"At a time when the demand for judicial reforms and change in the legal processes has acquired a new urgency, we must ensure that the voice of sanity and logic is not suborned to the momentary impulses of the day," he said here addressing the Conference of Chief Ministers and Chief Justices of States.
"Fundamental and time tested principles of law and natural justice must not be compromised to satiate the shrill rhetoric that often defines our political discourse and sometimes succeeds in drowning appeals to logic and justice," he said.
Referring to the Delhi gang-rape incident, Singh underscored the need for "urgent introspection" of the laws and the justice delivery system.
"The national outrage at the recent horrific tragedy of gang-rape in Delhi compels an urgent introspection about our laws and justice delivery system but we must not allow ourselves to be overcome by a sense of despair at some of the demonstrated inadequacies of our legal system," he said.
Singh said the government had moved with expedition to respond to the felt sensitivities of the people in the aftermath of the "gruesome tragedy" and brought about significant amendments in the criminal law to effectively deal with heinous offences against women.
"But, notwithstanding the steps that have already been taken, a great deal more needs to be done as far as offences against women are concerned," Singh said.
He thanked the judiciary for establishing special courts to fast-track trial of offences against women.
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক পরিচালক মীনাক্ষি গাঙ্গুলি জানান, জঙ্গি হামলাকারীদের ধরতে ভারতের পুলিশকে ভীষণ চাপের মধ্যে কাজ করতে হয়।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, তাঁরা মানবাধিকার সংগঠনের ওই প্রতিবেদন সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করবেন না।
জরুরি সংস্কার |
বিচারপতি নিয়োগের দায়িত্ব বিচারপতিদের হাতেই থাকা উচিত কি না, সেই প্রশ্নটি পুরানো। দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম ও সরকারি তহবিল তছরুপের দায়ে কলিকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমিত্র সেনের ইমপিচমেন্টকে কেন্দ্র করিয়া তাহা আবার নূতন করিয়া উঠিয়াছে। কেন্দ্রীয় সরকার একটি 'জাতীয় বিচারবিভাগীয় কমিশন' গড়িবার কথাও ভাবিতেছে বলিয়া জানা গিয়াছে। এই প্রস্তাবিত কমিশনটি গঠিত হইলে শীর্ষ আদালত এবং উচ্চ আদালতের বিচারপতিগণ এই কমিশনের মাধ্যমেই নিযুক্ত হইবেন। এই সূত্রে কিছু প্রাসঙ্গিক কথা ভাবিয়া দেখা দরকার। সৌমিত্র সেনের প্রশ্নে রাজ্যসভায় যে বিতর্ক ও আলোচনা চলিয়াছে, লোকসভাতেও যে সেই সর্বদলীয় ধিক্কারের পুনরাবৃত্তি ঘটিবে, এমন অনুমান স্বাভাবিক। কিন্তু এক অর্থে তাহা গৌণ প্রশ্ন। মুখ্য প্রশ্নটি বিচারব্যবস্থার আচরণ লইয়া। বিচারপতিরা নিজেরা যথাযথ আচরণ করিতেছেন না, এমন অভিযোগ সাম্প্রতিক কালে বারংবার উঠিয়াছে। অনেক ক্ষেত্রেই সেই অভিযোগ সরাসরি দুর্নীতির নহে, এমনকী প্রত্যক্ষ কোনও অন্যায় বা অনাচারেরও নহে, কিন্তু বিচারযন্ত্রের যন্ত্রীদের কাজে ও আচরণে যে নিখাদ নিরপেক্ষতা ও আত্মমর্যাদার পরিচয় থাকা জরুরি, তাহা হয়তো অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় না। কেন? রাজ্যসভায় সৌমিত্র সেন-বিষয়ক বিতর্কে একাধিক সাংসদ বলিয়াছেন, সমস্যার একটি মূল সম্ভবত রহিয়াছে বিচারপতি নিয়োগের প্রচলিত পদ্ধতিতে। বিচারপতিরাই এই দেশে বিচারপতিদের নিয়োগ করেন। তাহার ফলেই কি এক ধরনের আচরণ-শৈথিল্য প্রশ্রয় পাইয়াছে? প্রশ্নটি গুরুতর। ভারতে অতীতে শাসনবিভাগ বিচারপতি নিয়োগের অধিকারী ছিল। সত্তরের দশকে তাহার পরিণাম ভাল হয় নাই, শাসনবিভাগের প্রতি 'দায়বদ্ধ' অর্থাৎ কার্যত বশংবদ বিচারব্যবস্থা তৈয়ারির উদ্যোগ ইন্দিরা গাঁধীর আমলে ভারতীয় গণতন্ত্রের অবক্ষয়কে তীব্রতর করিয়াছিল। সেই ব্যাধি নিরাময়ের উদ্দেশ্যেই বিচারপতি নিয়োগের দায়িত্ব বিচারপতিদের উপর ন্যস্ত হয়। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলিতেছে, কেবলমাত্র শাসনবিভাগ বা কেবলমাত্র বিচারবিভাগ, কোনও একটিমাত্র বিভাগের হাতে সব দায়িত্ব না দিয়া মধ্যপন্থা অবলম্বনই শ্রেয়। রাজ্যসভার বিরোধী নেতা অরুণ জেটলি এবং সি পি আই এমের সীতারাম ইয়েচুরি সহ অধিকাংশ সাংসদই একটি জাতীয় বিচারবিভাগীয় কমিশন মারফত বিভিন্ন আদালতে বিচারক নিয়োগের পক্ষপাতী। এবং সেই কমিশনে শাসনবিভাগের প্রতিনিধিত্বও থাকা দরকার। লক্ষণীয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টই কেন্দ্রীয় স্তরের বিচারপতিদের নিয়োগ করেন, সেনেট তাহা অনুমোদন করে। ব্রিটেনে আগে প্রধানমন্ত্রী ও চ্যান্সেলরের পরামর্শক্রমে রানি এই নিয়োগ করিতেন, বর্তমানে বিচারবিভাগীয় কমিশনের সামনে প্রার্থী বিচারকরা আপন যোগ্যতার প্রমাণ দিতে প্রতিযোগিতায় নামেন। ভারতে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট নাগরিকদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেওয়া বিধেয়। এই বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রতিনিধিদের লইয়া গঠিত একটি কমিশন বিচারপতি নিয়োগের কাজটি সম্পন্ন করিলে সম্ভবত বিচারব্যবস্থার সংস্কার সাধিত হইতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত কমিশন হইতেই স্পষ্ট যে সেই ভাবনাটি শুরু হইয়াছে। প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের মতো বিচারবিভাগের শীর্ষস্থানীয় আধিকারিকদের দুর্নীতিরোধক লোকপাল বিলের আওতায় আনার যে-দাবিতে অণ্ণা হজারে ও তাঁহার সমর্থকরা মুখর, জাতীয় বিচারবিভাগীয় কমিশন তাহা অংশত পূরণ করিবে। ইহা শাসন বিভাগ 'বনাম' বিচার বিভাগের লড়াই নহে। বিচারপতিদেরই উচিত বিচারকদের নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলির প্রক্রিয়াটিকে স্বচ্ছ রাখিতে এবং শাসনবিভাগের সহিত ক্ষমতাবণ্টনে ভারসাম্য রক্ষা করিতে জাতীয় কমিশনের প্রস্তাবে সম্মত হওয়া। শাসনবিভাগ, বিচারবিভাগ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিত্ব সংবলিত জাতীয় কমিশন যদি সততার অধিকারী সজ্জন ও দুর্নীতিমুক্ত আইনজীবীদের বিচারপতি পদের জন্য সুপারিশ করে, তবে অবিচারের ধারাও অনেকাংশে হ্রাস পাইবার সম্ভাবনা। http://www.anandabazar.com/archive/1110822/22edit1.html |
তবে কি আর্থিক সঙ্কটে ভুগছিলেন পিয়ালি? তার ঘনিষ্ঠরা অবশ্য সে প্রশ্ন ফুৎকারে উড়িয়ে দিচ্ছেন।
তাদের বক্তব্য, মাসে দু'লক্ষ টাকারও বেশি উপার্জন করতেন এই অকাল প্রয়াত তৃণমূলনেত্রী। কেমন ছিল তার এহেন উপার্জনের পথ? শহরের বিশিষ্ট আইনজীবীরা বলছেন, শুধুমাত্র আইনের প্র্যাকটিস করে এই ক'বছরে মাস গেলে এত টাকা আয় করা কষ্টসাধ্য তো বটেই, অসম্ভবের নামান্তরও বটে। কলকাতা শহরের নামী আইনজীবী হলে অন্য কথা, কিন্ত্ত দীর্ঘদিন আইনের চর্চা করেও এত টাকা উপার্জন করতে যথেষ্ট কসরত করতে হয়। তাদের হিসেবে, সামান্য কয়েক বছর আগে এই শহরে আসা এবং বছরখানেক আগে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে প্র্যাকটিস করতে শুরু করা পিয়ালির এই রোজগার, শুধু ব্যাঙ্কশাল কোর্টে আইনচর্চা করে করা নিতান্তই 'অসম্ভব'। পুলিশ এখন পিয়ালির আয়ব্যয়ের হিসেব খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে। তিনি যে ফ্ল্যাটে থাকতেন তার মালিক ইসমাইল খান থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। পুলিশ তাকে ডেকে পাঠিয়েছে। ইসমাইল এলে পিয়ালির ফ্ল্যাটের ভাড়া কে দিতেন, কী ভাবে সেই টাকা ইসমাইল পেতেন-- এই সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার অপেক্ষা করছেন গোয়েন্দারা।
যুক্তিবুদ্ধির হিসেবে না এলে তা হলে মাস গেলে পিয়ালির কাছে এত টাকা আসত কী ভাবে?
জানা গিয়েছে, ব্যাঙ্কশাল আদালতে তেমন পসার জমাতে না পারলেও কলকাতার অন্তত ৩টি সংস্থার আইনি পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করতেন পিয়ালি। তার মধ্যে একটি চিটফান্ড সংস্থাও রয়েছে। এই তিনটি সংস্থা থেকে পিয়ালি মাসে উপার্জন করতেন দেড় লক্ষ টাকা। আইনজীবীদের মতে, অন্তত ৫ বছরের অভিজ্ঞতা ছাড়া আজকাল কোনো সংস্থাই কাউকে ওই পদে নিতে চান না। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কোন প্রভাবের জোরে পিয়ালি ওই পদগুলি পেয়েছিলেন?
