প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের জন্য ২০ নম্বর ইতিমধ্যেই বরাদ্দ করা হয়েছে। রাজ্য সরকার মনে করছে, প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় যে স্থগিতাদেশ জারি হয়েছে, তা তুলে নিতে পারে কলকাতা হাইকোর্ট। প্রাথমিকে ৩৪ হাজার পদে নিয়োগের জন্য গত ১৯ অক্টোবর বিজ্ঞাপন দেয় রাজ্য সরকার। ওই বিজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে একাধিক মামলা দায়ের হয় হাইকোর্টে। মামলাকারীদের বক্তব্য ছিল, এনসিটিই-র নিয়ম মেনে প্রশিক্ষিতদের যে সুযোগ পাওয়ার কথা, বিজ্ঞাপনে তা উল্লেখ করা হয়নি। ওই আবেদনের ভিত্তিতে গতকাল নিয়োগের পরীক্ষায় স্থগিতাদেশ জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। নির্দেশে বলা হয়েছে, যে পদ্ধতিতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে তা অসাংবিধানিক। সে কারণে এই বিজ্ঞাপনের ভিত্তিতে কোনও পরীক্ষা নেওয়া যাবে না।
বড়দিনের ছুটির পর আদালত ফের চালু হলে মামলাটির শুনানি হবে। সেই সময়ে হলফনামা দিয়ে রাজ্য সরকারকে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের জবাব দিতে হবে আদালতে। ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার্স এডুকেশন (এনসিটিই) আইন অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষক নির্বাচনের ক্ষেত্রে দু'বছরের বিশেষ ট্রেনিং প্রাপ্ত এবং যাঁরা ট্রেনিং নেননি তাঁদের পরীক্ষা আলাদা করে নিতে হবে। অন্যান্য প্রশ্নের সঙ্গে আদালত জানতে চেয়েছে, কেন একসঙ্গে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে, সে কথাও।
এদিন সকাল সাড়ে দশটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত টানা সওয়াল-জবাব চলার পর বিচারপতি অন্তর্বর্তী নির্দেশটি জারি করেন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৪ হাজার শূন্যপদে (রাজ্যের দাবি শূন্যপদ ৩৪ হাজার, অন্য দিকে মামলাকারীদের দাবি ৫৪ হাজার শূন্যপদ) শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আবেদনপত্র চেয়েছিল। সরকারি সূত্রেই এখনও পর্যন্ত আবেদনকারীর সংখ্যা ৫৫ লক্ষ ছাড়িয়েছে।
রাজ্য সরকারের জারি করা বিজ্ঞাপনটিকে চ্যালেঞ্জ করে মামলাটি দায়ের করেন আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর জোরালো সওয়ালের পর এনসিটিই-র আইনজীবী আশা ঘুটঘুটির জোরালো সওয়ালে মামলার মোড় ঘোরে। বৃহস্পতিবার আর এক আবেদনকারীর হয়ে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও অনিন্দ্যসুন্দর দাস নিয়োগ সংক্রান্ত রাজ্যের জারি করা গেজেট নোটিফিকেশনের ২ নম্বর নোটটি সংবিধানের পরিপন্থী বলে সওয়াল করেন৷ তাঁদের দাবি, ২০০৯ সালে রাজ্যের ক্ষেত্রে এনসিটিই নিয়ম কিছুটা শিথিল করেছিল। বলা হয়েছিল, অপ্রশিক্ষণপপ্ত্রাদের মধ্যে থেকে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ করা চলবে৷ কিন্তু সেই প্রার্থীকে দু'বছরের মধ্যে অবশ্যই প্রশিক্ষণ দিয়ে নিতে হবে৷ এই ব্যতিক্রমের মেয়াদ ছিল ৫ বছর, যা শেষ হচ্ছে ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ৷
কিন্তু এই সময়সীমার মধ্যে নিয়োগ করে সেই শিক্ষককে দু'বছরের প্রশিক্ষণে পাঠালে তাঁর প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে আসতে আসতে ২০১৬৷ তাই এক্ষেত্রে এনসিটিই আইনটি মানা সম্ভব নয়। এই সওয়াল করেই বিকাশবাবুরা নিয়োগে স্থগিতাদেশ দাবি করেন৷ এর পরই রাজ্য সরকারের হয়ে জবাবি সওয়ালে সরকারি কৌঁসুলি অশোককুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও আইনি যুক্তি খাড়া করতে পারেননি৷ তাঁর দাবি, 'প্রাথমিক শিক্ষক অ-আ-ক-খ পড়াবেন৷ তার জন্য কীসের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন?' সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশ দেখিয়ে তাঁর দাবি, শুধুমাত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদেরই নিয়োগ করতে হবে, এমন কোনও নির্দেশ নেই৷ তা ছাড়া একজন উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন, তাঁকে চাকরি না-দিয়ে কোনওক্রমে পাশ করে যিনি টাকা খরচ করে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাঁকে কোন যুক্তিতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা যায়? তাঁর আরও যুক্তি, প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের ট্রেনিংয়ের সার্টিফিকেটের জন্য আলাদা ২০ নম্বর দেওয়া হচ্ছে৷ বিচারপতি করগুপ্ত অবশ্য সরকারি কৌঁসুলির কোনও বক্তব্যেই গুরুত্ব দেননি৷
