মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে ইতিমধ্যেই সারদার মতো টাকা আদায়কারী আর্থিক সংস্থাগুলির কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা করেছেন কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রী শচীন পাইলট৷ সারদা ছাড়া অন্য সংস্থাগুলির টাকা তোলা কী ভাবে বন্ধ করা যায় তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে৷ চিট ফান্ডগুলির জালিয়াতি নিয়েও কথাবার্তা হয়েছে৷ শুধু পশ্চিমবঙ্গের অন্তত দু'ডজন গ্রুপের ৭৩টি কোম্পানির বিরুদ্ধে পনজি স্কিম চালানোর অভিযোগ এসেছে কেন্দ্রীয় কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকে৷
সেবি প্রাথমিক ভাবে দেখছে যে সংস্থাগুলি সিআইএস-এর নিয়ম লঙ্ঘন করেছে কিনা৷ পরবর্তী সময়ে সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, দুর্নীতিদমন শাখার মতো প্রতিষ্ঠানগুলিকেও তদন্ত করার কথা বলা হতে পারে৷ দুর্নীতিদমন শাখা ও আয়কর বিভাগ ইতিমধ্যেই নিজেদের মতো করে তদন্ত শুরু করেছে৷ এ ব্যাপারে তারা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতো অন্য নিয়ামক সংস্থাগুলিরও সহায়তা চাইতে পারে৷
সরল-সাধাসিধে লোকজনের থেকে টাকা তোলা সংস্থাগুলির কোনওটিই চিট ফান্ড সংস্থা হিসাবে পঞ্জিকৃত নয়, তবে সংস্থাগুলি সাধারণ ভাবে চিট ফান্ড (Chit Fund) নামে পরিচিত৷
ছোট গোষ্ঠীর মধ্যে (সর্বাধিক ৪৯ জন) টাকা তোলা, তা একত্র করা ও নিদেরে মধ্যে তা থেকে ঋণ নেওয়া এবং সেই ঋণ কিস্তিতেই শোধ করা- এই হল চিট ফান্ডের নিয়ম৷ কিন্ত্ত আমানত সংগ্রহকারী সংস্থাগুলো চিটফান্ডের নামে হাজার হাজার লোকের থেকে আমানত সংগ্রহ করে, পরিবর্তে বিপুল রিটার্নের লোভ দেখায়৷ তাদের টাকা গাছ, আলু, এমুপাখি, ছাগল চাষে বিনিয়োগ করে কী ভাবে বিপুল রিটার্ন আসে সে কথা সরল-সাধাসিধে গ্রামের মানুষকে বুঝিয়ে এজেন্টরা টাকা সংগ্রহ করে৷
এই ধরনের সংস্থাগুলিতে তদন্তের জন্য এসএফআইও-র অধীনে ইতিমধ্যেই বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করেছে মন্ত্রক৷ তদন্ত শুরু করে তারাও অন্য নিয়ামকের সাহায়তা নিচ্ছে৷ 'বৃহত্তর জনস্বার্থ' জড়িত থাকাতেই এই সিদ্ধান্ত৷ এই ধরনের সংস্থাগুলো লগ্নির টাকা তছরুপ করতে পারে ও প্রোমোটাররা সংস্থা গুটিয়ে নিতে পারে বলে মনে করছে মন্ত্রক৷
আপাতত যে ছবি দেখা যাচ্ছে তাতে এ কথা স্পষ্ট যে অর্থগৃধ্নু সংস্থাগুলির জালিয়াতির মৃগয়াভূমি হল পশ্চিমবঙ্গ এবং অসম ও ত্রিপুরার মতো উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি৷ এই অঞ্চলের এনআরআইদেরও শিকারও এই এলাকার লোকজনই৷ সারদা গ্রুপের অধীনেই অন্তত ১০০টি কোম্পানির নাম পঞ্জিকৃত রয়েছে৷ এর মধ্যে ১০টি সংস্থার বিরুদ্ধে পনজি স্কিম চালানোর অভিযোগ রয়েছে৷ সারদাকে সবক'টি স্কিম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সেবি৷
মানুষকে বোকা বানাতে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে নামে-বেনামে অজস্র অ্যাকাউন্ট খুলতেন সারদাকর্তা৷ কিন্ত্ত সেই অ্যাকাউন্টে খুব সামান্য টাকাই রাখতেন৷ অ্যাকাউন্টে টাকা নেই জেনেও পাওনাদারদের হাতে সেই ব্যাঙ্কের চেকই তুলে দেওয়া হত৷ ফলে অবধারিত ভাবেই বাউন্স করত সেই চেক৷ সারদার এ হেন চেক পেয়ে প্রতারিত হয়েছেন কয়েক লক্ষ মানুষ৷ সুদীপ্ত সেনকে জেরা করে গোয়েন্দা অফিসারেরা এখনও পর্যন্ত যে-সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিস পেয়েছেন, তার বেশিরভাগই আসলে ভুয়ো৷ দীর্ঘদিন ধরে সেই সব অ্যাকাউন্টে কোনও টাকাই জমা পড়েনি৷ কোনও কোনও অ্যাকাউন্টে মাত্র ১০-১৫ হাজার টাকা পড়ে রয়েছে৷ হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি যে সংস্থার, তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের এমন দশা দেখে বিস্মিত তদন্তকারীরাও৷ পুলিশের দৃঢ় ধারণা, পাওনাদারদের ঠকানোর জন্যই পরিকল্পিত ভাবে এই সব ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল৷ বিধাননগর পুলিশের গোয়েন্দা-প্রধান অর্ণব ঘোষের বক্তব্য, 'এখনও পর্যন্ত আমরা সারদার ১০০টি ব্রাঞ্চের ২০০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পেয়েছি৷ তার মধ্যে ২৫টি রাজ্যের বাইরে৷ ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে৷'
সুদীপ্তকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন, সারদার এমন এক প্রাক্তন কর্মকর্তা, এমনকী অনেক সাধারণ কর্মী জানাচ্ছেন, পাওনাগণ্ডা মেটানোর সময়ে কোনও দিন কারও সঙ্গে বিবাদে যেতেন না 'সেন স্যার'৷ গত কয়েক বছরে সারদা রিয়েলটি সংস্থা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বিষ্ণুপুর, পূর্ব মেদিনীপুর কাঁথি-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে কয়েক হাজার বিঘা জমি কিনেছে৷ জমি কেনার জন্য সুদীপ্ত ভরসা করতেন দালালদের উপরেই৷ দালালরা জমির যে দাম ধার্য করে দিত, সেটাই একবাক্যে মেনে নিতেন সারদার সর্বময় কর্তা৷ বাড়ি তৈরির জন্য যে সব ঠিকাদারকে দায়িত্ব দিতেন, তাঁদের সঙ্গেও দর কষাকষি করতেন না৷ নির্ধারিত সময়েই পাওনাদারদের হাতে চেক তুলে দেওয়া হত৷ কিন্ত্ত চেক নিয়ে গিয়ে একবারে ব্যাঙ্ক থেকে ভাঙাতে পেরেছেন, এমন ভাগ্যবান সামান্যই! বিষ্ণুপুরের সারদা সিটিতে গত দু'বছর ধরে বাড়ি তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন গোপালনগর এলাকার এক প্রোমোটার৷ তৃণমূল ঘনিষ্ঠ ওই প্রোমোটারও জানাচ্ছেন, সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকে তাঁর পাওনা দাঁড়িয়েছে ৩৫ লক্ষ টাকা৷ তিন-তিন বার সারদার অফিস থেকে চেক হাতে পেয়েও ভাঙাতে পারেননি৷
সারদার এজেন্ট এবং সাধারণ গ্রাহকরাও একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন৷ গত জানুয়ারিতে সারদা থেকে ১০ হাজার টাকার চেক পেয়েছিলেন হাওড়ার উলুবেড়িয়ার বাসিন্দা জামশেদ আলি৷ পেশায় সব্জি-বিক্রেতা জামশেদের কথায়, 'ব্যাঙ্কে চেক জমা দেওয়ার পরেই সেটা বাউন্স করে৷ এজেন্টকে বলায় সে জানায়, বোধহয় ভুল করে অন্য চেক চলে এসেছে৷ পরে আরও একটা চেক দেওয়া হয়৷ কিন্ত্ত সেটাও বাউন্স করেছে৷'
সারদা-কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পর সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে রাজ্যের বিভিন্ন থানায় যে সব অভিযোগ জমা পড়ছে, তার অধিকাংশ চেক-বাউন্স সংক্রান্তই৷
রীতিমতো সর্ষের মধ্যেই ভূত৷ খোদ মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের কর্মীই কি না মাসমাইনে পেতেন সারদার টিভি চ্যানেল থেকে! পাশাপাশি তাঁকে বেতন দিয়েছে রাজ্য সরকারও৷ প্রতারক অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে রাজ্য জুড়ে বিতর্কের মধ্যেই সামনে এসেছে এ হেন অভাবনীয় অভিযোগ৷
খাতায়-কলমে সারদা সংস্থার কর্মী দয়াল সাহা গত কয়েক বছর ধরেই প্রতি মাসে ৪৮ হাজার টাকা পেয়েছেন সুদীন্ত সেন নিয়ন্ত্রিত টিভি চ্যানেল থেকে৷ সারদা গ্রুপের গাড়িতেই যাতায়াত করেছেন৷ আবার সেই চাকরি না-ছেড়েই কাজ পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সচিবালয়েও৷ মুখ্যমন্ত্রী কলকাতার বাইরে গেলেও তাঁর সফরসঙ্গী হিসাবে দেখা গিয়েছে দয়ালবাবুকে৷ মাঝেমধ্যে সারদার টিভি-চ্যানেলে ছবি সরবরাহ করলেও চ্যানেলের অফিসে যেতে হত না তাঁকে৷ তবে নিয়মিত মাইনে পেয়েছেন৷ পাশপাশি মুখ্যমন্ত্রীর ভিডিও ক্যামেরাম্যান হিসাবে সরকারের কাছ থেকেও মাসে-মাসে ২০ হাজার টাকা বেতন তুলেছেন৷ এ-সব তথ্য অস্বীকারও করছেন না দায়লবাবু৷ এবং বিব্রতও নন বিন্দুমাত্র৷
যেমন বিব্রতবোধ করছেন না শঙ্কুদেব পণ্ডাও৷ একের পর এক বিতর্ক সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রীর বরাবরের আস্থাভাজন ছাত্রনেতা শঙ্কুও সারদার টিভি চ্যানেল থেকে মাসে-মাসে ৫০ হাজার টাকা পেয়েছেন৷ এবং প্রতারক অর্থলগ্নি সংস্থা থেকে টাকা নিয়েও দিব্যি নির্বিকার রয়েছেন৷
সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই তোলপাড় চলছে রাজ্য-রাজনীতিতে৷ ইতিমধ্যেই নাম জড়িয়েছে তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ এবং রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের৷ সারদা-ঘনিষ্ঠ তৃণমূল সাংসদ এবং মন্ত্রীদের পদত্যাগের দাবিও তুলেছে বিরোধীরা৷ সে দাবিতে কর্ণপাত করার কোনও লক্ষণ অবশ্য দেখাচ্ছেন না শাসকদলের নেতৃত্ব৷ সারদার সঙ্গে সরকার এবং তৃণমূলের যোগাযোগের কথা অস্বীকার করেই চলছেন তাঁরা৷ কিন্ত্ত এ বার খোদ মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের এক কর্মী এবং দলের ছাত্র সংগঠনের শীর্ষনেতার নাম জড়ানোর পর তৃণমূল নেতৃত্ব কী করেন, সেটাই দেখার৷
সারদার টিভি চ্যানেল থেকে মাস-মাইনে পাওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন দয়ালবাবু৷ তবে তাঁর দাবি, টিভি চ্যানেলের কর্মী হিসাবেই তিনি বেতন পেতেন৷ কিন্ত্ত প্রশ্ন উঠছে, মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের কর্মী হয়েও টিভি চ্যানেল থেকে মাসে মাসে তিনি বেতন নেন কী ভাবে? এ ব্যাপারে দয়ালবাবুর সাফাই, 'মুখ্যমন্ত্রীর দন্তরে অস্থায়ী কর্মী হিসাবে কাজ করি৷ তার বিনিময়ে ২০ হাজার টাকা সাম্মানিক পাই৷ সেটাকে বেতন বলা যায় না৷ বরং অনেক দিন ধরেই সারদার টিভি চ্যানেলে কাজ করছি৷ চ্যানেলের নিয়োগপত্রও রয়েছে৷ অহেতুক বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে৷' আর মুখ্যমন্ত্রীর দন্তরে কাজ করেও সারদার গাড়ি ব্যবহার বিষয়ে তাঁর জবাব, 'আমি ক্যামেরাম্যান হিসাবে গাড়ি পেতাম৷ সবসময়ে গাড়ি পেতাম এমনটা নয়৷ যখন গাড়ি দরকার হত ফোন করে চেয়ে নিতাম৷'
