কলকাতা: আদালতে ফের মুখ পুড়ল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের৷ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ জারি করল কলকাতা হাইকোর্ট৷অর্থাত শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাই হবে না। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ টিচার এডুকেশন (এনসিটিই)-এর নিয়ম এবং সুপ্রিম কোর্টের রায় মানা হয়নি বলে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার এই পদক্ষেপ নিয়েছে আদালত৷ এর ফলে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে চাকরি মিলবে বলে আশা করে যে অসংখ্য ছেলেমেয়ে আবেদন করেছেন, তাঁরা নিরাশ হলেন৷ 
গত ১৯ অক্টোবর সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, প্রায় ৩৪ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য পরীক্ষা নেওয়া হবে৷ প্রশিক্ষণ ছাড়াও পরীক্ষায় বসতে পারবেন প্রার্থীরা৷ কিন্তু এনসিটিই)-র নিয়ম অনুযায়ী প্রাথমিক স্কুলে প্রশিক্ষণহীন শিক্ষক নিয়োগ করা যায় না৷ তাছাড়া সুপ্রিম কোর্টের রায়েও বলা হয়েছে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের সরাসরি নিয়োগ করতে হবে৷ এই অবস্থায় এনসিটিই-কে রাজ্য জানায়, এরাজ্যে যত শূন্যপদ রয়েছে, তত প্রশিক্ষিত প্রার্থী নেই৷ ফলে যাঁদের প্রশিক্ষণ নেই, তাঁদেরও পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হোক৷ রাজ্যের এই আবেদনের প্রেক্ষিতে এনসিটিই জানায়, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থী না-পেলে প্রশিক্ষণহীনদের নিয়োগ করা যেতে পারে৷ কিন্তু নিয়োগের দু'বছরের মধ্যে প্রশিক্ষণ নিতে হবে৷ এরপরই বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য সরকার৷ ৫৫ লক্ষেরও বেশি আবেদন জমা পড়ে৷ কিন্তু হাওড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের দুজন চাকরীপ্রার্থী কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করে বলেন, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের একই মাপকাঠিতে ফেলছে, সমমর্যাদায় দেখছে রাজ্য সরকার৷ এনসিটিই-র আইন অনুযায়ী প্রাথমিক স্কুলে প্রশিক্ষণহীন শিক্ষক নিয়োগ করা যায় না৷ তাছাড়া সুপ্রিম কোর্টের রায়ও মানছে না রাজ্য৷ এরপর বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্তের এজলাসে মামলা শুরু হয়৷ বৃহস্পতিবার আবেদনকারীদের আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেছেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় আপাতত পুরো পদ্ধতিটাই স্থগিত রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি৷ এ ব্যাপারে সরকারি আইনজীবী কমলেশ ভট্টাচার্য অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন, কেন্দ্রের অনুমতি নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল রাজ্য সরকার৷ প্রশিক্ষণ নেওয়া প্রার্থীদের কথা পর্ষদ যথেষ্ট মূল্য দিয়ে বিবেচনা করেছে৷ তাঁরা অতিরিক্ত ২০ নম্বর পাবেন৷ তার জোরে অন্য প্রার্থীদের থেকে তাঁরা নম্বরে এগিয়ে থাকতে পারবেন৷
রাজনৈতিক মহলের মতে, একের পর এক মামলায় মুখ পুড়েছে রাজ্যের৷ সরকারের তাড়াহুড়োর ফলে প্রায় ৫৫ হাজারেরও বেশি কর্মপ্রার্থীর ভবিষ্যত্‍ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ল৷ 

http://abpananda.newsbullet.in/state/34/31375


শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ দুই ২৪ পরগনা, মালদহেও

হাওড়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা বৃহস্পতিবারেই স্থগিত করে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। শুক্রবার উচ্চ আদালতের নির্দেশে বন্ধ হয়ে গেল উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং মালদহ জেলায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষাও। সরকার যে-চারটি জেলার প্যানেল খারিজ করে নতুন পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছিল, হাইকোর্টের দু'দিনের নির্দেশে তার সব ক'টিতেই পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গেল। মালদহের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ জানিয়েছে, তারা আদালতের নির্দেশের প্রতিলিপি পায়নি এবং শেষ পর্যন্ত যদি তা পাওয়া না-যায়, সে-ক্ষেত্রে ২৬ অগস্ট রবিবার তারা সূচি অনুসারেই পরীক্ষা নেবে।

