Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Memories of Another day

Memories of Another day
While my Parents Pulin babu and Basanti devi were living

Saturday, November 24, 2012

রাষ্ট্র, তোমার হাতে রক্তের দাগ।

রাষ্ট্র, তোমার হাতে রক্তের দাগ।


পলাশ বিশ্বাস


রাষ্ট্র আজ মানবতা ও প্রকৃতির সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে বৃহত্তর জনসমাজের সংহার যজ্ঞে নিষ্ণাত।মানুষের কল্যাণার্থ যে রাষ্ট্রের উত্পত্তি, তা এখন মনুষত্বের সর্বাত্মক বিধ্বংসের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।বৈশ্বিক মনুস্মৃতি ব্যবস্থায় একচেটিয়া সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনে মানূষকে জল জন্গল জমি থেকে, আজীবিকা ও নাগরিকত্ব থেকে উত্খাত করার করপোরেট অশ্বমেধ যজ্ঞে রাষ্ট্র ও রাজনীতি অর্থ ব্যবস্থা, সমাজ ও রাজনীতি থেকে বহিস্কৃত বহুসংখ্যক জনসংখ্যার বিরুদ্ধে ঘাতকের ভুমিকায় রাষ্ট্র, তোমার হাতে রক্তের দাগ. আজকের নির্মম বাস্তব।বৌধ্যময় বন্গের অবসানের পর বাংলায় যে মনুস্মতি অনুশাষনপর্বের সুচনা সেন বংশ কর্তৃক আমদানী ব্রাহ্মন্যবাদের স্থাপনায়, বাংলা ভাগের পর সুনিয়োজিত জনসংখ্যা 
সমায়োজনে, তার চরমোত্কর্ষের অভিব্যক্তি আজকের আধিপাত্যবাদী রাষ্ট্রচরিত্রে, যার ফলে অবিভাজিত বাংলার মূলনিবাসী বহুসংখ্যক মাবগোষ্ঠী প্রথমে উদ্বাস্তু হল এবং এখানেই শেষ নয়, ডিজিটাল নাগরিকত্বের ইঊআইডি ফাঁদে নাগরিকত্ববিহীন অবৈধ অনুপ্রবেশকারী সারা ভারতবর্য়ে প্রকৃতিঘনিষ্ঠ প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যে সমৃদ্ধ অন্চলসমূহের মানুষকে উত্খাত করতে রাষ্ট্র আজ করপোরেট স্বার্থে পরমাণু শক্তিধর সৈন্যক্ষমতা ছাড়া আর কিছু নয়  

গুলিচালনার প্রতিবাদ  
সোমবার দুবরাজপুরের লোবা গ্রামে বামপন্থী যুব সংগঠনের মিছিল।

মানবাধিকার মানুষের জন্মগত অধিকার। এই অধিকার লংঘনের সুযোগ কারো নেই। একজন মানুষ পৃথিবীতে মানুষ হিসাবে এই অধিকার চুাড়ান্তভাবে ভোগ করার অধিকারী। জাতিসংঘ সনদ দ্বারা এই অধিকার স্বীকৃত। প্রতি বৎসর ১০ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী বিশ্ব মানবাধিকার দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্যাপনের মাধ্যমে মানবাধিকারের চুড়ান্ত স্বীকৃতিকে মানুষের জন্য সার্বজনীন করা হয়। এই মানবাধিকার বিশ্বের কোন দেশ, গোষ্টী, দল, জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটি বিশ্বব্যাপী সকল জাগতিক সম্পর্কের সীমানা পেরিয়ে সকল মানুষের চিরন্তন অধিকার রক্ষায় আপোষহীন। মানবাধিকারের ক্ষেত্র ব্যাপক। মৌলিক অধিকার মানবাধিকারের একটি অংশমাত্র। এই মানবাধিকারের বর্তমান আইনগত উৎস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ঘোষিত সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা ও আন্তর্জাতিক আইন। এই অধিকার সর্বজনীন, শ্বাশত, সহজাত ও চিরন্তন । কোন মৌলিক সীমারেখা দ্বারা এটি সীমাবদ্ধ নয় বরং এটি সরকার ও ব্যক্তি উভয়ের বিরুদ্ধে কার্যকর করা যায়।

 ভারতে মানবাধিকার লংঘনের যে সব ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে তার মধ্যে ৬৭ শতাংশই ঘটেছে উত্তর প্রদেশ ও রাজধানী দিল্লিতে। ভারতের ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন বা 'এনএইচআরসি' গত এক বছরের তথ্যের ভিত্তিতে এ কথা জানায়।

'এনএইচআরসি' বলেছে, গত বছরের ১লা ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত ভারতে মানবাধিকার লংঘনের মোট ৭৮ হাজারের বেশি ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪৭ হাজারটি ঘটেছে উত্তর প্রদেশে এবং প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ঘটেছে দিল্লিতে। এ ছাড়া বিহারে দুই হাজার সাতশ'র বেশি, রাজস্থানে প্রায় আড়াই হাজার ও মহরাষ্ট্রে ২১ শ'র বেশি এ জাতীয় ঘটনা ঘটেছে।

'এনএইচআরসি' ভারতে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনাকে শিশু, স্বাস্থ্য, কারগার, বিচারসহ ২১ ভাগে বিভক্ত করেছে। গত বছর উত্তর প্রদেশে পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করা হয়েছে। উত্তর প্রদেশে এ ধরণের অভিযোগ হয়েছে ১৮ হাজারেরও বেশি।


অথচ রাষ্ট্র (ইংরেজিState) বলতে এমন এক রাজনৈতিক সংগঠনকে বোঝায় যা কোন একটি ভৌগোলিক এলাকা ও তৎসংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার সার্বভৌম ক্ষমতা রাখে। রাষ্ট্র সাধারণত একগুচ্ছ প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। এসব প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ হিসেবে সংশ্লিষ্ট ভৌগোলিক সীমার ভেতর বসবাসকারী সমাজের সদস্যদের শাসনের জন্য নিয়ম-কানুন তৈরি করে। যদিও একথা ঠিক যে রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদা পাওয়া না পাওয়া বহুলাংশে নির্ভর করে, রাষ্ট্র হিসেবে তার উপর প্রভাব রাখা ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির উপর।


বাংলা ভাষায় রাষ্ট্র শব্দটি ইংরেজি স্টেট শব্দের পারিভাষিক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইংরেজি স্টেট শব্দটি মূলত ল্যাটিন স্ট্যাটাস শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ অবস্থা। যা কখনো আইনানুগভাবে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে এমন ব্যক্তিদের অস্তিত্ব থাকা, কখনো বা রাজার অবস্থা আবার কখনো বা প্রজাতন্ত্রের অবস্থা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে।


প্রাথমিক স্তরের রাষ্ট্রের অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যায় যখনই ক্ষমতাকে টেকসইভাবে কেন্দ্রীভূত করা যায়। "কৃষি ও কলম" প্রায় সব ক্ষেত্রেই এই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত। কৃষি, উদ্বৃত্ত ফসল উৎপাদন ও তার সঞ্চয়কে সম্ভব করে তুলেছে। এটাই পর্যায়ক্রমে এমন এক শ্রেণীর উদ্ভব সম্ভব করে তুলেছে যারা কৃষি উদ্বৃত্তের মজুত নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষা করতো। একই সাথে এই কাজে সময় ব্যায় করায় তারা ক্রমেই তাদের নিজেদের জীবিকানির্বাহী কর্মকান্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এছাড়াও রয়েছে লেখনীর বিকাশের ব্যাপারটি, যা প্রয়োজনীয় তথ্যের একত্রিত উপস্থাপন সম্ভব করেছে।

অনেক রাষ্ট্রচিন্তাবিদ বিশ্বাস করেন যে রাষ্ট্রের মূলসূত্র আদিবাসীদের সংস্কৃতিতে প্রোথিত। সে সংস্কৃতি মানুষের বোধের সাথে সাথে সেই কাঠামোকে উন্নত করেছে যা আদি পুরুষতান্ত্রিক ক্ষুদ্রসমাজের নজির, যেখানে দুর্বলের উপর সবলের দাপটই মূখ্য ছিলো। যাহোক, নৃবিজ্ঞানীদের মতে আদিবাসী গোষ্ঠীভিত্তিক সমাজে উল্ল্যেখ করা মত কোন কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ ছিল না। আর সেটাই সমাজগুলোকে বহুস্তরবিশিষ্ট করে তুলেছিলো।


বিশ শতকের শেষভাগ থেকে পৃথিবীর অর্থনীতিতে বিশ্বায়নের প্রভাব, শ্রম ও মূলধনের প্রবাহ এবং বহুসংখ্যক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের উদ্ভবের যৌথ প্রভাবে রাষ্ট্রসমূহের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ সীমিত হয়ে গিয়েছে। স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এই সীমাবদ্ধতার প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ হল পশ্চিম ইউরোপ যেখানে আন্তঃরাষ্ট্রীয় ঐক্যের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। যদিও ১৬ শতক থেকে এখনো রাষ্ট্রই বিশ্বের রাজনৈতিক একক। ফলে রাষ্ট্রকেই রাজনৈতিক পঠন পাঠনের মূল কেন্দ্রীয় বিষয় বলে মনে করা হয় এবং এর সংজ্ঞা নিয়েই তাত্ত্বিকদের মাঝে পাণ্ডিত্বপূর্ণ বিতর্ক সবচেয়ে বেশি হয়।


মানবতা আর মানবাধিকারের ফাঁকা বুলিতে পৃথিবী আজ শয্যাশায়ী। জীবন সায়াহ্নে মানবতার রূপও এমন হয় না। পুঁজিবাদী সমাজের আবিষ্কৃত দুই জিনিস আজ পৃথিবীতে শান্তির নামে অশান্তির ফেরি করছে। জাতিসঙ্ঘসহ সকল বিশ্ব সংস্থা মানবতার দোহাই দিয়ে পৃথিবীতে যতসব অমানবিক কাজ করতে দ্বিধা করছে না ।এমনকি অমানবিক কাজ হতে দেখেও না দেখার ভান করে "অনেক সময়"।


ম্যাক্স ওয়েবারের প্রভাববিস্তারী সঙ্গানুযায়ী রাষ্ট্র হচ্ছে এমন এক সংগঠন যা নির্দিষ্ট ভূখন্ডে আইনানুগ বলপ্রয়োগের সব মাধ্যমের উপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণরাখে, যাদের মধ্যে রয়েছে সশস্ত্রবাহিনীনাগরিকসমাজআমলাতন্ত্রআদালত এবং আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।


সাম্প্রতিককালে রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়ার বিষয়ে মতভিন্নতার কারণে তাত্ত্বিক মহলে বেশ বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে এই আলোচনাকে কেন্দ্র করে যে ঠিক কিভাবে একটি "সার্থক রাষ্ট্র" এর অভ্যুদয়কে সমর্থন করা যেতে পারে।


সীমান্তে বিএসএফের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ

লিখেছেন লুনিক ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০১২, দুপুর ১২:১৩



বিবিসি বাংলা, কলকাতা: 
"সীমান্তে বিএসএফের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ প্রায়ই উঠছে 
ভারতের মানবাধিকার কমিশন সেদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধ করতে সতর্ক করে দিয়েছে। 

মানবাধিকার কমিশন বলেছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কর্মরত বিএসএফের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ মাঝে মাঝেই পাওয়া যাচ্ছে। 

বাহিনীর অফিসারদের মানবাধিকার বিষয়ে সচেতন করে তুলতে এক কর্মশালায় কলকাতায় এসে কমিশনের চেয়ারম্যান কে জি বালাকৃষ্ণন বলেছেন যে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি মর্যাদা দিয়ে বিএসএফকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধ করতে হবে। 

ওই কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে ছিলেন দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তের ডিআইজি জে. এস. এন. ডি. প্রসাদ। 

মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ হলে তবেই যে এলাকায় বাহিনী কাজ করছে, সেখানকার স্থানীয় মানুষের সম্মান অর্জন করতে পারবেন বাহিনীর সদস্যরা। 

ভারতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মি. জে এস এন ডি প্রসাদের কথায়, "মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন যে বিএসএফের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ হলে তবেই যে এলাকায় বাহিনী কাজ করছে, সেখানকার স্থানীয় মানুষের সম্মান অর্জন করতে পারবেন বাহিনীর সদস্যরা। এই বিষয়ে যে বি এস এফ কর্মীদের সচেতন করার প্রয়োজন আছে, সেই কথাটাও বলেছেন মি. বালাকৃষ্ণান।

বিএসএফ অফিসার ও মানবাধিকার কমিশনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ওই কর্মশালায় বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে আলোচিত হয় হেপাজতে মৃত্যু, সংঘর্ষে মৃত্যুর মতো বিষয় নিয়ে। 

মানবাধিকার কমিশন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশাবলী বিএসএফের সদস্যদের আবারও মনে করিয়ে দিয়েছেন। 

অন্যদিকে, বিএসএফের অফিসাররা মেনে নিয়েছেন যে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাজ করতে গিয়ে কখনোও হয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা হচ্ছে – আর সেগুলো বন্ধ করতেই এই কর্মশালার খুব প্রয়োজন ছিল। 
ডিআইজি মি. প্রসাদ বলছিলেন, "মানবাধিকার আইন মেনে চলতেই হবে, সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতেও হবে। কিন্তু বাংলাদেশ সীমান্তে কাজ করতে গিয়ে তাঁদের কখনোও চোরাচালানকারীদের আক্রমণের মোকাবিলা করতে হয়, সেই সময়ে আত্মরক্ষার্থে গুলিও চালাতে হয়। তাতে বাহিনীর সদস্যদের প্রাণহাণিও হয় – আবার সেই সব ঘটনায় বাহিনীর বিরুদ্ধেই অভিযোগ করে কিছু সেচ্ছাসেবী সংগঠন"। 

বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তের সময়ে এই বিষয়গুলি যাতে মাথায় রাখা হয় – সেব্যাপারে মানবাধিকার কমিশনের কর্মকর্তাদের অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান বিএসএফের ডিআইজি মি. প্রসাদ। 

উল্লেখ্য, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কর্মরত বিএসএফ সদস্যদের বিরুদ্ধে কথিত চোরাচালানকারী বা অনুপ্রবেশকারীদের ওপর গুলিচালনা বা বলপ্রয়োগের অভিযোগ ছাড়াও নিরীহ মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলারও অভিযোগ আছে। 

গতবছর উত্তরবঙ্গের সীমানায় কিশোরী ফেলানিকে গুলি করে মেরে ফেলা বা অতি সম্প্রতি আটজন বিএসএফ সদস্যের এক কথিত বাংলাদেশী চোরাচালানকারীকে নগ্ন করে অত্যাচার – এই সব ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলি বিএসএফের বিরুদ্ধে সরব হয়ে উঠেছে। 
কয়েকদিন আগে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাতকারে বিএসএফের প্রধান ইউ কে বনশাল মন্তব্য করেছিলেন "সীমান্তে যতদিন না অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধ হচ্ছে – ততদিন বলপ্রয়োগ বা গুলি চালানো পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। সীমান্তে দুষ্কৃতিদের রোখাই আমার বাহিনীর দায়িত্ব।" 

তিনি আরও বলেছিলেন যে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডস যদি তাদের দিকে প্রহরা কড়া করে, তাহলে দুষ্কৃতিরা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের দিকে আসবে না আর বিএসএফকেও বলপ্রয়োগ করতে হবে না। 
বিএসএফ অফিসাররা মনে করছেন সেরকম একটা পরিস্থিতি তৈরি হলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও কমে আসবে। তবে ততদিনে বাহিনীর সদস্যদের মানবাধিকারের ব্যাপারে আরও সচেতন করার প্রক্রিয়া চলতে থাকবে।"

http://sonarbangladesh.com/blog/Lunik1/93596


সীমান্তে বাংলাদেশীদের মৃত্যু ও কিছু কথা!

বাঁচা'র অধিকার,নারী অধিকার ও শিশু অধিকার অত্যন্ত মৌলিক অধিকার মানুষের।বাঁচা'র অধিকার বিশ্বে মোটামুটি সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌছে যাওয়ার পর নারী ও শিশু নিয়ে বর্তমানে সবাই কাজ করছে। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক-রাজনীতিক-জনসংখ্যা-সামাজিক প্রতিটি বিভাগেই দুর্ভাগা।তার চেয়েও দুর্ভাগা এদেশের মানুষ।তার চেয়েও বেশি অভাগা দরিদ্র জনগোষ্ঠি এবং স্বাভাবিক ভাবেই নারী ও শিশুই সকল নির্যাতনে'র প্রধান শিকার!

৪০৯৫ কিঃমিঃ সীমান্ত এলাকা আছে আমাদের ভারতে'র সাথে,সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো চরম দারিদ্রতার শিকার। সারা বাংলাদেশ জুড়ে যে পরিস্থিতি,সে সব এলাকায় তার চেয়েও ভায়াবহ অবস্থা। তারই কারনে সেসব এলাকার মানুষ ভারতে যায় সাময়িক ও নিন্ম আয়ের কাজের খোঁজে। দারিদ্রতা'র আঘাতে সভ্যতার প্রায় সকল উন্নয়ন থেকে বন্চিত মানুষগুলো কোন বৈধ কাগজপত্র জোগাড় করে যায় না। তারা বি,এস,এফ ও বি,জি,বি'র সাথে ঘুষে'র সম্পর্কে জড়িত কিছু দালালের সাথে যোগাযোগ করে টাকা দিয়ে সীমানা পারি দেয়।সীমান্তরক্ষী বাহিনীগুলো অবশ্য টাকা নিয়ে নিজেদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে তাদের পার করে না।তার মানে দরিদ্র মানুষগুলো সম্পুর্ন অবৈধ অবস্থায় বিপদজনক ভাবে সীমানা পাড়ি দেয়।তবে,ভারত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা মুল্যে'র ফেনসিডিল নামক মাদক কিন্তু একই অবৈধ পথে তবে নিরাপদেই সীমানা পেড়িয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে!

তেমনই শুক্রবার ভোরে নয়াদিল্লী'র এক ইটে'র ভাটায় কাজ করা পরিবারে'র বাবা ও মেয়ে সীমানা পারি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছিল।কিন্তু তারা কোন দালালে'র মাধ্যমে না এসে হয়তো নিজেদের উপর আস্থায় অথবা টাকা বাঁচানোর উদ্দেশ্যেই প্রস্তুত মই বেঁয়ে চুঁপিচুঁপি সীমান্ত কাঁটাতারের বেড়া ডিঙ্গানোর সিদ্ধান্ত নেয়।শনিবার দিন মেয়েটি'র বিয়ে নির্ধারিত ছিল তাই টাকা ও বিয়ের গয়নাগাঁটি নিয়ে তার বাবা'র হাত ধরে কাঁটাতারে উঠে।বি,এস,এফ এর ভয় ও তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভুল করে মেয়েটি জামা-কাপড় সহ সীমান্ত কাঁটাতারে আটকে যায় তৎক্ষনিক আতংক ও ভয়ে তার গলা দিয়ে বের হওয়া চিৎকার শুনে বি,এস,এফ দুর থেকেই তারে ঝুলে থাকা অবস্থায় মেয়েটিকে গুলি করে,তার বাবা নিজের জীবন নিয়ে পালিয়ে বেঁচে যায়!(সুত্রঃপ্রথম আলো)

গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মেয়েটি ৪ ঘন্টা কাঁটাতারে ঝুলে! সকাল ১০টায় বি,এস,এফ তার মৃত লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায় এবং ৩০ ঘন্টা পর পতাকা বৈঠক করে বি,জি,বি'র মাধ্যমে বাংলাদেশের কাছে লাশ ফেরৎ দেয়।(প্রথম আলো)

মেয়েটির বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর, তার মৃত্যুতে হয়তো একটি বাল্য বিবাহ যা নারী নির্যাতন আইনে দন্ডনীয় তা রোধ হল কিন্তু নারী ও শিশু হত্যা'র মত জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়ে গেল! বি,এস,এফ এর গুলিতে গত বছরের ৭০ জন বাংলাদেশি'র নামে'র সাথে এ বছরের প্রথম ২ সপ্তাহেই যোগ হল অন্তত ৩ জন।যাদের মাঝে এই বাচ্চা মেয়েটিও,যার চোখে কোনদিন কোন সপ্ন ছিল কিনা জানিনা তবে আমাদের অনেকে'র মত জীবনে'র প্রতি বিতৃষ্না হয়তো ছিল না।কাঁটাতারে ঝুলন্ত লাশের ছবি এসেছে আনন্দবাজার পত্রিকায়( সুত্রঃ প্রথম আলো)

পৃথিবী'র নানান জায়গায় প্রতিবেশী দেশে দেশে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করে,ভারতের সাথেই বৈরি দেশ পাকিস্তান,চীন,নেপাল ও ভুটানে'র সীমানা রয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশী মানুষ হত্যা ইসরাইল-ফিলিস্তুন নয় তা করা হয় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তেই!২০০৭ থেকে ২০১০ পর্যন্ত বি,এস,এফ এর গুলিতে মারা যায় ৩১৫ জন বাংলাদেশী(সুত্রঃহিউম্যান রাইটস ওয়াচ) ।মেয়েটিকে হত্যা'র পরদিন আরো ২ জন বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা'র পর লাশ নিয়ে গেছে বি,এস,এফ(সুত্রঃযেকোন পত্রিকা)!!

