আসছে সুপার সাইক্লোন, সুন্দরবন
জিন্দাবাদ
'Phailin' intensifies into severe cyclonic storm, to hit Odisha and Andhra on Saturday
মা কালীর কাছে নালিশ ছাড়া সমুদ্রতীরে সাইক্লোন বিপর্যয় মোকাবিলার কি কি বন্দোবস্ত হল,উত্সব কল্লোলিত বাংলায় জানার উপায় নেই
উড়ীস্যায় কেন্দ্রাপাড়া ও সমুদ্রতীরে পুনর্বাসিত বাঙালি উদ্বাস্তুদের বড়ই বিপদ
পলাশ বিশ্বাস
মা কালীর কাছে নালিশ ছাড়া সমুদ্রতীরে সাইক্লোন বিপর্যয় মোকাবিলার কি কি বন্দোবস্ত হল,উত্সব কল্লোলিত বাংলায় জানার উপায় নেই
উড়ীস্যায় কেন্দ্রাপাড়া ও সমুদ্রতীরে পুনর্বাসিত বাঙালি উদ্বাস্তুদের বড়ই বিপদ
হরেক বার যেমন হয়,সুন্দরবনে ধাক্কা খেয়ে বিপর্যয় কলকাতা স্পর্শ করতে পারে না
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, আন্দামান সাগরের অতি গভীর নিম্নচাপ বুধবারই ঘূর্ণিঝড় 'পিলিন'-এর চেহারা নিয়ে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে চলে এসেছে৷ বুধবার সন্ধেয় তার অবস্থান পারাদ্বীপের ৯৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে, ভাইজাগের ১১০০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণপূর্বে৷ শনিবার, অষ্টমীর রাতে প্রবল শক্তি নিয়ে ওডিশার পারাদ্বীপ ও অন্ধ্রপ্রদেশের কলিঙ্গপত্তনমের মধ্যে দিয়ে উপকূলে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা৷ 'ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনের' প্রভাবে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটারে পৌঁছতে পারে বলে সতর্ক করেছে নয়াদিল্লির মৌসম ভবন৷ ১৯৯৯ সালে 'সুপার সাইক্লোনের' মুখে পড়েছিল পারাদ্বীপ৷ সে অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে বুধবারই রাজ্যের ১৪টি জেলার সরকারি আধিকারিকদের পুজোর ছুটি বাতিল করেছে ওডিশা প্রশাসন৷ বৈঠক ডেকে জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করেছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কিরণকুমার রেড্ডি৷ পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশা, অন্ধ্রপ্রদেশ-- তিন রাজ্যের মত্স্যজীবীদের সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করেছে মৌসম ভবন৷
প্রাকৃতিক এই রক্ষা কবচের দৌলতেই কিন্তু শারদ উত্সব সম্ভব হচ্ছে
প্রতিবারই সাইক্লোন গিয়ে আছড়ে পড়ে বাংলাদেশে অথবা উড়ীষ্যা উপকুলে
খন্ডিত বাংলায় বাংলাদেশে ধ্বংসের কোনো ছবি পশ্চিমবঙ্গীয় বাঙ্গালিদের বিহ্বল করে না আর
কিন্তু ঘটনা হল সাইক্লোন কখনো কখনো বাংলার উপকুলেও বিপর্যয়ের কারণ হয়ে যায়
যেমনটি হয়ছিল আয়লায়
আয়লা যেদিন হইলো তার দুইদিন আগে থেকে সারা বাংলাদেশের মানুষ জাইন্না গেলো ঝড়ের নাম -আয়লা; আবহাওয়া দপ্তর থেকে ফোরকাস্টিং হইলো - কিন্তু মিডিয়ার কোন খবর নাই। ইভেন যখনআয়লা দক্ষিণাঞ্চল ভাসায় নিয়া যাইতেছিল সেই সময়ে সব চ্যানেলগুলা তাদের নিয়মিত অনুষ্ঠান প্রচারে মত্ত ছিলো। ব্রেকিং ভিডিও নিউজ তো দূরের কথা,...
পশ্চিম বাংলাতেও বিপর্যয় মোকাবিলার বাস্তবিক অর্থে কোনো প্রস্তুতি ছিল না
যেমনটি এবারও হচ্ছে
১০ আগস্ট, ২০১১ - আয়লা দুর্গতদের পাশে দাঁড়াল রাজ্য সরকার. আয়লা বিপর্যয়ের সময় যাঁদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তাঁদের গৃহ পুর্ননির্মাণের জন্য অষ্টআশি কোটি টাকা অনুদান বরাদ্দ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়. বুধবার মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী জানান, আয়লার সময় দুলক্ষ ষাট হাজার আটশো উনিশটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল.
আয়লায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত ভুরিভোজ সহকারে তাঁদের ক্ষতিপূরণের কোনো বিবরণ প্রকাশিত বা প্রসারিত হয়নি এখনো
কিন্তু ব- দ্বীপ অন্চলে আয়লায় ক্ষতিগ্রস্ত নদী বাঁধের মেরামতের কাজ জমি অধিগ্রহণ বিতর্কে আজও আটকে আছে
বৃষ্টিতে উত্সব বিঘ্নিত হওয়ার দায়ে মা কালির দরবারে মা দুর্গার নালিশ ত হল, মা কালী কে সাইক্লোন আটকাতে আর্জি যদি না দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে সুন্দরবন যদি দৈবাত সাইক্লোন ক্যাছ ফসকে ফেলে, তাহলে বাকী বঙ্গে হয়ত উত্সব চলবে সমান তালে, যেমনটি প্রতি বত্সর জলমগ্ন বাংলায় হয়ে থাকে
মুশ্কিল হল সাগরদ্বীপ, নামখানা, বকখালি, গোসাবা,ঝড়খালি, সন্দেশখালি,হিঙ্গলগন্জ ইত্যাদি অন্চলের মানুষের বড় বিপদ হবে
সাইক্লোনে প্রাণ বাঁচলেও জমিতে বালি ঢুকে পড়লে চাষিদের সমুহ সর্বনাশ
মা মাটি মানুষের সরকার উত্সবে যথারীতি ব্যস্ত
মন্ত্রী আমলারা পুজা আয়োজনে
মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপাল মাথার ঘাম পায়ে ফেলে প্রতি নিয়ত পুজা উদ্ঘাটন করে চলেছেন
খবরের কাগজ,ব্যান্ক সর্বত্র ছুটি
ছুটি মহাকরণে
রাজকাজ বলতে টন্ডীপাঠ অখন্ড
আমরা এখনো পুজা কভারেজে ব্যস্ত মীডিয়ার সৌজন্যে জানতে পারছি না যদি সত্যিই বিপর্যয় আসে, তাহলে বিপর্যয় মোকাবিলার কি হল
আজ সকালে ভুবনেশ্বরে এবং সমুদ্র তটবর্তী উঢ়ীষ্যায় খবর নিয়ে জেনেছি, নবীন পটনায়ক সরকার যথাসম্ভব সম্ভাবিত বিপর্যস্ত এলাকা থেকে জণগণকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলেছে
কেন্দ্রাপাড়ায় রামনগর এলাকা ও মহাকালপাড়া পারাদ্বীপ অন্চলের প্রতিটি মানুষকে সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে
আমি ঔ সমস্ত সাইক্লোন সেন্টার ঘুরে দেখে এসেছি বিগত সুপার সাইক্লোনের পর
বাংলায় কোথাও তেমন সাইক্লোন সেন্টার এযাবত তৈরি হয়েছে বলে আমার জানা নেই
আপনাদের জানা থাকলে জানাবেন
কেন্দ্রাপাড়ার ঔ বাঙ্গালিরা কিন্তু নোয়াখালি দাঙ্গার পীড়িতেরা,যারা নোয়াকালিতে দাঙ্গা দেখেছেন, মা ভাইবোনদের হত্যা নিধনযজ্ঞ দেখেছেন আবার গান্ধীকেও দেখেছেন
তাঁরা 1948 পর্যন্ত ভারতে চলে এসেছিলেন এবং বিভিন্ন রিফুউজি ক্যাম্পে অবস্থান সত্বেও ঔ অন্চলে তাঁদের বসবাস 1950 থেকে
ঘটনা হল নাগরিকত্বের নূতন আইনে ঔ কেন্দ্রাপাড়ায় পুনর্বাসিত নোয়াখালির ভারত ভাগ দুর্বাগ্যের শিকার উদ্বাস্তুদের সরকারি পুলর্বাসন সত্বেও সবার আগে ডিপোর্ট করা শুরু হয় বিদেশি নাগরিক আখ্যা দিয়ে
তখন বাংলা তাঁদের পাশে দাঁড়ায়নি
যেমন মরিচঝাঁপির উদ্বাস্তুদের পাশেও দাঁড়াইনি বাংলা
বাঘের খাদ্য যাদের করা হল তাঁদের জন্য বাংলার প্রাণ এ যাবত কাঁদেনি
আজও মরিচঝাঁপি গণহত্যার তদন্তের আদেশ হয় নি
তদন্তের দাবি ওঠে নি
ঘটনা হল, উড়ীষ্যার সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক দল ও মীডিয়া এই উদ্বাস্তুদের দেশ নিকালার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল
শেষ পর্যন্ত উড়ীষ্যার প্রতিবাদেই আজও উদ্বাস্তুরা ওখানে ভারতীয় নাগরিকত্বের অধিকারে বেঁচে বর্তে আছেন
ঘটনা হল, উড়ীষ্যায় মলকানগিরি ও নবরংপুর জেলার বিশাল উদ্বাস্তু উপনিবেশ ছাড়াও উড়ীষ্যার প্রতিটি জেলায় উদ্বাস্তুদের বসবাস
আজ তাঁদের বড়ই বিপদ
যেমন বাংলার বিপদে আপদে আমাদের কিছু আসে যায় না ঠিক তেমনই ভারত ভাগের ফলে সারা ভারতে বাংলার ইতিহাস ভূগোল থেকে বহিস্কৃত যে বাঙ্গালি উদ্বাস্তু সামাজ,তাঁদের বিপদে আপদে বাংলার কিছু যায় আসে না
সে যা হোক
বাংলার জনপদে মানুষের, সর্বার্থে পশ্টিম বঙ্গীয় মানুষের বিপদে আপদে তাঁদের জলমগ্ন জীবন যাপনেও কি মহানগরীয় উত্সব কল্লোলিত রাজধানীর মানুষের কিছু আসে যায় কি
সুন্দরবন নিয়েস, বাদা অন্চলের ব্রাত্য মানুষের ভালো মন্দ নিয়ে না ভাবুন, তাঁরা সভ্যতার আলোর বাইরে, তাঁদের মরণ বাঁচনে আমাদের কিছু যায় আসে না
কিন্তু খোদ কলকাতার স্বার্থে, নিজেদের সমূহ বিপদ থেকে বাঁচার স্বার্থে কি আমরা কখনো সুন্দরবনের স্বাস্থ নিয়ে ভাবব?
পুজোর দ্বিতীয়া-তৃতীয়ার মেঘলা আকাশই হোক বা হাওয়া অফিসের পূর্বাভাসমতো 'পিলিন'-এর আতঙ্ক, ষষ্ঠীর সকাল থেকেই কিন্ত্ত মণ্ডপে মণ্ডপে লম্বা লাইন৷ যত বেলা গড়িয়েছে, ততই পায়ের জঙ্গলে হারিয়েছে পথ৷ আর গতি হারিয়েছে যানবাহন৷ সে উত্তরে বিধান সরণিই হোক বা দক্ষিণে রাসবিহারী-গড়িয়াহাট সর্বত্রই যানজট--সেই সকাল থেকেই৷ সেই অর্থে চারদিনের পুজোর ছুটির আগে এটাই শেষ কর্মব্যস্ত দিন৷ আবার বৃষ্টির চোখরাঙানিতে যাঁরা শেষ মুহূর্তে কেনাকাটা সারতে পারেননি, তাঁরাও ভিড় জমিয়েছেন ফুটপাতের পসরা থেকে নামীদামি শপিং মলে৷ আবার রাতের ভিড় সামাল দিতে শহরের মধ্যে লরি চলাচলও করেছে সকালেই৷ অবশ্য দিনের বেলা পুজোর চারদিন রাস্তায় ট্র্যাফিক পুলিশও থাকে কম৷ কারণ, মানুষের ঢল সামাল দেওয়ার চ্যালেঞ্জটা তো বিকেলের পর থেকে৷ ফলে ষষ্ঠীর সকালের শহর কার্যত যানজটে হাঁসফাঁস৷
দক্ষিণ ফেলে ইএম বাইপাস ধরে উল্টোডাঙা আসতে তখন সন্ধ্যা নেমেছে৷ সল্টলেক এক নম্বর গেট থেকে উল্টোডাঙার হাডকো মোড় আসতে পাক্কা আধ ঘণ্টা৷ কারণ, উল্টোডাঙার করবাগান-তেলেঙ্গাবাগানে তখন গুটিগুটি পায়ে জনতা মণ্ডপমুখী৷ আলোর জোয়ারে ঝলমলে রাস্তায় তখন শুধু কালো মাথার ভিড়৷ আরও একটু এগিয়ে উত্তরে শিবদাস বাগান, নলিন সরকার স্ট্রিট সর্বজনীনের সামনে জনজোয়ার৷ রাস্তায় নেমে আসা ভিড় সামলাতে সামলাতে তখন মেজাজ গরম ট্র্যাফিক সার্জেন্টের, 'কী করি বলুন তো? এখনই এই অবস্থা বুঝতে পারছেন বাকি রাতটা কী হবে!'
আবহবিদরা জানিয়েছেন, যেহেতু ওডিশা উপকূলে সরাসরি আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড়, সেহেতু সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে পড়শি রাজ্যই৷ পুরী, গোপালপুর, চাঁদিপুর উপকূলীয় অঞ্চল হওয়ায় স্থলভাগের তুলনায় এখানেই ঘূর্ণিঝড় বেশি দাপট দেখাবে৷ প্রবল বৃষ্টি তো হবেই৷ বইবে ঝোড়ো হাওয়া৷ ভাঙতে পারে দরমার ঘর৷ উপড়ে যেতে পারে গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি৷ বিশেষ করে শনি ও রবিবার৷ পুজোর হিসেবে ধরলে অষ্টমী ও নবমী৷ যেহেতু ঘূর্ণিঝড় অন্ধ্র লাগোয়া ওডিশার দিকে ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ, সেহেতু নিস্তার পাবে না ভাইজাগের মতো সমুদ্রতটও৷ সেখানেও ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে মৌসম ভবন৷ কলকাতা আঞ্চলিক মৌসম কেন্দ্রের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল দেবেন্দ্র প্রধান বলেন, 'ঘূর্ণিঝড়টি প্রবল শক্তিশালী হলে তার সর্বাধিক প্রভাব নির্দিষ্ট কিছু এলাকার উপরে হবে৷ সেক্ষেত্রে, কলকাতা বিপর্যয়ের হাত থেকে বেঁচে যাবে, কিন্ত্ত ওডিশায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে৷ ফলে শনি ও রবিবার ওডিশা, অন্ধ্র, এমনকী পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকাগুলিও এড়িয়ে চলা ভালো৷' তবে দেবেন্দ্রবাবু এ দিনও স্পষ্ট করেছেন, পুজোর কলকাতা রেহাই পাবে না৷ ভারী বর্ষণ না-হলেও, পুজোর প্রত্যেক দিন হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবেই৷ ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে ঢোকার পর দ্রুত দুর্বল হয়ে গেলে বড়জোর দশমীর দিন আবহাওয়া তুলনায় ভালো থাকতে পারে৷
তবে ঘূর্ণিঝড় সরাসরি আঘাত হানার সম্ভাবনা না-থাকলেও, রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে৷ বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের মন্ত্রী জাভেদ খান জানিয়েছেন, সমস্ত জেলাকে সতর্ক করা হয়েছে৷ ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে৷ ব্যবস্থা করা হয়েছে ত্রিপলেরও৷ পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্য জানিয়েছেন, প্রতি মুহূর্তে পরিস্থিতি নজরে রাখছে জেলা প্রশাসন৷ দক্ষিণ ২৪ পরগনায় কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক অমিতকুমার নাথ বলেন, 'যে সমস্ত মত্স্যজীবীরা সমুদ্রে গিয়েছেন, তাঁদের ফিরে আসার জন্য বার্তা পাঠানো হয়েছে৷ উপকূলবর্তী গ্রামের মানুষকে সতর্ক করার কাজ চলছে৷ উপকূলে যেতে নিষেধ করা হয়েছে পর্যটকদের৷' উপকূল সংলগ্ন গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির দপ্তরে আলাদা অফিস খোলা হচ্ছে৷
ঘটনা হল, সেই মহালয়ার আগে থেকে টানা বৃষ্টি চলছে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়৷ নিম্নচাপ অক্ষরেখার প্রভাবে সক্রিয় মৌসুমি বায়ু৷ যার ফলে নির্ধারিত সময় হয়ে গেলেও বিদায় নেয়নি বর্ষা৷ বহু এলাকা দীর্ঘ দিন ধরে জলমগ্ন৷ পুজোর মুখে এমন ঘটনায় বিপাকে পড়েছেন বাসিন্দারা৷ পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরে ঘাটালের বিস্তীর্ণ অংশও জলের তলায়৷ এর উপর নতুন করে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি খারাপের দিকেই গড়াবে৷
তবে এর মধ্যে চরম বৈপরীত্য উত্তরবঙ্গে৷ বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় হাজির হওয়ায় যাবতীয় মেঘ নেমে এসেছে উপকূলীয় অংশে৷ ফলে, পুজোর কয়েকদিন পাহাড়, তরাই, ডুয়ার্সে আকাশ ঝকঝকে থাকবে বলেই জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর৷ পাহাড় হাসবে, তাই ভ্রমণে বাধা নেই৷
বাংলায় পরিবেশ সচেতনতার অভাবে কালবৈশাখী আয়লা হয়ে আছড়ে পড়ল।করপেরোট বিল্ডার মাফিয়া রাজত্বে প্রকৃতি ও প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত মুলনিবাসী বহুসংখ্য মানুষ, মুলতঃ কৃষিজীবী গ্রাণীণ ভারতের সর্বনাশ কল্পে চলছে মনুস্মৃতি জায়নবাদী একচেডিয়া আগ্রাসন, অশ্বমেধ অভিযান।পরিবশ আইন ও ভারতীয় সংবিধান করপোরেট স্বার্থের পরিপন্থী ।সংবিধানের মৌলিক অধিকার, পন্চম ও ষষ্ট শিডউল, ধারা 39 বি ও ধারা 39 সি অনুযায়ী প্রাকৃতিক সম্পদ ও উত্পাদন প্রণালী জনগণের সম্পদ।অনুসুচিত এলাকায় জমি অধিগ্রহণ নিষিদ্ধ।সংবিধানের ফ্রেম উল্লংধন করে সংস্কারের নামে একের পর এক জনসংহার আইন প্রণয়ণে, রাষ্ট্রে মিলিটারিকরণ, সশস্ত্র সৈন্য বিশেষাধিকার আইন , বায়োমেট্রিক নাগরিকত্ব ও বেআইনি করপোরেট আধার যোজনা মার্ফত প্রকৃতি থেকে, জীবন , জীবিকা, জল, জঙ্গল জমি, নাগরিক ও মানবাধিকার উচ্ছেদ অভিযান চলছে।রেসিয়াল ডিসক্রিমিনেশন আধারিত জাতি ব্যবস্থা ও হিমালয়, মধ্য ভারত ও পূর্বোত্থর ভারত, সমস্ত আদিবাসী অন্চলের সঙ্গে দমনাত্মক বহিস্কারের নীতি অবলম্বন করেছে ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক কর্তৃত্ব।সেই জন্যই অন্ধ উন্নয়ণ, জবরদখল, সলোয়া জুড়ুম, সেজ আইন, ফরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র, বড় বড় বাঁধ ও শিল্পায়ণ পর্যটনের নামে বেপরোয়া ভাবে পরিবেশ ধ্বংস চলছে. যার পরিণাম এই বিপর্যয়।সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প, সব থেকে তীব্রতম ভূমিকম্পের দেশ জাপান, আমেরিকার সমুদ্রতটবর্তী অন্চলে নিয়মিত ঘুর্ণিঝড়।দুটো দেশই পুঁজিবাদী।দুটো দেশেই করপোরেট রাজত্ব, কিন্তু করপোরেট উন্নয়নেও পরিবেশ সংরক্ষণ সবচেয়ে জরুরী, সেটা তাঁরা জানেন। আমাদের রাষ্ট্রদ্রোহী শাসকশ্রেণী ও ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক কর্তৃত্ব পুঁজি ও করপোরেট সাম্রাজ্যবাদের দালালিতে এ ব্যাকরণ মানেন না। এই অশ্বমেধ যজ্ঞ বন্ধ করতে করপোরেট সাম্রাজ্যবাদ ও তাঁর দোসর হিন্দুসাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ধর্ম নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সংযুক্ত মোর্চা অবশ্যই চাই।ভারতের আদিবাসিরা যে পরিবেশ সংরক্ষণের দাবিতে সোচ্চার, তাঁরা যে সংবিধান বাঁচাো আন্দোলন শুরু করেছে, তার সমর্থন অনিবার্য।সুন্দরবন, বাংলার যাবতীয় জলাধার সবুজ ধ্বংসের যে রাজনীতি, তাঁর কল্যাণে আমরা দ্বিধা বিভক্ত।রাজনৈতিক দালালরা বহুজনসমাজের নেতৃত্বে, তাই বাংলায় বহুজন আন্দোলনও অসম্ভব। তাই ভূমিকম্প ও ঘুর্ণিঝড়, সুনামী নয়, কালবৈশাখির তান্ডবে বাংলা লন্ডভন্ড হতে থাকবে।
হায়দরাবাদ: রাজনৈতিক ঝড়ঝাপ্টা সামলানো গেছিল৷ কিন্তু হার মানতে হল প্রকৃতির কাছে৷ আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অন্ধ্র উপকূলে ঘূর্ণিঝড় পিলিন আছড়ে পড়ার শঙ্কায় ধর্মঘট স্থগিত রাখলেন রাজ্যের বিদ্যুত্ কর্মচারীরা৷ ঝড়ের আতঙ্কের মুখেও তাই সাময়িক স্বস্তি ফিরছে সীমান্ধ্রের ১৩টি জেলার জনজীবনে৷
বৃহস্পতিবার অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কিরণকুমার রেড্ডির সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন কর্মচারী ইউনিয়নের কর্তাব্যক্তিরা৷ এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, ধর্মঘট তুলে নিচ্ছেন কর্মচারীরা৷ তবে অন্ধ্র অখণ্ড রাখার দাবি থেকে সরছেন না তাঁরা৷ আন্দোলনের পথও ছাড়ছেন না৷ ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, রাজ্যবাসীর যে অসুবিধা হচ্ছে তার জন্য তাঁরা দুঃখিত৷ এখন ঘূর্ণিঝড় এলে সেই দুর্দশা বহুগুণ বেড়ে যাবে বলেই তাঁরা আপাতত ঘর্মঘট স্থগিত রাখছেন৷ কিন্ত্ত বিপর্যয়ের আশঙ্কা পেরিয়ে গেলেই ফের শুরু হবে লাগাতার আন্দোলন৷
এর মধ্যেই অবশ্য কেন্দ্রে উপর চাপ বাড়িয়ে যাওয়ার কাজটা করে যাচ্ছেন সীমান্ধ্র অঞ্চলের মন্ত্রীরা৷ তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হোক এই দাবিতে এ দিনও কোনওরকম সরকারি বৈঠক বা কাজকর্মে অংশগ্রহণ করেননি মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী এম এম পাল্লাম রাজু৷ তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি আবার এর মধ্যে দাবি তুলেছে, অন্ধ্রপ্রদেশের সরকার ভেঙে দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হোক৷ এরই মধ্যে আজ বৈঠকে বসবে তেলেঙ্গানা গঠনের জন্য নির্ধারিত মন্ত্রীগোষ্ঠী৷ সূত্রে খবর, যত চাপই আসুক, তেলেঙ্গানা সিদ্ধান্ত নিয়ে পিছু হটা হবে না কোনওমতেই৷ বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনাও হবে না৷ তবে রাজ্য গঠনের প্রক্রিয়া হয়তো কিছুটা পিছোতে পারে৷ - সংবাদংস্থা
স্টার আনন্দের খবর
আজ মহাষষ্ঠী। বাপের বাড়িতে উমার প্রথম পা আজ ৷ বছরকার দিন৷ বোধনের পর অধিবাস৷ আগমনীর সুরে উত্সবের আনন্দ৷সেই আনন্দে উদ্বেল আপামর বাঙালি৷
মহাষষ্ঠী মানে সপরিবারে উমার পিতৃগৃহে আগমনের দিন৷ বোধনের পর অধিবাস৷ বিল্ববৃক্ষের তলায় দেবীর আরাধনা৷ গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতী৷ সপরিবারে একরাত সেখানেই থাকবেন মা দুর্গা৷ সপ্তমীর সকালে পা দেবেন বাপের বাড়িতে৷ রীতিমত শুচিশুদ্ধ হয়ে৷
আর এমন দিনে অবশেষে দেবী দুর্গার কাছে হার মানলেন বরুণ দেব৷ আশঙ্কার মেঘ কাটিয়ে সকাল থেকে শহরের আকাশে উঁকিঝুকি সূর্যি দেবের৷ আর দুর্যোগ কাটতেই পুরোদমে শারদোত্সবের আনন্দে মেতে উঠল আনন্দনগরী৷ দেবীর বোধনের সঙ্গে সঙ্গেই শারদোত্সবের আনন্দে মেতে উঠল গোটা শহর৷ আট থেকে আশি, কে নেই এই সামিলে৷ মণ্ডপে মণ্ডপে উপচে পড়ল দর্শনার্থীদের ভিড়৷ ষষ্ঠীতেই ভিড়ের দাপট দেখে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ৷
উত্তর বা দক্ষিণ, সব জায়গাতেই এক ছবি৷ সন্ধে হতেই কাতারে কাতারে মানুষ নামলেন রাজপথে৷ ঠাকুর দেখার মাঝেই কেউ বা সেরে নিলেন পেটপুজো৷ ফুচাকা, ভেলপুরী, বাদামভাজা, এগরোল, চাউমিন আরও কত কী৷
মাত্র তো কটা দিনের পুজো৷ কিন্তু তারপর? তারপর তো প্রতিবেশীদের সঙ্গে কমপিটিশন৷ তুই কটা ঠাকুর দেখেছিস রে? তাই সবকিছুর প্রমাণ রাখতে ঠাকুর দেখার সঙ্গে সঙ্গেই চলল ফ্ল্যাসবাল্বের ঝলকানি৷
ভিড় তাতে কি? নতুন জামা-জুতো পরে বাবা-মায়ের হাত ধরে বড়দের সঙ্গে পাল্লা দিল কচিকাঁচারাও৷ পুজোর চারদিন শুধুই আনন্দ৷ শারদ আনন্দ৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/kolkata/59-more/42270-2013-10-10-16-32-09
The Odisha govt cancelled Dusshera holidays of employees in 14 districts with CM Naveen Patnaik asking collectors to ensure the safety of the people. (PTI)
Cyclone 'Phailin' which was to make landfall two days from now, possibly near Gopalpur in Odisha and in north Andhra Pradesh, on Thursday intensified into a severe cyclonic storm travelling slightly northwest and lying about 800 km from Paradip in Odisha.
