ভুঁইফোঁড় সংস্থা নিয়ন্ত্রণে বিধানসভায় আগামীকাল মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল যে বিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার পেশ করতে চলেছে তার সঙ্গে বাম আমলে পাশ হওয়া বিলের ব্যাপক সাদৃশ্য থাকায় সরাসরি এর বিরোধিতা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম৷ কিন্ত্ত একেবারে বিরোধিতা না করলে চিটফান্ড নিয়ন্ত্রণের সমস্ত কৃতিত্ব নিয়ে চলে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই আশঙ্গাও করছে পার্টি৷ বিরোধী হিসেবে সিপিএম তথা বামেদের পক্ষে যা হতে দেওয়া রাজনৈতিক ভাবে সম্ভব নয়৷ আবার সরাসরি বিরোধিতা করলে বামেদের বিরুদ্ধে যেমন দ্বিচারিতার অভিযোগ উঠবে তেমনই সারদার মতো সংস্থার শাস্তি হোক সিপিএম চায় না এই বার্তা ছড়িয়ে যাবে সর্বত্র৷ ফলে জাঁতাকলে পড়ে গিয়েছেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের পক্ককেশ নেতৃত্ব৷ এই পরিস্থিতিতে এখন সিপিএম সিঙ্গুর বিলের ক্ষেত্রে যে কৌশল নিয়েছিল সেই একই কৌশল ভঁুইফোঁড় সংস্থা বিরোধী বিলের ক্ষেত্রেও নিতে চলেছে৷ অর্থাত্ নীতিগত ভাবে নতুন বিলের বিরোধিতা না করে বিলের খঁুটিনাটি নিয়ে প্রশ্ন তুলে পরোক্ষে বিরোধিতা করতে চাইছে সিপিএম৷
বামেদের মতোই এই বিল নিয়ে দোলাচলে রয়েছে প্রদেশ কংগ্রেসও৷ সরাসরি এই বিলের বিরোধিতার কথা বলছেন না প্রদীপ ভট্টাচার্যের মতো প্রদেশ নেতারা৷ তাঁদের বক্তব্য, রাজ্য সরকার যে আইন আনতে চলেছে তা সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে কিনা স্পষ্ট নয়৷ যদি এর মাধ্যমে সারদার শাস্তির সুযোগ না থাকে তা হলে এই বিলের বিরোধিতা করা হবে৷ সিপিএমের মতোই কংগ্রেসও সিবিআই তদন্তের পক্ষে এখনও সওয়াল করছে৷ রাজ্য সরকার সিবিআই তদন্তে রাজি না হলে আদালতের শরনাপন্ন হওয়ার কথা এ দিন শিলিগুড়িতে দলের এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন প্রদীপ ভাচার্য৷ নতুন আইন তৈরি করতে গিয়ে রাজ্য সরকার সময় নষ্ট করতে চাইছে বলেও মনে করছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব৷ তাঁর বক্তব্য, 'রাজ্য সরকার সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দীর্ঘসূত্রিতা করছে৷ না হলে বাম আমলে আইনে কয়েকটি সংযোজন করেই সেটা চালু করা যেতে পারত৷'
বিধানসভায় পেশ হতে চলা বিল নিয়ে বামেদের অবস্থান কী হবে তা নির্ধারণ করতে রবিবার দুপুরে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএম রাজ্য দন্তরে বৈঠকে বসেন বাম নেতারা৷ এই বৈঠকে ছিলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, আনিসুর রহমান, সিপিআই-র আনন্দময় মণ্ডল, ফরওয়ার্ড ব্লকের অক্ষয় ঠাকুর, ডিএসপি-র প্রবোধ সিন্্হার মতো নেতারা৷ বিধানসভার ফ্লোরে এই বিল নিয়ে বামেদের কী কৌশল হবে তা নিয়ে দীর্ঘ মতবিনিময় হয় তাঁদের মধ্যে৷ প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে এই বিলের মূল বার্তা যেহেতু ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করা তাই সরাসরি এই বিলের বিরোধিতা করবে না সিপিএম৷ তার বদলে এই বিলের কিছু অংশ নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন বাম বিধায়করা৷ একইসঙ্গে কেন বাম আমলে ২০০৯ সালে পাশ হওয়া বিলকে রাজ্য সরকার কার্যকর করল না সেই প্রশ্নও তোলা হবে বামেদের তরফে৷
নতুন বিল সভায় পেশ করার আগে বাম আমলের বিলটিকে বিধানসভায় রীতিমাফিক প্রত্যাহার করাতে হবে সরকারকে৷ রাজ্য সরকার যখন বাম আমলের বিল প্রত্যাহারের প্রস্তাব পেশ করবে তখন তার বিরোধিতা করার কৌশল নিয়েছে সূর্যকান্ত মিশ্রের মতো সিপিএম নেতারা৷ প্রয়োজনে ভোটাভুটির রাস্তায় যেতে পারেন বামেরা৷ কিন্ত্ত নতুন বিলের ক্ষেত্রে সরাসরি বিরোধিতা করা যে সম্ভব নয় তা এ দিনের বৈঠকে মেনে নিয়েছেন সকলেই৷ তার বদলে নতুন বিলের তিন চারটি অংশ পরিবর্তনের দাবি করবেন বামেরা৷ যেমন কমিশনের বিষয়টি বিলে অন্তর্ভূক্ত করে রেট্রোসপেকটিভ এফেক্ট দেওয়ার যে চেষ্টা বিলে করা হয়েছে তা অসাংবিধানিক বলে ব্যাখ্যা দিতে পারেন বামেরা৷ যদিও প্রশ্ন উঠছে বামেদের ২০০৯ সালের বিলেও রেট্রোসপেকটিভ এফেক্ট দেওয়া হয়েছিল ফলে তা-ও কতটা সংবিধান সম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে৷ পাশাপাশি কম্পিটেন্ট অথরিটি হিসেবে আগের বিলে জেলাশাসক কিংবা কলকাতায় পুলিশ কমিশনারকে রাখা হলেও এবার আর্থিক অপরাধ দমন শাখার ডিরেক্টরকে রাখা হয়েছে৷
বামেদের বক্তব্য আগে কম্পিটেন্ট অথরিটি বিকেন্দ্রিভূত ছিল এখন তা কেন্দ্রিভূত হওয়ায় মানুষ সমস্যা পড়েবে৷ এমনই কিছু প্রশ্ন তোলা ছাড়া তাঁদের আর কোনও উপায় নেই তা স্বীকার করছেন এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক শরিক নেতা৷ বামেদের মূল লক্ষ্য চিটফান্ড নিয়ন্ত্রণের সমস্ত কৃতিত্ব যাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়ে চলে যেতে না পারেন তার জন্যই ২০০৯ সালের বিলের পক্ষে বিধানসভায় সরব হওয়া৷ নতুন বিলের বিভিন্ন অসংগতি তুলে ধরে এই বার্তা দেওয়া যে নতুন বিলে দোষীদের শাস্তি হওয়া তো দূরের কথা এই বিল আদালতে চ্যালেঞ্জ হয়ে বিশ বাঁও জলে চলে যেতে পারে৷ ফলে পার পেয়ে যাবে সারদা গোষ্ঠী৷ এই পরিস্থিতিতে সোমবার বিধানসভায় বৈঠকে বসবে বাম পরিষদীয় দল সেখানে বিল নিয়ে চড়ান্ত কৌশল ঠিক করা হবে৷
চিটফান্ড কেলেঙ্কারির প্রভাব পড়তে চলেছে বাঙালির শারদ উতসবেও। শহর কলকাতার ছোটবড় প্রায় ১২০০ পুজোর অনেকগুলিতেই বাজেটের মোটা টাকা আসত বিভিন্ন চিটফান্ড থেকে। সারদা কাণ্ডের পর এছর সেই টাকার রাস্তা বন্ধ। ফলে কিছুটা হলেও উতসবের আয়োজনে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন উদ্যোক্তারা।
ফিবছরের শারোদসবে এটাই পরিচিত ছবি শহর কলকাতার। সৌজন্যে স্পনসররা। বহুজাতিক থেকে দেশীয় কিংবা স্থানীয় সংস্থা। কে নেই সেই তালিকায়? মানুষের কাছে পৌঁছনোর এই সুযোগ হাতছাড়া করত না চিটফান্ড সংস্থাগুলিও। প্রতিবছর পুজোর বাজেটের একটা বড় অংশ আসত এই সব সংস্থাগুলির কাছ থেকে। প্রাইজ মানি হিসাবেও বিপুল অর্থ খরচ করত চিটফান্ডগুলি। সারদাকাণ্ডের প্রভাব যে পুজোর বাজেটে পড়বে তা একবাক্যে মানছেন পুজো উদ্যোক্তারা।
নিজেদের স্বার্থে বড় বড় পুজোগুলিতেই লগ্নি করত চিটফান্ড সংস্থাগুলি। তাদের নজর থাকত সেইসব পুজোয় যেগুলির সঙ্গে জড়িত ছিলেন নামজাদা কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। কলকাতার এমন চার পাঁচটি পুজোয় দেদার অর্থ ঢেলেছেন চিটফান্ড কর্তারা। সারদা কাণ্ডের পর আপাতত হাত গুটিয়ে নিয়েছে সংস্থাগুলি।ফলে এবছর কমবে অর্থের জোগান। সেইসঙ্গে, পাল্লা দিয়ে বাড়বে বিজ্ঞাপন জোগাড়ের প্রতিযোগিতাও। পুজোর বাজেট কমার প্রভাব পড়বে কারিগরদের ওপরও।
রাজ্যের বৃহত্তম আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে সরগরম চারপাশ। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন সারদার এজেন্ট আর আমানতকারীরা। কিন্তু আজ মুখ্যমন্ত্রীর সততা নিয়েই প্রশ্ন তুললেন সিপিআইএম নেতা গৌতম দেব।
শুধু মুখ্যমন্ত্রীর সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেই থেমে থাকেননি প্রাক্তন আবাসনমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো, তৃণমূল যুবার চেয়ারম্যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্থার মাইক্রো ফিনান্সের ব্যবসা নিয়ে তাঁর প্রশ্ন, "এটা লোক ঠকানো চিট ফান্ডের ব্যবসা কি না, তা বলুন মুখ্যমন্ত্রী?"
