মন্তিসভায় সঙ্ঘেরই আধিপত্য
নিজস্ব প্রতিনিধি
নয়াদিল্লি, ২৬শে মে- দেশের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সোমবার শপথ নিয়েছেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী। সঙ্গে ৪৫জন মন্ত্রী। মোদীর মন্ত্রিসভায় এসেছেন ২৩পূর্ণমন্ত্রী, ১০স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী, ১২রাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত মন্ত্রিসভার সদস্যদের দপ্তর বণ্টন ঘোষিত হয়নি। রাষ্ট্রপতি ভবনে সন্ধ্যা ছ'টায় সাড়ম্বরে শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয়, ঘণ্টা দেড়েক চলে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী-সহ বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধানদের নৈশভোজ দেন রাষ্ট্রপতি। এর পরেও গুজরাট ভবনে বি জে পি-র শীর্ষ নেতারা ও নতুন মন্ত্রীদের মধ্যে প্রবীণরা বৈঠকে বসেন। ১৬ই মে রাত থেকেই মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য দফায় দফায় আলোচনার পরেও যে বি জে পি-র অভ্যন্তরীণ টানাপড়েন সম্পূর্ণ মেটেনি, তা স্পষ্ট হয়ে যায়।
অথচ সোমবার সকালেই কারা মন্ত্রী হচ্ছেন, সেই তালিকা সংবাদমাধ্যমের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। শেষ মুহূর্তে সংযোজিত হয় রাজস্থানের নিহাল চাঁদের নাম। দুপুর থেকে মুখে মুখে ফিরছে দপ্তরের দায়িত্বের তালিকাও। এমনকি রাতে কয়েকজন মন্ত্রী জানিয়ে দেন তাঁরা মঙ্গলবার কখন দপ্তরে ঢুকবেন। অথচ রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে কোনো তালিকা প্রকাশিত হয়নি। এই ধোঁয়াশার মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে রাজনাথ সিং, অর্থমন্ত্রী হিসেবে অরুণ জেটলি, বিদেশ মন্ত্রকে সুষমা স্বরাজের নাম চূড়ান্তই। কিন্তু প্রতিরক্ষামন্ত্রী কে হবেন, জানা যায়নি তা। প্রধানমন্ত্রী নিজেই ওই দায়িত্ব হাতে রাখবেন, এমন ইঙ্গিতও আছে।
মন্ত্রিসভার আয়তন ছোট হবে, জানিয়েছিলেন মোদী নিজেই। সেইমতো অন্তত সোমবার যে মন্ত্রিসভা হয়েছে তা বিদায়ী ইউ পি এ মন্ত্রিসভা থেকে অনেক ছোট। এই আয়তনই যদি বজায় থাকে, পরে সম্প্রসারিত না হয়, তাহলে অনেক দপ্তরকেই সংযুক্ত করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই মন্ত্রকের অধীনে অনেক দপ্তরকে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে সোমবার রাত পর্যন্ত স্পষ্ট নয় এই সংযুক্তিকরণ সম্পূর্ণ কিনা। মন্ত্রক বণ্টনে কালক্ষেপের তা-ও একটি কারণ বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।
ছোট হলেও নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভার একটি চরিত্র অত্যন্ত প্রবল: এই তালিকা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের তৈরি করা। কট্টর সঙ্ঘ-সদস্যদেরই মন্ত্রিত্বে আনা হয়েছে। মন্ত্রীদের জীবনপঞ্জিতে জ্বলজ্বল করছে তাঁদের সঙ্ঘ সদস্যপদের উল্লেখ। গুঞ্জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদী কোনো পেশাদারকে মন্ত্রী করেননি। এমনকি আর কে সিং, সত্যপাল সিংয়ের মতো অবসরপ্রাপ্ত আমলা-পুলিসকর্তারাও ঠাঁই পাননি। ব্যতিক্রম প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভি কে সিং। তিনি কোনো একটি দপ্তরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী হচ্ছেন।