সংক্ষেপে এটুকুই খবর! বেশি ব্যাখ্যা করে রগরগে করতে চাই না শুধু জানতে চাই, বাংলাদেশ সরকারের ৭% জিডিপি'র অর্থনীতি'র জন্য আড়িয়াল বিলে ৬ হাজার কোটি টাকা'র আধুনিক বিমানবন্দর প্রয়োজন নাকি সীমান্তবর্তী এলাকায় কর্মসংস্থান এর ব্যাবস্থা করে বাংলাদেশী জনগণকে কাঁটাতারে ঝুলন্ত মৃত্যু'র জন্য ভারতে কাজ করতে পাঠানো বন্ধ করা ও দেশে কর্মসংস্থান বাড়ানো প্রয়োজন?
কানাডা ও অপরদেশ যেভাবে বি,এস,এফ কর্মকর্তাদের ভিসা নাকচ করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে, যদিও তাদের একজন নাগরিকও বি,এস,এফ এর গুলিতে মারা যায়নি, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা যখন বি,এস,এফ কে "ট্রিগার হ্যাপি" আখ্যা দেয় তখন বাংলাদেশের সরকার কি এরকম ধারাবাহিক হত্যা'র নিন্দা জানবে?এই সমস্যা সমাধানে দরিদ্রতা মোকাবেলায় কোন পদক্ষেপ নিবে?
দেশে'র সচেতন ও বুদ্ধিজীবিগণ কি এরকম মৃত্যু'র দায় কাঁধে নিয়ে সমাধানের লক্ষ্যে কলম ও মেধা ব্যায়ের কষ্টসাধ্য কাজটুকু করবে? ভারতে'র সরকার বা নুন্যতম পশ্চিমবঙ্গে'র বুদ্ধিজীবিরা কি কিছু বলবে?
মানুষের যে কটি অধিকার লঙ্ঘন হতে পারে তার সবকটি কি লঙ্ঘিত হয়নি এক কিশোরী ফেলানী'র মৃত্যুতে?সবশেষে বিশ্বের উদিয়মান মহাশক্তিধর, পারমানবিক বোমা'র অধিকারী,বৃহৎ প্রতিবেশি ভারতে'র সাথে সুসম্পর্ক কামনা করি এবং কিছুটা সন্মান নাই হোক, মানুষ ও বাঙ্গালি হিসেবে আমাদের গুলি করে হত্যা করার আহব্বান করি ,সরকার হয়ত করবে না জেনেই নিজেরা করছি।
ফালানী'র বাবা কথা দিয়েছে,"পেটের ক্ষুধায়ও আগামিতে আর ভারত যাবে না"।

এ্যামনেস্টির বার্ষিক রিপোর্ট: বাংলাদেশে RAB এর গুরুতর মানবাধিকার লংঘন

এ্যামনেস্টির বার্ষিক রিপোর্ট: বাংলাদেশে RAB এর গুরুতর মানবাধিকার লংঘন

MULTIMEDIA

অডিও
প্রতিবেদনের আকার 
Amir KhasruRoquia Haider

শুক্রবার  আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মানবাধিকার বিষয়ে, বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে ২০১০ সালের রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ।এই রিপোর্ট সম্পর্কে আমাদের ডাকা সংবাদদাতা আমির খসরু জানালেন :

 

রিপোর্টটিতে বাংলাদেশসহ  দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ে এ্যামনেস্টির বক্তব্য নিয়ে ভয়েস অফ আমেরিকার বাংলা বিভাগের সঙ্গে  কথা বললেন যুক্তরাষ্ট্রে সংস্থার এশিয়া বিষয়ে পরিচালক টি কুমার ।  বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশে তাঁরা  র‌্যাব বাহিনীর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা লক্ষ্য করেছেন । বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরেও তার কোন পরিবর্তন হয় নি । তারা র‌্যাব কর্তৃক অন্ততঃ পনেরো শ  লোককে বিণা কারণে আটক করার ঘটনা নথিবদ্ধ করেছেন । তাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালানো হয় । বেশ কয়েকজন তাদের হেফাজতে মারা গেছে । র‌্যাব বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে । তাই মূল কথা হলো, বাংলাদেশ সরকারকে র‌্যাবকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যাতে করে র‌্যাব উপলব্ধি করে যে তারা তাদের ইচ্ছেমতো যে কোন লোককে আটক করতে বা মেরে ফেলতে না পারে।  সেই এখতিয়ার তাদের নেই' ।

তিনি বলেন, পাকিস্তান আফগানিস্তানে তারা মানবাধিকার পরিস্থিতির কোনই পরিবর্তন দেখতে পান নি ।

'পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের পরিস্থিতির মোটেও উন্নতি হয়নি ।  পাকিস্তানে নারীর ওপর হানাহানি অব্যাহত রয়েছে । যথেচ্ছা হত্যাকাণ্ড চলছে, সেইসঙ্গে তালেবানরাও অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে । পুলিশ লোকজনকে আটক করে রাখছে তা ছাড়া লোকজন নিখোঁজ হয়ে যায়, যাদের কোনই সন্ধান পাওয়া যায় না । এইসব ঘটনা আমাদের কাছে উদ্বেগজনক' ।

ভারতের অনেক জায়গাতেই সমস্যা রয়েছে । সে প্রসঙ্গে টি কুমার বললেন ভারতে, কাশ্মীর ও উত্তর পশ্চিমের সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি, গভীর উদ্বেগের বিষয়  ওই সব অঞ্চলে বিশেষ আইনের অধীনে সামরিক বাহিনীর যা ইচ্ছে তাই করতে পারে । ভারতের অন্যান্য অনেক জায়গাতেই কোন ন্যায় বিচার হয় না । যেমন গুজরাতে এখনও অনেক অন্যায়ের বিচার হয়নি' ।

এ্যামনেস্টির ভাষ্যে ঠাণ্ডা লড়াই যুগের মত বর্তমানে অনেক দেশে স্বৈরশাসক গোষ্ঠি দমন অভিযান চালিয়ে সাধারণ মানুষের আন্দোলন রোধ করার চেষ্টা করে চলেছে । তারা ইন্টারনেট ও মোবাইল টেলিফোনের সুবিধা কেড়ে নিতে চায় । এইসব ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশের সমর্থন প্রয়োজন ।

http://www.voabangla.com/content/article-05-14-11report-and-analysis-on-human-rights-in-bangladesh-121834449/1401728.html

সংজ্ঞা


ব্যাপকার্থে সরকার বা প্রাচীন-আধুনিক সব অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠানকেই রাষ্ট্র প্রত্যয়টির অংশ হিসেবে ধরা হয়। আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার উল্ল্যেখযোগ্য সংখ্যক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যাদের সমন্বিত পদ্ধতির অংশ হয়ে ওঠাটা প্রথম স্পষ্টভাবে দেখা যায় ১৫ শতক নাগাদ। আর ঠিক সেসময়ই রাষ্ট্র প্রত্যয়টি তার আধুনিক অর্থ পরিগ্রহ করে। তাই রাষ্ট্র প্রত্যয়টি প্রায়ই নির্দিষ্ট করে শুধু আধুনিক রাজনৈতিক কাঠামোকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর স্বতন্ত্র পরিচয় থাকলেও তারা সম্পূর্ণভাবে সার্বভৌম নয়। এদের কর্তৃত্বের সীমা সেই সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে যা একই সাথে আংশিক বা অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর সমান সার্বভৌমত্ব থাকা সংশ্লিষ্ট যুক্তরাষ্ট্রটির রূপরেখা নির্ধারণ করে। রাষ্ট্র কাঠামোর রূপ বিভিন্ন স্তরে বিভিন্নভাবে সংগঠিত হতে পারে, যেমন – স্থানীয়/পৌর, প্রাদেশিক/আঞ্চলিক, যুক্তরাষ্ট্রীয় এমনকি সাম্রাজ্য বা জাতি-সংস্থার মত আন্তর্জাতিক রূপেও তা থাকতে পারে।

চলতি ধারণা অনুযায়ী দেশ, জাতি ও রাষ্ট্র প্রত্যয়গুলি প্রায়ই এমনভাবে ব্যবহৃত হয় যেন তারা সমার্থক; কিন্তু আরো সুচারু ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাদের পার্থক্য সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা যেতে পারে

  • দেশ বলতে ভৌগোলিক এলাকা বোঝানো হয়।
  • জাতি বলতে সেই জনগণকে বোঝানো হয়, যাদের রীতিনীতি, পূর্বপুরুষ, ইতিহাস ইত্যাদি একই। যদিও বিশেষণ হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শব্দদুটি দিয়ে সেইসব বিষয়কে বোঝানো হয় যেগুলি স্পষ্টতই রাষ্ট্র-সংশ্লিষ্ট; যেমন জাতীয় রাজধানী, আন্তর্জাতিক আইন।
  • রাষ্ট্র সেইসব শাসনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহকে বোঝায় যাদের একটি নির্দিষ্ট এলাকা ও জনগণের উপর সার্বভৌম কর্তৃত্ব আছে।

আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার উন্মেষধারা

নির্দিষ্ট ভূখন্ডে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ তৈরির মাধ্যমে রাষ্ট্রের জনসম্পৃক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় ইউরোপে প্রাতিষ্ঠানীকিকরণের ক্রমোন্নতির হাত ধরে, যার সূচনা হয় পনের শতকের শেষভাগে, যা স্বৈরতন্ত্র এবং পুঁজিবাদের উত্থানের সাথে সাথে সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছায়।

ইউরোপের পরিবারতান্ত্রিক রাজ্যগুলো ( ইংল্যান্ডের, স্পেনের এবং ফ্রান্সের) রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রণীত বিভিন্ন পরিকল্পনার আত্মীকরণ করে যা ক্রামাগত আধুনিক রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক বৈশিষ্ট্যের অনেকগুলিকেই সামনে নিয়ে আসে।

ইউরোপিয়ান রাজতন্ত্রগুলো ক্রমান্নয়ে ক্ষমতার অন্যান্য উৎসগুলোর কোন কোন্টিকে দমন আবার কোন কোনটিকে সহযোগী হিসেবে গ্রহণ করায় (চার্চ, সীমিত নোবলিটি) ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ একই সাথে রাজনৈতিক ক্ষমতা কর্তব্যের সীমানা স্পষ্ট করে এঁকে দেয়।

প্রায় ক্ষেত্রেই সীমানা নিয়ে বিবাদ ছিলো যে সামন্ত শাসনে, তার বদলে গড়ে ওঠে এককেন্দ্রীক রাষ্ট্রের, যার নির্দিষ্ট এলাকার উপর ব্যাপক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই প্রক্রিয়া, ব্যাপকভাবে কেন্দ্রীভূত এবং ক্রমশ আমলাতন্ত্র নির্ভরপ্রবণ বিভিন্ন প্রকার একনায়কতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের জন্ম দেয়। সতের এবং আঠারো শতকে এটি ঘটে, যখন রাষ্ট্র ব্যবস্থার সমকালীন বৈশিষ্ট্যগুলো কাঠামোবদ্ধ রূপ লাভ করে। এতে অন্তর্ভুক্ত হয় নিয়মিত সেনাবাহিনী, কেন্দ্রীয় কর ব্যবস্থা, স্থায়ী দূতাবাসগুলোর সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নীতির উন্নয়ন ।

সাংস্কৃতিক ও জাতীয়তার অভিন্নতা আধুনিক রাষ্ট্রের উথ্থানে ব্যাপকবিস্তারী ভূমিকা রেখেছে। একনায়কতান্ত্রিক সময়কাল থেকেই রাষ্ট্রের সংগঠন বহুলাংশে জাতীয়তা নির্ভর। একথা স্পষ্ট হওয়া দরকার যে জাতীয় রাষ্ট্র আর জাতি-রাষ্ট্র এক বিষয় নয়। এমন কি নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের ঐক্য সবচেয়ে বেশি এমন সমাজেও রাষ্ট্র ও জাতির বৈশিষ্ট্য সমভাবে সঙ্গতিপূর্ণ হয়ে ওঠে না। ফলে প্রায়ক্ষেত্রেই ষেয়ার্ড সিম্বল ও জাতীয় পরিচয়ের উপর জোর দেয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্র জাতীয়বাদের প্রচার ও প্রসারে কাজ করে।

এই সময়কালেই রাষ্ট্র ব্যাপারটি বর্তমান অর্থের কাছাকাছি অর্থে রাষ্ট্র তত্ত্বের আলোচনায় ব্যবহৃত হতে থাকে। ১৫৩২ সালে প্রকাশিত দ্য প্রিন্স গ্রন্থে, আধুনিক অর্থে নির্দিষ্ট ভূ-খন্ডে সার্বভৌম সরকারক অর্থে রাষ্ট্রের ব্যবহারের জন্য কৃতিত্ব দেয়া হয় ম্যাকিয়াভেলিকে। যদিও ব্রিটিশ চিন্তাবিদ থমাস হব্সও জন লক এবং ফরাসি চিন্তাবিদ জেন বডিনের হাত ধরেই রাষ্ট্রের বর্তমান অর্থ পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়।

বর্তমানকালের অধিকাংশ রাষ্ট্রেই ম্যাক্স ওয়েবারের পলিটিক্স এ্যাজ ভোকেশন-এ বর্ণিত সংজ্ঞার মধ্যেই পড়ে। ওয়েবারের মতে আধুনিক রাষ্ট্র নির্দিষ্ট ভূ-খন্ডের ভেতর বলপ্রয়োগের সব মাধ্যমের উপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে।

বলপ্রয়োগের এই যে একচ্ছত্র ক্ষমতা, তার আবার বিশেষ ধরণের। কারণ একে আবার আমধারণা অনুযায়ী আইনসিদ্ধ হতে হবে যে আইন ব্যাক্তি স্বার্থানু্যায়ী প্রণিত নয়।

আবার এমন রাষ্ট্রেরও অস্তিত্ব আছে যা ওয়েবারের সঙ্গার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। নির্দিষ্ট এলাকায় বলপ্রয়োগের মাধ্যমের উপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নেই বা সেই বলপ্রয়োগের আমধারণা অনু্যায়ী আইনী ভিত্তি নেই এমন রাষ্ট্রও আছে যাদেরকে সামন্তসমাজের মত অন্যান্য কাঠামো থেকে পৃথক করা যায় আমলাতন্ত্রের উপর তাদের নির্ভরতা এবং বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করার বৈশিষ্ট্যের কারণে।

মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিকেরা আধুনিক রাষ্ট্রের উদ্ভবকে ব্যাখ্যা করেন সামাজিক শ্রেণীগুলোর ভেতর উপস্থিত শ্রেণী সংঘাতের ধারণার উপর ভিত্তি করে।


জাতিসংঘ মানবাধিকার কর্মী ঘোষনা ১৯৯৮: মানবাধিকার কর্মীর অধিকার ও রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা

* এডভোকেট শাহানূর ইসলাম
 
মামলা প্রত্যাহারে মানবাধিকারকর্মীকে হুমকির অভিযোগ,[১] ঢাকা আইনজীবী বারের সদস্য অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলামকে হত্যার হুমকি,[২] মানবাধিকারকর্মীকে হেনস্তার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে,[৩] মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ কর্তৃক থানায় মানবাধিকারকর্মী হেনস্তা,[৪] মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী ও সাংবাদিককে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার হুমকি,[৫] এসআইয়ের হাতে মানবাধিকারকর্মী লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ,[৬] মানবাধিকারকর্মীকে হেনস্তার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে[৭] শিরোনামে দেশের বিভিন্ন বাংলা প্রত্রিকায় প্রকাশিত খবরগুলোর ন্যায় বিভিন্ন খবরের সাথে বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগন বহুলাংশে পরিচিত। কারন পত্রিকার পাতা খুললে আমরা প্রতিদিন এরকম অহরহ সংবাদ দেখতে পাই। মানবাধিকার আন্দোনের সাথে জড়িত মানবাধিকারকর্মীরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে প্রতিনিয়ত সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধনে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী বা আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহীনি কর্তৃক হত্যা, হত্যার হুমকি, শারীরিক আক্রমন, হত্যার উদ্দেশ্যে শারীরিক আক্রমন, মিথ্যা মামলায় জড়ানো, গ্রেফতার, লাঞ্ছনা, হয়রানী ইত্যাদির শিকার হয়। শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বে মানবাধিকারকর্মীরা আজ হুমকির সম্মূখীন।

মানবাধিকার উন্নয়ন ও সুরক্ষার সংগ্রামে লিপ্ত থাকায় মানবাধিকারকর্মীরা প্রায় সরকারী বাহীনি ও বেসরকারী শত্র" কর্তৃক নির্যাতনের প্রথম শিকারে পরিনত হয়। তাদের জীবনের উপর হামলা, শারীরিক আক্রমন, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও মর্যাদা হননের মত সহিংসতার শিকার হওয়া নৈমত্তিক ব্যপার। আইনের মাধ্যমে সংগঠন, সমাবেশ, তথ্যপ্রাপ্তিসহ আন্দোলনের স্বাধীনতার মত মানবাধিকার কার্যক্রমকে অবৈধ ঘোষনা করে নির্যাতন চালানো হয়। বিচার বিভাগীয় নিষ্পেষন ও শারীরিক সহিংসতার মাধ্যমে অনেক সময় মানবাধিকার কার্যক্রম বাঁধাগ্রস্থ করা হয়। মানবাধিকার কর্মীরা রাষ্ট্র কর্তৃক হয়রানী, হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং চাকুরী হারানো, কাজের অধিকার, চিকিৎসার অধিকার, ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার অধিকার অস্বীকার করাসহ বসতবাড়ী, জমিজমা ও নাগরিকত্ব হারানোর মতো নির্যাতনেরও শিকার হন। এমনি মানবাধিকার কর্মীর আত্বীয়স্বজন ও তাদের শুভাকাংখীরাও সংহিসতার শিকারে পরিনত হন। জাতিসংঘ সাধারন পরিষদ রেজুল্যুশন ৫৪/১৭০ অনেক রাষ্ট্রের মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা সুরক্ষা ও উন্নয়নে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গদের হুমকি, হয়রানী ও নিরাপত্তাহীনতার সম্মূখীন হওয়ার বিষয়ে বিশেষভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

মানবাধিকারকর্মী কে?


যে ব্যাক্তি ব্যক্তিগতভাবে বা অন্যের সহযোগে মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন তিনি একজন মানবাধিকার কর্মী।[৮] মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নের আন্দোলনে মানবাধিকার কর্মীরা মুখ্য ভুমিকা পালন করে। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগনের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহনের মাধ্যমে গনতান্ত্রিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে মানবাধিকারকর্মীরা অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। মানবাধিকারকর্মীরা সামাজিক, রাজনৈতিকও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপা উত্তেজনা প্রশমন, রাষ্ট্রীয় ও আন্তজাতিক শান্তিপূর্ন পরিবেশ বজায় রাখা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অংগনে মানবাধিকার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে পৃষ্ঠপোষকতা করে। তারা মানবাধিকার উন্নয়ন ও সুরক্ষা করতে জাতিসংঘের আওতায় আঞ্চলিক ও অন্তর্জাতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার ভিত্তি গঠনে কাজ করে।

জাতিসংঘ মানবাধিকারকর্মী ঘোষনা গ্রহন:

পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে মানবাধিকারকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করে বিনা বাঁধায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ দিতে জাতিসংঘ প্রস্তাবনা এ/রেস/৫৩/১৪৪[৯] মাধ্যমে ১৯৯৮ সালে জাতিসংঘ মানবাধিকারকর্মী ঘোষনা গ্রহন করে। মানবাধিকারকর্মীদের অধিকার ও কর্তব্য বিষয়ে একটি ঘোষনা গ্রহন করতে জাতিসংঘ ১৯৮৪ সাল থেকে আলোচনা শুরু করে এবং জাতিসংঘ সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষনাপত্রের অর্ধশত বছর পুর্তিতে ১৯৯৮ সালে সাধারন পরিষদ কর্তৃক মানবাধিকারকর্মী ঘোষনা গ্রহনের মাধ্যমে তা সম্পন্ন হয়। অনেক সংখ্যক বেসরকারী মানবাধিকার সংগঠন ও রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিদের আন্তরিক সমন্বিত প্রচেষ্টা অতি প্রয়োজনীয় এই ঘোষনা চুড়ান্ত করতে সহযোগীতা করেছে। এই ঘোষনা শুধুমাত্র মানবাধিকারকর্মী ও রাষ্ট্রকেই নয়, সকলকে সমগুরুত্ব প্রদান করেছে। আমাদের প্রত্যেকের মানবাধিকারকর্মী হিসেবে কাজ করার সুযোগ আছে মর্মে এই ঘোষনা প্রকাশ করে। তাছাড়া, আমাদের প্রত্যেকের সার্বজনীন মানবাধিকার আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে এই ঘোষনা গুরুত্ব প্রদান করেছে। জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহিত মানবাধিকারকর্মীদের অধিকার সংক্রান্ত এই ঘোষনার পুরো নাম "সমাজের বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন এবং সংস্থা সমূহের অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কিত ঘোষনা" সংক্ষেপে "জাতিসংঘ মানবাধিকার কর্মী ঘোষনা" হিসেবে পরিচিত।

আইনগত বাধ্যবাধকতা:


জাতিসংঘ মানবাধিকারকর্মী ঘোষনা-১৯৯৮ এর নিজস্ব কোন আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। তবে ইহা আইনগত বাধ্যবাধকতা সম্পন্ন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি যেমন-নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি (আইসিসিপিআর) ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে অনেকগুলো নীতি ও অধিকারের সমন্বয়ে গৃহীত হয়েছে। তাছাড়া, এই ঘোষনা জাতিসংঘ সাধারন পরিষদে ঐক্যমতের ভিত্তিতে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি কর্তৃক বাস্তবায়নে সুদৃঢ় অংগীকারের ভিত্তিতে গৃহীত হয়েছে এবং বর্তমানে রাষ্ট্রসমুহ ক্রমবর্ধমানভাবে এই ঘোষনাকে তাদের রাষ্ট্রীয় আইনের মত বাধ্যবাধক হিসেবে গ্রহনের বিষয়টি বিবেচনা করছে।

জাতিসংঘ মানবাধিকারকর্মী ঘোষনা-১৯৯৮ মানবাধিকারকর্মীদের কাজের প্রতি সমর্থন ও তাদের সুরক্ষা প্রদান করে। ইহা নতুন কোন অধিকার সৃষ্টি করে না, কিন্তু মানবাধিকার কর্মীদের জন্য বিদ্যমান অধিকারসমুহ কার্যক্ষেত্রে সহজে ব্যাবহারের সুযোগ সৃষ্টি করে। ইহা মানবাধিকারকর্মী ও সংগঠনের আর্থিক তহবিল প্রাপ্তি সহজলভ্য করা ও মানবাধিকার লংঘন ও মানবাধিকার মানদন্ড বিষয়ক তথ্য বিনিময় সহজীকরনের উপর গুরুত্ব আরোপ করে। রাষ্ট্রীয় আইনের সাথে এই ঘোষনার সম্পর্ক বাখ্যা করাসহ রাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং মানবাধিকার রক্ষাকালে প্রত্যেকের কর্তব্যসমুহ এই ঘোষনায় সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। ইহা গুরুত্বপূর্ন যে মানবাধিকারকর্মীদের অধিকার সংক্রান্ত এই ঘোষনার অধীনে শান্তিপূর্নভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

মানবাধিকার কর্মীদের অধিকার ও সুরক্ষা:

