জয়ন্ত সাউ
সার শহর যখন আলোর মালায় সেজেছে, ৯ নম্বর মদন ঘোষ লেনের বাড়িটায় তখন বিষাদের আঁধার৷
দীপাবলির শহরে মান্না দের পৈতৃক ভিটেতে প্রয়াত শিল্পীকে স্মরণ করল তাঁর পরিবার৷ গীতাপাঠ আর গানে সেই পারিবারিক স্মরণসভায় রবিবার সঙ্গী হলেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে শ্রীকান্ত আচার্য৷ উত্তর কলকাতার ৯ নম্বর মদন ঘোষ লেনের দে বাড়ির একতলার জানলা থেকে উঁকি দিয়ে তানপুরা আর হারমোনিয়ামে শোভিত মান্নার রেওয়াজের ঘরটা দেখতে এসেছিলেন বহু মান্না-ভক্ত৷
এক মর্মস্পর্শী দৃশ্যের সাক্ষী থাকলেন তাঁরা৷ দেখলেন এক কিংবদন্তি শিল্পীকে কান্নায় ভেঙে পড়তে৷ শেষ যাত্রায় শিল্পীকে চাক্ষুষ করতে না-পারার আক্ষেপ বুকে চেপে হলুদ গোলাপ আর চোখের জলে মান্নাকে শ্রদ্ধা জানালেন সন্ধ্যা৷ গোলাপের বাগে চম্পা-চামেলি শুকিয়েছে আগেই৷ চেনা বাড়িটায় এসে সেই স্মৃতিভারেই নুইয়ে পড়লেন এই প্রবীণা৷ হাতে করে এনেছিলেন হলদে গোলাপের তোড়া৷ সেই ফুলের ঠাঁই হল মান্নার রেখে যাওয়া হারমোনিয়ামের উপর৷ যার প্রতিটা রিডে মিশে আছে সুর-সম্রাটের আঙুলের পরশ৷
মিনিট পনেরো-কুড়ি ছিলেন সন্ধ্যা৷ সহশিল্পীর প্রতিকৃতিতে প্রণাম জানিয়েই ভেঙে পড়লেন৷ ভেঙে পড়লেন হৈমন্তী শুক্লাও৷ শিল্পীর স্মরণে তাঁরই গাওয়া একটি গানের এককলিও শেষ করতে পারলেন না৷ এসেছিলেন অরুন্ধতী হোম চৌধুরী, শিবাজি চোপাধ্যায়, ইন্দ্রাণী সেন, শ্রীকান্ত আচার্য, সৈকত মিত্র, ইন্দ্রনীল সেন, দেবশ্রী রায়েরা৷
পাড়ার লোকের কাছে খবর ছিল, মুখ্যমন্ত্রী আসতে পারেন৷ শিল্পীর ভাইপো সুদেব দে বলছিলেন, 'আমি ওঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি৷' সকাল থেকেই তাই মদন ঘোষ লেন, সিমলা স্ট্রিট চত্বরে প্রত্যেক বাড়ির বারান্দা-জানালায় উত্সুক বাসিন্দাদের উঁকি মারতে দেখা গিয়েছে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্ত্ত শেষ পর্যন্ত আসেননি৷ তাঁর তরফে প্রয়াত শিল্পীকে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন আবাসনমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস৷ সেই ফুলের তোড়ায় লেখা ছিল, 'শ্রদ্ধার্ঘ্য মমতা৷' সঙ্গে ছিলেন এলাকার বিধায়ক শশী পাঁজাও৷ পুলিশ কমিশনার সুরজিত্ কর পুরকায়স্থ শিল্পীর রেওয়াজ-ঘরের মেঝেয় বসে মান্নার ভাইপোর গান শুনেছেন৷
মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ সত্ত্বেও পারিবারিক অভিমানের জেরে কলকাতা মান্নার শেষযাত্রা চাক্ষুষ করতে পারেনি৷ সে আক্ষেপ রয়ে গিয়েছে অনেকের মনেই৷ অরুন্ধতী হোমচৌধুরী বলেই ফেললেন, 'আমরা তো ওঁকে শেষবারের মতো দেখতে পাইনি৷ তাই আজ এখানে এসে শেষ শ্রদ্ধাটুকু জানালাম৷'
শুধু সেলেব্রিটিরাই নন৷ শিল্পীর স্মরণসভার খবর পেয়ে সকাল থেকে সরু গলিটায় ঘুর ঘুর করেছেন দূর থেকে আসা মান্না-ভক্তেরা৷ সোনারপুরের অবিনাশ সামন্ত রাস্তা থেকেই বার বার উঁকি মারছিলেন শিল্পীর একতলার ঘরে৷ অগণিত মান্না-হারা বাঙালির তিনিও একজন৷ তবে ভিতরে ঢোকা হয়নি৷ ভিআইপিদের আসা যাওয়ার পথ মসৃণ করতে তত্পর পুলিশকর্মীরা অবশ্য বার বারই নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছেন উত্সুকদের৷ কেউ কেউ আবার সকাল থেকে এসে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেছেন পাড়ারই কোনও বাড়ির চাতালে৷ শি
No comments:
Post a Comment