The storm, 870 km from Kalingapatnam and 900 km from Visakhapatnam, would intensify into a very severe cyclonic storm in the next 24 hours, the latest IMD bulletin said.
It would continue to move northwestwards and make landfall by the evening of October 12 with a wind speed of 175-185 kmph close to Gopalpur in Odisha and between Kalingapatnam and Paradip, Director of IMD, Bhubaneswar, Sarat Sahu said.
Squally winds speed reaching 45-55 kmph to 65 kmph would hit Odisha and north Andhra Pradesh on Friday morning, he said.
It would increase in intensity with wind speeds of a gale reaching 175-185 kmph along and off coastal districts of south Odisha and north Andhra Pradesh at the time of landfall, Sahu said.
The sea along and off Odisha and north Andhra Pradesh coast would be rough to very rough from Friday and would become 'phenomenal' on October 12, he said.
"Storm surge with height of around 1.5 to 2.0 meter above astronomical tide would inundate low lying areas of Ganjam, Khurda, Puri and Jagatsinghpur districts of Odisha and Srikakulam district of Andhra Pradesh during landfall," Sahu said.
Asked whether there was possibility of the system turning into a super cyclone, which had struck 14 coastal districts of Odisha in October 1999 taking several lives, Sahu said, "As of now the latest satellite data says that the system will take the form of a very severe cyclonic storm and make land fall on October 12."
-
Phailin intensifies into severe cyclonic storm - The Hindu
www.thehindu.com › News › National
৪ ঘন্টা আগে - Cyclone Phailin which was to make landfall two days from now, possibly near Gopalpur in Odisha and in north Andhra Pradesh, on Thursday ...
Odisha raises warning level, Cyclone Phailin intensifies - The Hindu
www.thehindu.com › News › National
১৪ ঘন্টা আগে - The cyclonic storm, Phailin, over east central Bay of Bengal has intensified further into a cylconic storm and lay centred 850 km southeast of ...
Odisha raises warning level as 'Cyclone Phailin' intensifies - The ...
timesofindia.indiatimes.com/india/Odisha...as...Phailin.../23875665.cms
১৩ ঘন্টা আগে - Odisha Thursday raised its warning level as cyclonic storm "Phailin" over east central Bay of Bengal was gaining strength and moving slowly ...
Cyclone Phailin: Heavy rains lash Andhra; Odisha seeks Army's help
timesofindia.indiatimes.com/india/Cyclone-Phailin.../23921330.cms
৩৩ মিনিট আগে - Odisha today urged the Centre to issue standing instructions to the defence forces to extend help as cyclone "Phailin" may hit the state on ...
Cyclone Phailin intensifies as it approaches India | Reuters
in.reuters.com/.../india-cyclone-phailin-odisha-andhra-idINDEE9990532...
৩ ঘন্টা আগে - BHUBANESWAR/NEW DELHI (Thomson Reuters Foundation) - A cyclone heading towards the southeast coast intensified on Thursday, ...
Phailin-এর চিত্র
10 ঘন্টা আগে
10 ঘন্টা আগে
1 দিন আগে
1 দিন আগে
-
Cyclone Phailin - Wikipedia, the free encyclopedia
en.wikipedia.org/wiki/Cyclone_Phailin
Very Severe Cyclonic Storm Phailin is a violent tropical cyclone currently threatening the eastern coast of India. Originating from an area of low pressure over the ...
Cyclone Phailin intensifies | Deccan Chronicle
১১ ঘন্টা আগে - Cyclone to move northwestwards and cross north Andhra Pradesh and Odisha by night of Oct 12.
Deep depression cyclone turns into Phailin - IBNLive
ibnlive.in.com › India › Odisha
1 দিন আগে - After crossing North Andaman Islands, the deep depression over east central Bay of Bengal on Wednesday night intensified into cyclonic storm ...
Andhra, Odisha on high alert as cyclone Phailin nears the coast
১৫ ঘন্টা আগে - The Andhra Pradesh government has issued a high alert in view of the cyclone along cyclonic storm Phailin along coastal Andhra and Odisha.
Cyclone Phailin intensifies, high alert for Andhra Pradesh, Odisha ...
১১ ঘন্টা আগে - Cyclone Phailin: The cyclonic storm "Phailin" which hit the Andaman and Nicobar Islands on Wednesday has intensified and is heading ...
#India – Withhold Setup of Nuclear Reactors in Peaceful Villages of Gujarat #Protest #Action
Posted by :kamayani On : October 10, 2013
0
Category:Advocacy, Announcements, Human Rights, Justice, Kractivism, Law
Tags:Gujarat, Haryana, Nuclear power plant, Protest
10 October 2013
Summary
A proposed nuclear power plant in Chaya and Mithi Virdi in Gujarat, India is strongly opposed by villagers who will be affected.
On 23 September, they undertook a massive rally starting from Jaspara village despite heavy rains. Shouting "let it go, let it go, let thenuclear power plant go", "allow us to eat our hard earned rotlo (bread)", "we will give up our lives, not our land", "let bajara and cotton grow, allow the greenery to flourish", and "Not here, not anywhere; not in any country in the world", their number grew as they traversed the villages along the 40 km. stretch to Bhavnagar where the rally turned into a public meeting. There, a representative group comprising the leaders of the affected villages presented a memorandum to the Collector, and described the situation in detail to him.
The residents do not want their lands to be converted into a nuclear plant because it is very fertile and provides for their needs sufficiently. But the government is going on with a process that violates basic procedural norms such as conducting illegal public hearing and not sharing important details of the plan with the people (lack of transparency).
The Collector or land revenue officer assured them that the memorandum would be sent to the Prime Minister, the Minister for Environment and the Secretary, Ministry of Environment at the earliest. The affected communities want the world outside India to know about this latest 'nuclear' move by Indian government and to help them retain their lands.
*** Please respond before 24 October 2013 ***
Action Requested
Please write polite letters expressing your concern and request the authorities to protect and uphold the rights of communities opposing the Chayya-Mithi Virdi nuclear plant, in particular:
· Respect their rght to livelihood as farmers, fisherfolk, hired labour
· Respect their right to information – transparency in the development plans involving and touching their lives
· Respect their right to know resettlement and rehabilitation plans if land is acquired for the project
· Respect their right to self determination
Send letters to:
Shri Narendra Modi
3/F, Swarnim Sankul-1, New Sachivalaya
Gandhinagar 382010
Gujarat, INDIA
Fax: +91 79 2322 2101
Also send copies to:
Prime Minister's Office South Block,
Raisina Hill, New Delhi – 110 001
Fax: +91 11 2301 9545 / 2301 6857 / 2301 5603
2. Ministry of Science and Technology
Dept of Nuclear Energy
Anushakti Bhavan,
Chatrapathi Shivaji Maharaj Marg,
Mumbai – 400 001
Fax: +91 22 2204 8476 / 2202 6728
3. Chairperson
National Human Rights Commission
Faridkot House, Copernicus Marg,
New Delhi-110001, INDIA
Fax: +91 11 2338 4863
4. Diplomatic representatives of India in your country.
Sample Letter
Please avoid typing 'cc ACPP' at any part of your letter but send copies to us separately for monitoring purpose.
It has come to our attention that several villages in Gujarat are strongly opposed to the proposed nuclear power plant project of NCPIL and Westinghouse in Chayya-Mithi Virdi. They have expressed their disapproval in various ways, including a massive rally recently, on 23 September, from Jaspara to Bhavnagar where village leaders presented a Memorandum to the Collector to forward to the Prime Minister and the Minister for Environment.
We learned further that the affected villages have also submitted 281 notarized affidavits together with the memorandum. The affidavits state that the land they own is fertile and their only but rich source of livelihood, and that they strongly oppose the land acquisition/sale of their farmland, village waste or fallow and grazing lands to the government of Gujarat, Government of India, or the Nuclear Power Corporation of India Ltd (NPCIL) in order to give way to the proposed nuclear power plant in the region. They are requesting that their rights be protected and upheld against a project that will have tremendous, negative impact on their lives and livelihood.
However, the state and federal governments allegedly are pushing for the project, to the point of conducting the Environmental Public Hearing without allowing the peoples' representatives to speak or being given the vital details of the project, which made the villagers walk out on that public hearing they deem illegal and invalid.
Their fears are likewise magnified upon receiving media reports that the Prime Minister has assured the US government and Westinghouse that the Nuclear Liability Act will be amended by Congress to be more favorable for the international nuclear corporations. Apparently, a similar step had been taken by the government before to placate nuclear corporations by framing rules that go against the spirit of the Constitution of India. That is a shameless sell out of Indian peoples' lives. We register our strong protest against any further dilution of the Nuclear Liability Act that endangers and puts the lives of common people of India in great peril amounting to selling off Indian people's lives and safety for nuclear profits.
We stand with the Gujarat communities in their decision to keep their lands, lives and livelihood. We join their request that you, as responsible public officials, protect and uphold their rights as peoples and communities who will be affected by the proposed project. In particular, we ask that you:
• Respect their right to livelihood as farmers, fisherfolk, hired labour
• Respect their right to information – transparency in the development plans involving and touching their lives directly
• Respect their right to know the resettlement and rehabilitation plans if and when land is acquired for the project
• Respect their right to self determination.
Thank You for Your Continued Support!
Background
A 6,000 mega-watt capacity nuclear power plant is proposed to be built by Nuclear Power Corporation of India Ltd (NPCIL) and Westinghouse Electric Company (WEC, USA) in Gujarat, India. In 2009, 777 hectares of land in this region were identified by the government as a site suitable for a nuclear plant. The initial Environment Impact Assessment report labeled the land as "barren"; this is remarkably inaccurate as a visit to the highly fertile farms at any time of the year would prove otherwise. This is the main reason why the villagers are opposed to the project: it would mean giving up their fertile lands and being relocated. Most of the farmers take three crops every year and the land is able to provide for their families' needs sufficiently. They do not need money or employment from the company.
On 5 March 2013, a public hearing was held with about 24 villages within a 10 km radius of the proposed project. Project Affected Persons (PAPs) who will be directly affected wanted civil society members and experts to speak on their behalf at the public hearing but the Collector did not allow this. The 5,000 residents got angry and staged a walkout. Only Paryavaran Suraksha Samiti (PSS), an NGO actively fighting against the plant, drew attention to the mass walk-out and wrote to the authorities about some violations of the basic procedural norms while conducting the Environmental Public Hearing (EPH). However, Chairman and Managing Director (CMD) of NPCIL chose to ignore this fact and presented a totally different picture in his July 5 statement during the Annual General Body Meeting saying, "Public hearing for Chhaya-Mithi Virdi site in Gujarat was completed."
NPCIL is protected by the antiquated Atomic Energy Act of 1962. The Comptroller and Auditor General (CAG) recently pulled up the NPCIL for not following guidelines on transparency. Likewise, the Department of Atomic Energy (under which the NPCIL falls) does not share some of the most important details of its plans with citizens, especially the ones who would be directly affected by their projects.
The affected villages are further dismayed by recent media reports after the September 2013 visit of the Prime Minister to Washington alleging that the Government of India is initiating a move to further dilute the Nuclear Liability Act which has stood in the way of sealing a nuclear agreement with Westinghouse. The further dilution of the Nuclear Liability Act will undermine again all democratic and sovereign institutions of India, beginning with Parliament. To assure the US Government and Nuclear Industry that the Government of India will make sure that the operator (NPCIL) will not use its 'right of recourse' against suppliers of defective equipments is a shameless sell out of Indian peoples' lives. While other countries are deciding to go nuclear free, the Indian government is risking citizens lives by opting for nuclear power that contributes only less than 3% of its electricity production.
Mithi Virdi means 'sweet ponds' in Gujarati. "But the future being planned for the region now has a bitter taste to it," says Praveenbhai, a teacher and trustee of the Gram Dakshina Murti Lokshala (school), a tiny utopia run on Gandhian principles. The proposed nuclear power plant will only be a few kilometers away from the Gram Dakshina school. The villages fear their peace will be broken if this project pushes through. And it continues to be a puzzle to them why their government should want this when the state of Gujarat boasts of being the leader in installed capacity for solar energy and claims to generate surplus electric power.
Justice.Peace.Solidarity.
Terence A.G. P. Osorio
Coordinator
Sources: Local groups, JESA, NAPM, dawn.com
Asian Center for the Progress of Peoples
1/F, 52, Princess Margaret Road
Kowloon, Hong Kong
Phone: (852) 2714 5123 / 2712 3989
Fax: (852) 2712 0152
E-mail: hotline@acpp.org
Website: www.acpp.org
দূষণে জেরবার আয়লা-বিধ্বস্ত হিঙ্গলগঞ্জ |
নির্মল বসু • হিঙ্গলগঞ্জ |
* |
এ ভাবেই রোজ জল জোগাড় করতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। নিজস্ব চিত্র। |
সুন্দরবন লাগোয়া কুড়েখালি খালের পাশে হিঙ্গলগঞ্জের কালীতলা গ্রাম পঞ্চায়েত। খালের এক পাড়ে জনবসতি, অন্য পাড়ে গভীর জঙ্গল। আয়লার তাণ্ডবে নদীবাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছে। তা থেকে দূষণ ছড়িয়েছে এলাকায়। সেই জল বাধ্য হয়ে ব্যবহার করায় শরীরে ঘা, চুলকানি, পেটের অসুখ ছড়িয়েছে। ইতিমধ্যে শতাধিক লোককে স্থানীয় যোগেশগঞ্জ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ভর্তি করানো হয়েছে। জায়গার অভাবে যোগেশগঞ্জ হাইস্কুলে রাখা হয়েছে দুর্গতদের। বাড়ি ফেলে চলে গেলে দুষ্কৃতীরা লুঠপাট চালাতে পারে। সে কারণে অনেকেই অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতেই থাকছেন। তাতে সমস্যা আরও বাড়ছে। প্রশাসনের কর্তাদের বক্তব্য, জল শুকোনোর সঙ্গে সঙ্গে পেটের অসুখ-সহ নানা জলবাহিত রোগ আরও ছড়াতে পারে। শুক্রবার যোগেশগঞ্জ বাজার থেকে পিএমজিএসওয়াই রাস্তা দিয়ে সামসেরনগর যাওয়ার সময়ে দেখা যায়, ডান দিকে চিংড়িখালি খালে রয়েছে মরা পশুর দেহ, বিচালি, বাড়ির চাল-সহ নানা আবর্জনা। খালের অবস্থা শোচনীয়। রাস্তার দু'পাশে পলিথিনের ত্রিপল খাটিয়ে কোনও রকমে রয়েছেন বাসিন্দারা। সর্বত্রই শূন্যতা। এখনও আয়লা-র তাণ্ডব দগদগে ঘায়ের মত স্পষ্ট। |
* |
জল-দূষণ থেকে ছড়াচ্ছে চর্মরোগ। * |
কালীতলা বাজারের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তাটি সোজা গিয়েছে পারঘুমটি ডাকবাংলোয়। সামনেই বিশাল চেহারার রায়মঙ্গল নদী। বাংলোর পাশের নদীবাঁধ আয়লা-র তাণ্ডবে নিশ্চিহ্ন। আজ, শনিবার ভরা কোটালে প্লাবনের আশঙ্কা। কিন্তু শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বাঁধ মেরামত না হওয়ায় আতঙ্কিত বাসিন্দারা। পানীয় জলের সংকট রয়েছে। ওষুধ পাওয়া গেলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অতন্ত কম। সরকারি ত্রাণ ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। এর মধ্যে ভরসা বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ত্রাণ। দিনের আলো ফোটার আগেই তাই থালা-বাটি নিয়ে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে পড়ছেন বাসিন্দারা। কালীতলা বাজারের কাছে একটি দোকানে চলেছে ত্রাণ শিবির। সেখানে শুয়ে রয়েছে ইপ্সিতা মণ্ডল, জরিনা খাতুন, সুনিতা মণ্ডলেরা। তাদের সকলের শরীরে চাকা চাকা ঘা। সুনীতার বাবা দেবপ্রসাদ মণ্ডল বলেন, "মানুষ-গরু মরে এলাকার জল ভয়ানক দূষিত হয়ে গিয়েছে। অধিকাংশ পেটের রোগ, হাতে পায়ে চুলকানি ও ঘা দেখা দিয়েছে। আমার দেড় বছরের শিশু সুনীতাও অসুস্থ হয়ে পড়েছে।" রায়মঙ্গলের জলে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে পারঘুমটি গ্রামের গহর গাজির বাড়ি। তাঁর ঠিকানা এখন কুড়েখালি ধারের পলেথিনের টোঙ। মেয়ে জরিনার গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে বললেন, "ছোট একটা ঘা দিনের পর দিন ছড়িয়ে পড়ছে মেয়েটার সারা শরীরে। বন্যার পর দূষিত জলের জন্যই ওর এই অবস্থা। ঘরবাড়ি সব শেষ হয়ে গেল এখন ঠিক মতো চিকিৎসা করাতে না পারলে মেয়েটাকেও বাঁচাতে পারব না।" |
* |
ঘর ভেসেছে আয়লায়। তাই নৌকাতেই এখন সংসার। * |
বাসিন্দাদের সকলের দাবি, বাঁধ মেরামত ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য নিতাইপদ রায় বলেন, "চিংড়িখালি খাল থেকে সাতটি দেহ উদ্ধার করে মাটিতে পুঁতে দিয়েছি। খাল পরিস্কারের সময়ে আরও দেহ পাওয়া যাবে বলে আমার মনে হয়। গবাদি পশু মরে খাল ভরে রয়েছে। এলাকায় দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এ সমস্ত থেকে এলাকা দূষণ ছড়াচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অনেকের চর্মরোগ দেখা দিয়েছে।" এরই মধ্যে ভরা কোটাল নিয়ে বিপদ সঙ্কেত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বাসিন্দাদের মুখে একটাই প্রশ্ন, এমন চললে বাঁচবে তো সকলে। তবে উত্তর দেওয়ার কেউ নেই। * হিঙ্গলগঞ্জের কালীতলায় ছবি দু'টি তুলেছেন নির্মল বসু। |
http://anandabazar-unicode.appspot.com/proxy?p=archive/1090606/6jibjagat2.htm
ধ্বংস ও বর্ষা নিয়ে আসছে আয়লা | |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা | |
* | |
