হামলা মনে করে উচ্চক্ষমতা বিশিষ্ট তদন্তকমিটি মাঠে নামায়। তবে, কেউই ঠাহর করতে পারে নাই সত্য কারণটি; এ বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বিনুর হাতবোমাগুলি- সেই সত্তরের দশকে যখন সময় উত্তাল নকশাল আন্দোলনে, সেরকম এক রাতে পুলিশের হাত থেকে বাচার জন্য বিনু হারবার্টের তোষকের ভেতরে বোমাগুলি লুকিয়ে রেখেছিল, এই কথা হারবার্টের কাছে বিনুর মৃত্যুর বিশ বছর পর পর্যন্ত অনাবিষ্কৃত ছিল। হারবার্ট আত্মহত্যা করে তার তোষকে শুয়ে, তোষকসহ তাকে চুল্লীতে চালান করা হয়।
কিন্তু, এটি কি নিছকই বিস্ফোরণ নাকি কমরেড বিনুদের অতৃপ্ত আত্মার হুশিয়ারি: 'ফুল ফুটুক আর নাইবা ফুটুক বিপ্লব হবে'। দুঃখবিলাসী-ভোগসর্বস্ব এই সচলায়তন ধ্বসে পড়বে চুল্লীঘরটির মত।
আর, সিনেমার গল্প শুরু হয় এখান থেকেই- পর্দায় ভেসে উঠে তদন্তের নামে লাল ফিতার সর্পিল চলন, ফ্ল্যাশব্যাকে উঠে আসে আপন স্বার্থ সম্পর্কে অসচেতন পরোপকারী বাড়ন্ত হারবার্টের মনের গলি-ঘুপচিগুলি যেখানে সে প্রতিনিয়ত একা, বজ্জাত চাচাত ভাই ধন্নার হাতে অপদস্থ কিশোর, তার জীবনের একমাত্র ট্র্যাজি-কমিক ভালোবাসার গল্পের আর অজ্ঞাতসারে উত্তাল '৭০-র দশকে নকশাল আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়ার মুহুর্তগুলি।
পাঠক[দর্শক] আবার ভাববেন না যেন এই সিনেমাটি শুধু হারবার্ট সরকারের জীবনালেখ্য মাত্র- এই ছবি মূলতঃ প্রোটাগনিস্ট চরিত্রের কয়েক দশকের স্মৃতিপরিক্রমার ভেতর দিয়ে প্রাণের শহর কোলকাতার চেপে যাওয়া ইতিহাস, শঠতা, প্রলুব্ধতার গল্পটি বলে যায় ।
জটিলভাবে সম্পর্কিত অসদৃশ অংশসমূহ নিয়ে চমৎকার কুশলতার সাথে সুমন যে বয়ানের বিস্তার করেছেন সেখানে হারবার্ট সরকার যেন 'বিগ গ্র্যান্ড ফাদার ক্লক'-এর পেন্ডুলাম, যা নির্দিষ্ট সরল ছন্দিত স্পন্দনে অনায়াসে কাল ও আকালের মাঝে ভ্রমে এবং এক মূহুর্তের মৃত্যু থেকে অপর মূহুর্তের জন্ম বা একটি ঘটনার সাথে অন্য আরেকটি ক্রিয়ার সাযূজ্য ঘোষণা করে ... ।
হারবার্ট সরকারকে কেউ কেউ উন্মাদ বলতে পারেন; যারা 'উন্মাদ' বলবার পক্ষে তাদের নিকট একটিই মিনতি: আমারা যারা নিজেদের [তথাকথিত] প্রকৃতস্থ দাবি করি তারা ঠিক কতখানি সংবেদনশীল নিজ-নিজ পরিপার্শ্বের প্রেক্ষিতে! হারবার্টকে [কি] উন্মাদ সাবস্ত্য করি আমরা তার সংবেদী আকুতির জন্য, নাকি তার [অ]যৌক্তিক কাজকাম আমাদের মুখস্ত বাস্তবতাকে টিটকারি করে বলে ?
'হারবার্ট' আমাদের জ্ঞানে কুলোয় না এমন কালিক পরিভ্রমণের বা ফ্যান্টাসি রাইডের আয়োজন করে, তাই বলে ঐ পুরাঘটিত অতীত সম্পর্কে আমরা ওয়াকিফহাল নই তা কিন্তু নয় । কারণটা হলো হারবার্টের দিনচর্যা আমাদের অধীত প্রমাণাদি নির্দেশিত 'রিয়েল ট্রুথ'কে সংশয়ী করে; সিনেমাজুড়ে এই সংশয়-উত্তেজনার পারদ হারবার্টের পাগলামোর বিপরীতে ক্রমশই চড়তে থাকে । তবে কি নির্মাতা আমাদের এই চরিত্রের দ্বারা যৌক্তিক-নৈয়ায়িক ইতিহাসকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাচ্ছেন?
