চিটফান্ড নিয়ন্ত্রণে নতুন বিল আনার জন্য সোমবার বসছে বিধানসভার অধিবেশন। মঙ্গলবার বিধানসভায় পেশ করা হবে নতুন বিল। সিদ্ধান্ত হল সর্বদল বৈঠকে। বৈঠকে যোগ দেন সব দলের প্রতিনিধিরা। ছিলেন রাজ্য মন্ত্রিসভার প্রথম সারির সদস্যরা। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে ২৯ তারিখ বিধানসভার অধিবেশন শুরু হবে। আজ রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে বিলের বিষয়ে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রীও।
বৈঠক শেষে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি বলেন, "কড়া আইন আনতে চায় সরকার। নতুন বিলে কোনও ত্রুটি রাখা হবে না।" তিনি বলেন চিটফান্ড বষয়ক সমস্ত সমস্যাই এই নতুন বিলের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
তবে ভুঁইফোড় আর্থিক সংস্থা গুলির ওপর লাগাম পরাতে রাজ্যের নতুন বিল আনার উদ্যোগ ঘিরে প্রশ্ন উঠে গেল। বাম আমলের পুরনো বিল সংশোধনের বদলে নতুন করে বিল আনলে সেই আইনের আওতায় সারদা কাণ্ডে অভিযুক্তদের বিচার সম্ভব নয়। তাই অভিযুক্তদের কড়া শাস্তির হাত থেকে বাঁচাতেই সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা।
নতুন বিল আনতে ২৯ ও ৩০ এপ্রিল বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে এই বিল পাশ হলেও তা সারদা মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কার্যকর করা যাবে না। অথচ দুহাজার নয়ে বিধানসভায় পাশ হওয়া আগের বিলে রাষ্ট্রপতির সম্মতি পেলে তা তখন থেকেই কার্যকর করা যেত বলেই দাবি বাম শিবিরের।
আর এ ধরনের হলফনামার পর প্রতিক্রিয়াও যা হওয়ার, সেটাই হয়েছে৷ আধিকারিকদের নীতি এবং প্রোটোকল ভাঙার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে কাঠগড়ায় তুলে বিরোধীরা ফের মনমোহন সিংয়ের ইস্তফা দাবি করেছে৷ বিজেপি মুখপাত্র রাজীবপ্রতাপ রুডি বলেছেন, 'প্রধানমন্ত্রীর অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত৷ এই সরকার ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে৷' দলের আর এক নেতা রবিশংকর প্রসাদ বলেছেন, 'সিবিআই-কে বলা হয়েছিল রিপোর্টটি গোপন রাখতে৷ কী ভাবে সরকার সিবিআই-কে নিয়ন্ত্রণ করছে, এই হলফনামা তার আদর্শ উদাহরণ৷' সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, 'এই হলফনামার ব্যাখ্যা দেবে সুপ্রিম কোর্ট৷ তবে একটি বিষয় পরিষ্কার, সরকার রিপোর্টটি প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে৷ আমরা এ নিয়ে সংসদে আলোচনা চাইছি৷' প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের কথা বলেছেন তিনিও৷ তবে শরিক এনসিপি সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে৷ দলের নেতা ডিপি ত্রিপাঠী বলেছেন, 'আইনমন্ত্রী এমন একজন ব্যক্তি যিনি আইন খুব ভালো বোঝেন৷ তাঁকে রিপোর্টের খসড়া দেখানোর মধ্যে অন্যায় কিছু আছে বলে আমরা মনে করি না৷'
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে কেন্দ্র যে কর্ণপাত করবে না, তা দিনকয়েক আগে সনিয়া গান্ধী নিজেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন৷ সংসদে বিরোধীদের তোলা এই দাবির জবাবে তাঁর সাফ কথা ছিল, 'ওঁদের দাবি করতে দিন (লেট দেম আস্ক)৷' এদিনও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী কমলনাথ বলেছেন, 'নির্বাচিত হওয়ার দিন থেকেই তো বিজেপি প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফা দাবি করে আসছে৷ এতে গুরুত্ব দেওয়ার অর্থ নেই৷'
তবে আইনমন্ত্রী অশ্বিনী কুমারের ভবিষ্যত্ নিয়ে নিঃসন্দেহে সংশয় রয়েইছে৷ যদিও তিনি নিজে পদত্যাগের সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছেন৷ সিবিআই ডিরেক্টর এদিন তাঁর হলফনামা দেওয়ার পরই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে তড়িঘড়ি দেখা করেন অশ্বিনী কুমার৷ জানা গিয়েছে, ৩০ তারিখ সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী শুনানির আগে যাতে কোনও পদক্ষেপ করা না হয়, প্রধানমন্ত্রীর কাছে সে অনুরোধ করেছেন আইনমন্ত্রী৷ তবে ইস্তফা যে দেবেন না, তা স্পষ্ট৷ বলেছেন, 'কেন আমি ইস্তফা দিতে যাব? আমি কোনও অন্যায় করিনি৷ সত্যের জয় হবে৷' তাঁর দাবি, তিনি খসড়া রিপোর্টটি দেখেছিলেন, চড়ান্ত রিপোর্ট তিনি কখনোই দেখেননি৷ কিন্তু এই যুক্তির ঢালে তাঁর রক্ষা পাওয়া অসম্ভব বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা৷
সরকারও যে ৩০ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারে, সে ইঙ্গিত মিলেছে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমলনাথের কথায়৷ তিনি বলেছেন, 'এ বিষয়ে ৩০ তারিখ সুপ্রিম কোর্ট কী বলছে, তা অতি গুরুত্বপূর্ণ৷ তাই আইনমন্ত্রীর পদত্যাগের প্রশ্ন নেই, কেন উনি পদত্যাগ করবেন?' সরকারও যে বিপাকে, সেটাও পরিষ্কার৷ এদিন মন্ত্রিসভার বরিষ্ঠ সদস্য এবং শরদ পওয়ার, অজিত সিংয়ের মতো শরিক নেতাদের সঙ্গেও একপ্রস্থ বৈঠক করেছেন সনিয়া-মনমোহন৷
হলফনামায় সিবিআই প্রধান স্পষ্টই জানিয়েছেন, আইনমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার এবং কয়লামন্ত্রকের অনুরোধেই রিপোর্টটির খসড়া দেখতে দেওয়া হয়েছিল৷ যুগ্মসচিব পর্যায়ের দুই আধিকারিকও রিপোর্ট দেখেছিলেন বলে হলফনামায় জানানো হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের এক যুগ্মসচিবও রিপোর্টটি দেখতে চেয়েছিলেন এবং দেখেছিলেন৷ কয়লামন্ত্রকেরও এক যুগ্মসচিবের চোখ ঘুরেছিল স্টেটাস রিপোর্ট৷
কলকাতায় এসে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে গেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সচিন পাইলটও। ফলে, মুখ্যমন্ত্রীর `জানতাম না` তত্ত্ব ধোপে টিকছে না বলেই অভিযোগ ওয়াকিবহাল মহলের। সারদা গোষ্ঠীর বেআইনি কারবার সম্পর্কে আগে ধারণা ছিল না তাঁর। এমনই দাবি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু, ২০১০এই দশেই সারদার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে সেবিকে চিঠি দিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। রাজ্যে চিটফান্ড সংস্থার বাড়বাড়ন্ত নিয়ে একাধিকবার সরব হয়েছে তারা।
সারদা গোষ্ঠীর প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত সাধারণ মানুষ। গত শনিবার, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির দরজায় পৌঁছে গেল তাঁদের ক্ষোভ। দেখতে দেখতে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ল রাজ্যজুড়ে। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী বললেন, এ সব তাঁর আগে জানা ছিল না। সত্যিই কি তাই? ১৫ এপ্রিলের আগে সারদা গোষ্ঠীর কুকীর্তির কথা জানত না সরকার? বাস্তব কিন্তু অন্য কথা বলছে। ২০১০এই সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সেবির কাছে অভিযোগ জানায় ততকালীন বামফ্রন্ট সরকার।
২০১০-এর ২৩ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ডিরেক্টর ইকনমিক অফেন্সেস ইনভেস্টিগেশন সেলের কাছ থেকে চিঠি পায় সেবি। চিঠিতে জানানো হয়, পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলছে সারদা রিয়েলটি ইন্ডিয়া লিমিটেড। চিঠির সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল সংস্থার ব্রোশিওরও। যাতে মানুষের কাছ থেকে তারা কী ভাবে টাকা তুলছে তার বিবরণ দেওয়া ছিল, যা সেবি আইনকে লঙ্ঘন করে।
তিন বছর আগে বামফ্রন্ট সরকারের দেওয়া চিঠির ভিত্তিতে সারদার বিরুদ্ধে তদন্তও শুরু করে সেবি। ২০১১-র ডিসেম্বরে, তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে সারদা রিয়েলটি ইন্ডিয়া লিমিটেডকে সেবি শোকজ নোটিশ দেয়।
