২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ মে বাজেট অধিবেশন চলবে। কংগ্রেস ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, এবারের বাজেট 'খুব ভালো' হতে চলেছে। শোনা যাচ্ছে, জনমোহিনী নীতিগুলির পাশাপাশি সংস্কারমূলক পদক্ষেপও করবে সরকার। বস্তুত এই দুইয়ের মিশেলেই তৈরি হবে এবারের বাজেট। সংস্কারের গতি অপ্রতিহত রেখে কী ভাবে জনমোহিনী রাস্তায় সরকার হাঁটে, সে দিকেই এখন নজর সকলের।
কংগ্রেস মুখপাত্র পিসি চাকো বলেছেন, সরকার এখন স্থিতিশীল। অর্থনৈতিক পদক্ষেপই এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আগামী অর্থবর্ষে সরকারের একাধিক পরিকল্পনা রয়েছে, যার বাস্তবায়নের পথে কেন্দ্র এগোবে। এই পরিকল্পনাগুলির ফল 'সুদূরপ্রসারী' বলেও মন্তব্য করেছেন চাকো।
গত ১৭ জানুয়ারি ডিজেলের দামকে সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। বর্তমানে প্রতি লিটার ডিজেলের দামে ১০ টাকা ৮০ পয়সা করে ক্ষতি হয় তেল সংস্থাগুলির। তার জেরে ভর্তুকির বোঝা গিয়ে পড়ে সরকারের উপর। সেই ক্ষতি পুরোপুরি মিটিয়ে ফেলতে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলিতে প্রতি মাসে অল্প পরিমাণে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির অনুমতি দেয় সরকার।
সেদিনই ডিজেলের একদফা দাম বাড়িয়েছিল তেল সংস্থাগুলি। লিটারপিছু ৪৫ পয়সা দাম বাড়ানো হয়। তার উপর মূল্যযুক্ত কর যোগ করে রাজধানী দিল্লিতে এক লিটার ডিজেলের দাম হয় ৪৭ টাকা ৫০ পয়সা। কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি বলেছেন, "নতুন করে নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তেল কোম্পানিগুলি প্রতি মাসে প্রতি লিটার ডিজেলের উপর ৪০ থেকে ৫০ পয়সা করে দাম বাড়াতে পারবে। "
চিদম্বরমের এই বিবৃতি নিঃসন্দেহে খুশি করবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর ডি সুব্বারাওকে যিনি মঙ্গলবার সরকারকে ঠারেঠোরে সতর্ক করে দেন যে আগামী বছর সাধারণ নির্বাচনের কথা ভেবে ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষের বাজেট জনমুখী করতে গিয়ে সরকার যদি আর্থিক ঘাটতি যথেষ্ট কমিয়ে আনতে ব্যর্থ হয় তাহলে রিজার্ভ আর সুদের হার কমাবে না৷
সুদের হার কমানো নিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে অর্থমন্ত্রী এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নরের মন কষাকষি চলছিল৷ চিদম্বরম চাইছিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার কমিয় আনুক যাতে দেশে শিল্প বিনিয়োগ বাড়ে এবং অর্থনীতির দ্রুত বৃদ্ধি হয়৷ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এতদিন সুদের হার কমায়নি মুদ্রাস্ফীতি অত্যন্ত চড়া থাকার কারণে৷ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের যুক্তি, নীতিনির্ধারণে কেন্দ্রীয় সরকারের জড়তার কারণেই দেশে পণ্যের জোগান বাড়ানো যাচ্ছে না৷ আর তাতেই বাড়ছে মুদ্রাস্ফীতি, কমছে অর্থনীতির বৃদ্ধি৷
সেপ্টেম্বর মাস থেকে কেন্দ্রীয় সরকার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারমূলক পদক্ষেপ করার পর রিজার্ভ ব্যাঙ্কও মঙ্গলবার সুদের হার কমায়৷ তার পরই, ফ্রাঙ্কফুর্টে চিদম্বরমের এই ঘোষণা৷ চিদম্বরম এ দিন বলেন, 'অর্থনৈতিক সংস্কারের কাজ চালিয়ে যেতে ভারত বদ্ধপরিকর৷ কেন্দ্রীয় সরকার যে সমস্ত সংস্কারমূলক সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার অধিকাংশই আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে লাগু করা হবে৷ আর পনের মাস পরে সাধারণ নির্বাচন৷ কিন্ত্ত, ফেব্রুয়ারিতে বাজেট পেশ করার সময় সেই কথা মাথায় না রেখে ইতিমধ্যেই নেওয়া সিদ্ধান্তগুলি কার্যকর করবে সরকার৷' তিনি আরও বলেন, 'জাতীয় উত্পাদন বৃদ্ধির হার ৮ শতাংশে নিয়ে যেতে দেশের আর্থিক এবং বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি কমাবে সরকার৷' এক সপ্তাহ আগে, হংকং ও সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগকারীদের কাছেও অর্থনৈতিক সংস্কার চালিয়ে যাওয়ার দায়বদ্ধতার কথা শোনান চিদম্বরম৷
ডয়চে ব্যাঙ্ক ও বার্কলেজ ব্যাঙ্ক আয়োজিত এই সভায় ইউরোপের প্রধান ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির প্রায় ২০০ জন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, '২০০৪ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে যে হারে বৃদ্ধি ঘটেছিল দেশের অর্থনীতি এখন ঠিক সেই একই পথে চলেছে৷' রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নরের মতোই দেশের আর্থিক ঘাটতি ও বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতিকে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পথে প্রধান অন্তরায় বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী৷ আর্থিক ঘাটতি কমাতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে জানাতে গিয়ে চিদম্বরম বলেন, 'চলতি অর্থবর্ষে আর্থিক ঘাটতি কিছুতেই জাতীয় উত্পাদনের ৫.৩ শতাংশের বেশি হতে দেওয়া হবে না৷' ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষের দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি জাতীয় উত্পাদন হারের ৪.৮ শতাংশে সীমিত রাখার কথাও বলেছে সরকার৷
২০০৮-০৯ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে মন্দার পরিবেশ থাকায় ভারতের জাতীয় উত্পাদন হার ২০১১-১২ সালে কমে ৬.৭ শতাংশে দাঁড়ায়৷ চলতি অর্থবর্ষে জাতীয় উত্পাদন বৃদ্ধির হার ৫.৫ শতাংশ হবে বলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমান৷ অর্থমন্ত্রীর এ দিনের ঘোষণা দেশের শেয়ার বাজারের বিনিয়োগকারীদের যথেষ্ট উত্সাহিত করবে বলেই আশা করা হচ্ছে৷ মঙ্গলবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার এবং বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির নগদ জমার অনুপাত কমানোর পরও শেয়ার সূচক সেনসেক্স এবং নিফটি প্রায় ০.৫ শতাংশ পড়ে যায়৷
ফিনান্সিয়াল টাইমসে দেওয়া সাক্ষাত্কারে এদিন তিনি বলেন, 'আমিই সেই ব্যক্তি যে অঙ্ক কষে দেখেছে যে এ বছর বাজেট ঘাটতি ৫.৩ শতাংশের মধ্যেই থাকবে এবং পরের বছর এটা ৪.৮ শতাংশের নীচে থাকবে৷ আমি কোনও অবস্থাতেই এই লক্ষ্মণরেখা অতিক্রম করতে পারব না৷ দায়িত্বশীল বাজেটই পেশ হবে৷'
সুদ কমানোয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ডি সুব্বারাওকে এ দিন স্বাগত জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পালানিয়াপ্পান চিদম্বরম৷ তিনি বলেন, 'তিনি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমরা তাকে স্বাগত জানাই৷ যদি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে তবে তিনি নিশ্চয়ই আরও পদক্ষেপ করবেন৷' এখন সকলের নজর আসন্ন বাজেটের দিকে৷
২০১৪ সালের ভোট যত এগিয়ে আসবে সরকারের নীতি রূপায়ণ করা কি ততই কঠিন হয়ে পড়বে? দ্ব্যর্থহীন ভাষায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, ভোট এগিয়ে এলেও সরকার যে সব ঘোষণা করছে তা বাস্তবায়ন করবেই৷ তিনি বলেন, 'ভোট এখনও পনেরো মাস পরে৷ বাজেট যেমন দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন (রেসপনসিবল) হওয়া উচিত তেমনই হবে৷ তেমন হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়৷'
ডিজেলের দাম বিনিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যেই সরকার পদক্ষেপ করেছে৷ এ প্রসঙ্গে চিদম্বরম বলেন, 'এ মাসে সবে শুরু হয়েছে, সকলের উচিত সরকার যে পদক্ষেপ করছে তার নিরিখেই সবকিছু বিচার করে৷' তিনি বলেন, 'যে দেশে জনসংখ্যার বড় অংশ গরিব সেখানে ছোট ছোট পদক্ষেপ করে সংশোধন করা দরকার৷ রাজনৈতিক ভাবেও এ ভাবে চলাই ঠিক৷'
সব ক্ষেত্রে ভর্তুকি যে তুলে দেওয়া সম্ভব হবে না৷ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর কথায়, কয়লায় ভর্তুকি তুলে দিলে কাঠের জ্বালে রান্না করা শুরু হবে, তাতে অরণ্য ধ্বংস হবে৷ এ জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে যাতে ভারসাম্য থাকে৷ তবে যে সব জিনিষে ভর্তুকি 'অযৌক্তিক' তা তুলে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন অর্থমন্ত্রী নিজে৷ তাঁর কথায়, 'আমরা চাই যেখানে সত্যি সত্যিই ভর্তুকি দরকার শুধু সেখানেই ভর্তুকি থাক৷ যেখানে ভর্তুকি অযৌক্তিক, তা ধীরে ধীরে তুলে দেওয়া হোক৷'
এ দিন চিদম্বরম বলেন, '২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ভারত যে পদক্ষেপ করেছে তা যথাযথ৷ কিন্ত্ত আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির প্রভাব ভারতে পড়েছে৷ আমরা যদি কোনও ভুলও করে থাকি এখন তা কাটিয়ে উঠছি৷' তিনি বলেন, 'আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি, আর্থিক সংহতিকরণ, পরিকাঠামো উন্নয়ন ও উচ্চ বৃদ্ধির পথে চলছি৷ আমাদের আশা, ২০০৪ থেকে ২০০৯ অর্থবর্ষের ছবি আবার দেখা যাবে৷' ফাঙ্কফুর্ট ও লন্ডনের বিনিয়োগকারীরা চান ২০০৪-০৯ পর্যন্ত ভারতের বৃদ্ধির হার যেমন ছিল, আবার তেমনই হোক৷ ২০০৭-০৮ সালে বৃদ্ধির হার ৯.৩-এ পৌঁছে যায়৷ তখনই মনে করা হচ্ছিল দেশে বৃদ্ধির হার 'দ্বি-সংখ্যা' (ডাবল ডিজিট বা ১০-এর বেশি) হবে৷ ওই সময়ে সারা বিশ্বেরই অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হয়েছিল (২০০৭ সালে ৫.২ শতাংশ, ২০০৮ সালে ৩.১ শতাংশ)৷ কিন্ত্ত মন্দার কারণে আচমকাই তা নিম্নমুখী হয়৷ তখন ভারতের বৃদ্ধির হারও কমেছে৷ এখন আমেরিকা ও ইউরোপ অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে৷ তাই চাইলেও ভারতের বৃদ্ধি প্রায় দশ-এ নিয়ে যাওয়ার কষ্টকল্পনা কেউই করছেন না৷ অর্থমন্ত্রীও বলেছেন তাঁর লক্ষ্য বৃদ্ধির হার ৬-৭ শতাংশে নিয়ে যাওয়া৷ সুদের হার ঘোষণার সময়ই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে সরকার যদি সংস্কারমূলক পদক্ষেপ না করে তা হলে তাদের পক্ষে আর সুদের হার কমানো সম্ভব হবে না৷ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার কমিয়েছে৷ অপ্রত্যাশিত ভাবে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমে আরও ১৮ হাজার কোটি টাকার যোগান নিশ্চিত করেছে৷ এই অবস্থায় বল সরকারের কোর্টে৷
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার কমালেও বল সরকারের কোর্টে ঠেলে দেওয়ায় কয়েকদিন বিশ হাজারের ঘরে থাকার পরে সেনসেক্স ফের উনিশ হাজারের ঘরে নেমে গিয়েছিল৷ কারণ ভোটের আগে বাজেট কেমন হবে তা নিয়ে সন্দেহ ছিলই৷ কিন্ত্ত এ দিন চিদম্বরম যেই ঘোষণা করলেন যে জনমুখী নয়, উন্নয়ন ও সংস্কারমুখী বাজেট তখন সেনসেক্স আবার বিশ হাজারের ঘরে প্রবেশ করল৷
নন্দীগ্রামের গুলিচালনার ঘটনা নিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে জেরা করুক সিবিআই। এই দাবি তুলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে চিঠি লিখল রাজ্য সরকার।
রাজ্যের বক্তব্য, গুলি চালানোর ঘটনায় শুধুমাত্র অভিযুক্ত পুলিস অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই হবে না। জেরা করতে হবে ততকালীন পুলিস মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকেও। সিবিআই যদিও এধরনের কোনও চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করেনি।
গোয়েন্দা সংস্থার বক্তব্য, নন্দীগ্রাম নিয়ে তদন্ত শেষ হয়েছে। চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। নতুন করে কোনও তদন্ত বা জেরা করতে হলে ক্যাবিনেট সচিব বা প্রধানমন্ত্রী দফতরের অনুমোদন প্রয়োজন।
যদিও পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মত বাম নেতার বিরুদ্ধে সিবিআই জেরার দাবি তুলে নতুন করে বিতর্ক উস্কে দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার।