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডার আবার সাফাই, 'টিভি চ্যানেল থেকে ৫০ হাজার টাকা বেতন পেতাম ঠিকই, কিন্ত্ত আমি নিয়োগপত্র পেয়েছি অন্য একটি সংবাদপত্রের কাছ থেকে৷' টিভি চ্যানেল পরিচালনার জন্য ওই সংবাদপত্রের সঙ্গে এক সময়ে গাঁটছড়া বেঁধেছিল সারদা গোষ্ঠী৷ পরে অবশ্য বনিবনা না হওয়ায় চুক্তি ভেস্তে যায়৷ ওই সংবাদপত্র গোষ্ঠীর এক কর্তা অবশ্য জানাচ্ছেন, শঙ্কুদেব কোনও ভাবেই তাঁদের সঙ্গে যুক্ত নন৷ যা যোগাযোগ তা সারদার সঙ্গেই৷
অভিযোগ উঠেছে, তৃণমূল সাংসদ তথা সারদার মিডিয়া শাখার গ্রুপ সিইও কুণাল ঘোষের সুপারিশেই বেশ কয়েক জনকে সারদার টিভি চ্যানেল থেকে মাসোহারা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল৷ তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেই শাসকদলের ঘনিষ্ঠ৷ সূত্রের খবর, যোগ্যতা না দেখেই কয়েকজন বশংবদকে উচ্চপদে বসানো হয়েছিল৷ প্রোডিউসার হিসাবে কাজে যোগ দেওয়ার পর এক মহিলা সাংবাদিকের বেতন ৩৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে রাতারাতি দেড় লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়৷ এই বেহিসাবি খরচের ধাক্কা সামলাতে এক রকম বাধ্যই হয়েছিলেন সুদীপ্ত সেন, যা সারদা-সাম্রাজ্যের পতনকেও ত্বরান্বিত করেছে৷
শালবনিতে তাদের ৩৫ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত ইস্পাত প্রকল্পের কাজ আপাতত স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করল জিন্দাল কর্তৃপক্ষ৷ তারা জানিয়েছে, প্রকল্পের জন্য কাঁচামাল লৌহ আকরিকের দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেওয়ার ফলেই এই সিদ্ধান্ত৷ এর ফলে প্রকল্পের ভবিষ্যত ঘিরে অনিশ্চয়তা তৈরি হল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল৷ রাজ্যে প্রস্তাবিত বৃহত্তম বেসরকারি বিনিয়োগ ঘিরে নতুন করে অনিশ্চয়তা দেখা দিল৷ রবিবার এ ব্যাপারে জিন্দল গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর সজ্জন জিন্দল সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, আপাতত প্রকল্পটি স্থগিত রাখা হল৷ যতক্ষণ না পর্যন্ত লৌহ আকরিক সরবরাহের বিষয়টি সুনিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে, ততক্ষণ প্রকল্পটি নিয়ে এগোনো সম্ভব নয়৷ প্রকল্পের কাজ ফের কবে শুরু হবে, সেবিষয়েও কোনও আশ্বাস দিতে পারেননি তিনি৷
২০০৮ এর ২ নভেম্বর শালবনিতে জিন্দালদের প্রস্তাবিত ইস্পাত প্রকল্পের শিলান্যাস করেন তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ কিন্তু বিভিন্ন কারণে পিছিয়ে যেতে থাকে প্রকল্পের কাজ৷ ক্ষমতায় আসার পর সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয় তৃণমূল সরকার৷ জমির প্রশ্নে অবস্থান কিছুটা শিথিল করেই জিন্দলদের শালবনি প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত চুক্তির খসড়াও তৈরি করা হয়৷ কিন্তু কাঁচামাল সরবরাহ নিয়ে সমস্যার জেরে ফের নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হল৷ প্রায় ৪হাজার ৩০০ একর জমিতে জিন্দালদের ইস্পাত প্রকল্পে ৩৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হওয়ার কথা৷ সবকটি পর্যায়ের কাজ শেষ হলে বছরে ১০ লক্ষ মেট্রিক টন ইস্পাত উত্পাদনের পরিকল্পনা৷ পাশাপাশি একটি বিদ্যুত্ প্রকল্পও তৈরি করার কথা রয়েছে৷(ফাইল চিত্র)
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36132-2013-04-28-12-29-29
কলকাতা: চিট ফান্ড কাণ্ডে অস্বস্তিতে শাসক দল৷ সিবিআইকে লেখা চিঠিতে তৃণমূলের দুই সাংসদ কুণাল ঘোষ ও সৃঞ্জয় বসুকে কাঠগড়ায় তুলেছেন সারদা কর্ণধার সুদীপ্ত সেন৷ এমনকি তৃণমূলের নিচুতলার নেতা-কর্মীদের একাংশ বহু জেলাতেই আমানতকারীদের সারদায় টাকা রাখতে উত্সাহিত করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে৷ এরই পাশাপাশি সারদার সঙ্গে ঘুরপথে যোগের অভিযোগ উঠছে মমতাপন্থী বিদ্বজ্জনদের একাংশেরও৷ তাঁদেরই একজন চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ এই শিল্পীর চ্যানেলই কিনেছিলেন সুদীপ্ত সেন৷ কিন্তু বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, শুভাপ্রসন্নর মালিকানাধীন অবস্থায় দিনের আলোর মুখ না দেখা একটা চ্যানেল হঠাত্ সুদীপ্ত সেন কেন কিনেছিলেন৷ এর পেছনেও কি শাসক দলের কোনও একটা অংশের চাপ ছিল? যদিও শুভাপ্রসন্ন এই প্রশ্ন উড়িয়ে দিয়ে দাবি করেছেন, ২০০৯-এ নিজের পুঁজি দিয়ে একটা চ্যানেল তৈরি করি৷ কিন্তু কিছু অসাধু ব্যক্তির জন্য ৭-৮ মাসের মধ্যে চ্যানেল এয়ার হওয়ার আগে বিক্রি করতে বাধ্য হই৷ আমি যখন খরিদ্দার খুঁজছি, তখন সুদীপ্ত সেন আমায় ফোন করে বাড়িতে আসেন৷ ৫ কোটি ৩০ লক্ষের কিছু বেশি টাকায় চ্যানেল বিক্রি করি৷ কিন্তু সুদীপ্ত সেন আমায় যে চেক দিয়েছিলেন, তার কয়েকটা বাউন্স করে৷ এখনও আমি প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা পাই৷ তৃণমূলের কেউ আমাকে সুদীপ্ত সেনকে চ্যানেল বিক্রি করতে বলেননি৷ তাঁকে কেউ আমার চ্যানেল কিনতে বলেছিলেন কি না, জানি না৷
মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আরেক বিদ্বজ্জন অর্পিতা ঘোষ৷ নাট্য ব্যাক্তিত্ব হিসাবে পরিচিতি থাকলেও তাঁর সাংবাদিক সত্ত্বা কোনওদিনই সেভাবে বাইরে আসেনি৷ কিন্তু এহেন অর্পিতা ঘোষকেই সারদা গোষ্ঠীর চ্যানেল 'এখন সময়'-এর এগজিকিউটিভ এডিটর নিয়োগ করা হয়৷ সারদা-কাণ্ডের পর স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হওয়াটাই অর্পিতাদেবীর সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা ছাড়াই চ্যানেলের মাথা হওয়ার মূল কারণ? মোটা অঙ্কের টাকা মাইনে পাইয়ে দিতেই কি এই পন্থা? অর্পিতাদেবী নিজে কিন্তু দাবি করছেন, তিনি প্রথমেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, সাংবাদিকতার কোনও অভিজ্ঞতা তাঁর নেই৷ তবুও কুণাল ঘোষ অনুরোধ করাতেই তিনি শেষপর্যন্ত দায়িত্ব নেন৷
সাংবাদিক মহলে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত দয়াল সাহা৷ তাঁর যে কোনও সফরেই দেখা যায় দয়ালকে৷ খাতায় কলমে সারদা গোষ্ঠীর কর্মী হিসাবে মোটা বেতন তোলার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর ভিডিও ক্যামেরাম্যান হিসাবেও সরকারি কোষাগার থেকে টাকা পান তিনি৷ সারদা থেকে মাইনে পাওয়ার পাশাপাশি কীভাবে সরকারের থেকেও বেতন নেন তিনি? উঠেছে প্রশ্ন৷ দয়ালের অবশ্য যুক্তি, সারদার কর্মী হিসাবে আমি বেতন পাই, আর মুখ্যমন্ত্রীর মিডিয়া অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য হিসাবে ভাতা পাই, যাকে বেতন বলা যায় না৷
তবে যে যা-ই যুক্তি দিন না কেন, সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে কোনও না কোনওভাবে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের সম্পর্ক সরকারের অস্বস্তি বাড়াচ্ছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷(ফাইল চিত্র)
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34/36133
কলকাতা: সারদা গোষ্ঠীর মিডল্যান্ড পার্ক অফিসে রবিবার সকালে ফের তল্লাশি চালাল পুলিশ৷ সংস্থার দুই মহিলা কর্মীকে নিয়ে অফিসে যান বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগের কর্তারা৷ প্রায় আড়াই ঘন্টা ধরে তল্লাশি চলে৷ পুলিশ সূত্রে খবর, ওই দুই কর্মীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করা হয়েছে৷ গোয়েন্দারা মনে করছেন, সেগুলি সারদাকাণ্ডের তদন্তে সহায়ক হবে৷
এর পাশাপাশি সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়কেও জেরা চলছে দুজনকে আজ সকালেও তাঁদের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে জেরা করা হয়। তাতে উঠে আসছে নতুন নতুন তথ্য৷ দিন যত এগোচ্ছে, ততই দেবযানীর ব্যাপারেও তথ্য উঠে আসছে পুলিশের হাতে৷ পুলিশ জানতে পেরেছে, দেবযানী লাখ টাকা বেতন এবং লাখ টাকা হাত খরচের বাইরেও সারদার সংসার থেকে দেদার আয় করেছেন৷ চাকরি পাওয়ার বছর দুয়েকের মধ্যেই ঢাকুরিয়ার যে ফ্ল্যাট কিনেছিলেন, ওই সময় সেটির বাজারদরই ছিল দেড় কোটি টাকার মতো৷ ফ্ল্যাট সাজাতে খরচ হয় আরও এক কোটির কাছাকাছি৷ পুরো ফ্ল্যাটটাই সেগুন কাঠ আর বেলজিয়ান গ্লাসে মোড়া৷ ঢাকুরিয়া-যাদবপুর এলাকায় এখন দেবযানীর ধার দেওয়া প্রায় ১০ কোটি টাকা বাজারে খাটছে বলেও জানা গিয়েছে৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/kolkata/59-more/36117-2013-04-28-06-43-53
| ||