২০১১-য় রাজ্যে সরকার বদল হয়েছে। কিন্তু, আগের সরকারের তোলা অভিযোগের কথা কি জানতেই পারেনি নতুন সরকার? সারদার বিরুদ্ধে সেবি যে খোঁজখবর নিচ্ছে সে খবর পৌঁছয়নি মহাকরণে? শুনতে যতই অবাস্তব লাগুক মুখ্যমন্ত্রীর দাবি কিন্তু এমনই। বাম আমলে বিধানসভায় তৃণমূল বিধায়কদের উপস্থিতিতে সর্বসম্মতভাবে চিটফান্ড দমনে বিল পাশ হয়েছে। রাজ্যে চিটফান্ডের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে বামেরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করেছেন। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর চিটফান্ড নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব দাবি করে বিধানসভায় নিগৃহীত হয়েছেন বাম বিধায়কেরা। এতকিছুর পরও মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, তিনি জানতেন না কিছুই।
আর্থিক অপরাধ দমনে বাম আমলে রাজ্যে গঠিত হয়েছিল ইকনমিক অফেন্সেস ইনভেস্টিগেশন সেল। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর গত দুবছর ধরে সেলটি কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে। সারদা গোষ্ঠীর কাজকর্ম নিয়ে তারাই আবার তিন বছর আগে চিঠি দিয়েছিল সেবিকে। ফলে, সারদার বেআইনি কারবার; সম্পর্কে আগে জানা ছিল না - এই ধরনের মন্তব্যে সরকারের দায় এড়ানোর চেষ্টাই স্পষ্ট বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
বাম আমলের বিলটি সংশোধন না-করে ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নিকারী সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে নতুন বিল কেন আনা হচ্ছে, এ বার সেই প্রশ্নও উঠে গেল।
আইন ও পরিষদীয় বিষয়ে অভিজ্ঞদের মতে, ২০০৯-এ বিধানসভায় পাশ হওয়া বিলটি রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে ফিরিয়ে এনে সংশোধন করলে তার আওতাতেই সুদীপ্তদের বিচার সম্ভব হত। কিন্তু তা প্রত্যাহার করে নতুন বিল আনা হলে সারদা-কাণ্ডে অভিযুক্তরা সেই আইনের আওতায় পড়বেন না। তৃণমূল সরকার নতুন বিল পেশ করারই পক্ষপাতী। সেই লক্ষ্যে আগামী ২৯ ও ৩০ এপ্রিল বিধানসভার জরুরি অধিবেশন ডাকা হয়েছে। ফলে নতুন বিল পেশ করে সরকার আসলে সারদা-কাণ্ডে অভিযুক্তদের কড়া শাস্তি থেকে আড়াল করতেই চাইছে, এমন অভিযোগ তোলার সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন বিরোধীরা। শাসক-পক্ষ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করছে।
বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম বৃহস্পতিবার বলেন, "বিলটি ২০০৯-এর ডিসেম্বরে বিধানসভায় পাশ হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন যখনই পাওয়া যাক না কেন, যে দিন বিধানসভায় বিলটি পাশ হয়েছে, সে দিন থেকেই তা কার্যকর করা সম্ভব।" পক্ষান্তরে, এখন যে বিলটি বিধানসভায় আনার কথা বলা হচ্ছে, তা যে দিন বিধানসভায় পাশ হবে, রাষ্ট্রপতির সম্মতি পেলে তা কার্যকর হবে সে দিন থেকে। কিন্তু সারদা-মামলা রুজু হয়েছে তার আগেই। ফলে নতুন বিল যত কড়াই হোক না কেন, তাতে সারদা-মামলায় অভিযুক্তদের কিছু এসে যাবে না।
তার উপরে ঘটনা হল, বাম আমলে পাশ হওয়া বিলের থেকে নতুন আইন তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আলাদা হওয়ার কোনও খবর সরকারি সূত্রে এখনও পর্যন্ত মেলেনি। পরিষদীয়মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার যা ইঙ্গিত দিয়েছেন, তা থেকে বোঝা যাচ্ছে কিছু খুঁটিনাটি (যাকে বিরোধীরা বলছেন প্রসাধনী মাত্র) রদবদল থাকবে নতুন বিলে। যেমন, আগের বিলে সম্পত্তি আটক (অ্যাটাচ) করার কথা ছিল। এখন বাজেয়াপ্ত (কনফিসকেট) করার সংস্থান রাখা হচ্ছে। ওই জাতীয় অপরাধের বিচারের জন্য বিশেষ আদালতের কথাও বলা হচ্ছে।
শাসক পক্ষের অভিযোগ, ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা টাকা অন্যত্র পাচার করে বেনামে সম্পত্তি কিনলে তা বাজেয়াপ্ত করার বিধান আগের বিলে ছিল না। যদিও বাম শিবিরের দাবি তাদের আমলের বিলের ১৩ ও ১৪ নম্বর ধারায় সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজের নামে ও বেনামে কেনা সমস্ত সম্পত্তি আটক করার ব্যবস্থা আছে। আছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মতো কড়া শাস্তির ব্যবস্থাও। ওই ধরনের মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ভারপ্রাপ্ত আদালতের (যেমন সিবিআই-এর আছে) ব্যবস্থাও রয়েছে ওই বিলে। রাজ্যের অর্থ দফতরের এক পুরনো অফিসারেরও বক্তব্য, নতুন বিলে এর চেয়ে কী কড়া ব্যবস্থা রাখা হবে, তা বোধগম্য হচ্ছে না! তাঁর যুক্তি, "পুরনো বিলে কোনও খামতি থাকলে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পাওয়ার পরেও বিধানসভায় সংশোধনী এনে তা দূর করা যায়। এর জন্য গোটা বিলটিকেই বাতিল করে ফের নতুন বিল আনার দীর্ঘ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে কেন, তা বোঝা যাচ্ছে না।" স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, "একটি আইন থাকলে সে ক্ষেত্রে নতুন আইন না করে তাতে সংশোধনী আনা যেতেই পারে।"
এই পরিপ্রেক্ষিতেই বিরোধীদের প্রশ্ন, তা হলে কি সারদা গোষ্ঠীকে বাঁচাতেই খামতির দোহাই দিয়ে ফেরত আনা হচ্ছে আগের বিলটি? প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত বলেছেন, "এই ধরনের চিট ফান্ডকে অঙ্কুরে বিনাশ করার জন্যই ২০০৯ সালে বিল এনেছিলাম। ২০০৯ সালের ২২ ডিসেম্বর সর্বসম্মতিক্রমে বিলটি পাশ হয়েছিল। এখন যাঁরা শাসক, বিরোধী হিসেবে তাঁরাও বিলটি সমর্থন করেছিলেন। সেই বিলে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন আদায়ের চেষ্টা না-করে আবার নতুন করে গোটা প্রক্রিয়া কেন করা হচ্ছে, বোঝা মুশকিল!"
সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম দেবও প্রশ্ন তুলেছেন, তৃণমূল বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় সে দিন বিল সমর্থন করার পর এখন একই বিলে তারা ত্রুটি খুঁজে পেল কেন? যার জবাবে শোভনদেববাবু বলেন, "বিলটি সমর্থনের পাশাপাশি তার ত্রুটির কথাও উল্লেখ করেছিলাম। গৌতমবাবুরা আমার সেই সময়ের (২০০৯) বক্তৃতার কতগুলি লাইন বাদ দিয়ে বলছেন। আমি স্পিকারকে চিঠি
দিয়ে বলেছি, আমার বক্তৃতার প্রতিলিপি পাঠানো হোক।" পার্থবাবুরও দাবি, তাঁরা ২০০৩ এবং ২০০৯ সালে ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে এবং আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষার জন্য আনা বিলকে সমর্থন করেও সেটি যে ত্রুটিপূর্ণ, তা উল্লেখ করেছিলেন। তাঁর কথায়, "২০০৯-এর ১৩ জুলাই স্থায়ী কমিটির সুপারিশে বলা ছিল, ২০০৩ সালে পেশ করা বিলটি প্রত্যাহার না-করে নতুন বিল আনা আইনসঙ্গত হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও ২০০৯-এর ২২ ডিসেম্বর বিধানসভায় বিলটি পাশ করানো হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতির যে সমস্ত পর্যবেক্ষণ ছিল, তার সব ক'টি গ্রহণ না-করে বিলটি পাশ করানো হয়েছিল। ফলে রাষ্ট্রপতির কাছে তা পড়েই থাকল।" এই দাবি অবশ্য সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র থেকে শুরু করে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীমবাবু।
সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারের আবেদনের ভিত্তিতে বাম আমলের বিলটি আজ, শুক্রবার রাজ্যপালের কাছে ফেরত আসার কথা। বিকালে নতুন বিলে রাজ্যপালের সম্মতির জন্য তাঁর সঙ্গে কথা বলতে যাওয়ার কথা অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের। আজ দুপুরেই বিধানসভায় সর্বদল বৈঠক ডেকেছেন স্পিকার। যেখানে বিল-বিতর্কই মাথাচাড়া দেওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। বিল ফেরত আসার ব্যাপারে এ দিন সন্ধ্যায় মহাকরণ থেকে বেরনোর সময় মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "ওটা তো এলে রাজ্যপালের কাছে আসবে। আমার কাছে এ রকম কোনও খবর নেই।"
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36061-2013-04-26-04-07-19
সুরুচি মজুমদার: পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক ক্ষমতা উচ্চবর্ণের নেতৃত্বের দখলে এবং এখানে দুর্নীতি কম দেখা যায় ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায়৷ কিছু দিন আগে আশিস নন্দীর এ রকম বক্তব্য বিতর্কের সৃষ্টি করে৷ উচ্চবর্ণের রাজনৈতিক ক্ষমতা ও দুর্নীতির কম দেখা যাওয়া- এই দু'-এর মধ্যে কী রকম যোগ থাকতে পারে?
শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়: আমার মনে হয় আশিস নন্দীর মন্তব্যটা অনেকটাই ব্যঙ্গাত্মক (সারকাস্টিক)৷ উনি বলার চেষ্টা করেছিলেন যে পশ্চিমবঙ্গে আমরা দুর্নীতি দেখতে পাই না তার কারণ এখানে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত মূলত উচ্চবর্ণের মানুষেরা, যারা ঐতিহাসিক ভাবে এখানে রাজনৈতিক নেতৃত্বে আছেন৷ এবং তাদের দুর্নীতির ধরন এতই সূক্ষ্ম ও বুদ্ধিমান যে সেটা প্রকট ভাবে বোঝা যায় না এবং মনে হয় যে এখানে দুর্নীতি নেই৷ আশিসবাবু অন্যত্র বলেছেন যে উচ্চবর্ণের নেতৃত্বের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখার প্রক্রিয়াটি সবচেয়ে বড় দুর্নীতি লুকিয়ে আছে তার কারণ এই প্রক্রিয়া নিম্নবর্ণের মানুষদের ক্ষমতায় আসার সুযোগই দেয় না৷ ভারতের অন্যান্য রাজ্যে নিম্নবর্ণের মানুষ ক্ষমতার উপরের তলায় উঠে এসেছেন৷ তাদের দুর্নীতিটা বেশি করে ধরা পড়ে এবং তা নিয়ে অভিযোগ তোলা হয়৷ অন্য দিকে উচ্চবর্ণের মানুষদের দুর্নীতি সে ভাবে চিহ্নিত হয় না৷ আশিসবাবুর মূল বক্তব্যটা একটু ভেবে দেখা দরকার৷ উনি বলেছেন যে নিম্নবর্ণের মানুষের দুর্নীতির ফলে একটা 'ইক্যুয়ালাইজেশন' সম্ভব হচ্ছে- বিত্তের (রিসোর্সেস) বণ্টনে খানিকটা সমতা আসছে৷ এত দিন উচ্চবর্ণের মানুষই শুধু বিত্তের দখল নিচ্ছিলেন, এখন নিম্নবর্ণের মানুষও তাদের বকেয়া (শেয়ার) বুঝে নিচ্ছেন৷ সেইখান থেকে বিত্তের বণ্টনে সমতা আসছে৷ আশিসবাবু এমন দাবি কখনওই করেননি যে উচ্চবর্ণের মানুষ কম দুর্নীতিপরায়ণ ও নিম্নবর্ণের মানুষ বেশি৷ বরং আমার ধারণা উনি উল্টোটাই বলার চেষ্টা করেছেন৷
দুর্নীতির প্রসঙ্গে জাতের বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ কেন? এই দুইয়ের মধ্যে কী সম্পর্ক?
জাতপাতের সঙ্গে দুর্নীতির অন্তর্নিহিত সম্পর্ক নেই৷ দুর্নীতির অন্তর্নিহিত সম্পর্ক ক্ষমতার বিন্যাসের সঙ্গে৷ ক্ষমতার সঙ্গে দুর্নীতির যোগ আছেই তাই ক্ষমতা দখলের সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা অনেক বেশি হয়ে যায়৷ ক্ষমতার বিন্যাসে নিম্নবর্ণের মানুষ এত দিন খুব বেশি ছিলেন না৷ তাই দুর্নীতির প্রশ্নে নিম্নবর্ণের মানুষের কথা বিশেষ ভাবে ওঠেনি৷ কিন্তু ইদানীংকালে ভারতের নানা জায়গায় তারা রাজনৈতিক নেতৃত্বে আসছেন এবং সেখানেই দুর্নীতির সঙ্গে যোগটা তৈরি হচ্ছে ক্ষমতার সঙ্গে তাদের সম্পর্কের মধ্যে দিয়ে৷
পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক নেতৃত্বেই শুধু নয়, এখানকার নাগরিক সমাজেও নিম্নবর্ণের নেতৃত্ব বেশি দেখা যায় না৷ বিদ্যজনের জগতেও জাতপাত নিয়ে আলোচনা বর্তমানে কিছুটা হলেও তুলনামূলক ভাবে কম৷ এটা কী ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়?
পশ্চিমবঙ্গে সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বর্ণবিদ্বেষ কাজ করলেও এমন একটা বক্তব্য তৈরি হচ্ছে যে এখানে জাতপাতের সমস্যাটা খুব একটা বড় নয়৷ এর সঙ্গে বাস্তবের খুব বেশি মিল নেই৷ কিন্তু এই ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য জাতপাত নিয়ে আলোচনার পরিসরকে খুব সীমিত করে দিচ্ছে৷ তার কারণ বামপন্থী আন্দোলন শ্রেণির উপর জোর দিয়ে থাকে এবং বামপন্থীরা জাতপাতকে কখনওই গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয় হিসেবে ভাবেনি৷ ফলে জাতপাত নিয়ে আলোচনা কখনওই খুব বেশি গুরুত্ব পায়নি৷ অথচ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে বামপন্থীদের মধ্যেও জাতপাত কাজ করে৷ জাতপাতের প্রভাব যে এখানে যথেষ্ট আছে তার সবচেয়ে বড়ো প্রমাণ এই যে এখানে নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দের বেশির ভাগই উচ্চবর্ণের৷ নিম্নবর্ণের নেতৃত্ব খুব কমই দেখা যায়৷ বামপন্থী আন্দোলনেও তপসিলি জাতির কোনও প্রতিনিধি খুব বিখ্যাত নেতা হিসেবে কখনও উঠে আসেনি যদিও ইদানীংকালে সে রকম কিছু উদাহরণ দেখা গিয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রিসভাতেও তফসিলি জাতির প্রতিনিধিত্ব এখনও অতি নগণ্য৷ এখানে আশিস নন্দীর একটা বক্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ উনি বলে থাকেন যে পশ্চিমবঙ্গে উচ্চবর্ণের প্রতিনিধি ছাড়া কেউ কখনও মুখ্যমন্ত্রী হয়নি, এবং শুধু তা-ই নয় এখানে উচ্চবর্ণের বাইরের কারও ক্ষমতার ওই শীর্ষস্থানে পৌঁছনোর সুযোগ খুবই কম৷ তার কারণ উচ্চবর্ণের মানুষ এখানে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রেখেছেন৷ সামাজিক মূল স্রোতেও জাতপাতের সমস্যা এখানে বিরল নয়৷ যেমন মিড-ডে মিল-কে কেন্দ্র করে এমন সমস্যা এখানে দেখা গিয়েছে৷ দলিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্কুলের মিড-ডে মিল তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হলে ব্রাহ্মণের ছেলেরা সেই খাবার খেতে চায়নি৷
স্বাধীনতার পরে পশ্চিমবঙ্গে সংগঠিত দলিত রাজনীতি গড়ে ওঠেনি কেন?
সংগঠিত দলিত রাজনীতি দেশ ভাগের আগে থেকেই দুর্বল হতে শুরু করে৷ এবং তার প্রধান কারণ পার্টিশন৷ অবিভক্ত বাংলায় সংগঠিত দলিত রাজনীতি শুরু হয় বিংশ শতাব্দীর একের বা দু'য়ের দশকে৷ তিরিশের দশকে এই আন্দোলন সবচেয়ে বেশি সংগঠিত হয়৷ মূলত উত্তরবঙ্গের রাজবংশী এবং পূর্ববঙ্গের নমশূদ্র সম্প্রদায়ের মধ্যে এই আন্দোলন গড়ে ওঠে৷ পশ্চিমবঙ্গের তফশিলি জাতিগুলির মধ্যে পৌন্ড্র ক্ষত্রিয়রা খানিকটা সংগঠিত ছিলেন৷ কিন্তু প্রাক-স্বাধীনতা আমলের তপশিলি জাতির আন্দোলনের মূল নেতৃত্ব গড়ে উঠেছিল পূর্ব বাংলা থেকে৷ দেশ ভাগকে কেন্দ্র করে পূর্ববঙ্গের আন্দোলন ও তার নেতৃত্ব ভাগাভাগি হয়ে যায়৷ এই সম্প্রদায়ের যে মানুষেরা দেশভাগের পর পূর্ববাংলায় থেকে গিয়েছিলেন তারা ১৯৫০-এর রায়টের পর দলে দলে এ দিকে আসতে শুরু করেন৷
পশ্চিমবঙ্গে চলে আসার পর তপশিলি জাতির কৃষক ও অন্যান্যদের মূল সমস্যা হয়ে ওঠে পুনর্বাসন ও নাগরিকত্ব৷ ফলে পূর্ববাংলা থেকে যারা এলেন তাদের আন্দোলন ক্রমশ উদ্বাস্তু ও পুনর্বাসনের আন্দোলনের সঙ্গে এক হয়ে গেল৷ পশ্চিমবঙ্গের তফসিলি সম্প্রদায়ের এই সমস্যা ছিল না৷ পৌন্ড্র ক্ষত্রিয়রা ছাড়া এখানকার অন্যান্য তফসিলি জাতিগুলি সে ভাবে সংগঠিতও ছিল না৷ ফলে তফসিলি জাতির মধ্যের এই দুই উপসম্প্রদায়ের আলাদা প্রয়োজন ও আলাদা অবস্থান তাদের ঐক্যবদ্ধ সংগঠিত আন্দোলনের পক্ষে অনুরূপ অবস্থা সৃষ্টি করতে পারেনি৷
এর পেছনে বামপন্থী রাজনীতির কী ভূমিকা?
পূর্ববঙ্গ থেকে তফসিলি জাতির যে মানুষেরা উদ্বাস্তু হিসেবে এ পাড়ে এলেন, তাদের বেশির ভাগই অত্যন্ত দরিদ্র বা ভূমিহীন কৃষক৷ সেই মুহূর্তে তাদের কাছে পুনর্বাসন, রুজি রোজগার ও বেঁচে থাকার লড়াই-ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং এরা উদ্বাস্তু আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন৷ ষাটের দশকের শেষ থেকে এদের আন্দোলন বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে এক হতে শুরু করে৷ বামপন্থী আন্দোলনের সমর্থন মূলত এসেছিল এক দিকে উদ্বাস্তুদের ও অন্য দিকে ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে থেকে, এই দুই গোষ্ঠী প্রধানত তফসিলি জাতির৷ এটাও আর একটা কারণ যার ফলে জাতপাতভিত্তিক আন্দোলন বা জাতপাতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আন্দোলন রাজনৈতিক ভাবে সংগঠিত হতে পারেনি৷
তফসিলি জাতির যে মানুষেরা বাংলার বাইরে পুনর্বাসন পান তারা ভারতের বৃহত্তর দলিত আন্দোলনের সঙ্গে যোগ দেননি কেন?