নন্দীগ্রামকাণ্ডে সিবিআইয়ের রিপোর্টে অসন্তুষ্ট রাজ্য সরকার৷ তত্কালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যসহ শীর্ষ পুলিশকর্তাদের তদন্তের আওতায় আনার দাবিতে শীর্ষ তদন্ত সংস্থাকে চিঠি পাঠিয়েছে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর৷ ২০০৭-এর ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলিচালনায় ১৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ওই বছরের ১৬ নভেম্বর কলকাতা হাইকোর্ট রায় দেয়, নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলিচালনা অসাংবিধানিক৷ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত৷ সেইমতো তদন্ত শুরু হয়৷ কিন্তু সিবিআইয়ের তদন্তে অসন্তুষ্ট রাজ্য৷ চিঠি লিখে রাজ্যের তরফে সিবিআইকে বলা হয়েছে, নন্দীগ্রামকাণ্ডের তদন্তের আওতায় আনা হোক তত্কালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-সহ শীর্ষ পুলিশ কর্তাদেরও৷ কয়েক মাস আগে তত্কালীন নন্দীগ্রাম থানার ওসি শেখর রায়, পূর্ব মেদিনীপুরের তত্কালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেবাশিস বড়াল এবং হাওড়ার তত্কালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সত্যজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট পাঠায় সিবিআই৷
তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর আবেদনও জানায় তারা৷ কিন্তু ওই রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন তোলে রাজ্য সরকার৷ তাদের বক্তব্য, কেন অধস্তন তিন পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধেই মামলা শুরু করতে চাইছে সিবিআই? এই রেশ ধরেই সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যেপাধ্যায় সিবিআইকে চিঠিতে লেখেন, ঘটনার দিন গোকুলনগর-অধিকারীপাড়ায় গুলিতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল৷ সেখানে কর্তব্যরত তিন পুলিশ আধিকারিক শেখর রায়, দেবাশিস বড়াল এবং সত্যজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মামলা শুরু করতে চাইছে সিবিআই৷ অন্যদিকে ভাঙাবেড়াতে মৃত্যু হয় ১১ জনের৷ অথচ সেখানে তত্কালীন আই জি পশ্চিমাঞ্চল সহ একাধিক পুলিশকর্তা উপস্থিত থাকলেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও রিপোর্ট দেয়নি সিবিআই৷ তদন্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে তাই সিবিআইকে চিঠি পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র দফতর৷ চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, যেখানে ১১ জনের মৃত্যু হল, সেখানে পুলিশকে গুলিচালনার নির্দেশ কারা দিয়েছিল, তা জানতে তত্কালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, তত্কালীন স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজি অনুপ ভূষণ ভোরা, আইজি আইনশৃঙ্খলা রাজ কানোজিয়া-সহ শীর্ষ কর্তাদেরও তদন্তের আওতায় আনা হোক৷ এঁদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হোক৷
সিবিআইকে দেওয়া রাজ্য সরকারের এই চিঠি ঘিরে রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছে৷ সমালোচনায় সরব হয়েছে সিপিএম৷ সিপিএম নেতা বাসুদেব আচার্য বলেছেন, এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এদিকে, নন্দীগ্রাম অভিযানের দায়িত্বে থাকা পাঁচ আইপিএস অফিসার অনিল শ্রীনিবাসন, এন রমেশ বাবু এবং অরুণ গুপ্ত, দেবাশিস বড়াল এবং সত্যজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়কে শোকজ করল স্বরাষ্ট্র দফতর৷ কেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? ১৫ দিনের মধ্যে তার জবাব দিতে বলা হয়েছে৷
বিস্ফোরক টুইটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই কাঠগড়ায় তুললেন সলমন রুশদি। বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিকের অভিযোগ, তাঁর কলকাতা সফর বাতিলে পুলিসকে নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুক্রবার বেলা বারোটা নাগাদ পরপর চারটি টুইট। যেন চারটি বিস্ফোরণ। তাঁর কলকাতা সফর বাতিল প্রসঙ্গে টুইট করলেন সলমন রুশদি।
প্রথম টুইটে সৌগত রায়ের মন্তব্যের নিন্দা। বৃহস্পতিবার, তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেছিলেন, সলমন রুশদিকে কলকাতায় না আসার জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
টুইটে রুশদির মন্তব্য, "হাস্যকর কথা, সৌগত রায়। কলকাতায় না যাওয়ার জন্য আমি কোনও বন্ধুত্বপূর্ণ পরামর্শ পাইনি। আমাকে বলা হয়েছিল, পুলিস আমাকে পরের বিমানেই ফেরত পাঠিয়ে দেবে।"
পরের টুইটে আরও আক্রমণাত্মক রুশদি। তিনি লিখেছেন, "পুলিস আমার সফরসূচি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে দিয়েছিল এবং মুসলিম নেতাদের ডেকে কার্যত বিক্ষোভ দেখানোর ইন্ধন দেওয়া হয়।"
প্রেস বিবৃতিতে এ প্রসঙ্গে আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে রুশদি লিখেছেন, "যে কোনও মূল্যে আমার কলকাতা সফরকে অসম্ভব করে তুলতে সক্রিয় হয়েছিল পুলিস। আমি কোন বিমানে যাব, কোথায় থাকব, কলকাতা লিট মিটে কখন যাব, কোন বিমানে ফিরব মিডিয়াকে সব জানিয়ে দেয় পুলিসের একটি সূত্র। এটা স্পষ্টতই অশান্তি বাধানোর লোকদের ডেকে আনা এবং তার জেরেই আমার সফর আটকাতে বিমানবন্দরে বাইরে শ'খানেক লোক বিক্ষোভও দেখায়। এটা যে সরকারি পরিকল্পনা ছিল, সেটা বিশ্বাস না করে উপায় নেই।
কলকাতা সাহিত্য উত্সবে সলমন রুশদিকে আমন্ত্রণের কথা অস্বীকার করেছেন আয়োজকরা।
তৃতীয় টুইটে রুশদি লিখেছেন, "উদ্যোক্তারা বলছেন আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। প্রমাণ হিসেবে, আমার কাছে ওঁদের পাঠানো ই মেল এবং বিমানের টিকিট আছে।"
প্রেস বিবৃতিতে রুশদি লিখেছেন, "আয়োজকরা আমাকে সারপ্রাইজ গেস্ট হিসেবে আসতে অনুরোধ করেছিলেন।"
সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণ চতুর্থ টুইটে। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে কাঠগড়ায় তুলে রুশদি লিখলেন, "সোজা কথা হল, আমার সফর আটকাতে পুলিসকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।"
প্রেস বিবৃতিতে রুশদি আরও লিখেছেন, "মনে পড়ে গেল, গত বছর জয়পুর উত্সবের পরেই মমতা ব্যানার্জি জানিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি কিছুতেই আমাকে কলকাতায় ঢুকতে দেবেন না। এখন সেই হুমকিকেই বেশ ভাল ভাবে কাজে করে দেখালেন তিনি।"
সলমন রুশদির কলকাতা সফর বাতিল যে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই হয়েছে তা কার্যত মেনেই নিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদ।
প্রেস বিবৃতিতে রুশদির মন্তব্য, ভারতে এখন সাংস্কৃতিক জরুরি অবস্থা চলছে। মিডনাইটস চিলড্রেন উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি পরিচালক দীপা মেহতার ছবির প্রচারে কলকাতায় আসার কথা ছিল সলমন রুশদির।
কলকাতা: কলকাতা সফর বাতিল হওয়া নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করলেন সলমন রুশদি।শুক্রবার ব্রিটেন ফিরে যাওয়ার আগে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ এনে বিতর্কের ঝড় তুলে দিয়ে গেলেন 'দি স্যাটানিক ভার্সেস', 'মিডনাইটস চিল্ডরেন'-এর লেখক।একেবারে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই কাঠগড়ায় তুলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই তাঁর কলকাতা সফর বাতিল করা হয়েছে বলে ট্যুইটারে দাবি করেছেন রুশদি।তিনি বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই পুলিশ তাঁকে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে। লেখকের দাবি, তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো কলকাতা বইমেলায় লিটারেরি মিটের আয়োজকরা মিথ্যে কথা বলছেন৷ রুশদির ট্যুইট, আমার কলকাতায় আসা আটকাতে পুলিশকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ লিটারারি মিট উদ্যোক্তারা বলছেন, আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি৷ তাঁরা মিথ্যা কথা বলছেন৷ প্রমাণ হিসেবে আমার কাছে একাধিক ই-মেল এবং তাঁদের পাঠানো বিমানের টিকিট রয়েছে৷ আমার পূর্ণাঙ্গ সফরসূচি সংবাদমাধ্যমকে দিয়ে দেয় পুলিশই৷ ফোন করে মুসলিম নেতাদেরও, উস্কানি দিয়ে তাঁদের রাস্তায় বিক্ষোভে নামায়৷ কলকাতা থেকে দূরে থাকার 'বন্ধুত্বপূর্ণ উপদেশ' আমাকে দেওয়া হয়নি৷ বলা হয়, পরের বিমানেই আমাকে ফেরত পাঠিয়ে দেবে পুলিশ৷'
যদিও বইমেলার আয়োজক সংস্থা গিল্ডের দাবি, তাদের তরফে রুশদিকে কোনও আমন্ত্রণপত্র বা বিমানের টিকিট পাঠানো হয়নি৷ লিটারারি মিটের আয়োজন করে একটি স্বাধীন সংস্থা৷ তারাও গিল্ডের সঙ্গে আলোচনা করেই পদক্ষেপ করে৷ লিটারেরি মিটের আয়োজক সংস্থাও রুশদিকে কোনও আমন্ত্রণ পাঠায়নি৷ এই দাবি করে রুশদিকে এ দিন মিথ্যাবাদী বলে গিল্ড৷সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, সলমন রুশদি মিথ্যে কথা বলছেন৷ গিল্ড বা লিটারেরি মিটের উদ্যোক্তাদের তরফে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি৷
এদিকে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ পর্বের মধ্যে বিতর্ক বাড়িয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী রচপাল সিংহ৷তাঁর মন্তব্য, রুশদিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল৷ কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি৷ লিটারারি মিটের আয়োজক সংস্থার তরফে এনিয়ে কেউ প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি৷
এদিকে রুশদির চাঞ্চল্যকর অভিযোগের জেরে বিদ্বজনেদের প্রতিক্রিয়ায় রাজ্য সরকার চরম অস্বস্তিতে পড়েছে৷ নাম না করে মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধেছেন কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী শশী তারুর৷ রবি ঠাকুরের শহরে এসে তাঁরই কবিতা উদ্ধৃত করে নাম না করে মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধেছেন তিনি৷ জোট ভাঙার পর থেকেই নানা ইস্যুতে বারবার সংঘাতে জড়িয়েছে কংগ্রেস-তৃণমূল৷ কখনও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী, তো কখনও রাজ্য সরকারকে তুলোধনা করেছে কংগ্রেস৷ এই প্রেক্ষাপটে কলকাতায় এসে রুশদি ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করলেন এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী৷
তৃণমূল সাংসদ কবীর সুমন, সাহিত্যিক সুচিত্রা ভট্টাচার্য, নাট্যব্যক্তিত্ব কৌশিক সেন কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে রুশদিকে শহরে পা রাখতে না দেওয়ার বিরোধিতা করেছেন। অন্যদিকে এই পরিস্থিতিতে সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে রুশদিকে নজিরবিহীন আক্রমণ করেছেন তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদ৷ তাঁর বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন এজন্য সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। রুশদিতে আসতে না দেওয়ার মধ্যে লজ্জার কিছুই নেই।রুশদিকে তোপ দেগে তিনি বলেছেন, মুক্ত চিন্তার নামে আপনি ইসলামের অবমাননা করতে পারেন না। স্বামী বিবেকানন্দ, নজরুলের মাটিতে দাঁড়িয়ে অবাধ চিন্তার নামে আমরা এটা সমর্থন করব না।
তৃণমূল সাংসদের এহেন মন্তব্য অবশ্য জন্ম দিয়েছে নয়া বিতর্কের৷ বিরোধিতা গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ৷ কিন্তু, একজন শিল্পীর সমালোচনায় এধরনের ভাষার ব্যবহার কতটা যুক্তিযুক্ত? সে প্রশ্নই তুলছেন শিল্পী-সাহিত্যিকরা৷