মোদীর মন্ত্রিসভায় সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে উত্তর প্রদেশ। বারাণসী থেকে নির্বাচিত মোদীকে ধরলে মোট ৯জন এসেছেন এই রাজ্য থেকেই। লক্ষণীয় ভাবে উত্তর প্রদেশ থেকেই নির্বাচিত দলের প্রবীণ নেতা মুরলীমনোহর যোশী বাদ পড়লেও এসেছেন বি জে পি-র দাপুটে নেতা কলরাজ মিশ্র। অযোধ্যা আন্দোলনের সময়ে মিশ্র উত্তর প্রদেশে বি জে পি-র শীর্ষ নেতা ছিলেন। মুজফ্ফরনগরের দাঙ্গায় অভিযুক্ত সাংসদ সঞ্জীব বালিয়ানকে মন্ত্রী করে মোদী বার্তা দিয়েছেন, হিন্দুত্ববাদী মেরুকরণের পথ থেকে সরে আসতে তিনি রাজি নন। মহারাষ্ট্র বি জে পি-শিবসেনা জোটকে ৪২জন সাংসদ দিয়েছে। মন্ত্রী পেয়েছে ছ'জন। শিবসেনার একজনই। অন্যদিকে একেবারেই বাদ পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, উত্তরাখণ্ড ও হিমাচল। কেরালায় বি জে পি-র কেউ জেতেননি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে দলের দুই সাংসদ জিতেছেন। অনেকেই ধারণা করছিলেন দার্জিলিঙ থেকে জয়ী সুরিন্দার সিং আলুওয়ালিয়া মন্ত্রী হবেন। কিন্তু হননি। হিমাচলে চার আসনেই বি জে পি জয়ী হলেও কাউকে নেননি মোদী। দলের মধ্যে চাপা ক্ষোভের গুঞ্জন শোনাও গেছে তা নিয়ে। উত্তর পূর্ব ভারত থেকে আসামের সর্বানন্দ সোনওয়াল এবং অরুণাচলের কিরেন রিজু মন্ত্রী হয়েছেন।
লোকসভা ভোটে হেরেও মন্ত্রী হয়েছেন অরুণ জেটলি, স্মৃতি ইরানি। দু'জনেই অবশ্য রাজ্যসভার সদস্য। কিন্তু সদ্য-পরাজিত দু'জনকে মন্ত্রী করে নরেন্দ্র মোদী কি সঠিক নৈতিক বার্তা দিলেন— এ প্রশ্ন এদিন রাজনৈতিক মহলে ঘোরাফেরা করেছে। প্রকাশ জাভেদকর ও নির্মলা সীতারামন আবার সংসদের কোনো কক্ষেরই সদস্য নন। ছ'মাসের মধ্যে তাঁদের জিতিয়ে আনতে হবে। দু'জনেরই এখন প্রধান কাজ বি জে পি-র মুখপাত্র হিসেবে কাজ করা। জাভেদকর পুরনো হিন্দুত্ববাদী ঘরানার লোক। কিন্তু সীতারামন ভালো করে বি জে পি-ও করেননি। তবে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে মোদীর ঘনিষ্ঠ। বহু জায়গায় তাঁকে মোদী পাঠাতেন দূত হিসেবে।
বি জে পি-র ২৮২ নির্বাচিত সদস্যের কেউই মুসলিম নন। নরেন্দ্র মোদীকে তাই জায়গা করে দিতে হয়েছে নাজমা হেপতুল্লাহকে। ধারণা করা হচ্ছিল মুক্তার আব্বাস নাকভি মন্ত্রী হবেন। কিন্তু নির্বাচনী প্রচার চলাকালীন বিহারের এক মুসলিম নেতাকে বি জে পি দলে নেওয়ায় আপত্তি জানিয়ে জোরালো কটাক্ষ করেছিলেন নাকভি। সম্ভবত সেই কারণেই তাঁকে বাদ পড়তে হয়েছে।
মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছেন পাঁচ শরিক দলের সদস্যরা। রামবিলাস পাশোয়ান (লোকজনশক্তি), অনন্ত গীতে ( শিবসেনা), অশোক গজপতি রাজু (তেলুগু দেশম), হারসিমরাত কাউর বাদল (আকালি দল), উপেন্দ্র কুশওয়াহা ( রাষ্ট্রীয় লোকসমতা পার্টি)।