দুই নারী, হাতে তরবারি। উপন্যাস কিংবা সিনেমার চেয়ে কম রোমাঞ্চকর নয় সারদা কর্তাকে নিয়ে দুই নারীর টানাপোড়েন। পুলিশের কাছে দেবযানী মুখোপাধ্যায়ই জানান ইদানীং সুদীপ্ত সেনের জীবনে দ্বিতীয় নারীর কথা। পুলিশের ধারণা ছিল, এই রহস্যময়ী সারদায় কর্মরত মহিলা ব্রিগেডের কোনও সদস্যই হবেন। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে নিউটাউন থানায় জেরার সময় পুলিশ জেনেছে, তিনি সারদা গোষ্ঠীর কেউ নন। পঞ্জাবি ওই মহিলার নাম নিশা ছাবরা। দেবযানীকে জেরার পরে সেই রূপসীর খোঁজেই এখন তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। তাদের দাবি, সম্প্রতি নিশার কাছেও সংস্থার বড় অঙ্কের টাকা রেখেছিলেন সুদীপ্ত। দেবযানী তা মেনে নিতে পারেননি। সারদা নিয়ে তোলপাড়ের শুরু ইস্তক সুদীপ্তর ছায়াসঙ্গিনী হিসেবে দেবযানীর নামই উঠে এসেছিল। কিন্তু জেরায় জানা গিয়েছে, নিশাকে ঘিরে ইদানীং দূরত্ব বেড়েছিল সুদীপ্ত-দেবযানীর। সারদা কর্তা নিজেও নিশা আর দেবযানী, দু'জনের সঙ্গেই তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। বেশ কিছু দিন ধরে নিশা নানা অছিলায় অনেক টাকা হাতিয়েছেন বলেও তদন্তকারীদের জানিয়েছেন সুদীপ্ত। পুলিশ জেনেছে, সুদীপ্তর সঙ্গে নিশার আলাপ হয় আসানসোলে। সেখানে রিয়েল এস্টেটের বিরাট ব্যবসা ছিল সারদার। সেই ব্যবসার কাজে গিয়েই নিশার সঙ্গে পরিচয় সুদীপ্তর। ক্রমে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। একটা সময়ে নিশাকে নিয়ে দুর্গাপুরের একটি হোটেলে প্রায়ই উঠতেন সুদীপ্ত। পরে ওই মহিলাকে সল্টলেকে একটি ফ্ল্যাট কিনে দেন তিনি। গত মাস কয়েক ধরে অবশ্য নিউটাউনের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করেছিলেন নিশা। সেই ফ্ল্যাটটিও কেনা হয় সারদারই টাকায়। পুলিশ যদিও ওই দু'টি ফ্ল্যাটে গিয়ে নিশার খোঁজ পায়নি। তল্লাশি শুরু করেছে বিধাননগর কমিশনারেট। দেবযানী, সুদীপ্ত এবং সারদার অন্য কর্মীদের জেরা করে পুলিশ যা তথ্য পেয়েছে তা থেকে মনে করা হচ্ছে সুদীপ্ত আর নিশার সাম্প্রতিক সম্পর্কের ছায়া পড়তে শুরু করেছিল সংস্থার কাজকর্মেও। সুদীপ্তর হয়ে সংস্থার টাকাকড়ি সামলানোর কাজটা দেবযানীই করতেন। নিশা সংস্থার কেউ না হওয়া সত্ত্বেও সুদীপ্ত তাঁর কাছে টাকা রাখায় ক্ষুব্ধ হন দেবযানী। সারদার কাজকর্মের ব্যাপারে তাঁর যে একান্ত অধিকারের জায়গাটুকু ছিল, তাতে হাত পড়ছে বলে ইদানীং মনে হতে থাকে তাঁর। সেই অধিকার এতটাই ছিল যে, সারদা প্রধানের ব্যক্তিগত ই-মেলের পাসওয়ার্ড পর্যন্ত জানতেন দেবযানী। সারদার কর্মীদের যাবতীয় ই-মেল সুদীপ্তর হয়ে তিনিই পাঠাতেন। গত ১৪ এপ্রিলও সুদীপ্তর নিজস্ব আইডি থেকে সারদার কর্মীদের কাছে একটি মেল আসে। তাতে বলা হয়, "মার্চ পর্যন্ত সারদার বিভিন্ন সংস্থার কর্মীদের বকেয়া বেতন ১৫ এপ্রিল দেওয়ার কথা ছিল। তা স্থগিত করে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে দেওয়া হবে।" সারদার মহিলা কর্মীদের কথায়, মেলগুলি দেবযানীরই করা। কারণ সুদীপ্ত নিজে মেল করতে সড়গড় ছিলেন না। দেবযানীর কথা থেকে পুলিশের সন্দেহ, দেবযানীর এই সাম্রাজ্যেই নিশা ইদানীং হাত বাড়াতে এগিয়েছিলেন। ক্ষমতা দখলের জন্য দুই নারীর মধ্যে কার্যত ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছিল। জেরায় দেবযানী দাবি করেছেন, ১০ এপ্রিল সুদীপ্ত যখন কলকাতা ছেড়ে পালিয়ে যান, তখন সঙ্গে ছিলেন নিশাই। ১৩ এপ্রিল রাঁচি থেকে গাড়িচালক বাপির সঙ্গে নিশাকে কলকাতায় ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ অবশ্য এই দাবির সত্যতা নিয়ে নিশ্চিত নয়। সুদীপ্তর মহিলা ব্রিগেডের কয়েক জন পদস্থ কর্মীকেও তাই জেরা করা হচ্ছে। তাঁদেরই এক জন শুক্রবার যা বলেছেন, তাতেও সুদীপ্ত আর দেবযানীর মধ্যে ইদানীং ব্যবধান তৈরি হওয়ারই ইঙ্গিত মিলেছে। ওই কর্মী বলেছেন, "গত কয়েক বছর ধরে রাজ্য ও রাজ্যের বাইরে সমস্ত ব্যবসার কাজে সুদীপ্ত স্যারের সঙ্গে থাকতেন দেবযানী। কিন্তু ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে পরপর বেশ কয়েক বার সুদীপ্তর সঙ্গে দেবযানী বাইরে যাননি।" ওই কর্মীর দাবি, শেষ পাঁচ মাসে সংস্থার কাজে সুদীপ্ত যত বার পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, লাটাগুড়ি এবং বিশেষত আসানসোল-দুর্গাপুরে গিয়েছেন, তত বার তিনিও 'স্যারে'র সঙ্গে গিয়েছেন। কিন্তু কোনও বারই দেবযানীকে দেখেননি। নিশার সঙ্গে সম্পর্ক ঘিরে দূরত্ব বাড়াই এ সবের কারণ বলে মনে করছে পুলিশ। http://www.anandabazar.com/28cal1.html |
কলকাতা:অতিরিক্ত মুনাফার আশা ছেড়ে অবিলম্বে চিট ফান্ড থেকে টাকা তুলে নিতে আমানতকারীদের পরামর্শ দিলেন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী৷ বেশি ফেরতের লোভে সারা জীবনের রোজগার তুলে দিয়েছেন কোনও চিট ফান্ডের হাতে৷ আশা ছিল, বছর ঘুরতেই মিলবে মোটা মুনাফা৷ কিন্তু, সারদাকাণ্ডের পরই প্রকাশ্যে চিট-ফাঁদের বাস্তব রূপ৷ হাজার হাজার আমানতকারীর মুখে এখন একটাই প্রশ্ন, টাকা ফেরত মিলবে তো? ফিরে আসবে তো জীবনের সঞ্চয়? তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর পরামর্শ, এক মুহূর্তও দেরি না করে, অবিলম্বে চিট ফান্ড থেকে টাকা তুলে নিন৷ এজেন্টদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, আমানতকারীদের চড়া সুদ ফেরত দেওয়ার মিথ্যা স্বপ্ন দেখাবেন না৷ আর হঠাত বড়লোক হওয়ার আশা ছেড়ে নিজেরা সরকারের ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ করে সম্মানের পথে বাঁচুন৷ শুধু রাজনীতিকই নন, দেরি না করে এখনই টাকা তুলে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরাও৷ দেবাশিস সরকার, দেবনারায়ণ সরকারের মতো অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য, কিছু বেশি পাওয়ার লোভ৷ আর সেই লোভের ফাঁদে পা দিয়েই সর্বস্বান্ত হওয়ার পথে হাঁটা৷ অতিরিক্ত মুনাফার আশা ছেড়ে অবিলম্বে টাকা তুলে নিন৷ এটাই একমাত্র পথ৷ চিট-খপ্পর থেকে মুক্তির পথ৷ সংশ্লিষ্ট সংস্থা টাকা না দিলে প্রয়োজনে পুলিশের দ্বারস্থ হন৷ পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36134-2013-04-28-13-11-31
কলকাতা: মোটা কমিশনের লোভ দেখিয়ে এজেন্ট নিয়োগ৷ তারপর তাঁদের মাধ্যমে আবার চড়া সুদে টাকা ফেরতের লোভনীয় ফাঁদ পেতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা৷ এভাবেই কার্যত চেন সিস্টেমে চলে আসছে চিট ফান্ডের রমরমা৷ আর সেই প্রক্রিয়া ভেঙে পড়লেই সব শেষ৷ ঠিক কীভাবে এই সংস্থাগুলি কাজ করে? ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এ ধরনের সংস্থার গোড়াপত্তনের পরই প্রথম কাজ হল এজেন্টদের একটি চেন বা গোষ্ঠী তৈরি করা৷ অবশ্য এঁদের কাউকেই নতুন করে নিয়োগ করা হয় না৷ অন্য কোনও জনপ্রিয় ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্টদেরই একটি গ্রুপকে বেশি কমিশনের লোভ দেখিয়ে নিজের দলে টেনে নেওয়া হয়৷ কখনও চাকরির শুরুতেই বিশাল অঙ্কের বেতনের পাশাপাশি দিয়ে দেওয়া হয় বিলাসবহুল গাড়িও৷ তবে নিয়োগের আগে অবশ্য মানুষের কাছে সেই এজেন্টদের পরিচিতিটা দেখা হয়৷ কারণ কতটা টাকা তাঁরা তুলে আনতে পারবেন, সেটা সবথেকে জরুরি৷ যেখানে এজেন্টের সংখ্যা সবথেকে বেশি থাকে, সেখানেই খোলা হয় শাখা দফতর৷এ ধরনের এজেন্টদের চেইনে একজন টিম লিডার থাকেন৷ ধরা যাক একটি চেইনের টিম লিডার এ৷ তাঁর অধীনে কাজ করেন বি ও সি৷ বি-এর অধীনে আবার কাজ করেন ডি এবং ই৷ সি-এর অধীনে কাজ করেন এফ এবং জি৷ এইভাবে ক্রমশ দীর্ঘ হতে থাকে চেইন৷ চলতি পরিভাষায় টিম লিডারের নীচের স্তরের এই এজেন্টদের বলা হয় ডাউনলাইন৷ এক একজন এজেন্টদের অধীনে ৫ থেকে ১০ হাজার ডাউনলাইন কর্মীও কাজ করেন৷
এরপর আসে আমানতকারীদের টাকা খাটানোর বিষয়টি৷ ব্যাঙ্কের মতোই ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি এমআইএস, ফিক্সড ডিপোজিট ও রেকারিং প্রকল্পের নামে টাকা তোলে৷ তবে ব্যাঙ্কের থেকে অনেক চড়া সুদের হারে৷ কখনও চার বছরে দ্বিগুণ বা ৭ বছরে চারগুণ ফেরতের মতো অকল্পনীয় প্রতিশ্রুতি দিয়ে৷
তবে ভুঁইফোড় সংস্থাগুলির এজেন্টদের লক্ষ্য থাকে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পগুলিতে টাকা তোলা৷ এমনকী, দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের জন্য কমিশনের পরিমাণটাও অনেক বেশি৷ কারণ এজেন্টরা নিজেরাও জানেন, এই অঙ্ক ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়৷ কিন্তু কোনও কারণে সংস্থা ভেঙে পড়লে পালানোর সময়টা বেশি পাওয়া যায়৷
কিন্তু সংস্থা ভেঙে পড়ে কখন? এই সংস্থাগুলি চলে পনজি সিস্টেমে৷ এই পদ্ধতিতে এক আমানতকারীর টাকা থেকে অন্য আমানতকারীকে রিটার্ন দেওয়া হয়৷ এজন্য সংস্থার নিজস্ব ব্যবসার লাভের প্রয়োজন হয় না৷ এজেন্ট চেইনের ওপর নির্ভর করে ব্যবসা৷ কিন্তু একটা সময় আমানতকারীর সংখ্যা বা টাকার যোগান কমে গেলেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে পনজি সিস্টেম৷
সাধারণত এক জায়গা থেকে টাকা তোলার পরিমাণ কমে গেলে অন্য জায়গা থেকে টাকা তুলে তা দিয়ে আগের জায়গার আমানতকারীদের টাকা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়৷ ব্যবসা ছড়ালে ভাল, নইলে পাততাড়ি গোটাতে হয়৷
সম্ভবত এই কারণেই সুদীপ্ত সেনও উত্তর ও পশ্চিম ভারতে নতুন সংস্থা শুরুর পরিকল্পনা ছকেছিলেন৷ কিন্তু সফল না হওয়াতেই দ্রুত পতন৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36131-2013-04-28-12-06-04
কলকাতা: সারদা কেলেঙ্কারির প্রেক্ষিতেই সামনে উঠে এসেছে রাজ্যের আরও কয়েকটি ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থার নাম৷ জোরালো হয়েছে তদন্তের দাবি৷ সেই পরিপ্রেক্ষিতে এবার পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য ভুঁইফোড় সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে তদন্তের তোড়জোড় শুরু করল কেন্দ্র৷ এসএফআইও-র অধীনে গঠিত বিশেষ টাস্ক ফোর্সের তালিকায় প্রাথমিকভাবে ৭৩টি নাম উঠে এসেছিল৷ এবার ওই তালিকা থেকেই চারটি সংস্থাকে বেছে নিয়ে এসএফআইও-কে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত শুরুর নির্দেশ দিল কেন্দ্রীয় সরকার৷ সেই তালিকায় সারদা ছাড়াও নাম রয়েছে রোজ ভ্যালি, আইকোর আই সার্ভিসেস ও সানসাইন ইন্ডিয়া ল্যান্ড ডেভলপার্সের৷ ইতিমধ্যেই অন্যান্য ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে তদন্তের দাবিতে সরব বিরোধীরা৷ অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ, বিভিন্ন চিটফান্ড সংস্থায় যেসব আমানতকারীদের টাকা লগ্নি করেছেন, তাঁদের অবিলম্বে টাকা তুলে নেওয়া উচিত৷
