কবির এই পংক্তির সঙ্গে মিলছে না বাস্তবের সমীকরণ৷ ওপার বাংলার নয়া প্রজন্ম একুশের রঙে শান দিচ্ছে তাদের গণতান্ত্রিক চেতনায়৷ আজ ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসে তাদেরই একটা অংশ আসবে বেনাপোল সীমান্তে৷ ভাষার মাধ্যমে তারা মিলিয়ে দিতে চায় দুই বাংলাকে৷ এপারের চিত্র ঠিক তার উল্টো৷ ভাষা দিবসে পেট্রাপোল সীমান্তে মঞ্চের দখল নিয়ে কাজিয়ায় মাতল শাসক দল তৃণমূল এবং প্রধান বিরোধী সিপিএম৷ তবে শেষ পর্যন্ত শাসক দলকে ওয়াক ওভার দিয়ে সিপিএম সেই অনুষ্ঠান নিয়ে গিয়েছে সল্টলেকের এক প্রেক্ষাগৃহে৷
প্রতি বছরই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ২১ ফেব্রুয়ারি মিশে যায় দুই বাংলা৷ নো ম্যানস ল্যান্ডের শহিদ বেদিতে মালা দেন দু'পারের মানুষ৷ তার পর ওপার থেকে জনপ্রতিনিধি, সরকারি প্রতিনিধি এবং সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি-সহ ১০০ জন আসেন পেট্রাপোলের অনুষ্ঠানে৷ পরে এপার বাংলা থেকেও ১০০ জনই যান ওপারের বেনাপোলে৷ কয়েক ঘণ্টার জন্য দু'দেশের সীমান্তে প্রহরারত জওয়ানরাও সঙ্গীন নামিয়ে রাখেন৷ তখন ভেঙে যায় দু'বাংলার যাবতীয় প্রোটোকল৷ দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে এই প্রথা৷ দু'পারের অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য 'গঙ্গা-পদ্মা ভাষা ও মৈত্রী সমিতি' নামে একটি যৌথ কমিটিও আছে৷ তার সভাপতি হলেন যশোরের সাংসদ শেখ হাফিলুদ্দিন৷ সম্পাদক প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ অমিতাভ নন্দী৷ দমদমের সাংসদ থাকাকালীনই তিনি এর সম্পাদক হন৷ যৌথ কমিটিতে যেমন ওপারের শাসক আওয়ামি লিগের প্রভাব রয়েছে, তেমনি এককালের এ বাংলার শাসক সিপিএমেরও প্রভাব আছে৷
রাজ্যে পরিবর্তনের পর অবশ্য প্রায় রাতারাতি ছবিটা পাল্টে যায়৷ গত বছর মৈত্রী সমিতিকে ২১ ফেব্রুয়ারি পেট্রাপোল সীমান্তে অনুষ্ঠান করার অমুমতি দেন বনগাঁর মহকুমা শাসক৷ সেই ভাবে প্রস্ত্ততিও চলে৷ তার পর হঠাত্ সেই অনুমতি বাতিল করে দেন মহকুমা শাসক৷ পরে দেখা যায়, ২১ তারিখ বনগাঁ পুরসভা সেই অনুষ্ঠানের হর্তাকর্তা৷ রাজ্যের তাবড় মন্ত্রী এবং শাসক দলের নেতা হাজির সেই অনুষ্ঠানে৷ তার ঠিক উল্টোদিকে মৈত্রী সমিতির অনুষ্ঠান হয়৷ সেখানে বক্তা ছিলেন সিপিএম নেতা শ্যামল চক্রবর্তী, অমিতাভ নন্দী প্রমুখ৷ ভাষা দিবসের অনুষ্ঠান ঘিরে এই 'আমরা ওরা'র বিভাজন কেউ ভালো চোখে দেখেনি৷
শাহবাগের ঢাকা |
লক্ষ চিঠি উড়ল শহিদের উদ্দেশে, ঠিকানা আকাশ |
কুদ্দুস আফ্রাদ • ঢাকা |
রুদ্র মহম্মদ শহীদুল্লার কবিতার সেই লাইনটা আজও বাংলাদেশের তরুণদের মুখে মুখে ফেরে 'ভাল আছি, ভাল থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।' বুধবার শাহবাগের ডাকে শুধু ঢাকা নয়, বাংলাদেশের সর্বত্র লাখো লাখো বেলুন উত্তরপুরুষের চিঠি নিয়ে চলল মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের আকাশের ঠিকানায়। কোনও চিঠিতে অঙ্গীকার, 'ঘাতকদের ফাঁসির দাবি ছিনিয়ে তবেই থামা', তো কোথাও দৃপ্ত প্রতিজ্ঞা, 'জয় আমাদের হবেই, তোমরা নিশ্চিন্ত থেকো।' কাল একুশে ফেব্রুয়ারি। যে ভাষা আন্দোলনের চেতনায় বাংলাদেশের সৃষ্টি, আজ তা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে শাহবাগ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নতুন মাত্রা পাচ্ছে এ বারের 'একুশে'। বুধবার সকাল থেকেই হাজার হাজার স্কুল পড়ুয়ার ঢল নামে শাহবাগের স্বাধীনতা প্রজন্ম চত্বরে। ইউনিফর্ম পরা ছেলেমেয়েদের নিয়ে আসেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাই। দুপুরে সেই কিশোর-কিশোরীদের কাঁচা গলার স্লোগানেই গলা মেলায় শাহবাগ চত্বর। তার পরে বিকেল ঠিক চারটে ১৩। 'জয় বাংলা' ধ্বনিতে মুখর বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম শহর থেকে এক সঙ্গে উড়িয়ে দেওয়া হল লক্ষ বেলুন। প্রতিটি বেলুনে গাঁথা একটি করে চিঠি, শহিদদের উদ্দেশে। ঠিকানা আকাশ। শাহবাগ বিক্ষোভের অন্যতম সংগঠক ইমরান লিখেছেন, 'তোমরা মেঘের কোলে ঘুমিয়ে থেকো। জেগে আছে প্রজন্ম চত্বর, জেগে আছে বাংলাদেশ। আমাদের অবিচল লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনাপ্রসূত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। এ যুদ্ধের অনুপ্রেরণা তোমরা, দিগ্নির্দেশক তোমরা।' |
স্মরণে: ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শেখ হাসিনার। বুধবার রাত বারোটায় শহিদ মিনারে। |
আর এক সংগঠক সনিয়া লিখেছেন, 'তোমরা শান্তিতে ঘুমোও, আমরা জেগে আছি'। মাদারিপুর থেকে আসা বৃদ্ধ সেকেন্দর আলির চিঠি তাঁর দুই শহিদ বন্ধুকে, 'সহযোদ্ধা খোরশেদ ও আলি, তোমাদের হত্যার বিচার হবেই'। ছাত্রী সুমতির আপ্লুত উচ্চারণ, 'আমরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম জেগে থাকব, তোমাদের হত্যাকারীদের ফাঁসি না দিয়ে ঘুম নেই'। একাত্তরের ঘাতকদের ফাঁসির পাশাপাশি সে দিন পাকিস্তানের সহচর, গণহত্যায় নেতৃত্ব দেওয়া জামাতে ইসলামিকে নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে ঢাকার শাহবাগ স্কোয়ারে ১৬ দিন ধরে অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের লাখো তরুণ। দেশজুড়ে শাহবাগ যে গণজোয়ার এনেছে, সরকারকেও তার পাশে এসে দাঁড়াতে হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি মেনে 'আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইন'-এ সংশোধনী আনতে হয়েছে, যাতে জামাতকে কাঠগড়ায় তোলা যায়। তবে এই দলকে এখনও নিষিদ্ধ করা হয়নি। তার মধ্যেই 'একুশে'। কাল ফের জনস্রোতে ভেসে যাবে প্রজন্ম চত্বর। আসবেন ভাষা আন্দোলনের সেনানীরা। প্রতি বারের মতো শহিদ মিনারে ফুলের শ্রদ্ধা জানিয়ে ফিরবেন যে সব মানুষ, তাঁরা শাহবাগেও ঘুরে যাবেন। সেখানে ডাকা হয়েছে একটি বড় সভা। সেই মঞ্চ থেকে ঘোষণা করা হবে নতুন কর্মসূচি। তার আগে আজ গানে-স্লোগানে-কবিতায় নতুন উদ্দীপনার আগুন ছোটে প্রজন্ম চত্বরে। ভারত থেকে বহু মানুষ এসেছেন একুশের শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে। তাঁরাও শাহবাগে এসে সংহতি জানান। |
লড়াকু তুলি একুশের তোড়জোড়। বুধবার ঢাকার ভাষা শহিদ মিনার চত্বরে। |
গণজোয়ারের সঙ্গে সংহতি জানাতে আজ আখাউড়া সীমান্তে সমবেত হন ত্রিপুরার মানুষ। বাংলাদেশের মানুষরাও তাঁদের সঙ্গে হাত মেলান। কবিতা পড়েন ত্রিপুরার তথ্য-সংস্কৃতি মন্ত্রী অনিল সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের বার্তা পাঠ করা হয়। |
ছবি: উমাশঙ্কর রায়চৌধুরী |
মলদ্বীপে ভারতীয় প্রতিনিধি |
সংবাদসংস্থা • মালে |
বুধবার মালেতে মলদ্বীপের বিদেশমন্ত্রী ও অন্যান্য উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন বিদেশ মন্ত্রকের কিছু ভারতীয় প্রতিনিধি। এই ভারতীয় প্রতিনিধির নেতৃত্বে রয়েছে যুগ্ম সচিব হর্ষবর্ধন শ্রীংলা।মলদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নাসিদের ভারতীয় হাইকমিশনে আশ্রয় নেওয়ার ফলে যে বিক্ষোভ ওঠে তা নিয়ন্ত্রণ আনতেই এই বৈঠক। বুধবার মলদ্বীপের একটি আদালতে মহম্মদ নাসিদের শুনানি ছিল। কিন্তু ভারতীয় হাইকমিশনে আশ্রয় নেওয়ায় তাঁর শুনানি বাতিল হয়ে যায়। বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ অবশ্য জানান, এই পরিস্থিতি দ্রুত মীমাংসা হলে ভারত খুশি হয়। http://www.anandabazar.com/21bdesh2.html |
লন্ডনে ভাষা শহীদ দিবস পালিত, কন্ঠে - Video Dailymotion
ফেব্রুয়ারি আবেগের মাস। এ মাসের ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় ইতিহাসে মোড় পরিবর্তনকারী প্রকৃত পুনঃজাগরণের দিন হিসেবে বিবেচিত। পবিত্র কুরআনুল কারিমে আল্লাহ বলেছেন, তিনি মানুষকে 'বয়ান' দান করেছেন। সুতরাং মায়ের বুলি প্রতিষ্ঠার দাবি থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রামে বিজয় অর্জন কোন কিছুই ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। ইতিহাসও সেই সাক্ষী দেয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে উদ্দীপ্ত হবার জন্য স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে পবিত্র কোরআন পাঠ করা হতো। ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল তমুদ্দুন মজলিসের হাত ধরে। '৪৮ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অনুসারী ছাত্র-কর্মীরা পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় ভাষার দাবি বেগবান হয়েছিল। লক্ষ্য অর্জনে সচিবালয় ঘেরাও হলে তৎকালীন ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান ও অলি আহাদসহ অনেকেই গ্রেফতার হয়েছিলেন। চূড়ান্ত পর্যায়ে আন্দোলন পরিচালনায় যে সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছিল সেই সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন মওলনা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠার দাবির চেতনার মূলে বিশেষভাবে কাজ করেছে শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব। সামগ্রিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এটা বলা যায়, এই আন্দোলনের স্বাপ্নিকগণ এবং লালন ও চর্চাকারী সকলেই সচেতন মুসলমান ও ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন। সে কারণে ভাষার অধিকারের পথ ধরেই গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক অধিকারের দাবি উচ্চকিত হয়েছিল। শুরু হয়েছিল, স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকারের সংগ্রাম। এর পর '৭০-এর নির্বাচন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। রাজনৈতিক ও গবেষকদের বিশ্লেষণের সূত্র ধরেই বলা যায়, ভাষা আন্দোলন কেবলমাত্র নিছক একটি আন্দোলন অথবা ভাষারই আন্দোলন ছিল না বরং চেতনা সঞ্চারী এই আন্দোলন ভেতরগত অবিনাশী চেতনার স্মারক হয়ে রয়েছে। এই চেতনা স্বাধীনতার রক্ষাকবচ বটে। ভাষা আন্দোলন প্রকৃত অর্থে রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল প্রতারণার বিরুদ্ধে বিজয়ের নির্দেশক।
মূলত ভাষা আন্দোলনের চেতনা হচ্ছে, জাতীয় ঐক্যের এবং জাতীয় সমৃদ্ধির। এবারে যখন ভাষা দিবস পালিত হচ্ছে, তখন কার্যত জাতি দ্বিধাবিভক্ত। গভীর সংকটে রয়েছে, জাতীয় মানস। সংকট অতিক্রমে ২১-এর অবিভাজ্য চেতনার প্রয়োজন। জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জনের বিবেচনায় বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে স্বীয় ভাষার উৎকর্ষতার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্বীকৃত ভাষার দিকেও নজর দেয়া প্রয়োজন। জাতীয় প্রতিষ্ঠার অন্তর্গত চেতনা ধারণ করে আছে যে ভাষা আন্দোলন তার প্রতিষ্ঠায় জাতিকে জ্ঞানে, গুণে, মেধায়, মননে, সুখ্যাতি, সুনামে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার কোন বিকল্প নেই। লক্ষ্য অর্জনে সকল ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে ঐকমত্য জরুরী। সে কারণেই সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে ২১-এর শিক্ষা ঐক্যবদ্ধতাকে ধারণ করতে হবে। এ বছর ২১-এর পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একুশের চেতনা সমুন্নত রাখার যে আহ্বান জানিয়েছেন, কার্যত তার সফল বাস্তবায়নে সকল মহলের আন্তরিকতা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
জানা গিয়েছে, বুধবার শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা ধর্মঘটের দিক অফিসে আসেননি দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মী হজরত ওমর। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার তিনি আসতেই তাঁকে ঘিরে ধরেন তৃণমূল কর্মীরা। তাঁর কাছে অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাওয়া হয়। শুরু হয় বাগবিতণ্ডা। অভিযোগ, এর পরই ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে অনেকে। কেটে নেওয়া হয় বাঁ কান। রক্তাক্ত অবস্থায় ওই কর্মীকে বহরমপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এই ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ করেছেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। তিনি বলেছেন, শাসকদলের নেতৃত্বর মদতেই এ সব হচ্ছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে তাঁর দল সরব হবে। নিন্দা করেছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও। নাট্যকর্মী কৌশিক সেন এই ঘটনাকে 'নারকীয়' বলে মন্তব্য করেছেন।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্মরণেই বাংলাদেশে 'একুশে পদক'-এর সূচনা৷ শ্রেষ্ঠ নাগরিক সম্মানগুলির মধ্যে অন্যতম এই পদকে সম্মানিত করা হল একটি সংস্থা সহ ১২ জন নাগরিককে৷ বাংলা শিল্প ও সংস্কৃতির উন্নতির জন্য অবদান রেখেছেন এমন ব্যক্তি বা সংস্থাকেই দেওয়া হয় এই সম্মান৷ এই অনুষ্ঠানে ভাষাদিবসের গুরুত্ব বোঝাতে হাসিনা বলেন, 'বাংলাদেশের সীমান্ত ছাড়িয়ে ১৯৩টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে একুশের অমর বার্তা৷ পঞ্চাশের দশক থেকেই ভাষা আন্দোলন আত্মপ্রত্যয়ের প্রতিরূপ হয়ে দেখা দিয়েছে৷ তরুণ প্রজন্মকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গুরুত্ব বুঝতে হবে৷'
বুধবারের এই অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ৷ উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রকের সেক্রেটারি সুরাইয়া বেগমও৷ বাংলা ভাষার উন্নতির জন্য প্রশাসন গৃহীত বিভিন্ন পরিকল্পনার কথাও এ দিন ঘোষণা করেন হাসিনা৷ তিনি জানান, বাংলাকে রাষ্ট্রপুঞ্জের অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ প্রশাসন৷ এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি৷
রাষ্ট্রীয় ভাষা সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সংক্রান্ত আইন জোরদার করা থেকে শুরু করে ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সংস্থা স্থাপনের কথাও এ দিন ঘোষণা করেন হাসিনা৷ তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে সমস্ত সংস্থার মোবাইল ফোনে বাংলা কিপ্যাড রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷'
ভাষা আন্দোলনের শহিদ সালাম, বারকাত, রফিক, জাব্বর, সফিয়ুদের কথা বলতে গিয়ে কিছুটা আবেগ বিহ্বলই হয়ে পড়েন হাসিনা৷ 'একুশে পদক' জয়ীদের সম্মান জানিয়ে তিনি বলেন, 'একুশের আন্দোলন আমাদের গর্ব ও পরিচিতি৷'
অন্য দিকে এ দিনই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত বিচারের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন ঘোষিত হল৷ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সরকার পক্ষের আইনজীবী নিযুক্ত হলেন তুরিন আফরোজ৷ বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তুরিন বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষিকাও৷ এর আগে ১২ ফেব্রুয়ারি হোসেন-ই-মঞ্জুর ও সানিয়ান রহমানকে সরকার পক্ষের আইনজীবী নিয়োগ করা হলেও, পরে তা স্থগিত করা হয়৷
কলকাতা: বৃহস্পতিবার বিশ্বজুড়ে পালিত হবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) ভাষা আন্দোলনে শহীদ হয়েছিলেন সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ আরো অনেকে। তারপর থেকেই বাংলাভাষার এই অমর শহীদদের স্মরণ করে ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি ভাষা দিবস হিসাবে পালিত হচ্ছে। পরে জাতিসংঘ ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয় ২০০০ সালে। সেই থেকেই বিশ্বজুড়ে দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপিত হবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে। বুধবার দেশজুড়ে সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার ২১ ফেব্রুয়ারিও সাধারণ ধর্মঘটের দিন পূর্বনির্দিষ্ট থাকলেও, ভাষা দিবস উদ্যাপনের জন্য পরিবহনকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এদিন স্বাভাবিক থাকবে পরিবহন পরিষেবা। এছাড়াও ভাষা দিবস অনুষ্ঠান উদ্যাপনেও কোথাও কোনো সমস্যা হবে না বলে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে রাজ্যজুড়ে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের পক্ষ থেকে একটি প্রভাতফেরির আয়োজন করা হয়েছে। পার্ক সার্কাসে বাংলাদেশ গ্রন্থাগার ও তথ্যকেন্দ্র থেকে প্রভাতফেরি শুরু হয়ে শেষ হবে ডেপুটি হাই কমিশনের অফিসের সামনে। এরপর সেখানে সভা ও বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও ধর্মতলায় সুরেন্দ্রনাথ উদ্যানে (কার্জন পার্ক) বরাবরের মতো নানা কর্মসূচীর মধ্যে দিয়ে উদ্যাপিত হবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
এদিন এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই কলকাতা জেলা কমিটির পক্ষ থেকে চেতলা পার্ক ও কলেজ স্কোয়ারে বিদ্যাসাগর মূর্তির সামনে ভাষা দিবস উদ্যাপন হবে। ডিওয়াইএফআই বাগবাজার আঞ্চলিক কমিটির উদ্যোগে শহীদ ক্ষুদিরামের মূর্তির সামনে থেকে পদযাত্রা গিরিশ মঞ্চ পর্যন্ত যাবে। পাইকপাড়ায় পদযাত্রাতে শামিল হবেন যুবরা। ভাষা দিবস উদ্যাপিত হবে বেহালা ও সরশুনায়। ভারতীয় গণনাট্য সংঘ ও কলকাতা নাগরিক সম্মেলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে কালীঘাট পার্কে বিদ্যাসাগর মূর্তির নিচে ভাষা দিবস পালিত হবে।
এছাড়াও আদিবাসী ও লোকশিল্পী সংঘ, বঙ্গীয় সাক্ষরতা প্রসার সমিতি, এবিপিটিএ, হরিপাল ভাষা শহীদ উদ্যাপন কমিটি, ভাষা চেতনা মঞ্চ, অমর একুশে সাংস্কৃতিক জোট, ভাষা ও চেতনা সমিতি প্রভৃতি সংগঠনের পক্ষ থেকেও ভাষা দিবস পালিত হবে। সূত্র: ওয়েবসাইট।
নতুন বার্তা/এসএফ
অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশের ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে পালিত হয়েছে দিবসটি।
বিনম্র শ্রদ্ধা আর গভীর ভালোবাসায় জাতি স্মরণ করেছে ভাষা শহীদদের। একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতির পক্ষ থেকে প্রথম ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রিবর্গ, তিনবাহিনী প্রধান, কূটনীতিকরা শ্রদ্ধা জানান শহীদ মিনার। রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান অসুস্থ থাকায় এবং বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে থাকায় এবার তারা শ্রদ্ধা জানাতে পারেননি।
শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর শহীদ মিনারেই আমার বর্ণমালা নামে ডিজিটাল বর্ণমালার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর শহীদ মিনার সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় শহীদ মিনার।
রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া ও ইউনেস্কো মহাসচিব ইরিনা বোকোভা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।
মাহমুদ হাশিম., ঢাকা থেকে।
২১ ফেব্রুয়ারী কেন পালন করি????????????