জাতিসংঘ মানবাধিকারকর্মী ঘোষনা-১৯৯৮ এর ১, ৫, ৬,৭,৮,৯,১১,১২ ও ১৩ নং ধারা মানবাধিকারকর্মীদের নিম্নলিখিত অধিকারসহ সুনির্দিষ্ট সুরক্ষা প্রদান করে:
১) জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবাধিকার পাওয়া ও সুরক্ষা চাওয়া;
২) ব্যক্তিগত ভাবে এবং অন্যের সঙ্গে সংঘবদ্ধ হয়ে মানবাধিকার রক্ষামুলক কাজ পরিচালনা করা;
৩) সমিতি ও বেসরকারী সংস্থা গঠন করা;
৪) শান্তিপূর্ণভাবে সাক্ষাৎ এবং সমাবেশ করা;
৫) মানবাধিকার সম্পর্কিত তথ্য চাওয়া, পাওয়া, গ্রহন ও ধারন করা;
৬) নতুন মানবাধিকার ধারনা ও নীতিসমুহের উন্নয়ন ও আলোচনা করা এবং তাদের স্বীকৃতির জন্য তদ্বির করা;
৭) সরকারী কর্তৃপক্ষ ও সংস্থা এবং বেসরকারী সংগঠন যারা সরকারী সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে, তাদের নিকট কার্য়ক্রম উন্নয়নের প্রস্তাব পেশ করা এবং তাদের কার্যক্রমে যদি কোন মানবাধিকার ব্যাহত হয়, তবে সে ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষন করা;
৮) মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট সরকারী নীতি ও আইনের বিষয়ে অভিযোগ করা এবং সে অভিযোগ পুনরীক্ষন করা;
৯) মানবাধিকার এবং মৌলিক অধিকার রক্ষার স্বার্থে পেশাগতভাবে যোগ্যতা সম্পন্ন আইনী সহায়তা অথবা অন্যান্য প্রায়োজনীয় সাহায্য প্রদান করা;
১০) দেশীয় আইন এবং প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা ও প্রতিশ্র"তি মেনে চলা হচ্ছে কিনা সে সম্পর্কে মতামত তৈরী করার জন্য প্রকাশ্য শুনানী, কার্যক্রম এবং মামলায় উপস্থিত থাকা;
১১) বেসরকারী এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংস্থার সঙ্গে বাঁধাহীনভাবে যোগাযোগ স্থাপন করা;
১২) ফলপ্রসু প্রতিকার পাওয়া;
১৩) মানবাধিকার কর্মীর পেশা ও বৃত্তি আইন সংগতভাবে অনুশীলন করা;
১৪) রাষ্ট্র কর্তৃক সংঘটিত কাজের ফলে মানবাধিকার লংঘিত হলে তার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ন উপায় বা কাজের মাধ্যমে প্রতিবাদ করলে জাতীয় আইনের মাধ্যমে কার্যকর সুরক্ষা পাওয়া; এবং
১৫) মানবাধিকার রক্ষার উদ্দেশ্যে সম্পদ প্রাপ্তির অনুরোধ, গ্রহন ও ব্যবহার করা।

রাষ্ট্রের দায়িত্ব:

মানবাধিকারকর্মী ঘোষনা-১৯৯৮ এর সব প্রোভিশন বস্তবায়ন করা ও মেনে চলা সকল রাষ্ট্রের দায়িত্ব। যাহোক, ২, ৯, ১২, ১৪ এবং ১৫ নং ধারা রাষ্ট্রের নিম্নলিখিত দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্দিষ্ট করাসহ তার ভুমিকা বিষদভাবে উল্লেখ করেছে:
১) সকল মানবাধিকার সুরক্ষা, উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন করা;
২) মানবাধিকারকর্মীর সামাজিক, অথৃনৈতিক, রাজনৈতিকও অন্যান্য অধিকার ও স্বাধীনতা বাস্তবে নিশ্চিত করা;
৩) মানবাধিকারকর্মীর অধিকার ও স্বাধীনতা কার্যকারভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইনগত, প্রশাসনিক ও অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহন করা;
৪) মানবাধিকার লংঘনের শিকার ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় কার্যকর প্রতিকার প্রদান করা;
৫) মানবাধিকার লংঘনের ঘটনায় দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করা;
৬) মানবাধিকারকর্মী ঘোষনা'র আওতাধীন কোন অধিকার আইন সংগতভাবে অনুশীলন করার ফলে তার বিরুদ্ধে সহিংসতা, হুমকি, প্রতিশোধ, জবরদস্তিমূলক বৈশম্য, চাপ অথবা অন্য কোন স্বেচ্ছাচারী ব্যাবস্থা গ্রহনের হাত থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা;
৭) নাগরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পর্কে গনসচেতনতামুলক কার্যক্রম বৃদ্ধি করা;
৮) সকল স্তরের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ও পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষন কার্যক্রমে মানবাধিকার শিক্ষা অন্তর্ভূক্ত করা।

ব্যক্তিগত কর্তব্য:

মানবাধিকার কর্মী ঘোষনা-১৯৯৮ সবায়কে সমাজের প্রতি ও সমাজের মধ্যে এবং মানবাধিকারকর্মী হিসেবে সমাজে ভুমিকা রাখতে উৎসাহ প্রদানের বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান করেছে। এই ঘোষনার ১০, ১১, ১৮ নং ধারা প্রত্যেকের মানবাধিকার উন্নয়ন, গনতন্ত্র রক্ষা ও অন্যের অধিকার লংঘন না করার দায়িত্ব আরোপ করেছে। ১১ নং ধারা সেসব পেশা, যা অনুশীলনের সময় অন্যের অধিকার লংঘিত হওয়ার সম্ভা^াবনা থাকে, বিশেষত পুলিশ সদস্য, আইনজীবী ও বিচারকদের কর্তব্য সম্পর্কে গুরুত্ব আরোপ করেছে।

জাতীয় আইনের ভূমিকা:


জাতিসংঘ মানবাধিকার কর্মী ঘোষনা-১৯৯৮ এর ৩ ও ৪ নং ধারা এই ঘোষনার আলোকে আন্তর্জাতিক ও রাষ্ট্রীয় আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে মানবাধিকারের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ আইনগত মানদন্ড অনুসরনের নিশ্চয়তা প্রদান করেছে।

বাংলাদেশ জাতিসংঘের একটি সদস্য রাষ্ট্র এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক চুক্তিসমুহের পক্ষভুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে তা বাস্তবাস্তবানে বাধ্যবাধকতার কারনে মানবাধিকারকর্মীর অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ মানবাধিকারকর্মী ঘোষনা-১৯৯৮ বাস্তবায়নে অংগীকারাবদ্ধ। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার সে প্রতিশ্র"তির বাস্তবায়ন না করে মানবাধিকারকর্মীদের নির্যাতন, হুমকি, গ্রেফতার, মিথ্যা মামলায় জড়ানো, ভয়-ভীতি প্রদর্শনসহ হয়রানি করে প্রতিনিয়ত তা লংঘন করে চলেছে। সরকারের এখনই প্রয়োজন আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতাকে সম্মান দেখিয়ে প্রয়োজনে জাতিসংঘ মানবাধিকার কর্মী ঘোষনা-১৯৯৮ আলোকে মানবাধিকারকর্মী (অধিকার ও সুরক্ষা) আইন প্রনয়নের মাধ্যমে মানবাধিকারকর্মীদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
* প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব, জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ  saikotbihr@gmail.com.

http://bn.wikisource.org/wiki/%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0_%E0%A6%8F%E0%A6%AC%E0%A6%82_%E0%A6%9A%E0%A6%B0%E0%A6%AE_%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BE_%E0%A6%89%E0%A6%AA%E0%A6%B0_%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%98%E0%A7%87%E0%A6%B0_%E0%A6%96%E0%A6%B8%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%BE_%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A6%A8%E0%A6%BE


কিষেণজির সঙ্গীরা সক্রিয়ই, চিন্তায় পুলিশ
'অপারেশন এক্স' সফল।
কিন্তু 'অপারেশন কে জে'?
'অপারেশন এক্স' কী, পুণের ইয়েরওয়াডা জেলে আজমল আমির কসাবের ফাঁসির পরে জেনেছে দেশ।
ঠিক এক বছর আগে ঝাড়গ্রামের বুড়িশোলের জঙ্গলে মাওবাদীদের শীর্ষ নেতা কিষেণজির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযান শুরুর সময়ে তার কোনও নাম দেওয়া হয়নি। কিষেণজি নিহত হওয়ার পরেই সিআরপি ওই অভিযানকে অভিহিত করেছিল 'অপারেশন কে জে' নামে।
কিন্তু 'অপারেশন এক্স'-এর মতো 'অপারেশন কে জে'-ও যে পুরোপুরি সফল, বুক বাজিয়ে তা বলতে পারছেন না স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তারা।
কেন? কারণ, কিষেণজির ছায়াসঙ্গীদের আতঙ্ক এখনও তাঁদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে। এক বছর তল্লাশি চালিয়েও ধরা যায়নি আকাশ ওরফে অসীম মণ্ডল এবং বিকাশ ওরফে সিঙ্গরাইল টুডুকে। দু'জনেই মাওবাদীদের রাজ্য কমিটির সদস্য। বিকাশ আবার পার্টির সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনেরও সদস্য। অধরাদের তালিকায় রয়েছে পার্টির রাজ্য মিলিটারি কমিশনের সদস্য রঞ্জিত পাল ওরফে রাহুলের মতো গুরুত্বপূর্ণ নেতার নামও।

এখনও অধরা

বিকাশ ওরফে সিঙ্গরাইল টুডু

কেন্দ্রীয় মিলিটারি কমিশনের সদস্য

আকাশ ওরফে অসীম মণ্ডল
রাজ্য কমিটির সদস্য

রঞ্জিত পাল ওরফে রাহুল

রাজ্য মিলিটারি কমিশনের সদস্য

জয়ন্ত ওরফে সাহেবরাম হেমব্রম

ঝাড়গ্রামের এরিয়া কম্যান্ডার

তারা বিকাশের স্ত্রী

লালগড়ের এরিয়া কম্যান্ডার
কিষেণজির মৃত্যুর পরে পুলিশ-কর্তাদের ধারণা হয়েছিল, ছত্রভঙ্গ মাওবাদী নেতাদের সহজেই কাবু করা যাবে। কিন্তু বাস্তবে প্রথমে সুচিত্রা মাহাতোর আত্মসমর্পণ, মাওবাদীদের রাজ্য কমিটির সদস্য অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম, কলকাতা সিটি কমিটির সম্পাদক অভিষেক মুখোপাধ্যায় ওরফে অরণ্য এবং নয়াগ্রাম-গোপীবল্লভপুরে মাওবাদীদের এরিয়া কম্যান্ডার রঞ্জন মুন্ডাকে গ্রেফতার করা ছাড়া তেমন কোনও সাফল্য আসেনি বলে ধারণা পুলিশ-কর্তাদের একাংশেরই।
এর মধ্যেই নতুন একটি বার্তায় ফের উদ্বেগ বেড়েছে স্বরাষ্ট্র দফতরের। কিষেণজি-হত্যার বদলা নিতে এবং সমর্থকদের চাঙ্গা করতে কিষেণজির জায়গায় আসছেন কাদরি সত্যনারায়ণ রাও ওরফে কোসা। ২০১০-এর এপ্রিলে দান্তেওয়াড়ায় সিআরপি-র প্রায় ৮০ জন জওয়ানকে হত্যার অন্যতম মূল চক্রী কোসা, জঙ্গলমহলে ফের আঘাত হানতে চলেছেন বলে গোয়েন্দা-বার্তায় জানানো হয়েছে। তাই 'অপারেশন কে জে'-র বর্ষপূর্তিতে সাফল্য উদ্যাপন করবেন কি, উল্টে ব্যর্থতার কাঁটাই যেন খচখচ করছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্তাদের মনে। 
সিআইডি-র ডিরেক্টর জেনারেল ভি ভি থাম্বির কথায়, "কিষেণজি নিহত হয়েছে ঠিকই। কিন্তু জঙ্গলমহলে সুচিত্রা মাহাতো ছাড়া তার ছায়াসঙ্গীদের প্রায় কেউই ধরা পড়েনি। রঞ্জিত পাল আকাশ, বিকাশ, জয়ন্তেরা জঙ্গলমহলের কোনও গ্রামে রাত কাটিয়ে ঝাড়খণ্ডে চলে যাচ্ছে। ফের সমস্যা তৈরিতে এই ক'জনই তো যথেষ্ট। ওদের সকলকে ধরার আগে আত্মসন্তুষ্টির কোনও জায়গা নেই।" থাম্বির বক্তব্য, কিছু দিনের মধ্যেই পুরোদমে শীত পড়ে যাবে। রাত বড়, দিন ছোট। নাশকতা ঘটানোর উপযুক্ত সময়। "এই সময়ে ভীষণ সতর্ক থাকতে হবে আমাদের," বলছেন সিআইডি-প্রধান। রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ বা আইবি-র অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল বাণীব্রত বসুও বললেন, "কিষেণজির মৃত্যুর পরে এক বছর কেটে গেলেও ওই সব মাওবাদী নেতাকে ধরতে না-পারাটা অবশ্যই সমস্যার বিষয়।"
অন্য সমস্যাও আছে। সেটা হচ্ছে প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রামগুলোয় মাওবাদীদের জনভিত্তি নির্মূল করতে না পারা। গোয়েন্দারা জেনেছেন, কিষেণজি এবং তাঁর সঙ্গীরা পিছিয়ে পড়া ওই সব এলাকার মানুষদের আপদে-বিপদে পাশে দাঁড়াতেন। ঘনঘন চিকিৎসা শিবির করতেন। বিনামূল্যে ওষুধও বিলি হত। এই সব কাজের মধ্য দিয়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে তাঁর হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। কিষেণজির সঙ্গীরা এখনও তারই সুফল পাচ্ছে, ধারণা গোয়েন্দাদের। তাঁরা বলছেন, বাসিন্দাদের সহানুভূতি কিছুটা অটুট আছে বলেই রাতে গ্রামে সভা করেও সহজেই ঝাড়খণ্ডে গা-ঢাকা দিতে পারছে বিকাশ, রঞ্জিতেরা।
http://www.anandabazar.com/24raj1.html

কিষেণজি নেই, 'অশরীরী'
আনাগোনা তবু থামেনি
ঠিক এক বছর পর জামবনির বুড়িশোল। গত বছর ২৪ নভেম্বরের সন্ধ্যায় এবড়ো-খেবড়ো এই রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়েছিলাম। অন্ধকারে দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর হঠাৎই নাগাড়ে গুলির আওয়াজে আতঙ্কে পুলিশের গাড়ির আড়ালে মাটিতে শুয়ে পড়েছিলাম। গভীর রাতে পুলিশকে অনুসরণ করে সরু মাটির রাস্তা ধরে খানিক হেঁটে গিয়ে দেখেছিলাম, উই ঢিবির আড়ালে দু'টো খেজুর গাছের চারার কাছে পড়ে রয়েছে কিষেণজির দেহটা। 
সেই খেজুর চারা দু'টো এখন কোমর সমান। মাটির রাস্তায় মোরাম পড়েছে। পাশে ধানজমির ধার বরাবর তৈরি হয়েছে সরু পাকা সেচনালা। অন্য পাশে খোঁড়া হয়েছে বিশাল পুকুর। গুলি-লাগা গাছগুলো কই? একটা-দুটো গাছ খুঁজে পাওয়া গেল, কিন্তু তাতে গুলির দাগ বেয়ে উই ধরেছে। ফুটেছে বনশিমুল। শাল জঙ্গলের ভিতর সেই জায়গাটা আজ যেন অচেনা!
এমন করেই কি বদলে গিয়েছে জঙ্গলমহল?
কিছু বদল তো এসেছেই। 'মাওভূমি' বলে পরিচিত বেলপাহাড়ি, লালগড়ের প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতেও এখন বিনা বাধায় যাওয়া যাচ্ছে। এক সময় গ্রামের যুবকরা আতঙ্কে ভিন্ রাজ্যে দিনমজুরের কাজ করতে চলে গিয়েছিলেন। সেই যুবকদের অনেকেই এখন গ্রামে ফিরেছেন। তালপুকুরিয়া গ্রামের অনিল সর্দার বলেন, "সুখ না থাক, অশান্তিও নেই। তাই গ্রামে ফিরেছি।" 
অশান্তি নেই, শান্তি আছে কি? পুলিশ আগের মতো স্কুল দখল করে না ঠিকই। কিন্তু গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সরকারি অতিথিশালায় ক্যাম্প করে রয়েছেন সিআরপি, রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের জওয়ানেরা। শুধু ঝাড়গ্রাম মহকুমার আটটা ব্লকেই তিরিশেরও বেশি ক্যাম্প রয়েছে। খাস ঝাড়গ্রাম শহরে সিআরপি-র একটি হেড কোয়ার্টার। জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্যই এই আয়োজন। তবু ভিন্ রাজ্যের এই সব জওয়ান আর তাঁদের হাতে উঁচিয়ে থাকা ইনসাস, মেশিনগানের জন্য এলাকাকে 'শান্তিপূর্ণ' বলতে হোঁচট খেতে হয়।
গ্রামবাসীদের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল করতে নানা রকম ভাবে চেষ্টা অবশ্য চালাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের উদ্যোগে গ্রামে-গ্রামে পুরুষ ও মহিলা ফুটবল দল গড়ে উঠেছে। চোখের ছানি অপারেশন থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির, বস্ত্র বিলি, দুঃস্থ পড়ুয়াদের আর্থিক সাহায্য করার কর্মসূচি নিচ্ছে পুলিশ। তবু গ্রামবাসীদের মনে অস্বস্তির একটা কাঁটা কিন্তু রয়েই গিয়েছে।
বদলায়নি জঙ্গলমহলে রাজনীতির অঙ্কটাও। বাম জমানায় বিরোধী তৃণমূলের সঙ্গে তলায়-তলায় মাওবাদীদের যোগ রয়েছে বলে অভিযোগ করত সিপিএম। আজ বিরোধী দল সিপিএমের নিচুতলার কর্মীরা মাওবাদীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে বলে অভিযোগ করছে শাসক দল তৃণমূল। সিপিএম থেকে 'সন্ন্যাস' নেওয়া প্রবীণ এক নেতার কথায়, "রাষ্ট্রবিরোধিতা ছাড়া মাওবাদীদের যেমন অস্তিত্ব নেই, তেমনই সংসদীয় রাজনীতিও মাওবাদীদের ছাড়া চলতে পারে না। মাওবাদীরা নির্মূল হোক, এমনটা চায় না কোনও রাজনৈতিক দলই।" 
অনুন্নয়ন আর বঞ্চনাকে কেন্দ্রে রেখেই সেই রাজনীতির আবর্তন। লালগড়ের নির্মল কিস্কু, বেলপাহাড়ির সনৎ মাহাতোদের কথায়, "আমরা যে তিমিরে ছিলাম, সেখানেই আছি।" হয়তো সেই জন্যই আজও মাওবাদীদের আনাগোনা টের পেলেও গ্রামবাসীরা তা নিয়ে শোরগোল করেন না। লালগড় ও বেলপাহাড়ির জঙ্গলঘেরা গ্রামের বাসিন্দারা শুধু জানালেন, "ওরা গ্রামে এলেও বেশিক্ষণ থাকছে না।" 
তা হলে কি কিষেণজির মৃত্যুর এক বছর পরেও আসেনি মাও-মুক্তি? আবার কি সংগঠন গড়ছে মাওবাদীরা? পঞ্চায়েত ভোটের হাওয়া গরম হলেই তা টের পাওয়া যাবে, আশঙ্কা গোটা জঙ্গলমহলে।
http://www.anandabazar.com/24med1.html

চা বাগানে অনাহারে মৃত্যু নিয়ে মন্ত্রীর 
কথার সঙ্গে মিল নেই জেলাশাসকের

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা ও জলপাইগুড়ি, ২৩শে নভেম্বর— দলমোড়ের শ্রমিক মহল্লায় এই অঘ্রাণে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস কী? 