পাহাড় সফরে গিয়ে চিট ফান্ডের মালিকের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। পানিহাটিতে দলের জনসভায় একথাও বলেন গৌতম দেব।
চিটফান্ডের সঙ্গে এবার মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের যুক্ত থাকার অভিযোগ তুললেন সিপিএম নেতা গৌতম দেব৷ অভিযোগের তির মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে৷
সারদাকাণ্ডে প্রথম থেকেই একের পর এক দলীয় নেতা- মন্ত্রীর নাম জড়ানোয় অস্বস্তিতে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস৷ সুযোগ বুঝে বিরোধী দল সিপিএম প্রতিদিনই আক্রমণের সুর চড়াচ্ছে৷ এই পরিস্থিতিতে, রবিবার চিটফান্ডের সঙ্গে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের যোগের অভিযোগে সরব হলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম সম্পাদক গৌতম দেব৷ তাঁর নিশানায় মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো তথা তৃণমূল যুবার সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটিতে রবিবার দলীয় সভা থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উপস্থিতিতে গৌতম দেবের অভিযোগ, লিপস অ্যান্ড বাউন্স নামে একটি সংস্থার চেয়ারম্যান অভিষেক৷ যে সংস্থা মাইক্রো ফিনান্সের সঙ্গেও জড়িত৷ যা আদতে চিট ফান্ডেরই নামান্তর৷ মুখ্যমন্ত্রীকে খোঁচা দিয়ে গৌতম দেবের প্রশ্ন, কে এই সংস্থাকে অনুমোদন দিয়েছে? গৌতমবাবু প্রশ্ন তোলেন 'পয়লা বৈশাখের আগে আমি কিছু জানতাম না' মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের বাস্তব ভিত্তি নিয়ে। লিপস অ্যান্ড বাউন্স সংস্থার নাম করে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশেই তাঁর প্রশ্ন, "এই সংস্থাটি কার? গত দু-তিন বছরে তারা প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ব্যবসা চালাচ্ছে। সংস্থা চালায় কে? অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়! নির্মাণ ব্যবসা থেকে সব কিছুই করে। তিনিই আবার তৃণমূল 'যুবা'র সভাপতি।" গৌতমবাবুর অভিযোগ, "ওটা মাইক্রো ফিনান্স কোম্পানি। যেগুলোকে আমরা চিটফান্ড বলি, সেগুলো সবই এই রকম নন ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানি (এনবিএফসি)। এটাও (ওই সংস্থা) চিটফান্ড কি না, আশা করি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জবাব দেবেন! দু'বছরে এত কোটি টাকার সম্পত্তি করেছে। নির্মাণ ব্যবসা করছে, ফ্ল্যাট করছে, কনসালটেন্সি করছে, সারা দেশে ছুটে যাচ্ছে! আপনি জানেন? এই সংস্থা কার অনুমোদিত? রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সেবি কার?"
এই সঙ্গেই গৌতমবাবুর কটাক্ষ, "যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো এই রকম কোম্পানি চালায়, তা হলে সুদীপ্ত সেনকে কী ধরবেন! চিটফান্ডের কোলে মমতা দোলে লোকে এই রকম বললে কী বলবেন?"
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতমবাবু মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছেন, "সিবিআই তদন্তে ভয় কী? সিবিআই তদন্ত না-করে পারবেন না! যতই ভাল অফিসার থাকুক, বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের পক্ষে এত বড় ঘটনার তদন্ত করা সম্ভব নয়।"
এ বিষয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও, তারা প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি৷ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷
এদিকে, চিটফান্ড কাণ্ডের সিবিআই তদন্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন ভয় পাচ্ছেন, এই প্রশ্ন তুলেও এদিন তাঁর অস্বস্তি বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন গৌতম দেব৷রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, দিল্লিকাণ্ডে অস্বস্তিতে পড়া সিপিএমকে নতুন অক্সিজেন জুগিয়েছে চিটফান্ডকাণ্ড৷ পঞ্চায়েত ভোটের আগে চিটফান্ড কেলেঙ্কারিকে হাতিয়ার করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে নেমেছে তারা৷ আর সে কারণেই, এবার এক ধাপ এগিয়ে সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারকেই নিশানা করলেন গৌতম দেব৷ লক্ষ্য, মমতার ইউএসপি 'সততা'য় ঘা দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলা৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36136-2013-04-29-04-57-50
সারদাকাণ্ডে আরও এক রহস্যময়ী৷ দেবযানী মুখোপাধ্যায় নয়, এই মহিলাকে সঙ্গে নিয়েই ১০ তারিখ কলকাতা ছেড়েছিলেন সুদীপ্ত সেন৷ কিন্তু রাঁচিতে গিয়ে গাড়ি তাঁকে থেকে নামিয়ে দেন৷ তদন্তে এমনটাই জানতে পেরেছে পুলিশ৷
সারদাকাণ্ডের তদন্তে নেমে প্রায় প্রতিদিনই একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে পুলিশের হাতে৷ শোনা যাচ্ছে একের পর এক রহস্যময়ীর কথা৷ দেবযানী রহস্য ভেদের আগেই পুলিশ জানতে পেরেছে এরকমই এক মহিলার কথা৷ যিনি ১০ তারিখ গাড়িতে সুদীপ্ত সেনের সঙ্গেই শহর ছেড়েছিলেন৷ পুলিশ সূত্রে খবর, ওই মহিলা রাঁচি পর্যন্ত সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে ছিলেন৷ তারপর সেখানে নেমে যান৷ সেই রহস্যময়ীকে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করেছে পুলিশ৷ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হবে৷ তদন্তের স্বার্থেই রাঁচি পর্যন্ত সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধারের ওই সঙ্গীর পরিচয়, গোপন রাখছে পুলিশ৷ তাঁকে জেরা করে বহু তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলেই মনে করছে তারা৷
এরই পাশাপাশি সুদীপ্ত ও দেবযানীকে জেরা করে সারদার বারুইপুর শাখার জেনারেল ম্যানেজার অরিন্দম দাস ওরফে বুম্বার কথা জানতে পেরেছে পুলিশ৷ দু'জনেরই অভিযোগ, সারদার পতনের জন্য অনেকাংশেই দায়ী এই অরিন্দমই৷ প্রায় ৩৩ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছেন তিনি৷ তাঁর হাত দিয়ে বারুইপুর শাখায় ১০০ কোটিরও বেশি টাকার লেনদেন হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর৷ সুদীপ্ত ও দেবযানীর অভিযোগ, আমানতকারীদের কাছ থেকে তোলা বহু টাকাই হেড অফিসে পাঠানোর আগে মাঝপথেই তছরুপ করেছেন অরিন্দম৷ তাঁর খোঁজ চালাচ্ছে পুলিছে৷ ত্রিপুরায় কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে অরিন্দম আত্মগোপন করে থাকতে পারে বলে বিভিন্ন মহলে সন্দেহ৷
পাশাপাশি, পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেরার মুখে সুদীপ্ত সেন দাবি করেছেন, তাঁর ব্যাক অফিসের কয়েকজনও সফটঅয়্যারের মাধ্যমে টাকা তছরুপ করেছেন৷ এ নিয়ে ব্যাক অফিস এগজিকিউটিভদের সঙ্গে তাঁর উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয়েছিল৷ কিন্তু, কাজের কাজ কিছু হয়নি৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36139-2013-04-29-06-43-45
সরাসরি এই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলল কোনও সংগঠন। বেশি করে সিগারেট খান, মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের জেরে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে এপিডিআর।
সারদা চিটফান্ডে ছোট এবং মাঝারি আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে গত চব্বিশে এপ্রিল পাঁচশ কোটি টাকা তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তহবিলের একটা বড় অংশ রাজ্য সরকার তামাকজাত দ্রব্যে কর বসিয়ে সংগ্রহ করবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। সেই ঘোষণার সময় মুখ্যমন্ত্রী এই মন্তব্য করেন। এপিডিআরের অভিযোগ, ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে হানিকর জেনেও মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যে লঙ্ঘিত হয়েছে মানবাধিকার। এই মন্তব্য প্রত্যাহার করে মুখ্যমন্ত্রী যাতে দুঃখপ্রকাশ করেন, তার জন্য মানবাধিকার কমিশনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে এপিডিআর।
রাজ্যে ভুঁইফোড় আর্থিক সংস্থাগুলির রমরমা ঠেকাতে আগামিকাল নয়া বিল আনতে চলেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু, বিলের সাংবিধানিক বৈধতা সরকার নিজেই কী পুরোপুরি নিশ্চিন্ত নয়?