প্রকৃতপক্ষে, সিনেমার প্রায় শেষে যখন 'পোস্টমর্ডান' এবং 'ফুকো বলেছেন' টাইপ সংলাপ প্রক্ষিপ্ত হয়, তখন হারবার্টের অলৌকিক প্রেরণাসঞ্জাত উন্মত্ত প্রত্যাখান_ অলৌকিক ক্ষমতার বিদ্যমানতার প্রতি আবার ভেবে দেখার অবকাশ করে দেয়। এক্ষণে, আমরা যদি সত্যজিত রায়ের 'প্রতিদ্বন্দ্বী'(১৯৭০) কে বাংলা সিনেমায় আত্মমাত্রিকতার (সাব্জেক্টিভিটি) সংকট অনুসন্ধানের উৎসমুখ রূপে জ্ঞান করি তবে বলতে হয় যে, 'হারবার্ট' সংকটের সেইউৎসমুখ-কে প্রান্ততক বিস্তৃত করেছে ।
নির্মাণ-শৈলীঃ
সুমন মুখোপাধ্যায়ের নিজস্ব প্রকাশভঙ্গির দরুন টানটান বয়ানের এই সিনেমাটির পরিধি জুড়ে নির্মাণ-শৈলীর ছাপ ছড়িয়ে আছে । যেমন, অতীত ও বর্তমানের ভেদ হেতু সেপিয়া টোন ও টেকনিকালারের ব্যবহার চাতুর্যতার সাথে [রঙ্গীন] বর্তমান ও [ধূসর] অতীতের ফারাকটা নান্দনিক আকারে উপস্থাপন করে ।
সুনিপুণ সম্পাদনার গুণে সিনেমাটি অন্যরকম গীতিময়তা লাভ করেছে । বিশেষ করে জুক্সটাপজিশন ও মন্তাজের অমায়িক ব্যবহার দর্শকের চৈতন্যকে বধির করে দিয়ে মহাবৃত্তের হাওয়া বইয়ে দেয় ।
জুক্সটাপজিশনের প্রসঙ্গে প্রথমেই মনে পড়ে যায় কিশোর হারবার্ট যখন বাড়ির ছাদে বসে কবুতরগুলিকে দানা ছিটাচ্ছে তখন সন্নিধি দৃশ্যে ডিস-এন্টেনার রোপণ একি সাথে সাংস্কৃতিক ক্রান্তিকালকে নির্দেশ করে। ডিস-এন্টেনা রোপিত হওয়ার মধ্যে দিয়ে ছাদটা আর হারবার্টের থাকে না... ঠিক যেভাবে এই মুক্তবাজার অর্থনীতির যুগে বিনিক্ততা বা একান্ততা বলে কিছু অবশিষ্ট নাই ।
আর 'ব্যাটেলশিপ পতেমকিনে'র ঐতিহাসিক ওদেসা স্টেপ যখন মন্তাজের ভিতর দিয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজের সিড়ি হয়ে যায় তখন বিপ্লবের আঁচটা ঠিকই উপলব্ধি করতে পারে সচেতন দর্শকমাত্র ।
পুরা ছবিজুড়েই দেখা যায় সময়ের গলন অর্থাৎ এলোমেলোভাবে এক দৃশ্যের ভেতর দিয়ে আরেক দৃশ্যে আগমন-নির্গমন যদিও দিনশেষে তা জিগ-স পাজলের মত ঠিক ই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছায়।
কুশীলবদের অভিনয় এককথায় দূর্দান্ত। নাম ভূমিকায় সুভাষ মুখাজ্জী প্রায় সিনেমার পর্দা চিবিয়ে খেয়ে ফেলেছেন বলা যায়, বিনু চরিত্রে পরম্ব্রত চ্যাটার্জীর অভিনয় নকশাল যশটা প্রতিফলিত করে আর দারোগার ক্যামিও চরিত্রে গায়ক কবীর সুমনের অভিনয় অন্তত আমাকে 'অ্যাপোকালিপ্স নাউ'(১৯৭৯)-এ মারলোন ব্র্যান্ডোর কর্নেল কুর্টজের ক্যামিও চরিত্রটির কথা মনে করিয়ে দেয় ।
'হারবার্ট'-এর পরতে পরতে ক্ল্যাসিক হলিউড থেকে শুরু করে প্যারালাল ইন্ডিয়ান সিনেমা সহ বিশ্ব চলচ্চিত্রের এন্তার চোথা চোখে পড়ে। চিত্রনাট্যের গড়নটা ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ সিনেমার অনুপ্রেরণা পুষ্ট। তথাপি, এটি স্ব আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিবেশের কাছে সৎ ই থাকে।
সুমন মুখোপাধ্যায় সমন্ধে দু-চার কথাঃ
শৈশবে বাবা অরুণ মুখোপাধ্যায়ের নাটকের দল চেতনার মহড়া ও নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ড্রামা রিভিয়্যু পড়তে পড়তে সুমনের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটতে থাকে, পাশাপাশি হিন্দী সিনেমার দেখার অভ্যেস তাকে সিনেমার প্রবল অনুরাগী করে তোলে।
১৯৮৮তে বিভাস চক্রবর্তীর সাড়াজাগানো মঞ্চনাটক মাধব মালঞ্চী কন্যাতে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে তার দৃশ্যরূপ জগতে পথচলা শুরু হয়। ১৯৯১ সনে নিউইর্কের এশিয়ান কালচারাল কাউন্সিলে থিয়েটার উপর কোর্স করেন এবং কলকাতায় ফেরার পর ক্লাউস মানের মেফিস্টো ও গিরিশ কারনাডের নাগমন্ডলের মত একাধিক সফল দর্শক-সমালোচক নন্দিত নাটক মঞ্চস্থ করেন। পরবর্তীতে তৃতীয় সূত্র নামে নিজ নাট্যদল করেন।
