আশি বছরের একটি লাল গোলাপ
মিনার রশীদ
আমাদের সবার প্রিয় শফিভাই আজ আশি বছরে পা রেখেছেন । লাখো লাখো ভক্তদের পক্ষ থেকে তার (চন্দ্রবিন্দুর ব্যবহার তিনি পছন্দ করেন না) জন্যে লাখো লাখো লাল গোলাপের শুভেচ্ছা।
মাঝে মাঝে মনে প্রশ্ন জাগে , শফিক রেহমান সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য অবস্থানটি ছেড়ে বর্তমান অবস্থানটি বেছে নিলেন কেন? দেশের প্রায় সকল সুশীল ও বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় যে জায়গাটিতে থাকতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন তিনি সে জায়গাটি থেকে স্বেচ্ছায় বেরিয়ে এলেন কেন? সময়ের সাথে সামান্য তাল মিলিয়ে চললে নিজের অমর সৃষ্টি যায় যায় দিনকে এভাবে হারাতে হতো না। সারা বছর কঠিন সমালোচনা করে সময় মতো শিরোনাম করতেন, প্রধানমন্ত্রী আপনাকে ধন্যবাদ। এই এক লেখায় সারা বছরের পাপের কাফফারা হয়ে যেতো। বোকা দেশবাসীও অসময়ের গতি এই মতি ভাইদেরকে জয় আর জিন্দাবাদের ককটেল দিয়ে বরন করে নিতো!
এই ধরনের বুদ্ধি বা মগজ আল্লাহ তাকে অন্য যে কারও চেয়ে কম দিয়েছেন তা বলা যাবে না। তিনি জাফর ইকবালের চেয়েও আরো সুকৌশলে, আরো সুন্দর ভঙ্গিতে এবং আরো সাদাসিদে স্টাইলে বলতে পারতেন যে তিনি রাজনীতি বুঝেন না। এটা বলেও জাফরের চেয়েও বড় রাজনীতি তিনি এদেশে করতে পারতেন। জাফরিয় স্টাইলে এত্তো বড় পলিট্রিক্স করেও সুশীল হিসাবে সকলের মধ্যমনি হয়ে থাকতে পারতেন। সেই বুদ্ধি, সেই কারিশমা তার মধ্যেও যথেষ্ট পরিমানে ছিল এবং এখনও অাছে।
কমপক্ষে অর্ধ শতাধিক লেখায় জাফর ইকবাল বলেছেন 'আমি রাজনীতি বুঝি না'। আশা করি, যতদিন পদ্মা-মেঘনা- যমুনা থাকবে বহমান, ততদিন জাফর ইকবালের এই ভনিতাটিও থাকবে চলমান। কিন্তু শফিক রেহমানের শত সহস্র লেখার কোথাও এই ভনিতাটুকু দেখতে পাবেন না।
দুই যুবকের একজন যুবতী মেয়েদের সংস্পর্শে গেলে যৌবনের উন্মাদনা অনুভব করেন বলে স্বীকার করেন। অন্যজন প্লেটোনিক ব্যাপার স্যাপার অনুভব করেন - শরীরবৃত্তিয় কিছু অনুভব করেন না বলে দাবি করেন। এখন এই দুজনের কোন জনকে আপনি 'রাম-ছাগল' বলবেন তা একান্তই আপনার মর্জি ।
জাফর ইকবাল গং তাদের পাঠককে বোকা
মনে করে নিজেদেরকে অত্যন্ত বুদ্ধিমান ঠাহর করেন। আর শফিক রেহমান তার পাঠককে অত্যন্ত প্রাজ্ঞ জ্ঞান করেই প্রতিটি আর্টিকেল লিখে থাকেন।
তিনি যুক্তি এবং তথ্য এমন সুন্দর ও হিউমারাস ভঙ্গিতে উপস্থাপন করেন তা আবেদ খান ও গাফফার চৌধুরীদের সরাসরি গালির চেয়েও হাজার টন ভারি হিসাবে টার্গেটকে আঘাত করে।
আবেদ খান তার সর্বশেষ কলামটিতে বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি তারেক রহমানকে 'অকাল কুষ্মান্ড' বলে গালি দিয়েছেন। নিজের বক্তব্যটি বিএনপি ঘরানার পাঠকের কাছে গ্রহনযোগ্য করার জন্যে এই আবেদ খান কিছু কাল্পনিক বিএনপি নেতাদের হাজির করেছেন। এই সব বিএনপি নেতারা নাকি তারেকের এই সব উচ্চারন নিয়ে নিদারুন অস্বস্তিতে ভুগছেন !