মঙ্গলবার রাজ্য সরকারের তরফে যে বিল আনা হচ্ছে তাতে কী বিচার করা যাবে সারদা কেলেঙ্কারির? পরিষদীয় মন্ত্রী দাবি হ্যাঁ যাবে। এরপর তিনি যা বললেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপবর্ণ। বিল পেশের কেন এমল আশঙ্কা পর্ষদীয় মন্ত্রী গলায়? সত্যিই কী এই বিলে সারদা গোষ্ঠীকে শাসেতির ক্ষেত্রে কোনও আইনগত জটিলতা রয়েছে? এমনটা অন্তত মনে করছেন হালিমের। তিনি জানিয়েছিলেন, "এই বিলে কিছুই হবে না।" কেন একথা বললেন প্রাক্তন অধ্যক্ষ? কারণ আইনজ্ঞ মহল মনে করছে সংবিধানের ধারার সঙ্গে কোথাও একটা সমস্যা।
নতুন বিলের ২২-এর (২) ধারায় বলা হয়েছে, এই আইন তৈরি হওয়ার আগেই যদি কোনও কমিশন গঠিত হয়ে থাকে এবং ওই কমিশন কোনও আর্থিক সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শুরু করে থাকে, তাহলে সেই কমিশন আর্থিক সংস্থাটির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার সুপারিশ করলে, নতুন আইনের বলে বাজেয়াপ্ত করা যাবে অভিযুক্ত সংস্থার সমস্ত সম্পত্তি।
সংবিধান বিশেষজ্ঞদের যুক্তি, নতুন বিলে ২২-এর (২) ধারাটি সংবিধানের ২০-র এক অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। ভারতীয় সংবিধান ২০-র ১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আজকের কোনও অপরাধের বিচার আগামিকাল তৈরি কোনও আইনে হতে পারে না।
সোমবার ভিনভর দফায় দফায় নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছেন তৃণমূলের শীর্ষনেতারা। আর আনোচনা যত এগিয়েছে, আশঙ্কা ততটাই ঘনীভূত হয়েছে স্পষ্ট হয়ে গেল পরিষদীয় মন্ত্রীর বক্তব্যে। তিনি বলেন, "নতুন বিলে প্রাক্তন শাসক দলের অনেক নথি বেড়িয়ে আসবে।" সর্বস্বান্ত হওয়া মানুষের টাকা ফেরৎ দিতে রাজ্য সরকার সমস্ত ব্যবস্থা করবে বলে আশ্বাস দেন শিল্পমন্ত্রী।
সুদীপ্ত সেনকে জেরায় মিলল আরও কয়েকটি নতুন তথ্য। পুলিসি জেরায় উঠে এল শাসক দলের আরও বেশ কয়েকজন নেতা-মন্ত্রীর নাম। সূত্রের খবর জেরায় সুদীপ্ত সেন জানিয়েছেন, শাসক দলের ওইসব নেতা-মন্ত্রীদের নিয়মিত টাকা দিতে হত তাঁকে। সুদীপ্ত সেনের অভিযোগ, তাঁদের চাপেই সমস্যায় পড়ে সারদা।
সিবিআইকে লেখা চিঠিতে ওইসব নেতা-মন্ত্রীদের নাম উল্লেখ করেননি বলেও জেরায় জানান সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। সুদীপ্ত সেনকে জেরায় মিলল আরও কয়েকটি নতুন তথ্য। পুলিসি জেরায় উঠে এল শাসক দলের আরও বেশ কয়েকজন নেতা-মন্ত্রীর নাম। সূত্রের খবর জেরায় সুদীপ্ত সেন জানিয়েছেন, শাসক দলের ওইসব নেতা-মন্ত্রীদের নিয়মিত টাকা দিতে হত তাঁকে। সুদীপ্ত সেনের অভিযোগ, তাঁদের চাপেই সমস্যায় পড়ে সারদা। সিবিআইকে লেখা চিঠিতে ওইসব নেতা-মন্ত্রীদের নাম উল্লেখ করেননি বলেও জেরায় জানান সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন।
সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন ও সংস্থার ডিরেক্টর দেবযানী মুখার্জিকে জেরা করে আরও কিছু তথ্য পেলেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দাদের অনুমান, মোটা অঙ্কের টাকা সরিয়ে ফেলেছেন সুদীপ্ত সেন। দুশো দশটি অ্যাকাউন্টের মধ্যে সাতষট্টিটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট হাতে পেয়েছেনগোয়েন্দারা। গোয়েন্দাদের অনুমান, সারদার বিভিন্ন শাখা থেকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নিয়মিত টাকা পৌঁছত না। পালানোর সময় সুদীপ্ত সেনের কাছে নগদ দেড় লক্ষ টাকা ছিল। দেবযানীর সঙ্গে ছিল নগদ এক লক্ষ টাকা। সুদীপ্ত নিজে কোনও এটিএম কার্ড ব্যবহার করতেন না। দেবযানীর সঙ্গে ছিল গোলপার্কের একটি ব্যাঙ্কের দুটি এটিএম কার্ড। সেই দুটি অ্যাকাউন্টে ছিল মোট তিনলক্ষ টাকা। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি অসমেও চিটফান্ড ব্যবসার রাজ্যপাট বিস্তার করেছিলেন সুদীপ্ত সেন। রবিবার অসম পুলিসের প্রতিনিধিরাও সুদীপ্ত সেনকে জেরা করেন।
গতবছরের শেষ থেকেই সংস্থার আর্থিক মন্দার কথা আঁচ করেছিলেন সুদীপ্ত সেন। যদিও তাতেও ব্যয়সঙ্কোচের পথে হাঁটতে রাজি হননি । পুলিসি জেরায় সারদার অন্য আধিকারিক অরবিন্দ সিং চৌহান জানিয়েছেন, গত তিনমাসে বোর্ড অব ডিরেক্টরদের মিটিংয়ে ব্যয়সঙ্কোচ নিয়ে বেশ কয়েকজন আধিকারিকের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন সুদীপ্ত। তাঁর যুক্তি ছিল ব্যয়সঙ্কোচের রাস্তায় হাঁটলে বাজারে সংস্থা সম্পর্কে ভুল বার্তা যাবে। গত দুমাসে সংস্থার জন্য ৪২টি নতুন গাড়ি কেনা হয়েছিল বলেও জেরায় জানান অরবিন্দ।
গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, দুহাজার নয় সাল থেকে জমি কিনতে শুরু করেন সুদীপ্ত সেন। সুদীপ্তর ছায়াসঙ্গী দেবযানী একসময় সারদার ৪০টিরও বেশি সংস্থায় ডিরেক্টর পদে ছিলেন। যদিও শেষের দিকে তিনি মোট দশটি সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন।
শেষপর্যন্ত পালানোর সিদ্ধান্ত নিলেন কেন সুদীপ্ত? জেরায় সুদীপ্ত জানিয়েছেন, চলতি বছরে আমানতকারীদের যে পরিমাণ টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল, সেই পরিমাণ অর্থ সংস্থার হাতে ছিল না। একইসঙ্গে সংস্থাকে নতুন করে চাঙ্গা করার মত অর্থও তাঁর হাতে ছিলনা। তাঁর দাবি, কর্মীরাই তাঁকে ডুবিয়েছেন। রবিবার সারদার মিডল্যান্ড পার্কের অফিস থেকে একটি হার্ডডিস্ক ও বেশকিছু নথি বাজেয়াপ্ত করে পুলিস। সেগুলি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
সারদাকাণ্ডে সরকার তথা শাসক দল যে চরম অস্বস্তিতে তা নিয়ে কার্যত কারোরই দ্বিমত নেই। জড়িয়েছে তৃণমূলের একাধিক মন্ত্রী, সাংসদের নাম। অস্বস্তি ঢাকতে দলের একাংশ চাইছে ব্যবস্থা নেওয়া হোক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তেমন কোনও পদক্ষেপ দলের শীর্ষনেতৃত্বের ভাবনায় নেই বলেই সূত্রের খবর।
সারদাকাণ্ডের জেরে রাজ্যের শাসক দলের ভাবমূর্তিতে লেগেছে কালির ছিঁটে।
শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন ``আমানতকারীদের বলব আসল টাকা তুলে নিন এই ধরনের সংস্থা থেকে`` রাজনৈতিক মহলের মত, শুধু এধরনের পরামর্শে যে চিঁড়ে ভিজবে না তা বুঝতে বাকি নেই শাসক দলের নেতানেত্রীদের। কারণ নাম জড়িয়েছে দলেরই অনেকের। তালিকার প্রথমদিকে উঠে আসছে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ তথা সারদার মিডিয়া গোষ্ঠীর সিইও কুণাল ঘোষের নাম।
প্রয়োজনে সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন কুণাল ঘোষ। সূত্রের খবর, দলের অন্দরে ক্রমশ তীব্র হচ্ছে কুণাল ঘোষকে বহিষ্কারের দাবি। তাঁর থেকে দূরত্ব বাড়াতে চাইছে দলেরই একাংশ। চিটফান্ড কেলেঙ্কারির অস্বস্তি থেকে দলের মুখরক্ষায় এটাই প্রাথমিক পদক্ষেপ হওয়া উচিত বলে মত ওই নেতাদের।
কিন্তু কী ভাবছে শীর্ষনেতৃত্ব? তার কিছুটা আভাস অবশ্য পাওয়া গেছে। কুণাল ঘোষের দাবি, তিনি সারদার মিডিয়া গোষ্ঠীতে শুধুই মাইনে করা কর্মচারী ছিলেন। সেই সুরই তো শোনা যাচ্ছে পুরমন্ত্রীর গলায়। সিইও-র মতো শীর্ষ পদে থাকা কুণাল ঘোষকে তিনিও তো চাকরি করা কর্মচারী বলেই সম্বোধন করছেন।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, মুখ্যমন্ত্রীর প্রিয়পাত্রের গলায় যে সুর শোনা গেছে তা থেকে অনেকটাই স্পষ্ট, নাম জড়ালেও অভিযুক্তদের শাস্তির পথে দল মোটেই হাঁটছে না।
চিটফান্ড বিল ইস্যুতে বিধানসভায় আলোচনার সময় কমিয়ে, বিরোধীদের অধিকার খর্ব করতে চাইছে রাজ্য সরকার। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র আজ এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, বিল নিয়ে চার ঘণ্টা এবং মোশন নিয়ে এক ঘণ্টা আলোচনার দাবি জানিয়েছে বামেরা। কিন্তু সরকারপক্ষ তা কমিয়ে দেড় ঘণ্টায় নামাতে চাইছে।
চিটফান্ড প্রতারণা রুখতে বামেদের আনা বিল কীসের ভিত্তিতে প্রত্যাহার করা হচ্ছে এবং সংবিধানের কোন ধারার বলে তা প্রত্যাহার করা হচ্ছে, সেবিষয়ে পুরো অন্ধকারে রেখেছে রাজ্য সরকার। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র আজ এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, পূর্বতন সরকারের বিল কেন প্রত্যাহার করা হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা দিচ্ছে না রাজ্য।
সিপিআইএম নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ ঘিরে রবিবার উত্তেজনা ছড়ায় রাজ্যের একাধিক জেলায়। পূর্ব মেদিনীপুরের নৈপুর গ্রামে এক সিপিআইএম নেতাকে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। হাওড়ায় ধরমপোতা গ্রামে সিপিআইএম কর্মীদের ওপর হামলা এবং তাঁদের বাড়িঘর ভাঙচুর, লুঠপাটের অভিযোগ উঠেছে। সিপিআইএম নেতাদের দাবি, এই হামলার জেরে দলের প্রায় পয়ত্রিশজন কর্মী এমুহুর্তে ঘরছাড়া।
পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর থানার নৈপুর গ্রামে অনাদিনন্দন রথ নামে সিপিআইএমের এক নেতার ওপর রবিবার হামলা হয় বলে অভিযোগ। পেশায় শিক্ষক অনাদিনন্দনবাবু বাজারে যাওয়ার পথে আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর। বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে ঘরছাড়া ছিলেন তিনি। কয়েকমাস আগে গ্রামে ফেরেন। অভিযোগ,রবিবার বাজারে তাঁকে ঘিরে ধরে মারধর করে কয়েকজন তৃণমূল কর্মী- সমর্থক। সিপিআইএম করার অপরাধে তাঁকে জরিমানা দিতে হবে বলে শাসানো হয় বলেও অভিযোগ। এর জেরে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। আপাতত ঘরবন্দি ওই সিপিআইএম নেতা।
হাওড়ার জয়পুর থানার ধরমপোতা গ্রামেও সিপিআইএম কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। প্রায় তেরোটি বাড়িতে ভাঙচুর,লুঠচাট চালানো হয় বলে অভিযোগ। এলাকাবাসীর দাবি, ব্যাপক বোমাবাজিও হয়েছে সেখানে।
বরো নির্বাচনে ভোট দিতে এসে দলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ আনলেন মাঠপুকুর কাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলর শম্ভুনাথ কাউ। বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহা তাঁকে ফাঁসিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন শম্ভুনাথ কাউ। দুঘণ্টার জন্য প্যারোলে ছাড়া পেয়ে সাত নম্বর বরো চেয়ারম্যান নির্বাচনে ভোট দিতে এসেছেন শম্ভুনাথ কাউ।
বরো অফিসের সামনে তাঁর সমর্থনে স্লোগান দিচ্ছেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। কলকাতা পুরসভার সাত নম্বর বরো আওতায় রয়েছে আটান্ন নম্বর ওয়ার্ড। দলীয় কর্মীকে খুনের ঘটনায় এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শম্ভুনাথ কাউ এখন জেল হেফাজতে।
কলকাতা পুরসভার সাত নম্বর বরোয় নির্বাচন আজ। এই বরোর আওতায় রয়েছে আটান্ন নম্বর ওয়ার্ড। দলীয় কর্মীকে খুনের ঘটনায় এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শম্ভুনাথ কাউ এখন জেল হেফাজতে। তবে নির্বাচনে অংশ নিতে তাঁকে দু ঘণ্টার প্যারোল মঞ্জুর করেছে আলিপুর আদালত।
ফলে এই নির্বাচন অন্য মাত্রা পেয়েছে। গত দুবছর এই বরো ছিল তৃণমূলে কংগ্রেসের দখলে। গতবারের বরো চেয়ারপার্সেন তেষট্টি নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুস্মিতা ভট্টাচার্য এবারও তৃণমূলের প্রার্থী। বরোর মধ্যে রয়েছে নটি ওয়ার্ড। এর মধ্যে চারটি বামেদের, পাঁচটি তৃণমূলের। বরো দখলে রাখতে শম্ভুনাথ কাউয়ের ভোটের ওপর নির্ভর করছে তৃণমূল কংগ্রেস। বরো নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে
সারদা গোষ্ঠীর চিটফান্ড দুর্নীতিতে যে কোনও তদন্তের জন্য প্রস্তুত তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ। সোমবার বিধাননগর কমিশনারেটে পুলিসের জেরা সেরে বেরিয়ে এসে একথা জানলেন তৃণমূল সাংসদ। সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকেই দায়ী করেছেন কুণাল বাবু। তিনি বলেন, "আমি বার বার ওনাকে (সুদীপ্ত সেন) জানিয়েছি চ্যানেলের কর্মীদের বেতন মিটিয়ে দিন।" সুদীপ্ত সেন শুধুই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে অভিযোগ কুণাল বাবুর। সেইসঙ্গে পরিকল্পিত ভাবে তাঁকে কালিমালিপ্ত করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন সারদার গ্রুপ মিডিয়ার সিইও। তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চক্রান্ত হচ্ছে কিনা সেই বিষয়টাও উড়িয়ে দেননি কুণাল ঘোষ।
সারদা কাণ্ডে কুণাল ঘোষকে জেরা শুরু করল বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিস। আজ বিকেলেই তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়। সিবিআইকে লেখা সুদীপ্ত সেনের চিঠিতে কুণাল ঘোষের নাম রয়েছে। জেরার আগে কুণাল জানান, "আমি কোনও অন্যায়ের সঙ্গে তিনি জড়িত নন।"
সুদীপ্ত সেনর লেখা চিঠিতে যে ২২ জনের নাম রয়েছে তাঁদের প্রত্যেককেই চিঠি পাঠাচ্ছে পুলিস। চিঠিতে নাম রয়েছে সারদা গোষ্ঠীর সংবাদ মাধ্যমগুলির গ্রুপ সিইও তথা তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কুণাল ঘোষের নামও। তার ভিত্তিতে কুণালকে পুলিসের তলব। আজ বিকেল ৫টা ৫০ নাগাদ তিনি বিধাননগর কমিশনারেট থানায় আসেন। কুণালের সঙ্গে কথা বলছেন বিধাননগরের কমিশনার।
আজ সকালে ২৪ ঘণ্টাকে তৃণমূল সাংসদ জানিয়েছিলেন, তিনি চান সারদা কাণ্ডে পুলিস তাঁকেও জেরা করুক।
কলকাতা: সারদাকাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষকে সোমবার সন্ধ্যায় ডেকে পাঠান বিধাননগর পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান৷ সিবিআইকে লেখা বিস্ফোরক চিঠিতে তাঁর বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ করেছেন সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেন৷ সেইসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাঁর বক্তব্য জানতেই এদিন তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়৷ সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বিধাননগর কমিশনারেটে পৌঁছোন তৃণমূল সাংসদ৷ আগের অবস্থান বজায় রেখে এদিনও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে সারদা-কর্তার বিরুদ্ধেই তোপ দাগেন তিনি।
সিবিআই-কে লেখা চিঠিতেই কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ জানিয়ে সারদা-কর্ণধার লিখেছিলেন, মিডিয়া ব্যবসাই তাঁর পতনের জন্য দায়ী৷ সুদীপ্তর দাবি, সৃঞ্জয় বসু এবং কুণাল ঘোষের নেতৃত্বে 'সংবাদ প্রতিদিন'-এর সঙ্গে চ্যানেল ১০-এর চুক্তি হয়৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা উল্লেখ করে 'প্রতিদিন'-এর তরফে তাঁকে আশ্বাস দেওয়া হয়, চুক্তি হলে নিরাপদে এবং নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালাতে যাতে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের দিক থেকে কোনও সমস্যায় না পড়তে হয়, সেজন্য প্রোটেকশন দেবেন তাঁরা৷ সুদীপ্তর চিঠিতেই কার্যত স্পষ্ট, কর্মী হওয়া সত্ত্বেও কুণাল ঘোষের ওপর তাঁর প্রায় নিয়ন্ত্রণই ছিল না৷ উল্টে চিঠিতেই তিনি অভিযোগ করেন, কুণাল ঘোষ মাত্র ৫৫ লক্ষ টাকায় চ্যানেল ১০ বিক্রি করে দেওয়ার জন্যও তাঁর ওপর চাপ দিয়ে সই করিয়ে নেন৷ সুদীপ্তর চিঠি প্রকাশ্যে আসার পরই কুণাল ঘোষের নাম তুলে শাসক দলের বিরুদ্ধে ক্রমশ সুর চড়িয়েছেন বিরোধীরা৷ অন্যদিকে তৃণমূলের অন্দরেই কুণালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে সরব হন দলের একাংশ৷ তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা না হলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে বলেও তাঁরা সওয়াল করেন।
সুদীপ্তর যাবতীয় অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখা এবং সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কুণাল ঘোষের কী বক্তব্য, তা জানতেই এদিন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36162-2013-04-29-14-22-33
কলকাতা: বাড়তি সুদ তো দূরের কথা, আর দেরি করলে চিটফান্ডে ইতিমধ্যে বিনিয়োগ করা আসল মূলধনের টাকাটাই ফেরত পাওয়া যাবে কিনা, সারদা-র বিপর্যয়ের পর এই আতঙ্ক গ্রাস করেছে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ মানুষকে৷রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণ, গত কয়েকদিন ধরে সর্বত্রই এক ছবি৷ সারদা-আতঙ্কে অন্য চিটফান্ড থেকে টাকা তোলার হিড়িক পড়েছে আমানতকারীদের মধ্যে৷ টাকা ফেরত চেয়ে চিটফান্ডের অফিসে বিক্ষোভ-ভাঙচুর, রাস্তা অবরোধ চলছে কলকাতার পাশাপাশি জেলাতেও৷ ক্রমেই বাড়ছে বিক্ষোভকারীর সংখ্যাও৷ তাঁদের আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর পর এবার পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রও অবিলম্বে চিট ফান্ড থেকে টাকা তুলে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন৷ রবিবার চিট ফান্ড থেকে টাকা তুলে নিতে আমানতকারীদের কাছে আবেদন জানিয়ে শুভেন্দুবাবু বোঝাতে চান, কয়েকগুণ টাকা ফেরত পাওয়ার আশ্বাসের কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই৷ এজেন্টদেরও তিনি লোকঠকানো কারবার না করে বরং ১০০ দিনের কাজে শামিল হয়ে সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার পরামর্শ দেন৷ আর মদনবাবুও আজ বর্ধমানে চিটফান্ড সংস্থা থেকে আমানতকারীদের টাকা তোলার পরামর্শ দিয়ে বলেন, টাকা ফেরত পেতে যদি দু'দিন ধরে লাইন দিতে হয়, তাহলে তা-ই করুন৷ এমন পরামর্শের জন্য অবশ্য অপেক্ষা করেননি নিজেদের বিপন্ন বোধ করা আমানতকারীরা৷গত কয়েকদিনের মতোই আজ সকাল থেকেই তাঁরা চিটফান্ডের দরজায় ভিড় করেন।জলপাইগুড়ি, দক্ষিণ দিনাজপুর ও উত্তর দিনাজপুরে রোজ ভ্যালির অফিসে আমানতকারীদের ভিড় দেখা যায়৷ জলপাইগুড়ির উকিলপাড়া ও বীরপাড়ায় রোজ ভ্যালির অফিসে জড়ো হন আমানতকারীরা৷ তাঁদের দাবি, পুরো টাকা ফেরত দিতে হবে৷ যদিও সংস্থার তরফে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার তপন দাস জানান, আমানতের ১ বছরের মধ্যে টাকা ফেরত চাইলে আসল থেকে ১০ শতাংশ কেটে নেওয়া হবে৷ আমানতের ২ বছর পর টাকা ফেরত চাইলে সুদ ছাড়া পুরো টাকাই ফেরত দেওয়া হবে৷