চেন্নাই: কমল হাসানের 'বিশ্বরুপম' সিনেমার মুক্তি সংক্রান্ত বিতর্ক তামিলনাড়ুর রাজ্য রাজনীতিতেও ছায়া ফেলল। বিতর্কের মধ্যেই মুখ খুললেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা৷ ছবি মুক্তিতে বাধার স্বপক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর সাফাই, বিশ্বরূপম মুক্তি পেলে হিংসার সৃষ্টি হতে পারত৷ তাই, আইন-শৃঙ্খলার কথা মাথায় রেখেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে তামিলনাড়ু সরকার৷ তিনি বলেছেন, মুসলিম সংগঠনগুলির আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে এই ছবির প্রদর্শন ঘিরে সমস্যা তৈরি হতে পারত। রাজ্যের পাঁচশোরও বেশি সিনেমা হলে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয় বলেও তিনি দাবি করেছেন। জয়ললিতা বলেছেন, সিনেমার মুক্তির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারির পিছনে তাঁর কোনও ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য নেই। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল ডিএমকে নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এম করুনানিধির ইঙ্গিত, সম্ভবত কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চাওয়ার খেসারত দিতে হচ্ছে কমল হাসানকে। করুনানিধি বলেছেন, একজন ধুতি-পরিহিত তামিলকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কমল হাসান দেখতে চাওয়ার কারণেই কি 'বিশ্বরুপম' কে মুক্তি সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হল। করুনানিধির এই অভিযোগও খারিজ করে দিয়েছেন জয়ললিতা। তিনি করুনানিধির বিরুদ্ধে মামলা করারও হুমকি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য,দলীয় কর্মীদের লেখা চিঠিতে করুনানিধি বলেছেন, কিছু মানুষ ভাবছেন চিদম্বরমকে প্রধানমন্ত্রী পদের উপযুক্ত বলার কারণেই রাজ্য সরকারের উষ্মার মুখে পড়তে হয়েছে কমল হাসানকে। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে চিদম্বরমের সঙ্গে একমঞ্চে ছিলেন কমাল হাসান। সেখানে তিনি চিদম্বরমকে প্রধানমন্ত্রী পদের যোগ্য আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, ধুতি পরিহিত একজন তামিলকে প্রধানমন্ত্রী পদে দেখতে চান। ওই ঘটনার কথা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন করুনানিধি।
করুনানিধি আরও বলেছেন, এমনও কথা শোনা যাচ্ছে যে রাজ্যের শাসক দলের ঘনিষ্ট কয়েকটি টিভি চ্যানেল 'বিশ্বরুপম'-এর টেলিভিশন সম্প্রচার স্বত্ব চেয়েছিল। কিন্তু এজন্য তারা যে দর দিয়েছিল তা অনেক কম ছিল। এই কারণেও কমল হাসানের প্রতি শাসক দল এআইএডিএমকে ক্ষুব্ধ হয়ে থাকতে পারে।
উল্লেখ্য, মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষে 'বিশ্বরুপম'-এ আপত্তিজনক বিষয় রয়েছে, যার ফলে আইন-শৃঙ্খলা জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে এই যুক্তিতে সিনেমাটির মুক্তির ওপর ১৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে তামিলনাড়ু সরকার। মাদ্রাজ হাইকোর্ট মঙ্গলবার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেও সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যায় তামিলনাড়ু সরকার৷ এরই পরিপ্রেক্ষিতে কমল হাসান গতকাল বলেন,ছবির মুক্তি নিয়ে রাজনীতির খেলা চলছে৷ এর নেপথ্যে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র৷ হয়তো তামিলনাড়ু সরকার আমাকে রাজ্যে থাকতে দিতে চায় না৷ পাশাপাশি, তিনি বলেন, 'বিশ্বরূপম' মুক্তি না পেলে দেশ ছেড়ে চলে যাব৷
কমল হাসানের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন রজনিকান্ত, শাহরুখ সলমনরা৷ জয়ললিতা যাই বলুন না কেন, বিশ্বরূপম নিয়ে কমল হাসানের পাশেই দাঁড়িয়েছে কংগ্রেস৷ বিতর্কে জড়াতে নারাজ বিজেপিও৷
এদিকে, বিশ্বরূপম ঘিরে রাজনৈতিক টানাপোড়েন তুঙ্গে৷ একদিকে, সমাজবাদী পার্টির হুঁশিয়ারি, উত্তরপ্রদেশে ছবি মুক্তিতে নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে৷ অন্যদিকে, শিবসেনার হুঙ্কার, মহারাষ্ট্রে মুক্তি দিতে হবে বিশ্বরূপমকে৷ সব মিলিয়ে বিশ্বরূপম বিতর্ক চলছেই৷
http://abpananda.newsbullet.in/national/60-more/33073-2013-01-31-06-00-31
রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, এদিন একদিকে যেমন নরমে-গরমে মোর্চা নেতাদের বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, ঠিক তেমনই বার্তা দিয়েছেন পাহাড়বাসীকেও৷ আন্দোলনের জেরে পর্যটন ব্যবসা মার খেলে আখেরে যে তাদেরই ক্ষতি, এই বার্তা দিয়ে পাহাড়বাসীর মন জয়ের চেষ্টা করেছেন মমতা৷ একইসঙ্গে মোর্চাদের আন্দোলন যাতে জনসমর্থন হারায়, সেই চেষ্টাও তিনি করেছেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ৷
লেপচা ও বৌদ্ধদের জন্য উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের কথা বুধবার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এর মধ্যে বিভাজনের গন্ধ পায় মোর্চা৷ গুরুঙ্গ অভিযোগ করেন, মুখ্যমন্ত্রী বিভাজনের রাজনীতি করছেন৷ সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে এদিন মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা দাবি, জিটিএর মধ্যেই লেপচা পর্ষদের কথা বলা আছে৷ যদিও মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবি মানতে নারাজ মোর্চা৷ মোর্চার মুখপাত্র বিনয় তামাং সুর চড়িয়ে অভিযোগ করেন, জিটিএ-র কাজে হস্তক্ষেপ করছে সরকার৷
প্রসঙ্গত, দার্জিলিঙে ম্যালের সভায় মুখ্যমন্ত্রী পাট্টা বিলি করেন, বিভিন্ন প্রকল্পের চেক ও গৃহনির্মাণ প্রকল্পে ঘরের চাবিও তুলে দেন স্থানীয় কয়েক জনের হাতে৷ গুরুঙ্গ মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই অভিযোগ করেন, তাঁদের অন্ধকারে রেখেই এসব কাজ করা হল৷ পরদিন পারদ আরও চড়ে৷ মুখ্যমন্ত্রী কালিম্পঙে পর্যটনকেন্দ্র গড়ার কথা ঘোষণা করেন৷ এক্ষেত্রেও জিটিএকে অন্ধকারে রেখেই ঘোষণা করা হয়েছে বলে দাবি করে মোর্চা৷ এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার মোর্চা নেতা বিনয় তামাং সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়ান৷ তাঁর অভিযোগ, জিটিএর কাজে হস্তক্ষেপ করছে সরকার৷ এদিকে সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের খবর, মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি এদিনও চাপের কৌশল বজায় রেখে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব আর কে সিংহকে জানিয়ে দেন, আলাদা তেলেঙ্গানা গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে কিন্তু গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে উপেক্ষা করতে পারবে না।
অসুস্থ মতুয়া সম্প্রদায়ের বড়মা বীণাপানি দেবী। বৃহ্স্পতিবার রাতে তাঁকে মিন্টো পার্কের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিত্সকেরা জানিয়েছেন, বীণাপানিদেবীর রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা অনেকটাই কমে গেছে।
যার ফলে নানারকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর আগেও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা এবং সেপটিসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল বীণাপানিদেবীকে।
প্রতিরক্ষা, সড়ক, গ্রামীণ যোজনা ইত্যাদি খাতে বরাদ্দ টাকা প্রায় ৮ শতাংশ ছেঁটে ফেলতে চান চিদম্বরম৷ তাঁর এই সিদ্ধান্তের ফলে সহকর্মী মন্ত্রীগণ চটলেও কিংবা স্বল্প মেয়াদী বৃদ্ধি ব্যাহত হলেও তাতে বিশেষ পাত্তা দিচ্ছেন না অর্থমন্ত্রী৷
চলতি অর্থবর্ষে বাজেটে বরাদ্দ করা সরকারি খরচের ৮ শতাংশ বা এক লক্ষ কোটি টাকা ব্যয়সঙ্কোচ করতে চান চিদম্বরম৷ রয়টার্স জানিয়েছে অর্থমন্ত্রকের দুই উচ্চপদস্থ আধিকারিক এ কথা স্বীকার করেছেন৷ আধিকারিকদের মতে, এখনও পর্যন্ত যা দেখা যাচ্ছে, তাতে বলা যায় বাজেট বরাদ্দ থেকে এক লক্ষ কোটি টাকার কিছু বেশি কাটছাঁট করবেন অর্থমন্ত্রী৷ যদিও সম্পূর্ণ চিত্রটা ১৫ মার্চের পরই স্পষ্ট হবে৷ কারণ, তখন মোট রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ জানা যাবে৷ তা ছাড়া জ্বালানি ভর্তুকি খাতে মোট খরচটাও সামনে আসবে৷
অর্থমন্ত্রকের ওই দুই আধিকারিক জানিয়েছেন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ১৯০ কোটি ডলার খরচ কমানো হচ্ছে৷ এর ফলে আমেরিকা থেকে হাউইত্জার কামান ও জ্যাভেলিন অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল আমদানি পিছিয়ে যাবে৷ প্রতিরক্ষা পর অর্থমন্ত্রীর নিশানায় রয়েছে সমাজকল্যাণ প্রকল্রগুলি৷ গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের খরচ থেকে ৪০০ কোটি ডলার কমিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ যার ফলে কোপ পড়বে রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি স্কিম বা নারেগা প্রকল্প (১০০ দিনের কাজ)৷ এ বছরই কোনও কোনও রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট৷ আর সামনের বছর সাধারণ নির্বাচন৷ তার আগেই গ্রামীণ প্রকল্প খাতে ছাঁটাইয়ের বিষয়টি মোটেই ভালো ভাবে নেননি গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ৷ অর্থমন্ত্রীকে লেখা এক কড়া চিঠিতে রমেস বলেছেন, 'প্রধানমন্ত্রী এবং আপনি (চিদম্বরম) আর্থিক সংহতি করণের কথা বলছেন৷ কিন্ত্ত সেটার জন্য নিশ্চয় সামাজিক দায়বদ্ধতাগুলিকে মুছে ফেলা যাবে না৷'
তবে অর্থমন্ত্রী অনড়৷ চলতি অর্থবর্ষে আর্থিক ঘাটতি ৫.১ শতাংশে থাকবে বলে উল্লেখ করেছিলেন তত্কালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়৷ কিন্তু ডিসেম্বরে অর্থমন্ত্রক ঘোষণা করেছে ঘাটতি ৫.৩ শতাংশের মাত্রা ছোঁবে৷ ৫.৩ শতাংশের 'লক্ষ্মণরেখা' পেরোতে নারাজ চিদম্বরম৷ বুধবারই লন্ডনে এক বাণিজ্যিক দৈনিকের কাছে তিনি বলেছেন, 'আমি নিজে অঙ্ক কষে দেখেছিল এ বছর ঘাটতি ৫.৩ শতাংশ থাকবে৷ আগামী বছর সেটা নেমে আসবে ৪.৮ শতাংশে৷' নিজের অঙ্ককে সঠিক প্রমাণ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ চিদম্বরম৷ যে কারণে অর্থমন্ত্রকের অন্দরের খবর সড়ক, বিদ্যুত্ , গ্রামীণ আবাসন, কর্মসংস্থান, জাহাজ, প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ মন্ত্রকের তহবিল থেকে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বাদ দেওয়া হবে৷ ওয়াকিবহাল মহলের ব্যাখ্যা, ভর্তুকি খাতে খরচ বাড়ছে বলেই বিভিন্ন মন্ত্রকের ব্যয় ছাঁটতে উদ্যোগী হয়েছেন চিদম্বরম৷ জ্বালানি ভর্তুকি খাতে ৪৩,০০০ কোটি টাকা খরচের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সরকারের৷ সেটা বেড়ে হয়েছে ৫০,০০০ কোটি টাকা৷ পাশাপাশি, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম আট মাসে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ৮৭.৬ শতাংশ রাজস্ব আদায় হয়েছে৷ গত বছর এই একই সময় লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৫০ শতাংশ রাজস্ব আদায় করতে পেরেছিল সরকার৷
বৃহস্পতিবার তাদের একটি আলোচনা পত্রে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বলেছে, 'গ্রাহকরা যদি ব্যক্তিগত প্রয়োজনে এটিএম ব্যবহারের বদলে ব্যাঙ্ক ব্রাঞ্চ থেকে বেশি পরিমাণে ও বহুবার টাকা তোলেন বা জমা দেন তাহলে ব্যাঙ্কগুলি তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত মাশুল নিতে পারে। এতে নগদ টাকার লেনদেন কমবে।' 'ডিজইনসেনটিভাইজিং ইস্যুয়ান্স অ্যান্ড ইউসেজ অফ চেকস্' নামের ওই আলোচনা পত্রে জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক৷
এর পাশাপাশি বিনামূল্যে চেক বই দেওয়ার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার কথাও বলা হয়েছে ওই আলোচনাপত্রে৷ চেক বই দেওয়ার ক্ষেত্রে ভালো মাশুল নেওয়া, ক্রেডিট কার্ডের বিল অনলাইনে মেটানো বাধ্যতামূলক করা ও পোস্ট-ডেটেড চেক নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবও আলোচনাপত্রে দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক৷ মূলত নগদের ব্যবহার কমিয়ে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে টাকার লেনদেন বাড়াতেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই প্রস্তাব৷ আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে সাধারণ মানুষকে এই প্রস্তাবগুলির উপর তাদের মতামত জানাতে বলেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক৷
গ্রাহকদের প্রতি বছর বিনামূল্যে চেকবই দেওয়ার সংখ্যা ন্যূনতম রাখতে পরামর্শ দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক৷ অন্যদিকে, ব্যাঙ্কগুলির নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি চেকবই কোনও গ্রাহক নিলে তার জন্য সেই গ্রাহকের চেক ব্যবহারের পূর্ব ইতিহাসের ভিত্তিতে অতিরিক্ত মাশুল নেওয়ার প্রস্তাবও আলোচনাপত্রে দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক৷ চেকবই ব্যবহারের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে 'স্ল্যাব রেট' চালু করতেও বলা হয়েছে ওই আলোচনাপত্রে৷