এর উত্তর পেতে হলে অবশ্য একটু পিছিয়ে যেতে হবে। ২০১০ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে প্রথম তৃণমূলের ইউনিট খোলা হয়। রাতারাতি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সরস্বতী পুজো করে সেখানে তৃণমূলকে শক্তিশালী করে তোলেন তিনি। কিন্ত্ত কিছুদিনের মধ্যেই সেখানে শুরু হয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। সে বছরই তৃণমূলের এক শীর্ষনেতা বর্ধমানে দায়িত্ব নিয়ে যান। তার পর থেকেই পিয়ালির রাজনৈতিক উত্থান শুরু। ২০১১ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তি নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। ভর্তির ক্ষেত্রে পাঁচজনকে টপকে পিয়ালীর নাম চলে আসায় বিতর্ক শুরু হতেই রাতারাতি বাদ দিয়ে দেয়া হয় তার নাম। শেষ পর্যন্ত হুগলি থেকে আইন পড়েন তিনি। এর পর চাকরি পেয়ে যান বর্ধমানের মেমারির একটি প্রাইমারি স্কুলে। কিন্ত্ত সেখানে বেশি দিন চাকরি করেননি। চলে আসেন কলকাতায়।
প্রথমে থাকতে শুরু করেন কেষ্টপুরের কাছে একটি ফ্ল্যাটে। তারপর চলে যান দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের কাছে একটি আবাসনে। ওখানে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে তৃণমূলের এক প্রভাবশালী নেতারও। তার পাশের ফ্ল্যাটটিতে থেকেই ব্যাঙ্কশাল কোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করেন তিনি। তার ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন, সরকারি আইনজীবীদের প্যানেলে তার নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হবে এই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তাকে। কিন্ত্ত সেখানে সরকারি আইনজীবী হয়ে যান অন্য একজন। তার সঙ্গে খুব একটা ভালো সম্পর্ক ছিল না পিয়ালির। এমনকি, প্যানেলেও পিয়ালির নাম তোলা হয়নি। এই নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে অভিযোগও করেন তিনি। তার পরই জায়গা পরিবর্তন করে রাজারহাটে চলে আসেন মাসখানেক আগে।
ওই এলাকার তৃণমূলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। স্থানীয় তৃণমূল সূত্রে খবর, এলাকায় থাকার সুবাদে এলাকার গোষ্ঠী কোন্দলেও জড়িয়ে পড়েন এই তৃণমূল নেত্রী। দলের বিধায়ক, মন্ত্রী, নেতা এদের চক্রব্যূহে কার্যত বোড়ে হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয় তাকে। তাল বুঝে নিজের পেশাকে দলের মাধ্যমে আরও সমৃদ্ধ করার চেষ্টায় নেমে পড়েন পিয়ালীও। বর্ধমানে নিজের বাড়িতে যাওয়াও অনিয়মিত হয়ে পড়ে। ক্ষমতা পাওয়ার প্রবণতা আরও চোরাবালিতে টেনে নিয়ে যায় তাকে। সূত্র: ওয়েবসাইট।
শনিবারের মিছিলে অন্তত কয়েক হাজার মানুষ যোগ দেন৷ শহরের বিভিন্ন উঁচু বাড়ির ছাদ থেকে কেবল মানুষের মাথা ছাড়া আর কিছুই ঠাহর করা যায়নি বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন৷
শুক্রবার বিকেল থেকেই ধর্মীয় সংগঠনের সমাবেশে অবরুদ্ধ বাংলাদেশ৷ ধর্মবিরোধী ব্লগারদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে শুক্রবার হিফাজত-এ-ইসলামের পক্ষ থেকে এক বিশাল লং মার্চের আয়োজন করা হয়৷ তার প্রতিবাদ জানায় দেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংগঠনগুলি৷ তাদের যুক্তি, যে দেশের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে কথা বলে, সে দেশে এমন ধর্মীয় উন্মাদনা বরদাস্ত করা সংবিধানের অমর্যাদার সমান৷ ধর্মবিরোধী আইন প্রণয়নের বিরোধিতা করে তারা ২২ ঘণ্টার বাংলাদেশ বন্ধের ডাক দেয়৷ সূত্রের খবর, মিছিল, সমাবেশ এবং অবরোধের জেরে ঢাকা দেশের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে৷ শনিবার রাস্তাঘাটে খুব কম সংখ্যক যানবাহনই চলাচল করতে দেখা গিয়েছে৷
এ দিকে, সরকার ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে ব্লগারদের যথেচ্ছ ধরপাকড় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ গ্রেন্তার হওয়া ব্লগারদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হচ্ছে না বলেও কেউ কেউ ইতিমধ্যে অভিযোগ দায়ের করেছেন৷ তবে আওয়ামি লিগ অবশ্য এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে বলেছে, সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই গত সপ্তাহে চার ব্লগারকে আটক করা হয়৷ তবে তাঁদের গ্রেন্তারের সঙ্গে ধর্মীয় অবমাননার কোনও সম্পর্ক নেই বলেই দলীয় মুখপাত্রের দাবি৷
বিচার ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে দিল্লির বিজ্ঞানভবনে মুখ্যমন্ত্রী ও বিচারপতিদের সম্মেলনের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। উপস্থিত আছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধানবিচারপতি আলতামাস কবির। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে জানালেন মানবধিকার রক্ষার দায়িত্ব রাজ্যের। তাঁর বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন ``বর্তমান সময় নতুন ভাবে বিচার ব্যবস্থা গঠনের দাবি করছে। এই সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে কোনও ভাবেই ন্যায় বিচার যেন অবহেলিত না হয়।`` তবে এর সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন সারা দেশ জুড়েই মামলার পাহাড় জমে রয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় বিচারপতিদের সংখ্যা নগণ্য, মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজন বেশি সংখ্যক বিচারপতি নিয়োগ।
আজকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে ফের একবার উঠে এল দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ড। স্বীকার করে নিলেন দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডের পর সারা দেশ জুড়ে যে প্রতিবাদ সংগঠিত হয়েছিল তা সরকারকে নতুন ভাবে ভাবতে বাধ্য করেছে। এই ঘটনায় সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ ও ফাস্টট্র্যাক কোর্ট গঠন করার ঘটনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে স্বীকার করে নিলেন নারী নিরপত্তা সুনিশ্চিত করতে এখনও অনেক কিছুই করা বাকি। তার জন্য সব থেকে আগে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার প্রয়োজনীয়তা মেনে নিলেন মনমোহন সিং। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আলতামাস কবীরের সঙ্গে সহমত পোষণ করে তিনি জানিয়েছেন সারা দেশ জুড়েই মামলার পাহাড় জমে রয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় বিচারপতিদের সংখ্যা নগণ্য, মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজন বেশি সংখ্যক বিচারপতি নিয়োগ। বিচার ব্যবস্থার সার্বিক গঠন ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে রাজ্যগুলির সহযোগিতা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তিনি।
আগামিকালই পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডের শুনানি। আর আজই ফোনে তাঁকে কটুক্তি করা হয় বলে অভিযোগ তুললেন পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণকাণ্ডে নিগৃহীতা মহিলা। তাঁর অভিযোগ ফোন করে অশ্লীল ভাষায় তাঁকে গালিগালাজ করা হয়। ঘটনার কথা জানিয়ে পর্ণশ্রী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই মহিলা। তবে, এই প্রথম নয়। অভিযোগ, এর আগেও একাধিকবার এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে নিগৃহীতা মহিলার।
যার জেরে বাড়ি পর্যন্ত পরিবর্তন করতে হয় ওই মহিলাকে। অভিযোগ, টাকা দিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলার টোপও দেওয়া হয় মহিলাকে। গত শুক্র এবং শনিবারই পার্ক স্ট্রিট মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশে কলকাতায় ফৌজদারি মামলার আদালতের সংখ্যা নয় থেকে কমে তিনে এসে দাঁড়ানোয়, দুদিনের জন্য মামলাটি স্থগিত করে দেওয়া হয়।
http://zeenews.india.com/bengali/kolkatta/park-street-again-in-the-news_12576.html
বর্তমানে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে পার্ক স্ট্রিট মামলাটির শুনানি চলছে৷ অভিযোগকারিণীর সাক্ষ্যগ্রহণ ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে৷ গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে নাইটক্লাব থেকে ফেরার সময় গাড়িতে তুলে ধর্ষণ করা হয় ওই অ্যাংলো ইন্ডিয়ান মহিলাকে৷ ওই ঘটনায় তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে৷ তারা প্রত্যেকেই এখন জেল হেফাজতে রয়েছে৷ তবে এই কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত কাদের খান এখনও অধরা৷ সে বিদেশে পালিয়ে গিয়ে থাকতে পারে বলে গোয়েন্দাদের সন্দেহ৷ এই অবস্থায় অভিযোগকারিণীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়াল৷
নয়াদিল্লি: মহিলাদের ওপর আক্রমণ প্রতিহত করতে ফৌজদারি আইনে সংশোধন করা হয়েছে৷ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বাড়ানো হয়েছে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের সংখ্যাও৷ কিন্তু এখনও অনেক কাজ বাকি৷ আজ দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী ও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিদের সম্মেলনে একথা বলেন মনমোহন সিং৷দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডের উল্লেখ করে তিনি বিচার নিষ্পত্তির ব্যবস্থা জোরাল করার আহ্বান জানিয়েছেন।একইসঙ্গে মহিলাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আরও কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
দেশের বিচারব্যবস্থার সংস্কারের পক্ষেও সওয়াল করলেন প্রধানমন্ত্রী। মহিলাদের ওপর নিগ্রহের ঘটনার ক্ষেত্রে বিচারবিভাগের আরও বেশি স্পর্শকাতর হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, এক্ষেত্রে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। মামলা বকেয়া থাকা ও বিচারে দীর্ঘসূত্রীতা দূর করতে বিচারপতির সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।বৃদ্ধ ও নারী সহ সমাজের দুর্বল অংশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মামলাগুলির বিচারের জন্য ফাস্ট-ট্রাক কোর্ট গঠনের প্রয়োজনীতার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচারব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে সমাজব্যবস্থা ও মানবাধিকার রক্ষার দায়িত্ব বর্তায় রাজ্যের উপর।এজন্য বিচারবিভাগের পরিকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ানো হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন রাজ্যে বিচারকের সংখ্যা অপর্যাপ্ত মেনে নিলেও তিনি জমে থাকা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির উপর জোর দেন। প্রসঙ্গত, এই মুহূর্তে দেশ জুড়ে বিভিন্ন কোর্টে ৩ কোটিরও বেশি মামলার নিষ্পত্তি হওয়া বাকি, যার মধ্যে ২৬ শতাংশ মামলাই পাঁচ বছরের বেশি পুরনো।
http://www.abpananda.newsbullet.in/national/60/35404
নয়াদিল্লি: ২০১৪-এ লালকৃষ্ণ আডবাণীর নেতৃত্বে সরকার গড়বে দল৷ নরেন্দ্র মোদী ঘনিষ্ঠ রাজনাথ সিংহের পাশে দাঁড়িয়ে বিতর্কিত এই মন্তব্য করেছেন বিজয় গোয়েল৷ তবে দলের চাপে পরে ফের সুর বদলের চেষ্টা করছেন তিনি৷