বালুরঘাটেও রোজ ভ্যালির ব্রাঞ্চ অফিসে টাকা ফেরতের দাবিতে ভিড় জমান আমানতকারীরা৷ সেখানে আমানতকারীদের বলতে শোনা যায়, আসল থেকে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কেটে টাকা দেওয়ার কথা বলছে সংস্থা৷ অন্যদিকে, একই ছবি ধরা পড়েছে রায়গঞ্জেও৷ সকাল থেকেই টাকা তোলার জন্য রোজ ভ্যালির অফিসে ভিড় আমানতকারীদের৷ জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে একটি অন্য ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থার দফতরে বিক্ষোভ দেখান ২০০ আমানতকারী৷ ৩ ঘণ্টা ঘেরাও হয়ে থাকেন ব্রাঞ্চ ম্যানেজার৷ ২ দিনের মধ্যে টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দিলে ঘেরাও ওঠে৷ সারদাকাণ্ডের প্রতিবাদে উত্তেজনা দেখা যায় পুরুলিয়ায়৷ জেলাশাসককে স্মারকলিপি জমা দিতে যাওয়ার পথে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় এসইউসিআই কর্মী, সমর্থকদের৷ এ দিন হুগলির আরামবাগে একটি চিটফান্ড সংস্থার অফিস সিল করে দেয় পুলিশ৷ বাজেয়াপ্ত ৩টি কম্পিউটার ও কিছু নথিপত্র৷ যদিও পুলিশের দাবি, কম্পিউটার থেকে আগেই হার্ডডিস্ক খুলে নিয়েছেন সংস্থার কর্মীরা৷
বিক্ষোভ, অসন্তোষের একই ছবি দেখা যায় শহর কলকাতাতেও৷ লগ্নি করা পুরো টাকা ফেরতের দাবিতে সোমবার বেলেঘাটা থানার সামনে জড়ো হন একটি চিটফান্ড সংস্থার এজেন্ট ও আমানতকারীরা৷ তাঁদের অভিযোগ, শুক্লা সাহা নামে এক এজেন্টের নেতৃত্বে তোলা হয়েছিল প্রায় এক কোটি টাকা৷ বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ পাওয়ার পরে থানায় ডাকা হয় শুক্লাকে৷ তাঁর বক্তব্য, সংস্থার বিরুদ্ধে তিনি আগেই অভিযোগ জানিয়েছিলেন, কিন্তু ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ৷ আর আর অ্যাভিনিউতে বিক্ষোভ দেখান আরেকটি চিটফান্ড সংস্থার শতাধিক এজেন্ট ও আমানতকারী৷ সারদা কাণ্ডের পরই সংস্থার সিএমডি বিজয় সাহা গা ঢাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ জানান তাঁরা৷ এমনকী টাকা চাইতে গেলে মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ এজেন্টদের৷ টাকা ফেরতের দাবিতে মহাকরণে স্মারকলিপি দেয় বিক্ষোভকারীদের একটি প্রতিনিধিদল৷৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36161-2013-04-29-13-09-29
নয়াদিল্লি: সারদাকাণ্ডের জেরে তত্পর কেন্দ্র৷ সারদার মতো সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে সেবি-কে দিয়ে তদন্তের পাশাপাশি চিট ফান্ড সংস্থা নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমগুলিকে ইক্যুইটি শেয়ার সংক্রান্ত তথ্য জমা দিতে নির্দেশ দিলেন কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচারমন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি৷ সোমবার তিনি বলেন, ওই সংবাদমাধ্যমগুলি লাইসেন্সে উল্লেখিত শর্ত অনুযায়ী কাজ করছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে৷ কোনও অসঙ্গতি থাকলে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে৷ প্রসঙ্গত, সারদাকাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরই সমস্যায় পড়েছেন সারদার অধীনে থাকা একাধিক সংবাদসংস্থার কর্মীরা৷ এমনকী, থানায় বেতন না মেলার অভিযোগ পর্যন্ত দায়ের করেছেন তাঁরা৷ সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতেই কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷
অন্যদিকে, চিট ফান্ড কেলেঙ্কারিতে যুক্ত ব্যক্তি এবং সংস্থার বিরুদ্ধে বিস্তারিত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রী সচিন পায়লট৷ তিনি এদিন জানিয়েছেন, স্বচ্ছতার জন্য নতুন বিল আনাটা খুব জরুরি৷ কিন্তু সব থেকে জরুরি দরিদ্র আমানতকারীদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়া৷ এদিন সারদাকাণ্ড নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপের দাবিতে কোম্পানি বিষয়কমন্ত্রী সচিন পায়লটের সঙ্গে দেখা করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36164-2013-04-29-14-50-35
কলকাতা: সারদাকাণ্ডের জেরে ঘুম ভেঙেছে৷ চিট ফান্ড থেকে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করতে এবার প্রচারে নামল রাজ্য সরকার৷ রীতিমতো লিফলেট বিলি করে শুরু হল প্রচারাভিযান৷ তবে ওয়াকিবহাল মহলের প্রশ্ন, সরকারের এই উদ্যোগ শুধুই কি সারদাকাণ্ডের ফল না কি এর নেপথ্যে রয়েছে অন্য কোনও কারণ৷ স্বল্প সঞ্চয় দফতর সূত্রে খবর, চিট ফান্ডের রমরমার জন্য গত ২-৩ বছরে স্বল্প সঞ্চয় খাতে আয় কমেছে রাজ্য সরকারের৷ পাশাপাশি ডাকঘর ও ব্যাঙ্কে সুদের হার কমায় এবং এজেন্টদের কম সুদ দেওয়ায় ধীরে ধীরে সরকারের স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সাধারণ মানুষ৷ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বেশি লাভের প্রলোভন৷ ফলে ক্রমেই চিট ফান্ডের দিকে ঝুঁকছেন আমানতকারীরা৷ শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থা রাজ্য সরকারের স্বল্প সঞ্চয় দফতরেরও৷ জেলায় জেলায় সেভিংস ডেভেলপমেন্ট অফিসার-এর কমপক্ষে ৩৬০টি পদ খালি৷ ২০টি জেলায় শূন্য পড়ে রয়েছে ১৪টি সহ-অধিকর্তার পদও৷ এই পরিস্থিতিতে সারদাকাণ্ডের পর নতুন করে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার৷ সোমবার থেকে প্রচারে নামল ক্ষুদ্র সঞ্চয় দফতর৷ লিফলেটে সরকারের বার্তা, 'অধিক সুদ বা অধিক লাভের আশায় যেখানে সেখানে টাকা জমাবেন না৷ সরকারের স্ব-ল্প সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা রাখুন৷' এই প্রচারের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ১১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা৷ লিফলেটের পাশাপাশি প্রচার চলবে মাইকেও৷ প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেভিংস ডেভেলপমেন্ট অফিসারদের৷ চিট ফান্ডের বিরুদ্ধে এই প্রচারে শোনা যেতে পারে বাউল গান এবং পল্লী গীতিও৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36163-2013-04-29-14-38-29
দেবাযানীকে পিত্জা দিয়ে সিন্দুকের সন্ধানে পুলিশ
সূত্রের খবর, গোড়া থেকেই দেবযানী মুখোপাধ্যায় পুলিশকে তদন্তে সহায়তা করছেন৷ শুধু একটি বিষয় ছাড়া৷ দু'দিন আগেই পুলিশ 'সোর্স' মারফত খবর পায়, দেবযানীর ঢাকুরিয়ার ফ্ল্যাটে কিংবা সল্টলেকের মিডল্যান্ড পার্কে সারদার দপ্তরের কোনও দেওয়ালের মধ্যে একটি গোপন সিন্দুক রয়েছে৷ তার মধ্যে রয়েছে সারদার বেআইনি ব্যবসা সংক্রান্ত অনেক গোপন ফাইল এবং বেশ কিছু সিডি৷ এবং সেই সিন্দুক খোলার জন্য একটি চার সংখ্যার 'কোড' রয়েছে৷ একমাত্র দেবযানীই জানেন সেই 'কোড'টি৷ যদিও জেরার মুখে সুদীপ্ত-সঙ্গিনী বারবার পুলিশকে জানিয়েছেন, এ রকম কোনও সিন্দুকের অস্তিত্ব তাঁর জানা নেই৷ কিন্ত্ত পুলিশও নাছোড়বান্দা৷ রবিবার সকালে তাই প্রায় আড়াই ঘণ্টা নিউটাউন থানায় দেবযানীকে জেরা করে পুলিশ৷ আর সুদীপ্ত সেনকে জেরা করা হয় মাত্র আধ ঘণ্টা৷ এখন পর্যন্ত দু'জনকে আলাদা ভাবে জেরা করা হচ্ছে৷
এর পরই পিত্জা অর্ডার৷ যেন মধুরেণ সমাপয়েত্!
সুদীপ্ত সেনের 'মহিলা ব্রিগেডের' অন্যতম হওয়ার সুবাদে বিলাসবহুল জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন দেবযানী৷ ফুরসত পেলে মাঝে-মধ্যেই তিনি চলে যেতেন 'ফ্লুরিজ'-এ ব্রেকফাস্ট করতে৷ আর একটি নামী সংস্থার পিত্জা ছিল তাঁর সব থেকে পছন্দের৷ সল্টলেকে সারদার অফিসে তাই মাঝে-মধ্যেই পিত্জা নিয়ে হাজির হতে দেখা যেত ডেলিভারি বয়কে৷
রবিবার দুপুর তিনটে নাগাদ পিত্জা নিয়ে নিউটাউন থানার সামনে বাইকে চেপে হাজির সেই নামী সংস্থার ডেলিভারি বয়! সঙ্গে মিডিয়াম সাইজের একটি 'ননভেজ' পিত্জা৷ থানার গেটের বাইরে বাইক রেখে ডেলিভারি বয় সোজা ঢুকে গেলেন থানার ভিতরে৷ বেরিয়ে এলেন মিনিট দশেক পরে৷
কে অর্ডার দিয়েছিলেন পিত্জা?
কিঞ্চিত্ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ডেলিভারি বয়ের জবাব, 'সে তো জানি না স্যার! ফোন করে বলা হয়েছিল, একটা মিডিয়াম সাইজের ননভেজ পিত্জা পাঠানোর জন্য৷ আমার কাছ থেকে এক অফিসার পিত্জাটা নিলেন৷'
আগে কোনও দিন নিউটাউন থানা থেকে পিত্জার অর্ডার হয়েছে?
'না স্যার৷ এই প্রথম৷ থানায় পিত্জা দিতে হবে শুনে তাই কিছুটা অবাক হয়ে গিয়েছিলাম৷' কোনও মতে বাক্য শেষ করেই বাইকে স্টার্ট দিলেন৷ তার মানে পগারপার, এমন নয় অবশ্য৷ ঠিক আধ ঘণ্টা পর ফের নিউটাউন থানায় ফেরত ছেলেটি৷ এ বার তাঁর সঙ্গে একটি ভেজ পিত্জা!
আবার পিত্জার অর্ডার দিয়েছে পুলিশ?
