Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Memories of Another day

Memories of Another day
While my Parents Pulin babu and Basanti devi were living

Sunday, November 25, 2012

বিদেশী পূঁজি লগ্নির বিরোধিতা করব, অথচ উগ্রতম ধর্মান্ধ জাতীয়তাকে সযত্নে লালান করব, এই দ্বিচারিতা সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা৤

আমি প্রথম থেকে পরিষ্কার, বলে এসেছি দেশের যে কোনও প্রান্তে, এমনকি  গুজরাতেও, হিন্দিতে ও ইংরেঝিতে লিখেও আসছি নিরন্থর, কমপ্যূটারে বাংলা লেখা এখনও ফন্ট জনিত সমস্যায় আয়ত্বের বাইরে- হিন্দুত্ববাদ ও ধর্ম জাতীয়তা বাজার অর্থনীতির মূল ওপ্রধান শক্তি৤ ভারতে বৈশ্঵ায়নের পূর্বে ঘটিত হয়েছে সিখ নিধন উত্সব৤ কংগ্রেসকে সেদিন 1984 র নির্বাচনে সঙঘ পরিবার সর্ব শক্তি দিয়ে সাহায্য করেছিল৤ প্রত্যুত্তরে রাজীব গান্ধী খুলে দিয়েছিল রামমন্দিরের দ্বার৤ তারজন্যই বাবারি বিধ্বংস, হিন্দুত্রবে পুনরূত্থান৤ সেই শক্তপোক্ত ভিতেই বাজার অর্থনীতি, যাঁর সবচাইতে বড় ব্রান্ড দুত হলেন নরেন্দর্ মোদী, ভাবী প্রধানমন্ত্রীত্বের অন্যতম দাবিদার৤ বিদেশী পূঁজি লগ্নির বিরোধিতা করব, অথচ উগ্রতম ধর্মান্ধ জাতীয়তাকে সযত্নে লালান করব, এই দ্বিচারিতা সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা৤

পশ্চিমবাংলার জন্মবৃত্তান্ত ধর্মান্ধ জাতীয়তা উন্মাদের ইতিকথা৤ এ জমি প্রচন্ড উর্বর৤ তলে তলে আধিপাত্যবাদী মনুস্মৃতিবাহক বাঙালি সমাজ গুজরাতের তুলনায় অনেক বেশী সাম্প্রদায়িক৤ বিস্ফোরনের প্রতীক্ষায়৤ এখানে ভারতবর্ষের রাষ্ট্রপতি শুধুই ব্রাহ্মন সন্তান৤ততাঁর পুজা অর্চনা হিন্দুত্঵ , তার চাইতে বেশী করে ব্রাহ্মনত্ব আমাদের গৌরব৤

পরিবর্তনের সরকার কাজের সংস্কৃতি পাল্টানোর কথা বললেও বাস্তবে তা কতটা সত্যি কাজই প্রমান করে দেয়। আজ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সরকারি কর্মচারীদের পুজোর জন্য টানা দশ দিন ছুটি দেওয়া হল। ২০-২৯ অক্টোবর রাজ্য সরকারের সব অফিস বন্ধ থাকল। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলে পুজোর সময় টানার ছুটির রেওয়াজ তুলে দেওয়া হয়, যা জ্যোতি বসুর আমলেও চালু ছিল। ২০০১ সাল থেকে থেকে পুজোর টানা ছুটি তুলে দেন বুদ্ধবাবু।

গুজরাট নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী খুনী নরেন্দ্র মোদীর বিজয়, ভারতীয়দের অসাম্প্রদায়িকতা আর ধর্মনিরপেক্ষতার চরম পরাকাষ্ঠা, তারই পুনরাবৃত্তি আবার হতে চলেছে৤ গুজরাত প্রয়োগ অসম অবধি সন্ক্রমিত৤ এবার বাংলার পালা৤ উনাকে ২০০২ সালের মুসলিম গনহত্যার জন্য অভিযুক্ত করা হয় প্রধানত।দেশী-বিদেশি মানবাদিকার সংস্থা ও অনেকের মতে নির্বাচনে জেতার জন্য উগ্র,কট্টরপন্থী,ধর্মীয় মৌলবাদী হিন্দুদের দল বিজেপি,শিবসেনা যারা রামের জন্মভুমির কথা বলে বহু বছরের পুরনো বাবরী মসজিদ ভেংগেছিলো তাদের ব্যবহার করে হিন্দু-মুসলিম দাংগা সৃস্টি করে।প্রথমে হিন্দু তীর্থযাত্রিদের ট্রেনে অগ্নসংযোগ করে এর জন্য মুসলমানদের দায়ি করে দাংগার সুত্রপাত করে এবং উগ্র হিন্দুদের মুসলমানদের উপর হামলার ব্যপারে উত্তেজিত করে।ভারতের আদালত এরকম রাস্ট্রীয় সন্ত্রাসের জন্য গুজরাটের সরকার প্রধান নরেন্দ্র মোদিসহ অন্যদের নিন্দা করেছিলো কিন্তু ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সম্ববত উগ্র হিন্দুদের ভোট হারানোর ভয়ে তেমন বিচার করতে পারে নাই।

 ময়াবতী সাত মাস আগেও রাজনীতির মঞ্চে ছিলেন না। উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নিবার্চনে হারার পরে এই প্রথম তার সভা বিশাল জনসমাগম হল, যা তাকে আবার রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনলো। এফডিআই নিয়ে কথা বলার সময় মায়াবতী জানান, খুচরো বিক্রির ক্ষেত্রে বিদেশী বিনিয়োগের তার মত নেই। এরপরে তিনি ইঙ্গিত দেন আগামী লোকসভা নির্বাচন এগিয়ে আসতে পারে বলে। এফডিআই ইস্যুতে ইউপিএর জোট সঙ্গী তৃণমূল কংগ্রেস জোট থেকে বেরিয়ে আসেন। এরপর মায়াবতীর বিএসপি ও মুলায়ম সিংয়ের এসপি সমর্থনে ইউপিএ টিকে যায়। তবে বিরোধীরা সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনবে বলে জানিয়েছে। তৃণমূল তাদের সমর্থন দেবে বলে জানিয়েছে। এখন মায়াবতী কি করে সেটাই দেখার।নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানালেন না মায়াবতী। তিনি ইউপিএর জোটরে সঙ্গে আছেন কিনা তাও পরিষ্কার করলেন না। পারিপার্শ্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি তিনি আরও কিছুটা বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে চান। এদিন তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে চাপের মধ্যে রেখে কিছু শর্ত আরোপ করতে চাইলেন।

