আওয়ামী লীগ নেতার নির্যাতনে শার্শার ৩১ হিন্দু পরিবার ভারত চলে গেছে
বেনাপোলের বাহাদুরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের নির্যাতনে শার্শার শাঁখারীপোতা গ্রামের ৩১ হিন্দু পরিবার দেশত্যাগে বাধ্য হওয়ার ঘটনায় বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছে যশোর জেলা সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যশোর প্রেস ক্লাবের সামনে মুজিব সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে যশোরাঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত কয়েকশ' শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা অংশ গ্রহণ করেন। পরে শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেন। এ সময় যশোর জেলা সনাতন বিদ্যার্থী সংসদের সদস্য অভিজিৎ বৈদ্য ও বিজন চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাজু শিকদার, সদস্য সুমন অধিকারী, জয় ব্যানার্জি, মিন্টু ভদ্র, সোহাগ চক্রবর্তী, সুভ্রত দে, দিপু দাস, মায়া দাস প্রমুখ বিদ্যার্থী উপস্থিত ছিলেন।
প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলা এই মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অভিজিৎ বৈদ্য। তিনি তার বক্তব্যে ভারতে পালিয়ে যাওয়া রবীন্দ্রনাথ রায় সম্পর্কে বলেন, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জের ধরে একদিন সকালে শাঁখারীপোতা গ্রামের রবীন্দ্রনাথ রায়কে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় আওয়ামী লীগ নেতা মফিজুর। পরে রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী ও মেয়ে মফিজুরের পায়ে পড়লে শারীরিক নির্যাতন করে সে যাত্রা তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। আর বলা হয়, ফের এমন কাজ হলে মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবো। পরে জন্মাষ্টমীর দিন বেনাপোলের পাটবাড়ী মন্দিরে যাওয়ার কথা বলে যুবতী মেয়ের ইজ্জত রক্ষার্থে সপরিবারে রীবন্দ্রনাথ ভারতে পালিয়ে যান। এভাবে পরিতোষ দাস, পোপীনাথা দাস, গোডা দাস, শাতীর পাদ্রী, রেপকী দাস, রবেন বিশ্বাস, সাধন বিশ্বাস, সোনা চাঁদ, মনোহার বিশ্বাস, খিতিব চন্দ্র দুলাই ও কানাইসহ ৩১ পরিবার গত ২ বছরের মধ্যে দেশছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। বর্তমানে ৫০ পরিবার চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রসঙ্গত, শাঁখারীপোতা গ্রামে প্রায় ২শ' ঘর জেলে বা বাগদি সম্প্রদায় বসবাস করতো। আওয়ামী লীগ নেতা মফিজুর রহমান ও তার ক্যাডারদের অত্যাচারে ইতিমধ্যে শতাধিক পরিবার গ্রাম ছাড়া হয়েছে। যাদের মধ্যে ৩১ পরিবারের শতাধিক সদস্য জীবন আর মানসম্মান বাঁচাতে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন।
লিখিত বক্তব্য মতে, ধান্যখোলা ও শাঁখারীপোতা গ্রামের মাঝ বরাবর ৯শ' বিঘা জলকর রয়েছে। এটি পূর্বে ১৫১ জেলে পরিচালনা করতো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে মফিজুর রহমান বাহিনী দ্বারা ওই জলকরটি রাতারাতি দখল করে নেন। তখন থেকে কেউ ওই সরকারি বাওড়ে মাছ ধরতে নামলে মফিজুরকে অর্ধেক ভাগ দিতে হয়। আর বিনা অনুমতিতে মাছ ধরতে নামলে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে কারও হাত, কারও পা ভেঙেছে এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এদিকে, মফিজুর রহমানের অত্যাচারে গ্রামের কোন পরিবার ভারতে চলে গেলেও তা মুখ ফুটে বলার উপায় নেই। মফিজুর রহমানের কারণে চলে গেছে বলা হলে অন্যদের ওপর চলে নির্যাতন। যে কারণে বিষয়টি এত দিন তেমন একটা প্রচার পায়নি।
তবে সম্প্রতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জামাল উদ্দিন সন্ত্রাসী মফিজুর রহমান ও তার বাহিনীর সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কথা লিখিতভাবে প্রধানমন্ত্রী, পুলিশের আইজিপি, ডিআইজি, র্যাব সদর দপ্তর ও যশোরের পুলিশ সুপার বরাবর দাখিল করলে ঘটনাটি মিডিয়ার চোখে ধরা পড়ে। আর সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৯শে নভেম্বর জামাল উদ্দিন জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত এবং ৩রা জানুয়ারি বেনাপোলের শাঁখারীপোতা বাজারে সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য তুলে ধরেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত মফিজুর রহমান এসব অভিযোগ অসত্য দাবি করে বলেন, বাওড় দখল করতে একটি মহল তার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হচ্ছে। সমপ্রতি শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়েও এ অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলে মফিজুর দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, 'আমি জীবদ্দশায় একটি চড়ও কাউকে মারিনি। আর সেই আমি কিনা হিন্দুদের নির্যাতন করে তাড়িয়ে দেবো। এ সবই আমার বিরুদ্ধে রটনা।'
এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম শরিফুল আলম বলেন, 'আমি এ রকম ঘটনা মৌখিকভাবে শুনে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। কিন্তু নির্যাতনে চলে গেছে এর প্রমাণ পাইনি। তবে ২০১২ সালে সেখানে ৬৫ হিন্দু পরিবার ছিল। এখন সেখানে ৪৩ পরিবার রয়েছে। জীবিকার সুযোগ-সুবিধাসহ নানা কারণে তারা হয়তো ভারতসহ বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ যদি তার কাছে সংখ্যালঘুদের ভারতে পালিয়ে যাওয়ার তথ্য প্রমাণসহ উপস্থাপন করেন তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।'
যে কারণে দেশ ত্যাগ করছেন শাঁখারীপোতার হিন্দুরা: অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে শার্শার শাঁখারীপোতা গ্রামের হিন্দুদের দেশ ত্যাগের এক লোমহর্ষক কাহিনী।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, চৌদ্দ পুরুষের দখলে থাকা ধান্যখোলা বাওড়ে মাছ ধরতে নেমে বাহাদুরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান ও তার বাহিনীর অব্যাহত নির্যাতন আর ভয়ভীতির কারণে ৩১ হিন্দু পরিবার একে একে দেশত্যাগ করেছেন। এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে তারা মনোকষ্ট নিয়ে দেশত্যাগ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এখন তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে বাওড় পাড়ের আরও দুই শতাধিক মানুষ। গত শনিবার দুপুরে শারীরিক নির্যাতিত ৩৭ জনের উপস্থিতিতে এলাকার অসংখ্য ভুক্তভোগী বেনাপোলের শাঁখারীপোতা বাজারে সংবাদ সম্মেলন করে লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে এ ঘটনার প্রতিকার চান।
শাখারিপোতা বাজার কমিটির সাবেক সভাপতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শেখ জামাল উদ্দিন জানান, ধান্যখোলা গ্রামের প্রয়াত আনোয়ার আলীর ছেলে মফিজুর রহমান বাহাদুরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার নামে বেনাপোল পোর্ট থানায় ৪টি মামলা থাকলেও পুলিশ তাকে আটক করে না। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি বাহিনী গড়ে তুলে বাহাদুরপুর কালিয়ানী ধান্যখোলা বাওড় বিগত সাত বছরের বেশি সময় দখল করে মৎস্যজীবীদের পেটে লাথি মেরে চলেছেন। শুধু তাই নয়, বাওড়ে কেউ মাছ ধরতে নামলে তাকে মারপিট করে নির্যাতন করা হয়। বিশেষ করে বাগদি বা জেলে সম্প্রদায় তার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ৩১টি পরিবার দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানান, এ বিষয়টি সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৯শে নভেম্বর জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবীরকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়। এছাড়া মফিজুর রহমান ও তার বাহিনীর সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কথা লিখে প্রধানমন্ত্রী, পুলিশের আইজিপি, ডিআইজি, র্যাব সদর দপ্তর ও পুলিশ সুপার বরাবর দেয়া হয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি কোন প্রতিকার হয়নি। বরং লেখালেখির কারণে অত্যাচারের মাত্রা বেড়েছে কয়েক গুণে।
স্থানীয়রা বলেন, শাঁখারীপোতা গ্রামে প্রায় ২শ' ঘর বাগদি সম্প্রদায় বসবাস করতেন। এর মধ্যে পরিতোষ দাস, গুপীনাথা দাস, গোডাদাস, শাতীল পাত্র, রেপকী দাস, রবেন বিশ্বাস, সাধন কুমার, সোনাচাঁদ, মনোহার বিশ্বাস, খিতিব চন্দ্র, দুলাই কানাইসহ ৩১ পরিবার দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবীর জানান, মৎস্যজীবীরা এ ধরনের অভিযোগ দিলে তিনি শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি দেখার জন্য বলেছিলেন। তবে ওই আবেদনে হিন্দুদের দেশত্যাগের কথা বলা ছিল কি না মনে পড়ছে না। বিষয়টি তিনি খোঁজ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। তবে অভিযুক্ত মফিজুর রহমান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্থানীয় রাজনৈতিক গ্রুপিংয়ের কারণে তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
http://mzamin.com/details.php?mzamin=NjAwMzg=&s=MTA=