'সিডার', 'রেশমি', 'বিজলি'র পরে 'আয়লা'। কলকাতা থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় 'আয়লা' ধেয়ে আসছে পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকে। পরিমণ্ডলে অন্য কোনও পরিবর্তন না-হলে আজ, সোমবার বিকেলের পরে ওই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়তে পারে সাগরদ্বীপের কাছে বাংলা উপকূলে। রবিবার রাতে এমনই সতর্কবার্তা জারি করেছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। ওই ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন আবহবিদেরা। রবিবার সন্ধ্যার পরেই পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলবর্তী এলাকায় ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সুন্দরবনের ধবলাহাটে নদীবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। সাগরেও ভেঙেছে মাটির বাড়ি। ওই ঘূর্ণিঝড় স্থলভূমির দিকে যত এগোবে, ক্ষয়ক্ষতি ততই বাড়বে বলে আবহবিদেরা জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের পূর্বাভাস, উপকূলবর্তী এলাকায় ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইবে। ২-৩ মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাস হতে পারে সমুদ্রে। আজ, সোমবার সকাল থেকে ব্যাপক বৃষ্টি হবে গোটা দক্ষিণবঙ্গেই। ব্যাপক ধ্বংসের শক্তিসম্পন্ন ওই ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে সঙ্গে আজই রাজ্যে বর্ষা ঢুকবে বলে মনে করছেন আবহবিদেরা। ১৯৯৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে বর্ষা ঢুকেছিল ২৮ মে। এ বার ঢুকছে তারও আগে। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে সাধারণত বর্ষা ঢোকে ৮ জুন। এ বার তা পক্ষকাল আগেই ঢুকে পড়বে বলে আবহবিদদের আশা। তবে তাঁদের মূল নজর অবশ্যই ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতির দিকে। | |
| |
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, "বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি গভীর নিম্নচাপটি রবিবার বিকেলে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়েছে। এবং তার অভিমুখ পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকেই। সোমবার বিকেল বা সন্ধ্যার মধ্যে 'আয়লা' নামের ওই ঘূর্ণিঝড় সাগরদ্বীপের ১০০ কিলোমিটার পূর্ব দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূলে আছড়ে পড়বে।" • তার ফলে কী হতে পারে? গোকুলবাবু বলেন, "ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলের দিকে যত এগোবে, ততইউপকূলের দিকে যত এগোবে, ততই পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে ঝড়বৃষ্টির মাত্রা বাড়বে। পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা উপকূলে ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইবে। ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই।" • অতি ভারী বৃষ্টি মানে কতটা? উপকূলবর্তী এলাকায় কোথাও কোথাও বৃষ্টির পরিমাণ ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহবিদেরা। রবিবার সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড়টিকে 'সাধারণ ঘূর্ণিঝড়' হিসেবেই চিহ্নিত করেছে আবহাওয়া দফতর। সেই অনুসারে মৎস্যজীবীদের মঙ্গলবার পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। বিপদ-সঙ্কেত জারি হয়েছে কলকাতা বন্দরে। সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাকেই। বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপ যে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে চলেছে, শনিবারেই সেই আশঙ্কার কথা রাজ্য সরকারকে জানিয়েছিল আবহাওয়া দফতর। রাজ্য প্রশাসন কিন্তু সেই সতর্কবার্তাকে আমল দেয়নি। কোনও কন্ট্রোল রুম খোলা হয়নি মহাকরণে। ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি জানতে এ দিন বিভিন্ন জেলা থেকে মহাকরণে যোগাযোগ করা হলে জানিয়ে দেওয়া হয়, কন্ট্রোল রুম খোলা হয়নি। সন্ধ্যায় কথাটা মুখ্যসচিবের কানে পৌঁছয়। তার পরেই মহাকরণে তড়িঘড়ি খোলা হয় কন্ট্রোল রুম। তত ক্ষণে হাওয়া অফিস জানিয়ে দিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় এগিয়ে আসছে উপকূলের দিকে। সিডার, রেশমি ও বিজলি— গত তিন বছরে এই তিনটি ঘূর্ণিঝড়ের গতিমুখ প্রথমে পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকে থাকলেও তিনটিই শেষ পর্যন্ত আঘাত করেছিল বাংলাদেশ উপকূলে। • এ বার কী করবে আয়লা? আবহবিদেরা বলেন, "রবিবার রাত পর্যন্ত আয়লার মতিগতি যা, তাতে মূল আঘাতটা পড়বে দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপরেই। তবে ঝড়ের হাত থেকে কলকাতাকে এ বারেও হয়তো বাঁচিয়ে দেবে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য। কিন্তু ওই অরণ্যভূমি ব্যাপক বৃষ্টিপাত বন্ধ করতে পারবে না।" সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপে প্রচণ্ড বৃষ্টিতে নদীবাঁধ ভাঙছে। পাথরপ্রতিমা, সাগর, গোসাবা, বাসন্তীতে নদীবাঁধের উপরে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় রবিবার রাতেই পৌঁছে গিয়েছেন পাথরপ্রতিমায়। সেখানে একটি নদীবাঁধে বিশাল ফাটল ধরেছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। আবহবিদেরা জানান, আজ, সোমবার রাতের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভূমিতে ঢুকলে কাল, মঙ্গলবার ব্যাপক বৃষ্টি শুরু হবে উত্তরবঙ্গেও। সেই সঙ্গেই অর্থাৎ ওই দিনই উত্তরবঙ্গে বর্ষা ঢুকে যাবে। সত্যিই যদি তা হয়, সেটা হবে স্বাভাবিক নিয়মের বিপরীত। কারণ, সাধারণত উত্তরবঙ্গে বর্ষা ঢোকে ৫ জুন। তার তিন দিন পরে সে হাজির হয় দক্ষিণবঙ্গে। ঘূর্ণিঝড় এ বার সেই স্বাভাবিক নিয়মকেও ওলটপালট করে দিচ্ছে। |
http://anandabazar-unicode.appspot.com/proxy?p=archive/1090525/25raj3.htm
খলসে গাছে ফুল নেই, মধুও শুষে নিয়েছে আয়লা |
নির্মল বসু • হিঙ্গলগঞ্জ |
সুন্দরবনেও মধুর টান পড়েছে। কারণ সেই আয়লা। আয়লা অনেক কিছুই কেড়েছে। মৌমাছির বাসাও যে তছনছ করেছে তা টের পাচ্ছেন মউলেরা। কয়েক পুরুষ ধরে মধু বেচে ওঁরা সংসার চালান। এ বার তাঁদের রোজগারে থাবা বসিয়েছে আয়লা। সুন্দরবন লাগোয়া নদীর জলোচ্ছ্বাসে নষ্ট হয়েছে খলসে গাছ। এই গাছের ফুল থেকেই মধু সংগ্রহ করে মৌমাছি। কিন্তু ঝড়ের তাণ্ডবে ভেঙে গিয়েছে ওই গাছের ডালপালা। ভাঙা ডালে যেটুকু ফুল ফুটেছে, তা-ও আবার বৃষ্টির অভাবে ঝরে গিয়েছে। জমতেই পারেনি মধু। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের প্রাক্তন অধিকর্তা প্রণবেশ সান্যাল বলেন, "খলসে এক ধরনের ম্যানগ্রোভ। এই গাছ ম্যানগ্রোভ বনের সামনের সারিতে থাকে। সেই জন্যই আয়লায় এই গাছেরই ক্ষতি হয়েছে বেশি।" অথচ অনেক আশা নিয়ে জঙ্গলে ঢুকেছিলেন মউলেরা। এর-ওর কাছে টাকা ধার করে বন দফতরের অনুমতি নিয়ে নৌকো ভাড়া করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু ১০-১৫ দিন বনের এ পাশ-ও পাশ ঘুরেও মেলেনি মধু। প্রায় শূন্য হাতেই ফিরে আসতে হয়েছে। নিজেদের খরচটুকুও ওঠেনি। |
* |
নিজস্ব চিত্র |
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, খলসে গাছের মধু খুব সুস্বাদু। ওই মধু সংগ্রহের জন্য মউলেদের জঙ্গলে ঢোকার অনুমতি নিতে হয়। মউলেদের সঙ্গে বন দফতরের কর্মীরাও মধু সংগ্রহ করেন। কিন্তু মধু প্রায় মিলছেই না। এ বার বসিরহাট রেঞ্জে মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার কুইন্টাল ও হিঙ্গলগঞ্জে ৩ হাজার কুইন্টাল। শর্ত অনুযায়ী, সংগৃহীত মধু সরকারি দরে বন দফতরে বিক্রি করতে হয়। এ বার মধুর জোগান কম থাকায় বিপাকে পড়েছেন মউলেরা। এক দিকে মহাজন, অন্য দিকে সংসার চালানো— এই দুইয়ের চাপে পড়ে হিমসিম খাচ্ছেন মউলেরা। কালীতলা পঞ্চায়েতের সামশেরনগরের বাসিন্দা করুণা গায়েন বলেন, "মহাজনের কাছ থেকে টাকা ধার করে মধু ভাঙতে গিয়েছিলাম সুন্দরবনের উত্তরচড়া, বুড়িরডাবুর, দক্ষিণ চড়া, ও সিমখালি জঙ্গলে। কিন্তু বনে ঢুকে বুঝতে পারি, কপালে দুঃখ আছে। আগের বছরগুলিতে যেখানে বড় বড় মৌচাক পেয়েছিলাম, এ বার সেখানে গিয়ে দেখি খলসে গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে।" ওই এলাকার কমলা মণ্ডল ও স্বপন গাইনরা বলেন, "অন্য বার মাত্র দু'সপ্তাহে দু'শো থেকে তিনশো কেজি মধু পেতাম। এ বার পেয়েছি মাত্র ৫০ কেজি।" মউলেরা জানান, ৪৪ টাকা কেজি দরে মধু দিতে হয় বন দফতরকে। জঙ্গলে যাওয়া, নৌকো ভাড়া, খাওয়ার একটা খরচ আছে। তার উপর আছে মহাজনের দেনা। এ-সবের বিনিময়ে যেটুকু মধু মিলেছে তা অতি সামান্য। কালীতলা পঞ্চায়েতের সদস্য নিতাইপদ রায় বলেন, "বছর ঘুরতে চলল। আয়লার কারণে এখনও মাঠে ফসল ফলানো সম্ভব হল না। তাই সকলেই জঙ্গলের ভরসায় ছিল। সেখানেও মধু না-মেলায় গ্রামবাসীদের অবস্থা শোচনীয়।" মউলেদের দাবি, জঙ্গলে মধু ভাঙতে যাওয়ার সময় অগ্রিম টাকা দিক বন দফতর। তা হলে মহাজনদের কাছে চড়া সুদে টাকা ধার করতে হয় না। একই সঙ্গে মধুর দামও কিছুটা বাড়ানো দরকার বলে তাঁরা মনে করেন। কারণ খোলা বাজারে মধুর দাম কিলো প্রতি প্রায় ২০০ টাকা। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের অধিকর্তা সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, "খলসে গাছে সময় মতো ফুল না-আসায় মধু কম হয়েছে। মউলেদের কথা ভেবে মধুর দাম গত বারের থেকে কিলো প্রতি এক টাকা করে বাড়ানো হয়েছে।" |
http://anandabazar-unicode.appspot.com/proxy?p=archive/1100623/23jibjagat1.htm
আয়লা বিধ্বস্ত এলাকায় ২ টাকা কিলো চাল |
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেও কুপন পাননি দুর্গতেরা নির্মল বসু • হিঙ্গলগঞ্জ |
রাজ্যে পালা বদলের পরে আয়লা দুর্গতদের মধ্যে মাসিক ২ টাকা কিলো দরে চাল বিলি করার সিদ্ধান্ত নেয় নতুন সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা ঘোষণাও করেন। ঠিক হয় কুপনের মাধ্যমে পরিবার পিছু ৮ কেজি চাল দেওয়া হবে। পরে চালের পরিমাণ দ্বিগুণ করা হয়। কিন্তু আয়লা বিধ্বস্ত হিঙ্গলগঞ্জের উত্তর সাহেবখালির শতাধিক পরিবারের কপালে চালের কুপন জোটেনি। এ ব্যাপারে তাঁরা ইতিমধ্যেই বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও বিশ্বজিৎ বসু বলেন, "চালের কুপন দেওয়ার দায়িত্ব মূলত খাদ্য দফতরের রেশন বিভাগের। এই ব্লকে ইতিমধ্যে ৩২ হাজার ৪৪ জন বেনিফিশিয়ারি চালের কুপন পেয়েছেন। যাঁরা এখনও পাননি বলে অভিযোগ করেছেন তাঁদের জন্য দ্রুত কুপনের ব্যবস্থা করা হবে।" ২০০৯ সালের ২৫ মে সুন্দরবন এলাকায় আছড়ে পড়েছিল আয়লা। নদীর জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছিল কয়েক হাজার মানুষের ঘরবাড়ি। ভেসে গিয়েছিল প্রচুর গবাদি পশু। নষ্ট হয়ে যায় রাস্তাঘাট। ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টকে হারিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। নতুন সরকারের তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুন্দরবনের আয়লা বিধ্বস্ত এলাকায় দুর্গতদের জন্য ২ টাকা কিলো দরে চাল দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। ঠিক হয়, এ জন্য দুর্গতদের মধ্যে কুপন বিলি করা হবে। কুপন প্রতি ৮ কিলো করে চাল দেওয়া হবে। পরবর্তী কালে চালের বরাদ্দ বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেও চালের কুপন ঠিকমতো বিলি করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ পর্যন্ত চালের কুপন না পাওয়ায় আয়লা বিধ্বস্ত উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জের উত্তর সাহেবখালির শতাধিক পরিবার ক্ষুব্ধ। তাঁদের অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে যেখানে একটি পরিবারের জন্য একটি কুপন বরাদ্দ সেখানে ওই পরিবারের একাধিক সদস্য একাধিক কুপন নিয়ে চাল তুলছে। কুপন নেওয়ার পরে মারা গিয়েছেন এমন ব্যক্তির কুপনও ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, কুপনে নেওয়া চাল অনেকে বাজারে বিক্রি করছে। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে প্রকৃত দুর্গতরা যাতে চালের কুপন পায় সে ব্যাপারে প্রশাসন ব্যবস্থা নিক। স্থানীয় বাসিন্দা নীতিশ মণ্ডল, কবিতা মণ্ডল, কৃষ্ণপদ মণ্ডল বলেন, "খাদ্যমন্ত্রী যেখানে বলছেন আয়লা দুর্গতদের জন্য কম দামে চালের ব্যবস্থা করেছেন, সেখানে আমরা এখনও পর্যন্ত মাত্র একবার ২টাকা কিলো দরে চালের জন্য কুপন পেয়েছি। সামনেই পুজো। অনেকেই কুপন নিয়ে চাল তুলছেন। অনেকের বাড়িতেই একাধিক কুপন। অথচ আমাদের আর কোনও কুপন দেওয়া হয়নি।" খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ''হিঙ্গলগঞ্জের ওই গ্রামের আয়লা দুর্গতরা যে অভিযোগ করেছেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে আগামী সাতদিনের মধ্যে তাঁরা যাতে কুপন পান তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।" |
http://www.anandabazar.com/archive/1130926/26pgn3.html
আয়লা-কে নিয়ে রাজনীতিতে মেতেছে পশ্চিমবঙ্গ
লোকসভা ভোটের সময় পরিবর্তনের হাওয়া ওঠে পশ্চিমবঙ্গে৷ এবার আর হাওয়া নয়, ঘূর্নিঝড়ে সওয়ার হয়ে রাজনৈতিক মাইলেজ পেতে চাইছেন সদ্য রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ অন্যদিকে বুদ্ধদেবের সরকারও ভাঙা নৌকার পালে পেতে চাইছেন এ হাওয়াকে৷
আয়লার প্রকোপে কলকাতায় সেই চির পরিচিত ছবি : হাঁটু জল সবদিকে
মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এর আগে কখনো রাজ্যের কোন ব্যাপারে সাংবাদিকদের এতো প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বলে মনে পড়ে না৷ এবং মুখ্যমন্ত্রীসুলভ কর্তৃত্বের জায়গা থেকে নয়, বুদ্ধবাবুকে এদিন দেখা গেল ঘূর্নিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে রীতিমত আলোচনায় যোগ দিতে৷ জানালেন, মঙ্গলবারই তিনি বেরিয়ে পড়ছেন দক্ষিণ ২৪ পরগণার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে৷ আর অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত যাচ্ছেন উত্তর ২৪ পরগণায়৷
বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুও এদিন দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ঝড় মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷ এছাড়া, মহাকরণে এবং কলকাতা পুরসভায় সারাদিন ধরেই দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে৷ মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সোমবার বিকেলে ঝড়-জল একটু কমতেই বেরিয়ে পড়েছিলেন শহরের পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে৷
এঁদের এই তৎপরতার কারণ একজনই৷ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সদ্য রেলমন্ত্রী হওয়া মমতা তাঁর মন্ত্রকের দায়িত্ব বুঝে নিতে সোমবার সন্ধেতেই দিল্লি যাবেন ঠিক ছিল৷ কিন্তু ঘূর্নিঝড়ের তাণ্ডব দেখে যাওয়া বাতিল করেন মমতা৷ তাঁর কালীঘাটের বাড়িতেই খোলা হয় সমান্তরাল কন্ট্রোল রুম৷ বিকেল থেকেই তিনি নেমে পড়েন শহরের রাস্তায়৷ তার আগেই ঘোষণা করেন, দিল্লি নয়, মঙ্গলবারও তিনি রাজ্যেই থাকবেন৷ দুপুরে কলকাতায় পূর্ব রেলের সদর দফতরে গিয়ে রেল মন্ত্রকের চার্জ বুঝে নেবেন৷ আর তারপর একটি বিশেষ ট্রেনে তিনি যাবেন কাকদ্বীপ পর্যন্ত, ঘূর্নিঝড় আক্রান্ত এলাকাগুলির অবস্থা স্বচক্ষে দেখতে৷
রাজ্য সরকার যে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টে সম্পূর্ণ ব্যর্থ, সেকথা সোমবারই বলে দিয়েছেন মমতা৷ কিন্তু স্রেফ রাজ্যের বিরোধী নেত্রী নয়, তিনি এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী৷ কাজেই সকালেই তিনি ফোন করেন প্রনব মুখোপাধ্যায়কে৷ প্রনব ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে৷ এবং শেষ খবর, রাজ্যের ঘূর্নিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতির মোকাবিলায় সেনা নামছে, মমতার উদ্যোগে৷
প্রতিবেদক: শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
ওই বুঝি কালবৈশাখী
সন্ধ্যা-আকাশ দেয় ঢাকি॥
ভয় কী রে তোর ভয় কারে, দ্বার খুলে দিস চার ধারে--
শোন্ দেখি ঘোর হুঙ্কারে নাম তোরই ওই যায় ডাকি॥
তোর সুরে আর তোর গানে
দিস সাড়া তুই ওর পানে।
যা নড়ে তায় দিক নেড়ে, যা যাবে তা যাক ছেড়ে,
যা ভাঙা তাই ভাঙবে রে-- যা রবে তাই থাক বাকি॥
রাগ: ইমন
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1326
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1919
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
আতঙ্কিত হবার মতো কথা৷ বিশ্বে নাকি বড় রকমের প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে৷ সে আশঙ্কা দূরে রাখা সম্ভব উষ্ণায়নকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে৷ মুশকিল হলো, বিশ্ব উত্তপ্ত হয়ে উঠছে আগের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুত৷
নিকোলাস স্টার্ন৷ পরিবেশ নিয়ে কাজ করেন আর তাঁকে চেনেন না এমন মানুষ বোধহয় কমই আছে৷ একসময় বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ছিলেন স্টার্ন৷ সুতরাং তিনি যে অর্থনীতিবিদ তা তো বোঝাই যায়৷ তবে ব্রিটেনের এই অর্থনীতিবিদের আরেকটা পরিচয় হলো তিনি খুব ভালো পরিবেশবিদ৷ ২০০৬ সালে পরিবেশ নিয়ে তাঁর একটা নিবন্ধ খুব সাড়া জাগিয়েছিল৷ সেই নিবন্ধ বিশ্বজুড়ে পরিবেশ সচেতনতা বাড়াতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল বলে ধারনা করা হয়৷ মঙ্গলবার তিনিই বলেছেন আতঙ্কিত হবার মতো কিছু কথা৷ তাঁর মতে, সাত বছর আগে সেই নিবন্ধ প্রকাশের সময়ের চেয়ে এখন আরো অনেক দ্রুত ঘটছে জলবায়ু পরিবর্তন৷ এমন পরিবর্তন দ্রুত হলে প্রাকৃতিক বিপর্য ত্বরান্বিত হবেই৷ নিকোলাস স্টার্নের আশঙ্কা তা-ই হয়ত হতে চলেছে৷
জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা কমাতে না পারলে এ গ্রহের তাপমাত্রা একটা সময় ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বেড়ে যেতে পারে বলেও জানিয়েছেন নিকোলাস স্টার্ন৷ সেরকম হলে পরিণতি কী হতে পারে? পৃথিবীতে মরু অঞ্চল অনেক বেড়ে যাবে, হিমালয়ে কল্পনার চেয়েও অনেক দ্রুতহারে বরফ গলতে শুরু করার ফলে বন্যা হবে, ঘরছাড়া হবে অনেক মানুষ!
এসব বিপদ এড়ানোর একটা উপায়ই দেখতে পাচ্ছেন নিকোলাস স্টার্ন৷ বিশ্বজুড়ে পরিবেশ সচেতনতা বাড়ানো৷ সুতরাং পরিবেশ সচেতন হন আরো, প্রকৃতিকে বন্ধুর মতো রক্ষা করুন৷ সুত্র: ডিডব্লিউ
প্রশ্ন রেখে গেল বায়ু কোণ থেকে ছুটে আসা ঝড়৷ বুধ-সন্ধ্যায় যার উদ্দাম উল্লাসে লন্ডভন্ড মহানগর৷ ঠিক যেন চার বছর আগের ২৫ মে-র ছবি৷ নাকি প্রবল
ঘূর্ণিঝড় 'আয়লা'কেও হারিয়ে দিল ১৪২০-র প্রথম কালবৈশাখী?
যুদ্ধ যদি গতির হয়, তা হলে নিঃসন্দেহে জয়ী বুধবারের কালবোশেখির নাচন৷ হাওয়া অফিসের রিপোর্টের সমর্থন তার দিকেই৷ যন্ত্র বলছে, সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে
কলকাতার উপর দিয়ে যখন ঝড় বয়ে যাচ্ছে, তার গতিবেগ তখন প্রতি ঘণ্টায় ১১৬ কিলোমিটার৷ পরের পাঁচ মিনিট ধরে একই গতিতে বয়েছে সে৷ আর মৌসম
ভবনের দস্তাবেজ ঘেঁটে আবহবিদরা জানাচ্ছেন, বঙ্গোপসাগর থেকে উপকূলে ঢোকার মুহূর্তে আয়লার সর্বোচ্চ গতিবেগ রেকর্ড হয়েছিল ঘণ্টায় ১১২ কিলোমিটার৷
দু'মিনিটের জন্য৷ কালবৈশাখীর এহেন দাপটে বিস্মিত আবহবিদরাও৷ হাওয়া-কর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ 'এই সময়'-এর সঙ্গে আড্ডায় বলেই ফেললেন, 'এটা তীব্র
কালবৈশাখী৷ এমন বিশেষ একটা দেখা যায় না৷ অন্তত সাম্প্রতিক অতীতে ১০০ কিমি/ঘণ্টা পার করা কালবৈশাখী দেখেছি বলে মনে পড়ছে না৷' সামনে উদাহরণ
বলতে গত বছর ৪ এপ্রিলের ঝড়৷ সেদিন ৯৬ কিমি/ঘণ্টা বেগে কালবৈশাখী আছড়ে পড়েছিল কলকাতায়৷
সেঞ্চুরি পার করা ঝোড়োগতির রহস্য কী?
গোকুলবাবুর ব্যাখ্যা, 'কালবৈশাখীর জন্ম হয় মূলত ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহারের মালভূমি এলাকায়৷ এসব জায়গায় একাধিক মেঘপুঞ্জ তৈরি হওয়ার পর যদি কখনও
একসঙ্গে মিলে যায়, তখনই ঝড়ের প্রাবল্য বেড়ে যায়৷ এদিনও ঠিক তাই হয়েছে৷' উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে, দুপুরে একের পর এক মেঘ তৈরি হয়েছে পড়শি
রাজ্যগুলিতে৷ সেগুলি যত পশ্চিমবঙ্গের দিকে সরেছে, তত কাছাকাছি চলে এসেছে৷ যেমন, পুরুলিয়ার আকাশে রাঁচির মেঘ মিশেছে ধানবাদের মেঘের সঙ্গে৷
বর্ধমানের উপরে সেই মেঘপুঞ্জে মিলে গিয়েছে একাধিক স্থানীয় বজ্রগর্ভ মেঘ৷ ওড়িশার মালভূমিতে সৃষ্ট কিছু মেঘও চলে আসে জোট বাঁধতে৷ ফলে, জেলার দীর্ঘ পথ
অতিক্রম করলেও, মুহূর্তের জন্য শক্তি হারায়নি কালবৈশাখীর উল্লম্ব মেঘ৷ বরং, জলীয় বাষ্পের টানা রসদ পেয়ে গিয়েছে সে৷ আবহবিজ্ঞান বলছে, এই উল্লম্ব
মেঘের দৈর্ঘ্য যত বেশি হবে, ঝড়ের গতি তত বাড়বে৷ কলকাতার আকাশে যে মেঘমালা তাণ্ডব করল, তার দৈর্ঘ্য ১৮ কিলোমিটারের কাছাকাছি ছিল, জানাচ্ছেন
আবহবিদরা৷ আর এতেই হার মেনেছে আয়লার শৌর্য৷
হার মেনেছে গরমও৷ চৈত্রে দু'বার কালবৈশাখী আছড়ে পড়েছে কলকাতায়৷ জেলার বরাত ভালো থাকলেও বৃষ্টি পায়নি মহানগর৷ তাই গরম মোটে কমেনি৷ এদিন
সকাল থেকে আকাশে মেঘ থাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিশেষ বাড়তে পারেনি৷ কিন্তু ছড়ি ঘোরাতে ছাড়েনি গুমোট আবহাওয়া৷ সন্ধের ঝড়ে সেই আবহই পুরো বদলে
গেল৷ আলিপুরে ৯.২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও, শহরের কোথাও কোথাও আরও বৃষ্টি হয়েছে বলে খবর৷ এর জেরে জল পর্যন্ত জমে যায়৷ তাতে অফিস-ফেরতা
জনতা বিপদে পড়লেও, স্বস্তি-ছোঁয়ায় নিশ্চিন্তে ঘুমোতে গিয়েছে মহানগর৷
স্বস্তি থাকবে ক'দিন?