পশ্চিমবঙ্গের বাইরে, দন্ডকারণ্য ও আন্দামানের মতো জায়গায়, যাদের পুনর্বাসন দেওয়া হয় তাদের অত্যন্ত প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে লড়াই করতে হয়৷ নমশূদ্রদের মতো সম্প্রদায় বাংলায় তফসিলি জাতি হিসেবে চিহ্নিত হলেও বাংলার বাইরে যেখানে তাঁরা পুনর্বাসিত হন সেখানে তাঁরা এই স্বীকৃতি পান না৷ তার কারণ ১৯৪৭-এর আগেই তৈরি হওয়া শিডিউল কাস্ট লিস্টে এদের নাম ছিল না৷ সরকারি ভাবে শিডিউল কাস্ট হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার জন্য বিভিন্ন রাজ্যে আলাদা নিয়ম আছে৷ প্রাথমিক ভাবে, এই স্বীকৃতির জন্য অস্পৃশ্য জাতি বা অর্থনৈতিক অনগ্রসর হিসেবে বিবেচিত হতে হত৷ আবার একটি জাতি প্রতিটি রাজ্যেই অস্পৃশ্য হিসেবে না-ও গণ্য হতে পারেন৷ বাংলার বাড়িতে যে তফসিলি সম্প্রদায়ের মানুষ পুনর্বাসিত হন তারা নিজেদের আন্দোলন করেন ও তাঁদের অনেকেই আজ অর্থনৈতিক ভাবে উপরের দিকে উঠে এসেছেন৷ তাই আজকের অবস্থায় তাঁদের অনগ্রসর শ্রেণি হিসেবে গণ্য করা হয় না৷ কয়েক বছর আগে পার্লামেন্টে পুরনো শিডিউল কাস্ট লিস্ট পুনর্বিবেচনা করার সময় ভারতের অন্যান্য প্রদেশের (উত্তর ভারত, মধ্যপ্রদেশ বা উড়িষ্যার মতো জায়গায় যেখানে তারা পুনর্বাসিত হন) রাজ্য সরকারগুলি বাংলার তফসিলি সম্প্রদায়কে শিডিউল কাস্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিতে নারাজ ছিল৷ এই স্বীকৃতি না পাওয়ার ফলে এরা কখনওই ভারতের বৃহত্তর দলিত আন্দোলনের সাথে একাত্ম হতে পারেনি৷
ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে বর্ণবিদ্বেষের সমস্যা কি অনেক কম?
ঐতিহাসিক ভাবে দেখলে ভারতের অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় বাংলায় জাতপাতের সমস্যা কিন্তু অনেক কম৷ এর পেছনে দু-তিনটে কারণ আছে৷ একটা বড় কারণ হল বহু কাল ধরে এখানে বৌদ্ধধর্মের আধিপত্য ছিল৷ বৌদ্ধধর্মের উপর রাষ্ট্রের সমর্থন ছিল৷ এবং বৌদ্ধধর্মের প্রভাব রয়েছে বর্ণবিদ্বেষের প্রকোপ কিছুটা কম করার জন্য৷ এ ছাড়া ইসলাম ধর্মের আধিপত্য ও প্রভাবও একটা বড় কারণ যা-ও জাতিগত বিভেদকে কিছুটা লঘু করে৷ এ ছাড়া উত্তর ভারতের মতো এখানে উচ্চবর্ণের ভূস্বামীদের (ল্যান্ডলর্ড ক্লাস) জমির উপর একচেটিয়া অধিকার গড়ে উঠতে পারেনি৷ এখানে উচ্চবর্ণের ভূস্বামীদের পাশাপাশি মধ্যমবর্ণের কৃষকদেরও জমির উপর অধিকার তৈরি হয়৷ এ ক্ষেত্রে মহিষ্যরা বড় উদাহরণ যাঁরা অনেক ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণ জমিদারদের প্রতিযোগী হয়ে ওঠেন৷ পূর্ববঙ্গে উচ্চবর্ণের ভূস্বামীদের জমির উপর একচেটিয়া অধিকার কিছুটা থাকলেও দেশ ভাগের পর তা অনেকটা ভেঙে যায়৷ ফলে বিত্তের উপর উচ্চবর্ণের অধিকার সেই অর্থে একচেটিয়া ভাবে গড়ে ওঠেনি এখানে যেমন হচ্ছে ভারতের অন্যান্য জায়গায়৷
পশ্চিমবঙ্গে ভূমি-সংস্কার জাতিগত বিভেদের উপর কী প্রভাব ফেলেছে?
ভূমি সংস্কারের প্রাথমিক পর্যায়ে বাগদি, বাউরিদের মতো তফসিলি জাতির কৃষকেরা খুবই উপকৃত হচ্ছিলেন৷ কিন্তু ভূমি-সংস্কারের সুফল একটা পর্যায় অবধি ছিল৷ দ্বিতীয়ত প্রজন্মের অনেক দাবিদারের মধ্যে জমি ভাগ হয়ে ছোটো জমি থেকে আয় পর্যান্ত থাকেনি যা আবার অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি করতে শুরু করে৷ অর্থনৈতিক চাপের ফলে জাতপাতের সমস্যা আবার প্রকট হয়ে উঠছে৷
পশ্চিমবঙ্গে জাত নিয়ে রাজনীতি করা কতটা সম্ভব?
খুবই কঠিন৷ এখানে জাতপাত নিয়ে প্রকাশ্যে রাজনীতি করার কোনও ঐতিহাসিক উদাহরণ নেই৷ এখানকার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আলাদা৷ আম্বেদকর আন্দোলনের পর বর্তমানে পশ্চিম বা উত্তর ভারতে যে দলিত সচেতনতা দেখা যায় সেটার ইতিহাস বাংলায় কোনও দিনই ছিল না৷ তার ফলে জাতপাতের স্লোগান দিয়ে নির্বাচন যেটা এখানে মুশকিল৷ সংরক্ষিত কেন্দ্রের (রিজার্ভ কনস্টিটুয়েন্সি) প্রার্থীদের পক্ষেও এটা কঠিন৷ অথচ উত্তর ভারত, বিহার, তামিলনাডু বা মহারাষ্ট্রে উচ্চবর্ণের প্রার্থীরাও নির্বাচনে জেতার ব্যাপারটা কাজে লাগিয়ে থাকেন৷ অর্থাত্ জাতিগত বিভেদের ব্যাপারটা পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী রাজনীতির ক্ষেত্রে সে ভাবে ব্যক্ত হয় না৷ যদিও নির্বাচনী প্রার্থী চয়ন করার ক্ষেত্রে সে রকম ভাবনা অনেক সময়ই কাজ করে থাকে৷ তবে জেতার ব্যাপারটা আম্বেদকর আন্দোলনের পরে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে৷ অনগ্রসরতা বা পিছিয়ে পড়ার সঙ্গে যে বর্ণবিদ্বেষের সম্পর্ক এতই প্রকট হয়ে উঠেছে যে এখন শুধুমাত্র উন্নয়নের স্লোগান দিয়ে নির্বাচন জেতা কঠিন৷ এই বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গেও শুধুমাত্র কথা বলে রাজনীতি করা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়বে৷ গত নির্বাচনে এখানকার ধর্ম নিরপেক্ষ দলগুলিকেও মতুয়া মহাসঙ্ঘের মতো ধর্মীয়-সামাজিক সংগঠনের দ্বারস্থ হতে দেখা গিয়েছে৷
নমশূদ্র সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা আগেও নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন৷ নির্বাচনে মতুয়া মহাসঙ্ঘকে রাজনৈতিক ভাবে সংগঠিত করার প্রচেষ্টার বৈশিষ্ট কী?
এই প্রথম একটা ধর্মীয় সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক ভাবে সংগঠিত করার প্রচেষ্টা দেখা যায়৷ মতুয়া মহাসঙ্ঘ ৬০-এর দশক থেকে ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে তত্পর ছিল৷ ৮০-র দশকে একে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়৷ ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠে নমশূদ্র ও অন্যান্য তফশিলি জাতির মানুষের মধ্যে এটা একটা সামাজিক যোগাযোগ ও আধ্যাত্মিকতার জায়গা তৈরি করে৷ মতুয়া মহাসঙ্ঘের শাখা পশ্চিমবঙ্গের বাইরে মহারাষ্ট্রের মতো জায়গায়ও আছে৷ নমশূদ্রদের মধ্যে যাঁদের বাংলার বাড়িতে পুনর্বাসন হয়েছিল দেশ ভাগের পর, তাঁরাও এই সংগঠনের মাধ্যমে নিজ সম্প্রদায়ের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার সুযোগ পায়৷ ২০০৯-এ নির্বাচনের সময় থেকে প্রথম এদের রাজনৈতিক তাত্পর্য অনুভব করা যায়৷ এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে তফশিলি জাতিগুলির মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ দানা বাঁধে এবং তার এক প্রকার প্রকাশ ঘটতে শুরু করে৷ এই সচেতনতা তৈরি হয় যে তফশিলি জাতির প্রতিনিধিরা পঞ্চায়েতি ব্যবস্থার মাধ্যমে পাওয়ার স্ট্রাকচার বা ক্ষমতার মধ্যে এলেও এঁরা কখনও ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছতে পারেননি৷ ২০০৯-এর নির্বাচনের সময় থেকেই সব রাজনৈতিক দলগুলি মতুয়া মহাসঙ্ঘকে সংগঠিত করতে তত্পর হয়৷ তখন এটা প্রকাশ পায় যে এদের একটা সুবিশাল সামাজিক সংগঠন রয়েছে৷ মতুয়াদের দলে টানবার জন্য তৃণমূল কংগ্রেস ও সিপিআইএম-এর মধ্যে একটা অসম প্রতিযোগিতা শুরু হয়৷ কম্যুনিস্ট পার্টির পক্ষে এটা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের একাত্মতা প্রকাশ করা সম্ভব ছিল না তাদের ধর্মনিরপেক্ষ মার্কসিয় (মার্কসিস্ট) ইডিওলজির জন্য৷ যেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুব সহজেই করতে পারেন৷
| |