মন্ত্রিসভায় সাতজন মহিলা। এই মন্ত্রিসভার প্রবীণতম নাজমা হেপতুল্লাহ এবং সবচেয়ে কম বয়সী স্মৃতি ইরানি উভয়েই মহিলা।
আসানসোল কেন্দ্র থেকে কঠিন লড়াই করে জিতে আশা বাবুল মন্ত্রী হবেন এমন জল্পনায় গত বেশ কিছুদিন ধরেই সরগরম ছিল রাজ্য রাজনীতি৷ এ দিন কিছুটা হতাশ গলায় বাবুল বলেন, 'বেশ কিছুদিন ধরে জল্পনা চলছিল যে আমি মন্ত্রী হচ্ছি৷ কিন্ত্ত আজ যাঁরা শপথ নিলাম, তাঁদের মধ্যে আমি নেই৷ এ জন্য হয়তো আমার প্রিয় মানুষরা দুঃখ পাচ্ছেন৷ যাঁরা আমাকে মন্ত্রী হিসাবে দেখতে চেয়েছিলেন, তাঁদের প্রার্থনা ও ইচ্ছেকে আমি সম্মান জানাই৷ আপনারা হতাশ হবেন না৷' গায়ক-সাংসদের বক্তব্য, 'এসক্যালেটরে চেপে উপরে ওঠার চেয়ে ১০০টা সিঁড়ি বেয়ে ওঠা অনেক আনন্দের৷ আসানসোলে ফিরে যাওয়াই এখন আমার মূল লক্ষ্য৷ আমি আসানসোলের মানুষের সঙ্গে কথা বলব৷' বাবুলের বক্তব্য, ক্যাপ্টেন মোদী আপাতত তাঁকে সাইডলাইনে বসিয়ে রাখলেন৷ তিনি সেখানে বসেই নিজের দায়িত্ব পালন করবেন৷
বাবুল বলছেন তাঁর মন্ত্রী না হওয়ার সঙ্গে বাংলার বঞ্চনাকে এক করে দেওয়া উচিত নয়৷ পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংও বলেছেন, 'মন্ত্রিসভার পরবর্তী সম্প্রসারণের সময়ই পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধিকে নেওয়া হবে৷' কবে হতে পারে এই সম্প্রসারণ? সিদ্ধার্থ বলেছেন, 'সেটা আমি ঠিক বলতে পারছি না৷ তবে তিন-চার মাসের মধ্যেই হয়ে যাবে বলে আশা করছি৷' কিন্ত্ত প্রথমে কেন পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধিকে নেওয়া হল না? এর জবাব বিজেপির নেতারা দিচ্ছেন না বা দিতে পারছেন না৷
প্রতিনিধিত্বের নিরিখে মন্ত্রিসভায় বিহার ও উত্তরপ্রদেশের মতো কয়েকটি রাজ্যের প্রতিনিধিরা বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছেন৷ অনেকগুলি রাজ্যই অবহেলিত থেকে গিয়েছে৷ যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ একটি৷ রাজ্য থেকে ২০০৯-এর তুলনায় প্রায় তিনগুণ ভোট পাওয়ায় ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে টক্কর দেওয়ার কথা ভাবছে বিজেপি৷ সেই কারণেই দুই জয়ী সাংসদ বাবুল ও আলুওয়ালিয়াকে মন্ত্রী করার জন্য দলের তরফ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছিল৷ কিন্ত্ত নরেন্দ্র মোদী কিছুটা অন্য ভাবে সরকার চালাতে চান৷ আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্ব ছেড়ে দিয়ে তিনি বরং তাঁর কর্মসূচি রূপায়ণের জন্য যোগ্য নেতাদেরই মন্ত্রী করেছেন৷ সে জন্য অন্তত প্রথম দফায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেউ নেই৷
এ রাজ্য থেকে মাত্র দু'জন নির্বাচিত হয়েছেন বলে মন্ত্রিসভায় বাবুলদের ঠাঁই হয়নি এ যুক্তিও ধোপে টেঁকে না৷ কারণ, ওডিশা ও তামিলনাড়ু থেকে বিজেপির একজন মাত্র সাংসদ জিতে এসেছেন এবং তাঁরা মন্ত্রী হয়েছেন৷ আবার রাজস্থানের ২৫টি আসনেই বিজেপি জয়ী হলেও সেখান থেকে একজনও মন্ত্রী হননি৷ এমনও নয়, শুধুমাত্র যোগ্যতার নিরিখেই মন্ত্রীরা সুযোগ পেয়েছেন৷ কারণ, এত নতুন মন্ত্রীকে নেওয়া হয়েছে, যাঁদের দক্ষতা সম্পর্কে আগের কোনও অভিজ্ঞতা নেই, সে রকম কোনও পরিচিতিও নেই৷ তাঁদের অনেকেই প্রথমবারের সাংসদ৷
