Hindutva regime of corporate racial mind control now makes a demon of Tipu Sultan after invoking Godse to Kill Gandhi again and again and doing to make India an AKHAND MAHBHARAT!
Naya Digant,the Bangladesh Daily publishes a very relevant article quoting Indian media reports and it would help us to understand how the Hindutva is going to make a hell lose again across the border.
The Holocaust has to continue,Thanks to the Lotus harvesting at such a large scale!
Palash Biswas
এবার টিপু সুলতানের চরিত্র হননের পালা
নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতে হিন্দুত্ববাদীরা নতুন নতুন সাম্প্রদায়িক কাণ্ডকীর্তি নিয়ে হাজির হচ্ছে। ওরা এখন ব্যস্ত ভারতকে তাদের স্বপ্নের 'হিন্দুরাষ্ট্র' হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। এ জন্য মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের জোর করে হিন্দু বানানোর তথাকথিত 'ঘর ওয়াপসি' কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজ দৃশ্যমান, যা ভারতে প্রবল সমালেচনার মুখে পড়েছে।
এরা মহাত্মা গান্ধীর আততায়ী নথুরাম গডসেকে মহান হিন্দু জাতীয়তাবাদী হিসেবে গান্ধীর বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দেয়ার নানা পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছে। এরা ঘটা করে নথুরাম গডসের জন্মদিন পালন করছে। জাতীয় পর্যায়ে তাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তার বিশাল মূর্তি বানানোর জন্য সরকারের কাছে উপযুক্ত জায়গা দাবি করেছে। গান্ধীর চেয়ে নথুরাম গডসে এদের কাছে অধিকতর মর্যাদাপূর্ণ। কারণ গান্ধী ছিলেন 'ইন্ডিয়ান ন্যাশন' গড়ার পক্ষে, আর হিন্দুত্ববাদী নথুরাম ছিলেন 'হিন্দু ন্যাশন' গড়ার পক্ষে।
এ দিকে ২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা দেন, এখন থেকে প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বরে পলিত হবে 'গুড গভার্নেন্স ডে'। কারণ এই দিনটি হিন্দু জাতীয়তাবাদী মদনমোহন মালব্যের ও অটলবিহারী বাজপেয়ির জন্মদিন। এ ঘোষণার পর পর স্কুলগুলোতে সার্কুলার পাঠানো হয় ২৫ ডিসেম্বরের পাবলিক হলিডে বাতিল করে এ দিনে স্কুলে এসে ছাত্রছাত্রীরা যেন নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করে। সরকারি অফিসেও নোটিশ পাঠানো হয় অফিস খোলা রেখে একইভাবে নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করতে। অথচ ভারত স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ২৫ ডিসেম্বর ছিল খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বড়দিন হিসেবে একটি সাধারণ ছুটির দিন। মোদি সরকারের এ পদক্ষেপের ফলে এই প্রথম ভারতের খ্রিষ্টান সম্প্রদায় বড় দিনের সাধারণ ছুটি থেকে বঞ্চিত হলো। ২০১৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর দিনটি ছিল মোদি সরকার আমলের প্রথম বড়দিন। এই ছুটি বাতিল হলে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের একটি প্রতিনিধিদল মোদির সাথে দেখা করেন। তারা মোদির কাছে নিরাপত্তা দাবি করলে তিনি বলেন, প্রত্যেক ইস্যুতে ভূমিকা তার কাজ নয়।
উল্লেখ্য, মোদি তার স্কুলজীবন থেকেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ তথা আরএসএসের সদস্য ছিলেন। আরএসএসের আরো কয়েকটি সহযোগী সংগঠন রয়েছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টিও (বিজেপি) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আরএসএস ও এর সব সহযোগী সংগঠনকে একত্রে বলা হয় সঙ্ঘ পরিবার, যার মুখ্য আদর্শ হিন্দু জাতীয়তাবাদ বা হিন্দুত্ব। এর ভিত্তিতে এদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হিন্দু মহাভারত গঠন।
অতি সম্প্রতি এরা মাঠে নেমেছে আরেক এজেন্ডা হাতে নিয়ে : 'লাভ গডসে, হেইট টিপু সুলতান'। এবার এরা চরিত্রহননে নেমেছে 'মহীশুরের বাঘ' বলে খ্যাত রূপকথাসম অনন্য দেশপ্রেমিক টিপু সুলতানের (২০ নভেম্বর ১৭৫০Ñ৪ মে ১৭৯৯)। ব্রিটিশদের সাথে শৌর্য-বীর্যের সাথে লড়াই করে যে কয়জন ভারতীয় রাজন্য যুদ্ধক্ষেত্রেই শহীদ হয়েছেন তাদের মধ্যে টিপু সুলতান অন্যতম। উপনিবেশবাদী ব্রিটিশদের সাথে তিনি যুদ্ধ করতে করতে শ্রীরঙ্গপটমের যুদ্ধক্ষেত্রেই শহীদ হন। তার ত্যাগের উদাহরণ থেকে উজ্জীবিত হয়েই ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতার সূর্যসৈনিকেরা তার শাহাদতের ৫৮ বছর পর সূচনা করেছিলেন ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লব। আমরা অনেকেই জানি না, ব্রিটিশ সৈন্যদের সাথে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছিল তাদের সন্তানেরাও।
কিন্তু আজ হিন্দুত্ব ব্রিগেডের নেতারা উঠেপড়ে লেগেছেন তার চরিত্রহননে। তার চরিত্রে কলঙ্ক লেপনের তাৎক্ষণিক কারণ কর্ণাটকের কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার চায় টিপুজয়ন্তি তথা টিপু সুলতানের জন্মবার্ষিকী পালন করতে। এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াহ (Siddaramaiah) এ ব্যাপারে ঘোষণাও দিয়েছেন। ইতিহাসবিদ অধ্যাপক বি শেখ আলীর লেখা বই টিপু সুলতান : অ্যা ক্রুসেডার অব চেঞ্জ -এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এই ঘোষণা দেন।
