কলকাতা: সারদাকাণ্ডে ঘরে-বাইরে সিবিআই তদন্তের দাবি ক্রমশ জোরদার হলেও কলকাতা হাইকোর্টে সিবিআই তদন্তের বিরোধিতাই করেছে রাজ্য সরকার৷ সিবিআই তদন্তের দাবিকে গতকাল শ্যামবাজারের সভা থেকে কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও৷ এই প্রেক্ষাপটে আজ কলকাতা হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে সিবিআই জানিয়ে দিল, হাইকোর্ট চাইলে সারদাকাণ্ডে তদন্ত করতে তাদের আপত্তি নেই৷ তবে তারা এও জানিয়েছে, তদন্তের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কর্মী বা পরিকাঠামো তাদের নেই৷ তাই হাইকোর্ট যদি সিবিআইকে সারদাকাণ্ডের তদন্ত করতে বলে, তাহলে রাজ্য সরকারকে যেন কর্মী ও পরিকাঠামোগত সহায়তা করারও নির্দেশ দেওয়া হয়৷ যে রাজ্য সরকার সিবিআই তদন্তই চায় না, তাদের সেই তদন্তের জন্যই কর্মী ও পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করতে বলা হলে তারা কী প্রতিক্রিয়া জানায়, সেটাই দেখার বিষয় হয়ে উঠবে।
এর আগে সারদাকাণ্ডে তদন্ত নিয়ে সিবিআইয়ের মতামত জানতে চায় কলকাতা হাইকোর্ট৷ পাশাপাশি জানতে চাওয়া হয় অসমে সারদার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত করছে কি না৷ তার উত্তরে জানানো হয়েছে, অসমে সিবিআই এখনও তদন্ত শুরু করেনি৷ তবে বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে৷
প্রসঙ্গত, সারদাকাণ্ডে সিবিআই তদন্ত দাবি করে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন আইনজীবী বাসবী রায়চৌধুরী৷ আবেদনকারীর তরফে তাঁর আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় আদালতে দাবি করেন, সারদা গোষ্ঠী কী করে বেআইনি আর্থিক প্রকল্প বছরের পর বছর চালিয়ে গেল, তা নিয়ে তদন্ত করুক সিবিআই৷ সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে কারা জড়িত? কোন নেতা, সাংসদ, মন্ত্রী বা সরকারি আমলা জড়িত, তাও তদন্ত করে দেখা হোক৷ আদালত রিসিভার নিয়োগ করুক৷ তিনিই সারদা গোষ্ঠীর যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নিলামের ব্যবস্থা করবেন৷ সেই নিলামের টাকা ফেরত দেওয়া হোক আমানতকারীদের৷
এই আবেদনের প্রেক্ষিতে নিজেদের অবস্থান এবং তদন্তের অগ্রগতি জানিয়ে রাজ্য সরকারকে ২ মে হলফনামা পেশের নির্দেশ দেয় আদালত৷ মহাকরণ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার হলফনামা পেশ করেন স্বরাষ্ট্র দফতরের যুগ্ম সচিব চন্দনচয়ণ গুহ৷ হলফনামায় সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করেছে রাজ্য সরকার৷ তাদের বক্তব্য, সারদাকাণ্ডে ইতিমধ্যেই দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ মূল অভিযুক্ত সুদীপ্ত সেনকে কাশ্মীর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ তাঁকে জেরা করা হচ্ছে৷ শুধু তাই নয়, সুদীপ্ত ছাড়াও, সংস্থার আরও ৩ উচ্চপদস্থ আধিকারিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ ইতিমধ্যেই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শ্যামল সেনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছে রাজ্য সরকার৷ রাজ্য পুলিশ প্রধানের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে বিশেষ তদন্তকারী দল বা এসআইটি৷ শুধু তাই নয়, এধরনের লগ্নি সংস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে তত্পরতার সঙ্গে বিধানসভায় বিলও পাস করিয়েছে রাজ্য সরকার৷
মহাকরণ সূত্রে খবর, রাজ্য সরকারের তরফে আরও বলা হয়েছে, সারদাকাণ্ডের তদন্ত এখন দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে৷ ফলে এখনই সিবিআই তদন্তের প্রয়োজন নেই৷ শুধু তাই নয়, রাজ্য পুলিশের নেতৃত্বে যে তদন্ত চলছে, তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলারও কোনও অবকাশ নেই৷