সওয়াল-জবাব এখনও শেষ হয়নি৷ তবে মামলাকারীদের বক্তব্য এবং এনসিটিই-র অবস্থান মিলে যাওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়েও রাজ্য সরকার আদালতে বিড়ম্বনায় পড়তে পারে বলে আইনজীবীদের একাংশের অনুমান৷ আর তেমন হলে গোটা নিয়োগ-প্রক্রিয়াটাই বিশ-বাঁও জলে তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা৷ রাজ্যে প্রায় ৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ হতে চলেছে৷ নিয়োগ-পরীক্ষার জন্য ইতিমধ্যে ৫৫ লাখ আবেদন জমা পড়েছে৷ কিন্ত্ত এই নিয়োগ-পদ্ধতিকে বেআইনি দাবি করে ৩০ জন পিটিটিআই ও ব্রিজ-কোর্স প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হাইকোর্টে মামলা করেন৷ তাঁরা আবেদনে জানান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করছে রাজ্য সরকার৷ সর্বোচ্চ আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, মোট শূন্যপদের মধ্যে প্রথমে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের সরাসরি নিয়োগ করতে হবে৷ তাঁদের নিয়োগের পর প্রশিক্ষণহীনদের পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ করা যাবে৷ হাওড়ার শ্যামপুরের অর্ণব ভৌমিক-সহ ৩০ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মামলার আবেদনে জানিয়েছেন, চলতি বছরের ১৩ অগস্ট নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ৷ ১৯ অক্টোবর বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশিত হয়৷ তাতে জানানো হয়, ৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ হবে৷ কিন্ত্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের জন্য কোনও সংরক্ষণ রাখা হয়নি৷ সংবাদপত্রের সেই বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করেই মামলা দায়ের করা হয়৷
মামলাকারীদের আরও দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯-এ পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছে, দেশে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ন্যূনতম যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০ শতাংশ নম্বর ও শিক্ষকতায় দু'বছরের প্রশিক্ষণ৷ কিন্ত্ত এই রাজ্যে ২০০৮ সালে হাইকোর্টের নির্দেশে পিটিটিআই পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণই বেআইনি হয়ে পড়েছে৷ তাঁদের প্রশিক্ষণকে বৈধতা দিতে এনসিটিই এক বছরের ব্রিজ কোর্স করার নির্দেশ দেয়৷ এই জটিল অবস্থায় রাজ্য সরকার ২০১১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি এনসিটিই-র জারি করা প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের আইন কিছুটা শিথিল করার জন্য আবেদন জানায়৷ এনসিটিই তা মঞ্জুর করে জানায়, প্রশিক্ষণহীনদের মধ্যে থেকেও পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে৷ তবে তাঁদেরও ছ'মাসের মধ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে৷ নিয়ম শিথিল থাকবে ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত৷ কিন্ত্ত নিয়য় শিথিল করলেও এনসিটিই কখনওই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং প্রশিক্ষণহীনদের একসঙ্গে পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলেনি৷ বরং উল্টোটাই বলা হয়েছে৷ পরীক্ষা নিতে হবে পৃথক ভাবে৷ সেই অবস্থান এ দিন আদালতেও এনসিটিই-র পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়৷