প্রসঙ্গত কেন্দ্রীয় কোম্পানি বিষয়কমন্ত্রকের তরফে এসএফআইও-কে বার্তা পাঠিয়ে বলা হয়েছে, এই চারটি গোষ্ঠী টাকা তোলার প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষকে ঠকাচ্ছে বলে কেন্দ্রের সন্দেহ৷ সারদা রিয়েলটি, সারদা অ্যাগ্রো ডেভেলপমেন্ট, সারদা এক্সপোর্টস, সারদা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি, সারদা গার্ডেন রিসর্টস অ্যান্ড হোটেল-সহ সারদার ১৪টি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত হবে৷ তা ছাড়া রয়েছে সানশাইন ইন্ডিয়া ল্যান্ড ডেভেলপার্স গোষ্ঠীর ৯টি, আইকোর ই-সার্ভিসেস গোষ্ঠীর ১১টি ও রোজ ভ্যালী গোষ্ঠীর ১৯টি কোম্পানি৷ ।আরওসি-র তথ্য অনুযায়ী, তারা 'মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং', 'কালেক্টিভ ইনভেস্টমেন্টস স্কিম' ও অন্য টাকা সংগ্রহের প্রকল্পে যুক্ত৷
পশ্চিমবঙ্গের আরওসি বা রেজিস্ট্রার অফ কোম্পানিজের একটি রিপোর্টের ভিত্তিতেই এই তদন্তের নির্দেশ৷।অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, এই তদন্তের জন্য দ্রুত একটি দল গঠন করা হবে৷ এদিকে নিজেদের স্বচ্ছতা প্রমাণে আইকোরের কর্ণধার অনুকূল মাইতি জানিয়েছেন, আমরা রেজিস্ট্রার অফ কোম্পানিজের কাছে সংস্থা নথিবদ্ধ করে আইনসম্মত ভাবেই ব্যবসা করছি৷ মেয়াদ পূর্তির পরে টাকা ফেরত দিতে আমাদের কোনও সমস্যা নেই৷রোজ ভ্যালীর কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুর বক্তব্য, আমরা তদন্তকে স্বাগত জানাচ্ছি৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36123-2013-04-28-10-00-31
কলকাতা: সারদাকাণ্ড রক্তচাপ বাড়িয়েছে রাজ্য সরকারের৷ নাম জড়িয়েছে শাসক দল তৃণমূলের সাংসদেরও৷ কোমর বেঁধে আক্রমণে নেমেছে বিরোধীরা৷ এই পরিস্থিতিতে চিট ফান্ড নিয়ন্ত্রণে নতুন বিল আনতে উঠে পড়ে লেগেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার৷
কিন্তু বিল পাস হওয়ার আগেই চিট ফান্ডগুলির রমরমার উপর লাগাম পরাতে তত্পর হল রাজ্য সরকার৷ শনিবার সমস্ত জেলাশাসকদের কাছে নির্দেশিকা গেল স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে৷ জেলায় জেলায় চিট ফান্ডগুলির সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে এই নির্দেশিকায়৷
জেলাশাসকদের কাছে মহাকরণের তরফে জানতে চাওয়া হয়েছে, জেলায় জেলায় কতগুলি চিট ফান্ড রয়েছে? কোথায় কোথায় এই চিট ফান্ডগুলির অফিস রয়েছে? কত বছর ধরে তারা ব্যবসা করছে? কে বা কারা এই চিট ফান্ডগুলির পরিচালন সমিতিতে আছেন? কী কী সম্পত্তি রয়েছে তাদের? কোন কোন স্কিমে টাকা তুলছে তারা? সংস্থাগুলির এজেন্ট এবং আমানতকারীদের সংখ্যাই বা কত? মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভায় পেশ হচ্ছে চিট ফান্ড সংক্রান্ত নয়া বিল৷ সেই বিল আইনে রূপান্তরিত হওয়ার আগেই রাজ্যজুড়ে চিট ফান্ডগুলির উপর কড়া নজরদারি চালানোর প্রক্রিয়া শুরু করল রাজ্য সরকার৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36130-2013-04-28-11-36-36
কলকাতা: রাজ্যজুড়ে রমরমা চিট ফান্ডের৷ এসব চিট ফান্ডগুলি এজেন্ট বা সংস্থার মালিকদের কাছে মানি মার্কেটিং সংস্থা নামে পরিচিত৷ কয়েক বছরে রাজ্যে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বহু ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা৷ দেশজুড়ে সারদা গোষ্ঠীরই ৭০টিরও বেশি শাখা অফিস রয়েছে৷ মানি মার্কেটিং সংস্থার পুরো ব্যবসা নির্ভর করে সংস্থার নির্দিষ্ট একটি সফটওয়্যারের ওপর৷ টাকা তোলার পদ্ধতি থেকে কীভাবে এজেন্টের মাধ্যমে হেড অফিসে টাকা পৌঁছবে, সব কিছুই সফটওয়্যার নির্ভর৷ বিভিন্ন সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী সংস্থা এই সফটওয়্যারগুলি তৈরি করে৷
সাম্প্রতিককালে চিট ফান্ডের রমরমা বেড়ে যাওয়ায় বাজারের চাদিহা বুঝে সফটঅয়্যার সংস্থাগুলিও ঝাঁপিয়ে পড়েছে এ ধরণের সফটঅয়্যার তৈরি করতে৷ তাই চিট ফান্ড খুলতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের বিশেষ হ্যাপাও পোহাতে হয় না৷ ইন্টারনেটে সার্চ করলেই এরকম সফটওয়্যারের হদিশ মেলে৷ মাইক্রোফিনান্স, হিউজ মানি, মানি নেটওয়ার্ক এরকম বিভিন্ন নামের সফটওয়্যার বাজারে পাওয়া যায়৷ সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে তার লাইসেন্স নিলে নিলেই হল৷ দেখে নেওয়া যাক কীভাবে কাজ করে সফটওয়্যারগুলি?
ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মতোই কাজ করে সফটওয়্যারগুলি৷ সফটওয়্যারের মাধ্যমে ব্রাঞ্চ অফিসের সঙ্গে হেড অফিসের যোগাযোগ হয়৷ ব্রাঞ্চের নির্দিষ্ট আধিকারিকের কাছে সফটওয়্যার ব্যবহারের পাসওয়ার্ড থাকে৷ আমানতকারীদের টাকা জমার পর সফটওয়্যার থেকেই পলিসি সার্টিফিকেট দেওয়া হয়৷ কোন ব্রাঞ্চে কত টাকা জমা পড়ল তা সফটওয়্যারের মাধ্যমে জানা যায়৷ অনেক সময় এই সফটওয়্যারেও কারচুপির অভিযোগ ওঠে৷ আর যতদিন না পর্যন্ত গণেশ ওল্টায় ততদিন এভাবেই চলতে থাকে ব্যবসা৷(ফাইল চিত্র)
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36125-2013-04-28-11-01-58
কলকাতা: চিটফান্ডের দৌরাত্ম্য রুখতে আনা সরকারের নতুন বিলটি পাস করিয়ে আরও কঠোর আইন হবে হবে বলে রাজ্য সরকার দাবি করলেও বিরোধীদের পাল্টা দাবি, বাম আমলের বিলের সঙ্গে নতুনটির কার্যত কোনও ফারাকই নেই৷
নতুন বিলের ৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, সংস্থার মালিক, অংশীদার, ডিরেক্টর, ম্যানেজার, কর্মী বা আর্থিক অপরাধের সঙ্গে যুক্ত যে কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে৷ বাম আমলে আনা পুরনো বিলের তিন নম্বর ধারাতেও একই কথা বলা আছে৷নতুন বিলের ৭ নম্বর ধারায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মী বা পুলিশ যে কোনও অফিস, বাড়ি, গাড়ি, জলযান, বিমানে ঢুকে তল্লাসি চালাতে পারবে৷ দরজা, বাক্স, আলমারি, লকার ভেঙে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও নথি বাজেয়াপ্ত করতে পারবে৷ বাম আমলের বিলেরও সাত নম্বর ধারায় বলা ছিল, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্তের স্বার্থে যে কোনও সময় পুলিশের সাহায্য চাইতে পারে এবং পুলিশ সেই সাহায্য দিতে বাধ্য থাকবে৷ আইনজীবীদের একটি অংশের মত, যে কোনও আর্থিক অনিয়মের ক্ষেত্রেই ভারতীয় ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী পুলিশ তল্লাসি চালাতে পারে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও নথি বাজেয়াপ্ত করতে পারে৷ তাই নতুন বিলে আলাদা করে একথা উল্লেখ করার প্রয়োজন ছিল না৷
আর্থিক অপরাধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কে হবে, তাতে নতুন বিলে রদবদল আনা হয়েছে৷ বলা হয়েছে, রাজ্য সরকার একজন ডিরেক্টর অফ ইকনমিক অফেন্সেস নিয়োগ করবেন৷ তিনিই হবেন অভিযুক্ত সংস্থা বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ৷ বিলে বলা হয়েছে, ডিরেক্টর অফ ইকনমিক অফেন্সেসকে কারা সাহায্য করবে, তা ঠিক করতে সরকার প্রয়োজন মতো বিজ্ঞপ্তি জারি করবে৷ পুরনো বিলের ৬ নম্বর ধারায় বলা হয়েছিল, আর্থিক অপরাধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কলকাতার ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেবেন পুলিশ কমিশনার৷ জেলায় জেলাশাকরা৷ আইনজীবীদের মত, আগের বিলে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছিল৷
নতুন আইনের ৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্তা, কর্মী থেকে শুরু করে আর্থিক অপরাধে জড়িত যে কারও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা যাবে৷ আদালতের নির্দেশে তা নিলামে তুলে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারবে সরকার৷ পুরনো বিলের ৭ নম্বর ধারাতেও কার্যত একই সংস্থান ছিল৷ সেখানে বলা হয়েছিল, সংস্থা এবং সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তা-কর্মীদের সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে নিয়ে আদালতের নির্দেশে নিলামের মধ্য দিয়ে টাকা তুলে তা আমানতকারীদের ফেরত দেওয়া যাবে৷
নতুন বিলের ১২ নম্বর ধারা অনুযায়ী, নির্দিষ্ট আদালতে হবে বিচার৷ পুরনো বিলের ১০ নম্বর ধারাতেও বলা ছিল নির্দিষ্ট আদালতের কথা৷
নতুন বিলের ৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, দোষীদের ১০ বছরের জেল থেকে যাবজ্জীবন পর্যন্ত হতে পারে৷ বাম আমলে আনা বিলেও একই মেয়াদের শাস্তির কথা বলা আছে৷ যদিও তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, চিটফান্ডের রমরমা রুখতে তারা বাম আমলের থেকে অনেক বেশি কঠোর আইন তৈরি করছেন৷ এই দাবি অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন বিধানসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ হাসিম আব্দুল হালিম৷ আইনজীবীদের একটা বড় অংশ মনে করছে, নতুন বিল আইনে পরিণত হলে সারদাকাণ্ডের বিচারের বিষয়টি আরও জটিল হয়ে যেতে পারে৷ সারদাকাণ্ডে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়াও দীর্ঘায়িত হতে পারে৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36122-2013-04-28-09-09-19
চিট ফান্ড নয় সারদা, '৭৮-র আইনেই ছিল ব্যবস্থার সুযোগ
কৌশিক প্রধান
বুঝে বা না-বুঝে চিট ফান্ড-চিট ফান্ড করে যে সংস্থাগুলো নিয়ে চেঁচামেচি হচ্ছে, তারা কি আদৌ চিট ফান্ড?
