: শিক্ষায় নৈরাজ্য, রাজ্যের সমালোচনায় প্রণব
৩ অক্টোবর, ২০১২শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করলেন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। কলেজে কলেজে অধ্যক্ষ নিগ্রহ এবং ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সংঘর্ষ বেড়ে চলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন কে.- শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য »-এর জন্য আরো ভিডিও
পরিবর্তনের রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য
ডিজিটাল ডেস্ক
কলকাতা, ১২ জানুয়ারি, ২০১২
রায়গঞ্জ, মাজদিয়ার পর রামপুরহাট। রাজ্য জুড়ে হেনস্তার শিকার কলেজের অধ্যক্ষরা। সেই তালিকায় জায়গার নাম বেড়েই চলেছে। বাম জমানায় যা দেখতে, শুনতে আমরা অভ্যস্ত ছিলাম তা তথাকথিত পরিবর্তনের পরও বহাল। শুধু অভিযুক্তের তালিকায় তৃণমূলের নাম যোগ হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কিসের পরিবর্তন? শুধু শাসকের রঙ বদলেছে মাত্র। অরাজকতা তো বহাল। ঘটনাক্রমের পরও বুদ্ধিজীবী ও বিদ্বজ্জনদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
Poribartane bitorko - YouTube
২৮ মার্চ, ২০১১ - 123456782704 আপলোড করেছেনBITORKO-25-08-08 ATN Banglaby sirajnews1,397 views ·শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য 3:19. Watch Later শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্যby 1234567827048 ...Adhirer Kotha - YouTube
১৯ মার্চ, ২০১১ - 123456782704 আপলোড করেছেনWatch Later Candidate of TMC of Khejuri.mpegby 12345678270451 views · শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য 3:19. Watch Laterশিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্যby ...Ritabrata - voice of youth - YouTube
২৮ নভেম্বর, ২০১১ - 123456782704 আপলোড করেছেনশিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্যby 1234567827048 views; i me myself ritabrata dhar spring fest 2011.MP4 3:48. Watch Later i me myself ritabrata dhar ...- শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য »-এর জন্য আরো ভিডিও
সন্তোষপুরের পর এবার ফেল করা ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভের আঁচ ছড়াল রাজ্যের একাধিক জেলার স্কুলে। আজ বর্ধমানের কালনার কৃষ্ণদেবপুর বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষিকাদের ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায় মাধ্যমিকের টেস্টে ফেল করা ছাত্রীরা। দাবি, অবিলম্বে তাদের পাস করানোর ব্যবস্থা করতে হবে স্কুলকে। দুপুর বারোটা থেকে শুরু হয় বিক্ষোভ ।
পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের ফেল করানোর দাবিতে এবার বিক্ষোভ ছড়াল কলেজেও। বরানগরের প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবিশ কলেজের তৃতীয় বর্ষের কেমিস্ট্রি পরীক্ষায় পাস করেননি তিরিশ জন ছাত্রী। পুরনো সিলেবাস পড়ানো হলেও প্রশ্নপত্র হয়েছে নতুন সিলেবাসে। অভিযোগ ছাত্রীদের। সেকারণে পাস করানোর দাবিতে দুপুর থেকে কলেজের অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে রাখেন ছাত্রীরা। পাস না করানো হলে আত্মহত্যার হুমকিও দেন ছাত্রীরা।
আদালতের নির্দেশে ফের ধাক্কা খেল প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। সরকারি বিজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দায়ের হওয়া মামলায় বুধবার প্রাথমিকে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের অগ্রাধিকারের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। প্রাথমিকে ৩৪ হাজার পদে নিয়োগের জন্য গত ১৯ শে অক্টোবর বিজ্ঞাপন দেয় রাজ্য সরকার। ওই বিজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন কয়েকজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থী। মামলাকারীদের বক্তব্য ছিল, এনসিটিইর নিয়ম মেনে প্রশিক্ষিতদের যে সুযোগ পাওয়ার কথা, বিজ্ঞাপনে তা উল্লেখ করা হয়নি। আবেদনের ভিত্তিতে গত তেরোই ডিসেম্বর নিয়োগের পরীক্ষায় স্থগিতাদেশ জারি করে কলকাতা হাইকোর্ট। নির্দেশে বলা হয়, বিজ্ঞাপনের পদ্ধতি অসাংবিধানিক হওয়ায় তার ভিত্তিতে কোনও পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে রাজ্য সরকারকে হলফনামাও জমা দিতে বলে আদালত। বুধবার আগের স্থগিতাদেশ খারিজ করে দেয় আদালত।
তবে আদালতের নির্দেশে তাঁদেরই জয় বলে মনে করছে সরকারপক্ষ। যদিও এদিন আদাত চত্বরে তুমুল বিক্ষোভ দেখান প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীরা। তাঁদের দাবি এনসিটিই-র নির্দেশ অনুসারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের কোনও পরীক্ষা দেওয়ার কথাই নয়।
সিঁথির কস্ত্তরবা কন্যা বালিকা বিদ্যাপীঠের ফেল করা এক ছাত্রী পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে৷ সহপাঠী ও স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে বলে পুলিশ জানিয়েছে৷ আগের দিনই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়ে দিয়েছিলেন, কোথাও এ ধরনের ঘেরাও বরদাস্ত করা হবে না৷ বুধবার উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মুক্তিনাথ চট্টোপাধায়ও বলেছেন, 'সংসদ এ রকম ঘেরাও-বিক্ষোভ সমর্থন করে না৷' মন্ত্রী-সভাপতির হুমকি অগ্রাহ্য করেই সব জেলায় এ দিন অবাধে বিক্ষোভ চলেছে৷
মঙ্গলবার সংসদ নির্দেশ দেয়, সন্তোষপুরের ওই স্কুলকে ফের নতুন করে উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা নিতে হবে৷ সংসদের ইতিহাসে এটা নজিরবিহীন৷ সে দিনই শিক্ষক মহল আশঙ্কা করেছিল, এর পর সর্বত্রই এই দাবিতে স্কুলে স্কুলে ঘেরাও-বিক্ষোভ শুরু হয়ে যাবে৷ সেই আশঙ্কাই এ দিন সত্যি হল৷ যদিও বুধবার সংসদ সভাপতি ওই নির্দেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন৷ কিন্ত্ত তার অনেক আগে থেকেই জেলায় জেলায় শুরু হয়ে যায় বিক্ষোভ৷
সন্তোষপুরের ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যালয়ে দ্বাদশ শ্রেণির ২৯ জন ছাত্রী উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্টে ফেল করে৷ তাদের দাবি, সকলকে পাশ করিয়ে দিতে হবে৷ ওই ফেল করা পড়ুয়াদের আরও অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষ বাংলায় মাত্র ১ পাওয়া সত্ত্বেও কাউকে কাউকে পাশ করিয়ে দিয়েছে৷ আবার অনেককে ২০ নম্বর পর্যন্ত গ্রেস দেওয়া হয়েছে৷ এই ইস্যুতে সোমবার থেকে টানা প্রায় ২২ ঘণ্টা প্রধান শিক্ষিকা এবং অন্য শিক্ষিকাদের ঘেরাও করে রাখে ছাত্রীরা৷ তাদের সঙ্গ দেন অভিভাবকরাও৷ স্কুল-কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এতে অনেক বহিরাগতও ছিল৷
মঙ্গলবার দুপুর থেকেই বিভিন্ন চ্যানেলে এই খবর সম্প্রচারিত হতে থাকে৷ বুধবার সংবাদপত্রেও এই খবর বের হয়৷ অনেক স্কুলেই এ দিনের সংবাদপত্রের কাটিং নিয়ে বিক্ষোভ দেখায় পড়ুয়ারা৷ তাদের বক্তব্য, সন্তোষপুরের স্কুলে যদি সংসদ ফের পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দিতে পারে, তবে সব স্কুলেই সেটা হওয়া উচিত৷ তখনও অবশ্য সংসদ আগের দিনের সিদ্ধান্ত বদল করেনি৷ বেলা দেড়টায় সাংবাদিক বৈঠক ডেকে সংসদ জানায়, সন্তোষপুরের ওই স্কুল নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে৷ এ ব্যাপারে সংসদ কোনও হস্তক্ষেপ করবে না৷
এ দিন মুর্শিদাবাদে লালগোলার শেখালিপুর হাইস্কুল এবং বহরমপুরে গোরাবাজার বিজয়কুমার হাইস্কুলে ক্লাস শুরু হওয়ার পরই বিক্ষোভে নেমে পড়ে পড়ুয়ারা৷ তালা বন্ধ করে আটকে রাখা হয় শিক্ষিকাদের৷ ক্লাস চলছিল বলে শেখালিপুর স্কুলে আটকে পড়ে একাদশ শ্রেণির ছাত্রীরাও৷ কর্তৃপক্ষ পুলিশের সাহায্য না নেওয়ায় সন্ধ্যা পর্যন্ত সকলকে বন্দি হয়ে থাকতে হয়৷ রাতে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়৷ বিজয়কুমার স্কুল থেকে পুলিশে খবর দেওয়া হয়৷ পুলিশ এসে তালা খুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উদ্ধার করে৷ জেলা স্কুল পরিদর্শক বিমল পাণ্ডে জানান, স্কুলগুলিকেই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে৷
শেখালিপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইন শরাফি জানান, উচ্চ মাধ্যমিকে ৩৯ এবং মাধ্যমিকে ২১ জন ফেল করে৷ শনিবার তাদের অভিভাবকদের ডেকে খাতা দেখানোও হয়৷ তাঁরা সন্ত্তষ্ট হয়ে বাড়ি ফিরে যান৷ কিন্ত্ত বুধবার কাগজে সন্তোষপুরের ঘটনা দেখে পড়ুয়ারা বিক্ষোভ দেখাতে আসে৷ তাঁর দাবি, সন্তোষপুরের ঘটনার পরই ছাত্র-ছাত্রীরা সাহস পেয়ে গিয়েছে৷ গোরাবাজারের বিজয়কুমার হাইস্কুলে মাধ্যমিকের টেস্টে ফেল করে ৩২ জন৷ প্রধান শিক্ষক মলয় পালও বলেন, 'সন্তোষপুরের খবর দেখেই পড়ুয়ারা উদ্বুদ্ধ হয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে৷ সবাইকেই যদি পাশ করাতে হয়, তবে স্কুলে পড়াশোনার কোনও পরিবেশ থাকবে না৷ এর পর তো প্রতি বছরই এরকম অন্যায় আবদার করবে ছাত্রছাত্রীরা৷'