ডেলিভারি বয়ের মুখে একগাল হাসি, 'হ্যাঁ স্যার৷ হঠাত্ কেন এঁদের পিত্জা খাওয়ার হিড়িক পড়ল বুঝতে পারছি না!' নিউটাউন থানা দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে পিত্জা খাওয়ানোর ঘটনাটি অস্বীকার করলেও সূত্রের খবর, 'ম্যাডাম'-এর জন্যই প্রথমে অর্ডার দেওয়া হয়েছিল ননভেজ পিত্জার৷ পরে সুদীপ্ত সেনের জন্যও নিয়ে আসা হয় একটি ভেজ পিত্জা৷ এদিন অসম সিটি পুলিশের একটি প্রতিনিধি দল নিউটাউন থানায় এসেছিল সুদীপ্তবাবুকে জেরা করার জন্য৷ তাঁরা চলে যাওয়ার ঘণ্টাখানেক পরেই নিউটাউন থানা থেকে পিত্জার অর্ডার দেওয়া হয়৷ দুপুর তিনটে নাগাদ থানায় কোনও উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকও ছিলেন না৷ তা হলে পিত্জা খেল কে? কোনও সদুত্তর নেই নিউটাউন থানার কাছে৷
সূত্রের খবর, দেবযানীকে জেরা শেষ করার পরই পিত্জার অর্ডার দেওয়া হয়েছিল নিউ টাউন থানা থেকে৷ তবে কি রবিবার সকালে জেরার মুখে শেষ পর্যন্ত পুলিশকে গোপন সিন্দুকের হদিশ দিয়ে দিয়েছেন দেবযানী? আর তাতেই খুশি হয়ে নিউটাউন থানা থেকে দেবযানী এবং সুদীপ্তর জন্য পিত্জা ভোজের ব্যবস্থা করা হয়েছিল?
গুয়াহাটি: সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকে গুয়াহাটিতে নিয়ে গিয়ে জেরা করতে চায় অসম পুলিশ৷ বহু মানুষকে প্রতারণার দায়ে ইতিমধ্যেই অসমে সুদীপ্তবাবুর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ সারদার মতো ভুয়ো আর্থিক সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অসম বিধানসভায় পাশ হয়েছে অসম 'প্রোটেকশন অফ ইন্টারেস্টস অফ ডিপোজিটরস ইন ফিনান্সিয়াল এসটাব্লিসমেন্টস বিল'৷ এই আইন অনুযায়ী, আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হলে সুদীন্ত সেনের ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে৷
অসম পুলিশের ডিজি জয়ন্তনারায়ণ চৌধুরী রবিবার গুয়াহাটিতে জানান, 'সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধারের বিরুদ্ধে ওঠা আর্থিক প্রতারণার অভিযোগগুলি আমরা খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছি৷ ইতিমধ্যেই সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছি৷ আমরা ওঁকে গুয়াহাটিতে এনে জেরা করতে চাই৷ এ জন্য আমাদের একটি দল ইতিমধ্যেই কলকাতায় পৌঁছে গিয়েছে৷' অসম সিআইডির অর্থনীতি সংক্রান্ত তদন্ত বিভাগ ইতিমধ্যেই সারদার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অভিযোগগুলির তদন্ত শুরু করেছে৷
পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্থান হলেও পরে সারদার কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে পড়ে অসম, ত্রিপুরা-সহ অন্যান্য রাজ্যে৷ অথচ, এই ধরনের লগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এখনও আইন প্রণয়ন করতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গ সরকার৷ বরং তা নিয়ে চলছে রাজনৈতিক বিতর্ক৷ অসম কিন্ত্ত আইন পাশ করে ফেলেছে এবং সেই আইন অনুযায়ী, ওই রাজ্যের ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার কোনও অফিসার বেআইনি আর্থিক সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে যে কোনও অভিযোগের তদন্ত করতে পারেন৷ জয়ন্তবাবু জানান, 'সারদা ছাড়াও এ ধরনের দশটি বড় সংস্থা রয়েছে অসমে৷ সবগুলিই মূলত কলকাতার৷ নতুন এই আইন অনুযায়ী আমরা তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেব৷' অসমের আইনে ১০ বছর পর্যন্ত জেলের বিধান রয়েছে৷ সূত্রের খবর, পশ্চিমঙ্গে যে আইন হতে যাচ্ছে তাতে সুদীপ্ত সেনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে কিনা সে ব্যাপারে অনেকেই সন্দিহান৷ কিন্ত্ত অসমের আইনে পার পাওয়ার সুযোগ নেই৷ ২০০০ সালে তৈরি ওই আইনে এ মাসেই বেশ কিছু কঠোর ধারা যুক্ত করেছে অসম সরকার৷
সারদার বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণা সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তে নেমে অসম পুলিশ আবিষ্কার করে, এই সংস্থার গোটা ব্যবসাটাই লোক দেখানো৷ তারা অসমে যত টাকা বিনিয়োগ করেছে, তার থেকে অনেক বেশি টাকা সাধারণ মানুষের থেকে তুলেছে৷ এখনও পর্যন্ত গুয়াহাটিতে সারদার দু'টি সম্পত্তির হদিশ পেয়েছে পুলিশ৷ এর মধ্যে সোনাপুরে রয়েছে ৩৭ বিঘা জমি৷ ২০০৯-এ সারদা এই জমি কেনে এক কোটি তিরিশ লক্ষ টাকায়৷ এখানে সেভেন স্টার রিসর্ট তৈরি হবে বলে আমানতকারীদের কাছ থেকে টাকাও তোলে তারা৷ কিন্ত্ত, আজ পর্যন্ত কিছু তৈরি হয়নি৷ পাঁচিল ঘেরা অবস্থায় জায়গাটি ফাঁকা পড়ে রয়েছে৷ পুলিশের সন্দেহ, সারদা ওই জমি কাউকে বিক্রি করে দিয়েছে৷
আমচাং অভয়ারণ্যের পাশে ব্রহ্মপুত্র জঙ্গল রিসর্টও কিনতেও চেয়েছিলেন সুদীপ্ত সেন৷ রিসর্টের মালিক ত্রিদীপ শর্মা জানান, '২০১০ সালে আমার সঙ্গে সাড়ে আট কোটি টাকার চুক্তি হয়েছিল৷ কিন্ত্ত, চুক্তি অনুযায়ী যে সময়ের মধ্যে ওদের পুরো টাকা দেওয়ার কথা ছিল, তা ওরা দেয়নি৷ মাত্র এক কোটি কুড়ি লক্ষ টাকা দিয়েছে৷ তাই রিসর্ট বিক্রির ওই চুক্তি বাতিল হয়ে গিয়েছে৷'
গুয়াহাটির বেলতলার লালমাটি এলাকায় সারদা গোষ্ঠীর মালিকানাধীন একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ৷ অসমের ধুবরিতে সারদা গোষ্ঠীর একটি দোতলা বাড়ি রয়েছে৷ এ ছাড়াও সেখানে রয়েছে ভাসাঙ্কো ফুড প্রাইভেট লিমিটেড নামে তাদের একটি বিস্কুট কারখানা৷ কারখানাটি অবশ্য এখন বন্ধ৷ অসমে সারদার আর কোনও সম্পত্তির হদিশ পাচ্ছে না পুলিশ৷ পুলিশের দাবি, সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যমের ব্যবসা দেখিয়ে প্রচুর টাকা তুলেছে সারদা৷
তবে, অসমে সারদার এই লোকঠকানো ব্যবসার জন্য অভিযোগের আঙুল উঠেছে সেখানকার পুলিশের বিরুদ্ধেও৷ সিবিআইকে পাঠানো সুদীন্ত সেনের চিঠিতে অসমের প্রাক্তন ডিজি শঙ্কর বড়ুয়ার নামোল্লেখও রয়েছে৷ রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সারদা নিয়মিত টাকা দিত বলে অভিযোগ৷ এই কারণেই সারদার বিরুদ্ধে প্রথমে আমানতকারীদের অভিযোগ নিতে চাইত না পুলিশ৷ ২০১২ সালের ৪ ডিসেম্বর জোরহাট থানায় সারদার বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হয়৷ সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তিন জনকে গ্রেন্তার করে৷ সেটাই ছিল অসমে সারদার কর্তাব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের প্রথম ঘটনা৷
ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত ছেলেটার গা পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে৷ বাবা-মা জানেন, সাত বছরের ছেলেটাকে এখনই নিয়ে যেতে হবে ডাক্তারের কাছে৷ কিন্ত্ত চাইলেই তো আর হবে না৷ টাকা কই? জমানো যা কিছু ছিল, সবটুকুই তো সারদার ঘরে৷ এ ডাক্তার সে ডাক্তারের হাতে-পায়ে ধরেও সাহায্য মেলেনি৷ রবিবার অবশেষে স্বস্তি৷ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ক্যান্সার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহায়তায় চিকিত্সা শুরু হল অ্যাকিউট লিম্ফ্যাটিক লিউকিমিয়ায় আক্রান্ত শুভঙ্করের৷
পেশায় মাছ ব্যবসায়ী গৌতম মণ্ডলের ছেলে শুভঙ্করের যখন ক্যান্সার ধরা পড়েছিল, তখন তার বয়স সাড়ে তিন৷ ছেলেকে সারিয়ে তুলতে একগাদা টাকা খরচের সামর্থ্য ছিল না গৌতমবাবুর৷ তাই বাধ্য হয়েই ধারদেনা করে চিকিত্সা শুরু করান ছেলের৷ বাকির টাকা শোধ করতেন রেকারিংয়ের মাধ্যমে টাকা জমিয়ে৷ রবিবার আক্ষেপের সুরে গৌতমবাবুর স্ত্রী প্রতিমা মণ্ডল জানালেন, 'এ ভাবেই গত তিন বছর ধরে টেনেটুনে চিকিত্সা চলেছিল শুভঙ্করের৷ কেন যে মরতে বেশি টাকা ফেরতের আশা করলাম?'
সেই আশা ভেঙেছে সপ্তাহ দু'য়েক আগে৷ এক বছরের জন্য জমানো টাকার বড়সড় রিটার্ন ফেরতের কথা ছিল এক মাস পরেই৷ শুধু সারদাই নয়, তিন-তিনটি বেআইনি আর্থিক সংস্থায় টাকা রেখে মোট ৭২ হাজার টাকা এখন ডুবতে বসেছে গৌতম মন্ডলের৷
কী ভাবে পড়লেন এই প্রতারকদের খপ্পরে? গৌতমবাবুর কথায়, 'আমি যে বাজারে মাছ বেচি, সেখানেই এক যুবক এসে এই ফান্ডের কথা বলেছিল৷ বলেছিল, অল্প টাকা রাখলে বেশি ফেরত পাওয়া যাবে৷' তাই প্রতিদিন ৩০ টাকা করে সারদা ফান্ডে জমা দিতেন তিনি৷ কথা ছিল ১২ হাজার টাকা ফেরতের৷ একবারও সন্দেহ হল না আপনার? গৌতমবাবুর ক্ষীণ জবাব, 'বাজারের সব বন্ধুরা টাকা রেখেছিল৷ তাই ভাবলাম, ক্ষতি কী?'