এছাড়া নতুন ঋণ ও পোস্ট ডেটেড চেকের ব্যবহারও সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক৷ দেরিতে ঋণ পরিশোধ করা বা ঋণ পরিশোধ না করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট শর্তও ব্যাঙ্কগুলির আগে থেকে জানানোর প্রয়োজনীয়তার কথা আলোচনাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে৷ এর পাশাপাশি ইতিমধ্যেই ইস্যু করা হয়েছে এমন পোস্ট ডেটেড চেকগুলি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে পরিশোধের আওতায় আনার কথাও জানানো হয়েছে৷ লভ্যাংশের টাকাও চেক মারফত দেওয়া হলে তার উপর ব্যাঙ্কগুলিকে অতিরিক্ত মাশুল ধার্য করার পরামর্শ দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক৷
তাদের মতে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংস্থাগুলি চেক এর ব্যবহার বেশি করে৷ মোট যত চেক প্রসেস করা হয় তার ৫৪ থেকে ৬৪ শতাংশই এই প্রতিষ্ঠানগুলির৷ কাজেই এই ধরণের গ্রাহকদের ক্ষেত্রে চেকবই-এর জন্য অতিরিক্ত মাশুল নেওয়া অবশ্যই প্রয়োজন৷ উল্লেখ্য, ব্যাঙ্কগুলি ইতিমধ্যেই তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে শুরু করেছে৷ ভালো গ্রাহক পরিষেবা দেওয়ার পাশাপাশি ব্যাঙ্কের নিজস্ব খরচ কমাতে এটিএম-এর ব্যবহার করতে গ্রাহকদের পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি, টাকা তোলা ছাড়াও চেক জমা দেওয়া, চেকবই-এর জন্য আবেদন জানানো প্রভৃতিও চালু করেছে 'ই-লবি' পরিষেবার মাধ্যমে৷ এ প্রসঙ্গে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাঙ্কের 'ট্রানজাকসন কনভেনিয়েন্স' বিভাগের প্রধান রজনীশ খারে বলেন, 'প্রযুক্তির ব্যবহার কর্মদক্ষতা বাড়াবে যা নতুন গ্রাহক টানতেও সাহায্য করবে৷ ফলে ব্যাঙ্কের মুনাফা বাড়বে৷ পরিষেবা খাতে ব্যাঙ্কের খরচ কমাতেও প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে৷' সরকারি ব্যাঙ্কের এক কর্তার মতে, 'কোনও গ্রাহক ব্যাঙ্কের শাখায় এলে ব্যাঙ্কের যদি আট টাকা খরচ হয়, ওই গ্রাহক ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে লেনদেন করলে ব্যাঙ্কের খরচ কমে আসে তিন টাকায়, তা কোনও ক্ষেত্রে এক টাকাতেও নেমে আসে৷'
আর্থিক ক্ষতির বোঝা পুরোপুরি না কমা অবধি প্রতি মাসে ডিজেলের দাম ৪০ থেকে ৫০ পয়সা পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় সরকার। শুক্রবার কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি জানিয়েছেন, নতুন নির্দেশ না আসা পর্যন্ত দেশের তেল সংস্থাগুলি প্রতি মাসে ডিজেলের দাম ৪০ থেকে ৫০ পয়সা পর্যন্ত বাড়াতে পারবে। বর্তমানে প্রতি লিটারের ১০ টাকা ৮০ পয়সা ক্ষতি রেখে ডিজেল বিক্রি করা হয়।
গত মাসের ১৭ তারিখ কেন্দ্রীয় সরকার ডিজেলের মূল্য আংশিক ভাবে বিনিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নেয়। এর সঙ্গেই যতদিন না পর্যন্ত রাজ্য অধীনস্থ তেল সংস্থাগুলি নিজেদের আর্থিক ক্ষতি পূরণ করছে ততদিন অবধি তারা স্বাধীনভাবে মাসিক স্বল্প হারে ডিজেলের দাম বাড়াতে পারবে বলেও জানানো হয় সরকারের পক্ষ থেকে।
জানুয়ারির ১৭ তারিখেই ডিজেলের দাম একদফা বাড়ানো হয়েছে। স্থানীয় ভ্যাট যোগ করার পর বর্তমানে কলকাতায় ডিজেলের দাম ৫১টাকা ৫০ পয়সা।
জনমোহিনী হওয়াই পরীক্ষা চিদম্বরমের
জেকব লিউ ও পালনিয়াপ্পন চিদম্বরম।
প্রথম জনকে সদ্য মার্কিন অর্থসচিবের পদে বসিয়েছেন বারাক ওবামা। দ্বিতীয় জনের অর্থমন্ত্রী হিসেবে নতুন ইনিংসের প্রথম বাজেট। চ্যালেঞ্জটা দু'জনের সামনেই এক। আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়াতে হবে। কিন্তু তা করতে গিয়ে ধারকর্জ বাড়ালে চলবে না। ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সর্বোপরি মানুষের হৃদয় জয়ে জনমোহিনী কর্মসূচিতে টাকা ঢালতে হবে। ওবামা তা-ও সদ্য ক্ষমতায় এসেছেন। কিন্তু মনমোহন সিংহের সরকারের শিয়রে নির্বাচন। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে এটাই তাঁর সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি চিদম্বরম যখন ২০১৩-'১৪ সালের বাজেট পেশ করবেন, তখন কোনও ভাবেই তাঁর পক্ষে রাজনীতির কথা ভুলে শুধুই অর্থনীতির যুক্তি মেনে চলা সম্ভব হবে না।
জনমুখী প্রকল্পে টাকা আসবে কোথা থেকে, সেটাই হল প্রশ্ন। কারণ, আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়াতে গেলে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পথ। খরচ করতে গেলে রাজস্ব আয়ও বাড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু শিল্পায়নের গতি কমে যাওয়ায় রাজস্ব আয়ও কম হচ্ছে। তাই বাড়ছে ঘাটতি। চলতি অর্থবর্ষের রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা প্রথমে ধরা হয়েছিল ৫.১%। পরিস্থিতির চাপে তা বাড়িয়ে ৫.৩% করতে হয়েছে। ঘাটতি কমানোর আর একটি উপায়, ভর্তুকি ছাঁটাই। কিন্তু ভোটের বছরে রান্নার গ্যাস-কেরোসিন থেকে শুরু করে খাদ্য বা সারে ভর্তুকি আরও কতটা কমানো যাবে, ডিজেলের সম্পূর্ণ বিনিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে কি না, সেই প্রশ্ন রয়েছে। গত বারও ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া যায়নি। এ বছর ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাখতে চিদম্বরম বদ্ধপরিকর।
কী ভাবে তা সম্ভব? এমনিতেই বাজেটের বহর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। মনমোহন সিংহের আর্থিক সংস্কারের প্রথম যুগে, ১৯৯০-'৯১ সালে মোট বাজেট ব্যয় ছিল ৯৮ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। এখন তা বেড়ে ১৫ লক্ষ কোটি টাকা ছুঁতে চলেছে। যার মধ্যে খাদ্য-সার-পেট্রোপণ্যে ভর্তুকির পরিমাণ পৌনে দু'লক্ষ কোটি টাকার বেশি। সমস্যা হল, ভর্তুকির বোঝা বাড়লেও পরিকাঠামোর মতো স্থায়ী সম্পদ তৈরির জন্য সরকারি ব্যয় কমেছে বই বাড়েনি। সে সময় মোট বাজেটের ২৫% স্থায়ী সম্পদ তৈরিতে ব্যয় হলে এখন হচ্ছে ১৩-১৪%। অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, "বাজার থেকে ধার করে সরকারি ব্যয় বাড়ানো যায়। কিন্তু সরকারই সব টাকা তুলে নিলে বেসরকারি সংস্থাগুলি কোথা থেকে পুঁজি পাবে? তাদেরও তো বাজার থেকে ঋণ নিয়েই পুঁজির সংস্থান করতে হয়।" উল্টো দিকে, রাজস্ব আয়ের বিশেষ উন্নতি হয়নি। অর্থমন্ত্রী মনমোহনের জমানায় কর বাবদ আয়ের পরিমাণ জিডিপি বা মোট জাতীয় আয়ের ১০ শতাংশের আশেপাশে ঘোরাফেরা করত। এখনও তাই।
তা হলে ঘাটতিকে কী ভাবে লক্ষ্যমাত্রায় বেঁধে রাখা সম্ভব? অর্থ মন্ত্রকের বিভিন্ন দফতরের সচিবরা হিসেবনিকেশের পর দাবি করছেন, অন্তত চলতি অর্থবর্ষে সেটা সম্ভব। প্রথম কারণ, বিলগ্নিকরণ থেকে ৩০ হাজার কোটি এবং স্পেকট্রাম নিলাম করে ৪০ হাজার কোটি টাকা ঘরে তোলার বিষয়ে তাঁরা আশাবাদী। প্রথম দফায় টু-জি স্পেকট্রাম নিলাম করে ৯,৪০০ কোটি টাকা মিলেছে। ৩১ মার্চের আগে দ্বিতীয় দফার নিলাম হবে। অন্য দিকে, বিভিন্ন মন্ত্রকের যোজনা খাতে যে বরাদ্দ হয়েছিল, তারও অনেকটা বেঁচে যাবে। যার পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। মন্ত্রকগুলি সামাজিক উন্নয়ন ও পরিকাঠামো খাতে এই পরিমাণ টাকা এখনও খরচ করতে পারেনি। সাধারণত শেষ দিকে টাকা থাকলে তাড়াহুড়ো করে বেশ কিছু প্রকল্পের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু এ বার ব্যয় সঙ্কোচে তৎপর অর্থ মন্ত্রকের নির্দেশ, শেষবেলায় তাড়াহুড়ো করে বাকি টাকা একসঙ্গে খরচ করে ফেলার প্রয়োজন নেই। তা ছাড়া, আগামী বছরে বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ কাটছাঁট করা নিয়েও দর কষাকষি চলছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকেও ইন্দিরা আবাস যোজনার মতো বিভিন্ন প্রকল্পে যতটা সম্ভব রাশ টেনে ধরার চেষ্টা করছেন চিদম্বরম।
কিন্তু এই ধরনের প্রকল্পে খরচ কমালে আমজনতার মন কী ভাবে জয় করবে মনমোহন সরকার? সেই লক্ষ্যে তাদের পরিকল্পনা, বন্যা ও খরাপ্রবণ এলাকায় জাতীয় গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পের আওতায় কাজ একশো দিন থেকে বাড়িয়ে দেড়শো দিন করা। খাদ্য সুরক্ষা আইন তো রয়েইছে। এ ছাড়া, ভর্তুকি-মূল্যে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের সংখ্যা ছ'টি থেকে বাড়িয়ে ন'টি করেছে সরকার।
চিদম্বরম জানেন, রাজনৈতিক চাপের সামনে তাঁকে মাথা নোয়াতেই হবে। তাই রাজস্ব আয় বাড়ানোর বিষয়েও চিন্তাভাবনা চলছে। কোন রাস্তায় আয় বাড়তে পারে? অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, বেশ কয়েকটি বিকল্প রয়েছে। এক, উৎপাদন শুল্ক ও পরিষেবা করের হার ২% বাড়ানো। এই পথে ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা আয় হতে পারে। তবে তাতে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। দুই, দু'বছর আগে অশোধিত তেলের উপর আমদানি শুল্ক তুলে দেওয়া হয়েছিল। তা ফের বসানো যায়। কিন্তু বাড়তি করের জন্য তেলের দাম না বাড়লে, সরকারকেই বেশি ভর্তুকি গুণতে হবে। তিন, সোনার উপর আমদানি শুল্ক বাড়ানো, যা ইতিমধ্যেই করে ফেলেছে সরকার। চার, অকৃষিজাত পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে আর কমানোর প্রয়োজন নেই। পাঁচ, আয়কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা বদলেরও প্রয়োজন নেই। প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান সি রঙ্গরাজন সব থেকে ধনীদের
জন্য আয়করের হার বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তির উপরেও কর বসানোর প্রস্তাব রয়েছে।
এর পাশাপাশি ঘাটতি কমানোরও ব্যবস্থা হয়েছে। ডিজেলের বিনিয়ন্ত্রণ এবং রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি-সিলিন্ডার বেঁধে দেওয়ার ফলে ভর্তুকি অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। ফলে ঘাটতিও লক্ষ্যণীয় ভাবে কমবে বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। কিন্তু চিদম্বরম জানিয়েছেন, এর ফলে কত ভর্তুকি সাশ্রয় হবে, তা আসন্ন বাজেটে ধরা হবে না। আর এ সবের ফলে যখন তেল সংস্থাগুলির শেয়ারের দাম বাড়ছে, তখন অয়েল ইন্ডিয়ায় আংশিক বিলগ্নিকরণেরও পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। তাদের আশা, এর ফলে মোটা অঙ্কের টাকা তোলা সম্ভব।
কিছু দিন আগে চিদম্বরম বলেছিলেন, অর্থনীতির অসুখ সারাতে তেতো ওষুধ গেলানোর প্রয়োজন। তাতে প্রাথমিক ভাবে একটু যন্ত্রণা হবে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে লাভ হবে। এই যখন পরিস্থিতি, তখন বাজেটে কতটা তেতো দাওয়াই দিতে পারেন অর্থমন্ত্রী, সেটাই এখন দেখার।
- আনন্দবাজার পত্রিকা
ভারতে মহিলাদের পরিস্থিতিতে কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না, জানা কথা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ , ধর্ম ও অর্থব্যবস্থায় সম্ভব নয়। আমরা সবাই জানি ছেলেদের যে কোনও ক্রিকেট ম্যাচের খবর কত গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়, টেলিকাস্ট হয়। অথচ ভারতে মহিলা ক্রিকেটের বিশ্বকাপ চলছে, উদ্বোধনী ম্যাচে বিশ্বকাপে প্রথম কোনও ভারতীয় মেয়ে সেন্চুরি করল,তাঁর সাক্ষাত্কার কোন কাগজে ছাপা হল জানতে চাই।আমরা ত সারা বিশ্বের খুটি নাটি খেলার খবর পাতার পর পাতা সব কাগজে পড়তে অভ্যস্ত।কামিনী মিতালি ঝুলন পুনমদের বিশ্বকাপ অভিযান নিয়ে কোন কাগজের নিজস্ব প্রতিনিধি বিশেষ প্রতিনিধি বিদেশ যাত্রার বদলে স্দেশের মাটিতে লিখেছেন?যারা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে পুনম রাউত, কামিনী, হরমন ও ঝূলনের ব্যাটিং দেখেছেন স্টার স্পার্ট্সর দৌলতে, তাঁরাই বলুন আইপিএল, স্থানীয় লিগ, ঘরোয়া প্রতিযোগিতা ও হালে ভারত পাকিস্তান ও ভারত ইংল্যান্ড ম্যাচে ছেলেরা যে খেল দেখাল, এই মেয়েদের কৃতিত্ব তার তুলনায় কম কিসে!