টিপু সুলতান ছিলেন একজন শাসক, বিজ্ঞজন, সৈনিক ও কবি। হিন্দু-মুসলিম ঐক্য গড়ে তোলায় প্রয়াসী অনন্য এক নেতা। তিনি আনন্দ পেতেন উদ্ভাবনায়। বলা হয়ে থাকে, তিনি ছিলেন প্রথম যুদ্ধ-রকেটের উদ্ভাবক। এই উদ্ভাবনার জন্য ভারত গর্ব করতে পারে। ভারত গর্ব করতে পারত শূন্য (০) আবিষ্কারের বিষয়টি নিয়ে। কিন্তু তা না করে এই কংগ্রেসে হিন্দুয়ায়ন চলেছে ভারতীয় বিজ্ঞানেরও। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে এর প্রতিফলন দেখা গেছে। এতে বলা হয়, গণেশের হাতির মতো মাথা আর মানুষের মতো দেহ প্রমাণ করে ভারতই প্লাস্টিক সার্জারির সূচনা করে। আসলে এই উদ্ভট দাবিটি গত অক্টোবরেই মোদির মুখ থেকে শোনা গিয়েছিল।
এই বিজ্ঞান কংগ্রেসে আরো বলা হয়, সব বিজ্ঞানই নাকি বেদে আছে। বেদের যুগে ভারতে বিমান প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছিল। ঋষিরা নাকি গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে উড়ে বেড়াতেন বিমানে চড়ে। বলা হয় বৈদিক গণিত নাকি উন্নতির শীর্ষে পৌঁছেছিল। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে, ২০১০ সালে হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিত গণিতবিদদের বিশ্ব সম্মেলনে গণিতের অধ্যাপক এম এস লঘুনাথের মন্তব্য। তখন তিনি বলেছিলেন, 'বৈদিক গণিত কি অমূল্য রতন? বিশ্বসেরা? আসলে বৈদিক গণিতের অনেকটাই কিন্তু 'ব্যাগ অব ট্রিকস'। চালাকিনির্ভর গণনাপদ্ধতি। গুণভাগের উন্নত কৌশল। আসল গণিত নয়।' এবারের ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে বিজ্ঞানের হিন্দুয়ায়নের যে অপপ্রয়াস চলেছে, তা নিয়ে ভারতে চলছে রীতিমতো হইচই।
টিপু সুলতান অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন ফরাসি বিপ্লব থেকে। একজন শাসক হলেও তিনি নিজের পরিচয় দিতেন একজন নাগরিক হিসেবে। অনন্য এই স্বাধীনতাকামী তার প্রাসাদে রোপণ করেছিলেন 'লিবার্টি' গাছ। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, টিপু সুলতান ব্রিটিশদের ষড়যন্ত্র পরিকল্পনা ধরতে পেরেছিলেন। সে জন্য তিনি সচেষ্ট ছিলেন স্থানীয় শাসকদের মধ্যে ধর্মনির্বিশেষে ঐক্য গড়ে তুলতে। এমন কি ব্রিটিশদের আধিপত্য ও প্রভুত্ববাদী ষড়যন্ত্রের অবসান ঘটানোর জন্য তিনি ফরাসি, তুর্কি ও আফগানদের সাথে যোগাযোগ গড়ে তুলতে চেষ্টা করেন। তার সুপরিকল্পিত উদ্যোগ ও কৌশল ব্যবহার করে তিনি দুইবার ব্রিটিশদের পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
১৭৯১ সালে মারাঠা বাহিনী হামলা চালায় শ্রীঙ্গেরি শঙ্করাচার্য মঠ ও মন্দিরে। এরা মঠের মূল্যবান জিনিসপত্র লুণ্ঠন করে। অনেককে হত্যাও করে। তখন তৎকালীন শঙ্করাচার্য সাহায্য প্রার্থনা করে টিপু সুলতানের কাছে বার্তা পাঠান। টিপু সুলতান সাথে সাথে আসফকে আদেশ দেন মঠ ও মন্দিরে সহায়তা দিতে। কানাড়া ভাষায় লেখা অন্তত ৩০টি চিঠি বিনিময় হয় সুলতান ও শঙ্করাচার্যের মধ্যে। ১৯১৬ সালে এসব চিঠি মহীশুরের আর্কিওলজি ডিরেক্টর আবিষ্কার করেন। মারাঠাদের এই আক্রমণে টিপু সুলতান ক্ষোভ প্রকাশ করেন তার একটি পত্রে একটি কবিতাও লিখেন, যার সরল অর্থ : 'যারা একটি পবিত্র স্থানের বিরুদ্ধে এই অপকর্ম করেছে, তাদেরকে অদূর ভবিষ্যতে এই কলিযুগে এর পরিণামফল ভোগ করতে হবে।'
কিন্তু যখন এমন একজন ব্যক্তির জন্মদিন পালনের প্রস্তাব ঘোষণ করলেন কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী, তখন রাজ্যজুড়ে আরএসএস জন্ম দিলো নতুন এক বিতর্কের। সে রাজ্যর প্রধান বিরোধী দল বিজেপি এই প্রস্তাবকে 'ভোট কালেকশন এক্সারসাইজ' বলে অভিহিত করল। এই দলের একজন সিনিয়র নেতা টিপু সলতানকে 'টাইরেন্ট' বলে উল্লেখ করে সরকারের এই উদ্যোগের ব্যাপারে প্রশ্ন তোলেন। তাদের আরেক নেতা ডি এইচ শঙ্করমূর্তি টিপুকে 'কানাড়া-বিরোধী' বলে উল্লেখ করেন। তা ছাড়া তিনি আরো বলেন, টিপু সুলতান কানাড়িগা নন। তিনি এমন মিথ্যে দাবিও তোলেন, টিপু সুলতান কানাড়া ভাষা প্রতিস্থাপন করেছিলেন।
অথচ টিপু সুলতানের মহীশুরে ফার্সি ভাষার পাশাপাশি কানাড়া ভাষা সরকারি ভাষা ছিল। স্মরণ করা যেতে পারে, ডি এইচ শঙ্করমূর্তি শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে একসময় ঘোষণা করেছিলেন কানাড়ার ইতিহাস থেকে সুলতানের নাম বাদ দিতে হবে। তখন সমাজের বিভিন্ন মহল থেকে তার এ বক্তব্যের প্রবল সমালোচনা এসেছিল। ফলে তখন তার এই উদ্যোগ বাতিল হয়ে যায়।
স্মরণ করা দরকার, গত বছর কর্ণাটক সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল, টিপু সুলতানকে প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে সম্মান জানানো হবে একটি দৃশ্য রূপায়ণের মাধ্যমে।
সিদ্ধান্তটি হিন্দুত্ব ব্রিগেডকে ক্ষুব্ধ করে। বিষয়টি তাদের আরো ক্ষুব্ধ করে তোলে যখন কেন্দ্রীয় সরকার গভীরভাবে ভাবছিল টিপু সুলতানের নামানুসারে একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দেয়ার কথা। তখন দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শ্রীরঙ্গপটমে একটি নন-রিলিজিয়াস সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করার। এই শ্রীরঙ্গপটমেই টিপু সুলতান শহীদ হয়েছিলেন। দুই বছর আগে বিজেপির এক নেতা নির্লজ্জভাবে টিপু সুলতানকে ব্রিটিশদের সাথে তুলনা করেন এবং তাকে ব্রিটিশদের মতোই এক 'বিদেশী' বলে আখ্যায়িত করেন।
