Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Memories of Another day

Memories of Another day
While my Parents Pulin babu and Basanti devi were living

Sunday, April 14, 2013

নাস্তিকদের ওপর অত্যাচার এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যত

নাস্তিকদের ওপর অত্যাচার এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যত

নাস্তিকদের ওপর অত্যাচার এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যত

[১]

আসিফ, সুব্রত, রাশেল এবং বিপ্লব। সত্য কথনের পুরষ্কারস্বরূপ এরা এখন বাংলাদেশের জেলে। গান্ধী লিখেছিলেন, এই দুনিয়াটাই এত অসততা এবং নির্মমতার আধার, জেল ছাড়া, সৎ লোকের অন্য কোন ঠাঁই নেই! পয়লা বৈশাখের আনন্দের দিন আজ বিষাদঘন বেদনার আধার। এই চার সৎ নির্ভীক যোদ্ধার নাম বাংলাদেশের ইতিহাসে একদিন প্রগতিশীলতার উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত হিসাবে লেখা থাকবে। সমাজ বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আজ থেকে একশ বছর ভবিষ্যতে-ধরুন এই ২১০০ সালে, প্রথাগত ধর্মের অস্ত্বিত্ব থাকবে না ( কেন এমন হবে এই নিয়ে আমার একটি বিস্তারিত ব্লগ আছে অধ্যাপক ভিগনারের কাজের ভিত্তিতে )।

ভাবুন সে এক পৃথিবী যেখানে বাংলাদেশ নেই, ইসলাম নেই। আছে একটাই দেশ-পৃথিবী-একটাই ধর্ম মানবতা। ভবিষ্যতের সেই পৃথিবী এই চার নাস্তিক ব্লগারের কারাবাস কিভাবে দেখবে? শুধু ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করার জন্য এবং হজরত মহম্মদের সমালোচনার জন্য চার জন সৎ সমাজদ্রষ্টাকে রাষ্ট্র জেলে পাঠিয়েছে? আল্লা বা ঈশ্বর অস্তিত্বহীন মিথ । সেই অস্তিত্বহীন মিথের অত্যাচারে যদি বিজ্ঞানমনস্ক জনমানসকে কোন রাষ্ট্র ধ্বংস করতে উদ্যত হয়, সেই রাষ্ট্রের ভবিষ্যত প্রজন্মের কি হবে?

তেল খননে ফ্রাকচারিং এর আবিস্কারের সাথে সাথে মধ্যপ্রাচ্যে তেলের অর্থনীতি ধ্বংস হওয়ার দিন সমাগত। বড়জোর আর এক দশক। এর মধ্যেই সৌদি আরব থেকে অধিকাংশ বাংলাদেশী এবং ভারতীয় শ্রমিকদের তাড়ানো শুরু হয়েছে। তেলের টাকায় ইসলাম করার দিন শেষ। বাংলাদেশের ওই ক্ষুদ্র জমিতে এত লোক। বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ এবং রাষ্ট্র না গড়তে পারলে, পাকিস্তানের মতন পঙ্গু ধর্মীয় রাষ্ট্রে পরিণত হবে বাংলাদেশ। রাষ্ট্রের জনগণকে উন্নত করতে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তর ছাড়া বিকল্প কি আছে? আল্লা কেও মানুক বা না মানুক-আশা করি বাংলাদেশের ধর্মভীরু জনগণ ও এত আহাম্মক না যে তারা মনে করে আল্লাপাক তাদের বসে বসে খাওয়াবে!

