ভারতবর্ষের ইতিহাস চর্চায়,বিশষকরে বৈদিকী সাহিত্যনিয়ে তাঁর সৃষ্টিধর্মী আলোচনা বাঙালি জাতির গর্বের ঐতিহ্যহয়ে গেল তাঁর মহাপ্রয়াণে!তিনি যথার্থই বাংলার আদি বিদ্রোহী মধুকবি বংশীয় প্রণম্য সুকুমারী ভট্টাচার্য৷
Indologist Sukumari dead!
প্রসঙ্গতঃ অবশ্য উল্লেখ্য বৈদিকী সাহিত্য ও প্রাচীন ভারতের ইতিহাস নিয়ে ধর্মান্মাদী জাতিসত্তার আঈবাহণে বাঙালিত্ব বিসর্জনে বাংলার দিকে দিকে যে পদ্ম বাহার, তার থেকে মুক্তি পেতে সুকুমারী ভট্টাচার্যকে অবশ্যই পড়া প্রয়োজন৷ভারতে নারী সত্তার প্রতিষ্ঠায় তারই সাহিত্য বালখিল্য তাত্বিক আলোচনার চাইতে অনেক বেশি প্রয়োজনীয়৷বিশেষকরে ধর্মোন্মাদী বাঙালির মুক্তিকল্পে সুকুমারী সাহিত্য অবশ্যপাঠ্য৷আর্য আগমণ,সিন্ধু সভ্যতা,বৈদিক সাহিত্য ও সংহিতা সময় নিয়ে থার লেখা পড়লে বাবরি বিধ্বংসের অশনিসংকেত ধরা পড়তই৷তসলিমার লজ্জা লেখারই প্রয়োজন হত না৷
পলাশ বিশ্বাস
প্রয়াত হলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সুকুমারী ভট্টাচার্য। আজ দুপুরে এসএসকেএম হাসপাতালে প্রয়াত হন তিনি। সন্ধেয় তাঁর মরণোত্তর দেহদান করা হবে আরজিকর হাসপাতালে। সুকুমারী ভট্টাচার্যের জন্ম উনিশশো একুশ সালে। ইংরেজি ও সংস্কৃত সাহিত্যে উচ্চশিক্ষার পাঠ শেষ করার পর অধ্যাপনাকেই পেশা হিসাবে বেছে নেন তিনি।
প্রথমে যোগ দেন লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের ইংরেজি বিভাগে। কয়েক বছর পর যোগ দেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে। পরে ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই সংস্কৃত বিভাগে দীর্ঘদিন অধ্যাপনার কাজে যুক্ত ছিলেন সুকুমারী ভট্টাচার্য। বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে পঁয়ত্রিশটি বই লিখেছেন তিনি। দেশের মধ্যে এবং বহির্বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে তাঁর গবেষণা। প্রাচীন সমাজ, সাহিত্য এবং সংস্কৃতি ছিল তাঁর অনুসন্ধানের বিষয়।
Sukumari Bhattacharji
Demythologising Early Indian History
Sukumari Bhattacharji ANCIENT Indian historysocial, religious and cultural is a happy hunting ground for many authors. Today the craze is more noticeable because many authors of a particular political complexion have an axe to grind and the subject offers them an opportunity to twist the existing data in order to propound their theories. Ancient Indian history is a very handy peg on which one can hang chauvinism, fundamentalism, seemingly innocuous vested political interests and presentation of warped social values. The stated aim of some of these authors is to re-interpret ancient Indian historical material, but research or cultivation of history is really of secondary importance, the ulterior motive is to select, reject and present data suitable to their perspective and frequently this is the glorification of the reactionary elements in Indian history.
ভারতবর্ষের ইতিহাস চর্চায়,বিশষকরে বৈদিকী সাহিত্যনিয়ে তাঁর সৃষ্টিধর্মী আলোচনা বাঙালি জাতির গর্বের ঐতিহ্যহয়ে গেল তাঁর মহাপ্রয়াণে!তিনি যথার্থই বাংলার আদি বিদ্রোহী মধুকবি বংশীয় প্রণম্য সুকুমারী ভট্টাচার্য৷
খবর জানা ছিল না৷সকালে এই সময়ে চোখ রাখতেই জানা হয়ে গেল,সুকুমারী ভট্টাচার্য আর নেই৷তাঁর পূর্ব পুরুষ কোনো এক কালে মেঘনাথ বধ কাব্য লিখে মর্যাদা পুরুষোত্তম রামকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ইন্দ্রজিত কে আলোকধারায় আনার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন,আর তিনি,এতটুকু বলাই বোধ হয় যথেষ্ট যার নারী সত্তার দাবিতে এপার ওপার তোলপাড়,সেই তসলিমা নাসরিণের নিষিদ্ধ কালামেও সুরকুমারীর লেখা ভর করেই নারী সত্তার চরম অভিব্যক্তি৷ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক পুরুষ আধিপাত্যবাদের বিরুদ্ধে নারীসত্তার আলোড়ন তাই সুকুমারীর অনন্য অবদান৷