ক্ষতিটা শনিবার হাড়ে হাড়ে বুঝতে পেরেছেন মণ্ডল দম্পতি৷ আচমকা ধূম জ্বর ছেলের৷ ঘরে টাকা নেই৷ অকূল পাথারে পড়েছিলেন গৌতম৷ রবিবার অবশ্য বুকে কিছুটা বল পেয়েছেন৷ চিকিত্সা শুরু হয়েছে শুভঙ্করের৷ হাসপাতালের চিকিত্সক আশিস মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, 'ওর একটা সংক্রমণ হয়েছে৷ আশা করছি, দ্রুত অবস্থার উন্নতি হবে৷'
আমানতকারীদের জমানো অর্থ ফিরিয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থার মালিক, অংশীদার, ডিরেক্টর, ম্যানেজার, সদস্য, এমনকি বেতনভুক কর্মচারীদেরও স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে৷
আইন চালু হওয়ার আগেও যে সব সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের সম্পত্তিও বাজেয়ান্ত করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট বিলের ২২(২) নম্বর ধারায় বলা হয়েছে৷ নতুন আইনে অভিযুক্ত সংস্থার কর্তাদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন জেল৷ কিন্ত্ত সুদীন্ত সেনের মতো অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তা কার্যকর হবে কি না, সেই প্রশ্নেই মঙ্গলবার উত্তাল হতে পারে বিধানসভা৷ অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র আগামীকাল বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে 'দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রটেকশন অফ ইন্টারেস্ট অফ ডিপোজিটর্স ইন ফিনান্সিয়াল এস্টাব্লিসমেন্টস বিল, ২০১৩' পেশ করতে চলেছেন৷ আজ সোমবার দু'দিনের অধিবেশনের সূচনা হচ্ছে৷ গোলমালের আশঙ্কা আছে আজও৷ এরই মধ্যে, রবিবার তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী আমানতকারীদের জমানো টাকা অবিলম্বে তুলে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷ তাঁর বক্তব্য, কোনও সংস্থাই প্রতিশ্রুতি মতো অর্থ ফেরাতে পারবে না৷ শুভেন্দুবাবুর এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আজ থেকেই লগ্নি সংস্থার অফিসগুলিতে টাকা ফেরত চেয়ে আমানতকারীদের ভিড় জমতে পারে বলে পুলিশ আশঙ্কা করছে৷
এ দিকে ভুয়ো লগ্নি সংস্থা সংক্রান্ত সব ক'টি মামলার তদন্ত একটি 'স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম' (এসআইটি বা সিট) অথবা বিশেষ তদন্তকারী দলের আওতায় আনা হচ্ছে৷ রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন আধিকারিককে নিয়ে গঠিত হয়েছে ওই দল৷ ওই দলের তরফে শনিবারই এডিজি (সিআইডি) ও স্পেশ্যাল আইজি (সিআইডি) বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ কলকাতা পুলিশের আওতায় রবিবার রাত পর্যন্ত মোট চারটি থানায় (পার্ক স্ট্রিট, ভবানীপুর, হেস্টিংস ও লেক) সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে৷ তার মধ্যে দু'টিতে অভিযুক্ত সুদীন্ত সেন ও কুণাল ঘোষ দু'জনেই৷ যেখানে যে অভিযোগই জমা পড়ুক না কেন, সিট সব ক'টি অভিযোগেরই তদন্ত করবে বলে পুলিশ সূত্রে খবর৷ এর ফলে তদন্ত দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা করছে প্রশাসনের একাংশ৷ রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, তৃণমূলের মন্ত্রী-এমপিদের নাম জড়িয়ে যাওয়াতেই তদন্ত নিয়ন্ত্রণ করতে ডিজি-র নেতৃত্বাধীন সিটকে সব মামলার তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে৷ কারণ, আগামী দিনে হয়তো দলের আরও নেতা, মন্ত্রীর নাম এই কেলেঙ্কারিতে উঠে আসবে৷
নতুন বিলের সঙ্গে বাম জমানার বিলটির (পাশ হয়েছিল ২০০৯-এ) বিশেষ কোনও ফারাক নেই৷ রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছেন, 'আগের বিলে ভুয়ো লগ্নি সংস্থাগুলিতে তল্লাশির কোনও ক্ষমতা পুলিশ প্রশাসনকে দেওয়া ছিল না৷ সেই ক্ষমতা না থাকলে তদন্তই অর্থহীন হয়ে পড়ে৷ আমরা যে বিল আনছি, তাতে এর সংস্থান থাকছে৷' বিধানসভা সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট বিলের শেষ অনুচ্ছেদে আগের বিলের সঙ্গে এই পার্থক্যের উল্লেখ থাকছে৷ এ ছাড়া নতুন বিলে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা বলা আছে৷ এই কর্তৃপক্ষের কাছে এই ধরনের সংস্থাগুলিকে নিয়মিত ব্যবসায়িক লেনদেনের হিসাব পেশ করতে হবে৷
বাম জমানার বিলেও প্রতারক সংস্থার অভিযুক্ত কর্তাদের যাবজ্জীবন জেলের বিধান ছিল৷ নতুন সরকার সেই সাজা বহাল রাখলেও প্রশ্ন উঠেছে, সারদা গোষ্ঠীর ধৃত কর্ণধার সুদীন্ত সেন ও তাঁর শাগরেদদের সেই সাজা হবে কি না৷ পার্থবাবু ক'দিন ধরেই দাবি করে আসছেন, বিলে যে কঠোর সাজার বিধান তাঁরা রাখছেন, তা আইন চালু হওয়ার আগে যারা অভিযুক্ত হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে৷ কিন্ত্ত, বিলের ১৩(২) ধারায় বলা হয়েছে বিচারাধীন মামলার ক্ষেত্রে এই আইন কার্যকর হবে না৷ সরকারি মহলের দাবি, সুদীন্ত সেনের বিরুদ্ধে নতুন আইন চালু হওয়ার পরও অভিযোগ দায়ের হওয়ার সম্ভাবনা ষোল আনা৷ ফলে, তাঁর পার পাওয়ার সুযোগ নেই৷
বিলের এই বক্তব্য তুলে ধরেই বিরোধী বামেরা রবিবার অভিযোগ তুলেছে, সুদীন্ত সেনদের বাঁচাতেই এই নতুন আইন করা হচ্ছে৷ ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছা থাকলে বাম জমানার বিলটিই সরকার কার্যকর করতে পারত৷ যদিও বাম জমানার বিলেও এই ব্যাপারে কোনও স্পষ্ট দিকনির্দেশ ছিল না৷
আলিপুরদুয়ার: কোনও ঘোষিত সংস্থা নয়, এক জন লোকের প্রতারণায় সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছে একটি গোটা জনপদ৷ ১৪ দিনে আমানতের টাকা দ্বিগুণ করে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করে পালিয়েছেন সেই জালিয়াত৷ কিন্ত্ত অতি লোভে জমি-বাড়ি বন্ধক রেখে জীবনের শেষ সঞ্চয় পর্যন্ত লগ্নি করে এখন না খেয়ে মরার দশা হয়েছে জলপাইগুড়ির বর্ধিষ্ণু এলাকা জটেশ্বর ও সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের৷ এমন কোনও পরিবার নেই ওই অঞ্চলে, যাঁরা সেই ঠগের পাল্লায় পড়েননি৷
পরিচারিকা থেকে শুরু করে সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক, সবাই ফেঁসেছেন বঙ্কিম দেবনাথ নামে ওই জালিয়াতের ফাঁদে৷ ওই এলাকায় অসমের এক কংগ্রেস বিধায়কের বাড়িতে ডেরা বেধে জোচ্চুরি চালিয়ে যাওয়ায় ভরসা করেছিলেন তাঁরা৷ রাজনৈতিক নেতারা আমানত ফেরত দেওয়ানোর ব্যবস্থা করবেন আশ্বাস দিয়ে প্রতারণা ফাঁস হওয়ার পর বঙ্কিমকে গ্রেপ্তার করতে দেননি৷ কিন্ত্ত চিকিত্সক দেখানোর নাম করে তিনি ভেগে গিয়েছেন৷ রাজনৈতিক নেতারা এখন মুখে কুলুপ এঁটেছেন৷ আর ভেঙে পড়েছে জটেশ্বরের অর্থনীতি৷
বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ করে কিছু অর্থ সঞ্চয় করেছিলেন মমতা সরকার৷ তাঁর স্বামী প্রতিবন্ধী৷ ফলে একমাত্র মেয়ের বিয়ের খরচ নিয়ে উদ্বেগে ছিলেন মমতা৷ সেই সুযোগ গ্রহণ করে গরিব মানুষটিকে পথে বসিয়ে দিয়ে গিয়েছেন বঙ্কিমবাবু৷ মমতা জানিয়েছেন, 'মাসিমা ডেকে বঙ্কিম আমায় বলে এত কম টাকায় মেয়ের বিয়ে তো দিতে পারবে না৷ তার চেয়ে ওই টাকায় আমায় দাও৷ ১৫ দিনের মধ্যে দ্বিগুণ করে দেব৷' ওই কথায় ভুলে তিনি বাড়ির চারটি গোরু বিক্রি করে মোট দু' লক্ষ টাকা আমানত করে মেয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিলেন৷ সোমবার সেই বিয়ের দিন৷ কিন্ত্ত টাকার অভাবে সেই বিয়ে ভেস্তে যেতে বসেছে৷ এর পর আর মেয়ের দিতে পারবেন কী না ভেবে মানসিক ভাবে একেবারে ভেঙে পড়েছেন তিনি৷
একই ভুল করেছেন সরকার দম্পতি৷ স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মী প্রশান্ত সরকার ও তাঁর শিক্ষিকা স্ত্রী শিখা সরকার দু'জনই অবসর নিয়েছেন৷ অবসরকালীন প্রাপ্ত টাকার অধিকাংশ মোট ১২ লক্ষ টাকা বঙ্কিমের হাতে আমানত দিয়ে এখন পথে বসেছেন তাঁরা৷ টাকার অভাবে চোখের ছানি অপারেশন করাতে পারছেন না অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী প্রশান্তবাবু৷ তিনি বলেন, 'প্রশাসন যদি বঙ্কিম দেবনাথকে গ্রেপ্তার করে টাকা ফেরানোর ব্যবস্থা না করে, তবে আমাদের বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে পড়বে৷ বৃদ্ধ বয়সে আমাদের দেখারও কিছু নেই৷'