ডুয়ার্সে মাদারিহাটে এই বাগানের বড় লাইন থেকে দশ নম্বর লাইন, শ্রমিক মহল্লার প্রতিটি ঘরে গেলে মিলবে একটাই উত্তর। দু'বেলার দু'মুঠো সেদ্ধ ভাত। বাগিচা শ্রমিকদের জীবনে এটাই আজকের বাস্তবতা।

মাত্র চার মাসেই অনাহার, অপুষ্টির রোগে ১০জন চা-শ্রমিকের মৃত্যুর পর দলমোড় জুড়ে নেমে এসেছে গাঢ় অন্ধকার। সবে চার মাস 'বন্ধ' বাগান। শ্রম আইনের ন্যূনতম তোয়াক্কা না করেই বাগান ছেড়ে পালিয়েছে মালিকপক্ষ। মিলছে না সরকারী সাহায্যও। মহল্লার প্রতি ঘরে তাই তীব্র ক্ষুধার জ্বালা। ভুটান পাহাড় থেকে নেমে আসা পাগলী নদীতে পাথর ভাঙার কাজে এখন দলমোড়ের বাগিচা শ্রমিকরা। তবুও ভাতের দাম জোগাড় হয় না। সম্বল সেই কচুর কন্দমূল সেদ্ধ, চা-ফুল ভাজা। বাগানজুড়ে বাড়ছে অজানা রোগের প্রকোপ। শ্রমিক ইউনিয়নগুলির দাবি, সরকার অবিলম্বে যদি ব্যবস্থা না নেয় তবে পরিস্থিতি আরো ঘোরালো হবে।

ডুয়ার্সের দলমোড় বাগানে মৃত্যুর শুরু গত ৩০শে জুলাই থেকে। ঐদিন বাগানের বড় লাইনের চার শ্রমিক পুনাই ওঁরাও (৩২) এর মৃত্যু হয় অনাহারে। সেই শুরু। সর্বশেষ গত ১৮ই নভেম্বর মারা যান বড় লাইনের বাগিচা শ্রমিক কুশল বড়াইক (৫২)। স্রেফ অনাহারে, অপুষ্টিতে, জীবনধারণের ন্যূনতম জোগানের অভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন ডুয়ার্সের দলমোড় বাগানের মহিলা ও পুরুষ শ্রমিকরা।

এদিন এপ্রসঙ্গে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'শুনেছি ঘটনা। যে বাগানে এই ঘটনা ঘটেছে সেটি মাত্র কয়েকমাস আগে বন্ধ হয়েছে। এই অল্প সময়ের মধ্যেই অনাহারে মৃত্যু হচ্ছে বলে মনে হয় না'। বরং এরকম 'স্পর্শকাতর' বিষয় নিয়ে যেভাবে প্রচার চলছে তা ঠিক নয় বলেই জানিয়েছেন শ্রমমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, 'চা-বাগানের সামগ্রিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। মাত্র তিনটে বাগান বন্ধ আছে। আমরা চেষ্টা করছি। খাদ্য দপ্তরের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারাও উদ্যোগ নিচ্ছে। এই সমস্ত ঘটনা নিয়ে তো নৃত্য করার বিষয় নয়'। 

বন্ধ বাগান খোলা নিয়ে সরকার কী উদ্যোগ নিচ্ছে? পূর্ণেন্দু বসু জানিয়েছেন, মোট তিনটি বাগান বন্ধ। এর মধ্যে ঢেকলাপাড়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে। বাকি দুটি বাগান খোলার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। আমরা এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছি। মিটিংও ডাকা হয়েছে'। আগামী ২৬তারিখে এই ইস্যুতে মহাকরণে মিটিং হবে বলে জানা গেছে। ডাকা হয়েছে মালিকপক্ষকেও।

শ্রমমন্ত্রী দাবি করেছেন বন্ধ বাগানে খাবার সরবরাহের জন্য খাদ্য দপ্তর উদ্যোগ নিচ্ছে। কিন্তু চা বাগানের শ্রমিক মহল্লার বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা কিন্তু বিপরীত। খাদ্য দপ্তরের তরফে মেলেনি কোনো সাহায্যই। গত ১৬ই অক্টোবর ঢেকলাপাড়া চা বাগানে গিয়েছিলেন খাদ্যমন্ত্রী নিজেই। সেদিনই ঢেকলাপাড়ার শ্রমিক মহল্লায় মৃত্যু হয় জয়চরণ শুঁড়ির (৫২)। তার আগের রাতেও মৃত্যু হয় একজনের। মন্ত্রী সেদিন শ্রমিক পরিবারগুলিকে পাঁচ কেজি করে চাল দিয়েছিলেন। কী হয় তাতে? অনাহারের সঙ্গে প্রত্যহ লড়াই করা ঢেকলাপাড়ার বাগিচা শ্রমিক স্বপন সোনার, বসন্ত তাঁতিদের দাবি— কী হবে পাঁচ কেজি চালে। ফাউলাইয়ের টাকা মেলে না। বন্ধ বাগানের শ্রমিকও ভাত তাই পায় না'।

এদিকে, আবার জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র অবশ্য অনাহার, অপুষ্টিতে দলমোড় বাগানে ১০জন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাকে স্বীকার করতে চাননি। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, 'মাত্র চার মাস হলো এই বাগান বন্ধ আছে। বন্ধ বাগানের চা-শ্রমিকদের জন্য যে সব সরকারী সহায়তা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে, এখনই তা এই শ্রমিকদের জন্য দেওয়া সম্ভব নয়।' যদিও শ্রমমন্ত্রী বলেছেন সরকার ইতোমধ্যেই উদ্যোগ নিয়েছে। জেলাশাসক বলেছেন, আইন অনুযায়ী এক বছর ধরে বন্ধ থাকা বাগানের শ্রমিকদেরই এই ধরনের সহায়তা দেওয়ার নিয়ম আছে।

শ্রমমন্ত্রী দাবি করলেও এদিন সি আই টি ইউ অনুমোদিত চা-বাগান মজদুর ইউনিয়নের সম্পাদক রবীন রাই বলেন, বামফ্রন্ট সরকারের শেষদিকে কার্যত সমস্ত বন্ধ বাগানই খোলা হয়েছিল। সরকারের উদ্যোগেই তা হয়েছিল। শুধুমাত্র ঢেকলাপাড়া বাদে। কিন্তু এই সরকার তো গত দেড় বছরে ঢেকলাপাড়ার জটও যেমন কাটাতে পারেনি, তেমনই নতুন সরকারের আমলেই নতুন করে দুটি বাগান বন্ধ হয়ে গেছে। সরকার তার দায় এড়াতে পারে না।

কী করে বন্ধ হলো দলমোড় চা বাগান? বেতন, শ্রমিকদের রেশন, চিকিৎসা নিয়ে সামান্য দরকষাকষির জন্যই একতরফা ভাবে মালিকপক্ষ বাগান ছেড়ে চলে গেছে। কেবলমাত্র চারজন বাগিচা শ্রমিকের সঙ্গে বচসার জেরে মালিকপক্ষ বাগানে 'সাসপেনশন অব ওয়ার্ক'-র নোটিস ঝুলিয়ে দেয়। এরপর শ্রমিকদের সমস্ত বকেয়া রেখেই বাগান ছেড়ে চলে যায় মালিকপক্ষ। এই মালিকপক্ষই ডুয়ার্সে দলসিংপাড়া, রাধারানী, মুজলাই, তুনবাড়ি এবং যোগেশচন্দ্র বাগানও পরিচালনা করে। বাগিচা শ্রমিকদের অভিযোগ, দলমোড়কে দেখিয়ে বাকি বাগানগুলিতে শ্রমিকদের আন্দোলনকেও ভেঙে দিতে চাইছে মালিকপক্ষ। হুমকি দেওয়া হচ্ছে, আন্দোলন করতে গেলে দলমোড়-র মতো পরিণতি হবে। এখানে চা শ্রমিকদের ক্ষোভ, মালিকপক্ষ এত বেপরোয়া হওয়ার পরেও কেন সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না তাঁদের বিরুদ্ধে।

রবীন রাই জানিয়েছেন, চা শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়েই আছেন। বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম পরিষেবা, চিকিৎসার সুযোগ, ১০০দিনের কাজের প্রকল্পের দাবিতে আন্দোলনে আছেন বাগিচা শ্রমিকরা। ইউ টি ইউ সি অনুমোদিত ডুয়ার্স চা বাগান ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের জেলা নেতৃত্ব বিষ্ণু ঘাতানী বলেছেন, শ্রম আইন মানা হচ্ছে না বাগানে। সরকারও নিশ্চুপ। অবিলম্বে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বাগান খোলার দাবি জানিয়েছেন তিনি। 

বাগানের অবস্থা মারাত্মক। অপুষ্টিজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। চা শ্রমিক আন্দোলনের প্রবীণ নেতা, চা-শ্রমিক সংগঠনগুলির আহ্বায়ক চিত্ত দে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় দলমোড় বাগানের শ্রমিকদের পাশে রাজ্য সরকারকে দাঁড়ানোর দাবি তুলেছেন।

http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=32632


বিশ্বব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার লংঘনের খতিয়ান (১)

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:১৫ |

শেয়ারঃ
30


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর এক নম্বর সুপার পাওয়ার সমৃদ্ধ দেশ। বর্তমান পৃথিবীর সকল অশান্তির মূল ঘটক এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে মানবতা ধ্বংস ও মানবাধিকার লংঘনের মধ্যে দিয়ে। তাইতো প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম, দস্যুবৃত্তি ও মানবাধিকার লংঘন করেই চলেছে। যেন সৃষ্টিকর্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পৃথিবীর গজব হিসাবে পাঠিয়েছেন। দেশে দেশে মানবতা ধ্বংস ও মানবাধিকার লংঘন করে এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিহাসের খলনায়ক হয়ে পরবর্তীতে বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি সম্পন্ন দেশে পরিনত হয়েছে। বিশ্বের পরাশক্তি হতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়েছে, সৃষ্টি করতে হয়েছে অনেক ইতিহাস। এ ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেই ঘৃণিত রুপটি, যা মানবত ধ্বংস, মানবাধিকার লংঘন এবং গোটা পৃথিবীকে ত বিত করুণ ইতিহাস। দস্যুবৃত্তিই ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান পেশা। আজ যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধন সম্পদ, সহায় সম্পত্তি, টাকা-পয়সা সবই বিভিন্ন দেশ থেকে জোর পূর্বক দস্যুতা ও প্রতারণার মাধ্যমে আদায় করা। এরা মূলত পরের ধন সম্পদের উপরই পুদ্দারী করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দস্যুতার শিকার হয়নি পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নেই। কিভাবে তারা মানবতা ও মানবাধিকারকে গলাটিপে হত্যা করেছে, সুন্দর এ পৃথিবীকে করেছে রক্তাক্ত, করছে ধ্বংসস্তুপে। যেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবী ধ্বংসের দানব রুপে আর্বিভূত হয়েছেন। তাদের আগ্রাসনের শিকার হয়নি এমন দেশ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। পৃথিবীর পরাশক্তি হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন সবার উপরই খবরদারী শুরু করেছে । এমনকি জাতিসংঘের মহাসচিবের উপরও গোয়েন্দা নজরদারী করতে দ্বিধা করেনি তারা। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বিকল্প গণমাধ্যম উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া তার বার্তায় উঠে এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দস্যুবৃত্তির নানা অজানা কাহিনী। তাদের আসল চেহারা পৃথিবীবাসীর সামনে উন্মোচন করে দিয়েছে এ বিকল্প গণমাধ্যম। মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা সেজে মানবাধিকার ধ্বংসের মহানায়ক হয়ে যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম তারা চালিয়েছে তা কিছুটা হলেও তুলে ধরেছে উইকিলিকস। যা টনক নাড়িয়ে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। তারাই পৃথিবীটাকে যেমন ইচ্ছা চালাচ্ছে। তাইতো সকল দেশ তাদেরকে সমীহ করে চলে। দুর্বল রাষ্ট্রগুলো তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য ব্যস্ত থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ মানবতা ধ্বংসের নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্টগণ। যারা ইতিহাসে মানবতা ধ্বংসের জন্য কুখ্যাত হয়ে রয়েছেন। কিন্তু পৃথিবীতে কোন সাম্রাজ্যবাদই চিরস্থায়ী হয়নি। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদও হবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই ধ্বংসের সীমানায় পৌছে গেছে। বিশ্বব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব খর্বের কথা প্রকাশ পেয়েছে এফবিআইয়ের সা¤প্রতিক রির্পোটগুলোতে। কথায় আছে আলো নিবানোর আগে নাকি একটু বেশিই জ্বলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও পতনের আগে একটু বেশি কুকর্ম করে নিচ্ছে। এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবতা ধ্বংস, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, দস্যুতা বর্ণনা করতে গেলে একটি বিরাট আকৃতির বই হয়ে যাবে। কারণ তাদের কুকর্মের ফিরিস্তি অনেক দীর্ঘ। কিন্তু সচেতন পৃথিবীবাসী ও পৃথিবী গড়ার কারিগর এ তরুণ সমাজের উদ্দ্যেশে আংশিক কুকর্মের বর্ণনা পেশ করা হল, যাতে সাম্রাজ্যবাদ ধ্বংসের নায়করা এর গুরুত্ব অনুধাবন করে সাম্রাজ্যবাদের শিকড়কে পৃথিবী থেকে উপড়ে ফেলে, একটি শান্তি, সুখের নির্মল পৃথিবী গড়তে পারেন।

* শ্যাময়েল হান্টিংটন একজন ইহুদী পন্ডিত। 'সভ্যতার সংঘাত' নামে একটি বই লিখেছেন তিনি। পুস্তকের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় পাশ্চাত্য সভ্যতার অস্তিত্বের জন্য ইসলামকে হুমকি হিসাবে উপস্থাপন করা । এটাও প্রমাণ করা যে, ইসলাম ও মুসলিমের সাথে বস্তুবাদী কথিত গণতান্ত্রিক পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্ধ এবং সংঘাত অনিবার্য। তার এই ত্বত্ত আমেরিকা ও ইউরোপের বৈদেশিক নীতির মূল চালিকাশক্তি। বৈদেশিক নীতি ছাড়াও আর্ন্তজাতিক যে কোন ইস্যু এবং অভ্যন্তরীন নীতি নির্ধারনে আমেরিকা ও ইউরোপ ইসলাম ও মুসলমানদেরকে প্রতিপ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বিশ্বের তাবৎ সম্পদের সিংহ ভাগ নিয়ন্ত্রন করে ইহুদী ও খিষ্টান বলয়াধীন শক্তিগুলো । প্রায় সত্তর ভাগ মিডিয়া নিয়ন্ত্রিত হয় ইহুদীদের দ্বারা। আমেরিকা ও ইউরোপের সরকারগুলো কার্যত ইহুদী খৃষ্টান স্বার্থ সংরণে শতভাগ নিষ্ঠাবান। তারা মানবতাকে পদদলিত করে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট পন্থায়। তারা তখনই হিংস জানোয়ার হয়ে আবির্ভূত হয়েছে। যখন তাদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ নিয়ে কতটা হীন, ঘৃন্য, জঘন্য ও পাপিষ্ট হতে পারে শয়তানের প্রতিভূ হতে পারে, তার একটি খন্ড চিত্র নিম্নে প্রদান করা হল:
১. আফগানিস্তানে তালেবান নির্মূলে ইঙ্গ-মার্কিন সামরিক অভিযান এখনো চলছে। কলম্বাসের আমেরিকা ও ভাস্কোদাগামার ভারতে আসার নৌপথ চিহিৃত করার পর ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গরা বিশ্বব্যাপী খৃষ্টীয় প্রধান্য বিস্তারের ল্েয যে আগ্রাসন, হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল। আফগানিস্তানে হামলা তারই আধুনিক সংস্করণ।
২. কলম্বাস আমেরিকা যাবার পথ চিহিৃত করার পর ব্যবসা ও ধর্ম প্রচারের ল্েয দলে দলে ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গরা আমেরিকা যাতায়াত শুরুকরে দেয়। তবে মূল কাজ ছিল দস্যুতা। আমেরিকার বা আদিবাসী যারা রেড ইন্ডিয়ান বলে চিহিৃত, তাদের সহায় সম্পত্তি শক্তিবলে দখল করা। আমেরিকার শ্বেতাঙ্গদের উল্লেখযোগ্য ব্যবসা ছিল দাস ও মাদক ব্যবসা। আর উভয় প্রকার ব্যবসাই ছিল রেড ইন্ডিয়ানদের স্বার্থবিরুধী। দাস ব্যবসার মাধ্যমে যেখানে তারা নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করত এবং এই শক্তি দিয়ে রেড ইন্ডিয়ানদের উপর হামলা চালাত। তাদের জমাজমি দখল করে নির্দোষ দাসত্বের মাধ্যমে চাষাবাদ করাত। আর মাদক ব্যবসার মাধ্যমে গোটা অধিবাসীদের মধ্যে মাদকাসক্তি ছড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। সেখানে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য খৃষ্টান ধর্মাবলম্বী শ্বেতাঙ্গরা রেড ইন্ডিয়ানদের সংখ্যালঘুতে পরিনত করার জন্য সংক্রামক ও মরণব্যাধী ছড়ায়, ব্যাপক মাদকাসক্তির বিস্তার ঘটায়। নির্বিচারে গণহত্যা চালায় ও পালের পর পাল বুনো মেষ হত্যা করে পরিকল্পিত খাদ্য সংকট ও দুর্ভি সৃষ্টি করে। আজকে ওবামা বুশের পূর্ব পুরুষরা যারা ধর্মীয় উন্মাদের হাত থেকে বাচাঁর জন্য ইউরোপ থেকে পালিয়ে আমেরিকা গিয়েছিল, তারা আনন্দ উল্লাসের জন্য রেড ইন্ডিয়ানদের ও তাদের খাদ্যের প্রধান উৎস বুনো মেষ হত্যা করত।
এর ফলে আধিবাসীরা এক পর্যায়ে রোগ ব্যাধি, খাদ্যভাব ও গণহত্যার শিকার হয়ে সংখ্যালগু জনগোষ্ঠিতে পরিনত হয় এবং বহিরাগতদের নির্দেশে অনুর্বর ও অস্বাস্থ্যকর স্থানে অমানবিক পরিবেশে বাস করতে বাধ্য হয়। বর্তমানে সভ্যতার ছোঁয়া থেকে তারা সম্পূর্ণ বঞ্চিত। দিন দিন তাদের সংখ্যা কেবল হ্রাসই পাচ্ছে। এ হল আমেরিকার আদি ইতিহাস!!
৩. ইউরোপীয়রা যখন প্রথম আমেরিকায় পর্দাপন করে। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় এক কোটি দশ লাখ আদিবাসী বাস করত। ইউরোপীয় গণহত্যার কারণে বর্তমানে সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় এদের সংখ্যা এসে দাড়িয়েছে দশ লাখেরও নীচে। কানাডায় মাত্র পাঁচ লাখের মত রেড ইন্ডিয়ান বেঁচে আছে যা সেখানকার মোট জনসংখ্যার এক শতাংশ মাত্র। তবে তারা যে পরিবেশে বাস করতে বাধ্য হচ্ছে তাতে এপিচি, মাইকান, সুবিকেট, বিউথাক, নারাংগানসেট, ওয়াম, পানাগ প্রভূতি উপজাতীয়দের মত নিশ্চিহৃ হতে বেশি সময় লাগবে না। শ্বেতাঙ্গদের নির্মূল অভিযানের শিকার হয়ে এসব উপজাতি সমূহ নিশ্চিহৃ হয়ে যাচ্ছে।
৪.আমেরিকার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর শ্বেতাঙ্গরা মার্কিন নাগরিক পরিচয়ে বাণিজ্যের নামে রণপ্রস্তুতি নিয়ে এশিয়ার উদ্দ্যেশে তরী ভাসায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাত্র কয়েক বছর পরই মার্কিন বাণিজ্য ও রণতরী মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় গিয়ে হাজির হয়। প্রথমে তারা শুরু করে আদিম ব্যবসা যা প্রাচ্যের জাতিসংঘের কাছে গর্হিত অপরাধ হিসাবে চিহিৃত। প্রথমে এই ব্যবসায় বৃটিশরা মনোনিবেশ করে। পরে মার্কিনীরা এতে ভাগ বসায়। এই ব্যবসায় শতকরা ৫শ ভাগের বেশি লাভ হত। এই লাভজনক ব্যবসাকে নিরাপদ করার ল্েয মার্কিনীরা উঠেপড়ে লাগে।
৫. মার্কিন বণিকরা ইজমির ও অটোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে আফিম ক্রয় করে ভূমধ্য সাগরে পাড়ি দিয়ে আটলান্টিক সাগর হয়ে উত্তমাশা অন্তরীপ ঘূরে ভারত মহাসাগর ও দণি চীন সাগর দিয়ে চীনের ক্যান্টনে নিয়ে যেত। এ জন্য তাদেরকে মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া ও আধুনিক লিবিয়ার জলসীমা ব্যবহার করতে হত। বাণিজ্য তরীগুলো এসব দেশের বন্দর থেকে খাদ্য ও পানীয় সংগ্রহ করত। সেজন্য এসব দেশকে মার্কিন বণিকদের বড় অংকের কর দিতে হত। যা মার্কিন সরকার ১৭৮৭ সালে মার্কিন বণিকদের নিরাপত্তা বিধান ও আনুষাঙ্গিক সুবিধা প্রদান সংক্রান্ত একটি স্বার করতে মরক্কোকে বাধ্য করে। একই ধরণের চুক্তি স্বার করতে ১৭৯৬ সালে লিবিয়াকে এবং ১৭৯৭ সালে তিউনিসিয়াকে বাধ্য করে।
৬. এতেও মার্কিনীরা সন্তুষ্ট হল না। তারা উল্লেখিত দেশ গুলোর ওপর নিজস্ব নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার জন্য ১৮০১-১৮০৫ সাল পর্যন্ত প্রথমে লিবিয়ার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহন করে। মার্কিন রণতরীর বহর লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলী অবরোধ করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেফারসনের অনুমোদনক্রমে যুদ্ধমন্ত্রী চিমোথি পিকারিং এর নির্দেশে তিউনিসিয়া ও লিবিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল যথাক্রমে উইলিয়াম এটন ও জমস এল ক্যাথকাট লিবিয়ায় সামরিক অভ্যূথান ঘটানোর ষড়যন্ত্র শুরু করে। ল্েয পৌছার জন্য তারা লিবিয়ার শাসকের ভাই মিসরে নির্বাসিত হামেদ করমানের সাথে চুক্তি করে। মতা দখলের জন্য মার্কিনীরা তাকে সামরিক ও আর্থিক সাহায্য করবে এই শর্তে যে, তিনি মার্কিনীদের বাণিজ্য শুল্ক বৃদ্ধি করবেন। পাশাপাশি তিউনিসিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল উইলিয়াম এটমকে তার সেনাবহিনীর সর্বাধিনায়ক করবে। অতঃপর এটম ও কারমনেলির সমর্থকরা মার্কিন মেরিন সেনা ও নৌ বাহিনীর গোলন্দাজ বাহিনীর সমর্থনে লিবিয়ার দেরনা শহর দখল করে নেয়। এ অবস্থায় ত্রিপলীর শাসনকর্তা ইউসুফ কারমানলি মার্কিনীদের সাথে এক অসম চুক্তি সম্পাদনে বাধ্য হন। এটম লিবিয়ার সেনাবাহিনীর প্রধানের পদটি দখল করে । এই কৃতিত্বের জন্য ম্যাসাচুয়েটস কর্তৃপ তাকে দশ হাজার একর ভূ-সম্পত্তি উপহার দেয়। একই কায়দায় অনুরুপ একটি চুক্তি সম্পাদনে করতে বাধ্য করা হয় মরক্কোকেও। এভাবে করে মার্কিনীরা দস্যুতার মাধ্যমে আস্তে আস্তে পৃথিবীতে সাম্র্যাজ্যবাদের কালো হাত প্রসারিত করে।
৭. লিবিয়া ও মরক্কোকে মার্কিন পরিকল্পনা সফল হবার পর তারা নজর দেয় কিউনিসিয়ার প্রতি। তিউনিসিয়ায় হামলা চালানোর অজুহাত দাঁড় করানোর জন্য সেখানকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত শাসনকর্তার সাথে ঔদ্ধাত্যপূর্ণ আচরণ করতে থাকে। ফলে শাসনকর্তা তাকে দেশ থেকে বহিস্কার করতে বাধ্য হন। আর সেই অজুহাতে ১৮০৫ সালের ১লা আগষ্ট জন রজার্ট এর নেতৃত্বাধীন মার্কিন নৌ বহর কোন প্রকার সতর্কবানী ছাড়াই তিউনিসিয়ায় প্রচন্ড গোলাবর্ষন শুরু করে। পাশাপাশি রজার্ট তিউনিসিয়ার শাসকের কাছে একটি চুক্তির খসড়া পাঠিয়ে বলেন, এতে স্বার না করলে তার রাজধানীকে গোলার আঘাতে গুড়িয়ে দেয়া হবে। বাধ্য হয়ে সরকার প্রধান সে অসম চুক্তিতে স্বার করেন।
৮. ১৮১৫ সালে কমোডর স্টিফেন ডেকাডুর ও কমোডর উইলিয়াম ব্রিজের নেতৃত্বে জলদস্যু দমনের নামে দু-স্কোয়াড্রন মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ আলজেরিয়ার উপকূলে এসে হাজির হয়। আলজেরিয়ার জনগণকে ধোঁকা দেয়ার জন্য জাহাজে বৃটিশ পতাকা উড়িয়ে স্কোয়াড্রন দু'টি পোতাশ্রয়ে প্রবেশ করে আলজেরীয় নৌ-বহরকে ধ্বংস করে দেয়। এর পর আলজিয়ার্স শহরের উপর প্রচন্ড গোলা বর্ষন শুরু করে । পাশাপাশি আলজিয়ার্সের গর্ভনর ড. ওমরের কাছে বশ্যতামূলক এক চুক্তিনামা পাঠায়, যাতে মার্কিন বণিকদের বিশেষ সুযোগ ও ভূমিসহ অধিকার প্রদানের কথা বলা হয়। চাপের মুখে মার্কিনীরা গর্ভনরকে সে চুক্তিতে স্বার করতে বাধ্য করে।
৯. এই সময় মার্কিনীরা আবারো নতুন করে তিউনিসিয়া ও ত্রিপোলী ও মৌরিতানিয়ায় আগ্রাসী হামলা চালিয়ে বাড়তি দাবী-দাওয়া আদায় করে নেয়।
১০. ভারত মহাসাগরে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ল্েয মার্কিনীরা বর্তমান ওমান ও থাইল্যান্ডকে এক অধীনতামূলক চুক্তি সম্পাদনে বাধ্য করে।
১১. ১৮৮২ সালে আলেকজান্দ্রিয়ার ওপর ব্যাপক গোলাবর্ষনের পর মিসরকে দখল করে নিতে বৃটিশকে সহযোগিতা করেছিল মার্কিন স্কোয়াড্রনের চারটি যুদ্ধ জাহাজ। গোলার আঘাতে আলেকজান্দ্রিয়াকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়ার পর শত শত মিসরীয়দের লাশ মাড়িয়ে বৃটিশ বাহিনীর সাথে সেখানে অবতরণ করে মার্কিন মেরিন সেনা।
১২. ১৮২০ এর দশকে মার্কিনীরা সুমাত্রার উত্তর ও উত্তর পশ্চিম উপকূলে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্টার মানসে নানা প্রকার রোগ ছড়িয়ে দেয়। যে করণে সেখানে মৃত্যুহার বেড়ে যায়। এতে সুমাত্রা বাসীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা যায়। মার্কিন নাবিকেরা উদ্দেমূলক ভাবে নানা ঔদ্ধাত্যপূর্ণ ও গর্হিত আচরণের মাধ্যমে এই অসন্তোষকে আরো বাড়িয়ে দিলে স্থানীয় জনগণ ১৮৩১ সালে মার্কিন বণিক ও মৈত্রী নামক একটি জাহাজে হামলা চালায়। এর প্রতিশোধ গ্রহনার্থে ১৮৩২ সালে মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ পোটেম্যাক কুয়ালাবাটুতে ভিড়ে এবং এর নাবিকরা বন্দরে অবতরণ করে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে দেড়শ মুসলিম শাহাদাত বরণ করেন এবং দুইশত জন আহত হয়। মার্কিনীদের উদ্দেশ্য যাতে কোন প্রকারে স্থানীয় বাসিন্দারা টের না পায়, সে জন্য পোটেম্যাকে ওলন্দাজ পতাকা উড়ান হয়েছিল।
১৩. ১৮৪২ সালে ছয়টি যুদ্ধ জাহাজ বিশিষ্ট এক মার্কিন নৌ-বহরের কমান্ডার চালর্স উইলিয়াম সুলু দ্বীপপুঞ্জের শাসক সুলতান মুহাম্মদকে একটি অধীনতামূলক মার্কিন চুক্তিতে স্বার করতে বাধ্য করে।
১৪. ১৮৫০ সালের ২৩ জুন মার্কিন স্বার্থসংশ্লিষ্ট একটি চুক্তিতে স্বার করতে ব্র"নাইর সুলতান ওমর আলীকে বাধ্য করে মার্কিনীরা। অতঃপর ১৮৯৬ সালে ব্র"নাইর উত্তরাংশের বিরাট এলাকা মার্কিনীদের ব্যবহারের জন্য ছেড়ে দিতেও সুলতানকে বাধ্য করে। এরপর সুলতান বাধ্য হন আমেরিকান ট্রেডিং কোম্পানী অব বোর্ণিও'র প্রধান কর্মকর্তা টোরিকে এমবোয়ানা ও মারুদুর রাজা হিসাবে নিয়োগ করতে। সুলতান রাজাকে স্বাধীন সার্বভৌম শাসকদের মত আইন প্রনয়ন, মৃত্যু দন্ড দান, মুদ্রা তৈরি ও প্রচলন, প্রতিরা বাহিনী গঠনসহ নানাবিধ মতা প্রদানে ও বাধ্য হন।
১৫. ১৮৯৯ সালে আজকের ফিলিপাইনের তৎকালীন সুলতান জামাল উল কিরামের সাথে মার্কিনীরা এক সমঝোতা চুক্তিতে উপনীত হয়। কিন্তু স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার পর ১৯১৩ সালে মার্কিনীরা সকল মুসলিম এলাকা দখল করে নেয় এবং তাদেরকে সংখ্যালঘু জাতিতে পরিনত করা হয়। যে কারণে ফিলিপাইন এখন একটি খৃস্টান রাষ্ট্র।
১৬. ১৯৭০ সালের মধ্যে কৌশলে ৫০ জনেরও বেশি মার্কিন সেনা অফিসার মিসরীয় সশস্ত্র বাহিনীতে চাকরি নেয়, যার মধ্যে জেনারেল স্টোন কায়রোতে মিশরীয় সশস্ত্র বাহিনীর চীপ স্টাফ এবং কর্নেল চেইলি লঙ সুদানে মোতায়েনকৃত মিসরীয় সশস্ত্র বাহিনীর চীপ অব স্টাফের পদ দখল করে। এরপর ইরিত্রিয়াকে কেন্দ্র করে মার্কিনীরা মিসর-ইথিওপিয়া যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেয় এবং যুদ্ধে মিসরীয়দের পরজয় ঘটে। এই যুদ্ধে মিসর আর্থিক এবং সামরিক দিক থেকে ব্যাপক দুর্বল হয়ে পড়ে। আর সে সুযোগে ১৯৮২ সালে বৃটিশ মিসরকে দখল করে নেয়। এেেত্র মার্কিন যুদ্ধ জাহাজগুলোও বৃটিশকে সহায়তা করে। কর্নেল চেইলি লঙ এতে নেতৃত্ব দেয়। পাশাপাশি তারা ইথিওপিয়া থেকে ইরিত্রিয়াকে আলাদা করে ফেলে একটি খৃষ্টান রাষ্ট্রের জন্ম দেয়।

