এই সময়: ঘুমের ওষুধ, হরমোন থেরাপি আর ডায়াবেটিসের মিলিত প্রভাবই কি ঘুমের মধ্যে নীরবে কেড়ে নিল ঋতুপর্ণ ঘোষকে? পরিচালকের আচমকা অকালমৃত্যুর পর এই সন্দেহই দানা বাঁধছে শহরের বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদের মনে৷ তাঁদের অনেকেই মনে করছেন, রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকার পরেও ভোররাতে প্রাণঘাতী হার্ট অ্যাটাক হয়েছে এই তিনটি কারণেই৷
টালিগঞ্জের স্টুডিওপাড়ায় ঘুরে-ফিরে আসছে আরও একটি প্রশ্ন৷ নিজের নারীসত্তাকে দৈহিক ভাবে আরও জাগিয়ে তুলতে গিয়েই কি শরীরের উপর অবিচার করে ফেলেছিলেন 'চিত্রাঙ্গদা'র পরিচালক? ঋতুপর্ণর ঘনিষ্ঠমহলও মনে করছে, লিঙ্গসত্তায় বদল আনার যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা গত কয়েক বছর ধরে শুরু করেছিলেন তিনি, তার মাসুল যথেষ্ট পরিমাণেই দিতে হয়েছে ঋতুকে৷ 'আর একটি প্রেমের গল্প'-এ অভিনয়ের জন্য শরীরকে তন্বী করে তুলতে যে হারে ডায়েটিং, অস্ত্রোপচার ও হরমোনের আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাকেও এই অকালমৃত্যুর নেপথ্যে 'খলনায়ক' ঠাওরাচ্ছেন স্টুডিওপাড়ার অনেকে৷ মাঝে বেশ কিছু দিন তিনি ভর্তি ছিলেন বেসরকারি হাসপাতালে৷ ঋতুপর্ণর ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রসেনজিত চট্টোপাধ্যায়ও বলছেন, শরীর নিয়ে এমন 'এক্সপেরিমেন্ট' করতে তাঁরা নিষেধ করলেও, কানে তোলেননি তাঁদের দোসর৷
চিকিত্সক নিরূপ মিত্র ডেথ সার্টিফিকেটে লিখেছেন, হার্ট অ্যাটাকেই মৃত্যু হয়েছে ঋতুপর্ণর৷ কিন্ত্ত হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও কেন কোনও যন্ত্রণার ছাপ পড়েনি তাঁর চোখমুখে? বিএম বিড়লা হার্ট রিসার্চ সেন্টারের ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট ধীমান কাহালি মনে করেন, ঘুমের ওষুধ খাওয়া এবং দীর্ঘ দিন ধরে ডায়াবেটিসে ভোগার কারণেই সম্ভবত যন্ত্রণা টের পাননি ঋতুপর্ণ৷ সে জন্যেই মৃত্যুর পরেও তাঁর মুখে ছিল প্রশান্তির ছাপ৷ ধীমানবাবুর মতে, 'যাঁরা অনেক দিন ডায়াবেটিসে ভোগেন, হাই ব্লাড-সুগারের জেরে তাঁদের স্নায়ুর সংবেদনশীলতা কমতে বাধ্য৷ সেই ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির জন্যই হার্ট অ্যাটাকের ভয়াবহ যন্ত্রণাও অনুভব করতে পারেন না অনেকে৷ ঋতুপর্ণর ক্ষেত্রেও সম্ভবত এমনটাই হয়েছিল৷ আগের রাতে ঘুমের ওষুধ খাওয়ার ফলেও যন্ত্রণার অনুভূতি কম হওয়াই স্বাভাবিক৷ ঘুমের মধ্যে কিছু বোঝার আগেই সম্ভবত মৃত্যু হয়েছে তাঁর৷'
ঋতুপর্ণ ঘোষের পারিবারিক চিকিত্সক রাজীব শীলের কথায়, 'ভোরবেলা এমনিতেই হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেশি থাকে৷ চিকিত্সার পরিভাষায় একে মর্নিং সার্জ বলে৷ ঋতুরও সম্ভবত সেটাই হয়েছে৷ এবং সেটা এত মারাত্মক ছিল যে চিকিত্সার সুযোগ পর্যন্ত মেলেনি৷' ১৫ বছরের বন্ধুকে বাঁচানোর চেষ্টাটা পর্যন্ত করতে না-পারার আফশোস কুরে কুরে খাচ্ছে রাজীববাবুকে৷ জানাচ্ছেন, বছর ছয়েক আগে ঋতুপর্ণ প্যানক্রিয়াটাইটিসে আক্রান্ত হলেও ইদানীং তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে ছিল৷ কিন্ত্ত চিন্তার কারণ ছিল অনিয়ন্ত্রিত ব্লাডসুগার৷ প্রয়াত পরিচালক তাঁর মা-বাবার মতোই ছিলেন ডায়াবেটিসের রোগী৷ লাগামছাড়া ব্লাড সুগারের নেপথ্যে এই 'ফ্যামিলি হিস্ট্রি' অন্যতম কারণ৷ আর এই ডায়াবেটিস থেকেই বেড়ে গিয়েছিল তাঁর হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি৷