একুশে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি
ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু
গড়া এ ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি।
আমার সোনার দেশের রক্তে
রাঙানো ফেব্রুয়ারী
আমার ভাই এর রক্তে রাঙানো
একুশে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি।।
গানটির রচয়িতা না হয় লেখার সময় এরকম লিখেছেন।
তাই বলে..............আমরাও???
উর্দু থেকে বাংলা (মাতৃভাষা) ভাষায় আসার জন্য এত যুদ্ধ, এত প্রান গেল।
কিন্তু বলা এবং পালন করার সময় আমরা ভাষা শহীদ দিবস পালন করি ফেব্রুয়ারি মাসে , কেন আমরা ফাল্গুন মাস উচ্চারণ করি না???????????????????????
কেন আমরা বাংলা ভাষার পরিবর্তে ইংরেজী ভাষা ব্যবহার করি???????????? বলবেন কেউ???????????????
রাষ্ট্র ভাষা যেমন বাংলা চাই!!!!!!!!
ভাষা শহিদ দিবস ও বাংলা চাই!!!!!
বাংলিশ চাইনা...................(২১ ফেব্রুয়ারী)
শুদ্ধ বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে চাই!!!!
মধ্যযুগীয় বর্বরতার সাক্ষী থাকল মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির বেণীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস। ধর্মঘটের দিন অফিসে হাজির না হওয়ায় ব্যাপক মারধর করে এক পঞ্চায়েত অফিসারের কান কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে।
গতকাল অফিসে হাজির হননি পঞ্চায়েতের এক্সিকিউটিভ অ্যাসিসটেন্ট হজর ওমর। আজ সকালে যখন তিনি কাজে যোগ দেন, সে সময় তাঁর ওপর হামলা হয় বলে অভিযোগ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ওই আধিকারিক। ঘটনার প্রতিবাদে বেণীপুরের পঞ্চায়েত কর্মীরা জলঙ্গির বিডিও অফিসে বিক্ষোভ দেখান।
অন্যদিকে,গতকাল সাধারণ ধর্মঘটের দিন স্কুল বন্ধ রাখায় আজও স্কুল খুলতে দেওয়া হল না। স্কুলের সামনে মঞ্চ বেধে প্রধানশিক্ষককে বসিয়ে রেখে চলল শারীরিক ও মানসিক নিগ্রহ। গোটা ঘটনাই ঘটে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সামনেই। আজ সকালে এই ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া নেতাজি কলোনি উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। বেশ কিছুক্ষণ মঞ্চে বসিয়ে রাখার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রধানশিক্ষক মনিগোপাল বিশ্বাস। এরপর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
একই ভাবে আজ স্কুল দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দির বাজারের ঝাঁপবেড়িয়া হাইস্কুল, হুগলির চণ্ডীতলার কলাছড়া হাইস্কুল, কালনার বিরুহা শরতচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, হুগলির চণ্ডীতলার কলাছড়া স্কুলে একই কায়দায় শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে ঢুকতে বাধা দিলেন তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা।
আর এই আন্দোলন এখন ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বাংলাদেশে। চুপ করে বসে নেই জাম-এ-ইসলামি সমর্থকরাও। হরতালের সমর্থনে পথে নেমেছে তারাও। আর তার জেরেই হচ্ছে সংঘর্ষ। বিভিন্ন জায়গায় জামাত সমর্থকদের হামলার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে যানবাহনে। কক্সবাজারে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়ফ নামতে গিয়ে মৃত্যু হয় এক ব্যক্তির। হরতাল সমর্থনকারীদের রোষ থেকে বাদ যায়নি অ্যাম্বুলেন্সও। সংঘর্ষ রুখতে পথে নেমেছে পুলিস ও আরএবি লাঠিচার্জ ছাড়াও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাতে হয়েছে পুলিসকে।
বাংলাদেশের বিভিন্নপ্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে হিংসার আগুন। কিন্তু, এই হিংসা কোনওভাবেই দমাতে পারেনি আন্দোলনকারীদের। প্রতিনিয়ত বাড়ছে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা। জামাতের ডাকা হরতালকে কার্যত তোয়াক্কা না করেই ঢাকা শহরে খোলা ছিল স্কুল, কলেজ এবং সরকারি দফতরগুলি। হরতালকে বানচাল করতে পথে নেমে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ব্লগার রাজীব হায়দরের খুনের প্রতিবাদেও সরব হয়েছেন আন্দোলনকারীরা। একাত্তরের যুদ্ধপরাধী আজাদের মৃত্যুদণ্ড রদের দাবিতে লাগাতার হরতালের ডাক দিয়েছে জামাত-ই-ইসলামি। অপর অভিযুক্ত আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজারও প্রতিবাদে সোচ্চার তাঁরা। এ নিয়ে তাঁরা পাশে পেয়েছে বিএনপি-কে। কিন্তু, সেই দাবিকে কার্যত উড়িয়ে দিয়ে শাহবাগের আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে আওয়ামি লিগ।
জামাত-এ-ইসলামি সহ যেকোনও সংগঠনকে শাস্তি দিতে যুদ্ধ অপরাধ আইন সংশোধন করল বাংলাদেশ সংসদ। এর ফলে জামাত-এ-ইসলামি দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণার পথ অনেকটাই খুলে গেল বলে মত পর্যবেক্ষক মহলের। আইন সংশোধনের খবর পৌঁছতেই ঢাকার রাস্তায় উচ্ছাসে ফেটে পড়েন বিক্ষোভকারীরা।
একাত্তরের যুদ্ধপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ। এরই মধ্যে শাহবাগ স্কোয়ারের আন্দোলনের সংগঠক ব্লগার রাজীব হায়দারের হত্যাকাণ্ড আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভরতদের অভিযোগ, জামাত সমর্থকেরাই খুন করেছে রাজীবকে।
এই পরিস্থিতিতে রবিবার বাংলাদেশ সংসদে পাস হয়ে গেল যুদ্ধ অপরাধ আইন সংশোধন বিল, দুহাজার তেরো। সংশোধিত এই আইন অনুযায়ী এবার থেকে যুদ্ধপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির পাশাপাশি দল বা সংগঠনেরও বিচারের সুযোগ থাকছে। একইসঙ্গে ট্রাইবুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আসামীর পাশাপাশি সরকারেরও আপিল করার সমান সুযোগ রাখা হয়েছে সংশোধিত আইনে।
এর ফলে বাংলাদেশের সর্ববৃহত্ ইসলামি দল জামাত-এ-ইসলামির যুদ্ধপরাধের বিচার করার পথ খুলল। এতে ভবিষ্যতে জামাতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার রাস্তা মসৃণ হল বলেও মনে করা হচ্ছে।
দিনকয়েক আগেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে জামাত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এই রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। রাস্তায় নেমে বিক্ষোভও হয়।
এবার সংশোধিত আইনে তাঁর সাজা বাড়ানোর আপিল করার পথও তৈরি হল।
জামাত এবং প্রধান বিরোধী দল বিএনপি রবিবার সংসদ বয়কট করেছিল। তাঁদের অনুপস্থিতিতেই পাশ হয়ে যায় এই সংশোধনী বিল। বিল পাশের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন শাহবাগ স্কোয়ারে আন্দোলনরত হাজার হাজার মানুষ। গত দু সপ্তাহ ধরে জামাতকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে আন্দোলনে সামিল তাঁরা।
অন্যদিকে আজ জামাতের ডাকা বাংলাদেশ বনধে উত্তেজনা এড়াতে তত্পর প্রশাসন।
কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা ধর্মঘটের প্রথম দিন বুধবার অফিসে আসেননি৷ আর এর খেসারত দিতে হল এক সরকারি কর্মীকে নিজের কান খুইয়ে৷ ধর্মঘটে অফিসে না আসায় পঞ্চায়েত কর্মীর কান কেটে শাস্তি দেওয়ার এই অভিযোগ উঠেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে৷ মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে এই ঘটনা ঘটেছে৷ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে হজরত ওমর নামে এই কর্মী অফিসে আসতেই তাঁর সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল সমর্থকরা৷ অভিযোগ, এরপরেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করা তারা৷ সেই আক্রমণেই তাঁর কান কেটে যায় বলে অভিযোগ৷ রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে বহরমপুরে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ ওই পঞ্চায়েত কর্মীর অভিযোগ, ১০-১২ জন সশস্ত্র তৃণমূল কর্মী তাঁর ওপর আক্রমণ করেন৷ জলঙ্গি থানায় ৫জন তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি৷
ধর্মঘটের দিন সরকারি কর্মীদের অফিসে হাজিরা দেওয়ার জন্য কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ উপযুক্ত কারণ না দেখাতে পারলে গরহাজিরদের একদিনের বেতন কাটা ও চাকরি জীবনের মেয়াদ একদিন কমানোর দাওয়াই দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ অতএব কেউ অফিসে না এলে তার শাস্তি হবে খাতায়-কলমে, এমনটাই প্রত্যাশিত ৷ কিন্তু এধরনের 'নিরীহ' শাস্তির অপেক্ষায় তৃণমূল কর্মীরা যে বসে থাকতে রাজি নয়, এই ঘটনায় তারই হাতেগরম প্রমাণ মিলল বলে মনে করা হচ্ছে ৷ আইন-কানুনের পরোয়া না করেই শাস্তি দেওয়ার ভার নিজেদের হাতেই তুলে নিচ্ছেন শাসক দলের কর্মীরা ৷ গতকালই পড়ুয়াদের কম হাজিরার কারণে সাজা পান এক সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক৷ হালিশহরে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে স্কুলে ঢুকে প্রধানশিক্ষক ও এক পার্শ্বশিক্ষককে মারধরের অভিযোগ ওঠে৷ বিভিন্ন ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু৷ বিভিন্ন মহলে সমালোচনা স্বত্বেও যে তৃণমূল কর্মীদের 'গা-জোয়ারি' অব্যাহত, তা এদিনের ঘটনায় আরও একবার প্রতিফলিত হল বলেই মনে করা হচ্ছে ৷
ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।৷ নাট্যকর্মী কৌশিক সেন এ ঘটনাকে নারকীয় বলে মন্তব্য করেছেন ৷ বিরোধী দলগুলিও ঘটনার নিন্দা করেছে। মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরি এই ঘটনাকে মধ্যযুগীয় বর্বরতা বলে অভিহিত করেছেন ৷
http://abpananda.newsbullet.in/state/34-more/33797-2013-02-21-08-40-13
শহীদ দিবসে গৌতমবুদ্ধের বঙ্গলিপি অধ্যয়ণ প্রসঙ্গ |
সোনা কান্তি বড়ুয়া । টরন্টো থেকে | |||||||||||||
রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১১ | |||||||||||||
সলিল চৌধূরীর এক বিখ্যাত গানে লেখা আছে, "বিচার পতি, তোমার বিচার করবে যারা, আজ জেগেছে সেই জনতা।" জনতার প্রশ্ন : গৌতমবুদ্ধ বঙ্গলিপি অধ্যয়ন করার পর ও আজ ১৪১৭ বঙ্গাব্দ কেন? ওড়িয়া ভাষায় মহাভারতের লেখক সারলা দাস লিখেছেন, "বউদ্ধ রূপেরে বিজে অছি জগন্নাথে," তবু ও বৌদ্ধদের বুদ্ধগয়ার মহাবোধি মন্দির এবং পুরীর জগন্নাথ মন্দির আজ ও হিন্দু রাজনীতি দখল করে আছে। বাংলা বর্ণমালায় বুদ্ধের ঐতিহাসিক স্মৃতি বিরাজমান এবং বাংলা ভাষা পালি ভাষার বিবর্তিত রূপ। প্রসঙ্গত: উল্লেখযোগ্য যে, বাংলা বর্ণমালার ইতিহাসে প্রায় ২৫৫৫ বছর পূর্বে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গৌতমবুদ্ধ বাল্যকালে যে বাংলা লিপি অধ্যায়ন করেছিলেন তা বাংলা বিশ্বকোষে (১৩শ ভাগ, পৃঃ ৬৫ ) সগৌরবে লিপিবদ্ধ এবং ইতিহাসে দেদীপ্যমান হয়ে আছে। বিংশ শতাব্দীর আটচলিশ সাল থেকে বায়ান্নোর আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্র"য়ারী আমি কি ভুলিতে পারি? আমার লেখা কবিতায়, "বাঙালির অন্তর জগতে সালাম, বরকত, জব্বার, রফিকের স্মৃতি অম্লান, শহীদ হয়ে তোমাদের বাংলা ভাষায় দেশ প্রেম করে গেলে দান। যে কবিতাখানি সযতেœ করেছি রচনা আজ, তার মাঝে হেরি আমি একুশের ভাষা সৈনিকদের বায়ান্নোর লাশ। ভাষা শহীদদের পদ দলিত পাক সেনাদের প্রেত অট্টহাসি, বাংলা বর্ণমালা ও জাতীয় অস্তিত্বের প্রতিসূত্রে উঠিছে উচ্ছ্বসি। মসজিদ মন্দির বিহার গীর্জায় যাবার আগে, বাঙালি মন কেন হঠাৎ করে চলে যায় শহীদ মিনারে? হে মোর চিত্ত গণতীর্থে জাগোরে ধীরে শহীদ মিনারের স্মৃতির সাগর তীরে।" অমর একুশের রক্তাক্ত ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হ'ল বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" আলোকিত বিশ্বের গৌরবোজ্জ্বল প্রতিশ্র"তি। বৌদ্ধধর্ম, বুদ্ধাব্দ ও পালি ভাষা হারিয়ে যাবার সাথে যদি চর্যাপদের বাংলা ভাষা টা ও হারিয়ে যেতো, তবে একুশ কোটি বাঙালির কি হতো? বাংলাভাষায় লেখা বুদ্ধের জীবনী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পূর্বে ও ছিল না। ইতিহাস চুরি ও তত্ত্বের ফাঁদে ১৯৩১ সালে বগুড়ার মহাস্থানগড়ে ছয় লাইনের একটি ব্রাহ্মীলিপিতে উৎকীর্ণ সম্রাট অশোকের শিলালিপিকে অস্বীকার করে বিতর্কিত বঙ্গাব্দ রচিত হয়েছিল আজ ও ইহা কোলকাতা যাদুঘরে বিরাজমান। হিন্দুরাজনীতি টাকা ও ক্ষমতার লাভের জন্যে গৌতমবুদ্ধকে হিন্দু মন্দিরে পূজা না করে ও নবম অবতার করেছেন, এবং বাবরি মসজিদ ধ্বংস করতে 'আল্লাহ উপনিষদ' রচনা করে হিন্দুস্থানে রাম রাজত্ব প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে। "মনে মৈত্রী করুণ রস, বাণী অমৃত পদ। জনে জনে হিতের তরে, পড়েন 'শহীদ দিবস, 'বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন,' গৌতমবুদ্ধের জীবনী এবং চর্যাপদ।" চর্যাপদে গৌতমবুদ্ধকে পূজা করার নীতিমালা থাকা সত্বে ও বঙ্গাব্দ বুদ্ধের নামে বুদ্ধাব্দ হল না কেন? ব্রাহ্মণ্যবাদের হিন্দুরাজনীতি সম্্রাট আকররের রাজত্বকালে "আল্লাহ উপনিষদ" রচনা করে হিজরির সাথে বঙ্গাব্দের মিলন হ'লে আজ ১৪৩২ হিজরিতে ১৪১৭ বঙ্গাব্দ কেন? ইহা নহে হিজরি সাল, না বাংলা বঙ্গাব্দ। সহজ কথায় হিন্দু রাজনীতির ষড়যন্ত্রে বাঙালির সত্যিকারের ইতিহাসের মস্তক বিদীর্ণ করে বুদ্ধাব্দকে বাদ দিয়ে বঙ্গাব্দ প্রতিষ্ঠিত হল। জাতিভেদ প্রথার মাধ্যমে বৈদিক ব্রাহ্মণ্যসংস্কৃতি ধর্মের অপব্যবহার করে লেখাকে নরকের দ্বার স্বরূপ ফতোয়া জারি করে বিধান দিলেন, "স্বরস্বতী বাগদেবী, লিপির দেবী নয়। দেবভাষায় কোন লিপি নেই (দেশ, ১৪ পৃষ্ঠা, কলকাতা, ১ ফেব্র"য়ারী ১৯৯২)।" গৌতমবুদ্ধ দক্ষিন এশিয়ার এই সামাজিক বিকৃতির হাত থেকে জনতাকে রক্ষা করেন। বাংলা বর্ণমালায় বাংলার ইতিহাস প্রতিবিম্বিত হয়ে আছে। বাংলা ভাষার প্রথম বইয়ের নাম "চর্যাপদ।" হিন্দুত্ববাদীরা তুর্কীদের নাম দিয়ে ভারত ও প্রাচীন বাংলার অনেক বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করার পর বিশ্ববৌদ্ধদের সবচেয়ে পবিত্রতম তীর্থস্থান বুদ্ধগয়া মহাবোধি মন্দির আজ ও অন্যায়ভাবে দখল করে আছে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে বৌদ্ধ ও মুসলমানদের মানবাধিকার নেই বেন? আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার বিরুদ্ধে বৈদিক সমাজপন্থী ব্রাহ্মণ্যবােেদর 'জাতিভেদ প্রথার ট্রাজেডি' রক্ষার মন্ত্র ছিল: "অষ্ঠাদশ পুরাণানি রামস্য চরিতানি চ। ভাষায়াং মানবঃ শ্র"ত্বা রৌরবং নরকং ব্রজেৎ ।। অর্থাৎ ব্রাহ্মণ ব্যতীত জন সাধারণ রাম কাহিনী সহ ১৮ পুরাণ সাহিত্যসমূহের ভাষা শ্রবণে (মৃত্যুর পর) রৌরব নামক ভয়ঙ্কর নরকেই প্রবেশে বাধ্য হবেন।" কথায় বলে, " শূদ্র সন্তানগণ চর্তু ভেদ ১৮ শাস্ত্র অধ্যয়ন করার পর ও ব্রাহ্মণ সন্তানদের মতো পন্ডিত হতে পারবেন না। হরলাল রায়ের মতে, "চর্যার যুগে ও আমরা দেখতে পাই ব্রাহ্মণরা সংখ্যায় কম হলে ও কঠোর সমাজ বন্ধনে দেশের অন্ত্যজ গণসমাজ মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। অথচ তারা তাদের পাওনা হিসেব ও বুঝে পায়নি। এমন কি বুকের ভাবকে মুখের ভাষায় প্রকাশ করতে গেলে ও তাদের উপর অভিশাপ ছিল রৌরব নরকে তাদের স্থান হবে। এমনি অবস্থায় সংগ্রাম করেছে তারা মুখের ভাষার জন্য; পারেনি; 'আমার ভাষার'র জন্য দেশ ত্যাগ করেছে তবুও ছাড়েনি আপন ভাষাকে মাতৃভাষাকে। জয় হয়েছে শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রের। আজ তো বাংলা দেশে সাহিত্যের এ ভাষা সংস্কৃত নেই।" বিশ্বের ধর্ম প্রচারকদের মধ্যে একমাত্র গৌতমবুদ্ধ (রাজপুত্র সিদ্ধার্থ) ২৫৫৫ বছর পূর্বে বঙ্গলিপি অধ্যয়ন করার গৌরবোজ্জ্বল কাহিনীর সচিত্র খন্ডচিত্র ইতিহাস ভারতের অজন্তা গুহায় আজ ও বিরাজমান। ব্রাহ্মী (অশোকের শিলালিপির ভাষা) ভাষা থেকে সংস্কৃত ভাষার বর্ণমালা দেবনাগরী লিপি, তামিল লিপি, বাংলা বর্ণমালা সহ প্রায় ৪০টি ভাষার বর্ণমালা উৎপত্তি। ব্রাহ্মণ্য রাজনীতি বৌদ্ধধর্মকে ধ্বংস করতে গিয়ে বাংলাভাষা ও বঙ্গাব্দ (বুদ্ধাব্দ) কে ধ্বংস করেছিলেন। রাজা শশাংক (৮ম শতাব্দী) এবং শংকারাচার্য (নবম শতাব্দী) বোধিবৃক্ষ, বৌদ্ধ সাহিত্য, বৌদ্ধ জনতা এবং বৌদ্ধধর্মকে সমূলে ধ্বংস করার বিষাদ সিন্ধুর রক্তাক্ত কাহিনী ইতিহাসে বিরাজমান। কিন্তু বাংলার অতীত আজ ও মুখ ফোটে মনের কথা বলতে পারে নি। হিন্দুধর্মের রাজনীতি বৌদ্ধ চর্যাপদ আবিষ্কার হওয়ায় বাংলাভাষাকে হিন্দুধর্মের লেজুড় বানাতে পারেননি। বৌদ্ধধর্মকে হিংসা করে পরধর্ম আক্রমন করতে হিন্দুরাজনীতি বুদ্ধগয়া দখল করার পর বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেন। অন্যায়কে সহ্য করা অপরাধ। হিন্দু রাজনীতি ব্রাহ্মণদের আদেশে বৌদ্ধধর্ম ধ্বংস করেন। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল কায়দে আযম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ তদানিন্তান পূর্ব পাকিস—ানে (বাংলাদেশ) এসে বাঙালি জাতির বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি সরকারিভাবে বন্ধ করে দিয়ে ঊর্দু ভাষাই একমাত্র পাকিস্তানের রাষ্ঠ্রভাষা ঘোষনা করেছিলেন। ইসলাম ধর্মের নাম দিয়ে বাংলাদেশের আপাদ মস্তক পাকিস্তানী বোরখায় ঢাকা ছিল, ধর্মের নাম অপব্যবহার করে বাঙালির বঙ্গাব্দ ও বাংলা ভাষা মুখ থেকে ছিনিয়ে নেয়া সহজ ব্যপার নয়। প্রসঙ্গত: বৈদিক ইন্দ্র রাজা ৩৫০০ পূর্বে মহেঞ্জোদারো হরপ্পার প্রাগৈতিহাসিক বৌদ্ধধর্ম সহ হাজার হাজার নর নারী ও শিশু হত্যা এবং সিন্ধু সভ্যতা ধ্বংস করে আর্যদের বৈদিক সভ্যতা স্থাপন করেছিলেন (ঋগে¦দ ১/৩৬/৮); এবং আছে যদু (যাদব ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণর প্রথম পূর্ব পুরুষ) দূর দেশ থেকে ভারতে এসেছিলেন। "সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শন না হলে ও 'হাই মাউন্ড' এর চুড়োয় বৌদ্ধস্তুপটি ও অবশ্য দেখার মতো (বিবর্ণ সিন্ধূ , ভোরের কাগজ, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০০৬, ঢাকা)। আর্যদের আধুনিক রামায়নের অযোধ্যা কান্ডের বত্রিশ নম্বর শ্লোকে গৌতমবুদ্ধকে 'চোর এবং নাস্তিক' বলে গালাগাল দেবার পর আজকের হিন্দুরাজনীতি বুদ্ধকে হিন্দুর নবম অবতার বানিয়ে বৌদ্ধ জগতের সবচেয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ তীর্থভূমি বুদ্ধগয়াকে দখল করে জাপান, থাইল্যান্ড সহ বৌদ্ধবিশ্ব থেকে 'টাকা আনা পাই' কামাচ্ছে। কোন হিন্দু মন্দিরে সকাল বিকাল বুদ্ধ পূজা না করে ও গৌতমবুদ্ধ হিন্দু রাজনীতির অবতার হ'ল কি কারনে? দেশ পত্রিকার লেখক সোমনাথ রায়ের মতে, "বিষমোহয়ম উপন্যাসঃ। বেদ ও কৃষ্ণ একই সময়ে মাটিতে দাঁড়িয়ে আছেন। মহাভারতের আর্যসমাজের ওই বিশৃংখল অবস্থায় এই গোঁজামিল অবশ্যম্ভাবী, তাই অন্যায় ন্যায় হল, সত্য হল অসত্য, অসত্য হল সত্য, অধর্ম যুদ্ধ হল ধর্ম য্দ্ধু। এই হীন ব্যাপারগুলির উদ্দেশ্য আর্যদের তাঁবেদার করে রাখা, না হলে শূদ্ররা আসবে। তাই কলিযুগ বা শূদ্রযুগ আসছে বলে ভয় দেখানো (চিঠিপত্র বিভাগ, দেশ, পৃষ্ঠা ১৯, কোলকাতা, নভেম্বর ১, ১৯৯৯ সাল)। জ্ঞান বিজ্ঞানের আলোকের ঝর্ণাধারায় সমৃদ্ধ আজ বাংলাভাষা, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ঠ্রের 'রাষ্ঠ্রভাষা এবং আগামি দিনের বঙ্গাব্দ হবে বুদ্ধবর্ষ, যিনি বঙ্গলিপি অধ্যয়ণ করেছিলেন। বাঙালিদের প্রশ্ন : ১৪১৭ বঙ্গাব্দ কি আজকের ১৪৩২ হিজরী সালের উপর প্রতিষ্ঠিত? গায়ের জোরে গৌতমবুদ্ধের বঙ্গলিপি অধ্যয়ণ মুছে ফেলা সহজ ব্যাপার নয়। বাংলাভাষা পালি ভাষার বিবর্তিত রুপ, চর্যাপদ এবং বগুড়ার মহাস্থানের সম্রাট অশোকের শিলালিপিতে বাংলা বর্ণমালা বিরাজমান। জনতার আদালতে বাঙালিরা সহ আমরা সাম্প্রদায়িক বঙ্গাব্দ রচনার বিচার চাই। স্বয়ং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে "চন্ডালিকা" রচনা করে গৌতমবুেেদ্ধর জয়গান করেন এবং গীতার বেদ উপনিষদের উদারতার অভাব তাঁর সততায় খুব সহজে ধরা পড়েছিল (পারস্যে, রবীন্দ্র রচনাবলী, ১০ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৭৫৪, প: ব: সরকার, ১৩৬৮ বঙ্গাব্দ এবং দেশ, পৃষ্ঠা ১৯, কোলকাতা, নভেম্বর ১৯৯৯ সাল)।" বঙ্গাব্দকে ইতিহাসের মূল শেখড় থেকে বিচ্ছিন্ন করে হিন্দুত্ববাদীরা ষড়যন্ত্র করে "আল্লাহ উপনিষদ" রচনায় বহিরাগত মুসলমানদের কাঁধে বন্দুক রেখে বৌদ্ধদের বুদ্ধাব্দকে শিকার করে ধ্বংস করার পর সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে গৌতমবুদ্ধের বুদ্ধাব্দকে বাদ দিয়ে বঙ্গাব্দ প্রচলনের নাটক করেছিল। হিন্দুত্ববাদীরা ৫০০ বছরের পুরানো বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে রামজন্মভূমির নামে রাম মন্দির প্রতিষ্ঠায় হিংসা ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করলে, জনগনমন অধিনায়ক গৌতমবু্েদ্ধর ধর্ম ও সভ্যতা কি ভাবে ধ্বংস করেছে ইতিহাসে আজ ও ইহা বিরাজমান । হিংসার কারনে চতুবর্ণ দিয়ে "জাতিভেদ প্রথার" মাধ্যমে গীতা সহ হিন্দুধর্মের উৎপত্তি হয়েছিল। অহিংসা পরমধর্ম দিয়ে বৌদ্ধধর্ম মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পার ধর্ম ছিল। বৈদিক রাজা ইন্দ্র সেই প্রাগৈতিহাাসক বৌদ্ধধর্ম ধ্বংস করে ভারতে বৈদিক ধর্ম প্রতিষ্ঠিত করার পর অহিংসার পরিবর্তে হিংসার ধর্ম বা "জাতিভেদ প্রথা" দিয়ে বিশ্বমৈত্রী ও মানবতাকে খন্ড বিখন্ড করেছিলেন। ঋগে¦দে (১/৩৬/৮) আছে যদু (যাদব ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণর প্রথম পুরুষ) দূরদেশ থেকে ভারতে আসেন (দেশ, পৃষ্ঠা ১৪, কোলকাতা, নভেম্বর ১, ১৯৯৯)। বিদেশী বৈদিক ধর্ম বা বিষবৃক্ষ ভারতে প্রবেশ করে স্বদেশী সিন্ধুসভ্যতার বৌদ্ধধর্মকে ধ্বংস করেছিল (ইংরেজি ভাষায় রচিত স্বপন বিশ্বাসের লেখা বিখ্যাত গ্রন্থ "মহেঞ্জোদারো হরপ্পায় বৌদ্ধধর্ম, ১৯৯৯, কোলকাতা)। বাংলা বর্ণমালা কবে, কে প্রথম পড়েছিলেন আমরা ভুলে গেছি। প্রসঙ্গত:উলেখযোগ্য যে, (নারায়ন স্যানালের লেখা বই "অজন্তা অপরুপা") ভারতের অজন্তা গুহাচিত্রে বঙ্গবীর বিজয় সিংহের ঐতিহাসিক শ্রীলংকা জয়ের ইতিকথা বিরাজমান অথচ চর্যাপদ বা বাংলা বর্ষ গণনায় আজ ১৪১৬ বর্ষ হবার কথা নয়। আজ ২৫৫৫ বাংলা বর্ষ ( থাইল্যান্ডের পঞ্জিকায় বুদ্ধবর্ষ ২৫৫৫) হবার কথা ছিল। বঙ্গাব্দের ইতিহাস চুরির পূর্বে সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে হিন্দু পন্ডিতগণ "আল্লাহ উপনিষদ" রচনা করে সদাশয় সম্রাটের কৃপাদৃষ্ঠি লাভ করেন। অগ্নি পুরান, বায়ু পুরান ও বিষ্ণু পুরান সহ ইতিহাসের অপব্যাখ্যা, মনগড়া ইতিহাস তৈরীর ব্যাপারে পুরানো শাসকদের (সেনাপতি পুষ্যমিত্র, রাজা শশাংক ও পুরোহিত শংকারাচার্য) জঘন্য চাতুরীর ইতিহাস লিখতে গেলে একটি মহাভারত লিখতে হয়। সম্রাট আকবরের আমলে সর্বপ্রথম বঙ্গাব্দ দিয়ে সরকারী কর্ম শুরু হলে ও কিন্তু বাংলাদেশে সোনার গাঁ এর শাসক ঈশা খাঁ বিভিন্ন কারনে সম্রাট আকবরের বিরুদ্ধে সেনাপতি মানসিংহের সাথে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ন হয়েছিলেন। বুদ্ধাব্দকে বাদ দিয়ে বাংলা লিপির ঐতিহাসিক মূল্যায়ন গৌতমবুদ্ধের বঙ্গলিপি অধ্যয়ন কি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যাবে? ইতিহাস চুরির ফাঁদে বঙ্গাব্দ কাহিনী: দক্ষিন এশিয়া সহ বাংলাদেশের জনতার বৌদ্ধ ঐতিহ্য বাদ দিয়ে দিল্লিতে বসে তদানিন্তন হিন্দু মুসলমান শাসকগণের শকাব্দ এবং হিজরি বর্ষকে কেন্দ্র করে রাতারাতি বঙ্গাব্দের ইতিহাস রচিত হয়েছিল। লেখক শৈলেন্দ্র ঘোষের মতে, "এই জটিলতা নিরসনের জন্য পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে গৌড়েশ্বর হোসেন শাহ তাঁর উজির পুরন্দর খাঁ, মুকুন্দ দাস, এবং মালাধর বসু প্রভৃতি সভাসদদের পরামশক্রমে বঙ্গাব্দের প্রবর্তন করেন।" বাংলাভাষা, বাংলা বর্ণমালা, বঙ্গাব্দ এবং বাঙালির স্বাধীনতা নিয়ে প্রতিটি বাঙালি বাংলাদেশে জন্ম গ্রহন করেন। ইসলাম ধর্মের নামে বাংলাদেশে (পূর্ব পাকিস্তানে) কায়দে আযম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহের উর্দূ ভাষা প্রচলনের বিরুদ্ধে দেশে রক্তাক্ত ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের ক্ষেত্রে বাঙালির অখন্ড সাধনা এবং এই অখন্ড সাধনার ফলেই সালাম, বরকত, রফিক, সহ অনেক নাম না জানা শহীদদের জীবন দান। গৌতমবুদ্ধের সময়ের বাংলা লিপি বহু চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে এবং নানা ষড়যন্ত্রের দুর্ভেদ্য প্রাচীর বিদীর্ণ করে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্র"য়ারীতে প্রতিষ্ঠিত হলো অনাগত বংশের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা আন্দোলন প্রবর্তন সূত্রময় 'শহীদ দিবস।' ধর্মের নামে অবিচারকে বাদ দিয়ে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে বাঙালি জাতি একতাবদ্ধ হয়ে মায়ের ভাষা বাংলা ভাষার জন্যে প্রান দান করেন। গৌতমবুদ্ধের বঙ্গলিপি অধ্যয়ণ সহ বাংলা বর্ণমালার হাতধরেই বাঙালি জাতির সভ্যতার যাত্রায় বাংলাভাষা পালিভাষার বিবর্তিত রূপ পরিগ্রহ করে প্রথম বাংলা বইয়ের নাম "চর্যাপদ" এবং অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান বাংলাদেশের ইতিহাসের উত্তম ধ্যানী পুরুষ। তাই বাংলাদেশে গৌতমবুদ্ধের বুদ্ধাব্দই বঙ্গাব্দ ছিল। বাংলাদেশে মাটির নীচে ও উপরে বুদ্ধমূর্তি বিরাজমান, দেশে বৌদ্ধ পালরাজাদের চারশত রাজত্ব, গৌতমবুদ্ধের বাংলাভাষা অধ্যয়ণ, বাংলাভাষার প্রথম বই বৌদ্ধধর্মের 'চর্যাপদ'এবং বাংলাভাষা পালিভাষার বিবর্তিত রূপ হওয়ার জন্যে গৌতমবুদ্ধের নামে বঙ্গাব্দের নামকরন হওয়ার ঐতিহাসিক দাবী ছিল। যীশু খৃষ্ঠের নামে খৃষ্ঠাব্দ আছে, ঐতিহাসিকদের দৃষ্ঠিতে গৌতমবুদ্ধ বাংলা বর্ণমালার ইতিহাস বিজয়ী পাঠক হয়ে ও তাঁর নামে বাংলাদেশের পঞ্জিকায় (ক্যালেন্ডারে) বুদ্ধাব্দ লেখা হলো না কেন? ২৩০০ বছর পূর্বে সম্রাট অশোকের মৃত্যুর পর পুরোহিত ও হিন্দু রাজ শক্তি মানবাধিকার ধ্বংস করতে দিনের পরদিন বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞ প্রবর্তন করার পর ও সমাজে 'সাম্য ও মৈত্রী প্রতিষ্ঠার' জন্যই নাটক চর্চা করতেন এবং চর্যাপদের ১৭ নম্বর কবিতায় (চর্যায়) আমরা পড়েছি, "নাচন্তি বাজিল গান্তি দেবী / বুদ্ধ নাটক বিসমা হোই অর্থাৎ দেবী গাইছেন, বজ্রাচার্য নাচছেন, এভাবে বুদ্ধ নাটক শেষ হলো। সংসারের দুঃখ থেকে নির্বানলাভ বা বিমুক্তি সুখই ত্রিপিটক ও চর্যাপদে মানব জীবন নিয়ে সাধনা । বৌদ্ধ তান্ত্রিক মতে, গুহ্য নাভি মূলকে বলা হয় নির্মানচক্র, হদয়ে ধর্মচক্র, কন্ঠে সম্ভোচক্র, মস্তিষ্কে মহাসুখচক্র। দেহের নাড়িকে সংযত করার সাধনা তান্ত্রিক সাধনা। দেহে বামে ইড়া, ডানে পিঙ্গলা, মাঝে সুষূম্না নাড়ি। সুষম্না নৈরাত্মা, বোধিচিত্ত, অবধূতী বা যোগীনির প্রতীক। ইড়া পিঙ্গলাকে যথাক্রমে শক্তি ও শিবের প্রতীক। ইড়া পিঙ্গলাকে সাধনার মাধ্যমে সুষুম্নাতে মিশিয়ে দিতে হবে। তারপর সাধনায় সষুম্না পরিনত হবে সহস্রায় বা মহাসুখ চক্রে। সেখানেই আছে মহা সহজানন্দ। ঐতিহাসিক ষড়যন্ত্রে তদানিন্তন রাজনীতিবিদরা বুদ্ধাদ্ধকে বাদ দিয়ে হিজরী সাল নিয়ে বঙ্গাব্দ প্রবর্তন করা হল। নববর্ষ ১৪১৭ বঙ্গাব্দ (সৌরবর্ষ) হলে আজ ১৪৩১ হিজরী (চান্দ্র বর্ষ) হয়। ১৪১৭ বঙ্গাব্দ কি আরবীয় রাজনৈতিক ঐতিহ্যের সাল, না কি বাঙালির ললাটে কলঙ্কিত বঙ্গাব্দ? বাংলাভাষা পালি ভাষার বিবর্তিত রূপ এবং বৌদ্ধ ত্রিপিটকে পালি ভাষার নিজস্ব কোন বর্ণমালা নেই। সম্রাট অশোকের মৃত্যুর পর সেনাপতি পুষ্যমিত্র (খৃঃ পূর্ব ১ম শতাব্দিী) ও গৌড়ের (বাংলা) রাজা শশাংক (৭ম শতাব্দি) কর্তৃক বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞের কারনে বাংলা ভাষায় পালি ত্রিপিটক রচিত না হলে ও শ্রীলংকা সহ বৌদ্ধবিশ্বে পালি ভাষায় থেরবাদী বৌদ্ধ ত্রিপিটক বিরাজমান। দীর্ঘদিন ধরে বাঙালি জাতি বাংলা বর্ণমালা ইতিহাসের সাথে বঙ্গাব্দের কোন মিল খুঁজে পাচ্ছেন না। রাজপুত্র সিদ্ধার্থ (গৌতমবুদ্ধ) বঙ্গলিপি অধ্যয়ন করলে আজ ১৪১৭ বঙ্গাব্দ না লিখে বাঙালি জাতির পঞ্জিকায় ২৫৫৫বঙ্গাব্দ লেখার ইতিহাস জড়িত ছিল। বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাস জুড়ে গৌতমবুদ্ধ বিরাজমান। প্রসঙ্গত: আজকের ভারতীয় সভ্যতা ও চীন সভ্যতা গৌতমবুদ্ধের অবদানকে অস্বীকার না করে অবনত মস্তকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন ভারতের স্বাধীন জাতীয় পতাকায় "অশোকচক্র" স্থাপন করে এবং চীনদেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সভ্যতা ও শিক্ষা প্রণালীর মাধ্যমে। বিখ্যাত চৈনিক পরিব্রাজক ইউয়েন চোয়াঙ ৬৩৯ খৃষ্ঠাব্দ থেকে ৬৪৫ খৃষ্ঠাব্দের মধ্যে পুন্ড্রবর্ধন (বগুড়া) পরিভ্রমন করেন। তিনি তখন বাংলাদেশে অনেক বৌদ্ধ প্রতিষ্ঠান ছাড়া ও নগরের (বগুড়া) কাছে এক বিরাট বৌদ্ধ বিহার দর্শন করেন। বুদ্ধাব্দ কে বাদ দিয়ে প্রতিদিন সকালে আকাশবানীতে সংস্কৃত ভাষায় সংবাদ পরিবেশনের সময় শকাব্দ ঘোষনা করা হয়। অথচ "বন্দে মাতরম" শীর্ষক কবিতার লেখক সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায়, "তখন বিশুদ্ধাত্মা শাক্যসিংহ (বুদ্ধ) অনন্তকালস্থায়ী মহিমা বিস্তারপূর্বক, ভারতাকাশে উদিত হইয়া, দিগন্ত প্রসারিত রূপে বলিলেন, - আমি তোমাদের রক্ষা করিব।" অষ্টম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত ছিল সাধক চর্যাকারগনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস। যার দূর্ণিবার জীবন্ত স্রোত হাজার বছরের সংকোচের জগদ্দল পাথর ভেঙ্গে এলো আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্র"য়ারীর উনিশশো বায়ান্ন সাল থেকে আজকের বাঙালী ঐতিহ্যমন্ডিত আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাঙালী জাতি আবার নতুন সহস্রাব্দের আলোকে আবিস্কার করবে বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন বৌদ্ধ চর্যাপদের প্রতিটি শব্দ ও তার গভীর মর্মার্থকে। কারণ দেশ ও ভাষা বাঙালীর কাছে নিরেট বাস্তব, অতিশয় অপরিহার্য। চর্যাপদ পাঠ এবং গবেষণার সময় মনে হবে বাংলা কেবল একটি দেশ নয়, সে একটি সভ্যতা, একটি সংস্কৃতি, একটি অপাপবিদ্ধ জীবনাদর্শ বা জীবন দর্শনের প্রতীক, যার মর্মবাণী হল বিশ্ব মানবতাবাদ। গৌতমবুদ্ধ প্রাচীন দক্ষিন এশিয়ায় (ভারতীয়) বর্ণমালার রক্ষক বা মহাজনক বাংলা বর্ণমালা যে কতো পুরানো তা ইতিহাস আমাদেরকে ভালোভাবে ব্যাখ্যা করেছেন । অধ্যাপক হরলাল রায় তিনি তাঁর লেখা 'চর্যাগীতি' গ্রন্থের দশম পৃষ্ঠায় লিখেছেন, 'ধর্মকোলাহলেই বাংলা সাহিত্যের পুষ্টি ও বিকাশ। বাঙালী সমাজের এই করুণ ছবি দেখতে পাই ৩৩ নং চর্যায়। "টালত মোর ঘর নাঁহি পড়বেসী। হাড়ীতে ভাত নাঁহি নিতি আবেশী। এর মানে, নিজ টিলার উপর আমার ঘর। প্রতিবেশী নেই। হাঁড়িতে ভাত নাই, অথচ নিত্য ক্ষুধিত।" নিজ বাসভূমেই পরবাসী করে দিয়েছে বাঙালীকে। ইতিহাসের এই অন্ধকার যুগে তবু বাঙালী দুহাতে অনন্ত সমস্যার পাথর সরিয়ে জীবনের যাত্রা পথ ধরে হাঁটতে শুরু করেছিল অন্যতর আলোর লক্ষ্যে। মানবদেহ বাংলাদেশ এবং চর্যাপদে বাঙালির আত্মপরিচয়ের সন্ধান ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক শেখড়ের সন্ধানে ইহা ও এই প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উলেখযোগ্য যে, আমরা 'বৌদ্ধ চর্যাপদের' সন্ধান পেলাম আজ থেকে ১০২ বছর আগে। ১৯০৭ খৃষ্টাব্দে নেপালের রাজদরবারের পুঁথিশালায় প্রাচীন পান্ডুলিপির সন্ধান করতে গিয়ে মহামহোপধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহোদয় উক্ত বৌদ্ধ চর্যাপদের মরমী সংগীতগুলো আবিস্কার করেন এবং ভাষা আন্দোলনের আলোকে চর্যাপদ সন্ধানের ( ১৯০৭- ২০০৭) শতবার্ষিকী ছিল। পরে "চর্যাপদ" সম্বন্ধে গবেষণা গ্রন্থ লিখেছেন ডঃ দীনেশ চন্দ্র সেন, ডঃ সুনীতি কুমার চাট্টোপাধ্যায়, ডঃ মোহাম্মদ শহীদুলাহ, ডঃ প্রেবোধ চন্দ্র বাগচি, ডঃ রাহুল সাংকৃত্যায়ন, ডঃ সুকুমার সেন, ডঃ মনীন্দ্রমেহন বসু, ডঃ শশীভূষণ দাশগুপ্ত, ডঃ তারাপদ মুখার্জী, ডঃ অতীন্দ্র মজুমদার, অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের পন্ডিত পার কভিরনে সহ আর, ডঃ আহমদ শরীফ, ডঃ আনিসুজ্জামান, ডঃ হাসনা জসীমউদ্দীন (মওদুদ) ও অনেক বিখ্যাত গুণীজন। মুনিদত্ত চর্যাপদ তিব্বতি ভাষা থেকে সংস্কৃত ভাষায় অনুবাদ করেন। সম্প্রতি পৃথিবীর বিভিন্ন ইংরেজী সংবাদপত্রে আমরা পড়েছি "বুড্ডিজম ওন দি বেষ্ঠ রিলিজিয়ন ইন দি ওয়ার্ল্ড এওয়ার্ড।" সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে ৭ই জুলাই ২০০৯; আন্তর্জাতিক সর্বধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা উন্নয়ন সৌভ্রাতৃত্ব সংঘ (আই.