[২]

নাস্তিকতা মানুষের মনের স্বাভাবিক অবস্থা। আস্তিকতা হচ্ছে মনের বিকৃত অবস্থা। প্রতিটা শিশু যখন জন্মায় সে আল্লা, ঈশ্বর-হিন্দু মুসলমান কিছুই জানে না। প্রতিটি শিশুই নাস্তিক। এরপর তার মাথায় আল্লা, ঈশ্বর গড ভূত ভগবান এসব ঢোকানো হয়। ভয় দেখিয়ে জোর করে প্রতিটি শিশুকে আস্তিক বানানো হয়। ঈশ্বরে বিশ্বাস একধরের ব্রেইন ড্যামেজ। যা ছোটবেলায় শিশুমনে ভয় দেখিয়ে ঢোকানো হয়।

যদি ভয় দেখানো না হয়, যেকোন শিশু, তার নিজের স্বাভাবিক বিচার বুদ্ধিতেই এইসব আল্লা ঈশ্বরের গাঁজাখুরি গল্পে হাসাহাসি করবে। আমার সাত বছরের শিশুপুত্রকে কোন দিন আমি বলি নি ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই। বরং আমি তাকে ভারতীয় সংস্কৃতি শিক্ষার জন্য মন্দিরে পাঠাচ্ছি আবার তার সাথে বিজ্ঞানের অনেক ডকুমেন্টারি ও দেখি। আজকাল সে আমাকে বলছে, আচ্ছা এই অস্তিত্বহীন ঈশ্বরের পেছনে লোকে এত সময় নষ্ট করে কেন?

এখন এই প্রশ্ন যদি বাংলাদেশের কোন শিশু তার বাবাকে করে, সে নিশ্চয় বকাবাকি বা মারধোর খাবে। বা অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিশুটি এই ধরনের কোন প্রশ্ন তুলবেই না কারন আমার পুত্র যত বিজ্ঞানের ডকুমেন্টারী দেখার সুযোগ পায়, সে হয়ত পাবে না। অর্থাৎ আস্তিকতা, ঈশ্বরে বিশ্বাস একজন শিশুর ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়। নাহলে পৃথিবীর প্রতিটি শিশু, যারা বিজ্ঞানকে জানতে জানতে বড় হবে, তারা কোনদিন ঈশ্বর বিশ্বাসী হতে পারে না।

কিন্তা তাহলে ঈশ্বরের সৈনিকরা বিবর্তনের খেলায় বিজয়ী হোল কি করে? কি করে তারা দখল করে বসল রাজনৈতিক ক্ষমতা? এর উত্তর ও ইতিহাস থেকে সহজেই পাওয়া যায়।

সমাজ বিন্যাসের প্রথম ধাপেই ঈশ্বরের জন্ম হয় নি। প্রথমে জন্ম হয়েছে একটি মৌল প্রশ্নের। জীবনের উদ্দেশ্য কি? এটি কি একটি মাত্র জীবন ? কারন জীবন যদি শুধু ক্ষণস্থায়ী বর্তমান হয়, অধিকাংশ লোক একটি নিয়ানুবর্তিক সমাজবিন্যাসের দিকে যাবে না। এই জন্য মানব সমাজে ঈশ্বরের জন্মের পূর্বে এসেছিল পুনঃজন্মের ধারনা। অর্থাৎ আবার জন্ম হবে। এই মিথের ওপর ভিত্তি করে পৃথিবীর সব থেকে আদিমতম ধর্ম সম্ভবত জৈন ধর্ম ( এই নিয়ে অতীতের একটি আলোচনা এই প্রবন্ধে পাওয়া যাবে )।
পুনঃজন্ম যেমন একটি শক্তিশালি মিথ-ঠিক তার পরেই জন্ম হয় ঈশ্বর বা আল্লা নামক মিথের। যা ইতিহাসে আরো শক্তিশালী রাষ্ট্র এবং সমাজব্যাবস্থার জন্ম দিতে সক্ষম হয়।