এতকিছুর মধ্যেও সিনেমার অনুরাগ একটুও কমেনি তাই কারিগরী বিদ্যালাভের উদ্দেশ্যে ২০০১ সালে নিউইয়র্ক ফিল্ম অ্যাকাডেমিতে যোগ দেন। যদিও ততদিনে মঞ্চের পাশাপাশি পকেটস্থ হয়েছে বেশকিছু প্রামাণ্যচিত্র, টি.ভি.বিজ্ঞাপন এবং নাসিরুদ্দিন শাহ ও পংকজ কাপুর অভিনীত একটি টি.ভি.ধারাবাহিক নির্মাণের অভিজ্ঞতা ।
ফিল্ম স্কুলের পাঠ চুকিয়ে তিনি প্রথম বানালেন হারবার্ট। থিয়েটার বা সিনেমা সব ক্ষেত্রেই সুমনের কাজে কিছু বিষয়ের পৌনঃপুনিক উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। সুমনে ভাষ্যে-
"রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক সজ্ঞানতা আমার বেড়ে উঠার দিনগুলিতে
অভাবনীয় প্রভাব রেখেছে যা এখন আমার কাজের আবিশ্যিক অনুষঙ্গ ।"
'তিস্তাপারের বৃত্তান্ত'-এর বাঘারু বা 'হারবার্ট'-এর হারবার্ট সরকার বা 'চতুরঙ্গ'-এর দামিনী ; সবক্ষেত্রেই সুমনের লক্ষ্য প্রান্তিক সমাজের চরিত্ররা । প্রাতিষ্ঠানিক সামাজিক সংহিতায় অপাঙক্তেয় মানুষদের চোখে সরাকে ধরা জ্ঞান করার চর্চা সুমনের কাজের অন্যতম ট্রেডমার্ক । সুমনের মতে, প্রান্তিক মানুষদের চোখ দিয়ে দেখামাত্রই প্রচলিত বাস্তবতার একটি ভিন্ন চিত্র পাওয়া যায় ।
আব্বাস কিয়োরস্তামি ও ফাতিহ আকিন-এর সিনেমার ভক্ত সুমনের আগ্রহ অনাড়ম্বর ও আকর্ষণীয় এমন সিনেমার প্রতি যা কারিগরি মানে চকচকে নাও হতে পারে কিন্তু মানবিক; যেটি এক অর্থে তার সিনেমার অন্যতম মাত্রা ।
ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত 'হারবার্ট' চেতনার ভিত নাড়িয়ে দেয়া শৈল্পিকভাবে নির্মিত চলমান ছবিমালার স্থাপত্যকীর্তি যা কোলকাতার জায়মান বাস্তবতার ভেতর দিয়ে আমাদের গভীর হাস্যরস-করুণা-মানবিকতার হদিস দিয়ে যায়।
আমেন ।
হারবার্ট (২০০৮) , ১৪২ মিনিট
পরিচালনা : সুমন মুখোপাধ্যায়
চিত্রনাট্য : নবারুণ ভট্টাচার্য ও সুমন মুখোপাধ্যায়
ডি.ও.পি . : সোমক মুখার্জী
সম্পাদনা : অর্ঘকমল মিত্র
সঙ্গীত : ময়ূখ ভৌমিক
প্রযোজনা : কাজল ভট্টাচার্য
৮মার্চ-১৩মার্চ, ২০১১, মাকাসার, ইন্দোনেশিয়া।
দোহাই
১। Herbert (2008)[ http://www.imdb.com/title/tt1084008/ ]
২। Suman Mukhopaddhay [ http://www.sumanmukhopadhyay.com/ ]
বিভাগ : বই
বিষয়টি শুরু করেছেন : indo
IP Address : 195.10.45.200 Date:18 dic 2005 -- 02:43 AM
Name: indo Mail: Country:
IP Address : 195.10.45.200 Date:18 dic 2005 -- 03:00 AM
সাদা আমি কালো আমি-র পাশাপাশি রাখতে ইচ্ছে হল। নবারুণ তখনো হারবার্ট লিখে ওঠেন নি, ফ্যাৎ ফ্যাৎ সাঁই সাঁইয়ের ত্যাঁদোড় মোহমায়ায় মজে ওঠেনি উড়ুক্কু বাঙ্গালীকুল। মৃত্যু উপত্যকা থেকে অকস্মাৎ গজিয়ে উঠেছে এই বই, বেগুনী মাশরুম ক্লাউড যেমন ঢেকে দেয় কুরুক্ষেত্রের কলকাতা।
দেবতাদের অভিমান ফুরোলে পরে দেওয়ালময় ঘুরে বেড়ায় ধর্মপ্রাণ বুলেটাত্মারা, প্রজাপতিহেন,মল ধরে রাখতে কিঞ্চিৎ অসুবিধে আছে। উপরোনো নখেরা আর তো ফিরবে না শস্যমূলে। যে শীর্ণ শমীবৃক্ষে অস্ত্রাদি রক্ষিত আছিল, যাদবপুরের লালকার মাঠের সেই রণরঙ্গভূমে মাইল মাইল ফ্ল্যাটবাড়ির চাষ শান্তিকল্যাণ হেমন্তবেলায়। মাটির অনেক নীচে ঘুমন্ত অস্ত্রেরা স্বপ্ন দেখে শ্রেণীশত্রুকে লিকুইডেট করার।
একটি অশ্ব ফিরিল না নদীতীরে, বটমূলে।
সন্ধ্যা নামিলা হিমরূপ।
Name: Damayanti Mail: Country:
IP Address : 61.246.78.151 Date:18 Dec 2005 -- 05:39 PM
আহা লেখকের এই বইটা তো পড়ি নাই। দাঁড়াও সামনের সপ্তাহেই আনাচ্ছি। থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু।
আমি অবশ্যি "কাঙাল মালসাট" পেরথমে পড়ি, তারপরে ব্যাকট্রাক করে "বোম্বাচাক"। তারওপরে "হারবার্ট"।
সত্যি এত এত মহতী লেখার তুলনায় জীবনকাল এত ক্ষুদ্র!
Name: Samit Mail: Country:
IP Address : 59.92.140.163 Date:18 Dec 2005 -- 07:56 PM
নবারুণ বাবু ভারী প্রিয় ও মনোরম। কাঙাল ও হার্বার্ট - মাত্র এ দুটিতেই প্রায় রোজ স্বপ্নে এসে দাঁড়ান। যুদ্ধপরিস্থিতি কোন পাবলিকেশন জানাবে ইন্দো?