 বিজেপির ঘরেই বড় ধরনের দুর্নীতির হদিশ পাওয়া গেল। বিজেপির প্রেসিডেন্ট নীতিন গাড়করি কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী পবন কুমার বনসলকে একটি চিঠিতে মহারাষ্ট্রের বিদর্ভতে ঘোসিখুরদ জলসেচ প্রকল্পরে বাঁধ নির্মানের প্রজেক্টের টাকা কন্ট্রাকটারকে দিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। ৩০ জুলাই ২০১২ সালে এই চিঠি দেন নীতিন গাড়করি।
এই প্রজেক্টটি নিয়ে বিজেপি রাজ্য সরকারকে আক্রমন করে বলে জলসেচ নিয়ে যথেষ্ট কেলেঙ্কারি হচ্ছে। ১৯৮৩ সালে ৪৬১ কোটি টাকা প্রজেক্ট নিয়ে কাজ শুরু হয়। দুই দশক পরেও প্রজেক্টের কাজ শেষ হয়নি। খরচ বেড়ে দাড়িয়েছে ১৮,০০০ কোটি টাকা।
অনেক কমিটি এই প্রকল্পের কাজ যে ঠিক মত হচ্ছে না তা জানায়। এমনকি 'ভাদনের কমিটি' কন্টাকটারদের সোজাসুজি দোষারোপ করে যারা সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের আধিকারিকদের নির্দেশকে উপেক্ষা করেছে। তাই এই প্রজেক্টের কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
গড়করি দাবি করেন বিদর্ভের মানুষের জলের জন্যই তিনি লড়াই করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে সত্যি কি গড়করি বিদর্ভের ব্যাপারে উৎসায়ী না প্রাইভেট কনট্রাকদের ব্যাপারে আগ্রহী?

ভারতের ২০০২ সালের গুজরাট দাংগার একটা ছবি আন্তর্জাতিকভাবে খুব বিখ্যাত হয়েছিলো:দুই হাত এক করে এক মুসলিম যুবকের প্রান ভিক্ষা চাওয়ার ছবি।পরে অবশ্য নাকি উনি প্রানে বেচে গিয়েছিলেন।

 রাজ্যের উন্নয়নের জন্য কট্টর হিন্দুত্ববাদী নরেন্দ্র মোদীর গুজরাটকে মডেল করতে চান মমতা ব্যানার্জি। 

মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যের নতুন শাসকদলের বিরুদ্ধে মন্তব্য থাকায় একটি বইকে হুমকি দিয়ে কার্যত নিষিদ্ধ ঘোষণা করল রাজ্য প্রশাসন। সরকারি ভাবে নিষিদ্ধ না করা হলেও ওই বইটি আর বিক্রি না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রকাশককে। 

'মুসলমানদের করনীয়' নামের বইটি প্রকাশিত হয় চলতি বছরের জুন মাসে। লেখক রাজ্য পুলিসের এডিজি ডঃ নজরুল ইসলাম। মিত্র ও ঘোষ সংস্থার তরফে এই বইটি প্রকাশ করা হয়েছিল। সংস্থার কর্ণধার সবিতেন্দ্রনাথ রায়ের অভিযোগ বৃহস্পতিবার রাত ১১টা নাগাদ প্রকাশকের বাড়িতে এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ থেকে একটি ফোন আসে। তাঁর কাছে বইটির একটি কপি চাওয়া হয়। তিনি সেই মুহূর্তে দিতে না পারায় পরের দিন কলেজ স্ট্রিটে মিত্র ঘোষের দফতরে চড়াও হন এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের আধিকারিকরা। এমনকী তল্লাসি চালানো হয়েছে প্রকাশকের দফতর, বই ছাপাখানা ও বাঁধাইয়ের দফতরেও। তল্লাসির জেরে দু'ঘণ্টা বন্ধ থাকে কলেজ স্ট্রিটের দোকান। সবিতেন্দ্র বাবু আরও অভিযোগ করেন যে তাঁকে বইটি বিক্রি না করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পুলিস গ্রেফতার করারও হুমকি দিয়েছে বলে ওই প্রকাশক জানিয়েছেন।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে এই নিষেধাজ্ঞার কারণ নিয়ে। সাধারণত, ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত, ব্যক্তি বা সমাজ সম্পর্কে কুৎসা, জালিয়াতি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে আঘাত করে এমন মন্তব্য থাকলে সেই বইকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। এক্ষেত্রে এমন কোনও কারণ দর্শানো হয়নি। তবে কি শাসকদলের সমালোচনার জেরেই এই নির্দেশ? প্রশ্ন উঠেছে সেই নিয়ে সেই নিয়েও। 

তবে তাঁর বই নিয়ে এই বিতর্কের ঘটনায় কোনও মন্তব্য করতে চাননি বর্তমানে এডিজি ট্রেনিং পদে কর্মরত আইপিএস অফিসার ডঃ নজরুল ইসলাম।

শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে দল থেকে সাসপেন্ড হলেন বিজেপি সাংসদ রাম জেঠমালানি। তাঁকে বহিষ্কার করা হবে কিনা সে বিষয়ে আগামীকাল বিজেপি সংসদীয় দলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আজ বিজেপি সভাপতি নীতীন গড়করি, জেঠমালানিকে সাসপেন্ড করেন। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় গড়করিকে দলের সভাপতির পদ থেকে সরানোর জন্য প্রকাশ্যেই সওয়াল করছিলেন রাম জেঠমালানি। গড়করির মাথায় সঙ্ঘ পরিবারের হাত থাকায় তাঁর এই আচরণে যথেষ্ট অসন্তুষ্ট ছিলেন মোহন ভাগবতরা। লোকপাল বিল সংশোধনের জন্য গঠিত সিলেক্ট কমিটি, তিন সদস্যের প্যানেলের মাধ্যমে সিবিআইয়ের প্রধানকে নিয়োগের সুপারিশ করে। 

যদিও, তার আগেই কেন্দ্রীয় সরকার নতুন সিবিআই প্রধানের নাম ঠিক করে ফেলায় কংগ্রেসের সমালোচনায় সরব হয় বিজেপি। এ ক্ষেত্রেও প্রকাশ্যেই দলীয় অবস্থানের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেন রাম জেঠমালানি। বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব নিজেদের স্বার্থেই নতুন সিবিআই প্রধানের নিয়োগের বিরোধিতা করছেন বলে অভিযোগ করেন জেঠমালানি। এমনকি আজ তিনি বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস কারোর নেই। প্রতিদিনই এ  ভাবে দলের অস্বস্তি বাড়ানোয় প্রবীণ এই আইনজীবীকে অবশেষে ছেঁটে ফেলল বিজেপি। বিজেপির সিদ্ধান্তের পিছনে সঙ্ঘ পরিবারের হাত রয়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। জেঠমালানির মন্তব্য কংগ্রেসেরই সুবিধা করে দেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হল বলে জানিয়েছেন বিজেপি মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেন।      

