আশিসবাবু এখনও তাঁর বক্তব্যে অনড়।গুরুচন্ডালিতে কল্লোল মুখার্জী প্রশ্ন করেছেন, অর্থনৈতিক উন্নযনই যেহেতু াসল, তাহলে ক্ষমতায় হিস্সেদারির প্রয়োজন কি।তাঁর মতে বাংলায় ওবিসি, এসসি ও এসটি জনগোষ্ঠীর মানুষরা রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়াই অন্য রাজ্যের তুলনায খারাপ নেই।এটা না হয় মানলাম। কিন্তু শুধু কি রাজনীতি?পশ্চিম বঙ্গে জীবনের কোন ক্ষেত্রটি আধিপাত্যবাদ থেকে মুক্ত? গণতন্ত্রে তাহলে সমানুপাত প্রতিনিধিত্বের কথাই বলা হবে কেন?গোবলয়ের মানুষেরা গোবোধ তাহলে যে তারা কুলীনতন্ত্রের আধিপাত্য মেনে নিতে পারেনি?তাঁরা ক্ষমতায়নের লড়াই লড়ছে হিন্দু অন্ধ করপোরেট বিশ্বায়িত জায়নবাদী দজাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে শুধু দুর্নীপতিরায়ন হবার জন্যই?বাংলায় ক্ষমতায়নের নজির ত এই যে কোনও অন্য স্বর ও তার প্রতিধ্বনি শুনতে আমরা একেবারেই অভ্যস্ত নই?বাংলার ওবিসি যারা সবচাইতে বড় জনগোষ্ঠী তাদের এই বিতর্কে কোনও মতামত আছে? থাকতে পারে? এসসি ও এসটির শিক্ষিত মলাইদার তবকা আধিপাত্যবাদের বিরুদ্ধে একটি কথাও উচ্চারণ করার সাহস পায়? বাংলায় সাবআলটার্ন গ্রুপের মুখ শেখর বন্দোপাধ্যায়, দেবী চাটার্জি, তুষার বন্দোপাধ্যাযরাই ও আশীষ নন্দীরাই কেন, অন্যরা নয় কেন? বিশ্ববিদ্য়ালয়ে লোকসংস্কৃতি বিভাগে কারা? ওবিসি এসসি এসটি র উন্নযন নিয়ে বাংলায় গাদা গুছ্ছ এনজিও চালায় কারা? দলিত সাহিত্যের মুখ কারা? এই প্রশ্নগুলি কিন্তু চিরদিনই অনুত্তরিত থেকে যাবে। জবাব পাব না। তিন দশক পরেও মরিচঝাঁপি গণহত্যা নিয়ে কারও মাথা ব্যথা হয় না। অস্পৃশ্য ত্রিপুরা বাঙ্গালি হলেও আমরা মাথা ঘামাই না। দন্ডকারণ্য বা উত্তরাখন্ড বা আসাম ও পূর্বোত্তর ভারতে, তামিলনাডুর চা বাগানে যারা কুলি হয়ে জীবন যাপন করছে, কর্নাটকে বা রাজস্থানে বা মহারাষ্ট্রে যারা মাতৃভাষার অধিকার থেকে বন্চিত, যাদের জন্য কোথাও সংরক্ষণ নেই, তাঁদের কথা বাদ দিন এই বাংলার খালপাড়ে, পুকুরপাড়ে, রেল লাইনের ধারে যারা কুকুর বিড়ালের মত জীবনযাপন করছে তাঁদের কতটা অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন হল, অজানাই থাকল। কল্লোলবাবু ঠিকই প্রশ্ন করেছেন যে সাচ্ছার কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলায় মুসলমানদের দুরাবস্থার কথা জানা যায়, তেমন কোনও রিপোর্ট কি ওবিসি, এসসি বা এসটির উন্নয়ন সম্পর্কিত আছে কি।
পলাশ বিশ্বাস
Pl download Bengali fonts and avro tool to read and write Bengali from:
দেশের অধিকাংশ দুর্নীতিপরায়ণরাই এসসি, এসটি ও ওবিসি গোষ্ঠীভুক্ত। জয়পুর সাহিত্য উৎসবে এক আলোচনাসভা এই মন্তব্য করে তীব্র সমালোচনায় মুখে পড়লেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক- লেখক আশিস নন্দী। তাঁর এই বক্তব্যের কড়া ভাষায় নিন্দা করেছেন রাজনীতিবিদ থেকে শিক্ষা সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। যদিও পরে সাংবাদিক সম্মেলন করে তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যখ্যা হয়েছে বলে জানান আশিস নন্দী। তাঁর বক্তব্য আসলে নিম্নবর্গীয় মানুষজনের স্বার্থে ছিল বলেই দাবি করেন তিনি। সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে এই খ্যাতনামা লেখকের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। এই বক্তব্যকে শুধু দুর্ভাগ্যজনক নয়,ভারতীয় পরম্পরা বিরোধী, সংবিধান বিরোধী বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকেই। এই বক্তব্যের জন্য আশিস নন্দী কে ক্ষমা চাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বিজেপি।
আনন্দবাজার লিখছেঃরাজনৈতিক নেতারা নিজেদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই এই বিতর্ক তৈরি করছেন বলে মনে করছেন তিনি। তবে মায়াবতী থেকে রামবিলাস পাসোয়ান দেশের রাজনৈতিক নেতারা যখন বিষয়টি নিয়ে সরব, তখন দলিত লেখক কাঞ্চা ইলাইয়া কিন্তু আজ এগিয়ে এসেছেন আশিসবাবুর সমর্থনে। বলেছেন, তাঁকে দলিতবিরোধী, সংরক্ষণবিরোধী বলে তকমা লাগানোটা ভুল। বাক্যে কিছু অস্পষ্টতা থাকায় এই ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে।আনন্দবাজার কিন্তু তাঁর বিস্ফোরক মন্তব্য যে গত একশো বছরে বাংলায় ওবিসি, এসসিএসটির কোনও ক্ষমতায়ন হয়নি, এই প্রসঙ্গে কোনও বিতর্কে যাচ্ছে না।
মীডিয়া ত বটেই, সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলো, সিভিল সোসাইটি এবং দলিত বুদ্ধিজীবিদের একাংশ কান্ছা ইলাইয়া ও দারাপুরীর মত বিদ্বতজনেরা তাঁর পক্ষে বাক্ স্বাধীনতার ধুয়ো তুলছেন।
তর্কের খাতিরে না হয় মেনেই নিলাম যে এই যাবতীয় জনগোষ্টীর ক্ষমতায়নই দুর্নীতির উত্স।মায়াবতী রাজনীতিতে কতদিন আছেন? লালু প্রসাদ ?শিবূ সোরেন? মধু কোড়া? এই জাতীয় কটা নামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযাগ? এদের রাজনীতিতে আবির্ভাবের আগে ভারতবর্ষে কি কোনও দুর্নীতি ছিল না? করপোরেট দুর্নীতির সঙ্গে কারা যুক্ত? প্রতিরক্ষার নামে যে দুর্নীতি প্রথম থেকেই চলছে তার বেলায়?
গুরুচন্ডালিতে কল্লোল মুখার্জী প্রশ্ন করেছেন, অর্থনৈতিক উন্নযনই যেহেতু াসল, তাহলে ক্ষমতায় হিস্সেদারির প্রয়োজন কি।তাঁর মতে বাংলায় ওবিসি, এসসি ও এসটি জনগোষ্ঠীর মানুষরা রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়াই অন্য রাজ্যের তুলনায খারাপ নেই।এটা না হয় মানলাম।
কিন্তু শুধু কি রাজনীতি?পশ্চিম বঙ্গে জীবনের কোন ক্ষেত্রটি আধিপাত্যবাদ থেকে মুক্ত?