ফের বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে উঠে এল লালকৃষ্ণ আডবাণীর নাম৷ নরেন্দ্র মোদীর নাম যখন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে এগিয়ে, তখন আডবাণীর হয়ে সওয়াল করলেন বিজেপি নেতা বিজয় গোয়েল৷ রাজনাথ সিংহের পাশে দাঁড়িয়েই আজ দিল্লিতে বিজয় গোয়েল বলেন, ২০১৪ সালে আডবাণীর নেতৃত্বেই কেন্দ্রে সরকার গড়বে৷ তার কিছুক্ষণ পরেই বিতর্ক বুঝে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন বিজয় গোয়েল৷ তিনি বলেন, প্রবীণ নেতা হিসেবেই আডবাণীর নাম তিনি বলেছেন৷ প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী কে, তা ঠিক করবে দলের সংসদীয় বোর্ড৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/national/60-more/35366-2013-04-06-08-15-56
ওয়াশিংটন:ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছিল বটে, তবে রাজধানীর বুকে ১৯৮৪-র শিখ-বিরোধী দাঙ্গা সংগঠিত গণহত্যা নয়। কট্টর খালিস্তানপন্থী গোষ্ঠীগুলিকে নিরাশ করে একথা জানিয়ে দিল ওবামা প্রশাসন।ইন্দিরা গান্ধী হত্যাকাণ্ডের জেরে শিখ 'নিধন যজ্ঞ'কে গণহত্যা বলে ঘোষণার উদ্যোগ নিয়েছে খালিস্তানপন্থীরা। এজন্য ওবামা প্রশাসনকে আর্জি জানিয়ে অনলাইন প্রচারও চালানো হয়েছে। ২০১২-র ১৫ নভেম্বর অনলাইনে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। কয়েক সপ্তাহেই ৩০ হাজারেরও বেশি সই জমা পড়ে। মার্কিন প্রশাসনের চলতি রীতি হল, কোনও পিটিশনের সমর্থনে ২৫ হাজারের বেশি সই জমা পড়লেই তারা হ্যাঁ বা না, কিছু একটা মতামত জানায়। হোয়াইট হাউসের তরফে বলা হয়েছে, ১৯৮৪-র হিংসা চলাকালে এবং তারপরও আমেরিকা শিখ সম্প্রদায়ের ওপর ঘটে যাওয়া অত্যাচার ও ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা কভার করেছে, সে ব্যাপারে প্রতিক্রিয়াও দিয়েছে। মার্কিন বিবৃতিতে এও বলা হয়েছে যে, মানবাধিকার সংক্রান্ত বিদেশ মন্ত্রকের দেশওয়াড়ি সরকারি রিপোর্টে ওই হিংসা ও তার পরের ঘটনাবলী বিস্তারিত কভার করা হয়েছে।আমরা এখনও ধর্মের ভিত্তিতে মানুষের ওপর অত্যাচারের বিরোধিতা ও নিন্দা করি। সব মানুষের স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষায় মার্কিন সরকার উদ্যোগী এবং এটা আমাদের বিদেশনীতির দীর্ঘদিনের বৈশিষ্ঠ্য। আমাদের কূটনীতিকরা এখনও সর্বত্র সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরব হন।
তবে শিখ গোষ্ঠীগুলি ওবামা সরকারের বক্তব্যে হতাশ। নিউইয়র্কের শিখ ফর জাস্টিস গোষ্ঠীর প্রধান গুরপ্রীত এস পান্নুন এক বিবৃতিতে বলেছেন, সম্প্রতি ১৯৮৪-তে নিহতদের গণকবর মিলেছে। কিন্তু মার্কিন প্রতিক্রিয়ায় তাকে উপেক্ষা করা হল। ওবামা প্রশাসন এ ব্যাপারে কোনও জোরালো অবস্থান নিতে পারল না।(ফাইল চিত্র)
নির্মূল কমিটির সহসভাপতি অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, আমাদের সমাবেশের পাশ দিয়ে হেফাজতকর্মীদের বড় একটি মিছিল যাচ্ছিল। মিছিল থেকে হঠাৎ আমাদের সমাবেশের ওপর ঢিল ছোড়া শুরু হয়। এরপর কয়েকজন এসে আমাদের চেয়ারগুলো ভেঙে দেয়। এই হামলায় নির্মূল কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছে বলে জানান তিনি।
বনানী থানার এসআই জাকির হোসেন বলেন, সমাবেশ শুরুর পর সেখান থেকে স্লোগান দেওয়া হচ্ছিল। এ সময় পাশ দিয়ে যাওয়া হেফাজতের মিছিল থেকে হঠাৎ হামলা হয়। হামলার সময় এক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলেও জানান এস আই জাকির।
আমাদের নেতা-কর্মীরা আমাকে রক্ষা না করলে তারা আমার লাশ ফেলে দিতো- এমন অভিযোগ করে নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, তারা জেনে বুঝেই এই হামলা চালিয়েছে। মতিঝিলে যাওয়ার আরো অনেক রাস্তা থাকলেও কেনো মহাখালী হয়ে তাদের যেতে হবে? আমরা এখানে সমাবেশ করছি জেনেই তারা পরিকল্পিতভাবে এখন দিয়ে এসে হামলা চালিয়েছে।http://www.kalerkantho.com/?view=details&type=gold&data=news&pub_no=1204&cat_id=1&menu_id=0&news_type_id=3&news_id=338590&archiev=yes&arch_date=06-04-2013
পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে এবার নয়া তরজা৷ রাজ্যের টাকাতেই রাজ্যের বিরুদ্ধে মামলা করেছে নির্বাচন কমিশন৷ কটাক্ষ পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত ভট্টাচার্যের৷ সুব্রতর বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে কংগ্রেস-সিপিএম৷ এদিকে, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী জয়রাম রমেশ এদিন সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সময়ে নির্বাচন না হলে বন্ধ হবে ১০০ দিনের প্রকল্পের টাকা৷
রাজ্য পঞ্চায়েত আইনের ৪২ নম্বর ধারার সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন৷ আর সেই মামলা নিয়ে কমিশনকে খোঁচা দিলেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী৷ তাঁর কটাক্ষ, রাজ্যের টাকাতেই রাজ্যের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কমিশন৷ পাল্টা সমালোচনায় সরব হয়েছে কংগ্রেস ও সিপিএম৷ রেল প্রতিমন্ত্রী তথা কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরি বলেছেন, সুব্রতবাবুরাও তো রাজ্যের টাকাতেই মামলা লড়ছেন৷প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, সুব্রত হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে এই মন্তব্য করেছেন৷ সিপিএম বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লা বলেছেন, গণতন্ত্র রক্ষার জন্যই লড়ছে কমিশন৷
রাজ্য সফরে এসে এদিন পঞ্চায়েত ভোটে জট নিয়ে নিয়ে রাজ্য সরকারের সমালোচনায় হন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী জয়রাম রমেশও৷ তিনি বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস হেরে যাওয়ার ভয় করছে৷ এজন্যই তারা পঞ্চায়েত নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চাইছে৷একই মন্তব্য করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেত্রী দীপা দাশমুন্সিও। পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূলও৷ ফের সংখ্যাতত্ত্ব আওড়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের মন্তব্য, ভয় পাওয়ার কি আছে? সংখ্যাগরিষ্ঠ বলেই তো রাজ্যে সরকারে রয়েছে তাঁরা৷ শিলিগুড়ির মাটিগাড়ায় এদিন সরকারকে হুঁশিয়ারির ঢঙে রমেশ বলেছেন, ঠিক সময়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন না হলে আগামী আর্থিক বছরে একশো দিনের কাজের প্রকল্পের প্রায় ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা রাজ্য পাবে না৷ ১০০দিনের কাজের প্রকল্পের টাকা কেন্দ্র বন্ধ করে দিলে সেক্ষেত্রে সরকার বড়সড় আর্থিক সমস্যায় পড়তে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷
আবার রাজ্যের টাকায় কমিশনের মামলা লড়ার প্রসঙ্গ যেভাবে সুব্রত মুখোপাধ্যায় তুলেছেন, তা অবান্তর বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ৷ তাদের পাল্টা প্রশ্ন, যখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের একাংশের বিরুদ্ধে টুজি কেলেঙ্কারি তদন্ত করে সিবিআই, তখন কেন্দ্রের টাকাই তারা ব্যবহার করে, কিন্তু, কেন্দ্র কি কখনও তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে? তোলে না, তাহলে রাজ্য কেন এই হাস্যকর প্রশ্ন তুলছে৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/35409-2013-04-07-12-52-21
থানের পুনরাবৃত্তি এ শহরেও ঘটার শঙ্কা
মহারাষ্ট্রের থানেতে বহুতল ভেঙে ৭২ জন মানুষের মৃত্যু চিন্তায় ফেলেছে পুরকর্তাদের৷ কলকাতার আনাচে কানাচে যেভাবে বেআইনি বাড়ি গজিয়ে উঠছে, তাতে থানের পুনরাবৃত্তি যে কোনও সময়ই এখানেও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের ইঞ্জিনিয়াররা৷ কয়েক দিন আগেই উত্তর কলকাতার কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিটে পুরোনো বাড়িতে নির্মাণ কাজ চালাতে গিয়ে ভেঙে পড়ে৷ তার জেরে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়৷ এর আগেও অসংখ্যবার বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে৷ গত ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ই এম বাইপাস লাগায়ো নয়াবাদ অঞ্চলে একটি নির্মীয়মাণ ছ'তলা বাড়ি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে৷ তার জেরে পাশের একটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ ওই বছরের মার্চ মাসে বেহালার এস এন রায় রোডে একটি নির্মীয়মাণ পাঁচতলা বাড়ির পিলার বসে যায়৷ পিলারের রড বেঁকে বিকট আওয়াজ হতে থাকে৷ বিপদের আশঙ্কায় আশপাশের বাসিন্দাদের সরিয়ে দিতে বাধ্য হয় প্রশাসন৷ পরে ঘটনার তদন্তে নামে বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সিভিল শাখার বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়াররা৷ তাতেই জানা যায়, বাড়িটির ভার বহন করতে না পারাতেই পিলারগুলি বেঁকে যাচ্ছিল৷ ফলে বাড়িটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় পুরসভা৷ পুরসভার অভিযোগের ভিত্তিতে প্রোমোটারকে গ্রেপ্তার করা হয়৷
বিল্ডিং বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, সবথেকে বেশি বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে পূর্ব কলকাতা, যাদবপুর, বেহালা, গার্ডেনরিচ এবং পার্ক সার্কাস-তপসিয়া অঞ্চলে৷ ই এম বাইপাসের লাগায়ো অঞ্চলে পুরসভাকে না জানিয়ে গত কয়েক বছরে প্রায় ১০-১২ হাজার বেআইনি বাড়ি তৈরি হয়েছে৷ যাদবপুরে ১৫-২০ হাজার বেআইনি নির্মাণ রয়েছে৷ পার্ক সার্কাস অঞ্চলেও বেশ কয়েক হাজার বেআইনি বাড়ি রয়েছে৷ উত্তর ও মধ্য কলকাতার বিভিন্ন অংশে পুরোনো আমলের বাড়ি ভেঙে নতুন বহুতল বাড়ি তৈরি হচ্ছে৷ তার জেরেও যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে৷
কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, অনেক ক্ষেত্রেই বাড়তি লাভের আশায় অসাধু প্রোমোটাররা বেআইনিভাবে বাড়ি বানিয়ে বিক্রি করছেন৷ পুকুর ভরাট করেও তার উপর বাড়ি বানানো হচ্ছে৷ ত্রুটিপূর্ণ নকশা এবং অবৈজ্ঞানিক নির্মাণের ফলে সেই সব বাড়ি ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিল্ডিং বিভাগের ইঞ্জিনিয়াররা৷
পুরসভা সূত্রের খবর, গত কয়েক বছরে কলকাতায় একাধিকবার নির্মীয়মাণ বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে৷ প্রাণহানিও ঘটেছে৷ বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে পুরসভা৷ কিন্ত্ত তাই বলে বেআইনি বাড়ি নির্মাণ ঠেকানো যায়নি৷ রোজই বহু বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ জমা পড়ে সেই বাড়িতে বসবাস করেন বহু মানুষ৷ ফলে বাড়ি ভেঙে পড়লে প্রাণহানির সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে৷ বিল্ডিং বিভাগের কর্তারা জানাচ্ছেন, বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ এলেও মানবিক কারণেই বাড়ি ভাঙা সম্ভব হচ্ছে না৷ বিল্ডিং বিভাগের ডিজি (২) দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, 'অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রোমোটাররা বাড়ি বিক্রি করে ভেগে পড়েন৷ একবার কোনও বাড়িতে লোক ঢুকে পড়লে তাদের জোর করে সরানোর কাজটা কঠিন হয়ে পড়ে৷ আইনগত দিক থেকে কাউকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা যায় না৷ আবার অনেক সময় বাড়ির মালিক আদালতে চলে যান৷ দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলায় পুরসভারও কিছু করার থাকে না৷'
শুধু নিরাপত্তা নয়, চাই মানসিকতায় বদল
আনন্দবাজার – মঙ্গল, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১২শুধু নিরাপত্তা নয়, চাই মানসিকতায় বদল