ভারতবর্ষের ইতিহাস চর্চায়,বিশষকরে বৈদিকী সাহিত্যনিয়ে তাঁর সৃষ্টিধর্মী আলোচনা বাঙালি জাতির গর্বের ঐতিহ্যহয়ে গেল তাঁর মহাপ্রয়াণে৷তাঁরই ভাষায়ঃবহুশতাব্দীর বৈদেশিক শাষণের ফলে ভারতীয়দের মনে জাতীয় অসম্মানের ক্ষতিপূরণের প্রবণতা থেকে একধরেণের মিথ্যা উন্নাসিকতার উদ্ভব হয়,বৈদিক সাহিত্য চর্চায় তার অনিবার্য প্রবাবও দেকা যায়৷অন্যদিকে পরাধীন জীবনের অনগ্রসরতা ও বৈজ্ঞানিক উন্নতির ক্ষতিপূরণের জন্যে আধুনিকীকরণ ও প্রগতির বিপরীত মেরুতে বৈদিকী সাহিত্যের কল্পিত গৌরবকে উপস্তাপিত করা হয়৷দুর্ভাগ্যের বিষয়,বৈদিক সাহিত্যের আলোচনা তখনই নূতনকরে আমাদের দেশে শুরু হল যখন সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় আন্দোলন দেখা দিয়েছিল৷তখনকার বৈষয়িক জীবনের হীনতা ও অভাববোধকে চাপা দেওয়ার জন্য দেশপ্রেমিক চিন্তানায়কেরা বৈদিক সাহিত্যের তথাকতিত তুরীয় আধ্যাত্মিকতার মধ্যে আশ্রয় নিলেন৷আমাদের সংস্কৃতির উত্তরাধিকারের মধ্যে যা কিছু যথার্থ গৌরবের দিক ছিল,তার স্বাস্থকর আলোচনার সম্ভাবনা এতে বিশেষভাবে ব্যাহত হল৷পরিবর্তে দেখা গেল রুগ্ন এক গর্ববোধ,অর্থহীন উন্নাসিকআত্মসন্তুষ্টি, দৃষ্টি ভঙ্গির চুড়ান্ত বিভার্ন্তি এবং গবেষমার নামে অবৈজ্ঞানিক কাল্পনিকতার প্রসার৷রাজনেতিক স্বার্থ সিদ্ধির প্রয়োজনে এই প্রবণতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হল….
ইতিহাসের আলোকে বৈদিকী সাহিত্য,নিজের এই বইয়ের মুখবন্ধে বর্তমান ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক পুনরূত্থাণের ব্রঙ্ম মুহুর্তে তার লেখার গুরুত্ব ও এই রক্ত প্লাবিত মহাদেশে তাঁ থাকা না থাকার গুরুত্ব তিনি নিজেই চিত্রার্পিত করে গিযেছেন৷
প্রসঙ্গতঃ অবশ্য উল্লেখ্য বৈদিকী সাহিত্য ও প্রাচীন ভারতের ইতিহাস নিয়ে ধর্মান্মাদী জাতিসত্তার আঈবাহণে বাঙালিত্ব বিসর্জনে বাংলার দিকে দিকে যে পদ্ম বাহার, তার থেকে মুক্তি পেতে সুকুমারী ভট্টাচার্যকে অবশ্যই পড়া প্রয়োজন৷ভারতে নারী সত্তার প্রতিষ্ঠায় তারই সাহিত্য বালখিল্য তাত্বিক আলোচনার চাইতে অনেক বেশি প্রয়োজনীয়৷
বিশেষকরে ধর্মোন্মাদী বাঙালির মুক্তিকল্পে সুকুমারী সাহিত্য অবশ্যপাঠ্য৷আর্য আগমণ,সিন্ধু সভ্যতা,বৈদিক সাহিত্য ও সংহিতা সময় নিয়ে থার লেখা পড়লে বাবরি বিধ্বংসের অশনিসংকেত ধরা পড়তই৷তসলিমার লজ্জা লেখারই প্রয়োজন হত না৷
Indologist Sukumari dead
TNN | May 25, 2014, 03.37 AM IST
KOLKATA: Indologist and Sanskrit scholar Sukumari Bhattacharji died on Saturday. She was 92. She had pledged her body to the cause of medical research.
Sukumaridi, as she was fondly called by her admirers, belonged to a rare breed of scholars who had equal grasp of English and Sanskrit literature. She began her career as a lecturer in English at Lady Brabourne College, joined Jadavpur University's Comparative Literature department on the request of Buddhadeb Basu, and later shifted to the Sanskrit department.
Born to Christian parents on July 12, 1921, Sukumari used to joke that she shared her birthday with Julius Caesar. But her Christian lineage came in the way when she wanted to do her graduation in Sanskrit. Calcutta University didn't allow her. Sukumari did her masters in English in 1944 and took up teaching at Lady Brabourne College, a year later. She had to do her masters in Sanskrit as a private candidate,10 years later.
Her command over Sanskrit helped her delve deep into Sanskrit texts — the Vedas, and Bhagavad Gita — and unravel the societal patterns in ancient India and evolution of culture and religion. "Sukumaridi wouldn't accept anything as they came. She wouldn't accept anything without reason. It inspired me as a student. It is this quality that also made her controversial among orthodox Sanskrit scholars," said Bijoya Goswami.
Her Marxist outlook prompted her for a dispassionate and objective study of religious texts. Tracing the evolution of devis in her popular book — Leged of Devis, Bhattacharji analysed how Lakshmi — the goddess of harvest in the pre-Aryan agrarian society turned into alakshmi in the Aryan society. Some such original thoughts have found their way in her books — Bede Samsay O Nastikko, Bede Khuda O Khadya, Balmikir Ram. She authored 34 books such as The Gita — Its Why and How, Human & Society in Ancient India, Fatalism in Ancient India.
But her erudition never overshadowed her amiable nature, her love for students and colleagues, recollects Bijoya Goswami. "We had set up a student welfare fund in our department. Sukumaridi took the initiative. It was meant to support students who struggled to come to the university. The fund remains till date. Many students gave back the money later, some couldn't," Goswami said.