অন্য দিকে, সরকারপক্ষের আইনজীবী প্রণব দত্ত ও কমলেশ ভট্টাচার্যদের দাবি ছিল, নিয়োগ প্রক্রিয়া বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে৷ মামলাকারীরা পর্ষদের বিজ্ঞপ্তিটিকে চ্যালেঞ্জ করেননি৷ সংবাদপত্রের বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা করা হয়েছে৷ এ ছাড়া যেখানে ৩৬ হাজার শূন্যপদে নিয়োগ হচ্ছে, সেখানে মাত্র কয়েকজন মামলাকারীর আবেদনের ভিত্তিতে আদালতের রায় দেওয়া উচিত নয় বলেও সরকারি আইনজীবীরা দাবি করেন৷ সওয়াল-জবাব চলবে৷ আপাতত আদালতেই ঝুলে প্রাথমিক শিক্ষক পদ-প্রার্থীদের ভবিষ্যত্৷
বহু বিতর্কিত জমি অধিগ্রহণ বিলে অবশেষে সম্মতি দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা৷ কিন্তু তারপরও প্রশ্ন থেকে গেল, পস্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সমস্যা মিটবে কিনা। কারণ, প্রস্তাবিত বিলে বলা হয়েছে, কোনও বেসরকারি প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ কৃষক বা জমিমালিকের সম্মতি প্রয়োজন৷ বাকি ২০ শতাংশ অনিচ্ছুকদের জমি সরকার অধিগ্রহণ করতে পারবে৷ পিপিপি বা যৌথ প্রকল্পের ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ জমিমালিকের সম্মতি ছাড়া জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না৷ সরকার নিজের কাজে জমি অধিগ্রহণ করতে চাইলে কোনও জমিমালিকের সম্মতির কোনও দরকার নেই৷ জমির অধিগ্রহণ করলে তার দাম শহরাঞ্চলে চালু বাজারদর অনুসারে দিতে হবে, আর গ্রামের দিকে তা শহরের থেকে দূরত্ব অনুসারে দাম ঠিক হবে৷
জমির দাম কত হবে সেটাও রাজ্য সরকার ঠিক করতে পারবে৷ যাঁদের জমি নেওয়া হবে, তাঁদের প্রকল্পে হয় চাকরি দিতে হবে অথবা মাসিক একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ২০ বছর ধরে দিতে হবে৷ আর ভিটেমাটি গেলে তাঁদের বাড়ি বা তার দাম দিতে হবে৷ যে সব জমি সেচের জল পায় ও বহুফসলী সেই জমি সাধারণত অধিগ্রহণ করা যাবে না৷ তবে নিতান্ত প্রয়োজনে যদি অধিগ্রহণ করতে হয়, তা হলে কতটা করা যাবে সেটা রাজ্য সরকার ঠিক করবে৷ সরকারের দাবি, কৃষক ও জমিমালিকদের ক্ষেত্রে যথেষ্ট রক্ষাকবচ রেখেই জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা জমি বিলে সম্মতি দিলেও পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে সমস্যা কিন্ত্ত মিটছে না৷ কারণ, বিলে বলা হচ্ছে, বেসরকারি প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে গেলে ৮০ শতাংশ কৃষকের সম্মতি দরকার৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগাগোড়া চাইছিলেন, বেসরকারি প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ জমি মালিকের সম্মতি দরকার, এমন ব্যবস্থা করা হোক৷ এই বিল যদি আইনে পরিণত হয়, তারপরে কি কোনও বেসরকারি প্রকল্পের জন্য ২০ শতাংশ অনিচছুক কৃষকদের জমি অধিগ্রহণ করবে রাজ্য সরকার? মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত অবস্থানই হল, তাঁর সরকার কোনও জমি অধিগ্রহণ করবে না৷ এই অবস্থান থেকে মুখ্যমন্ত্রী না সরলে পশ্চিমবঙ্গে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে আগের অচলাবস্থা থেকেই যাবে৷ বেসরকারি, যৌথ প্রকল্প বা সরকারি প্রকল্প সবকিছুই আটকে যাবে৷
পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধরা থাকছে প্রস্তাবিত বিলে৷ সেটি হল, যে এলাকায় জমি অধিগ্রহণ করা হবে, আগে সেখনে দেখা হবে অনুর্বর জমি আছে কি না৷ জেলাশাসকরা এই কাজ করবেন৷ অনুর্বর জমি না থাকলে তবেই কৃষিজমি অধিগ্রহণ করা যাবে৷
কৃষিজমির কতটা অধিগ্রহণ করা যাবে সেটাও রাজ্য সরকার ঠিক করবেন৷ ক্ষতিপূরণের একটা অঙ্ক বিলে থাকছে৷ কিন্ত্ত রাজ্য সরকার চইলে তা নিজেদের ইচ্ছেমতো বাড়াতে পারবেন৷ ফলে ক্ষতিপূরণের বিষয়টিও রাজ্যের হাতে থাকছে৷ ফলে জমিমালিক বা কৃষকদের বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই৷ জমি গেলে কর্মসংস্থনের নিশ্চয়তাও থাকছে৷ ফলে জমি বিক্রি হয়ে গেলে জমিমালকি বা কৃষকদের যে চিন্তা থাকে সেটাও থাকবে না৷ চাকরি দিতে না পারলে মাসিক ভাতা দিতে হবে৷ তফসিলি জাতি বা উপজাতিদের স্বর্থ সুরক্ষিত করতে আরও কিছু ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্য দাবিগুলি রক্ষিত হচ্ছে৷ এমনকী এই ব্যবস্থাও থাকছে, আবাসনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি উন্নত করে আবার মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে৷ এ সব নিয়ে মুখ্যমনত্রীর আপত্তি থাকার কথা নয়, কিন্ত্ত বিষয়টি এসে আটকে যাচ্ছে, ৮০ শতাংশ জমিমালিক বা কৃষক রজি থাকলে কি বেসরকারি প্রকল্পর জন্য সরকার বাকি ২০ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করবে? সরকারি প্রকল্পের জন্য কি বিনা সম্মতিতে জমি অধিগ্রহণ করা হবে? এখনও পর্যন্ত মমতা বন্দোপাধ্যায়ের যা মনোভাব, তাতে এই কাজগুলি তিনি করবেন না৷ সেক্ষেত্রে কিন্ত্ত রাজ্যে বিনিয়াগ আসা নিয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন থেকেই যাবে৷
পদ্ধতিগত ত্রুটি, প্রাথমিকে নিয়োগের
পরীক্ষায় স্থগিতাদেশ দিলো হাইকোর্ট
নিজস্ব প্রতিনিধি
কলকাতা, ১৩ই ডিসেম্বর— পদ্ধতিগত ত্রুটির জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষে গত ৩১শে অক্টোবরে প্রকাশিত ৫৫হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি ও তার যাবতীয় পদ্ধতি–প্রকরণের ওপর স্থগিতাদেশ দিলো কলকাতা হাইকোর্ট। আগামী ২৩শে ডিসেম্বরে শিক্ষক নিয়োগের এই পরীক্ষা হবার কথা ছিল। বৃহস্পতিবার বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত এই পরীক্ষা ও তার প্রস্তুতির ওপর স্থগিতাদেশের রায় দেন। এদিন এজলাসে মামলার আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, রাজ্য সরকার নতুন করে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের যে বিজ্ঞাপন দিয়েছে তা ত্রুটিপূর্ণ। অথচ রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগের আবেদনের প্রেক্ষিতে এপর্যন্ত লক্ষ লক্ষ আবেদনপত্র জমা পড়েছে। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগেরই নেই উপযুক্ত যোগ্যতা। সরকারী বিজ্ঞপ্তিতে ভ্রান্তি থাকায় বিভ্রান্ত হয়েছেন আবেদনকারীরা। মানা হয়নি এক্ষেত্রে সারা দেশের প্রচলিত নিয়মকানুন। শিক্ষক নিয়োগের আবেদনপত্রগুলি গ্রহণের সময় জাতীয় শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত কাউন্সিল (এন সি টি ই)-র ২০০৯সালের আইনটি চূড়ান্তভাবে অবজ্ঞা করেছে রাজ্য সরকারের বিদ্যালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ অধিকর্তা। কাউন্সিলের নির্দেশিকা মানতে হলে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পদ প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা হলো উচ্চমাধ্যমিকে ন্যূনতম ৫০শতাংশ নাম্বার পেতে হবে এবং তাঁদের বি এড ডিগ্রি বা সমতুল ডিপ্লোমা থাকতে হবে। জানা গেছে, লক্ষ লক্ষ আবেদনকারীদের মধ্যে অনেকেরই নেই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় জাতীয় কাউন্সিল নির্ধারিত নম্বর। নেই শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য প্রাপ্ত ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা। এপর্যন্ত নিয়োগের আবেদন যাঁরা দাখিল করেছেন তাঁদের মধ্যে মাত্র ১৪ হাজার জনের রয়েছে বি এড বা তার সমতুল শিক্ষক প্রশিক্ষণের ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা। কাজেই এই পরিস্থিতিতে আবেদনকারীদের মধ্যে বি এড ডিগ্রি বা ডিপ্লোমাধারীদের সঙ্গে যাঁদের সেই ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা নেই তাঁদের একই সঙ্গে মূল্যায়ন হতে পারে না।
আবেদনকারীদের পক্ষের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ছাড়াও ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনিও জোরালো সওয়াল করেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, রাজ্যে নতুন করে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে অনৈতিকতাকেই প্রশ্রয় দিয়েছে রাজ্য সরকার। তাই এইক্ষেত্রে আদালতের হস্তক্ষেপ দাবি করেন তাঁরা। আদালত আপাতত রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ঐ সরকারী বিজ্ঞাপন ও তার ভিত্তিতে যাবতীয় পদক্ষেপের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেছে। মূল মামলাটির সমস্ত দিক নিয়ে আইনগত বিশ্লেষণের নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে বলেও বিচারপতি জানিয়ে দিয়েছেন।