কেন বিজেপি টিপুকে ঘৃণা করতে পছন্দ করে? তাদের টিপুবিরোধিতার ভিত্তিই বা কী? সে বিবেচনায় যাওয়ার আগে জানা দরকার এদের ইতিহাস বিকৃতির বিষয়। এদের ডিভাইড অ্যান্ড রুল নীতি অনেকটা মিলে যায় ব্রিটিশদের ডিভাইড অ্যন্ড রুল নীতির সাথে। এ ক্ষেত্রে ১৯৭৭ সালে রাজ্যসভায় প্রফেসর বি এন পান্ডের দেয়া বক্তব্য প্রসঙ্গত উল্লেখ্য। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক বি এন পান্ডে পরবর্তী সময়ে উরিষ্যার গভর্নর হয়েছিলেন। তিনি তার বক্তব্যে তার সেই ১৯২৮ সালের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছিলেন।
তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেনÑ তখন তিনি এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক। একদিন কিছু ছাত্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতের অধ্যাপক হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর লেখা একটি বই নিয়ে তার কাছে এলো। বইটিতে অধ্যাপক শাস্ত্রী উল্লেখ করেছেন, টিপু সুলতান তিন হাজার ব্রাহ্মণকে বলেন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে, তা না হলে তাদের হত্যা করা হবে। তখন এই ব্রাহ্মণেরা মুসলমান না হয়ে আত্মহত্যা করেন। এই লেখা পড়ে অধ্যাপক বি এন পান্ডে হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে জানতে চান, তিনি যা লিখেছেন তার ভিত্তি কী? এ তথ্যের উৎস কী? প্রফেসর শাস্ত্রী ফেরত চিঠিতে উল্লেখ করেন, এর তথ্যসূত্র মহীশুর গেজেটিয়ার। এর পর প্রফেসর পান্ডে মহীশুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক শ্রীকান্তিয়ার কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চান, মহীশুর গেজেটে কি এ কথা উল্লেখ আছে যে, টিপু সুলতান তিন হাজার ব্রাহ্মণকে মুসলমান বানাতে চেয়েছিলেন? জবাবি চিঠিতে অধ্যাপক শ্রীকান্তিয়া লিখে জানান, এটি পুরোপুরি অসত্য। তিনি এ বিষয় নিয়ে গবেষণার কাজ করেছেন এবং মহীশুর গেজেটে এ ধরনের কোনো উল্লেখ নেই। বরং সত্য সংস্করণটি ঠিক এর উল্টো। টিপু সুলতান ১৫৬টি মন্দিরে বার্ষিক মঞ্জুরি দিতেন। আর এই মঞ্জুরির অর্থ পাঠাতেন শঙ্করাচার্যের মাধ্যমে। (Page 2, Brittlebank, Kate (1999). Tipu Sultan's Search for Legitimacy. Delhi: Oxford University Press. ISBN 978-0-19-563977-3) ।
এটি দুঃখজনক, ১৯৯০-এর দশকে এসে আমরা উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের যেভাবে দেখি টিপু সুলতানের চরিত্র হনন করতে, ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশদেরও আমরা দেখেছি টিপুর চরিত্রে সে ধরনের কলঙ্ক লেপনের অপপ্রয়াস চালাতে।
কেউ যদি টিপু সুলতানের জীবনকাহিনী গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন তবে দেখতে পাবেন, কার্কপেট্রিক এবং উইলক্সের মতো ব্রিটিশ লেখকেরা ছিলেন অতি মাত্রায় টিপুবিরোধী। আসলে এরা প্রচুর সময় ব্যয় করেছেন টিপু সুলতানকে একজন 'টাইরেন্ট' হিসেবে উপস্থাপন করতে, আর ব্রিটিশদের উপস্থাপন করতে 'লিবারেটরস' হিসেবে। ব্রিটলব্যাংক তার সাম্প্রতিক এক বইয়ে উল্লেখ করেছেন, উইলক্স ও কার্কপেট্রিক উভয়েই টিপু সুলতানবিরোধী যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। এ দু'জনেরই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল লর্ড কর্নওয়ালিস ও ওয়েলেসলির প্রশাসনের সাথে।
গভীর পর্যবেক্ষণে গেলে দেখা যাবে, উপনিবেশবাদী ও সাম্প্রদায়িক ইতিহাসবিদেরা ব্যবহার করেছেন তাদের নিজেদের স্বার্থে। জেমস মিল তার বই দ্য হিস্ট্রি অব ব্রিটিশ ইন্ডিয়ায় ভারতীয় ইতিহাসকে ভাগ করেছেন তিনটি কালে : হিন্দু, মুসলিম ও ব্রিটিশ। এই সমস্যাকর বৈশিষ্ট্যায়নের মাধ্যমে কার্যত অস্বীকার করা হয়েছে ভারতে বৌদ্ধ, জৈন ও অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর ভূমিকা ও অবদানকে। এ বইতে ভারতীয় ইতিহাস বিভাজনের সময় সতর্কতার সাথে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে খ্রিষ্টানদেরও। জনৈক মজুমদারের লেখা ভারতীয় ইতিহাস প্রকাশ করেছে ভারতীয় বিদ্যাভবন। সেখানে রিভাইভালিজম ও কমিউনালিজমকে প্রমোট করার লক্ষ্য নিয়ে সর্বোচ্চ জায়গা দেয়া হয়েছে 'হিন্দু পিরিয়ড'কে। উপনিবেশবাদী ইতিহাসবিদেরা এমন একটি বিষয় প্রতিষ্ঠা করতে প্রয়াসী ছিল যে, ভারতে মুসলমানেরা 'ফরেনার্স' এবং হিন্দুরা 'ইন্ডিজেনিয়াস'।
স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে লেখা ইতিহাস উপনিবেশবাদী লেখকদের ইতিহাসেরই ধারাবাহিকতা। আর সেটা হচ্ছে : 'দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান পাস্ট'। আরএসএস ও এর আইডোলগেরা আজকে ব্যস্তসমস্ত 'গ্রেটার ইন্ডিয়া' তথা এক 'হিন্দু মহাভারত' নামের মিথের বাস্তবায়নের পথ-আপথ খোলার সন্ধানে।