ভারত-- ২৮৪/৬, ওয়েস্ট ইন্ডিজ-- ১৭৯
জয় দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করল ভারতের মহিলা দল। শুধু জয় বললে ভুল হবে, বিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিয়ে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ শুরু করলেন ঝুলন গোস্বামীরা। বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ের ব্রাবোন স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১০৫ রানে হারিয়ে দিল ভারতের মেয়েরা। এদিন ভারতকে জিতিয়ে আনার দুই নায়িকা থিরুশ কামিনি আর ঝুলন গোস্বামী।
মহিলা বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের শুরুটা ভালই হল ভারতের। প্রথমে ব্যাট করে ভারত তুলল ৬ উইকেটে ২৮৪। টসে হারের পর ব্যাট করতে নেমে ভারতের দুই ওপেনার দুর্দান্ত খেললেন।
ওপেনিং জুটিতে পুনম রাউত-থিরুশ কামিনি যোগ করলেন ১৭৫ রান। ৩৭ ওভারে প্রথম উইকেট হারানোর পর তিন নম্বরে নেমে ঝড় তুললেন ঝুলন গোস্বামী। বাংলার ঝুলন ২১ বলে ৩৬ রানের দারুণ একটা ইনিংস খেললেন। শেষের দিকে পরপর উইকেট পড়ে গেলেও ভারত ২৮৪ রানের ইনিংস গড়ল। মুম্বইয়ের ব্রাবোন স্টেডিয়ামের পিচে যে রানটাকে বেশ বড় রান হিসাবেই দেখা হচ্ছে।
সোনী সোরী ও মণিপুর কশ্মীরের মা বোনদের পর দিনের পর দিন অত্যাচার চলছে। তার বিচার হয় না। দিল্লী ধর্ষণ রাষ্ট্রপতির দেশকে সম্বোদনের থিম হয়ে যায়। একটি কমিশন গড়া হয়েচিল, তার সুপারিশ এক কথায় নসাত করে দিয়ে আন্দোলনকারী সুশীল সমাজের দাবি মেনে অর্ডিন্যান্স জারি হল। ওবিসি, এসসি, এসটি ও সংখ্যালঘুদের আন্দোলনের ফলে আইন বদলে যাওয়ার নজির আছে কি?
নারী নির্যাতন রুখতে অর্ডিন্যান্স আনছে কেন্দ্রীয় সরকার। ওই অর্ডিন্যান্সে চরম নির্যাতনের ঘটনায় ফাঁসি অথবা আমৃত্যু কারাদণ্ডের বিধান দেওয়া হয়েছে।
গণধর্ষণের ক্ষেত্রে কুড়ি বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। নতুন অর্ডিন্যান্সে বদলে যাচ্ছে ধর্ষণের সংজ্ঞাও। সেখানে একাধিক ধরনের নির্যাতনকে যৌন নিগ্রহের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে অ্যাসিড হামলাও।
এ ছাড়া মহিলাদের পিছু নেওয়া বা অন্য কোনও ভাবে তাঁদের হেনস্থা করাকেও অপরাধের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
জে এস ভার্মা কমিশনের সুপারিশ খতিয়ে দেখে ক্যাবিনেট আজই এই নতুন আর্ডিন্যান্সে ছাড়পত্র দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আজ এবিষয়ে বৈঠক হয়।
নতুন অর্ডিন্যান্সে সিলমোহরের জন্য তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছে।
বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ উঠল পুলিসের বিরুদ্ধে। পাটুলি থানার প্রাক্তন এসআই রাজীব চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে তিনি মেটিয়াবুরুজে এসএসপিডিতে কর্মরত ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ৩৭৬ ও ৪১৭ ধারায় পাটুলি থানায় ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
গতকাল রাতে রাজীব চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ আলিপুর কোর্টে পেশ করা হবে তাঁকে।
উত্তর ২৪ পরগনা: ফের ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ পাওয়া গেল বারাসতে৷ প্রতিবাদ করায় ওই ছাত্রীর বাবা ও দাদা দুষ্কৃতীদের হাতে প্রহৃত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
২৭ জুলাই, ২০১২:
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে কটূক্তি৷ প্রতিবাদ করে প্রহৃত বাবা৷
২০ অগাস্ট, ২০১২:
ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করলে কিশোরীকে মারধরের অভিযোগ৷
০১.০২.১৩
কাচকল এলাকায় ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ৷ প্রতিবাদ করে প্রহৃত বাবা ও দাদা৷
শ্লীলতাহানির ঘটনাটি ঘটেছে এদিন দুপুরে বারাসতের কাচকল এলাকায়৷ একাদশ শ্রেণীর ওই ছাত্রীর অভিযোগ, দুপুরে স্কুল থেকে ফেরার সময় কাচকল এলাকায় কয়েকজন মত্ত যুবক তাঁকে দেখে কটূক্তি করে, তার হাত ধরে টানাটানিও করে৷ কোনওক্রমে বাড়ির লোককে খবর দেয় সে বাডির লোকজন এসে প্রতিবাদ করলে দুষ্কৃতীরা ছাত্রীর বাবা ও দাদাকে ইট দিয়ে আঘাত করে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ ছাত্রীর বাবাকে ভর্তি করা হয়েছে বারাসত হাসপাতালে৷ এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, বাকিরা পলাতক৷ স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় বার বার এই ধরনের ঘটনা ঘটলেও পুলিশ নিষ্ক্রিয়৷
http://abpananda.newsbullet.in/state/34-more/33136-2013-02-01-16-07-12
কলকাতা: শ্যামবাজার, রিজেন্ট পার্ক, বাগবাজার, কসবা, পার্ক স্ট্রিটের পর এবার শোভাবাজার৷ কলকাতার বুকে পরপর ঘটেই চলেছে শ্লীলতাহানির ঘটনা৷
বুধবার সকালে পার্ক স্ট্রিট চত্বরে ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগের পর ওইদিন রাতেই ফের তরুণীর শ্লীলতাহানির অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় শোভাবাজারে৷ জানা গিয়েছে, বুধবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ এক তরুণীর পথ আটকায় একটি গাড়ি৷ তাকে নিয়ে পাঁচ দুষ্কৃতী টানাহ্যাঁচড়া করতে থাকে। এরপর তাকে গাড়িতে তুলে শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ৷ তরুণীর চিত্কার শুনে ছুটে যান স্থানীয় বাসিন্দারা৷ তাঁরা এক যুবককে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন৷ ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এদিন শোভাবাজার এলাকা থেকেই আরেক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ এদিন ধৃতদের ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়৷ তাদের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা রুজু করেছে পুলিশ৷ বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে৷ ঘটনার পর গাড়িটিকে আটক করেছে পুলিশ৷ গাড়ি থেকে একটি মদের বোতলও উদ্ধার হয়েছে৷ শহর কলকাতার জনবহুল জায়গায় ফের দুষ্কৃতি দৌরাত্ম্য। বুধবার রাত সাড়ে আটটা। শোভাবাজার এলাকায় যুবতীর চিত্কারে স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে আসেন৷ তাঁরাই এক অভিযুক্তকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন৷ বাকি চারজন পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে গাড়িটিকে আটক করেছে বটতলা থানার পুলিশ৷ গাড়িতে মদের বোতল পাওয়া গিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর৷
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের একজন অভিযোগকারিণীর পূর্বপরিচিত৷ কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ওই তরুণীকে অপহরণের চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে৷ এমনকী, স্থানীয় বাসিন্দারা বাধা দিতে এলে তাঁদের কয়েকজনকেও অভিযুক্তরা নাকি মারধর করে৷
সোমবারের পর বুধবার সকাল৷ সকালের পর ফের রাত৷ শহরে ঘনঘন শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠায় মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷
http://abpananda.newsbullet.in/kolkata/59-more/33074-2013-01-31-06-35-40
কলকাতা: শেষ পর্যন্ত এক বছরের মাথায় আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি ফাস্ট ট্র্যাক থার্ড কোর্টে পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ মামলার চার্জ গঠন করা হবে করা হবে বলে জানাল আদালত৷ মঙ্গলবারই সুপ্রিম কোর্টে পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডে দুই অভিযুক্তের জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যায়৷ তারপরই বৃহস্পতিবার নগর দায়রা আদালতের ফাস্ট ট্র্যাক থার্ড কোর্টের বিচারক মধুছন্দা বোস চার্জ গঠনের দিন ঘোষণা করেন।ফেব্রুয়ারি মাসে মামলাটির বিচারও শুরু হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে৷
আদালত সূত্রে খবর, আগের শুনানিতে অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীরা সিসিটিভির ফুটেজ সম্বলিত বাজেয়াপ্ত করা হার্ড ডিস্কগুলির কপি চেয়েছিলেন৷ সেইমতো আদালতের নির্দেশে বিচারকের সামনে হার্ড ডিস্কগুলির কপি দেওয়ার জন্য গত মঙ্গলবার লালবাজারের গোয়েন্দারা কম্পিউটার ও হার্ড ডিস্ক-সহ আদালতে আসেন৷ সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞও৷ তিনিই আদালতে জানান, নির্দিষ্ট মডেলের কম্পিউটার ও সফ্টঅয়্যার থাকলে তবেই কপি করা সম্ভব৷ এদিনের শুনানিতে হার্ড ডিস্কের কপি তাঁরা আর চান না বলে জানান অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীরা৷
শুনানিতে লালবাজারের পক্ষে সরকারী আইনজীবী ফের হার্ড ডিস্কগুলি হায়দরাবাদের ফরেন্সিক গবেষণাগারে পাঠানোর আবেদন জানান৷ ফুটেজ পুনরুদ্ধারের জন্যই সেগুলি পাঠানো প্রয়োজন বলে দাবি করছেন গোয়েন্দারা৷ তবে ওই আবেদনের বিরোধিতা করেন অভিযুক্তদের আইনজীবীরা৷ তাঁদের মতে, এতে বিচার শুরু হতে দেরী হবে৷ এমনকী এই সুযোগে তদন্তকারী সংস্থা সিসিটিভি ফুটেজে কারচুপি করতে পারেও বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী কৃষ্ণকান্ত তিওয়ারী।
হার্ড ডিস্ক থেকে কীভাবে ঘটনার দিনের সিসিটিভির ফুটেজ মুছে গেল, তা জানতে এদিনও বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান অভিযোগকারিণীর আইনজীবী৷ সেই আবেদনেরও বিরোধিতা করেন অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীরা৷ শুনানি শেষে বিচারক জানান, ৬ ফেব্রুয়ারি তিনি রায় জানাবেন৷
২০১২-র ৫ ফেব্রুয়ারির রাতে পার্ক স্ট্রিটে পাঁচতারা হোটেল থেকে বেরিয়ে চলন্ত গাড়িতে তাঁকে গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এক অ্যাংলো ইন্ডিয়ান যুবতী৷ সেই অভিযোগের ভিত্তিতে রুজু হওয়া মামলাকে কেন্দ্র করে দানা বাঁধে নানা বিতর্ক, শুরু হয় জল্পনা৷ সেই মামলার এতদিনে চার্জ গঠনের দিন ঘোষণায় আপাতত স্বস্তিতে লালবাজার৷
http://abpananda.newsbullet.in/kolkata/59-more/33088-2013-01-31-12-50-36
নয়াদিল্লি: দীর্ঘ অপেক্ষার পর মিলল সম্মতি৷ অবশেষে লোকপাল বিলে সম্মতি দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা৷ এরপর এই বিল পেশ হবে রাজ্যসভায়৷ সেখানে সম্মতি পেলে তারপর লোকসভায়৷ প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী এদিন জানান, ১৬টি সংশোধনীর মধ্যে ১৪টি মেনে নেওয়া হয়েছে৷
নারায়ণস্বামী এদিন জানিয়েছেন, নয় সদস্যের লোকপাল নির্বাচন করবেন প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি এবং বিরোধী দলনেতা৷
রাজনৈতিক দলগুলি লোকপালের আওতায় থাকবে৷ তবে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত এনজিও এবং ধর্মীয় সংস্থাগুলি লোকপালের আওতায় থাকবে না৷
লোকপালের সদস্য কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারবে না৷ সিবিআই লোকপালের আওতায় থাকবে না৷ ফলে অফিসাররা প্রধান দফতরেই রিপোর্ট করবেন৷ তবে কোনও তদন্তকারী অফিসারকে বদলির আগে লোকপালের অনুমোদন লাগবে৷ তবে সিলেক্ট কমিটির সংশোধনী খারিজ করে জানানো হয়েছে, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তকে প্রাথমিক তদন্তের পরও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে৷
তবে এই বিলের কড়া সমালোচনায় সরব বিজেপি৷ প্রধান বিরোধী দলের মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদ অভিযোগ করেছেন, সিবিআই-কে স্বাধীনতা দেওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে না সরকার৷ লোকপাল নিয়োগের বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখার ব্যাপারেও সরকার সিরিয়াস নয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
অন্যদিকে এই বিলকে হাতিয়ার করে ফের প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনায় মুখ খুলেছেন অণ্ণা হজারে৷ তাঁর দাবি, মানুষ আর বিশ্বাস করতে পারবে না যে দুর্নীতি দমনে মনমোহন-সনিয়া কোনও কঠোর বিল আনতে পারেন৷
http://abpananda.newsbullet.in/national/60-more/33100-2013-01-31-16-47-45
কেন্দ্রীয় সরকারের লোকপাল বিলের নতুন খসড়াকে দুর্বল আখ্যা দিলেন আন্না হাজারে। তার সঙ্গেই তিনি জানিয়ে দিলেন দুর্নীতি রোধের নামে চলে আসা এই লোকপাল বিল দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রতিশ্রুতি দেওয়া স্বত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী পদকে লোকপাল বিলের আওতায় না আনার জন্য ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তিনি।
লোকপালবিলের দাবিতে আন্দোলনের মুখ্য প্রবক্তা আন্না হাজারে বেশ কিছুদিন ধরেই ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিলেন। আন্না হাজারের অন্যতম সহায়ক অরবিন্দ কেজরিয়াল ইতিমধ্যেই তাঁর সঙ্গ ত্যাগ করেছেন। গতকাল সরকার সংসদে লোকপাল বিলের নতুন খসড়া প্রকাশ করে। এই বিলের বিরোধিতা করে ফের অনশন আন্দোলনে নামার ইঙ্গিত দিলেন প্রবীণ এই সমাজকর্মী। জানিয়ে দিলেন প্রয়োজন হলে ২০১৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে আবার তিনি অনশনে বসবেন। এমনকী বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে তিনি সারা দেশ সফর করারও পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
আজ আন্না হাজারে নতুন লোকপাল বিলের তীব্র সমালোচনা করলেও, গতকাল তাঁর অন্যতম অনুগামী কিরণ বেদী লোকপাল বিলের নতুন খসড়ার ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন।
http://zeenews.india.com/bengali/sports.html
সমাজতত্ত্ববিদ আশিস নন্দীর গ্রেফতারির উপর স্থগিতাদেশ জারি করল সুপ্রিমকোর্ট। তবে একই সঙ্গে আশিস নন্দীর মন্তব্যেরও তীব্র সমালোচনা করেছে শীর্ষ আদালত। প্রসঙ্গত, গত শনিবার জয়পুর সাহিত্য উত্সবে একটি আলোচনাচক্রে তফশিলি জাতি-উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করে দেশজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েন আশিস নন্দী। তিনি বলেন, "এইসব সম্প্রদায়ের মধ্যেই দুর্নীতি বেশি।" এই মন্তব্যের জেরে আশিস নন্দীর বিরুদ্ধে শমন জারি করেছিল আদালত। রবিবারই তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে রাজস্থান পুলিস।
আশিস নন্দীর আইনজীবী শীর্ষ আদালতে এই প্রবীণ সমাজতত্ত্ববিদের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে আবেদন করেছিলেন। আজ তার রায় দিতে গিয়ে আশিস নন্দীর গ্রেফতারি স্থগিত করলেও তাঁকে উদ্দেশ্যকরে সংশ্লিষ্ট বিচারপতিদের বেঞ্চ জানান এই রকমের মন্তব্য করার কোন অধিকারই আশিস নন্দীর নেই।
গোটা ঘটনায় ইতিমধ্যেই ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন আশিস নন্দী। একইসঙ্গে, তিনি দাবি করেছেন তাঁর কথার ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তফশিলি জাতি-উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির কেউ দুর্নীতিতে জড়ালে তা প্রকাশ্যে আসে, কিন্তু উচ্চবর্ণের দুর্নীতি ঢাকা পড়ে যায় - আসলে তিনি এমন কথাই বলতে চেয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন তিনি।
বাতিল হয়েছে সলমন রুশদির কলকাতা সফর। কিন্তু কেন?