গণতন্ত্রে তাহলে সমানুপাত প্রতিনিধিত্বের কথাই বলা হবে কেন?
গোবলয়ের মানুষেরা গোবোধ তাহলে যে তারা কুলীনতন্ত্রের আধিপাত্য মেনে নিতে পারেনি?তাঁরা ক্ষমতায়নের লড়াই লড়ছে হিন্দু অন্ধ করপোরেট বিশ্বায়িত জায়নবাদী দজাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে শুধু দুর্নীপতিরায়ন হবার জন্যই?
বাংলায় ক্ষমতায়নের নজির ত এই যে কোনও অন্য স্বর ও তার প্রতিধ্বনি শুনতে আমরা একেবারেই অভ্যস্ত নই কেন?
বাংলার ওবিসি যারা সবচাইতে বড় জনগোষ্ঠী তাদের এই বিতর্কে কোনও মতামত আছে?
থাকতে পারে?
এসসি ও এসটির শিক্ষিত মলাইদার তবকা আধিপাত্যবাদের বিরুদ্ধে একটি কথাও উচ্চারণ করার সাহস পায়?
বাংলায় সাবআলটার্ন গ্রুপের মুখ শেখর বন্দোপাধ্যায়, দেবী চাটার্জি, তুষার বন্দোপাধ্যাযরাই ও আশীষ নন্দীরাই কেন, অন্যরা নয় কেন?
বিশ্ববিদ্য়ালয়ে লোকসংস্কৃতি বিভাগে কারা?
ওবিসি এসসি এসটি র উন্নযন নিয়ে বাংলায় গাদা গুছ্ছ এনজিও চালায় কারা?
দলিত সাহিত্যের মুখ কারা?
এই প্রশ্নগুলি কিন্তু চিরদিনই অনুত্তরিত থেকে যাবে। জবাব পাব না।
তিন দশক পরেও মরিচঝাঁপি গণহত্যা নিয়ে কারও মাথা ব্যথা হয় না। অস্পৃশ্য ত্রিপুরা বাঙ্গালি হলেও আমরা মাথা ঘামাই না।
দন্ডকারণ্য বা উত্তরাখন্ড বা আসাম ও পূর্বোত্তর ভারতে, তামিলনাডুর চা বাগানে যারা কুলি হয়ে জীবন যাপন করছে, কর্নাটকে বা রাজস্থানে বা মহারাষ্ট্রে যারা মাতৃভাষার অধিকার থেকে বন্চিত, যাদের জন্য কোথাও সংরক্ষণ নেই, তাঁদের কথা বাদ দিন এই বাংলার খালপাড়ে, পুকুরপাড়ে, রেল লাইনের ধারে যারা কুকুর বিড়ালের মত জীবনযাপন করছে তাঁদের কতটা অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন হল, অজানাই থাকল।
কল্লোলবাবু ঠিকই প্রশ্ন করেছেন যে সাচ্ছার কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলায় মুসলমানদের দুরাবস্থার কথা জানা যায়, তেমন কোনও রিপোর্ট কি ওবিসি, এসসি বা এসটির উন্নয়ন সম্পর্কিত আছে কি।
মতুয়া আন্দোলন ও চন্ডাল আন্দোলনের পিতৃপুরুষ, ভারতে বহুজন ক্ষমতায়নের পথিকৃত হরিচাঁদ ঠাকুর সাবালটার্নদের ঠেলায় মৈথিলী ব্রাহ্মণ হয়ে গেলেন। ঠাকূর বাড়ীতে বড়মায়ের পায়ে প্রণাম করলেই সব মতুয়া ভোট হাতের মুঠোয়। ঠাকূরবাড়ির ছেলে মন্ত্রী হলেই সব সমস্যার সমাধান।
এই ত হল তফসিলিদের ক্ষমতায়ন।
ক্ষমতায়নের নজির হল জঙ্গল মহল, প্রতিটি আদিবাসী অন্চল। তাঁরাও কি দুর্নীতিপরাযণ?
