এর পাশাপাশি সনিয়া ও রাহুলের প্রত্যাশাও পূর্ণ হল না৷ শেষ সময়ে চেষ্টা করেও জমি অধিগ্রহণ বিল পাশ করাতে পারেনি সরকার৷ এমন নয় যে,বিরোধীদের বিক্ষোভে ১০৬ ঘন্টা সময় বরবাদ হওয়ার জন্য সরকার এই বিলগুলি পাশ করাতে পারেনি৷ ঘটনা হল, বিল পাশের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া যায়নি৷ ফলে বিমা ও পেনশন ক্ষেত্রের সংস্কার আপাতত হচ্ছে না৷ বাজেট অধিবেশনেও যে হবে তেমন ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি৷
আসলে পেনশন ও বিমায় বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ানো ও অন্য সংস্কারমূলক পদক্ষেপ করা সম্ভব হত, যদি বিজেপি তা সমর্থন করত৷ এর আগে বিজেপি এই দুটি বিল সমর্থনের মৌখিক প্রতিশ্রুতিও সরকারকে দিয়েছিল৷ কিন্ত্ত পরে বিজেপি-র মধ্যেই এই নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়৷ পেনশন ও বিমা বিলে সরকারকে সমর্থন করলে দলের কী সুবিধা হবে সেই প্রশ্ন তোলেন যশবন্ত সিনহা, রবিশঙ্কর প্রসাদ-সহ একাধিক নেতা৷ তাঁদের মত ছিল, এখন এই বিল সমর্থন করলে বরং উল্টো ফল হতে পারে৷ বিমা ও পেনশনের সঙ্গে যুক্তদের কোপের মুখে পড়তে পারে দল৷ তাই বিজেপি শেষ সময়ে পিছিয়ে যায়৷
এর বিকল্প ছিল, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি-সহ বাকি সব সহযোগীদের সমর্থন নিয়ে বিলটি পাশ করা৷ কিন্ত্ত এই দুই দলের সমর্থন নিয়ে খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে ভোটাভুটিতে জিতেছে সরকার৷ বারবার এই একই কাজ করা সম্ভব নয়৷ কারণ, এরপর বহুজন সমাজ পার্টি সাফ জানিয়ে দেয়, সরকারি চাকরিতে পদোন্নতিতে দলিত ও আদিবাসীদের সংরক্ষণ বিল পাশ করাতেই হবে সরকারকে৷ আর সমাজবাদী পার্টি চাপ দিতে থাকে এই বিল পাশ করানো যাবে না৷ এই দ্বিমুখী চাপের নিট ফল হয়েছ, রাজ্যসভায় বিলটি পাশ হলেও লোকসভায় হয়নি৷ এরপর বহুজন সমাজ পার্টি পেনশন ও বিমা বিল পাশ করাতে আর সরকারের পরিত্রাতা হতে রাজি হত না৷ একই রকম ভাবে লোকপাল বিলও পাস করানো সম্ভব হয়নি সরকারের পক্ষে৷ আটকে গিয়েছে জমি অধিগ্রহণ বিলও৷
এর মধ্যে মনমোহন-চিদম্বরমরা এ জন্য খুশি হতে পরেন যে ব্যাঙ্কিং বিল পাশ করানো গেছে৷ এই বিলে বলা হয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নতুন বেসরকারি ব্যাঙ্কের লাইসেন্স দেওয়ার নীতি বদলতে পারবে৷ এত দিন বড় কর্পোরেট ও নন ব্যাঙ্কিং সংস্থাগুলিকে ব্যাঙ্ক স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হত না৷ এ বার বড় কর্পোরেটকে সেই অধিকার দিতে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক৷
তবে এর পাশাপাশি প্রধান বিরোধী দল বিজেপি-রও উল্লসিত হওয়ার কোনও কারণ নেই৷ কারণ, তাঁদের দলের বিভ্রান্তি, নেতাদের মতবিরোধ এই অধিবেশনে সামনে এসে পড়েছে৷ তার সবথেকে বড় উদাহরণ, কোটা বিল বা দলিত আদিবাসীদের সরকারি চাকরিতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সংরক্ষণ চালু করা নিয়ে৷ রাজ্যসভায় তাঁর দাবি মেনে নেওয়ার পর এই বিল সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেন অরুণ জেটলি৷ কিন্ত্ত লোকসভায় মুরলীমনোহর জোশী, রাজনাথ সিং, যোগী আদিত্যনাথরা জানিয়ে দেন, এই বিল সমর্থন করা সম্ভব নয়৷ করলে উচ্চবর্ণ ও অনগ্রসররা আর বিজেপি-কে ভোট দেবে না৷ তই লোকসভায় তাঁরা সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিলটি আটকে দিয়েছেন৷ একটা সময় বিজেপি-র পরিচিতি ছিল উচ্চবর্ণ ও ব্যবসায়ীদের দল বলে৷ মন্ডল রুখতে কমন্ডলকে হাতিয়ার করা বিজেপি-কে অটলবিহারী বাজপেয়ী, গোবিন্দাচার্যরা অনেক চেষ্টা করে সামাজিক ন্যায়ের পথে নিয়ে এসেছিলেন৷ কিন্ত্ত দেখা গেল, দলে সেই উচ্চবর্ণের প্রতাপ থেকেই গিয়েছে৷
দিল্লির ওই মেডিক্যাল ছাত্রীর ঘটনাটা যখন টেলিভিশনের পর্দায় দেখলাম, মুহুর্তের মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসের ওই রাতটা চোখের সামনে ফুটে উঠেছিল৷ সঙ্গে একটা তীব্র ঘৃণা আর অপরিসীম কষ্ট টের পেলাম৷ আহা রে! ছোট্ট একটা মেয়ে কতই বা বয়স? কী নির্মম, পাশবিক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে ওঁকে৷ খুব ইচ্ছা করছিল, হাসপাতালে ছুটে যাই, গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বলি, 'যে মনের জোর নিয়ে তুমি মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছো, আমি সেই জোরকে কুর্ণিশ করি৷ আর মঙ্গলময় ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি তিনি তোমাকে এই লড়াইতে জয়ী হওয়ার শক্তি দিন৷'
টিভিতে দেখলাম, হাজার হাজার মানুষ স্বতস্ফুর্তভাবে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে৷ তাঁরা প্রতিবাদ করছে৷ ওই কিশোরীর জন্য ন্যায় বিচার চাইছে মানুষ৷ এটাই তো স্বাভাবিক৷ এমন ঘৃণ্য অপরাধের তীব্র প্রতিবাদ না জানানো হলে, পুলিশ প্রশাসন নড়ে চড়ে বসবে না৷ সুবিচার পাবেন না নির্যাতিতা মহিলা৷ বদলে, সমাজের ঠাট্টা তামাশা আর তীর্যক উক্তি শিকার হতে হবে ওই মহিলাকে৷ যেন ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির ঘটনার জন্য দায়ী সেই মহিলাই৷
আমাদের সমাজের অদ্ভুত নিয়ম দেখুন, একজন মহিলার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে না পারলেও সেই মহিলা যদি বাইরে বেরিয়ে প্রতিবাদ জানায়, তাহলেই সে দোষী৷ আর এই মনোভাবের জন্যই মেয়েরা ভয় পায় ইভটিজিং, শ্লীলতাহানি বা ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ করতে৷ আমার উদাহরণটাই দেখুন, যখন, আমি নিজে গিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালাম, তখন পুলিশ, প্রশাসন আর মিডিয়ার একাংশ তো আমাকেই দোষী প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছিল৷ প্রথম প্রথম কিছুটা প্রতিবাদ হওয়ায় পুলিশ জোর কদমে তদন্ত শুরু করেছিল বটে৷ কিন্ত্ত, কিছুদিন যেতে না যেতেই সব ঝিমিয়ে গেল৷ এখন তো আমার 'কেস'টার কী অবস্থা সেটাই জানিনা৷ বিচার পাওয়ার বদলে আমি পেয়েছি পাড়া প্রতিবেশিদের টিকা টিপ্পনি৷ বেঁকা চাহুনি৷ ধর্ষণ শারিরীকভাবে একজন মহিলাকে যতটা ক্ষতি করে তার চেয়েও অনেক অনেক বেশি ক্ষতি করে মানসিকভাবে৷ জানেন, রাতে যখন একলা ঘরে কাঁদি, তখন মাঝে মাঝে মনে হয় কেন অভিযোগ জানিয়েছিলাম! এর থেকে সব যন্ত্রণা বুকে চেপে চুপ করে থাকলে হয়তো সমাজে মাথা তুলে চলাফেরা করতে পারতাম৷ বিশ্বাস করুন, টেলিভিশনে চোখ রেখে হাজারো মানুষকে ওই কিশোরির জন্য গলা ফাটাতে দেখে খুব আনন্দ হচ্ছে৷ অন্যদিকে তখনই মনে হচ্ছে, যদি আমার জন্য এরকমভাবেই পাশে দাঁড়াতো কলকাতা, তাহলে আজ হয়তো আমাকে অন্ধকারে মুখ লুকিয়ে থাকতে হত না৷ হয়তো আমার 'কেস'টা এভাবে ধামাচাপা পড়ে যেত না৷ আমার ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ একেবারে হয়নি বলছি না৷ কিন্ত্ত দিল্লির রাজপথ যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল কলকাতা তা করেনি৷ কেন করেনি, বলতে পারব না৷ অথচ ধর্ষণ তো ধর্ষণই৷
আজ দিল্লির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মেয়েরা একজোট হয়েছে৷ আমি তাঁদের বলব, অন্যের জন্য নয়৷ নিজের স্বার্থেই মহিলারা একজোট হোন৷ কারণ, ফেব্রুয়ারিতে আমার ধর্ষণ হয়েছে, দিল্লীর কিশোরি ধর্ষিত হয়েছে, কাল যে আপনি হবেন না তাঁর কোনও নিশ্চয়তা নেই৷
পোস্টারের এই বয়ানটাই বলে দেয় সবকিছু৷ মিছিল নগরী কলকাতার পথঘাট ট্রাম লাইন ফের জনজোয়ারে ভাসল, পায়ে পায়ে৷ তবে এবার কোনও রাজনৈতিক দলের পতাকা হাতে রাজপথে গুন্ডামি নয়৷ শনিবার বিকেলে ধর্মতলা যে জনস্রোত দেখলো তা এই শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পড়ুয়াদের উদ্যোগে৷ ফেসবুক আর এসএমএসে ছড়িয়ে পড়া প্রতিবাদের বার্তা এক লহমায় পাল্টে দিল পুলিশের হিসাব৷ সরকারি ভাবেই প্রায় ১৫০০০ মানুষ পথ হাটল ধর্ষণের বিরুদ্ধে৷ নিরাপত্তা আদায়ের দাবিতে৷ তারা কেউ স্কুলের ছাত্রী, কেউ আবার সদ্য কলেজের গন্ডি পেরিয়ে চাকরি পেয়েছেন৷
প্রাথমিকভাবে পুলিশ ভেবেছিল কতই বা জমায়েত হবে, ২০০ কিংম্বা মেরে কেটে ৫০০! কিন্ত্ত মিছিলের মাথা যখন তারামন্ডল ছাড়িয়েছে, তখনও পথচলাই শুরু করেনি ধর্মতলার ভিড়৷ রঙ বেরঙয়ের প্ল্যাকার্ড পোস্টার হাতে পড়ুয়াদের মুখে তখন একটাই শ্লোগান, 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস৷' এমন মিছিল শেষবার হয়তো রিজওয়ানুরের মৃত্যুর প্রতিবাদে লক্ষ্য করেছিল কলকাতা৷ কিন্ত্ত সংখ্যার দিক থেকে সেই হিসাবও তছনছ করে দেয় শনিবারের প্রতিবাদ৷ দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডে রাইসিনা হিলসে প্রতিবাদ দেখাতে গিয়ে জল কামানের তোড়ে ভেসে গিয়েও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই জারি রেখেছিল লক্ষাধিক আন্দোলনকারি৷ আর তাদের প্রতিবাদেই ভর করে ভাসল কলকাতাও৷ কিন্ত্ত এরই মধ্যে ছিল অনুশোচনাও৷ 'কেন পার্কস্ট্রিট কান্ডের সময় এই ভাবে প্রতিবাদে সরব হল না শহর?' প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়ছেন প্রেসিডেন্সির ছাত্র দেবদ্যুতি দাস৷ তাঁর অনুযোগ, 'তখন হয়তো সরাসরি এ রাজ্যের সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে রাজনৈতিক তকমা লাগাতে চাননি কেউ৷' যদিও এতে কোনও দোষ দেখছেন না তিনি৷ তাঁর কথায়, 'সরকারের সমালোচনা করা মানেই তো এখন হয় সিপিএম নয় তো মাওবাদী৷ তাই হয়তো এই তকমার ভয়েই আমরা পথে নামতে সংকোচ করেছিলাম৷ দেরিতে হলেও এই প্রতিবাদ দরকার ছিল৷'
