রামরাজত্ব আসছেই,সব শম্বুক সাবধাণ,রামবাণ ধেয়ে আসছে৷সীতায়ণও আবার হবে!
রং পালটাতে পালটাতে দিদি সব গৌরিক করে ছাড়লেন৷সাধের সবুজও এখন গৌরিক৷আবার আসছেন অরুণ শৌরি ডিসইনভেস্টমেন্ট তোহফা নিযে৷প্রথম ধাক্কাতেই ইন্দিরা ঐতিহ্য বধ৷চিদাম্বারাম ও প্রণবদাদা করপোরেটফান্ডিং করে এক লক্ষ কোটি টাকার নির্বাচনি খেল দেখালেন,এখন আম্বানী টাটা বিড়লা জিন্দাল মিত্তাল সবার ব্যান্ক হচ্ছে৷সাহার ও সুদীপ্তর মত পোন্জি করে জেল খাটার প্রয়োজন হবেই না৷সরাসরি জমা খাতা,বেতন,বীমা,পেনশন,পিএফ থেকে তাঁদের ব্যান্কে টাকা চলে যাবে,শেয়ারের দাম দেখে ভবিষত নির্ধারিত হবে আপামর জনগণের৷সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যান্ক প্রাইভেটকরার জোর তোড়জোড়৷একযোগে সত্য ত্রেতা দ্বাপরের রামধাক্কায় কেয়া মালুম রাজণ্যদের প্রিভি পার্সও হয়ত ফেরত হবে৷
পলাশ বিশ্বাস
সত্যি সত্যি সত্যযুগ শুরু হতে চলেছে ভোটগণনা শেষ হতে না হতে৷আচ্ছে দিন আনেওয়ালে হ্যায়৷বিজ্ঞাপনী ভাষায় বলা যেতে পারে,মোদী বাবূকে জেতালাম,সোনায় মোড়া হিন্দুরাষ্ট্রে কোনো সমস্যাই থাকছে না৷মুকেশ আম্বানীর বিলাসবহুল বাড়ি হবে সবার৷ফ্রিতে এসি মিলে দাবদাহে শরীর মন শীতল হবে৷বসন্ত বাহার হয়ে যাবে জীবন ৷বুলেট ট্রেন চড়ে যেখানে খুশি সেখানে যাবে৷সব অনুপ্রবেশকারি তাড়িযে দিযে মোদী বাবু সোনার বাংলা গড়বেন.যা বিধান রায পারেননি,জ্যোতিবাবূ ডাহা ফেল,হারমাদ বাহিনীর দাপটে মাটি ওপড়ানো মা মানুষের অগ্নকন্যা যা পারেননি,সেই সব বাঙালি উদ্বাস্তুদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করলেই বাঙালির গতরজ্বালা মিটবে৷মোদী এলে কোটি কোটি ছেলে মেয়েদের বোকারত্ব থাকবে না৷মেয়ের বিয়ে আটকাবে না৷দুর্নীতির দাপটথাকবে না৷পাড়ায পাড়ায় মস্তান রাজ থাকবে না৷সব রাস্তার খানা খন্দ বুজে যাবে৷খুন রাহাজানি অপহরণ বন্ধ হবে৷বন্ধ হবে ঘর্ষণ৷সব গ্রাম শহর হবে৷সব জমি বাজার হবে৷মুরগিরা দেদার সোনার ডিম পাড়বে৷শিল্প হবে,শিল্প তালুক হবে৷পরমাণু চুল্লিতে সবুজ বিপ্লব হবে৷মার্কিন বীজ সোনার শষ্যফলাবে৷সংখ্যালঘদের মাতব্বরি থাকবে না৷পিছিয়ে পড়া জনগণের এগিয়ে এসে দুর্ঘটনার ঘটানোর সাহস থাকবে না৷
লক্ষন ত বেশ ভালোই৷শেয়ার বাজারে ষাঁড়ের দাপট দেখেই বোঝা যাচ্ছে পকেটের পয়সার চানবে কোনদিকে৷রিলায়েন্স আবার আবদার করেই ক্ষান্ত নয়,আধার থাকুক না থাকূক,সাবসিডি থাকছে না৷ট্যাক্স ছাড় পাবে না কোনো নাগরিক৷সব টাকা সাদা টাকা৷পথের ভিখারি ও যত ট্যাক্স দেবে,আম্বানী টাটা মিত্তাল জিন্দাল ভারতীরাও তত টাকা দেবে৷বেড়ে সাম্যের বন্দে মাতরম আবহ৷গ্যাসের দাম ডবল হবে৷বাজার দরে কিনতে হবে৷এপ্রিল মাসের বকায়া দিয়ে তবে মিলবে গ্যাস৷টাকা থাকলে,দামে কি যায় আসে৷অবেশেষে বাংলা গুজরাত হবে৷সব আপদ বিদায় হবে৷
মুশকিল হচ্চে,সত্যযুগের অভ্যুথানে কল্কি অবতারের রাজ্যাভিষেকেও সেই রামরাজত্বের কেচ্ছা এক ঝটকায় ত্রেতাতে নিয়ে এসছে এবং সুধু তাই নয়,কুরুক্ষেত্রের দ্বাপর থেকেও মুক্তি নেই৷
সত্য ত্রেতা দ্বাপর একযোগে কলি অবসান করলে দাঁড়াচ্ছে যে বর্ণ শন্কর দুঃসময়,তার গর্ভে কিকি থাকছে,কিকি মুসল প্রসবে কোন কোন জনপদ,কোন কোন যদুবংশ ধ্বংস হবে,তার খতিয়ান যদিও দিছ্ছেন না মোদীবাবূ৷যদুবংশ ধ্বংস হোক না হোক ,সব অসুর মহিষাসুর নিকেশ তে হচ্ছেই৷ধেই ধেই ধুনুচে নাচের এহেন মওকা মেলে নি বাপের জন্মে৷জয় কালি কলকত্তা ওয়ালি৷
রং পালটাতে পালটাতে দিদি সব গৌরিক করে ছাড়লেন৷সাধের সবুজও এখন গৌরিক৷আবার আসছেন অরুণ শৌরি ডিসইনভেস্টমেন্ট তোহফা নিযে৷প্রথম ধাক্কাতেই ইন্দিরা ঐতিহ্য বধ৷চিদাম্বারাম ও প্রণবদাদা করপোরেটফান্ডিং করে এক লক্ষ কোটি টাকার নির্বাচনি খেল দেখালেন,এখন আম্বানী টাটা বিড়লা জিন্দাল মিত্তাল সবার ব্যান্ক হচ্ছে৷সাহার ও সুদীপ্তর মত পোন্জি করে জেল খাটার প্রয়োজন হবেই না৷সরাসরি জমা খাতা,বেতন,বীমা,পেনশন,পিএফ থেকে তাঁদের ব্যান্কে টাকা চলে যাবে,শেয়ারের দাম দেখে ভবিষত নির্ধারিত হবে আপামর জনগণের৷সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যান্ক প্রাইভেটকরার জোর তোড়জোড়৷একযোগে সত্য ত্রেতা দ্বাপরের রামধাক্কায় কেয়া মালুম রাজণ্যদের প্রিভি পার্সও হয়ত ফেরত হবে৷
রামরাজত্ব আসছেই,সব শম্বুক সাবধাণ,রামবাণ ধেয়ে আসছে৷সীতায়ণও আবার হবে!