এই দিক থেকে ভারতের ইতিহাস খুব গুরুত্বপূর্ন। ভারতের প্রথম ঐতিহাসিক সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য এবং তার সমসাময়িক ইতিহাসে দেখা যাবে ধর্ম তখনো প্রতিষ্ঠানিক না। সব ধরনের ব্যাক্তি সেখানে আছে। সম্রাট ধননন্দের রাজ সভায় দেখা যাবে রাজা নিজে শুদ্র এবং তান্ত্রিক। তার মূল ডানহাত বা সিকিউরিটি প্রধান কাত্যায়ন বৌদ্ধ। নন্দ বংশের প্রধানমন্ত্রীরদল আবার বৈদিক ব্রাহ্মন । চানক্য নিজে ছিলেন ব্রাহ্মন শিক্ষক। অথচ তার প্রধান শিষ্য চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য ৪২ বছর বয়সে সাম্রাজ্য ছেড়ে জৈন সন্নাস্যী হয়ে গৃহত্যাগ করেন। চন্দ্রগুপ্ত বৈদিক হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেন নি। আবার তার পুত্র বৈদিক হিন্দু এবং পৌত্র অশোক হলেন বৌদ্ধ। ভারতের এই সময়ের দর্শনের ইতিহাস খুব সমৃদ্ধ। কারন সবার ধর্মচারনের স্বাধীনতা ছিল। গুরু তার শিষ্যকে বা পিতা তার পুত্রকে জোর করে নিজ ধর্মে চাপতেন না। না সমাজ, ব্যাক্তির ওপর ধর্মকে চাপাত। এই উদার ধারা বাঙালী সমাজেও বিদ্যমান ছিল বৌদ্ধ পাল রাজবংশ পর্যন্ত।

ব্যাক্তির ওপর ধর্মকে জোর করে চাপানোর এই ইতিহাস বাংলাতে শুরু হয়, সেন রাজবংশ থেকে। সেন রাজারা অহিন্দু বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির ওপর জোর করে বৈদিক হিন্দু ধর্ম চাপানো শুরু করে। বাঙ্গালী কোন কালেই বৈদিক হিন্দু ছিল না। ফলে সেন রাজাদের বিরুধে বাঙালী জনগোষ্ঠির অজস্র বিদ্রোহ হয়-এবং সেন রাজারা কোনদিন পালরাজাদের মতন জনপ্রিয় হতে পারেন নি। এর জন্যেই আমরা দেখি মাত্র ১৮ জন ঘোরসওয়ার নিয়েই লক্ষন সেনকে পালাতে বাধ্য করেন বখতিয়ার খিলজি। কারন সেনেরা তখন জনবিচ্ছিন্ন। এরফলশ্রুতি স্বরূপ বাঙালীরা দলে দলে রাজধর্ম ইসলামে ধর্মান্তরিত হতে থাকে। এই পক্রিয়া চলতে থাকে শ্রীচৈতন্যের সংস্কার আন্দোলন পর্যন্ত-যা আবার একটি উদারনৈতক সহজিয়া বাঙালী ধর্ম তৈরী করে।
[৩]

বাঙালী মুসলমানরা নামেই ছিল মুসলমান। ধমনীতে ছিল সহহিয়া ধর্ম। ফলে বৌদ্ধ সহজিয়া ধর্ম আস্তে আস্তে ইসলামিক সহজিয়া ধর্মে রূপান্তরিত হয় । শাহ জালালের মতন সুফীরা এই ছিলেন এই রূপান্তরের ক্যাটালিস্ট। কিন্ত সেই ইসলাম আরবের খেজুর কাঁটার ওয়াহাবি ইসলাম না। বস্তুত নিম্নমধ্যবিত্ত বা গরীব বাঙালীর ধর্মে কোন পার্থক্য ছিল না- গরীব বাঙালী ফকির, বৈষ্ণব, সুফী ইত্যাদি সহজিয়া পথেই ছিল দীর্ঘকাল। বাঙলা ভাষাতে কোন কোরান ছিল না সেই ১৮৮৭ সাল পর্যন্ত। এবং প্রথম কোরান যিনি বাংলায় লিখলেন, সেই গিরিশ ভাই একজন ব্রাহ্ম। কেশব চন্দ্র সেনের নববিধান সভা, কোরানের বঙ্গানুবাদ করার খরচ দিয়েছিল। শুধু তাই না-বাংলার আলেমগন গিরীশচন্দ্রকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে লিখেছেন "
আমরা বিশ্বাস ও জাতিতে মুসলমান। আপনি নিঃস্বার্থভাবে জনহিত সাধনের জন্য যে এতোদৃশ চেষ্টা ও কষ্ট সহকারে আমাদিগের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআনের গভীর অর্থ প্রচারে সাধারণের উপকার সাধনে নিযুক্ত হইয়াছেন, এজন্য আমাদের আত্যুত্তম ও আন্তরিক বহু কৃতজ্ঞতা আপনার প্রতি দেয়।
"
"
কুরআনের উপরিউক্ত অংশের অনুবাদ এতদূর উৎকৃষ্ট ও বিস্ময়কর হইয়াছে যে, আমাদিগের ইচ্ছা, অনুবাদক সাধারণ সমীপে স্বীয় নাম প্রকাশ করেন। যখন তিনি লোকমন্ডলীয় এতোদৃশ্য উৎকৃষ্ট সেবা করিতে সক্ষম হইবেন, তখন সেই সকল লোকের নিকট আত্ন-পরিচয় দিয়া তাঁহার উপযুক্ত সম্ভ্রম করা উচিত।"