সি. এ.প. উ.এস), "বৌদ্ধধর্ম কে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম" হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে পুরস্কৃত করেছেন। কারন সন্ত্রাসের বিশ্বায়ন ধর্ম না রাজনীতি? আজকের মতো বাঙালি জাতির প্রাচীন বাংলাদেশের সর্বশ্র্ষ্ঠে ধর্ম ছিল বৌদ্ধধর্ম। প্রায় হাজার বছর আগে ব্রাহ্মণ, হিন্দু শাসকগণ ও বখতিয়ার খিলজির হিংসার আগুনে বৌদ্ধধর্ম জ্বলে পুড়ে গেল। অহিংসায় মানুষের পরিচয়। হিংসায় পাশবিকতার পরিচয়। জনতার প্রশ্ন : ১০৪১ সালে অতীশ দীপংকর ( গৃহীনাম : রাজপুত্র চন্দ্রগর্ভ, জন্ম ৯৮২ মৃত্যু তিব্বতে ১০৫৪) তিব্বতে যাবার পর বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্ম রাতারাতি কোথায় হারিয়ে গেল? ১২০১ সালে বখতিয়ার খিলজির হিংসার আগুন পাল সম্রাট ধর্মপালের (৭৭০ - ৮১০) প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিখ্যাত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় (বিহার, ভারত) ধ্বংস করে দিল। শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা বৌদ্ধ বিশ্বের বৌদ্ধ জাতি সহ বিশ্বমানবতায় আলোকিত সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব। খৃষ্ঠপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে কপিলাবাস্তু নগরে মহামানব গৌতমবুদ্ধ রাজপুত্র রূপে এ বৈশাখী পূর্ণিমায় জন্ম গ্রহন করেছিলেন। পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে এই বৈশাখী পূর্ণিমায় তিনি পরমজ্ঞান বুদ্ধত্ব লাভ করেন এবং ৮০ বছর বয়সে এই বুদ্ধপূর্ণিমা তিথিতে তিনি মহাপরিনির্বান লাভ করেন। এই ত্রিস্মৃতিতে সমুজ্বল আজকের মহান বুদ্ধ পূর্ণিমার ২৫৫৪ বুদ্ধাব্দ (বুদ্ধবর্ষ)। বাংলা ভাষা বৌদ্ধ চর্যাপদের অবদান হলে, বঙ্গাব্দ বুদ্ধাব্দকে বাদ দেয় কেমন করে? ইতিহাস তো রাজনীতির হাতের পুতুল নয়। বাংলাভাষা পালিভাষার বিবর্তিত রূপের ভাবমূর্তি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের চরম বিকৃতির মতো বঙ্গাব্দ প্রবর্তনের সময় গৌতমবুদ্ধকে বাঙালির ইতিহাস থেকে সম্পূর্ন বাদ দিয়ে হিন্দু মুসলমান ধর্মকে ব্যবহার করেছেন। সম্প্রতি টরন্টোর বাংলাদেশী সাপ্তাহিক "আজকাল" (১১ আগষ্ট, ২০০৯) পত্রিকার ৩০ পৃষ্ঠায় ইংরেজি সংবাদে আমরা পড়েছি, "বৌদ্ধধর্ম পৃথিবীর "সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মের "পুরস্কার লাভ করেছেন।" প্রতœতাত্বিক, ভূতাত্বিক, পুরাতত্ত্ব, নৃতত্ব ও ভাষাতত্বের আলোকে বাংলাভাষা পালিভাষার বিবর্তিত রূপ এবং বৌদ্ধদের অবদানে চর্যাপদ এবং আজকের ২৫৫৪ বঙ্গাব্দ (১৪১৭ নয়)। অথচ বিদেশি শাসকগণ দিলীর সিংহাসনে বসে বঙ্গাব্দের নব সংস্করন প্রবর্তন করেন এবং উক্ত আইনের পরিনামফল আজকের ১৪১৭ বঙ্গাব্দ ট্রাজেডি। বর্তমানে নয়া দিল্লিস্থ ভারতের রাষ্ঠ্রপতি ভবনে দরবার প্রাঙ্গনে এখন সুদীর্ঘ ধ্যানমগ্ন বুদ্ধ বিরাজমান, যিনি ভারতের জনগন ও শাসকবৃন্দকে আশির্বাদ করছেন। এর পাশে আছে সম্রাট অশোক হল, এখানে ভারতীয মন্ত্রীরা শপথ নেন এবং বিদেশী রাষ্ঠ্রদূতগণ মাননীয় রাষ্ঠ্রপতির নিকট তাঁদের পরিচয় পত্র পেশ করেন। সহজ ভাষায় বৌদ্ধ বিহার, মসজিদ, চার্চ ও বিভিন্ন অহিন্দু উপাসনালয় সমূহে হিন্দু রাজনীতি বেদখল করার ক্ষমতা পেয়েছে। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য যে, স্বয়ং গৌতমবুদ্ধ যেখানে বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন সেই বৌদ্ধ বিশ্বের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতম বুদ্ধগয়ায় মহাবোধি মন্দির বেদখল হয়ে যাওয়াটা মেনে নিলে বৌদ্ধধর্ম ও জাতির গুরুতর অঙ্গহানি হয়ে যায়। ১৯২৮ সালে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে বাঙালির আত্মপরিচয়ের খোঁজে ডক্টর মোহাম্মদ শহীদুলাহ (ইংরেজীতে তাঁর পি.এইচ. ডি. থিসিসি ছিল) 'বুড্ডিষ্ট মিষ্টিক সংস (বা বৌদ্ধ চর্যাপদ)' শীর্ষক বই লিখেছেন এবং বলেছেন, "আমরা বলিতে পারি যে বৌদ্ধগানই (চর্যাপদ) যেমন একদিকে গজলের, তেমনি অন্যদিকে বৈষ্ণব পদাবলীর মূল উৎস।" ভাবতে ও আশ্চর্য লাগে যে ১৯০৭ সালের আগে বাংলাদেশে বাংলা ভাষার প্রথম গ্রন্থ 'চর্যাপদ' খুঁজে পাওয়া যায় নি। বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্ম ধ্বংসের বিভিন্ন কারন সমূহ (হিন্দু রাজা শশাঙ্ক, ৭ম শতাব্দী ও হরিসেন ও হলায়ুধ মিশ্র; ১২শ শতাব্দীর মৌলবাদ ও বখতিয়ার খিলজির মৌলবাদ সন্মিলিত ভাবে বৌদ্ধধর্ম ধ্বংস করে।) জনপ্রিয় লেখক কথাশিল্পী শওকত আলী তিনি তাঁর লেখা 'প্রদোষে প্রাকৃত জন' এবং 'দুষ্কালের দিবানিশি' গ্রন্থদ্বয়ে ব্যাখ্যা করেছেন। বাংলাদেশের বিক্রমপূরের বজ্রযোগীনি (কালী বা তারা দেবী বোধিসত্ত্ব) গ্রামের অতীশ দীপংকর সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মের প্রতিনিধি এবং অতীশ দীপংকরের বিশ্ববিজয়ী স্মৃতি বাংলাদেশের সর্বকালের আলোকিত সারস্বত সমাজ প্রতিষ্ঠার উৎস 'চর্যাপদ' বাংলা ভাষার প্রথম বই এবং এবং ২৫৫৫ বুদ্ধাব্দই আজকের বঙ্গাব্দ। বৌদ্ধরাজ্য আরাকান রাজ সভায় বাংলা সাহিত্যের সন্মান থাকলে ও বাংলা ভাষা আরবীয় এবং পাকিস্তানের মুসলমানের ভাষা নয় বলে ১৯৪৮ সালে মুহম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এসেছিলেন বাঙালি জাতির মুখের ভাষা কেড়ে নিয়ে ঊর্দূ ভাষা শেখাতে। বাঙালি কোন ভাষায় কথা বলবে এবং বঙ্গাব্দ কখন থেকে শুরু হবে তা নির্নয় করার অধিকার অবশ্যই বাঙালি জাতির আছে। বাঙালি জাতির বঙ্গাব্দ অবাঙালি শাসকগণ কেন প্রবর্তনের নির্দেশ দেবে? ইংরেজিতে ঢাকা বানান ভুল ছিল এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর তা শুদ্ধ করা হয়েছিল। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ঠ বাংলাদেশের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। ত্রিশলক্ষ শহীদ জনতার রক্তের বিনিময়ে একাত্তরের ডিসেম্বরে হাজার বছরের বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর ও বঙ্গাব্দ নিয়ে আজ ও কোন গবেষনা হয়নি । লেখক শওকত আলী তিনি তাঁর লেখা "প্রদোষে প্রাকৃতজন" গ্রন্থে বখতিয়ার খিলজির বাংলাদেশ আক্রমনের সময় ১২০২ সালে মহামস্ত্রী হলায়ুধ মিশ্র ও হিন্দুমন্ত্রী হরিসেন কর্তৃক "বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞের" ভয়াবহ বর্ণনার মাধ্যমে তিনি তাঁর উপন্যাসে বিচার বিশেষন করেছেন। বুদ্ধগয়ার 'মহাবোধি মন্দির' দখল করে বৌদ্ধ ঐতিহ্যবাহী ভারতের রাষ্ঠ্রপতি ভবনের "অশোক কক্ষ" এবং ভারতের জাতীয় পতাকায় বৌদ্ধধর্ম সঞ্জাত "অশোকচক্র" ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দু শাসকগণ ঐতিহাসিক কারনে সগৌরবে ব্যবহার করছেন "গরীব দলিত জনতা নির্যাতন" এবং মানবাধিকার সনদ গ্রাহ্য না করে। ৬ই ডিসেম্বর ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস এক অভূতপূর্ব রক্তাক্ত বিষাদ সিন্ধু। কিন্তু একই সঙ্গে ভারতের লকেèৗ হাইকোর্টের বে-আইনি রায় সচেতন শান্তিকামী জনতা ও নাগরীকদের হতবাক করে দিয়েছে। মূল বিষয় থেকে শতভাগ সরে এসে ৩০শে সেপ্টেম্বর ২০১০ লকেèৗ হাইকোর্ট অভিযুক্ত (সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কল্যান সিংহ সহ) ৬৮ জন হিন্দু নেতাকে দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি না দিয়ে রামজন্মভূমির জন্য হিন্দু সংস্থা সমূহকে সমস্ত বাবরি মসজিদের দুই ভাগ জমি প্রদান করলেন এবং মাত্র একভাগ জমি বাবরি মসজিদের জন্য রেথেছেন। এই ভয়ঙ্কর ধাঁধাঁর আবর্তে ভারতীয় জনতাকে আর কতদিন ফেলে রাখেবেন , হে মহামহিম আদালত? ভারতের উত্তর প্রদেশ সরকার রক্তাক্ত, ক্ষতিগ্রস্থ ও নির্যাতিত মুসলমানদের তাঁদের 'বাবরি মসজিদ' ফিরিয়ে দেয়া যে রাষ্ঠ্রের কর্তব্য ও দায়িত্ব এই সহজ কথাটি পর্যন্ত ভুলে গেছে। 'আল্লাহ উপনিষদের' আলোকে রামের জন্মভূমির উপর আল্লাহের মসজিদ প্রতিষ্ঠা অন্যায় হলে ভারতীয় হিন্দু পন্ডিতগণ সম্রাট আকরের আমলে 'আল্লাহ উপনিষদ' রচনা করে কি ইসলাম ধর্মকে হিন্দুধর্মের লেজুড় বানিয়েছিলেন? জাতির পিতা গান্ধীজির পরম প্রিয় ভজন ছিল, "ঈশ্বর আল্লাহ তেরে নাম / সবকো সদ মতি দেয় ভগবান।" বিশ্ববিধাতার কাছে হিন্দু রাজনীতবিদগণ ও মহামহিম আদালতের কি সদ মতি নেই? প্রাচীন বাংলাদেশে মহাস্থানের পুন্ড্রবর্দ্ধনে (বগুড়া) এবং পাহারপুরে (রাজশাহীর সোমপুরী বিহার) বসে গৌতমবুদ্ধ দিনের পর দিন বাঙালি সমাজকে দান, শীল, ভাবনা এবং সুন্দও ভাবে জীবন যাপনের শিক্ষা দিয়েছেন এবং স্মৃতির মনিমালায় পোড়ামাটির শিল্পকর্মে "গৌতমবুদ্ধ ধর্মচক্র মূদ্রায়" আজ ও বাংলাদেশে বিরাজমান। ধর্মচক্র মূদ্রা বা ভূমিস্পর্শ মূদ্রায় বজ্রসত্ত্ব বা বুদ্ধকে বর্ণনা করার মতো কলম, অথবা এঁকে দেখাবার মতো তুলি আমার নেই। শুধু আমি আমার বিদ্যাবুদ্ধিতে এটুকু বলতে পারি বাংলাদেশের বুদ্ধমূর্তির চিত্রে এমন একটা কিছু আছে যার জন্যে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকা যায়। বাব বার ফিরে ফিরে এঁকে দেখলে ও চোখ ক্লান্ত হয় না, পীড়িত হয় না। বাংলাদেশে একাধিক বুদ্ধমূর্তি আছে যা নাকি শুধু বিভিন্ন পদার্থ দিয়ে বানানো নয়, যেন তাঁর মধ্যে হাজার বছর ধরে বন্দী হয়ে আছে শিল্পীর অনুক্ত কথা, একটি অপ্রকাশিত ধ্যানের মন্ত্র। যা খোলা নয়, ঢাকা। মন বলে, "প্রতিদিন আমি হে জীবন স্বামী / দাঁড়াব তোমার সন্মুখে।" তবু তা যে অছে তা অনুভব করা যায়, উপলব্ধি করা যায় পবিত্র মন ও শ্রদ্ধা নিয়ে উক্ত বুদ্ধমূর্তির সামনে এসে দাঁড়ালে। সেইদিনের ঐতিহাসিক স্মৃতিখন্ড পবিত্র বুদ্ধ তীর্থভূমি যেখানে গৌতমবুদ্ধ তাঁর অমৃতময় ধর্ম প্রচার করেছিলেন সম্রাট অশোক সেই মহান পুণ্যভূমিকে স্মরনীয় করার জন্যে বৌদ্ধবিহার (বামু বিহার) ও বুদ্ধচৈত্য নির্মান করেন এবং আজ ও সম্্রাট অশোকের "প্রাচীন বাংলা ভাষায়" শিলালিপিটা কলকাতা জাদুঘরে বিরাজমান। প্রসঙ্গত: পাকিস্তানের রাজনীতিতে কায়দে আযম মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ আরবীয় ইসলাম রক্ষার নামে বাংলাভাষা সমূলে ধ্বংস করার রক্তাক্ত ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস চিন্তা করতে গেলে অনেক বাঙালি পাঠকদের মনে পড়ে যায় কথাশিল্পি শওকত আলীর হদয়বিদারক লেখা (১) দুষ্কালের দিবানিশি এবং (২) প্রদোষে প্রাকৃতজন শীর্ষক গ্রন্থদ্বয়ের বাংলাদেশে লক্ষন সেনের মহামন্ত্রী হলায়ুধ মিশ্র, সেনাপতি হরি সেন ও বখতিয়ার খিলজি কর্তৃক সন্মিলিত বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞের ইতিকথা। আজ বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান হয়ে ও বাংলা লিপি এবং ভাষার জন্যে প্রান দান করার পর শহীদদের জন্যে জাতীয় শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার পর স্বাধীন বাংলাদেশের জনম সার্থক হয়েছে। জয় বাংলা। (উত্তর আমেরিকার জনপ্রিয় খ্যাতনামা লেখক সোনা কান্তি বড়–য়া বিবিধ গ্রন্থ প্রণেতা এবং জাতিসংঘে কানাডিয়ান বৌদ্ধ প্রতিনিধি। ) http://www.news-bangla.com/index.php?option=com_content&task=view&id=6672&Itemid=47
জীবনের সব ক্ষেত্রে বাংলার প্রয়োগে কেন আমরা কুণ্ঠিত? অনুপম সেন বাংলা নিয়ে গ্লানিবোধ কেন মুনতাসীর মামুন একুশের পূর্ণাঙ্গ দাবি পূরণ কীভাবে সম্ভব আহমদ রফিক শিখা চিরন্তন শান্তনু কায়সার কবিরউদ্দিনের সংসার রকিবুল ইসলাম মুকুল বাংলার সংঘবদ্ধ গণশক্তিই এর জবাব দেবে কামাল লোহানী প্রত্যাবর্তনের দিন রফিকুর রশীদ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও আমাদের অঙ্গীকার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী একুশের আলপনা হাশেম খান একুশের আরেক মাত্রা আহসানুল হক শহীদ মিনার থেকে শাহবাগ ইতিহাসের পালাবদল নুরুল করিম নাসিম পরাজিত হওয়ার জন্য জন্মাইনি বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর হারিয়ে যাওয়া ভাষা আন্দালিব রাশদী বরাক উপত্যকায় ভাষা আন্দোলন অপূর্ব শর্মা আমার ভাষা, আমাদের বানান হরিশংকর জলদাস নিশিদিন ভরসা রাখিস ॥ ফেব্রুয়ারির উত্তাল বাংলাদেশ শিবনারায়ণ রায় যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ২১শের প্রথম প্রভাতফেরি সাইফুর রহমান ওসমানী জিতু বিস্মৃতপ্রায়ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি আমানুল হক একুশের চেতনা অজয় রায় অনুবাদ ভাষার শক্তি বাড়ায় মাহমুদ দারবিশ ॥ অনুবাদ : নাজিব ওয়াদুদ |
একুশে ফেব্রুয়ারী ও ভাষা শহীদদের সংগ্রাম
ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য রক্তদান পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। মায়ের ভাষা বাংলাকে রক্ষা করার জন্য ১৯৪৮ সালে এ দেশের ছাত্র সমাজ মহান ভাষা আন্দোলনের সূচনা করে। ভাষার জন্য ১৯৫২ সালে ছাত্রদের জীবনদানের মধ্য দিয়ে এ দেশের ছাত্র সমাজের গৌরবময় রক্তাক্ত ইতিহাস সৃষ্টি হয়। '৫২-এর ছাত্র আন্দোলন এদেশের বাঙালী জাতির মুক্তি সংগ্রামের আকাঙ্খাকে জাগ্রত করে।
একুশে ফেব্রুয়ারী আসলেই আলোচনা সভা-সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পনসহ নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে দিবসটি পালিত হয়। কিন্তু বাংলা ভাষা শহীদদের চেতনা-সংগ্রাম-স্বপ্ন-ল্ক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। আমরা সকলেই জানি, একুশে ফেব্রুয়ারী মহান শহীদ দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় দেশব্যাপী পালনের খবর পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হবে। অথচ একুশে ফেব্রুয়ারী তথা বাংলা ভাষা আন্দোলন ও ভাষা শহীদ দিবসের ৫৭ বছর পূর্ণ হলেও ইংরেজীসহ ভিন্ন ভাষায় রচিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের মৌলিক গ্রন্থসমূহ বাংলায় অনুবাদ ও প্রকাশের ব্যবস্থা করার দাবী অদ্যাবধি উপেক্ষিত। ভাষা আন্দোলন তো বটেই, '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ১১ দফা, '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৮২-'৯০ সময়কালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ছাত্র সমাজের রক্তস্নাত ১০ দফা ও '৯০-এ মহান গণঅভ্যুত্থানসহ এ পর্যন্ত সকল গণ-আন্দোলনে প্রায় সকল বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল ও শক্তি যে দাবীটি জানিয়ে আসছে, যা এখনো জনগণের প থেকে উত্থাপিত হচ্ছে তা হলো, শিক্ষার প্রধান মাধ্যম হতে হবে মাতৃভাষা বাংলা এবং ইংরেজীসহ ভিন্ন ভাষায় রচিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের মৌলিক গ্রন্থসমূহ জরুরী ভিত্তিতে বাংলায় অনুবাদ ও প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমান ১৪ দলীয় মহাজোট সরকারের কাছে জনগণের পক্ষ থেকে আমরা উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য।