After her retirement in 1986, Sukumari Bhattacharji pursued her research at her Naktala residence till she shifted to an apartment in the neighbourhood much later. She was suffering from respiratory problems and was admitted to SSKM Hospital on Friday. City intelligentsia — Nabanita Dev Sen, Amiya Bagchi, Yashodhara Bagchi, Ratnabali Chatterjee — CPM leader Shyamal Chakrabarty, social activist Kumar Rana were present when her body was handed over to the RG Kar Medical College on Saturday afternoon.
http://timesofindia.indiatimes.com/city/kolkata/Indologist-Sukumari-dead/articleshow/35575670.cms
শেষ দিন পর্যন্ত ছিল বিশ্লেষণী তাজা মন
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা, ২৫ মে, ২০১৪, ০২:৫৮:২৬
সুকুমারী ভট্টাচার্য
প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য-ইতিহাস-সংস্কৃতির বিদগ্ধ গবেষক সুকুমারী ভট্টাচার্য প্রয়াত হয়েছেন। বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। শনিবার বেলা সওয়া দু'টো নাগাদ এসএসকেএম হাসপাতালে তাঁর জীবনাবসান হয়। সুকুমারীদেবীর শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী, তাঁর দেহ দান করা হচ্ছে। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগে এ দিন সন্ধেয় তাঁর মরদেহটি রাখা হয়। কাল, সোমবার দেহদানের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
জন্ম মেদিনীপুরে ১৯২১ সালের ১২ জুলাই। তবে সুকুমারীদেবীর শিক্ষাজীবন প্রধানত কলকাতাতেই। বাঙালি খ্রিস্টান পরিবারের মেয়ে বলে স্নাতকোত্তর স্তরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত পড়তে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। নিরুপায় হয়ে শেষ পর্যন্ত যখন ইংরেজি এমএ ক্লাসে ভর্তি হন, তখন পরীক্ষা প্রায় ঘাড়ের উপরে। তা-ও সসম্মান উত্তীর্ণ হন সুকুমারীদেবী। লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। পরে প্রাইভেটে সংস্কৃত এমএ পরীক্ষা দিয়ে প্রথম শ্রেণিতে পাশ করেন তিনি।
বুদ্ধদেব বসুর আমন্ত্রণে লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ ছেড়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে যোগ দেন সুকুমারীদেবী। পরে চলে যান সংস্কৃত বিভাগে। সেখানেও তাঁর ধর্মীয় পরিচয় ঘিরে সহকর্মীদের একাংশের আপত্তিতে সমস্যা হয়। অবসরের পরেও তাঁর সারস্বত-চর্চা থামেনি। ইংরেজি, বাংলায় প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩৫-এর বেশি। সুরেশচন্দ্র মজুমদার স্মৃতি আনন্দ পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সম্মাননার মতো স্বীকৃতিও পেয়েছেন। ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপারের মতে, "ওঁর কাজ প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে আছে।"
আশি-নব্বইয়ের কোঠায় পৌঁছেও পরের পর নতুন দিক নিয়ে গবেষণায় মেতে থেকেছেন সুকুমারীদেবী। লিখেছেন বই। প্রাচীন ভারতীয় সমাজ, পুরাণ, ইতিহাস, রীতি-আচারকে বুঝতে, বোঝাতে চেয়েছেন সমকালের প্রেক্ষিতে। ছাত্রছাত্রী থেকে সুহৃদবর্গ বরাবরই যেটা দেখেছেন, সেই কথাই বললেন প্রাচীন মহাকাব্য গবেষক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, "ছাত্রছাত্রীরা ওঁর সঙ্গে তর্ক করলে খুশি হতেন। আর সুকুমারীদি যে যুগের থেকে এগিয়ে ভাবতেন, তাঁর 'ইন্ডিয়ান থিওগনি' বইটিই তার প্রমাণ।" বেদে সংশয় ও নাস্তিক্য, নিয়তিবাদের উদ্ভব ও বিকাশ, বেদের যুগে ক্ষুধা ও খাদ্য, হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা, বিবাহপ্রসঙ্গে প্রভৃতি বই সুকুমারীদেবীর মৌলিক বিশ্লেষণী চিন্তার স্বাক্ষর। সপ্তাহখানেক আগে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান একদা ছাত্রী, লেখক নবনীতা দেবসেন। তখন লোকসভা ভোট সবে মিটেছে। জাতীয় রাজনীতি নিয়ে সুকুমারী সে-দিন নানা কথা বলেছিলেন। নবনীতার কথায়, "ওঁর শরীর ভাঙলেও মন তাজা ছিল। বয়সকালে অনেকেই আত্মকরুণায় পীড়িত হন, নিজের কষ্টে ভারাক্রান্ত হয়ে থাকেন সুকুমারীদি সে-সবের শতহস্ত দূরে।"