Name: Damayanti Mail: Country:
IP Address : 61.246.28.9 Date:18 Dec 2005 -- 08:15 PM
প্রকাশক --- প্রতিক্ষণ
মূল্য --- ২৫ টাকা
বইটি বিশ্বায়ন থেকে পাওয়া যাচ্ছে। তবে দাম যা, তাতে শিপিং দিয়ে আনা পোষাবে না। অন্য রাস্তা দেখতে হবে।
Name: Samit Mail: Country:
IP Address : 59.92.130.248 Date:19 Dez 2005 -- 10:45 AM
ধন্যবাদ :)
Name: Tirthankar Mail: Country:
IP Address : 69.180.29.91 Date:20 Dec 2005 -- 07:54 AM
প্রশ্নটা খুবই বোকা বোকা শোনায়, এর উত্তরও অন্য কারোর কাছ থেকে প্রত্যাশা করি না, কিন্তু তাও জিজ্ঞেস করছি - কেন আগে আমি নবারুণ ভট্টাচার্যের নাম শুনিনি? নিশ্চয়ই খুবই লজ্জাজনক ব্যাপার, তাও ইন্দো, শমিত বা দময়ন্তী যদি ওনার বা ওনার বইগুলির কথা আর একটু বিশদে বলো তাহলে ভারী খুশি হব।
Name: indo Mail: Country:
IP Address : 195.10.45.200 Date:20 Dez 2005 -- 04:33 PM
তীর্থঙ্কর,
তার একটা কারণ বোধ হয়, নবারুণের ফাজিল উত্থান যে শ্যামাপূজার রাত্তিরে , তখন তুমি ওদেশে ছিলে। অতএব কিভাবে ঐ রকেট উপমায়িত হাউইবাজিটি বোতলে পুরে তার পেছনে আগুন ধরানো হয় নাসার ছাপানো হ্যান্ডবিলের (যাহাকে ইস্তেহার বলিতেন প্রাচীণ ডোডোপক্ষীকূল) যাবতীয় সতর্কবার্তা-প্রয়োগপদ্ধতি উপেক্ষা করে, তা তোমার জানার কোথা নয়। জানার কথা নয় বুড়ীমা অথবা শিবকাশীর লোক্যাল প্রডাক্ট কিভাবে শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে মঙ্গল অবধি ধেয়ে যায় ও ন্যুডিস্ট কলোনীহীনতার বেদনায় মুহ্যমান হয়ে ফিরে আসে মধুময় এ দ্যুলোকের বুকে।
নবারুণ মহাশ্বেতা ও বিজনের পুত্র। সম্ভবত ইংরেজীর অধ্যাপক। প্রথম প্রকাশিত বই, যদ্দুর জানি, সত্তর দশকে- এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়। একটি কবিতা-সংকলন। তারপরে একটি দীর্ঘ সময় শীতঘুমে ছিলেন এই লেখক ও দেঁড়েল; ফিরে আসেন যুদ্ধপরিস্থিতিতে। অত:পর হারবার্ট, ফ্যাতারুর বোম্বাচাক ও কাঙ্গাল মালসাট ।
হার্বার্ট থেকেই ওঁর লেখালিখি একটি অন্য মোড় নিয়ে এখন এক সদালাপী গালবাদ্যে পরিণত, যা মানুষে হাগু ও হিসি করতে করতে , রাতে ঘুমোবার আগে, ভালোবাসবার আগে খুশী হয়ে করে থাকে ও বালি দিয়ে ঢেকে রাখে। উড়নখুশী এই ফ্যাতাড়ু অন্য সকল ঘুমন্ত শিশু-বৃদ্ধ-যুবা ফ্যাতাড়ুকেই উড়বার উৎসাহ ও রসদ জুগিয়ে থাকেন।
মোটামুটি এই হল সেই আমড়াতলার মোড়, যেখানে নবারুণের দাঁড়িয়ে থাকার কোনো কথা ছিলো না।
তারপরে যাও যেথায় খুশী .....
Name: indo Mail: Country:
IP Address : 195.10.45.200 Date:20 Dec 2005 -- 05:02 PM
যে কথা বলতে ভুলে গেছিলাম-টাটা ইস্পাতের ভাষায় বলে যাই-নবারুণ নাটকও করেন।
একাডেমী যে পেয়েছেন, সে কথা বাহুল্যবোধে আর বলি নি।
Name: r Mail: Country:
IP Address : 202.144.91.204 Date:21 Dec 2005 -- 02:10 PM
নবারুণের মা মহাশ্বেতা দেবীর একটি অল্পপঠিত গল্প- "গুরু", শারদীয়া এক্ষণে প্রকাশিত, পড়লে নবারুণের অনেকটা হালহদিশ পাওয়া যায়।
Name: tan Mail: Country:
IP Address : 131.95.121.251 Date:21 Dec 2005 -- 09:29 PM
রঙ্গন,নবারুণের কাহিনি আরেকটু বলবে? মহাশ্বেতার ন্যাদোশ গরুর গল্প থেকে আরম্ভ করে দোপদি মেঝেনের গল্প অবধি বেশ কিছু পড়লেও নবারুণ একেবারে অচেনা।শুধু পরবাসে ফ্যাতাড়ু নিয়ে একটুখানি পরিচিতি ছাড়া একেবারে ঘোর অমাবস্যায় পড়ে আছি।আলো দেখাও।
Name: vikram Mail: Country: france
IP Address : 147.210.156.39 Date:30 Jan 2006 -- 03:32 PM
আগে মালসাট পরে বোম্বাচাক। পয়লো শুরো হোক হারবার্ট দিয়ে।
তবে ফর তীর্থংকর অ্যান্ড তনু, কবি পুরন্দর ভাটের একটি কবিতার উদ্ধৃতি দেই:
চুতিয়া পৃথিবী
পুরন্দর ভাট
আমার জীবনে নাই কেন কোনো ড্রামা
তাই দিব আমি কার্পাস ক্ষেতে হামা
আমার জীবনে নাই কেন কোনো ড্রিম
টিকটিকি আমি পোকা খাই পাড়ি ডিম
আমার মরনে হয় নাতো হেডলাইন
প্রাসাদগাত্রে মুতিয়া ভাঙিব আইন
......... ইত্যাদি ইত্যাদি
সব শেষে:
এক পা স্বর্গে এক পা নরকে, ঝোলা
একটি কামান দুটি কামানের গোলা।
এটি অ্যালেজেডলি কবি সুইসাইড নোট হিসাবে লেখেন। তারপরে কি হলো জানতে গেলে পেড়ে ফেলুন, পড়ে ফেলুন।
বিক্রম
Name: Somnath Mail: Country:
IP Address : 210.212.137.6 Date:09 May 2006 -- 08:31 PM
নবারুণ, খেলনা নগর, যুদ্ধপরিস্থিতি, হারবার্ট ও মসোলিয়াম পড়ার পরে, বিশেষত: হারবার্ট, ফ্যাতাড়ু ও কাঙাল মালসাট দেখার পরে আবার চোখের পর্দায়। মোস্ট হ্যাপেনিং ব্যপার , আর রানা কি ঋজুলা হয়তো এমনকি রিভিউ ও লিখতে পারে, তবে যুদ্ধপরিস্থিতির বাহবা না দিয়ে কেবল খুন্তখুঁত করছিল।
আশ্চর্য - "লুব্ধক" বলে একটি বই ও লিখেছেন, কেউ জানে? আর ছোটোগল্পগুলো?