কালনার কৃষ্ণদেবপুর বালিকা বিদ্যালয়ের ২৭ জন ছাত্রী মাধ্যমিকের টেস্টে ফেল করেছে৷ পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবিতে স্কুলের গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে তারা দিনভর বন্দি করে রাখে শিক্ষিকাদের৷ শেষে অবশ্য ছাত্রীদের চাপে এবং শিক্ষিকাদের ভাষায় 'পারিপার্শ্বিক চাপের' কাছে নতি স্বীকার করতে হয় কর্তৃপক্ষকে৷ বর্ধমানে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আঞ্চলিক অফিসে যোগাযোগ করার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং পরিচালন সমিতি বিভিন্ন বিষয়ে ২, ৩, ৪, ৭ পাওয়া ছাত্রীদের টেস্টে পাশ করিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ সেটা জানার পর ছাত্রীরা গেটের তালা খুলে শিক্ষিকাদের মুক্তি দেয়৷ পারিপার্শ্বিক চাপ কী, সেটা অবশ্য শিক্ষিকারা পরিষ্কার করেননি৷ তাঁদের অভিযোগ, ঘটনাস্থলে এলেও তালা খুলে দেওয়ার কোনও তত্পরতা পুলিশ দেখায়নি৷ শিক্ষিকারা 'লজ্জাজনক এবং কষ্টদায়ক' সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও রকমে রেহাই পেয়েছেন৷
উত্তর শহরতলির সিঁথিতে কস্ত্তরবা কন্যা বালিকা বিদ্যাপীঠেও উচ্চ মাধ্যমিকের ফেল করা ছাত্রীরা পাশ করানোর দাবিতে শিক্ষিকাদের প্রায় চার ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখে৷ তাদের সঙ্গে পুলিশের বেশ হাতাহাতিও হয়৷ পরে অবশ্য ঘেরাও উঠে যায়৷ এ দিকে উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরে আবার অন্যরকম ঘটনা ঘটেছে৷ সেখানকার ঋষি অরবিন্দ বিদ্যা নিকেতনের শিক্ষকদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক স্কুলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন৷ এই ইস্যুতে এ দিন শিক্ষকরা তাঁকে চার ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখেন৷ পরে তিনি ক্ষমা চাওয়ায় ঘেরাও তুলে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন স্কুলের সম্পাদক অরুণ ব্রহ্ম৷
শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য রুখতে কড়া বার্তা শিক্ষামন্ত্রীর
ডিজিটাল ডেস্ক
কলকাতা, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১২
শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য রুখতে কড়া মনোভাব ব্যক্ত করল রাজ্য সরকার। বুধবার সকালে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন সন্তোষপুর ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যাপীঠের অকৃতকার্য ছাত্রীদের আর কোনও পরীক্ষা নেওয়া হবে না। এদিন সকালে এই বিষয়ে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর প্রাথমিক কথা হয়। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
স্কুল চত্বরে বিক্ষোভ ঘেরাও আমাদের নীতির পরিপন্থী। এই ধরনের পরিস্থিতি আমরা বরদাস্ত করব না। শিক্ষামন্ত্রীর এই ঘোষণার পরে গোটা পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হল তাতে সন্দেহ নেই। ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যাপীঠের ২৯ জন টেস্টে ফেল করা ছাত্রী পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবি তুলে সোমবার দুপুর থেকে টানা ২২ ঘণ্টা শিক্ষিকাদের ঘেরাও করে রাখে। মঙ্গলবার দুপুরে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের কর্তাব্যক্তিরা এসে পরিস্থিতি সামাল দেন। তখন ঠিক হয় উচ্চমাধ্যমিকের টেস্টে ফেল করা ছাত্রীদের সঙ্গে গ্রেস মার্ক পেয়ে পাশ করা ছাত্রীদেরও পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া হবে। সংসদের এই সিদ্ধন্তে বিভিন্ন মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। প্রশ্ন ওঠে শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে। এই ঘটনার সূত্র ধরে পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবিতে শিক্ষকদের ওপর চড়াও হয় বেহালার রুক্মিনী বয়েজ হাইস্কুলের ছাত্ররা। বুধবার সকালে শিক্ষামন্ত্রীর কড়া পদক্ষেপে রাজ্য সরকার এই বার্তাই দিল যে ছাত্র ছাত্রীদের অন্যায় আবদার কোনওভাবেই মানবে না সরকার।
শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার পরেই জরুরি বৈঠকে বসেছে সংসদ। স্কুলে আদৌ পরীক্ষা হবে কী না তা নিয়ে আলোচনা হয়। তবে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, অকৃতকার্য ছাত্রীদের পরীক্ষা নেওয়া বা না নেওয়া সম্পূর্ণ নির্ভর করছে স্কুল কর্তৃপক্ষের ওপর। মঙ্গলবারের অনভিপ্রেত ও অভূতপূর্ব পরিস্থিতিকে সামাল দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আজ সকালে সংসদ সভাপতি মুক্তিনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এই ঘেরাও, বন্ধ পুরনো রোগ। এসব আমরা বরদাস্ত করব না। এটা আমাদের নীতির পরিপন্থী। স্কুলের শিক্ষিকারাই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন তাঁরা পুনরায় পরীক্ষা নেবেন কিনা। মঙ্গলবার সকালে ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষিকা শ্রীমতি ঘোষ বলেন বেলা পর্যন্ত আমি এখনও সংসদের লিখিত বা মৌখিক নির্দেশ পায়নি। শুনেছি সংসদ কর্তৃপক্ষ এই বিষয় নিয়ে বৈঠকে বসেছে। যে ছাত্রীরা মঙ্গলবার বিক্ষোভ দেখিয়েছে তারা প্রত্যেকেই আমার সন্তানতুল্য। আমি চাই না কারও ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পডুক। দেখি সংসদ কী সিদ্ধান্ত নেয় তার ভিত্তিতে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ ঘোষণা করব।
কলকাতা: ফেল করলেও পাস করিয়ে দিতে হবে, এই দাবিতে শিক্ষিকাদের রাতভর ঘেরাও করে রাখা সন্তোষপুরের ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যাপীঠের ছাত্রীদের পাশে মঙ্গলবার দাঁড়িয়ে প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিয়েছিলেন নিজেই।বুধবার যখন জানা গেল, সন্তোষপুরের 'আন্দোলন'সংক্রামিত হয়েছে সিঁথি থেকে কালনা, লালগোলা থেকে গোরাবাজার, আসানসোল থেকে বরানগরে, ফেল করা ছাত্রছাত্রীদের পাসের দাবিতে স্কুলে স্কুলে বিক্ষোভ, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ঘেরাও চলছে, তখন চাপে পড়ে ভুল স্বীকার করে নিলেন উচ্চ মাধ্যমিক সংসদ সভাপতি মুক্তিনাথ চট্টোপাধ্যায়৷ ঘুরপথে ফেল করা পড়ুয়াদেরই সমর্থন করে চাপে পড়ে সুর বদল করে এদিন রাতে তিনি বলেন, সন্তোষপুরের ওই স্কুলের ছাত্রীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে স্কুলই৷ এমনকী ওই স্কুলের বিরুদ্ধে অসচ্ছতার অভিযোগ এনেও পরে তথ্যগত ফারাকের কথা স্বীকার করেন তিনি৷ বলেন, যা ঘটেছে, তা অনভিপ্রেত৷ শিক্ষিকাদের সম্মানহানি চাই না৷
কিন্তু আজ সারাদিনের ঘটনাবলী থেকে এমনই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল যে, তিনি ফেল করা ছাত্রীদের দাবিকেই মান্যতা দিচ্ছেন৷
গতকাল ফেল করা পড়ুয়াদের ফের পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সংসদ৷ এমনকী স্কুলের উত্তরপত্রও সিল করে নিয়ে আসা হয়েছিল সংসদে৷ এই এক্তিয়ার আছে কিনা প্রশ্ন ওঠার পাশাপাশি আশঙ্কিত শিক্ষা মহল জানিয়েছিল, নতুন করে পরীক্ষার নির্দেশের মাধ্যমে ফেল করা পডুয়াদের দিকেই হাত বাড়িয়ে দিল সংসদ৷ তারা অকৃতকার্য হলেও তাদের ফের সুযোগ দেওয়া হল যা শিক্ষা জগতের প্রতিষ্ঠিত নিয়ম-রীতির বিরোধী৷।স্বাভাবিরভাবেই প্রশ্ন-বিতর্ক ওঠে, তাহলে কি পড়াশোনা না করে ফেল করে বাইশ ঘণ্টা অবরোধ করলেই পাস করার একটা সুযোগ করে দেওয়া হবে? এই প্রশ্নের মুখে ঘনিষ্ঠ মহলে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানান, সন্তোষপুরের স্কুলে নতুন করে পরীক্ষার বিরুদ্ধে তিনি৷ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার স্কুলের উপরই ছেড়ে দিতে বলেন তিনি৷ আর তারপরই যা ছিল সংসদের 'নির্দেশ', তা-ই বদলে যায় 'অনুরোধ'-এ৷ স্কুলের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ করা যে অনুচিত, এটা মেনে নিয়েও বুধবার প্রকারান্তরে ফেল করা ছাত্রীদের পাস করানোরই অনুরোধ করা হয় সংসদের তরফে৷ সংসদ সভাপতি মুক্তিনাথ চট্টোপাধ্যায় সন্তোষপুরের ওই স্কুলকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেন৷ যদিও রাতভর প্রধান শিক্ষিকা ও অন্যদের ঘেরাও হয়ে থাকতে হলেও ফেল করা ছাত্রীদের পাস করানোর বিরুদ্ধে স্কুল অনড় মনোভাব বজায় রাখে৷ সেক্ষেত্রে পড়ুয়াদের স্বার্থে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অর্থ প্রকারান্তে ফেল করাদের উত্সাহিত করাই৷ সন্তোষপুরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আজই লালগোলা, বেহালা, সিঁথির একাধিক স্কুলে দেখা যায়৷ সিঁথি কস্তুরবা কন্যা বিদ্যাপীঠে উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্টে অকৃতকার্য স্কুলের ২৯ জন ছাত্রী৷ প্রথমে খাতা দেখানোর দাবি করলেও সন্তোষপুরকাণ্ডের পর ছাত্রীদের নয়া দাবি, পাস করিয়ে দিতে হবে৷ সকাল ১১টা থেকে শিক্ষিকাদের ঘেরাও করা হয়৷ চলে বিক্ষোভ৷ সামিল হন অভিভাবকরাও৷
কালনা কৃষ্ণদেবপুর উচ্চবালিকা বিদ্যালয় মাধ্যমিকের টেস্টে অকৃতকার্য ২৭ জন ছাত্রী৷ ফেল করা ছাত্রীদের পাসের দাবিতে স্কুলে বিক্ষোভ৷ বুধবার স্কুলে ঢুকে শিক্ষিকাদের ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান ওই ছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকরা৷ লালগোলা সেখালিপুর হাইস্কুল উচ্চমাধ্যমিক ও মাধ্যমিকের টেস্টে ফেলের পরও পাসের দাবি৷ মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক মিলিয়ে মোট ৬০ জন ছাত্রী টেস্টে ফেল করেছে৷ এদিন সকালে সংবাদপত্রের কাটিং নিয়ে স্কুলে বিক্ষোভ দেখান ছাত্রী এবং তাঁদের অভিভাবকরা৷ টিচার্স রুমে তালাও ঝুলিয়ে দেওয়া হয়৷ তাঁদের প্রশ্ন, সন্তোষপুরে হলে এখানে হবে না কেন?