৫৭ বছর আগে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনের সূচনা, বুকের রক্ত ঢেলে জাতিকে রুখে দাঁড়াবার সাহসে উজ্জীবিত করেছিল যারা, সেই ভাষা শহীদদের স্মরণে জাতীয় শোক দিবস পালিত হবে। '৫২-এর ভাষা আন্দোলন শুধু ভাষার মধ্যে সীমিত থাকেনি, ভাষাভিত্তিক চেতনায় জাতি ক্রমে ঐক্যবদ্ধ ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সোচ্চার হয়েছে। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে সৃষ্ট পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শোষণ-শাসনের শিকল ছিঁড়ে মুক্তিকামী মানুষ একুশের চেতনার পথ ধরেই একাত্তরে রক্তাক্ত মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জন করেছে মহান স্বাধীনতা। গৌরবোজ্জ্বল এই দিবসের অনন্যতা বিষয়ে জাতির গর্ব আরো বেড়ে গেছে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পর। বাঙালির ও বাংলাদেশের একুশ এখন সারা বিশ্বে প্রধান ও অপ্রধান মিলিয়ে প্রায় ৬ হাজার ভাষার মানুষের জন্য মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপনের দিন। একুশ এখন সারা বিশ্বে ভাষা ও অধিকারজনিত সংগ্রাম ও মর্যাদার প্রতীক। একুশ আমাদের সংগ্রাম ও জাতীয় মর্যাদাকে বিশ্বদরবারে সমুন্নত করেছে। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতিবছর জাতীয়ভাবে একুশে উদযাপন করা হলেও সরকার একুশের শিক্ষা ও চেতনাকে জাতির জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করার প্রাতিষ্ঠানিক কোনো উদ্যোগই নিতে পারে নি। একুশের শিক্ষা ও চেতনাকে জাতির জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার হাতিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন তথা বিজ্ঞানভিত্তিক ও গণমুখীকরণ কেন করতে পারে নি? একুশের চেতনা ও শহীদদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন ও জনগণের প্রয়োজনে আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের জন্য এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাওয়াটাও জরুরি হয়ে ওঠেছে। সাম্রাজ্যবাদ নির্ভর আমলা মুৎসুদ্দী বুর্জোয়া লুটেরা ধনিক বণিক শ্রেণীর বিগত ৩৮ বছরের শাসন ও রাজত্বে নানা সমস্যা ও সঙ্কটে বিদীর্ণ হলেও বর্তমান ১৪ দলীয় মহাজোট সরকারের আমলেও তো আজকের জাতীয় জীবনে একুশের অন্তর্নিহিত মূল্যবোধ ও প্রেরণা খুঁজে পাওয়াটাই একটা বড় সমস্যা। স্বাধীনতার পর থেকে সাম্রাজ্যবাদ নির্ভর আমলা মুৎসুদ্দী বুর্জোয়া শাসক শ্রেণী সকল নির্মাণ ও উন্নয়ন প্রয়াসে একুশের চেতনাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ মর্যাদা দেয়ার চেষ্টাই তো হয় নি, অতএব ব্যর্থতার দিকটি বলার উপায় নেই। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে একুশের চেতনাবিরোধী কার্যক্রমের অসংখ্য নজির স্থাপিত হয়েছে প্রতিটি সরকারের আমলে। এই চেষ্টাহীনতা, ব্যর্থতা ও মর্যাদাহানির বিষয়টি আরো নগ্নভাবে ধরা পড়তে শুরু করেছে রাষ্ট্রীয়ভাবে একুশে পদক বিতরণের কর্মসূচির মধ্যেও। একুশের চেতনা, সংগ্রাম ও প্রেরণাকে জাতির মধ্যে সঞ্জীবিত রাখার লক্ষ্যে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য জাতির শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিশীল সন্তানদের একুশে পদক দিয়ে জাতীয় সম্মাননা জ্ঞাপন নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। কিন্তু কাদের দেয়া হচ্ছে এই পদক? যারা এ পদক পাচ্ছেন, তাদের সকলেরই ব্যক্তিগত অবদান কি একুশের আন্দোলন ও চেতনার সঙ্গে সম্পর্কিত? এই আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত ও একুশের সংগ্রাম ও চেতনা ধারণ করেন এমন রাজনীতি সচেতন শ্রমিক শ্রেণীর মতাদর্শ তথা সমাজ পরিবর্তনে বিশ্বাসী অনেকেই এ পদক পাননি। অথচ কোনোভাবেই সম্পৃক্ত ছিলেন না এবং ভাষা ও গণসংস্কৃতির বিকাশ ও উন্নয়নে অবদান নেই- এমন লোকজনও এ পদক পাচ্ছেন। একুশের মহান সংগ্রাম ও চেতনা ছাপিয়ে সরকারের মুৎসুদ্দী বুর্জোয়া শ্রেণীর সংকীর্ণ রাজনৈতিক পরিচয় ও পক্ষপাতই প্রধান হয়ে উঠছে কেন মনোনয়নের ক্ষেত্রে? এ যাবত যাদের একুশে পদকে সম্মানিত করা হয়েছে, সেই তালিকা সচেতন মানুষের মনে এ প্রশ্ন না জাগিয়ে পারে না। জাতিকে নানাভাবে এগিয়ে নেয়ার সাধনায় সংগ্রামী, ত্যাগী ও গুণী মানুষ দেশে অবশ্যই রয়ে
ছেন। কিন্তু সরকার তাদেরকে যথাযথ সম্মান দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। সমাজজীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো মহান একুশের নামে প্রবর্তিত একুশে পদকের ক্ষেত্রেও তদবির পার্টির দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপনে আরো দু'টি ব্যর্থতা আমাদেরকে লজ্জিত করে। সংগ্রামী ঐতিহ্যের ধারক ঐতিহাসিক একুশের ডকুমেন্টস সরকার বহির্বিশ্বে প্রচার করতে পারে নি এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠার কাজও থমকে আছে। আমাদের দেশের জনগণের সকল সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাস ও অর্জনকে সংরক্ষণ এবং আমাদের দেশের জনগণের সংগ্রাম, জাতীয় ঐতিহ্য ও গৌরবকে অক্ষুন্ন রাখার শপথে একুশের প্রেরণায় উজ্জীবিত জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে আবারও সকল ধরণের দেশী-বিদেশী শোষণ-বঞ্চনা-অনুন্নয়ন-লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করুক- এই প্রত্যাশা করি। মহান একুশে ফেব্রুয়ারী ও ভাষা শহীদদের সংগ্রাম-স্বপ্ন-ল্ক্ষ্য-স্মৃতি অমর হোক।
[মন্তব্য-লিন্ক]
বিভিন্ন ভাষা থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের মৌলিক গ্রন্থগুলো কি একেবারেই অনূদিত হয়নি? শুনেছি এককালে বাংলা একাডেমীর একটি অনুবাদ বিভাগ ছিল, যেখানে কর্মরত ছিলেন সরদার ফজলুল করিম। সেই বিভাগটি বিলুপ্ত হলো কীভাবে? এখনকার ভাষা ইনস্টিটিউট কি এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে না? এসব বিষয়ে আমার বিশেষ জানা নেই। বিস্তারিত আলোচনা করলে উপকৃত হব।
একুশে পদক প্রসঙ্গে আপনি লিখেছেন :
এই তালিকাটি এখানে উদ্ধৃত করলে খুব ভালো হয়।
"এই আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত ও একুশের সংগ্রাম ও চেতনা ধারণ করেন এমন রাজনীতি সচেতন শ্রমিক শ্রেণীর মতাদর্শ তথা সমাজ পরিবর্তনে বিশ্বাসী অনেকেই এ পদক পাননি।" — নিশ্চয়ই সুনির্দিষ্ট কয়েকজন মানুষের কথা বিবেচনায় রেখেই আপনি এ কথা লিখেছেন। সম্ভাব্য প্রাপকদের সেই তালিকাটাও দেখতে ইচ্ছে করছে।
[মন্তব্য-লিন্ক]
ভালো লেগেছে। লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।
[মন্তব্য-লিন্ক]
বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরি ভাষার আন্দোলনে পৃথিবীর প্রথম আদিবাসী ভাষাশহীদ সুদেষ্ণা সিংহের আত্মদান নিয়ে কুঙ্গ থাঙ এর পোস্ট।
[মন্তব্য-লিন্ক]
আপনার সংক্ষিপ্ত পরিচিতিও 'বাংলায় অনুবাদ ও প্রকাশের' জন্য অনুরোধ (দাবি) জানাচ্ছি।
http://nirmaaan.com/blog/syedzaman/3193
অমর একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস। যথাযোগ্য ভাবগাম্ভীর্য ও মর্যাদার সঙ্গে দিনটি পালিত হচ্ছে বাংলাদেশে। একই সঙ্গে দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে। আমাদের ভাষা শহীদ দিবস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা গর্বিত। দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন।
আমাদের জাতীয় ইতিহাসে ২১ ফেব্রুয়ারির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। কেননা, ১৯৫২ সালের এদিনে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দানের দাবিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যে গণবিস্ফোরণ ঘটেছিল, তা একদিকে যেমন ছিল অভূতপূর্ব, তেমনি তা সূচনা করেছিল এ দেশের মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের অভিযাত্রা। '৫২'র ভাষা সংগ্রামের পথ ধরেই পরবর্তী গণআন্দোলন এবং সর্বশেষ আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলাম। বলা যায়, ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় চেতনার স্ফুরণ ঘটিয়েছে। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা আমরা এ মহান দিনের কাছ থেকে পেয়ে আসছি। যতোবার বাংলাদেশ কোনো স্বৈরশাসনের কবলে পড়েছে, গণতন্ত্র বিপর্যস্ত হয়েছে, এদেশের মানুষ তা পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে, নিয়েছে দীক্ষা। একুশ তাই বারবার ফিরে আসে আমাদের অধিকার আদায়ের চেতনার মশাল জ্বালিয়ে। পথ দেখার নির্ভয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার।
একুশের রক্তমাখা পথ ধরেই এসেছে আমাদের স্বাধীনতা। '৫২-তে যারা আত্মোৎসর্গ করেছিলেন মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায়, তাদের একটা স্বপ্ন ছিল, আকাঙক্ষা ছিল। তারা স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি সমৃদ্ধ দেশের, একটি সংস্কৃতিবান জাতির। বাংলাদেশ তার আপন শক্তিতে একটি সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে, এদেশের মানুষ সংস্কৃতিবান জাতি হিসেবে বিশ্বসভায় মাথাউঁচু করে দাঁড়াবে এটা ছিল ভাষা শহীদদের আকাঙক্ষা। একটি সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্যদিয়ে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার পর আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। চার দশক অতিক্রান্ত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের। কিন্তু এখনো যে প্রশ্নটি বেশ জোরেশোরেই উচ্চারিত হতে শোনা যায় তাহলো- '৫২-এর ভাষা শহীদ কিংবা স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন-আকাঙক্ষার কতোটা আমরা পূরণ করতে পেরেছি। বলা বাহুল্য, সে স্বপ্নের খুব কম অংশই পূরণে সক্ষম হয়েছি আমরা। বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে যেমন গড়ে তোলা যায়নি, তেমনি আমাদের সংস্কৃতিকেও দাঁড় করাতে পারিনি শক্ত কোনো ভিতের ওপর। এ ব্যর্থতা একক কোনো দল, গোষ্ঠী বা ব্যক্তির নয়। এ ব্যর্থতা জাতি হিসেবে আমাদের সবার। তবে যারা আমাদের নেতৃত্ব দেন বা দিচ্ছেন, তাদের দায়ভার এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এটা অস্বীকার করা যাবে না।
মূলত আমাদের নেতৃত্ব জাতিকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে পারেনি। তারা হয় রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের চিন্তায় আচ্ছন্ন থেকেছেন কিংবা রাষ্ট্রক্ষমতাকে স্থায়ী করার মানসে জাতীয় স্বার্থকে উপেক্ষা করেছেন। জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে যে 'ভিশনারি লিডারশিপ' প্রয়োজন দুয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া তার প্রকট অভাব আমরা এ যাবৎকাল লক্ষ্য করে আসছি। বলাটা অত্যুক্তি নয়, ওই ধরনের 'লিডারশিপ' না আসা পর্যন্ত শহীদের স্বপ্ন পূরণ সম্ভব হবে না।
'৫২-এর ভাষা আন্দোলনের মূল চেতনা ছিল এ অঞ্চলের মানুষের সংস্কৃতিগত স্বাতন্ত্র্যকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা। বাংলা আমাদের ভাষা। আমাদের আলাদা ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি রয়েছে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশের বাংলা ভাষাভাষীরা যে আলাদা একটি জাতি সে চেতনার অঙ্কুরোদগম ঘটেছিল '৫২'র ফেব্রুয়ারিতে। বাংলাদেশের বাইরেও বাংলাভাষী জনগোষ্ঠী আছে। কিন্তু তারা তাদের ভাষার জন্য সংগ্রাম করেনি, জীবন দেয়নি। বাংলা ভাষা সেখানে রয়ে গেছে শুধুই আঞ্চলিক ভাষা হিসেবে, রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা পায়নি। সুতরাং যারা মাঝে মধ্যে 'এপার বাংলা-ওপার বাংলা' বলে কোরাস গাওয়ার চেষ্টা করেন, তারা যে আমাদের স্বাতন্ত্র্যকে প্রকারান্তরে অস্বীকার করতে চান সে বিষয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে হয় না।
অস্বীকার করার উপায় নেই বাংলাদেশের সংস্কৃতি আজ দৈন্যদশায় উপনীত হয়েছে। বিদেশি সংস্কৃতির প্রবল জোয়ারে আমাদের আবহমানকালের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিগত বৈশিষ্ট্য ভেসে যাওয়ার উপক্রম। নতুন প্রজন্ম ভুলে যেতে বসেছে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে। তাদের পরিচালনা করা হচ্ছে ভুল পথে। প্রতিবাদের নামে, সংস্কৃতির নামে তাদের শেখানো হচ্ছে 'মঙ্গলপ্রদীপ' জ্বালাতে। পোশাকে-আশাকে, চলনে-বলনে, আচার-আচরণে, একশ্রেণীর তরুণ-তরুণীকে আজ বড়ো অচেনা মনে হয়। এরা আমাদেরই সন্তান, ভাবতে শুধু অবাক লাগে না, কষ্টও হয়। এরা বিশ্বসভ্যতার অনেক খবর রাখে, কম্পিউটারের মাউস ক্লিক করে এরা অনেক কিছু জেনে নেয়, কিন্তু বুক সেলফ থেকে বই নিয়ে নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি সম্বন্ধে জানতে আগ্রহী হয় না। এটা তরুণদের দোষ নয়। এর দায় অগ্রজদের। তারা ওদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তারা ওদেরকে উদ্ধুদ্ধ করতে পারেননি জাতীয় ইতিহাস চর্চায়, নিজস্ব সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করার সংগ্রামে। কখনো কখনো তরুণদের অংশ বিশেষকে কোনো কোনো বিষয়ে সোচ্চার হতে দেখা গেছে। তবে তার পেছনে সংকীর্ণ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী কাজ করায় তা খুব বেশি ব্যপ্তিলাভ করতে পারেনি। উজ্জীবিত তরুণরাও পেছনের রাজনৈতিক মতলববাজী দেখতে পেয়ে মুহূর্তেই চুপসে গেছে। আশা ভঙ্গের হতাশায় আচ্ছন্ন হয়ে বিভ্রান্ত হয়েছে।
আমাদের জাতীয় জীবনে আজ যে স্থবিরতা, সংকট এবং সংস্কৃতিগত অবক্ষয় চলছে, তা থেকে উত্তরণের শিক্ষা নেয়া সম্ভব অমর একুশে থেকে। কেননা একুশে আমাদেরকে শিক্ষা দেয় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে, নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে আনতে নিরন্তর সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ হতে। আমরা ঐতিহ্যের অধিকারী, আমাদের রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। আমরা কারো মুখাপেক্ষী থাকবো না। সাংস্কৃতিক যে আগ্রাসন আমাদের দেশে এখন চলছে, তাকে যদি প্রতিহত করা না যায়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যত হয়ে পড়বে অন্ধকারাচ্ছন্ন। আগামী প্রজন্ম তলিয়ে যাবে সে ঘোরতর অন্ধকারে। এতো ত্যাগ, এতো রক্তদান, এতো সংগ্রামের পর অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা হয়ে পড়বে অর্থহীন। ফলে চেতনার মশাল জ্বেলে নব প্রজন্মকে সঠিক পথের দিশা এখনই দেখাতে হবে। তাদেরকে ফেরাতে হবে ভ্রান্ত পথ থেকে। তাদের মধ্যে জাগ্রত করতে হবে দেশাত্মবোধ। বিদেশী সংস্কৃতির খারাপ দিকগুলো, যেগুলো আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক, সেগুলো যাতে তারা বর্জন করে সেজন্য তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