রুশদি লিখছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই তাঁর কলকাতা সফর বাতিল করেছে পুলিস। কিন্তু সরকার কী বলছে? সেখানে তো নানা মুনির নানা মত।
সলমন রুশদির কলকাতা সফর বাতিল সম্পর্কে বৃহস্পতিবারই একটা ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। রাজ্য সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক সৌগত রায় বলেছিলেন, "সলমন রুশদি শহরে এলেন, মানুষ জানল এবং বিক্ষোভ শুরু করল... এটা আইনশৃঙ্খলার সমস্যা তৈরি করে। তাই সরকার তাঁকে সফর বাতিলের অনুরোধ জানায়। রাজ্য সরকার মোটেই কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি।"
শুক্রবার রাজ্য সরকারের আরেক উপদেষ্টা, তৃণমূলের আরেক সাংসদ সুলতান আহমেদ আবার মুখ্যমন্ত্রীকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন। তবে বক্তব্যে তিনি বুঝিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই বাতিল হয়েছে রুশদির কলকাতা সফর। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, "উনি ভাল কাজ করেছেন। যে ব্যক্তি বিশ্ব সাহিত্যকে নোংরা করা ছাড়া আর কিছুই করেন তাঁকে আসতে না দিয়ে মমতা ব্যানার্জি ঠিক কাজই করেছেন।"
মহাকরণে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম আবার প্রসঙ্গটাই এড়িয়ে গেলেন নো কমেন্টস বলে।
সেভাবেই প্রশ্নটা এড়িয়ে গেলেন স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
এর মধ্যেই আরেক মন্ত্রী আবার বলে দিলেন, আমন্ত্রণ পেয়েও আসতে রাজি হননি রুশদিই। রাজ্যের মন্ত্রী রচপাল সিং বলেন, "ওনাকে (সলমন রুশদি) আমন্ত্রণ জানানো হয়। গিল্ড বা কেউ একটা ওনাকে আমন্ত্রণ জানায়। উনিই আসতে রাজি হননি।"
কে ঠিক? কেনই বা সরকারের নানা মুখের পরস্পরবিরোধী মন্তব্য। ইস্যুটাই শুধু এক, সলমন রুশদির কলকাতা সফর বাতিল।
পড়ুন
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই কলকাতা সফর বাতিল, টুইটারে বিস্ফোরক সলমন রুশদি
বহুত্বের নির্বাসন | |||
বহুত্ববাদী হওয়ার পরীক্ষায় ভারতীয় গণতন্ত্র ক্রমেই অকৃতকার্য হইয়া চলিয়াছে। তামিলনাড়ুতে যদি কমল হাসানের চলচ্চিত্রের প্রদর্শন বন্ধ করার অসহিষ্ণুতা সরকার ও জনসমাজের ক্ষুদ্র একাংশকে পাইয়া বসে, পশ্চিমবঙ্গে তবে সলমন রুশদির পদার্পণের সম্ভাবনা অঙ্কুরেই নাশ করিতে কায়েমি স্বার্থচক্রীদের অপকৌশলে প্রশাসন মদত দেয়। ইহাকে 'সংস্কৃতির পীঠস্থান কলিকাতার লজ্জা' আখ্যা দেওয়া স্বাভাবিক। সঙ্গতও। কিন্তু সত্য ইহাই যে, এমন লজ্জা এই প্রথম এই শহর ও তাহার নাগরিকদের কলঙ্কিত করিল না। ২০০৭ সালের নভেম্বরে লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে কলিকাতা হইতে নির্বাসিত করিতে মৌলবাদীদের ষড়যন্ত্রে তদানীন্তন শাসক গোষ্ঠী বামফ্রন্ট যে ন্যক্কারজনক ভূমিকা পালন করে ও পন্থা-পদ্ধতি অবলম্বন করে, তাহার মধ্যেও ওই অসহিষ্ণুতা এবং মৌলবাদকে তোষণ ও তাহার কাছে নির্লজ্জ আত্মসমর্পণের লজ্জা নিহিত ছিল। তসলিমা বেশ কিছু কাল কলিকাতায় ভারত সরকারের অতিথি হিসাবে বসবাস করার পর সহসা যে-ভাবে বিনা প্ররোচনায় তাঁহাকে রাজ্য ছাড়া করিতে কিছু স্বার্থসন্ধানী উঠিয়া পড়িয়া লাগেন এবং সরকার যে-ভাবে আইনশৃঙ্খলার দোহাই দিয়া এক সাহিত্যিকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার দায় এড়ায়, তাহা গভীর লজ্জার। সলমন রুশদি অবশ্য কলিকাতায় বাস করিতে আগ্রহী ছিলেন না, তিনি কেবল তাঁহার বন্দিত উপন্যাস 'মিডনাইট্স চিল্ড্রেন'-এর চলচ্চিত্রায়নের একটি প্রচার অনুষ্ঠানে, তাহার সহিত হয়তো অন্য কিছু অনুষ্ঠানেও, যোগ দিতে আসিতেছিলেন। একই ধরনের অনুষ্ঠান তিনি অন্যান্য ভারতীয় শহরে করিয়াছেন। এই চলচ্চিত্র বা তাহার ভিত্তিস্বরূপ উপন্যাসটিতে ইসলামের, পয়গম্বরের কোনও আলোচনা নাই। না-থাক, কলিকাতার শ'খানেক মৌলবাদী বিমানবন্দরে প্ল্যাকার্ড লইয়া হাজির হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে 'সংখ্যালঘুর ধর্মীয় ভাবাবেগের স্পর্শকাতরতা' মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্মনিরপেক্ষ সরকারকে সতর্ক করিয়া থাকিবে। নানা সূত্রে যে-সকল তথ্য মিলিয়াছে, তাহাতে অবশ্য সন্দেহ ঘনাইতেই পারে যে, ওই মুষ্টিমেয় প্রতিবাদীরা রুশদির কলিকাতায় আগমনের সংবাদটাও জানিতেন না, তাঁহাদের সে সমাচারও রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক স্তর হইতেই জানানো হয়, যাহাতে তাঁহারা বিবৃতি-বিক্ষোভ মারফত 'সংখ্যালঘুর ভাবাবেগ'-এর বিষয়টিকে সরকারের সামনে অজুহাত রূপে খাড়া করিয়া দিতে পারেন। সমগ্র ঘটনাপরম্পরায় এমন রহস্যময়তা রহিয়াছে যে, রুশদিকে কলিকাতায় নামিতে না-দিবার সিদ্ধান্তটিতে প্রশাসনের পূর্বপরিকল্পনার আভাস মেলে। একজন লেখককে তাঁহার মতামতের জন্য বিতাড়িত করা কিংবা শহরে নামিতে না দেওয়া কোনও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অভিজ্ঞান নয়। পশ্চিমবঙ্গ বুঝি-বা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা শাসিত হইলেও আজ আর অবাধ বা মুক্ত গণতন্ত্রের পীঠস্থান নয়, কেবল শাসকদের অনুমোদিত শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার সংকীর্ণ, অপরিসর খাঁচা। এই খাঁচার ভিতর কোনও ভিন্নমতাবলম্বীর আসা-যাওয়া নিষিদ্ধ। বহুত্বের উদ্যাপন নয়, এখানে কেবলই একত্বের সমারোহ। ইহা শাসকের রাজনৈতিক স্বার্থকে সিদ্ধ করে, পঞ্চায়েত নির্বাচন আসন্ন হইলে তাহার সাম্প্রদায়িক স্বার্থকেও সিদ্ধ করিতে পারে, কেননা সাম্প্রদায়িক বিভাজন রাজ্যের নির্বাচনী রাজনীতিরও মেরুকরণ ঘটাইয়া দিয়াছে। তাই যে-কারণে মসজিদের ইমাম-মুয়েজ্জিনদের সরকারি ভাতা প্রদান করা হয়, মাদ্রাসা-শিক্ষার বিস্তারে তহবিল ঘোষিত হয়, কার্যত সেই একই কারণে রুশদির কলিকাতা পদার্পণও নিষিদ্ধ হইয়া যায়। কলিকাতা ও পশ্চিমবঙ্গে ভবিষ্যতে বোধ করি আর রামমোহন-রবীন্দ্রনাথ কিংবা নজরুল-মির মোশারফ হোসেনরা নন্দিত হইবেন না, দুই পার্শ্বে সুলতান আহমেদ, ইদ্রিস আলি, ত্বহা সিদ্দিকি কিংবা নাখোদা মসজিদের ইমামদের লইয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা করিবে। তাহাতে যদি বহুত্ববাদের শ্বাস রুদ্ধ হইয়া আসে, আসুক। সাম্প্রদায়িক ভাবাবেগের যূপকাষ্ঠে নিত্যনব উন্মেষশালিনী বুদ্ধি ও মেধা চর্চাকে বলি দিয়াই সোনার বাংলায় ঘাসফুল ফুটিবে। http://www.anandabazar.com/1edit1.html
|
সাহিত্য জগৎ থেকে সাধারণ মানুষ যখন সলমন রুশদির টুইট নিয়ে তোলপাড় তখন মমতা ব্যানার্জির প্রসংশায় উচ্ছ্বসিত সুলতান আহমেদ। মুখ্যমন্ত্রীকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় অভিনন্দন জানিয়ে তৃণমূল সাংসদের সাফ কথা, "উনি ভাল কাজ করেছেন। যে ব্যক্তি বিশ্ব সাহিত্যকে নোংরা করা ছাড়া আর কিছুই করেন তাঁকে আসতে না দিয়ে মমতা ব্যানার্জি ঠিক কাজই করেছেন।"
তিনি আরও বলেন, "আমাদের যা সংস্কৃতি। রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের সংস্কৃতি আমাদের। এই নোংরা লেখনীকে বাঙালি জনগণ, বাংলা ভাষা, কলকাতার মাটি কোনওদিন স্বাগত জানায়নি। স্বাধীনতা মানে কাউকে ছোট করা নয়, প্রফেটকে, ঋষি মুনিকে অপমান করা নয়। আমাদের দেশের সভ্যতা আমাদের এই শিক্ষা দেয় না।"
আজ সকালেই সলমন রুশদির বিস্ফোরক টুইট প্রকাশ্যে আসে। তিনি লিখেছেন, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর কলকাতায় আসা আটকানোর জন্য পুলিসকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই নন। তাঁর দলের সাংসদ সৌগত রায়ের বিরুদ্ধেও টুইটারে অভিযোগ জানিয়েছেন রুশদি।
সুলতান আহমেদের ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন এখানে
বিতর্কের সূত্রপাত পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী রেহমান মালিকের মন্তব্য নিয়ে৷ শাহরুখের নিরাপত্তার দিকে ভারত সরকারকে আরও বেশি উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী৷ মালিকের আগে ২৬/১১-র মুম্বই জঙ্গি হানার অন্যতম মাথা বলে চিহ্নিত হাফিজ মহম্মদ সইদ তো সরাসরি তাঁকে পাকিস্তানে গিয়ে বসবাসের পরামর্শ দিয়ে বলেছিলেন, তাঁরা শাহরুখের নিরাপত্তার সুনিশ্চিত করবেন।
আজ মালিকের কটাক্ষের পাল্টা জবাব দেয় ভারত৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব আর কে সিংহ বলেন, ভারত সরকার দেশবাসীকে নিরাপত্তা দিতে সক্ষম৷
দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করায় কংগ্রেস, বিজেপি, শিবসেনা একজোট হয়ে পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রীর সমালোচনায় মুখর হয়৷
বিতর্কের সূত্রপাত অবশ্য শাহরুখের একটি লেখা নিয়েই৷ সম্প্রতি একটি পত্রিকায় শাহরুখের ওই লেখা প্রকাশিত হয়৷ লেখাটির কিছু বক্তব্যে প্রশ্ন মাথাচাড়া দেয়৷ তবে শাহরুখের বক্তব্য, তাঁর লেখা নিয়ে অযথা বিতর্ক বাড়ানো উচিত্ নয়৷ তিনি একজন অভিনেতা৷ অভিনয় নিয়েই তিনি থাকতে চান৷
জানা গিয়েছে, রুশদির কলকাতা সফরের খবর রটে যেতেই রাজ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী বইমেলার উদ্যেক্তাদের কাছে দু'বার ফোনে খোঁজ নেন৷ বইমেলা কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে জানায়, এধরনের কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন তারা করেননি৷ গিল্ড জানায়, রুশদিকে তাঁরা বইমলার কোনও অনুষ্ঠানেই আমন্ত্রণ জানাননি৷
খবর ছিল, ছবির প্রচারের জন্য একটি পাঁচতারা হোটেলে সাংবাদিক বৈঠকে করবেন দীপা মেহতা-রাহুল বসুরা৷ থাকতে পারেন রুশদিও৷ সেখানেও আপত্তি জানায় পুলিশ৷ ওই সংস্থাকে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়, কোনও ভাবেই রুশদিকে সাংবাদিক বৈঠকে আসার অনুমতি দেওয়া হবে না৷