মহম্মদ শাহিন সারাফি, প্রধান শিক্ষক, লালগোলা সেখালিপুর হাইস্কুল
স্কুলের স্পষ্ট ঘোষণা, পাস করানো সম্ভব নয়৷
গোরাবাজার বিজয়কুমার হাইস্কুল বহরুমপুরের এই স্কুলে মাধ্যমিকের টেস্টে ৩২ পাস করতে পারেনি৷ সন্তোষপুরের উদাহরণ তুলে সবাইকে পাস করানোর দাবিতে এদিন দুপুরে বিক্ষোভ দেখায় ছাত্রীরা৷
আসানসোল মণিমালা গার্লস হাইস্কুল৷ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের টেস্টে অকৃতকার্য ১৬ জন ছাত্রীকে পাস করাতে হবে৷ কোনও ছাত্রী বিক্ষোভ নয়৷ অশ্রুসজল চোখে দাবি অভিভাবকদের৷ ঘেরাও প্রধান শিক্ষিকা৷ আসানসোল থানার পুলিশ এসে উদ্ধার করে তাঁকে৷ সিদ্ধান্তে অনড় স্কুল৷
বরানগরের প্রশান্তচন্দ্র মহালনবিশ মহাবিদ্যালয় পাস করানোর দাবিতে অধ্যক্ষকে ঘেরাও অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রীদের৷ উত্তেজনা উত্তেজনা আশ্বাস পেয়ে ঘেরাও ওঠে সন্ধ্যায়৷ গত বছর পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন ৩০জন ছাত্রছাত্রী৷ জুলাইতে ফের বিএসসি পার্ট থ্রি পরীক্ষা দেন তাঁরা৷ অভিযোগ, ভুল প্রশ্ন দেওয়া হয়৷ ছাত্রছাত্রীদের দাবি, কলেজ কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দেয়, সবাইকে পাস করিয়ে দেওয়া হবে৷ কিন্তু ফল বেরোলে দেখা যায়, সবাই ফেল করেছেন৷
জায়গায় জায়গায় এহেন পাস করানোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ সভাপতি বলেন, স্কুল পরামর্শ চাইলে বিকল্প পথের সন্ধান দেবে সংসদ৷
কিন্তু ফেল করা ছাত্রীদের স্বার্থে বিকল্প পরামর্শ কী হতে পারে? শিক্ষা মহলের বক্তব্য, এক্ষেত্রে তিনটি পথ আছে৷ ফেল করা পড়ুয়াদের সরাসরি পাস করিয়ে দেওয়া৷ অকৃতকার্যদের ফের পরীক্ষার ব্যবস্থা৷ অসফল ছাত্রীদের উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়ন করা৷ তাতেই প্রশ্ন ওঠে, অকৃতকার্যদের জন্য এত দরদ কেন সংসদের? তা হলে পড়াশোনা না করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাগাতার ঘেরাও করলেই কি প্রকারান্তরে পাস করানোর পথ প্রশস্ত করছে না সংসদ? আগে ফেল করে অনেকেই মুখ লুকোত এখন তাদের স্কুলের শিক্ষকদের ঘেরাও করার ব্যাপারেও কি উত্সাহ দিতেই কি সংসদের এত দরদ?
http://abpananda.newsbullet.in/kolkata/59-more/31575-2012-12-19-07-53-18
ফেলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা অনুরোধ জানাল সংসদ
আনন্দবাজার – বুধ, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১২
ফেলদের পাশের অনুরোধ, 'প্যান্ডোরার বাক্স' খুলল সংসদ!
সন্তোষপুরে একটি স্কুলে অকৃতকার্য ছাত্রীদের ঘেরাওকাণ্ডে সিদ্ধান্ত বদলের ইঙ্গিত দিয়েও আরও জটিলতা ও বিভ্রান্তি বাড়াল উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। ফেলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করুক স্কুল কর্তৃপক্ষ, চাপ বাড়িয়ে অনুরোধ সংসদের। পরোক্ষে ফেল করা ছাত্রীদের পাসের দাবিকেই সমর্থন জানিয়ে সংসদ প্যান্ডোরার বাক্স খুলল বলে মনে করছে শিক্ষা মহল।
এর ফল ইতিমধ্যেই ফলতে শুরু করেছে সন্তোষপুরকাণ্ডের জের। ফেল করা ছাত্রছাত্রীদের পাসের দাবিতে স্কুলে বিক্ষোভ। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ঘেরাও। সিঁথি থেকে লালগোলা কাটোয়া থেকে গোরাবাজার-- সর্বত্রই এক ছবি।
সন্তোষপুরে ঘেরাও কাণ্ডে কাল ছিল যা নির্দেশ আজ হল অনুরোধ। সন্তোষপুরের ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যাপীঠের ফেল করা ছাত্রীদের ঘুরপথে পাশ করানোর অনুরোধ করল উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মুক্তিনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে দেখুক স্কুল কর্তৃপক্ষ। যদিও, সংসদের বক্তব্য কোনও নির্দেশ নয়, এটা স্রেফ অনুরোধ। স্কুলই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবে। পাশাপাশি, এই সমস্যায় জর্জরিত অন্য কোনও স্কুল সংসদের দ্বারস্থ হলে সংসদ সমাধানের বিকল্প রাস্তার সন্ধান দেবে। তবে সে রাস্তা কী, তা স্পষ্ট করেননি সংসদ কর্তারা। কিন্তু ফেল করাকে সরাসরি পাস করানো, উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়ন ও ফের পরীক্ষা নেওয়া ছাড়া অন্য কোনও রাস্তা নেই বলেই মনে করছে শিক্ষা মহল।
উল্লেখ্য, টেস্ট-এ ফেল করা সত্ত্বেও পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবিতে টানা ২২ ঘণ্টা শিক্ষিকাদের ঘেরাও করে রাখে সন্তোষপুরের ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যাপীঠের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীরা। আর সেই দাবির কাছে কার্যত মাথা ঝুঁকিয়ে মঙ্গলবার উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের পক্ষ থেকে ফেল করা এবং গ্রেস নম্বর পেয়ে পাশ করা ছাত্রীদের নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার ফরমান দেওয়া হয়। যে ফরমান শিক্ষা জগতে ইদানীং বেড়ে চলা নৈরাজ্যে নতুন মাত্রা জুড়েছে বলেই অভিমত প্রকাশ করে শিক্ষা মহল। বিভিন্ন মহলের সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এদিন সকাল থেকেই মনে করা হচ্ছিল ফেল করা ছাত্রীদের পুনরায় পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করার নির্দেশ থেকে পিছু হঠবে সংসদ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু গতকালই পুনরায় পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত সমর্থন করেননি এদিন তিনি বলেন, এব্যাপারে তাঁর সঙ্গে সংসদের কথা হয়েছে স্কুলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা স্কুলেরই। সংসদ খুব শীঘ্রই স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবে সংসদ সভাপতিও জানিয়েছিলেন, শিক্ষামন্ত্রী স্কুলে ঘেরাওয়ের ঘটনায় উদ্বিগ্ন শিক্ষামন্ত্রী সংসদকে বলেছেন, স্কুলের এক্তিয়ারে সংসদ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তবে তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানানোর ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছিলেন। শেষপর্যন্ত আজ এক সাংবাদিক সম্মেলনে স্কুল কর্তৃপক্ষকে ফেল করা ছাত্রীদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানান।
ফের অধ্যাপিকা 'নিগ্রহ', অভিযুক্ত সুলতান!