ছয় দশক পার হয়েছে ভাষা শহীদ দিবসের। প্রতি বছরই দিনটি আসে দেশাত্মবোধ জাগ্রত করার মর্মবাণী নিয়ে। কিন্তু সে মর্মবাণী যে আমাদের মর্মমূলে খুব একটা আবেদন সৃষ্টি করতে পারে না, তার ছাপ সর্বত্র। এ অবস্থার অবসান ঘটিয়ে আমরা যদি বাংলাভাষা-সংস্কৃতিকে ঐতিহ্য মন্ডিত করতে পারি, তথা বাংলাদেশকে করে তুলতে পারি অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধশালী, তাহলেই '৫২ এর সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরের আত্মদান সার্থক হবে। আমরা মহান ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি জানাই সশ্রদ্ধ সালাম।
অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বিনম্র শ্রদ্ধায় ভাষা শহীদের স্মরণ
টাইমস্ আই বেঙ্গলী ডটকম, নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা : বৃহস্পতিবার ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দিবসটির প্রথম প্রহরেই বিনম্র শ্রদ্ধায় ভাষা শহীদের স্মরণ করলো জাতি।মায়ের ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ এবং জাতীয় চেতনার প্রথম উন্মেষ। ১৯৫২ সালের এই দিনে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে দুর্বার আন্দোলনে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি পায় মাতৃভাষার মর্যাদা এবং আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেরণা। তারই পথ ধরে শুরু হয় বাঙালি স্বাধীকার আন্দোলন এবং একাত্তরে নয় মাস পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ভাষা আন্দোলনের ৬১ বছর পূর্ণ হবে বৃহস্পতিবার। বস্তুত একুশে ফেব্রুয়ারি একদিকে শোকাবহ হলেও অন্যদিকে আছে এর গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। কারণ পৃথিবীর একমাত্র জাতি বাঙালি ভাষার জন্য এদিন জীবন দিয়েছিল।
ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালে ঐতিহাসিক একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দিবসটি পালিত হচ্ছে।শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতি আগামীকাল একুশের মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে।
তবে এবারে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে পালিত হচ্ছে শহীদ দিবস। একাত্তরের মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাসিঁর দাবিতে পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ। কাদের মোল্লার ফাসিঁর দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে তরুন প্রজন্মের আন্দোলন দ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পরেছে দেশে বিদেশে। বিশ্বের যেখানেই বাঙালি সেখানেই যুদ্বাপরাধীদের ফাসিঁর দাবিতে সোচ্চার তারা। এই দাবিতে দেশের সব শহীদ মিনারে আজ মিলিত হবে কোটি কোটি বাঙালি।কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে গত মধ্যরাতে মহান একুশের সূচনা হয়েছে।তবে একুশের প্রথম প্রহরে প্রথমে রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা নিবেদনের রীতি থাকলেও শহীদ মিনারে আসেননি রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান।রাত ১২টা এক মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ভাষা শহীদদের অমর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় সেখানে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। এরপর 'আমার বাংলা আদর্শ বর্ণমালা' নামের একটি নতুন বাংলা ফন্টের উদ্বোধন করেন তিনি।অন্যদিকে শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাত ১২টা ৪১ মিনিটের পর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।প্রধানমন্ত্রীর পর শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট। এরপর পর্যায়ক্রমে ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতারা, চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, তিন বাহিনীর প্রধানরা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির নেতৃত্বে বিদেশি কূটনীতিকরা, হুইল চেয়ারে করে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা ও আটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাবি শিক্ষক সমিতি পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া দেশে উপস্থিত না থাকায় এরপর বিএনপি নেতাদের শ্রদ্ধা নিবেদনের সুযোগ দেয়া হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ছাত্রলীগ, ছাত্রদলসহ বিভিন্নম্ন রাজনৈতিক দল, সহযোগী সংগঠন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, ছাত্র, যুব, শ্রমিক ও কৃষক সংগঠনের নেতাকর্মীরা একে একে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে শুরু করেন। এভাবে সম্মিলিত মানুষের স্রোত বয়ে চলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে।
২১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ছুটির দিন। এদিন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।
শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণী প্রদান করেছেন।
২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ এবং বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।
এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাত ১২টা ০১মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সকাল সাড়ে ৬টায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সংগঠনের সকল শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন।সকাল সাড়ে ৭টায় কালো ব্যাজ ধারণ করে নিউ মার্কেটের দক্ষিণ গেট থেকে নগ্নপদে প্রভাত ফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পনের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন।
আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে দিবসটি উপলক্ষে সকল কর্মসুচী পালনের জন্য দলের নেতা কর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, ১৯৭১ সালে যারা ধর্মের নামে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে হত্যা, ধর্ষণ ইত্যাদিতে অংশ গ্রহণ করেছে, তারা আজ অপরাধীদের বিচার বানচাল করার চেষ্টা করছে।
ছাত্র নেতাদের এই অভিযোগ আসে এমন সময়ে, যখন বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসলামপন্থী সংগঠন শাহবাগের চলমান আন্দোলনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন মাদ্রাসা-মসজিদে, ইন্টারনেটে এবং কয়েকটি পত্র-পত্রিকায় শাহবাগ আন্দোলনের আয়োজক ব্লগারদের 'নাস্তিক' এবং 'ইসলাম-বিদ্বেষী' আখ্যায়িত করা হয়েছে।
শাহবাগের গণ জমায়েতে ১৯৭১ সালে গণহত্যা এবং অন্যান্য অপরাধের অভিযোগে বিচারাধীন ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী পুনরায় করা হয়েছে।
ভাষা শহীদ দিবস
ফেব্রুয়ারি ২১, অর্থাৎ ভাষা শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শাহবাগের চলমান বিক্ষোভ এ ১৭ দিনে তৃতীয়বারের মত 'মহাসমাবেশ' ডাকা হয়েছে।
সমাবেশের শুরুতে কোরান তেলাওয়াত সহ বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়। এর পরে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং ভাষা শহীদ দিবসের সঙ্গীত 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো ২১শে ফেব্রুয়ারি গাওয়া হয়।
http://www.bbc.co.uk/bengali/news/2013/02/130221_sm_feb21shahbag.shtml
মহান শহীদ দিবস আজ : সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন নিশ্চিত হোক
মাতৃভাষার জন্য লড়াই, আত্মোত্সর্গ বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। এই আত্মদানের মধ্য দিয়েই বাঙালি জাতিসত্তার স্বরূপ উদ্ঘাটিত হয় স্বতন্ত্র মাহাত্ম্যে, ভিন্নতর উচ্চতায়। আমাদের সার্বিক বিজয়ের সূতিকাগার এই একুশ। সে অর্থে একুশ শুধু উদযাপনের নয়, উজ্জীবনের-উদ্দীপনের।
ভাষা শহীদদের আত্মদানের গৌরবগাথা আজ শুধু স্বাধীন বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বিশ্ববাসীর কাছেও দিনটি স্বতন্ত্র মহিমা নিয়ে চিহ্নিত। আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে অমর একুশকে স্বীকৃতি দেয়ার ফলে বাংলাভাষা তো বটেই, সব জাতির ভাষাই ভিন্ন মর্যাদায় স্মরণীয় হয়ে উঠেছে। একুশের চেতনা তথা এর অন্তর্গত তাত্পর্যে সব ভাষাভাষী মানুষই আজ আন্দোলিত-আলোড়িত। সারাবিশ্বে প্রায় ছয় হাজার ভাষা রয়েছে। সেসব ভাষাভাষী যখন আমাদের ভাষা দিবসকে তাদেরও ভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তখন বাংলাদেশী তথা বাংলাভাষী হিসেবে আমরা এক অনির্বচনীয় গৌরববোধে উদ্বেলিত হই। অন্যদিকে একুশ সব ভাষাভাষীর নিজ নিজ মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার তাগিদও সৃষ্টি করে। এদিক থেকেও ভাষা দিবস অনন্য মহিমায় অভিষিক্ত।
ভাষা আন্দোলনের দীর্ঘ ছয় দশক অতিক্রান্ত হওয়ার পরও মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে নানা প্রশ্ন—আমরা কি মাতৃভাষাকে যথাযথ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি? ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে কতটা সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলা ভাষা? আমরা কি প্রমাণ করতে পেরেছি, 'মাতৃভাষা রূপ-খনি পূর্ণ মণিজালে?'—এসব প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়ার প্রতীক্ষা শেষ হয়নি আজও। স্বাধীনতা অর্জনের চারদশক অতিক্রান্ত হলেও সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলন ঘটেনি, যা হওয়ার কথা ছিল। আমাদের সাহিত্য চর্চা ক্রমাগত অগ্রসরমান, ভাষার ব্যাকরণ নিয়ে গবেষণা চলছে নিরন্তর—সে বিবেচনায় বাংলা চর্চার সৌকর্য বেড়েছে। কিন্তু আজও সুনির্দিষ্ট এবং সর্বজনগ্রাহ্য একটি বানানরীতি অনুসরণ করার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। বহুমাত্রিক অভিধানের অভাব এখনও অনুভূত। একে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি বললেও অত্যুক্তি হবে না। এমনকি বাংলা একাডেমী, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মতো জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও মেনে চলছে না অভিন্ন বানানরীতি। ফলে বানান তথা উচ্চারণের ক্ষেত্রে বিরাজ করছে এক গোলমেলে অবস্থা। উল্লেখ্য, বাংলায় সাইবোর্ড লেখার আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকলেও সর্বত্রই তা উপেক্ষিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধ বাংলায় কথা বলার অনুশীলন দেখাই যায় না। পারিবারিক মনোযোগও এ ক্ষেত্রে উত্সাহব্যঞ্জক নয়। প্রাত্যহিক পঠিত সংবাদপত্র এবং শ্রুত গণমাধ্যমও বানান এবং উচ্চারণের বেলায় তেমন শৃঙ্খলা রক্ষা করছে না। ভাষার ক্রম অগ্রগতি ও সুষম বিকাশের ক্ষেত্রে এসব বিচ্যুতি অন্তরায় বৈকি।
বাংলার পাশাপাশি অন্যান্য ভাষা শেখার ক্ষেত্রেও আমরা পিছিয়ে আছি। মাতৃভাষার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা আয়ত্ত করাও সময়ের দাবি। কিন্তু নিজ ভাষাকে অবহেলা করে তা অসম্ভব। অথচ ক্রমেই এই প্রবণতা বাড়ছে। অন্যান্য ভাষার লিখিত অনুবাদের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় সীমাবদ্ধতা হিসেবেই আমাদের সামনে আসে। এই প্রেক্ষাপটে মাতৃভাষাকে সমৃদ্ধ করার বিষয় নিয়ে বিস্তর গবেষণা দরকার। দুঃখজনকভাবে তা হচ্ছে না। এ অবস্থায় ফি বছর আনুষ্ঠানিকভাবে পদক ও পুরস্কার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নিশ্চয়তা বহন করে না।
না, ভাষা আন্দোলন ও শহীদ দিবস উদযাপন আনুষ্ঠানিকতার মোড়কে বন্দী করে রাখা একুশের চেতনার অনুগামী নয়। সার্বিক সুষম উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমেই একুশ উদযাপনের মাহাত্ম্যকে রূপায়ণ সম্ভব। সেই সঙ্গে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাওয়া ছোট ছোট নৃ-গোষ্ঠীর ভাষাগুলোকেও শুশ্রূষা দিয়ে টিকিয়ে রাখার দায় এড়ানো যায় না। বাংলা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ভাষা। নিবিড় চর্চায় ক্রমাগত উত্কর্ষ সাধনের মাধ্যমে এর যথাযথ বিকাশ নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে ভাষা শহীদদের আত্মদান সার্থক করে তোলা সম্ভব। এবারের একুশেতে সবাই সেই প্রত্যয়ে প্রদীপ্ত হয়ে উঠবে—এটাই প্রত্যাশা।
তবে এবার এমন এক সময়ে দরজায় কড়া নেড়েছে অমর একুশে যখন একাত্তরের চেতনায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিবাদ প্রতিরোধের নতুন ইতিহাস গড়েছে তরুণরা। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- নিশ্চিত করে এবার জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর। সারাদেশে হয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। সেসব মঞ্চ থেকে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা করা হচ্ছে প্রতিদিন। খুব অনুমান করা যায়, অমর একুশে সেই প্রত্যয় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাহস যোগাবে।
ইতিহাস বলে, বহু আগেই পূর্ব পাকিস্তানে ভাষাচেতনার উন্মেষ ঘটেছিল। মায়ের ভাষার প্রতি বাঙালীর অনুভূতি কত তীব্র ছিল তা জানাতেই হয়ত মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিম লিখেছিলেনÑ যে সব বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী/ সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি...। কিন্তু দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা পাকিস্তানের শাসকরা সেটি অনুধাবন করতে পারেনি। তাই এ অঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল তারা। বাংলাভাষী মানুষের সকল অনুভূতি তুচ্ছ করে উর্দুকে পূর্ব পাকিস্তানে রফতানি করতে চেয়েছিল। শুরুটা '৪৭ থেকেই। এ বছর ১৭ মে হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিত উর্দু সম্মেলনে মুসলিম লীগ নেতা চৌধুরী খালিকুজ্জামান ঘোষণা দেন, পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা হবে উর্দু। এই বক্তব্য সমর্থন দেন আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দীন। প্রতিবাদে ২৯ জুলাই ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ আজাদ পত্রিকায় বলেন, বাংলাই হওয়া উচিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। তবে দুটি রাষ্ট্রভাষা করা গেলে উর্দুর কথা বিবেচনা করা যায়। এভাবে যুক্তিতর্ক চলে। প্রতিবাদ গড়ে উঠতে থাকে। মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। পরিষদের পক্ষে থেকে ১১ মার্চ পূর্ববঙ্গে ধর্মঘট আহ্বান করা হয়। এরই মাঝে ১৯ মার্চ ঢাকার আসেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে তিনি ঘোষণা দেনÑ উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। অন্য কোন ভাষা নয়। ২৩ মার্চ এ বক্তব্যের সমালোচনা করে বিবৃতি দেন একে ফজলুল হক। এর পরও ২৪ মার্চ কার্জন হলে একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন জিন্নাহ। সঙ্গে সঙ্গে 'নো' 'নো' বলে চিৎকার করে ওঠে ছাত্ররা। ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে পূর্ববঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনের সভাপতিত্বে জনসভায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন সে একই ঘোষণা দেন। বলেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তিনি যোগ করেন, পাকিস্তানকে আমরা ইসলামী রাষ্ট্ররূপে গঠন করতে যাচ্ছি। এর প্রতিবাদে ৩১ জানুয়ারি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা পরিষদ গঠিত হয়। ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকার সকল স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করা ও আরবি হরফে বাংলা ভাষা প্রচলনের চেষ্টার প্রতিবাদে ধর্মঘট পালন করে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২১ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ভাষার দাবি রুখতে সেদিন ১৪৪ ধারা জারি করে সরকার। কবির ভাষায়Ñ মাগো, ওরা বলে/ সবার কথা কেড়ে নেবে।/ তোমার কোলে শুয়ে/ গল্প শুনতে দেবে না।/ বলো, মা,/ তাই কি হয়? হয় না। তাই অসীম সাহসের সঙ্গে ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে রাজপথে নামে ছাত্ররা। বাংলার দাবি চিরতরে স্তব্ধ করতে পুলিশ তাদের উপর গুলি চালায়। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার ও আবদুস সালাম, শফিক, রফিকসহ নাম না জানা অনেক ছাত্রযুবা। ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলে সমবেত হয়। ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ জানাতে পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি আবারও রাজপথে নামে। স্বজন হারানোর স্মৃতি অমর করে রাখতে ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে উঠে স্মৃতিস্তম্ভ। ২৬ ফেব্রুয়ারি এটি গুঁড়িয়ে দেয় পাকি বাহিনী। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করে। ৯ মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি লাভ করেছে অমর একুশে।