শনিবার মিলন মেলা প্রাঙ্গণে হস্তশিল্প মেলার উদ্বোধন করতে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সর্বসমক্ষে নিজের এই ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেন। গুজরাট নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা, ''গুজরাটে কোনো প্রবলেম নেই। রাজনীতিও নেই। ওখানে কেউ কিছু করে না। কাজের সময় সবাই এক। ইলেকশনের সময় একটাই রাজনৈতিক দল। বাংলায় এইরকম আমরা চাই।''

গুজরাটে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে নির্বিচারে গণহত্যার নায়ক নরেন্দ্র মোদীর মডেলের মতো প্রশাসন চালানোর বেশ কিছু নমুনা ইতোমধ্যেই রেখেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। গুজরাট ধাঁচে এরাজ্যে প্রশাসনে তিনি যে শেষ কথা এমন নজির আছে বহু। এদিনই যেমন মিলন মেলায় বক্তব্য রাখার সময় হঠাৎই ক্ষুদ্র শিল্প দপ্তরের সচিব ও রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব পদমর্যাদার আধিকারিক ড. অনুপ চন্দকে বলে ওঠেন, ''অনুপবাবু তো ঘুমিয়েই পড়েছেন মনে হচ্ছে।'' প্রকাশ্যে শীর্ষস্থানীয় এক আমলাকে এহেন মন্তব্যের পর তিনি বলেন, '' অনুপবাবু ইজ মাই ট্রাস্টেড ম্যান। এসব নিয়ে আবার টুইস্ট করবেন না।''

গুজরাট মডেলেই এরাজ্যে ধর্মঘট নিষিদ্ধ করে আইন আনার হুমকি দিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। ধর্মঘটের আগে সরকারী কর্মচারীদের ভয় দেখানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী 'ব্রেক অব সার্ভিস' এর হুমকি দিয়েই থেমে থাকেননি। ধর্মঘটে যোগ দেওয়া সরকারী কর্মীদের বেতন কেটে নিয়েছেন। বিরোধী দলের সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করা থেকে মুখ্যমন্ত্রী জড়িয়ে কার্টুন পোস্ট করার দায়ে হাজতবাস পর্যন্ত করিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককে। এদিনও ফের একই সুরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ''ধর্মঘট, বন্‌ধ করে রাজ্যকে বন্ধ করতে দেবো না।'' তাঁর রাজত্বে ধর্মঘট রোখার জন্য কীভাবে 'টাফলি ট্যাকেল' করেছে রাজ্য সরকার তার উদাহরণ ছিল মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে। তিনি জানান, গত ২০০৯-১০সালে রাজ্যে ৬৮লক্ষ শ্রমদিবস নষ্ট হয়েছে। ২০১০-১১সালে নষ্ট হয়েছে ৬৫লক্ষ। গত আর্থিক বছরে (২০১১-১২) মাত্র ৬০হাজার শ্রম দিবস নষ্ট হয়। চলতি আর্থিক বছরে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৫হাজার শ্রম দিবস নষ্ট হয়েছে।'' এই তথ্য দিয়ে রাজ্যে ধর্মঘট রুখতে সরকারের 'টাফলি ট্যাকেল' কতটা কার্যকরী হয়েছে তা তুলে ধরেন। কিন্তু তাঁর আমলে রাজ্যে বন্ধ চা বাগানে কীভাবে অনাহারে বাগিচা শ্রমিকদের মৃত্যু মিছিল শুরু হয়েছে তা এড়িয়ে গেছেন। 

এদিনও রাজ্যের সমস্ত মহকুমাতে একটি করে হস্তশিল্পের হাট গড়ার কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন মমতা ব্যানার্জি। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়,''প্রতিটি মহকুমাতে একটি করে হাট তৈরি করবো। হস্তশিল্পীরা হাটে তাঁদের পণ্য বিক্রি করবে। বাজারটা আমরা করে দেবো।'' এমনকি শান্তিনিকেতনে 'বিশ্ব ক্ষুদ্র বিগ বাজার' গড়ে হস্তশিল্পীদের পণ্য বিক্রি করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। শান্তিনিকেতনের মতো রাজারহাটেও বিশ্ব ক্ষুদ্র বিগ বাজারের নবতম সংযোজন গড়া হবে মুখ্যমন্ত্রী জানান। 

শিল্পমেলার উদ্বোধন হবে। কর্মসংস্থানের ঘোষণা থাকবে না। এমনটা হওয়ার কথা নয়। এদিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন,'' এখনই ১লক্ষ ৫৪হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ১৫হাজার নতুন উদ্যোগ তৈরি আছে। এতে আরও ১লক্ষ ১২হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।'' এই তথ্য জানিয়ে মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ''নিজের হাতে এই দপ্তর নিয়েছি। ১কোটি মানুষকে এই কর্মসংস্থানে ঢোকাবার সুযোগ তৈরি করবো। ৪৭টি ক্লাস্টার তৈরি আছে। যে কোনো দিন যে কোনো জায়গায় উদ্বোধন হয়ে যাবে।''

বড় শিল্পে বিনিয়োগ প্রায় নেই। গত ১৮মাসে জমি সমস্যায় বড় শিল্পে বিনিয়োগ নেই। এদিন বড় শিল্পে বিনিয়োগের প্রসঙ্গ এড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ''যে শিল্প হৃদয়ের দরজা দিয়ে তৈরি হয় সেটাই হচ্ছে আসল শিল্প। বড় বড় ইনভেস্টমেন্ট হোক আমরা চাই। কিন্তু এটাই আসল জায়গা।''

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রেহাই নরেন্দ্র মোদীর

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে গুলবার্গ সোসাইটি মামলা থেকে রেহাই পেলেন নরেন্দ্র মোদী। তাঁর বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এসআইটিকে আমেদাবাদের নিম্ন আদালতে এই মামলার রিপোর্ট পেশ করতে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রাক্তন সাংসদ এহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া জাফরি মোদী-সহ ৬৩ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান। সেই আবেদনের উপর শুনানি শেষ।

ভিডিও: এ এন আই , কলকাতা, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১১



গুলবার্গ হত্যাকাণ্ডের জেরে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে হাতিয়ার করে রাজনৈতিক ফয়দা তুলতে আসরে নামলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

'গুজরাটি ভাবাবেগ'কে উস্কে দিয়ে 'সদ্ভাবনা মিশন' শুরুর কথা ঘোষণা করেছেন ২০১৪-র লোকসভা ভোটে বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদের অন্যতম দাবীদার। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে তিন দিনের অনশন দিয়ে তাঁর 'সদ্ভাবনা মিশন' শুরুর কথা জানিয়েছেন বিজেপি-র 'আইকন ম্যান'।