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য রাজ্য সরকার ২০০৯ সালে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। সেই বিজ্ঞাপনের ভিত্তিতে আবেদনকারীদের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ডাকা হয় 'ইন্টারভিউ' বা সাক্ষাৎকারে। তার পরে যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করা হয়। তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষকপদে নিয়োগের আগেই রাজ্যে ক্ষমতায় আসে নতুন দল। প্রার্থী-তালিকা তৈরিতে অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে গত ২১ জুন চারটি জেলার প্যানেল খারিজ করে দেয় নতুন সরকার। তার পরেই ঘোষণা করা হয়, ২৬ অগস্ট নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া হবে আবেদনকারীদের। প্যানেল খারিজের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রার্থী মামলা করেন হাইকোর্টে।

বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় ও বিচারপতি তরুণ দাসের ডিভিশন বেঞ্চ বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বক্তব্য শুনে নির্দেশ দিয়েছিলেন, হাওড়া জেলায় আপাতত ওই পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। মামলা চলবে। শুক্রবার বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্তের এজলাসে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং মালদহ জেলার আবেদনকারীদের মামলার শুনানি হয়। কিছু আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য প্রশ্ন তোলেন, এক বার যে-সব প্রার্থীর পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, আবার তাঁদেরই পরীক্ষা নেওয়ার যুক্তি কী? অন্য কিছু আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, প্রাথমিক শিক্ষকদের নিয়োগের পরীক্ষা, সাক্ষাৎকার, তালিকা তৈরি এবং নিয়োগ সবই করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। প্রাথমিক স্কুলশিক্ষা বিধিতে একমাত্র সংসদেরই এই এক্তিয়ার আছে। রাজ্য সরকার কোনও ভাবেই প্রার্থীদের প্যানেল খারিজ কিংবা নতুন ভাবে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। বিভিন্ন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের পক্ষে বারবার তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়। সব পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারপতি জানিয়ে দেন, ২৬ অগস্ট পরীক্ষা নেওয়া চলবে না। প্যানেল যে-ভাবে খারিজ করা হয়েছে, তার বৈধতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিচ্ছে। তাই চূড়ান্ত রায়ের পরেই পরবর্তী ব্যবস্থার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

উত্তর ২৪ পরগনার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারপার্সন মীনা ঘোষ বলেন, "আমরা অ্যাডমিট কার্ড বিলি করছিলাম। তবে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিলে পরীক্ষা নেওয়া যাবে না।" ২৬ অগস্টের পরীক্ষার জন্য ওই জেলায় ৪০ হাজার প্রার্থীর অ্যাডমিট কার্ড বিলি করা হয়েছিল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারপার্সন সুরঞ্জনা চক্রবর্তী বলেন, "স্থগিতাদেশের কথা শুনেছি। আদালত যেমন নির্দেশ দেবে, সেই অনুসারে কর্মপন্থা ঠিক করা হবে।" কিছুটা অন্য সুর মালদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান রামপ্রবেশ মণ্ডলের গলায়। তিনি বলেন, "হাইকোর্টের নির্দেশের প্রতিলিপি পাইনি। আদালত কী বলেছে, তা-ও ঠিক জানি না। নির্দেশের প্রতিলিপি হাতে না-পেলে ২৬ তারিখেই ওই পরীক্ষা নেব।"

আনন্দবাজার পত্রিকা

http://bengali.yahoo.com/%E0%A6%B6-%E0%A6%95-%E0%A6%B7%E0%A6%95-%E0%A6%A8-%E0%A6%AF-044507884.html