রাম রাজত্বের মহিমা অপরাম্পার৷
এই সময়ে লিখেছেন বটে ণবীর চক্রবর্তীঃ
রামরাজ্য বললে সুদূর অতীতের রামচন্দ্রের শাসনাধীন রাষ্ট্র বা রাষ্ট্র -সমাজের কথাই মনে হবে৷ তাকে ভাবা হয় এক নিষ্কলুষ , পক্ষপাতবিহীন শাসন , যেখানে দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন নিশ্চিত ছিল৷ এমন কাঙ্খিত রাষ্ট্রশাসনের ধারণা ও কল্পনা যখন প্রাচীন শাস্ত্রগ্রন্থাদিতে করা হয়েছে , তখন কিন্ত্ত রামরাজ্য শব্দ দিয়ে তাকে চিহ্নিত করা নজির নেই৷ আদর্শ রাজার প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য হল রক্ষণ ও পালন , যার থেকে উত্পন্ন হয় প্রজাকল্যাণ বা যোগক্ষেম৷ এই বক্তব্য মোটামুটি ভাবে আপনি দেখবেন অর্থশাস্ত্র , মনুসংহিতা , মহাভারতের শান্তিপর্ব ইত্যাদি গ্রন্থে৷ আপন ভূখণ্ড ও প্রজাবর্গকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে বাঁচানো অবশ্যই রাজার রক্ষণকর্মের আওতায় আসে৷ পালন শব্দটি দ্বারা শাস্ত্রকাররা নির্দেশ দিচ্ছেন ব্রাহ্মণ্যসমাজাদর্শ মেনে , বর্ণাশ্রম ধর্ম অটুট রেখে সামাজিক সুস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে৷ এই আদর্শ মানলে কিন্ত্ত সার্বিক প্রজাকল্যাণ হওয়া অসম্ভব৷ কারণ বর্ণাশ্রমধর্মের তত্ত্বটিই বৈষম্যের উপর প্রতিষ্ঠিত ও আশ্রিত৷ ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়ের যাবতীয় সুবিধার্থে নিম্নতর দুই বর্ণ, বিশেষত শূদ্র এবং অসংখ্য নিম্নপর্যায়ের জাতিকে বঞ্চিত ও অবদমিত করে রাখার নীতিগত আধার ও কলাকৌশল হল বর্ণাশ্রম প্রথা এবং তার থেকে উদ্ভূত জাতিভেদ প্রথা৷ উদাহরণ বাড়িয়ে লাভ নেই৷ তাই বর্ণাশ্রম পালন করার তাগিদে শম্বুক হত্যা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে৷ একলব্যকে গুরুদক্ষিণা দেবার জন্য আপন হাতে নিজের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ ছেদন করতে হয়৷ রক্ষণ এবং 'যথাযথ ' পালন করেন বলে রাজা রাজস্ব দাবি করতে পারেন৷ অর্থাত্ প্রাচীন শাস্ত্রবাক্য অনুযায়ী রাজকর রাজার কার্যত বেতনপ্রতিম৷ কিন্ত্ত এখানেও সমস্যা৷ ব্রাহ্মণ এবং ক্ষত্রিয়ের উপর কর চাপানো চলে না৷ তা হলে করের বোঝা পড়বে নিম্নতর দুই বর্ণ ও অসংখ্য জাতিতে বিভক্ত সমাজের প্রান্তিক পর্যায়ে থাকা মানুষজনের উপর৷ প্রাচীন শাস্ত্রবচনে দেখা যাবে রক্ষণ ও পালনের যে রাজকীয় কর্তব্য তাতে বিশেষ নড়চড় হচ্ছে না , কিন্ত্ত রাজস্বের দাবি বা অধিকার ক্রমশই পরিব্যান্ত হয়ে চলেছে৷ প্রথমে ফসলের একাংশ , তার পর খনিজ দ্রব্যের একাংশ , তার উপর বনজ সম্পদের কিছু অংশ , বাণিজ্য ও কারিগরি কার্যকলাপের উপরখানিক অংশ সবই রাজকীয় প্রতাপবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রমবর্ধমান রাজস্বের দাবি৷ কর্তব্য ও অধিকারের এই বৈষম্য বর্ণাশ্রম ব্যবস্থার সঙ্গে ওতপ্রোত বিজড়িত৷ বর্ণাশ্রমের পালন না করলে কিন্ত্ত রামরাজ্যের প্রতিষ্ঠা ও বিকাশ ঘটা অসম্ভব৷ এই অবস্থায় আর যাই হোক , রামরাজ্যের কল্পনা ও তত্ত্বের মধ্যে সার্বিক কল্যাণের কোনও সম্ভাবনা নেই৷ বর্ণাশ্রম ও জাতিভেদের উপর আশ্রিত যে সাবেকপন্থী সমাজ , তা এত কঠোর ভাবে পিতৃতান্ত্রিক , সেখানে নারীর মর্যাদা নিরন্তর গৌণ ও হীন হতে থাকে৷ কল্যাণকামী রামরাজ্যের ধারণা ও তাত্ত্বিক কাঠামো মূলত তুলসীদাসের রামচরিতমানসের আধারে নির্মিত , যাতে যুক্তির চেয়ে ভক্তির প্রাবল্যই উপস্থিত৷ রামরাজ্যের তাত্ত্বিক অবস্থানটি হালফিল যদি প্রয়োগ করতে হয় তা হলে তা হবে ভাবের ঘরে চুরি , একটি দূরভিসন্ধিমূলক প্রয়াস৷ আধুনিক রামরাজ্য হলে কি নিষ্কাম জনসেবার আদর্শ তুলে ধরে স্বীয় পত্নীকে ত্যাগ নয় , তাঁর সামাজিক ও আইনি স্বীকৃতি দেওয়া নিতান্ত নিমরাজি হয়ে করতে হয় ?
পিজে নায়ক কমিটির সুপারিশ বাতিল করা না হলে ধর্মঘটের পথে হাঁটবে অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন (এআইবিইএ)৷ এই সংগঠনে রাষ্ট্রায়ত্ত, বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাঙ্কের পাঁচ লক্ষ কর্মী আছেন৷
অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের প্রাক্তন চেয়ারম্যান পিজে নায়েকের নেতৃত্বে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের একটি প্যানেল মঙ্গলবারই প্রস্তাব করে, সরকারের উচিত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে তাদের অংশিদারি ৫০ শতাংশের চেয়ে কমিয়ে আনা, তারা প্রতিযোগিতার বাজারে আরও ভালো ভাবে কাজ করতে পারবে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কগুলি৷ কারণ নিয়ামক, সরকার, সিভিসি, সিএজি-র মতো প্রতিষ্ঠানের চাপে তাদের নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় হয়৷ সরকার তার অংশিদারি কমিয়ে ফেললেই সিভিসি, সিএজির মতো বাহ্যিক সংস্থার চাপ কমবে৷
এআইবিইএ-র সাধারণ সম্পাদক সিএইচ বেঙ্কটচলম বলেন, 'এই সুপরিশ বাতিল করা না হলে আমরা বন্্ধ ডাকব৷ সাধারণ লোকের টাকা নিয়ে ব্যাঙ্ক কারবার করে৷ সাধরণের টাকা নিয়ে তাঁদের ভালো করা দরকার, বেসরকারি নিয়ন্ত্রণে লুঠ করার জন্য নয়৷' তাই রিপোর্ট বাতিলের দাবিতে দেশ জুড়ে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ, মিছিলের হমকি দিয়েছেন বেঙ্কটচলম৷ শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার অংশিদারি বিক্রির বিরোধিতা করাই নয়, তারা চায়, বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিরও রাষ্ট্রায়ত্তকরণ হোক৷ বেঙ্কটচলম বলেন, 'গ্রাহকদের প্রতারণা করা ও খারাপ ব্যবস্থাপনার জেরে আগে আমাদের দেশে বহু বেসরকারি ব্যাঙ্কই ভেঙে পড়েছে৷ তাই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে কখনও বেসরকারি করা উচিত নয়, উল্টে তাদের পরিধি আরও বড় ও শক্তিশালী করা দরকার৷'
নায়ক কমিটির জ্ঞানের গভীরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বেঙ্কটচলম বলেন, যখন বহু বেসরকারি ক্ষেত্রের জন্য অনাদীয় ঋণের বোঝা বাড়ছে, ঠিক তখন সেই বেসরকারি হাতে ব্যাঙ্কগুলিতে তুলে দেওয়ার সুপারিশ করা হচ্ছে৷ তিনি বলেন, 'বড় বেসরকারি সংস্থা ও উদ্যোগের জন্য ৪ লক্ষ কোটি টাকা অনাদায়ী ঋণ জমে রয়েছে৷ তাই আমরা তীব্র ভাবে নায়ক কমিটির সুপারিশের নিন্দা করছি ও অবিলম্বে তা খারিজ করার দাবি করছি৷'