এখানে উল্লেখ্য, শুধু পদ্ধতিগত ত্রুটিই নয় আরো গর্হিত অভিযোগ ইতিমধ্যেই উঠেছে রাজ্যে এই সরকারের আমলে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে। রাজ্যের বিরোধী নেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও সেই অভিযোগের প্রসঙ্গ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন একাধিকবার। গত ৫ই ডিসেম্বর তিনি প্রাথমিক শিক্ষকদের একটি অনুষ্ঠানে সেই অভিযোগ জানান। তিনি জানান, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের আবেদনপত্র জমা দূরের কথা সরকারীভাবে এই শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে গত ১৯শে অক্টোবর বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হবার পর থেকেই শুরু হয়ে যায় দেদার টাকার খেলা। বলতে দ্বিধা নেই এই অপকর্মের সঙ্গে ব্যাপকভাবেই জড়িয়ে পড়ে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের নানাস্তরের নেতা ও কর্মীরা। এই অভিযোগ যে সাজানো নয় তার প্রমাণ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর খেদোক্তি। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন যে, টাকার বিনিময়ে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন শাসক দলের অর্থাৎ তারই দলের লোকজন। তাঁর বক্তব্যে এই স্বীকারোক্তিও পাওয়া যায় যে প্রতিদিনই উঠছে এই দর। রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য কোথাও ৩লক্ষ টাকা, আবার কোথাও ৪লক্ষ টাকা, আবার কোথাও বা ৯লক্ষ টাকার বাজারদর উঠেছে। মন্ত্রী সাম্প্রতিক সময়ে বিকাশ ভবনে এই মর্মে বিবৃতিও দিয়েছেন। গত ৫ই ডিসেম্বরেই শিক্ষামন্ত্রী তাঁর বিবৃতিতে যা বলেছেন তাহলো, ''শুনতে পাচ্ছি টাকা নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরির প্রলোভন চলছে। পরীক্ষার্থীরা নিশ্চিত থাকুন .....।'' তিনি ঐদিন সাংবাদিকদের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে জানান, ''এবার সব আবেদনকারী অর্থাৎ ৫৫লক্ষ আবেদনকারীই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা দেবেন। সব জেলায় একই দিনে এই পরীক্ষা নেওয়া হবে।''
http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=33441
স্থগিতাদেশে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত ৫৫ লক্ষের | ||||||||||||||
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা | ||||||||||||||
কলকাতা হাইকোর্টে ফের ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। এ বার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে। কোর্টের নির্দেশে আপাতত স্থগিত গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া। যার ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ল ৫৫ লক্ষ প্রার্থীর ভবিষ্যৎ। একেই শিক্ষক কম থাকায় এ রাজ্যে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত কেন্দ্রীয় আইনের থেকে বেশি। যার অর্থ, বাড়তি চাপ নিয়ে পড়াতে হয় প্রাথমিক শিক্ষকদের। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাক-প্রাথমিকেও ছাত্র ভর্তি শুরু হবে। ফলে শিক্ষকের অভাব আরও বাড়বে। শিক্ষকমহল বলছে, এ বারের নিয়োগ পরীক্ষা পিছিয়ে গেলে সুরাহাও হয়ে পড়বে দূর অস্ৎ। এবং আরও ব্যাহত হবে প্রাথমিকে পড়াশোনা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই ৫০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণ করার ইচ্ছে ছিল রাজ্য সরকারের। সেই মতো গত ১৫ অক্টোবর সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। সেই অনুযায়ী, যাঁরা দু'বছরের ডিএলএড (ডিপ্লোমা ইন এলিমেন্টারি এডুকেশন) পাশ করেছেন (রাজ্যে এখন তাঁদের সংখ্যা ১৪ হাজার) তাঁদের পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল সাধারণ প্রার্থীদের সঙ্গে। এখানেই আপত্তি তুলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন হাজারের বেশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত (যাঁরা ডিএলএড পাশ) আবেদনকারী। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল, সেই আর্জির শুনানির পর বৃহস্পতিবার সেই বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করে দিল হাইকোর্ট। ফলে স্থগিত হয়ে পড়ল এই সংশ্লিষ্ট যাবতীয় প্রক্রিয়া। | ||||||||||||||