প্রফেসর আর এন ঝা'র অভিমতÑ আরএসএসের মুসলিম-বিরোধী মনোভাবের আকারটা এসেছে এইচ এম এলিয়ট ও জন ডাউসনের মতো উপনিবেশবাদী ইতিহাসবিদদের কাছ থেকে। এরা সঙ্কলন করেছেন 'দ্য হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া অ্যাজ টোল্ড বাই দেয়ার ওউন হিস্টোরিয়ানস'। এরা নিন্দা করেছেন মুসলমানদের এ ধারণা দিয়ে যে, এরা মন্দির ধ্বংস করেছে এবং হিন্দুদের হয়রানির শিকারে পরিণত করেছে। এলিয়টদের এই সূত্রায়নের আসল লক্ষ্য ঊনবিংশ শতাব্দীর মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা প্রবিষ্ট করা। এর মাধ্যমে ভারতীয়দের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা। 'ডিভাইড অ্যান্ড রুল' নীতির বাস্তবায়নের পথ পরিষ্কার করা। ব্রিটিশেরা তাদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ হাসিলের জন্য যা যা করেছিল তা এখন ইতিহাসের অংশ।
সবাই ভালো করে জানেন, এরা ভারতবাসীর স্বাধীনতা আন্দোলনকে বলত মিউটিনি, অর্থাৎ বিদ্রোহ। আমাদের বীরদের এরা চিত্রিত করত ভিলেন হিসেবে। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বলত সন্ত্রাসী, জবরদখলকারী।
আরএসএস ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সম্মানিত করার বদলে হিন্দুত্ববাদী ধ্যানধারণা নিয়ে আজ যা করছে তা আজকের বৃহত্তর ভারতের জাতীয় ঐক্য বিনাশেরই নামান্তর। সে জন্য এরা টিপু সুলতানের চরিত্র হননে নামবে, এটাই স্বাভাবিক। হতে পারে টিপু সুলতানের ওপর এই আক্রমণ করে, তার চরিত্রবিকৃতি ঘটিয়ে এরা তার উপনিবেশবিরোধী বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা ভারতবাসীর মন থেকে ভুলিয়ে দিতে চায়। কারণ ভারতের মানুষের কাছে এমন তথ্যপ্রমাণ ভালোভাবেই আছে যে, আরএসএসের প্রতিষ্ঠাতা কেশব বালিরাম হেডগিওয়ার ও এর আরেক মুখ্য আইডোলগ গোলওয়াকার আরএসএস মেম্বারদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন ব্রিটিশবিরোধী অভিযানে অংশ না নিতে।
এদের কাছে আরএসএসের আরেক সম্মানীয়জন বিনায়ক দামোদর সাভারকার ছিলেন তাদের চেয়ে আরেক ধাপ এগিয়ে। তিনি ১৯৪২ সালের দিকে ভারতীয় হিন্দুদের ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীতে যোগ দেয়ার তাগিদও দিয়েছিলেন। তখন 'কুইট ইন্ডিয়া; আন্দোলন অনেকটা তুঙ্গে, যা ব্রিটিশদের জন্য বড় ধরনের এক চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। অপর দিকে সুভাষ বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজ তখন মরণকামড় নিয়ে হাজির। আসলে তখন সাভারকার শাসকদের সহায়তায় ভারতজুড়ে সফর করে জনসভা করে যাচ্ছিলেন এবং চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন 'হিন্দুয়াইজ দ্য মিলিটারি, মিলিটারাইজ দ্য হিন্দুইজম' স্লোগানের আওতায় হিন্দুদের উদ্বুদ্ধ করছিলেন ব্রিটিশ বাহিনীতে যোগ দিতে। এটি স্পষ্টÑ যখন চূড়ান্ত সময় উপনিবেশবিরোধী লড়াইয়ের, তখনো আরএসএস তা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখে।
এই জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হিন্দু মহাসভার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট কমলেশ তেওয়ারি বলেছেন 'We plan to lay the foundation stone of a temple for Akhand Bharat Mata and Godseji on January 30, 2015. We also plan a big congregation of people where the ashes of Godseji, currently kept in Pune, will be brought to this temple in Sitapur. We are working towards creating a Hindu Rashtra and an undivided Bharat is our dream. We will immerse his ashes only after his dream has been realised.'
(http://indiatoday.intoday.in/story/godse-temple-hindu-group-gandhi-killer-nathuram-ghar-wapsi-akhil-bharat-mahasabha/1/408811.html)
'টিপুকে ঘৃণা কর' সিনড্রোম এখন প্রবলভাবে দেখা দিয়েছে আরএসএস ও সহযোগী সব সংগঠনের মধ্যে। অপর দিকে জোরদার হচ্ছে এদের গান্ধীর হত্যাকারী নথুরাম গডেসেকে উচ্চ প্রশংসিতজনে প্রতিষ্ঠিত করার প্রক্রিয়াও। ভারতের জনগণ এ পর্যন্ত নথুরাম গডসেকে একজন চরম হিন্দুত্ববাদী বলেই জেনে আসছে, যিনি হত্যা করেছিলেন মহাত্মা গান্ধীকে। খুব বেশি সময় আগে নয়, বিজেপি এমপি সাক্ষী মহারাজ ব্যাপক এক বিতর্কের জন্ম দেন এই বলে যে, গডসে একজন জাতীয়তাবাদী ও দেশপ্রেমিক। গত অক্টোবরে আরএসএসের এক মালয়ম মুখপাত্র বলেন, নথুরাম গডসের উচিত ছিল প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরলাল নেহরুকে হত্যা করা, গান্ধীকে নয়।
মোদি আমলের এই ভারতে এরই মধ্যে দেখা গেছে কার্যকর হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরকরণ, বড়দিনের সরকারি সাধারণ ছুটি বাতিল এবং টিপুকে ঘৃণার চোখে দেখা ও নথুরাম গডসেকে ভালোবাসার প্রক্রিয়া। এসবের বহিঃপ্রকাশ ভারত ও বিশ্ববাসীর মনে আজ নানা প্রশ্ন। ভারতে কি জওয়াহেরলাল নেহরু, মহাত্মা গান্ধী কিংবা টিপু সুলতানেরা তাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় সম্মানের স্থান হারাতে বসেছেন? সে জায়গা কি দখল করবেন নথুরাম গডসে ও এমনি আরো কেউ। ভারত কি হারাবে এর দীর্ঘ দিনের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র? কী হবে ভবিষ্যৎ ভারতের গণতন্ত্রের চরিত্র? সেখানে কি চলবে হিন্দুত্ববাদীদের তথাকথিত অখণ্ড হিন্দু মহাভারত? এসব প্রশ্নের জন্য আমাদের থাকতে হবে সময়ের অপেক্ষায়।