 

বিষয়বস্তুর স্বত্বাধিকার ও সম্পূর্ণ দায় কেবলমাত্র প্রকাশকারীর...

http://www.somewhereinblog.net/blog/JANAAT09YOUTH/29452234


আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিল

নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তি

১৯৬৬ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত ২২০০ ক (২১) মোতাবেক স্বাক্ষরদান, অনুসমর্থন ও যোগদানের জন্য গৃহীত ও উম্মুক্ত৷

চুক্তির ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ১৯৭৬ সালের ২৩ শে মার্চ থেকে কার্যকর৷

 

ভূমিকা:

 

এই চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ যেহেতু স্বীকার করে যে, জাতিসংঘের সনদে ঘোষিত নীতি মোতাবেক পৃথিবীতে স্বাধীনতা, ন্যায়পরতা এবং শান্তির ভিত্তি হচ্ছে সকল মানুষের স্বাভাবিক মর্যাদা ও অবিচ্ছেদ্য সমঅধিকারের স্বীকৃতি, যেহেতু স্বীকৃত যে, মানব হৃদয়ের স্বাভাবিক মহত্ত্ব থেকে এই সকল অধিকারের উত্পত্তি ঘটেছে,

 

যেহেতু স্বীকার করে যে,

মানবাধিকার সার্বজনীন ঘোষণা অনুযায়ী মানুষ সত্যিকারভাবে অভাব এবং ভয়-ভীতি থেকে স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারে, যদি সে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক তথা নাগরিক  এবং রাজনৈতিক অধিকারসমূহ উপভোগ করতে পারে,

 

যেহেতু মনে করে যে,

জাতিসংঘের আওতাধীন রাষ্ট্রসমূহের দায়িত্ব রয়েছে মানবাধিকার এবং স্বাধীনতাসমূহ প্রতিষ্ঠা এবং উহার প্রতি সার্বজনীন সম্মান প্রদর্শন,

 

যেহেতু মনে করে যে,

প্রতিটি ব্যক্তির কর্তব্য রয়েছে অন্যের প্রতি এবং নিজ সমাজের প্রতি আলোচ্য চুক্তিতে বর্ণিত অধিকারসমূহের প্রতিষ্ঠা এবং সংরক্ষণের জন্য, সেহেতু, অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ একমত হয়ে নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহ (আলোচ্য চুক্তিতে) সম্বিবেশিত করছে :

 

 

প্রথম পরিচ্ছেদ

অনুচ্ছেদ-১

১. আত্ননিয়ন্ত্রণের অধিকার রয়েছে সকল জাতিসমূহের৷ এ অধিকার বলে তারা স্বাধীনভাবে ঠিক করবে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান এবং মুক্তভাবে চালিয়ে যাবে তাদের স্বকীয় অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়ন৷

২. সকল জাতিসমূহই তাদের স্ব-স্ব প্রয়োজনে তাদের প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ববহার করতে পারবে৷ পারস্পরিক স্বার্থ এবং আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় প্রতিষ্ঠিত কোন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রতি পক্ষপাত দেখিয়েও তাদেরকে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না৷ কোন কারণেই কোন জাতিকে তার নিজস্বভাবে বাঁচার এই উপায় উদ্ভাবন থেকে বঞ্চিত করা যাবে না৷

৩. চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ অছি রাষ্ট্রসহ আত্ননিয়ন্ত্রণের এই অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালাবে এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণা অনুযায়ী এই অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে৷

 

২য় পরিচ্ছেদ

অনুচ্ছেদ-২

১. জাতি, বর্ন, ভাষা, রাজনৈতিক ও অন্যান্য মতাদর্শ, ধনী, গরীব ও জণ্মসূত্র  নির্বিশেষে সকল ব্যক্তির অধিকারসমূহ যা আলোচ্য চুক্তিতে বর্ণিত হয়েছে তার প্রতি অংশগ্রহণকারী প্রতিটি রাষ্ট্র প্রদর্শন এবং নিশ্চিত করবে৷

২. প্রতিটি অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র যারা এখনও তাদের দেশে আইনগত এবং অন্যান্য পদক্ষেপ দ্বারা উক্ত অধিকারসমূহ প্রদান করেনি তারা আলোচ্য চুক্তির গঠনতান্ত্রিক পদ্ধতি এবং শর্তানুযায়ী সেই সব  আইনগত ও অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে যাতে উক্ত অধিকারসমূহ কার্যকর হয়৷

৩. আলোচ্য চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে চায় যে,

(ক) যদি কোন ব্যক্তির চুক্তিতে বর্ণিত অধিকার এবং স্বাধীনতাসমূহ লংঘিত হয় তবে উহার প্রয়োজনীয় প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে, যদিও উক্ত লংঘন সরকারি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তির দ্বারাও সংগঠিত হয়;

(খ) যদি কোন ব্যক্তি এই ধরনের প্রতিকারে দাবি করে তবে তার উক্ত দাবির যথার্থতা প্রশাসনিক বিচার বিভাগীয় বা অন্য কোন যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিরূপিত হবে এবং তার বিচার বিভাগীয় প্রতিকার পাবার সম্ভাবনা নিশ্চত করতে হবে;

(গ) প্রতিকারের ব্যবস্থা অনুমোদিত হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ উহা কার্যকর করে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে৷
 

অনুচ্ছেদ - ৩

চুক্তিতে বর্ণিত নাগরিক ও রাজনৈতিক সকল অধিকারসমূহ উপভোগ নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ নিশ্চয়তা বিধান করবে৷
 

অনুচ্ছেদ - ৪

১. জরুরী অবস্থার সময়ে যখন জাতির জীবন হুমকির সম্মুখীন হয় এবং উহা যখন জাতির অস্তিত্বের জন্য সরকারিভাবে জারি করা হয় তখন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আলোচ্য চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ চুক্তির পরিপন্থি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে, তবে উক্ত পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক হতে পারবে না এবং জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, ভাষা, ধর্ম অথবা জণ্মসূত্রের পার্থক্য করে উহা প্রয়োগ করা যাবে না৷

২. এই শর্তে মোতাবেক ধারা ৬, ৭, ৮ (অনুচ্ছেদ ১ এবং ২) ১১, ১৫, ১৬ এবং ১৮ এর ক্ষতিকারক কিছু তৈরি করা যাবে না৷

৩. আলোচ্য চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী কোন রাষ্ট্র যদি উপরোক্ত ধারার ক্ষতিকারক কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে তবে তা শীঘ্র জাতিসংঘের মহাসচিবের মাধ্যমে চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহকে অবহিত করতে হবে, উহা গ্রহণের কারণসমূহ জানাতে হবে, উক্ত ক্ষতিকর পদক্ষেপ তুলে নেয়ার তারিখও মহাসচিবের মাধ্যমে সকল রাষ্ট্রসমূহকে আবার জানিয়ে দিতে হবে৷
 

অনুচ্ছেদ - ৫

১. আলোচ্য চুক্তির কিছুই এমনভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে না যার ফলে কোন রাষ্ট্র, দল অথবা ব্যক্তি তাদের কোন কাজ দ্বারা এই চুক্তির কোন অধিকার বিনষ্ট করে৷

২. কোন দেশের আইন, প্রথা বা রীতি-নীতির কোন অধিকার, যে কোন মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি বাধা বা অপবাদ বলে বলবত্‍ থাকে, তবে তা আলোচ্য চুক্তিতে গ্রহণীয় হবে না৷

http://www.abolombon.org/bangla_international_laws/political_rights_1966.html


বাঙালি নাকি বাংলাদেশিঃ কোন্‌টি আমাদের আত্মপরিচয়?

লিখেছেন নেটপোকা ২৮ এপ্রিল ২০১১, দুপুর ০২:১৯

আমাদের আত্মপরিচয় খোঁজার আগে জাতিসত্তাজাতীয়তাজাতীয়তাবাদও নাগরিকত্ব সম্পর্কে ধারণালাভ করা দরকার। 

জাতিসত্তা (ethnicity) হচ্ছে জাতি বা গোষ্ঠীগত পরিচয়, জাতীয়তা নয়। এটি রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয় এবং অনেক ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রের সীমানা দ্বারা সীমাবদ্ধও নয়। একাধিক জাতিসত্তার মানুষ যেমন একই রাষ্ট্রে বসবাস করে থাকে, একই জাতিসত্তার মানুষ তেমনি একাধিক রাষ্ট্রে ছড়িয়ে থাকতে পারে। ঢাকা, লন্ডন, নিউইয়র্ক কিংবা দুনিয়ার অন্য যে কোন স্থানে বসবাসকারী বাঙালিদের জাতিসত্তাগত পরিচয় তাই এক ও অভিন্ন। বিশ্বে কুর্দী কিংবা তামিলদের মত নিজস্ব জাতিরাষ্ট্রবিহীন অনেক জনগোষ্ঠী রয়েছে, যাদের স্বতন্ত্র জাতিসত্তা আছে, কিন্তু সার্বভৌম জাতীয়তা নেই। 

জাতীয়তা (nationality) হচ্ছে জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় পরিচয়, জাতিসত্তা নয়। এটি রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং বলা যায়, রাষ্ট্রই জাতীয়তা নির্ধারণ করে। সার্বভৌম রাষ্ট্রের অধিবাসীদের একক রাষ্ট্রীয় পরিচিতির ক্ষেত্রে তাই আন্তর্জাতিকভাবে পাসপোর্ট, ভিসা, জাতীয়তা-সনদ, পরিচয়পত্র, ইত্যদিতে 'জাতীয়তা' শব্দটি ব্যবহার করা হয় এবং সেটি জাতিসত্তা নয়, বরং নাগরিকত্ব বোঝায়। ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও আরব দেশগুলোর দৃষ্টান্ত এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। ভারতে বহু জাতিসত্তার মানুষের বসবাস হলেও তাদের সবার রাষ্ট্রীয় পরিচয় বা জাতীয়তা হচ্ছে ভারতীয়। 

একইভাবে জাতিসত্তার দিক থেকে প্রকৃতপক্ষে ব্রিটিশ জাতি বলে কিছু নেই, আছে ব্রিটিশ নাগরিক। কারণ যুক্তরাজ্য রাষ্ট্রটি ইংরেজ, স্কটিশ, ওয়েলশ ও আইরিশ জাতির আবাসস্থল। সম্মিলিত, একক রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের ক্ষেত্রে তাদের পৃথক জাতিসত্তার কোন প্রয়োগ নেই এবং তা বাস্তবসম্মতও নয়। তাই তাদের পাসপোর্টে জাতীয়তা হিসেবে লেখা থাকে ব্রিটিশ নাগরিক। 

আর অভিবাসীদের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জাতিসত্তা ও বহুধা সংস্কৃতিতে বিভক্ত অধিবাসীদের যতই আমেরিকান জাতি বলা হোক না কেন, এটি মূলত তাদের রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রীয় পরিচয় মাত্র। অথচ মজার ব্যাপার হচ্ছে, দেশটির আদি বাসিন্দা রেড ইন্ডিয়ানদের ১৯২৪ সালের আগে নাগরিকত্বের অধিকারই ছিল না। 

অন্যদিকে আরব দেশগুলোর অধিবাসীরা সবাই ভাষাভিত্তিক জাতিসত্তার দিক থেকে আরব হলেও দেশভেদে তাদের সবার জাতীয়তা আলাদা। একই আরব জাতিসত্তার হওয়া সত্বেও একীভূত নিখিল আরব জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় গত শতকে গামাল আবদেল নাসেরদের প্রচেষ্টা সফল হয়নি। তাই ২২টি আরব দেশের অধিবাসীদের জাতিসত্তা এক, কিন্তু জাতীয়তা ভিন্ন। তাদের কেউ মিশরীয়, কেউ কুয়েতী, আবার কেউ সিরীয়, ইত্যাদি। 

তবে কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে জাতিসত্তা ও জাতীয়তা একই অর্থ বহন করে। বিশেষ করে, কোন কোন সার্বভৌম অস্তিত্বহীন জাতি (যেমন, স্পেনের অন্তর্ভুক্ত ক্যাটালোনীয়, আন্দালুসীয়, বাস্কসহ বিভিন্ন জাতি) কিংবা ফেডারেল রাষ্ট্রের (যেমন, রাশিয়ার) অন্তর্ভূক্ত ভিন্ন ভিন্ন জাতিসমূহের স্বতন্ত্র পরিচিতির ক্ষেত্রে জাতীয়তা ধারণাটির ব্যবহার হতে দেখা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে জাতীয়তা তাদের নামমাত্র রাজনৈতিক পরিচয়, সার্বভৌম রাষ্ট্রীয় পরিচয় নয়। তাদের সবার একক রাষ্ট্রীয় পরিচিতির জন্য তাই নাগরিকত্ব শব্দটি ব্যবহৃত হয়। 

রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বা কাঠামো পরিবর্তনের সাথে সাথে এর অধিবাসীদের জাতীয়তা বা রাষ্ট্রীয় পরিচয় পরিবর্তিত হতে পারে, কিন্তু তাদের জাতিসত্তা কখনও পরিবর্তিত হয় না। ব্রিটিশ কিংবা পাকিস্তান আমলে আমাদের জাতিসত্তা যেমন বাঙালি ছিল, তেমনি বাংলাদেশ আমলেও আমরা বাঙালিই আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব। কিন্তু আমাদের জাতীয়তা বা রাষ্ট্রীয় পরিচয় পরিবর্তিত হয়েছে বার বার। 

নাগরিকত্ব (citizenship) হচ্ছে আইনের ভিত্তিতে নির্ধারিত রাষ্ট্র ও ব্যক্তির পারস্পরিক রাজনৈতিক সম্পর্ক। নাগরিকত্বের মাধ্যমে একদিকে যেমন ব্যক্তি তার রাষ্ট্র থেকে নির্দিষ্ট কিছু অধিকার লাভ করে, অন্যদিকে তেমনি তার ওপর রাষ্ট্রের প্রতি নির্দিষ্ট কিছু দায়িত্ব বর্তায়। নাগরিকত্বের সাথে জাতীয়তার মূল পার্থক্য হচ্ছে, জাতীয়তা থাকলেই বা রাষ্ট্রের সদস্য হলেই সব ক্ষেত্রে বিভিন্ন নাগরিক অধিকার, যেমন, ভোটাধিকার অর্জিত হয় না। তবে সাধারণভাবে জাতীয়তা ও নাগরিকত্ব প্রায় একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। 

জাতীয়তাবাদ (nationalism) হচ্ছে কোন জাতির জোরালো জাতীয়তাবোধ, যা তাদের স্বাধিকার বা স্বায়ত্বশাসন অর্জনে, এমনকি নিজেদের জন্য স্বাধীন, সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র গঠনে ঐক্যবদ্ধ করে। উনিশ ও বিশ শতকে বিভিন্ন জাতির মধ্যে জাতীয়তাবাদের উন্মেষের ফলে বড় বড় সাম্রাজ্য ও উপনিবেশ ভেংগে বহু জাতিরাষ্ট্রের জন্ম হয়। জাতীয়তাবাদ ধারণাটি একদিকে যেমন একটি জনগোষ্ঠীর স্বতন্ত্র জাতিসত্তাবোধের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠতে পারে (জাতিসত্তাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ বা ethnic nationalism), অন্যদিকে তেমনি একটি রাষ্ট্রের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অধিবাসীদের রাষ্ট্রভিত্তিক সম্মিলিত মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে (উদারনৈতিক জাতীয়তাবাদ বা liberal nationalism)। যে কোন ধরণের জাতীয়তাবাদই অন্য জাতি কিংবা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোন জাতি কিংবা রাষ্ট্রের প্রাধান্য এবং এমনকি আগ্রাসন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠা করে থাকে। 

এখন বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষিত এবং জাতীয় পরিচয় নির্ধারণে এদের ভূমিকা সংক্ষেপে আলোচনা করা যাক। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম মূল ভিত্তি ও চেতনা ছিল জাতিসত্তাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদ। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগোষ্ঠীটি নিজেদের জন্য একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র গঠনের আকাঙ্খা থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে ভাষা ও সংস্কৃতিভিত্তিক জাতীয়তাবাদের এ লড়াই শুরু হয়েছিল বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের আগে অসহযোগ আন্দোলনের সময় পূর্ব বাংলা জুড়ে ধ্বনিত হয়েছিল, "বীর বাঙালী অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো।" বাংলাদেশি নামে কোন জাতি কিংবা জাতীয়তাবাদের কথা তখন শোনা যায়নি। 

তবে স্বাধীনতার পর অন্তত দেশের নাগরিকদের রাষ্ট্রীয় বা জাতীয় পরিচয় নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রয়োগে তদানীন্তন রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার পরিচয় পাওয়া যায়নি। বাহাত্তরের মূল সংবিধানে ঘোষিত হয়েছিল, "বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাঙালী বলিয়া পরিচিত হইবেন"। এটি ছিল বাংলাদেশে বসবাসকারী বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠীর পৃথক অস্তিত্বকে অস্বীকার করার সমান। এমনকি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠীসমূহের প্রতিনিধিত্বকারী সংসদ সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লার্মা তদানীন্তন গণপরিষদে এ বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করলে বঙ্গবন্ধু তাদের বাঙালি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে কথিত আছে। 

অথচ প্রথম থেকেই বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠীর পৃথক অস্তিত্বকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া উচিত ছিল। তা হয়নি বলেই তারা পরবর্তীতে স্বাধিকারের দাবিতে সশস্ত্র ও সহিংস পন্থা বেছে নেয়। এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য। বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সংগঠিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে এসব ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠী সামগ্রিকভাবে অংশগ্রহণ করেনি। তারা হয়ত ভেবেছিল, এ সংগ্রাম বাঙালির এবং এটি সফল হলে বাঙালিরা একটি স্বাধীন দেশ পাবে, কিন্তু তারা বাঙালিদের পরাধীনই থেকে যাবে। বাহাত্তরের সংবিধান কি সে সাক্ষ্যই দেয় না? 