Name: Somnath Mail: Country:
IP Address : 210.212.137.6 Date:11 May 2006 -- 07:13 PM
ফ্যাতাড়ু ও চোক্তারে শুধু কুলোলো না, দাঁড়কাক আর বেগম জনসনের ভূত এনেও যেন খামতি খামতি। সুতরাং এবার বনবেড়াল। মানুষের সব বাওয়ালির পোংটামো উল্টোনো বনবেড়াল। পপুলারতম ফিকশনের মসলা জমাতে নবারুণ আর কি কি আনবেন? নাগিন কনসেপ্টের সাপমানুষ? জুনুন কনসেপ্টের বাঘমানুষ? মি: ইণ্ডিয়ার অদৃশ্যমানুষ? মসোলিয়মের শুরুতে তো ভ্যম্পায়ারের ছোঁয়া-ছাপটাও আছে। ডাইভার্সিফায়েড চমকের বাগান খুলে পাঠকের হাতে উঠছেন নবারুণ। গ্লোরিফায়িত খচরামো হামলে গ্রাসে গ্রাসে খিস্তির প্রসাদ - লে লুঠ লে লুঠ। মেরেছো কলসীর কানা, তা'বলে খিস্তি দেবোনা!! সক্কলে মাল খায়, এস্টাবলিশমেন্টের পেছন ফাটিয়ে ফ্রাস্ট্রেশন ওগরায়, এবং শেষতক আমাদের মতো কেলিয়ে না পড়ে হুলুস্থুলু ঘটায়। মদের ভাণ্ড বিশ্রি কাণ্ড! কি প্রকাণ্ড আঁতলামো! নবারুণ এই আঁতলামোর নাকের ওপর পাদেন। আমরা চনমন করে হাসি। সরকার, পুলিশ, বুদ্ধিজীবীর কেৎরে পড়া দেখে - দেখ-কেমন-লাগে ধুঁয়ো তুলি, অন্ত:সলিলা হুর্রা বইতে থাকে দাঁতের দোকানে। বাংলার সঙ্গে চাট, সন্ধ্যের মুখে ভাঁট আর সিপিএম চুলকে লাট। কমিউনিজমের গলিগুঁজি হাতড়ে নবারুণ রেফারেন্স দিতে থাকেন, কখনো মনে হয় মাথার মধ্যে তৈরি করছেন এসব রেফারেন্স। গোদা বানিয়ে ফিকশনের রেফারেন্স ও কল্প-ফিকশনের হাত ধরেছেন যেন, বিশ্বাসের সীমার বাইরে থাকে এ ভাঁটের মুখে শিক্ষিত থিয়োরি। সারা বইয়ে গোটা দশ বারোর বেশিবার রাশ টানেন না নবারুণ, আলতো ভাসিয়ে রাখেন বিন্দাস ও রুখেওঠা মার্জিনাল ক্ষমতাবিদ্রোহ। মসোলিয়মে তাই দেবেশ ও সুমনের নির্দেশিত নাটকের রেফারেন্স ও দেওয়া থাকে : ফ্যাতাড়ু ও কাঙাল মালসাট - এবং বলাই থাকে - ওগুলো না পড়লেও অষ্টরম্ভা, না দেখলেও ছেঁড়া গেল।
তাহলে এই ফ্যাৎড়ামো ছাড়া নবারুণের অস্ত্র কি? বর্ম কই? চানাচুর কই? চাট কই? মাল কই? কোথায় যৌনতা? সময় লাগে। সময় তো মধ্যবিত্ত রাতের বাহুলব্ধ নিশ্চিত নারীবালিসটি নয়, তাই অপেক্ষাও ......