আবেদনকারীদের অভিযোগ ছিল, এনসিটিই-র নিয়ম অনুযায়ী প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের সঙ্গে অন্যদের পরীক্ষা নেওয়া যায় না। কিন্তু রাজ্য সরকার সেটাই করছে। এনসিটিই-র আইনজীবী আশা গুটগুটিয়া আদালতে আবেদনকারীদের বক্তব্যকেই সমর্থন করেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীদের নিয়োগ শেষ না করে কখনই প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ করা যায় না। পর্ষদের আইনজীবী লক্ষ্মী গুপ্ত বলেন, "প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের স্বীকৃতি দিতেই তাঁদের অতিরিক্ত ২০ নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পর্ষদ।" এনসিটিই-র বিধি উল্লেখ করে আবেদনকারীদের আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় কোর্টকে বলেন, "এ ভাবে অতিরিক্ত নম্বর দেওয়াও নীতিবিরুদ্ধ।" বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত আবেদনকারীদের বক্তব্যকে আপাতগ্রাহ্য মনে করে এ দিন বলেন, "এই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি স্থগিত রাখা হল।" শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এ দিন বলেন, "স্থগিতাদেশের কথা শুনেছি। আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।" স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে ১৭ ডিসেম্বর ডিভিশন বেঞ্চে যাবে রাজ্য। ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ রাজ্যের পক্ষে গেলে ১৫ অক্টোবরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়া যাবে। না হলে সিঙ্গল বেঞ্চের মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বিচারপতি করগুপ্ত এ দিন তাঁর নির্দেশে বলেন, "মামলা চলাকালীনই যদি পরীক্ষা হয়ে যায়, তা হলে চূড়ান্ত রায় পর্ষদের বিরুদ্ধে গেলে রাজ্যকে নতুন করে পরীক্ষা নিতে হবে। ফলে সরকারের ঘাড়ে শুধু বিশাল খরচের বোঝাই চাপবে না, যে ৫৫ লক্ষ ছেলেমেয়ে চাকরির আবেদন করেছেন, তাঁদের নতুন করে পরীক্ষা দিতে হবে। তাই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পর্ষদের ওই বিজ্ঞপ্তি স্থগিত থাকবে।" | ||||||||||||||
| ||||||||||||||
দু'সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা জমা দেওয়ার কথা। তা হতে হতে বড়দিনের ছুটি পড়ে যাবে। আদালত খুলবে ২ জানুয়ারি। অর্থাৎ, চূড়ান্ত শুনানি শুরু হতে হতে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে যাবে। রায় যার বিরুদ্ধে যাবে, সেই পক্ষ ডিভিশন বেঞ্চে আর্জি জানাতে পারে। ফলে সহজে মামলা মিটবে না বলেই শঙ্কা আইনজীবীদের। তাঁরা বলছেন, রাজ্য সরকার যদি দু'বছরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থী এবং সাধারণ প্রার্থীদের জন্য আলাদা পরীক্ষা নেওয়া কথা ঘোষণা করত, তা হলে এই জটিলতার সৃষ্টি হত না। এখনও যদি নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়, তা হলেও সমস্যার সমাধান হয়। বস্তুত, নানা আইনি জটিলতায় রাজ্যে ২০০৬ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ করা যায়নি। এর মধ্যে অনেক নতুন পদও তৈরি হয়। সব মিলিয়ে ৫০ হাজার পদ এখনও শূন্য। এখন এই সমস্যারও আশু সমাধান দূর অস্ত। এ দিন রাজ্যের আইনজীবী অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়। তিনি বলেন, "ক, খ শেখানোর জন্য প্রশিক্ষণ দরকার হয় না। প্রাথমিকে পড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ তত গুরুত্বপূর্ণ নয়।" আবেদনকারীদের অন্যতম আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, "বিশ্বের সব শিক্ষাবিদই প্রাথমিক শিক্ষায় সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন। কারণ তখনই ভিত তৈরি হয়।" http://www.anandabazar.com/14raj1.html