স্বামী ইংরেজির সুপণ্ডিত অধ্যাপক অমল ভট্টাচার্য প্রয়াত হয়েছেন আগেই। মেয়ে-জামাই ইতিহাসবিদ তনিকা সরকার ও সুমিত সরকার। তাঁরা দিল্লি প্রবাসী। কলকাতায় একাই থাকতেন সুকুমারীদেবী। নিজের পড়াশোনা বা তরুণতররা কে কী পড়ছেন, ভাবছেন, তা নিয়ে আগ্রহে কখনও ভাটা পড়েনি। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় শুক্রবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। পর দিন দুপুরে থমকে গেল সচল-সজীব মননে ঋদ্ধ একটি জীবন।
সুকুমারী ভট্টাচার্যের জীবনাবসান
নিজস্ব প্রতিনিধি
কলকাতা, ২৪শে মে—প্রয়াত হলেন বিশিষ্ট ভারততত্ত্ববিদ, প্রাবন্ধিক অধ্যাপিকা সুকুমারী ভট্টাচার্য। শনিবার দুপুরে এস এস কে এম হাসপাতালে জীবনাবসান হয় প্রাচীন ভারত ও সংস্কৃত সাহিত্যচর্চায় এক প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিচিত এই জ্ঞানদীপ্ত মানবীর। আমৃত্যু সাম্যবাদে বিশ্বাসী, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তীক্ষ্ণ ও ক্ষুরধার লেখনীশক্তির অধিকারী সুকুমারী ভট্টাচার্যকে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন উল্লেখ করেছিলেন 'আধুনিক কালের গার্গী' হিসেবে। একদিকে, নারী চেতনার উন্মেষ ও নারী প্রগতির ক্ষেত্রে তিনি লেখার মাধ্যমে যেমন সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন, তেমনি মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলনেও তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সংযোজন করেছেন। জীবনের শেষলগ্নে দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির পুনরুত্থানে অত্যন্ত বিচলিত বোধ করেছিলেন অধ্যাপিকা ভট্টাচার্য। শুক্রবার তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকদের চেষ্টা সত্ত্বেও এদিন দুপুর ২টা নাগাদ তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩। এদিনই সন্ধ্যায় আর জি কর হাসপাতালে তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মরণোত্তর দেহদান করা হয়।
বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান এবং সি পি আই (এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক বিমান বসু এদিন এক শোকবার্তায় বলেন, অধ্যাপিকা সুকুমারী ভট্টাচার্য ছিলেন কুসংস্কারমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন একজন শিক্ষাবিদ। তাঁর লেখনীর মাধ্যমে তিনি সমাজপ্রগতির ধারাকে পুষ্ট করার কাজ করেছেন। পুরাণ, বেদ-বেদান্ত বিশেষ করে ঋক্বেদের সময়ের সমাজ নিয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ চর্চা করেছেন। তিনি বেশ কয়েকটি গুরত্বপূর্ণ পুস্তকের রচয়িতা। তাঁর মতো ব্যক্তিত্বসম্পন্না এক শিক্ষাবিদের জীবনাবসানে আমি গভীরভাবে শোকাহত। গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। এক শোকবার্তায় তিনি এদিন বলেন, সুকুমারী ভট্টাচার্য প্রাচীন ভারতের সাধারণ মানুষের জীবনযাপন ও জীবন-যন্ত্রণা এবং আর্থ-সামাজিক পরিমণ্ডলের যুক্তিনিষ্ঠ ও তথ্যনির্ভর ইতিহাসের গবেষণায় নিরলসভাবে ব্রতী ছিলেন। বিশেষ করে প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ ভাবধারায় ভাবিত হয়ে ভারততত্ত্ব ও প্রাচীন ভারতের ইতিহাস গবেষণায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির পক্ষ থেকেও অধ্যাপিকা ভট্টাচার্যের জীবনাবসানে গভীর শোক জ্ঞাপন করেছেন বনানী বিশ্বাস।
এদিন তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে চলে আসেন বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি। অধ্যাপক অমিয় বাগচী, যশোধরা বাগচী, নবনীতা দেবসেন, তীর্থঙ্কর চট্টোপাধ্যায়, রত্নাবলী চট্টোপাধ্যায়, বিজয়া গোস্বামী, নীলাঞ্জনা শিকদার, সি পি আই (এম) নেতা শ্যামল চক্রবর্তী, দীপক দাশগুপ্ত, রবীন দেব, তন্ময় ভট্টাচার্য, সোমনাথ ভট্টাচার্য, এস এফ আই নেতা শতরূপ ঘোষ, অধ্যাপক সমীর রক্ষিত, কুমার রাণা, পার্থ রাহা, শীলা লাহিড়ী, প্রয়াত সুকুমারী ভট্টাচার্যের সহকারী সন্ধ্যা বেরাসহ আরও অনেকে। বিশিষ্টরা প্রয়াত ভট্টাচার্যের মরদেহে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপরেই মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় আর জি কর হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার স্বার্থে তাঁর মরদেহ দান করা হয়।