সব মিলিয়ে রাজ্য সরকারের অনীহা এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার আজকের বক্তব্য সারদাকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবির ইস্যুতে নতুন মাত্রা যোগ করতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে৷
চিটফান্ড কাণ্ডে কোনঠাসা তৃণমূল কংগ্রেস। পরিস্থিতি সামাল দিতে আজ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠকে বসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে সারা ভারত তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির বৈঠকে জন প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হবেন তৃণমূল নেত্রী।
বৈঠকে থাকবেন দলের ব্লক সভাপতিরাও। চিটফান্ড কাণ্ডে যেভাবে নিচুতলার কর্মীদের নাম জড়াচ্ছে তাতে অস্বস্তি বাড়ছে দলে। সেকারণে আজকের বৈঠক রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
শাসক তৃণমূল সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী যখন আত্মরক্ষায় মরিয়া,অন্যদিকে চিটফান্ড কেলেন্কারির পাশাপাশি ছাত্রনেতা সুদীপ্থর মৃত্যু নিয়েও আন্দোলনে নামছে বামপন্থীরা। কি করবেন মমতা?
পুলিসি হেফাজতে ছাত্রনেতা সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যুর বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবিতে আজ দেশজুড়ে আন্দোলনে নামছে এসএফআই। একই দাবি তে রাজ্যে গণসাক্ষর সংগ্রহ অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যেই ছেলের মৃত্যুর সিবিআই তদন্তের দাবি করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন সুদীপ্তর বাবা প্রণব গুপ্ত। আজ থেকে ঠিক এক মাস আগে এসএফআইয়ের আইন অমান্য কর্মসূচিতে যোগ দান করতে দিয়েছিল ছাত্রনেতা সুদীপ্ত গুপ্ত। পরে পুলিসি হেফাজতে তাঁর মৃত্যু হয়। সুদীপ্ত বাড়ি গড়িয়া সি ফাইভ বাসস্ট্যান্ডের কাছে কথায়-কবিতায়-গানে সুদীপ্ত স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে এসএফআইয়ের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি।
গোপন নথির খোঁজে দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে মিডল্যান্ড পার্কে সারদার মূল অফিসে তল্লাসি চালাল পুলিস। সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত তল্লাসি চালিয়ে পুলিস প্রচুর রবার স্ট্যাম্প ও ফাইল বাজেয়াপ্ত করে। সারদার আয়- ব্যয় সংক্রান্ত বেশকিছু নথিপত্র উদ্ধার করেন গোয়েন্দারা। আয়কর সংক্রান্ত কিছু নথিও মেলে। বিষ্ণুপুর ও জাগুলিয়ায় সংস্থার সম্পত্তি সংক্রান্ত বেশ কিছু নথি উদ্ধার হয়।
বেশ কয়েকটি কম্পিউটরের হার্ডডিস্ক ও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আজ মনোজ নাগেলকেও দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সারদার মোট ৭৮ টি শাখার আমানতের বিষয়টি দেখতেন মনোজ নাগেল। আসানসোল, দুর্গাপুর শাখা প্রতি মাসে বারো কোটি টাকার ব্যবসা করত।
যা ছিল বাকি শাখাগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ। কীভাবে তা সম্ভব হত তা নিয়ে মনোজ নাগেলকে জেরা করেন গোয়েন্দারা।
হাত জোড় করে বিশ্বাস রাখার অনুরোধ... মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন চমকে দিলেন। বোঝালেন সারদা কাণ্ড তাঁকে কতটা অস্বস্তিতে রেখেছে। মুখ্যমন্ত্রীকে হাত জোড় করতে দেখে অস্বস্তিতে পড়লেন দলের নেতারাই।
প্রকাশ্য সভায় দাঁড়িয়ে কেন এভাবে হাতজোড় করতে হল মুখ্যমন্ত্রীকে? সারদা কাণ্ডে একের পর এক নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের একাধিক সাংসদ, নেতা, মন্ত্রীর। দলের ভাবমুর্তি ফেরাতেই তাই এপথে হাঁটতে হল মুখ্যমন্ত্রীকে?
