সঙ্গীতশিক্ষা শেষে ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশনে যোগ দেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর। মাত্র পঁচিশ বছর বয়সেই সারে জাঁহাতে আচ্ছা গানটিতে নতুন করে সুরারোপ করে সাড়া ফেলে দেন তিনি। সাত বছর তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিওর ডিরেক্টর ছিলেন। সত্যজির রায়ের পথের পাঁচালি, অপরাজিত ও অপুর সংসার, এই তিনটি ছবিরও সুরকার ছিলেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর। এর বাইরেও মৌলিক সুরসৃষ্টির জন্য দেশ বিদেশের সঙ্গীতজগতের বহু সম্মান পান তিনি। রবিশঙ্কর সঙ্গীত জগতের সর্বশ্রেষ্ট পুরস্কার গ্র্যামি জিতেছেন তিনবার। ১৯৯৯ সালে ভারতরত্ন সম্মানে ভূষিত হন। সাম্প্রতিক অ্যালবামের জন্য চতুর্থবার গ্র্যামি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর। কিন্তু ফল ঘোষণার আগেই মারা গেলেন তিনি।
সকাল থেকেই দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ। কোথাও কোথাও এখনও চলছে বৃষ্টিপাত। কুয়াশা থাকার কারণে দিনের তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বীরভূম, বাঁকুড়া, বর্ধমান, পুরুলিয়ায় সকাল থেকে অল্প বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশ ক্রমশ পরিষ্কার হচ্ছে। নতুন করে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর ও পশ্চিম মেদিনীপুরে।
বুধবার সকাল থেকে কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল উত্তরের জেলাগুলি। তাপমাত্রার তেমন হেরফের না হলেও শীত রয়েছে। কোথাও কোথাও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও বৃষ্টি হয়নি। মালদা জেলায় ঘন কুয়াশার কারণে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। সকাল থেকে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে জেলা জুড়ে। ফলে কমছে তাপমাত্রা। সকালে মালদার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল আট দশমিক নয় ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টি না হলেও, মুর্শিদাবাদ জেলাতেও সকাল থেকে কুয়াশার দাপট অব্যাহত।
যা হোক,পেনশন বিল বাতিল, শূন্যপদে নিয়োগ, বেসরকারিকরণের বিরোধিতা সহ মোট ১৫ দাবিতে আজ দেশজুড়ে ধর্মঘটে সামিল হলেন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা। সারা দেশের মতো ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে এরাজ্যেও। ধর্মঘটে সামিল হন সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, আয়কর দফতর, জিপিওসহ একাধিক কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসের কর্মীরা। এরাজ্যেও ধর্মঘটের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সরকারি দফতরে কাজে যোগ দেননি প্রায় নব্বই শতাংশ কর্মী। যার ফলে ডাকঘর, আয়কর বিভাগ, জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া, সেন্ট্রাল এক্সাইজ, ইন্ডিয়ান মিউজিয়ম সহ কেন্দ্রীয় সরকারি দফতরগুলিতে কাজ হয়নি। তবে ধর্মঘটের আওতার বাইরে রাখা হয়েছিল রেল ও প্রতিরক্ষা দফতরকে।
ধর্মঘট ঠেকাতে সার্ভিল রুল ব্রেক, একদিনের বেতন কাটার সার্কুলার জারি করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তবে এসব অগ্রাহ্য করেই কর্মীরা ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন বলে দাবি ধর্মঘটের নেতাদের। ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে কলকাতা, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর ও নদিয়াতে কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া রাজ্যজুড়ে ধর্মঘটের প্রভাব ছিল সর্বাত্মক।
সোমবার শাসক ও বিরোধী দলের ধুন্ধুমার মারপিটে উত্তাল হয়ে ওঠে বিধানসভা। মারপিটের সময়ে বিধানসভার ভিতরে মার্শাল এবং নিরাপত্তারক্ষীরা সবাই উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, মারপিট আটকাতে একবারও তাঁদের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেননি অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশ্ন উঠছে, যদি অধ্যক্ষ নির্দেশ না দেন তাহলে কী করে ওয়েলে নামবেন নিরাপত্তারক্ষীরা? কী করে বাধা দেবেন তাঁরা? বিধানসভায় ধুন্ধুমার মারপিটের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেই নিরাপত্তারক্ষীদের দিকেই অভিযোগেই আঙুল তোলা হল।
বিধানসভা (ইংরেজি: Legislative Assembly) ভারতের রাজ্য আইনসভার নিম্নকক্ষ (দ্বিকক্ষীয় আইনসভার ক্ষেত্রে) অথবা একমাত্র কক্ষ (এককক্ষীয় আইনসভার ক্ষেত্রে)। দিল্লি ও পুদুচেরি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল-দুটির আইনসভাও বিধানসভা নামে পরিচিত। বিধানসভার সদস্য বা বিধায়কেরা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের প্রাপ্তবয়স্ক ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, বিধানসভার সদস্যসংখ্যা সর্বাধিক ৫০০-এর বেশি বা সর্বনিম্ন ৬০-এর কম হতে পারে না। তবে গোয়া, সিকিম ও মিজোরাম রাজ্যের বিধানসভার সদস্যসংখ্যা সংসদের বিশেষ আইন বলে ৬০-এর কম। রাজ্যপাল যদি মনে করেন যে, আইনসভায় অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের যথেষ্ট প্রতিনিধি নেই, তবে তিনি উক্ত সম্প্রদায় থেকে ১ জনকে বিধানসভায় মনোনীত করতে পারেন।
প্রতিটি বিধানসভা পাঁচ বছরের মেয়াদে গঠিত হয়। প্রতিটি আসনের জন্যই নির্বাচন হয়। জরুরি অবস্থার সময় বিধানসভার মেয়াদ পাঁচ বছরের বেশি বাড়ানো যায় বা পাঁচ বছরের আগেই বিধানসভা অবলুপ্ত করা যায়। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে পাস হলেও বিধানসভা অবলুপ্ত হয়।
সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব কেবলমাত্র বিধানসভাতেই আনা যায়। এই প্রস্তাব সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে পাস হলে মুখ্যমন্ত্রী সহ মন্ত্রিপরিষদকে পদত্যাগ করতে হয়।
অর্থ বিল কেবলমাত্র বিধানসভাতেই আনা যায়। বিধানসভায় পাস হওয়ার পর তা বিধান পরিষদে পাঠানো হয়। বিধান পরিষদ ১৪ দিনের বেশি আটকে রাখতে পারে না।
অন্যান্য বিলের ক্ষেত্রে, বিলটি যে কক্ষে সর্বাগ্রে উত্থাপিত হয় (সে বিধানসভাই হোক বা বিধান পরিষদই হোক), সেই কক্ষে পাস হওয়ার পর অপর কক্ষে প্রেরিত হয়। অপর কক্ষ বিলটি ছয় মাস আটকে রাখতে পারে। অপর কক্ষ বিল প্রত্যাখ্যান করলে, ছয় মাস অতিক্রান্ত হলে বা অপর কক্ষের আনা বিলের সংশোধনী মূল কক্ষে গ্রাহ্য না হলে একটি অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। তখন রাজ্যপাল উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশন ডেকে অচলাবস্থা কাটান এবং সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে বিলটির ভাগ্য নির্ধারিত হয়। তবে বিধানসভা সংখ্যাধিক্যের দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় এক্ষেত্রে বিধানসভার মতই গ্রাহ্য হয়ে থাকে, যদি না তা নিয়ে বিভিন্ন দলের মতান্তর উপস্থিত হয়।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা (ইংরেজি: West Bengal Legislative Assembly)পশ্চিমবঙ্গের এককক্ষবিশিষ্ট রাজ্য আইনসভা। পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার বিবাদীবাগএলাকায় হাইকোর্টের দক্ষিণে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভবনটি অবস্থিত। বিধানসভার সদস্যদেরবিধায়ক বলা হয়। তাঁরা পাঁচ বছরের জন্য জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার মোট আসনসংখ্যা ২৯৫। এর মধ্যে ২৯৪টি আসনের বিধায়করা এক-আসনবিশিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্র থেকে সরাসরি নির্বাচিত হয়ে আসেন এবং এক জন সদস্যঅ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায় থেকে সরাসরি নির্বাচিত হন। বিধানসভার মেয়াদ পাঁচ বছরের; তবে তার আগের বিধানসভা ভেঙে দেওয়া যায়।
ইতিহাস
১৮৬১ সালের ভারতীয় কাউন্সিল আইন বলে, ১৮৬২ সালের ১৮ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতেরতদনীন্তন গভর্নর-জেনারেল ব্রিটিশ বঙ্গপ্রদেশের একটি বারো সদস্যবিশিষ্ট আইনসভা প্রতিষ্ঠা করেন। এই আইনসভার সদস্য ছিলেন বাংলার লেফটানেন্ট গভর্নর এবং কয়েকজন মনোনীত সদস্য। কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশনটি বসে ১৮৬২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি।প্রারম্ভিক যুগে এই আইনসভাটিকে বেঙ্গল কাউন্সিল, লেফটেনান্ট গভর্নরের কাউন্সিল, বেঙ্গল অ্যাসেম্বলি ইত্যাদি নামে ডাকা হত।[১] প্রথম দিকে কাউন্সিলের রাজনৈতিক কার্যকলাপ ছিল সীমাবদ্ধ। এই কারণে সঠিকভাবেই এই সভাকে ছোটলাটের দরবার সভা বলে অভিহিত করা হত।[২] তবে ১৮৯২ সালের ভারত শাসন আইন বলে কাউন্সিলের রাজনৈতিক প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই সময় কাউন্সিলের সদস্যসংখ্যা বেড়ে হয় ২০; এঁদের মধ্যে ৭ জন ছিলেন নির্বাচিত।[৩]১৯০৯ সালের ভারতীয় কাউন্সিল আইন বলে সভার সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৫৩ করা হয়।[৪]১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন বলে এই সংখ্যা বৃদ্ধি করে ১৩৯ করা হয়।[৫] ১৯১৯ সালের এই আইন বলেই স্থাপিত হয় বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভা বা বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল। ১৯২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, ডিউক অফ কনট আনুষ্ঠানিকভাবে এই সভার উদ্বোধন করেন।[৬]
১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন বলে বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভাকে দুটি কক্ষে বিভক্ত করা হয়: লেজিসলেটিভ কাউন্সিল ও লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি। ২৫০ সদস্যবিশিষ্ট অ্যাসেম্বলির মেয়াদ ছিল সর্বাধিক পাঁচ বছর। অন্যদিকে কাউন্সিল ছিল একটি স্থায়ী সংস্থা। এই সংস্থায় সদস্যসংখ্যা ৬৩ জনের কম ও ৬৫ জনের বেশি হত না। প্রতি তিন বছর অন্তর সভার এক-তৃতীয়াংশ সদস্য অবসর নিতেন।
১৯৪৭ সালের ১৪ অগস্ট ব্রিটিশ বঙ্গপ্রদেশ পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ব পাকিস্তানে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়। পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত ৯০টি কেন্দ্রের বিধায়ক ও দুই জন অ্যাংলো ইন্ডিয়ান সদস্য নিয়ে গঠিত হয় পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা। বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভা বিলুপ্ত হয়ে যায়। ১৯৪৭ সালের ২১ নভেম্বর প্রথম পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার অধিবেশন বসে। এই সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হন প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ। অন্যান্য নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন বিধানচন্দ্র রায়, জ্যোতি বসু প্রমুখ।[৭]
ভারতীয় সংবিধানে পশ্চিমবঙ্গের দ্বিকক্ষীয় বিধানসভা অনুমোদিত হয়। ১৯৫২ সালে ৫ জুন ৫১ সদস্যবিশিষ্ট পশ্চিমবঙ্গ বিধান পরিষদ গঠিত হয়। দুই জন অ্যাংলো ইন্ডিয়ান সদস্য হয় বিধানসভার সদস্যসংখ্যা হয় ২৪০। ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের পর ১৯৫২ সালের ১৮ জুন প্রথম পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার অধিবেশন বসে।
১৯৬৯ সালের ২১ মার্চ, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিধান পরিষদ অবলুপ্তির প্রস্তাব গৃহীত হয়। এই অনুসারে, ভারতীয় সংসদে পশ্চিমবঙ্গ বিধান পরিষদ (অবলুপ্তি) আইন পাস হয়। ১৯৬৯ সালের ১ অগস্ট বিধান পরিষদ অবলুপ্ত হয়।
তবে অধ্যক্ষের ঘোষণার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর অভিযোগ, মন্ত্রী, সরকারপক্ষের দোষের ভাগীদার করা হচ্ছে নিরাপত্তারক্ষীদের। প্রশ্ন উঠছে, যে ঘটনায় শাসক পক্ষের মন্ত্রীদের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠছে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে কেন নিরাপত্তারক্ষীদের দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে?