মদ্যপান করতেন না। আমিষ খেতেন না। বলতেন, "যারা দুশ্চরিত্র, ঠগ তারা ও সব করে।" সারদা গোষ্ঠীর মহিলা ব্রিগেডের কাছে 'স্যার'-এর ছবিটা ছিল এ রকমই। 'সুদীপ্ত স্যার' তাঁদের বলেছিলেন, তিনি রামকৃষ্ণ মিশনে দীক্ষিত। প্রচারের আলোয় আসতে চান না, নিঃশব্দে কাজ করতে চান। 'মানুষের জন্য' কাজ করতে গিয়েই সুদীপ্ত গড়ে তুলেছিলেন তাঁর বিশ্বস্ত মহিলা-বলয়। এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায় একা নন। সুদীপ্তর চেম্বার ঘিরে থাকতেন প্রায় ৪০ জন মহিলা। এনারাই অফিসের 'গুরুত্বপূর্ণ' কাজ করতেন। এঁদের মধ্যে সর্বাগ্রে ছিলেন তিন জন মণিরত্না রায়, পৌলমী ঘোষ এবং রেশমী লাহিড়ী। তার পরেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল আরও ৬টি নাম। তাঁরা হলেন, অনুত্তমা বসু, পায়েল দত্ত, ববিতা দাস, রাজশ্রী ভট্টাচার্য, চন্দ্রাণী রায় ও মৌমিতা দাস। প্রত্যেকেই সংস্থার বিভিন্ন পদে আসীন। প্রায় ৩০ জন মিলে সামলাতেন অ্যাকাউন্টস। মহিলা ব্রিগেডের সদস্যরাই জানাচ্ছেন, স্যারের কাজ পছন্দ হলে দ্রুত উন্নতি হত। কী রকম? জনসংযোগ ও সাংবাদিকতায় এমএ করে মণিরত্না ম্যাগাজিনে প্রুফ রিডিংয়ের কাজ করতেন। মাস কয়েকের মধ্যেই বছর পঁচিশের মণিরত্না এগজিকিউটিভ পদে আসীন হন। তেমনই রেশমী লাহিড়ী রিসেপশনিস্টের পদ থেকে কয়েক মাসের মধ্যেই ট্রান্সপোর্ট বিভাগের কর্ণধার হয়ে ওড়িশার ব্যবসার দায়িত্ব নেন। রেশমীর কথায়, "পারদর্শিতা দেখিয়েই ওই পদে উঠেছিলাম।" একমত মণিরত্নাও। বিশ্বভারতীতে পড়াশোনার সুবাদে শান্তিনিকেতনে যাতায়াত ছিল তাঁর। তাই কোপাই রিসর্টের সৌন্দর্যায়নের ভার দেওয়া হয় মণিরত্নাকে। "এমডি স্যারের কিছু পছন্দ হলেই কিনে ফেলতে চাইতেন। শান্তিনিকেতনে থাকতে গিয়ে হুট করেই পছন্দ হয়ে যায় কোপাই রিসর্ট। চার কোটি টাকায় সঙ্গে সঙ্গে রিসর্টটি কিনে ফেলেন।" সেই রিসর্ট সাজানোর কাজ পছন্দ হওয়াতেই 'এমডি স্যারে'র পছন্দের তালিকায় চলে যান মণিরত্না। সংস্থার মূল অফিসে সুদীপ্তর চেম্বারের পাশে বসার জায়গা পান তিনি। একই কেবিনে বসতেন সুদীপ্ত ও দেবযানীও। মণিরত্নার নতুন ডিউটি হয়, রাত ৮টা থেকে ভোর ৪টে পর্যন্ত। এই সময়কেই 'পিক আওয়ার্স' বলা হত। রাতেই শাসক দলের সাংসদরা অফিসে আসতেন বলেও জানিয়েছেন মহিলা ব্রিগেডের সদস্যরা। মণিরত্না জানান, কোনও মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক থাকলে সে দিন অফিস ছুটি দিয়ে দেওয়া হত। যে কাশ্মীর থেকে ধরা পড়লেন সুদীপ্ত, সাম্রাজ্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে এক বছর আগেও সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। যথারীতি সঙ্গে ছিলেন দেবযানী, মণিরত্না ও পৌলমী। লালচকের বিলাসবহুল হোটেল 'দ্য ললিত'-এ ওঠেন তাঁরা। জম্মু-কাশ্মীরেও এজেন্ট নিয়োগ করে লগ্নি ও ব্যবসার পরিধি বাড়াতে চাইছিলেন সুদীপ্ত। সংবাদপত্র প্রকাশনার ইচ্ছে ছিল। "না, অসম্ভব এমন শব্দ স্যার পছন্দ করতেন না," বলছিলেন মণিরত্না। এখন বেশ আফশোসই হচ্ছে। মণিরত্না বলেন, "তখন বুঝতে পারলে কী আর...?" আর পৌলমীর কথায়, "আমাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে। এ সব জানলে অন্য কোথাও কিছু না কিছু কাজ ঠিক জুটিয়ে নিতাম।" | |
(মহিলা ব্রিগেডের একাধিক সদস্যের ছবি হাতে থাকা সত্ত্বেও তাঁদের সামাজিক নিরাপত্তার কথা ভেবে তা ছাপা হল না।) http://www.anandabazar.com/26cal1.html |
এদিন সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা হলফনামায় সিবিআই ডিরেক্টর বলেছেন, 'আমি জানাচ্ছি যে, এই দুর্নীতির তদন্ত সংক্রান্ত গত ৮ মার্চের স্ট্যাটাস রিপোর্ট আদালতে পেশ করার আগে আইনমন্ত্রীর আগাম নির্দেশে তাঁকে দেখানো হয়েছিল'। হলফনামায় আরও বলা হয়েছে, আইনমন্ত্রীর পাশাপাশি ওই রিপোর্ট পিএমও এবং কয়লা মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের দুই আধিকারিককেও দেখানো হয়েছিল।এই রিপোর্ট তাঁরা দেখতে চেয়েছিলেন বলেও হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।উল্লেখ্য, ৮ মার্চের স্ট্যাটাস রিপোর্টের বিষয়বস্তু রাজনৈতিক নেতাদের দেখানো হয়েছিল কিনা তা জানাতে গত ১২ মার্চ সিবিআই ডিরেক্টরকে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এরই ভিত্তিতে এদিন হলফনামায় একথা জানান তিনি।একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ২৬ এপ্রিলের স্ট্যাটাস রিপোর্ট তিনি নিজেই অনুমোদন করেছেন এবং তা রাজনৈতিক নেতা বা অন্য কাউকে দেখানো হয়নি।
সিবিআইয়ের এই স্বীকারোক্তির পর এদিন সংসদে সরব হয় বিজেপি সহ বিরোধী দলগুলি। বিজেপি প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর ইস্তফা দাবি করেছে।সিবিআই আদালতে হলফনামা পেশ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই অশ্বিনী কুমার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে ছিলেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমলনাথও। বৈঠকের পর আইনমন্ত্রী দাবি করেন, তিনি কিছু ভুল করেননি।কমলনাথও আইনমন্ত্রীর ইস্তফার দাবি উড়িয়ে বলেছেন, সিবিআইয়ের চূড়ান্ত স্ট্যাটাস রিপোর্ট রাজনৈতিক নেতাদের হাতে আসেনি। তাই এক্ষেত্রে ইস্তফার কোনও প্রশ্ন নেই।
পরিবর্তন - ১
বামেদের বিলে বলা হয়েছিল, আর্থিক দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলাগুলির শুনানি হবে 'ডেজিগনেটেড' আদালতে৷ অর্থাত্ যেখানে অন্যান্য মামলার সঙ্গেই অগ্রাধিকার দিয়ে এই মামলাগুলির বিচার হবে৷ নতুন বিলে এই ধারার পরিবর্তন করে বলা হয়েছে, আর্থিক দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার শুনানি হবে 'স্পেশাল ইকনমিক অফেন্স কোর্টে', যেখানে শুধুমাত্র এই ধরনের মামলারই বিচার হবে৷
পরিবর্তন - ২
বামেদের বিলে বলা হয়েছে, এই ধরনের মামলায় অভিযুক্তদের সম্পত্তি ক্রোক করা যাবে৷ নতুন বিলে অভিযুক্তদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তা বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ আমানতকারীদের মধ্যে বণ্টন করার ক্ষমতা পুরোপুরি রাজ্য সরকারের হাতেই থাকছে৷
পরিবর্তন - ৩
বামেদের বিলে অভিযুক্ত সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সংস্থান ছিল৷ নতুন বিলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার সংস্থান থাকছে৷ শুধুমাত্র কর্ণধারই নয়, ব্যবস্থা নেওয়া যাবে সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও৷
শুধু তা-ই নয়, প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নিজেদের নামে খুব সামান্য সম্পত্তি রেখে বেশিরভাগটাই ঘনিষ্ঠদের নামে সরিয়ে রাখেন চিট কেলেঙ্কারির নায়কেরা৷ তাই নয়া বিলে সেই ঘনিষ্ঠদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও সংস্থান রাখা হয়েছে৷
প্রসঙ্গত, ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির হাত থেকে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ২০০৩-এ বিধানসভায় প্রথম বিল আনে তত্কালীন বাম সরকার৷ অনুমোদনের জন্য তা পাঠানো হয় ততকালীন রাষ্ট্রপতির কাছে৷ ২০০৬-এর এপ্রিলে কেন্দ্রের যুগ্ম সচিব রাজ্যকে চিঠি দিয়ে জানান, বিলটি ত্রুটিপূর্ণ, বিধিসম্মত নয়৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও ২০০৮-এর মার্চে এই সংক্রান্ত নতুন বিল আনে রাজ্য সরকার৷ বিলটি পাঠানো হয় স্ট্যান্ডিং কমিটিতে৷ কমিটির সুপারিশে বলা হয়, ২০০৩-এর বিল প্রত্যাহার না করে ২০০৮-এর বিল আনাটা আইনসম্মত হয়নি৷ স্ট্যান্ডিং কমিটির এই সুপারিশ সত্ত্বেও ২০০৯-এ নতুন বিল পাশ করিয়ে তা পাঠানো হয় রাষ্ট্রপতির কাছে৷ সেই বিল রাজ্যের কাছে ফেরত এসেছে বৃহস্পতিবার৷
আগামী ২৯ এবং ৩০ এপ্রিল জরুরি ভিত্তিতে বিধানসভার অধিবেশন ডেকেছে রাজ্য সরকার৷ সেদিনই বিধানসভায় পেশ হবে নতুন বিল৷
সুমন ঘরাই, এবিপি আনন্দ,