মন্ত্রিসভা একেবারে ছোটও হয়নি৷ টিম মোদীতে থাকছেন মোট ৪৪ জন মন্ত্রী৷ তা ছাড়া যদি কংগ্রেস আমলের মতো আবার কিছুদিনের মধ্যেই মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের কথা বলা হয়, তা হলে বলতে হয়, অন্তত এই ক্ষেত্রে আগের পথই অনুসরণ করছেন মোদী৷ শরিক দলগুলিও বলতে শুরু করেছে, মাসখানেকের মধ্যে মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ হবে, তখন তাঁদের থেকে আরও মন্ত্রী নেওয়া হবে৷ সুতরাং মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের সম্ভাবনা রেখে দিয়ে আপাতত অনেকের মনেই মন্ত্রী হওয়ার আশা রেখে দিতে চান মোদী৷ বিজেপি নেতাদের আরেকটা যুক্তি হল, পয়লা রাউন্ডে যাঁরা মন্ত্রী হয়েছেন এতে তাঁরাও চাপে থাকবেন৷ কাজ করে দেখাতে না পারলে, বাদ পড়ার একটা সম্ভাবনা আছে৷ ফলে তাঁরাও কাজ করার আপ্রাণ চেষ্টা করবেন৷
তবে কারণ যাই হোক না কেন, ঘটনা হল, বাংলার প্রতিনিধিত্ব ছাড়াই মন্ত্রিসভা গড়ে নিলেন নরেন্দ্র মোদী৷ ইউপিএ সরকারের দুই দফায় পশ্চিমবঙ্গের তিনজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন৷ প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ইউপিএ-র দ্বিতীয় দফায় প্রণববাবু রাষ্ট্রপতি হন, মমতা সরকার ছেড়ে বেরিয়ে যান৷ শারীরিক অসুস্থতার জন্য প্রিয়রঞ্জনও আজ অতীতের ছায়া৷ মনমোহন সরকারে প্রথমে তৃণমূলের মোট ছ'জন মন্ত্রী ছিলেন৷ পরে বাংলা থেকে অধীর চৌধুরী-সহ তিনজনকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়৷ এর আগে অটলবিহারী বাজপেয়ীর এনডিএ সরকারে বাংলা থেকে জয়ী বিজেপি সাংসদ তপন সিকদার ও সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় দু'জনেই মন্ত্রী হয়েছিলেন৷ কিন্ত্ত কঠিন লড়াইয়ের পরও বঞ্চিত রইলেন বাবুল ও সুরিন্দর৷
মন্ত্রী কমলো, মন্ত্রক নয়
ঘনিষ্ঠদের বড় দায়িত্ব দিয়ে ঘর গোছালেন নরেন্দ্রভাই
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রেমাংশু চৌধুরী
শপথবাক্য পাঠ করছেন নরেন্দ্র মোদী। সোমবার রাজেশ কুমারের তোলা ছবি।
মন্ত্রিসভার বহর কমেছে। কিন্তু একই ধরনের মন্ত্রকগুলি মিশিয়ে দেওয়া হয়নি।
প্রত্যাশা ছিল, বিশেষজ্ঞদের মন্ত্রী করা হতে পারে। তা-ও হয়নি।
যে ধাক্কাটি মন্ত্রিসভার গঠনের সময়ই দেওয়া উচিত ছিল, সে পথেও হাঁটেননি তিনি।
'ন্যূনতম সরকার, সর্বোচ্চ প্রশাসন' এই আশ্বাস দিয়ে ক্ষমতায় আসার দশ দিন পরে আজ কার্যত চমকহীন এক মন্ত্রিসভা পেশ করলেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী।