বেঙ্কটচলম বলেন, ১৯৬৯ সালে ব্যাঙ্ক জাতীয়করণের পরে নির্দিষ্ট লোকের মধ্য থেকে ব্যাঙ্ক পরিষেবা সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে৷ ১৯৬৯ সালে যেখানে ব্যাঙ্কের মোট শাখার সংখ্যা ছিল ৮,২৩৯টি, তার বদলে এখন শাখার সংখ্যা ৮০,০০০ ছাড়িয়েছে৷ এর মধ্যে ৩৬,০০০ শাখা রয়েছে গ্রাম ও ছোট শহরগুলিতে৷ তিনি বলেন, '১৯৬৯ লাসে যেখানে মোটচ আমানতের পরিমাণ ছিল ৫,০০০ কোটি টাকা, এখ সেখানে সাধারণের আমানতের পরিমাণ ৭৮ লক্ষ কোটি টাকা৷ ঋণের পরিমাণ ৩,৫০০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৫০ লক্ষ কোটি টাকা হয়েছে৷ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সৌজন্যেই সাধারণ মানুষের নাগালে এসেছে ব্যাঙ্ক পরিষেবা৷' তাঁর কথায়, কৃষি, গ্রামোন্নয়ন, কর্মসংস্থান, মহিলা ক্ষমতায়ন, দারিদ্র দূরীকরণ ও পরিকাঠামো উন্নয়নে ঋণ পাওয়া যায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কল্যাণেই৷ বর্তমানে দেশে ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক রয়েছে৷
ব্যাঙ্ক কর্মীদের সংগঠন আপত্তি করলেও, নায়ক কমিটির সুপারিশকে যে বিনিয়োগকারীরা স্বাগত জানিয়েছে, তা স্পষ্ট শেয়ার বাজারে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলোর শেয়ারসূচক ওঠা থেকেই৷ পরবর্তী সরকার এসে এই সুপারিশ কার্যকর করুক বা না করুক, তার আগেই দাম বেড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শেয়ারের৷ বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে এদিন ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের শেয়ার সামান্য (০.৩১ শতাংশ) উঠলেও, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মধ্যে কানারা ব্যাঙ্কের শেয়ারদর সবচেয়ে বেশি ১০.৬৮ শতাংশ, ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের শেয়ারদর ৮.৯২ শতাংশ এবং ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্কের শেয়ার দর ৮.৯২ শতাংশ উঠেছে৷ আইডিবিআই ব্যাঙ্ক (৫.৬১ শতাংশ), ইউকো ব্যাঙ্ক (৫.৯৮ শতাংশ), পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের (৪.৪৬ শতাংশ) শেয়ারদরও বেড়েছে৷
স্টক এক্সচেঞ্জ খোলার পরে, সকাল ৯.৪৬-এ বিএসই-র ব্যাঙ্ক সূচক ১৬,৩৭৭ পয়েন্টে পৌঁছে যায়, কিন্ত্ত বিনিয়োগকারীরা লাভের টাকা ঘরে তোলায় দিনের শেষে মঙ্গলবারের তুলনায় ৪৯.৪২ পয়েন্ট (০.৩১ শতাংশ) উঠে তা ১৬২৫৬.৪২ পয়েন্টে বন্ধ হয়৷
ঠিক ১০ বছর আগে, ২০০৪ সালে, বিভিন্ন বুথ ফেরত সমীক্ষায় বলা হয়েছিল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে এনডিএই সরকার তৈরি করবে৷ কিন্ত্ত, ভোট গণনার পর দেখা গেল একেবারে উল্টো হিসাব৷ তখন টানা তিন দিন শেয়ার বাজার লাফিয়ে নেমেছিল৷ ২০১৪-এ তেমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না তো? সোমবার প্রকাশিত বুথফেরত সমীক্ষায় বলা হচ্ছে, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এনডিএ সরকারের ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা উজ্জ্বল৷ এই সম্ভাবনার জেরেই গত শুক্রবার থেকে প্রায় ১৫০০ পয়েন্ট উঠল মুম্বই শেয়ার বাজারের সূচক সেনসেক্স৷ মঙ্গলবার ২৪,০৬৮.৯৪ পয়েন্ট পর্যন্ত উঠে যায়, সেনসেক্স৷ পরে বিনিয়োগকারীদের মুনাফা ঘরে তোলার হিড়িকে শেয়ারসূচকটি অবশ্য ৩২০.২৩ পয়েন্ট (১.৩৬ শতাংশ ) উঁচুতে বন্ধ হয় (২৩,৮৭১ .২৩ পয়েন্ট )৷ নিফটিও সোমবারের চেয়ে ৯৪.৫০ পয়েন্ট বা ১.৩৫ শতাংশ বেড়ে মঙ্গলবার ৭,১০৮.৭৫ পয়েন্টে বন্ধ হয়৷ এ দিন ২০০০ কোটি টাকারও বেশি বিদেশি লগ্নি ঢোকে শেয়ার বাজারে৷ এনডিএর ক্ষমতায় আসা এবং বিদেশি বিনিয়োগ ঢোকার ফলে মঙ্গলবার ডলারের সাপেক্ষে টাকার বিনিময় দর ৩৭ পয়সা বেড়ে প্রতি ডলার ৫৯.৬৮ হয়েছে৷ বস্ত্তত, গত বছর ১৩ সেপ্টেম্বর বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসাবে নরেন্দ্র মোদীর নাম উঠে আসার পর থেকেই শেয়ার বাজার ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে৷ তার পরে নিয়ম করে মূল্যবৃদ্ধির হার বেড়েছে, তিন বার ঋণে সুদের হার বাড়িয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক৷ তা সত্ত্বেও মোদী হাওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগ আসতে থাকায় শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী৷ ৫ মার্চ ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর থেকে বাজারের এই তেজীভাব আরও জোরদার হয়৷ ভোটগ্রহণ পর্বের শেষ লগ্নে তা সব মাত্রা ছাড়িয়ে যায়৷ সমীক্ষার ফল ভোটগণনার সঙ্গে মিলে গেলে শুক্রবার শেয়ারবাজার আরও বাড়তে পারে, এমনকি সেনসেক্স ২৫,০০০ ও নিফটি ৭,৫০০ পয়েন্ট ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান৷
বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলির মধ্যে এ দিন সবচেয়ে ভালো ফল করেছে শক্তি, সূচক উঠেছে ৩.২৬ শতাংশ৷ এ ছাড়া ভালো ফল করেছে তেল ও গ্যাস, রিয়েলটি, ক্যাপিটাল গুডস, দীর্ঘমেয়াদী ভোগ্যপণ্য ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সূচকও৷ আদানি ও ভেলের শেয়ারদর এদিন সবচেয়ে বেশি বেড়েছে৷ যে ৩০টি সংস্থার ওঠাপড়া নিয়ে সেনসেক্স সূচক, তার মধ্যে ২৪টি সংস্থাই এ দিন লাভ করেছে৷ বিনিয়োগকারীরা লাভের টাকা ঘরে তোলায় দাম পড়েছে ডাঃ রেড্ডিজ ল্যাব, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, হিন্ডালকো ইন্ডাসিট্রজ, মহিন্দ্রা অ্যান্ড মহিন্দ্রা, সান ফার্মা ও টাটা মোটরর্সের৷ এপ্রিল মাসে মূল্যবৃদ্ধির হার তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮.৫৯ শতাংশ ছিল৷ মার্চ মাসে ০.৫ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে দেশের শিল্পোত্পাদন৷ কিন্ত্ত, এ সব তথ্য একপ্রকার অগ্রাহ্য করেই এ সপ্তাহের প্রথম দু'দিন লাফিয়ে বাড়ল শেয়ারবাজার৷ শুক্রবার থেকে শুরু করে এ যাবত প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকার নীট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে শেয়ারবাজারে৷ শুক্রবার ভোটগণনা শুরু৷ তার আগে অবধি শেয়ার বাজার চাঙ্গা থাকার সম্ভাবনা প্রবল৷ কিন্ত্ত, গণনার ফলাফলে বিনিয়োগকারীদের আশাহত হতে হলে শেয়ার বাজার ধড়াস করে পড়তে পারে বলে৷