পূর্বাভাস বলছে, বৃষ্টি জলীয় বাষ্প ধুয়ে দেওয়ায় আজ, বৃহস্পতিবার অন্তত গরম তেমন থাকবে না৷ ২০ ডিগ্রিতে নেমে যেতে পারে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা৷ শুধু তাই
নয়, দমকা হাওয়ার জটিল কেশে ফের হানা দিতে পারে কালবৈশাখী৷ বজ্রগর্ভ মেঘ ভেঙে নামতে পারে আকাশভাঙা আকুলধারা৷ এক আবহবিদের কথায়, 'এখন
ঝড়বৃষ্টির দারুণ অনুকূল পরিস্থিতি রয়েছে৷ বিহার সংলগ্ন উত্তরপ্রদেশের উপর রয়েছে ঘূর্ণাবর্ত৷ সেখান থেকে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের উপকূল পর্যন্ত
বিস্তৃত নিম্নচাপ অক্ষরেখা৷ ফলে, জলীয় বাষ্পের জোগান নিয়ে চিন্তা নেই৷ আর ঘূর্ণাবর্ত আছে যখন, সে-ই মালভূমির গরম হাওয়া আর জলীয় বাষ্পের মিশ্রণকে
ঠেলে উপরে তুলে দেবে৷'
আর আকাশের মেঘে স্বস্তি নামবে মাটিতে৷
কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা কমেছে। তবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখন প্রায় প্রতিদিন বয়ে যাচ্ছে কালবৈশাখী। ঝড়ের আঘাতে ক্ষতি হচ্ছে জানমালের। লঘুচাপের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলও উত্তাল। এ কারণে দেশের তিনটি সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হচ্ছে। দেশের দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলে কালবৈশাখী বয়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
পয়লা বৈশাখের পরের দিন থেকে সারা দেশে ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে। কক্সবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ কয়েকটি জেলায় আঘাত হেনেছে কালবৈশাখী। গতকাল বুধবারও ঝোড়ো বাতাস ছিল, যার গতি ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটারের মধ্যে ওঠানামা করেছে। একই সঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টিও পড়েছে। এ কারণে তাপমাত্রা ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াল কমেছে। উষ্ণতা কমলেও আজও কালবৈশাখী হতে পারে বলে আশঙ্কা আবহাওয়া অধিদপ্তরের।
গতকাল রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া পূর্বাভাসে বলা হয় রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ফরিদপুর, ঢাকা, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বা কোথাও কোথাও আরও অধিক বেগে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে কালবৈশাখীর প্রচণ্ড আঘাত হানার আশঙ্কা তুলনামূলকভাবে বেশি। এর সঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি হতে পারে।
ঝোড়োভাব কেটে গেলে আবারও গরম পড়তে পারে বলে আবহাওয়াবিদ রাশেদুজ্জামানের আশঙ্কা। তিনি বলেন, গরম পড়লেই কালবৈশাখী ঝড়ের আশঙ্কা থাকে। ঝড়ের পর তাপমাত্রা কিছুটা কমে এসে আবারও তা বেড়ে যায়। তখনই আবার ঝড় হয়ে থাকে। তাই পুরো এপ্রিল মাসেই কালবৈশাখী ঝড় হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ঝোড়ো হওয়া ও বৃষ্টির কারণে সারা দেশের মতো রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রা বেশ কমে গেছে। গত সপ্তাহে ঢাকায় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠলেও আজ সকালে ২৪ দশমিক ৯ ডিগ্রিতে নেমে এসেছে।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-04-18/news/345804
কালবৈশাখীর জেরে কয়েকঘন্টার জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল শহর কলকাতার জনজীবন। গতকাল সন্ধেয় প্রবল ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে নামে বৃষ্টি। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ভেঙে পড়ে শতাধিক গাছ। কালবৈশাখীর তাণ্ডবে রাজ্যে মৃত্যু হল দুজনের। বন্ধ হয়ে যায় বিভিন্ন রাস্তা। আজও রাজ্যে কালবৈশাখীর পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
সন্ধে নামতেই শহর কলকাতার দখল নিল কালবৈশাখী। আশি থেকে একশো কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া সঙ্গে প্রবল বজ্রবিদু্ত সহ বৃষ্টি। কয়েকঘন্টার দাপটে এককথায় লণ্ডভন্ড হল কলকাতা। প্রবল ঝড়ে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় উপড়ে পড়ে গাছ, ভেঙে পড়ে ল্যাম্পপোস্ট। স্তব্ধ হয়ে যায় যানচলাচল।
উত্তরে উল্টোডাঙ্গা, কাঁকুড়গাছি, আমহার্স্ট স্ট্রিট, এমজি রোড সহ সবকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় সারি দিয়ে দাঁডিয়ে যায় গাড়ি। চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। একই চিত্র মধ্য ও দক্ষিণ কলকাতাতেও। রেডরোড, চৌরঙ্গী সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, এলগিন রোড, বেলভেডিয়ার রোড, ভবানীপুর, টালিগঞ্জ, হরিশ মুখার্জি রোড সহ একাধিক রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায় বড় বড় গাছ। ফলে বেশিরভাগ রাস্তাই বন্ধ করে দিতে হয়। কোনও কোনও রাস্তা দিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত করা হয়।
শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় ওভারহেডের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল। একই অবস্থা হয় হাওড়া বর্ধমান মেন ও কর্ড এবং দক্ষিণ-পূর্ব শাখাতেও। হাওড়ার ডোমজুড়ে টালির একটি বাড়ির ওপর গাছ ভেঙে পড়ায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় এক শিশু কন্যার। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ভাঙড়ে ঝড়ে মৃত্যু হয়েছে আরও একজনের। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে বুধবার কলকাতায় মোট ৯২মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
কলকাতার অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো হলেও জেলাগুলিতে দুর্যোগের রেশ এদিনও রয়ে গিয়েছে৷ সন্ধ্যার ঝড়ের পর থেকে হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশকিছু এলাকায় এদিনও বিদ্যুত্ ও পানীয় জল সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে৷ ঝড়ের তাণ্ডবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়, নামখানা ও ক্যানিংয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে৷ মহাকরণ সূত্রের খবর, মঙ্গল ও বুধবার মিলিয়ে রাজ্যে কালবৈশাখীর তাণ্ডবে মোট আটজন মারা গিয়েছেন৷ মৃতদের পরিবারপিছু দু'লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে৷ এজন্য মৃতের ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে পরিবারকে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকের কাছে আবেদন করতে হবে৷ এদিন মহাকরণে কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটক জানান, ঝড়ে বিভিন্ন জেলায় বোরোচাষেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে৷ এজন্য কৃষিদন্তর বিস্তারিত সমীক্ষা করবে৷ যেসব কৃষকের কিষাণ ক্রেডিট কার্ড আছে তাঁরা শস্যবিমার টাকা পাবেন৷ যাঁদের এই কার্ড নেই, তাঁরাও যাতে ক্ষতিপূরণ পান, সেই ব্যাপারেও রাজ্য সরকার ভাবনাচিন্তা করছে৷
বুধবার সন্ধ্যার ঝড়ের তাণ্ডবে মূলত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল দক্ষিণ কলকাতা ও শহরতলির বিস্তীর্ণ এলাকা৷ তুলনায় উত্তর কলকাতার অবস্থা কিছুটা ভালো ছিল৷ দক্ষিণ কলকাতায় থিয়েটার রোড, ক্যাথেড্রাল রোড, হসপিটাল রোড, বেলভেডিয়ার রোড, আলিপুর রোড, সাহাপুর রোডের মটো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে বড় গাছ উপড়ে যান চলাচল প্রায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ এদিন সকালের মধ্যে অবশ্য এইসব রাস্তার বেশিরভাগই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে৷ তবে রাস্তা থেকে সরানো হলেও ফুটপাতের উপর ধ্বংসের নজির হয়ে এদিন দুপুরেও গাছের কাটা অংশ বা ভাঙা ল্যাম্পপোস্টগুলি পড়ে ছিল৷ হো চি মিন সরণির একাংশে ভাঙা গাছ ও ছেঁড়া বিদ্যুতের তারে ফুটপাতের কিছু অংশ বন্ধ ছিল৷ ঝড়ের তাণ্ডবে সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউয়ে নতুন বাস শেড ফুটপাতের উপর পুরোপুরি উপড়ে গিয়েছে৷ তবে গোখেল রোডে এদিন দুপুরেও দেখা গিয়েছে, দু'টি বড় গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি আড়াআড়িভাবে পড়ে যান চলাচল বন্ধ৷ একই অবস্থা ভবানীপুরের বেনিনন্দন স্ট্রিটেও৷ থিয়েটার রোডে একটি বহুতল বিপণির সামনের পাঁচিল বুধবার সন্ধ্যার ঝড়ে পড়ে গিয়েছিল৷ তবে তাতে রাস্তা বন্ধ হয়নি৷ এদিন বিকাল পর্যন্ত অবশ্য সেই ভাঙা পাঁচিল পুরোপুরি সরানো হয়নি৷ সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, বিডন স্ট্রিট, বি টি রোডের মতো রাস্তাগুলিতেও যান চলাচল এদিন সকালেই স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে৷ ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, 'সকালের মধ্যেই যান চলাচল মোটামুটি স্বাভাবিক করা গিয়েছে৷ রাস্তার ধারে যে গাছগুলি পড়ে রয়েছে, সেগুলিও রাতের মধ্যে পরিষ্কার করার চেষ্টা হচ্ছে৷'
কলকাতা পুরসভার হিসাব বলছে, বুধবারের ঝড়ে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে অন্তত ৮০টি গাছ উপড়ে গিয়েছিল৷ পুরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমারের দাবি, 'আয়লার পর সম্প্রতি কোনও ঝড়ে শহরে এত গাছ পড়েনি৷' পুরসভা সূত্রের খবর, মূলত পুরোনো বট, অশ্বত্থ, পাকুড়, রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া গাছই ঝড়ে উপড়ে পড়েছে৷ এরপর কি শহর সৌন্দর্যায়নে অন্য কোনও গাছ লাগানোর কথা ভাবছে পুরসভা? দেবাশিসবাবু বলেন, 'আয়লার ঘটনায় শিক্ষা নিয়ে আমরা রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়ার পরিবর্তে ছাতিম, মেহগণির মতো দীর্ঘ শিকড়যুক্ত গাছ লাগাচ্ছি৷ কিন্ত্ত বুধবারের ঝড়ের যে গতিবেগ ছিল তাতে মেহগণি গাছও উপড়ে গিয়েছে৷ গাছের উচ্চতা যাতে ১২-১৪ ফুটের বেশি না হয়, সেই ব্যাপারটিও আমরা দেখছি৷ তাতে গাছ উপড়ে পড়লেও তাতে রাস্তা পুরো বন্ধ হবে না৷'
সময়ের বিবর্তনে সারা বিশ্বে প্রায় সকল বনেরই আকার ও চরিত্র হ্রাস পেলেও পৃথিবীর অনেক বনকে যথেষ্ঠ যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। বন ধ্বংসের চিত্র দেশের মানুষের কাছে তা অবিশ্বাস্য ও চিন্তার অতীত বলেই প্রতীয়মান হবে।
আমাদের বাস্তবতার চরিত্রটি হচ্ছে, সুন্দরবনের পাশে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যেগে ১৩২০ মেগাওয়াটের একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হতে যাচ্ছে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবনসহ সব এলাকায় ব্যাপক পরিবেশগত সংকট তৈরি করবে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আব্দস সাত্তার এর নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি বিজ্ঞানী দল সুন্দরবন এবং আশেপাশের সম্ভাবনাময় এলাকায় কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন ও তার সন্নিহিত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। ২০১১ সালে এই পরিদর্শনে ২৩টি অকাট্য ও তথ্য ভিত্তিক যুক্তি দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।
প্রতিবেদনে তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন, সুন্দরবনের সার্বিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের উপর এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে, সুন্দরবন ধ্বংস হবে, এলাকায় পনরবেশগত সংকট সৃষ্টি হবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী তার বিভাগীয় এক বছর মেয়াদের এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, জৈবিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক এই তিনটি ভাগে মোট ২২ টি বিষয়ের উপর এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রভাব পড়বে।
বন্যপ্রণী ট্রষ্টের গবেষণার মধ্য দিয়ে দেখা যাচ্ছে যে, এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থপনের ফলে বাংলাদেশে বিদ্যমান পরিবেশ নীতি, পরিবহন নীতি, জ্বালানী নীতি, মোটরযান অর্ডিনেন্স, জলসীমা আইন, মৎস আইন, শিল্পনীতি, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, জীববৈচিত্র সংরক্ষণ আইন, জলাশয় সংরক্ষণ আইন, বন আইন, পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা আইন, জাতিসংঘ ঘোষিত রামসার কনভেনশন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিরোধী ঘোষণার মূল নিতীমালা লঙ্ঘিত হবে।
প্রকল্পটির জন্য স্থান নির্বাচন, জমি অধিগ্রহণ হয়েছে ২০১০ সালে, ভারতের সাথে চুক্তি হয়েছে ২০১২ সালে, ইতিমধ্যে মাটি ভরাটের কাজও শুরু হয়েছে।
আমাদের জাতীয় সম্পদ ও বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের অস্তিত্ব ও স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সুন্দরবনের কাছ থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ও ভারত সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
বিবার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকম/পিএম/এমকে/এমইউএ.
कॉरपोरेट हित आड़े आते हैं इसलिये प्राकृतिक आपदा से बचाव की नीतियाँ बन ही नहीं सकतीं
प्रकृति और मनुष्य के सर्वनाश ही मुख्य एजेण्डा ही तो विपर्यय मुकाबले की तैयारी कैसी?
कॉरपोरेट चन्दा वैध कर दिये जाने के बाद अराजनीतिक सामाजिक कार्यकर्ता और बहुजन आन्दोलन के लोग भी इस तस्करी में बड़े पैमाने पर शामिल हैं।
पलाश विश्वास
http://hastakshep.com/?p=31591
कोलकाता समेत पूरे पश्चिम बंगाल में मौसम की दूसरी कालबैशाखी में भारी तबाही मच गयी। कालबैशाखी आने की पहले से चेतावनी थी, लेकिन प्रकृतिक विपर्यय से निपटने की मानसिकता हमारी सरकारों में नहीं है। कामकाजी स्त्री पुरुषों को घर वापसी के रास्ते तरह-तरह के संकट का सामना करना पड़ा, जिनके लिये कोई वैकल्पिक इन्तजाम नहीं हो सका। गनीमत है कि सुन्दरवन की वजह से बंगाल समुद्री तूफान के कहर से बचा हुआ है। पर पिछली दफा आयला की मार झेलने के बावजूद प्रकृतिक विपर्यय से बचने के लिये पर्यावरण और जीवनचक्र बचाने की कोई पहल नहीं हो रही है। कोलकाता और उपनगरों में झीलों, तालाबों और जलाशयों को पाटकर बिल्डर प्रोमोटर राज राजनीतिक संरक्षण से जारी है। कोई भी निजी घर प्रोमोटर सिंडिकेट से बचा नहीं है। बेदखली के लिये अग्निकाण्ड आम है। अंधाधुंध निर्माण की वजह से जलनिकासी का कोई इन्तजाम नहीं है। ट्रेन सेवा हो या विमान यातायात जलभराव के संकट से कुछ भी नहीं बचा है। कालबैशाखी को थामने के लिये हरियाली का जो सबसे बड़ा हथियार है, बंगाल ने विकास की राह पर उसे गवाँ दिया है। काल बैशाखी अपने नाम के अनुरूप कहर बनकर आती है। विशेषकर बैशाख माह में होने के कारण ही इसे काल बैशाखी कहते हैं। गर्मी के दिन में विशेष रूप से काल बैशाखी आती है। काल बैशाखी अपने साथ धूल भरी आँधी, तेज बारिश, कहीं-कहीं ओला वृष्टि और वज्रपात लेकर आती है जिसके कारण तबाही मच जाती है। आँधी-पानी में कई घर व पेड़ क्षतिग्रस्त हो जाते हैं। जान-माल का भारी नुकसान होता है। हर वर्ष कालबैशाखी के दौरान व्रजपात होने से दर्जनों लोग काल के मुँह में समा जाते है। भारतीय मौसम विभाग के वरिष्ठ वैज्ञानिक असित सेन बताते हैं कि सामान्यत: फरवरी माह के अन्त से लेकर मई के पहले पखवाड़े तक काल बैशाखी का असर रहता है। लेकिन इसका सबसे अधिक असर अप्रैल व मई माह में होता है। देश में असम के बाद सबसे अधिक बंगाल में ही काल बैशाखी आती है। चार माह के दौरान औसतन हर वर्ष 15-16 बार काल बैशाखी आती है। वैसे किसी वर्ष इसकी संख्या 10-12 तो किसी वर्ष 22-24 तक भी पहुँच जाती है। वरिष्ठ मौसम वैज्ञानिक सेन ने बताया कि काल बैशाखी को तैयार होने में पाँच से छह घंटा ही समय लगता है। इसलिये 12 से 24 घण्टा पहले ही इसकी भविष्यवाणी की जा सकती है। बहुत पहले से इसकी भविष्यवाणी करना मुश्किल होता है। इसके अध्ययन के लिये आवश्यक मौसम राडार की संख्या जितनी अधिक होगी सूचना उतनी ही सटीक होगी। भारत में वर्तमान में ऐसे 15 राडार हैं। अगले दो वर्षो में इन राडारों की संख्या 55 करने की योजना है। जिससे काल बैशाखी की और सटीक भविष्यवाणी हो सकेगी। काल बैशाखी में बादलों की विशेष भूमिका होती है। बादल पहले रुई की तरह सफेद दिखता है। उसके बाद क्रमश: ग्रे और डार्क कलर का हो जाता है। बादल कम समय में ही तेजी से ऊपर पहुँच जाते हैं। इसके बाद आकाशीय बिजली चमकने लगती है और आँधी के साथ बारिश शुरू हो जाती है। जो अधिकतम एक से डेढ़ घण्टे तक रहती है। इसके बाद मौसम सामान्य हो जाता है।
पलाश विश्वास। लेखक वरिष्ठ पत्रकार, सामाजिक कार्यकर्ता एवं आंदोलनकर्मी हैं। आजीवन संघर्षरत रहना और दुर्बलतम की आवाज बनना ही पलाश विश्वास का परिचय है। हिंदी में पत्रकारिता करते हैं, अंग्रेजी के पॉपुलर ब्लॉगर हैं। "अमेरिका से सावधान "उपन्यास के लेखक। अमर उजाला समेत कई अखबारों से होते हुए अब जनसत्ता कोलकाता में ठिकाना।
सत्तावर्ग भारत राष्ट्र के महाशक्ति बन जाने के गौरवगान से धर्मान्ध राष्ट्रवाद का आह्वान करने से अघाते नहीं हैं। उत्तराखण्ड में हमने बार बार भूकम्प का कहर झेला है। अब तो हिमालय ऊर्जा क्षेत्र बन गयाहै। भारत से लेकर चीन तक बिना द्विपक्षीय वार्तालाप के बड़े बाँधों का सिलसिला बनता जा रहा है। ऊपर से पेड़ों का अंधाधुंध कटान और चिपको आन्दोलन का अवसान। अभी जो 7.8 रेक्टर स्केल का भूकम्प आया वह ईरान से लेकर चीन तक को हिला गया। राजधानी नई दिल्ली और समूचे राजधानी क्षेत्र की नींव हिल गयी। गनीमत यह रही कि भूकम्प का केन्द्र ईरान में था। भारत में जान माल का नुकसान नहीं हुआ। लेकिन सुनामी के दौरान मची व्यापक तबाही से साफ जाहिर है कि समुद्रतटवर्ती इलाके हों या फिर हिमालय क्षेत्र, भारत में जनता को विपर्यय से बचाने की कभी कोई योजना नहीं बनी।
बन भी नहीं सकती क्योंकि इसमें कॉरपोरेट हित आड़े आते हैं। मनुस्मृति अश्वमेध के तहत मुक्त बाजार के वधस्थल पर आर्थिक सुधारों के नाम पर जो नरसंहार संस्कृति के जयघोष में महाशक्ति के प्राणपखेरु है, उसका मुख्य एजेण्डा ही प्रकृति और मनुष्य का सर्वनाश है।
हम तो किसी कालबैशाखी से ही ध्वस्त-विध्वस्त होने के अभिशप्त हैं। भूकम्प तो क्या मामूली भूस्खलन और बाढ़ से ही जानमाल की भारी क्षति यहाँ आम बात है। मृतकों की संख्या गिनने और क्षति का आकलन करने, फिर राहत और बचाव के बहाने लूट मार मचाने के सिवाय इस व्यवस्था में कुछ नहीं होता। पुनर्वास तो होता ही नहीं, एकतरफा बेदखली है। मुआवजा दिया नहीं जाता, अनुग्रह राशि बाँटकर वोट खरीदे जाते हैं। जबकि सबसे ज्यादा और सबसे तेज भूकम्प जापान में आते हैं, अमेरिका के तटवर्ती प्रदेशों में तो तूफान जीवन का अंग ही है। लेकिन वहाँ इतने व्यापक पैमाने पर जान माल की क्षति नहीं होती।
दोनों देश पूँजीवादी हैं और वहाँ भी कॉरपोरेट वर्चस्व है। पर विकास गाथा के लिये वे पर्यावरण की तिलांजलि नहीं देते। जापान की पूरी सामाजिक आर्थिक व्यवस्था को ही भूकम्प रोधक बना लिया गया है।
जीआईसी नैनीताल के हमारे आदरणीय गुरुजी ताराचन्द्र त्रिपाठी ने अपनी जापान और अमेरिका यात्रा पर लिखी पुस्तकों में इस पहेली को सम्बोधित किया है। उनके मुताबिक सबसे ज्यादा कारों का उत्पादन करने वाले जापान में तेल की खपत नग्ण्य है। वहाँ प्रधानमन्त्री तक साइकिल से दफ्तर आते जाते हैं।
पर्यावरण चेतना के बिना कॉरपोरेट विकास भी असम्भव है, इसे साबित करने के लिये जापान का उदाहरण काफी है। दूध दुहने के लिये दुधारु पशु की हत्या भारतीय अर्थव्यवस्था का चरित्र है। प्रकृति और प्रकृति से जुड़े समुदायों के सर्वनाश से कब तक प्राकृतिक संसाधनों का दोहन संभव है, इसपर हमारे शासक कॉरपोरेट अर्थशास्त्री समुदाय तनिक भी नहीं सोचते।
जहाँ अकूत प्राकृतिक सम्पदायें हैं, उन्हें राजमार्गों और रेलवे, पुलों के जरिये बाजार से जोड़ना हमारे यहाँ विकास का पर्याय है और इसके लिये विस्थापन अनिवार्य है। विपर्यय मुकाबले का यह आलम है कि बंगाल में ही पद्मा के कटाव से बचाव के लिये बेहद जरूरी तटबंधों के निर्मम का काम हमेशा अधूरा रहता है। सुन्दरवन इलाकों में नदी तटबंध अभी बने नहीं है, पर पर्यटन के लिये सुन्दरवन के कोर इलाके तक कोलने के चाक चौबन्द इन्तजामात हैं। आयला पीड़ित इलाकों में भी तटबंध का काम शुरु ही नहीं हो पा रहा है।
अमेरिका महज कॉरपरेट साम्राज्यवाद के लिये कोई महाशक्ति नहीं है, विपर्यय मुकाबले के अपने इन्तजाम और अपने नागरिकों की जनमाल की सुरक्षा की गारंटी के लिये उसकी यह हैसियत है। विपर्यय मुकाबले में हम कहाँ हैं, यह शायद बताने की नहीं, महसूस करने की बात है। लेकिन देश के नागरिकों की ऐसी तैसी करने में इस देश की व्यवस्था का क्या खाक मुकाबला करेगा अमेरिका या जापान!
दुनिया भर में भारत बेचना की मुहिम पर निकले केन्द्रीय वित्त मन्त्री पी. चिदम्बरम ने अमेरिकी निवेशकों को आकर्षित करने की कोशिश में कहा है कि विदेशी पूँजी भारत में सर्वाधिक सुरक्षित है और भारत में प्रत्यक्ष विदेशी निवेश (एफडीआई) हासिल करने के लिये सभी जरूरी तत्व मौजूद हैं। हावर्ड विश्वविद्यालय के छात्रों और शिक्षकों को सम्बोधित करते हुये चिदम्बरम ने कहा, निवेश सुरक्षा की सर्वाधिक गारंटी है स्थिर और लोकतान्त्रिक राजनीतिक संरचना। मैं कानून का शासन, पारदर्शिता और स्वतन्त्र न्यायपालिका में भरोसा करता हूँ। भारत में ये तीनों मौजूद हैं। 'अबाध पूँजी प्रवाह और काले धन की अर्थव्यवस्था जिसे मुक्त बाजार कहा जाता है, उनकी अनिवार्य शर्त है निवेशकों को प्राकृतिक संसाधनों की खुली छूट दे दी जाये। भारत में विकास के नाम पर बेदखली की कथा व्यथा के मूल में ही यही है।
प्राकृतिक संसाधनों पर जनता के हक हकूक के लिये संवैधानिक रक्षा कवच हमारे पास हैं, पर सात दशक बीतते चलने के बावजूद संविधान लागू ही नहीं हुआ और असंवैधानिक तरीके से बायोमैट्रिक नागरिकता और वित्तीय कानूनों के जरिये उत्पादन प्रणाली को तहस नहस करके, आम जनता के जीवन और आजीविका का बाजा बजाते हुये नागरिक और मानव अधिकारों की धज्जियाँ उड़ाते हुये विकास गाथा का जयगान अब राष्ट्रगान है और हम सभी सावधान की मुद्रा में तटस्थ हैं।
नस्ली भेदभाव के तहत जो जाति व्यवस्था है, जो भौगोलिक अलगाव है, वह प्राकृतिक संसाधनों पर दखल के लिये एकाधिकारवादी वर्चस्ववादी सतत आक्रमण है। भारत के विश्वव्यवस्था के उपनिवेश बन जाने के बाद यह आक्रमण निरन्तर तेज होता जा रहा है। राष्ट्र के सैन्यीकरण का मकसद अन्ततः प्राकृतिक संसाधनों पर कॉरपोरेट कब्जा हासिल करना है।
पाँचवीं और छठी अनुसूचियों को लागू किये बिना, मौलिक अधिकारों की तिलांजलि देकर सविधान की धारा 39 बी और 39 सी के खुल्ला उल्लंघन के जरिये यह आईपीएल पहले से जारी है लेकिन जनता के प्रतिरोध के सिलसिले को तोड़ने के लिहाज से कानून बदले जा रहे हैं। मसलन, अभी सुधार के एजेण्डे के लिये सर्वोच्च प्राथमिकता यह है कि पर्यावरण कानून के तहत लम्बित परियोजनाओं को फिर चालू करना। सारी सत्ता की लड़ाई इस पर केन्द्रित है कि कॉरपोरेट हितों को सबसे बेहतर कौन साध सकता है। कॉरपोरेट चन्दा वैध कर दिये जाने के बाद अराजनीतिक सामाजिक कार्यकर्ता और बहुजन आन्दोलन के लोग भी इस तस्करी में बड़े पैमाने पर शामिल हैं।
राजनीतिक अखाडा़ कॉरपोरेट अखाड़े में तब्दील है, जनता के बीच जाने के बजाय राजनेता कॉरपोरेट आयोजन के जरिये कॉरपोरेट मीडिया के जनविरोधी उद्यम और जनादेश इंजीनियरिंग के जरिये अपने-अपने प्रधानमन्त्रित्व के दावे पेश कर रहे हैं।
जनता को साधने के लिये धर्मान्ध राष्ट्रवाद पर्याप्त है, लेकिन कॉरपोरेट को साधने के लिये वधस्थल की मशीनरी दुरुस्त करना ज्यादा जरूरी है।
मजे की बात है कि समाजकर्म से जुड़े प्रतिबद्द जन वैसे तो वैज्ञानिक पद्धति के जरिये तर्कसंगत विचारधाराओं और सिद्धान्तों की बात करते हैं लेकिन उनकी सारी कवायद इतिहास की निरंतरता जारी रखने की है।
हाशिये पर रखे भूगोल की ओर, भौगोलिक अलगाव की ओर ध्यान ही नहीं जाता, जिसके लिये प्रकृति और पर्यावरण से तादात्म और तत्सम्बंधी चेतना अनिवार्य है। इस महादेश में कॉरपोरेट राज स्थापना के पीछे इस पर्यावरण चेतना का सर्वथा अभाव सबसे बड़ा कारण है।
सामाजिक कार्यकर्ता को पर्यावरण कार्यकर्ता भी होना चाहिये, ऐसा हम सोच भी नहीं सकते और बड़ी आसानी से पहले राजनीतिक कार्यकर्ता और फिर कॉरपोरेट राज के एजेन्ट, दलाल और प्रतिनिधि बन जाते हैं। विचारधाराओं और सिद्धान्तों के अप्रासंगिक बन जाने के समाज वास्तव की वास्तविक पृष्ठभूमि किन्तु यही है।
जब विकास कार्यक्रम और कानून का राज, दोनों बेदखली और लूटखसोट पर टिका हो तब विपर्यय मुकाबले का प्रस्थान बिन्दु कहाँ बन पाता है! कानून के राज का आलम यह है कि कैंसर पीड़ित अल्पसंख्यक महिला को कानून कोई मोहलत नहीं देता,पर समान अपराध के लिये अभियुक्त के साथ खड़े हो जाते हैं राजनेता से लेकर न्यायाधीश तक, क्योंकि उस पर निवेशकों का दाँव लगा है। इस प्रणाली में इरोम शर्मिला, सोनी सोरी या जेल में बन्द तमाम माताओं और उनके साथ कैद बच्चों के मौलिक अधिकारों की हम परवाह करें तो क्यों करें?
प्रकृति से जुड़े तमाम समुदाय यहाँ तक कि इस देश के बहुसंख्यक किसान और कृषि आधारित नैसर्गिक आजीविका से जुड़े लोग बाजार में खड़े नहीं हो सकते। या तो वे आत्महत्या कर सकते हैं या फिर प्रतिरोध। धर्म-कर्म और संस्कृति में प्रकृति की उपासना की परम्परा ढोते हुये भी हमारे लिये प्रकृति जड़ है।
हम धार्मिक हवाला दकर पवित्रता के बहान नदियों के अबाध प्रवाह की माँग लेकर मगरमच्छी अनुष्ठान तो कर सकते हैं, पर उस प्रकृति से जुड़े समुदायों की हितों के बारे में सोच भी नहीं सकते।
इसलिये जहाँ देवभूमि है, देवताओं का शासन चलता है, उस हिमालयी क्षेत्र में मनुष्य के हित गौण हैं। वहाँ पर्यटन और धार्मिक पर्यटन, विकास और धर्म एकाकार हैं। जबकि कॉरपोरेट धर्म और कॉरपोरेट राज में अब कोई मूलभूत अन्तर नहीं रह गया है। धर्म भी जायनवादी तो कॉरपोरेट राज भी जायनवादी। इसलिये हिमालयी क्षेत्र में किसी प्रतिरोध आन्दोलन का जनाधार बन ही नहीं पाया, वहाँ भी बहुजन संस्कृति के मुताबिक अस्मिता और पहचान पर सब कुछ खत्म है।
बहुजनों में प्रकृति और पर्यावरण चेतना होती तो आज समूचा हिमालय, मध्य भारत और पूर्वोत्तर अलगाव में नहीं होते और आदिवासी भी देश की मुख्यधारा में शामिल होते। इसी वजह से आदिवासियों की सरना धर्म कोड की माँग लेकर, मौलिक अधिकारों, पाँचवीं, छठीं अनुसूचियों को लागू करने की माँग लेकर संविधान बचाव आन्दोलन का तात्पर्य समझना हमारे लिये मुश्किल ही नहीं नामुमकिन है। मुख्य एजेण्डा ही प्रकृति और मनुष्य के सर्वनाश का है तो विपर्यय मुकाबले की तैयारी कैसी?