এ রাজ্যে ক্ষমতায়ন হয়নি।
পরিবর্তনে মমতায়নই হয়েছে।
ওবিসিরা নিজেরাই জানেন না তাংরা বর্ণহিন্দু পরিচয়ের বাইরে আদৌ পিছড়বর্গ কিনা।
তাই আশিসবাবূদের মতামত শিরোধার্য় করা ব্যতিরেক উপায নেই।
সম্পাদকীয় ১... |
অধিকার ও দায়িত্ব |
কথায় কথায় এফ আই আর ঠুকিয়া জেলে পুরিবার হুমকি ভারতীয় গণতন্ত্রের মজ্জাগত হইয়া দাঁড়াইয়াছে। আশিস নন্দীর জয়পুর-ভাষণ লইয়া আর এক বার সেই একই কুনাট্য। দলিত ও অনগ্রসর শ্রেণির মধ্যে দুর্নীতি বেশি (কিংবা বেশি প্রত্যক্ষগ্রাহ্য) এবং পশ্চিমবঙ্গে দলিত রাজনীতির গুরুত্ব কম বলিয়াই দুর্নীতি কম— এই সকল বাক্য (কিংবা দুর্বাক্য) বলিবার অপরাধে তাঁহার নামে পুলিশে ডায়েরি হইল, গ্রেফতারের দাবিতে জনতা ও জনপ্রতিনিধিরা উন্মত্ত হইয়া উঠিলেন। শেষ পর্যন্ত এই হুমকি/দাবি কত দূর কার্যে পরিণত হইবে, অনিশ্চিত। কিন্তু জয়পুরের সাহিত্যসভায় দেশবিদেশের অভ্যাগতদের সামনে এমন হুমকি যে চতুর্দিকে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হইতে পারিল, জননেতাদের বদান্যতায় পুষ্ট হইল, তিপ্পান্নতম বার্ষিকী উদ্যাপনকালে প্রজাতন্ত্রের পক্ষে ইহাই তো অতীব লজ্জাজনক। ভারতীয় রাষ্ট্র ও সমাজ, উভয়েরই অবিলম্বে ভাবিয়া দেখা উচিত, সহনশীলতার এই হাল লইয়া ভারত কী ভাবে নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকারের বড়াই করিবে। অধিকারের অর্থ তো তিপ্পান্ন বৎসর আগে সংবিধানেই ব্যাখ্যা করা হইয়াছিল, যাহার মধ্যে বাক্স্বাধীনতা অর্থাৎ কথা বলিবার মুক্তি একটি মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে বিবেচিত। সন্দেহ নাই, ভারতীয় গণতন্ত্রের অভূতপূর্ব প্রসার ও ব্যাপ্তির সহিত এই অ-সহনশীলতার সংস্কৃতির মূলগত যোগ। কাহারও সম্পর্কে যে-কোনও সমালোচনাকেই এখন রাজনৈতিক মূলধন করিয়া ঝাঁপাইয়া পড়িয়া সংকীর্ণ ভোটব্যাঙ্ক পুষ্ট ও তুষ্ট করা যায়। তাই, অগণতান্ত্রিকতার সমস্ত দোষ রাষ্ট্রব্যবস্থার নহে, সমাজকেও এই দোষের সমান ভাগ লইতে হইবে। পুলিশ-প্রশাসন-আদালত যেমন অনেক ক্ষেত্রেই অগণতান্ত্রিক, তেমনই বৃহত্তর সমাজের ভূমিকাও যথেষ্ট সমস্যাজনক। সমাজ যদি এ দেশে প্রত্যহ রাজনীতির প্রয়োজনে সহনশীল সংস্কৃতিতে অন্তর্ঘাত সাধিয়া যায়, এবং নেতৃ-সমাজ ও জন-সমাজ উভয়েই তাহাতে সমধিক আগ্রহ দেখাইয়া যায়, তবে তাহা কেবল রাষ্ট্রব্যবস্থার স্খলন বলিলে তো চলিবে না। রাজনীতিকরা পরিস্থিতিকে কাজে লাগাইবার চেষ্টা করেন ঠিকই, কিন্তু সমপরিমাণ দোষ কি সেই পরিস্থিতিরও নহে, যাহা রাজনীতিকদের অসাধু উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হইবার জন্য সর্বদা উন্মুখ, উদ্গ্রীব হইয়া থাকে? দায়িত্ব প্রসঙ্গে আরও একটি মৌলিকতর দায়িত্বের কথা বলা জরুরি। তাহা নাগরিকের— বিশেষত বিশিষ্ট জ্ঞানী নাগরিকের— দায়িত্ব। বিশিষ্ট নাগরিক যিনি, তাঁহার জানিবার কথা, কোন কথা কোথায় কী ভাবে বলা সমীচীন। যে কথা সারস্বত বিচার ব্যতীত বলা অনুচিত, সারস্বত অঙ্গনের বাহিরে, সারস্বত তথ্য-আবরণহীন ভাবে তাহা বলিলে অনেক সময়ই অগ্রহণযোগ্য ও আপত্তিকর ঠেকিতে পারে। আশিস নন্দীর মতো পণ্ডিত সমাজবিজ্ঞানী যখন দলিত ও অনগ্রসর সমাজ সম্পর্কে এত সংবেদনশীল মন্তব্য করিবেন, উপযুক্ত তথ্য, সংখ্যাতত্ত্ব ও বিশ্লেষণ সহকারেই তিনি তাহা প্রতিষ্ঠা করিবেন, সেগুলি ছাড়া আলটপকা ভাবে করিবেন না, ইহাই প্রত্যাশিত। উপরন্তু এমন বক্তব্য সেই পরিসরেই পেশ করা কর্তব্য যেখানে তাঁহার ভাষা ও ব্যঞ্জনা যথার্থ ভাবে বুঝিতে শ্রোতারা প্রযত্ন করে। যে কোনও জনসভায়, প্রক্ষিপ্ত ভাবে এমন একটি কথা বলিয়া ফেলিলে তাহা নিছক অপ্রয়োজনীয় উশকানি হইয়া দাঁড়ায়। তাঁহার মতো পণ্ডিতরাই তো শিখাইয়াছেন, ভারতীয় বাস্তব কী রকম অতি-বিচিত্রতার অসম সমাবেশ। সেখানে যে কোনও সমাজ বিষয়ে নেতিবাচক কথার গুরুত্ব অনেক, বিপদও অনেক। তাঁহাদের ক্ষেত্রে আবার কথার বিপদ সাধারণের অপেক্ষা বেশি, কেননা তাঁহাদের কথার গুরুত্বও সাধারণের অপেক্ষা বেশি। এই ঝুঁকি মাথায় রাখিয়া চলেন যে বিদ্বান পণ্ডিত, তিনিই দায়িত্ববান নাগরিক। প্রশ্ন উঠিতে পারে, তবে কি অপ্রিয় বা নেতিবাচক কথার পরিসর থাকিবেই না? অবশ্যই থাকিবে। যে বিশিষ্ট নাগরিক সমাজকে শিক্ষিত করিতে পারেন, তাঁহাকেও যেমন দায়িত্ববান হইতে হইবে, একই ভাবে, যে বৃহত্তর সমাজ শ্রোতা বা গ্রহীতার ভূমিকায়, তাহাকেও সহনশীলতার পরিসর বাড়াইতে হইবে। একমাত্র এ ভাবেই গণতন্ত্র সম্ভব। http://www.anandabazar.com/29edit1.html |
দুর্নীতি নিয়ে বলায় নেতারা খাপ্পা হলেও পাশে দলিত লেখক | ||||||||||
পুরো কথা না বুঝেই বিতর্ক, খেদ আশিসের | ||||||||||
গৌতম চক্রবর্তী • জয়পুর অগ্নি রায় • নয়াদিল্লি | ||||||||||
তাঁর মন্তব্যকে ভুল পরিপ্রেক্ষিতে দেখার ফলেই এত বিতর্ক ও বিপত্তি। গোটা বিষয়টি নিয়ে শীঘ্রই বিবৃতি দেবেন সমাজবিজ্ঞানী আশিস নন্দী। সেইসঙ্গে অভিযোগনামা এবং এফআইআরের বিরুদ্ধে আইনি পথেই পাল্টা লড়াইয়ের সিদ্ধাম্ত নিয়েছেন তিনি। জয়পুরের সাহিত্য উৎসব থেকে দিল্লিতে ফিরে আশিসবাবু আজ এ কথা জানান। রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই এই বিতর্ক তৈরি করছেন বলে মনে করছেন তিনি। তবে মায়াবতী থেকে রামবিলাস পাসোয়ান দেশের রাজনৈতিক নেতারা যখন বিষয়টি নিয়ে সরব, তখন দলিত লেখক কাঞ্চা ইলাইয়া কিন্তু আজ এগিয়ে এসেছেন আশিসবাবুর সমর্থনে। বলেছেন, তাঁকে দলিতবিরোধী, সংরক্ষণবিরোধী বলে তকমা লাগানোটা ভুল। বাক্যে কিছু অস্পষ্টতা থাকায় এই ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। আশিসবাবু আজ বলেন, "আমি যেটা বলতে চেয়েছি তা হল, ধনী এবং উচ্চবর্ণের ব্যক্তিরা দিব্যি নিজেদের বাঁচিয়ে চলতে পারেন। ফলে দুর্নীতির কারণে যাঁরা ধরা পড়েন তাঁদের বেশির ভাগই তফসিলি জাতি ও উপজাতির মানুষ।" তাঁর আরও বক্তব্য, "যখনই কোথাও উন্নয়ন হয় তার সঙ্গে তৈরি হয় দুর্নীতির নানা পথও। দলিত সমাজের মানুষ যদি সেই দুর্নীতির সুযোগ নিতে পারেন তা হলে সেটা তো ভালই। আখেরে তাতে সামাজিক বৈষম্য কমবে।" আশিসবাবুর মতে, দুর্নীতির ফলে যে 'স্পিড মানি' আসে তাতে অনেক কাজই দ্রুত হয়। নিম্নবর্গের মানুষের ক্ষমতায়নে তা প্রকারান্তরে সহায়তাই করে। ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে শুরু করে আদালতে মামলা লড়ার মতো অনেক কাজই তখন তার কাছে আগের তুলনায় সহজ হয়ে যায়। "এটা আমি একা বলছি না, এর আগে অনেক অর্থনীতিবিদই এই তত্ত্বের সপক্ষে কথা বলেছেন। রাজনীতিবিদরা আমার এই বক্তব্য নিয়ে হইচই করবেন, সেটা তাঁদের পক্ষে মানানসই বলে। আমি কেবল অর্থনীতির ওই তত্ত্বটিকে একটা সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক দৃষ্টিতে দেখাতে চাইছি।" মায়াবতী, রামবিলাসের মতো যাঁরা নিজেদের দলিত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরেন, তাঁরা আশিসবাবুর বিরুদ্ধে সরব হলেও কাঞ্চা ইলাইয়া কিন্তু আজ নেতাদের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। এই দলিত লেখকের কথায়, "আমার তফসিলি জাতি, উপজাতি ও দলিত ভাইবোনদের বলব, তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় এ বার দাঁড়ি টানুন। আশিস নন্দীকে আমি দীর্ঘকাল চিনি, সমাজবিজ্ঞান সংস্থায় তাঁর সঙ্গে একসঙ্গে কাজও করেছি। তিনি কোনও দিনই দলিত, ওবিসিদের জন্য সংরক্ষণের বিপক্ষে ছিলেন না। তাঁকে দলিতবিরোধী বা সংরক্ষণবিরোধী বলে তকমা দেওয়াটা ভুল।" সাহিত্য উৎসবে তাঁর প্রথম উপন্যাস 'আনটাচেব্ল গড' প্রকাশ করতে এসে কথাগুলি বলেন কাঞ্চা ইলাইয়া। হায়দরাবাদের মৌলানা আজাদ জাতীয় উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বলেন, "আশিস নন্দীর উদ্দেশ্য