বাংলাদেশের সকল অধিবাসীর একক রাষ্ট্রীয় পরিচয় তথা বাঙালি নাগরিকত্ব নিয়ে তাই গোড়া থেকেই একটা সংশয় ছিল। এ ক্ষেত্রে মজার ব্যাপার হচ্ছে, বাঙালি নাগরিকত্বের কথা বলা হলেও তখন বাংলাদেশি পাসপোর্টে জাতীয়তার স্থলে নাগরিকত্ব উল্লেখে বাঙালি লেখা থাকত না–বরং লেখা থাকত সিটিজেন অব বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের নাগরিক। তার মানে, সংবিধানে ঘোষিত হলেও বাঙালি নাগরিকত্ব বাস্তবে প্রয়োগ করা হয়নি। তাছাড়া রাষ্ট্রের অধিবাসীরা জাতীয়তাবাদে বাঙালি হলে নাগরিকত্ব বা রাষ্ট্রীয় পরিচয়েও তাদের বাঙালিই হতে হবে–এমন কোন কথা আছে কি? তাছাড়া কোন বিদেশি ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব অর্জন করলে সংবিধান অনুসারে তিনি কীভাবে 'বাঙালি' নাগরিক হতেন? 

জাতীয়তাবাদ যে কখনো কখনো সাম্প্রদায়িকতায়ও রূপ নিতে পারে, ব্রুট মেজরিটির জোরে ভিন্ন জাতিসত্তার সংখ্যালঘু পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের বাঙালি বানানোর প্রচেষ্টা সেটিই প্রমাণ করে। সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম করা হলে তা যদি সাম্প্রদায়িকতা হয়, তবে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা কিংবা জাতীয়তা সংখ্যালঘুর ওপর রাষ্ট্রীয়ভাবে চাপিয়ে দেওয়া হলে তা কেন সাম্প্রদায়িকতা হবে না? যেখানে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠের আগ্রাসন থেকে সংখ্যালঘুর সাংবিধানিক রক্ষাকবচ নিশ্চিত করা, সেখানে শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠের জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি কি উল্টো রাষ্ট্র কর্তৃক সবলের পক্ষাবলম্বন নয়? সুতরাং জাতিসত্তাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখলেও স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে সেই রাষ্ট্রের সব জাতিগোষ্ঠীর সমবিকাশে তা ইতিবাচক না-ও হতে পারে। আধুনিক বিশ্বে কল্যাণকামী রাষ্ট্রব্যবস্থায় তাই এ ধরণের অসার্বজনীন জাতীয়তাবাদের উপযোগিতা কমে আসছে। 

এরপর ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান সামরিক ফরমানবলে বাংলাদেশের নাগরিকদের পরিচয় 'বাংলাদেশী' নির্ধারণ করেন। একই সাথে তিনি সংবিধান থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ অপসারণ করেন এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে স্বপ্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেন। জেনারেল জিয়া বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা হলেও একসময় তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদেই বিশ্বাস করতেন। ১৯৭৪ সালে সাপ্তাহিক 'বিচিত্রা'য় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তদানীন্তন উপপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম 'একটি জাতির জন্ম' নামে একটি নিবন্ধের শুরুতেই লিখেছিলেন, "পাকিস্তান সৃষ্টির পর পরই ঐতিহাসিক ঢাকা নগরীতে মিঃ জিন্নাহ যে দিন ঘোষণা করলেন, উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা, আমার মতে ঠিক সেদিনই বাঙালী হৃদয়ে অংকুরিত হয়েছিল বাঙালী জাতীয়তাবাদ। জন্ম হয়েছিল বাঙালী জাতির।" 

তাত্ত্বিক দিক থেকে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ভুল তত্ত্ব নয়। বরং এটি একটি রাষ্ট্রকেন্দ্রিক উদারনৈতিক জাতীয়তাবাদ হতে পারত। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে ভাষা, সংস্কৃতি, জীবনাচরণ, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছদ, মূল্যবোধ, জাতিগত আশা-আকাঙ্ক্ষা, ইত্যাদি নানা বিষয়ে আজকের বাংলাদেশ নামের ভূখণ্ডটির অধিবাসীরা একদিকে যেমন তাদের ভারতীয় বাঙালি 'জাতভাই'দের থেকে স্বতন্ত্র, অন্যদিকে তেমনি তাদের আরবি-ফারসি-উর্দুভাষী 'ধর্মভাই'দের থেকেও আলাদা। সুতরাং একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত সব অধিবাসীর সমবিকাশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ একটি কার্যকরী অনুঘটক হতে পারত। আধুনিক রাষ্ট্রে উদারনৈতিক জাতীয়তাবাদই সব জাতিগোষ্ঠীর কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে। আর তাই বিশ্ব-ইতিহাসে একক জাতিসত্তাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ থেকে রাষ্ট্রকেন্দ্রিক উদারনৈতিক জাতীয়তাবাদে উত্তরণের দৃষ্টান্তও কম নেই। 

কিন্তু জেনারেল জিয়ার বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ নিঃসন্দেহে সংকীর্ন ও ত্রুটিযুক্ত। প্রথমত, দেশের সব নাগরিককে বাংলাদেশি আখ্যা দেওয়া হলেও এতে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠীসমূহের আলাদা সাংবিধানিক স্বীকৃতির কথা বলা হয়নি, বরং তাদের পৃথক জাতিসত্তা ও অস্তিত্বের বিষয়টি উপেক্ষিতই রয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদেও একটি সাম্প্রদায়িক উপাদান রয়েছে, সেটি হল ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োগ। তাই অনেকে বলেন, এর সাথে মিল রয়েছে ধর্মভিত্তিক দ্বি-জাতি তত্ত্বের, যা আমরা একাত্তরেই পরিত্যাগ করেছি। সুতরাং বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ উভয়ই ভিন্নভাবে সাম্প্রদায়িকতা-দোষে দুষ্ট। সবচেয়ে বড় কথা, বর্তমান বাংলাদেশে এ দুটো জাতীয়তাবাদই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত একদেশদর্শী তত্ত্ব বা ধারণা, যা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার পরিবর্তে বিভক্ত করে রেখেছে। 

সম্প্রতি আপিল বিভাগ বাংলাদেশের নাগরিকদের 'বাংলাদেশি' জাতীয়তা বা রাষ্ট্রীয় পরিচয় সমুন্নত রেখে রায় দিয়েছে। উচ্চ আদালত বলেছে, বাঙালি হিসেবে পরিচিতির নির্দেশ দেওয়া হলে নাগরিকত্ব নিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকরা দেশের বাইরে বিভিন্ন জটিলতা ও সমস্যায় পড়বে এবং বাংলাদেশি জাতীয়তা উল্লেখিত পাসপোর্টসহ এ সংক্রান্ত সব সরকারি কাগজপত্র পরিবর্তন করার জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হবে বিধায় জনস্বার্থে এ রায় দেওয়া হয়েছে। যে দেশে বিভিন্ন সরকারের আমলে নাম পরিবর্তনের অপরাজনীতি চর্চায় হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা নস্যি, সে দেশে জাতীয়তা পরিবর্তনের মত একটি মৌলিক বিষয়ে অন্তত অর্থ ব্যয়ের যুক্তিটি ঠিক ধোপে টেকে না। 

অন্যদিকে উচ্চ আদালতের উক্ত রায়ের ফলে রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মূলনীতি হিসেবে বাঙালি জাতীয়তাবাদও বহাল হয়েছে। বলা যায়, এ রায় হল আমাদের বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাংলাদেশি জাতীয়তা, এ দুয়ের মধ্যে এক ধরণের আইনি সমঝোতা। তবে উচ্চ আদালত বলেছে, জাতীয়তাবাদ বিষয়টি রাজনৈতিক বিধায় এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার জাতীয় সংসদের। 

মোদ্দা কথা হচ্ছে, বাঙালি আমাদের জাতিসত্তাগত পরিচয় আর বাংলাদেশি আমাদের রাষ্ট্রীয় পরিচয়। দেশের বাইরে আমাদের বাংলাদেশি পরিচয় ব্যবহার করার পক্ষে জোরালো কিছু যুক্তিও রয়েছে। আগেই বলেছি, রাষ্ট্রের অধিবাসীদের পরিচিতির ক্ষেত্রে জাতিসত্তা নয়, বরং রাষ্ট্রীয় পরিচয় বা জাতীয়তাই আগে আসে। এ ক্ষেত্রে আবারও অন্যান্য দেশের অধিবাসীদের উদাহরণ টানা যেতে পারে। একজন ভারতীয় বাঙালি দেশের বাইরে তার কোন্‌ পরিচয়টি আগে দেয়? নিশ্চয়ই 'ভারতীয়' পরিচয়, জাতিসত্তাগত 'বাঙালি' পরিচয় নয়। একইভাবে দেশের বাইরে একজন যুক্তরাজ্যবাসী ইংরেজের প্রথম পরিচয় হচ্ছে 'ব্রিটিশ' এবং একজন মিশরীয় আরবের প্রথম পরিচয় হচ্ছে 'মিশরীয়'। সুতরাং বাংলাদেশের অধিবাসী একজন বাঙালি বা চাকমার প্রথম পরিচয় হওয়া উচিত 'বাংলাদেশি'–বাঙালি বা চাকমা নয়। 

তাছাড়া বাংলাদেশি পরিচয়ের মধ্যেই রক্ত দিয়ে কেনা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির নাম, প্রতিনিধিত্ব ও সার্বভৌমত্ব নিহিত রয়েছে। সারা দুনিয়ার কাছে ডঃ ইউনূস নোবেল বিজয়ী প্রথম বাংলাদেশি, কোনভাবেই প্রথম বাঙালি নন। এক্ষেত্রে তাঁর বাংলাদেশি পরিচয় একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং সেই রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠীসহ সব মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। এসব কারণে আমাদের বাংলাদেশি পরিচয়টিই বেশি যুক্তিসঙ্গত ও বাস্তবসম্মত। 

উপসংহারে বলা যায়, আমরা একই সাথে বাঙালি ও বাংলাদেশি। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠীসমূহ বাদে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসী জাতিসত্তার দিক থেকে বাঙালি এবং এ পরিচয় অপরিবর্তনীয়। অন্যদিকে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠীসহ এদেশের সব অধিবাসীর রাষ্ট্রীয় বা জাতীয় পরিচয় হচ্ছে বাংলাদেশি। দেশের বাসিন্দা সব বাঙালিই বাংলাদেশি, কিন্তু বাংলাদেশিরা সবাই বাঙালি নয়। আর বর্তমান রাষ্ট্রকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থায় সাধারণত রাষ্ট্রের পরিচয়েই অধিবাসীদের জাতীয়তার পরিচিতি। তাই বিশ্বসভায় আমাদের প্রথম ও প্রধান পরিচয় হওয়া উচিত, আমরা বাংলাদেশি।

[লেখাটি অন্যান্য ব্লগেও প্রকাশিত] 

আমার ব্লগ দেখুন 

ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড : বাঙালি জাতীয়তাবাদ, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ
বিষয়শ্রেণী: রাজনীতি

মানবাধিকার সনদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র
এলিয়ানর রুজভেল্ট ও স্পেনিশ ভাষায় মানবাধিকার সনদ (১৯৪৯)
এলিয়ানর রুজভেল্ট ও স্পেনিশ ভাষায় মানবাধিকার সনদ (১৯৪৯)
ধারণা১৯৪৮
অনুমোদন ১০ ডিসেম্বর, ১৯৪৮
অবস্থানপ্যালাইজ দ্য চেইলট, প্যারিস
প্রণেতা(গণ)জন পিটার্স হামফ্রে (কানাডা)
রেনে ক্যাসিন (ফ্রান্স)
স্টিফানে হেসেল (ফ্রান্স)
পি. সি. চ্যাং (চীন)
চার্লস মালিক (লেবানন)
এলিয়ানর রুজভেল্ট (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)সহ আরো অনেকে
উদ্দেশ্যমানবাধিকার

মানবাধিকার সনদ (ইংরেজিUniversal Declaration of Human Rights (UDHR)) একটি ঘোষণাপত্র। ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর প্যারিসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এই ঘোষণা প্রদান করা হয়। প্রত্যেক মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে এই সনদ ঘোষিত হয়।

পরিচ্ছেদসমূহ

  [আড়ালে রাখো

[সম্পাদনা]সার্বজনীন ঘোষণাপত্র

[সম্পাদনা]মুখবন্ধ

যেহেতু মানব পরিবারের সকল সদস্যের সহজাত মর্যাদা ও সম অবিচ্ছেদ্য অধিকারসমূহের স্বীকৃতি বিশ্বে স্বাধীনতা, ন্যায়-বিচার ও শান্তির ভিত্তি; যেহেতু মানবিক অধিকারসমূহের প্রতি অবজ্ঞা ও ঘৃণা মানবজাতির বিবেকের পক্ষে অপমানজনক বর্বরোচিত কাযর্কলাপে পরিণতি লাভ করেছে এবং সাধারণ মানুষের সর্বোচ্চ আশা-আকাঙ্খার প্রতীক হিসেবে এমন একটি পৃথিবীর সূচনা ঘোষিত হয়েছে যেখানে মানুষ বাক ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা এবং ভয় ও অভাব থেকে নিষ্কৃতি ভোগ করবে;

যেহেতু চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে মানুষকে অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হতে বাধ্য করা না হলে মানবিক অধিকারসমূহ অবশ্যই আইনের শাসনের দ্বারা সংরক্ষিত করা উচিত;

যেহেতু জাতিসমূহের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নয়নে সহায়তা করা অবশ্যক; যেহেতু জাতিসংঘভুক্ত জনগণ সনদের মাধ্যমে মৌল মানবিক অধিকারসমূহ অধিকারসমূহ, মানুষের মর্যাদা ও মূল্য এবং নারী ও পুরুষের সম-অধিকারের প্রতি আস্থা পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং সামাজিক অগ্রগতি ও ব্যাপকতর স্বাধীনতা উন্নততর জীবনমান প্রতিষ্ঠাকল্পে দৃঢপ্রতিজ্ঞ;

যেহেতু সদস্যরাষ্ট্রসমূহ জাতিসংঘের সহযোগিতায় মানবিক অধিকার ও মৌল স্বাধিকারসমূহের প্রতি সার্বজনীন শ্রদ্ধা ও মান্যতা বৃদ্ধি অর্জনে অঙ্গীকারাবদ্ধ; যেহেতু সকল অধিকার ও স্বাধিকারের ব্যাপারে একটি সাধারণ সমঝোতা উক্ত অঙ্গীকার সম্পূর্ণরূপে আদায় করার জন্য সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ;

তাই সাধারণ পরিষদ সকল জাতি ও জনগোষ্ঠীর অগ্রগতির একটি সাধারণ মানদণ্ড হিসেবে জারি করছে এই মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র;

ঐ লক্ষ্যে প্রত্যেক ব্যক্তি ও সমাজের প্রত্যেক অঙ্গ মানবিক অধিকারসমূহের এই সর্বজনীন ঘোষণাপত্রটিকে সর্বদা স্মরণ রেখে শিক্ষাদান ও জ্ঞান প্রসারের মাধ্যমে এ সকল অধিকার ও স্বাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধে জাগ্রত করতে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রগতিশীল ব্যবস্থাদির দ্বারা সদস্য-রাষ্ট্রসমুহের জনগণ ও তাদের অধীনস্থ অঞ্চলসমূহের অধিবাসীবৃন্দ উভয়ের মধ্যে ঐগুলোর সর্বজনীন ও কার্যকর স্বীকৃতি ও মান্যতা অর্জনের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাবে৷

[সম্পাদনা]ধারাসমূহ

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-১

বন্ধনহীন অবস্থায় এবং সম-মর্যাদা ও অধিকারাদি নিয়ে সকল মানুষই জন্মগ্রহণ করে৷ বুদ্ধি ও বিবেক তাদের অর্পণ করা হয়েছে; অতএব ভ্রাতৃত্বসুলভ মনোভাব নিয়ে তাদের একে অন্যের প্রতি আচরণ করা উচিত৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-২

  • যে কোন প্রকার পার্থক্য যথা - জাতি, গোত্র, বর্ণ, নারী-পুরুষ, ভাষা, ধর্ম, রাজনৈতিক বা অন্য মতবাদ, জাতীয় বা সামাজিক উত্পত্তি, সম্পক্তি, জন্ম, বা অন্য মর্যাদা নির্বিশেষে প্রত্যেকেই ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত সকল অধিকার ও স্বাধিকারে স্বত্ববান৷
  • অধিকন্তু, কোন ব্যক্তি যে দেশ বা অঞ্চলের অধিবাসী, তা স্বাধীন, অছিভুক্ত এলাকা, অসায়ত্ত্বশাসিত অথবা অন্য যে কোন প্রকার সীমিত সার্বভৌমত্বের মধ্যে থাকুক না কেন, তার রাজনৈতিক, সীমানাগত ও আন্তর্জাতিক মর্যাদার ভিত্তিতে কোন পার্থক্য করা চলবে না৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-৩

প্রত্যেকেরই জীবন-ধারণ, স্বাধীনতা ও ব্যক্তি নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-৪

কাউকে দাস হিসেবে বা দাসত্বের বন্ধনে আবদ্ধ রাখা চলবে না। সকল প্রকার দাস-প্রথা ও দাস-ব্যবসা নিষিদ্ধ থাকবে৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-৫

কাউকে নির্যাতন অথবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক অথবা অবমাননাকর আচরণ অথবা শাস্তি ভোগে বাধ্য করা চলবে না৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-৬

আইনের সমক্ষে প্রত্যেকেরই সর্বত্র ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতিলাভের অধিকার রয়েছে৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-৭

আইনের কাছে সকলেরই সমান এবং কোনরূপ বৈষম্য ব্যতিরেকে সকলেরই আইনের দ্বারা সমভাবে রক্ষিত হওয়ার অধিকার রয়েছে৷ এই ঘোষণাপত্রের লঙ্ঘনজনিত বৈষম্য বা এরূপ বৈষম্যের উস্কানির বিরুদ্ধে সমভাবে রক্ষিত হওয়ার অধিকার সকলেরই আছে৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-৮

যে কার্যাদির ফলে শাসনতন্ত্র বা আইন কর্তৃক প্রদত্ত মৌল অধিকারসমূহ লঙ্ঘিত হয় সে সবের জন্য উপযুক্ত জাতীয় বিচার আদালতের মারফত কার্যকর প্রতিকার লাভের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-৯

কাউকে খেয়াল-খুশিমত গ্রেফতার, আটক অথবা নির্বাসন দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে না৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-১০

প্রত্যেকেরই তার অধিকার ও দায়িত্বসমূহ এবং তার বিরুদ্ধে আনীত যে কোন ফৌজদারী অভিযোগ নিরূপণের জন্য পূর্ণ সমতারভিত্তিতে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার-আদালতে ন্যায্যভাবে ও প্রকাশ্যে শুনানী লাভের অধিকার রয়েছে৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-১১

  • কোন দণ্ডযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত হলে প্রত্যেকেরই আত্মপক্ষ সমর্থনের নিশ্চয়তা দেয় এমন গণ-আদালত কর্তৃক আইন অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ বলে বিবেচিত হওয়ার অধিকার রয়েছে৷
  • কাউকেই কোন কাজ বা ক্রটির জন্য দণ্ডযোগ্য অপরাধে দোষী সাবাস্ত করা চলবে না, যদি সংঘটনকালে তা জাতীয় বা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী দণ্ডযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য না হয়ে থাকে৷ আবার দণ্ডযোগ্য অপরাধ সংঘটনকালে যতটুকু শাস্তি প্রযোজ্য ছিল তার চেয়ে শাস্তি প্রয়োগ চলবে না৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-১২

কাউকে তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, পরিবার, বসতবাড়ি বা চিঠিপত্রের ব্যাপারে খেয়ালখুশিমত হস্তক্ষেপ অথবা সম্মান ও সুনামের ওপর আক্রমণ করা চলবে না৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-১৩

  • নিজ রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে চলাচল ও বসতি স্থাপনের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে৷
  • প্রত্যেকেরই নিজ দেশসহ যে কোন দেশ ছেড়ে যাওয়ার ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের অধিকার রয়েছে৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-১৪

  • নির্যাতন এড়ানোর জন্য প্রত্যেকেরই অপর দেশসমূহে আশ্রয় প্রার্থনা ও আশ্রয় লাভ করার অধিকার রয়েছে৷
  • অ-রাজনৈতিক অপরাধসমূহ অথবা জাতিসংঘের উদ্দেশ্যে ও মূলনীতি বিরোধী কার্যকলাপ থেকে সত্যিকারভাবে উদ্ভূত নির্যাতনের ক্ষেত্রে এই অধিকার নাও পাওয়া যেতে পারে৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-১৫

  • প্রত্যেকেরই একটি জাতীয়তার অধিকার রয়েছে৷
  • কাউকেই যথেচ্ছভাবে তার জাতীয়তা থেকে বঞ্চিত করা অথবা তাকে তার জাতীয়তা পরিবর্তনের অধিকার অস্বীকার করা চলবে না৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-১৬