প্রকাশ সিংহ ও গোপাল চট্টোপাধ্যায়, এবিপি আনন্দ
সরকারে আসার পর থেকেই শিক্ষায় দলতন্ত্র মুক্তির কথা বলেছেন মু্খ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কিন্তু তাঁর সরকারের আমলেই বারবার শিক্ষায় সরকারি দখলদারির অভিযোগ উঠেছে৷ কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে তাঁর দলের নেতাদেরই৷ আজ যেমন অভিযোগের আঙুল উঠেছে সুলতানের দিকে, ঘটনাচক্রে যিনি বেনিয়াপুকুরের মিল্লি আল আমিন কলেজে পরিচালন সমিতির সভাপতি! এদিন সমিতির বৈঠক চলছিল৷ সেখানে ছিলেন সুলতান৷ ওই কলেজের অধ্যাপিকা জারিনা খাতুনের অভিযোগ, উচ্চশিক্ষা সংসদের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই ওই বৈঠক ডাকা হয়৷ তিনি প্রতিবাদ করায় তাঁকে সুলতানের সামনেই ধাক্কা দিয়ে বৈঠক থেকে বের করে দেওয়া হয়৷ এ ব্যাপারে যাঁর দিকে আঙুল উঠেছে, তিনি কলেজের পরিচালন সমিতির সম্পাদক মহম্মদ জাহাঙ্গীর৷ তিনি সুলতান-ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত৷ জারিনার আরও অভিযোগ, ঘটনার পর থেকে তাঁকে ও কলেজের দুজন অধ্যাপিকাকে ক্রমাগত হুমকি দেওয়া হচ্ছে৷
যদিও অধ্যাপিকার যাবতীয় অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে সুলতানের পাল্টা দাবি, এরকম কোনও ঘটনাই ঘটেনি৷ এর নেপথ্যে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রই দেখছেন তিনি৷
ভাঙড়ের কলেজে অধ্যাপিকা নিগ্রহ, রায়গঞ্জে অধ্যাপককে তৃণমূলী ছাত্রদের মারধর, এমন নৈরাজ্যের জেরে এই প্রশ্নও উঠেছে, কেন স্কুল-কলেজ পরিচালন সমিতিতে রাজনীতির লোকজন ছড়ি ঘোরাবেন! মুখ্যমন্ত্রী শিক্ষার জগতে দল-রাজনীতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করার কথা বললেও বাস্তব হল, অধিকাংশ কলেজের পরিচালন সমিতি আলো করে রয়েছেন তৃণমূল নেতারা৷ এদিনই বীরভূমে একটি অনুষ্ঠানে কারিগরী শিক্ষামন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজনীতির জায়গা নয়৷ সেখানে রাজনীতি নয়, প্রাধান্য পাবে শিক্ষা-ই৷ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতির অনুপ্রবেশের জেরেই গণ্ডগোল হচ্ছে৷ এমনটা আর বরদাস্ত করব না৷ শিক্ষাক্ষেত্রে গণ্ডগোল হলে অধ্যক্ষ বা সভাপতি কাউকেই ছেড়ে দেওয়া হবে না৷ কিন্তু তিনি যেদিন এই হুঁশিয়ারি দিলেন, সেদিনই আরও একটি অধ্যাপিকা নিগ্রহের অভিযোগ উঠল।অতীতে তৃণমূলী সাংসদ সৌগত রায়ও শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন।শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রসঙ্গ টেনে নাম না করে তিনি নিশানা করেন ভাঙড়কাণ্ডে অভিযুক্ত আরাবুলকে৷ প্রাথমিকভাবে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু তাঁর পাশে দাঁড়ালেও পরে অবস্থান বদল করেন৷ কিন্তু তারপরও পরিচালন সমিতিতে থাকার জন্য ফের শিক্ষাগত যোগ্যতার পক্ষে সওয়াল করে সৌগতবাবু বুঝিয়ে দেন, তিনি তাঁর অবস্থানে অনড়৷ সৌগতবাবুর মতোই ফের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিমুক্ত করার পক্ষে সওয়াল করলেন রবিরঞ্জনবাবু। কিন্তু তাঁরা যতই মুখ খুলুন না কেন, শিক্ষার আঙিনায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দাপট বহাল রয়েছে।
তাই সংশয়, প্রশ্ন উঠতে বাধ্য, মন্ত্রীর হুঁশিয়ারি স্রেফ কাগুজে বিবৃতিই থেকে যাবে না তো!
http://abpananda.newsbullet.in/state/34-more/30310-2012-11-17-12-52-26
ফেল করা শিক্ষার্থীদের দায়িত্বও আমার: শিক্ষামন্ত্রী
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা: পাবলিক পরীক্ষায় ভালো প্রতিষ্ঠানের মাপকাঠি ইতোমধ্যে পরিবর্তন করে অনেকখানি সর্বজনীন করা হয়েছে। আরো সঠিক করার প্রচেষ্টা চালানো হবে। তবে আমি শতভাগ ছাত্রছাত্রীর হিসাব চাই। ফেল করা, ঝরে পড়া ছাত্রছাত্রীরাও আমার শিক্ষার্থী। তাদের দায়িত্বও বহন করতে হবে।
মঙ্গলবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ড আয়োজিত জেএসসি পরীক্ষা-২০১১, এসএসসি পরীক্ষা-২০১২ ও এইচএসসি পরীক্ষা-২০১২-এর শীর্ষ ২০ প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এসব কথা বলেন।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ফাহিমা খাতুনের সভাপতিত্বে অনষ্ঠানে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান, সিটি কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ড. ফরাশ উদ্দিন, ঢাকা কমার্স কলেজের সভাপতি প্রফেসর শফিকুল আহমেদ সিদ্দিক, ঢাকা নটরডেম কলেজের অধ্যক্ষ প্যাট্রিক ডি কস্তা, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ আয়েশা বেম প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "এদেশের পাবলিক পরীক্ষায় গুণগত পরিবর্তন এসেছে। এখন এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ পূর্ব নির্ধারিত ও সুনির্দিষ্ট করা আছে। তা যথাক্রমে ১ ফেব্রুয়ারি ও ১ এপ্রিল। ফলাফল ৬০ দিনের মধ্যে। বিগত ৮টি পরীক্ষায় তার কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। নকলমুক্ত পরীক্ষার পাশাপাশি এখন পরীক্ষা হয় উৎসবমুখর পরিবেশে। দীর্ঘ অধ্যবসায়ের পর কঠোর সাধনার ফল পাবার উৎসব এটি।"
মন্ত্রী বলেন, "এখন পরীক্ষার হলগুলোতে যে কেউ ইচ্ছা করলেই ঢুকে পড়তে পারে না। ৯০ শতাংশের অধিক প্রতিষ্ঠানে এখন ৫০ শতাংশের অধিক শিক্ষার্থী পাশ করে। রাজধানী ও বিভাগীয় শহরের বাইরের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন ভালো ফলাফল করছে।"
তিনি বলেন, "আমরা পরীক্ষার সংখ্যা কমিয়েছি। এখন আর ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা দিতে হচ্ছে না। এখন সব ছাত্রছাত্রীদের প্রতি যত্ন নিয়ে ভালো ফলাফল করানোর চেষ্টা করা হয়।"
নাহিদ বলেন, "জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে বর্তমান সরকার এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি গুণগত পরিবর্তন সাধন করতে সক্ষম হয়েছে। এখন প্রতিবছর জানুয়ারিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সোয়া তিন কোটি ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ২৩ কোটি নতুন বই তুলে দিয়ে ক্লাস শুরু করা, ১ জুলাই কলেজের ক্লাস শুরু করা, সৃজনশীল পদ্ধতির প্রশ্নপত্র চালু, কারিকুলাম যুগোপযোগী করা, সর্বস্তরে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করা, ২০ হাজার ৫০০ স্কুলে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ চালু, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে শিক্ষাখাতের পরিবর্তন সাধিত হয়েছে এবং হচ্ছে।"
তিনি বলেন, "তবে এখনো আমাদের সংগ্রাম শেষ হয়নি। সর্বস্তরে মানোন্নয়নের চ্যালঞ্জ, ছাত্রছাত্রীদের স্কুল-কলেজে ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ, উচ্চ শিক্ষার চ্যালেঞ্জ, কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণের চ্যালেঞ্জ আমাদের আছে।"
মন্ত্রী শিক্ষকদের নিবেদিতপ্রাণ হয়ে নতুন প্রজন্মকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত প্রযুক্তিতে দক্ষ নৈতিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ দেশপ্রেমিক সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
২০১১ সালের জেএসসি পরীক্ষায় শীর্ষ ২০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
১ম রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ২য় মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, ৩য় মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ, ৪র্থ ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ, ৫ম ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, ৬ষ্ঠ ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ, ৭ম বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ৮ম ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কঠেজ, টাঙ্গাইল, ৯ম সেন্ট জোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১০ম ময়মনসিংহ জেলা স্কুল, ১১তম হলিক্রম গার্লস হাই স্কুল, ১২তম বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ১৩তম মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ১৪তম মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, ১৫তম সামসুল হক খান স্কুল এন্ড কলেজ, ১৬তম এন কে এম হাই স্কুল অ্যান্ড হোমস, নরসিংদী, ১৭তম উত্তরা হাই স্কুল, ১৮তম বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯তম গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল এবং ২০তম টংগী শফিউদ্দিন সরকার একাডেমি অ্যান্ড কলেজ।
২০১২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় শীর্ষ ২০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
১ম রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ২য় সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ৩য় মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ৪র্থ ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ৫ম ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ, ৬ষ্ঠ মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ, ৭ম মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, ৮ম মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, ৯ম ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ, ১০ম ময়মনসিংহ কলেজ, ১১তম গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, ১২তম মতিঝিল মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ১৩তম হলিক্রস গার্লস হাই স্কুল, ১৪তম সেন্ট জোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৫তম উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৬তম মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ১৭তম ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ১৮তম বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ১৯তম শহীদ বীর উত্তম লেঃ আনোয়ার গার্লস কলেজ এবং ২০তম ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়।
২০১২ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় শীর্ষ ২০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
১ম রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ২য় আব্দুল কাদির মোল্লা, ৩য় ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ, ৪র্থ ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ৫ম নটরডেম কলেজ, ৬ষ্ঠ ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ, ৭ম মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ, ৮ম ঢাকা সিটি কলেজ, ৯ম ন্যাশনাল আইডিয়াল কলেজ, ১০ম এসওএস হারম্যান মেইনার কলেজ, ১১তম মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ১২তম হলিক্রস কলেজ, ১৩তম ক্যামব্রিয়ান কলেজ, ১৪তম শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ, ১৫তম ঢাকা কলেজ, ১৬তম শহীদ বীর উত্তম লেঃ আনোয়ার গার্লস কলেজ, ১৭তম বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ১৮তম ঢাকা কর্মাস কলেজ, ১৯তম সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং ২০তম আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১২
এমএন/সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে তোলাবাজির অভিযোগ করলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। আজ রানী রাসমণি রোডে প্রাথমিক শিক্ষকদের এক সমাবেশে বিরোধী দলনেতা অভিযোগ করেন, টাকা দিলেই পছন্দের পোস্টিং পাওয়া যাচ্ছে। এদিনের অনুষ্ঠানে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু মনে করিয়ে দেন, সত্তরের দশকে নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে শিক্ষকরা রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই একই পথে শিক্ষক আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তিনি।
তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ কয়েকদিন আগেই মুখ খুলতে দেখা গেছে প্রাক্তন কৃষি মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে। এবার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে তোলাবাজির অভিযোগ তুললেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও। রানী রাসমণি রোডে প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের সমাবেশে এদিন হাজির ছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুও। সত্তরের দশকে শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্যের সঙ্গে এই সময়ের তুলনা করেন তিনি। শুধুমাত্র দাবি জানানো নয়, দাবির জন্য শিক্ষকদের আন্দোলনে নামার ডাক দেন তিনি। চারটি বামপন্থী সংগঠনের ডাকা এদিনের সমাবেশের পর রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন শিক্ষক শিক্ষিকারা। সংগঠনগুলির তরফে তাঁর কাছে দাবিপত্র দেওয়া হয়।
http://zeenews.india.com/bengali/kolkata/surya-kanta-misra-on-primary-education-system_9775.html
ব্রাত্য বসুর বিধান
কৃষ্ণেন্দু অধিকারী,এবিপি আনন্দ
Wednesday, 17 October 2012
কলকাতা: এমএ, এমএসসসি পাস করলেই উচ্চশিক্ষিত, আর ডিগ্রি না থাকা মানেই অর্ধশিক্ষিত নয়৷ সৌগত রায়ের মত খারিজ করে মন্তব্য শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর৷ নাম না করেও কলেজ পরিচালনার ক্ষেত্রে পাশে দাঁড়ালেন আরাবুল ইসলামদেরই৷ বললেন, পরিচালন সমিতির সভাপতিদের শিক্ষাগত যোগ্যতার মাপকাঠি নিয়ে ভাবনা রয়েছে দলের৷ সরকারেরও৷ এবিষয়ে আলোচনা চান তিনি৷
কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির মাথায় কেন বসবেন রাজনৈতিক নেতা বা জনপ্রতিনিধিরা?