বামেদের অভিযোগ, শাসকদলের বিধায়করা বাম সদস্য দেবলীনা হেমব্রমকে কটূক্তি করে। পরে সভায় হাতাহাতির ঘটনায় এই অধিবেশনের জন্য তিন বাম বিধায়ককে সাসপেন্ড করেন অধ্যক্ষ। তাঁরা হলেন, নাজিমুল হক, শেখ আমজাদ হুসেন এবং সুশান্ত দেওরা। অধ্যক্ষের ঘোষণার পর নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সভা। ফের শুরু হয় তুমুল মারপিট। অভিযোগ, মাটিতে ফেলে শাসকদলের কয়েকজন বিধায়ক দেবলীনা হেমব্রমকে মারধর করে। সিপিআইএম বিধায়ক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়কেও ব্যাপক মারধর করা হয়। তাঁর মাথা ফেটে যায়। আহত বিধায়ককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরই মাঝে ওয়াকআউট করে কংগ্রেস। গোটা ঘটনায় তাঁরাও রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন।
ফল হচ্ছে যথাযথ। সেইসময় বিধানসভার অধিবেশন শেষে দক্ষিণ গেট দিয়েই বের হচ্ছিলেন তৃণমূলের বিধায়করা। তখন বিক্ষোভকারীদের গেট ছেড়ে সরে যেতে বলা হয়। কিন্তু তাঁরা না সরায় বচসা বেধে যায়। গাড়ি থেকে নেমে কংগ্রেস বিধায়কদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল বিধায়করা। বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে শাসকদলের বিধায়করা পুলিস ডাকেন। অভিযোগ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিসের ধস্তাধস্তি হয়। পুলিস বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে তৃণমূল বিধায়কদের জন্য রাস্তা করে দেয়।
অন্যদিকে, এদিন বিধানসভায় বিক্ষোভে সামিল হম বামারাও। অনুরোধ স্বত্বেও তিন বাম বিধায়কের সাসপেনশন প্রত্যাহার করেননি না অধ্যক্ষ। আজ বিধানসভার অধিবেশনের শুরুতেই সভার কাজ বন্ধ রেখে আগে সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবি জানান বামেরা। অধ্যক্ষ সেই দাবি না মানায় ওয়াকআউট করেন বাম বিধায়করা। গতকালের মারপিটের ঘটনার প্রতীকী প্রতিবাদ জানাতে আজ হেলমেট মাথায় বিধানসভায় ঢোকেন কংগ্রেস বিধায়করা। পরে অধ্যক্ষের অনুরোধে হেলমেট খুলে রাখলেও, সভার কাজ বন্ধ রেখে সর্বদল বৈঠকের দাবি তোলেন তাঁরা। এরপর কৃষি ও ক্ষুদ্র শিল্পের ক্ষেত্রে বিদ্যুতে ভর্তুকি নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব আনে কংগ্রেস। বিদ্যুতমন্ত্রী বক্তব্য রাখতে উঠলে আচমকা বিদ্যুত চলে যায় সভায়। হট্টগোলের মাঝে কংগ্রেসের মুলতুবি প্রস্তাবের দাবি খারিজ করে দেন অধ্যক্ষ। প্রতিবাদে ওয়াকআউট করে কংগ্রেস। দুপুর দু`টো নাগাদ সর্বদল বৈঠকে বসেন অধ্যক্ষ। কিন্তু সাসপেনসন প্রত্যাহারের দাবি না মানায় বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসেন বাম বিধায়কেরা।
এরপরই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যা, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মুকুল রায় নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে শিখা মিত্রকে সাসপেনশনের সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানা গিয়েছে। গত এক বছর ধরেই দলের বিরুদ্ধে দফায় দফায় মুখ খুলেছেন শিখা মিত্র।
ই-মেইলে কাটজু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে চিঠিটি পাঠান। চিঠিতে তিনি বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রীর অসহিষ্ণু হলে চলবে না। আপনার মন্ত্রী ও আমলারা দারুণ ভীত। খোলা মনে কথা বলতে পারছেন না। এই ভীতির কারণ আপনার আচরণ। এর ফলে রাজ্যে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
চিঠিতে কাটজু মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, 'আপনাকে বদলাতে হবে আপনার খামখেয়ালিপনা, একগুঁয়েমি ভাব। নইলে বেশিদিন মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না।'
কাটজু চিঠিতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অম্বিকেশ মহাপাত্র, মেদিনীপুরের কৃষক শিলাদিত্য, কলকাতার সাবেক যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) দময়ন্তী সেন এবং প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্রী তানিয়া ভরদ্বাজের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দেন।
'ছবি নিয়ে মমতার চাঁদাবাজি করছেন': সিপিএম রাজ্য কমিটির নেতা গৌতম দেব গত বুধবার কলকাতার বরাহনগরে সিপিএম আয়োজিত জনসভায় অভিযোগ করেন, মমতা এখন তাঁর আঁকা ছবি নিয়ে চাঁদাবাজি করছেন? গৌতম বলেন, মমতা নিজেই বলেছেন, তাঁর আঁকা ছবি বিক্রি করে দল চলছে।
গত পয়লা জুলাই বিধানভবনে একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে শিখা মিত্র কিছু মন্তব্য করেন। পরদিন এই সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়। সাংসদ সোমেন মিত্রর স্ত্রী বিধায়ক শিখা মিত্র দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। একইসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরও মন্তব্য প্রকাশিত হয়। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সেই মন্তব্যকেই অবমাননাকর বলে মনে করেছেন শিখা মিত্র।
সেই অভিযোগে তিনি গত ২৩ আগস্ট ব্যাঙ্কশাল আদালতে মানহানির মামলাটি করেন। শিখা মিত্রের মামলা ঘিরে অস্বস্তিতে তৃণমূলও। খোদ মন্ত্রীর বিরুদ্ধেই দলীয় বিধায়ক মামলা করায় দলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
আইনজ্ঞরা জানাচ্ছেন কালকের ঘটনার নিরিখে কোন কোন ধারায় মামলা রুজু করা যায়। ৩২৩, ইচ্ছাকৃত আঘাত-এক বছর জেল বা হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা দুটোই। ৩২৪,অস্ত্রসহ ইচ্ছাকৃত আঘাত-তিন বছর পর্যন্ত জেল বা জরিমানা অথবা দুটোই। ৫০৪, শান্তি নষ্ট করার জন্য উত্তেজিত করা-দুবছর পর্যন্ত জেল। ধারা ৫০৬,হুমকি দেওয়া-দুবছর পর্যন্ত জেল। ৫০৯, মহিলাদের প্রতি অশালীন আচরণ করা-এক বছর পর্যন্ত জেল। ৩৫৪, শ্লীলতাহানি-দুবছর পর্যন্ত জেল। ৩৫৫, সম্মানহানির জন্য আক্রমণ-দুবছর পর্যন্ত জেল। এরমধ্যে ৩২৪ ধারাটি জামিন অযোগ্য। বাকি যে কোনও ধারাতেই পুলিস কাউকে গ্রেফতার করতে পারে।
অর্থাৎ বিধানসভার বাইরে এমন ঘটনা ঘটলে, গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় বা দেবলিনা হেমব্রমের উপর আক্রমণের অভিযোগে এই ধারাগুলি প্রয়োগ করতে পারত পুলিস। আর দণ্ডবিধি অনুসারে বিধায়ক হলেও গ্রেফতার, হাজতবাসের পরে জেলে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যেত।
এদিন ঘটনার পরে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস উভয় পক্ষের বিধায়করাই বিধানসভা থেকে রাজভবন পর্যন্ত মিছিল করে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন। বামফ্রন্টের বিধায়করা যখন মিছিল শুরু করেন, তার কিছু পরেই মুষল ধারে বৃষ্টি নামে। তারই মধ্যে মিছিল এগিয়ে যায় রাজভবনের দিকে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়, তার মধ্যে শীতবস্ত্র পরিহিত অবস্থায় গণতন্ত্র রক্ষার স্লোগান দিতে দিতে রাজভবনে ঢোকেন বামফ্রন্টের বিধায়করা। তবে রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলতে চান ফ্রন্টের ৯ জন বিধায়ক। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র ছাড়াও ঐ প্রতিনিধিদলে ছিলেন আনিসুর রহমান, প্রবোধ সিন্হা, আনন্দময় মণ্ডল, ঈদ মহম্মদ, চাঁদ মহম্মদ, উদয়ন গুহ, অপর্ণা সাহা এবং চৌধুরী মোহন হেদায়েতুল্লা। আধ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তাঁরা রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলেন। পরে রাজভবন থেকে বেরিয়ে
এসে সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, সমস্ত ঘটনা রাজ্যপালকে জানানো হয়েছে। আজ যা ঘটলো, সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে তা নজিরবিহীন ঘটনা। রাজ্যপাল হলেন বিধানসভার অংশ। তাই তাঁকে সবটুকু অবহিত করেছি, যাতে তিনি সরকারকে একটা বার্তা দিতে পারেন।
কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকে এদিন এক চিঠিতে বিধায়কদের নিরাপত্তা এবং গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে। কংগ্রেসের পরিষদীয় নেতা মহম্মদ সোহরাব চিঠিতে বলেছেন, রাজ্যপাল হলেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। বিরোধী দলের বিধায়কদের বিধানসভার ভিতরেই আক্রমণের সময় সরকার পক্ষের শুধু বিধায়করাই নয়, মন্ত্রীরাও ছিলেন। সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এদিনের ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বিধানসভার অধিবেশনের বাইরে যদি এমন ঘটতো, তাহলে তার অন্য অর্থ হতো। কিন্তু এদিন সবটাই ঘটেছে অধিবেশন চলাকালীন অধ্যক্ষের সামনে। মানস ভুঁইয়া বলেন, শাসক দলের হাতে চাবুক থাকে না, মানদণ্ড থাকে। শাসক দলকে অনেক সহিষ্ণু হতে হয়। রাজ্যপালের কাছে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আবেদনে বলা হয়েছে, আপনি গণতন্ত্রের মন্দিরের মর্যাদা রক্ষা করার স্বার্থে পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হলেন 'লিডার অব দ্য হাউস'। মুখ্যমন্ত্রী যাতে বিরোধী দলনেতা, পরিষদীয় মন্ত্রী, পরিষদীয় নেতাকে নিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেন, সেই বার্তা রাজ্যপালই দিতে পারেন।আজ আমরা গণতন্ত্রের মন্দিরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেশের সংবিধানের অধোগতি দেখলাম। এই ঘটনা দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেও জানানো হবে। বুধবার বিধানসভায় গিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে কংগ্রেস।
বিধানসভায় এদিন বিরোধী দলের বিধায়কদের উপর তৃণমূল বিধায়কদের হামলার তীব্র নিন্দা করেছে রাজ্য বি জে পি। দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিন্হা জানিয়েছেন, শাসক দলের অসহিষ্ণুতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তারা কোনো সমালোচনাই সহ্য করতে পারছে না, তা তাদের নিজের দলের কেউ হোন বা বিরোধী দলের। আজকের ঘটনা সত্যিই লজ্জার বিষয়। বিধানসভা গণতন্ত্রের পীঠস্থান, যেখানে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সাধারণের স্বার্থে কাজ করা উচিত। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, শুরু থেকেই পরিবর্তনের সরকার অসহিষ্ণু মনোভাব দেখাচ্ছেন, যা গণতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকর।
বিধানসভার ভিতরে এই বাদানুবাদ চলাকালীন আচমকাই বাম বিধায়ক দেবলীনা হেমব্রমকে শারীরিক নিগ্রহ করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধীদলের নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর আরও অভিযোগ, ঘটনায় মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বাম বিধায়ক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়। অন্যদিকে এই হাতাহাতির ঘটনায় অসুস্থ হয়ে পড়েন তৃণমূল বিধয়ক মামুদা বেগম। তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে । এদিন সভায় তুমুল হাতাহাতির ঘটনায় জড়িত শাসকদলের বিধায়ক পুলক রায়, তপন চট্টোপাধ্যায়, অমিয় ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই নজিরবিহীন ঘটনার পর স্বভাবতই সভা মুলতুবি করে দেন অধ্যক্ষ। বামেদের অভিযোগ, সভায় তাদের কথা বলতে দিচ্ছিলেন না শাসক দল। অন্যদিকে অধ্যক্ষ খারিজ করে দেন বামেদের আনা প্রস্তাব। আর তাতেই উত্তপ্ত হয়ে উঠে বিধানসভার অধিবেশন। এই ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে বিধানসভার লবিতে অবস্থান বিক্ষোভ করেন ক্ষুব্ধ বাম বিধায়কেরা। বিধানসভায় এই ঘটনার প্রতিবাদে ওয়াকআউট করে বাম ও কংগ্রেস বিধায়কদের। অন্যদিকে, বামেদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ এনে এই ঘটনাকে 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' বলে ব্যাখ্যা করেছেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
উদ্ধত মুখ্যমন্ত্রী
পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কোনো রকম সমালোচনা, প্রতিবাদ বা সুপরামর্শ কিছুরই পরোয়া করেন না। তোষামোদ ছাড়া আর কিছুই তিনি চান না। নিন্দা বা সমালোচনা করলে তিনি বিরক্ত, উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। কেউ সমালোচনা করলে তার প্রতিক্রিয়া জানাতে শালীনতার সীমা ছাড়াতেও বাধে না মুখ্যমন্ত্রীর। সমালোচনার আঁচ পেলে তিনি সরকারী ক্ষমতা ব্যবহার করে শাস্তি দেন। যত বড় অপরাধই ঘটুক না কেন সরকারের দায়িত্বকে আড়াল করতে তিনি তাকে 'সাজানো' বলে অভিহিত করেন। তিনি ছাড়া আর কেউ মুখ খুলুক তা চান না মুখ্যমন্ত্রী। দলের মধ্যেও তিনি একাই সব কিছুর শেষ কথা। সরকারের মধ্যেও সব কাঠামোকে অস্বীকার করে মুখ্যমন্ত্রীই একা চলতে চান। রাজ্যেও দ্বিতীয় কোনও মতের তোয়াক্কা করেন না মুখ্যমন্ত্রী। তিনি শুরু, তিনি শেষ। তাঁর চরিত্র সম্পর্কে 'অসহিষ্ণুতা' খুব সামান্য বিশেষণ।আসলে তিনি গণতন্ত্র-বিরোধী, তোষামোদপ্রিয়, সম্পূর্ণ একা চলার পক্ষপাতী একজন রাজনীতিক। স্বভাবতই এই মনোভাব রাজ্যের স্বাভাবিক পরিবেশের পরিপন্থী। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হলেও দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে তিনি মানতে চান না। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে সহিষ্ণুতার পরামর্শ দিয়েছেন প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান মার্কণ্ডেয় কাটজু। কিন্তু এই পরামর্শের প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়ে গেছে তাঁর অসহিষ্ণুতা। সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতির উদ্দেশ্যে নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, 'রাজা চলে বাজার, কুত্তা ভোকে হাজার'। বিচারপতি কাটজু একটি ই-মেল বার্তায় মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, 'আপনি এখন ক্রমাগত অসহিষ্ণু ও খামখেয়ালি হয়ে উঠছেন। সহিষ্ণু না হলে মুখ্যমন্ত্রী পদে বেশি দিন টিকে থাকা সম্ভব নয়।
রাজ্যে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনার উদাহরণ দিয়েই বিচারপতি কাটজু মুখ্যমন্ত্রীর শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে এই পরামর্শ দিয়েছিলেন। রেলমন্ত্রী বদল নিয়ে একটি কার্টুন ই-মেলে পাঠানোর জেরে গ্রেপ্তার হন অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র। সামান্য কার্টুন আঁকাকে হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করেন মু্খ্যমন্ত্রী। রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও একজন সম্মানীয় অধ্যাপককে হেনস্থা করার পক্ষেই ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ডকে 'সাজানো' বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু গোয়েন্দা পুলিসের তদন্তে বেরিয়ে আসে অভিযোগকারিণীর ধর্ষণের অভিযোগ সঠিক। পুলিস ধরে ফেলে অপরাধীদের। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার অপরাধে গোয়েন্দা পুলিস প্রধান দময়ন্তী সেনকে সরিয়ে দেওয়া হয় অনেক কম গুরুত্বহীন পদে। বাঁশপাহাড়িতে একটি সরকারী কর্মসূচীতে সরকারের কাজ নিয়ে অভিযোগ জানালে শিলাদিত্য চৌধুরীকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। একটি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তানিয়া ভরদ্বাজের প্রশ্ন শুনেই বেরিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। ঐ ছাত্রীর প্রশ্নে সরকারের পক্ষে অস্বস্তিকর ঘটনার উল্লেখ ছিলো বলে তাকে সহ্য করতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী। সাংবাদিক সম্মেলনগুলিতেও মুখ্যমন্ত্রী কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে চান না। কোনও সংবাদমাধ্যম সরকারের ব্যর্থতা বা শাসক দলের ত্রুটি দেখালেই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল সরকারের আমলেই পাঠাগারে বশংবদ সংবাদপত্রগুলিকেই তালিকাভুক্ত করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। মানুষ কোন্ সংবাদপত্র পড়বেন, কোন্ টিভি চ্যানেল দেখবেন তাও স্থির করে দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্ধত মনোভাবের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে তাঁর দলের নেতা-মন্ত্রীদের মুখে। বিচারপতি কাটজু সঠিকভাবেই বলেছেন, মু্খ্যমন্ত্রীর জন্যই রাজ্যে আতঙ্কের পবিবেশ তৈরি হয়েছে। বামপন্থীদের দশ বছর চুপ করে থাকতে হবে এই কথা দিয়ে হুমকি শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই হুমকি এখন পৌঁছেছে সাধারণ মানুষের কাছে। এই হুমকির ফলে দমবন্ধ করা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে রাজ্যে।
মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় যে ঘটনা ঘটেছে, তা দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়৷ কিন্ত্ত আমার মনে হয়, তার থেকেও আশঙ্কার বিষয় হল, এই ঘটনার মধ্যে একটা ভয়ঙ্কর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷ তা হল, বলতে দেব না, শুধু বলব৷ মাঠে-ময়দানের রাজনীতিতে যে মেরুকরণ তৈরি হয়েছে, বিধানসভার অভ্যন্তরে তার প্রতিফলন দেখতে পাব, কখনও ভাবিনি৷ আজকের ঘটনায় কে দোষী, কে নির্দোষ, আমি তার বিচারক নই৷ কিন্ত্ত যা হয়েছে, তা সংঘাতের রাজনীতি৷ এর পর সংসদীয় গণতন্ত্র বলে আর কিছু থাকবে বলে মনে হচ্ছে না৷ যেখানে আইন তৈরি হয়, যাঁরা আইন তৈরি করেন, তাঁরা আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছেন৷ আমার যত দূর মনে পড়ছে, কয়েক বছর আগে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় অধিবেশন কক্ষের ভিতরে-বাইরে একটি দল ভাঙচুর চালিয়েছিল৷ কিন্ত্ত বিধায়করা দলবদ্ধ হয়ে অধিবেশন কক্ষে স্পিকারের সামনে মারপিট করছেন, এমন ঘটনা আমার স্মরণে নেই৷ হয়েছে বলেও আমার মনে হয় না৷ রাজনীতিতে দায়বদ্ধতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ এই ঘটনার দায় কে নেবেন?