আজ শুধু শোক নয়, শোককে শক্তিতে পরিণত করার দিন। কোন একটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে নয় বরং সমাজের সকল অন্যায় অসাম্য ধর্মান্ধতা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জ্বলে ওঠার নতুন শপথ নেবে বাঙালী। প্রতিবাদ প্রতিরোধের অগ্নিশিখা ভেতরে জ্বালিয়ে রাখার অনুপ্রেরণা গ্রহণ করবে। এদিকে নিজ নিজ মায়ের ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো উপলক্ষে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেয়েছে ২১ ফেব্রুয়ারি। বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে বহু দেশ আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করবে। বাঙালীর জন্য এও বড় অর্জন।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার সরকারী ছুটি থাকবে। অর্ধনমিত রাখা হবে জাতীয় পতাকা। একই সঙ্গে সর্বত্র উড়বে শোকের কালো পতাকা। সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও বেতারে ভাষা দিবসের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হবে। বিকেল তিনটায় শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে আয়োজন করা হবে মহাসমাবেশের। এটি এবারের একুশের অনুষ্ঠানমালাকে নতুন মাত্রা দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতির বাণী ॥ মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দেয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান বলেছেন, মহান ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এ আন্দোলন কেবলই আমাদের মাতৃভাষার দাবি আদায় করেনি বরং তা বাঙালী জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ঘটায় এবং স্বাধিকার অর্জনে বিপুলভাবে উদ্বুদ্ধ করে।
প্রধানমন্ত্রীর বাণী ॥ শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দেয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল ভেদাভেদ ভুলে একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার শপথ নেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলা ভাষাভাষীসহ বিশ্বের সকল ভাষা ও সংস্কৃতির জনগণকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, মহান একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালীর জীবনে শোক, শক্তি ও গৌরবের প্রতীক।
বিরোধীদলীয় নেত্রীর বাণী ॥ শহীদ দিবস উপলক্ষে দেয়া বাণীতে সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, জাতীয় জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিন ২১ ফেব্রুয়ারি। একুশের পথ ধরেই অর্জিত হয় স্বাধীনতা। একুশের চেতনা অক্ষুণœ রাখতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
শহীদ মিনারে প্রজন্ম সেনারা ॥ একুশের প্রথম প্রহরে সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পাশাপাশি শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত গণজাগরণ মঞ্চ। ডা. ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে ব্লগার এ্যান্ড অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের সদস্যরা শহীদ মিনারে যান।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচী ॥ একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সকল শাখায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।
আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবস- অমর একুশে এবং বিশ্ব
ভাষাকে নিয়ে মানুষের হৃদয় লালিত পালিত ও বিকশিত, ভাষার জন্য বলা যায় মানুষ আজ সভ্য আজ এত উন্নত এবং সৃস্টির সেরা জীব। ভাষাই মানুষকে দিয়েছে মনের ভাব প্রকাশ করার, ভাল মন্দ প্রকাশ করার শক্তি যা আমাদের করেছে সামাজিক এবং সেই সাথে করেছে একে অন্যয়ের সহায়ক। মা, মাতৃভাষার সাথে নাড়ির টান ও সর্ম্পক অবিচ্ছেদ্য।
আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস চলে আসছে ২০০০ সাল হতে যখন বাংলাদেশ সরকার অফিসিয়ালি ইউনেসকোতে আবেদন করে এবং ১৯৯৯ সালে ১৭ নভেম্বরে ইউনেস্কোর সাধারন কনফরেন্সে সবসম্মতি ক্রমে গৃহীত হয় যেখানে ২১ এ ফেব্রুয়ারীকে "আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবস" হিসেবে ঘোষনা করা হয়। এই ঘোষণার ফলে আমাদের একুশের গৌরবোজ্জল ইতিহাস বিশ্ব দরবারে ছড়িয়ে গেছে । ২০০০ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন হওয়া এতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আমাদের মত জাতিসংঘের ১৮৮টি সদস্য দেশেও উদযাপিত হয়ে থাকে এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ।
এটা বাংলাদেশের জন্য এক অবিস্বরনীয় অর্জন বলাযায় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর এটিই সবচেয়ে বড় অর্জন। আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় বরং এটি সকল মানুষের সকল ভাষার সারা বিশ্বের জন্য গৈরবের, সকলের ভাষাকে ভালবাসার জানার এবং উন্নয়নের জন্য ভাবার দিন। তাসত্বেও বাংলাদেশই সবচেয়ে গর্বিত আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসের জন্য কারন বাংলাদেশের এবং ভাষা শহীদদের জন্যই আজ আমাদের সারা বিশ্বের মানুষের এ পাওয়া।
এবার একটু ফিরেদেখা আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবসের ইতিহাস: আমরা বাঙালি ,বাংলা আমাদের মাতৃভাষা । বিশ্বের প্রায় ৩০কোটি মানুষের মাতৃভাষা বাংলা । মাইকেল , বঙ্কিমচন্দ্র ,রবীন্দ্রনাথ ,নজরুল ,জীবনান্দ,শরতচন্দ্রসহ অসংখ্য সাহিত্যকর্মী ও ভাষাপ্রেমী মনীষীর কর্মপ্রয়াসে বাংলা ভাষা উন্নীত হয়েছে আন্তর্জাতিক মানে ।
২১শে মার্চ ১৯৪৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষনা দেন যে উর্দু এবং শুধুমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাস্ট্র ভাষা। তখন পাকিস্তান দুভাগে ছিল এক পশ্চিম ও পুর্ব পাকিস্তান( যা বর্তমানে বাংলাদেশ)। এ ঘোষনার পর পুর্ব পাকিস্তান( যা বর্তমানে বাংলাদেশ) এর জনগন যাদের মাতৃভাষা বাংলা সবাই প্রতিবাদ করে।
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের ঐতিহাসিক আমতলায় হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী একত্র হয়েছিলেন সেই উদ্দীপ্ত তরুণদের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা চলছিল । রাষ্ট্রভাষা বাঙলা চাইব -এই দাবিতে এক অদ্ভুত চঞ্চলতা চলছিল । তারা সেইদিন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সব ধরনের নিপীড়নের বিবরুদেদ্ধ রুখে দাড়াতে যূথবদ্ধ হয়ছিলেন । তারা সেদিন বজ্রদীপ্ত কন্ঠে ১৪৪ ধারা ভাংগার পক্ষে রায় দিয়েছিলেন । তার পর দলে দলে বিভক্ত হয়ে ছাত্রছাত্রীরা মিছিল বের করলে পুলিশ তাদের উপর লাঠিপেটা করে ,কাদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে ,গুলি করে হত্যা করে সালাম,বরকত,রফিক, শফিক ,জব্বারসহ অরো নাম না জানা অনেককে । কিন্তু সেই নৃশংস হত্যাকান্ড অমিত প্রাণের কল্লোল থামাতে পারে না । আন্ন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে গোটা শহরে ,সারা দেশে । তারপরদিন প্রথম শহীদ দের স্মরণ করে ঢাকায় শহীদ মিনার তৈরী করা হয় যা পাক শাসক ভেংগে ফেলে।
সময়টা ছিল ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারীর বিকেলে তিনটা ২০ থেকে ৫০ মিনিট । সেই বিকেলের ৩০ মিনিটে তারা নির্ধারণ করে দিয়েঠছলেন আমাদের জাতি আর মাতৃভাষার ভবিষ্যতকে । এই সেই ৩০ মিনিট যখন পুলিশ সতর্কবাণী না উচ্চারণ করেই নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিলেন । এই সেই ৩০ মিনিট যা প্রতিবাদী তরুণ তরুণীদের সমবেত শক্তিকে অরো বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল , তাদের সংকল্প আরো অটল করে তুলেছিল । তারা গুলির সামনে বুক পেতে দেওয়ার সাহস দেখিয়েছিলেন । সেই ৩০ মিনিটই নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন আমাদের মহান মাতৃভাষার আর জাতির ভাগ্য ,যা কিনা স্ফুলিংগ হিসেবে কাজ করছে । সেই স্ফুলিংগ দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়েছিল শহর থেকে গ্রামে , প্রতিটি জনপদে ।
এরপর একটি তারিখ ২১শে ফেব্রুয়ারী ,একটি বছর ১৯৫২ সাল আমাদের অত্ত্যন্ত আপন হয়ে আমাদের হৃদয়ে চিরকালের জন্য ঠাই পেয়ে গেছে । আমাদের ভাষা বাংলাকে আমরা নিজের করে পেয়েছি । আমরা একটি দেশ পেলাম যার নাম বাংলাদেশ । আর একটি দিবস পেলাম যাকে সারা বিশ্ব স্বীকৃতি দিল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ।
মাতৃভাষার ধর্মীয় প্রভাব ইসলাম কি বলে: মানুষের চিন্তা চেতনা ও মনের ভাব প্রকাশের সর্বোত্তম উপার হলো মাতৃ ভাষার মাধ্যমে তাই মাতৃভাষার গুরুত্ব ইসলামে অপরিসীম। মানুষের জন্য ভাষা আল্লাহর পক্ষ হতে নিয়ামত স্বরুপ আল্লাহ সুরা আর রহমানে বলেন সূরা নং ৫৫ আয়াত ৩-৪ "আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তাকে শিখিয়েছেন ভাষা"
আল্লাহ মানুষকে হেদায়াতের জন্য অনেক নবী রাসুল পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বা জাতির কাছে । সেই সকল নবী রাসুল গন তাদের জাতির কাছে আল্লাহর বানী প্রচার করেছেন তাদের মাতৃভাষার মাধ্যমে আল্লাহ বলেন সুয়া ইবরাহিম সুরা নং১৪ আয়াত নং ৪
আর আমাদের পবিত্র কোরআনও নাযীল হয় আমাদের মহানবী রাসুল (সঃ) এর কাছে ওনার মাতৃভাষায় যা ছিল আরবী দেখুন সুরা ১২) সূরা ইউসূফ আয়াত ২ "আমি একে আরবী ভাষায় কোরআন রূপে অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার। "
এবং ১৯) সূরা মারইয়াম আয়াত ৯৭ এ "আমি কোরআনকে আপনার ভাষায় সহজ করে দিয়েছি, যাতে আপনি এর দ্বারা পরহেযগারদেরকে সুসংবাদ দেন এবং কলহকারী সম্প্রদায়কে সতর্ক করেন।"
এবং ২০) সূরা ত্বোয়া-হা , আয়াত ১১৩ "এমনিভাবে আমি আরবী ভাষায় কোরআন নাযিল করেছি এবং এতে নানাভাবে সতর্কবাণী ব্যক্ত করেছি, যাতে তারা আল্লাহভীরু হয় অথবা তাদের অন্তরে চিন্তার খোরাক যোগায়।"
এছারাও ইসা আলাইহিস সালাম এই উপর ইনজিল কিতাব নাযিল হয় যা ছিল ওনার মাতৃভাষায় হিব্রুতে।
ভাষার ভিন্নতাই হচ্ছে আল্লাহর মহিমা/মর্যাদা/গৌরব/ঐশ্বর্য ৩০) সূরা আর-রূম আয়াত নং ২২ শে আল্লাহ বলেন "তাঁর আর ও এক নিদর্শন হচ্ছে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।"
বাংলাদেশের ভাষা: বাংলাদেশ একটি বহু জাতি, বহু ধর্ম এবং বহু ভাষার দেশ। এ দেশে প্রধান ভাষা বাংলা হলেও শতকরা দুই ভাগেরও অধিক ভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ বাস করে। এদের মধ্যে উর্দুভাষী বিহারি, তেলেগুসহ ৩০ লাখ বা তারও বেশী আদিবাসী বা নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী বাস করে। যদিও সরকারি হিসাবে এই সংখ্যা এর অর্ধেক। বাংলাদেশে বাঙালি ছাড়াও প্রায় ৪৫ টি আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে। বাংলাদেশে বসবাসকারী আদিবাসীদের ভাষা বিশেষণ করে দেখা যায় যে, পৃথিবীর চারটি প্রধান ভাষা-পরিবারের প্রায় ৩০টি ভাষা তারা ব্যবহার করে । এর মধ্যে কিছু ভাষা পৃথক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হলেও অনেক ভাষাই পরস্পর এতটা ঘনিষ্ঠ যে এগুলোকে উপভাষাই বলা যায় যেমন তনচঙ্গা মূলত চাকমা ভাষার উপভাষা। অনুরুপভাবে রাখাইন মারমা ভাষার, লালং বা পাত্র গারো ভাষার এবং বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ও হাজং বাংলার উপভাষা। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আদিবাসী ভাষার সংখ্যা ২৬-৩০ টি।
আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবস কিভাবে পালন করা হয়:? বাংলাদেশের মানুষের কাছে আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম , এই দিনে জাতিয় পতাকা অর্ধ নিমিত রাখা হয় সকল সরকারী ও বেসরকারী অফিসে সেই সকল ভাষা শহীদদের স্বরনে। সারাদেশ হতে মানুষ ঢাকার কেন্দীয় শহীদ মিনারে আসেন তাদের শ্রদ্ধা জানাতে এবং প্রধান মন্ত্রী ও রাস্ট্রপতীর মাধ্যমে প্রথম প্রহরে শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু হয় যা টিভি ও বেতারে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়ে থাকে এবং সকল জেলাতেও জেলার শহীদ মিনার গুলো মানুষে ভরপুর হয়ে থাকে। এই দিনে তারা শহীদ মিনারে ফুল প্রদান করেন শ্রদ্ধা হিসেবে, সারা দেশের সকল জেলা ও পাড়া মহল্লাতেও অস্থায়ী শহীদ মিনার বানানো হয় যেখানে ছোট ছেলে মেয়ে থেকে যুবক বৃদ্ধ সবাই শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে।
আর ১৯৫২ ৪ ঠা ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ দিবসে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে ১৯৫২
সারা বিশ্বেও একই ভাবে যেখানে শহীদ মিনার রয়েছে বা অস্থায়ী ভাবে তৈরী করে ফুলের শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও ভাষা বিষয়ক আলোচনা এবং সংস্কৃতিক অনুস্ঠানের মাধ্যমে এই দিন পানল করা হয়ে থাকে।
এ পৃথিবীর জন্য আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবস :সারা বিশ্বে অনুমানিক ৬০০০ ভাষায় কথা বলা হয়ে থাকে এর মধ্য ৬০% থেকে ৮০% রয়েছে ঝুকির মধ্যে যার মানে এই ৬০-৮০% ভাষা গুলো ১০০ বছর পরে আর প্রচলিত থাকবেনা যা বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রতি হুমকি, মানবতার প্রতি হুমকি।
আমার মত আরো যারা প্রবাসে রয়েছেন তাদের আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবসে পালনের জন্য এক্সট্রা কিছু রয়েছে যা আমরা প্রতিদিনই করতে পারি, আমাদের প্রতিদিনের কাজের ফাকে কখনো কি দেখছি আমার সহকর্মী কোন ভাষায় কথা বলে তাদের ঐতিহ্য কি?