শুধু দিল্লির ঘটনাই নয়, এদিনের মিছিলে বারে বারে উঠে এসেছে এ রাজ্য এমনকী এই শহরের ধর্ষণের খতিয়ানও৷ ধর্ষিতাকে প্যাকেজ দিয়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী৷ প্রতিবাদের পোস্টারে এই ক্ষোভও উগরে দিয়েছে পথ চলতি জনতা৷ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আকসা জাভেদ মিছিলে হাটতে হাটতেই বলেছেন, 'ক্ষতিপূরণ নয়৷ সরকার আগে নিরাপত্তার দিকটি নিয়ে ভাবনা চিন্তা করুক৷'
দিল্লির গণধর্ষণের খবর সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরেই প্রিয়াঙ্কা, অমনদীপ, শিবটেইনরা ফেসবুকে একটি পেজ খুলে বসে৷ তাঁদের মনে তখন দাউদাউ করে জ্বলছে প্রতিবাদের আগুন৷ 'কিছু একটা করা দরকার' কিন্ত্ত কী? ভেবেই পাচ্ছিলেন না বছর কুড়ির এই পড়ুয়ার দল৷ তারপর নন্দনচত্বরে প্রথম সকলে দেখা করে ঠিক করেন এই মিছিলের কথা৷ সেই মতো ফেসবুক আর এসএমএসে এই বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া৷ অমনদীপের কথায়, 'আমরা কখনই ভাবতে পারিনি এই ভাবে মানুষ পাশে দাঁড়াবেন৷ আমরা গর্বিত যে এই ভাবে এই শহর ধর্ষণের বিরুদ্ধে স্বতস্ফুর্তভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে৷'
মিছিল থেকেই কেউ দাবি জানিয়েছে ধর্ষকের ফাঁসির সাজার পক্ষে, কেউবা ধর্ষণের বিরুদ্ধে ব্যপক প্রচার চালানোর কথা বলেছেন৷ কিন্ত্ত এরই মাঝে এমন অনেকেই পথ হেঁটেছেন যারা শ্লীলতাহানীর প্রতিবাদ করতে গিয়ে মার খেয়েছেন৷ খবর পেয়ে সোনারপুর থেকে এসেছেন বছর তিরিশের এক যুবক৷ কয়েকদিন আগে তাঁর বোনের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন পাড়ার কয়েকজন যুবক৷ প্রতিবাদ করতে গেলে বেধরক মারধর খান তিনি৷ তাঁর অভিযোগ, 'পুলিশের কাছে গিয়ে বলাতে তাঁরা আমায় বিষয়টি মিটিয়ে নিতে বলেছিল৷ আমি রাজি না হওয়ায় পুলিশ আমায় বলেছিল ধর্ষণ তো আর হয়নি, বাড়াবাড়ি করছেন কেন?' তাই অবস্থার পরিবর্তন চেয়ে অগত্যা পা মেলানো সকলের সঙ্গে৷
পা মিলিয়েছেন অনিতাদেবীও৷ মেয়ে শর্মিষ্ঠা ফেসবুক থেকে জানতে পেরে মাকে জানায়, এক সঙ্গে লেক গার্ডেন্স থেকে ছুটে এসেছেন মিছিলে সামিল হবেন বলে৷ কিন্ত্ত সব থেকে আশ্চর্যের এই মিছিলে বিরক্তি নেই পথচারিদের৷ যাদের হাতে সময় আছে তাঁরা অনেকেই মিছিলে যোগ দিয়েছেন স্বেচ্ছায়৷ শুধু পার্কস্ট্রিট দিয়ে মিছিল যাওয়ার সময় অদ্ভুত এক মৌনতা বজায় রেখেছিল গোটা মিছিল৷
একদিনের ক্রিকেট 'অনাথ' হয়ে গেল। একদিনের ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন সচিন তেন্ডুলকর। ভারত-পাক সিরিজ শুরুর আগেই একদিনের ক্রিকেট থেকে এই অবসরের সিদ্ধান্ত সিন্ধান্তের খবর রবিবার সকালে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পেতেও দেশ জুড়ে আলোড়ন পড়ে যায়। শেষ হল ২৩ বছরের একদিনের ইিনংস। ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের পক্ষ থেকেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ওয়ান থেকে অবসর নিচ্ছেন সচিন।
একশো চুয়াল্লিশ ধারার মধ্যেই আজ ইন্ডিয়া গেটে বিক্ষোভে সামিল হন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ধর্ষণকারীদের কড়া শাস্তির জন্য আইন পরিবর্তনের দাবি জানান তিনি। গণধর্ষণকাণ্ডের প্রতিবাদে দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় আজও বিক্ষোভ চলে। সকালে বিজয়চকে পুলিসের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। পুলিস তাঁদের সরিয়ে দেয়। ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী আজ ফের তাঁদের সঙ্গে দেখা করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। রাইসিনা হিল ও দশ জনপথের সামনে গতকাল সারারাত যে সব আন্দোলনকারীরা ছিলেন তাঁদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিস। বাসে করে তাঁদের অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আজ রেল ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখায় এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই সংগঠনের সদস্যরা সংসদ ভবনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদের আটকে দেওয়া হয়। বিক্ষোভকারীদের রামলীলা ময়দান ও যন্তর-মন্তরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে পুলিস।
দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিচার পাচ্ছে না ধর্ষিতারা :ভারতের রাজধানী নয়াদিলি্লর ছয়টি জেলা আদালতে প্রায় ১ হাজার ধর্ষণ মামলা বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। বিচার বিভাগের দীর্ঘসূত্রতার কারণে ধর্ষণ মামলাগুলোর রায় হতে বেশ সময় লেগে যায়, যা ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য কাজকে উৎসাহিত করছে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। তাদের মতে, ধর্ষণ না কমে বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বিচার বিভাগের দীর্ঘসূত্রতা।
আইনজীবীদের মতে, অভিযুক্তের প্রতিরক্ষার কৌশল, অকারণ মামলা স্থগিত করা, সরকারি কেঁৗসুলির নিষ্ক্রিয়তাসহ বিভিন্ন কারণে এসব মামলা বছরের পর বছর ঝুলে থাকছে। ফলে ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীরা উপযুক্ত বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আইনজীবীরা বলছেন, ধর্ষণ কমাতে এসব মামলা দ্রুতগতিতে শেষ করা ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর নেই। এ সপ্তাহে দিলি্ল হাইকোর্ট পাঁচটি ফার্স্ট ট্র্যাক আদালতের অনুমোদন দিয়েছে। এসব আদালতে ধর্ষণ মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হলেই ধর্ষণ উল্লেখযোগ্য হারে কমবে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। এ বিষয়ে দিলি্ল হাইকোর্টের আইনজীবী পারভেজ সিদ্দিকী বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়, ধর্ষণের পর ৩ বছর পেরিয়ে গেছে অথচ দীর্ঘসূত্রতার কারণে আদালত ধর্ষিতার বয়ানও নেননি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি তিন মাসের মধ্যে ধর্ষিতার বয়ান নিয়ে দ্রুতগতিতে মামলা নিষ্পত্তি করে অভিযুক্তকে শাস্তি দেওয়া হয়, কেউ ধর্ষণ করতে সাহস পাবে না।
ধর্ষণের শিকার তিন বছরের শিশু :মেডিকেল ছাত্রীর ধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভের মধ্যে আবারও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিলি্লতে। এবার নরপশুর লালসার শিকার হলো তিন বছরের এক অবুঝ শিশু। সোমবার পশ্চিম দিলি্লর সাগরপুরা এলাকার একটি স্কুলে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষণকারী আর কেউ নয়, ওই স্কুল মালিকের স্বামী বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম। সোমবার ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটলেও জানাজানি হয় দু'দিন পর। ঘটনার পর অসুস্থ হয়ে পড়া শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করান তার অভিভাবক। সেখানে চিকিৎসকরা জানান, ধর্ষণের শিকার হয়েছে শিশুটি। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্কুলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম।
দিল্লির গণধর্ষণ কাণ্ডের ন্যায়বিচার চেয়ে দেশ জুড়ে চলা বিক্ষোভের মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্ডে ঘটনার বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠন করে তদন্তের আশ্বাস দেন। গতকাল সাংবাদিকদের সামনে এই ঘটনার মতো বিরল থেকে বিরলতম যৌন নিগ্রহের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত অপরাধীদের শাস্তি কঠোরতর করার আর্জি জানাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। দিল্লি সহ সারা দেশেই মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণেরও আশ্বাস দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যাঁরা প্রতিবাদে পথে নেমেছেন তাঁদের ন্যায্য দাবির প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে তিনি বলেন এই পরিস্থিতিতে স্থৈর্যের পরিচয় দেওয়ার আবেদন করেন। সারা দেশের পাশাপাশি তাঁর মন্ত্রক সহ কেন্দ্রীয় সরকারও রবিবার রাতের ঘটনাকে গভীর সংবেদনশীলতার সঙ্গে বিচার করছে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
শোনা যাচ্ছে বোর্ড সভাপতি শ্রীনিবাসনের সঙ্গে কথা বলার পরই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন লিটল মাস্টার। তিনি বোর্ড কর্তাদের, তাঁর দলের সতীর্থদের ও দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে দীর্ঘদিন থাকার জন্য। তাঁকে সব পরিস্থিতে সমর্থন করে যাওয়ার জন্য। সচিন জানিয়েছেন, অনেক ভাবনা চিন্তার পরই তিনি এই অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, তাঁর শরীর, মন আর একদিনের ক্রিকেটের ধকল নিতে পারছিল না। মাস্টার ব্লাস্টার জানান, বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদ্য হতে পেরে তিনি গর্বিত। তাঁর পাশে থাকার জন্য গোটা দেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছন তিনি। একইসঙ্গে ভারতীয় দলের তরুণ প্রজন্মকেও শুভেচ্ছা জানাতে ভোলেননি মাস্টার ব্লাস্টার । একদিনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেও এখনও টেস্ট ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যাবেন সচিন।