বেনাপোলের বাহাদুরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের নির্যাতনে শার্শার শাঁখারীপোতা গ্রামের ৩১ হিন্দু পরিবার দেশত্যাগে বাধ্য হওয়ার ঘটনায় বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছে যশোর জেলা সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যশোর প্রেস ক্লাবের সামনে মুজিব সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে যশোরাঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত কয়েকশ' শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা অংশ গ্রহণ করেন। পরে শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেন। এ সময় যশোর জেলা সনাতন বিদ্যার্থী সংসদের সদস্য অভিজিৎ বৈদ্য ও বিজন চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাজু শিকদার, সদস্য সুমন অধিকারী, জয় ব্যানার্জি, মিন্টু ভদ্র, সোহাগ চক্রবর্তী, সুভ্রত দে, দিপু দাস, মায়া দাস প্রমুখ বিদ্যার্থী উপস্থিত ছিলেন।
প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলা এই মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অভিজিৎ বৈদ্য। তিনি তার বক্তব্যে ভারতে পালিয়ে যাওয়া রবীন্দ্রনাথ রায় সম্পর্কে বলেন, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জের ধরে একদিন সকালে শাঁখারীপোতা গ্রামের রবীন্দ্রনাথ রায়কে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় আওয়ামী লীগ নেতা মফিজুর। পরে রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী ও মেয়ে মফিজুরের পায়ে পড়লে শারীরিক নির্যাতন করে সে যাত্রা তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। আর বলা হয়, ফের এমন কাজ হলে মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবো। পরে জন্মাষ্টমীর দিন বেনাপোলের পাটবাড়ী মন্দিরে যাওয়ার কথা বলে যুবতী মেয়ের ইজ্জত রক্ষার্থে সপরিবারে রীবন্দ্রনাথ ভারতে পালিয়ে যান। এভাবে পরিতোষ দাস, পোপীনাথা দাস, গোডা দাস, শাতীর পাদ্রী, রেপকী দাস, রবেন বিশ্বাস, সাধন বিশ্বাস, সোনা চাঁদ, মনোহার বিশ্বাস, খিতিব চন্দ্র দুলাই ও কানাইসহ ৩১ পরিবার গত ২ বছরের মধ্যে দেশছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। বর্তমানে ৫০ পরিবার চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রসঙ্গত, শাঁখারীপোতা গ্রামে প্রায় ২শ' ঘর জেলে বা বাগদি সম্প্রদায় বসবাস করতো। আওয়ামী লীগ নেতা মফিজুর রহমান ও তার ক্যাডারদের অত্যাচারে ইতিমধ্যে শতাধিক পরিবার গ্রাম ছাড়া হয়েছে। যাদের মধ্যে ৩১ পরিবারের শতাধিক সদস্য জীবন আর মানসম্মান বাঁচাতে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন।
লিখিত বক্তব্য মতে, ধান্যখোলা ও শাঁখারীপোতা গ্রামের মাঝ বরাবর ৯শ' বিঘা জলকর রয়েছে। এটি পূর্বে ১৫১ জেলে পরিচালনা করতো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে মফিজুর রহমান বাহিনী দ্বারা ওই জলকরটি রাতারাতি দখল করে নেন। তখন থেকে কেউ ওই সরকারি বাওড়ে মাছ ধরতে নামলে মফিজুরকে অর্ধেক ভাগ দিতে হয়। আর বিনা অনুমতিতে মাছ ধরতে নামলে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে কারও হাত, কারও পা ভেঙেছে এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এদিকে, মফিজুর রহমানের অত্যাচারে গ্রামের কোন পরিবার ভারতে চলে গেলেও তা মুখ ফুটে বলার উপায় নেই। মফিজুর রহমানের কারণে চলে গেছে বলা হলে অন্যদের ওপর চলে নির্যাতন। যে কারণে বিষয়টি এত দিন তেমন একটা প্রচার পায়নি।
তবে সম্প্রতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জামাল উদ্দিন সন্ত্রাসী মফিজুর রহমান ও তার বাহিনীর সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কথা লিখিতভাবে প্রধানমন্ত্রী, পুলিশের আইজিপি, ডিআইজি, র্যাব সদর দপ্তর ও যশোরের পুলিশ সুপার বরাবর দাখিল করলে ঘটনাটি মিডিয়ার চোখে ধরা পড়ে। আর সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৯শে নভেম্বর জামাল উদ্দিন জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত এবং ৩রা জানুয়ারি বেনাপোলের শাঁখারীপোতা বাজারে সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য তুলে ধরেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত মফিজুর রহমান এসব অভিযোগ অসত্য দাবি করে বলেন, বাওড় দখল করতে একটি মহল তার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হচ্ছে। সমপ্রতি শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়েও এ অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলে মফিজুর দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, 'আমি জীবদ্দশায় একটি চড়ও কাউকে মারিনি। আর সেই আমি কিনা হিন্দুদের নির্যাতন করে তাড়িয়ে দেবো। এ সবই আমার বিরুদ্ধে রটনা।'
এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম শরিফুল আলম বলেন, 'আমি এ রকম ঘটনা মৌখিকভাবে শুনে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। কিন্তু নির্যাতনে চলে গেছে এর প্রমাণ পাইনি। তবে ২০১২ সালে সেখানে ৬৫ হিন্দু পরিবার ছিল। এখন সেখানে ৪৩ পরিবার রয়েছে। জীবিকার সুযোগ-সুবিধাসহ নানা কারণে তারা হয়তো ভারতসহ বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ যদি তার কাছে সংখ্যালঘুদের ভারতে পালিয়ে যাওয়ার তথ্য প্রমাণসহ উপস্থাপন করেন তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।'
যে কারণে দেশ ত্যাগ করছেন শাঁখারীপোতার হিন্দুরা: অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে শার্শার শাঁখারীপোতা গ্রামের হিন্দুদের দেশ ত্যাগের এক লোমহর্ষক কাহিনী।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, চৌদ্দ পুরুষের দখলে থাকা ধান্যখোলা বাওড়ে মাছ ধরতে নেমে বাহাদুরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান ও তার বাহিনীর অব্যাহত নির্যাতন আর ভয়ভীতির কারণে ৩১ হিন্দু পরিবার একে একে দেশত্যাগ করেছেন। এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে তারা মনোকষ্ট নিয়ে দেশত্যাগ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এখন তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে বাওড় পাড়ের আরও দুই শতাধিক মানুষ। গত শনিবার দুপুরে শারীরিক নির্যাতিত ৩৭ জনের উপস্থিতিতে এলাকার অসংখ্য ভুক্তভোগী বেনাপোলের শাঁখারীপোতা বাজারে সংবাদ সম্মেলন করে লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে এ ঘটনার প্রতিকার চান।
শাখারিপোতা বাজার কমিটির সাবেক সভাপতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শেখ জামাল উদ্দিন জানান, ধান্যখোলা গ্রামের প্রয়াত আনোয়ার আলীর ছেলে মফিজুর রহমান বাহাদুরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার নামে বেনাপোল পোর্ট থানায় ৪টি মামলা থাকলেও পুলিশ তাকে আটক করে না। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি বাহিনী গড়ে তুলে বাহাদুরপুর কালিয়ানী ধান্যখোলা বাওড় বিগত সাত বছরের বেশি সময় দখল করে মৎস্যজীবীদের পেটে লাথি মেরে চলেছেন। শুধু তাই নয়, বাওড়ে কেউ মাছ ধরতে নামলে তাকে মারপিট করে নির্যাতন করা হয়। বিশেষ করে বাগদি বা জেলে সম্প্রদায় তার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ৩১টি পরিবার দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানান, এ বিষয়টি সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৯শে নভেম্বর জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবীরকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়। এছাড়া মফিজুর রহমান ও তার বাহিনীর সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কথা লিখে প্রধানমন্ত্রী, পুলিশের আইজিপি, ডিআইজি, র্যাব সদর দপ্তর ও পুলিশ সুপার বরাবর দেয়া হয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি কোন প্রতিকার হয়নি। বরং লেখালেখির কারণে অত্যাচারের মাত্রা বেড়েছে কয়েক গুণে।
স্থানীয়রা বলেন, শাঁখারীপোতা গ্রামে প্রায় ২শ' ঘর বাগদি সম্প্রদায় বসবাস করতেন। এর মধ্যে পরিতোষ দাস, গুপীনাথা দাস, গোডাদাস, শাতীল পাত্র, রেপকী দাস, রবেন বিশ্বাস, সাধন কুমার, সোনাচাঁদ, মনোহার বিশ্বাস, খিতিব চন্দ্র, দুলাই কানাইসহ ৩১ পরিবার দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবীর জানান, মৎস্যজীবীরা এ ধরনের অভিযোগ দিলে তিনি শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি দেখার জন্য বলেছিলেন। তবে ওই আবেদনে হিন্দুদের দেশত্যাগের কথা বলা ছিল কি না মনে পড়ছে না। বিষয়টি তিনি খোঁজ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। তবে অভিযুক্ত মফিজুর রহমান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্থানীয় রাজনৈতিক গ্রুপিংয়ের কারণে তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
http://mzamin.com/details.php?mzamin=NjAwMzg=&s=MTA=
No comments:
Post a Comment