লোকসভার অধ্যক্ষ থাকাকালীন আমি অধিবেশনের সরাসরি সম্প্রচার আরও জোরদার করার জন্য লোকসভা টিভি চালু করি৷ আজ যাঁরা এ ভাবে একে অপরের দিকে তেড়ে গেলেন, তাঁদের অবগতির জন্য জানাই, লোকসভায় যাঁরা প্রতিনিয়ত অভব্য আচরণ করেছেন, সভার কাজ পণ্ড করার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের অনেকেই ২০০৯-এর লোকসভা ভোটে হেরে গিয়েছেন৷ কারণ, মানুষ তাঁদের ওই ভূমিকায় দেখতে চায়নি৷ বিধানসভার অধিবেশন সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা বর্তমানে নেই৷ আমি মনে করি, অর্থের টানাটানি থাকলেও রাজ্য সরকার এবং বিধানসভার অধ্যক্ষের উচিত, অধিবেশন সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা, যাতে রাজ্যের মানুষ জানতে পারেন, তাঁরা যাঁদের ভোট দিয়ে পাঠিয়েছেন, বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে তাঁরা কেমন আচরণ করছেন৷
আজকের ঘটনায় বিধানসভার অধ্যক্ষের ভূমিকা নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না৷ তবে আমি ওই পদে থাকলে কী ভূমিকা পালন করতাম, এই অবসরে তা বলা দরকার মনে করি৷ বিধানসভা বা লোকসভার অভ্যন্তরে কোনও ঘটনার তদন্তের জন্য পুলিশ অধ্যক্ষের অনুমতি ছাড়া যেতে পারে না৷ যে বিধায়করা আহত হয়েছেন, তাঁরা যদি স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন, তা হলে কী হবে? আমি মনে করি, তেমন কিছু ঘটলে অধ্যক্ষের উচিত হবে পুলিশকে বিধানসভার অভ্যন্তরে, এমনকী অধিবেশন কক্ষে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া, যাতে তদন্ত বিঘ্নিত না হয়৷ যে ঘটনা ঘটেছে বলে সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানতে পেরেছি, তাতে আমি আরও মনে করি, অধ্যক্ষের উচিত হবে, এই ঘটনা নিয়ে পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া৷ এই প্রসঙ্গে লোকসভায় আমি অধ্যক্ষের চেয়ার থাকার সময়কার একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করতে চাই৷ লোকসভায় একবার টাকাভর্তি ব্যাগ নিয়ে কয়েক জন সদস্য হাজির হয়েছিলেন৷ আমি সেই ঘটনা নিয়ে লোকসভার হাউস কমিটিকে তদন্তের নির্দেশ দিই৷ কমিটি কয়েক জন সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে৷ সেই সুপারিশ মেনে ওই সদস্যদের সাসপেন্ড করা হয়েছিল৷ কিন্ত্ত টাকার উত্স কী ছিল, কাদের টাকা লোকসভার অভ্যন্তরে আনা হয়েছিল, সে তদন্ত করার কোনও ব্যবস্থা আমার হাতে ছিল না৷ আমি তাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে অনুরোধ করেছিলাম, এ নিয়ে তদন্ত করার জন্য৷ পরবর্তী কালে কী হয়েছে, তা সকলেরই জানা৷
আজকের ঘটনা নিয়ে আমি গোড়াতেই যে ভয়ঙ্কর প্রবণতার কথা বলেছি, তা নিয়ে দু'-একটা কথা বলতে চাই৷ বিধানসভায় যা ঘটেছে এবং অন্যান্য রাজ্যের আইনসভাতে মাঝে-মধ্যে যা ঘটছে, তাতে আমার আশঙ্কা, যত দিন যাবে,সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়শিক্ষিত রুচিশীল মানুষেরা ক্রমশ সংখ্যালঘু হয়ে পড়বেন৷ সকলের শুভবুদ্ধির উদয় হোক, আমি এই কামনাই করি৷
রুদ্রপ্রসাদ: সমস্যা তো আছেই৷ ১৯৮৪ সালে প্রথম যখন উত্সব শুরু করেছিলাম, আমাদের লক্ষ্যই ছিল, শুধু 'নান্দীকার'কে তুলে ধরা নয়, বরং নিজেদের যতটা সম্ভব লো-প্রোফাইল রেখে সামগ্রিক ভাবে নাটক বিষয়টাকেই মূল ফোকাসে আনা৷ ভিন্ন ভাষার, ভিন্ন আঙ্গিকের নাটকের সঙ্গে দর্শককে পরিচয় করানো৷ আরও একটা উদ্দেশ্য ছিল, রাজনৈতিক দলাদলি, বিভিন্ন ধরনের টানাপোড়েনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নাটককেই হাতিয়ার বানিয়ে একটা প্রতিবাদ জানানো৷ সাংস্কতিক কোনও একটা মাধ্যমকে অস্ত্র বানাতে গেলে আমাদের হাতের ক্ষুরধার অস্ত্রটি ছিল নাটকই৷ তখন নাটকই যেহেতু জনমনোরঞ্জনের প্রধান মাধ্যম ছিল, কর্পোরেট সেক্টরগুলিও সাহায্যে এগিয়ে এসেছে৷ আর আজ...সমাজও বদলেছে, সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে, দর্শকও বদলাচ্ছে৷
অন্য সময়: দর্শক বদলাচ্ছে মানে? এখন কি তাঁরা নাট্যোসবের একটি টিকিটের জন্য রাত জেগে লাইন দেন না?
রুদ্রপ্রসাদ: নাঃ৷ তেমন দর্শক আর কই! আগে লোকে তা-ও একটা চান্স নিত৷ 'দেখি এ নাটকটা কেমন হল!' ভাল লাগলে ভাল, না-লাগলেও একটা আলোচনা, ভাবনা ছিল দর্শকের মধ্যেও৷ এই 'নান্দীকার উত্সব'টাকে যদি একটা প্রতীক হিসেবে দেখি, তাহলেও বিষয়টা স্পষ্ট বোঝা যাবে৷ এই উত্সব ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে আর আগের মতো উত্সাহ-উত্তেজনা নেই৷
অন্য সময়: এই পরিস্থিতিটার জন্য কাকে দায়ী করবেন?
রুদ্রপ্রসাদ: সরকারের একটা দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার তো রয়েইছে৷ তাকে এড়িয়ে যাই কী করে! সরকারের টাকায় ফুটানি করে বিশাল মাপের চলচ্চিত উত্সব হয় এই শহরেই৷ সেখানে একজন নাট্যকর্মী কী পান? আমার মাইনে মাসে ছ'হাজার টাকা! এত শক্তিশালী একটা শিল্পমাধ্যম, এদেশের সরকার সেটা বুঝলই না! অথচ পুরো ছবিটা কতখানি আলাদা ইংল্যান্ড,জার্মানিতে৷ সেখানে দেখা যাবে আঠারো-উনিশের ছেলেমেয়েরা হাত ধরে নাটক দেখতে ঢুকছে৷ সত্যি বলতে কী, শেক্সপীয়রের নাটকের অভিনয় দেখতে দেখতেই তারা প্রেমে পড়ছে, বলা যায় প্রেমের পাঠ নিচ্ছে নাটক দেখে৷ এদেশে এমনটা ভাবা যাবে?
অন্য সময়: এ রাজ্যে সরকার বদলের জেরে কি নাটকের দুনিয়ায় কোনও পরিবর্তন এল?
রুদ্রপ্রসাদ: আগের মুখ্যমন্ত্রী নাটক বুঝতেন৷ অন্তত ব্যক্তিগত ভাবে৷ আর এখনকার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বোঝেন শুধু ভিড়৷ যেখানে ভিড়, যেখানে প্রচারের সুবিধে বেশি, উনিও সেখানেই থাকেন৷ কাজেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বোঝেন শুধু টলিউড! কিন্ত্ত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভাচার্যকে নিয়েও আমার কিছু ক্ষোভ রয়েছে৷ মাত্র দু'-আড়াই বছর আগের কথা৷ আমি বুদ্ধকে একটা প্রোজেক্টের কথা বলে যাচ্ছিলাম সেই আশির দশক থেকে৷ যার মধ্যে নাটকের উত্সব ছিল, নাট্যকর্মীদের জন্য কর্মশালার প্রস্তাব ছিল, ছিল নাম করা অভিনেতাদের জন্য ফেলোশিপ এবং প্রতিভাবানদের জন্য একটা ভদ্রস্থ মূল্যের ভাতা৷ পাশাপাশি, বছর দু'য়েকের জন্য একটা রেপার্টরি তৈরি করা৷ তত্কালীন বাম সরকার ওয়ার্কশপ এবং নাট্যোত্সবে উত্সাহ দিলেন৷ কিন্ত্ত ওয়ার্কশপের পর ওইসব ছেলেমেয়েরা যাবেটা কোথায়? মিনার্ভায় একটা কমিটি তৈরি হল৷ রেপার্টরিও তৈরি হল৷ কমিটি-নির্মাতারা জানতেন আমি অন্তত এই কাজটায় দক্ষ৷ কিন্ত্ত তাঁরা কমিটিতে হিসেব করে, রীতিমতো 'ভারসাম্য' রক্ষা করে সদস্য রাখলেন৷ একজন বিখ্যাত মহিলা, অভিনয় জগতেরই, তিনি বিশেষ একটি ক্ষমতা পেলেন৷ তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম, যে ছেলেমেয়েগুলো সকাল এগারোটা থেকে রাত দশটা অবধি ওয়ার্কশপ করছে, স্কুলে-কলেজে নাটকের পাঠ দিতে যাচ্ছে...আরও কতকিছু করছে শুধুমাত্র নাটকেরই জন্যে...তাদের কি মাসে অন্তত ১৮ হাজার টাকাও দেওয়া যায় না? অনেক কথাবার্তার পরে ১০ হাজার টাকায় রফা হল৷ প্রশ্ন হল, টাকা কি কমিটির? আর কী আশ্চর্য ব্যাপার! এখনকার সরকার এসেই সিনিয়রদের ছুটি দিয়ে দিল৷ বিভাসকে আনার প্রস্তাব দিলাম, এখনকার সরকারের প্রতিনিধিরা বললেন, এটা নাকি 'আমরা-ওরা' ভাগ হয়ে যাচ্ছে! মানে বাম আর ডান! আচ্ছা, কী-ই বা পেয়েছিলাম বাম জমানায়, আর এরাই বা বাড়তি কী দিল! ওরা তা-ও বিষয়টা বুঝত, আর এদের তো কিছু বোঝানোই দায়!
অন্য সময়: অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস যে হাতছাড়া হয়ে যেতে বসেছে...
রুদ্রপ্রসাদ: আজ নয়, বছর ২৭ আগে এ নিয়ে প্রথম একটা বিতর্ক শুরু হয়েছিল৷ আমি মনে করি, এমনটা সম্ভব নয়৷ ট্রাস্টি বোর্ড নাকি মামলা করেছে৷ তারা কর্পোরেট সেক্টরকে ক্ষমতায় আনতে চায়৷ আমার কাছে পুরো ব্যাপারটাই একটা ধাঁধা৷ জানি না, কী হবে! এ ব্যাপারে আমার একার তো কিছু করার নেই৷ সমস্ত নাট্যকর্মীদের একজোট হয়ে প্রতিবাদ জানাতে হবে৷
অন্য সময়: গৌতম হালদারের মতো অভিনেতাকে দল থেকে হারানো...নান্দীকারের পক্ষে কতটা ক্ষতিকর?