কেন গুরুত্ব পাবে না তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা?
ভাঙড় কলেজে অধ্যাপিকা নিগ্রহে আরাবুল ইসলামের দিকে অভিযোগের আঙুল ওঠার পর এই প্রশ্ন ঘিরে বিতর্ক প্রকাশ্যে এসেছিল৷ সেই বিতর্কই উস্কে দিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়৷ আশুতোষ কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি সৌগত রায় আক্ষেপ করেন, কেউ কেউ এইট পাস করেও পরিচালন সমিতির সভাপতি হচ্ছেন৷ ঘটনার পর সৌগতর পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী৷
কয়েকদিন পরেই উল্টো সুর শোনা যায় শিক্ষামন্ত্রীর৷
বুধবার সকালে বঙ্গবাসী কলেজের অনুষ্ঠানে ব্রাত্য বসু যুক্তি খাড়া করেন, এমএ বা এমএসসি পাস করা মানেই উচ্চশিক্ষিত, আর ডিগ্রি না থাকা মানেই অল্পশিক্ষিত নয়৷
শিক্ষামন্ত্রীর এই মন্তব্য ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে৷ শিক্ষাবিদদের মত, ক্রীড়াক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার যতটা গুরুত্ব, তার চেয়ে ঢের বেশি শিক্ষাক্ষেত্রে৷ আপাতভাবে, ডিগ্রি শিক্ষার মানদণ্ড কি না তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে৷ কিন্তু, যিনি কোনও কলেজের চৌকাঠ পেরোলেন না, তাঁর পরিচালন সমিতির মাথায় বসার প্রকৃত যোগ্যতা নেই৷
চাপের মুখে অবশ্য, ইতিবাচক শিক্ষামন্ত্রী৷ এবিপি আনন্দকে জানিয়েছেন, পরিচালন সমিতির সভাপতিদের শিক্ষাগত যোগ্যতার মাপকাঠি নিয়ে ভাবনা রয়েছে দলের৷ সরকারেরও৷ এবিষয়ে আলোচনা চান তিনি৷
প্রথমে সৌগতর পাশে, পরে, প্রকারান্তরে আরাবুলদের সমর্থন৷ এই অবস্থান বদলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা, মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়েই শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্য৷ অবশ্য, শিক্ষামন্ত্রীর ভাবনার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আশাবাদী শিক্ষামহল৷
http://abpananda.newsbullet.in/kolkata/59-more/29387-2012-10-17-12-21-02
প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারীং কলেজ: কিছু ঘটনা কিছু বক্তব্য
লিখছেন --- সুমন্ত
আপনার মতামত |
গত প্রায় মাসদুয়েক ধরে পশ্চিমবঙ্গের একের পর এক বেসরকারী ইঞ্জিনিয়ারীং কলেজে অশান্তি চলছে। এককালে রাজ্যব্যাপী শিল্পায়নের ধামাকার অংশ হিসেবে রাজ্যের কোণে কোণে যে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোকে অনেক ঘটা করে চালু করা হয়েছিল, সেখানে ছাত্রদের বিক্ষোভ, গোলমাল চলছেই। দুর্গাপুর-আসানসোল-বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুর থেকে শুরু করে বারুইপুর-সোনারপুর, এমনকি খোদ কলকাতার বেশ কয়েকটি কলেজেও চলেছে ঘেরাও, ক্লাস স্ট্রাইক। খবরের কাগজে যে খবর উহ্য থেকে গেছে। হতে পারে, শাইনিং ইন্ডিয়ার উজ্জ্বল ছবির সঙ্গে প্রদীপের নিচের এই অন্ধকারটি ঠিক খাপ খায়না বলে কাগজে এই খবর গুরুত্ব পায়নি। অথবা, এও হতে পারে, যে,বিশ্বব্যাপী মন্দা, লোকসভা ভোট, আইপিএল এবং আরও নানা গরম খবরের মধ্যে তুচ্ছ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলির সামান্য ছাত্রবিক্ষোভ সত্যিই তেমন গুরুত্ব দাবী করেনা। হাজার হোক, এলিট, ঐতিহ্যশালী প্রতিষ্ঠানগুলির খবর, যেমন, প্রেসিডেন্সির ছাত্র ইউনিয়ন নির্বাচন, বা যাদবপুরের র্যাগিং বা শিবপুরের ছাত্র সংঘর্ষ, বা আইআইটির ছাত্রের মৃত্যুর খবর তো সত্যিই জনতা "খায়' বেশি। সে তুলনায় বেসরকারী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের খবরের মূল্য কতটাই বা।
আপাত:দৃষ্টিতে এই গোলমালের কারণ হল, পরীক্ষার খারাপ ফলাফল। তারও অবশ্য একটা ইতিহাস আছে। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সাফল্যের একটা বড়ো মাপকাঠি হল "প্লেসমেন্ট'এর সংখ্যা। অর্থাৎ ক্যাম্পাস ইন্টারভিউ থেকে শেষ বর্ষের যত সংখ্যক ছাত্রছাত্রী সরাসরি বিভিন্ন শিল্পসংস্থায় চাকরি পাবে, তারই উপর নির্ভর করছে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের "খ্যাতি'। শিক্ষার এই বাজার-নির্ভর অর্থনীতিতে এই "খ্যাতি' খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই "খ্যাতি'ই পরবর্তী কালের ছাত্রদের টেনে আনবে কলেজে। বিভিন্ন বেসরকারী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অনেক ছাত্রই জানিয়েছেন, যে, গত সেমিস্টারের রেজাল্ট বের হবার আগে থেকেই কানাঘুষোয একটা গুজব শোনা যাচ্ছিল। শোনা যাচ্ছিল যে বিশ্বব্যাপী এই মন্দার বাজারে নিশ্চিতভাবেই ক্যাম্পাসিং-এ "প্লেসমেন্ট'এর হার কমবে। আর সেই কম প্লেসমেন্ট-এর দায় যাতে কলেজ কর্তৃপক্ষের ঘাড়ে না চাপে, সেজন্য পরিকল্পিতভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ করানো হবে। ফলে, এই নিয়ে একটা চাপা আতঙ্ক এবং টেনশন ছিলই।
এই খবর সত্যিই "খবর', না আশঙ্কা থেকে উদ্ভূত গুজব, তা জানা নেই। কিন্তু এ বছর ফেব্রুয়ারিতে সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশিত হতেই ছাত্রছাত্রীদের আশঙ্কা অনেকাংশে সত্যি প্রমাণিত হয়েছিল। পরীক্ষার ফল অভূতপূর্বভাবে খারাপ। এটা খবরের কাগজেই বেরিয়েছিল, যে, রাজ্য জুড়ে সব মিলিয়ে ফেল (সাপ্লিমেন্টারি) প্রায় ৪৭০০০ (পেপারের সংখ্যা)। সংখ্যাটি বিগত বছরের দ্বিগুণেরও বেশি। কিছু কিছু বিষয়ে কোনো কোনো কলেজের ৮০-৮৫% ছাত্র-ছাত্রী অকৃতকার্য। এছাড়াও হাতে-গোনা কয়েকটি কলেজ বাদ দিয়ে বাকি প্রায় কোথাও-ই ফলাফল ছাত্র-ছাত্রীদের আশানুরূপ হয় নি। এমনিতেই বিভিন্ন কারণে এই কলেজগুলোর ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে প্রচুর ক্ষোভ জমা হয়ে ছিল, এই ঘটনার পরেই, বারুদে আগুন লাগে। লাগাতার বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রায় কোনো কলেজেই কোনো ছাত্র ইউনিয়ন না থাকায় সব ক্ষোভের প্রকাশ হতে থাকে একের পর এক কলেজে ভাঙচুরের মধ্যে দিয়ে। বিভিন্ন কলেজের ম্যানেজমেন্ট অবশ্য এগুলোকে "ফেল করা ছাত্রদের কাজ' বলে দাবী করছেন। কিন্তু তাতে করে এক বছরে নাটকীয়ভাবে এত ছাত্র-ছাত্রীর এক সঙ্গে ফেল করার রহস্যের কোনো সমাধান হয়না।