http://www.dailynayadiganta.com/details.php?nayadiganta=MTA0MjU5&s=Nw%3D%3D
নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতে হিন্দুত্ববাদীরা নতুন নতুন সাম্প্রদায়িক কাণ্ডকীর্তি নিয়ে হাজির হচ্ছে। ওরা এখন ব্যস্ত ভারতকে তাদের স্বপ্নের 'হিন্দুরাষ্ট্র' হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। এ জন্য মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের জোর করে হিন্দু বানানোর তথাকথিত 'ঘর ওয়াপসি' কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজ দৃশ্যমান, যা ভারতে প্রবল সমালেচনার মুখে পড়েছে।
এরা মহাত্মা গান্ধীর আততায়ী নথুরাম গডসেকে মহান হিন্দু জাতীয়তাবাদী হিসেবে গান্ধীর বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দেয়ার নানা পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছে। এরা ঘটা করে নথুরাম গডসের জন্মদিন পালন করছে। জাতীয় পর্যায়ে তাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তার বিশাল মূর্তি বানানোর জন্য সরকারের কাছে উপযুক্ত জায়গা দাবি করেছে। গান্ধীর চেয়ে নথুরাম গডসে এদের কাছে অধিকতর মর্যাদাপূর্ণ। কারণ গান্ধী ছিলেন 'ইন্ডিয়ান ন্যাশন' গড়ার পক্ষে, আর হিন্দুত্ববাদী নথুরাম ছিলেন 'হিন্দু ন্যাশন' গড়ার পক্ষে।
এ দিকে ২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা দেন, এখন থেকে প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বরে পলিত হবে 'গুড গভার্নেন্স ডে'। কারণ এই দিনটি হিন্দু জাতীয়তাবাদী মদনমোহন মালব্যের ও অটলবিহারী বাজপেয়ির জন্মদিন। এ ঘোষণার পর পর স্কুলগুলোতে সার্কুলার পাঠানো হয় ২৫ ডিসেম্বরের পাবলিক হলিডে বাতিল করে এ দিনে স্কুলে এসে ছাত্রছাত্রীরা যেন নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করে। সরকারি অফিসেও নোটিশ পাঠানো হয় অফিস খোলা রেখে একইভাবে নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করতে। অথচ ভারত স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ২৫ ডিসেম্বর ছিল খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বড়দিন হিসেবে একটি সাধারণ ছুটির দিন। মোদি সরকারের এ পদক্ষেপের ফলে এই প্রথম ভারতের খ্রিষ্টান সম্প্রদায় বড় দিনের সাধারণ ছুটি থেকে বঞ্চিত হলো। ২০১৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর দিনটি ছিল মোদি সরকার আমলের প্রথম বড়দিন। এই ছুটি বাতিল হলে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের একটি প্রতিনিধিদল মোদির সাথে দেখা করেন। তারা মোদির কাছে নিরাপত্তা দাবি করলে তিনি বলেন, প্রত্যেক ইস্যুতে ভূমিকা তার কাজ নয়।
উল্লেখ্য, মোদি তার স্কুলজীবন থেকেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ তথা আরএসএসের সদস্য ছিলেন। আরএসএসের আরো কয়েকটি সহযোগী সংগঠন রয়েছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টিও (বিজেপি) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আরএসএস ও এর সব সহযোগী সংগঠনকে একত্রে বলা হয় সঙ্ঘ পরিবার, যার মুখ্য আদর্শ হিন্দু জাতীয়তাবাদ বা হিন্দুত্ব। এর ভিত্তিতে এদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হিন্দু মহাভারত গঠন।
অতি সম্প্রতি এরা মাঠে নেমেছে আরেক এজেন্ডা হাতে নিয়ে : 'লাভ গডসে, হেইট টিপু সুলতান'। এবার এরা চরিত্রহননে নেমেছে 'মহীশুরের বাঘ' বলে খ্যাত রূপকথাসম অনন্য দেশপ্রেমিক টিপু সুলতানের (২০ নভেম্বর ১৭৫০Ñ৪ মে ১৭৯৯)। ব্রিটিশদের সাথে শৌর্য-বীর্যের সাথে লড়াই করে যে কয়জন ভারতীয় রাজন্য যুদ্ধক্ষেত্রেই শহীদ হয়েছেন তাদের মধ্যে টিপু সুলতান অন্যতম। উপনিবেশবাদী ব্রিটিশদের সাথে তিনি যুদ্ধ করতে করতে শ্রীরঙ্গপটমের যুদ্ধক্ষেত্রেই শহীদ হন। তার ত্যাগের উদাহরণ থেকে উজ্জীবিত হয়েই ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতার সূর্যসৈনিকেরা তার শাহাদতের ৫৮ বছর পর সূচনা করেছিলেন ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লব। আমরা অনেকেই জানি না, ব্রিটিশ সৈন্যদের সাথে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছিল তাদের সন্তানেরাও।
কিন্তু আজ হিন্দুত্ব ব্রিগেডের নেতারা উঠেপড়ে লেগেছেন তার চরিত্রহননে। তার চরিত্রে কলঙ্ক লেপনের তাৎক্ষণিক কারণ কর্ণাটকের কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার চায় টিপুজয়ন্তি তথা টিপু সুলতানের জন্মবার্ষিকী পালন করতে। এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াহ (Siddaramaiah) এ ব্যাপারে ঘোষণাও দিয়েছেন। ইতিহাসবিদ অধ্যাপক বি শেখ আলীর লেখা বই টিপু সুলতান : অ্যা ক্রুসেডার অব চেঞ্জ -এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এই ঘোষণা দেন।