১৯৯২ সালে গুজরাটে গণহত্যায় দু হাজারের বেশি মানুষ খুন হয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। হত্যালীলা বন্ধে মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিষ্ক্রিয় ছিলেন, এমনকী সরকারি মদতেই মুসলিমদের খুন করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ ওঠে।

গুলবার্গ সোসাইটিতে হামলায় প্রাক্তণ কংগ্রেস সাংসদ এহেসান জাফরি-সহ ৬৯ জন নিহত হন। এহসানের স্ত্রী জাকিয়া জাফরি সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন। সোমবার ওই মামলার রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট।

সুপ্রিম কোর্টের রায় তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে বলে দাবি করে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী সাধারণ মানুষকে উদ্দেশ্য করে লেখা খোলা চিঠিতে 'সদ্ভাবনা মিশন' শুরুর কথা ঘোষণা করেছেন।


তার আগে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লোকায়ুক্ত নিয়োগ বিতর্ক এবং সাজানো পুলিশি সংঘর্ষের মামলায় বিচার বিভাগের নির্দেশে জোরদার ধাক্কা খেয়েছিলেন এবার গোধরা পরবর্তী দাঙ্গার তদন্তে নিয়োজিত নানাবতী কমিশন-এ হাজিরার প্রশ্নে নরেন্দ্র ভাই দামোদরদাস মোদী, হাইকোর্টের রায় কিছুটা স্বস্তি দিল তাকে। সম্প্রতি জন সংঘর্ষ মঞ্চ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যে ২০০২-এর গুজরাট দাঙ্গাপীড়িত কয়েকটি পরিবার নানাবতী কমিশনের কাছে মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের ৩ আধিকারিককে জেরার আবেদন জানায়। কিন্তু  বিচারপতি আকিল কুরেশি এবং বিচারপতি সোনিয়া গোকানিকে নিয়ে গঠিত গুজরাট হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।

দুই, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জিটি নানাবতী এবং অক্ষয় মেহতাকে নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিশন মুখ্যমন্ত্রী মোদীসহ গুজরাট সরকারের ৪ কর্তাকে জেরার জন্য সমন পাঠানোর আর্জি খারিজ করার পর হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল জন সংঘর্ষ মঞ্চ। মঞ্চের আইনজীবী মুকুল সিনহার যুক্তি, ২০০২ দাঙ্গায় প্রশাসনিক নিশ্চেষ্টতা সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী মোদীর ভূমিকা নানাবতী কমিশনের খতিয়ে দেখা দরকার। এজন্য কমিশনের উচিত মোদীকে জেরার জন্য তলব করা। অন্যদিকে রাজ্য সরকারের যুক্তি ছিল কমিশন আইন অনুসারে তৃতীয় পক্ষের কোনো একজন ব্যক্তিকে জেরা করার আর্জি জানানোর সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে কমিশনই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাই পুরো ব্যাপারটি কমিশনের হাতে ছেড়ে দেয়া প্রয়োজন।

তা ছাড়া, ২০০৫-এ রাজ্য সরকারের তরফে নানাবতী কমিশনকে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা খতিয়ে দেখার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল বলে মঞ্চের তরফে দাবি করা হলেও এদিন দুই বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, কমিশনের গঠনতন্ত্র এবং ক্ষমতার পরিধি অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যদের জেরার জন্য তলব করা সম্ভবপর নয়। প্রসঙ্গত, গোধরা পরবর্তী দাঙ্গার বিষয়ে তথ্য জানার জন্য ২০১০ সালের মার্চ মাসে দু'দফায় মুখ্যমন্ত্রী মোদীকে জেরা করেছিল সুপ্রিমকোর্ট নিযুক্ত বিশেষ তদন্তকারী দল।

গত ২৫ জানুয়ারি বিচারপতি আফতাব আলমের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিমকোর্টের বেঞ্চ ২০০৩ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে নরেন্দ্র মোদীর মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময়ের ভুয়ো পুলিশি সংঘর্ষের ২০টি মামলার নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল।

"টাইম" জার্নাল নিজেদের পাঠকদের মধ্যে এক ইন্টারনেট মত গ্রহণের ব্যবস্থা করেছে, যেখানে চেষ্টা করা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ জন ব্যক্তি নির্ণয় করার. যদিও এই সব প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকা জার্নালের সম্পাদক বর্গ ঠিক করবেন ও প্রকাশ করা হবে ১৭ই এপ্রিল, তাও প্রাথমিক ভাবে ভোট দেওয়ার ফলাফল খুবই অবাক করার মতো হয়েছে. আর এই রকমের একটি প্রধান আচমকা ব্যাপার পক্ষ ও বিপক্ষের ভোটে আধুনিক ভারতের এক সবচেয়ে ব্যতিক্রমী রাজনীতিবিদ নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচন.

    এই ইন্টারনেট – মত গ্রহণের সামগ্রিক ফলকে মনে করা যেতে পারে এক ধরনের বিরুদ্ধ বাদী প্রতিক্রিয়া. সব কিছুতেই বিরোধ দেখা যাচ্ছে. সেটা যেমন ইন্টারনেটে আর্বিভূত লোকদের নেতৃত্বে আসার ব্যাপারে: প্রথম স্থানে হ্যাকার দল "অ্যানোনিমাস", দ্বিতীয় স্থানে – রেড্ডিট ইন্টারনেট সাইটের জেনারেল ডিরেক্টর, যিনি ইন্টারনেটে তথ্য বিনিময়ের বিষয়ে ও "পাইরেসী বিরোধী" আইনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশী সক্রিয় এরিক মার্টিন.

    আর বিশ্বের নেতৃস্থানীয় রাষ্ট্র গুলির নেতারা খুবই দুর্বল ফল করেছেন: ভ্লাদিমির পুতিন একাদশতম স্থানে, বারাক ওবামা – একবিংশতম, তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রেঝেপ তৈপ এর্দোগান – সাতাশতম ইত্যাদি. অ্যাঞ্জেলা মেরকেল, ডেভিড ক্যামেরন, বেনিয়ামিন নাথানিয়াখু, নিকোল্যা সারকোজি এমনকি প্রথম পঞ্চাশের মধ্যে জায়গাই পান নি. আর এটাও লক্ষ্যণীয় হয়েছে যে, বিরোধী পক্ষের রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতায় থাকা নেতাদের চেয়ে বেশী ভাল ফল করেছেন.