বিক্ষোভ আর প্রতিবাদে উত্তাল দিল্লীর উত্তপ্ত হাওয়া এখন ব্যাঙ্গালোরেও ছড়িয়ে পড়েছে। ক্রমেই আন্দোলিত হচ্ছে মুম্বাই, পুনেসহ অন্যান্য রাজ্য। রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে আমজনতা সব শ্রেণীর মানুষ তাদের মনের বিষেদাগার নিয়ে বেরিয়ে আসছেন রাস্তায়। গত সপ্তাহে ভারতের রাজধানী দিল্লীতে চলন্ত বাসে এক মেডিক্যাল পড়ুয়া তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে দেশটির বিভিন্ন স্থানে। এ পরিস্থিতি শুধুমাত্র একটি ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ নয়, বরং এ ঘটনা ভারতে এবার নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে এক অভূতপূর্ব জাগরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
রাস্তাঘাটে নারীর নিরাপত্তার দাবিতে আজ ব্যাঙ্গালোরে রাস্তায় নেমে এসেছেন প্রতিবাদমুখর সাধারণ জনগণ। যেকোনো স্থানে নারীদের প্রতি যেকোনো অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধীর দ্রুত বিচারের জন্য ভ্রাম্যমান আদালত, ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি বা অপরাধের শিকার নারীদের জন্য সাহায্য তহবিল গঠন ইত্যাদি নানা দাবি নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছে। নারীর অধিকার ও নিরাপত্তায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা চাই- এমন শ্লোগান নিয়ে শত শত নারী-পুরুষ ও ছাত্র-ছাত্রীরা একত্রিত হয় ব্যাঙ্গালোরের বাসাভানাগুঁড়িতে।
অপরদিকে, দিল্লীতে মানুষের প্রতিবাদ ও ক্ষোভের ভাষা ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে। ক্ষুব্ধ মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে ব্যাপক হারে। এ রাজধানী শহরে হাজার হাজার মানুষের প্রতিবাদ কর্মসূচী আজকের দিনটি নিয়ে টানা পঞ্চম দিনে গড়ালো। দিল্লীর এ পরিস্থিতি খুব শিগগিরই মিশরের তাহরির স্কয়ারের গণজাগরণের চেহারা পেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। গতকাল নানা শ্লোগানে মুখরিত হয়ে প্রতিবাদকারীরা দিল্লীর নর্থ ব্লক, সাউথ ব্লক, রেল ভবন এবং সুপ্রিম কোর্ট ভবনের চারদিকে বিক্ষোভ জানায়। এমনকি তারা বেশ কয়েকবার রাষ্ট্রপতি ভবনেও ঢোকার চেষ্টা করে। ওই তরুণী ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি তো বটেই, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নারী সমাজের অধিকার আদায় এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের কঠোর দাবি।
এদিকে, ভারতের নানা স্থানে ধর্ষণের ঘটনার টুকরো খবর নিয়মিত আসছে সংবাদমাধ্যমে। বছরের পর বছর ধরে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার হিসাব-নিকাশ নিয়ে বসে পড়েছেন অনেকেই। সম্প্রতি আবার অ্যাসোসিয়েশন ফর ডোমেস্টিক রিফর্মস (এডিআর) নামের একটি প্রতিষ্ঠান ভারতের সংসদ সদস্য ও বিধায়ক মিলিয়ে এমন আটজনের নাম প্রকাশ করেছেন যাঁদের বিরুদ্ধেই ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের মধ্যে কংগ্রেস, বিজেপি, সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজবাদী পার্টির নেতারাও রয়েছেন। সব মিলিয়ে, ভারতে উদ্ভূত এ পরিস্থিতি গোটা রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার একটা আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। সূত্র: বিভিন্ন ওয়েব পোর্টাল
বিশ্ব ক্রিকেটের 'সব পেয়েছির দেশের' বাসিন্দা সচিনের অবসর জল্পনা চলছিল বেশ কয়েকদিন ধরেই। শেষ মুহূর্তে অবসরের সিদ্ধান্ত এল এমন একটা দিনে যে দিন পাকিস্তান সিরিজিরে জন্য ভারতীয় দল নির্বাচন। ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ের পরেই সচিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর স্বপ্নপূরণ করে ফেলে ছিলেন। এরপর অন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শততম শতরানের মালিকও হয়েছেন। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সদ্য শেষ হওয়া টেস্ট সিরিজেও সেভাবে ফর্মে ছিলেন না।
ঢাকায় শেষ একদিনের ম্যাচ খেলেছিলেন সচিন। তাঁর বর্ণময় ক্যারিয়ারে তিনি ৪৬৩টি একদিনের ম্যাচ খেলেছেন। একদিনের ক্রিকেটে ১৮,৪২৬ রান করেছেন লিটল মাস্টার। একনিদেন কেরিয়ারে তাঁর সর্বোচ্চ রান ২০০। ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম দ্বিশতরান করা সচিনের এই ইনিংসটা আসে দক্ষিণ আফ্রিকা।
জীবন থেমে থাকে না, সময় থেকে থাকে না। সচিনের অবসরের পরেও ওয়ান ডে ক্রিকেট চলবে। ক্রিকেটাররা রঙিন জার্সি গায়ে মাঠে নামবেন। কিন্তু একের পর এক রেকর্ড গড়ে একদিনের ক্রিকেটকে সাফল্যের এভারেস্টে নিয়ে গিয়েছেন যিনি, তাঁর চিরকালীন অনুপস্থিতিটা একদিনের ক্রিকেটের রঙিন আবহকে কোথায় যেন বর্ণহীন করে দিল। আজকের দিনটা ওয়ানডে ক্রিকেটের হতাশার দিন। তবে সচিন পাঁচ দিনের ক্রিকেটে সাদা জার্সি চাপিয়ে দেশের পতাকা তুলে ধরবেন, সেটাই সান্ত্বনার। প্রথমে টি টোয়েন্টি, এবার ওয়ানডে, এরপর হয়ত---। থাক, আজকের আক্ষেপের দিনে হতাশা নয় সান্ত্বনা নিয়েই থাকাই ভাল।
৩৫ হাজার বর্গফুটের এই অফিসটি কেন্দ্রীয়ভাবে যেমন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তেমনি বুলেট প্রুফও। এ ভবন নির্মাণের দায়িত্বে ছিল রাজ্যের সড়ক ও ভবন বিভাগ। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ভবনের সব জানালা ও দরজায় লাগানো হয়েছে গুলি নিরোধক কাচ।
কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ওই দপ্তরে মন্ত্রিসভার বৈঠকের জন্য একটি বিশেষ কক্ষ রয়েছে। রয়েছে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য সিসিটিভি। দপ্তরটির নকশার খুঁটিনাটি দিক নিয়েও মোদি বেশ আগ্রহী ছিলেন বলে জানা গেছে।
প্রতিবাদ সত্যিই যে কোন সীমা মানে না, আজ আরও একবার প্রমাণ হল। কলকাতা আর দিল্লির মাঝের ১৪০০ কিলোমিটারের দূরত্বটা প্রতিবাদের হাত ধরে কোথায় যেন মুছে গেল। শনিবার দিল্লির ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে এক হয়ে গেল দিল্লি এবং কলকাতার রাজপথ। প্রতিবাদে সামিল হলেন কয়েক হাজার যুবক-যুবতী। শুধু দিল্লির ঘটনা নয়, রাজ্যেও একের পর এক ধর্ষণের ঘটনার বিরুদ্ধে স্লোগান তুললেন তাঁরা।
আজ রাত দশটা বাইশ মিনিট নাগাদ মৃদু ভূকম্পন অনুভূত হয় কলকাতায়। মৌসম ভবনসূত্রে খবর, ভারত-মায়ানমার সীমান্তে ভূপৃষ্ঠের ১১৫ কিলোমিটার গভীরে কম্পনের উত্সস্থল। রিখটার স্কেলে মাত্রা ৫.৭।
ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে এবং উত্তরবঙ্গের সব জেলায়। বাংলাদেশের কিছু এলাকাতেও ভূকম্পন অনুভূত হয়।
ঠিক তেমনকরেই রাজধানীর রাজমার্গের বিপ্লবের কম্পনও অনুভূত হলকোলকাতাতে। শনিবারের শীতের বিকেলের ধর্মতলা চত্বরের দখল নিল কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী, যুবক-যুবতীরা। দিল্লির পৈশাচিক ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে গর্জে উঠল মিছিল।
কোনও রাজনৈতিক দলের ডাকা মিছিল নয়। শহর-শহরতলির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিলে পা মিলিয়ে ছিলেন ছাত্রছাত্রীরা। হাতে মোমবাতি, মুখে স্লোগান।
তবে শুধু দিল্লির ঘটনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না এই মিছিল। রাজ্যেও যেভাবে একের পর ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চলেছে, তার বিরুদ্ধেও সরব ছিল শনিবারের প্রতিবাদ মিছিল।
কলকাতার বুকে ঘটে গেছে পার্ক স্ট্রিটের ঘটনা। বরানগর, কেতুগ্রাম, সাঁতরাগাছির ধর্ষণের ঘটনা এখনও জীবন্ত। শনিবারের মিছিলেও তাই এসে পড়েছে রাজ্যের একের পর ধর্ষণের ঘটনার প্রসঙ্গ। আতঙ্কিত তরুণীদের বক্তব্য, রাতে রাস্তায় বেরোতে ভয় পাচ্ছেন তাঁরা।
শুধু ধর্মতলা নয়, হাওড়া, দুর্গাপুর, চুঁচুড়াতেও ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছিল ছাত্রছাত্রীরা। সেই মিছিলেরও একই সুর। একই দাবি। ধর্ষণকারীদের আড়াল নয়, দিতে হবে কঠোরতম শাস্তি।
দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডে অবশেষে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে এগিয়ে এলেন সনিয়া, রাহুল। রবিবার বিক্ষোভকারীদের কয়েকজনের সঙ্গে মুখোমুখি বসে কথা বলেন তাঁরা। সনিয়া গান্ধির বাসভবন ১০, জনপথ রোডের এই বৈঠকে সনিয়া ও রাহুল গান্ধি ছাড়া উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী আরপিএন সিং ও কংগ্রেস নেত্রী রেণুকা চৌধুরী।
শনিবার রাইসিনা হিলের সামনে বিক্ষোভকারীদের উপর লাঠি চালায় পুলিশ। ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাস ও জলকামানও। দিল্লিতে চলন্ত বাসে ডাক্তারি ছাত্রীর উপর গণধর্ষণের প্রতিবাদে সরব ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা না বলে, প্রশাসন এ ভাবে বলপ্রয়োগ করে তাদের থামানোর চেষ্টা করায় নিন্দার ঝড় ওঠে। রাইসিনা হিলের সঙ্গে তুলনা আসে মিশরের তাহরির স্কোয়ারের। তারপরই বিক্ষোভকারীদের কয়েকজনের সঙ্গে রবিবার কথা বলল কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। গণধর্ষণ কাণ্ডের দ্রুত বিচারের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। ঠিক কতোদিনের মধ্যে অপরাধীর শাস্তি পাবে, সে বিষয়ে বিক্ষোভকারীরা জানতে চান। এ ভাবে কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া সম্ভব নয় বলে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে।