এবং এই আলোচনার এখনো বাইরে দাঁড়িয়ে - যুদ্ধপরিস্থিতি, খেলনা নগর - যে দুটো মাত্র আমি পড়েছি, কবিতা আর ছোটোগল্পগুলোও। ওফ্ !! কলেজস্ট্রীটে গিয়ে ""আউট অফ প্রিন্ট"" শুনতে মাইরি ঝাঁটে দাবানল লেগে যায়।
Name: Somnath Mail: Country:
IP Address : 59.145.225.101 Date:20 May 2006 -- 12:09 PM
যুদ্ধপরিস্থিতি একজন পাগলের গল্প - কিংবা আমাদের। যুদ্ধপরিস্থিতি আমাদের সময়ের গল্প, কিংবা ৭০-এর। এক-একটা মানুষ দু-দুটো সময়ের ভাঁজে বেঁচে থাকে, কিংবা বাকি মানুষেরা একটামাত্র ছোটো সময়বৃত্তে। কেউ পারিপার্শ্বিকের মধ্যে থেকে পৌঁছে যায় অতীতবাস্তবে - দূরের কালীপূজার পটকা ট্রেঞ্চের পাশে শেল বম্বার্টমেন্ট হয়ে যায়, বাস্তব থেকে মায়াবাস্তবে মুভ করে ক্যামেরা, ঝকমকে রঙ্গীন সিনেপট ঝাপসে যেমন । বাগানের কাঁটাতারের মধ্যে দিয়ে সে শরীর গলিয়ে দেয় সীমান্ত পেরনোর তৎপরতায়। রক্তক্ষরা শরীরে চলতে থাকে,ছোটো শিশুটির স্মৃতি, প্রেমিকার স্মৃতি সাথে নিয়ে,আর প্রখর একদা পুলিশটি সিকিউরিটি বাড়াতে থাকে,পেচ্ছাপ করতে গিয়ে ডাবের খোলার দিকে বারংবার গুলি চালায়,যেন আততায়ী - রণজয়, আগের বার যখন পাগলাগারদ থেকে পালিয়েছিল একটা তিনফলা ঘাস নিড়ানি পেটে ঢুকে যাওয়ার সেই অনুভূতি, সেই ভয় কবন্ধের মাতো তাকে গুলি ছুঁড়তে বাধ্য করে, অথচ রণজয় তখন লেকের অপর পাড়ে পুঁতে রাখা বন্দুকগুলো খুঁজছে। তাদের লুকোনো বিপ্লবের হাতিয়ার ও স্বপ্নের উপর দিয়ে মাল্টিস্টোরেড বিল্ডিং উঠে গেছে বহুদিন। ছোটো ছোটো ঘর, চিলতে বারান্দা, একফালি বেঁচে থাকা, একফালি কামড়া-কামড়ি বেঁচে থাকা - এরা সবাই নবারুখকে দিয়ে লিখিয়ে নেয় নিজেদের কথা - এমন নয়, কিন্তু কোনো ছায়াপাত ব্যতিরেকেই এরা পাশ কাটিয়ে যায় কলমের - এমনটাও নয়। আর আছে কমিউনিজম - মার্কস, লেনিন, স্তালিন, মাও, চে, গোটা সোভিয়েত রাশিয়া ও চীন, জার্মাণীর ক্রস-রেফারেন্স, অশান্ত ছাত্র অন্দোলনের কলকাতা - কমিউনিজম তার সমস্ত টেক্সট আর অনুপুঙ্খ নিয়ে ঢুকে পড়ে তার লেখায়,ইতিহাস সামনের সারিতে এসে দাঁড়ায়,আঘাত করে - অথচ কখনো মনে হয় এসব সত্যি? অপ্রকাশের, অপ্রচারের সুযোগে গল্প বানাচ্ছেন না তো নবারুণ? ফিকশন আর রেফারেন্সের সীমানা এভাবেই ঝাপসা হতে থাকে।
Name: dd Mail: Country:
IP Address : 59.93.74.214 Date:20 May 2006 -- 02:15 PM
কখনো কখনো মনে হয় চন্দ্রিল,শ্রীজাত,নবারুন আর এদানীং ওমনাথ - একই লোক।
Name: sumeru Mail: Country:
IP Address : 59.93.196.40 Date:20 May 2006 -- 02:45 PM
কুত্তোদের লইয়া লুব্ধক পড়েন। এককালে শারদিয়া পোত্তিদিনে বারোয়অছিল। গল্পের বইটা ছমপতি আসছী। ডেজ পোকাছন।
পড়ে ফেলেন বাবু-বিবিরা।
Name: b Mail: - Country: -
IP Address : 86.135.121.171 Date:20 May 2006 -- 04:44 PM
আমার ধারণা হার্বার্ট কিনে আর কাঙাল মালসাট কিনে পড়া উচিত।
এই দুই জিনিস দিয়ে পড়া শুরু করে, ঝেড়ে বা কিনে বা ধার করে বাকি সব পড়ে, তার পরে আবার এই দুটো পড়া উচিত।
আর কয়েকটা ছোটো গল্প।
দুটো উপন্যাস সম্পর্কে-ই কিছু কিছু প্রশ্ন থাকা সঙ্কেÄও, এই দুটি ই আমার ব্যক্তিগত মতে নবারুণের সেরা কাজ।
Name: b Mail: - Country: -
IP Address : 86.135.121.171 Date:20 May 2006 -- 04:51 PM
আর একটা কথাও মনে হল। কুন্দেরা ছাড়াও, বুল্গাকভ, ইশ্মাইল কাদারে এঁদের কে পড়ার আগ্রহ বেড়ে যেতে পারে, নবারুণ পড়ার পরে। সেইটে ডাবল লাভ।
কেউ খচে গিয়ে হুলেবেক ও পড়ে ফেলতে পারেন, সে নিয়ন্ত্রন করতে গেলে তো দন্ডবায়স কে খপর করতে হবে!!
নবারুণ সম্পর্কে যে সব প্রশ্ন মনে আছে সে গুলো কখনো করবো, এই টই তেই।
Name: Somnath Mail: Country:
IP Address : 61.14.30.7 Date:19 Dec 2006 -- 11:06 AM
কেউ লিস্ট চাইছিল -
ছোটোগল্পগুলোর মধ্যে দেজ থেকে নবারুণ ভট্টাচার্যের শ্রেষ্ঠ গল্প বের করেছে। কারণ "নবারুণ ভট্টাচার্যের ছোটোগল্প", "হালাল ঝাণ্ডা", "অন্ধ বেড়াল", (আরেকটা কি যেন ছিল) এখন পাওয়া যায় না। "ফ্যাতাড়ুর বোম্বাচাক ও অন্যান্য" পাওয়া যায়।
কবিতার বইগুলো -
পুলিশ করে মানুষ শিকার
এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না
মুখে মেঘের রুমাল বাঁধা।
বাকি সব এখানেই বলা আছে।
Name: r Mail: Country:
IP Address : 61.95.167.91 Date:19 Dec 2006 -- 05:27 PM
"মসোলিয়াম" ভালো লাগে নি। ক্যাওড়ামি ঠিক আছে, রাজনীতির জায়গাটা আস্তে আস্তে ৯। সিকোয়েল কখনই ভালো হয় না শুনেছি, "গডফাদার" ছাড়া। সিকোয়েল বললে পাবলিক খচে যেতে পারে, কিন্তু এটা একধরনের সিকোয়েলই বটে। কাঙাল মালসাট এবং ফ্যাতাড়ুর বোম্বাচাকে থেমে গেলে খুব একটা ক্ষতি হত না।
Name: I Mail: Country:
IP Address : 86.140.163.228 Date:09 Jul 2007 -- 06:35 PM
মসোলিয়াম নিয়া আমারো এক মত। জমে নি।
খেলনানগরও না।
Name: r Mail: Country:
IP Address : 61.95.167.91 Date:09 Jul 2007 -- 06:38 PM
ব 'অটো ও ভোগী" লইয়া মতামত দিব না? এই "অটো" কি সেই "অটো" যেটা নবারুণ শারদীয়া আজকালে লিখেছিল?