আমাদের অবহেলা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা আর লোভ-লালসার শিকার হয়ে পৃথিবীর অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ সুন্দরবনের এখন বিপর্যস্ত অবস্থা। সর্বশেষ খবর হলো, এই বনের পরিবেশের ওপর এবার বড় ধরনের আঘাত এসেছে একটি সরকারি সংস্থার দিক থেকে। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) কীভাবে সুন্দরবনের ইকোসিস্টেমের ক্ষতির কারণ ঘটাচ্ছে, বিবরণ পাওয়া যাবে গত বুধবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে। জেলে ও পর্যটকদের কারণেও সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও প্রতিবেশ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএ সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে যে নৌপথ চালু করেছে, সেই পথে প্রতিদিন চলাচল করছে এক শ থেকে দেড় শ ভারী নৌযান: তেল ট্যাংকার, পণ্যবাহী কার্গো ও যাত্রীবাহী জাহাজ। মংলা বন্দর থেকে বঙ্গোপসাগরে যাওয়া-আসার এই পথেই রয়েছে বাঘ ও হরিণের বিচরণের এলাকা, অনন্য প্রজাতির ডলফিনের অভয়াশ্রম। এ নৌপথ বিআইডব্লিউটিএ চালু করেছে আইন লঙ্ঘন করে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে একাধিকবার চিঠি দিয়ে নৌপথটি বন্ধ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এমনকি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নৌপথটি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন কিন্তু সুফল মেলেনি। বরং এই নৌপথে নৌযান চলাচল আরও বেড়েছে। গত বছর প্রতিদিন চলাচল করত গড়ে ২৫টি নৌযান, আর এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ১৩০। এক বছর আগেই বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সুন্দরবনের ভেতরের নৌপথটি দিয়ে যেভাবে ভারী নৌযান চলাচল করছে, তার ফলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও প্রতিবেশ ধ্বংস হতে পারে।
মংলা বন্দর ও বঙ্গোপসাগরের মধ্যে চলাচলের আগের নৌপথটি ছিল সুন্দরবনের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ঘসিয়াখালী খাল। খালটির নাব্যতা কমে যাওয়ায় বিকল্প হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে সুন্দরবনের একদম ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া পশুর নদকে। এই নদ দিয়ে যান্ত্রিক শব্দ তুলে, হর্ন বাজিয়ে চলাচল করছে ভারী ভারী নৌযান—বনের জীবকুলকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে। বনের ভেতরেই কোথাও কোথাও নোঙর ফেলছে বড় বড় জাহাজ। বন আইন, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন—কোনো কিছুরই যেন অর্থ নেই।
এভাবে আর চলতে দেওয়া উচিত নয়। সুন্দরবনের প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি অবিলম্বে বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। সে জন্য যত দ্রুত সম্ভব ঘসিয়াখালী খাল খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। আর সে সময় পর্যন্ত নৌযান চলাচলের অন্য বিকল্প পথ বেছে নেওয়া উচিত; এ বিষয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ দেওয়াই আছে, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ যা মানছে না।
সুন্দরবনের এই সমস্যার মধ্য দিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বোঝাপড়া এবং কাজের সমন্বয়ের অভাব ফুটে উঠেছে। আরও অনেক সমস্যা আছে এবং ভবিষ্যতে অনেক সমস্যার উদ্ভব ঘটবে। সে জন্য সুন্দরবনের সার্বিক ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনার কথা ভাবা প্রয়োজন, যে ব্যবস্থাপনা-কাঠামোতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ছাড়াও বিশেষজ্ঞরা থাকবেন।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-12-22/news/315049
প্রেমটা যদিও একেবারে নতুন নয়, তবুও দু`জনের চরম ব্যস্ততা জীবন থেকে ভালবাসার সময়টুকু নির্মম ভাবে কেড়ে নিয়েছে। হাতের কাছে যখন হঠাৎ পাওয়া ছুটিটাকে এবার আর বৃথা যেতে দেবেন না। সময়ের প্রতিটা মুহূর্তকে আরও গভীর করে তোলার জন্য সুন্দরবন হতেই পারে পারফেক্ট ডেসটিনেশন।
সুন্দরবনঃ পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ, ম্যানগ্রোভ অরণ্যের সুন্দরী সুন্দরবন। কলকাতার খুব কাছে ভারতের মাত্র দুটি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের অন্যতম সুন্দরবনে `বাঘে-মানুষে`-এর মিলিত অবস্থান। স্থলে বাঘ আর জলে কুমীর নিয়ে সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া, হিজলের বনের গর্বিত অবস্থান। সঙ্গে রয়েছে হরিণ, কাঁকড়া, মাড স্কিপারের ঝাঁক। ছোট্ট দ্বীপ গুলোর মাঝের ছোট্ট ছোট্ট সংকীর্ণ খাঁড়ি গুলো নদীর সঙ্গে এই জঙ্গলের গোপন প্রেমের হদিশ দিয়ে যায়। প্রেমের ছুটির ফাঁকে নিজেদের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা জংলী প্রেমকে নতুন করে আবিষ্কার করার জন্য সুন্দরবনের থেকে সুন্দর ডেস্টিনেশন আর কিছু হতেই পারে না। অরণ্যের নিঝুম রাত্রির নিস্তব্ধতা ভেদ করা কোন `না-মানুষী` চিৎকার সমস্ত জাগতিক প্রেমকেই এক বিন্দুতে নিয়ে আসে।
http://zeenews.india.com/bengali/valentines-day/sundarbans_11237.html
প্রাকৃতিক দুর্যোগ সিডর ও আইলা প্রাকৃতিকভাবেই মোকাবিলা করেছে সুন্দরবন। সব ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে জীববৈচিত্র্যের জন্য নিজেকে সাজিয়েছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এই শ্বাসমূলীয় বনটি। কিন্তু এবার বনটির পরিবেশগতভাবে স্পর্শকাতর একটি অংশ পড়েছে মানুষের হাতে। সরাসরি বললে, নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের কবলে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) মাস পাঁচেক আগে উত্তর-পূর্ব সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে একটি নৌ-রুট চালু করেছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০ কিলোমিটার। এখন প্রতিদিন এই পথে ২৫ থেকে ৩০টি তেলবাহী ট্যাংকার ও মালবাহী কার্গো চলাচল করছে।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় বলছে, বনের এই অংশটির কয়েকটি এলাকা বাঘ, হরিণ এবং সংশ্লিষ্ট নদী ডলফিনের বিচরণক্ষেত্র। তাই তারা এই পথে জাহাজ চলাচল বন্ধের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে।
নৌপরিবহন অধিদপ্তর এবং বন্দরসংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের পূর্ব পাশ (বনের বাইরে) দিয়ে ঘাসিয়াখালী খাল ধরে মংলা-বরিশাল-চট্টগ্রাম রুট। কিন্তু ঘাসিয়াখালী খালে পলি জমায় সম্প্রতি এ রুটের জাহাজগুলোকে বনের ভেতর দিয়ে সরাসরি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু এর জন্য বন বিভাগের কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি।
বন আইন ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, সুন্দরবনের ভেতরের নদীগুলোতে প্রবেশ করতে বন বিভাগের অনুমতি নিতে হয়। সেখানে ভারী নৌযান চলাচলও নিষিদ্ধ। এই অবস্থায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় বিআইডব্লিউটিএকে একাধিকবার এবং সরাসরি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে এই রুট বন্ধের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছে।
বন মন্ত্রণালয়ের চিঠি থেকে জানা যায়, তারা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে রায়েন্দা-শাপলা-হরিণটানা-চাঁদপাই হয়ে নৌযান চলাচলের পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু সুন্দরবনের ভেতরের সন্ন্যাসী-রায়েন্দা-বগী-শরণখোলা-দুধমুখী-হরিণটানা-আন্ধারমানিক-মুগমারী-চাঁদপাই-জয়মণিরগোল হয়েই চলাচল করছে জাহাজগুলো।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, এসব নৌযান থেকে নিঃসৃত তেল ও বর্জ্য সুন্দরবনের ভেতরে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে বিশ্ব-ঐতিহ্যের গৌরব বহনকারী এই বনটির মাটি ও পানি দূষিত হয়ে পড়ছে। দ্রুতগতির এই ভারী যানগুলো চলার সময় সৃষ্ট বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে পাড়ের নরম মাটিতে। এতে ভাঙছে পাড়। জাহাজের শব্দ আতঙ্কিত করে তুলছে অভয়ারণ্যের বন্য প্রাণীগুলোকে।
প্রধান বন সংরক্ষক ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সুন্দরবনের ভেতরে বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল বা কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ। কিন্তু তেলবাহী ট্যাংকার ও মালবাহী কার্গোগুলো বিআইডব্লিউটিএর অনুমতি নিয়েই সুন্দরবনের পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল এলাকাগুলো দিয়ে চলাচল করছে। বিষয়টি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে, কিন্তু তারা এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান সামসুদ্দোহা এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, বঙ্গোপসাগর দিয়ে মংলার দিকে আসা নৌযানগুলো ঘাসিয়াখালী খাল দিয়ে যাতায়াত করত। খালটি পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌযানগুলোকে চলাচল করতে বলা হয়েছে। এতে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে স্বীকার করে তিনি বলেন, 'খুব শিগগির আমি ওই এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছি। ঘুরে এসে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।'
বর্তমানে ব্যবহূত সন্ন্যাসী-রায়েন্দা-বগী-শরণখোলা-দুধমুখী-হরিণটানা-আন্ধারমানিক-মুগমারী-চাঁদপাই-জয়মণিরগোল রুটটির হরিণটানা, বগী, চাঁদপাই, জয়মণিরগোল এলাকাটি হরিণ ও রয়েল বেঙ্গল টাইগারের অন্যতম বিচরণক্ষেত্র। এটি এমন একটি এলাকা, যেটি পৃথিবীর সবচেয়ে কম জায়গায় সবচেয়ে বেশি রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিচরণের জন্য বিখ্যাত।
এই রুটের দুধমুখী, রায়েন্দা ও সন্ন্যাসী এলাকাটি গাঙ্গেয়, ইরাবতীসহ চার ধরনের ডলফিনের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিচরণক্ষেত্র। সরকার এই স্থানটি ডলফিনের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এর ভেতর দিয়েই এখন জাহাজ চালানো হচ্ছে।
গত ২১ আগস্ট পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে বন বিভাগ জানায়, তেল ট্যাংকার ও মালবাহী কার্গোগুলো সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় হাইড্রোলিক হর্ন বাজাচ্ছে। এতে হরিণসহ দুর্লভ প্রাণীর দল দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করছে। তাদের স্বাভাবিক খাদ্য গ্রহণ ও জীবনযাত্রায় বিঘ্ন ঘটছে।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, তেল ট্যাংকার ও মালবাহী কার্গো সুন্দরবনের ছোট খাল ও নদীতে চলাচল করায় উঁচু ঢেউ তৈরি হচ্ছে। এতে বনের খাল ও নদীর দুই পাড়ে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এতে শরণখোলা ও বগী বন ফাঁড়ির বেশির ভাগ স্থাপনা দ্রুত নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।
বন বিভাগ চিঠিতে বলেছে, তেলবাহী ট্যাংকারগুলো থেকে নিঃসৃত তেল ও বর্জ্য সুন্দরবনের পানি ও মাটি দূষিত করে তুলছে। এতে বনের বিপুলসংখ্যক প্রাণী ও উদ্ভিদ বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বড় বড় নৌযান চলাচল করায় সুন্দরবন এলাকার জেলেরা নদীতে জালও ফেলতে পারছেন না।
এরপর পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কাছে এ ব্যাপারে লিখিত আপত্তি জানায়।
নিউইয়র্কভিত্তিক সংগঠন ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটি (ডব্লিউএসসি) সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে যাতায়াতকারী নৌযানগুলোর ওপর একটি প্রাথমিক সমীক্ষা চালিয়েছে। তাতে দেখা গেছে, ছয় মাস ধরে তেল ট্যাংকারগুলো ঘণ্টায় ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার বেগে, কার্গো ১৫ থেকে ২৫, বিদেশি জাহাজ ২০ থেকে ৩০ এবং স্পিডবোট ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে চলাচল করছে। এই যাতায়াতের ফলে সেলা, পশুর নদ ও ঢাংমারী খালের পার্শ্ববর্তী সুন্দরবনে ২ থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত ভেঙে গেছে। বন্য প্রাণীর বিচরণ ও খাদ্য গ্রহণে সমস্যা হচ্ছে বলে সংস্থাটির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে।
বাংলাদেশ বন্য প্রাণী ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী আনোয়ারুল ইসলাম সুন্দরবনের স্বার্থে নৌযানগুলোকে কিছুটা ঘুরে হলেও বিকল্প পথ দিয়ে যাতায়াতের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, সুন্দরবনের প্রতিবেশব্যবস্থা খুবই ভঙ্গুর ও সংবেদনশীল। তাই তেল বা অন্য কোনো বর্জ্য বেশি পরিমাণে জমা হলে বনের এমন ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে, যা আর কখনো পোষানো যাবে না।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-11-23/news/203139
"বিষাক্ত থাবার নিচে আমাদের পরিবেশ, আমাদের সুন্দরবন"
লিখেছেনঃ সৌরদীপ
.
" যখন ছোট ছিলাম, বাসায় অনেকগুলো বিড়াল ছিল। তাই খুব ছোট থেকেই বিড়ালের প্রতি একটা বিশেষ অনুভূতি কাজ করত। শুধু বিড়াল না, অন্য পশুপাখিদের প্রতিও একটা বিশেষ টান ছিল। ছোট থাকতেই বাসা থেকে জেনেছি বিভিন্ন পশুপাখি সম্পর্কে, গাছপালা সম্পর্কে। ডিসকভারি-ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে অনুষ্ঠানগুলো দেখতাম, ইংরেজি ভালোমতো না বুঝলেও শুধু গাছপালা-পশুপাখিগুলোকেই অনেক আগ্রহের সাথে দেখতাম। একটু বড় হয়ে এ বিষয়ে অনেক বই পড়েছি, পরিবেশ সম্পর্কে ভালোমতো জানতে চেষ্টা করেছি।
খুব ছোট থেকেই একটা জিনিস দেখে আসছি – আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ পরিবেশের ব্যপারে একদমই চিন্তা করে না। "পশুপাখি দিয়ে হবে টা কী" – এ রকম চিন্তার মানুষ অনেক দেখেছি। প্রায়ই দেখি এলাকার রাস্তায় থাকা কুকুরগুলোর গায়ে কে বা কারা গরম পানি ঢেলে দিয়েছে, বা কোন কিছু দিয়ে ছ্যাকা দিয়েছে, বিড়ালগুলোর দিকে ছোট ছোট বাচ্চারা ঢিল ছুঁড়ছে আর খুব ব্যপারটা খুব উপভোগ করছে, পাখি বলতে তো কাক ছাড়া তেমন কিছুই চোখে পড়েনা, সেগুলোও রেহাই পায় না ঢিলের হাত থেকে। গাছপালার ব্যপারে এদেশের মানুষ আরও একধাপ এগিয়ে – কোথাকার জমির গাছ কেটে সেটা বিক্রি করা যায়, সেখানে কত বড় দালান বানানো যায়, এসব পরিকল্পনা আর তার বাস্তবায়ন তো চলছেই। ছোট থেকেই টেক্সটবইগুলোতে আমাদের শিক্ষা দেয় প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ কেন প্রয়োজন, কীভাবে পরিবেশ রক্ষা করতে হয়। আফসোস; এই শিক্ষা কেবল পরীক্ষার খাতায় ভালো নম্বর পাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সমস্যাটা হলো, পরিবার থেকে যদি এ শিক্ষা না দেওয়া হয়, বাস্তবে এর প্রয়োগ আশা করা উচিত না। ছোটকালে 'ব্যাম্বি'র গল্প আমরা পড়েছি, সেখানে দেখানো হয়েছে বনের পশুপাখিদের উপর মানুষের তান্ডবের ঘটনা। আমরা খালি গল্পটা পড়েছি, বাস্তবে এর থেকে শিক্ষা নিতে পারি নি। এর শিক্ষা গ্রহণ করার মতো ক্ষমতা একটা শিশুর সরল মস্তিষ্কে থাকলেও আমাদের সমাজ ধীরে ধীরে তা নষ্ট করে দেয়। এদেশের মানুষের দরকার অর্থ-বিত্ত, পরিবেশ দিয়ে হবে টা কী! মাঝে মাঝে দেখি স্কুলগুলোতে বৃক্ষরোপন কর্মসূচি হয়, সরকারিভাবে বিভিন্ন স্থানে বৃক্ষরোপন হয়, পত্রিকা-টিভি চ্যানেলে সেগুলোর ছবি দেখানো হয়, কিন্তু যে সময় একটা গাছ লাগানো হয়, সে সময়েই তার পিছে কতগুলো গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে, তা আড়ালেই থেকে যায়।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারনে যেসব দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুকির মুখে রয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। একে তো এই সমস্যা, এর মধ্যে আমাদের দেশে বনভূমির পরিমানও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। পরিবেশ রক্ষা করতে চাইলে বনভূমি রক্ষা কতটা প্রয়োজন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশের বনের কথা বললে সবার আগে আসে সুন্দরবনের কথা। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ একক ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল আর প্রাকৃতিক বৈচিত্রের কারনে সারাবিশ্বে এ বন পরিচিত। বেশ কিছুদিন আগেও প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনের সময় এদেশে সরকারের মধ্যে, মানুষের মুখে সুন্দরবন নিয়ে অনেক কথা শোনা যাচ্ছিল। পরিবেশগত দিক দিয়ে সুন্দরবন যেমন আমাদের দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, পর্যটনখাতেও এর গুরুত্ব অনেক। কিন্তু বন আছে বলেই শুধু অহংকার করলেই তো হবে না, একে সংরক্ষণের জন্যও অনেক কিছু করা দরকার। সে ব্যপারে আমাদের সরকার বা মানুষেরা কতটা সচেতন? আজ একটা জিনিস দেখে মন খারাপ হয়ে গেল। সুন্দরবনের কাছে ১৩২০ মেগাওয়াটের(২x৬৬০) কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সরকার ভারতের সঙ্গে চুক্তি করেছে। আমার স্বল্পজ্ঞানে আমি যতটুক বুঝি, একটা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশে অনেক দূষণ করতে পারে, বনের পাশে এটা করা হলে এটা বনভূমির ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। বিশ্বে বিদ্যুৎশক্তির শতকরা ৪১% উৎপাদিত হয় কয়লা থেকে, এর মধ্যে একটি ৫০০ মেগাওয়াটের কেন্দ্র থেকে প্রতি বছর প্রায় ৩৭ লক্ষ টন কার্বন-ডাইঅক্সাইড, ১০ হাজার টন সালফার ডাইঅক্সাইড, ৭২০ টন কার্বন মনোক্সাইডসহ আরো অনেক দূষনকারি পদার্থ নির্গত হচ্ছে [সূত্রঃ The Union of Concerned Scientists]। উন্নত দেশসমূহের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো লোকালয় বা বনভূমি থেকে দূরে কোন স্থানে করা হয় যেন তার দূষণের প্রভাব কম হয়, আর সেখানে আমাদের দেশের প্রধান বন থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে এ কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে! এমনিতেই আমাদের বনভূমির পরিমান কমছে, পরিবেশের বারোটা বেজেই চলছে। পরিবেশ দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, বৃক্ষনিধন ইত্যাদি কারণে সুন্দরবন ধবংসের মুখে, তার উপর এরকম একটা সিদ্ধান্ত কীরূপ প্রভাব ফেলবে, তা রীতিমত চিন্তার বিষয়। ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বিপুল পরিমান পানি প্রয়োজন। পশুর নদী থেকে ঘন্টায় প্রায় ২৪/২৫ হাজার ঘনমিটার হারে পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রে নেওয়া হলে নদীর উপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর সেচ কাজে সমস্যা, জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণির জীবনধারণে সমস্যা দেখা দেবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত দূষিত পানি নদীতে মিশে পশুর নদীর পানি দূষিত করবে, যার প্রভাব পড়বে সুন্দরবনের জীবকূলের উপর।
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ার ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়ার পর থেকে কেন্দ্রের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি টেনে নেওয়া হচ্ছে, যার ফলে এলাকাবাসীরা পানি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখতে প্রতিদিন কয়লা জ্বালাতে হয় ২.৪ হাজার টন, যা থেকে প্রতিদিন ৩০০ টন ছাই জমা হচ্ছে [সূত্রঃ প্রথম আলো,০৫.১২.২০১০]। এ হিসাব অনুযায়ী, সুন্দরবনের পাশে বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সেখানে বছরে প্রায় ৭০ লক্ষ টন কয়লা জ্বালানি হিসেবে ব্যাবহ্রত হলে ৩০ লক্ষ টন ছাই বর্জ্য উৎপাদিত হবে। এখন প্রশ্ন আসে ছাই ব্যাবস্থাপনার; বর্জ্য ছাই সঠিকভাবে রাখা না হলে তা থেকে বিষাক্ত ধাতব উপাদান মাটি ও পানির মারাত্বক দূষণ ঘটাতে পারে। বড়পুকুরিয়া বিদ্যুতকেন্দ্রের সন্নিকটে দেখা যায় যে, বর্জ্য মিশ্রিত দূষিত কালো পানি চারপাশের কৃষিজমিতে মিশে যাচ্ছে। কৃষিজমিগুলোর রং-ই পরিবর্তন হয়ে কালচে হয়ে গেছে এবং মাটির উর্বরতা হ্রাস পেয়েছে। একই ঘটনা যদি সুন্দরবনের ক্ষেত্রেও ঘটে, পরিবেশের কী অবস্থা হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমাদের দেশে বিদ্যুৎসমস্যা নিঃসন্দেহে অনেক বড় সমস্যা, এজন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পরিবেশের কম ক্ষতি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে যে প্রযুক্তি ও সম্পদ প্রয়োজন, তা আমাদের দেশে নেই। এজন্য প্রতি বছর অন্য দেশ থেকে পেট্রোলিয়াম ক্রয় করে উৎপাদন, অথবা বিদ্যুৎ ক্রয় করা হচ্ছে, যা অত্যান্ত ব্যয়বহুল। এজন্য নিজেদের দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানীর উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে, প্রাকৃতিক গ্যাসও দিন দিন অনেক কমে আসছে, এজন্য দূষণ হলেও জ্বালানি হিসেবে কয়লার ব্যবহার ছাড়া তেমন কোন উপায় নেই। কিন্তু তাই বলে কি অন্য কোথাও এ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা যেত না, বেঁছে ঠিক সুন্দরবনের পাশেই নিতে হলো??? কিছুদিন আগেও জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের ভূমিকা প্রশংসনীয় ছিল, আর সেই দেশেই ভূমিকার সাথে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী একটা প্রকল্প বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে! অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, সুলতানা কামাল, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ সহ ১২ জন বিশিষ্ট নাগরিক রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ বাতিলের আহ্বান জানিয়ে শুক্রবার এক বিবৃতি দিয়েছেন। এদেশের আরো কত মানুষ রয়েছে, এ প্রতিবাদে তাদেরও অংশ নিতে হবে। আমাদের দেশের মানুষের পরিবেশ সম্পর্কে অসচেতনতার কথা আগেই লিখেছি, তবু অন্তত সুন্দরবনকে দেশের সম্পদ মনে করে যেন তারা এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপক্ষে অবস্থান নেয়, সেটুক আশা করি। তবে এই প্রতিবাদ যেন শুধু পরিবেশ রক্ষার জন্য প্রতিবাদ হয়।