সংক্ষিপ্ত জীবনী: সুকুমারী ভট্টাচার্যের জন্ম মেদিনীপুরে ১৯২১ সালের ১২ই জুলাই। বংশগতভাবে মাইকেল মধুসূদন দত্তের উত্তরসূরি ছিলেন তাঁর বাবা সরসীকুমার দত্ত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৪ সালে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন তিনি। ইংরেজি সাহিত্যে উচ্চশিক্ষার পাঠ শেষ করার পর অধ্যাপনাকেই পেশা হিসাবে বেছে নেন তিনি। প্রথমে যোগ দেন লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের ইংরেজি বিভাগে। দশ বছর পর ১৯৫৭ সালে যোগ দেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে। পরে সংস্কৃত সাহিত্যেও তিনি এম এ পাস করেন এবং ১৯৬৬ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃত সাহিত্যে ডক্টরেট পান। পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েরই সংস্কৃত বিভাগে দীর্ঘদিন অধ্যাপনার কাজে যুক্ত ছিলেন সুকুমারী ভট্টাচার্য।
বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে প্রায় পঁয়ত্রিশটি বই লিখেছেন তিনি। সুপরিচিত পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা শতাধিক মূল্যবান প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৭০ সালে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে তাঁর লেখা প্রথম বই 'দি ইন্ডিয়ান থিয়জনি' প্রকাশিত হয়। পরে বইটি কলকাতা থেকেও প্রকাশিত হয়েছে। দেশের মধ্যে এবং বহির্বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে তাঁর গবেষণা। প্রাচীন সমাজ, সাহিত্য এবং সংস্কৃতি ছিল তাঁর অনুসন্ধানের বিষয়। ১৯৭৩ সালে সাহিত্য আকাদেমি থেকে শুদ্রকের লেখা সংস্কৃত 'মৃচ্ছকটিক' নাটকের তাঁর করা বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয়। তাঁর লেখা গুরুত্বপূর্ণ বইগুলির মধ্যে রয়েছে: 'লিটারেচার ইন দ্য বেদিক এজ', 'প্রাচীন ভারত: সমাজ ও সাহিত্য', 'প্রাচীন ভারত: সমাজ ও নারী', 'বেদের যুগে ক্ষুধা ও খাদ্য', 'বেদে সংশয় ও নাস্তিক্য', 'হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা' প্রভৃতি। মার্কসবাদে বিশ্বাস থেকে পুরাণ, বেদ ও উপনিষদের যুগেও সমাজে যে শ্রেণীদ্বন্দ্ব কীভাবে ছিল তা তাঁর অনবদ্য লেখনীর মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন পুস্তকে ফুটিয়ে তুলেছেন।
জীবনে বারেবারে তাঁর ভারতচর্চা ও গবেষণার স্বীকৃতি এসেছে নানা পুরস্কারের মাধ্যমে। ১৯৮৮ সালে আনন্দ পুরস্কার, ১৯৯৪ সালে বিদ্যাসাগর স্মৃতি ও রাহুল সাংকৃত্যায়ন পুরস্কার, ১৯৯৯সালে মুজফ্ফর আহ্মদ পুরস্কার পান তিনি। বাংলা আকাদেমির সদস্যা, এশিয়াটিক সোসাইটির ফেলো হিসেবেও দীর্ঘদিন তিনি কাজ করেছেন। সুকুমারী ভট্টাচার্যের ভারতচর্চা সম্পর্কিত সম্মাননা গ্রন্থ প্রকাশ করেছে ন্যাশনাল বুক এজেন্সি।
তাঁর স্বামী অমল ভট্টাচার্য ছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজে ইংরেজি সাহিত্যের খ্যাতনামা অধ্যাপক। তিনি আগেই প্রয়াত হয়েছেন। একমাত্র সন্তান তনিকা সরকার ও জামাতা সুমিত সরকারও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে অধ্যাপনারত। জার্মানীতে থাকার কারণে তাঁরা কলকাতায় এসে পৌঁছাতে পারেননি।
- See more at: http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=56466#sthash.SuBp6DRn.dpuf
সুকুমারী ভট্টাচার্যের জীবনাবসান
পছন্দের বাক্য ছিল ভারতচন্দ্রের চরণ , 'সে কহে বিস্তর মিছা যে কহে বিস্তর৷ ' সুতরাং , আমৃত্যু তিনি বাস করলেন অনন্য একটি স্বল্পভাষে৷ সুকুমারী ভট্টাচার্যের মিতাক্ষর কিন্ত্ত সত্যাশ্রয়ী সেই জীবনগান সমে এসে ঠেকল শনিবার , দুপুর দুটো পনেরো মিনিটে৷ এসএসকেএম হাসপাতালে৷ কয়েক বছর আগে তাঁর ব্রেন টিউমার হয়৷ কিন্ত্ত বয়সের কারণেই অস্ত্রোপচার সম্ভব হয়নি৷ ইদানীং নবতিপর সুকুমারী দেবীর বয়সজনিত ব্যাধিই ছিল চিকিত্সকদের মূল চিন্তার কারণ৷ এর মধ্যেই মূত্রনালীর সংক্রমণ এবং চিকিত্সকরা জানিয়েছেন , সেখান থেকেই তাঁর রক্তে বিষক্রিয়া (সেপসিস ) দেখা দেয়৷ গত ক'দিন থাবা বসিয়েছিল নিউমোনিয়াও৷ শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় শুক্রবারই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়৷ পরদিনই প্রয়াণ৷