রাজ্য ছেড়ে মোদী রাজধানীর গুজরাত ভবনে আস্তানা গাড়ার পর থেকে গত ছ'দিন ধরে মন্ত্রিসভার চেহারা নিয়ে রুদ্ধদ্বার আলোচনা চলছিল সেখানে। বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করছিলেন ভাবী প্রধানমন্ত্রী। দল সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছিল, প্রশাসনে গতি আনতে এক দিকে যেমন মন্ত্রিসভার বহর কমাবেন তিনি, তেমনই মিশিয়ে দেওয়া হবে একই ধরনের একাধিক মন্ত্রককে। আজ রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনের চত্বরে প্রায় পাঁচ হাজার অভ্যাগতের সামনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা শপথ নেওয়ার পরে দেখা গেল, দেশের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী একটি প্রত্যাশা পূরণ করেছেন, অন্যটি নয়।
বিদায়ী মনমোহন সিংহ সরকারে মন্ত্রী ছিলেন ৭৮ জন। ৩৩ জন পূর্ণমন্ত্রী। ১২ জন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী এবং ৩৩ জন প্রতিমন্ত্রী। অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন ৫৬ জন। মোদী আজ ৪৫ জনকে মন্ত্রী করেছেন। যার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে বাদ দিয়ে ২৩ জন পূর্ণমন্ত্রী। ১০ জন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী। বাকি ১২ জন প্রতিমন্ত্রী।
ফলে আগের দুই প্রধানমন্ত্রীর তুলনায় মন্ত্রিসভার বহর অনেকটাই কমিয়েছেন মোদী। কিন্তু এক ধাক্কায় মন্ত্রকের সংখ্যা কমানোর যে প্রত্যাশা তাঁর কাছে ছিল, সেটা পূরণ করতে পারেননি তিনি। এত দিন মনে করা হচ্ছিল, পরিবহণ সংক্রান্ত সমস্ত মন্ত্রক, অর্থাৎ রেল, ভূতল পরিবহণ এবং জাহাজ মন্ত্রক মিশিয়ে দেবেন মোদী। মিশে যাবে কৃষি এবং খাদ্য মন্ত্রক বা গ্রামোন্নয়ন এবং পঞ্চায়েত মন্ত্রক। নতুন সরকারের কাছে শিল্প মহলেরও তেমনই প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এর কোনওটাই হয়নি।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। একাধিক মন্ত্রক মিশিয়ে দিতে গেলে আমলাতান্ত্রিক রীতিনীতির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। কারণ বিভিন্ন মন্ত্রক মেশাতে গেলে সরকারি স্তরে বহু পদ বিলুপ্ত হবে। ওই সব পদের আমলাদের কোথায় সরানো হবে, তা নিয়ে ভাবতে হবে। তাই প্রাথমিক ভাবে একই মন্ত্রীকে একাধিক মন্ত্রকের দায়িত্ব দিয়ে সেই পথে এগোনোর চেষ্টা শুরু হয়েছে।
সরকারের এই যুক্তিতে অবশ্য খুশি নয় শিল্পমহল। তাদের বক্তব্য, এই ধরনের সংস্কার একেবারে গোড়াতেই এক ধাক্কায় করা দরকার। না হলে পরে রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার চাপে এগোনো কঠিন হয়ে পড়ে। তা ছাড়া, একই ধরনের মন্ত্রকগুলি যদি এক জন মন্ত্রীর হাতে দেওয়া হতো, তা হলেও সংস্কারের একটা বার্তা যেত। কিন্তু তেমনটাও করা হয়নি।
সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন... |
সংস্কারের কাজে তেমন সফল না হলেও নিজের মন্ত্রিসভা কিন্তু সুকৌশলেই সাজিয়েছেন মোদী। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকগুলির ভার নিজের আস্থাভাজনদের হাতেই তিনি সঁপে দিয়েছেন। যাতে মূল রাশটি নিজের হাতে থাকে। পাশাপাশি দূরে সরিয়ে রেখেছেন লালকৃষ্ণ আডবাণীকে। মুরলীমনোহর জোশী মন্ত্রী হতে চাইলেও ঠাঁই দেননি তাঁকে। সব মিলিয়ে মন্ত্রিসভায় বিরোধী স্বর যতটা সম্ভব কমিয়ে গোড়ার দিনেই টিম মোদীর ভিতটা পোক্ত করে ফেললেন নয়া প্রধানমন্ত্রী।