  • পূর্ণ-বয়স্ক পুরুষ ও নারীদের জাতিগত, জাতীয়তা অথবা ধর্মের কারণে কোন সীমাবব্ধতা ব্যতিরেকে বিবাহ করা ও পরিবার গঠনের অধিকার রয়েছে৷ বিবাহের ব্যাপারে, বিবাহিত অবস্থায় এবং বিবাহ বিচ্ছেদকালে তাদের সম-অধিকার রয়েছে৷
  • কেবল বিবাহ-ইচ্ছুক পাত্র-পাত্রীর অবাধ ও পূর্ণ সম্মতির দ্বারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যাবে৷
  • পরিবার হচ্ছে সমাজের স্বাভাবিক ও মৌলিক একক গোষ্ঠী; সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক এর সংরক্ষিত হওয়ার অধিকার রয়েছে৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-১৭

  • প্রত্যেকেরই একাকী এবং অপরের সহযোগিতায় সম্পত্তির মালিক হওয়ার অধিকার রয়েছে৷
  • কাউকেই তার সম্পত্তি থেকে খেয়ালখুশিমত বঞ্চিত করা চলবে না৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-১৮

প্রত্যেকেরই চিন্তা, বিবেক ও ধর্মের স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে৷ নিজ ধর্ম অথবা বিশ্বাস পরিবর্তনের স্বাধীনতা এবং একাই অথবা অপরের যোগসাজশে ও প্রকাশ্যে বা গোপনের নিজ ধর্ম বা বিশ্বাস শিক্ষাদান, প্রচার, উপাসনা ও পালনের মাধ্যমে প্রকাশ করার স্বাধীনতা এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-১৯

প্রত্যেকেরই মতামতের ও মতামত প্রকাশের স্বাধিকার রয়েছে; বিনা হস্তক্ষেপে মতামত পোষণ এবং যে কোন উপায়ে ও রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্বিশেষে তথ্য ও মতামত সন্ধান, গ্রহণ ও জ্ঞাত করার স্বাধীনতা এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-২০

  • প্রত্যেকেরই শান্তিপূর্ণভাবে সম্মিলিত হওয়ার অধিকার রয়েছে৷
  • কাউকেই কোন সংঘভুক্ত হতে বাধ্য করা যাবে না৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-২১

  • প্রত্যক্ষভাবে অথবা অবাধে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিজ দেশের সরকারে অংশগ্রহণের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে৷
  • প্রত্যেকেরই নিজ দেশের সরকারী চাকুরীতে সমান সুযোগ লাভের অধিকার রয়েছে৷
  • জনগণের ইচ্ছাই হবে সরকারের ক্ষমতার ভিত্তি; এই ইচ্ছা সর্বজনীন ও সমান ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নৈমিত্তিকভাবে এবং প্রকৃত নির্বাচন দ্বারা ব্যক্ত হবে; গোপন ব্যালট অথবা অনুরূপ অবাধ ভোটদান পদ্ধতিতে এরূপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-২২

সমাজের সদস্য হিসেবে প্রত্যেকেরই সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে; প্রত্যেকেই জাতীয় প্রচেষ্টা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এবং প্রতিটি রাষ্ট্রের সংগঠন ও সম্পদ অনুসারে তার মর্যাদা ও অবাধে ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অপরিহার্য অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহ আদায় করতে পারবে৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-২৩

  • প্রত্যেকেরই কাজ করার, অবাধে চাকুরী নির্বাচনের, কাজের জন্য ন্যায্য অনুকূল অবস্থা লাভের এবং বেকারত্ব থেকে রক্ষিত হওয়ার অধিকার রয়েছে৷
  • প্রত্যেকেরই কোন বৈষম্য ব্যতিরেকে সমান কাজের জন্য সমান বেতন পাওয়ার অধিকার রয়েছে৷
  • প্রত্যেক কর্মী তার নিজের ও পরিবারের মানবিক মর্যাদা রক্ষার নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম এমন ন্যায্য ও অনুকূল পারিশ্রমিক এবং প্রয়োজনবোধে সেই সঙ্গে সামাজেক নিরাপত্তার জন্য অন্যান্য সুবিধা লাভের অধিকারী৷
  • প্রত্যেকেরই নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন ও এতে যোগদানের অধিকার রয়েছে৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-২৪

প্রত্যেকেরই বিশ্রাম ও অবসর বিনোদনের অধিকার রয়েছে৷ কাজের সময়ের যুক্তিসঙ্গত সীমা ও বেতনসহ নৈমিত্তিক ছুটি এ অধিকারের অন্তর্ভুক্ত৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-২৫

  • নিজের এবং নিজ পরিবারের স্বাস্থ্য ও কল্যাণের নিমিত্ত পর্যাপ্ত জীবনমানের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে৷ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিত্সা ও প্রয়োজনীয় সামাজিক সেবামূলক কার্যাদির সুযোগ এবং বেকারত্ব, পীড়া, অক্ষমতা, বৈধব্য, বার্ধক্য অথবা অনিবার্য কারণে জীবন যাপনে অন্যান্য অপারগতার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত৷
  • মাতৃত্বকালে ও শৈশব অবস্থায় প্রত্যেকের বিশেষ যত্ন ও সহায়তা লাভের অধিকার রয়েছে৷ জন্ম বৈবাহিক বন্ধনের ফলে বা বৈবাহিক বন্ধনের বাইরে হোক, সকল শিশুই অভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা ভোগ করবে৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-২৬

  • প্রত্যেকেরই শিক্ষালাভের অধিকার রয়েছে৷ অন্ততপক্ষে প্রাথমিক ও মৌলিক পর্যায়ে শিক্ষা অবৈতনিক হবে৷ প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক হবে৷ কারিগরী ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা সাধারণভাবে লভ্য থাকবে এবং উচ্চতর শিক্ষা মেধার ভিত্তিতে সকলের জন্য উণ্মুক্ত থাকবে৷
  • ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশ ও মানবিক অধিকার এবং মৌলিক স্বাধিকারসমূহের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দৃঢ করার উদ্দেশ্যে শিক্ষা পরিচালিত হবে৷ সমঝোতা, সহিষ্ণুতা ও সকল জাতি, বর্ণ ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে বন্ধুত্ব উন্নয়ন এবং শান্তি রক্ষার্থে জাতিসংঘ কর্মতত্পরতা বৃদ্ধি করবে৷
  • যে প্রকার শিক্ষা তাদের সন্তানদের দেওয়া হবে তা পূর্ব থেকে বেছে নেওয়ার অধিকার পিতামাতার রয়েছে৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-২৭

  • প্রত্যেকেরই গোষ্ঠীমত সাংস্কৃতিক জীবনে অবাধে অংশগ্রহণ, শিল্পকলা চর্চা করা এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ও এর সুফলসমূহের অংশীদার হওয়ার অধিকার রয়েছে৷
  • প্রত্যেকেরই বিজ্ঞান, সাহিত্য অথবা শিল্পকলাভিত্তিক সৃজনশীল কাজ থেকে উদ্ভূত নৈতিক ও বৈষয়িক স্বার্থসমূহ রক্ষনের অধিকার রয়েছে৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-২৮

প্রত্যেকেই এমন একটি সামাজিক ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য স্বত্ববান যেখানে এই ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহ পূর্ণভাবে আদায় করা যেতে পারে৷

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-২৯

  • প্রত্যেকেরই সমাজের প্রতি কর্তব্যাদি রয়েছে কেবল যার অন্তর্গত হয়েই তার ব্যক্তিত্বের অবাধ ও পূর্ণ বিকাশ সম্ভব৷
  • স্বীয় অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহ প্রয়োগকালে প্রত্যেকেরই শুধু ঐ ধরনের সীমাবদ্ধ থাকবে যা কেবল অপরের অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহের যর্থাথ স্বীকৃতি ও শ্রদ্ধা নিশ্চিত করতে পারে৷ এরূপ সীমাবদ্ধ একটি গণতান্ত্রিক সমাজে নৈতিকতা, গণশৃঙ্খলা ও সাধারণ কল্যাণের ন্যায্য প্রয়োজনসমূহ মিটানোর উদ্দেশ্যে আইনের দ্বারা নিরূপিত হবে৷
  • এ সকল অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগকালে কোন ক্ষেত্রেই জাতিসংঘের উদ্দেশ্য ও মূলনীতি লঙ্ঘন করা চলবে না।

[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-৩০

এই ঘোষণার উল্লিখিত কোন বিষয়কে এরূপভাবে ব্যাখ্যা করা চলবে না যাতে মনে হয় যে এই ঘোষণার অন্তর্ভুক্ত কোন অধিকার বা স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে কোন রাষ্ট্র, দল বা ব্যক্তি বিশেষের আত্মনিয়োগের অধিকার রয়েছে৷

[সম্পাদনা]অনুমোদন

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ১০ ডিসেম্বর, ১৯৪৮ সালে মানবাধিকারের উপর সার্বজনীন ঘোষণার খসড়া সিদ্ধান্তটি অনুমোদিত হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ৪৮ ভোট পড়ে এবং বিপক্ষে কোন ভোট পড়েনি। কিন্তু ৮টি দেশ ভোট প্রদানে বিরত থাকে। দেশগুলো হলো - সোভিয়েত ইউনিয়ন, ইউক্রেন, বেলারুশ, যুগোস্লাভিয়া, পোল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, চেকোস্লোভাকিয়া এবং সৌদী আরব।[১][২]

[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র


অমর্ত্য সেনের আরগুমেন্টেটিভ ইন্ডিয়ান : ইসলাম ত্যাগ করে দ্বীন-ই ইলাহি গ্রহণের আহ্বান : ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের উত্স হিন্দু ধর

০৫ ই এপ্রিল, ২০১১ সকাল ১০:৩৩ |

শেয়ারঃ
01


নোবেলবিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. অমর্ত্য সেন তার 'আরগুমেন্টেটিভ ইন্ডিয়ান' বইয়ে কোরআন ও হাদিস নির্দেশিত ইসলামকে প্রত্যাখ্যান করতে মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এগুলো হাজার বছরেরও বেশি পুরনো হওয়ায় তা পরিত্যাগ করে হিন্দু ধর্ম থেকে উদ্ভব সম্রাট আকবরের 'দ্বীন-ই-ইলাহি'কে মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করার পরামর্শ দেন তিনি। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের (সেক্যুলারিজম) ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি এ মত দেন। 
অন্যদিকে সেক্যুলারিজমকে হিন্দু ধর্ম থেকে উদ্ভব বলে যুক্তি দেন তিনি। তার মতে, হিন্দু ধর্ম কোনোভাবেই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ-বিরোধী নয়। কেউ ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিশ্বাস করলে তাকে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করতে হবে। আর বিশ্বাসী হয়ে উঠতে হবে হিন্দু ধর্মের প্রথায়। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. হাসানুজ্জামান চৌধুরী 'আরগুমেন্টেটিভ ইন্ডিয়ান' বইয়ের সমালোচনা করে 'বাংলাদেশ পলিটিক্যাল সায়েন্স রিভিউ' নামের গবেষণা জার্নালে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ প্রকাশিত ওই জার্নালের ৭ম সংখ্যায় এটি প্রকাশিত হয়েছে। অধ্যাপক ড. শওকত আরা হোসেন সম্পাদিত গবেষণা জার্নালে ওই প্রবেন্ধের শিরোনাম হলো 'অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ও দৈশিক দোষের আবর্তে ভারতীয় সেক্যুলারিজম : বিভ্রান্তিকর একটি ব্যাখ্যা'। 
অধ্যাপক ড. হাসানুজ্জামান চৌধুরী লিখেছেন, 'নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেনের মতামত দৈশিক দোষে দুষ্ট। সেক্যুলারিজম মূলতই একটি অগ্রহণীয় মতবাদ। ধর্ম ও সেক্যুলারিজম পারস্পরিক বিপরীত মত। ইসলাম ধর্ম নিয়ে তিনি যে মত দিয়েছেন, তা সর্বতোভাবে বিভ্রান্তিকর। আর সেক্যুলারিজম যদি হিন্দু ধর্ম থেকে উদ্ভবই হয়, তাহলে তা প্রকৃত ধর্মমত বাদ দিয়ে মুসলমানরা গ্রহণ করতে পারেন না।' 
ড. হাসানুজ্জামান চৌধুরী তার প্রবন্ধের শুরুতে নোবেলবিজয়ী ড. অমর্ত্য সেনের ১১টি বইয়ের বিষয়বস্তু প্রশংসা করেন। অসমতা, দারিদ্র্য, দুর্ভিক্ষ, সক্ষমতা ও উন্নয়ন সম্পর্কিত ড. সেনের বইগুলো পাঠকপ্রিয় ও অগ্রগতির জন্য সহায়ক বলে মনে করেন তিনি। তবে ভারতীয় ইতিহাস, সংস্কৃতি ও পরিচয় নিয়ে লেখা অমর্ত্য সেনের 'আরগুমেন্টেটিভ ইন্ডিয়ান' বইটি একদেশদর্শিতা ও সাম্প্রদায়িক দোষে দুষ্ট হওয়ার কারণে সমালোচনার যোগ্য বলে ড. চৌধুরী মনে করেন। তিনি বলেন, বাইরে খাঁটি মনে হলেও অমর্ত্য সেন প্রকৃতপক্ষে হিন্দুত্ববাদের বশ্যতা স্বীকার করেই এ বইটি লিখেছেন। 
ড. হাসানুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমি বইটির পুরোটা পড়েছি। তার লেখা থেকে নানা প্রশ্ন জেগে ওঠায় সমালোচনা লিখতে বাধ্য হয়েছি। 
বইটির প্রথমাংশে ড. অমর্ত্য সেন ভারতের প্রাচীন ইতিহাস ও সমকালীন প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। এতে তিনি বলতে চেষ্টা করেছেন, ধর্মের বিভিন্নতায় সাহিত্য, রাজনীতি, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও গণিতের উন্নতির পথ ধরে ভারতীয় সেক্যুলারিজমের উত্পত্তি হয়েছে। ভারতীয় গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সেক্যুলারিজম মূলতই হিন্দু ধর্মের ধারাবাহিক বিবর্তনে হয়েছে। মুসলমানদের মুঘল ও পাঠান শাসনও এক্ষেত্রে প্রভাবিত করেছে। বিশেষ করে সম্রাট আকবরের 'দ্বীন-ই-ইলাহী' ভারতীয় ঐতিহ্য ও সেক্যুলারিজমকে গড়ে উঠতে সহায়তা করেছে। 
গবেষণা প্রবন্ধের উপসংহারে ড. হাসানুজ্জামান চৌধুরী বলেন, নোবেলবিজয়ী অমর্ত্য সেন একজন সম্মানিত ও জ্ঞানী ব্যক্তি হলেও তিনি ইসলাম ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। পৃথিবীর যে কোনো ধর্মপ্রাণ মুসলমান এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবেন। ড. হাসানুজ্জামান বলেন : 'Islam can be accepted when Amartya's prescriptions of destroying Islam by disobeying Allah and Rasul (SM) are carried out. Quraan and Sunnah should be rejected (nauzbillah), with the excuse that they are traditions of the past of more than 1000 years. ...Amartya in his 'The Argumentative Indian' has repeatedly mentioned that (Islamic and Muslim) tradition should be rejected and 'rahi aqbal' theory given by Emperor Akbar should be accepted as the main principle. He has even gone to the extent of saying that this demon tradition should and must be fought and rejected by the society.' অর্থাত্, 'অমর্ত্যের মতামত অনুযায়ী আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর নির্দেশিত পথকে প্রত্যাখ্যান করার মাধ্যমে যে 'ইসলাম' আসবে সেটাকে গ্রহণ করা যেতে পারে। হাজার বছরেরও বেশি পুরনো মতাদর্শ হওয়ায় কোরআন ও সুন্নাহ বর্জন করা উচিত (নাউজুবিল্লাহ)। ...অমর্ত্য তার 'আরগুমেন্টেটিভ ইন্ডিয়ান'-এ বলেছেন, ইসলামের মৌলিক আদর্শ হিসেবে পুরনো মতাদর্শ (ইসলাম ও মুসলিম) বর্জন করে সম্রাট আকবরের 'রাহি আকবল'কে গ্রহণ করা উচিত। তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, সমাজের অবশ্যই উচিত এই দানবীয় ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া ও প্রত্যাখ্যান করা।'
ড. হাসানুজ্জামান চৌধুরী বলেন, 'ড. অমর্ত্য সেন ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে হিন্দুত্ববাদ হিসেবে দেখিয়েছেন। এমনকি দেখিয়েছেন, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ অর্থ হলো ইসলাম ত্যাগ করা এবং প্রকৃতপক্ষে হিন্দুত্ববাদকে গ্রহণ করা। কেননা হিন্দুত্ববাদ যে কোনো ধর্মের চেয়ে প্রচলিত মতের বিরোধিতার কারণে শ্রেষ্ঠ।' (বাংলাদেশ পলিটিক্যাল সায়েন্স রিভিউ, পৃষ্ঠা-৪৪) ড. অমর্ত্য সেন ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ হিন্দুধর্ম থেকে উদ্ভব বলে চিত্রায়িত করেছেন। এ বিষয়ে ড. হাসানুজ্জামান চৌধুরী বলেন : ্তুঅসধত্ঃুধ নড়ধংঃং ংবপঁষধত্রংস, নঁঃ ধষষ রঃং ত্ড়ড়ঃং ধত্ব ঁষঃরসধঃবষু ফরংপড়াবত্বফ নু যরস ভত্ড়স ঐরহফঁ ঢ়যরষড়ংড়ঢ়যু, ঐরহফঁ ত্বষরমরড়হ ধহফ ঐরহফঁরংস.্থ অর্থাত্, অমর্ত্য ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের দম্ভোক্তি করেছেন, কিন্তু এর মূল হিসেবে তিনি হিন্দু দর্শন, হিন্দু ধর্ম ও হিন্দুত্ববাদকে আবিষ্কার করেছেন।' (বাংলাদেশ পলিটিক্যাল সায়েন্স রিভিউ, পৃষ্ঠা-২৮) 
আবার, আকবরের পরিচালিত মুসলিম শাসনের অনেকটা হিন্দু ধর্মের দ্বারা প্রভাবিত বলে মনে করেন ড. অমর্ত্য সেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন : 'Akbar not only made unequivocal pronouncements on the priority of tolerance, but also laid the formal foundations of a secular legal structure and of religious neutrality of the state. ...Despite his deep interest in other religions and his brief attempt to launch a new religion, Din-ilahi (God's religion), based on a combination of good points chosen from different faiths, Akbar did remain a good Muslim himself.' অর্থাত্, আকবর কেবল ধৈর্যের প্রাধান্যের দ্ব্যর্থহীন ঘোষণাই দেননি, তিনি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে ধর্মের নিরপেক্ষতা ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের আনুষ্ঠানিক ভিত্তিও রচনা করেন। ...অন্য ধর্ম সম্পর্কে গভীর আগ্রহ এবং সংক্ষিপ্ত উদ্যোগে তিনি বিভিন্ন বিশ্বাসের (ধর্ম) ভালো দিকগুলো সমন্বয় করে নতুন ধর্ম দ্বীন-ইলাহীর (ঈশ্বরের ধর্ম) উদ্ভাবন করেন। আর এভাবে আকবর একজন ভালো মুসলমান হয়ে থাকেন। (আরগুমেন্টেটিভ ইন্ডিয়ান, পৃষ্ঠা-১৮) 
ইসলামের প্রকৃত বিশ্বাসের (কোরআন-সুন্নাহ) নীতিমালা সময়ের বিবর্তনে যৌক্তিক পর্যালোচনায় পরিবর্তন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন ড. অমর্ত্য সেন। আর এক্ষেত্রে সম্রাট আকবরের একটি মন্তব্য উদ্ধৃত করেন তিনি : 'The pursuit of reason and rejection of traditionalism are so brilliantly patent as to be above the need of argument. If traditionalism were proper, the prophets would merely have followed their own elders (and not come with new messages).' অর্থাত্, যৌক্তিকভাবেই যুক্তির অনুসরণ এবং ঐতিহ্যের প্রত্যাখ্যান সাহসিকতার (মেধার) সঙ্গে উন্মুক্ত করা দরকার। ঐতিহ্য যদি সঠিক হতোই, তবে নবীরা শুধুই তাদের পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করতেন (এবং তারা নতুন বার্তা নিয়ে আসতেন না)। 
এ উদ্ধৃতি দেয়ার পর ড. অমর্ত্য সেন বলেন : 'Reason had to be supreme, since even in disputing the validity of reason we have to give reasons.' অর্থাত্, যুক্তিকেই প্রধান হতে হবে, যুক্তির বৈধতা নিয়ে বিতর্ক থাকলে সেক্ষেত্রে আমাদের অধিকতর যুক্তি দিতে হবে।' 
বইয়ের দ্বিতীয় অংশে ভারতীয় সেক্যুলারিজমের দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরা হয়। এতে তিনি সেক্যুলারিজমকে তার নিজের ধর্মের (হিন্দু ধর্ম) সন্তান হিসেবে চিত্রায়িত করেন।
ড. অমর্ত্য সেনের মতে, সেক্যুলারিজম হিন্দু ধর্ম থেকে এসেছে। সম্রাট আকবর ভারতীয় সেক্যুলারিজমের অগ্রগতিতে সহায়তা করেছেন। আর সেক্ষেত্রে তিনিও হিন্দু ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত। তবে সম্রাট আওরঙ্গজেব ইসলামী বিধি অনুযায়ী শাসন পরিচালনা করায় ড. অমর্ত্য সেনের সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন। অমর্ত্য সেন মনে করেন, মুসলিম আর ইসলাম হলো সাম্প্রদায়িক। নিজেকে অজ্ঞেয়বাদী হিসেবে পরিচয় দিলেও তার বইয়ে তিনি হিন্দুদের তেত্রিশ কোটি ঈশ্বরের অস্তিত্বের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। 
গীতা ও ঋৃক বেদে তর্কপ্রিয় ঐতিহ্যের প্রাধান্য রয়েছে। যুক্তি, তর্ক, গণতান্ত্রিক ধারা হিন্দু ধর্মের আদর্শ। আর এ থেকেই ভারতে আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বলে অমর্ত্যের ধারণা। 
কিন্তু হিন্দু ধর্মে প্রচলিত বহু দেবতার জড়ীয় অস্তিত্ব এবং নিজেদের হাতে বানানো দেবতাকে পূজা করার পেছনে বৈজ্ঞানিক কোনো যুক্তি উপস্থাপন করা যায় না। একজন নোবেলজয়ী জ্ঞানী ব্যক্তি হয়েও অমর্ত্য সেন হিন্দু ধর্মের এই অসারতার বিষয়টি অনুধাবন করেননি। বরং সেক্যুলারিজমসহ অন্য ধর্মগুলোকেও তিনি হিন্দু ধর্মের মধ্যে গুলিয়ে ফেলার অভিপ্রায়ে লিপ্ত হন।
সমালোচনায় ড. হাসানুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ড. অমর্ত্য সেন সেক্যুলারিজমে বিশ্বাসী হওয়ার কথা বললেও নিজের হিন্দু ধর্মকে তিনি ত্যাগ করতে চাইছেন না। এমনকি সেক্যুলারিজমের মূল সংজ্ঞা অনুযায়ী সব ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে সম-দূরত্ব ও সম-মর্যাদা প্রদানের বিষয়টিও তার বইয়ে বিবেচিত হয়নি। হিন্দু ধর্মকে উলঙ্গভাবে সমর্থন করা হয়েছে। একদিকে তিনি হিন্দু ধর্মকে ইতিবাচকভাবে সমর্থন করেছেন, আবার ইসলাম ধর্মকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ধর্মীয় ঐতিহ্যের আলোচনায় হিন্দু ধর্ম থেকে আগত প্রথাকে তিনি শতভাগ গ্রহণীয় এবং ইসলাম ধর্ম থেকে আগত প্রথাকে আইনত অকার্যকর বলে চিহ্নিত করেছেন। 
আরগুমেন্টেটিভ ইন্ডিয়ান বইয়ের ২১ পৃষ্ঠায় নোবেলবিজয়ী ড. অমর্ত্য সেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমাবর্তনে সব ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ থেকে তেলাওয়াত করার সমালোচনা করেন। এমনকি তিনি এতে 'আঘাত' পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। ১৯৯৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. অমর্ত্য সেন অতিথি হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন। এ অনুষ্ঠানে সব ধর্মগ্রন্থ পাঠ করার মাধ্যমে 'সেক্যুলার' দৃষ্টিভঙ্গির প্রমাণ রাখা হয়েছিল। গত ১ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমীর একুশে বইমেলা উদ্বোধনেও ড. অমর্ত্য সেন অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। সেখানেও একই ধারায় সব ধর্মগ্রন্থের প্রতি সম্মান জানানো হয়। কিন্তু অমর্ত্য সেনের নিজ দেশ ভারতে সেক্যুলারিজম রাষ্ট্রনীতি হলেও সেখানে কেবল হিন্দু ধর্মগ্রন্থকে অধিকতর গুরুত্ব দেয়ার সমালোচনা করেন ড. হাসানুজ্জামান। 
ইসলাম ধর্মে পর্দা প্রথার সমালোচনা করে অধ্যাপক ড. অমর্ত্য সেন তার বইয়ের ২০ পৃষ্ঠায় বলেন, পোশাক পরিধানে নিরপেক্ষতা এবং নিষেধাজ্ঞার দুটি বিষয় আছে। ব্যক্তি ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোনো পোশাক পরিধান করতে পারে। আর রাষ্ট্র বা ধর্ম এক্ষেত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে না। একথা বলার পরই তিনি ফ্রান্সে বোরকা পরা নিষিদ্ধ করার রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের পক্ষে অবস্থান নেন। মুসলমানদের মাথায় স্কার্ফ (পর্দা) পরাকে তিনি লিঙ্গবৈষম্য হিসেবে অভিহিত করেন। 
ড. হাসানুজ্জামান চৌধুরী পর্দাপ্রথা সম্পর্কে ড. অমর্ত্য সেনের মতের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, কোরআনে পর্দাপ্রথার যে গুরুত্ব বর্ণনা আছে, সে সম্পর্কে তিনি কোনো ধারণা না নিয়েই মিথ্যা যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি পবিত্র কোরআনের উদ্ধৃতি দেন। সুরাহ আল আহজাবে বলা হয়েছে, 'হে নবী, আপনার স্ত্রী, কন্যা এবং মুমিন নারীদের বলে দিন, তারা যেন মাথাসহ শরীর ঢেকে রাখে। এটা ভালো হবে যে, তা বিশৃঙ্খলার (ডিস্টার্ব) হাত থেকে রক্ষা পেতে সহায়তা করবে। আল্লাহ সর্বক্ষমাশীল ও করুণাময়।' ড. হাসানুজ্জামান চৌধুরী এ উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, কোরআনে যেখানে স্বয়ং আল্লাহ 'পর্দা' করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, ড. অমর্ত্য তা প্রত্যাখ্যানের পরামর্শ দেন। এটা নিঃসন্দেহে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য। 
সেক্যুলারিজম ও প্রকৃত সত্য : ড. অমর্ত্য সেনের ব্যাখ্যার সমালোচনার পাশাপাশি ড. হাসানুজ্জামান চৌধুরী সেক্যুলারিজমের প্রকৃত ধারণা উপস্থাপন করেন। তার মতে, সেক্যুলারিজমের ধারণা মূলত ইউরোপে শুরু হয়। গির্জা ও ধর্মগুরুদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের পথ ধরে হজরত ঈসা (আ.)-এর ধর্ম বিবর্তিত হয়ে খ্রিস্টান ও পরবর্তীকালে সেক্যুলারিজমের ধারণার সৃষ্টি হয়। ধর্ম প্রচারের একপর্যায়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হজরত ঈসা (আ.)-এর অনুপস্থিতিতে তার প্রবর্তিত ধর্মকে ইচ্ছামত পরিবর্তন করেন পল। এ পরিস্থিতিতে 'ইঞ্জিল' পরিবর্তিত হয়ে 'বাইবেল' তৈরি করা হয়। মুসলমানদের ধর্মকে উপেক্ষা করে মানবরচিত রীতি নিয়ে খ্রিস্টান ধর্ম পরিচালনা শুরু হয়। কলুষিত খ্রিস্টান ধর্মকে মানুষ প্রত্যাখ্যান করে। রোমান ক্যাথলিক ধর্মের বিপরীতে প্রটেস্টান্ট নীতিবিদ্যার আদলে নানা ধর্মমত গড়ে ওঠে। পারস্পরিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে এসব গোষ্ঠী। এতে জনজীবনে অশান্তি নেমে আসে। ক্যালভিন, লুথারসহ অনেকে এসব অশান্তি রোধে এগিয়ে আসেন। উইলিয়াম ওকাম, জন সেলিসবারি একটি নতুন আন্দোলন গড়ে তোলেন। ম্যাকাইভেলি রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করে বিদ্যমান অশান্তি রোধে ভূমিকা রাখেন। সংস্কার ও রেনেসাঁ সংঘটিত হয়। দ্বান্দ্বিক খ্রিস্টান ধর্মের নানারূপ রাষ্ট্র, অর্থনীতি, সমাজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতিতে বাধা হিসেবে দেখা দেয়। 
এ পরিস্থিতিতে ইউরোপে খ্রিস্টান ধর্ম উপেক্ষিত হয় এবং তা কেবল ব্যক্তিগত জীবনেই ব্যবহার করা হতে থাকে। বিবর্তনের এ ধারায় রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে ওঠে। 
ড. হাসানুজ্জামান চৌধুরী সেক্যুলারিজমকে প্রত্যাখ্যাত মতবাদ হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে তিনি কয়েকজন বিজ্ঞানীর গবেষণা ও তত্ত্ব উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বিজ্ঞান এরই মধ্যে সেক্যুলারিজমকে প্রত্যাখ্যান করেছে; বিগ ব্যাং তত্ত্ব, দেশ-কাল-পদার্থ-শক্তি তত্ত্ব, বিশ্বতাত্ত্বিক তত্ত্বের বিস্তৃত রূপসহ নানা তত্ত্ব আবিষ্কারের মাধ্যমে সর্বশক্তিমান আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ করেছে। বিজ্ঞানী পল ডেভিস তার 'সুপার ফোর্স' এবং 'কসমিক ব্লু প্রিন্ট', পদার্থবিদ হেনস্্্্্ তার 'প্যাগেলস্্্্্ ইদ কসমিক কোড' এবং 'পারফেক্ট সাইমেট্রি', স্যামুয়েল ভিসকাউন্ট তার 'বিলিফ অ্যান্ড অ্যাকশন' গেরাল্ড শ্রয়ডার তার 'দি হিডেন ফেস অব গড : সায়েন্স রিভিলস্্্্্ ইদ আলটিমেট ট্রুথ' বইয়ে আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ করেছেন এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।