টিপু সুলতান ছিলেন একজন শাসক, বিজ্ঞজন, সৈনিক ও কবি। হিন্দু-মুসলিম ঐক্য গড়ে তোলায় প্রয়াসী অনন্য এক নেতা। তিনি আনন্দ পেতেন উদ্ভাবনায়। বলা হয়ে থাকে, তিনি ছিলেন প্রথম যুদ্ধ-রকেটের উদ্ভাবক। এই উদ্ভাবনার জন্য ভারত গর্ব করতে পারে। ভারত গর্ব করতে পারত শূন্য (০) আবিষ্কারের বিষয়টি নিয়ে। কিন্তু তা না করে এই কংগ্রেসে হিন্দুয়ায়ন চলেছে ভারতীয় বিজ্ঞানেরও। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে এর প্রতিফলন দেখা গেছে। এতে বলা হয়, গণেশের হাতির মতো মাথা আর মানুষের মতো দেহ প্রমাণ করে ভারতই প্লাস্টিক সার্জারির সূচনা করে। আসলে এই উদ্ভট দাবিটি গত অক্টোবরেই মোদির মুখ থেকে শোনা গিয়েছিল।
এই বিজ্ঞান কংগ্রেসে আরো বলা হয়, সব বিজ্ঞানই নাকি বেদে আছে। বেদের যুগে ভারতে বিমান প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছিল। ঋষিরা নাকি গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে উড়ে বেড়াতেন বিমানে চড়ে। বলা হয় বৈদিক গণিত নাকি উন্নতির শীর্ষে পৌঁছেছিল। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে, ২০১০ সালে হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিত গণিতবিদদের বিশ্ব সম্মেলনে গণিতের অধ্যাপক এম এস লঘুনাথের মন্তব্য। তখন তিনি বলেছিলেন, 'বৈদিক গণিত কি অমূল্য রতন? বিশ্বসেরা? আসলে বৈদিক গণিতের অনেকটাই কিন্তু 'ব্যাগ অব ট্রিকস'। চালাকিনির্ভর গণনাপদ্ধতি। গুণভাগের উন্নত কৌশল। আসল গণিত নয়।' এবারের ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে বিজ্ঞানের হিন্দুয়ায়নের যে অপপ্রয়াস চলেছে, তা নিয়ে ভারতে চলছে রীতিমতো হইচই।
টিপু সুলতান অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন ফরাসি বিপ্লব থেকে। একজন শাসক হলেও তিনি নিজের পরিচয় দিতেন একজন নাগরিক হিসেবে। অনন্য এই স্বাধীনতাকামী তার প্রাসাদে রোপণ করেছিলেন 'লিবার্টি' গাছ। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, টিপু সুলতান ব্রিটিশদের ষড়যন্ত্র পরিকল্পনা ধরতে পেরেছিলেন। সে জন্য তিনি সচেষ্ট ছিলেন স্থানীয় শাসকদের মধ্যে ধর্মনির্বিশেষে ঐক্য গড়ে তুলতে। এমন কি ব্রিটিশদের আধিপত্য ও প্রভুত্ববাদী ষড়যন্ত্রের অবসান ঘটানোর জন্য তিনি ফরাসি, তুর্কি ও আফগানদের সাথে যোগাযোগ গড়ে তুলতে চেষ্টা করেন। তার সুপরিকল্পিত উদ্যোগ ও কৌশল ব্যবহার করে তিনি দুইবার ব্রিটিশদের পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
১৭৯১ সালে মারাঠা বাহিনী হামলা চালায় শ্রীঙ্গেরি শঙ্করাচার্য মঠ ও মন্দিরে। এরা মঠের মূল্যবান জিনিসপত্র লুণ্ঠন করে। অনেককে হত্যাও করে। তখন তৎকালীন শঙ্করাচার্য সাহায্য প্রার্থনা করে টিপু সুলতানের কাছে বার্তা পাঠান। টিপু সুলতান সাথে সাথে আসফকে আদেশ দেন মঠ ও মন্দিরে সহায়তা দিতে। কানাড়া ভাষায় লেখা অন্তত ৩০টি চিঠি বিনিময় হয় সুলতান ও শঙ্করাচার্যের মধ্যে। ১৯১৬ সালে এসব চিঠি মহীশুরের আর্কিওলজি ডিরেক্টর আবিষ্কার করেন। মারাঠাদের এই আক্রমণে টিপু সুলতান ক্ষোভ প্রকাশ করেন তার একটি পত্রে একটি কবিতাও লিখেন, যার সরল অর্থ : 'যারা একটি পবিত্র স্থানের বিরুদ্ধে এই অপকর্ম করেছে, তাদেরকে অদূর ভবিষ্যতে এই কলিযুগে এর পরিণামফল ভোগ করতে হবে।'
কিন্তু যখন এমন একজন ব্যক্তির জন্মদিন পালনের প্রস্তাব ঘোষণ করলেন কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী, তখন রাজ্যজুড়ে আরএসএস জন্ম দিলো নতুন এক বিতর্কের। সে রাজ্যর প্রধান বিরোধী দল বিজেপি এই প্রস্তাবকে 'ভোট কালেকশন এক্সারসাইজ' বলে অভিহিত করল। এই দলের একজন সিনিয়র নেতা টিপু সলতানকে 'টাইরেন্ট' বলে উল্লেখ করে সরকারের এই উদ্যোগের ব্যাপারে প্রশ্ন তোলেন। তাদের আরেক নেতা ডি এইচ শঙ্করমূর্তি টিপুকে 'কানাড়া-বিরোধী' বলে উল্লেখ করেন। তা ছাড়া তিনি আরো বলেন, টিপু সুলতান কানাড়িগা নন। তিনি এমন মিথ্যে দাবিও তোলেন, টিপু সুলতান কানাড়া ভাষা প্রতিস্থাপন করেছিলেন।
অথচ টিপু সুলতানের মহীশুরে ফার্সি ভাষার পাশাপাশি কানাড়া ভাষা সরকারি ভাষা ছিল। স্মরণ করা যেতে পারে, ডি এইচ শঙ্করমূর্তি শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে একসময় ঘোষণা করেছিলেন কানাড়ার ইতিহাস থেকে সুলতানের নাম বাদ দিতে হবে। তখন সমাজের বিভিন্ন মহল থেকে তার এ বক্তব্যের প্রবল সমালোচনা এসেছিল। ফলে তখন তার এই উদ্যোগ বাতিল হয়ে যায়।
স্মরণ করা দরকার, গত বছর কর্ণাটক সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল, টিপু সুলতানকে প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে সম্মান জানানো হবে একটি দৃশ্য রূপায়ণের মাধ্যমে।
সিদ্ধান্তটি হিন্দুত্ব ব্রিগেডকে ক্ষুব্ধ করে। বিষয়টি তাদের আরো ক্ষুব্ধ করে তোলে যখন কেন্দ্রীয় সরকার গভীরভাবে ভাবছিল টিপু সুলতানের নামানুসারে একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দেয়ার কথা। তখন দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শ্রীরঙ্গপটমে একটি নন-রিলিজিয়াস সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করার। এই শ্রীরঙ্গপটমেই টিপু সুলতান শহীদ হয়েছিলেন। দুই বছর আগে বিজেপির এক নেতা নির্লজ্জভাবে টিপু সুলতানকে ব্রিটিশদের সাথে তুলনা করেন এবং তাকে ব্রিটিশদের মতোই এক 'বিদেশী' বলে আখ্যায়িত করেন।