এত রাগ আর ক্ষোভ জমা ছিল দিল্লিবাসীর মনে? কখনও বুঝতেও পারিনি। বরং মনে হতো যে, দিল্লি শহর যেন বড় বেশি নিজেকে নিয়ে মগ্ন ও ব্যস্ত। ১৬ তারিখের গণধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে বিক্ষোভ-আন্দোলনের সাক্ষী হল রাজধানী, তা নিঃসন্দেহে অভূতপূর্ব। মানুষের ক্ষোভ উত্তাল হয়ে আছড়ে পড়ল ইন্ডিয়া গেট, বিজয় চক, রেল ভবনের সামনে। নিজেকে প্রশ্ন করেছি, হঠাৎ একটি ধর্ষণের ঘটনাকে সামনে রেখে কেন দেখা দিল এই প্রবল বিক্ষোভ? কোন সামাজিক অথবা রাজনৈতিক কারণে তৈরি হল এই বিপুল ক্রোধ? এমন ঘটনা তো নতুন কিছু নয় আমাদের দেশে! আসলে এই ক্রোধের নানা রকম কারণ রয়েছে। প্রথমত, ঘটনাটি এতটাই নৃশংস যে জনতার রাগ বল্গাহীন হয়েছে। দ্বিতীয়ত, এর চরিত্র এমনই যে দিল্লির মধ্যবিত্ত শ্রেণি দ্রুত সমব্যথী হয়ে পড়েছে। রাত সাড়ে ন'টায় একটি মেয়ে বাসে করে বাড়ি ফিরছেন (তাও একা নন)। এটা এতটাই স্বাভাবিক আর দৈনন্দিন ঘটনা যে দিল্লির সব ছাত্রী বা অফিস-কাছারিতে যাওয়া মহিলা চট করে একাত্মতা বোধ করেছেন, পরিণাম দেখে শিউরে উঠেছেন।
মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে একটা ধারণা চালু আছে যে, কোনও মেয়ে অশালীন পোশাক পরলে বা পার্টি থেকে ফিরলে যেন ধর্ষিতা হলেও হতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তো তেমন কিছু ঘটেনি। তৃতীয়ত, প্রাথমিক ভাবে সরকারের মুখে কুলুপ এঁটে থাকাটাও মানুষ ভাল ভাবে নেননি। ঘটনার ঠিক পরেই সরকারের উচিত ছিল বুক চিতিয়ে মানুষের ক্ষোভের মুখোমুখি হওয়া। সনিয়া গাঁধী, প্রণব মুখোপাধ্যায়, শীলা দীক্ষিত অথবা সুশীলকুমার শিন্দে, যে কেউ বিবৃতি দিতে পারতেন। সম্ভব হলে বড় স্ক্রিনে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় তা দেখানো যেতে পারত। তাতে ক্ষততে কিছুটা হলেও মলম পড়ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে গুলি চলার পরে বারাক ওবামা কিন্তু ঘটনা না-এড়িয়ে, মানুষের মুখোমুখি হয়েছেন। যে কোনও সঙ্কটে সরকারের পক্ষ থেকে মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়া সব সময় কাম্য।
এই সব কারণেই মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। প্রথমে তা ছিল নেতৃত্বহীন। পরে অবশ্য কিছু দুর্বৃত্ত ঢুকে পড়েছে, যারা আন্দোলনকে হিংসাত্মক করে তুলেছে। দেখা গিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলির আনাগোনাও। তবে বিক্ষোভে মূলত যোগ দিয়েছেন দিল্লির মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষই। বিহার বা উত্তরপ্রদেশে, ভূমিহার অথবা দলিত কন্যা ধর্ষণের অজস্র ঘটনায় যা দেখা যায় না। কোথাও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধলে বা লুটপাট হলে সবার আগে লাঞ্ছিত হন মহিলারাই। একে নিছক যৌন-বিকৃতি হিসেবে দেখা কিন্তু ঠিক হবে না। এ সব ক্ষেত্রে মহিলাকে ধর্ষণ করে এক ধরনের ক্ষমতার আস্ফালনই (পাওয়ার ট্রিপ) দেখানো হয়। মহিলাকে অপমান করে গোটা সম্প্রদায়কেই অপমান করার চেষ্টা করে পুরুষরা। কিন্তু প্রশ্ন হল, তখন তো কোনও আধুনিক শহরের মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে এ ভাবে রাস্তায় আছড়ে পড়তে দেখি না। দিল্লিতে তো নয়ই। পাশাপাশি আর একটি কথাও বলে নেওয়া দরকার। তা হল, চোখের সামনে নারী-লাঞ্ছনা ঘটলে কি প্রতিবাদে মুখর হয় মধ্যবিত্ত মানুষ? বোধহয় না। টাটকা একটা উদাহরণ দিলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে। বাসে গণধর্ষণ নিয়ে যখন রাজধানী উত্তাল, ঠিক তখনই, রবিবার বিকেলে এই দিল্লিতেই ডিটিসি বাসে নিগৃহীত হয়েছেন এক কুড়ি বছরের গর্ভবতী মহিলা। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্বামীও। স্বামীর অভিযোগ, চার জন মত্ত যুবক তাঁর স্ত্রীর প্রতি অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে, তাঁকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।
বাসে বেশ কয়েক জন উপস্থিত থাকলেও কেউ কিন্তু টুঁ শব্দটিও করেনি। তা হলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াচ্ছে? এক, দলিত বা আদিবাসী শ্রেণির মহিলাদের অভিযোগকে একটি সামাজিক-রাজনৈতিক সমীকরণের ঘেরাটোপে ফেলে নিশ্চিন্ত মধ্যবিত্ত। দক্ষিণ দিল্লিতে, চোখের সামনে, পরিচিত শ্রেণির মধ্যে ঘটা ঘটনাই তাকে ক্ষুব্ধ করে তুলতে পারে। দুই, মধ্যবিত্ত শ্রেণি দলবদ্ধ ভাবে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে পারে, কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সময় তার সাহসে কুলোচ্ছে না।
পুরুষশাসিত সমাজও এই অবস্থার জন্য অনেকটা দায়ী। জীবনবিমার বিজ্ঞাপন খেয়াল করে দেখুন। মেয়েদের বিয়ের জন্য টাকা জমানো বাবা-মায়ের লক্ষ্য। অথচ ছেলের জন্য চাই উচ্চশিক্ষার খরচ! এটা দুর্ভাগ্যের যে, আমাদের দেশে ছেলে আর মেয়েকে একই ভাবে বড় করা হয় না। কাজ, শিক্ষা, খাদ্য কোনও ক্ষেত্রেই সমান চোখে দেখা হয় না। অবাধে ঘটে নারী ভ্রূণহত্যার মতো অপরাধ। এই সুযোগে একটা কথা বলি। কোনও ধর্ষণকারীই তো চাঁদ থেকে পড়ে না। তারা আমাদের এই সমাজেই জন্ম নেয়, বেড়ে ওঠে। তাদের মনস্তত্ত্বে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় শ্রেষ্ঠত্বের বোধ, পুরুষ হয়ে জন্মানোর অহং। যার বীজ শুধু ধর্ষণকারীর ভিতরেই নয়, বিচারব্যবস্থা ও পুলিশি ব্যবস্থার মধ্যেও রয়েছে। শহর, গ্রাম সর্বত্র পুলিশ কনস্টেবল, বিচারব্যবস্থার নিচুতলার কর্মীসবাই আসছেন এই মানসিকতা নিয়ে। কনস্টেবল নিজেই ধর্ষণ করছে এমন অভিযোগও তো কম নয়। আবার যিনি ধর্ষিতা হচ্ছেন সেই মহিলার নৈতিকতা (অর্থাৎ তিনি কুমারী কি না, তাঁর পোশাক কী রকম, পেশা কী, কেন রাত করে বাড়ি ফেরেন) নিয়েও চুলচেরা আলোচনা আর বিচার শুরু হয়। ব্যাপারটা এমন দাঁড়ায় যেন, যে ধর্ষণ করেছে, সে নিগৃহীতার তুলনায় অনেক বড় মাপের মানুষ!
এই সামাজিক অসুখ থেকে উদ্ধারের কোনও শর্টকাট পদ্ধতি আমার জানা নেই। সরকারের পক্ষেও আশু কিছু করে ফেলা সম্ভব বলেও মনে হয় না। তবে দেখেশুনে যেটুকু মনে হয় প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। যার মধ্যে রয়েছে পুরুষ ও নারীকে সমান চোখে দেখার চেষ্টা শুরু করা, পুলিশের মানসিকতার বদল, বিচারব্যবস্থার সংস্কার। আপাতত যেটা করা যায় তা হল, মহিলাদের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য আইন আরও মজবুত করা, আদালতে দোষী সাব্যস্ত করার হার বাড়ানো (এখন যা মাত্র ২৭ শতাংশ)। সেই সঙ্গে রাতের বাস বাড়ানো (অনেক ছাত্রী, কর্মরত মহিলা বাসে যাতায়াত করেন), এবং সম্ভব হলে বাসে মহিলা মার্শাল ও ড্রাইভার রাখা। এক কথায়, রোগ সারানোর জন্য স্বল্পমেয়াদি কিছু ব্যবস্থার পাশাপাশি দরকার দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষা আর মানসিকতার আমূল পরিবর্তন।
সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখন
আনন্দবাজার পত্রিকা
সর্বাগ্রে চাই চৈতন্যের সংস্কার
মোহাম্মদ আন্ওয়ারুল কবীর
ঠিক এ' মূহুর্তে সংস্কার শব্দটি বহুল উচ্চারিত, আলোচিত এবং সমলোচিত একটি শব্দ। গেল বছরের ১১ জানুয়ারীর পটভূমিতে আসা বর্তমান সেনা সমর্থিত এ সরকার বাড়াবাড়ি রকমভাবে সংস্কার নিয়ে উচ্চকিত হওয়ায় শব্দটিতে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী হতে শুরু করে খেটে খাওয়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠী পর্যন্ত কমবেশী আলোড়িত।
সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী সংস্কার এসেছে নির্বাচন কমিশনে, দূর্নীতি দমন কমিশনে, সরকারী কর্ম কমিশনে এবং বিচার বিভাগে। নির্বাচন কমিশন, দূর্নীতি দমন কমিশন এবং সরকারী কর্ম কমিশন পূর্নগঠিত হয়েছে এগুলোর মূল কান্ডারীদের পরিবর্তন করে। কাগজেপত্রে বিচার বিভাগের উপর নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্ব হয়েছে বিলুপ্ত। এতে করে কি জনগনের আকাঙ্খিত সংস্কারের মূল লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে? জনগনের আকাঙ্খিত সংস্কারের মূল লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রের এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনভাবে জনকল্যানে কাজ করার সূযোগ দিয়ে প্রকৃত ক্ষমতায়ন করা। কিন্তু বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় জনগনের মনে আজ সংশয়। নির্বাচন কমিশন, দূর্নীতি দমন কমিশন এমনকি বিচার বিভাগ পর্যন্ত যে এক অদৃশ্য সূতোর টানে নাচছে তা এদের সাম্প্রতিক কার্য্যক্রমেই সুস্পষ্ট প্রতীয়মান। কর্তার ইচ্ছে কর্ম-- সেই আগের মতোই চলছে।
সরকারের আরেকটি অদম্য ইচ্ছে, রাজনৈতিক সংস্কার আনয়ন। আর ঐ সংস্কারের মূল লক্ষ্য দেশের প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দল, আওয়ামী লীগ এবং বি.এন.পি.র শীর্ষ নেতৃদ্বয়কে রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে চিরতরে অপসারন করা।আর এজন্য দূর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশন এবং বিচার বিভাগকে সাথে নিয়ে সরকার চালাচ্ছে সাঁড়াশী অভিযান। এভাবে দুই নেত্রীকে দৃশ্যপট থেকে বিতাড়ন করলেই যদি রাজনৈতিক সংস্কার সাধিত হয় তবে সংস্কারের আভিধানিক অর্থকেই পরিবর্তন করতে হবে। যা হোক, আক্লমন্দকে লিয়ে ইশারায়ই কাফি-- বর্তমান সরকারের সংস্কারের অর্ন্তনিহিত শানে নযুল আজ অনেকের কাছেই সুষ্পষ্ট।
তবে দেশের আপামর মানুষের সার্বিক মুক্তির জন্য সত্যিকার সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীৃকার্য্য। প্রয়োজন বহুমাত্রিক সংস্কারের কার্য্যক্রম।রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষাব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা সহ সমাজের বিভিন্ন অঙ্গনের সংস্কার আজ সময়ের দাবী। কিন্তু সর্বাগ্রে প্রয়োজন আমাদের চিন্তা-চেতনার সংস্কার।
আমাদের চিন্তা-চেতনা বলতে আমি এই ভূখন্ডের সমাজের নানা ন্তরে প্রতিষ্ঠিত এবং কমবেশী ক্ষমতাবান জনগোষ্ঠীর সামষ্টিক চিন্তা চেতনার কথাই বলছি।জাতি হিসেবে চিন্তা-চেতনায় এখনো আমরা পশ্চাৎপদ এবং আমাদের মনোজগতে শ্রেণীবিভাজন প্রকটভাবে ক্রিয়াশীল। উপমহাদেশের সনাতন ধর্ম কেন্দ্রিক বর্ণ-বৈষম্যের আবর্তে এখনো আমরা আবর্তিত হচ্ছি নানাভাবে।আমাদের চেতনা মানুষকে মানুষ হিসেবে নয় বরং মূল্যায়ন করে তার শ্রেণীগত অবস্থানের ভিত্তিতে। এর প্রতিফলন রয়েছে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিতে।সামাজিক সম্পর্ক এবং শ্রেণী ভিত্তিক সম্বোধন আপনি, তুমি, তুই-- বাংলাসহ উপমহাদেশের অন্যান্য প্রধান ভাষা, যেমন হিন্দি, উর্দুতে বর্তমান। তাই আমরা অবলীলাক্রমে আমাদের বাপ-চাচার বয়সী খেটে খাওয়া মানুষ, যেমন একজন রিকশাওয়ালা কিংবা দিনমজুরকে বাংলা ব্যাকরণ নির্ধারিত তুই-তোকারী করতে পারি। নোম চম্স্কি সহ অনেক ভাষা বিজ্ঞানী কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের ভাষার উপর সেখানকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রভাবের সুষ্পষ্ট নিদর্শন দেখিয়েছেন। তবে উপমহাদেশীয় ভাষা ব্যতিত পৃথিবীর অপরাপর ভাষায় শ্রেণী চেতনার এমন প্রকট প্রতিফলন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
শুধু ভাষা ব্যবহারে নয় বরং রোজকার সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় আমরা শ্রেণী বৈষম্যকে প্রশ্রয় দেই নানাভাবে। আমরা, সমাজের তথাকথিত ভদ্রলোকেরা নিম্নবর্গের মানুষের সাথে মেলামেশায় সতর্ক দূরত্ব বজায় রাখি সামাজিক প্রেক্ষিত বিবেচনায়। উদাহরনস্বরূপ, আমরা কি আমাদের গৃহপরিচারিকা,তুচ্ছার্থে যাদেরকে 'বুয়া' বলে সম্বোধন করি তাদের সাথে এক টেবিলে বসে খাওয়ার কথা ভাবতে পারি! পাশ্চাত্য সমাজে এটি সম্ভব। কিন্তু আমাদের চিন্তা-চেতনার বিবর্তন ধারার শম্বুক গতিতে এমনতরো ভাবনা বাতুলতা মাত্র। তবে এই একবিংশ শতাব্দিতে আমাদের চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন ঘটিয়ে মানুষকে মানুষ হিসেবে ন্যূনতম মর্যাদা তো দিতে পারি!