Name: sumeru Mail: Country:
IP Address : 59.93.200.191 Date:09 Jul 2007 -- 09:09 PM
স্মৃতি বলছে, অটো বেরিয়েছিল শারদিয়া প্রতিদিনে!
Name: r Mail: Country:
IP Address : 61.95.167.91 Date:10 Jul 2007 -- 11:10 AM
স্মৃতিদেবী ভুল বলেছেন, কারণ কালই মিস মেমরির সাথে কথা হল, আর তারপরে শারদীয়া আজকাল খুলে "অটো" দেখলাম। :-)
Name: Somnath Mail: Country:
IP Address : 59.160.220.131 Date:12 Jun 2008 -- 02:09 PM
"নবারুণ সম্পর্কে যেসব প্রশ্ন মনে আছে" - বোধিদা, লিখে ফ্যালো মাইরি। অনেকদিন হয়ে গেল।
Name: sarathi Mail: Country:
IP Address : 59.160.220.131 Date:12 Jun 2008 -- 02:34 PM
http://www.aajkaal.net/report.php?hidd_report_id=97977
এই খবরটা আজকের
Name: n Mail: Country:
IP Address : 131.95.121.107 Date:13 Jun 2008 -- 05:48 AM
কী সর্বনাশ! ছেলের ভয়ে শেষে পুলিশ পাহারা!
মহাশ্বেতা দেবীর লেখাগুলোর অন্য উচ্চতা। তারসঙ্গে কিছুতেই কেন জানি এই বিশ্রী নবারুণকে মেলাতে পারিনা। যা শুনি লেখাপত্র বিষয়ে।
Name: sarathi Mail: Country:
IP Address : 59.160.220.131 Date:26 Jun 2008 -- 04:27 PM
http://www.sangbadpratidin.in/national.php
দেবীর দ্বিচারিতার আরেকটি নমুনা , নীতিহীনতার নমুনা দেবী এবং সরকার দুপক্ষেরই
Name: S Mail: Country:
IP Address : 202.140.54.29 Date:26 Jun 2008 -- 04:50 PM
দুইখান কোশ্চেন আছে।
১) মহাশ্বেতা দেবী, যিনি ধারাবাহিকভাবে বামবিরোধী বক্তব্য রেখে ...
বামবিরোধী না সিপিএমবিরোধী? বামপন্থার বিরুদ্ধে কথা বলা আর সিপিএমের বিরুদ্ধে কথা বলা দুটো তো এক জিনিস নয়!
২) মিথ্যে বলেছেন কি সত্যি বলেছেন সেটা পরের কথা, কিন্তু সরকারের বিরোধিতা করলে সরকারের কাছে জমি চাওয়া যায় না? আমি পুলিশকে খিস্তি করি, ঘেন্না করি। কিন্তু আমার বাড়িতে চুরি ডাকাতি হলে আমি কি পুলিশের কাছে যাব না?
Name: santanu Mail: Country:
IP Address : 82.112.6.2 Date:26 Jun 2008 -- 05:17 PM
কিন্তু ৮৩ বছর বয়সে উনি জমি নিয়ে কি করবেন? সেখানে বাড়ি বানিয়ে, বাগান করে থাকবেন?
সেলুলয়েডে 'কাঙাল মালসাট'
নবারুনের 'কাঙাল মালসাট' এবার সুমন মুখোপাধ্যায়ের ক্যামেরায়
সুশোভন প্রামাণিক
কলকাতা, জানুয়ারি ১২, ২০১২
কাঙাল মালসাট' প্রকাশিত হয় ২০০৩ সালে। শুরুর পাতায় ছিল মিখাইল বুলগাকভ-এর লাইন, 'পান্ডুলিপিরা পুড়ে যায় না' আর প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে লেখা ছিল 'চলবে'। কিন্তু শেষ পাতায় চমক জাগিয়ে ছিল (চলবে না)। ২০০৫-এ 'তৃতীয় সূত্র' ও 'চেতনা'-র যৌথ প্রযোজনায় সেই নাটক মঞ্চভাষ পায়। নবারুণবাবুর তিনটি ছোট গল্প থেকে সুমন মুখোপাধ্যায়ই তৈরি করেন 'মহানগর@কলকাতা'। এবার নাটকের পরে সেই সুমন মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরেই বড়পর্দায় আসতে চলেছে 'কাঙাল মালসাট'। উপন্যাসের চরিত্র পুরন্দর, ডি.এস, মদন, চোক্তার ভদি, বেচামনি, বেগম জনসন, কমরেড আচার্যরা।
নবারুণ ভট্টাচার্যের হারবার্ট ও কবি পুরন্দর ভাট একই সঙ্গে বাংলা সাহিত্যে ফ্যাতাড়ুদের আবির্ভাব এক চমক জাগিয়েছিল। হারবার্ট মৃতের সঙ্গে কথোপকথনের ব্যবসা করে। যা নেহাতই প্রাতিষ্ঠানিকতা বিরোধী । নবারুন ভট্টাচার্যের উপন্যাস বা গল্পে এক প্রকার আলাদা স্বাদ বা ঝাঁজ থাকে একথা অনস্বীকার্য । ১৯৯৪ সালে লেখা 'হারবার্ট' উপন্যাস একসময় বাংলা সাহিত্যের 'চেনা ভাষার' বদলে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। সেই উপন্যাস সিনেমার পর্দায় ধরা দিয়েছিল পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে। সময় এগিয়েছে 'শ্লীল-অশ্লীলের' এই ভেদাভেদ মুছেছে এখন অনেকটাই...আধুনিক সময়ে টিভির পর্দায় নানা রিয়েলিটি শোতে 'বিপ' শব্দের বহরে বা 'বাইশে শ্রাবণ', 'দিল্লি বেলি'-র মত সিনেমার পর 'গ' আর 'ব' দিয়ে শুরু সব অক্ষর, পরিভাষায় যাকে 'খিস্তি' বলে তা প্রেক্ষাগৃহে শোনা এখন দর্শকদের কাছে নেহাতই জলভাত। এখন এই সাহিত্যকীর্তি পড়ে বা শুনে নতুন প্রজন্মেরও চোখ কপালে উঠে যাওয়ার কথা নয়। যায়ওনি। এমনই এক জগৎ যেখানে চারপাশের সব কিছু অচেনা, অথচ ভীষণ পরিচিত।