নয়াদিল্লি: লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগে হঠাত্ করে শেয়ার বাজার সূচক লাগামছাড়া বাড়তে থাকায় অশনি সংকেত দেখছেন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম৷ মঙ্গলবার ফিনান্সিয়াল স্টেবিলিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের বৈঠকে সেবি ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সমেত সমস্ত নিয়ামক সংস্থাকেই শেয়ার বাজারের সম্ভাব্য অস্থিরতার মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে সদা সতর্ক থাকতে বলেছেন অর্থমন্ত্রী৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন বলেন, 'আগামী দিনগুলিতে যে কোনও সমস্যা দেখা দিলে তার মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক প্রস্ত্তত৷' একই বার্তা দিয়েছেন শেয়ার বাজার নিয়ামক সংস্থা সেবির চেয়ারম্যান ইউ কে সিনহাও৷ তিনি বলেন, 'খুব কাছ থেকে শেয়ার বাজারের পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে৷ কাজেই চিন্তিত হওয়ার কোনও কারণ নেই৷ সবরকম ব্যবস্থাই তৈরি রয়েছে৷ আমরা যে কোনও অনিয়মের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেব৷' গত শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত মুম্বই শেয়ার বাজার সূচক সেনসেক্স ১ ,৫০০ পয়েন্টের বেশি বেড়েছে৷ অন্যদিকে, ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ সূচক নিফটিও এই ক'দিন ৪৫০ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ১৬ মে ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনের চড়ান্ত ফল না বেড়োনো পর্যন্ত শেয়ার বাজারে এই অস্থিরতা বজায় থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে৷
একই ভাবে বিভিন্ন ব্রোকারেজ সংস্থা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে দিয়েছে৷ কেন্দ্রের মসনদে বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার কেন্দ্রের বসতে পারে এই আশায় দেশের শেয়ার বাজার নতুন উচ্চতায় পৌঁছোলেও লোকসভা নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের সতর্ক হয়ে শেয়ার কেনাবেচা করার পরামর্শ দিয়েছে ব্রোকারেজ সংস্থাগুলি৷ সোমবার বুথ ফেরত সমীক্ষায় যে চিত্র উঠে এসেছে তাতে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি ২৪৯-২৯০টি আসন পাবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ শেয়ার বাজার সূচক দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও ১৬ মে লোকসভা নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল না বের হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকতে বলেছে ব্রোকারেজ সংস্থাগুলি৷ শুধুমাত্র ওপিনিয়ন পোল এবং বুথ ফেরত সমীক্ষার উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ করা ঠিক হবে না বলে জানিয়েছে ওই সংস্থাগুলি৷ ২০০৪ এবং ২০০৯ দু'বারই বুথ ফেরত সমীক্ষার সঙ্গে বাস্তবের মিল ছিল না, সেকথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে ক্রেডিট স্যুইস, বার্কলেজ, ইউবিএস, সিটিগ্রুপ, নোমুরা, কার্ভি সিকিওরিটিজ, নির্মল বাঙ সিকিওরিটিজ এবং ওয়েলথরেজ৷
ইউবিএস-এর রিপোর্ট মোতাবেক ইন্ডিয়া ভোলাটিলিটি ইনডেক্স (ভিআইএক্স ) এখন পর্যন্ত ৩৭.১ পয়েন্টে পৌঁছেছে, যা একমাস আগেও ৩০ পয়েন্টের নিচে ছিল৷ স্বল্পমেয়াদে শেয়ার বাজার কতটা অস্থির থাকতে পারে তা জানতে এই সূচক ব্যবহার করা হয়৷ ভিআইএক্স সূচক যত ঊর্ধ্বমুখী হয়, অস্থিরতার প্রবণতাও বাড়ে৷ 'এনডিএ কেন্দ্রে নতুন সরকার গড়বে এই আশায় শেয়ার সূচক লাফ দিয়ে বাড়ছে৷ কিন্ত্ত, বুথ ফেরত সমীক্ষা এবং ভোটের ফল প্রকাশিত হওয়ার পরে তা (শেয়ার বাজার ) ভিন্ন আচরণ করতে পারে,' রিপোর্টে জানিয়েছে শেয়ার ব্রোকিং সংস্থা কার্ভি৷ একই পরামর্শ দিয়েছে নির্মল বাঙ সিকিওরিটিজ, ক্রেডিট স্যুইস এবং জাপানি ব্রোকারেজ সংস্থা নোমুরাও৷ নির্মল বাঙ সিকিওরিটিজের মতে, 'এনডিএর সম্ভাব্য জয়ের লাভ শেয়ার বাজার ইতিমধ্যেই তুলে নিয়েছে বলে আমাদের বিশ্বাস৷ কাজেই সতর্ক হয়ে বিনিয়োগ করা উচিত৷' 'কেন্দ্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ স্থায়ী সরকার গঠিত হলে দেশের জাতীয় উত্পাদন হার বৃদ্ধির আশায় শেয়ার বাজারও ঊর্ধ্বমুখী থাকতে পারে৷ কিন্ত্ত, তার উল্টোটা হলে শেয়ার বাজার পড়তে থাকবে,' গবেষণা রিপোর্টে জানিয়েছে ওয়েলথরেজ৷
বন্ধ হল জেসপ, বিক্ষোভে রাস্তা অবরোধ
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: সাত-আট মাস কার্যত বন্ধ থাকার পর অবশেষে আনুষ্ঠানিক ভাবে কারখানা বন্ধের নোটিশ জারি করলেন জেসপ কর্ণধার রুইয়া গোষ্ঠী। চরম অনিশ্চয়তায় প্রায় ৭৫০ জন কর্মীর ভবিষ্যত্।
আজ থেকে বন্ধ হয়ে গেল জেসপ ওয়ার্কস লিমিটেড। বুধবার রাতে কারখানার গেটে লকআউটের নোটিশ দেন কর্তৃপক্ষ। সঙ্গে সঙ্গে হতাশায় ফেটে পড়েন কর্মীরা। আজ সকাল থেকে ঘটনার প্রতিবাদে যশোর রোড অবরোধ করেছেন জেসপের কর্মীরা।
শেষ সাত-আট মাস ধরেই কোনও কাজ হচ্ছিল না জেসপ কারখানায়। মোটা লোকসান গুনে কারখানা চালানোর অক্ষমতা এর আগেই জানিয়েছিলেন কর্ণধার পবন রুইয়া। উত্পাদন বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কর্মীদের বেতনেও হাত পড়ে। দীর্ঘ সাত-আট মাস ধরে তাই বেতন-সহ সব রকম বকেয়া থেকে বঞ্চিত তাঁরা।
উল্লেখ্য, এক সময় জেসপ কারখানায় প্রায় তিন হাজার শ্রমিক বহাল ছিলেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেই সংখ্যা কমে শেষে ৭৫০-এ এসে ঠেকে। বন্ধ কারখানা কেনেন পবন রুইয়া। কিন্তু তিনিও কারখানা সফল ভাবে চালাতে ব্যর্থ হন। তাই দমদম বিমানবন্দরের কাছে ২৬ একর জায়গার উপর তৈরি জেসপ কারখানা অচল হওয়ার পর থেকে দানা বাঁধতে থাকে নানান গুজব।
সমস্যার জট ছাড়াতে কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু তাতেও কোনও সমাধান বের হয়নি।
ফলে অনির্দিষ্ট কালের জন্য কর্মহীন হয়ে পড়েন শ্রমিকরা। চলতে থাকে অসন্তোষ, বিক্ষোভ, অবস্থান। শেষে গতকাল রাতের নোটিশ তাঁদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। এদিন সকাল থেকেই বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা যশোর রোড অবরোধ করেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে পুলিশ। সম্পূর্ণ ব্যাহত হয়েছে যান চলাচল।
রাম রাজ্য
রাম রাজ্যরামরাজ্য শব্দটি শুনলে খটকা লাগে৷ কার জন্যে এবং কীসের জন্যে 'রামরাজ্য ', সেটা খোলসা না হলে 'রামরাজ্য ' শব্দ দিয়ে কেবল ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়৷ লিখছেন রণবীর চক্রবর্তী।