বৈঠক শেষে দশ জনপথের বাইরে অপেক্ষায় থাকা সাংবাদিকদের বিক্ষোভকারীরা জানান যে, মহিলাদের নিরাপত্তার অভাবের কথা সনিয়া গান্ধী স্বীকার করে নিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি দ্রুত পদক্ষেপ করার আশ্বাসও দিয়েছেন। তবে ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে আইন পরিবর্তন করতে কিছু সময় লাগবে বলে তিনি দাবি করেছেন বলে জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। "আমরা সনিয়াজি ও রাহুলজি-র সঙ্গে কথা বলেছি। ওঁরা আমাদের সব কথা শুনেছেন। তবে ধর্ষণের বিরুদ্ধে আরও কড়া আইন আনার যে দাবি আমরা রেখেছি, তার জন্য কিছু সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন তিনি।" মা-এর কথার সুরেই সুর মিলিয়েছেন রাহুলও। তবে অল্প সময়ের মধ্যে সবকিছু করে ফেলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তিনি। ক্ষোভ-বিক্ষোভের মাধ্যমেও কোনও সমাধান সূত্র বেরোবে না বলে দাবি করেছেন রাহুল।
এই বৈঠকের বিষয়ে আরপিএন সিং সাংবাদিকদের বলেন, "বিক্ষোভকারীদের দাবিমতো এই মামলার শুনানি ফাস্টট্র্যাক কোর্টেই হবে। দ্রুত বিচারের জন্য আদালতের কাছে আমরা প্রতিদিনের শুনানির আবেদন করব। তবে কতদিনে বিচার সম্পূর্ণ হবে, তার কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া সম্ভব নয়। বিক্ষোভকারীদের আরও দাবি ছিল, ধর্ষণের মামলায় অভিযোগকারিণীর বদলে অভিযুক্তকেই নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে।" পাশাপাশি শান্তি বজায় রাখার আবেদনও করেন তিনি।
ঠিক এক সপ্তাহ আগে দিল্লির রাস্তায় গণধর্ষিতা হয়েছিলেন এক তরুণী৷ তার পর থেকে প্রতিবাদে দেশ উত্তাল হয়ে উঠলেও গত দু'দিন ধরে অস্বাভাবিক ভাবে নীরব রাজনৈতিক মহল৷ রাজধানীর ক্ষমতার কেন্দ্রস্থল সাউথ ও নর্থব্লক দখল করে প্রতিবাদ দেখালেন হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী৷ কিন্ত্ত পক্ষাঘাতগ্রস্ত সরকার ও প্রশাসনকে নীরব দর্শক হয়ে থাকা ছাড়া আর কোনও ভূমিকায় দেখা গেল না৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দু'দফায় বৈঠক করে দিল্লিতে মেয়েদের মধ্যে নিরাপত্তার বোধ ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী৷ কিন্ত্ত প্রতিবাদকারীদের হাজার দাবি সত্ত্বেও কোনও বিবৃতি এল না প্রধানমন্ত্রীর দন্তর থেকে৷ পরপর দু'দিন রাষ্ট্রপতি ভবনের উঠোনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাল ক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরা৷ অথচ কয়েক মাস আগেও সক্রিয় রাজনীতিবিদ, বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দিক থেকেও কোনও সাড়া এল না৷ দশ জনপথের অন্দরমহল থেকে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে দায়িত্ব সেরেছেন সনিয়া গান্ধী৷ আর কংগ্রেসের 'ইয়ুথ আইকন' রাহুল গান্ধীর পাত্তাও পাওয়া যায়নি গত কয়েক দিনে৷
মোটে শুক্রবারই শেষ হয়েছে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন৷ তা সত্ত্বেও বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ দাবি করেছিলেন সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হোক৷ মেয়েদের বিরুদ্ধে অপরাধের শাস্তি আরও কঠোর করার দাবিতে আলোচনা হোক সংসদে৷ কিন্ত্ত সরকার সে দাবি উড়িয়ে দিয়েছে৷ যদিও প্রবল চাপে পড়ে রাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে বলেন, মেয়েদের বিরুদ্ধে অপরাধ কমাতে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা যায় কি না তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে সরকার৷ ঘটনার সাত দিন পর শনিবার রাতে সাসপেন্ড করা হয় পাঁচ পুলিশকর্মীকে৷ ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে দ্রুত এই মামলার নিষ্পত্তি করারও আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷
কিন্ত্ত গত দু'দিন ধরে প্রবল বিক্ষোভের সামনে বেআব্রু হয়ে গেছে কেন্দ্রীয় সরকারের নিষ্ক্রিয়তা৷ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সাক্ষাত্কার দিয়ে জানিয়েছেন 'দিল্লি ধর্ষণের রাজধানী' এ কথা মানতে কষ্ট হলেও সেটাই বাস্তব সত্য৷ কয়েক দিন আগে গভীর রাতে সফদরজঙ্গ হাসপাতালে গিয়ে ধর্ষিতা তরুণীকে দেখে এসেছিলেন সনিয়া গান্ধী৷ কিন্ত্ত ওই তরুণীর সামনে দাঁড়ানোর সাহস দেখাতে পারেননি শীলা৷ শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দেও দিল্লির নিরাপত্তাহীনতার কথা কার্যত স্বীকার করে নিলেন৷ 'আমি নিজে তিন মেয়ের বাবা৷ আমার নিজেরই আতঙ্ক হচ্ছে রাজধানীতে আমার মেয়েরা কীভাবে চলাফেরা করবে ভেবে,' বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ তারপরই বিক্ষোভকারীদের কাছে তাঁর সানুনয় অনুরোধ, 'দয়া করে আপনারা বাড়ি ফিরে যান৷ আপনারা যা বলতে চেয়েছেন তা সরকার বুঝতে পেরেছে৷ আপনাদের ক্রোধকে আমরা সম্মান করি৷'
কিন্ত্ত কাজ হয়নি তাতে৷ বস্ত্তত গত কয়েক দিনে সরকার ও প্রশাসনকে কার্যত পঙ্গু করে দিয়েছে দিল্লির এই স্বতঃস্ফর্ত প্রতিরোধ৷ বিক্ষোভকারীদের উপর বলপ্রয়োগ না করতে সরকারকে অনুরোধ করেন বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী৷ কিন্ত্ত সরকার এমন বিপাকে পড়লেও তার সুযোগ নিতে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে দেখা যায়নি বিরোধী নেতাদেরও৷ এই মুহূর্তে আসিয়ান সদস্য দেশগুলির একটি বাণিজ্যিক সম্মেলন চলছে দিল্লিতে৷ বিদেশি প্রতিনিধিদের সামনে দেশের এমন ছবি সরকারকে চরম অস্বস্তিতে ফেলছে আঁচ করেই শনিবার রাতের পর থেকে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামলেন সরকারের শীর্ষ মন্ত্রীরা৷
কিন্ত্ত ততক্ষণে রাজপথের জনতা নগ্ন করে দিয়েছে সরকার ও তার খড়মাটির কাঠামোটাকে৷
ধর্ষণে স্থানীয় এক সিপিএম নেতার ছেলে জড়িত শুনে প্রথমে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন ধর্ষিতার মা-বাবা৷ পরে এক স্কুলশিক্ষক সাহস জোগানোয় শুক্রবার বিকেলে তাঁরা কালিয়াচক থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন৷ কিন্ত্ত তার পর থেকে ছাত্রীটির মা'কেও টেলিফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ৷ থানা থেকে অভিযোগ তুলে না নেওয়া হলে, তাঁর অবস্থাও মেয়ের মতো হবে বলে শাঁসানো হচ্ছে৷ নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রী দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেও, পুলিশ শুক্রবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি৷
মেয়েটিকে শুক্রবার সকালে অবিন্যস্ত অবস্থায় কালিয়াচকের বালিয়াডাঙা মোড়ের কাছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে পড়ে থাকতে দেখতে পান স্থানীয় মানুষ৷ সে সময় তার জ্ঞান ছিল না৷ এলাকার বাসিন্দারাই শুশ্রষা করে তার জ্ঞান ফেরান৷ তার কাছ থেকে সমস্ত ঘটনা শুনে তাঁরাই কাছেই মেয়েটিকে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে পৌঁছে দেন৷ খবর ছড়িয়ে পড়তে মেয়েটির বাবা-মা বামনগ্রাম থেকে ছুটে আসেন৷ মেয়ের মুখ থেকে তাঁরা শোনেন যে ধর্ষণে জড়িতদের প্রধান পাণ্ডা আবুল কালাম সিপিএমের সুলতানগঞ্জ অঞ্চল কমিটির সম্পাদক আবদুর রউফের ছেলে৷
এতে তাঁরা ভয় পেয়ে যান৷ কাউকে কিছু না বলে মেয়েকে নিয়ে ওই দম্পতি ফিরে যান বাড়িতে৷ পরে তাঁদের প্রতিবেশী বামনগ্রাম হাই স্কুলের শিক্ষক হিজবুর রহমান তাঁদের বুঝিয়ে সাহয় দিয়ে কালিয়াচক থানায় নিয়ে যান৷ পুলিশ অভিযোগ গ্রহণ করে ধর্ষণের মামলা রুজু করেছে৷ পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই দুষ্কর্মে কালিয়াচক কলেজের প্রথম বর্ষের এক ছাত্র জড়িত৷ ধর্ষিতা মেয়েটিও জানিয়েছে যে সিপিএম নেতার ছেলে আবুল কালাম ছাড়াও তাকে তুলে আনার সময় সে মোকাব্বর শেখ নামে অপর এক জনের নাম শুনতে পেয়েছিল৷ ছাত্রীটি পুলিশকে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকালে বাড়ি থেকে সুজাপু্রে মাসির বাড়ি যাওয়ার পথে পাঁচ জন যুবক তাদের স্কুলের খেলার মাঠের সামনে থেকে তাকে একটি গাড়িতে তুলে নিয়েছিল৷ যে ঘরে তাকে রাখা হয়েছিল, তার নম্বর ৯ লেখা দেখে বুঝতে পারে যে তাকে হোটেলে তোলা হয়েছে৷ ওই ঘরেই সারা রাত তার উপর যৌন নিগ্রহ চলে৷ তাতে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল৷ সকালে তার চেতনা ফেরে জাতীয় সড়কের ধারে৷ মালদহের পুলিশ সুপার জয়ন্তকুমার পাল জানিয়েছেন, 'ঘটনার যে বিবরণ মেয়েটি দিয়েছে তাতে কিছু সংশয় তৈরি হয়েছে৷ তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে, না সে নিজেই ওই যুবকদের সঙ্গে গিয়েছিল, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে৷ তবে ধর্ষণের অভিযোগ হয়েছে বলে মেয়েটির মেডিক্যাল টেস্ট করানো হচ্ছে৷'