রুদ্রপ্রসাদ: আমার নিজস্ব একটা গর্বের জায়গা আছে৷ সেটা এই, আমি কখনও নাটকের জন্য অন্য কোনও কিছুকে জায়গা ছাড়িনি৷ কিন্ত্ত আমার মতোই সবার বিশ্বাস পোক্ত হবে, এমনটা তো না-ও হতে পারে! আমি সেটা আশাও করতে পারি না৷ বিভাস (চক্রবর্তী) যখন দল ছেড়ে চলে গেল, ওর জন্যও খুব কষ্ট হয়েছিল৷ বিভাসকে বলেছিলাম, থাকো, এখানে থেকেই ঠিক করো, তোমার বিকল্প জায়গা কোনটা৷ আর, তারপর এই যে গৌতম চলে গেল...নান্দীকার তো ওকে চলে যেতে বলেনি... হয়তো ওর নিজের উপকারই হয়েছে এতে৷ তবে আমি বলব, সমগ্র নাট্যজগতেরই এতে উপকার হয়েছে৷ মানুষ গৌতম হালদারকে বিভিন্ন মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছেন৷ তবে তাতে নান্দীকার'-এর কিছু ক্ষতি হয়নি! 'অজ্ঞাতবাস' তো করলাম গৌতম চলে যাওয়ার পরই৷ নান্দীকার কোনও সৈনিকের চলে যাওয়া মনে রাখে না!
অন্য সময়: কিন্ত্ত একের পর এক নাট্যাভিনেতা বারবার টেলিভিশন সিরিয়ালে বা সিনেমায় চলে যাচ্ছেন...এটা তো খুব খারাপ একটা ট্রেন্ড...মানে, নাটকের ক্ষেত্রে...
রুদ্রপ্রসাদ:কী ভাবে আটকাবো ওদের? কী দিয়ে আটকাবো? কতটুকু টাকা দিতে পারি ওদের? বাড়তি উপার্জনের জন্য অন্য জায়গায় তো কাজ করতেই হবে৷ আমার নিজেরই এত কষ্ট হয় সোহিনীকে নিয়ে...
অন্য সময়: আপনার মেয়ে সোহিনী তো অসম্ভব ট্যালেন্টেড৷ যেখানে যা-ই করেছেন, সবাইকে মুগ্ধ করে দিয়েছেন৷ ওঁর জন্য দুর্ভাবনা...
রুদ্রপ্রসাদ: কতটুকু পেল ও, থিয়েটার করে? ওর সমসাময়িক অনেক থিয়েটার-অভিনেতা অনেক বেশি প্রচার পেয়েছে, প্রতিটি মাধ্যমে৷ আমার মেয়ে সেটা পায়নি৷ হয়তো মেয়ে বলেই! সোহিনীকে প্রতিদিন স্কুলের চাকরিতে যেতে হয়৷ প্রথম প্রথম ও খুব উত্সাহী থাকত৷ প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে ওর ছাত্রীদের গল্প করত...আজকাল বলে, 'বাবা, আমি আর পড়াতে পারছি না৷ ছাত্রীরা বদলে গিয়েছে, কেউ আর কোনও আলাপ-আলোচনা শুনতে চায় না, শুধু নোটস চায়৷' আমার সবথেকে বড় কষ্ট, নিজের মেয়েকে এক্ষুনি বলতে পারছি না, চাকরি ছেড়ে দে৷ আমি আছি তোর পাশে৷ এতটা তো সাধ্যই আমার নেই৷ তবে বছর দুয়েক পরে হয়তো ওকে মুক্তি দিতে পারব৷ ওকে নিয়ে স্বপ্ন বলতে...স্বপ্ন একটাই৷ সোহিনী থিতু হোক৷ খুব সুন্দর, সুখী একটা পারিবারিক জীবন পাক... আর ও সন্তান পাক... আমি বাচ্চা খুব ভালোবাসি৷
অন্য সময়: কখনও মনে হয়নি, ফিল্ম ডিরেকশনে আসবেন? যেমন সুমন মুখোপাধ্যায়...যেমন...
রুদ্রপ্রসাদ: বিশ্বাস করুন, আমি একসঙ্গে অনেক কিছু ম্যানেজ করতে পারি না৷ এই তো, গতকাল ভুবনেশ্বর থেকে ফিরলাম অনেক রাতে৷ আমার মাত্র দেড় দিনের নেমন্তন্ন ছিল ওখানে৷ হঠাত্ খবর পেলাম, স্বাতী অসুস্থ৷ ওর ফুড পয়েজনিং হয়েছে... প্রায় দৌড়ে ফিরলাম৷ স্বাতীকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য৷
সব কাজ সেরে, মাথায় নানা ধরনের দুশ্চিন্তা... এন এস ডি একেবারে শেষ মুহূর্তে ঠিক করেছে, ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সের জন্য যে নাটক, সেটি ওরা পাঠাতে পারবে না! এ দিকে পোস্টার ছাপা হয়ে গিয়েছে...আরও নানা আয়োজন... (এই সাক্ষাত্কার দেওয়ার সময়েও রুদ্রপ্রসাদ সেনগুন্ত জানতেন না, মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই, মাত্র এক দিনের নোটিশেই রাজি হয়ে যাবেন অরুণ মুখোপাধ্যায়, 'জগন্নাথ' নিয়ে হাজির হবেন উত্সব-প্রাঙ্গণে) কিন্ত্ত বাড়ি ফিরে স্বাতীকে যখন দেখলাম...অন্ধকার ঘরে শুয়ে আছে একা...আমার এত কষ্ট হল... আজই ওই দুঃসংবাদটা শুনেছি৷ দিল্লি থেকে বাচ্চাদের ওই দলটা আসতে পারছে না৷ কিন্ত্ত স্বাতীলেখাকে দেখে এমন একটা অদ্ভুত অনুভব হল... এতগুলো বছর ধরে এই মানুষটার দিকে তো তাকাতেই পারলাম না, যত্নই নিতে পারলাম না সে ভাবে৷
অন্য সময়: আর ওই যে গিরিশ কারনাড বলে বসলেন, রবীন্দ্রনাথ সে ভাবে নাটকই বানাতে পারেননি...
রুদ্রপ্রসাদ: এটা ওর পুরনো কথা৷ আগেও বহুবার বলার চেষ্টা করেছে৷ কিন্ত্ত কারও উচিত, তাঁকে জিজ্ঞেস করা: ভাই, তুমি তো সবটাই ইংরেজিতেই পড়েছ৷ সব বাঙালি কি তা হলে গাধা! আর তুমি একা বুদ্ধিমান? পোপ বা মৌলবী বা অন্যান্য ধর্মগুরুদের আদলে এই ভাবে ফতোয়া জারি করার অধিকার তাকে কে দিয়েছে? গিরিশের বোঝা উচিত, ওর বিদ্যা ওকে বিনয় দেয়নি৷ আর বিনয়টুকু অর্জন করতে না পারলে কীসের শিক্ষা!
বিধানসভায় ভেস্তে গেল সর্বদল বৈঠক
ডিজিটাল ডেস্ক
কলকাতা, ১২ ডিসেম্বর, ২০১২
শাসক ও বিরোধী পক্ষের হাতাহাতি নিয়ে বিধানসভার অচলাবস্থা বুধবারও কাটল না। শাসক ও বিরোধীদের দায় চাপানোর জেরে ভেস্তে গেল এদিনের ডাকা সর্বদল বৈঠক। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার চিটফান্ড সংক্রান্ত বিষয়ে বামেদের মুলতুবি প্রস্তাব আনার দাবিকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিধানসভার অধিবেশন। বাম বিধায়করা অধ্যক্ষকে নিগ্রহের চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ করে শাসক দল। অধ্যক্ষ ঘটনার জেরে তিন বাম বিধায়ককে সাসপেন্ড করেন। এই সাসপেনশনকে কেন্দ্র করেই নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে যায়। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র দাবি করেন, শাস্তি দেওয়ার আগে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। এরপরই হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন শাসক ও বিরোধী দলের বিধায়করা। সিপিএম বিধায়ক দেবলীনা হেমব্রমকে ফেলে পেটানো হয় বলে অভিযোগ। সংঘর্ষে আহত হন শাসক ও বিরোধী পক্ষের কয়েকজন বিধায়ক। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘটনার জন্য বামদলগুলিকে দায়ী করেন।
এই ঘটনার পর আজ বিধানসভার অধিবেশন শুরু হলে বাম শিবির তিন বিধায়কের সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবি করেন। অধ্যক্ষ দাবি খারিজ করে দিলে তাঁরা সভা থেক ওয়াকআউট করেন। সারাদিনই অধিবেশনে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাম বিধায়করা। আজ বিজনেস অ্যাডভাইজরি কমিটির বৈঠকেও যোগ না দিয়ে বিধানসভার বাইরে বিক্ষোভও দেখান তাঁরা। গতকালের ঘটনার নিন্দা করেছে সিপিএম পলিটব্যুরো।
এদিন অধ্যক্ষের ডাকা সর্বদল বৈঠকে দুপক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকেন। শাসক দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সমগ্র ঘটনার জন্য বাম বিধায়কদের দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। অন্যদিকে, বামেরা দাবি করেন, সাসপেনশনের আগে তাঁদের তিন বিধায়ককে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। তাই সাসপেনশন তাঁরা মেনে নেবেন না। বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর পার্থ চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, গতকালের ঘটনার জন্য অনুতপ্ত নন বামেরা। সর্বদলীয় বৈঠকের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানেও তাঁরা আগ্রহী ছিলেন না। অবশ্য তিনি জানিয়েছেন, গতকালের ঘটনায় খতিয়ে দেখা হবে নিরাপত্তরক্ষীদের ভূমিকা। অন্যদিকে, বিরোধী দলনেতা বৈঠকের পর বলেছেন, শাসক দল গতকালের ঘটনায় নিজের দায় সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে। তাঁরা দাবি করছেন, আমাদের দুঃখপ্রকাশ করতে হবে। কিন্তু এই দাবি মানা সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেছেন, যারা আক্রান্ত তাঁদেরই দুঃখপ্রকাশ করতে বলা হচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া তাঁদের পক্ষে কোনওভাবেই সম্ভব নয়।
'স্বভাব তো কখনো যাবে না'
নিজস্ব প্রতিনিধি: কলকাতা, ১১ই ডিসেম্বর—নতুন নয়। বিধানসভার অন্দরে কলঙ্কের খতিয়ানে আর একটা অধ্যায় যুক্ত হলো। মঙ্গলবারের ন্যক্কারজনক আক্রমণের ঘটনায় একটি নবতম সংযোজন বিধায়কদের তরফেই বিধায়কদের ওপর হিংস্র হামলার মধ্য দিয়ে।
সাল ১৯৫৯। সেই সময়ে খাদ্য আন্দোলনে রাজ্যের ৮০জন সাধারণ মানুষ শহীদ হয়েছিলেন রাজ্যের শাসকদলের পুলিসের আক্রমণে। অন্তত দু'শো মানুষ নিখোঁজ হয়েছিলেন সেই নির্বিচার লাঠিচার্জের পর। ১৮৫৯জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। যাঁরা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাঁদেরই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এই ঘটনার পর ২১শে সেপ্টেম্বর বিধানসভায় খাদ্য আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কমিউনিস্টদের তরফে দাবি জানানো হলে অস্বীকার করেন কংগ্রেস ও পি এস পি-র বিধায়কেরা। শুধু তাই নয়, তৎকালীন পুলিসমন্ত্রী কালী মুখার্জি নিহতদের জন্য দুঃখপ্রকাশে অস্বীকার করেন। তাতে ক্ষোভ জানালে শাসকদলের তরফেই জুতো ছুঁড়ে আক্রমণ করা হয়েছিল। যথারীতি এরপরই রাজ্যের জেলায় জেলায় সাধারণ মানুষের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
১৯৬৯। ২৯শে জুলাই বাসন্তীতে এস ইউ সি আই সমর্থক ও পুলিসের মধ্যে সংঘর্ষে এক পুলিস নিহত হন। ৩১শে জুলাই নিহত পুলিসের দেহ নিয়ে শোকমিছিল বের হয়। আর শোকমিছিলের নাম করে উচ্চপদস্থ কিছু অফিসারের নেতৃত্বে পুলিসবাহিনী বিধানসভার লবিতে ঢুকে পড়ে। বহু চেয়ার টেবিল, মনীষীদের প্রতিকৃতি ভেঙে চুরমার করে। তারাই যুক্তফ্রন্ট সরকার নিপাত যাক, জ্যোতি বসুর মুণ্ডু চাই ইত্যাদি স্লোগান দিতে দিতে বিধানসভার কক্ষে ঢুকে বহু মাইক স্ট্যান্ড ভেঙে দেয়। কয়েকজন বিধানসভার সদস্যের গায়ে হাতও তোলে। এইসময়তেই কংগ্রেসের দুই বিধায়ক জ্যোতি বসুর ঘর চিনিয়ে দেওয়ায় তারা উন্মত্তের মতো জ্যোতি বসুর ঘরে ঢুকে ফুলদানি ছুঁড়ে মারে তাঁর দিকে। বিন্দুমাত্র ভয় না পেয়েই জ্যোতি বসু তাঁদের উদ্দেশ্যে বলেন, এটা কি মৃতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন? এই ঘরে ঢুকেছেন কেন? এখন যদি বন্দুকগুলো কেড়ে নেওয়া হয় তাহলে কী করবেন? এরপর তাঁরা বেরিয়ে গিয়ে বিধানসভার লবিতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন।
১৯৮৪। দিনটা ছিল বৃহস্পতিবার। বিধানসভার বাজেট অধিবেশন চলছিল। কংগ্রেসের চিফ হুইপ সুব্রত মুখার্জির হাতে সেদিন প্রহৃত হয়েছিলেন অধ্যক্ষ হাসিম আবদুল হালিম। একটি দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাব পাঠ করার অছিলায় নিজের আসন ছেড়ে উঠে গিয়ে সুব্রত মুখার্জি অধ্যক্ষের টেবিলে গিয়ে সজোরে টেবিল চাপড়াতে থাকেন। আচমকা অধ্যক্ষকে ধাক্কা দিয়ে তাঁর হাতের কাগজপত্র কেড়ে নেন তিনি। তারপর টেবিল ল্যাম্প উপড়ে দেন এবং মাইক্রোফোনটি দুমড়ে-মুচড়ে ফেলে দেন। সেই অধিবেশনের শেষপর্বেই সুব্রত মুখার্জি তাঁর এই অসংসদীয় আচরণের জন্য ক্ষমা চান। না, সেদিন অসংসদীয় আচরণের জন্য আজকের মন্ত্রিসভার সদস্য সুব্রত মুখার্জিকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এরপর যথারীতি বিধানসভার কাজও চলেছিল।
২০০৬। এরাজ্যের বিধানসভার ইতিহাসে সবচাইতে কলঙ্কজনক দিনটিই ছিল এই বছরের ৩০শে নভেম্বর। তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়কদের তাণ্ডবে ভেঙে তছনছ হয়ে যায় ঐতিহ্যশালী বিধানসভার দামী আসবাবপত্র। তৃণমূলী বিধায়কদের এই ঘৃণ্য আক্রমণে আহত হয়েছিলেন ৬জন বামফ্রন্টের বিধায়ক, ২জন বিধানসভার কর্মী এবং ২জন সাংবাদিক। ঘড়িতে সেইদিন দুপুর দেড়টা। বিধানসভার দ্বিতীয়ার্ধের অধিবেশন শুরু হয়। আজকের উপাধ্যক্ষের পদে থাকা সেদিন তৃণমূলী বিধায়ক সোনালি গুহ লবিতে ছুটতে ছুটতেই বলছিলেন 'বহুৎ বাড় বেড়েছে। এবার মজা দেখাবো'। আক্রমণকারীর ভূমিকায় সেদিন ছিলেন আজকের পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি। সোচ্চারে বলেন, 'কীভাবে আজ হাউস হয় দেখবো'। রিপোর্টারদের চেয়ার তুলে ভাঙতে থাকে তৃণমূলী বিধায়কেরা। অধ্যক্ষের টেবিলের বই, কাগজপত্র ছিঁড়ে কুটিকুটি করে তারা। মাইক্রোফোনগুলো বেঁকিয়ে দেয়। উন্মত্ত তৃণমূলী বিধায়কেরা সেদিন সংবাদপত্রে ছাপার অযোগ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। আক্রান্ত সি পি আই (এম) বিধায়ক কে ডি ঘোষের মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। রক্তাক্ত হন তৎকালীন রামনগরের বিধায়ক স্বদেশরঞ্জন নায়েকও। চোটে আহত হন আরও চার পাঁচজন বিধায়ক। এমন ঘৃণ্য আক্রমণের তীব্র নিন্দা প্রকাশ হয়েছিল সংসদেও।