মুখ্যমন্ত্রীকে হাতজোড় করে দেখা গেল শ্যামবাজারের জনসভায় এদিনের মঞ্চে। বিতর্কে মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো এবং যুবা কংগ্রেসের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
জনসভায় মঞ্চে বসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর সামনেই মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া মার মৃত্যুর পর থেকে তিনি একা। দলের সাংসদ থেকে ঘরের ভাইপো, মুখ্যমন্ত্রীর সততার ইমেজ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। কী জবাব মুখ্যমন্ত্রীর। মমতা বলেন সেই এক কথা।
আইন আইনের পথে চলবে অথচ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আলাদা করে একটি শব্দও কিন্তু উচ্চারণ করেননি মুখ্যমন্ত্রী। তোপ দেগেছেন বামেদের বিরুদ্ধেও। শ্যামবাজারের জনসভায় এসে বেশ কিছুক্ষণ একেবারে একা বসেছিলেন। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে বিশ্বাস অর্জনের আবেদন!
লগ্নি সংস্থা নিয়ে সিপিএমের সমালোচনার জবাবে পাল্টা তোপ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ শ্যামবাজারের সভা থেকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সহ কয়েকজন সিপিএম নেতার সঙ্গে লগ্নি সংস্থার কর্ণধারের ছবি তুলে ধরে জোরালো আক্রমণ করলেন সিপিএমকে৷
একদিকে লগ্নি সংস্থা নিয়ন্ত্রণে বিল পাশ, অন্যদিকে টাকা ফেরতের জন্য ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন-এই দু'ই প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে আমানতকারীদের মন জয়ের চেষ্টার পর এবার বিরোধীদের মোকাবিলায় রাজনৈতিক আক্রমণের পথে নামলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সারদা গোষ্ঠীর নানা অনুষ্ঠানে তৃণমূলের সাংসদ-মন্ত্রীদের একাংশের উপস্থিতির ছবিকে হাতিয়ার করে যখন পূর্ণোদ্যমে ময়দানে সিপিএম, তখন তাদের পথ ধরেই পাল্টা আক্রমণ শানালেন তৃণমূল নেত্রী৷ লগ্নি সংস্থার কর্ণধারের সঙ্গে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সহ একাধিক সিপিএম নেতার ছবি তুলে ধরে বিঁধলেন তাঁদের৷
দিন কয়েক আগেই পানিহাটির সভা থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য দাবি করেছিলেন, তাঁর সময় তিনি লগ্নি সংস্থাদের কাছ ঘেঁষতে দেননি৷এদিন শ্যামবাজারের সভা থেকে পাল্টা কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷মহম্মদ সেলিম, বুদ্ধদেব,ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের সঙ্গে লগ্নিকারী সংস্থার কর্ণধারদের ছবি তুলে তীব্র শ্লেষ ছুঁড়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
লগ্নি কেলেঙ্কারিতে পাল্টা প্রচারে নেমে সিপিএমের দিকে ত্রিমুখী আক্রমণ ছুঁড়ে দেন মমতা৷ তাঁর প্রথম অভিযোগ, 'বাম জমানা ছিল লগ্নি সংস্থার আঁতুড়ঘর৷।'তাঁর দ্বিতীয় অভিযোগ, এধরনের বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থা নিয়ন্ত্রণে 'বামেরা ইচ্ছে করে আইন প্রণয়ন করেনি৷' লগ্নি সংস্থা সংক্রান্ত দুর্নীতির ঘটনায় 'বামেদের দ্বিচারিতা'নিয়েও সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷
লগ্নি সংস্থা কেলেঙ্কারিতে তৃণমূলের সাংসদ-মন্ত্রীদের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলে বিরোধীরা যখন আসরে, তখন এই ইস্যুতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তাদের বিন্দুমাত্র সুযোগ না দিতে, তৃণমূল যে পাল্টা আক্রমণের রাস্তাতেই হাঁঠবে, মমতা তাই স্পষ্ট করে দিলেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36264-2013-05-02-15-42-54
সারদাকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবিকে শ্যামবাজারের সভা থেকে কটাক্ষ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সিবিআই সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক মন্তব্য তুলে খোঁচা দিলেন কংগ্রেসকে৷ আর তৃণমূল নেত্রী যখন এই কথা বলছেন, তখন তাঁরই দলের সাংসদ সোমেন মিত্র সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবিতে সরব হয়েছেন৷
সারদা-কাণ্ড রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় তুলেছে৷ শাসক দলের একাধিক সাংসদ-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সারদা ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে সরব বিরোধীরা৷ ইতিমধ্যেই ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবিতে সরব হয়েছে কংগ্রেস ও সিপিএম৷ এই প্রেক্ষাপটে তৃণমূলের অন্দরেও সারদা-কাণ্ডের তদন্ত ভার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে৷ যাদবপুরের তৃণমূল সাংসদ কবীর সুমনের পর এবার সিবিআই তদন্তের পক্ষে সওয়াল করলেন ডায়মন্ডহারবারের তৃণমূল সাংসদ সোমেন মিত্র৷তিনি বলেছেন, এই কেলেঙ্কারির ঘটনা অন্যান্য রাজ্যেও ঘটেছে। তাই এক্ষেত্রে সিবিআই তদন্ত প্রয়োজন।
যদিও, সিবিআই তদন্তের দাবি প্রসঙ্গে দলের দু'ই সাংসদের সঙ্গে যে তৃণমূল নেত্রী একমত নন, তা বৃহস্পতিবার শ্যামবাজারের সভা থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে৷ কংগ্রেসের সিবিআই তদন্তের দাবিকে কটাক্ষ করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে হাতিয়ার করেছেন তিনি৷
সারদা কাণ্ডে শাসক দলের একাংশের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় নিরপেক্ষতার স্বার্থে সিবিআই তদন্তের দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে৷ কিন্তু, সারদাকাণ্ডে সিবিআইয়ের নিরপেক্ষতা নিয়ে যে আগামী দিনে তৃণমূল প্রশ্ন তুলতে পারে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা থেকে তারই ইঙ্গিত মিলেছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের৷
বিজেন্দ্র সিংহ ও আশাবুল হোসেন, এবিপি আনন্দ
সারদাকাণ্ডে ঘরে-বাইরে ক্রমে সিবিআই তদন্তের দাবি জোরালো হলেও, হাইকোর্টে সিবিআই তদন্তের বিরোধিতাই করল রাজ্য সরকার৷ সারদাকাণ্ডে সিবিআই তদন্ত দাবি করে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন আইনজীবী বাসবী রায়চৌধুরী৷
আবেদনকারীর তরফে তাঁর আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় আদালতে দাবি করেন, সারদা গোষ্ঠী কী করে বেআইনি আর্থিক প্রকল্প বছরের পর বছর চালিয়ে গেল, তা নিয়ে তদন্ত করুক সিবিআই৷ সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে কারা জড়িত? কোন নেতা, সাংসদ, মন্ত্রী বা সরকারি আমলা জড়িত, তাও তদন্ত করে দেখা হোক৷ আদালত রিসিভার নিয়োগ করুক৷ তিনিই সারদা গোষ্ঠীর যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নিলামের ব্যবস্থা করবেন৷ সেই নিলামের টাকা ফেরত দেওয়া হোক আমানতকারীদের৷
এই আবেদনের প্রেক্ষিতে নিজেদের অবস্থান এবং তদন্তের অগ্রগতি জানিয়ে রাজ্য সরকারকে ২ মে হলফনামা পেশের নির্দেশ দেয় আদালত৷ মহাকরণ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার হলফনামা পেশ করেন স্বরাষ্ট্র দফতরের যুগ্ম সচিব চন্দনচয়ণ গুহ৷ হলফনামায় সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করেছে রাজ্য সরকার৷ তাদের যুক্তি, প্রথমত, সারদাকাণ্ডে ইতিমধ্যেই দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ মূল অভিযুক্ত সুদীপ্ত সেনকে কাশ্মীর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ তাঁকে জেরা করা হচ্ছে৷ শুধু তাই নয়, সুদীপ্ত ছাড়াও, সংস্থার আরও ৩ উচ্চপদস্থ আধিকারিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷
দ্বিতীয়ত, ইতিমধ্যেই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শ্যামল সেনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছে রাজ্য সরকার৷