সরকারি তথ্য বলছে, না৷ এ মুহূর্তে রাজ্যে একটিও চিট ফান্ড নেই৷ প্রতারণায় দায়ে যে-সব সংস্থা অভিযুক্ত, তারা আসলে ভুঁইফোঁড় আমানত সংগ্রহকারী সংস্থাই৷ আর এ ধরনের সংস্থার কারবার থামাতে ১৯৭৮ সাল থেকেই আইন রয়েছে৷ রাজ্য সরকারের হাতে সে-অস্ত্র থাকা সত্ত্বেও তার প্রয়োগ নেই৷ আর সে সুযোগেই বিস্তৃত হয়েছে প্রতারণার জাল৷ রাজ্যের হাত-পা বাঁধা, সব দায়িত্ব কেন্দ্রের, নতুন আইনের প্রয়োজন--ইত্যাদি বলার মধ্যে রয়েছে দায় এড়ানোর কৌশল৷
খাতায়-কলমে রাজ্যে শেষ যে চিট ফান্ডটি সক্রিয় ছিল, সেটি ২০০৯-এর পর থেকে 'নন-অপারেশনাল' বলেই জানাচ্ছে সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগ৷ সারদা গোষ্ঠী-সহ যে সব সংস্থার বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে, সরকারি মহলেরই বক্তব্য, এই সংস্থাগুলো ১৯৮২ সালের চিট ফান্ড আইনে নথিভুক্ত নয়, নেহাতই ভুঁইফোঁড় আমানত সংগ্রহকারী সংস্থা৷ সরকারি গাফিলতিতেই তারা বেআইনি ভাবে মানুষের থেকে কোটি কোটি টাকা তুলেছে৷ এই সব সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের হাতে ১৯৭৮ সালের 'প্রাইজ চিটস্ অ্যান্ড মানি সার্কুলেশন স্কিম (ব্যানিং)' আইন ছিলই, কিন্ত্ত তার প্রয়োগ হয়নি৷ অথচ, এই আইনের বলেই বেআইনি ভাবে টাকা তুললে আর্থিক জরিমানার পাশাপাশি তিন বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে৷ আইনি অস্ত্র হাতে থাকলেও সরকারের তরফে তা প্রয়োগ না-হওয়াতেই কেলেঙ্কারি এত বিরাট আকার নিয়েছে৷
এমনিতে দেশের আইনে চিট ফান্ড ব্যবসা বৈধ৷ রাজ্যে একটিমাত্রই নথিভুক্ত চিট ফান্ড সংস্থা ছিল৷ সেই বেলুস্সেরি বেনিফিট চিট ফান্ড (প্রাইভেট) লিমিটেড অবশ্য তিন বছরেরও বেশি নিষ্ক্রিয়৷ ১৪৪-এ রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে একটি বাড়ির দোতলায় বেলুস্সেরি-র দন্তরে ক'দিন আগে গিয়ে দেখা গেল, সেটি তালা-বন্ধ৷ অফিস কখন খুলবে, বাড়ির মালিক কুশারী পরিবারের কেউও কিছু জানাতে পারেননি৷ প্রতিবেশী অমিত মিত্র বলেন, 'এখানে কাজ করেন মাত্র দু'জন৷ সে-ভাবে কোনও বিনিয়োগকারীই আসেন না৷ মাঝেমধ্যেই অফিস বন্ধ থাকে৷' অমিতবাবুই জানালেন, প্রায় ৪৫ বছর ধরে এই ঠিকানায় বেলুস্সেরি-র অফিস রয়েছে৷ কিন্ত্ত, কোনও দিনই কোনও গণ্ডগোল হয়নি৷
সংস্থাটির কাজে স্বচ্ছতা স্বীকার করছে অর্থ দন্তরের অধীনস্থ কৃষি আয়কর বিভাগের কর্তারাও৷ এই বিভাগই চিট ফান্ড আইনানুযায়ী রাজ্যে চিট ফান্ডের নথিভুক্তিকরণের কাজ করে৷ কৃষি আয়কর বিভাগের এক কর্তাই বলেন, 'বেলুস্সেরি ২০০৯ থেকেই নন-অপারেশনাল৷ রাজ্যে এখন একটিও চিট ফান্ড নেই৷ সম্প্রতি তথ্য জানার অধিকার আইনে (আরটিআই) পেশ করা আর্জির জবাবেও আমরা এ কথা জানিয়েছি৷'
ফেব্রুয়ারিতে ওই আরটিআই হওয়ার পরে কৃষি আয়কর বিভাগ থেকেই ক্ষুদ্র সঞ্চয় বিভাগকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, রাজ্যে যে সমস্ত সংস্থা বেআইনি ভাবে টাকা তুলছে, তারা কেউই চিট ফান্ড নয়৷ প্রাইজ চিটস্ অ্যান্ড মানি সার্কুলেশন স্কিম (ব্যানিং) আইন অনুযায়ীই এই সমস্ত সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের অতিরিক্ত ডিরেক্টরের৷ বেআইনি ভাবে টাকা তোলার ফলে যে-হেতু ক্ষুদ্র সঞ্চয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাই অর্থ দন্তরের অধীন ক্ষুদ্র সঞ্চয় বিভাগেরই রয়েছে অভিযোগ তদন্তের অধিকার৷ ২০১১-১২ সালে রাজ্যে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে জমা পড়া অর্থের পরিমাণ তার আগের বছরের তুলনায় প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা কমে যায়৷ তার পরেও অবশ্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের টনক নড়েনি৷ যেমন কৃষি আয়কর বিভাগের চিঠিও অরণ্যে রোদন হয়েই থেকেছে৷
আর সর্বস্বান্ত হয়েছেন সাধারণ মানুষ৷
http://eisamay.indiatimes.com/articleshow/19758348.cms
আদালত অবমাননায় সাহারাকে তীব্র ভর্ত্সনা সুপ্রিম কোর্টের
সর্বোচ্চ আদালত৷ পাশাপাশি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে এলাহাবাদ হাইকোর্টে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত মামলার বিরুদ্ধে আবেদন করেছে সাহারা৷ এ জন্য সাহারা
সংস্থা 'বিচারব্যবস্থাকে প্রভাবিত' করার চেষ্টা করচে বলে মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট৷
তিনি কোটি বিনিয়োগকারীকে ২৪ হাজার কোটি টাকা ফেরত না দিলে, সাহারার দুই সংস্থা- সাহারা ইন্ডিয়া রিয়েল এস্টেট ও সাহারা হাউজিং ইনভেস্টমেন্টের
সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে সেবিকে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট৷ কিন্তু শীর্ষ আদালতের সেই রায়ে বিরুদ্ধে গিয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত না করার
আবেদন দাখিল করেছে সাহারা৷ এদিন সেবি শীর্ষ আদালতকে এ কথা জানায়৷ আর তাতেই সাহারার বিরুদ্ধে তোপ দাগেন বিচারপতি কে এস রাধাকৃষ্ণণ ও জে
এস খেহারের বেঞ্চ৷
এদিন আদালত অবমাননা মামলায় কোনও জবাবদিহি না করায় সাহারা ও সুব্রত রায়কে জোর ধমক দেয় সুপ্রিম কোর্ট৷ এক সপ্তাহের মধ্যে সেবির দায়ের করা
এই মামলার জবাব দিতে সাহারাকে নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ৷ আগামী ২ মে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বলে জানিয়েছে আদালত৷
শীর্ষ আদালতে এদিন সাহারার আইনজীবী বলেন, বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরাতে সেবি সুব্রত রায়ে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে চাইছে৷ আর এই মামলায়
সুব্রত রায় কোনও পক্ষই নন৷ সুতরাং তাঁর সম্পত্তি কী করে বাজেয়াপ্ত হতে পারে৷ এর উত্তরে শীর্ষ আদালত বলেন, 'কে পক্ষ কে পক্ষ নয়, সেটা গুরুত্বপূর্ণ
নয়৷ সুপ্রিম কোর্টে রায় বেরিয়ে যাওয়ার পরও কী করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে আপনার মক্কেল? এটা নিঃসন্দেহে আদালত অবমাননা৷ আর সুপ্রিম কোর্টের
নির্দেশের পরও কী করে টাকা ফেরানোর বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত সময় চাওয়া হয় সেবির কাছে৷ এটাও আদালত অবমাননা৷ সাহারার উচিত একের পর এক ভুল
না করে বরং ভুলগুলি শোধরানো৷'
সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবির সঙ্গে মোটেই সহযোগিতা করছে না সাহারা৷ এদিন সুপ্রিম কোর্ট সেবিকে বলে যে ক'জন
বিনিয়োগকারীকে পাওয়া যাচ্ছে, তাদের সকলকে ন্যায্য পাওনা ফিরিয়ে দেওয়া হোক৷ আর যাদের পাওয়া যাচ্ছে না, বা ভুয়ো বিনিয়োগকারী বলে মনে করা হচ্ছে
তাদের টাকা যেন সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়৷
গত ১৫ মার্চ সাহারার কর্ণধার সুব্রত রায় ও দুই ডিরেক্টর অশোক রায়চৌধুরী, রবিশঙ্কর দুবেকে গ্রেপ্তার বা আটক করার অনুমতি চেয়ে সর্বোচ্চ আদালতে আর্জি
জানায় সেবি৷ এই মামলার শুনানিতেই সেবিকে ন্যায্য বিনিয়োগকারীদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সেবির উপর চাপ দেয় সুপ্রিম কোর্ট৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে সাহারা
এক বিবৃতিতে জানায়, কাউকে আটক করার ক্ষমতাই নেই সেবির৷ ভিত্তিহীন খবর রটিয়ে মিডিয়ার সামনে সাহারার বদনাম করা হচ্ছে৷ গত ১০ এপ্রিল মুম্বইয়ে
সেবির দপ্তরে হাজিরা দেন সুব্রত রায়৷ ছোট বিনিয়োগকারীদের টাকা কীভাবে ফেরাতে চান, কী পরিকল্পনা রয়েছে তা নিয়ে বিস্তারিত সেবিকে জানাতে সুব্রত
রায়কে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট৷
সেবির অভিযোগ, অনিয়ম করে বাজার থেকে টাকা তুলেছে সুব্রত রায়ের দু'টি সংস্থা- সাহারা ইন্ডিয়া রিয়েল এস্টেট ও সাহারা হাউজিং ইনভেস্টমেন্ট৷ গত বছর
অগস্টে এই দুই সংস্থায় টাকা রাখা তিন কোটি বিনিয়োগকারীকে ২৪ হাজার কোটি টাকা ফিরিয়ে দিতে বলে সুপ্রিম কোর্ট৷ তবে ১০ এপ্রিল সাহারা সেবির অফিস
থেকে বেরিয়ে জানায়, বিনিয়োগকারীদের ২০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ এবং সেবির কাছে ৫,১২০ কোটি টাকা জমা রাখা হয়েছে৷ যেটা সেবি
বিনিয়োগকারীদের ফিরিয়ে দেয়নি এখনও৷ সুব্রত রায় সেদিন বলেছিলেন, 'সেবির আধিকারিকেরা কেবল আমাদের ব্যক্তিগত বিষয় সম্পত্তি নিয়েই জিজ্ঞাসাবাদ করে, বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি৷ আমার ব্যক্তিগত কত সম্পত্তি আছে সেটাই যেন সেবির কাছে সবচেয়ে বড় সমস্যার৷' সুব্রত রায় জানিয়েছিলেন, মোট পাঁচ কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে তাঁর৷
সারদা-র সর্বহারা এজেন্টদের টানতে পথে বেআইনি সংস্থা এমপিএস গ্রুপ
'বন্ধু'র বিপদ! তাই বেআইনি 'বন্ধু' সংস্থার এজেন্টদের ব্যবহার করে নিজেদের ব্যবসা বাড়াতে নেমে পড়ল অন্য একটি বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা৷
ঘোলা জলে মাছ ধরতে ছিপ ফেলেছে এমপিএস গ্রুপ৷ ফের লোক ঠকানোর টোপ! তা-ও আবার খবরের কাগজে ঘটা করে বিজ্ঞাপন দিয়ে৷ সারদা-কাণ্ড নিয়ে যখন গোটা রাজ্য উত্তাল, ঠিক তখনই সারদা গোষ্ঠীর কর্মহীন এজেন্টদের নিজেদের দলে টানতে কাগজে বিজ্ঞাপন দিল এই সংস্থা৷
শনিবার একাধিক বাংলা দৈনিকে এই সংস্থার চেয়ারম্যান পি এন মান্না বিজ্ঞাপন দিয়ে বলেছেন, 'জীবনযুদ্ধে যে সব বন্ধুগণ আজ হেরে গিয়েছেন বা হারার সম্ভাবনা হয়েছে, কোনও কিছু না-বুঝে প্রতারক কোম্পানিতে কাজ করার জন্য তাঁদের জন্য রইল আমার সমবেদনা৷ তাই এই চরম বিপদের দিনে আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ কোনওরূপ কৃতকর্মের জন্য জীবনের উপর বিতৃষ্ণা ও ক্ষোভপ্রকাশ না-করে পুনরায় নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন৷ আর এই ব্যাপারে যদি কিছু পরামর্শের প্রয়োজন হয়, তা হলে ফোন করুন ০৩৩-৩০৯০৭৪১২ নম্বরে সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা ছ'টার মধ্যে৷'
সারদা গোষ্ঠীর এজেন্টদের নিজেদের সংস্থায় নিয়ে আসতেই সংস্থার চেয়ারম্যান এই টোপ দিয়েছেন বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল৷ কারণ, নিজেদের ভুঁইফোঁড় সংস্থার জাল আরও বিস্তার করতেই সারদা গোষ্ঠীর নেটওয়ার্ককে ব্যবহার করতে চাইছে এমপিএস গ্রুপ৷ সারদা গোষ্ঠীর রমরমা বাজারে আমানতকারীদের বিশ্বাস অর্জনের প্রশ্নে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছিল তারা৷ এজেন্ট নির্ভর এহেন লোক ঠকানো ব্যবসায় সরদা গোষ্ঠীর এজেন্টরা টেক্কা দিয়েছিলেন অন্যান্য অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্টদের৷ সারদা গোষ্ঠীর গণেশ ওল্টানোর পর সারদার সেই 'দক্ষ' এজেন্টদের নিজেদের ব্যবসায় সামিল করে বেআইনি অর্থলগ্নির কারবারে 'বেতাজ বাদশা' হয়ে উঠতে চাইছে এমপিএস গ্রুপ৷
যদিও শেয়ার বাজার নিয়ামক সংস্থা সেবি সম্প্রতি কড়া নোটিস পাঠিয়েছে এমপিএসকে৷ শুধু তাই নয়, সেবি রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ মানুষকে এই সংস্থার 'কালেকটিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিমে' টাকা রাখতে নিষেধ করেছে৷ এমপিএস গ্রিনারি ডেভেলপার্সকে সমস্ত 'কালেকটিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিম' গুটিয়ে নিয়ে বিনিয়োগকারীদের লগ্নি ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয় সেবি৷ এই নির্দেশ না-মানলে সংস্থার কর্তৃপক্ষ এবং বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সেবি জানায়৷ সেবি তাদের রিপোর্টে আরও জানিয়েছে, সাময়িক রেজিস্ট্রেশন শর্ত না-মেনে কালেকটিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিমের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলেছে এমপিএস৷ বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও এমপিএস তাতে কর্ণপাত করেনি বলে দাবি সেবির৷ সেবি ছাড়াও কেন্দ্রীয় কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রী শচিন পাইলটও এই এমপিএস গ্রুপ সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন রাজ্য সরকারকে৷ গত ১৪ মার্চ লোকসভা অধিবেশনে ২৪৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তরে শচিন পাইলট রাজ্যের ৭৩ টি ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার তালিকা প্রকাশ করেছিলেন, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে৷ এই ৭৩টি সংস্থার মধ্যে এমপিএস গ্রুপের বিভিন্ন শাখার নামও আছে৷ স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, সারদা-কাণ্ডের পরও কী ভাবে এমপিএসের মতো একটি বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার চেয়ারম্যান কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে সারদা গোষ্ঠীর এজেন্টদের ফোন করতে বলেন?
