Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Memories of Another day

Memories of Another day
While my Parents Pulin babu and Basanti devi were living

Thursday, June 13, 2013

ফাঁসি চাই, মমতাকে আর্জি অপরাজিতার দুই ভাইয়ের

ফাঁসি চাই, মমতাকে আর্জি অপরাজিতার দুই ভাইয়ের

ফাঁসি চাই, মমতাকে আর্জি অপরাজিতার দুই ভাইয়ের
বারাসত ও কলকাতা: অপরাজিতার কামদুনি গ্রাম রাজনীতি চায়নি৷ চায়নি মহাকরণে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে৷ দাবি ছিল, মুখ্যমন্ত্রীকেই আসতে হবে গ্রামে৷ কিন্ত্ত শাসকদলের চাপে পড়ে তাঁর পরিবার বুধবার শেষ বেলায় মহাকরণে গেল৷ স্বেচ্ছায় নয়৷ তৃণমূল নেতৃত্বের 'অনুনয় বিনয়ে'৷ দিনভর নাটকের শেষে তাঁদের গ্রাম থেকে রীতিমতো হাইজ্যাক করে নিয়ে যাওয়া হয় লালবাড়িতে৷

সেখানে গিয়েও অপরাজিতার দুই ভাই কিন্ত্ত দোষীদের ফাঁসির দাবিই জানিয়েছেন৷ মুখ্যমন্ত্রীকেও তাঁরা মুখের উপরই বলে দিয়েছেন, 'আমরা সরকারের কাছে চাকরি চাই না৷ যারা বোনকে ধর্ষণ করে খুন করেছে, তাদের ফাঁসির ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে৷' দিনের শেষে এক প্রকার চাপের মুখে পড়েই রাজ্যের মুখ্যসচিবকেও তাই সংবাদমাধ্যমকে বলতে হয়েছে, 'রাজ্য সরকার আদালতে দোষীদের মৃত্যুদণ্ড চাইবে৷' অপরাজিতার দুই ভাই এবং জনা পাঁচেক গ্রামবাসীর আসা নিয়ে বিকেল থেকে মহাকরণও ছিল তটস্থ৷ কারণ, দফায় দফায় খবর আসছিল, গ্রাম থেকে বিশাল বাহিনী আসবে মহাকরণে৷

সকাল থেকেই কামদুনির লোকেরা কলকাতায় আসবেন কি না, তা নিয়ে টানাপোড়েন চলছিল৷ কখনও তাঁরা পুলিশ এবং স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের জানান, শ'দুয়েক লোক যাবে৷ কখনও বলা হচ্ছিল, কিছুতেই তাঁরা মহাকরণমুখো হবেন না৷ তবে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তা এবং শাসক দলের নেতারা যে ভাবে অপরাজিতার পরিবারকে বগলদাবা করে মহাকরণে গেলেন তাতে ক্ষুব্ধ কামদুনির মানুষ৷ টানাপোড়েনে দিশাহারা ওই পরিবারও৷

এ-সবের মধ্যেই কামদুনি-কাণ্ড এ দিন নয়া মোড় নিয়েছে৷ ধৃতদের জেরা করে ঘটনার দিন অকুস্থলে এক মহিলার উপস্থিতির কথা জানতে পেরেছে পুলিশ৷ সেই মহিলা অপরাজিতাকে ধর্ষণ করে খুনের সময় ওই কারখানা চত্বরে হাজির ছিল কি না, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে৷ এর পিছনে ওই মহিলার কোনও ভূমিকা রয়েছে কি না, তা-ও পুলিশ তদন্ত করে দেখছে৷

বুধবার সকাল থেকেই কামদুনি ব্যস্ত৷ সকালেই অপরাজিতার মা চন্দনা ঘোষ জানিয়েছিলেন, তিনি গ্রাম ছেড়ে কোথাও যাবেন না৷ যেতে হলে গ্রামের মানুষকে নিয়েই মহাকরণে যাবেন৷ অপরাজিতার দাদা সন্দীপও বলেন, 'আমরা যাব না৷ মুখ্যমন্ত্রীকেই আসতে হবে৷' তিনি পুলিশকেও এ কথা জানিয়ে দেন৷ বেলা ১২ টা নাগাদ আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভাচার্য, বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার-সহ তৃণমূল মহিলা সেলের একটি দল অপরাজিতার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে যান৷ তাঁরা জানান, রাজ্য সরকার পরিবারের পাশে আছে৷ তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই এসেছেন৷ পরিবারের লোকেরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়ে অভাব-অভিযোগ জানাতে পারেন৷ তাঁদের ফিরিয়ে দেয় ঘোষ পরিবার৷ তখন গ্রামের আরও অনেকে ছিলেন ওই বাড়িতে৷