কলকাতা: বিতর্কের মধ্যেই কাজ শুরু করল সারদা কেলেঙ্কারির জেরে এই ধরনের ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থাগুলির কাজকর্ম খতিয়ে দেখার জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শ্যামল সেনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন৷ বিতর্কের কেন্দ্রে স্বয়ং কমিশনের প্রধান শ্যামল সেন৷ একটি অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে৷ সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, তাঁদের অনুষ্ঠানে প্রায়ই দেখা যেত শ্যামল সেনকে৷ যদিও চিট ফান্ড সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে শ্যামল সেনের দাবি, যে কোনও উন্নয়নমূলক কাজকর্মে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হলে তিনি অংশ নেন, বিশেষ কোনও সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কোনও প্রশ্ন নেই৷
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রীর কমিশন গঠনের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই নাম না করে এ ব্যাপারে তাঁকে সতর্ক করে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেব গত বুধবার 'প্রতি পক্ষ' অনুষ্ঠানে বলেছেন, কমিশনের মাথায় চিটফান্ডের সঙ্গে ওঠাবসা আছে, এমন কাউকে যেন বসানো না হয়৷।ইতিমধ্যেই কমিশন গঠনের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রাজ্য সরকার৷ বিরোধীরাও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে, চিট ফান্ড সংস্থার সঙ্গে যোগ আছে, এমন কেউ কমিশনে থাকলে তারা সরব হবে৷ এই পরিস্থিতিতে বিতর্ক এড়িয়ে শ্যামল সেন কমিশন কীভাবে নিজেদের কাজ করে, সেদিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের৷ এদিনই সারদাকাণ্ডের তদন্তের কাজ শুরু করেছে কমিশন৷ শ্যামল সেন জানান, পাঁচ সদস্যের কমিশন গড়া হয়েছে৷ তিনি ছাড়াও একজন প্রাক্তন আইপিএস আধিকারিক রয়েছেন৷ রয়েছেন অর্থনীতিবিদ৷ আরও দু'জনকে নিয়োগ করা হবে৷ ৬ মাসের মধ্যে কমিশনকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে৷ তিনি জানিয়েছেন, কলকাতায় কমিশনের অফিস হচ্ছে রাজারহাটে৷ পাশাপাশি, জেলায় জেলায় খোলা হচ্ছে অফিস৷ সেখানে প্রতারিতরা অভিযোগ জানাতে পারবেন৷
ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করার আগে আলোচনার মাধ্যমে চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের নিষ্পত্তি না হওয়ায় কমিশন সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছে৷ এর মধ্যে অন্যতম বিষয়, নির্বাচনের খরচ৷ কমিশনের বক্তব্য, ভোটের খরচ হিসাবে সরকারের কাছে ২০৯ কোটি টাকা চাওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত মাত্র ১০০ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে৷ এই প্রসঙ্গে সওয়াল করতে গিয়ে এদিন বিমলবাবু বলেন, ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরই নির্বাচনের খরচ দিয়েছিল রাজ্য সরকার৷ এবার এখনও নির্বাচন কবে হবে ঠিক নেই, তা সত্ত্বেও সরকার ইতিমধ্যেই ১০০ কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছে৷ তিনি এ ব্যাপারে বলেন, রাজ্যের প্রতিটি মানুষ জানে সরকারের আর্থিক সঙ্কট চলছে৷ কমিশনও অস্বীকার করতে পারে না যে তারা এই বাস্তব সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়৷ তাঁর এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মন্তব্য করেন, প্রতিদিন সকালে কাগজ খুললেই দেখা যায় রাজ্য সরকার কিছু না কিছুর উপর কর বসাচ্ছে, তা হলে ভোটের খরচের জন্য অর্থ সংস্থান করতে নির্বাচন কর বসবে না কেন? জবাবে অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, এটি একটি অভূতপূর্ব ভাবনা৷ এমনকী, সুপ্রিম কোর্টও কখনও এ রকম ভাবেনি৷ বিচারপতি বলেন, যা কখনও ভাবা হয়নি মানে এই নয় যে এখন তা ভাবা হবে না৷
বৃহস্পতিবারও টানা দু'ঘণ্টা সওয়াল করেন কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্য পাল৷ এদিন তাঁর সওয়াল শেষ হয়েছে৷ এদিনের সওয়ালে তিনি আবারও দাবি করেন, পঞ্চায়েত ভোটের ব্যাপারে প্রথম থেকেই রাজ্য সরকার অসহযোগিতা করছে৷ অ্যাডভোকেট জেনারেল এদিন তাঁর সওয়াল শুরু করে দাবি করেন, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উভয়েই চায়৷ কিন্তু কমিশনের আইনজীবী এমন সওয়াল করেছেন, যাতে মনে হচ্ছে দুই তরফের মধ্যে যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে৷ অ্যাডভোকেট জেনারেলের প্রশ্ন, কমিশনের দাবিমতো আলোচনাই যদি না হয়ে থাকে তবে দুই তরফের মধ্যে এত চিঠি চালাচালি এবং বৈঠক কী করে হল? তিনি বলেন, কমিশনের পক্ষ থেকে বরাবরই ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়া হচ্ছে৷ কিন্ত্ত কেন ৮০০ কোম্পানি সেটা কোথাও নির্বাচন কমিশন থেকে ভেঙে বলা হচ্ছে না৷ কেন ৭০০ কোম্পানি নয়, কেনই বা এক হাজার কোম্পানি নয়? কমিশনের পক্ষ থেকে প্রতি বুথে দু'জন করে সশস্ত্র পুলিশ চাওয়া হয়েছে৷ তাঁর প্রশ্ন, কেন প্রতি বুথে পাঁচ জন করে সশস্ত্র পুলিশ নয়? কমিশনের কাছে তার কোনও সদুত্তর নেই৷
সিবিআইকে পাঠানো সুদীপ্ত সেনের চিঠি এক তৃণমূল শীর্ষনেতার নির্দেশেই লেখা বলে অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। তাঁর মতে, এভাবে কয়েক জনকে বলির পাঁঠা করেই তৃণমূলের সর্ব্বোচ্চ নেতৃত্ব বাঁচতে চাইছে। চব্বিশে এপ্রিল সুদীপ্ত সেনের চিঠি প্রকাশিত হয় সংবাদ মাধ্যমে। অথচ চিঠির বয়ান যে তাঁর অজানা নয়, তা দিন চারেক আগেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মুকুল রায়।
সিবিআইকে পাঠানো চিঠিতে সুদীপ্ত সেন লিখেছেন মিডিয়া ব্যবসাতে আসাটাই তাঁর শেষের শুরু। সারদা গোষ্ঠীর মিডিয়া বিভাগের কর্মীদের বেতন হচ্ছিল না গত কয়েকমাস যাবত্।
সারদা গোষ্ঠীর মিডিয়া বিভাগের সিইও তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ যুক্ত ছিলেন তৃণমূলেরই আরেক সাংসদ সৃঞ্জয় বসুর মালিকানাধীন দৈনিক সংবাদপত্রে। গত ফেব্রুয়ারিতে আচমকাই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
এটা যে হিমশৈলের চূড়া তা স্পষ্ট হতে থাকে পরবর্তী সময়ের ঘটনাবলীতে। সারদার মালিক সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন তারা চ্যানেলের কর্মীরা।
সপ্তাহ দুয়েক আগে সেই তারা চ্যানেলের কর্মীদের সমবায় গড়ে দিয়েছেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। ছয়ই এপ্রিল সুদীপ্ত সেন সিবিআইকে চিঠি পাঠানোর পরে ওই সমবায় গঠন হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। সারদার মালিকানাধীন একটি উর্দু দৈনিক দেখভালের দায়িত্ব পেয়েছেন মুকুল রায়ের ছেলে তৃণমূল বিধায়ক শুভ্রাংশু রায়। জানা যাচ্ছে সেটাও হয়েছে সুদীপ্ত সেন কলকাতা থেকে গা ঢাকা দেওয়ার পর।
সিবিআইকে লেখা সুদীপ্ত সেনের চিঠি সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয় চব্বিশে এপ্রিল। কিন্তু চিঠিতে কী আছে, সেটা যে তাঁর জানা বিশে এপ্রিলই সেটা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক।
তবে কি বিরোধী দলনেতার তোলা অভিযোগটাই সত্যি? সত্যিই কি রাঘববোয়ালদের আড়াল করতেই সুদীপ্তকে দিয়ে সিবিআইয়ের কাছে চিঠি লেখানো হয়েছিল? এখন এই নিয়েই প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে।
চায়ের দোকানি শিবু দাবি করলেন, হিমাঙ্গিনীর নামে যে স্টুডিও সেখানে রয়েছে, সেটি সম্প্রতি রোজভ্যালি কিনে নিয়েছে৷ তবে হিমাঙ্গিনীর নাম মুছে রোজ ভ্যালির বোর্ড এখনও লাগানো হয়নি৷
সারদাকাণ্ডের পরেই এমন ঘটনা? তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে অটোচালক মহম্মদ ইউসুফের জবাব, 'মঙ্গলবার শেখ নুরুল নামে একজন আত্মহত্যা করেছে৷ মুদির দোকান চালিয়ে আশি হাজার টাকা সারদায় রেখেছিল৷ আত্মহত্যা ছাড়া কী করবে?'