    ভারতের ক্ষেত্রে খুবই স্পষ্ট ভাবে এই লক্ষণ দেখা গিয়েছে, এই কথা বলেছেন রাশিয়ার স্ট্র্যাটেজিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ বরিস ভলখোনস্কি:

"ভারতীয় রাজনীতিবিদদের মধ্যে এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন গুজরাট ও বিহার রাজ্যের মুখ্য মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও নিতীশ কুমার, আর তাদের সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতা অণ্ণা হাজারে. প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতা সোনিয়া গান্ধী, আর এই সামান্য কয়েক দিন আগেও প্রধানমন্ত্রী পদে এক নম্বর প্রার্থী হতে পারে এমন রাহুল গান্ধীকেও এই তালিকায় দেখতে পাওয়া যায় নি, যাঁদের জনপ্রিয়তা জার্নালের মতে এখন তালিকার শতকের চেয়ে অনেক পিছিয়ে".

ভারত ও তার বাইরে তালিকার তৃতীয় স্থানে থাকা নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে অনেক ভোট পড়া খুবই সমালোচনার শিকার হয়েছিল. অনেক ক্ষেত্রেই এই ধরনের ফলাফলে সুযোগ করে দিয়েছে টাইম জার্নাল, যারা মার্চ মাসের একটি সংখ্যা একেবারে প্রথম পাতায় নরেন্দ্র মোদীর ছবি ছেপে তার সম্বন্ধে এক বিরাট প্রবন্ধ প্রকাশ করে তৈরী করে দিয়েছিল. মোদীর জন্য ভোট নেওয়ার শেষ দিনের আগেও অনেক পক্ষে ভোট ছিল, কিন্তু তার বিরোধীরা নিজেদের শক্তি সক্রিয় করতে সমর্থ হয়েছিল ও ফলে তার বিরুদ্ধে ভোটের সংখ্যা পক্ষের ভোটকে ছাপিয়ে গিয়েছিল. ভোট গ্রহণে এই ব্যক্তির চরিত্রের সমস্ত পারস্পরিক বিরুদ্ধ বিষয় প্রকট হয়েছে, এই কথা মনে করে বরিস ভলখোনস্কি বলেছেন:

"ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ২০১১- ২০১২ সালের আঞ্চলিক নির্বাচনগুলিতে খুবই বাজ ফল করার পরে, নরেন্দ্র মোদী, সেই লোক, যাকে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরে একজন সবচেয়ে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী পদ প্রার্থী বলে মনে করা হয়েছে, ভারতীয় জনতা পার্টির এক প্রভাবশালী নেতা বলে. এই সম্ভাবনা এক দল লোকের কাছে উত্সাহের কারণ হয়েছে, অন্যেরা তাতে ভয় পেয়েছেন.

নরেন্দ্র মোদীর পক্ষ নিয়ে কথা বলা হচ্ছে তার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শাসন কালে ভারতের এক অন্যতম পিছিয়ে পড়া রাজ্য গুজরাট অর্থনৈতিক ভাবে সবল হতে পেরেছে বলে. কিন্তু তার বিরুদ্ধে যুক্তিও কিছু কম নেই. ২০০২ সালে মুসলমান জনগনের উপরে বীভত্স হত্যা ও ধ্বংস লীলা করানোর পিছনে তার নামও জড়িত হয়ে রয়েছে. তখ এক চরমপন্থী মুসলমান দল তীর্থ থেকে ফেরা এক ট্রেন হিন্দু যাত্রী সহ ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল, তারপরে সারা রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছিল হানাহানি. ফলে নিহত ঘোষণা করা হয়েছে হাজার জনেরও বেশী আর এখনও ২০০ জনকে নিখোঁজ বলে মনে করা হয়েছে. মোদী এই সব রায়টে নিজের যোগদানের কথা অস্বীকার করেন, কিন্তু তার উগ্র পন্থী হিন্দুত্ব ও ভাষণের কথা সকলেই জানে. আর এটাই ভয়ের কারণ হয়েছে, যে এমনিতেই ভারতের বহু কষ্টে ধরে রাখা ধর্ম নিরপেক্ষ চরিত্র ও শান্তি ভঙ্গ হতে পারে, যদি মোদী কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতায় আসে".

মোদীর সরকারে আসার সম্ভাবনা সেই সমস্ত সমঝোতাকেও প্রশ্নের সামনে উপস্থিত করবে, যা এই রবিবারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আসিফ আলি জারদারির মধ্যে করা হয়েছে. পাকিস্তান বিরোধী কথাবার্তা মোদীর প্রকাশ্য ভাষণে খুবই বেশী, যা দুই দেশের মধ্যে নতুন ধরনের বিরোধের উত্পত্তি করতে পারে. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার একাধিকবার মোদীকে তাদের দেশে যাওয়ার ভিসা দেন নি, এই ধরনের রাগ চট করে ভুলে যাওয়া হয় না.

সুতরাং "টাইম" জার্নালে নরেন্দ্র মোদীর প্রভাব শালীদের তালিকায় জায়গা হওয়া মোটেও কোনও আংশিক ব্যাপার নয়. আর তা শুধু একজন রাজনীতিবিদেরই ভাগ্য নির্ধারক হবে না, তার একটা সর্ব ভারতীয়, আঞ্চলিক এমনকি বিশ্ব মানের সমস্যাকেও ছুঁয়ে যায়.

'মুসলমানদের করণীয়' প্রসঙ্গেঃ পর্ব ১

মহসিনা খাতুন এর ছবি
লেখার বিষয়: 

মুসলমানদের করণীয়, নজরুল ইসলামআমার এক বন্ধু আই পি এস নজরুল ইসলামের মহা ফ্যান। ভূমিপুত্র বকুল সহ লেখকের সব বইগুলি তার বই-এর সেলফে শোভা পায়। এতটা আদিখ্যেতা আমার পছন্দ নয় কোনদিনই। একদিন তো ভাল রকম তর্ক হয়ে গিয়েছিল। ওকে বলেছিলাম, "ধর্ম নিয়ে আমি পড়ি। এই কথাগুলোর সূক্ষ্মতায় তুই পৌঁছতে পারছিস না বলে তোর এত পছন্দ ভদ্রলোক কে। আমি যে দুই একটা লেখা পড়েছি তাতে আমার কিন্তু আহা মরি কিছু লাগে নি। যে কথা গুলো তোর ধর্ম নিরপেক্ষ বলে মনে হচ্ছেসেগুলো আসলে সাম্প্রদায়িকতার প্রকাশতুই ধরতেই পারছিস না"

ও তো কিছুতেই মানবে না। আমাকে বলল, "তুই বিরাট ধর্মজ্ঞ তাই সব কথা তেই সাম্প্রদায়িকতা খুঁজিস" আমি তখন ক্ষান্তি দিয়েছিলাম। আর ওই প্রসঙ্গ তুলি নি কখনো। মনে হয়েছিল বন্ধুত্ব চটে যেতে পারে। আর সেটা আমার কারণে হোক আমি চাই নি।