২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন প্রায় শেষ হবার মুখে৷ নির্বাচনী প্রচারে , মিছিলে , জনসভায় , বিতর্কে রাজরাজ্যের প্রসঙ্গ গোড়ায় খুব বেশি শোনা না গেলেও গত ৬ মে ২০১৪ ফৈজাবাদের নির্বাচনী জনসভায় নরেন্দ্র মোদীর ভাষণে বিষয়টি বেশ জোরালো ভাবে উত্থাপিত হয়েছে৷ বাজার গরম করাই সম্ভবত এই জাতীয় বক্তব্য পেশ করার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল ; আর তা বেশ ভালো ভাবেই সাধিত হয়েছে৷ সংবাদমাধ্যমের দ্বারা তার মূল কথা সবার কাছে পৌঁছেছে , পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন৷ উপরন্ত্ত দেখা গেল নির্বাচনী বক্তৃতা মঞ্চ আলো করে আছে যে দলীয় নিশান , তার সঙ্গে বিরাজ করছে রামচন্দ্রের মুকুটশোভিত প্রতিকৃতি , সঙ্গে একটি উচ্চচড় মন্দিরের ছবি৷ প্রাচীন অযোধ্যার অবস্থান ছিল ফৈজাবাদ এলাকায় , তাই অঞ্চলটি রামচন্দ্রের স্মৃতিবিজড়িত এক পুণ্যভূমি ; রামরাজ্যের আকর৷
রামরাজ্য শব্দটি শুনলে নানা রকম খটকা লাগে৷ তার অন্যতম প্রধান কারণ বাংলা ভাষায় রাম শব্দটির বিচিত্র দ্যোতনা৷ বিশ্বাসী মানুষ রামনাম উচ্চারণ করে অবশ্যই মনে স্বস্তি ও সাহস পেয়ে থাকেন৷ কিন্ত্ত বাংলা শব্দবন্ধে রাম কথাটির প্রয়োগ ঘটলে অবধারিত এসে পড়ে এক তির্যকতা৷ খোঁচা দেওয়া ছাড়া আর কোনও অর্থে বোকারাম , হাঁদারাম ইত্যাদি শব্দের প্রয়োগ হয় না৷ বিয়ের বাজারে আদর্শ অপাত্র হল গঙ্গারাম , যদিও সুকুমার রায় জানিয়ে দেন , 'কিন্ত্ত তারা উচ্চ ঘর , কংসরাজার বংশধর৷ ' শব্দের প্রথমার্ধে যদি রাম কথাটি বসে , তা হলেও সমান বিপত্তি৷ রামধাক্কা যিনি খেয়েছেন , তিনি বিলক্ষণ জানেন রাম শব্দটির ব্যবহারে তাতে প্রলেপ পড়ার কোনও সম্ভাবনা নেই ; তার অভিঘাতের উপশম হওয়াও দূর অস্ত৷ বিখ্যাত খাদ্য বিশারদ ব্যাকরণ শিং , বি .এ . সাধারণ ছাগল না , রামছাগল৷ রামনাম উচ্চারণ করলে ভূত পালায় , এ কথা সুবিদিত৷ তবে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় তাঁর গোঁসাইবাগানের ভূত কাহিনিতে নিধিরাম নামে এক ভূতকে হাজির করেছিলেন৷ ওই অসামান্য রামান্ত্যনামবিশিষ্ট ভূতের কেরামতিতে অঙ্কে তেরো পাওয়া বুরুন সব প্রতিবন্ধকতা উত্রিয়ে পৌঁছে গিয়েছিল এক সব -পেয়েছির -দেশে৷ এই সব -পেয়েছির -দেশটিই রামরাজ্য৷ রাম বা অযোধ্যা নেই বলে সর্বদাই হা হুতাশ করি আমরা৷ তা হলে রামরাজ্য কি ফিরিয়ে আনার মতো কোনও এক লুন্ত, অদর্শন বস্ত্ত , বা প্রত্যয় বা আদিকল্প --- যার পুনর্দর্শন , পুনরাগমন কল্পনা করলে মনে বেশ পুলক জাগে ? পুনরুজ্জীবনবাদী ভাবনায় ও রাজনীতিতে রামরাজ্য রূপায়ণের সেটাই প্রাথমিক শর্ত৷
রামরাজ্য বললে সুদূর অতীতের রামচন্দ্রের শাসনাধীন রাষ্ট্র বা রাষ্ট্র -সমাজের কথাই মনে হবে৷ তাকে ভাবা হয় এক নিষ্কলুষ , পক্ষপাতবিহীন শাসন , যেখানে দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন নিশ্চিত ছিল৷ এমন কাঙ্খিত রাষ্ট্রশাসনের ধারণা ও কল্পনা যখন প্রাচীন শাস্ত্রগ্রন্থাদিতে করা হয়েছে , তখন কিন্ত্ত রামরাজ্য শব্দ দিয়ে তাকে চিহ্নিত করা নজির নেই৷ আদর্শ রাজার প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য হল রক্ষণ ও পালন , যার থেকে উত্পন্ন হয় প্রজাকল্যাণ বা যোগক্ষেম৷ এই বক্তব্য মোটামুটি ভাবে আপনি দেখবেন অর্থশাস্ত্র , মনুসংহিতা , মহাভারতের শান্তিপর্ব ইত্যাদি গ্রন্থে৷ আপন ভূখণ্ড ও প্রজাবর্গকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে বাঁচানো অবশ্যই রাজার রক্ষণকর্মের আওতায় আসে৷ পালন শব্দটি দ্বারা শাস্ত্রকাররা নির্দেশ দিচ্ছেন ব্রাহ্মণ্যসমাজাদর্শ মেনে , বর্ণাশ্রম ধর্ম অটুট রেখে সামাজিক সুস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে৷ এই আদর্শ মানলে কিন্ত্ত সার্বিক প্রজাকল্যাণ হওয়া অসম্ভব৷ কারণ বর্ণাশ্রমধর্মের তত্ত্বটিই বৈষম্যের উপর প্রতিষ্ঠিত ও আশ্রিত৷ ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়ের যাবতীয় সুবিধার্থে নিম্নতর দুই বর্ণ, বিশেষত শূদ্র এবং অসংখ্য নিম্নপর্যায়ের জাতিকে বঞ্চিত ও অবদমিত করে রাখার নীতিগত আধার ও কলাকৌশল হল বর্ণাশ্রম প্রথা এবং তার থেকে উদ্ভূত জাতিভেদ প্রথা৷ উদাহরণ বাড়িয়ে লাভ নেই৷ তাই বর্ণাশ্রম পালন করার তাগিদে শম্বুক হত্যা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে৷ একলব্যকে গুরুদক্ষিণা দেবার জন্য আপন হাতে নিজের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ ছেদন করতে হয়৷ রক্ষণ এবং 'যথাযথ ' পালন করেন বলে রাজা রাজস্ব দাবি করতে পারেন৷ অর্থাত্ প্রাচীন শাস্ত্রবাক্য অনুযায়ী রাজকর রাজার কার্যত বেতনপ্রতিম৷ কিন্ত্ত এখানেও সমস্যা৷ ব্রাহ্মণ এবং ক্ষত্রিয়ের উপর কর চাপানো চলে না৷ তা হলে করের বোঝা পড়বে নিম্নতর দুই বর্ণ ও অসংখ্য জাতিতে বিভক্ত সমাজের প্রান্তিক পর্যায়ে থাকা মানুষজনের উপর৷ প্রাচীন শাস্ত্রবচনে দেখা যাবে রক্ষণ ও পালনের যে রাজকীয় কর্তব্য তাতে বিশেষ নড়চড় হচ্ছে না , কিন্ত্ত রাজস্বের দাবি বা অধিকার ক্রমশই পরিব্যান্ত হয়ে চলেছে৷ প্রথমে ফসলের একাংশ , তার পর খনিজ দ্রব্যের একাংশ , তার উপর বনজ সম্পদের কিছু অংশ , বাণিজ্য ও কারিগরি কার্যকলাপের উপরখানিক অংশ সবই রাজকীয় প্রতাপবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রমবর্ধমান রাজস্বের দাবি৷ কর্তব্য ও অধিকারের এই বৈষম্য বর্ণাশ্রম ব্যবস্থার সঙ্গে ওতপ্রোত বিজড়িত৷ বর্ণাশ্রমের পালন না করলে কিন্ত্ত রামরাজ্যের প্রতিষ্ঠা ও বিকাশ ঘটা অসম্ভব৷ এই অবস্থায় আর যাই হোক , রামরাজ্যের কল্পনা ও তত্ত্বের মধ্যে সার্বিক কল্যাণের কোনও সম্ভাবনা নেই৷ বর্ণাশ্রম ও জাতিভেদের উপর আশ্রিত যে সাবেকপন্থী সমাজ , তা এত কঠোর ভাবে পিতৃতান্ত্রিক , সেখানে নারীর মর্যাদা নিরন্তর গৌণ ও হীন হতে থাকে৷ কল্যাণকামী রামরাজ্যের ধারণা ও তাত্ত্বিক কাঠামো মূলত তুলসীদাসের রামচরিতমানসের আধারে নির্মিত , যাতে যুক্তির চেয়ে ভক্তির প্রাবল্যই উপস্থিত৷ রামরাজ্যের তাত্ত্বিক অবস্থানটি হালফিল যদি প্রয়োগ করতে হয় তা হলে তা হবে ভাবের ঘরে চুরি , একটি দূরভিসন্ধিমূলক প্রয়াস৷ আধুনিক রামরাজ্য হলে কি নিষ্কাম জনসেবার আদর্শ তুলে ধরে স্বীয় পত্নীকে ত্যাগ নয় , তাঁর সামাজিক ও আইনি স্বীকৃতি দেওয়া নিতান্ত নিমরাজি হয়ে করতে হয় ?