http://ganashakti.com/bengali/breaking_news_details.php?newsid=983
অস্ত্র উঁচিয়ে মনোনয়ন
প্রত্যাহার করাচ্ছে তৃণমূলীরা
নিজস্ব সংবাদদাতা
বারাকপুর, ১১ই ডিসেম্বর— স্কুল পরিচালন সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বারাকপুর শিল্পাঞ্চলজুড়ে চলছে তৃণমূলী সন্ত্রাস। তৃণমূলের বাইকবাহিনী পাড়ায় পাড়ায় আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে হুঙ্কার ছাড়ছে আর সেই হুমকি দিচ্ছে বাম-প্রগতিশীল প্রার্থীদের। স্কুল চত্বরগুলিতে সন্ত্রাসের আবহাওয়া তৈরি করছে। ফলে আতঙ্কিত ছাত্রছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকরা। পুলিস সব জেনেও নীরব দর্শক। এমনই ঘটনা ঘটলো মঙ্গলবার তালপুকুর গার্লস হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির নির্বাচনে। ১৬ই ডিসেম্বর এই স্কুলের নির্বাচন। এদিন ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন। সোমবার রাতে প্রগতিশীল দলের প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চড়াও হয় তৃণমূলের বাইকবাহিনী। আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে, মহিলাদের উদ্দেশ্যে অশালীন মন্তব্য করে মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেয়। জোর করে সই করিয়ে নেওয়া হয়। প্রাণের ভয়ে পরিবারের কথা ভেবে বাধ্য হন মনোনয়নপত্র প্রত্যহারপত্রে সই করতে। মঙ্গলবার তা স্কুলে জমাও দিয়ে দেয় তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা। এই খবর জানাজানি হতেই এলাকার মানুষ হতবাক হয়ে যান। গণতন্ত্রের উপর এই ধরনের আক্রমণে ভীতসন্ত্রস্ত সাধারণ মানুষ। একই ঘটনা ঘটলো শিউলি গার্লস হাইস্কুলের নির্বাচনে। সেখানে একজন প্রগতিশীল প্রার্থীকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়। অন্যদিকে ক্ষেত্রমোহন বয়েজ হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির নির্বাচন আগামী ২৩শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। ১১, ১২ই ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন। মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেলো তৃণমূল-আশ্রিত এলাকার দাগী দুষ্কৃতীরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঘিরে রেখেছে স্কুল চত্বরটি। তাদের কাজ প্রগতিশীল দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে না দেওয়া। ভয়ে অভিযোগও জানাতে পারছেন না প্রগতিশীল প্রার্থীরা।
http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=33305
বিধানসভায় মারধর করলো তৃণমূলীরা
রক্তাক্ত গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি।। মহিলা বাম বিধায়ক নিগৃহীত।।
চললো অবাধে কিল-চড়-ঘুঁষি।। উলটে তিন বাম বিধায়ককেই সাসপেন্ড।।
অধ্যক্ষের পক্ষপাতমূলক আচরণ।। উপাধ্যক্ষের উসকানি।
নিজস্ব প্রতিনিধি
কলকাতা, ১১ই ডিসেম্বর—বেনজির ন্যক্কারজনক আক্রমণ বিধানসভায়। বিধানসভা চলাকালীনই বাম বিধায়কদের ওপর ঘৃণ্য আক্রমণ চালালো শাসকদলের বিধায়কেরা। রাজ্যের নানা জায়গায় পথেঘাটে শাসকদলের তরফে বিরোধীসহ সাধারণ মানুষের ওপর যে আক্রমণ চলছে তারই সংস্করণ এবার বিধানসভার অন্দরে। একইসঙ্গে রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষের পদের চূড়ান্ত অমর্যাদা হলো নগ্ন পক্ষপাতিত্বে।
প্রথমে বিরোধীদের মুখবন্ধ করার চেষ্টা। গতদিনের মতোই মুলতুবি প্রস্তাব আনতে বাধা। এরপর বিরোধীরা আইন মেনেই বিরোধিতায় সোচ্চার হলে শাসকদলের বিধায়কদের দিয়ে আক্রমণ। এই ঘৃণ্য আক্রমণ থেকে রেহাই পেলেন না একজন আদিবাসী মহিলা বিধায়কও। শারীরিক নির্যাতন চললো বেশ কয়েক মিনিট ধরে। নির্মম মারধরে রক্তাক্ত হতে হলো বাম বিধায়ককে। এরপর যথারীতি আক্রান্তদের বিরুদ্ধেই বাইরে থানায় এফ আই আর দায়ের করার মতো অভিযোগের কাঠগড়ায় তোলা হলো বিধানসভার অন্দরেও। শুধু তাই নয়, বেনজির শাস্তি দানও হলো আক্রান্ত বাম বিধায়কদের।
এদিনই এই আক্রমণ প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা তথা সি পি আই (এম) পলিট ব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র জানিয়েছেন, সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটা কলঙ্কজনক নজির তৈরি হলো। সরাসরি অধ্যক্ষকেই অভিযোগের কাঠগড়ায় তুলে বললেন, সকলেই দেখলেন কীভাবে বিধানসভার অধ্যক্ষ এই নৈরাজ্য ঘটাতে কোন অংশকে উৎসাহিত করলেন।
মঙ্গলবার এই ন্যক্কারজনক ঘটনার শুরু হলো কীভাবে?
ঘড়িতে তখন বেলা সওয়া ১২টার কিছু পর। প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হয়েছে সবে। এই সময়তেই বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র রাজ্যে চিট ফান্ড নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব তোলার চেষ্টা করেন। আর তখনই তাঁর এই প্রস্তাব দু'লাইন পড়তে না পড়তেই অধ্যক্ষ মাইক বন্ধ করে দিয়ে কংগ্রেসের আনা 'রাজ্যে শিল্পায়ন প্রক্রিয়া শুকিয়ে যাওয়া' নিয়ে আর একটি মুলতুবি প্রস্তাব পড়তে বলেন। সেই প্রস্তাবও সম্পূর্ণ পড়তে দেওয়া হয়নি অধ্যক্ষের পক্ষপাতিত্বের নজিরেই। এইসময়তেই যথারীতি বিরোধী দলনেতা তাঁর প্রস্তাব সম্পর্কে বলতে দেওয়ার দাবি জানাতে থাকেন। বামফ্রন্টের বিধায়কেরা সরব হন এই চিট ফান্ড সংক্রান্ত মুলতুবি প্রস্তাব নিয়ে। আনিসুর রহমানসহ বামফ্রন্টের বিধায়কেরা বারবার অধ্যক্ষের কাছে গিয়ে এই প্রস্তাব পেশের দাবি জানাতে থাকেন। এইসময়ে ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে উঠে এসে অধ্যক্ষের ডানদিকে জড়ো হন শাসকদলের বিধায়কেরা। সেখান থেকেই উসকানি চলে বিরোধীদের বিরুদ্ধে।
ঘটনা আচমকা হিংসাত্মক চেহারা নিলো বিধানসভারই উপাধ্যক্ষের আচরণে। তিনি অধ্যক্ষের পাশে দাঁড়িয়েই বাম বিধায়কদের উদ্দেশ্যে কুৎসিৎ অসংসদীয় ভাষা প্রয়োগে আক্রমণ করলেন। শুধু তাই নয়, ট্রেজারি বেঞ্চের বিধায়কদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে জানালেন উঠে আসতে। তারপরই শুরু হয়ে গেল বাম বিধায়কদের লক্ষ্য করে কিল-চড়-ঘুষি মারা। প্রথম দফার এই আক্রমণে আক্রান্ত হন বামফ্রন্টের বিধায়ক দেবলীনা হেমব্রম, নাজমুল হক, সুশান্ত বেসরা, সাজাহান চৌধুরী প্রমুখ। প্রথম আক্রমণেই বিধায়ক নাজমুল হকের ঘড়ি ছিঁড়ে নেওয়া হয়েছে। দেবলীনা হেমব্রমের ওপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চলেছে। প্রথম দফার এই আক্রমণের পর অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যায় এবং বাইরে এসে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এই ঘৃণ্য আক্রমণের প্রতিবাদ জানান।
এরপর দ্বিতীয় দফার অধিবেশন যখন বসে বেলা দেড়টা নাগাদ তখনই অধ্যক্ষের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্বের জেরে শাসকদলের বিধায়কদের হিংস্র আচরণের মাত্রা আরও যেন বেড়ে যায়। অধিবেশন ফের বসতে না বসতেই অধ্যক্ষ বামপন্থী তিন বিধায়ককে অভিযুক্ত করেন আগের ঘটনার জন্য। আক্রান্ত নাজমুল হক, সুশান্ত বেসরা এবং শেখ আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে রুলিং দিতে শুরু করেন অধ্যক্ষ। তখনই সংসদীয় গণতন্ত্রে যে নজির খুঁজে পাওয়া যায় না ঠিক তেমন ঘটনাই ঘটলো। অধ্যক্ষকে বলতে না দিয়ে শাসকদলের তরফে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি আগের ঘটনা নিয়ে একটি প্রস্তাব পাঠ করতে থাকেন। লক্ষ্য করা যায় চুপচাপ থেমে গেলেন অধ্যক্ষ। আর পরিষদীয় মন্ত্রীকে পাঠ করতে দিলেন সেই প্রস্তাব। আর শাসকদলের তরফে পেশ করা সেই প্রস্তাবেই অভিযুক্ত করা হয় বাম তিন বিধায়ককে এবং তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। যথারীতি গোটাটাই যে গট-আপ ম্যাচ তা বোঝা গেল এরপরই অধ্যক্ষ তিন বাম বিধায়ককে চলতি শীতকালীন অধিবেশন থেকে টানা বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত ঘোষণায়। তীব্র প্রতিবাদ করেন বিরোধী দলনেতা। তিনি বলেন, যদিও আক্রান্তরাই এক্ষেত্রে অভিযুক্ত হলেন, তবুও অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়ার আগে তাঁদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ অন্তত দেওয়া হয়। না, এক্ষেত্রে সেই দাবি চাইলেও কোন আমল দেননি অধ্যক্ষ। শুধু তাই নয়, বিরোধী দলনেতাকেও বলতে দেওয়া হয়নি অধিবেশনের অভ্যন্তরে।
অসংসদীয় পথে আক্রান্ত হয়েও কীভাবে অপরাধী সাব্যস্ত করে শাস্তি দেওয়া হলো তা নিয়েই এই সময় ক্ষোভে ফেটে পড়েন বামপন্থী বিধায়কেরা। ফের যখন অধ্যক্ষের কাছে গিয়ে আবেদন জানাতে থাকেন বামেরা তখনই আরও হিংস্রতা নিয়ে শাসকদলের বিধায়কেরা ঝাঁপিয়ে পড়ে বাম বিধায়কদের ওপর। এই ন্যক্কারজনক আক্রমণের বর্ণনা দিতে গিয়েই এদিন আক্রান্ত বাম বিধায়ক দেবলীনা হেমব্রম সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, আমি বলতে গিয়েছিলাম অধ্যক্ষের কাছে আমাদের বলার সুযোগ দিতে হবে এই দাবি নিয়ে। কিন্তু তখনই বলার সুযোগ না দিয়ে প্রথমেই তৃণমূলের মহিলা বিধায়িকা মেহমুদা বেগম প্রথমে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মারধর করতে থাকে। তখন জাহানারা খাতুনসহ বামেদের অন্যান্য মহিলা বিধায়করা তাঁকে বাঁচাতে ছুটে আসেন। তখন বামফ্রন্টের বিধায়ক গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জিকে ঘিরে ধরে চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে ট্রেজারি বেঞ্চের দিকে নিয়ে যায় তৃণমূলী বিধায়কেরা। আর নির্মমভাবে তাঁকে মাটিতে ফেলে কিল, লাথি, ঘুঁষি মারতে থাকে শাসকদলের বিধায়কেরা।
আক্রমণকারীদের কি চিহ্নিত করা যায়নি? অধ্যক্ষ চিহ্নিত করতে না পারলেও স্পষ্ট লক্ষ্য করা গেছে তৃণমূলের বিধায়ক বেচারাম মান্না, জয়ন্ত নস্কর, পুলক রায়, সমীর পাঁজা, তপন চ্যাটার্জি ও মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা ছিলেন মূল আক্রমণকারীর ভূমিকায়। আক্রমণকারী তৃণমূলী বিধায়ক তপন চ্যাটার্জির পাঞ্জাবীতে তখনই রক্তাক্ত গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জির দেহের রক্ত লেগে গিয়েছিল। আর তখন বিধানসভার ভেতরে দাঁড়িয়েই অন্যান্য তৃণমূলী বিধায়কেরা তাঁকে বাহবা দিচ্ছিলেন এই বলে 'বাহ! ভালো করে দিয়েছিস তো?' না, সমস্ত তৃণমূলী বিধায়কেরাই এদিন আক্রমণকারীর ভূমিকা নেননি। তৃণমূলেরই বিধায়িকা শিউলি সাহা এদিন এই শাসকদলের বিধায়কদের তরফে আক্রমণের প্রতিবাদ করেছেন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে। সেইসময় দেবলীনা হেমব্রমকে লক্ষ্য করে মারধর চলছিল। তখন শিউলি সাহাই গিয়ে আক্রমণকারীদের নিরস্ত করার চেষ্টা চালান।
বিধানসভার অধ্যক্ষের তরফে এই আক্রমণ বন্ধের কিছুমাত্র চেষ্টা ছিল না। বিধানসভায় থাকা মার্শালকে কখনই এই ঘটনা থামানোর নির্দেশ দেননি এদিন অধ্যক্ষ। বরং দু'দফায় নির্মম আক্রমণ চালানোর পর আক্রান্ত বাম বিধায়কদেরই তিনজনকে অভিযুক্ত করে বের করে দেওয়ার জন্য অধ্যক্ষ এদিন মার্শালের ভয় দেখান। বিরোধী দলনেতাকে বলেন, আপনি ব্যবস্থা নিন, নইলে আমি মার্শালকে দিয়ে তিন অভিযুক্ত বিধায়ককে বের করে দেবো। এমন ঘৃণ্য পক্ষপাতিত্বের নজির নেই বিধানসভার ইতিহাসে।