কেন বিজেপি টিপুকে ঘৃণা করতে পছন্দ করে? তাদের টিপুবিরোধিতার ভিত্তিই বা কী? সে বিবেচনায় যাওয়ার আগে জানা দরকার এদের ইতিহাস বিকৃতির বিষয়। এদের ডিভাইড অ্যান্ড রুল নীতি অনেকটা মিলে যায় ব্রিটিশদের ডিভাইড অ্যন্ড রুল নীতির সাথে। এ ক্ষেত্রে ১৯৭৭ সালে রাজ্যসভায় প্রফেসর বি এন পান্ডের দেয়া বক্তব্য প্রসঙ্গত উল্লেখ্য। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক বি এন পান্ডে পরবর্তী সময়ে উরিষ্যার গভর্নর হয়েছিলেন। তিনি তার বক্তব্যে তার সেই ১৯২৮ সালের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছিলেন।
তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেনÑ তখন তিনি এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক। একদিন কিছু ছাত্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতের অধ্যাপক হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর লেখা একটি বই নিয়ে তার কাছে এলো। বইটিতে অধ্যাপক শাস্ত্রী উল্লেখ করেছেন, টিপু সুলতান তিন হাজার ব্রাহ্মণকে বলেন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে, তা না হলে তাদের হত্যা করা হবে। তখন এই ব্রাহ্মণেরা মুসলমান না হয়ে আত্মহত্যা করেন। এই লেখা পড়ে অধ্যাপক বি এন পান্ডে হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে জানতে চান, তিনি যা লিখেছেন তার ভিত্তি কী? এ তথ্যের উৎস কী? প্রফেসর শাস্ত্রী ফেরত চিঠিতে উল্লেখ করেন, এর তথ্যসূত্র মহীশুর গেজেটিয়ার। এর পর প্রফেসর পান্ডে মহীশুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক শ্রীকান্তিয়ার কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চান, মহীশুর গেজেটে কি এ কথা উল্লেখ আছে যে, টিপু সুলতান তিন হাজার ব্রাহ্মণকে মুসলমান বানাতে চেয়েছিলেন? জবাবি চিঠিতে অধ্যাপক শ্রীকান্তিয়া লিখে জানান, এটি পুরোপুরি অসত্য। তিনি এ বিষয় নিয়ে গবেষণার কাজ করেছেন এবং মহীশুর গেজেটে এ ধরনের কোনো উল্লেখ নেই। বরং সত্য সংস্করণটি ঠিক এর উল্টো। টিপু সুলতান ১৫৬টি মন্দিরে বার্ষিক মঞ্জুরি দিতেন। আর এই মঞ্জুরির অর্থ পাঠাতেন শঙ্করাচার্যের মাধ্যমে। (Page 2, Brittlebank, Kate (1999). Tipu Sultan's Search for Legitimacy. Delhi: Oxford University Press. ISBN 978-0-19-563977-3) ।
এটি দুঃখজনক, ১৯৯০-এর দশকে এসে আমরা উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের যেভাবে দেখি টিপু সুলতানের চরিত্র হনন করতে, ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশদেরও আমরা দেখেছি টিপুর চরিত্রে সে ধরনের কলঙ্ক লেপনের অপপ্রয়াস চালাতে।
কেউ যদি টিপু সুলতানের জীবনকাহিনী গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন তবে দেখতে পাবেন, কার্কপেট্রিক এবং উইলক্সের মতো ব্রিটিশ লেখকেরা ছিলেন অতি মাত্রায় টিপুবিরোধী। আসলে এরা প্রচুর সময় ব্যয় করেছেন টিপু সুলতানকে একজন 'টাইরেন্ট' হিসেবে উপস্থাপন করতে, আর ব্রিটিশদের উপস্থাপন করতে 'লিবারেটরস' হিসেবে। ব্রিটলব্যাংক তার সাম্প্রতিক এক বইয়ে উল্লেখ করেছেন, উইলক্স ও কার্কপেট্রিক উভয়েই টিপু সুলতানবিরোধী যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। এ দু'জনেরই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল লর্ড কর্নওয়ালিস ও ওয়েলেসলির প্রশাসনের সাথে।
গভীর পর্যবেক্ষণে গেলে দেখা যাবে, উপনিবেশবাদী ও সাম্প্রদায়িক ইতিহাসবিদেরা ব্যবহার করেছেন তাদের নিজেদের স্বার্থে। জেমস মিল তার বই দ্য হিস্ট্রি অব ব্রিটিশ ইন্ডিয়ায় ভারতীয় ইতিহাসকে ভাগ করেছেন তিনটি কালে : হিন্দু, মুসলিম ও ব্রিটিশ। এই সমস্যাকর বৈশিষ্ট্যায়নের মাধ্যমে কার্যত অস্বীকার করা হয়েছে ভারতে বৌদ্ধ, জৈন ও অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর ভূমিকা ও অবদানকে। এ বইতে ভারতীয় ইতিহাস বিভাজনের সময় সতর্কতার সাথে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে খ্রিষ্টানদেরও। জনৈক মজুমদারের লেখা ভারতীয় ইতিহাস প্রকাশ করেছে ভারতীয় বিদ্যাভবন। সেখানে রিভাইভালিজম ও কমিউনালিজমকে প্রমোট করার লক্ষ্য নিয়ে সর্বোচ্চ জায়গা দেয়া হয়েছে 'হিন্দু পিরিয়ড'কে। উপনিবেশবাদী ইতিহাসবিদেরা এমন একটি বিষয় প্রতিষ্ঠা করতে প্রয়াসী ছিল যে, ভারতে মুসলমানেরা 'ফরেনার্স' এবং হিন্দুরা 'ইন্ডিজেনিয়াস'।
স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে লেখা ইতিহাস উপনিবেশবাদী লেখকদের ইতিহাসেরই ধারাবাহিকতা। আর সেটা হচ্ছে : 'দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান পাস্ট'। আরএসএস ও এর আইডোলগেরা আজকে ব্যস্তসমস্ত 'গ্রেটার ইন্ডিয়া' তথা এক 'হিন্দু মহাভারত' নামের মিথের বাস্তবায়নের পথ-আপথ খোলার সন্ধানে।