এদিনই মালদহে অপর একটি গণধর্ষণের খবর পাওয়া গিয়েছে রতুয়া থানার চাঁদমনি গ্রাম থেকে৷ বৃহস্পতিবার রাতে ৩০ বছর বয়সী এক গৃহবধূকে তাঁর বাড়ির কলতলা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে এক দল দুষ্কৃতী ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ৷ তাঁকে মারধরও করা হয়েছে৷ তাঁকে রতুয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ রাজ্যের তিন মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র, কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী ও রাজীব বন্দোপাধ্যায় এদিন বিকেলে তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন৷ পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ওই ঘটনাতেও অভিযুক্তরা সবাই পলাতক৷
দিল্লির ধর্ষণের বীভৎসতা এখনও সমান দগদগে। গত কয়েক দিন ধরে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদে উত্তাল সারা দেশ। এর মাঝেই গত বুধবার ত্রিপুরা
য় পৈশাচিক গণধর্ষণের শিকার হলেন এক গৃহবধূ।
পুলিস সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী পশ্চিম ত্রিপুরার বিশালগড়ে বুধবার রাতে দুষ্কৃতীরা ওই গৃহবধূকে বাড়ি থেকে জোর করে বের আনে। এরপর তিনি শিকার হন গণধর্ষণের। ধর্ষণের পরে পাঁচ বছরের শিশু পুত্রের মা ওই মহিলাকে নগ্ন করে নৃশংস ভাবে মারধর করে ওই ধর্ষকরা। এই নারকীয় ঘটনাটি ঘটে সর্বসমক্ষেই। কিন্তু কেউই ভয়ে ওই মহিলাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেননি।
ধর্ষিতা ওই গৃহবধূর অভিযোগ অনুযায়ী পুলিস সাত জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে মূল অভিযুক্ত সহ তিনজন এখনও ফেরার।
নিগৃহীতা মহিলার স্বামীকেও সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছে না ত্রিপুরা পুলিস।
ত্রিপুরার মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন পূর্ণিমা রায় পুলিসকে অবিলম্বে এই ঘটনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছেন।
বিশালগড় থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে আজ এই ঘটনার প্রতিবাদে একটি মিছিল হয়।
গত রবিবার রাতে দিল্লির চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হওয়া তরুণীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে সফদরজং হাসপাতাল তরফে জানানো হয়েছে। এদিন সকালে নতুন করে তাঁর বেশকয়েকটি পরীক্ষা করা হয়েছে।
সফদরজং হাসপাতালের সুপার বি ডি আথানি জানিয়েছেন, "আমরা তাঁর শারীরিক অবস্থার নিরিখে সমস্ত পরীক্ষা করেছি।" নিগৃহীতা তরুণীর অবস্থা জটিল রয়েছে বলেও জানিয়েছেন আথানি।
গতকাল চিকিৎকরা তাঁর স্বাস্থ্যের উন্নতি নিয়ে আশার বাণী শুনিয়েছিলেন। ২৩ বছরের ছাত্রীর চিকিৎসায় সাড়া দেওয়ার শক্তিকে কুর্ণিশও জানিয়েছিলেন ডাক্তাররা। তাঁরা আরও জানিয়েছিলেন, মেয়েটির মানসিক অবস্থাও স্থিতিশীল রয়েছে। তিনি কথাও বলে স্বাভাবিক ভাবে।
দিল্লির গণধর্ষণ কাণ্ডের ন্যায়বিচার চেয়ে দেশ জুড়ে চলা বিক্ষোভের মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্ডে ঘটনার বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠন করে তদন্তের আশ্বাস দিলেন। আজ সাংবাদিকদের সামনে এই ঘটনার মতো বিরল থেকে বিরলতম যৌন নিগ্রহের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত অপরাধীদের শাস্তি কঠোরতর করার আর্জি জানাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। দিল্লি সহ সারা দেশেই মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণেরও আশ্বাস দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যাঁরা প্রতিবাদে পথে নেমেছেন তাঁদের ন্যায্য দাবির প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে তিনি বলেন এই পরিস্থিতিতে স্থৈর্যের পরিচয় দেওয়ার আবেদন করেন। সারা দেশের পাশাপাশি তাঁর মন্ত্রক সহ কেন্দ্রীয় সরকারও রবিবার রাতের ঘটনাকে গভীর সংবেদনশীলতার সঙ্গে বিচার করছে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এক নজরে দেখে নেব তাঁর বক্তব্যের সারাংশ
দিল্লির গণধর্ষণ নিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্ত করা হবে।
ধৃতদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ সংগ্রহ করেছে পুলিস। খুব তাড়াতাড়ি চার্জশিট তৈরি করা হবে।
সরকার আদালতের আকাছে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্ট তৈরির আবেদন করেছে।
বিরল থেকে বিরলতম (যেমন দিল্লির ঘটনা) যৌন হেনস্থার ঘটনায় দোষিদের আরও কঠিন শাস্তির আবেদন করবে সরকার।
নিগৃহীতার চিকিৎসার ক্ষেত্রের সমস্তরকম সাহাজ্যের আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী।
রাতে যাত্রী পরিষেবা বাড়ানো হবে।
বাসের গতিবিধিতে নজরদারি বাড়াতে জিপিএস বসানো হবে।
বাসে চালক সহ সব কর্মীদের পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করা হল।
সারা শহরেই পুলিসি নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। রাতে বিশেষ করে বিনোদন কেন্দ্র বা কর্মক্ষেত্র অঞ্চলে পুলিসের সংখ্যা বাড়ানো হবে।
রাজপথ থেকে বিক্ষোভ তুলে নেওয়ার আর্জি জানান।
আজকের বিক্ষোভ থামাতে পুলিসের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে তদন্ত হবে।
তবে ধর্ষণে অভিযুক্তর কঠোর শাস্তি প্রণয়নের জন্য সংসদে বিশেষ অধিবেশনের প্রয়োজন নেই।
রবিবার রাতের ঘটনার তদন্তে যে সব পুলিসদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠবে তাঁদের বিরুদ্ধে বত্যবস্থা নেওয়া হবে। উচ্চপদস্থদেরও রেয়াত করা হবে না।
ইতিমধ্যেই ৫ জন পুলিস অফিসারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
দিল্লির নিরাপত্তা নিয়ে কঠোর ব্যবস্থার নেওয়ার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী। আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে গণধর্ষণের ঘটনা এবং পুলিসি তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্ডে। এরপরেই নিরাপত্তা নিয়ে রাজধানীর নিরাপত্তা নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
ইতিমধ্যেই বিক্ষোভকারীদের পাঁচজন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন শিন্ডে। বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘটনাস্থলে নামানো হয়েছে র্যাফ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি ঘটনাটি নিজের পর্যবেক্ষণাধীন রাখছেন। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সে বিষয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে সচেষ্ট হতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
দিল্লির নিরাপত্তা নিয়ে কঠোর ব্যবস্থার নেওয়ার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী। আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে গণধর্ষণের ঘটনা এবং পুলিসি তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্ডে। এরপরেই নিরাপত্তা নিয়ে রাজধানীর নিরাপত্তা নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
ইতিমধ্যেই বিক্ষোভকারীদের পাঁচজন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন শিন্ডে। বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘটনাস্থলে নামানো হয়েছে র্যাফ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন তিনি ঘটনাটি নিজের পর্যবেক্ষণাধীন রাখছেন।
এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সে বিষয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে সচেষ্ট হতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী নারায়ণস্বামী জানান, গণধর্ষণকাণ্ডে জড়িতরা যাতে কঠোর সাজা পায় সেদিকে নজর রাখা হবে। তবে বিক্ষোভ কোনও সমাধানের পথ নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাস্তবক্ষেত্রে বাংলা মনবাধিকার লঙ্ঘন কোন পর্যায়ে চলছে, তার জলজ্যান্ত নজির নোনাডাঙা।
নোনাডাঙায় বস্তি উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আন্দোলনকে ঘিরে রাজ্যসরকারের সঙ্গে একাধিকবার সরাসরি বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন আন্দোলোনকারীরা। তাঁরা বেশ কয়েকবার অভিযোগ করেছেন অপ্রত্যক্ষ ভাবে সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলন ভাঙার চেষ্টা হয়েছে। এবার আন্দোলনকারীদের একাংশকে ফ্ল্যাট দেওয়ার কথা ঘোষণা করে সরাসরি আন্দোলন ভাঙতে নেমে পড়ল রাজ্য সরকার। আন্দোলনে সামিল একাধিক সংগঠনের অভিযোগ তেমনটাই। শনিবার নোনাডাঙায় গিয়ে আন্দোলনকারী ৭৮টি পরিবারকে ফ্ল্যাট দেওয়ার ঘোষণা করেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এতেই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন ভাঙার চেষ্টার অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা।
শনিবার নোনাডাঙায় গিয়ে আন্দোলকারী ৭৮টি পরিবারকে ফ্ল্যাট দেওয়ার ঘোষণা করলেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
রাজ্যের পুরমন্ত্রী যখন আশ্বাসই দিচ্ছেন, তখন আন্দোলন যুক্ত থাকার যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছেন না ওই ৭৮টি পরিবারের সদস্যরা।
উচ্ছেদ প্রতিরোধ আন্দোলনে সামিল বাকি ৫৫টি পরিবার সম্পর্কে নীরব পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী। আর এতেই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন ভাঙার চেষ্টার অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা।