মঙ্গলবারই সন্ধ্যায় অবশ্য মুম্বই পুলিশের তরফে কলকাতা ও বিধাননগর পুলিশকে জানানো হয়, রুশদি কলকাতায় আসবেন না৷ কেন? সদুত্তর পাওয়া যায়নি৷
বুধবার ছবির প্রচারে একলাই আসেন অভিনেতা রাহুল বসু৷ তিনি রুশদিকে ঘিরে এই বিতর্ককে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন৷ এ ধরনের ঘটনা এড়াতে সরকারকে আরও যত্নবান হওয়ার আবেদনও করেন তিনি৷
কলকাতা বইমেলা প্রাঙ্গণে বুধবারের লিটারারি মিটে হাজির হন লেখক অমিতাভ ঘোষ৷ তাঁর অভিমত, রুশদি-বিতর্ক অনভিপ্রেত ও দুর্ভাগ্যজনক৷
বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রর বক্তব্য, রুশদিই আসবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন৷ তাই যে বিষয়টি হচ্ছেই না, তা নিয়ে বিতর্ক নিষ্প্রয়োজন৷
কেন হঠাত্ রুশদি বাতিল করলেন তাঁর সফর? কেনই বা রাজ্য সরকার এত তত্পর হল, তাঁর সফর আটকাতে? ঘোষণা থাকা সত্ত্বেও কেন এলেন না দীপা মেহতা? উঠছে প্রশ্ন, দানা বাঁধছে বিতর্ক৷
কলকাতা সফর বাতিলে রুশদির তোপে মুখ্যমন্ত্রী
এক লিখিত বিবৃতিতে রুশদি জানিয়েছেন, যে দিন তাঁর কলকাতায় আসার কথা ছিল, তার আগের দিন তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়, কলকাতা পুলিশ তাঁকে শহরে ঢুকতে দেবে না৷ বলা হয়, তিনি যদি আসেনও, এয়ারপোর্ট থেকেই তাঁকে ফিরে চলে যেতে হবে৷ রুশদি লিখেছেন, 'আমাকে জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধেই নেওয়া হয়েছে এই সিদ্ধান্ত৷ আমার মনে আছে, গত বছর জয়পুর উত্সবের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, তিনি আমাকে কলকাতায় ঢুকতে দেবেন না৷ তিনি সে কথা রেখেছেন৷'
কলকাতা লিটারারি মিটে তাঁর আমন্ত্রণ নিয়েও রুশদির বক্তব্য খুব স্পষ্ট৷ বলেছেন, 'দীপা মেহতা, রাহুল বোস, রুচির যোশিদের সঙ্গে আমারও কলকাতা লিট মিটে অংশ নেওয়ার কথা ছিল৷ সংগঠকরা সে কথা ভালোমতই জানতেন৷ ওঁরাই বলেছিলেন, আমি ওখানে সারপ্রাইজ গেস্ট হিসেবে থাকব৷ এখন ওঁরা যদি সে কথা অস্বীকার করেন, তা হলে তা অসততা৷ সত্যি বলতে কি, আমার কলকাতায় যাওয়ার প্লেনভাড়াও ওঁরাই দিয়েছিলেন৷'
কলকাতা পুলিশের উপরও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সাহিত্যিক৷ 'আমি যাতে যেতে না পারি তার ব্যবস্থা পুলিশই করে রেখেছিল৷ পুলিশেরই কেউ আমার সম্পূর্ণ ভ্রমণসূচি মিডিয়াকে জানিয়ে দিয়েছিলেন৷ কোন ফ্লাইটে আমার যাওয়ার কথা, কোথায় থাকার কথা, কখন লিটারারি মিটে যাওয়ার কথা, কোন ফ্লাইটে ফেরার কথা-সব বলে দিয়েছিলেন৷ আর কী দরকার? আমার যখন পৌঁছনোর কথা ছিল, সেই সময় অন্তত ১০০ বিক্ষোভকারী হাজির হয়ে গিয়েছিলেন এয়ারপোর্টে৷ প্রশাসন থেকে পরিকল্পনা করেই এ কাজ করা হয়েছিল বলে আমার বিশ্বাস৷'
রুশদির এই মন্তব্যকে ঘিরে উত্তপ্ত কলকাতার রাজনৈতিক মহল৷ মুখ্যমন্ত্রী নিজে যদিও মুখ খোলেননি, কিন্ত্ত তাঁর দলের নেতারা সকলেই লেখককে শহরে আসতে না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সুলতান বলেছেন, 'রুশদিকে আসতে না দিয়ে উচিত কাজই করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷' রুশদিকে শয়তান বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'নোংরা মন্তব্যের সংস্কৃতি আমাদের দেশ কোনও দিন শেখায়নি৷ বাকস্বাধীনতার নাম করে কেউ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করবেন- বাঙালির সংস্কৃতি এমন অসভ্যতাকে কখনও প্রশ্রয় দেয় না৷'
সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল সাংসদ কবীর সুমনও৷ বলেছেন, 'আমার মনে হয় না, মুখ্যমন্ত্রী লেখককে অপমান করার উদ্দেশ্য নিয়ে এমন পদক্ষেপ করেছেন৷ উনি হয়তো নিরাপত্তাজনিত কারণেই এটা করতে বাধ্য হয়েছে৷ হয়তো চাননি রুশদির কোনও অনিষ্ট হোক৷ তবে কেউ একজন নিশ্চয় মিথ্যা বলছেন৷ সলমন রুশদিকে কিন্তু হেঁজিপেঁজিদের পাশে বসানোর কোনও মানে হয় না৷ দুটো পয়সার জন্য উনি অত দূর থেকে মিথ্যা কথা বলবেন, এটা আমি বিশ্বাস করতে পারব না৷ বরং এখানেই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার একটা চেষ্টা দেখতে পাচ্ছি৷' মুখ্যমন্ত্রীকে সমর্থন জানিয়ে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ও বলেছেনে, 'রুশদিকে কলকাতায় না আসার অনুরোধ জানিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল৷' মমতার মন্ত্রিসভার সদস্য রচপাল সিংয়ের অবশ্য দাবি, রুশদি নিজেই কলকাতায় আসতে চাননি৷
ছাত্রীর শ্লীলতাহানি রুখতে গিয়ে আক্রান্ত বাবা ও দাদা
আবার যেন রাজীব-কাণ্ডেরই পুনরাবৃত্তি৷ শুক্রবার দুপুরে বাড়ির কাছেই বোনের শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হলেন দাদা৷ ছেলে এবং মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে বেধড়ক মারের হাত থেকে রেহাই পেলেন না বাবাও৷ ইট দিয়ে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হল৷ হইহল্লা শুনে স্থানীয় লোকজন ওই দুষ্কৃতীদের ধাওয়া করে এক জনকে ধরে ফেলেন৷ মারধরের পর তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়৷
গত ২৭ জুলাই বারাসত স্টেশন চত্বরে এক উচ্চমাধ্যমিক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করতে গেলে এক দল দুষ্কৃতী সেই ছাত্রীর বাবাকে ধরে পিটিয়েছিল৷ ওই ঘটনার পরই স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক চিরঞ্জিত্ এ সবের জন্য মেয়েদের পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন৷ ২০১১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে বারাসত স্টেশন থেকে বাড়ি ফেরার পথে দিদিকে মদ্যপ যুবকদের হাত থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে নৃশংস ভাবে খুন হতে হয়েছিল মাধ্যমিকের ছাত্র রাজীব দাসকে৷ রক্তাক্ত ভাইকে বাঁচানোর জন্য তার দিদি ভিভিআইপি এলাকায় জেলার প্রশাসনিক এবং পুলিশ কর্তাদের বাংলোয় প্রহরারত পুলিশ-কর্মীদের সাহায্য চেয়েও পাননি৷ দু'দিন পর হাসপাতালে রাজীবের মৃত্যু হয়৷ সেই খুনের মামলা এখনও চলছে৷ তার পরও বারাসতে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটেছে৷ তবু প্রশাসনের টনক নড়েনি৷ ঘটনাচক্রে এ দিন বনমালীপুর সন্তোষ ভট্টাচার্য মেমোরিয়াল হাইস্কুলের যে ছাত্রী শ্লীলতাহানির শিকার হয়, নিহত রাজীবও সেই স্কুলেরই ছাত্র ছিল৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ছাত্রীটি সকালে প্রাইভেট পড়তে এসেছিল বারাসতের উদয়াচলে৷ বেলা ১টা নাগাদ পড়া শেষ করে গোলাবাড়ির কাচকল মোড়ে সে বাস থেকে নামে৷ সেখান থেকে সাইকেলে সোনাটিকারিয়ায় বাড়ি ফেরার সময় তার রাস্তা আগলে দাঁড়ায় দুই বাইক আরোহী৷ তারা মেয়েটির নাম-ঠিকানা জানতে চাইলে সে তাদের এড়িয়ে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়ার চেষ্টা করে৷ তখন ওই দু'জন তার হাত টেনে সাইকেল থেকে নামাতে গেলে সে চিত্কার শুরু করে৷ তা শুনে কাছেই বাড়ি থেকে ছুটে আসেন মেয়েটির দাদা৷ বোনকে আগলাতে গেলে তাঁকে ধরে যুবকেরা মারে৷ দাদাকে মার খেতে দেখে ছাত্রীটি মোবাইলে তার বাবাকে খবর দেয়৷ তিনি এক প্রতিবেশীকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন৷ ইতিমধ্যে ওই দু'জনের কাছ থেকে খবর পেয়ে আরও চার জন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চলে আসে৷ তারা ওই ছাত্রীর বাবাকে ব্যাপক মারধর করে৷ ইট দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করা হয়৷ বাধা দিতে গিয়ে ছেলে এবং ওই প্রতিবেশীও আক্রান্ত হন৷ এর পর স্থানীয় লোকেরা ধাওয়া করলে তিনটি মোটর বাইকে চেপে পাঁচ জন পালাতে যায়৷ চার জন চলে গেলেও জাফরউদ্দিন নামে এক জন ধরা পড়ে যায়৷ পরে আরও এক জন ধরা পড়ে৷ তার নাম মেহের আলি৷ লোকমুখে ঘটনার কথা শুনে আমিনপুর তদন্ত কেন্দ্র থেকে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ এসে পড়ে৷ লোকজন তদন্ত কেন্দ্রের সামনে ওই যুবকদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে মৃদু বিক্ষোভও দেখান৷ পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, 'এক জন ধরা পড়েছে৷ বাকিদের খোঁজ চলছে৷'
জঙ্গলমহলে ফের সক্রিয় মাওবাদীরা, বলছে গোয়েন্দা রিপোর্ট
আকাশ, বিকাশ, মদন, রঞ্জিত, জয়ন্ত-- এই পাঁচ স্কোয়াড নেতার পাশাপাশি জঙ্গলমহলে সক্রিয়তা বাড়িয়েছে বিকাশের স্ত্রী তারা এবং মদনের স্ত্রী জবা-ও। রাজ্য গোয়েন্দা দপ্তরের এডিজি বাণীব্রত বসু জানিয়েছেন, 'জঙ্গলমহলে মাও-সক্রিয়তা নিয়ে আমাদের কাছে নির্দিষ্ট তথ্য আছে। লালগড়ে বিকাশ, অযোধ্যা পাহাড়ে রঞ্জিত, জামবনিতে মদন মাহাতো, আকাশ এবং জয়ন্ত নতুন করে ঘাঁটি গাড়তে চাইছে। চলছে সংগঠনে নতুন লোক নেওয়ার কাজও।' জঙ্গলমহলের গভীরে আদিবাসী গ্রামগুলিতে যাতায়াত বেড়েছে তারা ও জবার। আইজি পশ্চিমাঞ্চল গঙ্গেশ্বর সিং-ও জানিয়েছেন এই স্কোয়াড নেতারা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে জঙ্গলমহলের আনাচেকানাচে। তবে নিরাপত্তারক্ষীরা যে প্রস্তুত, সে কথাও জানিয়েছেন আইজি পশ্চিমাঞ্চল। মাওবাদীদের গতিবিধির উপর নজর রাখা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