অনেকদিন ওর সাথে তেমন কথা হয় না। ও এখন সরকারী কর্মচারী। ব্যস্ত মানুষ। গত ১৫ ই সেপ্টেম্বর আমার স্কুটিটা নিয়ে বাজার থেকে ফিরছি, আচমকা দেখা তার সাথে। ও বলল, ও নাকি আমাদের বাড়িই গিয়েছিল। আমি বললাম, "আমি তো ছিলাম না। আয় বাড়ি একসাথে বসে আড্ডা মারা যাবে খানিকক্ষণ" ও বলল, "আমার কিছু কাজ আছেএকটা বই দিয়ে এলাম। পরে জানাস কেমন লাগলো। পরে তো বই টা নিতে আসবোসেদিন কথা হবেআড্ডা দেওয়া যাবে" বলে একটা অদ্ভুত হাসি হাসল।

ওই অদ্ভুত হাসি মাখা এক্সপ্রেশন টার পাঠোদ্ধার আমার পক্ষে সম্ভব হল না। আমি বললাম, "আসিস একদিন সময় করে। অনেক গল্প করবআম্মি একদিন তোর খবর নিচ্ছিল। তোর নাম্বারটা দে তো!" ও নম্বর টা দিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেল।

আমি যথা রীতি স্কুটি স্টার্ট দিলাম। বাড়িতে ফিরে দেখি আব্বু তো আহ্লাদে আটখানা। সালাম দিলাম না, তবু এতটুকু বিরক্ত হল না। বরং বলল, তোর বন্ধু একটা চমৎকার বই দিয়ে গেল তোকে পড়তে। এই বইটা নিয়ে তো দারুণ হইচই এখন। এতদিনে নজরুল ইসলাম একটা ভাল বই লিখেছে। বইটা ব্যান করবে শুনলাম। তোরা কথায় পেলি? আব্বুর কাছে একটু ভাব নিয়ে বললাম। এসবই তো আমাদের কাজ। বলে টলে বইটা নিয়ে উপরে চলে এলাম। আমার রুমে।

ভাল করে খাটে বসলাম বই টা নিয়ে। লাল সুন্দর মলাটের ঝকঝকে বই একটা। পাতা খুলে মন দিয়ে পড়তে বসলাম। কয়েক পাতা পড়েই বন্ধু কে ফোন! একখানা মার্জিত গালি দিয়ে বললাম, কেন দিলি বইটা পড়তে। যত পরছি তত মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। ও বলল তোর কথাই মনে হল বইটা পড়ে। মনে হল তুই ভাল রিভিউ করতে পারবি বইটার। প্লিজ করে দে।

এতক্ষণে বুঝতে পারলাম ওই এক্সপ্রেশন টার অর্থ কি! তাই একবার পড়ে নিয়ে বইটার রিভিউ করতে শুরু করলাম। সেই রিভিউ টাই –তোমাদের সাথে শেয়ার করবো ক্রমশ...

বইটি মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত। নাম "মুসলমানদের করণীয়" লাল প্রচ্ছদে মোড়া। পাতার মান সুন্দর ঝকঝকে। মুদ্রণেও মিত্র ও ঘোষ এর সুনাম এর বিন্দু মাত্রও ক্ষুণ্ণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ছোট বই। একশ দুই পাতার।

প্রথমে খুলেই চোখে পড়লো যে লেখক পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে এই বই টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে – "রাজ্যে মুসলমানদের অবস্থা খুবই খারাপ আর সকলের থেকে তারা শিক্ষায় পিছিয়ে। সরকারী চাকুরীতে তাদের উপস্থিতি প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। কিন্তু এখনও এরকমই চলতে থাকবে?

মুসলমানদের অবস্থা বদলের জন্য করণীয় কি? স্বল্প পরিসরে এই গ্রন্থে সেটাই বলার চেষ্টা করা হয়েছে।" পড়ে মনে হল খানিকটা জ্যোতিষ বিদ্যা ধরনের। মুসলমানদের এই অবস্থা হওয়ার কারণ কি? কথায় তাঁদের ত্রুটি, এসব খুঁজে দেখার কিম্বা দেখানোর দায়িত্ব লেখকের নেই। লেখক খালি সমাধানের পথ বলে দেবেন। যেমন টি জ্যোতিষে করা হয় আর কি!

এর পর উৎসর্গের পাতা। বই টি উৎসর্গ করা হয়েছে "ভূমিপুত্রদের" এই শব্দটি লেখক আগেও বহু জায়গায় ব্যবহার করেছেন। কিন্তু এখানে তিনি তার অর্থ তিনি পরিষ্কার করেছেন। বইটির বিষয়বস্তু শুরু করার আগেই লেখক আমাদের কতকগুলি পরিভাষার অর্থ পাঠকের কাছে পরিষ্কার করে দিতে চান। এখানে প্রথমেই বলা হয়েছে 'মূল নিবাসী/ভূমিপুত্র/অধিজন' বলতে তিনি বোঝেন শূদ্র ও শূদ্র থেকে ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের। বাদ বাকি ব্রাহ্মণ কায়স্থ বৈদ্যরা এদেশের ভূমিপুত্র নন!

কিন্তু তার এরকম মনে করার কারণ কি? কারণ হল তার আর্য আক্রমণ তত্ত্বে বিশ্বাস। তিনি জানেন না যে, আর্য আক্রমণ তত্ত্ব আসলে একটি ভাষা-তাত্ত্বিক তত্ত্ব, যা তখন প্রায় বিনা বিচারে এবং খানিকটা উদ্দেশ্য-প্রণোদিতভাবে প্রতিষ্ঠিত ও প্রচারিত করা হয়েছিল। "...আর্যরা ছিলেন পশুপালক যাযাবর। কৃষি বা নাগরিক সভ্যতার শুরু তাঁদের মধ্যে তখনও হয়নি। তাঁদের শক্তির দিক ছিল শক্তিশালী ভাষাবাহনরূপে দ্রুতগামী ঘরা, আর লোহার যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবহার। তার বহু আগেই এদেশের বাসিন্দা রা কৃষিকাজ শিখে শিল্প গড়ে গ্রামীণ এমনকি নাগরিক সভ্যতার পত্তন করেছেন পাণ্ডুরাজার ঢিবিহরপ্পামহেঞ্জদরো তার প্রমাণ। কিন্তু ঘোড়া ও লোহার ব্যবহার তাঁদের জানা ছিলনা বলেই মনে হয়। ফলে সভ্যতায় এগিয়ে থাকলেও যুদ্ধে যাযাবর আর্যদের সাথে এঁটে উঠতে পারেন নি। টাই আর্যরা তাঁদের মেরে কেটেজয় করেতাঁদের উপর নির্মম যন্ত্র বর্ণ-ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের জীবনের সবকিছু থেকে বঞ্চিত করে পিছিয়ে রেখেছেন। আমরা শূদ্ররা বা শূদ্র দের থেকে ধর্মান্তরিত রা সেই আদি বাসিন্দা দের বংশধর" এদেরকেই তিনি মূল নিবাসী, ভূমিপুত্র বা অধিজন বলে চিহ্নিত করেছেন।