প্রতারকের জালে পড়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত এসএসবি জওয়ান দুলাল সরকারও৷ অবসরের পর সরকারি কোষাগার থেকে পাওয়া ১৭ লক্ষ টাকার মধ্যে ২ লক্ষ টাকা হাতে রেখে বাকিটা পুরো দিয়েছিলেন বঙ্কিমবাবুকে৷ এখন তিনি পস্তাচ্ছেন৷ দুলালবাবুর আক্ষেপ, 'কেমন করে এত বড় ভুল করলাম, বুঝতেই পারছি না৷' ক্রেতাদের তাড়ায় পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে জটেশ্বর বাজারের গয়নার দোকানের মালিক গণেশ শাকে৷ শুধু নিজের নয়, ক্রেতাদের দেওয়া সোনা বিক্রি করে ৩৫ লক্ষ টাকা জোগার করে আমানত দিয়েছিলেন তিনি৷
গণেশবাবু বলেন, 'ভেবেছিলাম, টাকা দ্বিগুন হয়ে গেলে সোনা কিনে গয়না বানিয়ে দিতে কোনও সমস্যাই হবে না৷ উল্টে বেশ কিছু বাড়তি অর্থ পেয়ে যাব৷ এখন বিয়ের মরশুম এসে পড়ায় ক্রেতারা এসে তাগাদা করছেন৷ এক ভরি সোনা কেনারও ক্ষমতা নেই আমার৷ ফলে দোকান বন্ধ রেখে পালিয়ে বেড়াচ্ছি৷ জানি না, আমার কপালে কী আছে৷' কাপড়ের পাইকার রঞ্জিত্ দে তো ভিটেবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার বিপদের মুখে৷ বসতবাড়ি বন্ধক রেখে ৭ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করেছিলেন তিনি৷ শিলিগুড়িতে মহাজনকে পাওনা না দিয়ে আরও ৭ লক্ষ টাকা-সহ মোট ১৪ লক্ষ লগ্নি করেছিলেন৷
রঞ্জিত্বাবু বলেন, 'এখন এক দিকে মহাজনের তাগাদা আর যার কাছে বাড়ি বন্ধক রেখেছিলাম, তিনি বাড়ির দখল নিতে চাওয়ায় পাগলের দশা আমার৷ শেষে বোধহয় ভিখিরি হয়ে পথে পথে ঘুরতে হবে আমায়৷' বঙ্কিমবাবু তো টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেনই, যাঁকে দেখে স্থানীয় মানুষ ভরসা করেছিলেন, অসমের বিধায়ক চন্দন সরকারের ভাই উজ্জ্বল সরকারকেও আর খুঁজে পাচ্ছেন না কেউ৷ চন্দনবাবুর আশ্রয়ে বঙ্কিমবাবু অসমে রয়েছেন বলে 'এই সময়'-এ খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকে তিনি বেপাত্তা৷
চন্দনবাবুও আর টেলিফোন ধরছেন না৷ পুলিশের হিসেবে, কম করে ৪০০ কোটি টাকা আত্মসাত্ করেছেন বঙ্কিমবাবু৷ জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিত পি জাভালগি বলেন, 'বঙ্কিমকে পাকরাও করার জন্য চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখছি না বটে৷ কিন্ত্ত সংস্থার তকমা না থাকা সত্ত্বেও, এক জনের হাতে বোকার মতো মানুষ কেমন করে কোটি কোটি টাকা সঁপে দিলেন, তা সত্যিই আমার বোধগম্য হচ্ছে না৷'
অথচ তাঁর সংস্থাকে বাদ দিয়েই আসানসোল পুরসভা অন্যান্য বেআইনি আমানত কোম্পানিগুলিকে ৭ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে বলেছিল৷ ওই মেয়র পারিষদের মালিকানাধীন সংস্থার পাশাপাশি আসানসোল ও দুর্গাপুরে যে ৭৩টি সংস্থাকে সন্দেহভাজন বলে দুই পুরসভা চিহ্নিত করেছে, তাতে বাদ পড়েছে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আরও তিনটি সংস্থার নাম৷ দুর্গাপুর পুরসভার তালিকায় এমনকী রোজ ভ্যালি গোষ্ঠীর নামও ছিল না৷ যদিও এ নিয়ে খোঁজ শুরু করায় ভুলবশত রোজ ভ্যালির নাম বাদ পড়েছে বলে সাফাই দিয়েছেন দুর্গাপুরের মেয়র৷
আমানত ব্যবসার জালিয়াতি নিয়ে রাজ্য জুড়ে হইচই শুরু হতেই আসানসোলের মেয়র পারিষদ অনিমেষ দাসের সংস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন বামফ্রন্ট নেতারা৷ তাঁরা মেয়র তাপস বন্দোপাধ্যায়কে এ জন্য তদন্ত করতে অনুরোধ জানিয়ে স্মারকলিপিও দিয়েছিলেন৷ তা সত্ত্বেও, পুরসভার তৈরি সন্দেহভাজন আমানত সংস্থার তালিকায় অনিমেষবাবুর মালিকানাধীন আস্থার নাম ছিল না৷ কিন্ত্ত এই লুকোচুরি ফাঁস হয়ে গিয়েছে পুলিশ তাঁর সংস্থার অফিসে হানা দেওয়ায়৷
সরাসরি ওই মেয়র পারিষদের সংস্থার নাম উল্লেখ না করলেও আসানসোলের এডিসিপি সুরেশ কুমার বলেন, 'বেশ কিছু সংস্থার কাগজপত্রই আমরা নিয়ে এসেছি৷ খতিয়ে দেখে তা আবার ফেরত দেওয়াও হবে৷ আসলে পুলিশও ওই ব্যবসা সম্পর্কে তথ্য রাখতে চাইছে৷' অনিমেষবাবু কিন্ত্ত কোনও রাখঢাক না করেই ব্যবসাটির কথা মেনে নিয়েছেন৷ তিনি বলেন, '২০০৭ থেকে আমার সংস্থা কাজ করছে৷ আমরা টাকা ধার দিই৷ সে জন্য ১৮ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ নিয়ে থাকি৷ তবে আবেদন করার সময় কিছু টাকা গচ্ছিত রাখতে হয়, যা অফেরতযোগ্য৷'
কিন্ত্ত এ জন্য বৈধ অনুমতি কী তাঁর সংস্থার আছে৷ আসানসোলের মেয়র পারিষদ বলেন, 'না, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে অনুমতি নিতে হয়, তা আমাদের নেই৷' মেয়র তাপস বন্দোপাধ্যায় অবশ্য এ তথ্য তাঁর জানা নেই বলে এড়িয়েছেন৷ তিনি বলেন, 'আমার সঙ্গে এ নিয়ে অনিমেষবাবুর কোনও কথা হয়নি৷ সোমবার খোঁজ নিয়ে দেখব৷'
পুলিশ জানতে পেরেছে, দু'মাস আগে একটি অত্যাধুনিক অফিসঘর ভাড়া নিয়েছিল সারদা গ্রুপ৷ মাত্র ১০/১২ জন কর্মী সেখানে থাকলেও কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হত ওই অফিস রক্ষণাবেক্ষণের জন্য৷ ইতিমধ্যেই সারদা কোম্পানির ৩৪টি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে৷ বাকি গাড়িগুলিও বাজেয়াপ্ত করা হবে৷ বিধাননগরের কমিশনার অর্ণব ঘোষ জানিয়েছেন, জানুয়ারি থেকে সারদা সংস্থার আমানতের জমা দেওয়া টাকার পরিমাণ কমে আসছিল৷ কিন্ত্ত অর্থসঙ্কটের কথা গোপন করতেই পুরোদস্ত্তর বাবুয়ানা বজায় রাখায় নির্দেশ দিয়েছিলেন সুদীপ্তবাবু৷
নিউটাউন থানায় এ দিনও দেবযানী ও সুদীপ্তকে জেরা করেন তদন্তকারী পুলিশ অফিসারেরা৷ জেরায় সুদীপ্ত আগের মতোই বেশ কয়েক জন রাজনৈতিক নেতা এবং মন্ত্রীর নাম বলেন৷ পুলিশের জেরায় সংস্থার ভরাডুবির দায় কার্যত এজেন্ট এবং কর্মীদের উপরেই চাপিয়েছেন তিনি৷ জেরায় জানা গিয়েছে, কলকাতা ছেড়ে পালানোর আগে মাত্র দেড় লক্ষ টাকা সঙ্গে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন সুদীন্ত৷ দেবযানী দিল্লিতে গিয়েছিলেন এক লক্ষ টাকা নিয়ে৷ সঙ্গে ছিল গোলপার্ক এলাকার একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের দু'টি ডেবিট কার্ড৷ সেই কার্ড দিয়েই টাকা তোলা হয়৷ ওই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দেবযানীর নামে রয়েছে তিন লক্ষ টাকার মতো৷
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সুদীপ্ত সেনের ২১০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের কোনওটিরই সম্পূর্ণ হিসেব ব্যাঙ্কগুলির কাছ থেকে মেলেনি বলেই তাঁর নামে জমা টাকার পরিমাণ জানা সম্ভব হয়নি৷ কিন্ত্ত বাজার থেকে সারদা গোষ্ঠীর মোট কত টাকা তুলেছিল তা জানতে তাদের প্রাত্যহিক জমা টাকার তালিকা মিলিয়ে দেখার চেষ্টা চলছে৷ পুলিশের মতে, আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে গণ্ডগোল করে ফেলাতেই গাড্ডায় পড়ে গিয়েছিল তাঁর ব্যবসা৷ পুলিশ সূত্রে খবর, ২০১১ সালে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক সন্দেহজনক লেনদেনের কারণে সুদীপ্ত সেনের সাতটি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়৷ তদন্তে জানা গিয়েছে ওই সময়ই বেশ কিছু জমি কিনেছিলেন সারদার কর্ণধার৷
সিবিআই এবং অন্যান্য যে ২২টি সংস্থাকে দেওয়া সুদীন্ত সেনের চিঠির ভিত্তিতেও তাকে জেরার কাজ চলছে৷ খোঁজ নেওয়া হচ্ছে সারদায় কাজ করা মহিলাদের সম্পর্কেও৷ তদন্তে জানা গিয়েছে, ২০০৮ সাল থেকে ব্যবসা শুরু করে এখনও পর্যন্ত সারদার জমি সংক্রান্ত সম্পত্তি পাওয়া গিয়েছে প্রায় ১৪৮টি৷ তাতে জমির পরিমাণ ৪৫০ বিঘার মতো৷ রবিবারও সারদার মূল অফিস মিডল্যান্ড পার্কে হানা দেন তদন্তকারী অফিসারেরা৷ বেশ কিছু নথিপত্র এবং ল্যাপটপ বাজেয়ান্ত করা হয়৷ সে সময়ও পুলিশের সঙ্গে ছিলেন সংস্থার দুই মহিলা কর্মী৷ পুলিশের পক্ষ থেকে এ দিন জানানো হয়, ১০ তারিখ দেবযানীর পরিবর্তে অন্য এক মহিলাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷ তার পরিচয় জানা গিয়েছে৷ তার সঙ্গে পরে কথা বলা হবে৷
No comments:
Post a Comment