চোখের সামনেই এই আক্রমণের ঘটনা ঘটে যাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় এদিন এরপরই কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিধায়কেরা এই ঘটনার চড়া নিন্দা জানিয়ে কক্ষত্যাগ করেন। তাঁরা বিধানসভার ভেতরেই বলেছেন অধ্যক্ষের পক্ষপাতিত্বের এমন নিদর্শন মেলে না। তাই এই দিনটাকে কালো আখ্যা দিয়ে তাঁরা বেরিয়ে যান। আর বামপন্থীরা তারপরও বিধানসভার অভ্যন্তরে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন। কেন তিনজন বিধায়ককে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হবেনা। কেন তাঁদের বিনা বিচারেই বেরিয়ে যেতে হবে? যথারীতি সেই প্রশ্নেও অনড় থেকে শেষপর্যন্ত পক্ষপাতিত্বের নজিরই মেলে ধরেছেন বিধানসভার অধ্যক্ষ এবং বামপন্থীরা প্রতিবাদ জানিয়েই ওয়াক-আউট করেন। আর প্রতিবাদ জানিয়ে বামপন্থীরা বাইরে এসে বিধানসভার লনে বসে অবস্থান বিক্ষোভে শামিল হন। এরপর বিকেল পাঁচটায় রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের কাছেও অভিযোগ জানিয়েছেন বামেরা। কিন্তু দিনের শেষেও রাজ্যের শাসকদলের এমন হিংস্র আচরণের যেমন কোন পরিবর্তন ঘটেনি, তেমনই বিধানসভার অধ্যক্ষেরও নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্বের বদল ঘটেনি।
http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=33333
অসাংবিধানিক রুলিং অধ্যক্ষের,
অভিযোগ বিরোধী নেতার
নিজস্ব প্রতিনিধি
কলকাতা, ১১ই ডিসেম্বর— স্বয়ং অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অসাংবিধানিক রুলিং দিয়ে সরকার পক্ষের বিধায়কদের মারমুখী হতে উৎসাহিত করেছেন বলে অভিযোগ করলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। মঙ্গলবার বিধানসভায় তৃণমূল বিধায়কদের মারে বামফ্রন্ট বিধায়করা আহত হওয়ার ঘটনাকে সংসদীয় ইতিহাসের কলঙ্কজনক নজির বলে উল্লেখ করে মিশ্র বলেছেন, অধ্যক্ষের চোখের সামনে, সরকারের মন্ত্রীদের সামনে এই কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটেছে। অধ্যক্ষ অসাংবিধানিক রুলিং দিয়ে সি পি আই (এম) বিধায়কদের সাসপেন্ড করে দেওয়ার পরেই সরকারপক্ষের বিধায়করা ভয়ঙ্করভাবে মারধর শুরু করে। অধ্যক্ষের রুলিং উৎসাহিত করেছে তৃণমূলের বিধায়কদের।
বামফ্রন্ট পরিষদীয় দলকে নিয়ে বিধানসভা ভবনের সদরে বসে বিক্ষোভ দেখাতে দেখাতে সূর্যকান্ত মিশ্র অধ্যক্ষের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আমরা দেখতে চাই সবার চোখের সামনে তৃণমূলের বিধায়করা যে কলঙ্কজনক কাজ করেছে তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেন অধ্যক্ষ। আমরা অপেক্ষা করছি। উল্লেখ্য, এদিন বিকালেই রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের কাছে সমগ্র ঘটনার কথা জানিয়ে আসেন বামফ্রন্ট বিধায়করা।
এদিন বিধানসভায় একের পর এক ঘটনাক্রমে কীভাবে বিধায়কদের সংসদীয় অধিকারহরণ করা হয়েছে এবং তারপরে তাদের শারীরিকভাবে নিগ্রহ করা হয়েছে সাংবাদিকদের কাছে তার উল্লেখ করেন সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি বলেন, বিরোধীদের আনা কোনো মুলতবি প্রস্তাবে বিধানসভায় আলোচনার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। এদিন বামফ্রন্টের পক্ষে আনা চিট ফান্ড নিয়ে মুলতবি প্রস্তাবের বয়ানকে পালটে দেওয়া হয়েছে। বিধানসভায় আমরা প্রস্তাব পড়তে গিয়ে দেখছি অনেক লাইন বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদ করতেই আমাদের বিধায়কদের হেনস্তা করা হয়।
বিরতির পরে অধিবেশনে অধ্যক্ষ বিধানসভার রুল বুকের ৩৪৮ধারায় রুলিং দিয়ে তিন বিধায়ককে সাসপেন্ড করেন। মিশ্রের অভিযোগ, সভা কীরকম নিরপেক্ষতার সঙ্গে চলছে তা আবার দেখা গেল। রুল অনুযায়ী অভিযুক্তদের নাম উল্লেখ করে প্রস্তাব নিতে হয়। কিন্তু অধ্যক্ষ তিন বিধায়ককে অভিযুক্ত করে প্রস্তাব পাঠ করতে শুরু করতেই তাঁকে থামিয়ে দিয়ে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি প্রস্তাব পাঠ করতে শুরু করেন। সরকারের কোনো মন্ত্রী বিধানসভায় কোনো প্রস্তাব তুললেই তা নিয়ে বিরোধী দলের নেতা হিসাবে আমার বলার অধিকার রয়েছে, একতরফা কোনো কিছু সভায় চলতে পারে না। কিন্তু অধ্যক্ষ আমাকে বলতে দেননি। একতরফা সাসপেনশনের রুলিং দিলেন।
মিশ্রের আরো অভিযোগ, বিধানসভার রুলি বুক সংবিধানের উর্ধে নয়। সংবিধান অনুসারে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ছাড়া কাউকে কোনো দণ্ড দেওয়া যায় না। কিন্তু বামফ্রন্টের তিন বিধায়ককে সেই সুযোগ না দিয়েই সাসপেন্ড করা হয়েছে, এটা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক।
অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি অবশ্য বলেছেন, বিধানসভার রুল বুকের ৩৪৮ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো কথা লেখা নেই। এই প্রসঙ্গে সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ওঁরা কী চান যে পুরো সংবিধানটাই রুল বুকে লেখা থাকবে! ভারতের সংবিধানে 'প্রিন্সিপাল অব ন্যাচারাল জাস্টিস' এর কথা স্পষ্ট ভাবে বলা আছে, সেখানে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ছাড়া কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। অধ্যক্ষ সরকারের মন্ত্রীদের যখন ইচ্ছে বলতে দেবেন, অথচ বিরোধীদের বলতে দেবেন না, তা কী করে হয়! ট্রেজারি বেঞ্চের জন্য একরকম রুল, আর বিরোধীদের জন্য অন্যরকম?
সূর্যকান্ত মিশ্র এই অসাংবিধানিক রুলিংকে বিধানসভায় গণ্ডগোলের জন্য দায়ী করে বলেন, এর ফলাফল হলো, সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূল বিধায়করা নেমে এসে দেবলীনার মতো একজন মহিলা বিধায়ককে নৃশংসভাবে মারলেন। গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জিকে এমন মেরেছেন যে তাঁকে হাসপাতালে পাঠাতে হয়েছে, তাঁর মাথায় আঘাত লেগেছে। মন্ত্রীরাও এই মারধরে যোগ দিয়েছেন। আমরা দেখতে চাই অধ্যক্ষ এর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেন। তা না হলে অধ্যক্ষ কী করতে আছেন?
বিরোধী দলনেতা একথাও বলেন, কোন কোন বিধায়ক মন্ত্রী মারধর করেছেন সেটা অধ্যক্ষও দেখেছেন, বিধানসভার গ্যালারিতে বসা সাংবাদিকরাও দেখেছেন, আমরাও দেখেছি। যদি প্রয়োজন হয় বিধানসভাতেই সেই সব নাম বলবো।
পার্থ চ্যাটার্জি পালটা বামফ্রন্ট বিধায়কদেরই বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছেন, ওরাই ট্রেজারি বেঞ্চে এসে হামলা করেছে। এই প্রসঙ্গে সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, এই সরকারের আমলে উলটোটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আক্রান্তদের বিরুদ্ধে সব জায়গায় এফ আই আর হচ্ছে, আর আক্রমণকারীরা ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। বামফ্রন্টের সব দলের বিধায়করাই এদিন মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিক বৈঠকে অধ্যক্ষ এবং সরকার পক্ষের বিধায়কদের আচরণের তীব্র সমালোচনা করেন।
এরপরে বিকালে বামফ্রন্ট বিধায়করা রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সূর্যকান্ত মিশ্র জানিয়েছেন রাজ্যপালের কাছে বামফ্রন্ট বিধায়কদের পক্ষ থেকে সমস্ত ঘটনা জানানো হয়েছে এবং আবেদন করা হয়েছে সরকারের প্রতি বার্তা দেওয়ার জন্য। মিশ্র বলেন, আমরা সরকারের মুখ্যসচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের নিগ্রহের ঘটনার কথা বিধানসভায় তুলতে চেয়েও পারিনি। সরকারের মুখ্য সচেতকের যদি নিরাপত্তা না থাকে তাহলে অন্য বিধায়কদের নিরাপত্তা কোথায়? সরকারের তদন্ত কমিশন গঠনের কারণ দেখিয়ে বিধানসভায় তেহট্টের গুলি চালানোর ঘটনা নিয়ে মুলতবি প্রস্তাব বাতিল করে দিয়েছেন অধ্যক্ষ। কিন্তু তদন্ত কমিশন গঠন করতে হলে যে গেজেট নোটিফিকেশন করতে হয় তাতে রাজ্যপালের অনুমোদন লাগে। আমরা রাজ্যপালকে বলেছি এরকম কোনো নোটিফিকেশনের অনুমোদন দিয়ে থাকলে আপনি অনুগ্রহ করে জনগণকে জানাবেন। আমরা রাজ্যপালকে বলেছি, রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এখনো মন্ত্রী আছেন কিনা সেটা বিধানসভার সদস্য হয়েও আমরা এখনো জানতে পারলাম না। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শক্রমে মন্ত্রিসভার সদস্যদের আপনিই নিয়োগ করে থাকেন। আমাদের অবগত করার বিষয়ে আপনি উদ্যোগ নিন। চিট ফান্ড রোখার জন্য যে আইন রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের অপেক্ষায় পড়ে আছে তা নিয়ে রাজ্য সরকারের মনোভাব কী তাও আমরা জানি না। এই বিষয়গুলিতে সরকারের বক্তব্য জানার জন্য রাজ্যপালকে উদ্যোগী হতে আমরা অনুরোধ করেছি।
http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=33334
আক্রমণেই প্রমাণ হলো চিট ফান্ডের
সঙ্গে সরকারের ঘনিষ্ট সম্পর্ক: মিশ্র
নিজস্ব প্রতিনিধি
কলকাতা, ১১ই ডিসেম্বর—ঠিক কোন যন্ত্রণায় মঙ্গলবার বিধানসভার অভ্যন্তরে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলীরা ক্ষিপ্ত হয়ে এমন মারমুখী হয়ে উঠলো? রাজ্যজুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা চিট ফান্ডের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি তোলা মুলতুবি প্রস্তাব এনেছিলেন এদিন বামপন্থীরা। যন্ত্রণা ছিল সেটাই। রাজ্যের শাসক দলের স্বার্থের সঙ্গে যে রাজ্যের চিট ফান্ডের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক জুড়ে রয়েছে তার প্রমাণ মিললো এই ন্যক্কারজনক আক্রমণে। এদিন এই মুলতুবি প্রস্তাব আনতে না দিতেই অধ্যক্ষ অজুহাত খাড়া করলেন এটা নাকি প্রশাসনের দৈনন্দিন কর্মপ্রক্রিয়ার বিষয়। অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গই কীভাবে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি মানুষের স্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তা এদিন বিধানসভার বাইরে ব্যাখ্যা করেছেন বিরোধী দলনেতা।
রাজ্যের মানুষের স্বার্থের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা যে গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ এদিন বিধানসভার অন্দরে আলোচনা করতে দেওয়া হলো না, সেই বিষয়েই এদিন বিধানসভার বাইরে সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। রাজ্যের চিট ফান্ডের বিরোধিতা করে আনা এই মুলতুবি প্রস্তাব সম্পর্কেই এদিন তিনি বলেছেন, চিট ফান্ডের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে সরকারের কায়েমী স্বার্থ। সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং সেবি'ও রাজ্য সরকারকে জানিয়েছে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। রাজ্যে ৬০টির বেশি চিট ফান্ড রয়েছে যারা গত দু'বছরে ১৫-১৬হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে আম-জনতার পকেট থেকে। এই যাবতীয় আমানতের কোন নিরাপত্তা থাকছে না। অথচ সরকারও কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। চিট ফান্ডগুলোর প্রতারণায় লক্ষ লক্ষ গরিব মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন। এই সমস্ত চিট ফান্ডগুলোর টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে সংবাদমাধ্যমেও। এই বিপুল পরিমাণ টাকা খাটানো হচ্ছে নানা পথে। এদিন সাংবাদিকদের কাছে সূর্যকান্ত মিশ্র জানিয়েছেন, এর প্রামাণ্য যাবতীয় কাগজপত্র আমাদের কাছে রয়েছে। কিন্তু এই তৃণমূলী সরকার আসার পর থেকে এসব কাজে তদন্ত বন্ধ হয়ে গেছে। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের স্বার্থের সঙ্গে সরাসরি এই চিট ফান্ডগুলোর স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে।
এদিন এই প্রসঙ্গেই বিরোধী দলনেতা বলেছেন, এর আগে ২০০৯সালে আমরা বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যে একটা আইন পাশ করিয়ে ছিলাম। এটা ২০১০সালের পর থেকে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের অপেক্ষায় পড়ে রয়েছে। এই আইনেই চিট ফান্ডের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া যেত। রাজ্যের চিট ফান্ডগুলোর চরিত্র সম্পর্কে ব্যাখ্যায় মিশ্র বলেছেন, শুধু এরাজ্য কেন, গোটা বিশ্বের ইতিহাসেই দেখা গেছে পরে এদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এই সময়কালে চিট ফান্ডের কীভাবে সক্রিয়তা বেড়েছে তার পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন পালটা স্বল্প সঞ্চয়ের হার মারাত্মক হারে নেমে যাওয়ার চিত্র তুলে ধরে বলেছেন, টানা ১০-১২বছর ধরেই আমরা গোটা দেশে স্বল্প সঞ্চয়ে প্রথম স্থানে ছিলাম। সেই হার নেমে এসেছে তলানিতে। অথচ চিট ফান্ডগুলির বেআইনী কাজের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা রাজ্য সরকারেরই। তাই জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এদিন বিধানসভায় আলোচনা করতে দিলো না শাসকদল এবং অধ্যক্ষ।