কিন্তু উক্ত অংশের প্রায় প্রতিটি বাক্যের বিরুদ্ধে নৃতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া যায় বর্তমানে। তাছাড়া লেখক আরও একটি বিষয় খতিয়ে দেখেন নি। তার সব কথা সত্যি বলে মেনে নিলেও ব্রাহ্মণ দের সাথে বৈদ্য ও কায়স্থদের এক শ্রেণীতে কেন ফেলা হল? তাঁদের কেন ভূমিপুত্র বলে স্বীকার করা হল না? পৃথিবীতে কোন তত্ত্ব তো কোনদিন দাবী করে নি যে কায়স্থ ও বৈদ্যরা আসলে এদেশের ভূমিপুত্র নয়। অন্তত আমার জানা নেই। এরপর তিনি 'ভদ্রলোক-ছোটলোক' এর অর্থ পরিষ্কার করতে গিয়ে বলেছেন ব্রাহ্মণ-কায়স্থ-বৈদ্যরা নিজেদের সামাজিক অবস্থানকে অন্যদের থেকে উঁচু করে দেখাতে নিজেদের কে ভদ্রলোক আর শূদ্র ও শূদ্র থেকে ধর্মান্তরিতদের অবজ্ঞা করে ছোটলোক বলে থাকেন। কিন্তু নজরুল ইসলাম সাহেব এটা দেখেন নি যে, সেই 'ছোটলোক'রাও আর নিম্ন আর্থ-সামাজিক স্তরের মানুষদের ছোটলোক বলে থাকেন। আমার বাড়িতে থাকা রান্নার মেয়ে নাসিমাও জোলাদের ছোটলোক বলে থাকে অতি অনায়াসেই। সেক্ষেত্রে নজরুল সাহেবের কাছে উত্তর আছে কিনা আমার জানা নেই। (নাসিমা তো আর নজরুল সাহেবের বই পরেন নি! জানবেন কিভাবে যে কারা কাদের ছোটলোক বলে আর তাঁর ই বাকি বলা উচিত! হে হে!)

আলোচনায় এর পরের বিষয়বস্তু হল 'যেসব পরিভাষার ব্যাপারে সতর্ক থাকার প্রয়োজন আছে' এইখানে যেসব শব্দের অর্থ সম্পর্কে উনি আমাদের সতর্ক করতে চান, সেগুলি বহু-পরিচিত। বিদ্যাসাগর সাহিত্য-সম্রাট পণ্ডিত মহাত্মা ইত্যাদি। 'বিদ্যাসাগর' পরিভাষার ব্যাপারে তাঁর মত হল, তিনি মনে করেন না যে ব্রাহ্মণ ঈশ্বরচন্দ্রের বিদ্যাসাগর পদবী উচ্চবর্ণের হিন্দুর চক্রান্তের ফল স্বরূপ প্রদত্ত। তাঁর এই উপাধি-র যোগ্যতা নেই। তাঁর বিধবা বিবাহ প্রচলন শুধু উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের জন্য ছিল। শূদ্র ও মুসলিমদের এতে কোন উপকার হয় নি। কিন্তু নজরুল ইসলামকে আমার বিনীত জিজ্ঞাসা এই যে, আজকের ভারতের বিধবা বিবাহের আইন তো সকলের জন্য, পিছনে কার অবদান আছে বলে তিনি মনে করেন? ঈশ্বরচন্দ্রের এই অবদান তিনি অস্বীকার করেছেন কিভাবে?

তিনি আরও বলেছেন, সংস্কৃত শিক্ষা তিনি যে সমস্ত অব্রাহ্মণ দের জন্য উন্মুক্ত করেছিলেন, তা নয়। তিনি বৈদ্য ও কায়স্থদের জন্য উন্মুক্ত করেছিলেন, শূদ্রদের জন্য নয়। আমার তাঁর কাছে দ্বিতীয় জিজ্ঞাস্য এই যে, সেদিন তিনি সেই অচলায়তন ভেঙ্গেছিলেন, একথা কেউ অস্বীকার করতে পারে কি যে তার জন্যই তো আজ শূদ্র এমনকি মুসলিমরাও সংস্কৃতে এম,এ, করতে পারছে; বেদ নিয়ে গবেষণা করতে পারছে। বিদ্যাসাগরকে অশ্রদ্ধা করার পেছনে যে দুটি যুক্তি দেখিয়েছেন জনাব নজরুল সাহেব, তাতে তো আমি কুযুক্তি খুঁজে পাচ্ছি।

তাছাড়া তাঁর বিদ্যাসাগর উপাধি যে ব্রাহ্মণদের প্রতারণা, তাও মানতে পারলাম না। কেননা, সেই ব্রাহ্মণরাই বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ঘোর বিরোধী ছিলেন। এরপর 'সাহিত্য-সম্রাট' শব্দটিকেও তিনি ভয়ঙ্কর প্রতারণামূলক মনে করেছেন, কেননা বঙ্কিম-চন্দ্র মুসলমান বিদ্বেষী ছিলেন। তিনি হিন্দুদের একটা পৃথক জাতি বলে মনে করেছিলেন। এই কারণেই উচ্চবর্ণের হিন্দুরা অব্রাহ্মণ রবীন্দ্রনাথ কে নয়, বঙ্কিম চন্দ্রকে সাহিত্য সম্রাট করেছিল। এখানে মনে হচ্ছে, রবীন্দ্রনাথকে করলে তোমার প্রশ্ন, বিভিন্ন দার্শনিক মতাদর্শীদের মধ্যে হিন্দু চেতনা তো ছিলই না। মুসলিমরাই তো হিন্দু বলেন এদের এবং এদের পৃথক জাতিসত্তা তৈরি করেন। তাছাড়া হিন্দুদের মুসলিম বিদ্বেষ কিন্তু চিরকালের জন্য নয়। এর কারণ কিন্তু হিন্দুরা নয় মুসলিমরাই। প্রাচীন দক্ষিণ ভারত ও উত্তর পশ্চিম ভারতে হিন্দু রাজারা মুসলিমদের আশ্রয়, বাণিজ্য করতে ও পারিবারিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধা দেন নি। কিন্তু মুসলিমদের হিন্দু বিদ্বেষ বরাবরের। তাঁদের ধর্ম প্রসূত। কাজেই মুসলিমরাই তাঁদের বাধ্য করে তোলে এই বিরোধিতায়। তাও কয়েক শতাব্দী পরে তারা বিরোধিতা করেছিল, সহ্যের সীমা অতিক্রম হওয়ার পর।