প্রশ্ন উঠতে পারে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর মাঝে তবে কি ইসলামী সাম্যবাদী চেতনার প্রভাব পড়েনি। হ্যা, প্রভাব নিশ্চয়ই পড়েছে এবং সে কারণেই এ' অঞ্চলের নিম্নবর্ণের হিন্দু জনগোষ্ঠীর সিংহভাগ ধর্মান্তরিত হয়েছিল ইসলামের সাম্যবাদের প্রবল আকর্ষণে। তবে ধর্মান্তরিত হয়ে এদের অনেককেই হতে হয়েছিল আশাহত। কারণ এখানকার ইসলামে দেশজ বর্ণবৈষম্যের প্রভাবে মুসলমানদের মধ্যে হয়েছিল আশরাফ/আতরাফ বিভাজন,যা নিঃসন্দেহে প্রকৃত ইসলামের পরিপন্থী। প্রকৃতপক্ষে ইসলামের সাম্যবাদ এখন শুধু মসজিদের ভেতরেই--এক কাতারে সারিবদ্ধভাবে নামাজ পড়ার মাঝেই সীমাবদ্ধ। ইহলৌকিক সামাজিক কাজে, আচার-আচরণে বাঙ্গালী মুসলমানেরা আগের মতোনই শ্রেণী সচেতন।
আমাদের চিন্তা-চেতনার গভীরে প্রোথিত রয়েছে সামন্ততান্ত্রিক ধ্যান-ধারণা।যারা যত বেশী ক্ষমতাবান তারা ততবেশী সামন্তবাদী ধ্যান-ধারণায় কলুষিত।আমাদের গনতন্ত্র বিকাশের বড় অন্তরায়ও হচ্ছে এটি। গনতন্ত্র হচ্ছে পরমত সহিষ্ণুতা এবং বিরোধী পক্ষের যৌক্তিক মতামতকে আমলে নেওয়া। কিন্তু আমাদের গনতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু পবিত্র সংসদে প্রায়শঃই প্রতিফলিত হয় সামন্ততান্ত্রিক চিন্তা-ভাবনার মন-মানসিকতা । তাই সংসদে দাঁড়িয়ে গনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অন্য একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে 'চুপ কর বেয়াদপ' বলে থামিয়ে দিতে পারেন অবলীলাক্রমে।ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে গেলে নিজেদেরকে 'জমিদার' হিসেবেই ভাবতে শুরু করেন নির্বাচিত কিংবা অনির্বাচিত শাসকগোষ্ঠী। আর এ' মানসিকতার কারণেই সংসদীয় গনতন্ত্রের প্রাণ ভোমরা জাতীয় সংসদ হয়ে পড়েছিল অকার্য্যকর।
শাসকগোষ্ঠীর সামন্ততান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল গত জোট সরকারের আমলে। জোট সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ পুরো দেশটাকে নিজস্ব'তালুক' বিবেচনায় রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুন্ঠন প্রক্রিয়ায় নির্দ্বিধায় অংশগ্রহন করে।সামন্তযুগের রাজা-বাদশাহ্-র মতোই তারা লিপ্ত হয় ভোগ বিলাসে। প্রাসাদোপম বাড়ী, বিলাসবহুল গাড়ী, বাগানবাড়ী, ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানা এগুলোতো সামন্তযুগেরই স্মারক। জোট সরকারের লালু-ফালু, যারা শিক্ষা দীক্ষায় পশ্চাৎপদ এবং যারা অতি দ্রুত উন্নীত হয়েছে লুটেরা বুর্জোয়া শ্রেণীতে, তাদের ভোগবিলাসের বিকৃত কার্য্যক্রমের মনোঃস্তাত্বিক ব্যাখ্যা সহজতর। কিন্তু বহুবার দেশের অর্থমন্ত্রীর পদ যিনি করেছেন অলঙ্কৃত, যিনি বিলেতী শিক্ষায় শিক্ষিত ভদ্রলোক, সেই সাইফুর রহমান যখন একই ধরনের সামšতান্ত্রিক চিন্তাভাবনায় উজ্জীবিত হয়ে বাগানবাড়ী সংস্কৃতিতে লালায়িত হোন, লালু-ফালুদের মতোন দূর্নীতির জোয়ারে গা ভাসিয়ে দেন তখন তার শিক্ষাকে অসম্পূর্ণ না বলে উপায় থাকে না। সত্যিকার অর্থে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা যে মানুষের চিন্তা-চেতনার সংস্কার করতে পারে না তা একজন সাইফুর রহমান কিংবা অন্যান্য শিক্ষিত দূর্নীতিবাজরাই প্রমান।
বর্তমান সেনা সমর্থিত সরকারের মাঝেও যে আমাদের সামন্ততান্ত্রিক চিন্তাভাবনা সংক্রমিত তা ক্রমশঃ প্রকাশিত হচ্ছে এর কার্য্যক্রমে। তাই তারা জনগনের ইচ্ছেকে তোয়াক্কা না করে চাচ্ছে তাদের ইচ্ছেমতোন রাজনীতি নিয়ন্ত্রন করতে। পূর্ববর্তী সরকারগুলোর মতোনই এ সরকারও দেশকে নিজস্ব'তালুক' হিসেবে ভাবতে শুরু করছে। তাই তারা পায়তারা শুরু করছে দেশের স্বার্থবিরোধী আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর সাথে বিভিন্ন চুক্তি সম্পাদনে, গণবিরোধী বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নে ।
মূল কথা, চিন্তা-চেতনার সংস্কার ব্যতিত কোন সরকারের পক্ষেই গণমুখী কার্য্যক্রম করা সম্ভব নয়। চিন্তা-চেতনা সংস্কারের জন্য প্রয়োজন সামাজিক বিপ্লবের। এজন্য সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে সত্যিকার দেশপ্রেমিক শুভবুদ্ধি সম্পন্ন জনগোষ্ঠীকে। এককভাবে নয় বরং সংগঠিতভাবে।
মোহাম্মদ আন্ওয়ারুল কবীর এ. আই. ইউ. বি-তে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা রত
http://mukto-mona.net/Articles/anwarul_kabir/choitonyer_sangskar.htm
জেন্ডার-বৈষম্য দূরীকরণে প্রয়োজন আইনি সংস্কারঅ্যাডভোকেট সালমা আলী
বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। নারীর অবস্থান এই দরিদ্রদের মধ্যেও দরিদ্রতম। শিক্ষাদীক্ষা, দক্ষতা_সব কিছুতেই তারা পিছিয়ে আছে পুরুষের তুলনায় হাজার গুণ। এ কারণে তাদের পরিবারের বাইরে বের হওয়ার সুযোগ সীমিত। অধিকাংশ নারীকেই তাই থাকতে হয় ঘরে; সুগৃহিণী ও সুপত্নী হওয়াই তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। অথচ এই ঘরের মধ্যেই রাষ্ট্রীয় আইন নীরব। পরিবারের মধ্যে তাকে যে নির্যাতনই করা হোক, তাতে রাষ্ট্রের কী? এ জন্য মানবাধিকার সংগঠন, নারীনেত্রী এবং সর্বস্তরের জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে একটি আইন করা।
হাজার বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে নারী যদিও বা বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করেছে; কিন্তু সেখানেও বাধা হয়ে আছে যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্তকরণ। জীবন ও জীবিকার তাগিদে বের হয়ে পাচারেরও শিকার হচ্ছে নারী। এমনিতেই আইনি কাঠামো এসব অপরাধের বিরুদ্ধে খুব একটা প্রতিকার প্রদান করে না, তা সত্ত্বেও কোনো নারী যদি আদালত পর্যন্ত পেঁৗছেও যায় তাকে দেখানো হয় ভয়ভীতি। সাক্ষ্য দিতে এসে ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে_এমন উদহারণ আছে আমাদের সামনে। তাই নারীকে আইনিভাবে রক্ষা করতে হলে তার জন্য মামলা চলাকালে বা মামলা-পরবর্তী সময়ের জন্যও সুরক্ষার বিধান করতে হবে। বর্তমান আলোচনায় এসব বিষয়ে যেসব আইন আছে অথবা যেসব আইন প্রস্তাব করা হয়েছে, সেগুলোর দিকেই আলোকপাত করা হয়েছে।
যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের নির্দেশনা
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার নারীকে রক্ষায় প্রচলিত আইন পর্যাপ্ত না হওয়ায় বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি ২০০৮ সালে জনস্বার্থে একটি রিট মামলা করে (মামলা নং ৫৯১৬/২০০৮)। মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ১৪ মে ২০০৯ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কতগুলো দিকনির্দেশনা প্রদান করে এবং যথাযথ আইন প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত এ দিকনির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ প্রদান করে। হাইকোর্টের রায়ে যৌন হয়রানির সংজ্ঞা উল্লেখপূর্বক প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি কমিটি গঠনের কথা বলা হয়। রায় ঘোষিত হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর অতিক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কোনো কমিটি গঠিত হয়নি, এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ব্যাপক প্রচারণাসহ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দিলেও বাস্তবে তার কতখানি করা হয়েছে, তা সরকারই ভালো বলতে পারবে। তবে আমরা পত্রপত্রিকা খুললেই দেখতে পাই, যৌন হয়রানি তো কমেইনি; বরং উত্তরোত্তর বেড়েই চলছে।
এ অবস্থায় হাইকোর্টের রায়ের আলোকে একটি নতুন আইনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয় মানবাধিকার সংস্থা ও নাগরিক সমাজের মধ্যে। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি ও আইন কমিশন যৌথভাবে সেই আইনের একটি খসড়াও তৈরি করে তা আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায় এ বছরের আগস্ট মাসে। কিন্তু সেটাও এখনো আলোর মুখ দেখেনি। আইনের খসড়ায় যৌন হয়রানির সংজ্ঞা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা অনুসারে অভিযোগ কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। অভিযোগ কমিটির সদস্য কারা হবেন বা আইনটি কার্যকর হওয়ার কত দিনের মধ্যে অভিযোগ কমিটি গঠন করতে হবে, তা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। যৌন হয়রানি ঘটনার প্রতিকারের সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধের জন্যও বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নিয়োগকর্তা বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আইনটি প্রণীত হওয়ার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শিক্ষা ও কাজের নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করবে বলে আইনে বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আইনের অধীনে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হলে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে এবং কিভাবে এ জরিমানা আদায় করা হবে, তা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। যৌন হয়রানির অভিযোগে এ আইনের অধীনে প্রশাসনিক দণ্ড হলে আপিলের বিধান রাখা হয়েছে।
আইনটি প্রতিরোধমূলক হওয়ায় যৌন হয়রানি রোধে সরকার কর্তৃক প্রচারণা ও প্রশিক্ষণের কথা বলা হয়েছে। যেহেতু আইনের খসড়ায় কেবল শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত প্রশাসনিক দণ্ড ও জরিমানার কথা বলা হয়েছে, সেহেতু ভিকটিম যদি প্রচলিত ফৌজদারি বা অন্য কোনো আইনে প্রতিকার গ্রহণ করতে আগ্রহী হয়, সে ক্ষেত্রে এ আইনটি দ্বারা সে বাধাগ্রস্ত হবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনের অধীনে গৃহীত কার্যক্রম মনিটরিংয়ের উদ্দেশ্যে প্রতিবছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্র থেকে সরকারের কাছে প্রতিবেদন পাঠানোর বিধান সংযুক্ত করা হয়েছে।
মানবপাচার প্রতিরোধে আইন