এদিকে রাজ্যজুড়ে চিট ফান্ডের ভয়াবহ সঙ্কটের যে বাস্তবতা রয়েছে তা রাজ্যের শাসকদলের মন্ত্রীর মুখ থেকেই বেরিয়ে এসেছে। সোমবারই বণিকসভার এক অনুষ্ঠান শেষে রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে সংবাদমাধ্যমের তরফে তোলা চিট ফান্ড নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, এ এক ভয়ঙ্কর দিন। এসব নিয়ে এখন মুখ খুললেই বা মনের কথা বাইরে বার করলে সমূহ বিপদ। রাজ্য সরকারের অপদার্থতার ইঙ্গিত দিয়েই তিনি বলে বসেছেন জানেনই তো সব, কেন আমাকে দিয়ে বদলাচ্ছেন? রাজ্যের চিট ফান্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুধু তাঁর দপ্তরকে দিয়ে যে হবে না সেই স্পষ্ট কথাও সরাসরি বলে বসেছেন তিনি। এর জন্য রাজ্য সরকারের অর্থ দপ্তরের এবং বিশেষত রাজ্যের পুলিস প্রশাসনের সদিচ্ছা জরুরী। কিন্তু তা যে মেলার নয়, তা তিনি ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন। সোমবারের রাজ্যের এক মন্ত্রীর এমন মন্তব্যের যথার্থতা প্রমাণিত হলো মঙ্গলবার বিধানসভায় চিট ফান্ড প্রসঙ্গ তুলে ধরায়। এতেই রাজ্যের শাসকদলের মুখোশ খুলে গেল।
মুখ্য অংশ:
১। চিট ফান্ডের সঙ্গে যুক্ত
সরকারের কায়েমী স্বার্থ।
২। ৬০টির বেশি চিট ফান্ড
দু'বছরে ১৫-১৬কোটি
তুলেছে মানুষের থেকে।
৩। চিট ফান্ডের দাপটে
তলানিতে রাজ্যের
স্বল্প সঞ্চয়ের হার।
http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=33335
গণতন্ত্রের আরো এক কালো দিন
হাসিম আবদুল হালিম – প্রাক্তন অধ্যক্ষ
নিজস্ব প্রতিনিধি
গণতন্ত্রের পীঠস্থান পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভায় যা হলো তা নজিরবিহীন ঘটনা। খুবই খারাপ হয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে একটি কালো দিন। খুবই ভয়ানক আর ভয়াবহ ঘটনা। যে কদিন আমি দেখছি নতুন সরকার এসেছে ওদের এমন একটা মনোভাব হয়ে গেছে যাতে বিরোধীদের কোন সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে না। আমি যা শুনেছি দেড় বছরের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মোটে একদিন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন! এটা তো ঠিকই যে মুখ্যমন্ত্রী অধিকাংশ দিনই হাউসে যান না। এটা স্বাভাবিক মুখ্যমন্ত্রীর যদি প্রশ্নের উত্তর না দেন সেখানে জনগণের অধিকার আছে উত্তর জানার।
আমার অধ্যক্ষ থাকাকালীন বিধানসভায় অনেক ঘটনা ঘটেছে। সংসদীয় গণতন্ত্রকে কীভাবে মর্যাদা দিতে হয় তা জ্যোতি বসু দেখিয়ে গেছেন। জ্যোতি বসু যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখন একবার এমন হলো যে ওঁকে বৃহস্পতিবার (প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার দিন) দিল্লি যেতে হয়েছিল। তিনি আমার চেম্বারে এসে বললেন যে একদিন শুধু রাখবেন প্রশ্নের উত্তরের জন্য। আমি সভায় একদিন শুধু রেখেছিলাম ওঁর প্রশ্নের উত্তরের জন্য। সেদিন এক ঘন্টার মধ্যে উনি বিধায়কদের যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দিলেন—যে কটি প্রশ্ন করা গেল সব। এটা কে করতে পারে? যিনি গণতন্ত্রকে স্বীকৃতি দেন, তিনি বিরোধীদেরও স্বীকৃতি দেন। আমার সময় অনেক প্রশ্ন হতো, বিতর্ক হতো, দৃষ্টি আকর্ষণী প্রশ্নের উত্তর হতো। এমনকি দৃষ্টি আকর্ষণী প্রশ্নের উত্তরের উপর আধ ঘন্টা ধরে সভায় বিতর্ক হয়েছে একাধিকবার। কিন্তু যা হয়েছে সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতিনীতি মেনে।
আমার সময়েও গোলমাল হয়েছে, ভাঙচুর হয়েছে (দু'বার), সাসপেনশন হয়েছে, বিধানসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু এখানেও বক্তব্য আছে। যেমন বিধানসভার বিধি অনুযায়ী কোন বিধায়ক সভায় গোলমাল করলে কিংবা সভা সুষ্ঠুভাবে চালাতে বাধা দিলে ঐদিনের জন্য অধ্যক্ষ কোন বিধায়ককে সাসপেন্ড করতে পারেন। কিন্তু একাধিক দিনের জন্য কোন বিধায়ককে সাসপেন্ড করতে হলে সভায় প্রস্তাব আনতে হয়। প্রস্তাব নিয়ে সভায় আলোচনা করার সুযোগ দিতে হয়। সভায় যদি কোন প্রস্তাব গৃহীত না হয় তাহলে বুঝতে হবে পদ্ধতিগত ত্রুটি আছে। ত্রুটিগত কারণে সেই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা যায়নি। আমি শুনলাম বর্তমান অধ্যক্ষ বিধানসভার বাকি অধিবেশনের জন্য তিন বিধায়ককে বরখাস্ত করেছেন। আমার প্রশ্ন সভায় কি এই সংক্রান্ত কোন প্রস্তাব আনা হয়েছিল? আমার মতে এই সাসপেনশন প্রত্যাহার করা উচিত। প্রত্যেককে সভায় ফেরার অধিকার দেওয়া হোক। আমি শুনেছি সদস্যরা আহত হয়ে হাসপাতালে গেছেন। এ তো নজিরবিহীন ঘটনা। আমার সময়ে এমন ঘটনা কোন দিন হয়নি। সদস্যরা বিশেষ করে বিরোধী সদস্যরা আহত হয়ে হাসপাতালে যাবেন এমনটা কল্পনাও করা যায় না। আদিবাসী মহিলা বিধায়ক বিধানসভার অভ্যন্তরে আক্রান্ত হয়েছেন—এই ঘটনা অকল্পনীয়। আদিবাসী বিধায়ক এই রকম ব্যবহার পাবেন কেন? অধ্যক্ষের উচিত মুখ্যমন্ত্রীকে রেখে সর্বদলীয় সভা ডাকার। সভায় আলোচনা করে সব বিষয়ে রফা করা। বিরোধীদের উপযুক্ত দাবি তো অধ্যক্ষকেই আদায় করে দিতে হবে।
বুধবার বিধানসভায় যা হলো তা এক কথায় নজিরবিহীন ঘটনা। সংসদীয় ইতিহাসে কালিমালিপ্ত দিন। এরকম চলতে পারে না। বিধানসভা এভাবে চলতে পারে না। আমি আশা করবো সবার মধ্যে শুভবুদ্ধি কাজ করবে। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার যা মান সম্মান, গরিমা যা সর্বভারতীয় স্তরে সম্মান অর্জন করেছে তা যেন রক্ষা হয়। সভায় গোলমাল হলে সভা মুলতুবি হয়ে যাওয়া উচিত যাতে গোলমালটা থামিয়ে দেওয়া যায়। যদি সভা চলাকালীন কোন বিধায়ক আহত হন সেটা স্বাধিকার ভঙ্গের শামিল। যাঁরা আক্রমণ করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস আনা উচিত।
কোন্নগর: ছাত্র সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বুধবার অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে কোন্নগর নবগ্রামের হীরালাল পাল কলেজ৷ মারপিট, সংঘর্ষ,রক্তারক্তি, রেল অবরোধে উত্তেজনা ছড়ায় আশপাশের এলাকাতেও৷
বুধবার সকালে মনোনয়ন দাখিল করতে কলেজে যান ২৭ এসএফআই প্রার্থী৷ তখন তাঁদের ওপর তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সমর্থকরা চড়াও হয় বলে অভিযোগ৷ এসএফআইয়ের অভিযোগ, তাঁদের তিন সমর্থককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ পুলিশের সামনেই এই ঘটনা ঘটলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ৷
ঘটনার প্রতিবাদে কোন্নগর স্টেশনে রেল অবরোধ করেন এসএফআই সমর্থকরা৷ সামিল হন কলেজের বেশ কয়েকজন অধ্যাপকও৷ বেশকিছুক্ষণ বন্ধ থাকে ট্রেন চলাচল৷ অভিযোগ, সেখানেও অবরোধকারীদের উপর চড়াও হন তৃণমূল সমর্থকরা৷ জখম হন বেশ কয়েকজন এসএফআই সমর্থক৷
এসএফআইয়ের অভিযোগ, গতবছরও কোনও প্রার্থীকে মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি৷ ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কলেজে জয় পায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ৷ এবারও এক পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে তারা৷ অবশ্য, এসএফআই-র যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ৷
কলেজে-কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে গণ্ডগোল এড়াতে অভিন্ন নির্বাচনী বিধির খসড়া তৈরি করে উচ্চ শিক্ষা সংসদ৷ কিন্তু, আজও সেই বিধি বাস্তবায়িত হয়নি৷ ফলে কলেজ-কলেজে ভোটকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোল এড়াতে রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে৷
http://abpananda.newsbullet.in/state/34-more/31332-2012-12-12-14-57-14
কলকাতা: রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিদিনই উদ্বেগ জানিয়ে হয় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন বা কখনো দোষ চাপিয়েছেন পূর্বতন বাম সরকারের বিরুদ্ধে৷ এবার কার্যত ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি অবস্থা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ বুধবার নজরুল মঞ্চে রাজ্য পুলিশের পদক প্রদান অনুষ্ঠানের ভাষণে আর্থিক সঙ্কট থেকে মুক্তির পথ না পেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর চরম হতাশা ফুটে ওঠে৷।সেখানে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, আমরা ৩৫ শতাংশ ফিনান্সিয়াল ট্যাক্স সংগ্রহ বাড়িয়েছি। কিন্তু ওই যে! নুন আনতে পান্তা ফুরোয় কিন্তু এমনই ভাগ্যের পরিহাস আগে জানলে আমি এই জায়গায়? ওরে বাবারে! সাংঘাতিক জায়গা।
একদিকে পাহাড়প্রমাণ ঋণের বোঝা, অন্যদিকে বেতন, পেনশন তো রয়েইছে৷ উন্নয়নের টাকা আসবে কোথা থেকে? বারবার এই প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রী হয়েই বারবার ছুটে গিয়েছেন দিল্লিতে৷ কিন্তু সুদ মকুবের আর্জি কোনওদিনই মেনে নেয়নি কংগ্রেস৷ এখন কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরও তিক্ত হওয়ায় কার্যত রাজ্যের হাল আরও খারাপ৷ এই অবস্থায় উদ্বেগ বাড়িয়ে বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়াটাই কার্যত ভুল বলে স্বীকার করে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷
অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর বিশ্বাস, এই অবস্থাতেই এগোবে পশ্চিমবঙ্গ৷
তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই আশাকে ছাপিয়ে গিয়েছে চূড়ান্ত হতাশার সুর৷ মুখ্যমন্ত্রীর এহেন হতাশার তীব্র সমালোচনা করে সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম বলেছেন,
রাজনৈতিক মহলের মতে, বিভিন্ন কাজ নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতার ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শুরু হয়েছে৷ সাম্প্রতিক কালে লোবা ও তেহট্টের পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনা মহাকরণের অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছিল৷ সেই অস্বস্তি বাড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী এদিন ওই দুই ঘটনায় ভুল হয়েছিল বলে স্বীকারও করে নেন৷ আবার এর মধ্যেই প্রতিদিন একজন না একজন দলের বিধায়ক বা সাংসদের ক্ষোভ প্রকাশ্যে সামনে চলে আসছে৷ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ঘরে-বাইরে অস্বস্তির মধ্যে সরকারি কাজ চালাতে গিয়ে কার্যত দিশেহারা অবস্থা প্রশাসনিক প্রধানের।
রাজর্ষি দত্তগুপ্ত, এবিপি আনন্দ
http://abpananda.newsbullet.in/state/34-more/31333-2012-12-12-15-17-17
সংখ্যার গরম দেখাবেন না৷ না হলে হতে পারে বুদ্ধর পরিণতি৷ বিধানসভাকাণ্ডে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য প্রসঙ্গে হুঁশিয়ারি রেজ্জাক মোল্লার৷ বললেন, সংখ্যা বেশি হলেও তৃণমূলকে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই৷ মঙ্গলবারে বিধানসভায় সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে আজ,বুধবার বিধানসভায় বামদলগুলি এবং কংগ্রেস অভিনব ঢঙে প্রতিবাদ জানায়৷ নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগে মাথায় হেলমেট পরে বিধানসভায় আসেন কংগ্রেস বিধায়করা৷ বিধানসভায় গণতান্ত্রিক অধিকার নেই, এই অভিযোগ তুলে বাইরে নকল অধিবেশন করেন বাম বিধায়করা৷