সিনেমার চরিত্রের প্রয়োজনে এবং নিজের নারীসত্তায় প্রাণপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই নিয়মিত ফিমেল হরমোন সাপ্লিমেন্ট নিতেন ঋতুপর্ণ৷ পাড়ার ওষুধের দোকানিও জানাচ্ছেন, দিনে ১০-১৫ রকম ওষুধ খেতেন৷ চিকিত্সকেরা মনে করছেন, ডায়াবেটিসের রোগী হওয়া সত্ত্বেও বেশ কয়েক বছর যাবত্ হরমোন থেরাপি করাও কাল হয়েছে তাঁর৷ 'কারণ, এ ক্ষেত্রে হরমোন থেরাপি মানে মূলত ইস্ট্রোজেন৷ ব্লাড-সুগার আর ইস্ট্রোজেনের যুগলবন্দি হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়,' অভিমত ধীমানবাবুর৷
নিয়মিত ইস্ট্রোজেন কি এতটাই প্রাণঘাতী? এসএসকেএম হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের প্রধান শুভঙ্কর চৌধুরী বলেন, '৫% রোগীর ক্ষেত্রে থ্রম্বো-এমবলিজম (রক্ত-জমাট বেঁধে গিয়ে রক্তনালী বন্ধ হওয়া) বিচিত্র নয়৷ ডায়াবেটিস, করোনারি আর্টারি ডিজিজের মতো সমস্যা থাকলে এমন ঝুঁকি থাকেই৷' শুভঙ্করবাবুর সঙ্গে একমত বিশিষ্ট ফুসফুস রোগ বিশেষজ্ঞ আলোকগোপাল ঘোষও৷ তাঁর মতে, 'হরমোন থেরাপি থ্রম্বো-এমবলিজমের ঝুঁকি বাড়ায়৷ হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসে বড়সড় এমবলিজম হলে, কিছু বুঝে ওঠার আগেই মৃত্যু হয়৷ শ্বাসকষ্ট কিংবা যন্ত্রণাটুকুও টের পাওয়া যায় না৷'
ঋতুপর্ণর ক্ষেত্রে কি এমন কিছুই হয়েছিল? সঠিক উত্তরটা জানা যাবে না কোনও দিনই৷
টালিগঞ্জের স্টুডিওপাড়ায় ঘুরে-ফিরে আসছে আরও একটি প্রশ্ন৷ নিজের নারীসত্তাকে দৈহিক ভাবে আরও জাগিয়ে তুলতে গিয়েই কি শরীরের উপর অবিচার করে ফেলেছিলেন 'চিত্রাঙ্গদা'র পরিচালক? ঋতুপর্ণর ঘনিষ্ঠমহলও মনে করছে, লিঙ্গসত্তায় বদল আনার যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা গত কয়েক বছর ধরে শুরু করেছিলেন তিনি, তার মাসুল যথেষ্ট পরিমাণেই দিতে হয়েছে ঋতুকে৷ 'আর একটি প্রেমের গল্প'-এ অভিনয়ের জন্য শরীরকে তন্বী করে তুলতে যে হারে ডায়েটিং, অস্ত্রোপচার ও হরমোনের আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাকেও এই অকালমৃত্যুর নেপথ্যে 'খলনায়ক' ঠাওরাচ্ছেন স্টুডিওপাড়ার অনেকে৷ মাঝে বেশ কিছু দিন তিনি ভর্তি ছিলেন বেসরকারি হাসপাতালে৷ ঋতুপর্ণর ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রসেনজিত চট্টোপাধ্যায়ও বলছেন, শরীর নিয়ে এমন 'এক্সপেরিমেন্ট' করতে তাঁরা নিষেধ করলেও, কানে তোলেননি তাঁদের দোসর৷