প্রফেসর আর এন ঝা'র অভিমতÑ আরএসএসের মুসলিম-বিরোধী মনোভাবের আকারটা এসেছে এইচ এম এলিয়ট ও জন ডাউসনের মতো উপনিবেশবাদী ইতিহাসবিদদের কাছ থেকে। এরা সঙ্কলন করেছেন 'দ্য হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া অ্যাজ টোল্ড বাই দেয়ার ওউন হিস্টোরিয়ানস'। এরা নিন্দা করেছেন মুসলমানদের এ ধারণা দিয়ে যে, এরা মন্দির ধ্বংস করেছে এবং হিন্দুদের হয়রানির শিকারে পরিণত করেছে। এলিয়টদের এই সূত্রায়নের আসল লক্ষ্য ঊনবিংশ শতাব্দীর মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা প্রবিষ্ট করা। এর মাধ্যমে ভারতীয়দের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা। 'ডিভাইড অ্যান্ড রুল' নীতির বাস্তবায়নের পথ পরিষ্কার করা। ব্রিটিশেরা তাদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ হাসিলের জন্য যা যা করেছিল তা এখন ইতিহাসের অংশ।
সবাই ভালো করে জানেন, এরা ভারতবাসীর স্বাধীনতা আন্দোলনকে বলত মিউটিনি, অর্থাৎ বিদ্রোহ। আমাদের বীরদের এরা চিত্রিত করত ভিলেন হিসেবে। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বলত সন্ত্রাসী, জবরদখলকারী।
আরএসএস ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সম্মানিত করার বদলে হিন্দুত্ববাদী ধ্যানধারণা নিয়ে আজ যা করছে তা আজকের বৃহত্তর ভারতের জাতীয় ঐক্য বিনাশেরই নামান্তর। সে জন্য এরা টিপু সুলতানের চরিত্র হননে নামবে, এটাই স্বাভাবিক। হতে পারে টিপু সুলতানের ওপর এই আক্রমণ করে, তার চরিত্রবিকৃতি ঘটিয়ে এরা তার উপনিবেশবিরোধী বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা ভারতবাসীর মন থেকে ভুলিয়ে দিতে চায়। কারণ ভারতের মানুষের কাছে এমন তথ্যপ্রমাণ ভালোভাবেই আছে যে, আরএসএসের প্রতিষ্ঠাতা কেশব বালিরাম হেডগিওয়ার ও এর আরেক মুখ্য আইডোলগ গোলওয়াকার আরএসএস মেম্বারদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন ব্রিটিশবিরোধী অভিযানে অংশ না নিতে।
এদের কাছে আরএসএসের আরেক সম্মানীয়জন বিনায়ক দামোদর সাভারকার ছিলেন তাদের চেয়ে আরেক ধাপ এগিয়ে। তিনি ১৯৪২ সালের দিকে ভারতীয় হিন্দুদের ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীতে যোগ দেয়ার তাগিদও দিয়েছিলেন। তখন 'কুইট ইন্ডিয়া; আন্দোলন অনেকটা তুঙ্গে, যা ব্রিটিশদের জন্য বড় ধরনের এক চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। অপর দিকে সুভাষ বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজ তখন মরণকামড় নিয়ে হাজির। আসলে তখন সাভারকার শাসকদের সহায়তায় ভারতজুড়ে সফর করে জনসভা করে যাচ্ছিলেন এবং চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন 'হিন্দুয়াইজ দ্য মিলিটারি, মিলিটারাইজ দ্য হিন্দুইজম' স্লোগানের আওতায় হিন্দুদের উদ্বুদ্ধ করছিলেন ব্রিটিশ বাহিনীতে যোগ দিতে। এটি স্পষ্টÑ যখন চূড়ান্ত সময় উপনিবেশবিরোধী লড়াইয়ের, তখনো আরএসএস তা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখে।
এই জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হিন্দু মহাসভার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট কমলেশ তেওয়ারি বলেছেন 'We plan to lay the foundation stone of a temple for Akhand Bharat Mata and Godseji on January 30, 2015. We also plan a big congregation of people where the ashes of Godseji, currently kept in Pune, will be brought to this temple in Sitapur. We are working towards creating a Hindu Rashtra and an undivided Bharat is our dream. We will immerse his ashes only after his dream has been realised.'
(http://indiatoday.intoday.in/story/godse-temple-hindu-group-gandhi-killer-nathuram-ghar-wapsi-akhil-bharat-mahasabha/1/408811.html)
'টিপুকে ঘৃণা কর' সিনড্রোম এখন প্রবলভাবে দেখা দিয়েছে আরএসএস ও সহযোগী সব সংগঠনের মধ্যে। অপর দিকে জোরদার হচ্ছে এদের গান্ধীর হত্যাকারী নথুরাম গডেসেকে উচ্চ প্রশংসিতজনে প্রতিষ্ঠিত করার প্রক্রিয়াও। ভারতের জনগণ এ পর্যন্ত নথুরাম গডসেকে একজন চরম হিন্দুত্ববাদী বলেই জেনে আসছে, যিনি হত্যা করেছিলেন মহাত্মা গান্ধীকে। খুব বেশি সময় আগে নয়, বিজেপি এমপি সাক্ষী মহারাজ ব্যাপক এক বিতর্কের জন্ম দেন এই বলে যে, গডসে একজন জাতীয়তাবাদী ও দেশপ্রেমিক। গত অক্টোবরে আরএসএসের এক মালয়ম মুখপাত্র বলেন, নথুরাম গডসের উচিত ছিল প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরলাল নেহরুকে হত্যা করা, গান্ধীকে নয়।
মোদি আমলের এই ভারতে এরই মধ্যে দেখা গেছে কার্যকর হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরকরণ, বড়দিনের সরকারি সাধারণ ছুটি বাতিল এবং টিপুকে ঘৃণার চোখে দেখা ও নথুরাম গডসেকে ভালোবাসার প্রক্রিয়া। এসবের বহিঃপ্রকাশ ভারত ও বিশ্ববাসীর মনে আজ নানা প্রশ্ন। ভারতে কি জওয়াহেরলাল নেহরু, মহাত্মা গান্ধী কিংবা টিপু সুলতানেরা তাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় সম্মানের স্থান হারাতে বসেছেন? সে জায়গা কি দখল করবেন নথুরাম গডসে ও এমনি আরো কেউ। ভারত কি হারাবে এর দীর্ঘ দিনের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র? কী হবে ভবিষ্যৎ ভারতের গণতন্ত্রের চরিত্র? সেখানে কি চলবে হিন্দুত্ববাদীদের তথাকথিত অখণ্ড হিন্দু মহাভারত? এসব প্রশ্নের জন্য আমাদের থাকতে হবে সময়ের অপেক্ষায়।
http://www.dailynayadiganta.com/details.php?nayadiganta=MTA0MjU5&s=Nw%3D%3D
__._,_.___
No comments:
Post a Comment