কিষেণজির মৃত্যুর পর থেকেই জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের প্রভাব ক্রমে তলানিতে এসে ঠেকে। সীমানা পেরিয়ে একাধিক নেতা-নেত্রী ঝাড়খণ্ড, ওডিশা, ছত্তিশগড়ে গা ঢাকা দিয়েছিলেন। তার উপর জাগরি বাস্কে, সুচিত্রা মাহাতোর মতো বেশ কয়েক জন আত্মসমর্পণ করায়, সংগঠনের অবস্থা দিনে দিনে বেহাল হতে থাকে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া মাও নেতৃত্ব রাজ্যে ফিরতে শুরু করে গত বছরের শেষের দিক থেকেই। এবং সংগঠন তৈরির কাজ শুরু করে একেবারে গোড়া থেকে। গ্রামে গ্রামে গিয়ে আদিবাসী জনতাকে বোঝানো শুরু হয়, কলকাতায় সরকার পাল্টালেও, জঙ্গলমহল বঞ্চিতই থেকে গিয়েছে।
মাও চিন্তাবিদ ভারভারা রাও অবশ্য এই 'প্রত্যাবর্তনে' নতুন কিছু দেখছেন না। তাঁর মতে, 'যে কোনও সশস্ত্র আন্দোলনের এটাই স্বাভাবিক চরিত্র। পিছিয়ে যাওয়া বা ফিরে আসা যে কোনও গেরিয়া আক্রমণের অংশ। যদি প্রতিশ্রুত উন্নয়ন না হয়, তা হলে ফের বিদ্রোহের রাস্তায় যাবেন জঙ্গলমহলের মানুষ।' একই কথা বলেছেন আজিজুল হকও। মাও সমস্যা নতুন করে মাথাচাড়া দেওয়ার ইঙ্গিতে রাজ্য সরকারকেই কাঠগড়ায় তুলছেন মানবাধিকার কর্মী (একদা মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করা) সুজাত ভদ্র। তিনি বলেছেন, 'শান্তি আলোচনায় সরকার কখনোই সে ভাবে গুরুত্ব দেয়নি। একদিকে আলোচনার কথা বলে অন্য দিকে আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের বিজ্ঞাপন তুলে ধরা হয়েছিল।' সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম মনে করেন, এত সহজে এবং এত দ্রুত মাও-সমস্যার সমাধান হবে না। যদিও তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলছেন, জঙ্গলমহলে আর কোনও ভাবেই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না মাওবাদীরা। কারণ সেখানে প্রতিশ্রুত উন্নয়ন হয়েছে।
অশান্তি না ছড়াতে মোর্চাকে কেন্দ্রের বার্তা
মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরির নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি এদিন নর্থ ব্লকে গিয়েছিলেন৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রের খবর,স্বরাষ্ট্রসচিব তাঁদের সাফ জানিয়েছেন, আন্দোলনকে ঘিরে কোনও অশান্তি করা চলবে না৷ রোশন গিরি, হরকাবাহাদুর ছেত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, 'আপনারা কোনওভাবে উত্তেজনা ছড়াবেন না৷ শান্তিপূর্ণভাবে ধরণা-প্রদর্শন করুন৷'
রোশন পরে বলেন, 'আমরা দুই-এক দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবো৷ তাঁর কাছে দাবি না জানিয়ে আমরা দার্জিলিং ফিরছি না৷ আমরা স্পষ্ট তাঁকে বলবো যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক যদি পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গড়ার কথা ভাবতে পারে, তা হলে গোর্খাল্যান্ডকে নয় কেন? গোর্খাল্যান্ডের দাবি তো সব থেকে পুরোনো৷'
দিল্লির যন্তরমন্তরে এদিনও মোর্চার ধরণা চলেছে৷ ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে বলে রোশন গিরি জানিয়েছেন৷ শুক্রবার সেই ধরনায় যোগ দেবেন দার্জিলিঙের সাংসদ তথা বিজেপি নেতা যশবন্ত সিং৷ মোর্চা নেতারা বৃহস্পতিবার তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন৷ পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা গোর্খাল্যান্ডের বিরোধী হলেও, যশবন্ত বলেন, 'আমি গোর্খালান্ডের সমর্থক৷ আমি মনে করি, এই দাবি ন্যায্য৷ রাজ্য নেতাদের মত আমি জানি৷ কিন্ত্ত আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি, গোর্খাল্যান্ড চাই৷ জিটিএ ছিল প্রথম ধাপ, এরপর দার্জিলিঙকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করতে হবে, তারপর পৃথক রাজ্যের মর্যাদা দিতে হবে৷' তবে যশবন্তও দার্জিলিঙে শান্তি ও সংযম বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, সেই সংযম একদিকে যেমন মোর্চা নেতাদের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও বজায় রাখতে হবে৷
প্রবীণ বিজেপি নেতা বলেন, 'দার্জিলিঙ গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, তা না বললেই ভাল হত৷ তিনি আসলে স্বশাসন কি, তা বুঝতে পারছেন না৷' এই মন্তব্যেও মোর্চার অভিযোগের সমর্থন মিলেছে৷ জিটিএ-কে দায়িত্ব ও অধিকার দেওয়া হচ্ছে না বলে প্রচার করছেন বিমল গুরুংরা৷ তাঁদের অভিযোগ, সামান্য কোনও সিদ্ধান্ত নিতেও মহাকরণের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে৷ স্বভাবতই তাঁর মন্তব্যে সন্ত্তষ্ট রোশন গিরি বলেন, 'রাজ্য বিজেপি গোর্খাল্যান্ডের দাবির বিরোধিতা করলেও, যশবন্তজী আমাদের সঙ্গে ছিলেন এবং আছেন৷'
এক বছরেই মৃত ৯৬ | |||
ভবঘুরেদের সরকারি আবাস যেন অন্ধকূপ, মৃত্যুর মিছিল | |||
পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় | |||
অমানবিকতায় এ যেন সেলুলার জেলকেও লজ্জা দেবে। একটি জানলাহীন অন্ধকার কুঠুরি। তাতেই খোঁয়ারের পশুর মতো গুঁজে রয়েছেন ২০০ জনের বেশি মানুষ। অস্বাস্থ্যকর, প্রায় দমবন্ধ অবস্থায় সেখানে প্রতি মাসে গড়ে আট জন করে মারা যাচ্ছেন। খাস কলকাতার ঢাকুরিয়ায় এই ভবঘুরে হোম পরিচালনার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। ঢাকুরিয়ার ১৫৩ নম্বর শরৎ ঘোষ গার্ডেন রোডে সমাজকল্যাণ দফতরের এই ভবঘুরে হোমে গত এক বছরে (১ জানুয়ারি ২০১২ থেকে ৩১ জানুয়ারি ২০১৩) ৯৬ জন আবাসিকের মৃত্যু ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে প্রশাসনিক মহলে। হোমের চিকিৎসকেরা এবং হোমের রেফারাল হাসপাতাল এমআর বাঙুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মৃতেরা প্রত্যেকেই মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছিলেন। এঁদের মধ্যে রমানাথ দাস, নরেন্দ্রপ্রসাদ সিংহ, বাবর, নীরেন্দ্র, রুদ্র স্বামী, বাবলু চহ্বাণ, কমল কিশোরের মতো মোট ১৮ জনকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছিল। তাঁদের দেহে মাত্রাতিরিক্ত অপুষ্টির কথা হাসপাতালের টিকিটেই লেখা রয়েছে। বাকিরা মারা গিয়েছেন হোমে। হোমের চিকিৎসকেরাই এঁদের বেশির ভাগের মৃত্যুর কারণ হিসেবে জানিয়েছেন গাদাগাদি করে একটিমাত্র পুতিগন্ধময় ঘরে থাকায় খাওয়া বন্ধ হয়ে এবং ক্রস ইনফেকশনে আবাসিকদের মৃত্যু হয়েছে। হোম কর্তৃপক্ষই বিষয়টি নিয়ে হস্তক্ষেপের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত অনুরোধ জানিয়েছেন। এর পরেই এ ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের 'কন্ট্রোলার অফ ভ্যাগরেন্সি' বিশ্বনাথ চক্রবর্তী। বিশ্বনাথবাবুর কথায়, "এটা ঠিক যে, ঢাকুরিয়ার ভবঘুরে হোমে একটু বেশি সংখ্যায় আবাসিকের মৃত্যু হয়েছে। আসলে জায়গার অভাব এবং আবাসিকদের চাপ সামলানো যাচ্ছে না। গোটা কলকাতায় এমন হোম মাত্র দু'টি। তবে ঢাকুরিয়ার বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখতে বলেছি। একটা ঘরের মধ্যে এত জনকে রাখা উচিত নয়। খুব তাড়াতাড়ি ওখানে নতুন ভবন হবে।" ঠিক কী অবস্থা ঢাকুরিয়ার ওই হোমে? বুধবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, ২২৬ জন আবাসিক রয়েছেন একটি মাঝারি মাপের অন্ধকার কুঠুরিতে। কটু গন্ধে ঘরের ত্রিসীমানায় যাওয়া যাচ্ছে না। জায়গা এতই কম যে, কেউ ভাল করে হাঁটাচলা করতে পারছেন না। খাট পাতার জায়গা নেই, মেঝেতেই ঠাঁই। অধিকাংশ আবাসিক মানসিক ভাবে অসুস্থ বলে ঘরের দরজা অধিকাংশ সময়ে তালাবন্ধ। তাঁদের সঙ্গে একই ঘরে থাকেন মানসিক ভাবে সুস্থ আবাসিকেরা। বন্ধ ঘরে বেশির ভাগ আলো-পাখা চলে না। আবাসিকেরা নিজেরা রান্না করলে খাওয়া জোটে, না-হলে জোটে না। দেখাশোনার কেউ নেই বলে দিনের পর দিন স্নান হয় না। ঘর পরিষ্কারের লোক নেই। চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বহু আবাসিকের গায়ে পোকা হয়ে গিয়েছে। হোমের এক উচ্চ-আধিকারিক বললেন, "মনে হয় নরকে আছি। মানুষগুলোর জন্য সরকারের কোনও মাথাব্যথা নেই। কোনও পরিকাঠামো নেই। আমাদের কাজ হল অসহায়ের মতো বসে থাকা আর ঘর থেকে নিয়ম করে লাশ বার করা।" তাঁর আরও বক্তব্য, "একটা কুঠুরিতে এ ভাবে মানুষগুলো পড়ে থাকে। প্রায় সকলে যক্ষ্মায় আক্রান্ত। অগস্ট-সেপ্টেম্বর নাগাদ প্রতিদিন ১০-১২ জন করে ডায়েরিয়ায় মারা যান।" হোমে দু'জন চিকিৎসক। তাঁদের অন্যতম অমিতাভ মণ্ডলের কথায়, "এমন অমানবিক পরিস্থিতি যে, কল্পনা করা যায় না। লোকগুলো বসে-বসে মারা যাচ্ছে। অসহায় লাগছে। মৃত্যুর প্রধান কারণ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে একসঙ্গে এত লোকের বসবাস। ছোঁয়াচে রোগ হুহু করে ছড়াচ্ছে।" অমিতাভবাবুর আরও বক্তব্য, "হোমের ঘরে এত দুর্গন্ধ, দূষণ আর আবর্জনা যে ওখানে থেকে আবাসিকদের 'অ্যানারক্সিয়া নার্ভোসা' নামের স্নায়ুরোগ হচ্ছে। খাবার পেলেও খেতে পারছেন না। অপুষ্টিতে ভুগছেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমছে। এক দিন ঘরেই মরে যাচ্ছেন।" বাঙুর হাসপাতালের সুপার সন্তোষ রায়ও জানান, ঢাকুরিয়ার হোম থেকে প্রতি মাসেই তাঁদের হাসপাতালে রোগী আসেন। তাঁর কথায়, "প্রায় প্রত্যেকে হাড়ের উপরে চামড়া, শারীরিক ও মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত, গায়ে পোকা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই। অনেক চেষ্টা করেও এঁদের অধিকাংশকে বাঁচানো যাচ্ছে না।" ভবঘুরেদের হোমগুলি যে ভাবে, যে নিয়মে চলে তাতে বীতশ্রদ্ধ মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্র জানান, সম্প্রতি এমন একাধিক হোম ঘুরে তাঁদের মনে হয়েছে যেন নরক দর্শন করছেন। চূড়ান্ত অমানবিক ভাবে ভবঘুরেদের রাখা হয়েছে। যুগ বদলেছে, কিন্তু এঁদের জন্য নীতি বদলের কথা কারও মনে হয়নি। http://www.anandabazar.com/1cal1.html
|
No comments:
Post a Comment