চিকিত্সক নিরূপ মিত্র ডেথ সার্টিফিকেটে লিখেছেন, হার্ট অ্যাটাকেই মৃত্যু হয়েছে ঋতুপর্ণর৷ কিন্ত্ত হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও কেন কোনও যন্ত্রণার ছাপ পড়েনি তাঁর চোখমুখে? বিএম বিড়লা হার্ট রিসার্চ সেন্টারের ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট ধীমান কাহালি মনে করেন, ঘুমের ওষুধ খাওয়া এবং দীর্ঘ দিন ধরে ডায়াবেটিসে ভোগার কারণেই সম্ভবত যন্ত্রণা টের পাননি ঋতুপর্ণ৷ সে জন্যেই মৃত্যুর পরেও তাঁর মুখে ছিল প্রশান্তির ছাপ৷ ধীমানবাবুর মতে, 'যাঁরা অনেক দিন ডায়াবেটিসে ভোগেন, হাই ব্লাড-সুগারের জেরে তাঁদের স্নায়ুর সংবেদনশীলতা কমতে বাধ্য৷ সেই ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির জন্যই হার্ট অ্যাটাকের ভয়াবহ যন্ত্রণাও অনুভব করতে পারেন না অনেকে৷ ঋতুপর্ণর ক্ষেত্রেও সম্ভবত এমনটাই হয়েছিল৷ আগের রাতে ঘুমের ওষুধ খাওয়ার ফলেও যন্ত্রণার অনুভূতি কম হওয়াই স্বাভাবিক৷ ঘুমের মধ্যে কিছু বোঝার আগেই সম্ভবত মৃত্যু হয়েছে তাঁর৷'
ঋতুপর্ণ ঘোষের পারিবারিক চিকিত্সক রাজীব শীলের কথায়, 'ভোরবেলা এমনিতেই হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেশি থাকে৷ চিকিত্সার পরিভাষায় একে মর্নিং সার্জ বলে৷ ঋতুরও সম্ভবত সেটাই হয়েছে৷ এবং সেটা এত মারাত্মক ছিল যে চিকিত্সার সুযোগ পর্যন্ত মেলেনি৷' ১৫ বছরের বন্ধুকে বাঁচানোর চেষ্টাটা পর্যন্ত করতে না-পারার আফশোস কুরে কুরে খাচ্ছে রাজীববাবুকে৷ জানাচ্ছেন, বছর ছয়েক আগে ঋতুপর্ণ প্যানক্রিয়াটাইটিসে আক্রান্ত হলেও ইদানীং তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে ছিল৷ কিন্ত্ত চিন্তার কারণ ছিল অনিয়ন্ত্রিত ব্লাডসুগার৷ প্রয়াত পরিচালক তাঁর মা-বাবার মতোই ছিলেন ডায়াবেটিসের রোগী৷ লাগামছাড়া ব্লাড সুগারের নেপথ্যে এই 'ফ্যামিলি হিস্ট্রি' অন্যতম কারণ৷ আর এই ডায়াবেটিস থেকেই বেড়ে গিয়েছিল তাঁর হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি৷
সিনেমার চরিত্রের প্রয়োজনে এবং নিজের নারীসত্তায় প্রাণপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই নিয়মিত ফিমেল হরমোন সাপ্লিমেন্ট নিতেন ঋতুপর্ণ৷ পাড়ার ওষুধের দোকানিও জানাচ্ছেন, দিনে ১০-১৫ রকম ওষুধ খেতেন৷ চিকিত্সকেরা মনে করছেন, ডায়াবেটিসের রোগী হওয়া সত্ত্বেও বেশ কয়েক বছর যাবত্ হরমোন থেরাপি করাও কাল হয়েছে তাঁর৷ 'কারণ, এ ক্ষেত্রে হরমোন থেরাপি মানে মূলত ইস্ট্রোজেন৷ ব্লাড-সুগার আর ইস্ট্রোজেনের যুগলবন্দি হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়,' অভিমত ধীমানবাবুর৷
নিয়মিত ইস্ট্রোজেন কি এতটাই প্রাণঘাতী? এসএসকেএম হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের প্রধান শুভঙ্কর চৌধুরী বলেন, '৫% রোগীর ক্ষেত্রে থ্রম্বো-এমবলিজম (রক্ত-জমাট বেঁধে গিয়ে রক্তনালী বন্ধ হওয়া) বিচিত্র নয়৷ ডায়াবেটিস, করোনারি আর্টারি ডিজিজের মতো সমস্যা থাকলে এমন ঝুঁকি থাকেই৷' শুভঙ্করবাবুর সঙ্গে একমত বিশিষ্ট ফুসফুস রোগ বিশেষজ্ঞ আলোকগোপাল ঘোষও৷ তাঁর মতে, 'হরমোন থেরাপি থ্রম্বো-এমবলিজমের ঝুঁকি বাড়ায়৷ হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসে বড়সড় এমবলিজম হলে, কিছু বুঝে ওঠার আগেই মৃত্যু হয়৷ শ্বাসকষ্ট কিংবা যন্ত্রণাটুকুও টের পাওয়া যায় না৷'
ঋতুপর্ণর ক্ষেত্রে কি এমন কিছুই হয়েছিল? সঠিক উত্তরটা জানা যাবে না কোনও দিনই৷
No comments:
Post a Comment