সোর্সঃ View this link

 

লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): অমর্ত্য সেনের আরগুমেন্টেটিভ ইন্ডিয়ান : ইসলাম ত্যাগ করে দ্বীন-ই ইলাহি গ্রহণের আহ্বান : ধর্মনিরপে�� ;
বিষয়বস্তুর স্বত্বাধিকার ও সম্পূর্ণ দায় কেবলমাত্র প্রকাশকারীর...

http://www.somewhereinblog.net/blog/chikon/29357314


মাতৃত্ব ও নারীর শ্রম

E-mailPrintPDF

বিথী চৌধুরী
Email: ashantoashok@yahoo.com


সিমন দ্যা বোভোয়ার বলেছেন, ''প্রেগনেন্সি হল একটা নাটক এবং যে নাটকটি মঞ্চস্থ হয় নারীর শরীরে''।

আর এই নাটকের ফলাফল এত সুদূর প্রসারি যে তা নিয়ে আলোচনা করার অর্থই হল মানুষের সমাজবদ্ধতার, মানব সমাজের প্রথম শ্রম বিভাজন ও শ্রেনী বিভাজনের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা।মার্কস ও এঙ্গেলসের যৌথ রচনা 'জার্মান ভাবাদর্শ' গ্রন্থে বলা হয়েছে, '' সন্তান প্রজননকে ঘিরেই নারী ও পুরুষের মধ্যে প্রথম শ্রম বিভাজন ঘটে''। এবং সেই সাথে এঙ্গেলস তার 'পরিবার ব্যাক্তিগত মালিকানা ও রাষ্ট্রের উত্‌পত্তি' গ্রন্থে যোগ করেছেন, ''ইতিহাসের প্রথম শ্রেনী বিরোধ একগামী বিবাহের ফলে নারী ও পুরুষের মধ্যে উদ্ভুত বিরোধ, প্রথম শ্রেনী নিপীড়ন পুরুষ কর্তৃক নারী-নিপীড়ন''। একগামী বিবাহের উত্‌পত্তিও ঘটেছে নারী যাতে এক পুরুষের সাথে মিলিত হয়ে সন্তানের পিতৃপরিচয় নিশ্চিত করতে পারে সেই উদ্দেশ্যে।এবং সেই কারনে পুরুষের জন্যে একগামী বিবাহের প্রয়োজন হয় নি। ফলে পুরুষের জন্যে এক দিকে একগামী বিবাহ আবার সেই সাথে গণিকা গমনের রয়ে গেছে অবারিত সুযোগ। সন্তান জন্মদান ও প্রতিপালনে নারীর ভূমিকা মূখ্য হয়ে উঠেছে এবং সেই কারনে নারী-পুরুষের কর্ম ক্ষেত্র ভিন্ন হয়ে উঠেছে মূলত সন্তানকে দুগ্ধদানের প্রয়োজনে। মাতৃত্বের কারনেই নারীকে উত্‌খাত হতে হয়েছে তারই আবিষ্কৃত কৃষিক্ষেত্র থেকে। কেননা চাহিদা বৃদ্ধির কারনে প্রয়োজনীয় হয়ে উঠলেও সন্তানের কারনেই নিবিড় শ্রমদান তার জন্যে হয়ে উঠেছে কঠিন। এভাবেই নারী পুরুষের কর্মক্ষেত্র ক্রমাগত ভিন্ন হয়ে পড়েছে। নারীর জন্যে এমন সব কাজ নির্ধারিত হয়েছে যাতে সন্তান জন্মদান ও প্রতিপালনে কোন ব্যাঘাত না ঘটে। এবং ধীরে ধীরে মাতৃত্বই নারীর মূল কাজ ও পরিচয় হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। যেখানে পুরুষের জন্যে তৈরি হচ্ছিল এমন সব কর্মক্ষেত্র যা প্রতিনিয়ত তার মানসিকতাকে আরো সম্মৃদ্ধ করেছে। নারীর উপর পুরুষের আধিপত্যের এই সামাজিক বুনিয়াদী নিয়মকে আরো শক্তিশালী করে হাজির করেছে ধর্ম। ফলে তা আরো শক্তি ও স্পষ্টতা নিয়ে কেবল পুরুষ নয় বরং নারীর বিশ্বাসের ভিতকেও দখল করেছে। এর কারনে সভ্যতার অগ্রগতি যতই ঘটুক না কেন তার সাথে একই গতিতে নারী পুরুষের কর্মক্ষত্র বা দায়িত্বের বিষয়ে প্রচলিত বিশ্বাসের তারতম্য ঘটছে না। এমনকি যখন কোন পরিবারে নারী-ই প্রধান উপার্জনক্ষম সদস্য হয় তখনও সন্তান প্রতিপালন বা অন্যান্য গার্হস্থ্য দায়িত্ব মূলত নারীকেই পালন করতে হয়।


পুঁজিবাদ তার পুঁজির প্রয়োজনে মুনাফার স্বার্থেই নারীর ঘরের বাইরে, গার্হস্থ্য দায়িত্বের বাইরে আরো বৃহত্তর পরিমণ্ডলে, অর্থ্যাত্‌ উত্‌পাদনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে। এটি নারীর জন্যে অবশ্যই একটি বড় সুযোগ। কিন্তু সেই সাথে এটাকেও দৃষ্টির গোচরে রাখতে হবে যে, এই সুযোগ নারীর জন্যে তার পুরাতন সন্তান প্রতিপালন ও গার্হস্থ্য দ্বায়িত্বের দায়কে বিন্দু মাত্রই কমাতে সক্ষম হয়নি। বরং বাইরের পেশার কারনে নারীকে এখন পালন করে যেতে হচ্ছে একই সাথে দুটি দায়িত্ব- ঘরের বাইরের উত্‌পাদনের সাথে সম্পৃক্ত দায়িত্ব এবং ঘরে সন্তান ও তার সাথে সম্পৃক্ত দায়িত্ব। এই দ্বৈত দায়িত্ব নারীকে বরং আরো পর্যুদস্ত করে ফেলছে। ঘর ও বাহির দুই দিক সামলাতে গিয়ে নারী নিজের কাছ থেকে আরো অধিক পরিমানে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। অর্থ্যাত্‌, তার নিজের জন্যে এমন কোন অবসর মোটেই থাকছে না যা তার মানসিক সম্মৃদ্ধিতে এবং উত্‌পাদনে আরো যোগ্যতা ও দক্ষতার সাথে ভূমিকা পালনে সহায়ক হবে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই সে অনেক বেশি পরিমানে পরিশ্রম করা সত্বেও তার পুরুষ সহকর্মীর সাথে সমান যোগ্যতা প্রদর্শনে ব্যর্থ হতে বাধ্য হচ্ছে। যা 'নারী মূলত সন্তান প্রতিপালন ও গার্হস্থ্য দায়িত্ব পালনের জন্যেই উপযুক্ত' সামাজিক এই মতাদর্শকেই পরিপুষ্ট করছে।কিন্তু জনসংখ্যার অর্ধেক বা তারও বেশি সংখ্যক সদস্যকে উত্‌পাদনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত কর্মক্ষেত্র থেকে সরিয়ে সমাজের উত্‌পাদিকা শক্তির বিকাশ, উত্‌পাদন বৃদ্ধি এবং সংরক্ষণ সুষ্ঠু ভাবে কোনমতেই সম্ভব নয়। এটা করতে হলে অনুত্‌পাদনশীল শ্রমে নিযুক্ত বিশাল নারী শক্তিকে উত্‌পাদনের সাথে যেমন সরাসরি সম্পৃক্ত করতে হবে, তেমনি একই সাথে নারীর মাতৃত্বকেও সুরক্ষিত করতে হবে যাতে করে জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধিও নিশ্চিত থাকে। তা না হলে ভবিষ্যতেও নিরবচ্ছিন্ন শ্রমিকের প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হবে। আর এই কারনেই মাতৃত্বের প্রশ্নটিকে কোন বিচ্ছিন্ন বিষয় হিসেবে না দেখে বরং একে সমাজের মৌলিক সমস্যাগুলির সমাধানের সাথে সম্পৃক্ত ভাবেই দেখতে হবে। কেননা মাতৃত্ব কোন ব্যাক্তিগত বা পারিবারিক বিষয় নয়, বরং এটি একটি সামাজিক দায়িত্ব, যা নারী মানসিক ও শারিরীক অকল্পনীয় কষ্ট সহ্যের ভেতর দিয়ে পালন করে থাকে।এবং যেহেতু এটি একটি অত্যন্ত জরুরি সামাজিক দায়িত্ব কাজেই এই নতুন শ্রমের পরিচর্যাও কোন ব্যাক্তিগত ব্যাপার হতে পারে না। এটি হওয়া দরকার সামাজিক ও রাষ্ট্রিয় ভাবেই। আলেকজান্দ্রা কোলনতাই তার ''অর্থনৈতিক বিবর্তনে নারীর শ্রম'' প্রবন্ধে লিখেছেন, ''এই মাস গুলোতে অর্থ্যাত্‌ মাতৃত্বকালীন সময়ে নারী তাঁর নিজের নন, সমষ্টির সেবা করেন। তিনি তাঁর নিজের মাংস ও রক্ত থেকে শ্রমের এক নতুন একক উত্‌পাদন করেন, যে হবে শ্রমিক প্রজাতন্ত্রের এক নতুন সদস্য''। কাজেই এটা আমাদের স্পষ্ট করেই বুঝতে হবে যে, মাতৃত্বকালীন সময়ে এবং তার পরবর্তী সময়ের সন্তান প্রতিপালনের সময়টিতে নারী একক ভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হতে পারে না। যদিও সন্তানকে মায়ের দুধ পান করানোটাও নারীর একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এবং এটা পালন না করে নারী কিছুতেই বলতে পারে না যে তিনি নতুন শ্রম এককের প্রতি তাঁর দায়িত্ব সম্পূর্ণত পালন করেছেন।যে সমস্যার কারনে নারী ও পুরুষের মধ্যে আজকের এই শ্রম বিভাজনের উত্‌পত্তি আমরা ঘুরে ফিরে আবার সেই সমস্যাটির মুখোমুখি হয়েছি। এ বিষয়ে রাষ্ট্রের করণীয় কী!! এর অত্যন্ত সহজ ও কার্যকর সমাধান রয়েছে যা ইতোমধ্যে এক সময়ের রাশিয়ায় এবং বর্তমানে কিউবাতে অনুসরণ করা হচ্ছে। তা হল 'মাতৃত্বকালীন ছুটি' ততদিন করা যতদিন শিশুর মায়ের দুধের উপর নির্ভরশীল থাকবে। এতে উত্‌পাদনে কোন ক্ষতি তো হবেই না বরং সুস্থ ও নিরোগ শিশু ভবিষ্যত সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রকেই তাঁর শ্রম ও মেধা দিয়ে সম্মৃদ্ধ করবে। এই দায়িত্ব টুকু ছাড়া শিশু পরিচর্যার অন্যান্য দায়িত্ব সামষ্টিক ভাবেই পালন করা সম্ভব। এতে নারী নিজেও তার উত্‌পাদনের কাজে নিশ্চিত মনে যেতে পারেন এই ভেবে যে, একজন মায়ের দায়িত্বেই তিনি তাঁর শিশুকে রেখে এসেছেন, কোন ভাড়া করা মজুরি ভিত্তিক শ্রমিকের কাছে নয়। এটা ঠিক যে, মাতৃত্বের স্বতঃস্ফূর্ততা নারীকে তাঁর শিশুর কাছে থাকার ব্যাপারে অধিক উত্‌সাহিত করে। কিন্তু একজন মা যে নারী তাঁর স্বতঃস্ফূর্ততাকে সীমাবদ্ধ করে রাখাটাও কোন উপযুক্ত কাজ হতে পারে না। কেন এই স্বতঃস্ফূর্ততা কেবল নিজের সন্তানকে ভালবাসা ও যত্নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে! বরং তা সকল শিশুর মধ্যে বিতরণের মধ্য দিয়েই একজন নারী পরিপূর্ণ মাতৃত্বের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছাতে পারেন এবং একই সাথে উত্‌পাদনশীল কর্মযজ্ঞেও নিজেকে দক্ষতা ও যোগ্যতার সাথে সম্পৃক্ত রাখতে পারেন।


এ জাতীয় ধারনা প্রচলিত রয়েছে যে সন্তানের শারিরীক ও মানসিক বিকাশের পক্ষে মায়ের সান্নিধ্যে লালিত হওয়াই অধিক স্বাস্থ্যকর। অর্থ্যাত্‌ শিশুকে প্রতিনিয়ত কাছাকাছি রেখে প্রতিপালন করা মাতৃত্বের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে । কিন্তু এটা যে অনেক বড় রকম বিভ্রান্তি ছাড়া আর কিছুই নয় সেটা আমরা আমাদের চারপাশের দিকে লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারব। শিশুকে তাঁর বৃদ্ধি ও পরিপূর্ণ বিকাশের পক্ষে স্বাস্থ্যকর ও স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করাই মায়ের দায়িত্ব। তাকে সর্বক্ষন কাছাকাছি রাখা নয়। আমরা দেখি বুর্জোয়া নারী নিজে সার্বক্ষণিক শিশুর যত্ন না নিয়ে তাকে বরং শিক্ষার জন্যে বিদ্যালয়ের মত সামাজিক প্রতিষ্ঠান পাঠান এবং বাড়িতে যত্ন নেবার জন্যে মজুরি শ্রমিক নিয়োগ করেন, এবং শ্রমিক নারীর যে শিশু মায়ের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করেই দিন কাটায় তার চেয়ে বুর্জোয়া নারীর শিশুটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে অধিক স্বাস্থ্যবান ও সৃজনশীল হয়ে ওঠে। এটা প্রমান করে যে শিশুকে উপযুক্ত পরিবেশ দান করাই তার বৃদ্ধির জন্যে অধিক প্রয়োজন ; যার দায়িত্ব একক মায়ের নয় বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের।আর এটা যদি সঠিক ভাবে করা যায় তবেই নারীর পক্ষে উত্‌পাদনশীল কাজে তাঁর যোগ্যতা অনুযায়ী ভূমিকা রাখা যেমন সম্ভব হবে, তেমনি একই সাথে মাতৃত্বের দায়িত্ব যতটুকু তাঁর পালন করা একান্তই প্রয়োজন, যেমন জন্মদান ও দুগ্ধদান, সেটি যথাযথ ভাবে পালন সম্ভব হবে।

http://www.meghbarta.info/gender-and-society/7-gender-and-society/72-2012-01-25-08-19-00.html

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...