মানবপাচার একটি জঘন্য আন্তরাষ্ট্রীয় অপরাধ। এর ফলে প্রতিবছর পাচার হয়ে যাওয়া মানুষের জীবনের অধিকার, স্বাধীনভাবে চলার অধিকার, কর্মের অধিকারসহ সংবিধানস্বীকৃত বেশ কিছু মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশে প্রচলিত পাচার-সংশ্লিষ্ট বিধানগুলো বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন আইনে ছড়িয়ে রয়েছে। ফলে এ-সংক্রান্ত বিচারিক কার্যক্রম বিঘি্নত হচ্ছে; হিমশিম খেতে হচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকেও। দণ্ডবিধি ১৮৬০, ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮, সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-সহ পাচারের বিচারসংশ্লিষ্ট আইনের বেশির ভাগই শতাধিক বছরের পুরনো এবং একবিংশ শতাব্দীর পাচারের কৌশল মোকাবিলায় অনুপযুক্ত। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩)-এ নারী ও শিশু পাচার রোধে বিধান থাকলেও অন্য আনুষঙ্গিক ও পদ্ধতিগত আইন পুরনো হওয়ায় এ আইনের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। পাচারের শিকার ব্যক্তিকে দেশে ফিরিয়ে আনা, তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা প্রভৃতি বিষয়ে প্রচলিত আইনে কোনো সুনির্দিষ্ট বিধান নেই। পাচারের সংজ্ঞাও ত্রুটিযুক্ত। পুরুষ পাচার কিংবা অভ্যন্তরীণ নারী পাচারসংক্রান্ত বিধানও প্রচলিত আইনে নেই। পাচারের সঙ্গে দুই বা ততোধিক রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতার কারণে অপরাধ তদন্ত এবং অপরাধীর বিচার সম্পন্ন করার জন্য আন্তরাষ্ট্রীয় পারস্পরিক আইনি সহায়তার ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা থাকলেও আমাদের প্রচলিত আইনি কাঠামোয় সে ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই। পাচারের মামলায় ভিকটিম ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধানের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই সংঘবদ্ধ পাচারকারীদের বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। সব মিলিয়ে পাচারের শিকার নাগরিকের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকার খুবই সীমিত। যে কারণে পাচারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইনি সংস্কার ও নতুন আইন প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি।
বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি এবং অন্য আরো অনেকের মতামত নিয়ে মানবপাচার প্রতিরোধে একটি নতুন আইনের খসড়াও প্রস্তুত করেছে। খসড়া আইনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, সকল প্রকারের মানবপাচার প্রতিরোধ, দমন এবং মানবপাচারের শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষার উদ্দেশ্যে প্রচলিত আইন ও মানদণ্ডের সংহতকরণ, সংশোধন ও নতুন বিধানকল্পে এ আইনটি প্রণীত হচ্ছে। প্রস্তাবিত আইনে মানবপাচারকে সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। শ্রমপাচারকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পাচার সংগঠনে সহায়তাকারীকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। পতিতালয় পরিচালনা এবং কোনো স্থানকে পতিতালয় হিসেবে ব্যবহারের অনুমতিদানকারীকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। যদি কেউ এই আইনের অধীনে মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করে, তাহলে এর জন্যও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। মানবপাচার প্রতিরোধসংক্রান্ত অপরাধ বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনালের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তা ছাড়া বদ্ধকক্ষে বিচার (ক্যামেরা ট্রায়াল), ইলেকট্রনিক কোনো যন্ত্রের সাহায্যে ধারণকৃত সাক্ষ্যকে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ, সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দোভাষী নিয়োগ এবং অপরাধ তদন্তের জন্য বিশেষ তদন্ত ইউনিট গঠন, সাক্ষীর সুরক্ষা প্রভৃতি বিধান প্রস্তাবিত আইনে সনি্নবেশ করা হয়েছে। এ ছাড়া এ আইনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, পাচারের ভিকটিমকে উদ্ধার, প্রত্যাবাসন এবং পুনর্বাসনসংক্রান্ত সব বিধান এখানে বিস্তারিতভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে (অধ্যায় পাঁচ)। প্রস্তাবিত আইন ভিকটিমকে ক্ষতিপূরণ দাবি করে দেওয়ানি মামলা করার অধিকারও প্রদান করেছে।
ভিকটিম ও সাক্ষী সুরক্ষার আইন
বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী হলেও সাংবিধানিক এই অধিকার ভিকটিম ও সাক্ষীদের জন্য সব সময় নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। প্রচলিত কয়েকটি আইনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভিকটিম ও সাক্ষীদের সুরক্ষার বিধান থাকলেও তা যথেষ্ট বলে প্রতীয়মান হয় না। এ কারণে মামলা চলাকালীন, এমনকি মামলা শেষ হওয়ার পরও মামলার ভিকটিম ও সাক্ষীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। অনেক সময় তারা হামলা ও আক্রমণের ভয়ে আদালতে হাজির হয় না অথবা হাজির হলেও সত্য সাক্ষ্য দিতে ভয় পায়। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, প্রতিবছরই ভিকটিম ও সাক্ষীর নিরাপত্তাহীনতার কারণে সহস্রাধিক মামলা প্রমাণ করা যায় না এবং আসামিরা খালাস পেয়ে যায়। সুতরাং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভিকটিম এবং সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিকটিম ও সাক্ষীদের যে সব বিষয়ে অধিকার ও সুরক্ষা প্রয়োজন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে মূল্যায়িত হওয়া, হুমকি ও ক্ষতি থেকে সুরক্ষিত থাকা, গোপনীয়তা ও পরামর্শ পাওয়া, ফৌজদারি কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত হওয়া, অপরাধীদের দণ্ড, বন্দিত্ব এবং মুক্তি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া, কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ পাওয়া, যথাযথ ও সময়োপযোগীভাবে মামলা নিষ্পত্তি হওয়া, অতিরিক্ত সহায়তা পাওয়ার জন্য সমাজসেবা সংস্থা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া ইত্যাদি। প্রচলিত আইনের গণ্ডির মধ্য থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এবং সাক্ষীদের জন্য এ সব সুরক্ষা ও অধিকার প্রদান আদৌ সম্ভব নয়। এ অবস্থায় তাই প্রয়োজন নতুন একটি আইন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ রকম আইন অনেক আগে থেকেই চালু আছে। সে সব দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমরা এখনই এ বিষয়ে নতুন একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে পারি।
পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০
নারীর প্রতি সহিংসতা শুরু হয় নানা রকম বৈষম্যমূলক আচরণের মধ্য দিয়ে নিজ পরিবার থেকেই। একজন নারী শুধু নারী হওয়ার কারণে অন্যায় আচরণের শিকার হয় তার জন্মের আগেই; মাতৃগর্ভে থাকাকালে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে বর্তমানে অতিসহজেই গর্ভাবস্থায় গর্ভের সন্তানের লিঙ্গ শনাক্তকরণ সম্ভব। যদি দেখা যায়, গর্ভের সন্তানটি কন্যা, তাহলে অনেক ক্ষেত্রে ভ্রূণ হত্যার মাধ্যমে হত্যা করা হয় অনাগত সন্তানটিকে। জন্মের পর একজন কন্যাসন্তানের বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়াটির সূত্রপাত হয় নানা ধরনের অসংগতিপূর্ণ আচরণের মধ্য দিয়ে। যেমন_পর্যাপ্ত খাবার, পোশাক, শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা, বিনোদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা, বাইরের কাজের চেয়ে গৃহকর্ম সম্পাদনে বেশি গুরুত্ব দেওয়া, নিজের এবং সন্তানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তার মতামত ও পছন্দ-অপছন্দ বিবেচনায় না নেওয়া ইত্যাদি। পারিবারিক পরিমণ্ডলে নারীর জীবনে চলমান এই বৈষম্যের অবধারিত রূপই হলো পারিবারিক নির্যাতন।
নারীর প্রতি পারিবারিক সহিংসতা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পরিবারের যেকোনো সদস্য দ্বারাই হতে পারে। তবে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, নারী সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয় স্বামী কর্তৃক। আমাদের দেশে প্রচলিত পারিবারিক বিন্যাসে পরিবারের প্রধান থাকে পুরুষ এবং সম্পদের মালিকানাও থাকে তার হাতে। অন্যদিকে নারীরা অনুৎপাদনশীল কাজে বেশি নিযুক্ত থাকে বলে তাদের অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ প্রবণতা থেকে বিয়ে তার জন্য জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অবশ্যপালনীয় কর্তব্য হিসেবে বিশ্বাস করা হয়। প্রায় ক্ষেত্রেই শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার আগেই একটি কন্যাশিশুকে পরিবারের দায়িত্ব নিতে হয়, যেখানে তার মতামত গুরুত্ব পায় খুব সামান্যই। অন্যদিকে শৈশব থেকেই বৈষম্যের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা এই কন্যাশিশুটি বিয়ের পর স্বামী কর্তৃক তার ওপর শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক ও যৌন নির্যাতন করাকে নির্যাতন নয়; বরং স্বাভাবিক বলে মেনে নেয়। শৈশবের শিক্ষা তাকে বলে দেয় স্বামী তার ওপর যে নির্যাতন করে, এর জন্য সে-ই দায়ী এবং এগুলো মুখবুজে মেনে নিতে হবে এবং কোনোভাবেই বাইরের কারো কাছে প্রকাশ করা যাবে না। অপরদিকে পুরুষপ্রধান সমাজে পুরুষের এ ধরনের অন্যায় আচরণকে সামাজিকভাবে স্বাভাবিক বলে বিবেচনা করা হয়, যা তাকে নারীর প্রতি সহিংসতা সংগঠনে করে তোলে অপ্রতিরোধ্য। শুধু ক্ষমতার জোরে স্বামী স্ত্রীকে বাধ্য করে তার ইচ্ছাধীন হতে। আর এ জন্য সে বেছে নেয় বিভিন্নভাবে নির্যাতনের পথ।
আমাদের দেশের বিদ্যমান আইনি কাঠামো লোকচক্ষুর অন্তরালে ঘটে যাওয়া পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধে এবং নির্যাতনের শিকার নারীর জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারেনি। নারীর বিরুদ্ধে অপরাধ প্রতিরোধে আমাদের দেশে প্রচলিত আইনসমূহের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন আইন হিসেবে বিবেচিত আইন হলো নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (সংশোধিত ২০০৩)। এ আইনে নারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধের বিচার দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পাদন করার এবং অপরাধ প্রমাণিত হলে কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে। তথাপি এ আইনটি নারীর বিরুদ্ধে পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধে খুব বেশি কার্যকরী নয়। কারণ উলি্লখিত আইনের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো যৌতুকের কারণে সাধারণ বা মারাত্মক জখম হলেই কেবল এই আইনে প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ যৌতুকের কারণ ব্যতীত অন্য কোনো কারণে নারী নির্যাতনের শিকার হলে এ আইনে প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ নেই। এরূপ ক্ষেত্রে দণ্ডবিধি ১৮৬০-এ সাধারণভাবে বিভিন্ন অপরাধের বিরুদ্ধে বিধান রয়েছে। কিন্তু এ আইনটিও প্রায়োগিক দিক থেকে নারীর প্রতি পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে খুব বেশি কার্যকরী নয়। দেশে প্রচলিত আইনের কোথাও পারিবারিক নির্যাতনকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এ বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পারিবারিক সহিংসতাকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানে এবং সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকরী ও যুগোপযোগী একটি আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছিল নারী অধিকার রক্ষায় সচেতন মহল। এরই ধারাবাহিকতায় প্রণীত হয় পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০।