বুধবার বিধানসভায় বিধায়কদের মারপিট নিয়ে শাসকপক্ষের হয়ে সাফাই দিয়ে পরিষদীয় মন্ত্রী বলেছিলেন, গন্ডগোলের সময় সংযতই ছিলেন তৃণমূল বিধায়করা। তাঁরা সংযত না থাকলে বিধানসভায় অন্য কিছু ঘটে যেতে পারত। কারণ, তৃণমূলের সদস্য সংখ্যা অনেক বেশি। পার্থর এই মন্তব্যই ফের একবার উস্কে দিয়েছিল আমরা-ওরার বিতর্ক৷ মনে করিয়ে দিচ্ছিল, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর সেই ঘোষণা৷ আমরা ২৩৫, ওরা ৩০৷ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, ক্ষমতার দম্ভে যে বিভাজনের রেখা তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী টেনেছিলেন, তা-ই পরবর্তীকাল বাম দুর্গের পতনের জন্য অনেকাংশে দায়ী৷ আর এবার সেই সুরেই বুদ্ধদেবের প্রসঙ্গ টেনে পার্থকে সতর্ক করে দিলেন সিপিএম বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লা৷ তৃণমূল সরকারের ভবিষ্যত নিয়েও তীব্র কটাক্ষ করেছেন ক্যানিং পূর্বের সিপিএম বিধায়ক৷ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূলকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই৷
তবে বিধানসভায় দলের পরবর্তী রণকৌশল অবশ্য ঝুলি থেকে এখনই বার করতে নারাজ তিনি৷
বিধানসভাকাণ্ডের সমালোচনা করে অভিনব উপায়ে এদিন প্রতিবাদ জানাল বাম ও কংগ্রেস৷ বৃহস্পতিবার তিন বাম বিধায়কের সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবিতে বিধানসভা বয়কট করেন বামেরা৷ বাম বিধায়কদের অভিযোগ, বিধানসভার ভিতরে তাঁদের কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না৷ সেকারণেই এদিন বিধানসভার বাইরে নকল অধিবেশন বসান তাঁরা৷ বিরোধীদের বলতে দেওয়া হয়না, অভিনয় করে বোঝান বাম বিধায়করাই৷ মধ্যমণি ছিলেন রেজ্জাক মোল্লা৷
অন্যদিকে নজিরবিহীন হাতাহাতির ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার মাথায় হেলমেট পরে বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেস বিধায়করা৷
এদিন বিকেলে ফের বিধানসভার দক্ষিণ গেটের কাছে বিক্ষোভ দেখায় কংগ্রেস৷ পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরাতে গেলে তাঁরা অবস্থান বিক্ষোভে বসে যান৷ এরপর পুলিশ বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার করে৷
http://abpananda.newsbullet.in/state/34-more/31323-2012-12-12-12-50-18
কোচবিহার: ঋণের দায়ে আত্মহত্যা করলেন উত্তরবঙ্গ পরিবহণ নিগমের এক কর্মী৷ বুধবার কোচবিহারের কলাবাগান এলাকায় নিজের বাড়িতেই এনবিএসটিসি কর্মী লোকনাথ দে-র ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়৷ উদ্ধার হয়েছে একটি সুইসাইড নোট-ও৷
সুইসাইড নোটে বিপুল ঋণের বোঝার কারণেই আত্মহত্যা করেছেন পরিবহণ নিগমের ওই কর্মী লিখেছেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর৷ পাশাপাশি, তাঁর পরিবার ও বন্ধুদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ বেতন পেতেন ওই কর্মী৷ ফলে নিত্য বাড়ছিল ঋণের বোঝা৷ অপর দিকে, কিছু দিন আগেই কোচবিহার থেকে সিউড়িতে বদলি করা হয় লোকনাথবাবুকে৷ ফলে খরচও বেড়েছিল প্রায় দ্বিগুণ৷
এলাকার কাউন্সিলরের অভিযোগ, যে ভাবে উত্তরবঙ্গ পরিবহণ নিগম চলছে, তাতে আরও অনেক কর্মীকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হবে৷ পাড়ায় জনপ্রিয় লোকনাথবাবুর মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া৷
http://abpananda.newsbullet.in/state/34-more/31329-2012-12-12-14-35-04
কলকাতা: জমির অভাব থেকে পুনর্বাসনে জটিলতা মিলিয়ে বস্তি উন্নয়নের কাজে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের প্রায় ১০৫ কোটি টাকা কলকাতা পুরসভা খরচ করতে না পারায় তা ফেরত চলে যাচ্ছে৷কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই দিল্লির বিরুদ্ধে সরব তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্য সরকার৷ একের পর বঞ্চনার অভিযোগে যেমন সরব হয়েছে রাজ্য, তেমনই বিভিন্ন আর্থিক ইস্যুতেও সুর চড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ পাল্টা জবাব দিতে মাঠে নেমেছেন কংগ্রেসের নেতারাও৷ কেন্দ্রের পাঠানো বিভিন্ন টাকা খরচই করতে পারছে না রাজ্য, এই বক্তব্যে প্রতিদিনই পাল্টা সুর চড়াচ্ছেন অধীর চৌধুরী, দীপা দাশমুন্সি, প্রদীপ ভট্টাচার্যরা৷ তখনই বস্তি উন্নয়নের টাকা দিল্লির কোষাগারে ফিরে যাচ্ছে বলে জানা গেল৷
সোমবার পুরসভায় সমস্যা এড়াতে জরুরি বৈঠকে বসেন মেয়র পারিষদ বস্তি৷ ছিলেন বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা৷ কিন্তু বিভিন্ন কাউন্সিলর জানান, বস্তি উচ্ছেদ করে বস্তিবাসীদের পুনর্বাসন দিতে গিয়ে প্রতি পদে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে৷ জমির জন্য অনেকেই ক্ষতিপূরণ চাইছেন৷ এমনকি, বস্তিবাসীদের সাময়িক পুনর্বাসন দিতে গিয়েও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে৷ ফলে বৈঠকে কোনও সমাধানসূত্র না মেলায় পুরো পরিস্থিতি জানিয়ে রাজ্য সরকারকে চিঠি লেখার তোড়জোড় শুরু করল কলকাতা পুরসভা৷
কলকাতায় বস্তি উন্নয়ন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে৷ এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা ফেরত যাওয়ায় পুরসভার সদিচ্ছা নিয়েই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে৷
http://abpananda.newsbullet.in/kolkata/59-more/31230-2012-12-10-13-07-16
আমি গুলি চালিয়ে জায়গা দখল করি না: মুখ্যমন্ত্রী
আনন্দবাজার – শুক্র, ২৩ নভেম্বর, ২০১২"আমি গুলি চালিয়ে জায়গা দখল করতে পারব না। এটা আমার পলিসি নয়। আপনারা জায়গা ঠিক করুন। টাকার দরকার হলে বলবেন।" শুক্রবার যোগমায়াদেবী কলেজে এসে এমনটাই বললেন ওই কলেজেরই প্রাক্তন ছাত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে এই কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে উন্নিত করারও ইঙ্গিত দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কলেজের ৮০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যোগমায়াদেবী কলেজ অনেক নাম করেছে। এর একটা আলাদা গুরুত্ব আছে। আরও একটি ক্যাম্পাস করার দরকার। কলেজটা বড় করার প্রয়োজন। কিন্তু এখনই কলেজটি ভেঙে বড় করতে গেলে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই এই কলেজের উন্নয়নের কাজ শুরুর আগে বিকল্প জায়গার প্রয়োজন। কলেজের উন্নয়নের জন্য ১০ লক্ষ টাকা অনুদান তুলে দেন প্রাক্তন ছাত্রী মমতা।
কলেজ কর্তৃপক্ষকে তিনি জানান, জায়গা খুঁজতে হবে আপনাদেরই। প্রসঙ্গত কিছুদিন আগেই বীরভূমে জমি দখলকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের ওপর পুলিশের গুলি চালানোর অভিযোগে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। অস্বস্তিতে পড়েছিল রাজ্য সরকারও। তারই রেশ টেনে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি গুলি চালিয়ে জায়গা দখল করতে পারব না। ওটা আমার রাজনৈতিক দর্শনের মধ্যে পড়ে না।
ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে এদিন তিনি বলেন, নেতিবাচক চিন্তাভাবনা করলে চলবে না। অধৈর্য্য হলেও হবে না। যোগমায়া কলেজও একদিন বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে যেতে পারে। এই কলেজকে উচ্চ থেকে উচ্চতর করতে এদিন প্রাক্তন কলেজ ছাত্রীদেরও এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন তাঁর নিজের কলেজে এসে স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, এখানে এক সময় প্রচুর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছি। ছাত্র রাজনীতিও করতাম। এখন মনে হয় জীবনের তুলনায় সময় অনেকটা কম। এক একটা দিন ২৪ ঘণ্টার বদলে ৪৮ ঘণ্টা হলে হয়ত ভাল হতো। আমি নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছি। ইচ্ছে থাকলেও বেশি পড়াশোনা করতে পারিনি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্রছাত্রীদের তিনি বলেন, তোমাদের সুযোগ রয়েছে। এগিয়ে যাও। আমি তো আছি।
জনমোহিনী মুখ্যমন্ত্রী
রাজ্য সরকারের ভাঁড়ার শূন্য বলে বারবার দাবি করলেও জনমোহিনী ঘোষণা করেই যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি কোষাগারের প্রায় ১২ কোটি টাকা ক্ষতি হবে জেনেও সোমবারই পুরুলিয়ার সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের আরও দু'বার পরীক্ষায় বসার ফি দিতে হবে না। আর সেই জনমোহিনী অবতারেই মঙ্গলবার বাঁকুড়ার ওন্দার সভায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, সব কটি জেলা ও কলকাতায় সরকারি হাসপাতালে ৩৬টি ওষুধের দোকান খুলবে রাজ্য। যেখান থেকে গরিব মানুষকে ৫০ শতাংশ ভর্তুকি সহকারে ওষুধ দেওয়া
ভিডিও: এবিপি আনন্দ , কলকাতা,৪ ডিসেম্বর ২০১২
টাকার বিনিময়ে বিক্রি আদালতের রায়, বললেন মুখ্যমন্ত্রী
আনন্দবাজার – মঙ্গল, ১৪ আগস্ট, ২০১২বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আঙুল তুললেন বিচার ব্যবস্থার দিকে। মঙ্গলবার তিনি বলেন, টাকার বিনিময়ে রায় বিক্রি হচ্ছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। কেন টাকার বিনিময়ে বিচার হবে? বিচার ব্যবস্থার একটা অংশ দুর্নীতিগ্রস্ত। আমি জানি, এর জন্য আমার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা হতে পারে। কিন্তু এটা বলতেই হবে। এটা বলার জন্য আমি জেলে যেতে তৈরি।
মমতার এও অভিযোগ, অন্য রাজ্যে টাকা দিয়ে রাজনীতিকদেরও কেনা হয়। ভোটে বিপুল টাকার লেনদেন চলে। বাংলায় এটা কম। তামিলনাড়ুতে প্রচুর টাকার লেনদেন চলে। একজনকে চিহ্নিত করে কিছু হবে না৷ সকলের সমান বিশ্বাসযোগ্যতা থাকা উচিত।
বিধানসভায় দাঁড়িয়ে শুধু বিচারব্যবস্থার মুণ্ডপাত করেই ক্ষান্ত হননি মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর ক্ষোভের আগুন থেকে রেহাই পায়নি বিভিন্ন কমিশনও। আর মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে ঘিরেই জন্ম নিয়েছে নয়া বিতর্ক। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন, বিরোধী আসনে থাকাকালীন যখন নন্দীগ্রাম, নেতাইকাণ্ডের রায় বাম সরকারের বিরুদ্ধে গিয়েছিল, তখন তো বিচারব্যবস্থার গুণগানই শোনা গিয়েছিল তখনকার বিরোধী নেত্রীর গলায়। তাহলে এখন গত ১৫ মাসে সিঙ্গুর থেকে শুরু করে চোলাই মদকাণ্ড, লক্ষ্মণ শেঠ-সুশান্ত ঘোষ মামলায় রায় প্রাথমিকভাবে সরকারের বিরুদ্ধে যাওয়াতেই কি মুখ্যমন্ত্রীর বিচারব্যবস্থার প্রতি এই অনাস্থা? রায় স্বপক্ষে গেলে বিচারব্যবস্থা গণতন্ত্রের ভিত্তি আর বিপক্ষে গেলেই রায় টাকা দিয়ে কেনা হচ্ছে? গতকাল সোমবারই ব্যঙ্গচিত্রকাণ্ডে মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশে কার্যত মুখ পুড়েছে রাজ্য সরকার। তাই কি কমিশনের প্রতি এত ক্ষোভ মুখ্যমন্ত্রীর?
কিন্তু কমিশনের কাজকর্মে যদি আমলাদের এত সময় নষ্ট হয়, কাজে এভাবে বিঘ্নিত হয়, তাহলে ক্ষমতায় আসার পরই সাঁইবাড়ি থেকে শুরু করে ২১ জুলাইয়ের গুলি চালনা, মরিচঝাঁপি সহ নানা বিষয়ে কেন বিচারবিভাগীয় কমিশন গড়লেন মমতা? সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।
আর তাত্পর্যপূর্ণ বিষয় হল, মুখ্যমন্ত্রী যখন বিচারব্যবস্থা এবং কমিশনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন, তখন তাঁরই দলের সমর্থকরা চেতলা গণধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্তের মুক্তির দাবিতে আদালতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। প্রশ্ন তুলছেন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। তাহলে কি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বিপক্ষে গেলেই তার প্রতিও অনাস্থা প্রকাশ করবে শাসক দল? ওয়াকিবহালের ব্যাখ্যা, এই প্রশ্নগুলির স্পষ্ট উত্তর অধরা হলেও, রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান এবং তাঁর দলের কর্মী-সমর্থকদের আচরণ কিন্তু পরোক্ষে বুঝিয়ে দিচ্ছে, সিদ্ধান্ত স্বপক্ষে গেলে স্বাগত, আর বিপক্ষে গেলেই খারাপ-পক্ষপাতদুষ্ট। বাম আমলের ছবির পুনরাবৃত্তি পরিবর্তনের আমলেও।
http://bengali.yahoo.com/%E0%A6%9F-%E0%A6%95-%E0%A6%AC-%E0%A6%A8-%E0%A6%AE-122741765.html
No comments:
Post a Comment