|
কলকাতা: আদালতে ফের মুখ পুড়ল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের৷ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ জারি করল কলকাতা হাইকোর্ট৷অর্থাত শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাই হবে না। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ টিচার এডুকেশন (এনসিটিই)-এর নিয়ম এবং সুপ্রিম কোর্টের রায় মানা হয়নি বলে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার এই পদক্ষেপ নিয়েছে আদালত৷ এর ফলে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে চাকরি মিলবে বলে আশা করে যে অসংখ্য ছেলেমেয়ে আবেদন করেছেন, তাঁরা নিরাশ হলেন৷
গত ১৯ অক্টোবর সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, প্রায় ৩৪ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য পরীক্ষা নেওয়া হবে৷ প্রশিক্ষণ ছাড়াও পরীক্ষায় বসতে পারবেন প্রার্থীরা৷ কিন্তু এনসিটিই)-র নিয়ম অনুযায়ী প্রাথমিক স্কুলে প্রশিক্ষণহীন শিক্ষক নিয়োগ করা যায় না৷ তাছাড়া সুপ্রিম কোর্টের রায়েও বলা হয়েছে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের সরাসরি নিয়োগ করতে হবে৷ এই অবস্থায় এনসিটিই-কে রাজ্য জানায়, এরাজ্যে যত শূন্যপদ রয়েছে, তত প্রশিক্ষিত প্রার্থী নেই৷ ফলে যাঁদের প্রশিক্ষণ নেই, তাঁদেরও পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হোক৷ রাজ্যের এই আবেদনের প্রেক্ষিতে এনসিটিই জানায়, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থী না-পেলে প্রশিক্ষণহীনদের নিয়োগ করা যেতে পারে৷ কিন্তু নিয়োগের দু'বছরের মধ্যে প্রশিক্ষণ নিতে হবে৷ এরপরই বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য সরকার৷ ৫৫ লক্ষেরও বেশি আবেদন জমা পড়ে৷ কিন্তু হাওড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের দুজন চাকরীপ্রার্থী কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করে বলেন, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের একই মাপকাঠিতে ফেলছে, সমমর্যাদায় দেখছে রাজ্য সরকার৷ এনসিটিই-র আইন অনুযায়ী প্রাথমিক স্কুলে প্রশিক্ষণহীন শিক্ষক নিয়োগ করা যায় না৷ তাছাড়া সুপ্রিম কোর্টের রায়ও মানছে না রাজ্য৷ এরপর বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্তের এজলাসে মামলা শুরু হয়৷ বৃহস্পতিবার আবেদনকারীদের আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেছেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় আপাতত পুরো পদ্ধতিটাই স্থগিত রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি৷ এ ব্যাপারে সরকারি আইনজীবী কমলেশ ভট্টাচার্য অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন, কেন্দ্রের অনুমতি নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল রাজ্য সরকার৷ প্রশিক্ষণ নেওয়া প্রার্থীদের কথা পর্ষদ যথেষ্ট মূল্য দিয়ে বিবেচনা করেছে৷ তাঁরা অতিরিক্ত ২০ নম্বর পাবেন৷ তার জোরে অন্য প্রার্থীদের থেকে তাঁরা নম্বরে এগিয়ে থাকতে পারবেন৷
রাজনৈতিক মহলের মতে, একের পর এক মামলায় মুখ পুড়েছে রাজ্যের৷ সরকারের তাড়াহুড়োর ফলে প্রায় ৫৫ হাজারেরও বেশি কর্মপ্রার্থীর ভবিষ্যত্ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ল৷
http://abpananda.newsbullet.in/state/34/31375
শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ দুই ২৪ পরগনা, মালদহেও
আনন্দবাজার – শনি, ২৫ আগস্ট, ২০১২হাওড়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা বৃহস্পতিবারেই স্থগিত করে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। শুক্রবার উচ্চ আদালতের নির্দেশে বন্ধ হয়ে গেল উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং মালদহ জেলায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষাও। সরকার যে-চারটি জেলার প্যানেল খারিজ করে নতুন পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছিল, হাইকোর্টের দু'দিনের নির্দেশে তার সব ক'টিতেই পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গেল। মালদহের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ জানিয়েছে, তারা আদালতের নির্দেশের প্রতিলিপি পায়নি এবং শেষ পর্যন্ত যদি তা পাওয়া না-যায়, সে-ক্ষেত্রে ২৬ অগস্ট রবিবার তারা সূচি অনুসারেই পরীক্ষা নেবে।