খেয়াল রাখা দরকার যে আম্বেদকরের কাছে রামরাজ্যের মোহমাত্র ছিল না৷ গান্ধীর রামরাজ্য সংক্রান্ত যাবতীয় ধারণা ও তত্ত্বের নিরন্তর এক তীব্র বিরোধিতা তিনি করে গিয়েছিলেন তাঁর শাণিত যুক্তি দিয়ে৷ গান্ধী অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে আজীবন লড়াই করেছেন , জাতিভেদপ্রথার বিষম অভিঘাত সম্বন্ধে তাঁর কোনও দ্বিধা ছিল না৷ কিন্ত্ত এতত্সত্ত্বেও বর্ণাশ্রম ধর্মের নৈতিক সাধুতা নিয়ে গান্ধী জীবনের প্রায় উপান্ত পর্যন্ত সংশয়হীন ছিলেন৷ অস্পৃশ্যতা ঘুচিয়ে হরিজনদের হিন্দু মন্দিরে প্রবেশ করতে দিলে , জাতপাতের অভিশাপ ক্রমে অপসারিত হবে ; সনাতন শুদ্ধ বর্ণাশ্রমধর্ম কল্যাণকর ভূমিকায় সংহত এক স্বদেশী সমাজের পত্তন ঘটবে --- এই ধারণা গান্ধী সযত্নে লালন করেছিলেন দীর্ঘকাল৷ অন্য দিকে বর্ণজাতি ব্যবস্থাকে সমূলে উচ্ছেদ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আম্বেদকর নির্মোহ ভাবে ঘোষণা করেন যে , দুই প্রাচীন মহাকাব্যের অধিকাংশ বীর ও আদর্শ পুরুষেরা আসলে ভণ্ড৷ এই তালিকায় দ্রোণ , ভীষ্ম , কৃষ্ণ, কেউই বাদ নেই৷ শূর্পণখার ব্যাপারে , বালী -সুগ্রীব কাণ্ডে এবং সীতার প্রতি পাশবিক আচরণের কারণে তীব্র ধিক্কারে আম্বেদকর বিদ্ধ করেছিলেন খোদ রামচন্দ্রকেই৷ যে রামরাজ্যের প্রতিষ্ঠায় গীতার তাত্ত্বিক ভিত্তি ও অবস্থান এক অপরিহার্য উপাদান , তাতে গান্ধীর আজীবন গভীর আস্থা ছিল৷ তেমন আস্থা ও শ্রদ্ধা রবীন্দ্রনাথের চিন্তায় খুঁজে পাওয়া কঠিন৷ পারস্যে শীর্ষক নিবন্ধটি রচনাকালে রবীন্দ্রনাথের মনে হয়েছিল গীতায় অর্জুনকে দেওয়া কৃষ্ণের উপদেশ তত্ত্বকথার এক উড়োজাহাজ৷ অর্জুনের কৃপাকাতর মনকে তা এমন এক কল্পলোকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল , সেখানে মারেই বা কে , মরেই বা কে ! যারা মার খেয়ে পড়ে থাকে , তাদের জন্যে বহাল হয় এই সান্ত্বনাবাণী 'ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে '৷ গীতার এই অতি বিখ্যাত শ্লোকটি --- যা আদতে কঠোপনিষদের অন্তর্গত --- যে ভাবে রবীন্দ্রনাথের বিদ্রূপের মুখে পড়েছিল , তার উদাহরণ প্রায় বেনজির৷
রামরাজ্যের ধারণাটি হিন্দুত্বের তত্ত্বের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য ভাবে যুক্ত৷ একটি নিটোল , নিরেট , ঐক্যবদ্ধ হিন্দু সমাজ , যা স্বীয় শক্তিতে বলীয়ান ও গর্বোদ্ধত হবে , তার রূপায়ণে রামরাজ্যের ধারণাটি এক অপরিহার্য পৃষ্ঠভূমি৷ দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ যে হিন্দু সমাজের অংশভাক নয় , এতে আম্বেদকরের কোনও সংশয় ছিল না৷ ভারতীয় সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় হিসেবে বর্ণ হিন্দুদের বা হিন্দুত্বের অবধারিত দাপট তিনি সম্যক অনুধাবন করেছিলেন৷ সংখ্যাগরিষ্ঠের স্পর্ধা ও দাপট , আম্বেদকরকে বার বার চিন্তান্বিত করেছে৷ সংখ্যাগরিষ্ঠ বর্ণ হিন্দু গোষ্ঠী --- যা কার্যত একটি ধর্মসাম্প্রদায়িক পরিচিতি --- তা যদি গণতান্ত্রিক কাঠামোতে রাজনৈতিক গরিষ্ঠতাও ভোগ করে , তা হলে ভারতীয় রাষ্ট্র ও সমাজের যে মহতী বিনষ্টি , এ বিষয়ে আম্বেদকরের চেতাবনি অবশ্যই মনে রাখা দরকার৷ ভারতীয় সমাজ যে প্রকৃতপক্ষে অসংখ্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সমাহার আর তাই তা বহুমাত্রিক , তার জোরালো উচ্চারণ বাবাসাহেবের রচনায় বার বার হাজির৷
তাই চমকিত হতে হয় , যখন বারাণসীর নির্বাচন ক্ষেত্রে প্রচার অভিযান চালাতে গিয়ে নরেন্দ্র মোদী মদনমোহন মালব্য ও বাবাসাহেব উভয়ের মূর্তিতেই মালা দেন৷ এর দ্বারা রামরাজ্যের বয়ানটি সুকৌশলে আরও পোক্ত হল কি না জানি না , কিন্ত্ত একটি সোনার পাথরবাটি জনতাকে তো উপহার দেওয়া হল৷ আমরণ যে রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার এষণা গান্ধীকে চালিত করত , সেই রামরাজ্য কি গান্ধীর ঘাতক , হিন্দু মহাসভার একনিষ্ঠ সেবক নাথুরাম গডসের কাঙ্খিত রামরাজ্যের সমার্থক? কার জন্যে এবং কীসের জন্যে রামরাজ্য , সেটা খোলসা না হলে রামরাজ্য শব্দ দিয়ে কেবল ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়৷
বহুজাতিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলি যাতে অবাধে দুনিয়াদারী করায় অভিলাষে ঢালাও লগ্নি করতে পারে , তার জন্য তাঁদের ইপ্সিত , আধুনিক রামরাজ্য গুজরাট হতে পারে৷ অবশ্যই ওই রামরাজ্য নির্মাণের আবশ্যিক পূর্বশর্ত সমাজের আপত্তিকর অংশকে একেবারে নিকেশ করে দেওয়া৷ তাতো অতি সুচারু ভাবে ২০০২-তে সম্পন্ন হয়েছে৷ সাম্প্রতিক ভারতের মুখোজ্জ্বল করেছেন যে সব বীরপুঙ্গব খোদ রাজধানীতে , কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে , কামদুনিতে এবং মুম্বইয়ের শক্তি মিলস্-এর এলাকায় , সেই সব ধর্ষকবৃন্দের কাঙ্খিত রামরাজ্য আসলে তো একটি কামরাজ্য৷ জাতপাতের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে , জীবন বাজি রেখে যে সব তরুণ তরুণী হালফিল বৈবাহিক বা বিবাহবহির্ভূত বা বিবাহোত্তর সম্পর্কে বিজড়িত আছেন , তাঁদের অস্তিত্ব বিলুন্ত করে দিলেই যে খাঁটি -পুরুষতান্ত্রিক আদর্শ রামরাজ্য অচিরে আসবে , এমন আশায় মশগুল থাকেন খাপ পঞ্চায়েতের কর্তাব্যক্তিরা৷ রামরাজ্যের অতীতাশ্রয়ী ছবিটি যতটা অগ্রহণীয় ততটাই সন্দেহজনক ও মারাত্মক রামরাজ্যের বানিয়ে তোলা আধুনিক ও আগামী দিনের রূপকল্পি ট৷ পুরো ব্যাপারটি গোলকধাঁধার চেয়েও গোলমেলে৷ রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার যে উপায় ও প্রক্রিয়া গড়ে তোলা হচ্ছে তার মূল প্রতিপাদ্য হল ঐক্যবদ্ধ , একশিলাবত্ সংখ্যাগরিষ্ঠ , হিন্দু সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রবর্তন৷ বহু বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য সন্ধানে কোনও সমস্যা ও আপত্তি নেই৷ কিন্ত্ত বহুমাত্রিকতাকে একাকার করে দেবার চাতুরি ও অভিসন্ধি বুঝতে কষ্ট হয় না৷ তার রাস্তাটি একেবারেই সোজা নয় , রীতিমতো বাঁকাচোরা৷ ওই পথে শুধু অলিগলি , যাতে চলিরামই শুধু চলিষ্যতি৷ গোটা ঘটনাটি তাই কালি দিয়ে চুনকাম করার সামিল , যা ধোপে টিকবে না , ধম্মেও সইবে না৷
লেখক নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় -এর সেন্টার ফর হিস্টোরিক্যাল স্টাডিজ -এ শিক্ষক
পরিবর্তন?