কিন্তু বোর্ড লাগানো আর সম্প্রতি তা খুলে নেওয়ার ব্যাপারটা কী? ব্যাখ্যা করলেন এক চায়ের দোকানের কর্মী শিবু৷ যাঁরা হিমাঙ্গিনী ইনফ্রাকনে বিনিয়োগ করতে যান তাঁদের ওই জমি ও বিভিন্ন প্রকল্পের গল্প শোনায় হিমাঙ্গিনীর কর্তৃপক্ষ ও সংস্থার এজেন্টরা৷ বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করার জন্যই অত বোর্ড লাগানো ছিল৷ অনেকেকে তাদের জমিতে বোর্ড লাগানোর জন্য ভাড়া দিত, অনেকের জমিতে আবার জোর করেই সে সব লাগিয়েছিল হিমাঙ্গিনী৷ কিন্তু গত কয়েকদিনে পরিস্থিতি অনেক বদলেছে৷ অন্তত ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ বোর্ড খুলে ফেলা হয়েছে৷ এখনও অবশ্য বেশ কিছু আছে৷ অনেক জমি বিক্রিও হয়ে গিয়েছে৷
স্থানীয় অধিবাসীদের অনেকের বক্তব্য, বিশাল জমির মধ্যে ছোট এক টুকরো জমি কিনে সেখানে বোর্ড ঝুলিয়েছে হিমাঙ্গিনী যাতে সাধারণ মানুষের মনে হয় পুরো জমিটা তাদেরই৷ কোথাও কোনও পাঁচিল নেই৷
সদরহাটের কাছে রফিক মণ্ডলের বিঘে কুড়ি জমির মধ্যে দেড় কাঠা কিনেছে হিমাঙ্গিনী৷ তাঁর কথায়, 'আমি তো জানি যে সব জমিই আমার৷ কেউ যদি লোকের কাছে নিজের বলে দাবি করে আনন্দ পায় পাক না! জমি তো আর দখল করছে না৷'
স্থানীয় গৌরাঙ্গ সরকারের কাছে কাঠা দশেক জমি কিনতে চাওয়ায় তিনিও বোর্ড লাগানো জমির কাছে নিয়ে গিয়ে মোটামুটি একই কথা বলেন৷ এই এলাকায় জমির ব্যবসা যে রমরমিয়ে চলছে বা বোঝা গেল দুই অটোচালকের সঙ্গে কথা বলে৷ তিন চার কাঠা থেকে এক লপ্তে নব্বই বিঘা পর্যন্ত জমি তাঁরা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন জায়গায় জমিও দেখান৷ মধ্যমগ্রাম ও দোলতলাতেও জমির সন্ধান দেন৷ দুই অটোচালকই জানান অনেক জায়গাতেই এক লপ্তে জমি কিনলেও পরে সেগুলি হিমাঙ্গিনী বিক্রি করে দেয়৷
এত খোঁজ বিনিয়োগকারীরা নেন না৷ তাই তাঁদের মনে হয় যে ওই এলাকার প্রায় সব জমিই সংস্থাটির দখলে৷ জমির দাম লাফিয়ে বাড়ছে, তাই বিপুল রিটার্ন পাওয়া অসম্ভব নয়৷ কারণ এক দশকে এই এলাকার জমির দাম চার থেকে পাঁচগুণ বেড়েছে৷
হিমাঙ্গিনীর প্রতিটি বোর্ডেই ফোন নম্বর রয়েছে৷ প্রথম নম্বরে ফোন ধরে নিজের নাম তারক বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি৷ সাংবাদিক শুনে অফিসে দেখা করতে বলেন৷ কিন্ত্ত রিশেপশনিস্ট রুমি জানান বিনা অ্যাপয়েন্টমেন্টে দেখা হবে না৷ দ্বিতীয় নম্বরে ফোন করে সাংবাদিক বলতেই তিনি বলেন অসুস্থ, ফোন কেটে দেন৷ সংস্থার অন্যচম ট্রাস্টি সুজিত ঘোষ বলেন অভিযোগ থাকলে পুলিশে জানাতে, তারাই তদন্ত করে ব্যবস্থা করবে৷ তা ছাড়া লোকে ভুল বুঝলে সে দায়িত্ব তাঁদের নয়৷ তবে বিনিয়োগকারী পরিচয়ে কাজ হয়৷
অমরাবতী থেকে বাঁদিকে না গিয়ে সোজা কয়েক কিলোমিটার গিয়ে সাহারপুর থেকে কয়েকশো মিটার; স্টপেজের নাম লোকমুখে হিমাঙ্গিনী হয়ে গিয়েছে৷ বিনিয়োগকারী শুনে সংস্থার সেলস ম্যানেজার সফিজ উদ্দিন 'প্রেফারেন্স শেয়ার'-এর ব্রোশিওরে নিজ হাতে নাম ও মোবাইল নম্বর লিখে দিয়ে বলেন, 'আমাদের মোবিল কারখানা ও পানীয় জল সমেত বেশ কিছু প্রকল্প রয়েছে৷ এ ছাড়া হোটেল আবাসন এ সব রয়েছে বাঁকুড়া-বীরভূম প্রভৃতি জায়গায়৷ যাঁরা বেশি বিনিয়োগ করেন তাঁদের আমরা প্রকল্প ঘুরিয়ে দেখাই৷ দূর থেকে আসা অতিথিদের থাকার ব্যবস্থাও আছে অফিস লাগোয়া বড়িতে৷ দু'টো ডাল-ভাত খাওয়ার ব্যবস্থাও আছে৷'
জমি জালিয়াতি অবশ্য জেলায় এই প্রথম নয়৷ বারাসতের কাছে হৃদয়পুরেও একই ঘটনা ঘটেছিল৷ ওয়ারিশ নামে একটি সংস্থা একই ভাবে হোর্ডিং দিয়েছিল৷ তিন বছর ধরে টাকা তুলে ২০১০ সালে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে তারা বেপাত্তা হয়ে যায়৷ তবে ছোট সংস্থা হওয়ায় শ'পাঁচেকের বেশি লোককে তারা ঠকাতে পারেনি৷ ওয়ারিশও চিট ফান্ডের নামে টাকা তোলে৷
মুর্শিদাবাদে এ ভাবেই চাষের জমিতে হোর্ডিং দিয়েছিল 'বঙ্গদিশা'৷ কিন্ত্ত জালিয়াতি প্রকাশ হতেই পাততাড়ি গোটান প্রোমোটার সুকুর আলি৷ অভিযোগ বারাসতে তিনিই গ্রিন ওয়ার্ল্ড নামে টাকা তোলার ব্যবসা ফেঁদেছেন৷ কেম্পানি দু'টির আইডেন্টিফিকেশন নম্বরও এক৷ ফোনে যোগাযোগ করা হলে অবশ্য সুকুর আলি অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং ফোন লাইন কেটে দেন৷
অন্যের জমিতে ব্যানার লাগিয়ে, সেই জমিতে হোটেল ও রিসর্ট বানানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়ে টাকা তোলার অভিযোগ রয়েছে রোজ ভ্যালির বিরুদ্ধে৷
শিলিগুড়ির সেবক রোডে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের বাসের ডিপোর অদূরে বেসরকারি সংস্থার কর্মী সমিত গোস্বামীকে একটি জমি দেখান রোজ ভ্যালির এক এজেন্ট৷ এক লপ্তে ছ'একর ওই জমিতে রোজভ্যালি হোটেল অ্যান্ড রিসর্টের বোর্ড লাগানো ছিল৷ ওই জমিতে সংস্থার রিসর্ট করার পরিকল্পনার কথা জানান এজেন্ট৷ কয়েক দিন পরে সমিতকে ওই একই জমি বিক্রি করতে চান শিলিগুড়ির প্রধাননগরের এক বাসিন্দা৷ তিনিই সমিতকে বলেন, প্রতি বছরে কুড়ি হাজার টাকার বিনিময়ে তাঁর জমিতে রোজ ভ্যালিকে ওই ব্যানার তিনি লাগাতে দিয়েছেন৷ সমিত যদি সত্যিই আগ্রহী হন তবে রোজভ্যালির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ব্যানার খুলে দেবেন, সমিতকে ওই জমি বিক্রি করে দেবেন৷
স্বভাবত, এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে শাসক শিবিরে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, তৃণমূল কংগ্রেস সারদা কেলেঙ্কারি থেকে নিজেদের দুরত্ব করতে চাইছে। সেই কারণেই, কুনাল ঘোষ সহ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত অন্যান্য নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দলের একাংশই সক্রিয়। কুনাল ঘোষ যদিও তাঁর বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবী করেছেন। তাঁর বক্তব্য, তিনি কেবলমাত্র চ্যানেলের সম্পাদকীয় বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন, আর্থিক কোনও দায় তাঁর ছিল না। কাজেই, কর্মীদের বেতন হওয়া বা না হওয়াতে তাঁর কোনও হাত নেই।
উল্লেখ্য, সারদা কেলেঙ্কারির জেরে বিক্ষিপ্তভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন প্রথম সারির নেতা, মন্ত্রী, সাংসদের নাম জড়ালেও এই প্রথম কারওর বিরুদ্ধে লিখিত এফআইআর দায় হল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ এখন কুনাল ঘোষদের গ্রেপ্তারের জন্য সক্রিয় হয় কিনা সেটাই এখন জানার।
চিটফান্ডে প্রতারিতদের জন্য তহবিল তৈরি হবে সিগারেটের ওপর বসানো বাড়তি করের টাকায়। সে জন্য বুধবার রাজ্যবাসীকে আরও বেশি করে ধূমপানের পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি আবার রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীও। ধূমপানের পক্ষে তাঁর এই মন্তব্যে বিস্মিত সকলেই।
চিট ফান্ডের শিকারদের জন্য ত্রাণ তহবিল গড়ছে রাজ্য৷ জানিয়েছেন বাড়তি অর্থ সরকার সংগ্রহ করবে সিগারেটের ওপর দশ শতাংশ কর বাড়িয়ে। বাড়তি কর সংগ্রহের লক্ষ্যে কিছুটা হালকা চালেই মানুষকে বেশি করে ধূমপান করারও নিদান দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পরই সমালোচনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
সিগারেট এবং অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্য বিরোধী আইনে সিগেরেটের প্রচার ও বিজ্ঞাপণের ওপর পরিষ্কার বিধিনিষেধ রয়েছে। তাই ধূমপানের দৃশ্য থাকলে সিনেমাতেও বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ দেখানো হয়৷ বিশ্বজুড়েই চলছে এই তামাক বিরোধী প্রচার। এরাজ্যেও সম্প্রতি স্বাস্থ্যদফতরের তরফে গুটখা-পানমশলার মতো চেবানো তামাকের নিষিদ্ধকরণের বিজ্ঞন্তি জারি হয়েছে৷ ঠিক সেই সময়, লঘূচালে হলেও ধূমপানের পক্ষে মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সওয়াল অস্বস্তিতে ফেলেছে স্বাস্থ্য আধিকারিকদেরও।