নজরুল সাহেব আর একটি অভিযোগ করেছেন, তা হল আনন্দ মঠে তিনি তো শাসন ক্ষমতা মুসলিমদের হাত থেকে নিয়ে ব্রিটিশদের হাতে দেওয়ার পক্ষে ছিলেন। একথা যদিও সত্যি নয়, তবু যদি এক মুহূর্তের জন্য ধরেই নেওয়া যায় যে তিনি সেইটা চেয়েছিলেন, তাও তাঁর সমর্থনে একটা কথা বলতেই হয় যে তাঁর সময়ে ইংরেজদের অত্যাচার তেমন ছিল না। তাছাড়া সমস্ত হিন্দুরা এত বছরের মুসলিম শাসনের পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল যে একমাত্র ইংরেজরাই তাঁদের রক্ষক হয়ে উঠতে পারে। একথা সত্যি যে ব্রিটিশ খ্রিষ্টান রা কখনোই হিন্দু বাড়ির নারী ও তাঁদের কুলদেবতার প্রতি অসম্মান করে নি, যা এতদিন মুসলিম শাসনে হত। তাঁদের মুল উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক। তাই হিন্দুরা স্বাভাবিকভাবেই মুসলিমদের থেকে ইংরেজদেরকে শাসক হিসাবে পছন্দ করেছিল। তাছাড়া, বঙ্কিম চন্দ্রকে বলা হয় হিন্দু পুনর্জাগরনের দার্শনিক। তিনি বুঝেছিলেন এত বছরের শাসনেও মুঘলরা সারা ভারতকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে পারে নি। ফলে হিন্দু ঐক্যও স্থাপিত হয় নি। কিন্তু ইংরেজরা সেটা মাত্র কয়েক বছরেই করে দেখিয়েছেন। একমাত্র এদের ছত্রছায়াতেই হিন্দু ঐক্য ও পুনর্জাগরন সম্ভব। মুসলিম সমাজের ক্ষেত্রে এমনটাই চেয়েছিলেন স্যর সৈয়দ আহমেদ। তাই তিনিও দ্বিজাতি তত্ত্ব প্রচার করেছিলেন। যদিও এই পার্থক্য করা খুব একটা কল্যাণকর পন্থা নয়, তবু বলা যায় যে সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্কিম চন্দ্র অযৌক্তিক কিছু করেন নি।

এরপর জনাব নজরুল ইসলাম 'পণ্ডিত' শব্দ টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁর বক্তব্য হল, পণ্ডিত পদবীটি কেন বংশ গত হবে? কেন জওহরলাল কে পণ্ডিত বলা হল, একই যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কেন বাবাসাহেব আম্বেদকরকে পণ্ডিত বলা হল না? (এখানে লক্ষণীয়: আম্বেদকরের লেখা সম্পর্কে কি তিনি অবহিত নন? নয়তো বঙ্কিম কে সাম্প্রদায়িক বললেও আম্বেদকর কে বলেন নি কেন? আম্বেদকার যেভাবে ইসলামের তীব্র সমালোচনা করেছেন, বঙ্কিম চন্দ্র তো তাঁর ধারে-পাশেও নেই। আম্বেদকরের মত স্পষ্ট ভাষায় তিনি কখনই ইসলামের সমালোচনা করেন নি। না কি লেখক উদ্দেশ্য-প্রণোদিতভাবেই বিষয়টি আড়াল করে গেছেন, নয়তো তাঁর হিন্দুদের বিরুদ্ধে 'শূদ্র মুসলিম ঐক্য তত্ত্ব' দেওয়া সম্ভব হত না।) তাঁর বক্তব্য হল পণ্ডিত পদবী বংশ গত ও ধর্মগত কেন হবে? নজরুল সাহেব তো এটা জানেন যে, 'রায়চৌধুরি' হোক বা 'চাকলাদার' কিম্বা 'শেখ'... এইসব পদবী প্রথমে ধর্ম বা বংশগত না থাকলেও পরে হয়ে গেছে। কিন্তু তাতে তো কারো কিছু যায় আসে নি।

এই প্রশ্ন করতে গিয়ে তিনি বলেছেন "ওস্তাদ" আলাউদ্দিন খাঁ'র ছাত্র হলেও রবিশঙ্কর "পণ্ডিত" হবেন কেন? নজরুল সাহেবের এই বক্তব্য মেনে নিলেও বলা যায় যে পণ্ডিত বা ওস্তাদের মধ্যে সম্মানের পার্থক্য আছে কি? তবে কি নজরুল সাহেব মেনে নিচ্ছেন যে পণ্ডিতই বেশি সম্মানের? তিনি তো ভালই জানেন যে, ওস্তাদ আর পণ্ডিতে পার্থক্য নেই, আর থাকলেও সাধারণ মানুষের জানার মধ্যে নেই, তবু তিনি জোর করে পার্থক্য টেনে এনে ইসলামকে আলাদা করতে সচেষ্ট। (আমার কথায় সন্দেহ থাকলে পথ চলতি মানুষদের জিজ্ঞাসা করে একটা পরিসংখ্যান নিতে পারেন যে কয়জন এই পার্থক্য টা জানেন) নজরুল সাহেব, আপনি তো একই যুক্তিতে ইসলামি স্কুল গুলোকে 'মাদ্রাসা' আখ্যা দেওয়ার বিরোধিতা করতে পারতেন। ব্যাপারতো আসলে একই, তাই না?

সর্বশেষ যে আলোচনা তিনি করেছেন তা 'মহাত্মা' শব্দটি নিয়ে। তিনি বলেছেন যে গান্ধীজী মহাত্মা আখ্যা দেওয়ার মত নয়। কেননা তিনি বর্ণব্যবস্থায় বিশ্বাস করতেন। তিনিও ছিলেন ব্রাহ্মণ্য ব্যবস্থার প্রতিনিধি। এই শব্দও লেখকের মতে ব্রাহ্মণদের প্রতারণা। শূদ্র ও অহিন্দুদের ভুল বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত। কিন্তু আপনি যাকে দোষী বলছেন নজরুল সাহেব, তিনি তো ব্রাহ্মন্য ব্যবস্থার প্রতিনিধি নন। এই আমাদের সবার প্রিয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। 'মহাত্মা' আখ্যাটা তাঁরই দেওয়া। সুতরাং এই উপাধি যদি অস্বীকার করতে হয় তবে গান্ধীজীর সাথে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও অসম্মান করা হয়।

http://www.nabojug.com/posts/%E0%A6%AE%E0%A6%B9%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%A8/%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%A3%E0%A7%80%E0%A6%AF%E0%A6%BC-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B8%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A7%87-%E0%A7%A7

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...