গত বছর উচ্ছেদের প্রতিবাদে বাইপাসের ধারে নোনাডাঙায় সংগঠিত হয় প্রতিরোধ আন্দোলন। আন্দোলনে সামিল হয় একাধিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক সংগঠন। বারবার এই আন্দোলন ভাঙার চেষ্টা হয়েছে। আন্দোলন মঞ্চ থেকেই গ্রেফতার হন মাতঙ্গিনী মহিলা সমিতির নেত্রী দেবলীনা চক্রবর্তী, বিজ্ঞানী এবং মানবাধিকার কর্মী পার্থসারথি রায়। গ্রেফতার হয় একাধিক আন্দোলনকারীও। দুদিন আগেও তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের মারধরের অভিযোগ ওঠে। শেষ পর্যন্ত পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি দিয়ে আন্দোলন ভাঙার অভিযোগ উঠল রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে।
গত রবিবার চলন্ত বাসে ২৩ বছরের ডাক্তারি ছাত্রীর গণধর্ষণের পর থেকেই বিক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে দিল্লিতে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে শনিবারের পর রবিবারেও কাঁদানে গ্যস, জলকামান চালাতে হয় পুলিশকে। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে লাঠিচার্জও করা হয়। পুলিশের এই ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠে। সমালোচনা করেন খোদ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দিক্ষীত। এরপরই বিক্ষোভকারীদের পেছনে অশুভ শক্তির মদত খুঁজে পায় দিল্লি পুলিশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে পাঠানো রিপোর্টে পুলিশ দাবি করেছে যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কিছু মানুষ হিংসায় মদত দিচ্ছে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে রীতিমত 'হাইজ্যাক' করে হিংসাত্মক বিক্ষোভের চেহারা দেওয়া হচ্ছে বলে রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়েছে। মূলত ছাত্র-ছাত্রীদের এই বিক্ষোভে কিছু 'গুণ্ডা' ঢুকে আসল কলকাঠি নাড়ছে বলে দাবি পুলিশের। তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া সম্ভব নয় বলে রিপোর্টে জানিয়েছে পুলিশ।
ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ঘিরে যেভাবে হিংসা ছড়াচ্ছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পুলিশ। এদিন নয়াদিল্লির বিভিন্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সেন্ট্রাল ভিস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে বিক্ষোভকারীদের। সংঘর্ষে একজন অতিরিক্ত ডিএসপি, এক এএসপি এবং একজন কনস্টেবল গুরুতর আহত হয়েছে বলে দাবি। পুলিশের লাঠি, জলকামান ও কাঁদানে গ্যাসে আহত হয়েছেন অন্তত ১০০ জন বিক্ষোভকারী ও বেশ কয়েকজন সংবাদমাধ্যম কর্মী।
যোগগুরু রামদেব ও প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভিকে সিং-এর নেতৃত্বে এদিন যন্তরমন্তরেও বিক্ষোভ প্রদর্শন চলে। আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও মনীষ সিসোদিয়া ইন্ডিয়া গেটের সামনে অশোকা রোডের উপর হায়দরাবাদ হাউসে ধরনায় বসেন। এদিকে, দিল্লি পুলিশের স্পেশাল কমিশনার (আইন-শৃঙ্খলা) ধর্মেন্দ্র কুমার জানিয়েছেন যে দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে। এই কমিশন গণধর্ষণ কাণ্ড, পুলিশের গাফিলতি ও দিল্লি সহ দেশের বিভিন্ন শহরে মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে কী কী পদক্ষেপ করা উচিত, সে বিষয়ে রিপোর্ট জমা দেবে।
এ্যাডভোকেট ফিরোজ আহমেদ
ভারতের দুর্নীতিবিরোধী সমাজকর্মী আন্না হাজারের ১৩ দিনের অনশন শুধু ভারত সরকার নয়, কাঁপিয়ে দিয়েছিল সারা দুনিয়ার গণতান্ত্রিক মহলকে। সে অনশনের প্রতিক্রিয়ায় ভারত সরকার লোকসভায় আলোচনা করেছেন, ইতিবাচক পদক্ষেপও নিয়েছেন। কিন্তু ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় মনিপুর রাজ্যের রাজনৈতিক কর্মী ইরোম শর্মিলার ১১ বছরব্যাপী অনশন আন্দোলনে দিল্লী নিরব, বিন্দুমাত্র প্রতিক্রিয়া নেই। গত ১১ বছরে শর্মিলার অনশনের দাবী আফসপা (আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স এ্যাক্ট) ১৯৫৮, সশস্ত্র বাহিনীর (বিশেষ ক্ষমতা) ১৯৫৮, বাতিলের বিষয়ে লোকসভায় কোন আলোচনাই হয়নি। ৩৯ বছর বয়সী শর্মিলা ২০০০ সালের ৪ নভেম্বর থেকে অনশন ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন। ধর্মঘট শুরুর ২ দিন আগে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহ দমনে নিয়োজিত আধা সামরিক বাহিনীর আসাম রাইফেলস্ এর সদস্যদের তিনি মণিপুর ইমফলের কাছে এক বাস স্টপের কাছে ১০ জন বেসামরিক লোককে গুলি করে হত্যা করতে দেখেছিলেন। এ আইন এভাবে বেসামরিক মানুষকে হত্যা করার সুযোগ ও ক্ষমতা যোগায় বিধায় তিনি আন্দোলনে নামেন। অনশন শুরুর পর পুলিশ ক'দিনের মধ্যেই শর্মিলাকে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০৯ ধারায় অর্থাৎ আত্মহননের অভিযোগে গ্রেফতার করে। গত ১২০ মাসে শর্মিলা কিছুই খাননি, কারাগারের হাসপাতালে তাকে নাক দিয়ে ঢোকানো নলের সাহায্যে খাদ্যদ্রব্য দিয়ে কারারক্ষীরা তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ভারতের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আন্না হাজারের অনশন ব্যাপক প্রচার করেছিল কিন্তু ইরোম শর্মিলার এই প্রতিবাদ আমরা জানিনা বললেই চলে। বলিউড তারকা থেকে শুরু করে হাজার হাজার ভারতীয় আন্নার অনশনে একাত্ম হয়েছে, কিন্তু ইরোম শর্মিলার কারাগারে জীবন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার ইতিহাস ভারতীয়রা জানেন কিনা সন্দেহ।
মণিপুরে ১৯৬১ সালে এ আইনটি জারি করা হয়, ১৯৮০ সালে তার সম্প্রসারিত হয় সারা রাজ্যব্যাপী। এটি এখন উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় ৭টি রাজ্যের প্রতিটি অশান্ত এলাকাসমূহে বলবৎ। কাশ্মিরে এটা চলে আসছে ১৯৯০ সালের জুলাই থেকে। নিছক সন্দেহবশতঃ দেখা মাত্র গুলি, ঠুনকো অজুহাতে লোকজনকে গ্রেফতার করা, পরোয়ানা ছাড়া খানা তল্লাসী, কোন বাড়িঘরে সন্দেহ ভাজন লোক লুকিয়ে আছে এমন ধারণা হলে সেই বাড়ি গুড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এই আইন অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনীকে। এ আইনের ৬নং ধারাবলে এর কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কোন মামলা দায়ের বা আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না। মানবাধিকার কর্মীরা বলেছেন ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং জম্বু-কাশ্মিরে হাজার হাজার নিরপরাধ জনগণের মৃত্যু ও নিখোঁজের কারণ হচ্ছে এই কালো আইন। আফসপা আইন বাতিল করার দাবী কয়েক দশকের পুরোনো। মণিপুরে এই আন্দোলনের পুরোভাগে ছিল ৩২টি সংগঠনের যৌথ মঞ্চ-অপুনবা লুপ, মণিপুরী পল্লী নারীদের তৃণমূল আন্দোলন- মেইরা পাইবি। মেইরা পাইবির নারী সদস্যরা জলন্ত মশাল হাতে সেনা ছাউনির পাশে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। মণিপুরের মানুষের হৃদয়ের অকুন্ঠ সমর্থন আছে ইরোম শর্মিলার আন্দোলনের প্রতি। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর বাইরে এই কালো আইনের বিষয়ে জনসমর্থন খুবই নগণ্য-ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর আগ্রহের অভাব এর কারণ। আইনটি মূল ভূখন্ডের মানুষের জন্য সমস্যা নয়, সেকারণে খুব কম ভারতীয়রা এই আন্দোলনের প্রতি সহমর্মীতা অনুভব করে। ১৯০৪ সালে জুলাইয়ে যখন আসাম রাইফেলস্ এর সদস্যরা ৩২ বছর বয়সী খাংঘাম মনোরমা দেবীকে ধর্ষণ করে ও গুলি করে হত্যা করে তখন মেইরা পাইবি আন্দোলনের কর্মীরা আসাম রাইফেলস্ এর সদর দপ্তরের সামনে পুরো নগ্ন হয়ে নিয়েছিল। তারা বলেছিল (বারো জন) ওহে ভারতের সৈনিকদল, এসো আমাদের সবাইকে ধর্ষণ করো। ১৯০৫ সালে আফসপা পুনর্বিক্ষণে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারপতি বি, পি, জীবন রেড্ডি কমিটি এই আইন বাতিলের সুপারিশ করলেও এখনও এটি বলবৎ রয়েছে। আন্না হাজারের অনশন দিল্লীর রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রভাব ফেললেও ইরোম শর্মিলার অনশন দিল্লীর ক্ষমতার অঙ্গনে মৃদুতম কম্পনও সৃষ্টি করেনি।
ভারতবর্ষের ইতিহাসে অনশন একটি ব্যাপক রাজনৈতিক কর্মকান্ড হিসেবেই বিবেচিত। মহাত্মা গান্ধি নানা ইস্যূতে ১৭ বার অনশন করেছেন। আমাদের দেশে মওলানা ভাসানীও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় একাধিকবার অনশন করেছেন। আমি যখন খুলনার জেলখানায় ছাত্র জীবনে প্রথম রাজবন্দি হিসেবে প্রবেশ করি তখন বটিয়াঘাটার একজন কমিউনিষ্ট কর্মীর নামে শুনেছিলাম, যিনি দীর্ঘদিন অনশন করে কারাগারে মৃত্যুবরণ করার কারণে বন্দিদের দুপুরের খাবারের মেনুতে এক টুকরো মাংস বা এক টুকরো মাছ বরাদ্দ হয়েছিল। শ্রদ্ধেয় কমরেড রতন সেনের কাছে শুনেছি কারাগার কর্তৃপক্ষ বন্দিদের অনশন কর্মসূচীকে খুবই ভয় পেতেন। আমার নিজের কারাজীবনে দেখেছি সব সময় আমাকে নির্জন সেলে (ক্ষুদ্র কক্ষ) রাখা হতো যাতে কোন অনিয়মে আমি অন্য বন্দিদের নিয়ে অনশন না করতে পারি। গান্ধি অনশনকে বিবেচনা করতেন সহিংস আন্দোলনের বিপরীত একটি বিকল্প পন্থা হিসেবে। গান্ধির অনশন বৃটিশরাজ সম্মান জানালেও স্বাধীন ভারতবর্ষে ইরোম শর্মিলার অনশন এবং কারাগারের যন্ত্রণা কোন ইতিবাচক সাড়া সৃষ্টি করতে পারেনি। শূনেছি বায়ান্ন সালে একুশের হত্যাকান্ডের পর সাংসদ ধীরেন দত্ত সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু তখন কারাগারে-তিনি কারাগারে অনশন করেছিলেন। নানা দাবী-দাবা নিয়ে অনশন, প্রতীক অনশন, গণ-অনশনে গত ৪১ বছর আমি থেকেছি। কখনো কমিউনিষ্ট কর্মী হিসেবে, কখনো মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের যোদ্ধা হিসেবে। সেসব অনশন বৃথা গেছে বলে আমি মনে করি না। অনেক অনশনেরই ফলাফল নিজ চোখেই দেখেছি, সে ফলাফল ছিল মানুষের সফলতার। মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ যেখানে গণতন্ত্র নেই, মৌলিক অধিকার শব্দটি পদদলিত, সেখানেও মানুষ জাগছে। গণতন্ত্রের জন্যে আন্দোলনকারী শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ইয়ামেনি নারী তাওয়াকুল কারমান। সেখানে মণিপুরের জেলখানায় মৃত্যুর সাথে লড়াইরত ইরোম শর্মিলার আন্দোলন বৃথা যাবে এটি আমি মনে করি না। ভগ্নি, সাথী ইরোম শর্মিলা তোমাকে সালাম।