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য রাজ্য সরকার ২০০৯ সালে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। সেই বিজ্ঞাপনের ভিত্তিতে আবেদনকারীদের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ডাকা হয় 'ইন্টারভিউ' বা সাক্ষাৎকারে। তার পরে যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করা হয়। তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষকপদে নিয়োগের আগেই রাজ্যে ক্ষমতায় আসে নতুন দল। প্রার্থী-তালিকা তৈরিতে অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে গত ২১ জুন চারটি জেলার প্যানেল খারিজ করে দেয় নতুন সরকার। তার পরেই ঘোষণা করা হয়, ২৬ অগস্ট নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া হবে আবেদনকারীদের। প্যানেল খারিজের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রার্থী মামলা করেন হাইকোর্টে।
বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় ও বিচারপতি তরুণ দাসের ডিভিশন বেঞ্চ বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বক্তব্য শুনে নির্দেশ দিয়েছিলেন, হাওড়া জেলায় আপাতত ওই পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। মামলা চলবে। শুক্রবার বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্তের এজলাসে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং মালদহ জেলার আবেদনকারীদের মামলার শুনানি হয়। কিছু আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য প্রশ্ন তোলেন, এক বার যে-সব প্রার্থীর পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, আবার তাঁদেরই পরীক্ষা নেওয়ার যুক্তি কী? অন্য কিছু আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, প্রাথমিক শিক্ষকদের নিয়োগের পরীক্ষা, সাক্ষাৎকার, তালিকা তৈরি এবং নিয়োগ সবই করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। প্রাথমিক স্কুলশিক্ষা বিধিতে একমাত্র সংসদেরই এই এক্তিয়ার আছে। রাজ্য সরকার কোনও ভাবেই প্রার্থীদের প্যানেল খারিজ কিংবা নতুন ভাবে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। বিভিন্ন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের পক্ষে বারবার তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়। সব পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারপতি জানিয়ে দেন, ২৬ অগস্ট পরীক্ষা নেওয়া চলবে না। প্যানেল যে-ভাবে খারিজ করা হয়েছে, তার বৈধতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিচ্ছে। তাই চূড়ান্ত রায়ের পরেই পরবর্তী ব্যবস্থার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উত্তর ২৪ পরগনার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারপার্সন মীনা ঘোষ বলেন, "আমরা অ্যাডমিট কার্ড বিলি করছিলাম। তবে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিলে পরীক্ষা নেওয়া যাবে না।" ২৬ অগস্টের পরীক্ষার জন্য ওই জেলায় ৪০ হাজার প্রার্থীর অ্যাডমিট কার্ড বিলি করা হয়েছিল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারপার্সন সুরঞ্জনা চক্রবর্তী বলেন, "স্থগিতাদেশের কথা শুনেছি। আদালত যেমন নির্দেশ দেবে, সেই অনুসারে কর্মপন্থা ঠিক করা হবে।" কিছুটা অন্য সুর মালদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান রামপ্রবেশ মণ্ডলের গলায়। তিনি বলেন, "হাইকোর্টের নির্দেশের প্রতিলিপি পাইনি। আদালত কী বলেছে, তা-ও ঠিক জানি না। নির্দেশের প্রতিলিপি হাতে না-পেলে ২৬ তারিখেই ওই পরীক্ষা নেব।"
আনন্দবাজার পত্রিকা
http://bengali.yahoo.com/%E0%A6%B6-%E0%A6%95-%E0%A6%B7%E0%A6%95-%E0%A6%A8-%E0%A6%AF-044507884.html
No comments:
Post a Comment