এই "গণফেল' এর পিছনে আলাদা করে কোনো রহস্য থাকুক বা না থাকুক, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ব্যবস্থার ফাঁকফোকরগুলি কিন্তু স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছে এই লাগাতার বিক্ষোভ। মিডিয়ার এই নিয়ে বিশেষ মাথাব্যথা না থাকলেও, ওয়াকিবহাল মহল বুঝতে পারছেন, যে, পুরো ব্যবস্থাটিতেই বিরাট গন্ডগোল রয়ে গেছে। সাধারণভাবে, বেসরকারী ইঞ্জিনিয়ারীং কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কথা বললেই যে জিনিসগুলো জানতে পারা যায়-
১। পশ্চিমবঙ্গ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো নির্দিষ্ট সিলেবাস এত বছরেও তৈরি হয়েনি, বেশ কিছু বিষয়েই কোনো বিশদ সিলেবাস নেই। শুধু আউটলাইন আছে। যেগুলোতে সিলেবাস আছে, সেগুলো-ও অনেক সময়েই ছাত্র-ছাত্রীদের তো দূরের কথা, শিক্ষকদেরও জানা থাকে না। তাই প্রত্যেক পরীক্ষার সময়-ই দারুণ সমস্যার সম্মুখীন হয়, কোন বিষয়গুলোর কতটা তারা পড়বে, এই ভেবে।
২। পরীক্ষায় প্রশ্নের ধরণ নিয়েও গোলমাল আছে। এই বছরে পরীক্ষা পদ্ধতিও নির্দিষ্ট হয়নি, পরীক্ষার প্রশ্নাবলীরও ধরন-ধারন এখনও ঠিক হয়নি। এমনিতেও প্রশ্নানুযায়ী মার্কিংও প্রতিবছর এক থাকেনা। কলেজগুলোর একটা বড় সমস্যা কোনও কেন্দ্রীয় প্রশ্ন ব্যাঙ্ক না থাকা। বিষয়ভিত্তিক সিলেবাসের আউটলাইন থাকলেও সেটার ভিত্তিতে এক এক কলেজে এক এক রকম পড়ানো এবং এক এক রকম প্রস্তুতির সুযোগ থেকে যায়। তাই বিভিন্ন কলেজে পড়ানোর এবং প্রবলেম সল্ভিং এর ধরণের মধ্যে পার্থক্য থাকলে পরীক্ষার সময় ছাত্ররা মারাত্মক অসুবিধের মধ্যে পড়ে। বিভিন্ন কলেজের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের দিয়ে এককালীন পরিশ্রম দিয়েই একটা প্রশ্ন ব্যাঙ্ক বানিয়ে রাখা যেত - যা এই সমস্যাটা অনেকাংশে সমাধান করতে পারত। কর্তৃপক্ষ সেটুকুও এত বছরে করে উঠতে পারেন নি। পরিবর্তে পরীক্ষার আগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলেজের শিক্ষকদের কাছে প্রশ্ন চেয়ে পাঠানো হয়। উদ্দেশ্য হল প্রশ্নের একটা ভান্ডার তৈরী করে সেখান থেকে র্যান্ডমলি প্রশ্ন সেট করা। আপাত:দৃষ্টিতে উদ্যোগটি অত্যন্ত সাধু, যা নিয়ে কারো কিছু বলার থাকতে পারেনা। কিন্তু ছাত্রদের একাংশের অভিযোগ হল, বাস্তবে দেখা যায় অনেক বিষয়ের প্রশ্ন কোনো একটি কলেজের থেকে পাঠানো প্রশ্নের সাথে হুবহু মিলে গেছে। যা প্রমাণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে প্রভাব খাটানোর একটি অসাধু উদ্যোগও পাশাপশি সক্রিয়। ছাত্ররাও এটা বুঝে গেছে। তাই তারাও পড়াশুনো করার চাপ নেওয়ার বদলে কোন বছর কোন কলেজের পাঠানো প্রশ্ন আসতে চলেছে সেই তত্ত্বতালাশেই বেশী মনোযোগ দেয়। আর এই সুযোগে ব্যবসা করে চলেছে "ম্যাট্রিক্স' এর বই। এটা অন্য কিছু নয়, আমাদের ছোটোবেলার মানেবই এর বড়ো সংস্করণ। এক একটি সেমেস্টারের এক একটি বিষয়ের উপর এক একটি বই। ছোটো ছোটো প্রশ্ন-উত্তর ও সমস্যার সমাধান করা। অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষকরাই এই বই প্রকাশের সঙ্গে যুক্ত।
৩। কলকাতার বাইরের কলেজগুলো তো বটেই, খোদ কলকাতা আর পাশাপাশি অনেক কলেজে-ই ল্যাব এখনও তেমনভাবে তৈরি না হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের যথাযথ শিক্ষাদান সম্ভবপর নয়। অনেক কলেজের ল্যাব বলতে যেটা বোঝানো হয়, সেটা আসলে খানকুড়ি কম্পিউটার ঠাসা একটা এয়ার-কন্ডিশনড ঘর।
৪। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা প্রধানত কয়েকটি কলেজের মালিক-গোষ্ঠী দ্বারা কুক্ষিগত এবং সরকারের ভুমিকা সেখানে গৌণ। এছাড়াও, কলেজের সমস্ত বিষয়গুলো-ই কলেজ পরিচালক দ্বারা প্রভাবিত এবং ছাত্র-ছাত্রীদের সেখানে প্রায় কোনো ভুমিকাই থাকেনা। এমনকি কলেজ কর্তৃপক্ষ, ছাত্র ইউনিয়ন তৈরি করাতেও প্রত্যক্ষভাবে বাধা দিয়ে থাকেন।
৫। বেশীরভাগ কলেজগুলোতেই এখনপর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষিকার ভীষণ অভাব এবং তাদের উপস্থিতিও অনিয়মিত, ফলে অনেকসময়ে-ই নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্লাস হয়না, যার ফল ভোগ করে ছাত্র-ছাত্রীরা। অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকার উপযুক্ত যোগ্যতার-ও অভাব আছে বলে ছাত্র-ছাত্রীরা হামেশাই অভিযোগ করে থাকে। প্রচুর কলেজেই সদ্য বি.ই. পাস করা শিক্ষকরা ক্লাস নেন, এবং কিছুদিন পরে অন্য কোনো চাকরি জুটে গেলে ঐটা ছেড়ে চলে যান। একই সেমিস্টারে তিন-চারজন শিক্ষক বদল হয়েছে, এরকম ঘটনাও আছে। স্বাভাবিক ভাবেই এই বদলগুলোর মাঝে বেশ কিছুদিন ক্লাস হয় না।
অবশ্য শিক্ষকদের দৃষ্টিভঙ্গী থেকেও এ ব্যাপারে কয়েকটি কথা বলা উচিত। অনেকেরই ধারণা এই সমস্ত প্রাইভেট কলেজই এআইসিটিই স্বীকৃত, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা নয়। হাতে গোনা কয়েকটিমাত্র কলেজ আছে যেগুলির এই স্বীকৃতি আছে। বাকিদের কোর্সগুলো এআইসিটিই স্বীকৃত। কলেজগুলি নয়। এই টেকনিক্যাল তফাৎটা কার্যক্ষেত্রে কিছু অসুবিধা তৈরী করে। যেমন এইসব কলেজের শিক্ষকরা যদি রিসার্চের জন্য কোনো সরকারি গ্রান্ট এর আবেদন করতে চান - তাঁরা তা পারবেন না। কোনো কনফারেন্সে যেতে গেলে এ আই সি টি ই-র ট্রাভেল গ্রান্ট তাঁরা পাবেন না। কলেজের ল্যাব মডার্নাইজেশনের জন্যে গ্রান্ট চাইতে গেলেও তাঁরা পাবেন না। অর্থাৎ কোনো শিক্ষক যদি ভাবেন তিনি কলেজে পড়াতে পড়াতে রিসার্চের সাথে ন্যূনতম যোগাযোগ রাখবেন - তিনি সেটা পারবেন না এআইসিটিই স্বীকৃতি না থাকলে। তাহলে একজন ভালো শিক্ষক এই ধরণের প্রাইভেট কলেজে থাকবেন কেন?