আর সেই কাজ করতে গিয়ে লোকসভা ভোটে হারা দুই প্রার্থীকে আজ পূর্ণমন্ত্রী করেছেন মোদী। প্রথম জন তাঁর দীর্ঘদিনের সেনাপতি অরুণ জেটলি। রাত পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে মন্ত্রক বণ্টন করা না-হলেও বিজেপি সূত্রের খবর দু'টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক অর্থ এবং প্রতিরক্ষা পেয়েছেন জেটলি। যা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে দল এবং প্রশাসনের অন্দরে। তবে প্রশাসনের অন্য সূত্র বলছে, এমন নয় যে আগামী পাঁচ বছরই এই দুই মন্ত্রক জেটলির হাতে থাকবে। জেটলিকে মোদী বলেছেন, যত দিন না উপযুক্ত কাউকে পাওয়া যাচ্ছে, তত দিন তিনি যেন দু'টি মন্ত্রকই সামলে দেন।
বিজেপি সূত্রে খবর, প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভি কে সিংহ বা মুরলীমনোহর জোশীর মতো কেউ কেউ প্রতিরক্ষামন্ত্রী হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু মোদী চান সৎ এবং তাঁর আস্থাভাজন কাউকে ওই পদে বসাতে। এই অবস্থায় অর্থমন্ত্রীর হাতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক দেওয়া একটি প্রশাসনিক যুক্তিও আছে বলে বিজেপি সূত্রে দাবি করা হচ্ছে। তাদের মতে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সংস্কার করতে চান মোদী। তিনি চান, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির দক্ষতা আরও বাড়িয়ে বাহিনীর পরিকাঠামো গড়ার ক্ষেত্রে বিদেশি রাষ্ট্রের উপর নির্ভরতা কমাতে। এই সংস্কারের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রক ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। তাই এই দুই মন্ত্রক এক জনের হাতে থাকলে সংস্কারের সুবিধা হবে।
কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার চারটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দু'টির দায়িত্ব পেয়ে জেটলিই যে মোদীর পরে সব থেকে প্রভাবশালী হয়ে উঠলেন, সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। যদিও আজ প্রধানমন্ত্রীর পরে শপথ নিয়েছেন বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তার পরে শপথ নেন সুষমা স্বরাজ। যাঁর হাতে বিদেশ মন্ত্রক যাচ্ছে বলে খবর।
কিন্তু রাজনাথ বা সুষমা কেউই মোদীর আস্থাভাজন নন। বিশেষ করে সুষমা। গত লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী তো গোড়া থেকেই দলের অন্দরে মোদীর বিরোধিতা করে এসেছেন। তাঁদের পাল্লা যাতে ভারী না হয়, সেই জন্যই ভোটে হারা কাউকে মন্ত্রী করা ঠিক নয় এই যুক্তিতে কান দেননি মোদী। জেটলি জোড়া দায়িত্ব পেয়েছেন। অন্য দিকে নিজের আর এক ঘনিষ্ঠ, অমেঠীতে রাহুল গাঁধীকে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেওয়া স্মৃতি ইরানিকেও আজ পূর্ণমন্ত্রী করেছেন মোদী। বিজেপি সূত্রে খবর, গুরুত্বপূর্ণ মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক দেওয়া হচ্ছে তাঁকে। বাজপেয়ী জমানায় যে মন্ত্রক সামলাতেন মুরলীমনোহর জোশী।