বেশির ভাগ বুথফেরত্ সমীক্ষায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের একক ভাবে ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা প্রবল৷ কিন্ত্ত এই পূর্বাভাস কতটা ভরসাযোগ্য? লিখছেন মইদুল ইসলাম
গতকাল ছ'টি বড়ো বুথফেরত্ সমীক্ষার ফল বেরিয়েছে৷ তার মধ্যে একটির (টাইমস্ নাউ) ১২ মে-র পূর্বাভাস অনুযায়ী এন ডি এ জোট একক ভাবে সরকার গড়তে পারছে না৷ বাকি সব ক'টির ফল অনুযায়ী এন ডি এ একক ভাবে সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাচ্ছে৷ যদি এই বুথফেরত্ সমীক্ষাগুলি সত্যি হয়, তা হলে ছ'টি সমীক্ষারই মূল প্রতিপাদ্য একটিই৷ তা হল বিজেপি-র বিপুল আসনে জয় লাভের সম্ভাবনা৷ উল্টো দিকে অনুমান করা হচ্ছে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউ পি এ, বাম, এবং অন্যান্য আঞ্চলিক দল- কারওরই সরকার গড়ার কাছাকাছি যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই৷
সমীক্ষার সীমাবদ্ধতা
এখানে বুথফেরত্ সমীক্ষা সংক্রান্ত কিছু কথা বলার প্রয়োজন আছে৷ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ ভোট বিশেষজ্ঞ ডেভিড বাটলার-এর মতে ভারতের মতো একটি জনবহুল দেশে এবং এই দেশের বহু শ্রেণি, ভাষা, ধর্ম ও জাতির তারতম্যের জটিল পাটিগণিত এবং রসায়নের প্রেক্ষিতে বুথফেরত্ সমীক্ষার পূর্বাভাস অনেকটাই প্রশ্নের মুখে পড়ে৷ মনে রাখা দরকার, ভারতের বুথফেরত্ সমীক্ষার ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের বুথফেরত্ সমীক্ষার মডেলের অনুকরণ করা হয়েছে৷ কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির উপর ভিত্তি করে যে বুথফেরত্ সমীক্ষা হয়, সেটা ভারতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়, কিন্ত্ত ইংল্যান্ডে ও ভারতে সংসদীয় গণতান্ত্রিক কাঠামোয় জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা মন্ত্রিসভা নির্বাচিত করেন৷ ১৯৯৮ সালে যখন ইংল্যান্ড-এর বুথফেরত্ সমীক্ষার মডেলটাকে অনুকরণ করার প্রথম চেষ্টা হয়, তখন কয়েকটা অসুবিধে সামনে আসে৷ এক, ইংল্যান্ডে বুথ-ভিত্তিক আর্থসামাজিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়৷ অথচ, ভারতের আদমসুমারিতে কেবল জেলাভিত্তিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়৷ কিন্ত্ত একটি জেলা আর একটি লোকসভা নির্বাচন কেন্দ্রের মধ্যে কোনও রকম সামঞ্জস্য নেই, কারণ, একটি জেলায় এক বা একাধিক লোকসভা নির্বাচন কেন্দ্র থাকতে পারে৷ আবার কখনও দুটো জেলার বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্র মিলে একটি লোকসভা কেন্দ্র তৈরি হয়৷ দুই, ভারতে যাঁরা বুথফেরত্ সমীক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য ব্যক্তি, তাঁরাও মনে করেন যে প্রত্যেকটা লোকসভা কেন্দ্রে অন্তত চার হাজার মানুষের সাক্ষাত্কার নিলে তবেই নির্বাচনের ফলাফল অনেকটা সঠিক আন্দাজ করা যেতে পারে৷ কিন্ত্ত, তা হলে একুশ থেকে বাইশ লক্ষের মতো মানুষের সাক্ষাত্কার নিতে হয়৷ এই বিপুল সংখ্যার মানুষের সাক্ষাত্কার অল্প সময়ের মধ্যে নিতে হলে প্রচুর লোকবল এবং অর্থবল দরকার৷ সেটা আজও পর্যন্ত কোনও বুথফেরত্ সমীক্ষাই করে উঠতে পারেনি৷
তা হলে ভারতের বুথফেরত্ সমীক্ষাগুলি কী ভাবে করা হয়? যা করা হয়, সেটা হল অন্তত পঁচিশ হাজার লোকের সঙ্গে কথা বলে প্রত্যেকটা দলের শতকরা ভোটের ভাগের একটা আন্দাজ করা হয়৷ তার পর বুথফেরত্ সমীক্ষা থেকে ভোটের শতকরা ভাগের যে হিসেব পাওয়া গেল, সেটার উপর ভিত্তি করে আসন সংখ্যার অনুমান করা হয়৷ কিন্ত্ত, সেইটা করা হয় একটি নির্দিষ্ট রাজ্যের রাজনৈতিক ইতিহাস ও তার লোকসভা কেন্দ্রগুলোর আগের নির্বাচনের ফলাফলকে মাথায় রেখে৷ বলা যেতে পারে, এই ভোটের শতকরা হিসেবকে আসনসংখ্যায় রূপান্তরিত করাটাই যে কোনও বুথফেরত্ সমীক্ষার সব থেকে দুর্বল দিক৷ যেমন ধরুন, একটা দ্বিদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনও একটি দল ২৫.৫ শতাংশ ভোট পেয়ে ২৭২টা আসন পেতে পারে ৫৪৩টি আসনের মধ্যে৷ অথচ, আর একটি দল ৭৪.৫ শতাংশ ভোট পেয়ে কেবল ২৭১টি আসন পেতে পারে৷ কারণ, প্রথম দলটি ওই ২৭২টি-র প্রতিটি আসনে ৫০.০১ শতাংশ ভোট পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করতে পারে, আর দ্বিতীয় দলটি ২৭১টি আসনের প্রতিটিতে ১০০ শতাংশ ভোট পেয়ে জিততে পারে৷ যদিও এটা বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা কম, কিন্ত্ত অঙ্কের হিসেবে তা সম্ভব৷ আমাদের মতো বহুদলীয় ব্যবস্থায় আরও অনেক জটিল ইস্যুগুলোর মাঝে রাজনীতির সব অঙ্কই ওলট-পালট হয়ে যেতে পারে৷
দেশের ছবি
১৯৯৮ সাল থেকে আমাদের দেশে লোকসভা নির্বাচনের যে বুথফেরত্ সমীক্ষাগুলো হচ্ছে, তাতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিজেপি ও তার সহযোগী দলগুলোকে বুথফেরত্ সমীক্ষায় যত আসন দেওয়া হয়েছে, বাস্তবে তারা তার থেকে কম সংখ্যক আসন পেয়েছে৷ উল্টো দিকে কংগ্রেস ও তার সহযোগী দলগুলোর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনেক কম আসন পাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে৷ কিন্ত্ত, বাস্তবে দেখা গিয়েছে যে কংগ্রেস ও তার সহযোগী দলগুলো আন্দাজের থেকে বেশি আসন পেয়েছে৷ এই জন্য বুথফেরত্ সমীক্ষাগুলোর সম্পর্কে অনেকে মজার সুরে বলেন যে, বুথফেরত্ সমীক্ষা হল 'ভারচুয়াল' আর নির্বাচনী ফলাফল হল 'একচুয়াল'৷ আবার আমাদের দেশে যাঁরা মানুষের বাড়িতে গিয়ে সমীক্ষা চালান, তাঁদের অনেকেই সেই রাজ্যের ভাষার সঙ্গে পরিচিত নন৷ বুথফেরত্ সমীক্ষার এক বিশেষজ্ঞ টিভিতে নিজেই বলেছেন যে, কিছু মানুষ যদি তাঁদের সঠিক তথ্য না দেন, তা হলে সমীক্ষার ফলাফলে তার একটা প্রভাব পড়তে পারে৷ এই নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেটা আরও বেশি করে সম্ভব কারণ ১৬তম লোকসভা নির্বাচনকে একটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক নির্বাচনে পরিণত করার প্রচেষ্টা হয়েছে৷ গণমাধ্যমের একাংশও সেই প্রচেষ্টায় সাহায্য করেছে৷ মনে হয়েছে যেন দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের নির্বাচন হচ্ছে না, বরং মানুষের দ্বারা সরাসরি এক জন রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হচ্ছেন৷ এমতাবস্থায় সাধারণ মানুষ কখনওই পরাজিত পক্ষকে ভোট দিয়েছেন, সেটা প্রকাশ্যে বলার ঝুঁকি নেন না৷ ভারতের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে বহু সমীক্ষাই অতীতে মেলেনি৷ আবার কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনাও ঘটেছে৷ সেই ব্যতিক্রমী ঘটনাগুলো আদৌ কাকতালীয় কি না, সেটা বলা কঠিন৷ জ্যোতিষশাস্ত্রে এবং গণত্কারদের প্রতি সাধারণ মানুষের যেমন প্রবল আগ্রহ, প্রায় সেই রকমই আগ্রহ এই সমীক্ষার ফলাফল জানার জন্য৷