বিএনপি নেতাদের এই ধরনের হাহুতাশ প্রায়ই শুনেন শুধু আবেদ খান, গাফফার চৌধুরী এবং প্রথম আলোর সোহরাব হাসান। তারেক রহমান বিএনপিকে শেষ করে দিচ্ছেন এটা নিয়ে শুধু আবেদ খানেরই দুশ্চিন্তা হচ্ছে তা নয় - বিএনপির এই ক্ষতি হচ্ছে দেখে আওয়ামী লীগ নেতা নাসিমদেরও ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
কিন্তু আওয়ামী লীগের কোন নেতা এসে শফিক রেহমানের কাছে হাহুতাশ করেছেন, এমন উর্বর মস্তিস্কের লেখা কখনই তার কলম থেকে বের হবে না। তিনি কোন কিছু লিখতে চাইলে এবং তার পাঠককে তা বিশ্বাস করাতে চাইলে তা সম্পূর্ণ নিজের শক্তির উপর ভরসা করেই লিখেন।
আচার আচরনে শতভাগ সেকুলার হলেও ধর্মকে খোচা মেরে বিখ্যাত হওয়ার সহজ পদ্ধতি তিনি তার ক্যারিয়ারের কোন সময়েই গ্রহন করেন নি। সত্যকে সত্য বলার দুঃসাহস তার মধ্যে রয়েছে। তিনি এখন মৃত্যুদন্ডের ব্যাপারে একটি সিরিজ লেখা লিখছেন। এতে জামায়াতে ইসলামী বেনেফিটেড হতে পারে এই ভয়ে অন্যান্য মতলববাজ মানবতাবাদীদের মত তিনি পিছিয়ে আসছেন না। কেউ তাকে রাজাকার মনে করতে পারে এই ভয়ও তিনি পাচ্ছেন না। একাত্তর সালে যার বয়েস ছিল ছয় বছর জামায়াতের এমন এক নেতাকে যুদ্ধাপরাধী বানানোর বিরুদ্ধে তিনিই কলম ধরেছেন।
শফিক রেহমানকে যারা পছন্দ করেন তারা এই কারনেই করে থাকেন। অাবার যারা অপছন্দ করেন তারা ঠিক এই একই কারনে তা করে থাকেন।
একদিকে বিবেকহীন ও নির্লজ্জ দলবাজি / মতলববাজি অন্যদিকে নিরপেক্ষতার নামে চরম সুবিধাবাদ আমাদের বুদ্ধিবুত্তিক জগতটিকে পুরো বিভ্রান্তিতে ফেলে দিয়েছে। পাছে লোকে কিছু (রাজাকার) বলে এই ভয়ে আমরা সত্য বলতে ভয় পাই। একজন ইন্টেলেকচুয়ালকে যদি ভাবতে হয় এই সত্য কথাটি বলে ফেললে তাকে অমুকপন্থী মনে করা হবে - চিন্তার ক্ষেত্রে এমন দৈন্যতা আর কিছু নেই। এমন দুর্বলচিত্তের জন্যেই আমাদের আজ এই করুণ পরিণতি হয়েছে। অর্ধ উন্মাদ বা বদ্ধ উন্মাদকেও তার উন্মাদনার জন্যে প্রশংসা করতে হয়। শারমিন আহমদ সংগত কারনেই দুঃখ করে বলেছেন, সত্য বললেই আজ রাজাকার ।
চিন্তার এই ভ্রান্তি থেকে পুরো জাতিকে রক্ষার জন্যে শফিক রেহমানের মত ব্যক্তিত্বের আজ খুবই প্রয়োজন।
কাজেই আশিতম জন্মদিনে পরম করুণাময়ের কাছে তার দীর্ঘ জীবন কামনা করছি। সুস্থ্য দেহ ও মন নিয়ে তিনি যেন আরো অন্ততঃ দশটি বছর আমাদের মাঝে বেচে থাকতে পারেন এই আজ কামনা।
তার সকল ভক্তদের প্রতি অনুরোধ, এই ধরনের কন্ঠকে আজ বাজিকরেরা তাদের হরেক রকমের বাজি দিয়ে সাইলেন্স করে রাখতে চাচ্ছে। কাজেই আসুন সবাই বলি,
http://www.bdmonitor.net/newsdetail/detail/49/98077
No comments:
Post a Comment