সারদা-কাণ্ড ফাঁস হওয়ার পর থেকে চরম বিপাকে পড়েছে এ ধরনের অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি৷ প্রতিদিনই কোনও না-কোনও এই ধরনের অর্থলগ্নি সংস্থা খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজেদের পিঠ বাঁচানোর চেষ্টা করছে৷ সারদা গোষ্ঠীর মতো তারাও যে জনগণের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে চম্পট দেবে না, এটাই বিজ্ঞাপনগুলির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়৷
কলকাতা:পশ্চিম ভারতে পালিয়ে নতুন ভুঁইফোড় সংস্থা শুরুর ছক কষেছিলেন সুদীপ্ত সেন৷ জেরায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান অর্ণব ঘোষ৷ সারদা কর্তাকে জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ যে দাবি করছে, তাতে ইঙ্গিত মিলেছে, পুলিশের তত্পরতায় সোনমার্গের হোটেল থেকে দুই ঘনিষ্ঠ সঙ্গী সহ সুদীপ্ত সেন ধরা না পড়লে ঘটতে পারত আরও বিশাল কেলেঙ্কারি৷ হয়তো সর্বস্বান্ত হতেন আরও লক্ষ লক্ষ মানুষ৷
বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান জানিয়েছেন, জেরায় সুদীপ্ত সেন স্বীকার করেছেন, তাঁর পশ্চিম ভারতে সারদার নাম পাল্টে ফের এক ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা শুরু করার পরিকল্পনা ছিল৷ ১৬ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন এজেন্ট সারদার সফটঅয়্যার ব্যবহার করে নতুন পলিসি তৈরি করেছেন৷ তাঁদের সবাইকে চিহ্নিতও করা হয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গ এবং এ রাজ্যের বাইরে সারদার বিপুল সম্পত্তির হদিশও পেয়েছে পুলিশ৷ পুলিশের দাবি, এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ, পশ্চিম ত্রিপুরা, অসম, ওড়িশার বালেশ্বরে সারদার প্রায় ৪৫০ বিঘা জমির সন্ধান মিলেছে৷ সন্ধান মিলেছে সারদা গোষ্ঠীর মোট ২০১টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেরও৷ তার মধ্যে ২৫টি ভিন রাজ্যের শাখায়৷
এদিনই অসম পুলিশের একটি দল সারদাকাণ্ডে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে৷ অর্ণব ঘোষ জানিয়েছেন, তদন্তের স্বার্থে নির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে সারদা গোষ্ঠীর সংবাদ সংস্থাগুলির আধিকারিকদেরও জেরা করা হতে পারে৷
অন্যদিকে, বকেয়া টাকা না মেটানোর অভিযোগে এ দিনই সল্টলেক ইলেকট্রনিক কমপ্লেক্স থানায় সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে দুটি সংস্থা৷ সারদা গোষ্ঠীর সব অফিসে কম্পিউটার সরবরাহ এবং মেরামতির বরাত পেয়েছিল সংস্থা দুটি৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/national/60-more/36116-2013-04-28-06-36-19
নয়াদিল্লি: ভুঁইফোড় আর্থিক সংস্থাগুলিকে সমূলে নির্মূল করতে জোর দিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ৷ সারদা গোষ্ঠীর মতো চিটফান্ডগুলির রমরমা ব্যবসা বন্ধ করার কথা বললেন তিনি৷ ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা বেআইনি চিটফান্ডের দাপট ঠেকানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন মনমোহন৷ বহু কষ্ট, পরিশ্রমের ফসল সারদা গোষ্ঠীতে বিনিয়োগ করে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রতারিত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপতি ভবনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেছেন তিনি৷ তাঁর বক্তব্য, চড়া হারে সুদ পাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেআইনিভাবে লোকের কাছ থেকে টাকা তোলা বন্ধ করতে হবে৷
গত কয়েকদিন ধরে সারদা ও তাদের মতো চিটফান্ডগুলির বিরুদ্ধে আমানতকারী ও এজেন্টদের পুঞ্জীভূত রোষ আছড়ে পড়ছে রাজ্যের এখানে ওখানে৷সারদা কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পর বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠছিল, কেন্দ্রীয় আইনের ফাঁককে কাজে লাগিয়ে অবাধে ব্যবসা চালাচ্ছে চিটফান্ডগুলি৷ গত ২৪ এপ্রিল তহবিল গঠনের কথা বলতে গিয়ে, বামেদের পাশাপাশি চিটফান্ডের দায় কেন্দ্রের ওপরেও চাপান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ চিটফান্ড রুখতে কেন্দ্রের ভূমিকার সমালোচনা করেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারও৷
এরপরই নড়েচড়ে বসল কেন্দ্রীয় সরকার৷ ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থা ঘিরে বিপুল কেলেঙ্কারির অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তে নামল একাধিক সংস্থা৷ কেন্দ্রের তরফে এ দিন জানানো হয়েছে,কোম্পানি বিষয়কমন্ত্রক, সেবি ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া ইতিমধ্যেই চিটফান্ড সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে৷ পাশাপাশি অর্থমন্ত্রক সূত্রে খবর, সারদাকাণ্ডে এসএফআইও-র পাশাপাশি তদন্ত শুরু করেছে আয়কর দফতরও৷ সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের অভিযোগে মামলা রুজু করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট৷
অন্যদিকে, আর্থিক প্রতারণা রুখতে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবিকে আরও বেশি ক্ষমতা দেওয়ার পথে কেন্দ্রীয় সরকার৷
এর জন্য সেবি অ্যাক্ট, দ্য সিকিওরিটিস কনট্র্যাক্ট অ্যাক্ট এবং ডিপোসিটরস অ্যাক্ট সংশোধনেরও চিন্তাভাবনা শুরু করেছে কেন্দ্র৷ এর ফলে কোনও প্রতারক সংস্থার সম্পত্তি সরাসরি বাজেয়াপ্ত করার এক্তিয়ার পাবে সেবি৷ তদন্তের প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে যোগ রয়েছে এমন কোনও ব্যক্তি বা সংস্থার কাছ থেকেও তথ্য তলব করতে পারবে তারা৷
সূত্রের খবর, খুব দ্রুত আইন সংশোধন করা হবে বলে সেবিকে আশ্বাস দিয়েছে কেন্দ্র৷ চিটফান্ড নিয়ে সরকার যে কড়া পদক্ষেপ করতে চলেছে, তার ইঙ্গিত মিলেছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেও৷ এ দিন রাষ্ট্রপতি ভবনে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী৷ চিটফান্ড নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, মোটা টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে চিটফান্ড সংস্থাগুলি আমানতকারীদের কাছ থেকে বেআইনিভাবে অর্থ সংগ্রহ করছে৷ এই ধরণের সংস্থাকে নির্মূল করতেই হবে৷
চিটফান্ড দৌরাত্ম্য বন্ধে একাধিক সংস্থার তত্পরতা৷ সেবিকে শক্তিশালি করার ভাবনা৷ বিবৃতি খোদ প্রধানমন্ত্রীর৷ সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যাখ্যা, এইসব পদক্ষেপ থেকেই স্পষ্ট, চিটফান্ডের রমরমার দায় যে কোনও মূল্যে ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইছে ইউপিএ টু সরকার৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/national/60-more/36107-2013-04-27-13-35-30
রিসেপশনিস্ট থেকে সারদার সর্বময় কর্তা -সেলুলয়েড ছাপানো উত্থান কাহিনি
একেবারে সাধারণ রিসেপশনিস্ট থেকে কোম্পানির সর্বময় কর্তা। সুন্দরীদের অনেককেই টপকে সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের ঘনিষ্ঠ সহচরী। দেবযানী মুখার্জির উত্থানের কাহিনি হার মানাবে সিনেমাকেও। চব্বিশ ঘণ্টার হাতে সেই এক্সক্লুসিভ ছবি, যেখানে সিএমডি স্যারের সফরসঙ্গী দেবযানী ম্যাডাম। সঙ্গে চাঞ্চল্যকর নথিও।
সংস্থায় যোগ দিয়েছিলেন একেবারে সাধারণ কর্মী হিসাবে। কয়েক বছরের মধ্যেই একেবারে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে দেখা যেত দেবযানীকে। একই কেবিনের অফিস থেকে আউটডোর। সবজায়গাতেই ছায়াসঙ্গিনী হিসাবে থাকতেন দেবযানী। গোপন যাবতীয় কাজের একমাত্র সাক্ষী বিশ্বস্ত দেবযানী। কর্মী থেকে কার্যত মালকিন হয়ে যাওয়ার এই ঘটনা অবশ্য সহজভাবে হয়নি।
সংস্থার কর্ণধারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল কাজের খাতিরে দেশে বা বিদেশে দেবযানী গেলে কোনও আপত্তি নেই পরিবারের। দুহাজার আট সালে সেই চিঠি লিখেছিলেন দেবযানীর বাবা তিমির কুমার মুখার্জি।
দেবযানী বলছেন তিনি একজন সাধারণ কর্মী। বলছেন, সংস্থার কাজকর্ম সম্পর্কে তিনি নাকি বিশেষ কিছুই জানেন না। কিন্তু চব্বিশ ঘণ্টার হাতে আসা এক্সক্লুসিভ ছবি ও নথি প্রমান করছে অন্য কথা।
ভারত সরকারের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রক দুহাজার আট সালেই দেবযানী মুখার্জিকে তাঁর ডিরেক্টর আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা ডিন ইস্যু করে। যে কোনও সংস্থার ক্ষেত্রে যা সর্বোচ্চ কর্তারাই পেয়ে থাকেন।
সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস প্রাইভেট লিমিটেডের ডিরেক্টর হিসাবে দেবযানী দিল্লি অফিসের হিসাবপত্র দেখতে যাবেন। হিসাবে বেশকিছু গরমিলের কারণেই সংস্থার কর্তা হিসাবে তাঁর এই দিল্লি যাওয়া
দেবযানীর সম্পর্কে অ্যানাউন্সমেন্টের অডিও এবং প্রদীপ জ্বালানোর ছবি
বহু মহিলা বহু সময়ে সুদীপ্ত সেনের ঘনিষ্ঠ হয়েছেন। তারপর সরেও গিয়েছেন অনেকে। সেই ছবি স্পষ্ট হয়েছে আন্দামান সফরের এক অনুষ্ঠানেও।
এমনভাবে একদিকে সুদীপ্ত সেনের সফরসঙ্গী থেকে আরও ঘনিষ্ঠ হওয়া, অন্যদিকে সংস্থার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া। এখন দেবযানী পুলিসের কাছে যাই দাবি করুন না কেন, সংস্থার প্রত্যেককর্মীই জানতেন, সিএমডি স্যারের পরেই সারদার নম্বর টু- দেবযানী ম্যাডাম।
http://zeenews.india.com/bengali/kolkatta/debjani-way-to-jail_13033.html
আইন আটকাতে পারে আদালতে
অমল সরকার
বহুচর্চিত নতুন আইনে কি সুদীপ্ত সেনদের শাস্তি দেওয়া সম্ভব? তাঁদের কি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে? রাজ্যের বিশিষ্ট আইনজ্ঞরা একবাক্যে বলছেন, না৷ নতুন আইনে সুদীপ্তদের শাস্তি দিতে গেলে তা অসাংবিধানিক হয়ে যাবে৷
রাজ্য সরকারের অবশ্য দাবি, যে আইন তারা করতে চলেছে, তাতে বর্তমানে চালু সব সংস্থার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়ার সংস্থান থাকছে৷ আইনজ্ঞরা কিন্ত্ত রাজ্যের এই দাবি মানতে রাজি নন৷ তাঁরা যেটা বলছেন, তার সারমর্ম, সংবিধানের ২০ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ফৌজদারি মামলায় আজকের কোনও অপরাধের বিচার আগামীকাল তৈরি কোনও আইনে হতে পারে না৷ আইনি পরিভাষায় একে বলে 'আল্ট্রা ভাইরিস', যে লাতিন শব্দবন্ধের অর্থ 'ক্ষমতার বাইরে'৷