ধৃত দেবযানীর পরিবার তাঁকে সারদার সামান্য একজন বেতনভুক কর্মী বলে দাবি করলেও এদিন ধৃতদের হয়ে আদালতে উপস্থিত ছিলেন প্রায় তিন ডজন আইনজীবী৷ যাঁদের একটা বড় অংশই সওয়াল করেন দেবযানীর হয়ে৷ পুলিশ ইতিমধ্যে দেবযানীর চারটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করেছে৷ সব মিলিয়ে এক কোটি টাকার উপরে উদ্ধার হয়েছে সেই অ্যাকাউন্টগুলি থেকে৷ পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট ও বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগের হদিশ পেয়েছে৷ এদিন আলিপুর আদালত থেকে আইনজীবীরা এসে ভিড় জমান বিধাননগর আদালতে৷ দেবযানী সারদার ঘটনায় কোনও ভাবেই জড়িত নয় বোঝাতে সেই আইনজীবীরা দীর্ঘ ক্ষণ সওয়াল করেন৷ এজলাসে তখনই ফিসফাস, গুঞ্জন আইনজীবিদের লম্বা লাইন নিয়ে৷ ইতিমধ্যে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতে সুদীপ্ত সেনের সঙ্গেই উঠে এসেছে দেবযানীর নামও৷ তাঁর জামিনের আবেদন করতে এত আইনজীবীর দাঁড়ানো নিয়ে আদালতের বাইরেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপস্থিত জনতা৷
এদিন ধৃতদের আদালতে পেশ করা নিয়ে চড়ান্ত গন্ডগোলের আশঙ্কা ছিল পুলিশের৷ যদিও আদালত চত্বরে যুব কংগ্রেসের দফায় দফায় বিক্ষোভ আর লাঠি হাতে তাদের সরিয়ে দেওয়া ছাড়া পুলিশকে বড় কোনও হ্যাপা সামলাতে হয়নি৷ বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টার একটু আগে পুলিশ ভ্যানে চাপিয়ে ধৃত তিন জনকে আনা হয় আদালতে৷ বেলা দুটোয় বিচারক এএইচএম রহমানের এজলাসে তখন তিল ধারণের জায়গা নেই৷ একে একে সুদীপ্ত ও অরবিন্দকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় জাল ঘেরা কুঠুরিতে৷ দু'জন মহিলা পুলিশ কর্মীর সঙ্গে ওড়নায় মুখ ঢেকে আনা হয় দেবযানীকে৷ কুঠুরিতে না ঢুকিয়ে তাঁকে সোজা নিয়ে যাওয়া হয় একেবারে বিচারকের সামনে৷ সেখানে মুখের ঢাকনা সরিয়ে আইনজীবীদের সওয়াল জবাব শুনছিলেন স্বাভাবিক মুখ করেই৷ কুঠুরিতে তখন বিধ্বস্ত সারদার 'স্যার৷'চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ৷
প্রায় দু'ডজন আইনজীবীর অধিকাংশই তখন দেবযানীর জমিনের জন্য সওয়াল করছেন৷ তাঁদের যুক্তি, দেবযানী সারদার বেতনভুক কর্মী মাত্র৷ মালিক বেতন না দেওয়ায়, তার দায় অন্য একজন বেতনভুক কর্মীর ঘাড়ে দেওয়া যায় না৷ সরকারি আইনজীবী বলেন, শুধু বেতন বন্ধই নয়, ওই সংস্থায় বেশ বড় কিছু আর্থিক গরমিল রয়েছে৷ পুলিশ ওই সংস্থার বেশ কয়েকটি অফিস থেকে বেশ কিছু কাগজপত্র বাজেয়ান্ত করেছে৷ আরও কয়েকটি জায়গায় তাদের নিয়ে তল্লাশি চালান দরকার৷ তাই ধৃতদের পুলিশ হেফাজতে চেয়েছে৷ আইনজীবীদের বক্তব্য শোনার পর বিচারক নির্দেশ শোনানোর আগেই দেবযানী, সঙ্গী পুলিশ কর্মীদের জানান তিনি অসুস্থ বোধ করছেন৷ তখনই তাকে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়৷ শেষ পর্যন্ত বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ শ'দুয়েক পুলিশের নিরাপত্তায় বের করে নিয়ে যাওয়া হয় আদালত থেকে৷ পিছন থেকে তখন অশ্রাব্য ভাষায় আক্রমণ আমানতকারী ও পথচারীদের সারদার ধৃতদের৷
কোল-গেট কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআই-এর রিপোর্ট গতমাসেই পাঠানো হয়েছিল কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অশ্বিনী কুমারের কাছে। আর সুপ্রিমকোর্টে সিবিআই-এর ডিরেক্টর রঞ্জিত সিনহার পেশ করা এফিডেফিট থেকে এই তথ্য প্রকাশ্যে এল।
এই এফিডেভিট থেকে আরও জানা গেছে কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রক ও প্রধানমন্ত্রীর অফিসেও একমাস আগেই পৌঁছে গিয়েছিল কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআইয়ের রিপোর্ট।
এই এফিডেভিটে আইনমন্ত্রীর কাছে পেশ করা রিপোর্ট এবং সিবিআইয়ের অন্তিম রিপোর্ট উভয়ই রয়েছে।
মূল রিপোর্টটি কোনও ভাবে প্রভাবিত হয়েছে কী না তা পরীক্ষা করতে উভয় রিপোর্টই খতিয়ে দেখতে পারে শীর্ষ আদালত।
এখনও পর্যন্ত কোল কেলেঙ্কারি তদন্তে কত খানি অগ্রগতি হয়েছে তারও বিস্তারিত তথ্য রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা এফিডেভিটটিতে।
বিজেপি সহ অনান্য বিরোধী দল গুলি কোলগেট কেলেঙ্কারির সিবিআই তদন্তকে প্রভাবিত করার অভিযোগে গত কয়েকদিন ধরেই কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছে।
বাজেট অধিবেশনে এই নিয়ে বিরোধীদের বিক্ষোভে মুলতুবিও হয়েছে সংসদের উভয় কক্ষ।
কুনাল ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের পার্ক স্ট্রিট থানায়
সারদা প্রধান সুদীপ্ত সেন সহ তৃণমূল সাংসদ কুনাল ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হল পার্ক স্ট্রিট থানায়। বৃহস্পতিবার রাতে ওই অভিযোগটি দায়ের করেন সারদা গোষ্ঠীর একটি টেলিভিশ চ্যানেলের কর্মীরা।
তাঁদের অভিযোগ, সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারির জেরে গত তিন মাস ধরে ওই সংস্থার বেতন বন্ধ। বার বার তাদের মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া জন্য ওই চ্যানেলের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছেন কর্মীরা। দুই শীর্ষ কর্তা ছাড়াও সংস্থার আরও বেশ কয়েকজন আধিকারিকের বিরুদ্ধে কর্মীরা অভিযোগ দায়ের করেছেন।
নয়াদিল্লি: সারদাকাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিলেন তৃণমূলেরই সাংসদ তাপস পাল৷ রাজ্যজুড়ে চিটফান্ডগুলির কার্যকলাপের কথা তিনি জানতেন না, মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে এই 'সাফাই' দেওয়ার চেষ্টা হলেও তাপসবাবুর বক্তব্য, তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্রের অন্তর্গত এলাকায় চিটফান্ডের বাড়বাড়ন্ত দেখে তিনি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রককে ২০১০ সালেই চিঠি লিখেছিলেন এবং সেই চিঠির কথা জানতেন তাঁর দলনেত্রীও৷
সারদাকাণ্ড ঘিরে তোলপাড় রাজ্য৷ লক্ষ-লক্ষ মানুষ প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ তুলছেন৷ অনেকেই কাঠগড়ায় তুলছেন তৃণমূল নেতাদের একাংশকে৷ তাঁদের দাবি, শাসক দলের নেতাদের যোগ রয়েছে দেখেই তাঁরা সারদায় লগ্নি করেছেন৷ তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ, সৃঞ্জয় বসু, মন্ত্রী মদন মিত্র সমেত তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতার নামও জড়িয়েছে৷ কোটি কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে ঘরে-বাইরে সমালোচনায় চরম অস্বস্তিতে তৃণমূল সরকার৷এই প্রেক্ষাপটে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ ও অভিনেতা তাপল পালের দাবি, এলাকায় চিটফান্ডের রমরমার খবর অনেকদিন ধরে আসতে থাকে৷ ২০১০ সালে তদানীন্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে চিঠিও লেখেন তিনি৷ তাপসবাবু বলেছেন, তাঁর চিঠির বিষয়বস্তুই ছিল, চিটফান্ডের রমরমা রুখতে ব্যবস্থা নিক কেন্দ্র৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর সেই চিঠির পাঠানোর খবর জানতেন৷ রাজনৈতিক মহলের অভিমত, তাপসবাবুর বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সরকারের অস্বস্তি আরও বাড়বে।এদিকে, সারদাকাণ্ডে রাজ্য সরকারকে একহাত নিয়েছেন একদা শাসক দল ঘনিষ্ঠ এসইউসি-র সাংসদ তরুণ মণ্ডলও৷
তবে তাপসবাবুর চিঠি দেওয়ার ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে৷ সারদা কেলেঙ্কারির প্রায় তিনি বছর আগে তিনি চিঠি লেখেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের কাছে৷ আর ৯ মাস আগেই রাজ্য পুলিশের পদস্থ কর্তা নজরুল ইসলামও খোদ স্বরাষ্ট্রসচিবকে চিঠি লিখে ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির কুর্কীতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছিলেন৷ তাই সঙ্গত কারণেই নানা মহলের প্রশ্ন, এরপরও মুখ্যমন্ত্রী বলবেন, তিনি আগে কিছুই জানতেন না? এতদিন ধরে চিটফান্ডগুলির রমরমা বাড়লেও কেন ব্যবস্থা নিল না রাজ্য সরকার?
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36073-2013-04-26-11-26-38
No comments:
Post a Comment