সুমনবাবুর সঙ্গে আড্ডায় উঠে আসে এই সিনেমা তৈরির নেপথ্য ভাবনা। শুরুতেই তিনি জানান, এই উপন্যাস তাঁর অত্যন্ত প্রিয়, নাটকের সময় থেকে এর প্রকাশ ভঙ্গির ধরণ নিয়ে তাঁর ভাবনা চলেছে। মাঝে বেশ কিছুদিন ভাবনা থেমে ছিল কিন্তু আবার সেই ভাবনা মাথা চাড়া দেয়। আর এই সময়ে এই সিনেমা তৈরির ক্ষেত্রে একটা আলাদা প্রসঙ্গ থেকেই যায়। পশ্চিমবঙ্গে যে সময় পেরিয়ে গেল তা আক্ষরিক অর্থে 'ঐতিহাসিক'। সেটাকে এক অদ্ভুতভাবে নবারুণবাবু তাঁর ভাষার বুননে ফুটিয়ে তুলেছেন। কিন্তু বার বার নবারুনের গল্পকে বেছে নেন কেন? তাঁর এ যাবৎ তিনটি সিনেমার মধ্যে দুটি নবারুণের গল্প থেকেই। এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'যে ভাবে নবারুণদা রিয়েলিটি কে ট্রিট করেন তাকে বেশ নিজের মত বলেই মনে হয়। সবসময় যেন ওয়াকিং টাইটরোপ বিটউইন রিয়ালিটি অ্যান্ড আনরিয়ালিটি। তাতেও সিনেমার একটা ভাষা তৈরি হয়।
একই সঙ্গে সিনেমা বা মঞ্চে 'আন্ডারগ্রাউন্ড ল্যাংগুয়েজ' বা খিস্তির ব্যবহার নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। এই উপন্যাস বা গল্পগুলো সমাজের সেই প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে যাদের কথার ভাষায় এগুলো অনিবার্য ও অপরিহার্য। সুমন বলেন, 'যে ভাষা এতদিন মান্যতা পেয়েছিল বাবুদের ভাষা বলে, তা ক্রমাগত ভেঙেচুরে যাচ্ছে। কাঙাল মালসাট যে শ্রেণির মানুষের কথা বলে, সেই গল্প বলতে গেলে যে ভাষাকে vehicle করতে হবে তা এমনই। বরং মধ্যবিত্তের মজ্জায় ক্রমাগত এই ভাষার অনুপ্রবেশ ঘটছে। হুতোম প্যাঁচার নকশা থেকে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস প্রত্যেকের লেখায় আছে সেই ধার।বিষয়টি ওভাবে না বলতে পারলে তা 'ল্যাঙ্গুয়েজের পারভার্সন' মাত্র।'
এই সিনেমার গল্পে আরও অনেক চমক বাকি আছে। 'চতুরঙ্গ' ও 'রঞ্জনা আমি আর আসব না'র পর এই ছবিতে কবীর সুমন অভিনয় করছেন এক বিশেষ চরিত্রে। অন্যদের মধ্যে আছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, দিব্যেন্দু (দেব ডি), শান্তিলাল মুখার্জি, বিশ্বজিত চক্রবর্তী, জয়রাজ ভট্টাচার্য, অরুণ মুখোপাধ্যায়, উষসী, কমলিকা আরও অনেকে। তাঁর তিনটি ছবিতেই কবীর সুমন। এক সুমন আর এক সুমনের প্রসঙ্গে বলেন, 'ওঁর চেহারার মধ্যে যে আগুন লুকিয়ে থাকে, তাঁর চোখ, গলা এবং বলা সবই অনন্য। আমাদের সম্পর্কটা বহুদিনের সেই কবীরদার কলকাতা আসা থেকে। ওঁর গান এবং বৌদ্ধিক জগতের সঙ্গে আমার পরিচয় এবং জড়িয়ে থাকা। আমাদের সম্পর্কটা ভারি সুন্দর আর উনি পাশে থাকলে কাজটাও বেশ হয়।'
সিনেমার শুটিং শুরু হচ্ছে চলতি মাসের ২২ তারিখ থেকে। একসঙ্গে কাজ চলবে তাঁর আরও দুই সিনেমা 'শেষের কবিতা' ও হ্যামলেট অবলম্বনে 'প্রিন্স অফ মেটিয়াবুরুজ'-এর। মহানগর@কলকাতায় কাজের পরে সঙ্গীতে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন রূপম ইসলাম।এই সিনেমায় সঙ্গীত আয়োজন নিয়ে কি ভাবছেন তিনি? ময়ুখ ভৌমিক, প্রবুদ্ধ ব্যানার্জি বা দেবজ্যোতি মিশ্রর সঙ্গে সুমন কাজ করেছেন নানা ছবিতে। তিনজনের সঙ্গে কাজ করতেই তিনি স্বচ্ছন্দ।সুমন জানালেন, ময়ুখকে এই সিনেমার জন্যে বলা হলেও এখনও পর্যন্ত কিছু ঠিক হয়নি।
http://webcache.googleusercontent.com/search?q=cache:http://movies.anandabazar.com/node/340
No comments:
Post a Comment