পেট্রোলিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকও হেভিওয়েট কাউকে না দিয়ে মোদী নিজের আস্থাভাজন ধর্মেন্দ্র প্রধানকে দিচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে। এই মন্ত্রকটি নিয়ে বরাবরই শিল্প মহলের চাপ থাকে। ধর্মেন্দ্রকে স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী করে তার রাশ বকলমে মোদী নিজের হাতেই রাখলেন বলে মনে করা হচ্ছে। আর এক আস্থাভাজন পীযূষ গয়ালকে মোদী একই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও কয়লা মন্ত্রকের দায়িত্ব দিয়েছেন বলে খবর।
বিজেপির এক নেতার কথায়, "আসলে নরেন্দ্র মোদী একটি পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে চাইছেন। হয়তো অদূর ভবিষ্যতেই মন্ত্রিসভার আরও সম্প্রসারণ বা পরিমার্জন হবে।"
মন্ত্রী কমলো, মন্ত্রক নয়
আপাতত শিকে ছিঁড়ল না বাংলার কপালে
অনমিত্র সেনগুপ্ত
সংখ্যায় মাত্র দুই।
তবুও আশায় বুক বেঁধেছিল বঙ্গবাসী। যদি শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিত্বের শিকে ছেঁড়ে বঙ্গের দুই বিজেপি সাংসদের কপালে। পূর্ণমন্ত্রী যদি বা না-ও হয়, তা হলেও যাতে অন্তত একটি প্রতিমন্ত্রীর আসন জোটে রাজ্যের ভাগ্যে!
কিন্তু হতাশই হতে হল রাজ্যবাসীকে। দৌড়ে এগিয়ে থাকলেও নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভায় জায়গা হল না আসানসোলের বাবুল সুপ্রিয়র। ফলে পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিসভায় এ রাজ্যের কোনও প্রতিনিধিত্বই রইল না। যদিও বিজেপির একটি সূত্র দাবি করেছে, আগামী এক-দু'মাসের মধ্যে ফের মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করা হবে। তখন আনা হতে পারে বাবুলকে। আপাতত আশা-নিরাশার দোলাচল মিটে যাওয়ায় নিজের কেন্দ্র আসানসোলের উন্নয়নেই মনোযোগ দিতে চাইছেন তিনি।
রাজ্য থেকে দুই সাংসদ এর আগেও পেয়েছে বিজেপি। ১৯৯৯ সালে। সেই দু'জনই, তপন শিকদার এবং সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় কিন্তু অটলবিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। তখন তৃণমূলের সঙ্গে জোট ছিল বিজেপির। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়েছিলেন রেলমন্ত্রী।
এ যাত্রায় মন্ত্রিসভায় বাবুল স্থান পাবেন এমন আশা জাগিয়েছিলেন খোদ নরেন্দ্র মোদীই। আসানসোলে জনসভায় দাঁড়িয়ে মোদীর বক্তব্য ছিল, "মুঝে দিল্লিমে বাবুল চাহিয়ে।" নির্বাচনে হেভিওয়েট তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেনকে হারানোর পর তাই পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেন, বাবুলকে নিশ্চয়ই মন্ত্রী করা হবে। বাবুল শিবিরের দাবি ছিল, রাজ্যে তৃণমূলের হয়ে লড়াইয়ে নামতে হলে গায়ক-সাংসদকে মন্ত্রী করা উচিত। তবেই রাজ্যবাসীকে বার্তা দেওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
কেন মন্ত্রী হলেন না বাবুল?
বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে, মোদী প্রথম থেকেই চেয়েছিলেন মন্ত্রিসভা হবে ছোট। কার্যত একার হাতে এই দলটি গড়েছেন তিনি। সেখানে গুরুত্ব পেয়েছে উত্তরপ্রদেশ, বিহার বা কর্নাটকের মতো রাজ্য, যে সব জায়গায় ভাল ফল করেছে বিজেপি। স্বাভাবিক ভাবেই এই সব রাজ্য থেকে বেশি সদস্যকে তিনি জায়গা দিয়েছেন মন্ত্রিসভায়। বিজেপি সূত্রের খবর, এ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বের সূত্র মেনেই এগোনো হয়েছে। ফর্মুলাটি ছিল, কোনও রাজ্যের প্রতি বারো জন সাংসদ পিছু এক জন পূর্ণমন্ত্রী, আর চার জন সাংসদ পিছু এক জনকে প্রতিমন্ত্রী করা হবে। এই সূত্র মানলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় পশ্চিমবঙ্গের কোনও প্রতিনিধি থাকার কথা নয়।
যদিও রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব ভেবেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে সেই নিয়মে কিছু ব্যতিক্রম ঘটাবেন মোদী। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই হতাশ বাবুল শিবির। বাবুল অবশ্য বলেছেন, "আসানসোলের মানুষের স্বপ্নপূরণ করাই এখন লক্ষ্য। সেখানকার মানুষের জন্য কাজ শুরু করতে আমি উদগ্রীব হয়ে রয়েছি। আমি জানি, লম্বা দৌড়ে লিফ্টে করে ওঠার চেয়ে সিঁড়ি ভেঙে ওঠা অনেক বেশি কার্যকরী।"
পরে চা চক্রে বাবুলের সঙ্গে লালকৃষ্ণ আডবাণীর পরিচয় করিয়ে দিতে যান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় স্বয়ং। বলেন, ওকে চেনেন? ভাল গান গায়। আডবাণী বলেন, হ্যাঁ চিনি। একই সঙ্গে প্রবীণ বিজেপি নেতার বক্তব্য, বাবুলের জয়টা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
মোদীর মন্ত্রিসভায় রাজ্যের কোনও প্রতিনিধিত্ব না থাকায় তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির আঁতাঁতের অভিযোগ এনেছেন রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, "মমতা ও বিজেপির গোপন আঁতাঁত রয়েছে। আমাদের ধারণা মমতাকে স্বস্তি দিতেই রাজ্য থেকে কাউকে মন্ত্রী করা হয়নি। তা না হলে মমতা 'হরিদাস পাল'-র শপথ গ্রহণে মুকুল রায় ও অমিত মিত্রকে প্রতিনিধি করে পাঠান!"
মন্ত্রিসভা বহরে বাড়তে পারে, আজ এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন শিবসেনার সাংসদ অনন্ত গীতেও। এনডিএ-র সব থেকে পুরনো শরিক শিবসেনা থেকে এক মাত্র গীতেই এ দিন টিম মোদীতে ঠাঁই পেয়েছেন। তিনি এ দিন বলেন, "আগামী এক মাসের মধ্যে মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ করা হবে। সেখানে শিবসেনার আরও দু'জন অন্তর্ভুক্ত হবেন।" গীতের ওই বক্তব্য শোনার পরে অনেকেই মনে করছেন, প্রথম সম্প্রসারণটা শীঘ্রই করে ফেলতে পারেন মোদী। বিজেপি সূত্রও বলছে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই মন্ত্রিসভা করার ব্যাপারে চাপ ছিল মোদীর উপর। তড়িঘড়িতে তাই সব প্রান্তের প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়তো সম্ভব হয়নি। এ বারে সব দিক বিবেচনা করে খুব দ্রুত মন্ত্রিসভায় সম্প্রসারণ করার কথা ভেবে রেখেছেন শীর্ষ বিজেপি নেতৃত্ব। সেই মন্ত্রিসভায় বাবুল স্থান পান কি না, সেটাই এখন দেখার।
No comments:
Post a Comment