নতুন প্রণীত এ আইনে জাতিসংঘের নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপ ঘোষণা ১৯৯৩-এর ওপর ভিত্তি করে পারিবারিক সহিংসতার একটি স্পষ্ট সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। যার ফলে পারিবারিক সহিংসতা অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আইনটিতে শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক ও যৌন নির্যাতনকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। আইনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, এখানে পরিবারে নারীর মর্যাদাপূর্ণ বসবাস ও তার সুরক্ষার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সহিংসতার শিকার বা সহিংসতার শিকার হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এমন নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা আদেশ প্রদান এবং শুনানি-অন্তে সুরক্ষা আদেশসহ বাসস্থানের আদেশ প্রদানের সুযোগ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া এখানে ক্ষতিপূরণ, হেফাজত, নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র এবং স্থানের ব্যবস্থা, নিভৃত-কক্ষ বিচার কার্যক্রমেরও বিধান রাখা হয়েছে। সুরক্ষা আদেশ ভঙ্গ করলে শাস্তির বিধান থাকায় আইনটিতে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইনের সংমিশ্রণ ঘটেছে। আবার সুরক্ষা আদেশ ভঙ্গের ক্ষেত্রে শাস্তি ছাড়াও প্রতিপক্ষকে বিভিন্ন ধরনের সমাজকল্যাণমূলক কাজে নিযুক্ত করার বিকল্প বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আইনে সরকার, প্রয়োগকারী কর্মকর্তা, সহকারী প্রয়োগকারী কর্মকর্তা, সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের দায়-দায়িত্বও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। মোটকথা, এ আইনে অনেক নতুন ধারণা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা নির্যাতনের শিকার হওয়ার আগে ও পরে নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবে বলে আমরা আশা করি।
সুপরিশ
নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য দূর করতে হলে উপরি-উক্ত খসড়াগুলোকে যেমন অতিসত্বর আইনে রূপ দেওয়া জরুরি, তেমনি প্রচলিত আইনগুলোকেও সঠিক বাস্তবায়ন করা দরকার। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ আদালতের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, এমনকি আইনজীবীদের জন্যও বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বিচারপদ্ধতিও নারীবান্ধব নয়, অনেক ক্ষেত্রে আদালতে নারীকে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হয়, বিশেষ করে ধর্ষণ বা এ রকম অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে, নারীকে পুনরায় ওই ঘটনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বিচারব্যবস্থার এসব ত্রুটি দূর করতে হবে। আইনে বদ্ধ কামরায় (ক্যামেরা ট্রায়াল) বিচারের ব্যবস্থা থাকলেও খুব বেশি মামলায় তা অনুসরণ করা হয় না। ক্যামেরা ট্রায়ালসহ এ রকম নারীবান্ধব যেসব ব্যবস্থা ইতিমধ্যে আইনে বর্তমান আছে, সেগুলোকে আরো বেশি করে চর্চা করতে হবে।
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ আইনজীবী সমিতি
নারীরা সংগঠিত হলে নির্যাতন প্রতিরোধ সম্ভবসৌদামিনী শর্মা
২০০২ সালের দিকের একদিনের ঘটনা বলি। গ্রামের গরিব পরিবারের এক পুরুষ মদ খেয়ে মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরে সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর ওপর অত্যাচার শুরু করে। স্ত্রী প্রতিবাদে মুখ খুললে লঙ্কাকাণ্ড ঘটে। এর জের ধরে স্বামী বাড়ি থেকে চলে যায়। বেশ কিছু দিন তার কোনো খবর মেলেনি। তখন পরিবারের সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। এ থেকে আমরা উপলব্ধি করি, ঘরের পুরুষরা মাতাল হয়ে যদি এভাবে আমাদের বউঝিদের ওপর অত্যাচার চালায়, তাহলে মানুষের কাছে মুখ দেখাব কিভাবে! এ থেকে রক্ষা পাওয়ার পথ খুঁজতে গিয়ে আমরা তেতইগাঁও গ্রামের বউঝিরা একত্র হই। প্রতিবাদ করার প্রয়োজন বোধ করি।
সাধারণত সন্ধ্যার পরই মাদকসেবীরা মাদক গ্রহণ করে। আমরা আন্দোলনের জন্য এ সময়টা বেছে নিই। মশাল হাতে নিয়ে রাস্তায় মিছিল বের করি। মিছিলে অংশগ্রহণকারী সবাই ছিল গ্রামের বউঝি। যেহেতু আমাদের অঞ্চল মণিপুরি অধ্যুষিত, সে কারণে মিছিলের স্লোগান ছিল মণিপুরি ভাষায়।
শ্লোগান তুলিমম_
'জু থাকপা, জুয়ার সনাবাম_য়ারই, য়ারই' (মদ খাওয়া, জুয়া খেলা_চলবে না, চলবে না)
'জু জনবা, গাঁজা জনবা_য়ারই, য়ারই' (মদ বেচা, গাঁজা বেচা_চলবে না, চলবে না)
'নুপি নাহাদা ফুবা চৈবা_য়ারই, য়ারই' (মহিলা, মেয়েদের নির্যাতন করা_চলবে না, চলবে না)
'নুপি অখইশু মিনি_মি মা ওইনা হিংগনী' (মহিলা আমরাও মানুষ, মানুষের মতো বাঁচতে চাই)
মিছিল নিয়ে আমরা আদমপুর বাজার এলাকায় পর পর কয়েক দিন প্রদক্ষিণ করি। যেসব স্থানে মদ, গাঁজা কিংবা জুয়ার আড্ডা বসত সেসব স্থানে গিয়ে আড্ডা ভেঙে দিই। একদিন গ্রামের একটি বাড়ি থেকে ১০ লিটার মদভর্তি একটি পাত্র পাই এবং ওই বাড়ির চারদিকে তা ঢেলে দিই।
এরপর একদিন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুর রহমানের নেতৃত্বে গ্রামের মণ্ডপঘরে কমিউনিটি পুলিশের এক জরুরি সভা হয়। ওই সভায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিক, গ্রামের যুবক-পুরুষ-মহিলা উপস্থিত হন। সভায় এই মাদক সমস্যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। আলোচনার পর আমরা নারীদের এই ঐক্যকে আরো শক্তিশালী করার জন্য সংকল্পবদ্ধ হই। এ থেকেই আমাদের সংগঠনের জন্ম। মশাল নিয়ে মিছিল করে আমাদের আন্দোলন শুরু হওয়ায় সংগঠনের নাম নির্ধারিত হয় 'মৈরা পাইরী মহিলা সমিতি'। 'মৈরা পাইরী'র অর্থ হচ্ছে 'মশাল প্রজ্বলিত'।
বর্তমানে আমরা শুধু মাদকবিরোধী আন্দোলনই করছি না, আমাদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত করেছি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, বাল্যবিবাহ নিরোধ, যৌতুক প্রথা বন্ধ, ছেলেমেয়েদের সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে তাদের স্কুলে পাঠানো ইত্যাদি। এ কারণে সংগঠনের নামেও কিছুটা পরিবর্তন এনে করা হয়েছে 'মৈরা পাইরী সমাজকল্যাণ সংস্থা'। এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে মৌলভীবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মুহা. আলকামা সিদ্দিকী, কমলগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. হাজেরা খাতুন, স্থানীয় সাংবাদিক ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আমাদের মশাল মিছিলে অংশ নিয়েছেন। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সকারের সময় থেকেই আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা পাওয়া শুরু করি।
বর্তমানে আমাদের এলাকায় মাদকসেবীদের উৎপাত অনেক কমেছে। কেউ কেউ নতুনভাবে করার চেষ্টা করলে সেখানেও আমরা তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ে তুলি। ফলে এলাকার নারী ও সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে আছে।
বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বামীরাই এ নির্যাতন করছেন। স্ত্রীরা ঘর-সংসারের কথা চিন্তা করে চুপ থাকেন। গ্রামের নারীরা শিক্ষাদীক্ষায়ও পিছিয়ে। তাই তাদের পুরুষের বশ্যতাই স্বীকার করে নিতে হয়। কোনো কোনো সময় নির্যাতনের মাত্রা যখন সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখন অনেক নারী নীরবে গলায় দড়ি দেন, কেউ বা বিষ পান করেন। পুরুষ সমাজপতিরাও নারীদের ওপর জুলুম-অত্যাচার চালিয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। আমাদের কমলগঞ্জের নূরজাহানের আত্মহত্যার কথা সবাই জানেন। অপরাধ না করলেও সমাজপতিরা বিচারের নামে প্রহসন করে নূরজাহানকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেয়।
আমি মনে করি, শিক্ষিত হোক আর অশিক্ষিত হোক নারীরা যদি সংগঠিত হয়, তাহলে পুরুষের নির্যাতন ঠেকানো সম্ভব। তা ছাড়া আমাদের লোকসংখ্যার অর্ধেকই নারী। নারীসমাজ জাগ্রত হলে দেশের উন্নতি হবে। আমার প্রত্যাশা, সারা দেশের প্রতিটি গ্রামে নারীরা সংগঠিত হবে। যেকোনো অন্যায়ে তারা প্রতিবাদ করবে। সমাজও নারীকে তার যোগ্য মর্যাদা দেবে। শুনেছি দেশে নারী অধিকারের জন্য অনেক আইন আছে। সেসব আইন সঠিকভাবে কার্যকর হয় না বলেই নারী নির্যাতন কমছে না। নারীদের অধিকার নিশ্চিত করতে আইনের যথাযথ প্রয়োগ হবে_একজন নারী হিসেবে এটাও আমার প্রত্যাশা।
সৌদামিনী শর্মা : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামের এক গৃহবধূ। মাদকবিরোধী আন্দোলনের স্বীকৃতিস্বরূপ বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে 'এসো বাংলাদেশ গড়ি' রোড শো উপলক্ষে মৌলভীবাজার জেলা সদরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে 'সাদা মনের মানুষ' হিসেবে সৌদামিনীকে পুরস্কৃত করা হয়।
অনুলিখন : আবদুল হামিদ মাহবুব, মৌলভীবাজারhttp://www.kalerkantho.com/~dailykal/index.php?view=details&archiev=yes&arch_date=17-01-2011&type=gold&data=news&pub_no=396&cat_id=5&menu_id=129&news_type_id=1&index=7#.UWG1c6KBlA0
অবৈধ ক্ষমতা দখলে বাঙালি নারী অংশীদার নয়মাসুদা ভাট্টি
বাংলাদেশ নানা দিক থেকে 'ইউনিক'_স্বীকার করতে দ্বিধা নেই। যেমন বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ব-দ্বীপ, পলিবাহিত এ ভূখণ্ড আসলে প্রকৃতিবিদদের কাছে সব সময়ই ভিন্নতর মাত্রায় উল্লেখযোগ্য ছিল। প্রকৃতিগত দিক যদি বাদও দিই, তাহলে এর অধিবাসীদের প্রকৃতিগত দিকটিও বিস্ময়কর। যদি স্মৃতি প্রতারণা করে না থাকে তাহলে এ কথা কোনো এক নৃ-তত্ত্ব গবেষণায় জেনেছিলাম যে বাঙালি পৃথিবীর সবচেয়ে সংকরতম জাতি। আমাদের জেনেটিক কোডে পৃথিবীর প্রতিটি অংশের মানুষের জেনম রয়েছে, যা বাঙালিকে ভিন্নতর করেছে নানা দিক থেকে। ১০ জন বাঙালিকে একত্রে দাঁড় করানো হলে আকার-প্রকারের তারতম্য চোখে তো পড়বেই, সেই সঙ্গে আচরণগত তারতম্যের প্রাবল্যও লক্ষ করা যাবে সমানভাবে। এমনকি জাতীয় চরিত্র-বৈশিষ্ট্যের কথা বলতে গেলেও আমাদের সে রকম কোনো জাতীয় চরিত্র-বৈশিষ্ট্য আছে কি? মনে হয় না। এ ভূখণ্ডের মানুষ আরব থেকে আসা ধর্মটি গ্রহণ করেছে ঠিকই, কিন্তু সেই সঙ্গে ছাড়তে পারেনি এই মাটির লোকায়ত সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যও। আধুনিকতা আমাদের স্পর্শ করেছে; কিন্তু বাঁধতে পারেনি, ধর্ম কিংবা কুসংস্কার আমাদের প্রতিনিয়তই টেনে রাখছে পেছনে। সর্বত্রই এই টানাপড়েন লক্ষ করা যায়। এত কথা বলার একটাই উদ্দেশ্য তা হলো, এই দেশের এত বৈচিত্র্য ও ভিন্নতা এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রাবল্য সত্ত্বেও বিগত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে নারীর হাতে_এও কি কম বিস্ময়ের ব্যাপার?