http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=68541
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত এখনো মানব পাচারের কেন্দ্র
দারিদ্রই ইন্ধন জুগিয়েছে নির্মম এই ব্যবসাকে, যা সীমান্ত অতিক্রম করেছে, বাধ্য করেছে গরীব পরিবারগুলোকে পতিতাবৃত্তি এবং আধুনিক দাসত্বকে মেনে নিতে।
জমশেদপুর থেকে খবর সাউথ এশিয়ার জন্য লিখেছেন চন্দন দাস
এপ্রিল 05, 2012
দুই মাস পর সুনীতা তার স্বামীর বাড়ি থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়। সে তার মা কে বলে, যাতে তাকে লেখাপড়া করতে দেয়া হয়। কিন্তু চরম দারিদ্র তাতে বাধ সাধে। তার মা ফাঁদে পড়ে মাত্র ৫০ হাজার রুপি (৯৭৮ ডলার)'র বিনিময়ে দালালের হাতে তুলে দিতে রাজি হয়। কিন্তু আড়াল থেকে তাদের এই কথপোকথন শুনে সুনীতা, বিষয়টা সে পুলিশকে জানালে পুলিশ দালালকে গ্রেফতার করে।
সুনীতার বয়স এখন ১৭ বছর, সে এখন রাচীতে একটি শিশুর গভর্ণেস হিসাবে কাজ করে। সে আগামী দুই বছরের মধ্যে তার ভালবাসার নতুন মানুষটিকে বিয়ে করার পরিকল্পনা করছে ।
সুনীতার ভাগ্য ছিল ভালো। কিন্তু অনেকরই ভাগ্য তার মত নয়।
মানবপাচার এখন ভারতের এক নগ্ন বাস্তবতা। পতিতাবৃত্তি, শিশু দাসত্ব, এমনকি ভ্রুণ বিক্রি-এই সকল ধরনের মানবপাচারই সেখানে চলছে । ভারত কেবল এই মানবপাচারের গন্তব্যই নয়, পাশাপাশি এটি দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ও নেপালের সঙ্গে এই ব্যবসার সবচেয়ে ব্যস্ত ট্রানজিট রুটও।
আসলে দারিদ্রই জ্বালানী হিসাবে কাজ করছে এই ব্যবসায়ের। বেঁচে থাকতে মরিয়া এই পরিবারগুলোর জন্য মেয়েদের বিক্রি একটি বড় আয়ের উৎস হিসাবে বিবেচিত হয়। দ্রারিদ্র বিমোচনের জন্য সরকারের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ৪৬ কোটি ৭০ লাখ ভারতীয় এখনও দৈনিক ৬০ রুপির (১ দশমিক ১৭ ডলার) বেশি আয় করতে পারে না।
মানবাধিকার সংগঠন প্রান্তকথা'র প্রতিষ্ঠাতা বাপ্পাদিত্য মুখার্জি মানবপাচার বিষয়ে খবর সাউথ এশিয়াকে বলেন, "পশ্চিম বঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা এবং বশিরহাট গ্রাম বাংলাদেশের সীমান্তের সঙ্গে লাগোয়া। আর এ এলাকাগুলোই মানবপাচারের জন্য সবচেয়ে বেশি সহজগম্য। এ এলাকাগুলোতে দারিদ্র এত বেশি প্রবল যে, এমনকি অতি সাধারণ দামেও পিতামাতারা তাদের শিশুকে বিক্রি করতে দ্বিধা করে না"।
মুখার্জী বলেন, "যে সমস্ত মেয়েদের মাত্র এক হাজার রুপি (১৯ দশমিক ৫৯ ডলার)দিয়ে কেনা হয়েছে, তারা পতিতালয় ত্যাগ করারও অনুমতি পায় না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা ওই পরিমাণ অর্থ ফেরত না দিতে পারে। পতিতালয় থেকে পালানোর অর্থই হচ্ছে মৃত্যু। একবার আমরা একটি কম বয়সী মেয়েকে পতিতালয় থেকে উদ্ধার করি। সে তখন এতই ভীত সন্ত্রস্ত্র ছিল যে কোন স্পর্শেই সে ঠক্ ঠক্ করে কাঁপতো। পরে সে আমাদেরকে জানায় যে, বাংলাদেশ থেকে তার চাচা তাকে এখানে নিয়ে এসেছিল"।
ভারতে গৃহকর্মের জন্য মানুষের বেশ চাহিদা রয়েছে। এজন্য যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে তারা ঝাড়খন্ড, ছত্তিশগড় এবং পশ্চিম বঙ্গ থেকে এইসব গরিব মেয়েদের সংগ্রহ করে শহরে নিয়ে আসে। আর এইসব প্রতিষ্ঠানে শিশুদের যারা সরবরাহ করে তারা একটা কমিশন পায়। সেই কমিশন প্রতি শিশুর জন্য ৫০০ রুপি (৯ দশমিক ৭৮ ডলার) থেকে ১০,০০০ রুপি (১৯৬ ডলার) পর্যন্ত হয়ে থাকে।
১৬ বছর বয়সী স্মিতাকে ২০০২ সালে ঝাড়খন্ডের একটি গ্রাম থেকে পাঠানো হয় নয়া দিল্লী ভিত্তিক একটা এজেন্সিতে। সেখানে তাকে কোন কাজ দেয়া হয়নি, বরং এজেন্ট লোকটি তাকে সেখানে ধর্ষণ করে। স্মিতা বলে, "আমি সেখান থেকে কোনভাবে পালাতে সক্ষম হই, তারপর দুই দিন রাস্তাতেই কাটিয়ে দেই"।
শেষ পর্যন্ত বেসরকারি সংগঠন ডোমেস্টিক ওয়ার্কার্স ফোরাম তাকে উদ্ধার করে। কিন্তু তার পিতামাতা তাকে ফেরত নিতে আগ্রহ দেখায় নি। স্মিতা এখন জমশেদপুরে মানুষের বাসায় কাজ করে।
এরকম পাচারের আর একজন শিকার হচ্ছে গীতা। সে জানায়, তার বয়স যখন ১৪ বছরের মত তখন তার পিতামাতা মাত্র ৩ হাজার রুপি (৫৯ ডলার)'র বিনিময়ে তাকে দালালের হাতে তুলে দেয়। খবর সাউথ এশিয়াকে তিনি বলেন, "দিনে ২০ থেকে ৩০ জন খদ্দেরের সঙ্গে আমাকে যৌনকর্ম করতে বাধ্য করা হতো। সেখানে মেয়েদের এ কাজে বাধ্য করার আগে রীতিমত আতঙ্কিত করে তোলা হয়। মেয়েদের নির্যাতনের সবচেয়ে সাধারণ ঘটনাটি হচ্ছে গ্যাং রেপ বা গণ ধর্ষণ"।
পরিত্যাক্ত মেয়েদের পুণর্বাসনের জন্য কাজ করে এরকম একটি সংগঠন হচ্ছে দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি। এরা কলকাতা পতিতালয় থেকে গীতাকে উদ্ধার করে। ২১ বছর বয়স্ক গীতা এখন কলকাতা শহরেরর প্লাস লেক গার্ডেনের একটি বাসায় সহযোগীকর্মী হিসাবে কাজ করে। পাশেই একটি বস্তিতে সে থাকে। সে আশা করে যে একদিন সে একটি নতুন জীবন শুরু করতে পারবে।
২০১১ সালের ডিসেম্বরের ১০ তারিখে, মানবাধিকার দিবসে, ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নতুন একটি কর্মসূচির সূচনা করে। এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্যই হচ্ছে মানবপাচার সমস্যা প্রতিরোধে আইন প্রয়োগকারী ব্যক্তিদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
আর এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে স্থানীয় পুলিশ এজেন্সি'র মধ্যেই এন্টি-হিউম্যান ট্রাফিকিং ইউনিটস (এএইচটিইউ'স)গঠন করা হয়। বর্তমানে সরকারী অর্থায়নে এরকম ৪৭ টি এএইচটিইউ'স রয়েছে। এবং সরকার প্রতিশ্রুত ২০ মিলিয়ন ডলার অর্থায়নে আগামী তিন বছরে এরকম আরও ৩৩০টি ইউনিটে উন্নীত করা যাবে বলে ভাবা হচ্ছে।
আধুনিক যুগের এই দাসত্বের বিপক্ষে মানুষের ক্ষোভ এখন ক্রমশ বাড়ছে। ২০০০ সালে ইউএন এন্টি ট্রাফিকিং যে প্রটোকল গ্রহণ করা হয়েছে তারই আলোকে দেশের চলমান আইন পরিবর্তনের জন্য গণদাবীও সোচ্চার হচ্ছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম অবশ্য এ প্রসঙ্গে বলেন, কেবল আইন পরিবর্তনই যথেষ্ট নয়, এ ক্ষেত্রে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনও জরুরী। খবরকে তিনি বলেন, "মানবপাচার সংশ্লিষ্ট যে কোন অপরাধের সঙ্গে একজন অপরাধী যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে একজন ভুক্তভোগীও। যদিও আমাদের দেশের নিয়মে মানুষের মধ্যে উভয়কে একই পাল্লায় বিচারের একটা প্রবণতা দেখা যায়"।
ক্ষমতার অলিন্দে ক্ষোভের মুক্তধারা
নয়াদিল্লি: ল্যুটিয়েন্স দিল্লি৷ দেশের ক্ষমতার কেন্দ্রস্থল৷ নর্থ ও সাউথব্লকের গেরুয়া পাথরের দেওয়ালগুলো কয়েক শতাব্দীর বহু ইতিহাসের সাক্ষী৷ তবে এমন ঘটনা তারাও দেখেছে কি না বলা যাচ্ছে না৷
কুয়াশায় ঢাকা রাজপথে যতদূর চোখ যায় শুধু মানুষের ঢল৷ সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো গর্জন তুলে তারা এগিয়ে আসছে ক্ষমতার অলিন্দের দিকে৷ অদূরেই দিল্লির সফদরজঙ্গ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে ২৩ বছরের এক তরুণী৷ শেষ সম্বল কয়েক ছটাক জমি বেচে যাকে পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছিল হতদরিদ্র বাবা মা৷ ধর্ষকদের অত্যাচারে যে কোনও সময় রক্তে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে সেই মেয়ের৷ কিন্ত্ত তার আগেই তার মৃতপ্রায় শরীরটা আর এক সংক্রমণ ছড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশে৷ প্রতিবাদের৷
সেই প্রতিবাদের এমন ভয়াবহ চেহারা এর আগে দেখেনি রাজধানী৷ জুঁই ফুলের সুবাসমাখা এমন বিপ্লবের রূপ দেখেছিল আরব দেশ৷ কিন্ত্ত স্বৈরতন্ত্রী শাসকের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা মিশরের তাহরির স্কোয়্যার কী ভাবে নেমে এল বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারতবর্ষের রাজধানীতে? উত্তরটা লুকিয়ে রয়েছে অনেক দিনের যন্ত্রণা, অপমান আর মেনে নেওয়ার ইতিবৃত্তে৷ শনিবার সকাল থেকে দিল্লির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিভিআইপি এলাকা, বিজয় চক থেকে রাষ্ট্রপতি ভবনে যাওয়ার পথ দখল করে নেয় প্রতিবাদীরা৷ বিক্ষোভ ঠেকাতে বেপরোয়া লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাসের শেল আর কনকনে ঠান্ডায় অবিরাম জলকামান- প্রতিবাদের আঁচ কমাতে পারেনি প্রশাসনের কোনও অস্ত্রই৷ বরং তাতে প্রতিবাদের ঝাঁঝ বেড়েছে বহুগুণ৷ প্রধানমন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীর অফিস যেখানে, সেই সাউথ ব্লক ও নর্থ ব্লকের সামনে ব্যারিকেড করে রেখেছে পুলিশ৷ তাদের পিছনে অল্প দূরেই রাষ্ট্রপতি ভবন৷ সেই ব্যারিকেডের সামনে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী৷ রাজপথের কাস্ট আয়রনের ল্যাম্পপোস্টের উপর উঠে যতটা উঁচুতে সম্ভব পোস্টার তুলে ধরছে তারা৷ একটাই দাবি, অপরাধীদের ফাঁসি চাই৷