এ ছাড়াও আরও কিছু অভিযোগ, প্রথম থেকেই আছে, যার সে অর্থে কোনো প্রমাণ নই। কিছু কলেজে সাজেশনের সঙ্গে পরীক্ষার প্রশ্ন রহস্যজনক ভাবে মিলে যাবার অভিযোগ বেশ কয়েবছর ধরেই উঠেছে। প্রশ্নপত্রের ধরণের সঙ্গে সরাসরিভাবে জড়িয়ে থাকে নম্বরের ব্যাপারটি। আর নম্বরের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে ক্যাম্পাস ইন্টারভিউয়ের প্রশ্নটিও। অল্পসংখ্যক কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের বেশি নম্বর পেয়ে ক্যাম্পাস ইন্টারভিউতে বেশি সুযোগ পাবার অভিযোগও উঠে আসছে। অভিযোগ আছে বর্তমান উপাচার্য সম্পর্কেও। বর্তমান উপাচার্য, সম্ভবত: কলেজগুলোর পঠন-পাঠনের সম্যক বিবেচনা না করেই পরীক্ষার প্রশ্নাবলীর ধরনে আমুল পরিবর্তন করায় প্রচুরসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আসলে সমস্যাটা প্রথম থেকেই ছিল। গোটা পৃথিবীজুড়ে যে আর্থিক মন্দা নেমে এসেছে, তারই হাত থেকে মুক্তি পায়নি পশ্চিমবঙ্গের ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার ব্যবসাও, সে কারণেই সমস্যাটি বিস্ফোরক আকার নিয়েছে। এমনিতেই কলকাতার কলেজগুলি বাদ দিয়ে বাকিগুলোর ক্যাম্পাসিং কোনোদিনই ভালো হত না, কারণ এই কলেজগুলোর ক্যাম্পাসিং মূলত: হত বিভিন্ন কোম্পানীতে কলেজ ম্যানেজমেন্টের যোগাযোগের ওপর ভিত্তি করে; আর এখন যেহেতু কোম্পানীগুলির মন্দার দরুণ সেইভাবে ক্যাম্পাসিং চালানো দুষ্কর হয়ে পড়েছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই কলেজগুলোতে দিন দিন বাড়ছে ছাত্র অসন্তোষ। ক্যাম্পাসিং এর সুযোগে বৈষম্যের অভিযোগ দানা বাঁধছে। ইউনিয়নহীন এই কলেজগুলোর নজিরবিহীনভাবে ছাত্র-ছাত্রীরা তৈরী করে ফেলেছে তাদের নিজস্ব সংগঠনও। যার নাম "টেকনিক্যাল স্টুডেন্টস ফোরাম' বা টি এস এফ। "রাজনীতিহীন' এইসব বিভিন্ন কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা আন্দোলন শুরু করেছে, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একের পর এক অবস্থানের কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে। ছাত্রদের দাবী, এই আন্দোলনের ফলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন যে সমস্ত পরীক্ষার্থীর ফল আগের বারের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন ভাবে খারাপ তারা চাইলে তাদের পরীক্ষাপত্র রিভিউ এর ব্যবস্থা করা হবে। এরই মধ্যে নানা কলেজে আন্দোলনে যুক্ত থাকার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে সেমিস্টার সাসপেনশন, আর্থিক জরিমানা সহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক পদক্ষেপও নিয়েছে কলেজগুলির ম্যানেজমেন্ট।
"বিশৃঙ্খলা'ই হোক বা "লড়াই', মিডিয়া এই ঘটনাগুলির বিষয়ে একেবারে নীরব। যদিও, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলির ফোঁপরা অবস্থা, এই ঘটনাগুলি পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দিয়েছে। যেদিকে নজর না দিলে পরিস্থিতি অচিরেই বিস্ফোরক হতে পারে।
এপ্রিল ২৬, ২০০৯
শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্যরাজনীতির অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ বন্ধ হোক
শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি কতটা বিস্তৃতি লাভ করেছে, তারই কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যাবে গতকাল বৃহস্পতিবারের কালের কণ্ঠে প্রকাশিত 'অবৈধভাবে এমপিওভুক্ত ২৯১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান' শীর্ষক খবর থেকে। কয়েক বছর আগে নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ের ২২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এরপর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের সহায়তায় জালিয়াতি করে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে না জানিয়েই এসব প্রতিষ্ঠানের স্তর (কোড) পরিবর্তন করে মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিওভুক্ত করা হয়। একইভাবে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে থাকা ৭১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জালিয়াতির মাধ্যমে ডিগ্রি পর্যন্ত এমপিওভুক্ত করা হয়। এসব দুর্নীতির কারণে প্রতিবছর সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হয় দুই কোটি ৩৯ লাখ ৭৩ হাজার ৭০০ টাকা। অবৈধ এমপিওভুক্তির পাশাপাশি আবার এমন অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, যারা এমপিওভুক্তির বৈধ দাবিদার হওয়া সত্ত্বেও বিশেষ কারণে বছরের পর বছর তা থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। দুর্নীতির আখড়া হিসেবে পরিচিত এই মাউশিকে নিয়ে এর আগে পত্রপত্রিকায় বহু খবর প্রকাশিত হয়েছে। সারা দেশ থেকে আসা শিক্ষকদের এখানে কী ধরনের ভোগান্তির শিকার হতে হয়, তাও আজ আর অজানা নয়। এর আগে বহুবার ঘোষণা দেওয়া হলেও মাউশির দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হয়নি; বরং বলা যায়, উত্তরোত্তর তা বেড়েই চলেছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার আরেকটি দুষ্ট ক্ষত হচ্ছে শিক্ষাকে পণ্য করা ফেলা। স্বাভাবিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মতোই এখানে স্কুল গড়ে উঠছে। ব্যবসায়ীরা যেমন সুযোগ পেলেই যেকোনো পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়, ক্রেতাদের পকেট কাটে, ঠিক একই অবস্থা চলছে বেসরকারি স্কুল নামক ব্যবসায়িক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এমপিওভুক্ত এসব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি অর্থ পাওয়ার পরও ভর্তি-বাণিজ্যের মাধ্যমে অভিভাবকদের পকেট কাটছে, লাখ লাখ টাকা লুটে নিচ্ছে। এসব স্কুলের পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদরা। সাধারণ অভিভাবকরা তাই এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে তেমন প্রতিবাদও করতে পারেন না। যাঁদের সক্ষমতা কম, তাঁরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অভিযোগ আছে, শুধু ভর্তি-বাণিজ্য নয়, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ থেকে শুরু করে এসব প্রতিষ্ঠানের আয়ের একটি বড় অংশই চলে যায় ওইসব প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের পকেটে। বিনিময়ে তাঁরা স্কুলের সব অন্যায় আচরণকে 'প্রটেকশন' দিয়ে যান।
বর্তমান সরকারের যে কয়জন মন্ত্রী নিজ নিজ ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন, শিক্ষামন্ত্রী তাঁদের অন্যতম। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, নষ্ট রাজনীতি ও দুর্নীতিবাজ ব্যবস্থাপনার কাছে তিনিও একপ্রকার অসহায়। এমপিওভুক্তির বিষয়টি নিয়ে গতকাল তিনি মাউশি ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানে আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৈধ দাবিদারদের এমপিও প্রদানে বিলম্বের বিষয়টিও তারা খতিয়ে দেখবে। যা হোক, আমরা শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজিত এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির অবিলম্বে অবসান চাই।
পাশের দাবিতে শিক্ষিকাদের রাতভর ঘেরাও, সংসদের ইনাম ফের পরীক্ষা
আনন্দবাজার – বুধ, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১২
পাশের দাবিতে শিক্ষিকাদের রাতভর ঘেরাও, সংসদের ইনাম ফের পরীক্ষা
টেস্ট-এ ফেল করা সত্ত্বেও পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবিতে টানা ২২ ঘণ্টা শিক্ষিকাদের ঘেরাও করে রাখল দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীরা। আর সেই দাবির কাছে কার্যত মাথা ঝুঁকিয়ে মঙ্গলবার উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের পক্ষ থেকে ফেল করা এবং গ্রেস নম্বর পেয়ে পাশ করা ছাত্রীদের নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার ফরমান দেওয়া হল। যে ফরমান শিক্ষা জগতে ইদানীং বেড়ে চলা নৈরাজ্যে নতুন মাত্রা জুড়ল বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত।
কারণ, সন্তোষপুরের ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যাপীঠের ছাত্রীদের দেখানো পথেই টেস্টে পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবিতে আরও বেশ কয়েকটি স্কুলে বিক্ষোভ দেখিয়েছে পড়ুয়ারা। সন্তোষপুরের স্কুলের ঘটনার পিছনে শাসক দলের নেতাদের ইন্ধন রয়েছে বলেই বিরোধীদের অভিযোগ। তার পরেও সংসদের এই সিদ্ধান্ত যা খুশি করে পার পেয়ে যাওয়ার শিক্ষাটাই পড়ুয়াদের দিয়ে দিল বলে শিক্ষাবিদদের একটা বড় অংশের মত।
সন্তোষপুরের ওই স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক টেস্টের ফল প্রকাশ হয় গত শনিবার। ১০৫ জন ছাত্রীর মধ্যে ২৯ জন পাশ করতে পারেনি। সোমবার দাবি ওঠে, ফেল করা পরীক্ষার্থীদের খাতা দেখাতে হবে। চাপের মুখে স্কুল কর্তৃপক্ষ সে দাবি মেনেও নেন। অভিযোগ, তখন ছাত্রী বা অভিভাবকেরা খাতা দেখানোর দাবি থেকে সরে এসে পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবি জানাতে থাকেন। তাতে রাজি না হওয়ায় শিক্ষিকাদের ঘেরাও করা হয়। ঘেরাওকারী ছাত্রীদের অভিযোগ, পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরা পড়া ছাত্রীকেও পাশ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। তা হলে বাকিরা কী অপরাধ করল? ছাত্রীদের দাবি, তাদের পাশ না করালে ওই স্কুল থেকে কাউকেই উচ্চ মাধ্যমিকে বসতে দেবে না তারা।
সোমবার বিকেল থেকে টানা ২২ ঘণ্টা আটক থাকার পরে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সচিব অচিন্ত্যকুমার পাল এবং উপসচিব (পরীক্ষা) মলয় রায়ের হস্তক্ষেপে ঘেরাও-মুক্ত হন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা এবং সহকারী শিক্ষিকারা। সংসদের প্রতিনিধিরা সব ছাত্রীর খাতা সিল করে রাখতে বলে ট্যাবুলেশনের কাগজপত্র নিয়ে গিয়েছেন। পরে সংসদ কর্তৃপক্ষ জানান, অকৃতকার্য ছাত্রীদের ফের পরীক্ষা নিতে বলা হবে। যাদের বাড়তি নম্বর (গ্রেস) দিয়ে পাশ করানো হয়েছে, পরীক্ষায় বসতে হবে তাদেরও। প্রশ্ন উঠেছে, স্কুলের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ক্ষেত্রে সংসদ এ ভাবে ফরমান দিতে পারে কি না। তা ছাড়া, পড়ুয়াদের বিক্ষোভের কাছে মাথা নুইয়ে নতুন করে পরীক্ষায় বসার সুযোগ করে দিয়ে কী বার্তা দেওয়া হল, তা নিয়েও শুরু হয়েছে বিতর্ক।