মাইকেল মধুসূদন দত্তের জ্ঞাতির উত্তরাধিকারী সুকুমারীর জন্ম হয় এক খ্রিস্টান পরিবারে , ১৯২১ সালের ১২ জুলাই৷ আদি নিবাস চিত্রানদীর তীরে শিঙে -শোলপুর গ্রাম , কিন্ত্ত সুকুমারীর জন্মস্থান মেদিনীপুর , তাঁর মামাবাড়ি৷ বাবা সরসীকুমার দত্ত এবং মা শান্তবালা দত্ত৷ তিনি৷ কথিত আছে , তাঁর পিতামহ বিপিনবিহারী হিন্দু সমাজের অযৌক্তিক কঠোর আচারে বীতশ্রদ্ধ হয়ে কলকাতায় এসে ধর্মান্তরিত হন৷ শিশুকালে মাস কয়েক মেদিনীপুরের একটি স্কুলে পড়াশোনা বাদ দিলে তাঁর দ্বিতীয় বিদ্যালয় 'ক্রাইস্ট চার্চ স্কুল '৷ পরে 'সেন্ট মার্গারেট স্কুল ' এবং সেখান থেকেই ম্যাট্রিকুলেশন৷ ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে সংস্কৃতে সাম্মানিক নিয়ে পড়তে যান ভিক্টোরিয়া কলেজে৷ ফল খুব ভালো হওয়া সত্ত্বেও প্রেসিডেন্সি কলেজের দরজা খোলেনি , কারণ সেই সময় প্রেসিডেন্সিতে মেয়েদের প্রবেশাধিকারই ছিল না৷ অতীব মেধাবী সুকুমারী দত্ত স্নাতক স্তরে সমস্ত বিষয়ের সকলের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলেন৷ অথচ , প্রাপ্য 'ঈশান স্কলারশিপ 'টি পাননি খ্রিস্টান হওয়ার কারণে৷ দাতা ঈশানচন্দ্র ঘোষের লিখিত নির্দেশ ছিল , বর্ণহিন্দু ছাড়া এই স্কলারশিপ কাউকে দেওয়া যাবে না৷ অবশ্য , 'জুবিলি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ ' পেলেন সুকুমারী৷ ১৯৪২ সালে বি এ পাশ করে সংস্কৃতেই এম এ পাঠ শুরু করলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে , কিন্ত্ত মাঝপথেই পড়া ছেড়ে দিতে হল৷ বিষয় বদলে এ বার ইংরেজি৷ এম এ পাশ করার পর ১৯৪৫ সালে লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে ইংরেজি অধ্যাপনার কাজে যোগদান৷ সেখানে ছিলেন এক দশক৷ ইতিমধ্যে ১৯৫৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাইভেটে সম্পূর্ণ করেছেন সংস্কৃতে এম এ৷ ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত ইংরেজি অধ্যাপনার পর বুদ্ধদেব বসুর আমন্ত্রণে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্যের পাঠদান , এক বছর পর সুশীলকুমার দে তাঁকে নিয়ে যান সংস্কৃত বিভাগে৷ সেই বিভাগ থেকেই অধ্যাপনা থেকে অবসর , ১৯৮৬ সালে৷
বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক সুপণ্ডিত অমল ভট্টাচার্যের সঙ্গে৷ সুকুমারীর কন্যা তনিকা কৃতবিদ্য৷ জামাতাও বিদ্যাক্ষেত্রে স্বনামধন্য , সুমিত সরকার৷ ইংরেজি , বাংলা মিলিয়ে তাঁর গ্রন্থসংখ্যা চৌত্রিশ৷ প্রাচীন ভারতের সংস্কৃতি , বেদ , পুরাণ ইত্যাদি ছিল তাঁর প্রিয় বিষয়৷ পাশাপাশি মনোযোগের কেন্দ্রে ছিল , নারীজীবন৷ উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে আছে হিস্ট্রি অফ ক্লাসিকাল সংস্কৃত লিটারেচর , প্রাচীন ভারত : সমাজ ও সাহিত্য , উইমেন অ্যান্ড সোসাইটি ইন এনশিয়েন্ট ইন্ডিয়া , রিলিজিয়ন কালচার ও গভর্নমেন্ট , বিবাহ প্রসঙ্গ , ফেটালিজম ইন অ্যানশিয়েন্ট ইন্ডিয়া , ইন্ডিয়ান থিয়োগনি , বেদে সংশয় ও নাস্তিক্য , মন্থন , নিয়তিবাদ , উদ্ভব ও বিকাশ প্রভৃতি৷
জরা তাঁর চিন্তাকে গ্রাস করতে পারেনি৷ গ্রাস করল তাঁর শরীরকে৷ সেই শরীর অবশ্য সমাধিস্থ হয়নি৷ মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকারমতো শনিবার বিকেলে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগে সম্পন্ন হল তাঁর দেহদান৷ ১৯২১ -২০১৪৷
সুকুমারীদি মানেই আলোর সঙ্গে ওঠাবসা
নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী
সংস্কৃত পড়ার একটা নিজস্ব জগত্ আছে বলে আমার মনে হত বরাবর , ঠিক যেমন ইংরেজি পড়ারও একটা স্বতন্ত্র জগত্ আছে ---এই দুই জগতের পার্থক্যটা আমার ছাত্র জীবনে অনেকটাই কিপলিং -এর প্রাবাদিক পূর্ব-পশ্চিমের বেমিল সংস্কারের মতো লাগত৷ সুকুমারী ভট্টাচার্যের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয় পূর্বকথিত ওই সাংস্কারিক যান্ত্রিকতার মধ্যে দাঁড়িয়েই৷ বস্ত্তত এর আগে এমন উদারমনস্বিনী মহাপুরুষ মহিলা আমি আগে দেখিনি৷ সুকুমারীদির সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে আমার স্বাধ্যায় -অধ্যয়নের ক্রাইসিসের মধ্যে , কিন্ত্ত ওঁর সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পরে দেখেছি ---কর্মস্থানে তিনি আমার চেয়েও বেশি ক্রাইসিসের মধ্যে থাকতেন৷ ব্যক্তিজীবনে তাঁর তথাকথিত নাস্তিকতা এবং পূর্বজীবনে ক্রিশ্চিয়ানিটির পরিমণ্ডল তাঁর সংস্কৃতের কূপমণ্ডূক সহকর্মীদের কাছে অকারণ জুগুপ্সার বস্ত্ত ছিল একদিকে৷ অন্যদিকে , দশ বছর ব্রেবোর্ন কলেজে ইংরেজি পড়ানোর পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পারেটিভ লিটারেচার বিভাগে সাহংকার চংক্রমণ এমন ভাবেই তাঁকে বলিয়ে -কইয়ে তৈরি করেছিল , যাতে সংস্কৃত বিভাগের সহকর্মীদের কাছে ঈর্ষা-অসূয়ার মহান প্রান্তিযোগ ঘটেছে প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত৷ তাঁকে প্রফেসরের পদ দেওয়া হয়েছিল অবসরের ঠিক দেড় -দু' বছর আগে৷
আসলে ১৯৭০ সালে যাঁর একখানা বই কেমব্রিজ থেকে বেরিয়েছে , তাঁর সঙ্গে টক্কর দিয়ে চলাটা সহজ ছিল না বলেই পদে পদে অসূয়া এবং ঘৃণা বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয়েছে তাঁকে৷ বিশেষত রাজনৈতিক ভাবনায় পুরোনো দিনের সিপিআই গোষ্ঠীর মানুষ , পুরোপুরি বামপন্থায় বিশ্বাসী এই মানুষটার চিন্তার পটভূমিতে ভি ভি কোশাম্বী থেকে আর এস শর্মারা যেমন ছিলেন , তেমনই ছিলেন হীরেন মুখোপাধ্যায় বা চিন্মোহন সেহানবিশের মতো মানুষ৷ আর সংস্কৃত বিদ্যার সঙ্গে বিখ্যাত বিদেশি ভারত -তত্ত্ববিদদের নিত্য বিনিময় তাঁর বিদ্যার জগত্টাকে এমন এক বিস্তারে নিয়ে গিয়েছিল , যেখানে সুকুমারীর সঙ্গে মেলামেশা করা মানে পড়াশুনোর জগতে আলোর সঙ্গে ওঠাবসা করা৷ আমার মনে আছে , ১৯৮৫ সালে আমি যখন ওঁর কাছে গবেষণা করছি , তখন উনি ফ্রান্সের পণ্ডিতানী মাদাম বিয়ার্দোর কাছ থেকে আমার 'রিসার্চ মেটেরিয়াল ' বয়ে নিয়ে আসছেন এবং উপহার হিসেবে ছাত্রের জন্য দু'প্যাকেট বেনসন অ্যান্ড হেজেসও ---এটা কী পঁচাশি সালে কেউ কল্পনা করতে পারতেন ?গবেষণার কালে অনেক বিষয়েই তাঁর সঙ্গে আমার মত মেলেনি , তর্কাতর্কিও হয়েছে প্রচুর৷ কিন্ত্ত সুকুমারী এমনই একজন অধ্যাপিকা , যিনি কখনও নূপুরের মতো চরণে চরণে বাজতে শেখাননি৷ আমি এতটাই স্বাধীন ভাবে তাঁর কাছে কাজ করতে পেরেছি , আমার পড়াশুনোর ক্ষেত্রে এতটাই তিনি দ্বারমুক্তি ঘটিয়েছিলেন , যাতে সংস্কৃতের তথাকথিত এক বাহ্যাবরণ ভেদ করে আমি অন্তত এক বিরাট মুক্ত জগতে বিচরণ করতে শিখেছিলাম৷
মানুষ হিসেবে সুকুমারীদি ছিলেন অসামান্য৷ কোনও দিন তাঁর বাড়ি থেকে না খেয়ে আসিনি৷ অথচ 'শিডিউল্ড ' থাকলে স্পষ্ট বলতেন 'আকণ্ঠ ডুবে আছি ', পরে এসো৷ ' অথচ এই স্পষ্টতার মধ্যেও , অনন্ত ব্যস্ততার মধ্যেও ছাত্র -ছাত্রীদের জন্য তাঁর ব্যক্তিগত মায়ার অন্ত ছিল না৷ সম্পূর্ণ বৃদ্ধকালটাই তাঁর একক গিয়েছে , কারও ভার হয়ে থাকতে চাননি৷ অথচ যে বামপন্থায় প্রায় আজন্ম বিশ্বাস করে 'হাতিয়ার ' কিংবা 'সমন্বয়ে 'র মতো চতুর্থ শ্রেণির কাগজে ভারী লেখা লিখতেন , তাঁরা তাঁকে ৮৬ সালের আগে প্রোফেসর করতে পারল না , রাষ্ট্রপতির হাত থেকে একটা পুরস্কার নেবার জন্য পর্যন্ত একটা রেকমেনডেশন দিতে পারল না৷
আমি সুকুমারীর পঠন -পাঠনের মর্যাদা দেখেছি৷ দেখেছি সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় কিংবা সুশীল কুমার দে -মহাশয়দের তাঁর ওপরে উপচিত স্নেহ , বিদেশি মান্য -গণ্য পণ্ডিতেরা বড় হোটেল ছেড়ে সুকুমারীর বাড়িতে থাকতেন 'ইন্টার -অ্যাকশনে 'র জন্য৷ অথচ এই মানুষটার শেষ জীবন কাটল চরম অবহেলায়৷ সুকুমারী কিন্ত্ত নিয়তিতে বিশ্বাস করতেন না এবং মৃত্যু পর্যন্ত সাবহেলে নিয়তিকে মেনে নিয়েছেন নিয়তি না ভেবে৷ তাঁর ইন্ডিয়ান থিওগনি থেকে শুরু করে অসামান্য যে ক'খানা বই আছে ---এবং তা কুড়িটার কম নয় , তার মধ্যে কোনটা তাঁর সবচেয়ে পছন্দ এ -কথা জিজ্ঞাসা করেছিলেন অধ্যাপক প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি বলেছিলেন Fatalism in Ancient India৷ আসলে এইটে ছিল তাঁর মনের জোর৷ তিনি ভেবেছিলেন , ভারতবর্ষের অনন্ত একটা মানুষও যদি একবার নিয়তি ছেড়ে নিজের কর্মোদ্যমের ওপর নির্ভর করে , মেয়েরা যদি একবার তাঁদের জড়তা ছেড়ে কোনও এক স্পষ্ট জগতের দাবিদার হয় , তবেই সুকুমারী তাঁর শেষ জীবনের অবহেলা থেকে আলোকিত হয়ে উঠতে পারেন৷
http://eisamay.indiatimes.com/city/kolkata/about-Sukumari-Bhattacharya/articleshow/35587650.cms
Search Results
Literature in the Vedic Age: The Saṃhitās - Sukumari ...