ভাল, কিন্তু বাক্যটা খারাপ ছিল।" "দলিত, ওবিসি, তফসিলি জাতি ও উপজাতির মধ্যে দুর্নীতি সবচেয়ে প্রবল বলে মনে হয়,...." আশিসের এই বাক্যটিকে না ছিঁড়ে যথাযথ ও সামগ্রিক পরিপ্রেক্ষিতে দেখার আবেদন জানিয়েছেন কাঞ্চা। তাঁর ব্যাখ্যা, তর্কটা যে ভাবে হচ্ছিল, সেখানে আশিস একটি বাক্য বলেননি। দেশের সম্পদে বরাবরই অধিকার ছিল উচ্চবর্ণ ও উচ্চবর্গের। তাই তারা ঘুষ নিয়েছে, দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করেছে। তফসিলি জাতি, উপজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি সবে সেই সম্পদে অধিকার পেয়েছে। ফলে তারাও একই ভাবে ভাবে ঘুষখোর, দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে। এই কথাটাই তিনি বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু উচ্চবর্ণ সংক্রান্ত বাক্যটি পরিষ্কার করে না বলাতেই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। উচ্চবর্ণ আর নিম্নবর্ণের এই সংঘর্ষ নিয়ে কাঞ্চার চেয়ে বেশি ভুক্তভোগী আর কে! তাঁর প্রথম উপন্যাস 'অস্পৃশ্য ঈশ্বর' প্রকাশের মুখে, গত মাসে হায়দরাবাদের একটি কাগজ মন্তব্য করেছে, এই বই অশান্তি বাধাতে পারে। এটি নিষিদ্ধ করা উচিত। নব্বইয়ের দশকের শেষাশেষি কাঞ্চার 'হোয়াই আই অ্যাম নট আ হিন্দু' বা তারও পরে 'বাফেলো ন্যাশনালিজম' নিয়ে বর্ণহিন্দু সমাজ একই রকম উত্তাল হয়েছিল। একান্ত আলাপচারিতায় কাঞ্চা জানালেন, তাঁর বইয়ে পশ্চিমবঙ্গে তথাকথিত ভদ্রলোকের দ্বিচারিতার প্রসঙ্গ রয়েছে। তাঁর উপন্যাসে 'বাসু'জ ব্রাহ্মিণ সোশালিজম' নামে একটি অধ্যায় আছে। "জমিদার পরিবারের সন্তান বাসু ভদ্রলোক ও কমিউনিস্ট। ভদ্রলোক কথাটা বাঙালি আবিষ্কার। সেখানে জাতপাত নেই। বদ্যি গুপ্ত, কায়স্থ গুহদের সঙ্গে বারেন্দ্র সান্যাল, কনৌজি বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্রাহ্ম সমাজের লোকেরাও একসঙ্গে চায়ের আসরে বসেন। তবে লনে বসে চা খাওয়াটুকুই সব। পরস্পরের মধ্যে বিয়ে-শাদি হয় না," লিখছেন কাঞ্চা। তিনি মনে করেন, "আশিস সে দিন পশ্চিমবঙ্গের উচ্চ বর্ণের দ্বিচারিতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। দ্বিচারিতার কারণেই পশ্চিমবঙ্গের ভদ্রলোকেরা তাঁদের রাজনীতিতে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি, দলিতদের স্বীকার করেন না। আর ওই ভাবেই নিজেদের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি টিকিয়ে রাখেন।" http://www.anandabazar.com/29desh1.html
|
No comments:
Post a Comment