তৃতীয়ত, রাজ্য পুলিশ প্রধানের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে বিশেষ তদন্তকারী দল বা এসআইটি৷
শুধু তাই নয়, এধরনের লগ্নি সংস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে, তত্পরতার সঙ্গে বিধানসভায় বিলও পাস করিয়েছে রাজ্য সরকার৷
মহাকরণ সূত্রে খবর, রাজ্য সরকারের তরফে আরও বলা হয়েছে, সারদাকাণ্ডের তদন্ত এখন দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে৷ ফলে, এখনই সিবিআই তদন্তের প্রয়োজন নেই৷ শুধু তাই নয়, রাজ্য পুলিশের নেতৃত্বে যে তদন্ত চলছে, তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলারও কোনও অবকাশ নেই৷
এদিকে, সম্প্রতি কয়লার ব্লক বণ্টন মামলায় সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এই মামলার আবেদনে রদবদল করেন আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায়৷ বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে অতিরিক্ত হলফনামা দিয়ে তিনি দাবি করেন, আদালতের নজরদারিতে সিবিআই তদন্ত হোক৷ এমনকী, সেবি এবং কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকের অধীনস্থ বিশেষ টাস্ক ফোর্স-সহ যে সব সংস্থা তদন্ত করছে, তারাও রিপোর্ট জমা দিক কলকাতা হাইকোর্টে৷ শুক্রবার মামলার পরবর্তী শুনানি৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36265-2013-05-02-16-24-33
সেই তালিকায় নবতম সংযোজন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। সারদার ব্রান্ড অ্যাম্বাসাডর ছিলেন তিনি। সবমিলিয়ে সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রবল চাপে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। অস্বস্তি কাটাতে এবার বিরোধাদের পাল্টা আক্রমণের স্ট্রাটেজি নিল তৃণমূল কংগ্রেস। প্রথম টার্গেট প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
সারদা কেলেঙ্কারিতে পুলিসি তদন্ত যত এগোচ্ছে ততই স্পষ্ট হচ্ছে শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে সারদার কর্তাব্যক্তিদের যোগাসাজশের ছবিটা। প্রবল চাপ কাটাতে এবার বিরোধীদের পাল্টা আক্রমণের পথে তৃণমূল কংগ্রেস। প্রথমেই নিশানায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধেদেব ভট্টাচার্য।
সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন গ্রেফতার হওয়ার পরই তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতামন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের বিষয়টি সামনে আসে। সিবিআইকে লেখা সুদীপ্ত সেনের চিঠিতে নাম ছিল দুই তৃণমূল সাংসদের। পরে পুলিসি জেরায় আরও কয়েকজন নেতামন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের বিষয় জানান সারদা কর্তা। পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রের সারদার একাধিক অনুষ্ঠানে হাজির থাকার ফুটেজ হাতে আসে ২৪ ঘণ্টার।
ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থার বাড়বাড়ন্তের জন্য সিপিআইএমকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র। সারদা কেলেঙ্কারিতে ক্রমেই বাড়ছে জনরোষ। লক্ষ লক্ষ প্রতারিত আমনতকারীদের টাকা ফিরিয়ে দিতে পাঁচশো কোটি টাকার তহবিল গড়ার কথা বললেও তার পুরো অর্থের সংস্থান কোথা থেকে তার জবাব নেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।
চিটফান্ড মোকাবিলায় নয়া বিল বিধানসভায় পাশ হলেও, তার সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে সংশয়ে সরকার। সবমিলিয়ে এই মুহূর্তে চরম অস্বস্তিতে রাজ্য। নজর ঘোরাতে এবার তাই বিরোধীদেরই পাল্টা আক্রমণের স্ট্রাটেজি নিয়েছে শাসকদল। এমনই মনে করেছে রাজনৈতিক মহল।
No comments:
Post a Comment