আমার ধারনা এই সহজিয়া ভাবটা নষ্ট হয়েছে ১৯৮০ সাল থেকে-যবে থেকে আরবের পেট্রডলারে খেজুর কাঁটাআলা ইসলামের আমদানী হয়েছে বাংলাদেশ [ এবং ভারতেও]।

তিতুমির এর সময় থেকেই ওয়াহাবিদের একটা ক্ষীন প্রভাব বাংলাতে ছিল। নোয়াখালির দাঙ্গার পেছনে, সেই ওয়াহাবিদের প্ররোচনা কাজ করেছে। কিন্ত ১৯৮০ সাল থেকে এরা প্রচন্ড টাকা ঢালে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে। পাকিস্তান এর মধ্যে উচ্ছন্নে গেছে। ভারতে মুসলমান-হিন্দু টেনশন ক্রমাগত বাড়ছে।

আর বাংলাদেশ হচ্ছে একমাত্র দেশ, যে দেশের একটা বিশাল সংখ্যক বুদ্ধিজীবি এই ওয়াহাবি খেজুর কাঁটার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস দেখিয়েছে। কিন্ত দেখা যাচ্ছে, সেই জয় ক্ষণস্থায়ী। বাংলাদেশী সরকার ধর্মীয় মৌলবাদের পায়ের ধূলোধোয়ার জন্য নাস্তিক ব্লগারদের কারাগারে নিক্ষেপ করল। বৃটিশ ভারতে ডিরোজিওর শিষ্যরা হিন্দু ধর্মকে আক্রমন করে। তারা হিন্দু দেবদেবী নিয়ে ব্যাঙ্গ করত। সেই আক্রমনের জন্য পরবর্ত্তীকালে হিন্দু ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের জন্ম হয়। ডিরোজিওর বিরুদ্ধেও হিন্দুদের আক্রোশ ছিল-কিন্ত তার জন্য ডিরোজিও বা তাদের শিষ্যদের আজ থেকে দুশো বছর আগে জেলে যেতে হয় নি। আর সেই জন্য হিন্দু ধর্মে সংস্কার কিছুটা এগিয়েছে।

অথচ বাংলাদেশে সেটুকুও সম্ভব হল না। ফলে বাংলাদেশের মৌলবাদি পচন অব্যাহত থাকবে যদ্দিন না সেই পচনশীল সমাজ ক্ষুদার অভাবে বিদ্রোহ ঘোষনা করে, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিকে গ্রহণ করবে। এই শতাব্দিতে ধর্ম হচ্ছে সেই পচা মাছ, যা শাক দিয়ে ঢাকা যায় না। বাংলাদেশ কেন পৃথিবীর কোন দেশের কোন সরকার পারবেনা ধর্মের দুর্গন্ধকে আটকাতে।

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...