খুব বেশি দিন হয়েছে কি এই ভূখণ্ডে নারীকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনা ঘটেছে? এমনকি এখনো যে এই ভূখণ্ডেই নারীকে পাথর ছুড়ে হত্যা করা হচ্ছে না তা-ই বা দিব্যি করে বলি কী করে? এত সব দ্বৈততা এবং বাধার মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশে শাসনক্ষমতায় নারীর অধিষ্ঠান সত্যি সত্যিই বিস্ময়ের জন্ম দেয়। তা নিন্দুকরা যতই এই শাসনকারী নারীদের কোনো পুরুষ শাসকের কন্যা বা স্ত্রী হিসেবে পরিচিতি দিতে চান না কেন। সত্য তাতে বদলায় কি? মোটেও না। বেগম রোকেয়ার অন্তরালের নারী যে মাত্র এক শতকেই এতটা এগোবেন, তা গবেষকদের জন্য রীতিমতো গবেষণার খোরাক হওয়া উচিত। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার পরও নারীর ক্ষমতায়ন কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী অথবা নারী জাগরণের মতো তথাকথিত 'জার্গন'গুলো আর এই দেশে প্রযোজ্য থাকে কি না? পশ্চিমে সাধারণত এসব বিষয় মানুষকে খুব একটা প্রভাবিত করে না, কেবল মিডিয়ায় এসব কথা উচ্চারিত হয়, কিন্তু প্রাচ্যে সর্বত্রই আলোচনা এবং উন্নয়নকর্মী ও সংস্থার 'ফান্ডিং'-এর ক্ষেত্রে জরুরি বলেই তা এতটা প্রাধান্য লাভ করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম হওয়ার কথা থাকলেও কেন হয়নি, বিশেষ করে নারী ক্ষমতার শীর্ষে থাকার পরও তার কারণ খুঁজে দেখার প্রয়োজন, আমাদেরই স্বার্থে। আমাদের বলতে, এখানে নারী ও পুরুষ উভয়ের কথাই বোঝানো হচ্ছে।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিশ্বের নামকরা গণমাধ্যমে একটি বাক্য খুব জনপ্রিয় হয়েছিল বাংলাদেশকে নিয়ে, তা ছিল 'ব্যাটল অব টু বেগমস' এবং অন্যে যে যাই-ই বলুক না কেন, মাইনাস টু থিওরি আসলে ছিল বাংলাদেশের শাসনক্ষমতা থেকে দুই নারীকে সরানোরই পাঁয়তারা। কারণ, এখনো সমাজের উচ্চবিত্ত কিংবা ক্ষমতাসীনদের আড্ডায় এ কথা জোরেশোরেই শোনা যায় যে এই দুই নারীর জন্যই আসলে দেশের এ অবস্থা। অথচ এ প্রশ্ন তোলার প্রয়োজনীয়তা কেউই বোধ করেন না যে এই দুই নারী পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে এলেও তাঁরা কেউ রাষ্ট্রক্ষমতা জোর করে দখল করেননি। বরং তাঁরা নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছ থেকে ক্ষমতা লাভ করেছেন। জনগণই তাঁদের দেখতে চেয়েছে। হতে পারে তাঁরা দুই রাজনৈতিক শিবিরের প্রতিনিধি, কিন্তু তাতে কি তাঁদের নারী-পরিচয় মিথ্যে হয়ে যায়? যায় না। আবার এ কথাও সত্য, এই নারীদ্বয় বাংলাদেশের নারীর সামগ্রিক অবস্থার পরিচয় বহন করেন না এবং তাঁদের অবস্থান দিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ নারীর অবস্থানকে ব্যাখ্যা করলে বিরাট বড় ভুল হবে। অথচ বিগত দুই দশকের নারী শাসনে এই ভুলটিই দূরীভূত হওয়াটা বাঞ্ছনীয় ছিল। কেন হয়নি, সে প্রশ্ন তোলাটাও অত্যন্ত জরুরি।
শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুকন্যা এবং প্রথম থেকেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে তিনি যখন আওয়ামী লীগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন তাঁর বঙ্গবন্ধুকন্যার পরিচয়টি মুখ্য থাকলেও রাজনীতিতে তাঁর অংশগ্রহণ ব্যাখ্যার অতীত বিষয় ছিল না। কিন্তু যত দূর জানা যায়, আওয়ামী লীগের পুরুষ নেতৃত্ব কেবল শেখ হাসিনাকে শিখণ্ডী হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন তখন এবং অনেক জাঁদরেল নেতাই শেখ হাসিনাকে দল পরিচালক হিসেবে চাইলেও রাষ্ট্রের পরিচালক হিসেবে দেখতে চাননি। ফলে তাঁরা কেউ ছিটকে গেছেন দলীয় কর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়ে, কেউ বা থেকে গেছেন এবং সুযোগের অপেক্ষায় থেকেছেন ১/১১ পর্যন্ত। এখনো তাঁরা সে সুযোগের অপেক্ষায় নেই_সে কথা জোর দিয়ে বলা যাবে না। ফলে শেখ হাসিনাকে এগোতে হয়েছে অনেক হিসাব কষে। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার জাল কেটে খুব সাবধানে পা ফেলে তিনি এগিয়েছেন, যে কারণে নারীর প্রতি তিনি 'এঙ্ট্রা' নজর দিতে পেরেছেন বলে প্রতীয়মান হয় না। আবার এ কথাও সত্য, ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর তিনি পুরো সমাজকেই একভাবে দেখার প্র্যাকটিস করে থাকতে পারেন, নারী বা পুরুষকে আলাদা করে দেখাটা হয়তো পক্ষপাতিত্ব হতো, এটাও মাথায় রাখাটা জরুরি_শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে বিশ্লেষণ করতে গেলে। বাংলাদেশের মতো সমাজব্যবস্থায় যেখানে নারীকে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র মিলে কখনো ধর্ম, কখনো ঐতিহ্য বা কখনো কেবল পুরুষের ইচ্ছা দিয়ে 'কন্ট্রোল' করার চেষ্টা চলে, সেখানে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের প্রধান হয়ে যখন বিপুলসংখ্যক পুরুষের হাত দিয়ে নীতি বাস্তবায়ন করতে যাবেন, তখন তাঁকে নিঃসন্দেহে দুইবার ভাবতে হবে তাঁর গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে। এ কথা তাঁর দল আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে যেমন প্রযোজ্য, তেমনি প্রযোজ্য দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রেও।
খালেদা জিয়াও এর ব্যতিক্রম নন। খালেদা জিয়া জিয়াউর রহমানের স্ত্রী, কিন্তু তাঁর সে পরিচয় মুখ্যত হারিয়েছে নব্বইয়ের দশকে_যখন তিনি বিএনপির মতো একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্মের একচ্ছত্র নেতা হন। জিয়া এখানে কেবল ছবি হিসেবে ঝুলে থাকেন, কিন্তু বেগম জিয়া হন এর পরিচালক। মজার ব্যাপার এবং এ ক্ষেত্রে বেগম জিয়া এককভাবে ধন্যবাদার্হ যে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের দোহাই দিয়ে বিএনপি যে রাজনৈতিক প্লাটফর্মটির নেতৃত্ব দেয়, তাতে নারী নেতৃত্বই আসলে থাকার কথা নয়। কিন্তু বেগম জিয়া নিজেকে ঠিক সেই পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে পেরেছেন এবং জামায়াতে ইসলামী বা ইসলামী ঐক্যজোটের মতো নারীর প্রতি অত্যন্ত কদর্য ও হিংস্র মনোভাব পোষণকারী ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে তিনি রাজনৈতিক স্বার্থ আদায়ে নারী নেতৃত্বকে মেনে নিতে বাধ্য করেছেন। বেগম জিয়াকে এ জন্য শুধু ধন্যবাদই নয়, বরং আমি মনে করি যে বেগম জিয়াই পারবেন এসব জটিল-কুটিল ধর্মীয় মানসিকতার শিকার থেকে বাঙালি নারীকে মুক্ত করতে। তিনি নিজে যেমন তাঁর ব্যক্তিগত জীবনকে মুক্ত রাখতে পেরেছেন এসব জটিলতা থেকে। ধর্মীয় বা সামাজিক বাধা যে নারীর অগ্রসরমাণতায় অনেক বড় বাধা সে কথা বেগম জিয়া ও শেখ হাসিনা দুজনই ভালো করে জানেন এবং বোঝেন। আমরা বিশ্বাস করি, তাহলে এই বাধা দূরীকরণের পদক্ষেপও তাঁদেরই গ্রহণ করা উচিত, নয় কি?
আজকে লাতিন আমেরিকার নারী নেতৃত্ব বিশ্বের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে, কিন্তু বাংলাদেশে বিগত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে নারী নেতৃত্ব কেন অনালোচিত থাকবে যখন বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে মডারেট মুসলিম স্টেট হিসেবে পরিচয় করানো হচ্ছে? বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচয় কী, সেটা শেখ হাসিনার সরকার ইতিমধ্যেই ঠিক করেছে বলে মানি। বাংলাদেশ একটি সেক্যুলার রাষ্ট্র, কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের রাষ্ট্র এটি নয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশ একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যেখানে নারী-পুরুষনির্বিশেষে গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে_এ রকমই তো বাংলাদেশের পরিচয় হওয়া উচিত, তাই না? কিন্তু আমরা কেন এক বাক্যে এ রকম পরিচয় তুলে ধরতে পারছি না, কেন এখনো নারী স্বাধীনতা, নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার ইত্যাদি বিভেদমূলক প্রশ্ন নিয়ে লড়ে যাচ্ছি, সে প্রশ্নের উত্তরও আমাদের খোঁজা উচিত দুই ক্ষমতাসীন নারীর কাছে। বর্তমান সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন নারী, কিছু দিন আগে সরকারের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি জানালেন, এই প্রথম প্রশাসনেও লিঙ্গ-সাম্যতা আনার কথা ভাবছে সরকার। ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোতে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক মুক্তিতেও নারীর জন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং হবেও_সব মিলিয়ে নারীর জন্য আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তবে এ লেখায় বারবার 'নারী' শব্দটি উচ্চারণ করতে হতো না, যদি আমরা নারী কিংবা পুরুষ নয়, শুধু মানুষ হিসেবে ভেবে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়টিকে ভাবতে পারতাম। সে যাই-ই হোক, বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়ন কিংবা নেতৃত্ব নিয়ে দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা কিছু না ভাবুন, তাতে আপত্তি নেই, কিন্তু একটি কথা তো তারা স্বীকার করবেন, কোনো দেশেই নারী অন্তত অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে না, বাংলাদেশেও উচ্চ আদালত অবৈধ শাসকদের ক্ষমতাকালকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন, সুখের কথা হলো, এতে নারীর সামান্যতম অংশগ্রহণ নেই। বরং এ কথা জোর দিয়েই বলতে পারি, গণতন্ত্রায়ন বলি আর জনগণের ভোটের অধিকারই বলি, দুয়েই বাংলাদেশের নারী নেতৃত্বই বারবার সফল জয়ের প্রমাণ রেখেছে। এর সুফল কেবল নারী বা পুরুষ নয়, দুয়ের মিশ্রণে জনগণই ভোগ করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। বাঙালি নারীর এর চেয়ে বড় অর্জন আর কী হতে পারে? নারী বিজয়িনী।
লেখক : কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক
সম্পাদক, একপক্ষ editor@ekpokkho.comhttp://www.kalerkantho.com/~dailykal/index.php?view=details&archiev=yes&arch_date=17-01-2011&type=gold&data=news&pub_no=396&cat_id=5&menu_id=129&news_type_id=1&index=9#.UWG1sqKBlA0
No comments:
Post a Comment