আমার উদাহরনই দেই এখানে অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বের সকল দেশের মানুষ অভিবাসি হয়ে থাকতে আসে সবার ভাষা ভিন্ন এমনকি এ দেশের আদিবাসীদের ভাষাও ভিন্ন ইংরেজী নয়। তাই রাস্তায় বাসে ট্রেনে বা রেস্টুরেন্টে বা অফিসে কত মানুষের সাথে প্রতিদিন দেখা হচ্ছে, যদি সুযোগ ও সময় থাকে সাহস করে তাদের সবার অরিজিন বা মাতৃভাষা সম্পকে যদি জানতে চেয়ে একটি কথা বলা শুরু করি দেখবেন সেই মানুষটা আপনাকে কত আগ্রহ নিয়ে মুখে কতটা হাসি নিয়ে আপনাকে তার ভাষায় কথা শোনাচ্ছে এই হচ্ছে মাতৃভাষা আর আমরা বাংলাদেশি হিসেবে তাদের কে মনে করিয়ে দিতে পারি আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবসের কথা।
এবার একটু খারাপ খবরটাও দেই অস্ট্রেলিয়ার নর্দান টেরিটরি যেখানে শত শত স্কুলের শিক্ষার্থিরা যারা তাদের মাতৃভাষায় কথা বলে (ইংরেজি নয়) তারা মাতৃভাষায় শিক্ষা হতে বন্চিত হচ্ছে আর সরকারী সহায়তা ও কম পাচ্ছে তাদের ভাষায় কারন সরকারের পলিসির জন্য যা কিনা তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষা প্রদান ব্যন করে রেখেছে যদিও অস্ট্রেলিয়া সাপোর্ট করে ইউনাইটেড নেশনের ডিক্লারেশন যা আদিবাসি দের মাতৃভাষায় শিক্ষার সমঅধিকার নিশ্চিত করে এটা আমাকে মনে করিয়ে দেয় আমাদের পাহাড়ী অন্চলের লোকদের কথা যদিও তাদের আদিবাসি মানতে আমি নারাজ তবে তাদের ভাষা রক্ষায় আমি একশত ভাগ সাপোর্ট করবো।
তবে এ দিবসের তাৎপর্য ও গুরুত্ব সর্ম্পকে বলা যায় এখন হতে আগামিতে এই বিশ্বে যারাই কোন ভাষা বা ঐতিহ্যের প্রতি কোন প্রকার বিরুপ আচরন করবে বা করার চিন্তার করবে তার আগে একশ বার ভাববে তার পরিনতির কথা। আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবস প্রতি বছর আমাদের স্বরন করিয়ে দেয় এই দিবস পৃথিবীর সকল ভাষার সুরক্ষার জন্য উদাহরন স্বরুপ যা একটি ওয়াচ ডগ হিসেবে কাজ করছে কারন কেহ কোন ভাষার প্রতি মানুষের প্রতি জুলুম করে যে পার পাবেনা এই দিন আমাদের সেটাই স্বরন করিয়ে দেয়। এখান থেকে সামনে এগিয়ে যাওয়া শুধু ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা, এটা একটি ব্যতিক্রমি ও গুরুত্বপুর্ন উপহার সারা বিশ্বকে সকল মানুষ কে একটি ছোট্র গরিব দেশের মানুষের পক্ষ হতে।
আর আমাদের জন্য আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবস বর্তমানটা চেক করে দেখি: ২১শে ফেব্রুয়ারী এলেই আমরা শোক পালনের অভিনয় করি । রাস্ট্র প্রধান থেকে শুরু করে সাধারন মানুষ পর্যন্ত যে যার মতো শোক পালনের অভিনয়ে অংশ গ্রহন করে নিজেদের ধন্য মনে করি ।
২১ শে ফেব্রুয়ারী মধ্যরাত থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত যতো কোটি টাকার ফুল দেওয়া হয় শহীদ মিনার একটি বছর যদি ফুল না দিয়ে সে টাকাটা শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষনে ব্যয় করা হতো তা হলে হয়তো বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যরকম হতো ।
২১ শে ফেব্রুয়ারী এলেই সপ্তাহ জুরে ধুয়ে মুছে পরিস্কার করা হয় শহীদ মিনার অথচ শহীদদের কবর পরিস্কার করা প্রয়োজন মনে করে না সরকার সরকার । সালাম,বরকত,রফিক,জব্বার আরো নাম না জানা কতো শহীদ যে অবহেলায় অপমানে মুখ গুজে পরে আছে কবরে তার খোজ রাখার কোন দ্বায়িত্ব যেন নেই রাস্ট্রের, সালাম, বরকত,রফিক ,জব্বারের পরিবারের সদস্যরা এখনও পায়নি সরকারের তরফ থেকে কোন সাহায্য সহযোগীতা । যা সত্যিই দু:খজনক।
২১ শে ফেব্রুয়ারী ঘটা করে ফুল দেবার অভিনয় করার পর ২২শে ফেব্রুয়ারী চলে ঘটা করে দৈনিক গুলোতে এবং টিভি চ্যানেল গুলোতে নিজের ছবি দেখা, স্মৃতি চারন সহ আরো কতো কি । যা সত্যিই হাস্যকর।
মুখেই শুধু গেয়ে যাই —আমার ভাইয়ের রঙে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী — আর মনে আচরন করি বিমাতাসুলভ ।
আর তরুন থেকে শুরু করে বর্তমান প্রজন্মের অবস্থা জানতে এটাই যথেস্ট যেখানে দেখানো হয়েছে তরুন হতে আধুনিক মা সবাই জানেনা ২১শে ফেব্রুয়ারী কি হয়েছিল। এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু আছে কি? আমার জানা মতে নেই।
এবারের ফেব্রয়ারীতে সবাই সচেতন হই বাংলা হোক হিন্দি আগ্রাসন মুক্ত, ডোরেমনের প্রভাব শিশুদের মাঝে দেখেছি এবং তা বন্ধ করাতে সাধুবাদ কিন্তু বড়রা যে সিরিয়ালে আসক্ত এবার তা থেকে মুক্তির জন্য সবাই কাজ করে যাই।
আমাদের আশা আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবসে: বাংলা ভাষার চরম প্রকাশও পূর্ণ বিকাশ ঘটেছে বিশ্ব মাতৃভাষা দিবসের মাধ্যমে বাংলা ভাষার সংরক্ষণের জন্য ১৯৫২ সালে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল এদেশের অকুতোভয় সন্তানেরা । তাদের আত্মত্যাগ আজ আন্তর্জাতিক পরিসরে মর্যাদা লাভ করেছে ।
বিশ্বের বিভিন্ন মানুষ তাদের আত্মত্যাগ কে স্মরণ করবে । আমাদের গৌরবদীপ্ত জীবনকাহিনী বিশ্ববাসী শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে । আর আমাদের জাতীয় জীবনে বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি এ উন্নতি ত্বরান্বিত করতে হবে । আর তা সম্ভব আমাদের ভাষাকে ভালবাসার মাধ্যমে এই ইতিহাস জানার মাধ্যমে একে সবার কাছে ছরিয়ে দেয়ার মধ্যমে।
আশাকরি আমার এ পোস্টের মাধ্যকে সবাই একটু হলেও আমাদের এই মহান ভাষাকে ভালবেসে সবার মাঝে ছরিয়ে দিবো সেই শুভকামনায় আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো -
A Tribute to International Mother Language Day (21st February) by ZANALA Bangla
দেখুন
------------------------------------------------------------------------
এই পোস্ট লিখতে যে সকল সুত্রের ও পোস্টের সাহাজ্য নেয়া হয়েছে:
০। আমার গত বছরের ইংরেজি ব্লগ International Mother Language Day- ফায়সাল হাসানhttp://www.maximusit.net/p/international-mother-language-day.html
১। ১৯৫২ এর ২১শে ফেব্রুয়ারী… ফিরে দেখা… সুরঞ্জনা –http://www.somewhereinblog.net/blog/Suronjona/29327977
২। সামহ্যারেতে প্রকাশিত ২১শে ফেব্রুয়ারী নিয়ে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য পোষ্ট -নষ্ট কবিhttp://www.somewhereinblog.net/blog/architect_rajib/29325939
৩। যে আগুন ছড়িয়ে গেলো সবখানে … রাগিব হাসানhttp://www.somewhereinblog.net/blog/ragibhasanblog/28770489
৪। উইকিপিডিয়া http://en.wikipedia.org/wiki/Bengali_Language_Movement
৫।২১শে ফেব্রুয়ারি এলেই আমরা শোক পালনের অভিনয় করি -মুহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেনhttp://blog.bdnews24.com/ShakhawatBabon/69140
৬। আমাদের মাতৃভাষা- http://www.dcnaogaon.gov.bd/index.php?option=com_content&view=article&id=80&Itemid=90
৭। Importance of mother language in Islam- Prof. Hasan Abdul Quayyum http://www.daily-sun.com/details_yes_15-02-2013_Importance-of-mother-language-in-Islam_410_2_33_1_1.html
-----------------------------------------------------------------------
>>> ফয়সাল হাসান -faysal2005@gmail.com <<<
লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারী, ২১ শে ফেব্রুয়ারী, ভাষা দিবস, ১৯৫২, ভাষা শহীদ, ভাষা সংগ্রাম, বাংলা ভাষা, ৮ই ফাল্গুন, বাংলাদেশ, মাতৃভাষা, প্রথম প্রহর, একুশে, মহান একুশে, আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারী, ২১ শে ফেব্রুয়ারী, ভাষা দিবস, ১৯৫২, ভাষা শহীদ, ভাষা সংগ্রাম, বাংলা ভাষা, ৮ই ফাল্গুন, বাংলাদেশ, মাতৃভাষা, প্রথম প্রহর, একুশে, মহান একুশে ;
ঢাকা, ২১ ফেব্রুয়ারি: রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান বলেছেন, মহান ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এ আন্দোলন কেবলই আমাদের মাতৃভাষার দাবি আদায় করেনি বরং তা বাঙালি জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ঘটায় এবং স্বাধিকার অর্জনে বিপুলভাবে উদ্বুদ্ধ করে। এ আন্দোলনের পথ বেয়ে ১৯৭১ সালে অর্জিত হয় বাঙালি জাতির বহু কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা।
রাষ্ট্রপতি আজ মহান শহীদ দিবস ও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন।
বানীতে তিনি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তসহ সকল ভাষা শহীদ ও ভাষাসৈনিক; যাঁদের অসীম সাহস ও অদম্য প্রেরণায় ভাষা আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। বাঙালি অর্জন করে মাতৃভাষার অধিকার।
রাষ্ট্রপতি এ দিনে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন মহান ভাষা আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী ভাষাশহীদ বরকত, রফিক, সালাম, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা শহীদদের। তিনি তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। দিবসটি উপলক্ষে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলন আমাদের নিজস্ব ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতির লালনসহ সামনে এগিয়ে যাওয়ার অফুরন্ত প্রেরণা যোগায় এবং সকল অন্যায়, অবিচার ও বঞ্চনার বিরুদ্বে দাঁড়াতে উজ্জীবিত করে।
তিনি বলেন,কোনো জাতির আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যায় না। আমরা গর্ববোধ করি এই ভেবে যে 'শহীদ দিবস' আজ পরিণত হয়েছে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে'। আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের যে গভীর তাৎপর্য তার অনুরণন আজ আমরা সারাবিশ্বে দেখতে পাই 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে।
বানীতে জিল্লুর রহমান বলেন, অমর একুশে তাই কেবল আমদের নিজস্ব ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির অগ্রযাত্রাকে অনুপ্রাণিত করছে না বরং তা পৃথিবীর অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতিকে লালন ও সংরক্ষণে উৎসাহ যোগাচ্ছে। মূলত মহান ভাষা দিবস আজ পৃথিবীর সব ভাষাভাষী মানুষের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করেছে, বিশ্ববাসীকে করেছে ঐক্য ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ।
রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করে বলেন,ভাষা ও সংস্কৃতি হাত ধরাধরি করে চলে। পৃথিবীর বর্ণাঢ্য ভাষা ও সংস্কৃতির বহমান ধারাকে বাঁচিয়ে রাখতে লুপ্তপ্রায় ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় বিশ্ববাসী আরও অবদান রাখবে এবং পৃথিবীর সব নৃতাত্ত্বিক জাতি-গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষিত হয়ে গড়ে উঠবে এক শান্তিপূর্ণ বিশ্ব ।
(ঢাকাটাইমস/ এইচএফ/ ০২.১০ঘ.)
বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে ভাষা শহীদ দিবস
আজ অমর একুশে .শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বাংলা ভাষা-ভাষি লোকজন স্মরণ করছে ভাষা শহীদদের. ফুলে ফুলে ভরে গেছে ভাষা শহীদদের স্মরনে নির্মিত শহীদ মিনার.একই সাথে আজ বিশ্বে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস.ইউনেস্কো ১৯৯৯ সনে এক ঘোষনায় এই দিনকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়.
এদিকে একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে রাশিয়াস্থ বাংলাদেশ দুতাবাসে.
উল্লেখ্য,১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার অধিকার রক্ষার মিছিলে তত্কালীন পাকিস্তানি সরকারের নির্দেশে সাধারন মানুষের উপর গুলি চালায় পুলিশ.ঐ সময় নিহত হয় আবুল বরকত, রফিকউদ্দিন আহমদ, শফিউর আর আব্দুল জব্বারসহ নাম না জানা আরও অনেকে.
রেডিও রাশিয়ার "বাংলা বিভাগের" সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ৫২'র ভাষা শহীদদের স্মরণ করছি.