books.google.com/.../Literature_in_the_Vedic_Age_The_Saṃhit.html?id...
... and phone. Go to Google Play Now ». Literature in the Vedic Age: The Saṃhitās. Front Cover. Sukumari Bhattacharji. K.P. Bagchi, 1984 - Hindu literature.
The Indian Theogony by Sukumari Bhattacharji ...
Buy The Indian Theogony written by Sukumari Bhattacharji online in india, The Indian Theogony Sukumari Bhattacharji, 9780140295702, Sukumari Bhattacharji ...
Amazon.co.uk: Sukumari Bhattacharji: Books, Biogs ...
-
10 Results - Visit Amazon.co.uk's Sukumari Bhattacharji Page and shop for allSukumari Bhattacharji books. Check out pictures, bibliography, biography and ...
iTunes - Books - Legends of Devi by Sukumari Bhattacharji
https://itunes.apple.com/us/book/legends-of-devi/id454671168?mt...
-
Mar 1, 1998 - Get a free sample or buy Legends of Devi by Sukumari Bhattacharjion the iTunes Store. You can read this book with iBooks on your iPhone, ...
The Indian theogony : Brahmā, Viṣṇu and Śiva / Sukumari ...
-
Author/Creator: Bhattacharji, Sukumari. Language: English. Reprint/reissue date: 2000; Original date: 1970; Imprint: New Delhi : New York : Penguin, 2000.
Sukumari Bhattacharji : Products at Indiaclub.com
www.indiaclub.com/shop/AuthorSelect.asp?...Sukumari+Bhattacharji
-
Sukumari Bhattacharji was born in 1921 and was educated at Victoria Institution, Calcutta and Calcutta University. After completing her master's degree in ...
Prācīna Bhārata, samāja o sāhitya - Sukumari Bhattacharji ...
books.google.com/books/.../Prācīna_Bhārata_samāja_o_sāhitya.html?id...
Summary: Contributed articles on the position of women in ancient Indian society.
Fatalism in ancient India - Sukumari Bhattacharji - Google ...
books.google.com/books/about/Fatalism_in_ancient_India.html?id...
-
Study on fate and fatalism from the perspectives of religions.
Legends of Devi - Sukumari Bhattacharji - Google Books
Legends of Devi is a captivating narration of the various legends and folktales that surround the revered goddesses of India. The goddesses not only epitomize ...
The Indian Theogony - Google Books Result
Sukumari Bhattacharji - 1988 - Hindu gods
THE INDIAN THEOGONY A Comparative Study of Indian Mythology from the Vedas to the Purdnas SUKUMARI BHATTACHARJI Reader in Sanskrit Jadavpur ...
Amazon.com: Sukumari Bhattacharji: Books, Biography ...
www.amazon.com/Sukumari-Bhattacharji/e/B001ICIAYC
10 Results - Visit Amazon.com's Sukumari Bhattacharji Page and shop for allSukumari Bhattacharji books and other Sukumari Bhattacharji related products (DVD ...
Amazon.com: Sukumari Bhattacharji: Books
www.amazon.com/s?ie=UTF8&field...Sukumari%20Bhattacharji...
Results 1 - 12 of 26 - Legends of Devi (Illustrated in Colour) (Illustrated Classics (Indian)) by SUKUMARI BHATTACHARJI and Ramananda Bandapadhyay (Oct ...
LITERATURE IN THE VEDIC AGE, VOL. I, THE ... - jstor
by CG Kashikar
Sukumari Bhattacharji; pub. as Bagchi Indological Series 3 by. K. P. Bagchi ... The author of the book, Professor Sukumari Bhattacharji, has been known for her ...
The Indian Theogony - Sukumari Bhattacharji - Google Books
books.google.com/books/about/The_Indian_Theogony.html?id...
Sukumari Bhattacharji. CUP Archive, 1988 - Hindu gods - 396 pages. 0 Reviewshttp://books.google.com/books/about/The_Indian_Theogony.html?id= ...
The Indian theogony: Brahmā, Viṣṇu and Śiva - Sukumari ...
books.google.com/books/about/The_Indian_theogony.html?id...
The Indian theogony: Brahmā, Viṣṇu and Śiva. Front Cover. Sukumari Bhattacharji. Penguin Books India, 1970 - Brahmā (Hindu deity) - 396 pages.
Books by "Sukumari Bhattacharji" - Infibeam.com
www.infibeam.com/Books/search?author=Sukumari%20Bhattacharji
Buy Sukumari Bhattacharji books online in India. Collection of books fromSukumari Bhattacharji. Get discount offers on Sukumari Bhattacharji books with free ...
No comments:
Post a Comment