তাঁরা যা বলছেন, তার অর্থ কী? সুদীন্তরা দোষী প্রমাণিত হলে নতুন আইনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সংস্থান থাকছে৷ কিন্ত্ত নতুন আইনে যদি তাঁদের বিচার করা সম্ভব না-হয়, তা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা চলবে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০ (প্রতারণা) ও ১২০বি (ষড়যন্ত্র) ধারাতেই৷ প্রথম ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তির পরিমাণ সাত বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড (প্রথম ধারায়) এবং ৬ মাসের কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড বা দুই-ই৷ সে ক্ষেত্রে এর চেয়ে কঠোর শাস্তি কিন্ত্ত ভোগ করতে হবে না সুদীপ্তদের৷
সুদীপ্ত সেনের ক্ষেত্রে যে দ্বিতীয়টিই হওয়ার সম্ভাবনা জোরালো, তা স্পষ্ট আইনজ্ঞদের কথায়৷ এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ও রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায় বলছেন, 'কোনও ফৌজদারি অপরাধের জন্য কখনওই রেট্রোস্পেক্টিভ আইন করে শাস্তি দেওয়া যায় না৷' তাঁর ব্যাখ্যা, দেওয়ানি মামলায় আজকের অপরাধের বিচার আগামীকালের আইনে হতে পারে, যেমন সম্পত্তি বাজেয়ান্ত করে নেওয়া৷ তা হলে এ অবস্থায় রাজ্যের কি করণীয়? চিত্ততোষবাবু বলছেন, 'আমি তো বিলটা দেখিনি৷ যাঁরা বিল বানাচ্ছেন, তাঁরা তো সবাই পণ্ডিত মানুষ৷ দেখা যাক, সরকার কী বিল আনে৷'
একই মত কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ তিনিও মনে করছেন, 'আদালতে এই আইন টিকবে না৷ সুপ্রিম কোর্টের অন্তত কুড়িটা জাজমেন্ট আছে এ রকম৷ কারণ ফৌজদারিতে রেট্রোস্পেক্টিভ আইন চলে না৷' দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে কী ভাবে রেট্রোস্পেক্টিভ আইন প্রযোজ্য হতে পারে, তা বোঝাতে ভগবতীবাবু বামেদের আমলে ভূমি সংস্কার আইনের প্রসঙ্গ এনেছেন৷ বিনয়কৃষ্ণ চৌধুরী ভূমিমন্ত্রী থাকাকালীন ১৯৮২ সালে ভূমি সংস্কার আইনের উপর সেকেন্ড অ্যামেন্ডমেন্ট বিল এনেছিল বামফ্রন্ট সরকার৷ সে আইনের বিধানগুলি লাগু হয়েছিল ১.১.৬৯ সাল থেকে৷ কিন্ত্ত সে ক্ষেত্রে নয়া বিধি প্রয়োগে কোনও অসুবিধা হয়নি দেওয়ানি বিধি ছিল বলেই৷ রাজ্য সরকারের নতুন আইনের প্রতি সংশয় প্রকাশ করে আইনজ্ঞরা জানিয়েছেন, ফৌজদারি অপরাধের জন্য অতীতে আনা এমন বহু আইন শেষ পর্যন্ত বাতিল করতে হয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে গোল্ড কন্ট্রোল অ্যাক্ট বা প্রিভেন্টিভ ডিটেনশন অ্যাক্টের মতো আইনও৷
সারদা-সহ বেআইনি আর্থিক সংস্থাগুলির কেলেঙ্কারি খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারের গড়া কমিশনের যিনি মাথা, সেই শ্যামল সেন অবশ্য তাঁর বক্তব্য কিছুটা অস্পষ্ট রেখেছেন৷ তবে মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও রাজ্যের প্রাক্তন অস্থায়ী রাজ্যপালও মেনে নিচ্ছেন, 'ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে এ রকম করা যায় না৷ কেউ-ই সংবিধানের ঊর্ধ্বে নয়৷ তবে আইনটা না দেখে কোনও মন্তব্য করব না৷ যাঁরা আইন বানাচ্ছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই সেটা মাথায় রেখেছেন৷' সংবিধানের ২০ (১) অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী জয়ন্ত মিত্রও বলছেন, 'এটা সম্ভব নয়, কারণ তাতে সংবিধান লঙ্ঘিত হবে৷'
এর উল্টো মত আছে কি? বিল তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়েছেন, রাজ্য সরকারের এমন একজন পদস্থ আইনজ্ঞও কিন্ত্ত নিজের সংশয় গোপন রাখেননি৷ তবে তাঁর সতর্ক ব্যাখ্যা, সরকার যে আইন আনছে, তার দু'টি অংশ আছে৷ একটি 'সিভিল' বা দেওয়ানি অংশ আছে, যাতে রেট্রোস্পেক্টিভ আইন লাগু করা সম্ভব৷ ফলে প্রতারকদের সম্পত্তি বাজেয়ান্ত করতে কোনও সমস্যা হবে না৷ কিন্ত্ত ফৌজদারি অর্থাত্ জেল-জরিমানার অংশতে যেহেতু তা লাগু করা সম্ভব নয়, তাই তা নিয়ে সন্দিহান ওই আইনজ্ঞ নিজেও৷ ঘটনা হল, নিজের সংশয়ের কথা তিনি জানিয়েও দিয়েছেন রাজ্য সরকারকে৷ অর্থাত্, নতুন আইনের সংস্থান নিয়ে বল এখন রাজ্য সরকারের কোর্টেই৷
http://eisamay.indiatimes.com/-/to-check-the-act-of-chit-fund/articleshow/19763652.cms
গঠিত হল সিট-ও | ||||||||
সময়ের আগেই অন্তর্বর্তী রিপোর্ট দিতে পারে কমিশন | ||||||||
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা | ||||||||
সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গড়া তদন্ত কমিশনের সময়কাল ৬ মাস। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের কথা ভেবে তার আগেই অন্তর্বর্তী রিপোর্ট দিতে পারে কমিশন। শনিবার কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি শ্যামলকুমার সেন জানান, এই রিপোর্ট পাওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে আবেদন জানাতে হবে। পাশাপাশি এ দিনই রাজ্যের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ১২ জনের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা হয়েছে। শুক্রবার কলকাতায় ৫ নম্বর কাউন্সিল হাউস স্ট্রিটে প্রাক্তন বিচারপতি শ্যামলকুমার সেনের নেতৃত্বে সরকার নিযুক্ত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিশনের কাজ শুরু হয়েছে। কমিশন সূত্রের খবর, শ্যামলবাবুর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের ওই কমিশনে শীঘ্রই যোগ দিচ্ছেন প্রাক্তন পুলিশকর্তা যোগেশ চট্টোপাধ্যায় ও অর্থনীতিবিদ অম্লান বসু। বাকি দু'জনের নাম এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তদন্তের গণ্ডী (টার্মস অফ রেফারেন্স) ৯টি বিষয়ের উপর সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। এ দিন শ্যামলবাবু বলেন, "তদন্তের বিচার্য বিষয়েই বলা রয়েছে, জরুরি কোনও ক্ষেত্রে সরকার চাইলে অন্তর্বর্তী রিপোর্ট দেওয়া হবে।" কী সেই জরুরি প্রয়োজন? এ বিষয়ে কমিশনের বক্তব্য, এমন অনেক আমানতকারী রয়েছেন, যাঁরা সর্বস্বান্ত হয়েছেন। বেশি দিন অপেক্ষা করার মতো আর্থিক অবস্থা তাঁদের নেই। হয়তো তাঁদের কথা ভেবেই অন্তর্বর্তী রিপোর্টের প্রয়োজন হতে পারে। সে কারণেই সরকারি বিচার্য বিষয়ে তার উল্লেখ করা হয়েছে। সারদা গোষ্ঠীর সমস্ত সম্পত্তির মূল্যায়ন করার ক্ষমতাও রয়েছে কমিশনের হাতে। বিচার্য বিষয়ের ৭ নম্বর সূচিতে বলা হয়েছে, সারদা'র সম্পত্তির পরিমাণের পাশাপাশি মোট দায় (লায়াবিলিটি) কত, তার হিসেবও নেবে কমিশন। এ বিষয়ে কমিশন পেশাদার চার্টাড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও ভ্যালুয়ার নিয়োগ করবে বলে জানা গিয়েছে। ওই কোম্পানি কোন প্রকল্পে, কী ভাবে মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলত, তা-ও তদন্ত করে দেখবে কমিশন। একই সঙ্গে ওই সব প্রকল্পে তোলা টাকার পরিমাণ কত, তার হিসেব বের করতে হবে কমিশনকে। | ||||||||
| ||||||||
কলকাতার বিবাদী বাগ এলাকায় রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের বাড়ির তিনতলায় তদন্ত কমিশনের অফিস হয়েছে। শ্যামলবাবু বলেন, "আগামী দু'-তিন দিনের মধ্যে আরও দুই সদস্য যোগ দেবেন। তার পরই কমিশনের একটি বৈঠক হবে।" কমিশন সূত্রের খবর, ওই বৈঠকেই ঠিক হবে কোন কোন স্থানে, কখন থেকে অভিযোগপত্র জমা নেওয়া হবে। কমিশন চায়, রাজ্যের প্রতিটি জেলায় কোনও একটি সরকারি অফিসে অভিযোগপত্র জমা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ যাতে অনলাইনেও অভিযোগ জানাতে পারেন, তার ব্যবস্থাও করছে কমিশন। কমিশনে জমা পড়া অভিযোগ সরকার নিযুক্ত বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) কাছে পাঠানো হবে। সারদা কাণ্ডের ঘটনার পিছনে কারা কারা জড়িত, তা-ও দেখবে কমিশন। তবে তদন্তের বিচার্য বিষয় যা-ই হোক না কেন, কমিশন তাদের রিপোর্টে শুধু সুপারিশ করতে পারে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কোনও এক্তিয়ার তাদের নেই। বিষয়টা আদালত পর্যন্ত গড়ালে কী হবে জানতে চাইলে শ্যামলবাবু বলেন, "সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই।" তিনি বলেন, "সরকার একটা নতুন আইন করছে। দেখা যাক, সেই আইনে কী বলা হচ্ছে।" এ দিকে, গঠিত হওয়ার পরই তড়িঘড়ি কাজ শুরু করতে চাইছে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)ও। মহাকরণ সূত্রের খবর, শনিবারই বিধাননগর কমিশনারেটে গিয়েছিলেন এডিজি (সিআইডি) শিবাজী ঘোষ ও দুই পুলিশ-কর্তা। সেখানে তাঁরা বেশ কিছু ক্ষণ কথাও বলেন। দু'-তিন দিনের মধ্যেই পুরোদমে কাজ শুরু করবে 'সিট'। তবে তার আগে বিশেষ তদন্তকারী দলকে সাহায্য করার জন্য আরও কয়েক জন ডিএসপি, অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনার ও ইন্সপেক্টরকে মনোনীত করা হবে। সাহায্যকারী দলটির সদস্যদের বাছাই করবেন এডিজি (সিআইডি) ও কলকাতার পুলিশ কমিশনার। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানান, ডিজি-র নেতৃত্বে গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দলে শিবাজী ঘোষ, কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ-সহ রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের ১১ জন আইপিএস অফিসারকে রাখা হয়েছে। তার মধ্যে ছ'জন-ই সিআইডি-র। এই দলে রয়েছেন সুমন মুখোপাধ্যায় নামে এক আইনি পরামর্শদাতা-ও। কী করবে সিট? একটি সূত্রের খবর, কমিশনের পাঠানো অভিযোগগুলি ছাড়াও রাজ্যের অন্যান্য ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থার বিষয়ে খোঁজখবর ও তদন্ত চালাবে বিশেষ তদন্তকারী দল। সেবি, আয়কর-সহ কেন্দ্রীয় আর্থিক অপরাধ দমন সংস্থাগুলির সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে চলবে তারা। http://www.anandabazar.com/28raj2.html |
জলে ছায়া 'ভি'র, দেখলেন কাকলিরা
কলকাতা ময়দানও যে এখনও অর্থলগ্নি সংস্থার দখলে, তা প্রমাণ হয়ে গেল আরও একবার!
শনিবার বিকেলে বারাসত স্পোর্টস কমপ্লেক্সের একটা অংশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শাসক-বিরোধী দলের অনেক নেতাই তখন হাজির৷ একটি অর্থলগ্নি সংস্থার বিজ্ঞাপনী লোগো আচমকাই তুলে দিল নয়া বিতর্ক৷ সেই সংস্থার লোগো আড়াল করতেই বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল পুলের জল৷ কিন্ত্ত জল থিতোতেই স্পষ্ট হয়ে উঠল ভিভজিওরের লোগো৷ শাসকদলের নেতারা তখন মুখ চাওয়াচাওয়ি করছেন৷
সুইমিং পুলের উদ্বোধনের জন্য রাখা হয়েছিল ছোটদের সাঁতার প্রতিযোগিতা৷ তা শুরুর সময়ও বোঝা যায়নি বিতর্কের জল গড়াতে শুরু করবে এ বার৷ বাচ্চাদের সাঁতার শেষ হতেই শান্ত হয়ে যায় পুলের জল৷ তখন পুলের দেওয়ালে ভিভজিওরের 'ভি' সিম্বল স্পষ্ট হয়ে ওঠে৷ অস্বস্তিতে পড়েছেন স্টেডিয়ামের নতুন মালিক রাজ্য ফুটবল সংস্থার সচিব উত্পল গঙ্গোপাধ্যায় ও অন্য কর্তারা৷ স্টেডিয়াম লিজ নিচ্ছে আই এফ এ৷ এখানেই হবে অনেক বড় ম্যাচও৷ প্রশ্ন উঠে গেল, তবে কি বারাসত স্টেডিয়ামের পরিকাঠামো উন্নয়নের পিছনেও রয়েছে এই ধরনের টাকা?