তাঁরা চলে যাওয়ার পরই আসরে নামেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা সোনা ঘোষ এবং তাঁর দলবল৷ তিনি জানান, গ্রামের সবাই মিলে মহাকরণে যাবেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে৷ হাজির হয় বেশ কয়েকটি ম্যাটাডর ভ্যান৷ শ'দুয়েক লোক প্রস্ত্তত হন৷ তখন বাদ সাধে পুলিশ৷ বারাসত থানার আইসি পরেশ রায় জানান, একটি গাড়িতে পরিবারের চার জন এবং গ্রামের চার জনের বেশি যাওয়া যাবে না৷ আন্দোলনকারীদের তরফে অধ্যাপিকা তাপসী চ‌ট্টোপাধায় পুলিশকে বলেন, 'এই গোপন আলোচনায় পরিবারের লোকেরা ঠিকঠাক কথা বলতে পারবেন না৷ তাই তাঁদের সঙ্গে আরও লোক যাওয়া দরকার৷' এ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে পুলিশের কথা কাটাকাটিও হয়৷ তাপসীদেবীর অভিযোগ, পুলিশ তাঁকে জানিয়েছেন, তিনি নাকি গ্রামের শান্তি নষ্ট করছেন৷ এই সময় ময়দানে নামেন তৃণমূলের জেলা পরিষদ প্রার্থী মতিয়ার সাঁপুই এবং আরও কয়েক জন৷ তাঁর অভিযোগ, দিল্লি থেকে আসা ওই 'নকশালপন্থী' মহিলা ধর্ষণ নিয়ে রাজনীতি করছেন৷ পুলিশ অবশ্য তাঁর কথায় গুরুত্ব না-দিয়ে অপরাজিতার বাবা, মা, দুই ভাই, কাকিমা এবং তাপসীদেবীকে মহাকরণে নিয়ে যেতে চায়৷ তাঁদের সঙ্গে সোনাও গাড়িতে ওঠেন৷ গাড়ি রওনা দেয়৷ গ্রামবাসীরা বিষয়টি ভালো ভাবে নেননি৷ তাঁরা অপরাজিতার দুই ভাইকে আপত্তির কথা জানান৷ বিমানবন্দরের কাছাকাছি গিয়ে ঘোষ পরিবার সিদ্ধান্ত বদল করে৷ তাপসীদেবীও মাঝপথে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন৷ গাড়ি ফিরে আসে দোলতলায় পুলিশ লাইনের কাছে৷

সেখানে ফের পুলিশের সঙ্গে পরিবারের কয়েক দফা আলোচনা হয়৷ বিকেল চারটে নাগাদ সন্দীপ জানান, মহাকরণে যাওয়ার ব্যাপারে তাঁরা এখনও নিশ্চিত নন৷ কারণ বিষয়টা এখন আর তাঁদের হাতে নেই৷ তার পর সাড়ে চারটে নাগাদ ফের তাঁদের নিয়ে গাড়ি রওনা দেয় মহাকরণের উদ্দেশে৷ বলা দরকার, এই ধর্ষণ-কাণ্ডে যারা ধরা পড়েছে, তারা এই মতিয়ারের খুবই ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত৷

কামদুনি থেকে লোকজন আসছে জানতে পেরে মহাকরণেও শুরু হয়ে যায় পুলিশি তত্পরতা৷ খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক প্রথম দিন থেকে ঘোষ পরিবারকে মহাকরণে আনার জন্য উদ্যোগী ছিলেন৷ তাঁকে মহাকরণের করিডরে সেল ফোন কানে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়৷ কখনও মন্ত্রীকে ফোনে বলতে শোনা যায়, 'তাড়াতাড়ি আয়৷ দিদি বসে আছেন...৷ কী বললি? দশজন আসছে? এত লোক তুলিস না৷ চার-পাঁচ জনকে নিয়ে আয়৷' ঘন ঘন পুলিশ কর্তারাও ছোটাছুটি করতে থাকেন৷ এক সময় রটে যায়, সত্তর জন আসছে৷ আবার পুলিশ অফিসাররা তত্পর হন৷ পরে বিকেল পাঁচটা পঞ্চাশ নাগাদ সন্দীপদের নিয়ে সোনা ঘোষরা মহাকরণে ঢোকেন৷ কড়া পুলিশি বেষ্টনীতে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে৷ প্রায় এক ঘণ্টা সন্দীপরা ছিলেন তাঁর ঘরে৷ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার আগে এবং পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সন্দীপ বলেন, 'আমরা চাকরি চাই না, কিছু চাই না৷ শুধু ফাঁসি, ফাঁসি, ফাঁসি চাই৷' মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এ নিয়ে মুখ খোলেননি৷ তবে মহাকরণ সূত্রের খবর, অপরাজিতার ভাইয়েরা তাঁর কাছেও অপরাধীদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন৷

এ দিন সল্টলেকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তৃণমূল কর্মী ইউনিয়নের একটি রক্তদান অনুষ্ঠান শেষে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, 'এটি একটি জঘন্য ঘটনা৷ তবে গ্রামে হয়েছে বলেই তেমন কোনও প্রতিবাদ হচ্ছে না৷ বিদ্বজ্জনেদের প্রতিবাদও শহরকেন্দ্রিক৷' এর পাশাপাশি তৃণমূল সাংসদের মন্তব্য, 'একটা ঘটনা ঘটেছে বলেই আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে, তা নয়৷' এ দিনও বারাসত শহরে এবং কামদুনি গ্রামে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে, হয় মোমবাতি নিয়েও মিছিল৷

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...