এ লেখাটির উদ্দেশ্য শুধু সুন্দরবন রক্ষার জন্য নয়, সমগ্র পরিবেশ রক্ষার জন্য। আজ সুন্দরবনের পাশে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়ায় ব্যপারটি সবাইকে নাড়া দিয়েছে, কিন্তু প্রতিদিন আমাদের চারপাশে যে ভাবে গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে, সে ব্যপারে কতজন সচেতন? আমাদের দেশের গাছপালা কমছে, কমছে পশুপাখিদের থাকার স্থানও। বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা-পশুপাখি দিন-দিন কমছে। তার উপর পশুপাখিগুলো হচ্ছে মানুষের অত্যাচারের শিকার। মানুষই পৃথিবীতে সব নয়, এই পশুপাখিগুলোরও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। সবার কাছে অনুরোধ, প্লিজ, ওদের বাঁচার সুযোগ দিন, সুযোগ দিন যেন ওরাও স্বাভাবিকভাবে থাকতে পারে। বর্তমানে অনেক উদ্ভিদ-প্রাণি বিলুপ্তপ্রায়, পরিবেশরক্ষার স্বার্থে অন্তত এগুলোকে রক্ষা করুন। "
http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=22487
সূত্র জানায়, সুন্দরবনে পর্যটন বাবদ বর্তমানে বছরে এক কোটি টাকা আয় হয়। প্রাথমিকভাবে এই টাকার অর্ধেক গ্রামবাসীকে দেওয়া হবে। বনের মধু ও গোলপাতা আহরণের মাধ্যমে যে ছয় থেকে সাত কোটি টাকা আসে, শিগগিরই তারও অর্ধেক গ্রামবাসীকে দেওয়া হবে। অর্থ বিভাগের কাছ থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় অনুমতিও নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার মানুষের এই বনের সম্পদের ওপর কোনো আইনগত অংশীদারি নেই। অথচ এসব মানুষের একটি অংশ বনের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে বন বিভাগের জনবল কম হওয়ায় সুন্দরবন রক্ষা তাদের পক্ষে দুরূহ হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ আবার অসাধু চক্রের সঙ্গে মিলে বেআইনিভাবে বনের বিভিন্ন সম্পদ চুরিতে জড়িয়ে পড়ছে।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পটুয়াখালী জেলার ছয়টি উপজেলার ১৯টি ইউনিয়নের দুই লাখ ২৭ হাজার ৭২৭ জন অধিবাসীকে বন সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হবে। প্রতিটি গ্রামে আট থেকে ১০ জনের একটি যৌথ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হবে। গ্রামের প্রতিটি দরিদ্র পরিবার থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ওই কমিটির সদস্য করা হবে। বন বিভাগ এসব কমিটির কাজ তদারক করবে।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব মিহির কান্তি মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, বনজীবীদের দিয়ে বন রক্ষা করার এ ধরনের উদ্যোগ বিশ্বের অন্য কয়েকটি দেশে সফল হয়েছে। সুন্দরবনসংলগ্ন গ্রামের মানুষ সফলভাবে বন রক্ষা করলে বন থেকে আসা রাজস্বের অর্ধেক তাদের দেওয়া হবে। এ ছাড়া সামাজিক বনায়নের জন্য তাদের জমিও (প্লট) দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, বন রক্ষা করতে গিয়ে কোনো গ্রামবাসী ডাকাত ও বণ্য প্রাণীর হাতে মারা পড়লে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য একটি নীতিমালাও তৈরি হচ্ছে।
গ্রামবাসী মূলত সুন্দরবনের ভেতরে কোনো গাছ চুরি, বণ্য প্রাণী হত্যা বা পাচারের ঘটনা সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করবে। বন প্রহরীদের সঙ্গে টহলেও তারা যোগ দেবে, তবে তাদের হাতে কোনো অস্ত্র দেওয়া হবে না। কোন দিন ব্যবস্থাপনা কমিটির কোন সদস্য এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হবে, তা গ্রামবাসীই ঠিক করবে।
সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (সেড) পরিচালক ফিলিপ গাইন প্রথম আলোকে বলেন, বনজীবীদের সম্পৃক্ত করার এ ধরনের উদ্যোগ ইতিবাচক। তবে বন বিভাগের দুর্নীতি কমাতে না পারলে এই উদ্যোগ সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। তিনি বলেন, সুন্দরবনের খুলনা ও সাতক্ষীরা অংশের অনেক জমি চিংড়ি চাষিদের দখলে। বাণিজ্যিক চিংড়ি চাষের কারণে ওই এলাকার অনেক মানুষ নিয়মিতভাবে নিঃস্ব হয়ে ক্রমাগতভাবে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। চিংড়ির চাষ টিকিয়ে রেখে সুন্দরবন রক্ষা করা কঠিন হবে। তিনি বলেন, সুন্দরবন ও সংশ্লিষ্ট এলাকা নিয়ে একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা করা দরকার।
২০০৪ সালের বননীতিতে বলা ছিল: 'বন খাতের উন্নয়নে বনায়ন সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়নে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে মহিলাসহ জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।' ১৯২৭ সালের বন আইনের ২৮ ধারায় বলা হয়েছে: 'সরকার কোনো গঠিত সংরক্ষিত বনে বা উহার উপর সরকারের অধিকার কোনো গ্রামীণ সম্প্রদায়ের উপর অর্পণ করতে পারেন এবং এরূপ অর্পণ বাতিল করতে পারেন।'
সুন্দরবন বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মূল বনভূমির পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত গ্রামবাসীকে তিন ভাগে ভাগ করে বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। কোনো ঘরবাড়ি ও জমি নেই এবং জীবিকার জন্য বছরের বেশির ভাগ সময় সুন্দরবনের মধ্যে অবস্থান করে—এমন মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া গ্রামের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ বা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হবে।
খুলনা বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে সুন্দরবনের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জের এই উদ্যোগে সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের উপকারভোগীদের তালিকা তৈরির কাজ শেষ হবে। তবে গ্রামবাসীর জন্য কোন ধরনের জীবিকা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা গ্রামবাসী নিজেরাই ঠিক করবে।
সূত্র বলছে, বন বিভাগ থেকে বরাদ্দ দেওয়া অর্থ ব্যবস্থাপনার জন্য কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ৬৫ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হবে। এ ছাড়া বনজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়টি তদারকিতে ২৯ সদস্যের আরেকটি কমিটি কাজ করবে।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-11-24/news/110713
মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ সফল করতে এ বার নয়া পদক্ষেপ দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের৷ বাংলার গোয়ায় ঢোকার মুখে তৈরি হবে বিশাল তোরণদ্বার - গেটওয়ে অফ
দিঘা৷ টেন্ডার ডাকা হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই৷ যত দ্রুত সম্ভব এই তোরণের কাজ শেষ করে দিঘাকে ঝাঁ চকচকে চেহারা দিতে পর্ষদ কর্তাদের ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে৷
দিঘাকে সাজিয়ে তোলার জন্য বহু পরিকল্পনা এ যাবত্ নেওয়া হয়েছে৷ কখনও সমুদ্রের পাড় বাঁধিয়ে পন্ডিচেরির আদলে প্রমেনেড, কখনও বিলাসবহুল বেঞ্চি, কখনও গাছ লাগানো, কখনও অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস - একটার পর একটা ঘোষণা হয়েছে৷ সেই তালিকায় নবতম সংযোজন গেটওয়ে অফ দিঘা৷ পর্ষদের চিফ
এগজিকিউটিভ অফিসার সৌমেন পাল বলেন, 'চার কোটি সাতাশি লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি তোরণদ্বার তৈরি করা হচ্ছে৷ প্রস্তাবিত গেটের নকশার অনুমোদন
মিলেছে৷ এই গেটওয়ে তৈরি হলে দিঘার চেহারাই পাল্টে যাবে৷ আরও বেশি লোকসমাগম হবে৷'
পর্ষদ সূত্রের খবর, কলকাতা থেকে মেচেদা হয়ে দিঘা যাওয়ার রাস্তায় অলঙ্কারপুরের পরে ঘেরসাই মৌজায় তোরণ তৈরি হচ্ছে৷ স্টিল ও কংক্রিট দিয়ে বানানো এই
তোরণের নকশা হবে বাহারি৷ কিন্তু একটার পর একটা ঘোষণাই তো হচ্ছে, কাজ শেষ হবে কবে? সৌমেনবাবুর জবাব, 'বিভিন্ন কারণে সব প্রকল্পের কাজ একসঙ্গে
করা যাচ্ছে না৷ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, করা হচ্ছে৷ গাছ লাগানো, বেঞ্চি পাতা, ত্রিফলা আলো লাগানোর কাজ অনেকটাই হয়েছে৷ বাইপাসও চালু হয়েছে৷ বাকি
প্রকল্পগুলিও শীঘ্রই চালু হবে৷'
জঙ্গলমহলে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে মাওবাদীরা মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠবে বলে জানিয়ে দিলেন পশ্চিমাঞ্চলের পুলিশকর্তারা৷ গোয়েন্দাদের মারফত তাঁরা জানতে
পেরেছেন, ওই নির্বাচনে তাঁরা এ বার ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন গোষ্ঠী)-কে জেতাতে আদাজল খেয়ে নামবে৷ তাঁদের তত্পরতায় রক্তক্ষয় অনিবার্য৷ ইতিমধ্যে কৌশল
বদল করায় মাওবাদীদের যথাযথ ভাবে মোকাবিলা করতে সমস্যা হচ্ছে বলেও ওই পুলিশকর্তারা মানছেন৷ সমস্যা রয়েছে জঙ্গলমহলে পাশাপাশি লাগোয়া রাজ্যগুলির
পুলিশের মধ্যে সমন্বয় নিয়েও৷
ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার সাহায্য ছাড়া কোনও মতেই মাওবাদী দমন সম্ভব নয় বলে মনে করে এ রাজ্যের পুলিশ৷ ওই লাল-উগ্রপন্থা মোকাবিলায় তাই ওই দুই রাজ্যের
সঙ্গে যৌথ বৈঠক হল ঝাড়গ্রামে৷ তাতে তিন রাজ্যের পুলিশকর্তারা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিআরপিএফ, সিআইএফের কর্তারা৷ তাঁরা নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন
অভিজ্ঞতা ও ভাবনার আদানপ্রদান করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টার ওই বৈঠকে৷
ঝাড়গ্রামে পুলিশ সুপারের অফিসে সেই সভায় সবচেয়ে সরব ছিলেন এ রাজ্যের নীচুতলার পুলিশ অফিসাররা৷ পুলিশ সূত্রের খবর, চাকুলিয়া থানার আইসি বিশ্বজিত
সিং রুদ্ধদ্বার ওই সভায় বলেন, 'যৌথ অভিযান না করা হলে কিছুতেই এই সমস্যা নির্মূল করা সম্ভব নয়৷ যৌথ অভিযানের নামে যা মাঝে মাঝে হয়, তাতেও
নানা গলদ থাকে৷ কোথাও মিলিত হয়ে আমরা ও ঝাড়খণ্ডের পুলিশ অভিযান শুরু করি না৷ ফলে আমাদের মধ্যে সমন্বয় থাকে না৷ আমরা কেউ কাউকে কভার
করি না৷ এ ভাবে নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনি৷'
ওড়িশার বালাসোরের আইজি আরপি কোচি ওই সভায় বলেন, 'গ্রামে গ্রামে ওদের সোর্স এত শক্তিশালী যে, পুলিশ যাওয়ার আগে ওরা খবর পেয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন৷'
ওড়িশা পুলিশের পক্ষ থেকেই জানানো হয়েছে, এ রাজ্যে নয়াগ্রাম, বেলিয়াতোড়, গোপীবল্লভপুর থানা এলাকায় মাওবাদী তত্পরতা অত্যন্ত বেড়ে গিয়েছে৷ ওরা এখন
১০ জনের ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ মাওবাদীরা প্রচুর নতুন লোক নিয়োগ করায়, তাঁদের চিনতেও পুলিশের অসুবিধা হচ্ছে৷ অনেক সময় গ্রামে
ফুটবল ম্যাচে ওরা উপস্থিত হয়ে জনসংযোগ করলেও তাঁদের ধরা সম্ভব হচ্ছে না৷
ময়ুরভঞ্জের এক পুলিশকর্তা নির্দিষ্ট করে ওই সভায় জানিয়েছেন, প্রায় দু'মাস আগে ৩০ জন মাওবাদীর একটি দল পশ্চিমবঙ্গে নয়াগ্রাম, ভালুকবাসা, বাকসা,
রামকৃষ্ণপুর ইত্যাদি গ্রামে ধারাবাহিক বৈঠক করেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে৷ মদন, জবা, বাদশার মতো মাওবাদী নেতারা সেই সভাগুলিতে উপস্থিত ছিলেন৷ সেই সভাগুলি পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওদের তত্পরতার ইঙ্গিতবাহী বলে পুলিশ মনে করছে৷ কেননা, ইতিমধ্যে ওই নির্বাচন সম্পর্কে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছকে ফেলেছেন
মাওবাদীরা৷
গোয়েন্দারা পুলিশকে যে রিপোর্ট দিয়েছেন, তাতে জানা গিয়েছিল যে মাওবাদীরা সেই পরিকল্পনা গ্রহণের বৈঠকটি হয়েছিল বেলপাহাড়ির কাছে জঙ্গল ঘেরা পাহাড়ি
গ্রাম আমঝর্ণায়৷ সেখানেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে এ বার তৃণমূল বা অন্য কোনও দলের বদলে ঝাড়খণ্ড পার্টিকে (নরেন গোষ্ঠী) সমর্থনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল৷ প্রার্থী
নির্বাচন থেকে শুরু করে প্রধান মনোনয়ন, সব ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা৷ অর্থাত্ ঝাড়খণ্ড পার্টিকে সামনে রেখে নির্বাচনে নামবেন মাওবাদীরাই৷ তাতেই
রক্তক্ষয়ের বিপদ দেখছেন পুলিশকর্তারা৷
বৈঠকের পর পশ্চিমাঞ্চলের আইজি সিদ্ধিনাথ গুপ্তা সাংবাদিকদের জানান, 'পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই বৈঠক অত্যন্ত জরুরি ছিল৷ মাওবাদীরা এখন এই তিন
রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় তত্পরতা চালাচ্ছে৷ তাঁদের ঠেকাতে তাই এই তিন রাজ্যের পুলিশের সমন্বয় খুব প্রয়োজন৷ মাওবাদীরা যে সব গ্রাম ও রাস্তা ব্যবহার
করছেন, সেগুলিকে চিহ্নিত করে সেখানে নজরদারি, তল্লাশি ও গ্রেপ্তার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে এই সভায়৷ তার সম্ভাব্য উপায়গুলি আলোচনা হয়েছে৷'
ওড়িশার বালাসোরের আইজি আরপি কোচি বলেন, 'মাওবাদীদের গ্রেপ্তার করার নানা উপায় আলোচনা হয়েছে৷ কেননা এখন ওরা এখন বার বার এলাকা পরিবর্তন
করায় ওদের ধরতে সমস্যা হচ্ছে৷' নিঃসন্দেহে এদিন পুলিশের এই বৈঠক রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে রাজ্য সরকারের 'ফিল গুড' পরিস্থিতি হয়েছে বলে দাবিকে
চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে৷
সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে চালু হওয়া নৌপথের কারণে পূর্ব সুন্দরবন প্রাণীশূন্য হতে শুরু করেছে। প্রতিদিন প্রায় ১৫০টি বিশাল আকৃতির নৌযান বনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এসব নৌযানের ঢেউ, ফেলে যাওয়া বর্জ্য তেল ও শব্দদূষণের কারণে বনের দুই পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বৃক্ষ, লতা, গুল্ম মরতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে বনের জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
বনের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা নদীগুলোতে জাহাজ থেকে বর্জ্য তেল ফেলা হচ্ছে এবং প্রচণ্ড ঢেউয়ের কারণে বনের পাড় ভাঙছে। বন বিভাগ থেকে এমন অভিযোগ নৌপথ চালুর সময় অর্থাৎ ২০১২ সালের নভেম্বরেই তোলা হয়েছিল। সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে সুন্দরবন রক্ষার আশ্বাস দিয়ে ওই নৌপথ বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত দেড় বছরেও তা বন্ধ হয়নি। বরং দিনকে দিন বনের ভেতর দিয়ে চলাচলকারী নৌযানের সংখ্যা বেড়েছে। ক্ষতিও বাড়ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার এই নৌপথের শুরুতেই সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে একটি সিমেন্টবাহী কার্গো ডুবে গেছে। ১১ হাজার সিমেন্টের বস্তাসহ এমভি মোতাহার নামের কার্গোটি বনের মধ্যেই নোঙর করে অবস্থান করছিল।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যে এলাকা দিয়ে এই নৌপথ চালু হয়েছে, অর্থাৎ পূর্ব সুন্দরবন এলাকায় লবণাক্ততার পরিমাণ কম। ফলে সেখানে বাঘ, হরিণ, কুমির, সাপ, বানর, পাখিসহ সুন্দরবনের গুরুত্বপূর্ণ প্রাণীদের বসবাস। এখানকার মুগমারীকে বন বিভাগ কুমিরের নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে ঘোষণা করেছে। গত বছর এই এলাকাকে ডলফিনের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়।
সুন্দরবন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণারত বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, নৌযানগুলো ওই পথ দিয়ে চলাচল করায় সেখানে আর আগের মতো বন্য প্রাণী দেখা যাচ্ছে না। গতকাল ওই পথ দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খানের নেতৃত্বে একটি দল সফর করে ফিরেছে। তারা নৌপথের বাইরের এলাকা কচিখালি ও সুপতিতে হরিণ, কুমির, সাপ, পাখিসহ অনেক বন্য প্রাণী দেখতে পেয়েছে। কিন্তু নৌপথের দুই পাড়ে কোনো হরিণ ও কুমির দেখতে পায়নি।
মনিরুল খান এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, এভাবে চলতে থাকলে সুন্দরবনের সবচেয়ে সমৃদ্ধ এলাকা পূর্ব সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে। ফলে সরকারের উচ্চপর্যায়ের আশ্বাস অনুযায়ী অবশ্যই এই নৌপথ বন্ধ করতে হবে। নয়তো সুন্দরবনের এমন ক্ষতি হয়ে যেতে পারে, যা আর কখনো পোষানো যাবে না।
ভাঙন বাড়ছে, গাছ মরছে: যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক বন্য প্রাণীবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির বাংলাদেশ স্তন্যপায়ী প্রাণী প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনের ভেতরের নৌপথের প্রভাব নিয়ে একটি গবেষণা চলছে। তাতে দেখা গেছে, সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৬০টি নৌযান চলে। এতে বনের নদীগুলোতে ঢেউয়ের গতি ও উচ্চতা বেড়ে গেছে। ফলে বনের দুই পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। চাঁদপাই, নন্দবালা, জয়মনি, তাম্বুলুবুনিয়াসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় গাছের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। গাছগুলো মরতে শুরু করেছে। পাড় ভাঙনের ফলে চাঁদপাই বনফাঁড়িটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে।
জানা গেছে, বনের যেখানে-সেখানে জাহাজ নোঙর করা হচ্ছে। ওই জাহাজে সুন্দরবনের জন্য ক্ষতিকর কোনো বস্তু আছে কি না, তা কেউ তদারক করছেন না। যাঁরা নোঙর করে অবস্থান করছেন, তাঁরা বনের মধ্যে বর্জ্য তেল ফেলছেন কি না, বা তাঁদের ফেলে যাওয়া কোনো পদার্থের কারণে বনের কোনো ক্ষতি হচ্ছে কি না, তা-ও দেখভালের কেউ নেই।
১৮০ কিলোমিটার ঘুরতে হচ্ছে: মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, এর আগে খুলনা হয়ে মংলা বন্দরের দিকে নৌযানগুলো ঘসিয়াখালী খাল দিয়ে আসা-যাওয়া করত। প্রায় নয় কিলোমিটার আয়তনের ওই খালটি খননের অভাবে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে ২০১১ সালের নভেম্বর থেকে বিআইডব্লিইউটিএ সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে সন্ন্যাসী-রায়েন্দা-বগী-শরণখোলা-দুধমুখী-হরিণটানা-আন্ধারমানিক-মুগমারী-চাঁদপাই-জয়মণিরগোল হয়ে মংলা বন্দরে যাওয়ার অনুমতি দেয়।
এই নৌপথের দুই পাশ হরিণটানা, বগী, চাঁদপাই, জয়মণিরগোল এলাকাটি হরিণ ও রয়েল বেঙ্গল টাইগারের অন্যতম বিচরণক্ষেত্র। এই এলাকা পৃথিবীর সবচেয়ে কম জায়গায় সবচেয়ে বেশি রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিচরণের জন্য বিখ্যাত। এই পথ দিয়ে প্রতিদিন প্রায় দেড় শ জাহাজ ও কার্গো যাতায়াত করায় সেখান থেকে বন্য প্রাণী অন্যত্র চলে যেতে পারে বলেও বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান মো. সামসুদ্দোহা খন্দকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি গতকাল প্রথম আলোকে আবারও আগের পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি বলেন, 'ঘসিয়াখালী খাল খননের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে এখনো অর্থ না পাওয়ায় তা শুরু করতে পারিনি। আশা করছি, দ্রুত তা শুরু করা যাবে।'
এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারি ও গত জানুয়ারিতে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সুন্দরবনের ভেতরের ওই নৌপথের বিপদ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবারই বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ পরের মাসেই ঘসিয়াখালী খাল খনন হচ্ছে বলে জানিয়েছিল।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর হাবিবুর রহমান ভূইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ঘসিয়াখালী খালের মাত্র আট কিলোমিটার এলাকা খনন না করায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আসা নৌযানগুলোকে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার ঘুরে আসতে হয়। এতে জ্বালানি খরচ ও সময় বেশি লাগছে। বিষয়টি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কাছে একাধিকবার উত্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, 'সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে জাহাজ চলুক এটা আমরাও চাই না। কেননা, এতে বনের জীববৈচিত্র্যেরও ক্ষতি হচ্ছে।'
২০১১ সালের নভেম্বরে প্রথম সুন্দরবনের ভেতরে নৌপথ চালু হয়। দিনে ২০ থেকে ২৫টি নৌযান বনের ভেতর দিয়ে চলত। বর্তমানে তা দেড় শয় পৌঁছেছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০, বন আইন অনুযায়ী সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে এ ধরনের নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ। জাতিসংঘের রামসার কনভেনশন অনুযায়ী সুন্দরবন একটি আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি। ওই কনভেনশনে বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে স্বাক্ষর করে। এর শর্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ সুন্দরবনের জন্য ক্ষতিকর কোনো ধরনের তৎপরতা চালাবে না। অথচ উল্টোটাই ঘটছে।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-03-15/news/336696
সর্বগ্রাসী প্রবণতা ও বিপন্ন পরিবেশ
সর্বগ্রাসী প্রবণতা ও বিপন্ন পরিবেশ
কাজী এস. এম. খসরুল আলম কুদ্দুসী
কিছু দিন আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছিল এক শিক্ষক কর্তৃক হরিণ ভক্ষণের সংবাদ নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ ত্বরিৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত একজনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে এবং তদন্তের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্থ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হিসেবে তাকে বিভাগীয় সভাপতির পদ থেকে অপসারণ করেছে।
তবে, এই ব্যাপারটি মুখরোচক হলেও এর মাধ্যমে আমাদের সামনে যা কিছূ পাওয়া যায় তা খেয়ে ফেলার একটি মারাতœক মানসিক প্রবণতার বহি:প্রকাশ ঘটেছে বলে আমার মনে হয় যাকে মানসিক বৈকল্যের পর্যায়ে ফেললে বোধহয় বাড়াবাড়ি হবেনা কেননা একটু অনুধাবন করলেই আমরা আমাদের দেশে এ ধরনের আগ্রাসী এবং সর্বগ্রাসী প্রবণতার উত্তরোত্তর প্রসার লক্ষ্য করবো। আমার বিশ্বাস মনস্তাত্ত্বিকরাও এই ব্যাখ্যা সমর্থন করবেন।
পাহাড় থেকে নেমে আসা আটকে যাওয়া হরিণ, নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে আসা অতিথি পাখি, সাগরে ঘুরে বেড়ানো ঝাটকা মাছ কিছুই রেহাই পাচ্ছেনা আমাদের রসনা বিলাস থেকে। কি শিক্ষিত, কি অশিক্ষিত, কি ধনী, কি দরিদ্র সর্ব শ্রেণীর মানুষের মাঝেই যেন খাই খাই সংস্কৃতির দ্রুত বিকাশ ঘটছে। তবে দরিদ্ররা নেহাত পেটের কারণে এ ধরনের কাজ করলেও শিক্ষিত অথচ সচ্ছলরা এরকমটি করছে নিতান্তই অতি লোভের বশবর্তী হয়ে যা আমাদের পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং প্রকৃতিকে প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