সারদার কাণ্ডের পরে ময়দানের সঙ্গে অর্থলগ্নি সংস্থার সাম্রাজ্যের সরাসরি যোগাযোগও প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে৷ মোহনবাগানের সৃঞ্জয় বসু, ইস্টবেঙ্গলের দেবব্রত সরকারের নাম জড়িয়ে গিয়েছে সারদা কাণ্ডের সঙ্গে৷ দেবব্রতর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ৪০ কোটি টাকা নেওয়ার৷ ফলে, রাজনৈতিক মহলের মতো ময়দানি কর্তারাও বেশ সতর্ক৷ হয় যাবতীয় যোগাযোগ ছিন্ন করা হয়েছে, নয়তো গোপন করা হচ্ছে অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে গোপন সম্পর্ক৷
এত দিন বারাসত স্টেডিয়াম ছিল ওই সংস্থাগুলোর বিজ্ঞাপনী প্রচারের অন্যতম জায়গা৷ চতুর্দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল নানা কোম্পানির সাইডবোর্ড৷ দেওয়ালে দেওয়ালে ফলাও করে ছিল নানা রংয়ের চিডফান্ড স্লোগানও৷ কিন্ত্ত হঠাত্ করে বিতর্ক উঠে যাওয়া তা থেকে দূরে থাকার জন্য বারাসত স্টেডিয়াম থেকে রাতিরাতি লোপাট করা হয় যাবতীয় হোর্ডিং৷ মুছে ফেলা হয় সমস্ত দেওয়াল লিখন৷ কিন্ত্ত কেউই খেয়াল করেননি সুইমিং পুলেই রয়ে গিয়েছে বিতর্কের নির্ভেজাল খোরাক৷
বারাসত স্টেডিয়াম পঁচিশ বছরের লিজে নিয়েছে রাজ্য ফুটবল সংস্থা৷ নতুন করে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে বারাসত স্টেডিয়াম৷ কাজ শুরু হয়েছে প্রায় খানেক৷ সংস্কারের খরচ প্রায় এক কোটি টাকা৷ কাজও প্রায় শেষের মুখে৷ যুবভারতীর মতো কৃত্রিম ঘাসের মাঠ তৈরি৷ এ দিন ছিল সুইমিং পুল ও জিমের উদ্বোধন৷ রাজ্য ফুটবল সংস্থার ডাকে তৃণমূল নেতা থেকে সিপিএম কর্মী, অনেকেই ছিলেন৷ অনুষ্ঠানও শুরু হয়েছিল ভালোভাবেই৷ কিন্ত্ত সুইমিং পুলের জল শান্ত হতেই বিতর্কের লহর উঠে গেল৷
সারদা কান্ডের পর যাতে নতুন করে তা নিয়ে বিতর্কে পড়তে না হয় তার জন্য আগে থেকেই সতর্ক ছিল আইএফএ৷ সুইমিং পুল ও জিমের উদ্বোধনে হাজির ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বারাসতের সাংদস কাকলি ঘোষ দস্তিদার, জেলাশাসক সঞ্জয় বনসাল৷ জ্যোতিপ্রিয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলছিলেন, 'বারাসতে যাতে আই লিগ সহ অন্য ফুটবল ম্যাচ হয় তার জন্য দ্রুত তৈরি করা হচ্ছে৷ এখানে ভারতের অন্যতম সেরা ফিল্ডটার্ফ বসানো হচ্ছে৷' কিন্ত্ত সুইমিং পুলে কী করে এল চিটফান্ডের লোগো? খাদ্যমন্ত্রী বলে দেন, 'স্টেডিয়ামের দায়িত্বে জেলা পরিষদ৷ এটা সম্পূর্ণ সরকারি অনুষ্ঠান৷ এর সঙ্গে চিটফান্ডের কোনও যোগ নেই৷'
কিন্ত্ত অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে আইএফএ-র যোগ আছে কি না, জানতে চাইলে সচিব উত্পল গঙ্গোপাধ্যায় চটে গিয়ে বলে দিয়েছেন, 'যাঁরা নির্মাণ কাজে জড়িয়ে ছিলেন, তাঁদের গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন৷ আইএফএ-র সঙ্গে কোনও চিটফান্ড কোম্পানির কোনও সম্পর্ক নেই৷' আই এফ এ লিগ সম্প্রসারের দায়িত্বে যদিও একটি অর্থলগ্নি সংস্থার টিভি চ্যানেল৷ যতই অস্বীকার করুন, ময়দান-অর্থলগ্নি সংস্থার মধুর সম্পর্ক ফের চলে এল প্রকাশ্যে৷
নতুন বিলটিতে নতুন কী আছে? সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই বিলে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা যাবে (আগের বিলে আটক করার ক্ষমতা ছিল)। দ্বিতীয়ত, এই বিলে সন্দেহভাজনের বাড়ি বা অফিসে দরজা, বাক্স, লকার, আলমারি বা সিন্দুকের তালা ভেঙে তল্লাশির অধিকার রয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, সারদা-কাণ্ডের অভিযুক্তদের ছাড় দিতেই পুরনো বিল প্রত্যাহার করে নতুন বিল আনছে সরকার। জবাবে সরকার বলেছিল, নতুন বিলে আগের ঘটনাকে যুক্ত করা হবে (অর্থাৎ রেট্রোস্পেকটিভ এফেক্ট রাখা হবে)। বিলের ২১ নম্বর ধারায় সেটাই স্পষ্ট করার চেষ্টা হয়েছে। বলা হয়েছে, আগের বিভিন্ন কমিশন যে সব সুপারিশ করেছে, তা এই বিলের আওতায় আসবে এবং কার্যকর করা যাবে। একেই 'রেট্রোস্পেকটিভ এফেক্ট' বলছেন সরকারের শীর্ষকর্তারা। এ ব্যাপারে শাসক দলেরও বক্তব্য, প্রাক্তন বিচারপতি শ্যামল সেন নেতৃত্বাধীন কমিশন সারদা-কাণ্ডে যে রিপোর্ট দেবে, তা নতুন আইনে বিচার করা হবে।
বিরোধীরা কিন্তু বলছেন, নতুন বিলে নতুন কিছুই নেই। বরং একাধিক এমন বদল করা হয়েছে যাতে উল্টে প্রতারিতদের হয়রানি বাড়বে। দীর্ঘসূত্রী হবে বিচার প্রক্রিয়া। বিরোধীদের তাই বক্তব্য, যে সামান্য তফাত আছে আগের বিলের সঙ্গে সেটা ওই বিলেই সংশোধন করে দেওয়া যেত। তাতে ২০০৯ সাল থেকে এই সংক্রান্ত সব ফৌজদারি অপরাধ চলে আসত বিলের আওতায় আর সুদীপ্ত সেনের গলায় ফাঁস আঁটাও সম্ভব হত। নতুন বিলটিকে 'চোখে ধুলো দেওয়া' বলে মন্তব্য করেছেন প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম। তিনি বলেন, "২০০৯ সালে যে বিল আনা হয়েছিল, তার সঙ্গে প্রস্তাবিত নতুন বিলে বিশেষ ফারাক নেই। কিছু ক্ষেত্রে শব্দ বদল এবং পুরনো বক্তব্যকে ভেঙে বিস্তারিত করা হয়েছে বা ছোট করা হয়েছে।"
প্রশ্ন উঠেছে রেট্রোস্পেকটিভ এফেক্ট নিয়ে। কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া বলেছেন, "রেট্রোস্পেকটিভ এফেক্ট দেওয়ার বিষয়টি কি সংবিধানের ২০ ধারার পরিপন্থী নয়? নতুন আইন পাশের আগে কেউ যদি কোনও অপরাধ করে, আগামী দিনের পাশ করা নতুন আইন দিয়ে অতীতের অপরাধীর শাস্তি হতে পারে কি?" হাসিম আব্দুল হালিমও বলেন, "সংবিধানের ২০ ধারায় বলা হয়েছে, যখন অপরাধ সংগঠিত হয়েছে, তখন ওই বিষয়ে যে আইন ছিল তা-ই কার্যকর হবে। ফলে, নতুন আইন করা হলেও সারদা কাণ্ডে অভিযুক্তদের নতুন আইনের আওতায় আনা যাবে না।" তাঁর বক্তব্য, বরং আগের বিলটিতে সংশোধনী আনলে ঠিকঠাক কাজ হত।
রেট্রোস্পেকটিভ এফেক্ট নিয়ে সংশয় রয়েছে প্রশাসনিক মহলেও। গত বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মহাকরণে আইন তৈরির কথা ঘোষণা করার আগে সম্ভাব্য আইনটির খুঁটিনাটি নিয়ে স্বরাষ্ট্র, আইন ও অর্থ বিভাগের অফিসারদের বৈঠক হয়। সেখানেই তাঁদের জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রী চান, সারদা তো বটেই, তার আগেও এ ধরনের জালিয়াতির যে সব ঘটনা ঘটেছে, সে সবই এই আইনে ধরতে হবে। এই কথা শুনে আপত্তি জানান স্বরাষ্ট্র ও আইন দফতরের অফিসারদের অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, এ ভাবে নতুন বিলে পুরনো মামলা টানা যায় না।
তার পরেও শাসক দল কিন্তু নিজেদের অবস্থান থেকে সরছে না। আগের বিলের থেকে এই বিল কোন দিকে বেশি কঠোর, এই প্রশ্নের জবাবে শাসক দলের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা ২১ ধারার উল্লেখ করে জানিয়েছেন, আগের কমিশনগুলির সুপারিশও এই আইনের আওতায় আসবে। শাসক দলের একটি বড় অংশ বলছে, নতুন ধারা সংযোজন করে সারদা-কাণ্ডের বিচারের দরজাও খুলে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য, আগের আইনে শুধু সম্পত্তি আটক করার কথা বলা হয়েছিল। এ বারে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার সুযোগ থাকছে। সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হলে প্রতারিতদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থাও করা যাবে। যেটা 'আটক' করা হলে সম্ভব নয়। এর জবাবে বিরোধীদের বক্তব্য, এটুকু তো পুরনো আইন সংশোধন করেই দেওয়া যেত। তার জন্য নতুন আইন করার দরকার কী?
বিরোধীদের আরও অভিযোগ, নতুন বিল বিচার ব্যবস্থাকে দীর্ঘসূত্রী করবে। কেন দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হবে, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মানস ভুঁইয়া বলেছেন, "আগের বিলে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ হিসেবে জেলায় জেলাশাসক ও শহরে পুলিশ কমিশনারকে রাখা হয়েছিল। নতুন বিলে 'ডিরেক্টর অফ ইকনমিক অফেন্স সেল'-কে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফলে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে ক্ষমতা। সবটাই চলে যাচ্ছে এক জন ব্যক্তির হাতে।" এর ফলে এক দিকে যেমন মামলা মিটতে সময় লাগবে, অন্য দিকে গ্রামের লোককে শহরে ছুটে আসতে হবে বলে মনে করছেন বিরোধী নেতৃত্বের একটি বড় অংশ। নতুন বিলে যে ডেজিগনেটেড কোর্ট-এর তদন্ত করার কথা রয়েছে, তা-ও বিচারকে দীর্ঘসূত্রী করবে বলে মনে করেন মানসবাবু। তাঁর মতে, এটাই বিলের প্রধান খামতি। তবে সম্পত্তি আটকের বদলে বাজেয়াপ্ত করার দিকটি সদর্থক বলে মনে করেন তিনি।
অন্য দিকে, বামফ্রন্টের বৈঠকের পরে ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর অভিযোগ, "নতুন বিল এনে তদন্তের কাজে দেরি করিয়ে দিতে চায় রাজ্য সরকার, যাতে অভিযুক্ত ছাড়া পেয়ে যায়।" নতুন বিলের ব্যাপারে বামেরা আপত্তি তুলবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বিমানবাবু বলেন, "বাম পরিষদীয় দল যা করার করবে।" কী করা হবে, তা ঠিক করতে আজ, রবিবার আলিমুদ্দিনে বৈঠকে বসছেন বাম নেতারা।
নতুন বিলটি পাশ করিয়ে আইন তৈরি করার কাজও সময়সাপেক্ষ বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা। বিমানবাবু বলেন, "বিলটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর পরে তিনি আইন মন্ত্রক, অর্থ মন্ত্রক এবং কোম্পানি মন্ত্রকে বিলের কপি পাঠাবেন। তারা নোট দেওয়ার পরে পুনরায় তা রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। তার পরে রাষ্ট্রপতি নোট দিয়ে সেটি রাজ্য সরকারের কাছে পাঠাবেন। সব মিলিয়ে অনেক দেরি হবে।"
কিন্তু রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে ২০১০ সালে এই বিল ফেরত আসার পরেও তা নতুন করে বামফ্রন্ট বিধানসভায় পাশ করায়নি কেন? জবাবে বিমানবাবু বলেন, "বামফ্রন্ট দেরি করেছে মানছি। কিন্তু তৃণমূল ক্ষমতায় এসে দু'বছরের মধ্যে তা সংশোধন করে কেন রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাল না?"
শাসক দলের পক্ষে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন এই বিল নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁর দাবি, "ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। দ্রুততার সঙ্গে, স্বচ্ছতার সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীদের সুবিচারের ব্যবস্থা করবে আমাদের সরকার।"
তদন্তের খুঁটিনাটি |
• রাজীব কুমারের সঙ্গে দেখা করলেন সিবিআই কর্তা • বিভিন্ন ব্যাঙ্কের ১০০টি শাখায় ২১০ অ্যাকাউন্ট • ৪৫০ বিঘা জমি। কয়েকশো গাড়ি • ত্রিপুরা, অসম, ওড়িশার বালেশ্বরে জমির হদিস • সুদীপ্ত-সঙ্গী মনোজ নেগেলকে নিয়েও তল্লাশি |
নতুন মাত্র ৪ |
• সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অধিকার • দরজা, বাক্স, লকার, আলমারি, সিন্দুক ভেঙে তল্লাশির অধিকার • উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ ডিরেক্টর অফ ইকনমিক অফেন্স সেল। আগে ছিলেন ডিএম, পুলিশ কমিশনার • আগের নানা কমিশনের সুপারিশ আওতায় আসবে, অর্থাৎ রেট্রোস্পেকটিভ এফেক্ট থাকছে |
পাল্টা যুক্তি |
• ডিএম-এর বদলে ডিরেক্টর অফ ইকনমিক অফেন্স সেলের হাতে দায়িত্ব এলে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ হবে। গ্রামের লোককে কলকাতায় আসতে হবে। বিচার দীর্ঘসূত্রী হবে। • মামলাগুলি ফৌজদারি হওয়ায় সেগুলিতে রেট্রোস্পেকটিভ এফেক্ট কার্যকর হবে না, সংবিধানের ২০ ধারাতেই বলা আছে। |
|
No comments:
Post a Comment