আর মাস খানেক পরেই এখান দিয়ে যাবে প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেড৷ শক্তিপ্রদর্শন করবে ভারতীয় সেনাবাহিনী৷ কিন্ত্ত তরুণ প্রজন্মের এমন নজিরবিহীন প্রতিবাদ বিক্ষোভ সামাল দিতে পুলিশ যে ভাবে শক্তিপ্রদর্শন করল তাতে ইতিমধ্যেই প্রবল চাপে থাকা সরকারের মুখ লুকনোর জায়গা রইল না৷ দেশজোড়া ধিক্কারের মুখে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত শুক্রবারই বলেছিলেন রাজধানীর নিরাপত্তার দায় কেন্দ্রীয় সরকারের, দিল্লি সরকারের হাতে নয়৷ শনিবার সকালে পুলিশ লাঠি চালালেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার জন্য ক্ষমা চাইলেন রাত আটটার পর৷ তা-ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দু'দফা বৈঠকের পর৷
সকাল থেকে রণাঙ্গনের চেহারা নেওয়া রাজপথে অন্তত চারবার জলকামান ও বার দশেক কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়েছে৷ পুলিশের লাঠিতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় ১৩ জন বিক্ষোভকারী ছাত্রছাত্রীকে৷ বিক্ষোভের মূল কেন্দ্রেই রাখা ছিল পুলিশের বাস৷ রাগে উন্মত্ত ছাত্রছাত্রীরা ইট ছুড়ে সেই বাসের জানালার ভেঙে দেয়৷ সঙ্গে সঙ্গেই পাল্টা চলল পুলিশের লাঠি৷
এমনিতে সারা দিনে রাজপথ জুড়ে শুধু ভিভিআইপিদের পুলিশ ও কম্যান্ডোবেষ্টিত কনভয় দেখেই অভ্যস্ত এই শহরের মানুষ৷ কিন্ত্ত শনিবার সেই রাজপথে একটা পোস্টার নিয়ে হাঁটছিল বছর কুড়ির রাশি৷ তাতে লেখা, 'মন্ত্রীরা, শুধু আপনারা নন, আমাদেরও সুরক্ষা দরকার'৷
রাজনীতির ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে এমন স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভে দেখা গিয়েছে সব বয়সের মানুষকে৷ স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়েদের পাশেই দাঁড়িয়ে গলা ফাটিয়েছেন অশীতিপর বৃদ্ধবৃদ্ধার দল৷ প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল ভিকে সিং এসেছিলেন প্রতিবাদে সামিল হতে৷ কিন্ত্ত তিনিও নিজেকে সাধারণ মানুষেরই একজন বলে অপরাধীদের চরম শাস্তি চেয়েছেন৷
শনিবারের গণ প্রতিবাদের প্রস্ত্ততিটা সারা হয়ে গিয়েছিল শুক্রবারই৷ ফেসবুক, টুইটারে একের পর এক পোস্ট, দেখা হবে ইন্ডিয়া গেটের সামনে৷ সাত সকালেই তিল ধারণের জায়গা ছিল না ইন্ডিয়া গেট চত্বরে৷ লেডি শ্রীরাম, সেন্ট স্টিফেন্স, গার্গী, রাজধানীর প্রায় সমস্ত কলেজ থেকে উজাড় করে ছাত্রছাত্রীরা হাজির হয়েছেন৷
রাত বাড়লেও বন্ধ হয়নি প্রতিবাদ৷ ইন্ডিয়া গেটের সামনে থেকে মোমবাতি মিছিল ছড়িয়ে পড়েছে রাজপথ জুড়ে৷ রাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনুনয় করেছেন প্রতিবাদীদের ঘরে ফিরে যেতে৷ আশ্বাস দিয়েছেন অপরাধীদের দ্রুত বিচার হবে৷ সাসপেন্ড করা হবে দোষী পুলিশদেরও৷ কিন্ত্ত তাতে ভিড়ের ক্রোধ শান্ত হয়নি৷
গত বছর জনলোকপালের দাবিতে আন্না হাজারের আন্দোলনে রামলীলা ময়দান ভরিয়ে তুলেছিলেন বহু মানুষ৷ কিন্ত্ত সেই ভিড়ও ফিকে হয়ে গিয়েছে শনিবারের জমায়েতের পাশে৷ কেজো, হৃদয়হীন শহর বলে পরিচিত দিল্লিতে শুধু আশপাশ থেকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এত মানুষের জমায়েত ভাঁজ ফেলেছে রাজনীতির কারবারিদের কপালে৷
সফদরজঙ্গ হাসপাতালের চিকিত্সকেরা বলেছেন, গণধর্ষিতা মেয়েটির বেঁচে থাকার স্পৃহা ও অদম্য সাহস অবাক করে দিয়েছে তাঁদের৷ সেই মৃত্যুঞ্জয়ী মানসিকতাই শনিবার ছড়িয়ে পড়ল রাজধানীর রাজপথে, আর সারা দেশের অলিতে গলিতে৷ জুঁই ফুলের গন্ধমাখা অকাল বসন্তের বার্তা ছড়িয়ে গেল কনকনে শীতের বিকেল জুড়ে৷
ছাত্র-যুব জন জাগরণ সারা দেশে
আমার যেটা মনে হচ্ছে এটা ভালো লক্ষণ। গত বছর এমনি করেই আমরা দেখেছিলাম সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইএ রাস্তায় গণ আন্দোলন হয়েছে। আন্না হাজারে, বাবা রামদেব দের মাধ্যমে। মূলত যুবকেরাই হাজার হাজার সংখ্যায় উপস্থিত ছিল। সরকার ভয় পেয়েছিল। তবে সবাই যে সচেতন হয়েছে বলব না। শুরু হয়েছে কাজ। সোশাল মিডিয়া 'ফেসবুক, টুইটার, গুগল ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষ তার প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে পাচ্ছে।
তবে বাংলার যুব সমাজ কিন্তু আসল সময়ে লড়াই করছে না। রাস্তায় নামতে দিধা বোধ করছে প্রতিবাদ জানাতে। কিসের দিধা দন্দ বুঝতে পারি না। এখানে রাজনীতি কি মানুষকে মেরুদণ্ড শূন্য করেছে? দীর্ঘ কাল বাম শাসন আর পরিবর্তনের পরে নতুন সরকার এরা কেই হয়ত চায় না বাংলার জন জাগরণ হোক। বাংলার যুবকেরা রাস্তায় নামতে, প্রতিবাদ করতে পিছিয়ে পড়ছে কেন? সারা দেশের মানুষ জখন তোলপাড় আমরা কি পিছিয়ে থাকব? সমাজ কে পরিবর্তন করতে হলে তো ছাত্র-যুবকেই এগিয়ে আসতে হবে, প্রতিবাদে শামিল হতে হবে। তা না হলে আমরা কি রাজনীতিকদের ওপর ভরসা করতে পারি? সাধারণ মানুষ যত সচেতন হবে সরকার, রাজনীতিকরা ততো সাবধানে চলবেন।
আরেকটা কথা যেটা আমাদের ভাবাচ্ছে সেটা হল কেন হঠাৎ করে নারী নির্যাতন বেড়েছে? সেটা আমাদের সকলকেই ভাবতে হবে। মনে হচ্ছে আমাদের কোথাও কিছু ভুল হচ্ছে, তাই 'লাইফ স্টাইল' টা আমাদের পরিবর্তন করা জরুরি। নৈতিকতা বলে আজকাল আর কিছুই আমরা শিখছি না। ওই পাট তো কবেই চুকে গেছে। নৈতিক শিক্ষা কি এই যুগে অচল? আমাদের ভেবে দেখা উচিৎ।
নেই কাজ তো সান্তাক্লজ সাজ
সান্তাক্লজ কি কম পড়িয়াছে?
মুশকিল আসান বেডফোর্ড লেন৷ হাজার হাজার হাজরার মতো এখানে শয়ে শয়ে সান্তা৷ চাকরি নেই, ব্যবসাও হচ্ছে না৷ তো কী! নেই কাজ তো সান্তাক্লজ সাজ৷ সান্তা সেজেই বহু লোক শীতকালে পেট চালাচ্ছেন৷ চার ঘণ্টা সান্তা সাজলে কড়কড়ে পাঁচশো টাকা৷ খাটুনি তেমন কিছু নয়৷ মাঝে মাঝে ঘাড় নাড়াতে হয়, এই যা৷ হোটেল, শপিং মল, অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে দেদার ডাক আসছে৷ সান্তা সাপ্লাই দিয়ে কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না৷ চাহিদা বেশি৷ জোগান কম৷
সাপ্লাই লাইন চালু রাখতে অবশ্য চেষ্টা কম করছেন না 'সেলিম জোকারওয়ালা'৷ তিনিই আদি সান্তাক্লজ৷ তাঁর দুই ছেলে, নাতি, আট ভাই এবং ভাগ্নেও এখন পেশাদার সান্তাক্লজ৷ সান্তা সাজাই সেলিম পরিবারের পেশা৷ কিন্ত্ত তাতেও কুলোচ্ছে না৷ পাড়ার বহু নওজওয়ান বেকারও এখন বুড়ো সান্তা৷ সান্তা সেজে ঘরে খাবার আসছে৷ আলো জ্বলছে৷ হলেনই বা ধর্মে মুসলমান৷ তাতে কী! পেট যে বড় বালাই৷
সেলিম জোকারওয়ালার আসল নাম সেলিম আহমেদ৷ তবে আসল নামে কেউ ডাকে না৷ সেলিমের নিজেও নাম ভুলতে বসেছেন৷ সবার কাছে তিনি জোকারওয়ালা৷ একুশ বছর আগের কথা৷ ১৯৯২ সাল৷ সেলিম তখন ডেকোরেশনের কাজ করেন৷ বরাত পেলেন একটি সোনার দোকান সাজিয়ে দেওয়ার৷ কিন্ত্ত দোকান মালিক বড়ই খুঁতখুঁতে৷ কিছুতেই মন ওঠে না৷ তাঁর দাবি, এমন কিছু করতে হবে, যাতে দোকানের সামনে ভিড় হয়৷ সেলিমের মাথায় হাত! এ কী চাট্টিখানি কথা৷ সেলিম কিঞ্চিত্ কটাক্ষ করে দোকান মালিককে বললেন, 'আমার দ্বারা হবে না৷ আপনি বরং জোকার ভাড়া করুন৷ জোকার দেখতে ভিড় হবেই৷' দোকান মালিক প্রস্তাবটি লুফে নিলেন৷ বললেন, 'তা হলে আপনিই জোকার জোগাড় করে দিন৷' জোকার আর কোথায় খুঁজবেন৷ হঠাত্ মাথায় বুদ্ধি এল৷ শীতকাল৷ সামনেই বড়দিন৷ আর বড়দিন মানেই সান্তাক্লজ৷ কিনে ফেললেন সান্তাক্লজের পোশাক৷ মুখোশও৷ ব্যাস! সেই 'সেলিম জোকারওয়ালার' পথচলা শুরু৷ নানা জায়গা থেকে বায়না এল৷ দুই ছেলে সাব্বির এবং সাবির আহমেদকেও তিনি পরিয়ে দিলেন সান্তার পোশাক৷ 'সেলিম জোকারওয়ালা'র চাহিদা আরও বাড়ল৷ এ বার মঞ্চে হাজির সেলিমের আট ভাই এবং এক ভাগ্নে৷ উত্সবের মরশুমে তাঁরাও সান্তাক্লজ সাজবেন৷ রোজগার তো মন্দ হয় না৷
৩ নম্বর বেডফোর্ড লেনে সেলিমের স্যাঁতস্যাঁতে বাড়ি৷ বাড়িতে বসে সেলিম বললেন, 'কলকাতার শহরে আমরাই একমাত্র সান্তা পরিবার৷ জোকার পরিবারও বলতে পারেন৷ মানুষকে হাসিয়ে এবং আনন্দ দিয়ে টাকা রোজগার করি৷ এর থেকে বেশি টাকা হয়তো আমি রোজগার করতে পারতাম৷ কিন্ত্ত এই আনন্দ পেতাম না৷'
শুধু কি আনন্দ৷ তিনি এখন প্রায় ইন্ডাস্ট্রি৷ বললেন, 'শীতের মরশুমে রোজই পঞ্চাশ জন 'সান্তা'র চাহিদা থাকে৷ এত 'সান্তা' তো আমার বাড়িতে নেই৷ তাই পাড়ার অনেক বেকার ছেলেকে এই পেশায় ঢুকিয়ে দিয়েছি৷ রাস্তায় ফ্যা ফ্যা করে ঘুরত৷ বললাম, চলে আয়৷ সান্তা সাজবি৷'
বেডফোর্ড লেনেই থাকে বছর কুড়ির জাকির৷ বহু বছর বেকার বসে৷ তিনিও ঢুকে পড়েছেন 'সেলিম জোকারওয়ালা'র দলে৷ তাঁর কথায়, 'সেলিম ভাইয়াই বেকার ছেলেদের কাছে সান্তাক্লজ৷ পাড়ায় এমন কোনও ছেলে নেই যে সেলিম ভাইয়ার সঙ্গে সান্তা সাজেনি৷ একবার সান্তা সাজলেই কড়কড়ে পাঁচটা একশো টাকার নোট৷'
তবে সান্তাক্লজ তো শুধু শীতকালে৷ বছরের বাকি সময়? তখন তো সান্তা সাজা যায় না৷ অথচ এতগুলি পরিবারের দায়িত্ব তাঁর উপর৷ তাই ইদানিং চার্লি চ্যাপলিন সাজাও শুরু করেছেন৷ দলের ছেলেদেরও বলেছেন, বেশি করে চার্লির সিনেমা দেখ৷ সময় পেলে নিজেও দেখে নিচ্ছেন৷
সেলিমের 'গোল্ড রাশ' থামছে না৷
No comments:
Post a Comment