আপাতত যদি বুথফেরত্ সমীক্ষাগুলোকে তাকে তুলে দিয়ে কেবলমাত্র ২০০৯-এর লোকসভা ও বিভিন্ন রাজ্যে তার পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনগুলোর হিসেবের ভিত্তি করে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করা যায়, তা হলে বিজেপি-র আসন সংখ্যা অবশ্যই বাড়তে পারে, কিন্ত্ত ফলে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ একক ভাবে সরকার গঠন করার মতো অবস্থায় থাকবে কি না, তা নিয়ে বিস্তর সন্দেহ আছে৷ বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট খুব ভালো রকম জানে যে তারা পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাডু, কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওডিশা এবং উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে খুব কম আসন পাবে৷ এই সমস্ত রাজ্যগুলোতে ১৮৯টি আসন আছে৷ বলা যেতে পারে, ২৭২টি আসন পেতে গেলে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটকে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের ৩৫৪টি আসনের উপর সব থেকে বেশি নির্ভর করতে হবে৷ এটা যদিও খুব কঠিন কাজ, কিন্ত্ত অঙ্কের হিসেবে তা সম্ভব৷ হতে পারে, এ রকমই একটি জটিল অঙ্ককে মাথায় রেখেই হয়তো একটি বুথফেরত্ সমীক্ষা এনডিএ জোটকে ৩৪০টি পর্যন্ত আসন দিয়েছে৷ এই বুথফেরত্ সমীক্ষাগুলোতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র বাড়বাড়ন্ত মূলত উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, আসাম, পাঞ্জাব ও রাজস্থানের মতো বড়ো রাজ্যগুলোর সম্ভাব্য ফলাফলের ভিত্তিতে অঙ্ক কষা হয়েছে৷ এর মধ্যে গত ডিসেম্বর মাসের বিধানসভা নির্বাচনে মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে বিজেপি বড়ো জয় পেয়েছে৷ গুজরাটেও গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি বেশ বড়ো জয় পেয়েছে৷ কিন্ত্ত, বাকি প্রদেশগুলোতে বিজেপির এই সম্ভাব্য নির্বাচনী উত্থানের ব্যাখ্যা পাওয়া শক্ত৷ ধরুন, দুর্নীতি যদি এই নির্বাচনে বিজেপি একটি মূল ইস্যু করে, তা হলে কর্ণাটকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা-র বিরুদ্ধে বড়োসড়ো রকমের দুর্নীতির অভিযোগ বিজেপিকে কী করে ফায়দা দিতে পারে? এটা অবশ্যই ঠিক যে, যে সমস্ত রাজ্যগুলোতে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ-র সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র সরাসরি লড়াই আছে, সেখানে বিজেপি একটু সুবিধাজনক অবস্থায় আছে৷ কারণ ইউপিএ দুই সরকারের নীতির ফলে যে দুর্বিষহ মূল্যবৃদ্ধি ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তাতে মানুষ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ভোট দিতেই পারেন এবং যেহেতু এই সব রাজ্যে অন্য কোনও গ্রহণযোগ্য বিকল্প নেই, তাই বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ একটু বাড়তি সুবিধা পেতেই পারে৷ এতে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর তথাকথিত ক্যারিশমা কতটা সাহায্য করছে, আর মূল্যবৃদ্ধি ও দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত কংগ্রেসের দুর্বলতা কতটা কাজ করছে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে৷ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে যা খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে পাঞ্জাবে এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ কিছু কম নয়৷ উল্টো দিকে আসামে কংগ্রেসের সরকার জনগণের আস্থা তেমন ভাবে হারায়নি৷ এই দুটো রাজ্যেও বেশির ভাগ বুথফেরত্ সমীক্ষাগুলো বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোটের থেকে বেশি আসন দিয়েছে৷ যাঁরা বাস্তব রাজনীতির খবরাখবর রাখেন, তাঁরা এতে হয়তো একটু অবাকই হবেন৷ বিজেপি রাজনৈতিক মেরুকরণের চেষ্টা করেছে৷ কিন্ত্ত, এই রকম রাজনৈতিক মেরুকরণের প্রচেষ্টাতে বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলোর ভোটও বৃদ্ধি হতে পারে৷ তার কারণ, বিভিন্ন আসনে বিজেপি-র বিরুদ্ধে সব থেকে মজবুত ধর্মনিরপেক্ষ দল অনেক সময় কৌশলগত ভোটের কারণে লাভবান হতে পারে৷ অর্থাত্, উত্তরপ্রদেশে কোনও একটি আসনে বিজেপি-বিরোধী ভোটের একটি বড়ো অংশ যদি বহুজন সমাজ পার্টির পক্ষে যায়, তা হলে অন্য আর একটি আসনে তা সমাজবাদী পার্টির পক্ষেও যেতে পারে৷ এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে ভারতের কেবল মাত্র মুসলিম ও খ্রিস্টান সংখ্যালঘুরাই বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেন না৷ বরং একটি বড়ো মাপের উদার ও ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ সংখ্যাগুরু সমাজের মধ্যে আজও বিদ্যমান যাঁরা বিজেপিকে ক্ষমতায় আনতে চান না৷
রাজ্য কোন দিকে?
পশ্চিমবঙ্গে গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই কংগ্রেস ও বামেদের একটি অংশ তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে আসতে শুরু করে৷ বিজেপির যদি কিছু ভোট এই রাজ্যে বাড়েও, তা হলে এই নব্য তৃণমূলীরা তৃণমূল কংগ্রেসকে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হতে সাহায্য করবে৷ উল্টো দিকে মোদী ও বিজেপির হাওয়ায় দক্ষিণবঙ্গে সংখ্যালঘু মানুষের একটি বড়ো অংশ তৃণমূলের পিছনে দাঁড়াতে পারে৷ এই ভোটে বামেদের সব থেকে বড়ো সমস্যা হল তাদের অবিরত সাংগঠনিক ক্ষয় এবং তৃণমূল ও বামেদের মধ্যে মূল নির্বাচনী ইস্যুগুলোর ক্ষেত্রে পার্থক্যের অভাব (অ-কংগ্রেস অ-বিজেপি সরকার গঠন, খুচরো ব্যবসায়ে বিদেশি বিনিয়োগ, পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি)৷ তা হলে মানুষ তৃণমূল ছেড়ে বামেদের কেন ভোট দেবে? এস ই জেড ও জমিনীতির ক্ষেত্রে তৃণমূল বরং বামদের থেকে সাধারণ মানুষের কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে৷ তৃণমূলের সব থেকে বড়ো দুর্বলতা হল দুর্নীতি, চাষিদের আত্মহত্যা ও নারী নির্যাতনের ইস্যু৷ এই সব ইস্যুগুলোতে গত তিন বছরে বিরোধীরা প্রায় নিদ্রামগ্ন অবস্থায় থাকার ফলে কোনও বড়ো রকমের সরকার বিরোধী আন্দোলন হয়নি৷ ভেবে দেখুন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যখন বিরোধী নেত্রী ছিলেন তখন বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি কী ভবে লড়াই চালিয়েছিলেন৷ তার ফলও তিনি পেয়েছিলেন৷ শেষে মাস্টারমশাই হিসেবে বলতে পারি সারা বছর পড়াশোনা না করে কেবল শেষ লগ্নে স্টেজে মেরে ভালো নম্বর পাওয়া যায় না৷ (রাজনৈতিক) শিক্ষার এই মূল মন্ত্রটিকে অনুধাবন করতে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধীরা ব্যর্থ৷
লেখক প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক
No comments:
Post a Comment