শুধু হরিণ বা পাখি নয় সাপ, ব্যাঙও রক্ষা পাচ্ছেনা আমাদের লোলুপ দৃষ্টি থেকে। তবে সাপ, ব্যাঙ ধরা হচ্ছে রপ্তানী করে কাড়ি কাড়ি টাকা কামানোর জন্য। অথচ সাপ, ব্যাঙ যে পরিবেশের কত বড় বন্ধু তা কারও অজানা থাকার কথা নয়। এ প্রসঙ্গে বলতে হয়, কিছু দিন আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় তরুণ শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হল ব্যতিক্রমধর্মী এক ব্যাঙ মেলা যাকে সারা দক্ষিণ এশিয়ায় এ ধরনের প্রথম মেলা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ মেলার প্রতিপাদ্য ছিল পরিবেশবান্ধব অথচ বিপন্ন ব্যাঙকে বাঁচতে দেয়ার আকুতি।
তবে ব্যাঙ যে শুধু পাচার হওয়ার কারণেই বিপন্ন হয়ে পড়ছে তা নয়, ফসলি জমিতে ব্যাপকভাবে রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণেও ব্যাঙ মারাতœক অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে অথচ ফসলি জমিতে ক্ষতিকারক পোকা বিনাশ এবং উপকারী পোকার বেঁেচ থাকা নিশ্চিতকরণে ব্যাঙের জুড়ি নেই। উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি অতি ফলনের লোভে আবাদী জমিতে মাত্রাতিরিক্ত এবং নিম্নমানের রাসায়নিক সারের বিষক্রিয়ার কারণে ঢাকার অদূরে কয়েকটি শিশুর প্রাণহাণির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এখন পত্রিকা খুললেই দেখা যায় সারা দেশব্যাপী নদী, পুকুর, নালা ইত্যাদি দখলের মাধ্যমে ব্যাবসায়ীক কাজে লাগাবার বিশাল বিশাল ছবি এবং বিবরণ। আমাদের দেশের মিডিয়াগুলোকে এ ধরনের সমাজ-সচেতনতামূলক কাজগুলোর জন্য সাধুবাদ দিতেই হয়। এই ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে এবং সম্প্রতি আমাদের উচ্চতর আদালত থেকে যততত্র নদী ভরাটের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকারকে নদী এবং পরিবেশ সংরক্ষণের কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
শুধু দেশব্যাপী নদী, জলাশয়, নালা ইত্যাদি দখল করা হচ্ছে তা নয় বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে চরমভাবে দূষিত করা হচ্ছে নদী এবং সাগরের পানিকে যার কারণে আমাদের মৎস্যরাজি ও জীববৈচিত্র ভয়ানক সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য নিষ্কাষণের জন্য সরাসরি নদীর সাথে নালা করে দেয়া এবং চট্টগ্রাম ইপিজেড এলাকায় সাগরের সাথে নালা করে দেয়ারও গুরুতর অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, চট্টগ্রাম ইপিজেড এলাকায় অনেক বিদেশী কোম্পানী খুবই লাভজনক ব্যবসায় নিয়োজিত যে লাভের সিংহভাগ তারাই উপভোগ করছে।
তবে এ লাভ করাতে দোষের কিছু নেই এবং আমরাও বিচলিত হচ্ছিনা। কিন্তু, বিদেশী কোম্পানীগুলো তাদের নিজেদের দেশকে ন্যূনতম পরিবেশ বিপর্যয়ের শিকার হতে না দিয়ে আমাদের দেশের সুলভ শ্রম শোষণের সাথে সাথে আমাদের পরিবেশকে যে মারাতœক হুমকির মুখে নিপতিত করছে তা দেখলে হীণমন্যতায় ভোগা ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা। হায়, কত অসহায় আমরা! ওরা আমাদের দরিদ্র শ্রমিক ও বেকারদের বেকারত্ব সামান্য লাগবের বিনিময়ে আমাদের পরিবেশের সর্বনাশ করবে অথচ আমরা কিছুই বলতে পারবোনা পাছে তারা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে।
তবে তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আসল অপরাধী আমরা। এসব অবস্থ্া দেখলে মনে হয় যেন আমাদের একশ্রেণীর মানুষ পরিবেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। পাহাড় ঘেরা বন্দরনগরী চট্টগ্রামে শত শত পাহাড় কাটার মাধ্যমে অবশ্যাম্ভাক্ষী ভূমিধ্বসের মাধ্যমে শত শত মানুষের জীবন নাশের ব্যবস্থ্া করা এবং চট্টগ্রামকে চরম ভুমিকম্পন-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পরিণত করার কথা অনেকেরই জানা। কিছুদিন আগে ঘুরে এলাম পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন, যেখানকার বিপন্ন পরিবেশ যে কতটা সংকটাপন্ন তা দ্বীপখানির আবর্জনাভরা অবয়ব দেখলেই সহজে অনুধাবন করা যায়। কিন্তু কারও কোন মাথাব্যাথা আছে বলে মনে হয়না।
একথা অনস্বীকার্য যে, নদী, পুকুর, নালা ইত্যাদি দখল করা এবং এগুলোর স্বাভাবিক গতিপথ ব্যাহত করার ক্ষতিকর ফলাফল বহুমাত্রিক। আমাদের তিলোত্তমা ঢাকা এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ অন্যান্য দ্রুত বর্ধনশীল শহরগুলোতে একটু বৃষ্টি হলেই যে সড়কপথ নদীপথ এবং নৌকা একমাত্র বাহন হয়ে যায় তার জন্যেও কিন্তু নদী ও নালা দখল করে ভরাট করে ফেলা অন্যতম কারণ। জলাবদ্ধতার কারণে পরিবেশের নানাবিধ ক্ষতির ব্যাপারতো আছেই। আমাদের দেশের বেশ কিছু সচেতন ব্যক্তি এবং পরিবেশবাদী সংগঠন অনেকদিন ধরেই পরিবেশ বিনাশী কর্মকান্ডগুলোর বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছে।
কিন্তু, তারা তেমন একটা সফল হচ্ছেনা সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তার অভাব এবং পরিবেশ বিপর্যয়ে দায়ী ক্ষমতাধর শক্তিগুলোর প্রভাবের কারণে। সম্প্রতি 'মিডিয়া এ্যকটিভিজম' এর কারণে অবশ্য এ আন্দোলনে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে যাকে অবদমিত হতে দেয়া যাবেনা কিছুতেই। অন্যথায় আমাদের নদী, নালা, পরিবেশ আর জীবকূলই কেবল বিপর্যস্ত হবেনা আমাদের অস্তিত্বও হবে মারাতœকভাবে বিপন্ন হবে যা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই, দুই-এ-দুই-এ চার যোগ করতে জানলেই চলবে।
কাজী এস. এম. খসরুল আলম কুদ্দুসী, সহকারী অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ই-মেইল:kkhasru@gmail.com
http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=1799
সুন্দরবন
সুন্দরবন | |
---|---|
ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী তালিকায় নাম হিসাবে তালিকাভুক্ত | |
দেশ | বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ |
ধরন | প্রাকৃতিক |
মানদণ্ড | ix, x |
তথ্যসূত্র | ৭৯৮ |
ইউনেস্কো অঞ্চল | এশিয়া-প্যাসিফিক |
অভিলিখন ইতিহাস | |
অভিলিখন | ১৯৯৭ (২১তম সেশন) |
সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি হিসেবে অখন্ড বন যা বিশ্বে সর্ববৃহৎ[১]। অববাহিকার সমুদ্রমূখী সীমানা এই বনভূমি গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রেরমোহনায় অবস্থিত এবং বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিস্তৃত । ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার[২] রয়েছে বাংলাদেশে[৩]। সুন্দরবন ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এর বাংলাদেশ ও ভারতীয় অংশ একই নিরবচ্ছিন্ন ভূমিরূপের অংশ হলেও ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের সূচিতে ভিন্ন ভিন্ন নামে সূচিবদ্ধ হয়েছে যথাক্রমে সুন্দরবন ও সুন্দরবন জাতীয় পার্ক নামে। সুন্দরবনকে জালের মত জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ছোট ছোট দ্বীপ। মোট বনভূমির ৩১.১ শতাংশ, অর্থাৎ ১,৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে নদীনালা, খাঁড়ি, বিল মিলিয়ে জলের এলাকা।[২] বনভূমিটি, স্বনামে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানান ধরণের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। জরিপ মোতাবেক ৫০০ বাঘ ও ৩০,০০০ চিত্রা হরিণ রয়েছে এখন সুন্দরবন এলাকায়। ১৯৯২ সালের ২১শে মে সুন্দরবন রামসার স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
পরিচ্ছেদসমূহ[আড়ালে রাখো] |
[সম্পাদনা]নামকরণ
বাংলায় "সুন্দরবন"-এর আক্ষরিক অর্থ "সুন্দর জঙ্গল" বা "সুন্দর বনভূমি"। সুন্দরী গাছ থেকে সুন্দরবনের নামকরণ হয়ে থাকতে পারে, যা সেখানে প্রচুর জন্মায়। অন্যান্য সম্ভাব্য ব্যাখ্যা এরকম হতে পারে যে, এর নামকরণ হয়তো হয়েছে "সমুদ্র বন" বা "চন্দ্র-বান্ধে (বাঁধে)" (প্রাচীন আদিবাসী) থেকে। তবে সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয় যে সুন্দরী গাছ গাছ থেকেই সুন্দরবনের নামকরণ হয়েছে[১]।
[সম্পাদনা]ইতিহাস
মুঘল আমলে (১২০৩-১৫৩৮) স্থানীয় এক রাজা পুরো সুন্দরবনের ইজারা নেন। ঐতিহাসিক আইনী পরিবর্তনগুলোয় কাঙ্ক্ষিত যেসব মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বিশ্বের প্রথম ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক তত্ত্বাবধানের অধীনে আসা। ১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আলমগীর এর কাছ থেকে স্বত্বাধিকার পাওয়ার পরপরই সুন্দরবন এলাকার মানচিত্র তৈরি করা হয়। বনাঞ্চলটি সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আসে ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ভারতের তৎকালীন বাংলা প্রদেশে বন বিভাগ স্থাপনের পর থেকে।
অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে সুন্দরবনের আয়তন বর্তমানের প্রায় দ্বিগুণ ছিল। বনের উপর মানুষের অধিক চাপ ক্রমান্বয়ে এর আয়তন সংকুচিত করেছে। ১৮২৮ সালে বৃটিশ সরকার সুন্দরবনের স্বত্ত্বাধীকার অর্জন করে। এল. টি হজেয ১৮২৯ সালে সুন্দরবনের প্রথম জরীপ কার্য পরিচালনা করেন। ১৮৭৮ সালে সমগ্র সুন্দরবন এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসাবে ঘোষণা দেয়া হয় এবং ১৮৭৯ সালে সমগ্র সুন্দরবনের দায় দায়িত্ব বন বিভাগের উপর ন্যস্ত করা হয়। সুন্দরবনের প্রথম বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নাম M. U. Green। তিনি ১৮৮৪ সালে সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে পড়ে। যা বাংলাদেশের আয়তনের প্রায় ৪.২% এবং সমগ্র বনভূমির প্রায় ৪৪%।
সুন্দরবনের উপর প্রথম বন ব্যবস্থাপনা বিভাগের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৯ সালে। ১৯৬৫ সালের বন আইন (ধারা ৮) মোতাবেক, সুন্দরবনের একটি বড় অংশকে সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয় ১৮৭৫-৭৬ সালে। পরবর্তী বছরের মধ্যেই বাকি অংশও সংরক্ষিত বনভূমির স্বীকৃতি পায়। এর ফলে দূরবর্তী বেসামরিক জেলা প্রশাসনের কর্তৃত্ব থেকে তা চলে যায় বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে। পরবর্তীতে ১৮৭৯ সালে বন ব্যবস্থাপনার জন্য প্রশাসনিক একক হিসেবে বন বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়, যার সদর দপ্তর ছিল খুলনায়। সুন্দরবনের জন্য ১৮৯৩-৯৮ সময়কালে প্রথম বন ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণিত হয়[৪][৫]।
১৯১১ সালে সুন্দরবনকে ট্র্যাক্ট আফ ওয়াস্ট ল্যান্ড হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়, যা না তো কখনো জরিপ করা হয়েছে আর না তো কোনদিন শুমারীর আধীনে এসেছে। তখন হুগলী নদীর মোহনা থেকে মেঘনা নদীর মোহনা পর্যন্ত প্রায় ১৬৫ মাইল (২৬৬ কি.মি.) এলাকা জুড়ে এর সীমানা নির্ধারিত হয়। একই সাথে চব্বিশ পরগনা , খুলনা ও বাকেরগঞ্জ এই তিনটি জেলা অনুযায়ী এর আন্তঃসীমা নির্ধারণ করা হয়। জলাধারসহ পুরো এলাকার আয়তন হিসেব করা হয় ৬,৫২৬ বর্গমাইল (১৬,৯০২ কি.মি)। জলবহুল সুন্দর বন ছিল বাঘ ও অন্যান্য বন্য জন্তুতে পরিপূর্ণ। ফলে জরিপ করার প্রচেষ্টা খুব একটা সফল হতে পারেনি। সুন্দরবনের নামকরণ হয়েছে খুব সম্ভবত এর প্রধাণ বিশেষ গাছ সুন্দরীর (Heritiera fomes) নাম থেকেই। এ থেকে পাওয়া শক্ত কাঠ নৌকা, আসবাবপত্র সহ বিভিন্ন জিনিস তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। সুন্দরবন সর্বত্রই নদী, খাল, ও খাঁড়ি দ্বারা বিভক্ত, যাদের মধ্যে কয়েকটি স্টিমার ও স্থানীয় নৌকা উভয়ের চলাচল উপযোগী নৌপথ হিসেবে ব্যবহৃত হত কলকাতা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার মধ্যে যোগাযোগের জন্য।
[সম্পাদনা]ভৌগোলিক গঠন
পুরো পৃথিবীর মধ্যে সর্ববৃহৎ তিনটি ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের একটি হিসেবে গঙ্গা অববাহিকায় অবস্থিত সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান যথেস্ট জটিল। দুই প্রতিবেশি দেশ বাংলাদেশ এবং ভারত জুড়ে বিস্তৃত সুন্দরবনের বৃহত্তর অংশটি ( ৬২% ) বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর; পূর্বে বালেশ্বর নদী আর উত্তরে বেশি চাষ ঘনত্বের জমি বরাবর সীমানা। উঁচু এলাকায় নদীর প্রধান শাখাগুলো ছাড়া অন্যান্য জলধারাগুলো সর্বত্রই বেড়িবাঁধ ও নিচু জমি দ্বারা বহুলাংশে বাঁধাপ্রাপ্ত। প্রকৃতপক্ষে সুন্দরবনের আয়তন হওয়ার কথা ছিলো প্রায় ১৬,৭০০ বর্গ কি.মি. (২০০ বছর আগের হিসাবে)। কমতে কমতে এর বর্তমান আয়তন হয়েছে পূর্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের সমান। বর্তমানে মোট ভূমির আয়তন ৪,১৪৩ বর্গ কি.মি. (বালুতট ৪২ বর্গ কি.মি. -এর আয়তনসহ) এবং নদী, খাঁড়ি ও খালসহ বাকি জলধারার আয়তন ১,৮৭৪ বর্গ কি.মি. । সুন্দরবনের নদীগুলো নোনা পানি ও মিঠা পানি মিলন স্থান। সুতরাং গঙ্গা থেকে আসা নদীর মিঠা পানির, বঙ্গপোসাগরের নোনা পানি হয়ে ওঠার মধ্যবর্তী স্থান হলো এ এলাকাটি। এটি সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী অঞ্চল জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে সুন্দরবন অবস্থিত।
হাজার বছর ধরে বঙ্গোপসাগর বরাবর আন্তঃস্রোতীয় প্রবাহের দরুন প্রাকৃতিকভাবে উপরিস্রোত থেকে পৃথক হওয়া পলি সঞ্চিত হয়ে গড়ে উঠেছে সুন্দরবন। এর ভৌগোলিক গঠন ব-দ্বীপীয়, যার উপরিতলে রয়েছে অসংখ্য জলধারা এবং জলতলে ছড়িয়ে আছে মাটির দেয়াল ও কাদা চর। এতে আরো রয়েছে সমুদ্র সমতলের গড় উচ্চতার চেয়ে উঁচুতে থাকা প্রান্তীয় তৃণভূমি, বালুতট এবং দ্বীপ, যেগুলো জুড়ে জালের মত জড়িয়ে আছে খাল, জলতলের মাটির দেয়াল, আদি ব-দ্বীপীয় কাদা ও সঞ্চিত পলি। সমুদ্রসমতল থেকে সুন্দরবনের উচ্চতা স্থানভেদে ০.৯ মিটার থেকে ২.১১ মিটার[৬]।
জৈবিক উপাদানগুলো এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সামুদ্রিক বিষয়ের গঠন প্রক্রিয়া ও প্রাণী বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে। সৈকত, মোহনা, স্থায়ী ও ক্ষণস্থায়ী জলাভূমি, কাদা চর, খাঁড়ি, বালিয়াড়ি, মাটির স্তূপের মত বৈচিত্র্যময় অংশ গঠিত হয়েছে এখানে। ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ জগৎ নিজেই নতুন ভূমি গঠনে ভূমিকা রাখে। আবার আন্ত:স্রোতীয় উদ্ভিদ জগৎ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে জলে অঙ্গসংস্থান প্রক্রিয়ায়। ম্যানগ্রোভ প্রাণীজগৎ-এর উপস্থিতি আন্তঃস্রোতীয় কাদা চরে ব্যষ্টিক অঙ্গসংস্থানিক পরিবেশ তৈরি করে। এটি পলিকে ধরে রাখে বীজের জন্য আনুভূমিক উপশিলাস্তর সৃষ্টির জন্য। অনন্ত বালিয়াড়ির সংগঠন ও বিবর্তন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয় প্রচুর পরিমাণে থাকা xerophytic ও halophytic গাছ দ্বারা। লতা-পাতা, ঘাস ও হোগলা বালিয়াড়ি ও অসংগঠিত পলিস্তরের গঠনকে স্থিতিশীল করে।
[সম্পাদনা]জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
উপকূল বরাবর সুন্দরবনের গঠন প্রকৃতি বহুমাত্রিক উপাদানসমূহ দ্বারা প্রভাবিত, যাদের মধ্যে রয়েছে স্রোতের গতি, ব্যষ্টিক ও সমষ্টিক স্রোত চক্র এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী দীর্ঘ সমুদ্রতটের স্রোত। বিভিন্ন মৌসুমে সমুদ্রতটের স্রোত যথেস্ট পরিবর্তনশীল। এরা ঘূর্ণীঝড়ের কারণেও পরিবর্তিত হয়।
এসবের মধ্য দিয়ে যে ক্ষয় ও সঞ্চয় হয়, যদিও এখনো সঠিকভাবে পরিমাপ করা সম্ভব হয়নি, তা ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তনে মাত্রাগত পার্থক্য তৈরি করে। অবশ্য ম্যানগ্রোভ বনটি নিজেই এর পুরো ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। প্রত্যেক মৌসুমী বৃষ্টিপাতের ঋতুতে বঙ্গীয় ব-দ্বীপের পুরোটিই পানিতে ডুবে যায়, যার অধিকাংশই ডুবে থাকে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় জুড়ে। অববাহিকার নিম্নানঞ্চলের পলি প্রাথমিকভাবে আসে মৌসুমী বৃষ্টিপাতকালীন সময় সমুদ্রের চরিত্র এবং ঘূর্ণিঝড়ের মত ঘটনাগুলোর ফলে। অনাগত বছরগুলোতে গঙ্গা অববাহিকায় বসবাসকারীদের সবচেয়ে বড় যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে তা হলো সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি ।
উঁচু অঞ্চলে সাদুপানির গতিপথ পরিবর্তনের কারণে ভারতীয় ম্যানগ্রোভ আর্দ্রভূমিগুলোর অনেকগুলোতে সাদুপানির প্রাবাহ ১৯ শতকের শেষের দিক থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে। একই সাথে নিও-টেকটনিক গতির কারণে বেঙ্গল বেসিনও পূর্বের দিকে সামান্য ঢালু হয়ে গিয়েছে, যার ফলে সাদু পানির বৃহত্তর অংশ চলে আসছে বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনে। ফলশ্রতিতে বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনে লবণাক্ততার পরিমাণ ভারতীয় অংশের তুলনায় অনেক কম। ১৯৯০ সালের এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে , "হিমালয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশের অবনতি বা "গ্রিন হাউস" এর কারণে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতিকে আশঙ্কাজনক করে তুলেছে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যাদিও, ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে -"জলবায়ুর পরিবর্তন ও বিশ্ব ঐতিহ্যের পাঠ" শীর্ষক ইউনেস্কোর রিপোর্টে বলা হয়েছে যে মনুষ্যসৃষ্ট অন্যান্য কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের যে ৪৫ সে.মি. উচ্চতা বৃদ্ধি হয়েছে, তা সহ মনুষ্যসৃষ্ট আরও নানাবিধ কারণে সুন্দরবনের ৭৫ শতাংশ ধংস হয়ে যেতে পারে (জলবায়ু পরিবর্তনের উপর আলোচনায় প্রাকাশিত আন্তঃসরকার পরিষদের মত অনুযায়ী ২১ শতকের মধ্যেই)[[৭]।
[সম্পাদনা]উদ্ভিদবৈচিত্র্য
সুন্দরবনের প্রধান বনজ বৈচিত্রের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সুন্দরী (Heritiera fomes), গেওয়া (Excoecaria agallocha), গরান (Ceriops decandra) এবং কেওড়া (Sonneratia apetala) । ১৯০৩ সালে প্রকাশিত প্রেইন এর হিসেব মতে সর্বমোট ২৪৫টি শ্রেণী এবং ৩৩৪টি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে সেখানে[৮]। প্রেইন এর প্রতিবেদনের পর সেখানে বিভিন্ন ম্যানগ্রোভ প্রজাতি ও তাদের শ্রেণীকরণের এর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে[৯]। বনজ প্রকৃতিতে খুব কমই আনুসন্ধান করা হয়েছে এসব পরিবর্তনের হিসেব রাখার জন্য । পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের বেশির ভাগ ম্যানগ্রোভে Rhizophoraceae, Avicenneaceae বা Laganculariaceae শ্রেণীর গাছের প্রাধাণ্য থাকলেও বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভে প্রাধাণ্য Sterculiaceae এবং Euphorbiaceae শ্রেণীর গাছের[৪]।
ব-দ্বীপিয় নয় এমন অন্যান্য উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বনভূমি এবং উচ্চভূমির বনাঞ্চলের তুলনায় বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ বনভূমিতে উদ্ভিদ জীবনপ্রবাহের ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। পূর্ববর্তীটির তুলনায় Rhizophoraceae এর গুরুত্ব কম। উদ্ভিদ জীবনচক্রের ভিন্নতা ব্যাখ্যা করা হয়েছে উত্তর-পূর্বে বিশুদ্ধ পানি ও নিম্ন লবণাক্ততার প্রভাব এবং পানি নিষ্কাশন ও পলি সঞ্চয়ের ভিত্তিতে।
সুন্দরবনকে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে একটি আর্দ্র গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনভূমি হিসেবে যা গড়ে উঠেছে সুগঠিত সৈকতে কেওড়া (Sonneratia apetala) ও অন্যান্য সামুদ্র উপকূলবর্তী বৃক্ষ প্রধাণ বনাঞ্চলে। ঐতিহাসিকভাবে সুন্দরবনে প্রধাণ তিন প্রকারের উদ্ভিদ রয়েছে যাদের চিহ্ণিত করা হয়েছে পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা, সাদু পানি প্রবাহের মাত্রা ও ভূপ্রকৃতির মাত্রার সাথে সম্পর্কের গভীরতার উপর ভিত্তি করে।
অঞ্চল জুড়ে সুন্দরী ও গেওয়া এর প্রাধাণ্যের পাশাপাশি বিক্ষিপ্তভাবে রয়েছে ধুন্দল (Xylocarpus granatum) এবং কেওড়া (Sonneratia apetala)। ঘাস ও গুল্মের মধ্যে Poresia coaractata, Myriostachya wightiana, শন (Imperata cylindrical)], নল খাগড়া (Phragmites karka), গোলপাতা (Nypa fruticans) রয়েছে সুবিন্যস্তভাবে। কেওড়া নতুন তৈরি হওয়া পলিভূমিকে নির্দেশ করে এবং এই প্রজাতিটি বন্যপ্রাণীর জন্য জরুরী , বিশেষ করে চিত্রা হরিণের (Axis axis) জন্য । বনভূমির পাশাপাশি সুন্দরবনের বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে নোনতা ও মিঠা পানির জলাধার, আন্তঃস্রোতীয় পলিভূমি, , বালুচর, বালিয়াড়ি, বেলেমাটিতে উন্মুক্ত তৃণভূমি এবং গাছ ও গুল্মের এলাকা।
পরম্পরা বলতে সাধারণত বোঝানো হয় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ দ্বারা কোন একটি এলাকার অনুক্রমিক অধিগ্রহণ[১০]। কোন একটা জমে উঠতে থাকা কাদা চরে, আদি প্রাজাতি ক্রমে বাইরে থেকে আসা নতুন প্রজাতি দ্বারা ধাপে ধাপে প্রতিস্থাপিত হতে থাকে। সর্বশেষে ঐ আবহাওয়ায় উপযুক্ত, এমন বিভিন্ন প্রাজাতির গাছের এক স্থানীয় শ্রেণী তৈরি হয[১১]। ট্রুপের মতে অনুক্রমিকতা সধারণত শুরু হয় নতুন পলি থেকে তৈরি হওয়া ভূমিতে [১২]। নতুন গড়ে ওঠা এই ভূমিতে প্রথম পত্তন হয় গেওয়ার এবং এর সাথে Avicennia এবং গোল পাতা। পলি জমতে জমতে ভূমি যখন উঁচু হতে থাকে তখন সেখানে আসে অন্যান্য প্রজাতির গাছ। সবচেয়ে পরিচিত হলেও দেরীতে আসা প্রজাতিগুলোর মধ্যে একটি হল গেওয়া (Excoecaria agallocha) । উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে মাঝে মাঝে স্রোতে ভেসে যাওয়া ভূমিটিতে এরপর আসা শুরু করে সুন্দরী (Heritiera fomes)।
[সম্পাদনা]প্রাণীবৈচিত্র্য