সংসদ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুরোধেই তাঁরা স্কুলে গিয়েছিলেন এবং সমস্যা মেটাতে হস্তক্ষেপ করেছেন। প্রথমে ভাবা হয়েছিল, খাতাগুলির পুনর্মূল্যায়ন করানো হবে। তার পর ট্যাবুলেশনের কাগজপত্রে বেশ কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়ে। দেখা যায়, ১ নম্বর পেয়েও কোনও ছাত্রী পাশ করেছে, আবার কিছু বেশি নম্বর পেয়েও কেউ ফেল করেছে। সংসদের বক্তব্য, স্কুল কর্তৃপক্ষ এগুলি তাঁদেরই ভুল বলে স্বীকারও করেছেন। সেই কারণেই ওই স্কুলকে আর এক বার পরীক্ষা নিতে বলা হচ্ছে। সংসদের উপসচিব (পরীক্ষা) মলয় রায় দাবি করেন, সংসদের এই নির্দেশ মানতে স্কুল বাধ্য। কারা দেবে ফের পরীক্ষা? সংসদ সভাপতি মুক্তিনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "যারা অকৃতকার্য তারা তো দেবেই। পাশাপাশি যাদের বাড়তি নম্বর দিয়ে (গ্রেস) দিয়ে পাশ করানো হয়েছে, তারাও পরীক্ষা দেবে।"
সংসদের এই ফরমানে আদৌ খুশি নন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শ্রীমতি ঘোষ এবং অন্য শিক্ষিকারা। তাঁদের আশঙ্কা, এর ফলে মূল্যায়ন-ব্যবস্থার উপরে ছাত্রছাত্রীদের আস্থা থাকবে না। স্কুল চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। খোদ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও সংসদের ফরমান নিয়ে দ্বিমত পোষণ করছেন। তাঁর কথায়, "এই ব্যাপারে স্কুলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। সংসদ কেবল অনুরোধ করতে পারে, নির্দেশ দিতে পারে না।" বুধবার তিনি এ বিষয়ে সংসদ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।
ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যাপীঠ স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অটল চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, "সংসদের কাছ থেকে লিখিত ভাবে কিছু পাইনি। তাই এখনই কিছু বলতে পারব না।" ট্যাবুলেশনে অসঙ্গতি বিষয়ে তাঁদের ব্যাখ্যা যারা বেশ কয়েকটি বিষয়ে ভাল করে একটি বিষয়ে খারাপ করেছে, তাদের গ্রেস নম্বর দেওয়া হয়েছে। যারা কোনও বিষয়েই ভাল করেনি, তাদের গ্রেস নম্বর দেওয়া হয়নি। নকল করতে গিয়ে ধরা পড়া ছাত্রীকে পাশ করানো বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করেননি। প্রধান শিক্ষিকা বলেন, "এ বার তো মাধ্যমিকের ছাত্রীরাও পাশ করতে না পেরে বোর্ডকে ডাকবে।" তাঁর আশঙ্কা সত্যি প্রমাণ করে ওই স্কুলে মাধ্যমিকের টেস্টে ফেল করা ছাত্রীদের একাংশও পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবিতে দিদিদের সঙ্গে গলা মিলিয়েছে।
শহরের অন্য স্কুলেও অকৃতকার্য পড়ুয়ারা একই দাবি তুলতে শুরু করেছে। বেহালার জগৎপুর রুক্মিণী বিদ্যামন্দির ফর বয়েজ-এ মঙ্গলবার উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্টে ফেল করা এক দল ছাত্র পাশ করানোর দাবিতে বিক্ষোভ দেখায়। অভিভাবকদের একাংশ তাদের সঙ্গে যোগ দেন। এমনকী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে অভিভাবকদের কেউ কেউ হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন বলেও অভিযোগ। পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। উত্তর চব্বিশ পরগনার শ্যামনগরে ঋষি অরবিন্দ বিদ্যানিকেতনে একই দাবিতে এক দল ছাত্র স্কুলে ঢুকে চেয়ার-টেবিল উল্টে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বলে অভিযোগ।
• সোমবার বেলা তিনটে থেকে ঘেরাও শুরু।
• এক ঘণ্টা বাদে পুলিশ ডাকা হয়।
• রাতভর ঘেরাও শিক্ষিকারা।
• মঙ্গলবার সকাল থেকে উত্তেজনা।
• স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সচিব এবং উপ সচিব।
• পড়ুয়া, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা।
• ট্যাবুলেশন শিট নিয়ে গেলেন সংসদ কর্তারা।
• জানান, খাতার পুনর্মূল্যায়ন হবে।
• সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত বদল।
• ফেল করাদের পরীক্ষা।
• গ্রেস নম্বরে পাশ হলেও পরীক্ষা।
• শিক্ষামন্ত্রী বললেন, স্কুলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
প্রবীণ শিক্ষকদের অনেকেই তাই সংসদের ভূমিকায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। অধ্যাপক পবিত্র সরকার মনে করেন, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি অবিশ্বাসের বীজ ঢুকিয়ে দিল। তিনি বলেন, "শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অপমান তো করা হলই, সংসদের সিদ্ধান্ত সাপের ঝাঁপি খুলে দিল।" বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, "এর পরে তো স্কুল বলবে, আর কোনও টেস্ট নেওয়ারই দরকার নেই।" প্রবীণ শিক্ষক সুনন্দ সান্যালের আশঙ্কা, "সংসদ যদি সব ক্ষেত্রেই এমন ব্যবস্থা নিতে না পারে, তবে পরিণতি মারাত্মক হবে।" অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী অবশ্য মনে করেন, "সংসদ নিশ্চয়ই বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।" আর, রাজ্যের স্কুলগুলির উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রীর বার্তা, সংবাদমাধ্যমে যাওয়ার আগে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন।
অরবিন্দ বিদ্যাপীঠে সমস্যা মেটানোর জন্য কী পদক্ষেপ করা হয়েছিল? স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা প্রথমে ছাত্রী এবং অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বাইরের লোক জড়ো হওয়ায় তাঁরা সার্ভে পার্ক থানায় ফোন করেন। পুলিশ আসে। তবে পুলিশি হস্তক্ষেপে ঘেরাও-মুক্ত হতে চাননি শিক্ষিকারা। কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, প্রথমে উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্টে অকৃতকার্যরা ঘেরাও শুরু করেন। পরে দেখা যায়, অভিভাবক এমনকী বাইরের লোকজনও স্কুল-চত্বরে ঢুকে চেঁচামেচি করতে থাকে। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, "শুনেছি, ছাত্রীদের ঘেরাওয়ের পিছনে এক কাউন্সিলর আছেন।" শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য রাজনৈতিক মদতের অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন।
এ দিন সকালে স্কুল কর্তৃপক্ষের সমর্থনেও স্কুলের কিছু প্রাক্তন ছাত্রী জড়ো হন। বিক্ষোভকারী ছাত্রীদের সঙ্গে এক সময় তাঁদের হাতাহাতি হয় বলেও অভিযোগ। বেলা বারোটার পরে স্কুলে পৌঁছন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সচিব এবং উপসচিব (পরীক্ষা)। তাঁরা প্রথমে শিক্ষিকাদের সঙ্গে এবং পরে অকৃতকার্য ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। বাগুইআটির অন্নদাসুন্দরী বালিকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য এত ঝামেলার মধ্যেই যাননি। বিক্ষোভের মুখে পড়ে তাঁরা উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্টে ফেল করা ১৮ ছাত্রীকেই পাশ করিয়ে দিয়েছেন।
সরকারি কলেজে গ্রন্থাগারিক নিয়োগ বন্ধ, সঙ্কটে পড়ুয়ারা
দীর্ঘ দিন ধরেই নিয়োগ বন্ধ৷ একের পর এক সরকারি কলেজের গ্রন্থাগার ধুঁকছে গ্রন্থাগারিকের অভাবে৷ পুরনো বা নতুন--কোনও সরকারেরই বিশেষ হেলদোল দেখা যায়নি এ নিয়ে৷ বস্ত্তত, ১৯৯৯-র পর থেকে ৩৫টি সরকারি কলেজের একটিতেও লাইব্রেরিয়ান পদে নতুন নিয়োগ হয়নি৷ সরকারি কলেজে সব মিলিয়ে ৬৮টি লাইব্রেরিয়ান পদে এই মুহূর্তে সাকুল্যে রয়েছেন মাত্র ২৯ জন৷ হাল কতটা খারাপ, অনুমেয় সহজেই৷
১৯৯৮-এ রাজ্য সরকার শেষবার গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগের কথা ঘোষণা করেছিল৷ সেই মতো তত্কালীন প্রেসিডেন্সি কলেজে (এখন বিশ্ববিদ্যালয়) ১৯৯৯ সালে একজন লাইব্রেরিয়ান নিযুক্ত হন৷ নতুন সরকারের বয়স দেড় বছর হয়ে গেলেও উদাসীনতা বজায় রয়েছে একই রকম৷
পশ্চিমবঙ্গ সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির এক নেতার অভিযোগ, 'গ্রন্থাগারিক নিয়ে সরকার সব সময়ই উদাসীন৷' সরকারি কলেজের লাইব্রেরিয়ানরা 'এডুকেশন সার্ভিস ক্যাডার'-এর মধ্যেও পড়েন না৷ ফলে ইউজিসি'র নির্দেশিকা অনুযায়ী পদমর্যাদায় কলেজের অধ্যাপকদের সমতুল হয়েও তাঁরা সমান সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত--অভিযোগ কলেজ শিক্ষক সমিতির৷ ছুটি, ডিএ, পিএফ, পেনশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও নানা অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয় তাঁদের৷ সমিতির নেতার অভিযোগ, 'অভাব-অভিযোগ নিয়ে আন্দোলন করতে গিয়েও শিক্ষা দফতরের আক্রোশের মুখে পড়তে হয়েছে গ্রন্থাগারিকদের৷' এ ব্যাপারে অভিযোগের তির প্রাক্তন এক শিক্ষা অধিকর্তার বিরুদ্ধে৷ সমিতি নেতার অভিযোগ, শুভশঙ্কর সরকার নামে ওই শিক্ষা অধিকর্তার পরামর্শেই আগের সরকার নিয়োগ বন্ধ করেছিল৷ শুভশঙ্করবাবুর অবশ্য (এখন তিনি নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য) দাবি, 'প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রতার জন্যই সমস্যা৷'
হাল এতটাই খারাপ যে টাকি গভর্নমেন্ট কলেজ, ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজ, হেস্টিংস ফিজিক্যাল এডুকেশন কলেজ, মালদহ ট্রেনিং কলেজের মতো একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনও গ্রন্থাগারিকই নেই৷ বালিগঞ্জের ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজে বিএড-এর এক ছাত্রের অভিযোগ, 'গ্রুপ-ডি কর্মচারীদের দিয়ে কোনওক্রমে কলেজের লাইব্রেরি চলছে৷ বই পেতেই তিন-চার দিন সময় লাগছে৷' বেশিরভাগ ছাত্র সেই কারণে গ্রন্থাগার থেকে বই তোলাই ছেড়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওই ছাত্রের৷ বর্তমান উচ্চশিক্ষা অধিকর্তা দীপকরঞ্জন মণ্ডলকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বলেন, 'আমি নতুন এসেছি৷ এ নিয়ে কিছু বলতে পারব না৷' অতএব সমস্যা সুরাহার আশাও সেই তিমিরেই৷
No comments:
Post a Comment