সুন্দরবনে ব্যাপক প্রাণীবৈচিত্র্য বিদ্যমান। প্রাণীবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা সুন্দরবনের কিছু কিছু এলাকায় শিকার নিষিদ্ধ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ অভয়ারণ্যের মত, যেখানে শর্তহীনভাবে বনজ সম্পদ সংগ্রহ করা যায়না এবং বন্য প্রাণীর জীবনে সামান্যই ব্যাঘাত ঘটে। যদিও এটা স্পষ্ট যে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের প্রাণী সম্পদ হ্রাস পেয়েছে[৪] এবং সুন্দরবনও এর বাইরে নয় । তারপরও সুন্দরবন বেশ অনেকগুলি প্রাণী প্রাজাতি ও তাদের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য প্রজাতিদের টিকিয়ে রেখেছে। এদের মধ্যে বাঘ ও শুশুককে প্রাধাণ্য দিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে প্রানীবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা ও পর্যটন উন্নয়নের। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় সম্পূর্ণ বিপরীত পরিবেশে থাকা এ দুইটির অবস্থা এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা সামগ্রিক প্রাণীবৈচিত্র্য এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনার শক্তিশালী সূচক। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের হিসেব মতে সুন্দরবন ৫০০ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল যা পৃথিবীতে বাঘের একক বৃহত্তম অংশ[১৩]।
সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান মৌলিক প্রকৃতির এবং যা বন্য প্রাণীর বিশাল আবসস্থল। বন্য প্রাণীর সংখ্যা এবং এর লালনক্ষেত্রের উপর মানুষের সম্পদ সংগ্রহ ও বন ব্যবস্থাপনার প্রভাব অনেক। কচ্ছপ (River terrapin - Betagur baska, Indian flap-shelled turtle - Lissemys punctata এবং Peacock soft-shelled turtle - Trionyx hurum), গিরগিটি Yellow monitor - Varanus flavescens ও Water monitor - Varanus salvator), অজগর (Python molurus) এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগার (Panthera tigris tigris) সুন্দরবনের স্থানীয় প্রজাতিগুলোর মধ্যে অন্যতম।
এদের মধ্যে কিছু প্রজাতি সংরক্ষিত, বিশেষ করে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, ১৯৭৩ (P.O. 23 of 1973) দ্বারা। বিভিন্ন প্রজাতিরহরিণ (Hog deer - Axis procinus ও Swamp deer - Cervus duvauceli), মহিষ (Bubalis bubalis), গন্ডার(Javan rhinoceros - Rhiniceros sondaicus ও Single horned rhinoceros - Rhinoceros unicornis) এবং কুমিরের(Mugger crocodile - Crocodylus palustris) এর মত কিছু কিছু প্রজাতি সুন্দরবনে বিরল হয়ে উঠেছে ২১ শতকের শুরু থেকে[১৪]।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে বিচিত্র জীববৈচিত্র্যের আধার বাংলাদেশের সুন্দরবন বাণিজ্যিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রাজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ সরীসৃপ এবং ৮ টি উভচর প্রাজাতির আবাসস্থল। এ থেকে বোঝা যায় যে বাংলাদেশের সুন্দরবনে বিভিন্ন প্রজাতির একটি বড় অংশ বিদ্যমান (যেমনঃ ৩০ শতাংশ সরীসৃপ, ৩৭ শতাংশ পাখি ও ৩৭ শতাংশ স্তন্যপায়ী) এবং এদের একটি বড় অংশ দেশের অন্যান্য অংশে বিরল[১৫] Of these wildlife, Sarker has noted that two amphibians, 14 reptiles, 25 aves and five mammals are presently endangered.[১৪]। সরকারের মতে এই প্রানীবৈচিত্র্যের মধ্যে ২ প্রজাতির উভচর, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৫ প্রজাতির পাখি এবং ৫ প্রজাতির স্তনপায়ী বর্তমানে হুমকির মুখে[১৩]। পাখি বিষয়ক পর্যবেক্ষণ, পাঠ ও গবেষণার ক্ষেত্রে পাখিবিজ্ঞানীদের জন্য সুন্দরবন এক স্বর্গ[১৬]।
[সম্পাদনা]মানুষখেকো বাঘ
২০০৪ সালের হিসেব মতে, সুন্দরবন প্রায় ৫০০ রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাঘের আবাসস্থল যা বাঘের একক বৃহত্তম অংশ[১৭]। এসব বাঘ উল্ল্যেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ, গড়ে প্রতি বছরে প্রায় ১০০ থেকে ২৫০ জন, মেরে ফেলার কারণে ব্যপকভাবে পরিচিত। মানুষের বাসস্থানের সীমানার কাছাকাছি থাকা একমাত্র বাঘ নয় এরা। বাঘের অভায়ারণ্যে চারপাশ ঘেরা বান্ধবগড়ে , মানুষের উপর এমন আক্রমণ বিরল। নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ায় ভারতীয় অংশের সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে একটিও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় লোকজন ও সরকারীভাবে দ্বায়িত্বপ্রাপ্তরা বাঘের আক্রমণ ঠেকানোর জন্য বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। স্থানীয় জেলেরা বনদেবী বনবিবির প্রার্থণা ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে যাত্রা শুরুর আগে। সুন্দরবনে নিরাপদ বিচরণের জন্য বাঘের দেবতার (Dakshin Ray) প্রার্থণা করাও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে জরুরি। বাঘ যেহেতু সবসময় পেছন থেকে আক্রমণ করে সেহেতু জেলে এবং কাঠুরেরা মাথার পেছনে মুখোশ পরে। এ ব্যবস্থা স্বল্প সময়ের জন্য কাজ করলেও পরে বাঘ এ কৌশল বুঝে ফেলে এবং আবারও আক্রমণ হতে থাকে। সরকারি কর্মকর্তারা আমেরিকান ফুটবল খেলোয়াড়দের প্যাডের মত শক্ত প্যাড পরেন যা গলার পেছনের অংশ ঢেকে রাখে। এ ব্যবস্থা করা হয় শিরদাঁড়ায় বাঘের কামড় প্রতিরোধ করার জন্য যা তাদের পছন্দের আক্রমণ কৌশল।
এসব বাঘ কেন মানুষকে আক্রমণ করে তার কিছু অনুমিত কারণ এরকমঃ
- যেহেতু সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় অবস্থিত সেহেতু তুলনামূলকভাবে এখানকার পানি নোনতা। এখানকার অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে বাঘই মিঠাপানি খায়। কেউ কেউ মনে করে পেয়পানির এই লবণাক্ততার কারণে বাঘ সার্বক্ষণ অস্বস্তিকর অবস্থায় থাকে যা তাদের ব্যপকভাবে আগ্রাসী করে তোলে। কৃত্রিম মিঠাপানির হ্রদ তৈরি করে দিয়েও এর কোনো সমাধান হয়নি।
- উঁচু ঢেউয়ের কারণে বাঘের গায়ের গন্ধ মুছে যায় যা প্রকৃতপক্ষে বাঘের বিচরণ এলাকার সীমানা চিহ্ণ হিসেবে কাজ করে। ফলে নিজের এলাকা রক্ষায় বাঘের জন্য উপায় একটাই, আর তা হলো যা কিছু অনুপ্রবেশ করে তা বাঁধা দেয়া।
- অন্য একটি সম্ভাবনা এমন যে আবহাওয়ার কারণে এরা মানুষের মাংসে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের এ অঞ্চলে জলোচ্ছ্বাসে হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। আর স্রোতের টানে ভেসে যাওয়া এসব গলিত মৃতদেহ বাঘ খায়।
- আর একটি সম্ভাবনা হলো এরকম যে, নিয়মিত উঁচু-নিচু স্রোতের কারণে marsh-like এবং পিচ্ছিল হয়ে ওঠা এলাকায় বাঘের পশু শিকার করার কঠিন হয়ে যায়। আবার নৌকায় চড়ে সুন্দরবন জুড়ে মাছ ও মধু সংগ্রহকারী মানুষ বাঘের সহজ শিকার হয়ে ওঠে। এরকমও বিশ্বাস করা হয় যে মানুষ যখন কাজ বন্ধ করে বসে থাকে তখন বাঘ তাকে পশু ভেবে আক্রমণ করে।
- এছাড়াও মনে করা হয় যে আবাসস্থলের বিচ্ছিন্নতার কারণে এই অঞ্চলের বাঘ তাদের শিকার করার বৈশিষ্ট্য বদলে ফেলেছে যা ২০ শতক জুড়ে ঘটেছে। এশিয়ার বাকি অংশে বাঘের মানুষভীতি বাড়লেও সুন্দরবনের বাঘ মানুষকে শিকার বানানো বন্ধ করবে না হয়তো।
[সম্পাদনা]মৎস্য সম্পদ
সুন্দরবনের সামগ্রিক মাছের ওপর পূর্বাপর কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়নি। ফলে মাছের বর্তমান অবস্থা, বিলুপ্ত মাছ, বিলুপ্তপ্রায় মাছের ওপর উপাত্তনির্ভর তথ্য পাওয়া যায় না। শুধু, মানুষ যেসব মাছ খায় এবং যেসব মাছ রপ্তানি উপযোগী, সেসব মাছ চিহ্নিত করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, সুন্দরবনে শিরদাঁড়াওয়ালা মাছ রয়েছে প্রায় ৩০০ প্রজাতির। সাইডেনস্টিকার ও হাই-এর (পরিপ্রেক্ষিত ১৯৭৮) মতে, এর মধ্যে বাণিজ্যিক মাছ ১২০ প্রজাতির; অবশ্য বার্নাকসেকের মতে, (২০০০) বাণিজ্যিক মাছ ৮৪ প্রজাতির, কাঁকড়া-চিংড়ি ১২ প্রজাতির ও ৯ প্রজাতির শামুক রয়েছে।
সুন্দরবনে মৎস্যসম্পদকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। সব মাছ মিলিয়ে হয় সাদা মাছ, বাকিরা বাগদা, গলদা, কাঁকড়া।[২]
আশির দশকে চিংড়ির পোনা ধরা শুরু হওয়ার পর মাছের প্রাচুর্য হঠাৎ কমে যায়। একসময় স্থানীয় জনসাধারণের প্রাণিজ প্রোটিন ৮০ শতাংশ মেটাতো মাছ। এখন মাছ খাওয়ার সৌভাগ্য এলাকার খুব কম লোকের ভাগ্যে জোটে। সুন্দরবনে কালা হাঙর, ইলশা কামট, ঠুঁটি কামট, কানুয়া কামট পাওয়া যায়। আগে এদের খালিশপুর এলাকা পর্যন্ত পাওয়া যেতো, এখন (২০১০) অনেক দক্ষিণে সরে গেছে। পশ্চিম সুন্দরবনে এদের উৎপাত বেশি। এরা সংখ্যায় অনেক কমে গেছে, বিশেষ করে কালা হাঙর প্রায় দেখাই যায় না। ৯ প্রজাতির শাঁকজ বা শাপলাপাতা মাছের অধিকাংশই এখন (২০১০) সুন্দরবনের খাঁড়ি এলাকায় দেখা যায় না।[২]
কুঁচে কা কামিলা-জাতীয় মাছের পাঁচটি প্রজাতির সাগর কুইচ্চা ও ধানি কুইচ্চার অবস্থা খুবই খারাপ। আগের দিনে বাম মাছের মতো দেখতে এই মাছগুলো স্থানীয় লোকজন খেত না। এখনো খায় না। তবে হাজার হাজার কাঁকড়া মারা জেলে কুইচ্চা মাছের টুকরো কাঁকড়া ধরার টোপ হিসেবে ব্যবহার করে। শীতকালে সাগরপারের জঙ্গলি খালে পূর্ণ জোয়ারের প্রায় স্বচ্ছ জলে আর্চার ফিশ বা তীরন্দাজ মাছ দেখা যেতো। তিতপুঁটি মাছ আকারের এই মাছগুলো জলের এক-দেড় ফুট ওপরে গাছের পাতা বা ডালে পিঁপড়ে কিংবা মধ্যম আকৃতির বিভিন্ন পতঙ্গ দেখে পিচকারীর মতো তীব্র জল ছিটিয়ে পোকাটিকে ভিজিয়ে জলে ফেলে খেয়ে নেয়। এই মাছ পূর্ণবয়সকালে ফুটখানেক লম্বা হয়। এই মাছগুলো আজকাল আর দেখি না। একসময় জাভা মাছের খুব নাম শোনা যেতো, এরা ৫৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। এখন (২০১০) দেখা পাওয়া ভার। পায়রাতলী বা চিত্রার মতো অত্যন্ত সুস্বাদু মাছ আজকাল জেলেদের জালে খুব কম পড়ছে।[২]
সুন্দরবনের সবচেয়ে পরিচিত মাছ পারশে মাছ। ১৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা এ মাছটি জঙ্গলের সর্বত্র প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেতো। এখনো পাওয়া যায় খুব কম। পারশেরই জাতভাই বাটা ভাঙান। ভাঙান, গুল বাটা, খরুল ভাঙান আজকাল খুব কম ধরা পড়ে। খরশুলা বা খল্লা অত্যন্ত সুস্বাদু মাছ; বনের নদী-খালে এদের তেমন আর দেখতে পাওয়া যায় না।[২]
সুন্দরবনের কাইক্কা বা কাইকশেল মাছ স্বাদু পানির কাইক্কার চেয়ে আকারে অনেক বড় হয়। এখানকার এই ঠুঁটি কাইকশেল এখন (২০১০) খুব কম ধরা পড়ে। বিশাল আকৃতির মেদ মাছের দুটি প্রজাতি এখন বিলুপ্তপ্রায়।[২]
মারাত্মক মাছ কান মাগুর-এর পাশের কাঁটায় মারাত্মক বিষ রয়েছে। বড় কান মাগুর এখনো (২০১০) কিছু পাওয়া গেলেও দাগি কান মাগুর এখন বিলুপ্তপ্রায়। ট্যাংরা জাতের গুলশা ট্যাংরা, নোনা ট্যাংরা এখনো কিছু পাওয়া গেলেও বিশাল আকৃতির শিলং মাছ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে এসেছে। কাজলী মাছও সহসা চোখে পড়ে না। অপূর্ব সুন্দর ভোল মাছ। সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় মাছ কই ভোল এখন ধরা পড়ে কালেভদ্রে। আগে সুন্দরবনের খালে কুৎসিত দর্শন গনগইন্যা মাছ বড়শিতে ধরা পড়তো এখন (২০১০) তেমন একটা পাওয়াও যায় না। রেখা মাছ একসময় বেশ দেখা যেতো, ইদানীং দেখা পাওয়া যায় না।[২]
গুটি দাতিনা এখনো (২০১০) পাওয়া গেলেও লাল দাতিনা একেবারেই বিরল হয়ে গেছে। সুন্দরবনের নদী-খাঁড়িতে মাঝ ভাটায় অত্যন্ত সুস্বাদু লাক্ষা মাছ (স্থানী নাম তাড়িয়াল মাছ: Indian Salmon) দারুণ আলোড়ন তুলে ছোট, মাঝারি পারশে, দাতিনা মাছ তাড়িয়ে বেড়ায়। এরা আকারে প্রায় চার ফুট লম্বা হয়। এদের মতোই তপসে মাছের (স্থানীয় নাম রামশোষ) আকাল দেখা দিয়েছে (২০১০)। জেলেরা অন্তত পাঁচ প্রজাতি চেউয়া মাছ ধরে বড় নদীতে। এর মধ্যে লাল চেউয়া বিপন্ন হয়ে উঠেছে। সুন্দরবন তথা পৃথিবীর সব ক্রান্তীয় ম্যানগ্রোভ বনের প্রতীক মাছ হলো মেনো মাছ (Mud Skipper), কোথাও ডাহুক মাছ নামেও পরিচিত। বনে এদের পাঁচটি প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায়। প্রজাতিভেদে এরা ৯ থেকে ২২ সেন্টিমিটার লম্বা হয়।[২]
বনের বলেশ্বর, কুঙ্গা নদীতে যথেষ্ট ইলিশ ধরা পড়ে। দুই প্রজাতির ইলিশের মধ্যে চন্দনা ইলিশ কম পাওয়া যায় (২০১০)। ৪ প্রজাতির ফ্যাসা মাছের মধ্যে রাম ফ্যাসা কম পাওয়া যায় (২০১০)। বৈরাগী মাছের সংখ্যাও কমেছে। সুন্দরবনের ভেতর পোড়ামহল, আন্ধারমানিক, জোংরা, শুবদি-গুবদি এলাকার মাঝারি আকারের বিলগুলোতে বর্ষায় পানি আটকে যায়, কোথাও জোয়ারের পানি ঢোকে। এই বিলগুলোর পানি মিঠা, এখানে মিঠাপানির মাছ পাওয়া যায়। বেশির ভাগ জিওল মাছ। কই, শিং, মাগুর, দুই প্রজাতির টাকি, শোল ছাড়াও ছোট ট্যাংরা, পুঁটি, খলসে, চ্যালা, দাঁড়কিনা, কুঁচোচিংড়িসহ নানা মাছ পাওয়া যায়। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে এসব বিলে লোনা পানি ঢুকছে। এই বিলগুলোর মাছ তাই শেষ হওয়ার দিন গুনছে।[২]
সুন্দরবনে বর্তমানে (২০১০) ১৩ ধরনের পদ্ধতিতে মাছ ধরা হয়। ঠেলা জাল, রকেট জালের ছিদ্র খুব ছোট হওয়ায় চারা মাছ এবং মাছের ডিম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুন্দরবন এলাকায় জেলে বাড়ায় মৎস্যসম্পদ দ্রুত কমে যাচ্ছে। তবে বিষ প্রয়োগে মাছ মারায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়।[২]
[সম্পাদনা]অর্থনীতি
সুন্দরবনের জনসংখ্যা ৪ মিলিয়নের বেশি[১৮] কিন্তু এর বেশির ভাগই স্থায়ী জনসংখ্যা নয়।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিতে যেমন, ঠিক তেমনি জাতীয় অর্থনীতিতেও সুন্দরবনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এটি দেশের বনজ সম্পদের একক বৃহত্তম উৎস। এই বন কাঠের উপর নির্ভরশীল শিল্পে কাঁচামাল জোগান দেয়। এছাড়াও কাঠ, জ্বালানী ও মন্ডের মত প্রথাগত বনজ সম্পদের পাশাপাশি এ বন থেকে নিয়মিত ব্যাপকভাবে আহরণ করা হয় ঘর ছাওয়ার পাতা, মধু, মৌচাকের মোম, মাছ, কাঁকড়া এবং শামুক-ঝিনুক। বৃক্ষপূর্ণ সুন্দরবনের এই ভূমি একই সাথে প্রয়োজনীয় আবাসস্থল, পুষ্টি উৎপাদক, পানি বিশুদ্ধকারক, পলি সঞ্চয়কারী, ঝড় প্রতিরোধক, উপকূল স্থিতিকারী, শক্তি সম্পদের আধার এবং পর্যটন কেন্দ্র।
এই বন প্রচুর প্রতিরোধমূলক ও উৎপাদনমূলক ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৫১ শতাংশ জুড়ে সুন্দরবনের, বন থেকে আসা মোট আয়ে অবদান প্রায় ৪১ শতাংশ এবং কাঠ ও জ্বালানী উৎপাদনে অবদান প্রায় ৪৫ শতাংশ (বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, ১৯৯৫)। অনেকগুলি শিল্প (যেমনঃ নিউজপ্রিন্ট, দেয়াশলাই, হার্ডবোর্ড, নৌকা, আসবাবপত্র) সুন্দরবন থেকে আহরিত কাঁচামালের উপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন অ-কাঠজাত সম্পদ এবং বনায়ণ কমপক্ষে আধা মিলিয়ন উপকূলবর্তী জনসংখ্যার জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কর্মসংস্থান ও আয়ের সুযোগ সৃস্টি করেছে। উৎপাদনমূখী ভূমিকার পাশাপাশি সুন্দরবন, ঘূর্ণিঝড়প্রবণ বাংলাদেশের উপকূলবর্তী জনসংখ্যা ও তাদের সম্পদের প্রাকৃতিক নিরাপত্তাবলয় হিসেবে ভূমিকা রাখে।
মানুষের বসবাস ও অর্থনৈতিক কাজে ব্যাপক ব্যবহার হওয়া সত্ত্বেও এখনো সুন্দরবনের ৭০ শতাংশের কাছাকাছি পরিমাণ বনভূমি টিকে আছে, ১৯৮৫ সালে এমন মত জানায় যুক্তরাজ্যের ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট এডমিনিস্ট্রেশন (ও ডি এ)।
১৯৫৯ সাল থেকে ১৯৮৩ সালের মধ্যে বনজ সম্পদের স্থিতির পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে প্রধানত দুইটি ম্যানগ্রোভ প্রাজাতির ক্ষেত্রে - সুন্দরী (Heritiera fomes) এবং গেওয়া। এই হ্রাসের পরিমাণ যথাক্রমে ৪০ শতাংশ ও ৪৫ শতাংশ (ফরেস্টাল ১৯৬০ এবং ও ডি এ ১৯৮৫)। তাছাড়া, মাছ ও কিছু অমেরুদন্ডী প্রাণী ব্যতীত অন্যান্য বন্যপশু শিকারের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সেখানে জীব বৈচিত্র্য হ্রাসের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে (এ শতকে উল্লেখযোগ্য হল কমপক্ষে ৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী ও ১ প্রজাতির সরীসৃপ) এবং ফলশ্রুতিতে বাস্তুসংস্থানের মান হ্রাস পাচ্ছে (আই ইউ সি এন ১৯৯৪)।
[সম্পাদনা]বাংলাদেশের অভয়ারণ্য
বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনের আয়তন প্রায় ৪,১১০ বর্গ কি.মি.। এর মধ্যে নদী, খাল ও খাঁড়ি রয়েছে প্রায় ১,৭০০ বর্গ কি.মি. যাদের প্রশস্ততা কয়েক মিটার থেকে শুরু করে কয়েক কি.মি. পর্যন্ত। জালের মত পরস্পর যুক্ত নৌপথের কারণে সুন্দরবনের প্রায় সব জায়গাতেই সহজে নৌকায় করে যাওয়া যায়। সুন্দরবনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে ২টি বনবিভাগ, ৪টি প্রশাসনিক রেঞ্জ - চাঁদপাই, শরণখোলা, খুলনা ও বুড়িগোয়ালিনি এবং ১৬টি বন স্টেশন। বনটি আবার ৫৫ কম্পার্টমেন্ট এবং ৯টি ব্লকে বিভক্ত।[১] ১৯৯৩ সালে নতুন করে খুলনা বন সার্কেল গঠন করা হয়েছে বন সংরক্ষণের জন্য এবং তাতে একটি সংরক্ষক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। বনবিভাগের প্রশাসনিক প্রধাণের পদটি খুলনাকেন্দ্রিক। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অধীনে রয়েছে বহুসংখ্যক পেশাদার, অপেশাদার ও সহায়ক জনবল। ব্যবস্থাপনার কেন্দ্রীয় একক হল কম্পার্টমেন্ট। চারটি বন রেঞ্জের অধীনে থাকা ৫৫টি কম্পার্টমেন্ট স্পস্টতই নদী, খাল, খাঁড়ির মত প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট অনুযায়ী বিভক্ত।
বাংলাদেশে অভয়ারণ্য তিনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, ১৯৭৩ (P.O. 23 of 1973) দ্বারা। এগুলো হলোঃ
১. পূর্বাঞ্চলীয় সুন্দরবন অভয়ারণ্যঃ আয়তন প্রায় ৩১,২২৭ হেক্টর। মিঠাপানি ও সুন্দরী গাছের (Heritiera fomes) প্রাধাণ্যের সাথে সাথে গেওয়া (Excoecaria agallocha), পশুর (Xylocarpus mekongensis) ও কেওড়া (Bruguiera gymnorrhiza) রয়েছে বন্যাপ্রবণ এলাকাটি জুড়ে। সিংড়া (Cynometra ramiflora) হয় অপেক্ষাকৃত শুষ্ক মাটিতে, আমুর (Amoora cucullata) হয় জলপ্রধাণ এলাকায়, গরান (Ceriops decandra) হয় নোনা এলাকায় এবং গোল পাতা (Nypa fruticans) জলধারা বরাবর হয়।
২. দক্ষিণাঞ্চলীয় সুন্দরবন অভয়ারণ্যঃ বিস্তৃত ৩৬,৯৭০ হেক্টর এলাকা জুড়ে। এলাকাটিতে লবণাক্ততার বিশাল মৌসুমী তারতম্যের প্রমাণ রয়েছে। তুলনামূলকভাবে দীর্ঘকালীন লবণাক্ততাপ্রবণ এলাকাটির প্রধান বৃক্ষ প্রজাতির মধ্যে রয়েছে গেওয়া। এটি প্রায়ই সেসব স্থানে জন্মায় যেখানে সুন্দরী অত সফলভাবে বংশ বিস্তার করতে পারে না।
৩. পশ্চিমাঞ্চলীয় সুন্দরবন অভয়ারণ্যঃ ৭১,৫০২ হেক্টর এলাকা জুড়ে অবস্থিত। এ এলাকার তুলনামূলকভাবে শুষ্ক ভূমি ও নদীর তীরে গেওয়া, গরান ও হন্তাল জন্মে।
[সম্পাদনা]জনপ্রিয় মাধ্যমে সুন্দরবনের উপস্থিতি
- ২০০৪ সালে প্রকাশিত পুরস্কার বিজয়ী নৃতাত্ত্বিক অমিতাভ ঘোষের "দ্যা হাঙ্গরি টাইড" উপন্যাসের অধিকাংশ কাহিনী সুন্দরবনকেন্দ্রিক।
- সালমান রুশদির বুকার পুরস্কার বিজয়ী উপন্যাস "মিডনাইটস চিলড্রেন" এর কাহিনীর অংশ বিশেষও সুন্দরবনকেন্দ্রিক।
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
- ↑ ১.০ ১.১ ১.২ Pasha, Mostafa Kamal; Siddiqui, Neaz Ahmad (2003), "Sundarbans", in Islam, Sirajul, Banglapedia: national encyclopedia of Bangladesh, Dhaka: Asiatic Society of Bangladesh, আইএসবিএন 9843205766
- ↑ ২.০০ ২.০১ ২.০২ ২.০৩ ২.০৪ ২.০৫ ২.০৬ ২.০৭ ২.০৮ ২.০৯ ২.১০ খসরু চৌধুরী (২৩ জুলাই, ২০১০)। "সুন্দরবনের হারানো মাছ" (in বাংলা) (ওয়েব)।দৈনিক প্রথম আলো (ঢাকা): পৃ: ২৫. Retrieved জুলাই ২৪, ২০১০।
- ↑ Sundarbans Tiger Project
- ↑ ৪.০ ৪.১ ৪.২ Hussain, Z. and G. Acharya, 1994. (Eds.) Mangroves of the Sundarbans. Volume two : Bangladesh. IUCN, Bangkok, Thailand. 257 p.
- ↑ UNDP, 1998. Integrated resource development of the Sundarbans Reserved Forests, Bangladesh. Volume I Project BGD/84/056, United Nations Development Programme, Food and Agriculture Organization of the United Nations, Dhaka, The People's Republic of Bangladesh. 323 p.
- ↑ Katebi, M.N.A. and M.G. Habib, 1987. Sundarbans and Forestry in Coastal Area Resource Development and Management Part II, BRAC Printers, Dhaka, Bangladesh. 107 p.
- ↑ Case Studies of Climate Change, UNESCO, 2007
- ↑ Prain, D. 1903. The flora of Sundarbans. Records of the Botanical Survey of India. 114: 231-272.
- ↑ Khatun, B.M.R. and M.K. Alam, 1987. Taxonomic studies in the genus Avicennia Linn. from Bangladesh. Bangladesh J. Bot. 16(1): 39-44.
- ↑ Weaver, J.E. and F.E. Clements, 1938. Plant Ecology. McGraw-Hill Book Company, Inc. New York. 601 p.
- ↑ Watson, J.G. 1928. Mangrove swamps of the Malayan peninsula. Malayan Forest Records 6:1-275.
- ↑ Troup, R.S. 1921. The Silviculture of Indian Trees. Clarendon Press, Oxford. 1195 p.
- ↑ www.bforest.gov.bd/highlights.php
- ↑ ১৪.০ ১৪.১ Sarker, S.U. 1993. Ecology of Wildlife UNDP/FAO/BGD/85/011. Field Document N. 50 Institute of Forestry and Environmental Sciences. Chittagong, Bangladesh. 251 p.
- ↑ Scott, D.A. 1991. Asia and the Middle East Wetlands. M. Finlayson and M. Moser (eds.). Oxford: 151-178.
- ↑ Habib, M.G. 1999. Message In: Nuruzzaman, M., I.U. Ahmed and H. Banik (eds.). The Sundarbans world heritage site: an introduction, Forest Department, Ministry of Environment and Forest, Government of the People's Republic of Bangladesh. 12 p.
- ↑ www.bforest.gov.bd/highlights.php
- ↑ Subir Bhaumik, Fears rise for sinking Sundarbans, BBC News, 2003-09-15
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
- সুন্দরবন ও বাঘের উপর নিউইয়র্কারে প্রকাশিত প্রবন্ধ
- বাংলাপিডিয়াতে সুন্দরবনের উপর লিখিত প্রবন্ধ
- ইউ এন ই পি - ডাব্লিউ সি এম সি এর প্রবন্ধ
- ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় সুন্দরবন
- সুন্দরবনের বাঘের উপর গবেষণা
- সুন্দরবন ভ্রমণ নির্দেশিকা
- সুন্দরবনে, সিডরের পরে - মুস্তাফিজ মামুন এর ভ্রমণ
- বর্ষায়, বাদাবনে - মীর ওয়ালীউজ্জামান এর ভ্রমণ
- সুন্দরবন: এক সবুজ বস্ত্রখণ্ড! - নূরুল আনোয়ার এর ভ্রমণ
- সুন্দরবন: এক সবুজ বস্ত্রখণ্ড! (২) - নূরুল আনোয়ার এর ভ্রমণ
No comments:
Post a Comment