স্বৈরতন্ত্রী, গণতন্ত্রী
যে বা যিনি মানুষের ভালো করার জন্য রাজ্যশাসনের মতো গুরুদায়িত্ব পালন করতে অভিলাষী হবেন, ক্রোধ তাঁর পক্ষে বিষবত্৷ কিং লিয়র-এর ভুল হওয়া আর একজন সাধারণ মানুষের ভুল হওয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য থেকে যায়৷ সাধারণ একটি মানুষের ভুলে তাঁর নিজের বিপুল ক্ষতি হতে পারে৷ কিন্ত্ত যাঁরা রাজ্য শাসন করেন তাঁদের ক্রোধ থেকে সম্মোহ আর সম্মোহ থেকে বুদ্ধিনাশ হয়৷ পরিশেষে যে ট্র্যাজেডি ঘটে তার ফলে কোটি কোটি মানুষের সর্বনাশ ঘটে যেতে পারে৷ কিং লিয়ার-এর ক্ষেত্রে রাজা তো আর গণতন্ত্রে যেমন নির্বাচিত শাসক হয় তেমন নয়৷ গণতন্ত্রে নির্বাচিত শাসক হিসেবে অ্যাডলফ হিটলারের কথা বলা যেতে পারে৷ জার্মানির সাধারণ মানুষের মনে হয়েছিল হিটলার হবেন এমন শাসক যিনি জার্মানদের হাতে সম্মান পুনরুদ্ধার করতে পারবেন৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত ও অপমানিত জার্মানির পক্ষ থেকে যথোপযুক্ত প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারবেন৷ হিটলারের বক্তৃতা মাতিয়ে দিয়েছিল পুরো জার্মান জাতিকে৷
সে সব বক্তৃতার অসারতা দেখিয়েছেন চার্লি চ্যাপলিন তাঁর 'দি গ্রেট ডিক্টেটর' চলচ্চিত্রে৷ অথচ, ফ্যাসিবাদ তো ন্যাশনাল সোস্যালিজম-এর কথাই বলে৷ জার্মান জাতির পুনরুত্থানের স্বপ্ন, স্বপ্নই তো সেটা৷ আর সেই পুনরুত্থানের স্বপ্নের সঙ্গে জড়িয়ে এক পুঞ্জীভূত ক্রোধ৷ ব্যক্তিগত ও জাতীয় ক্রোধ তৈরি করছে সম্মোহ এবং সেখান থেকেই অ্যাডলফ হিটলার পাচ্ছেন গণতান্ত্রিক সমর্থন, অর্থাত্ ভোট পেয়ে দখল করছেন পার্লামেন্ট৷ পেয়ে যাচ্ছেন জার্মান জাতিকে সম্পূর্ণ করতলগত করার ক্ষমতা৷ সেখান থেকেই সৃষ্টি করছেন এক উন্মাদনা এবং একনায়কতন্ত্র৷ 'হের হিটলার' ধ্বনি ছড়িয়ে পড়ছে সারা জার্মানিতে৷ যাঁরা বুঝতে পারছেন, জার্মানি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন৷ বিপন্ন বিরোধীরা, বিপন্ন ইহুদিরা৷
সারা জার্মানি জুড়ে একজনের কাট-আউট, ফ্যুহ্রার স্বয়ং৷ অন্য কোনও নেতা নেই, অন্য কোনও বিরোধী নেই৷ বিরোধিতার অর্থ গুপ্ত হত্যা৷ কোনও বিচার নেই৷ কেননা বিচারালয় নেই৷ জাতীয় ক্রোধ থেকে সম্মোহ, সম্মোহ থেকে গোটা জার্মান জাতি যেন উন্মাদ হয়ে গিয়েছিল৷ হিটলার যেন সেই উন্মাদনা ও পাগলামির সৃষ্ট এক দানব৷
বিরোধী বনাম স্বৈরতন্ত্র
কী করছিল তখন সোস্যালিস্ট, কমিউনিস্ট, সোস্যাল ডেমোক্র্যাট্স ও ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটরা? নিজেদের মধ্যে কলহ করছিল৷ হিটলারের যখন উত্থান হচ্ছিল, তখন একে অপরের দুর্দশায় মজা পাচ্ছিল৷ তার পর তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল৷ যাঁরা কফিনবদ্ধ হলেন তাঁদের কথা স্বতন্ত্র৷ অনেকে দেশত্যাগ করলেন তাঁদের কথা না হয় বাদ দিলাম৷ বাকি সবাই প্রাণের ভয়ে নাত্সি দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলেন৷ প্রাণের ভয় বড়ো ভয়৷ সেই ভয়কে কাজে লাগিয়েছিলেন হিটলার৷ একনায়কতন্ত্রীরা গণতন্ত্র মানার ভান দেখিয়ে ক্ষমতা দখল করে, কিন্ত্ত এক বার ক্ষমতায় এলে গণতন্ত্র ধ্বংস করা এবং স্বৈরতন্ত্র কায়েম করাই তাঁদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়৷ হিটলারের গেস্টাপো বাহিনী কী ভয়ঙ্কর ভাবে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও নিধন করেছে, তা বিভিন্ন চলচ্চিত্রে বিদ্যমান৷ কিন্ত্ত এ-কথাও সত্য যে যেখানেই স্বৈরতন্ত্র কায়েম হয় সেখানে আবির্ভাব হয় এক দল নরপশুর৷ ক্ষমতার অধিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের যদি গণতান্ত্রিক উদ্দেশ্য ও দর্শন না থাকে, দেখা যাবে, অযোগ্য লোকে ভরে যাবে প্রশাসন, অশিক্ষিত ও অন্ধকার মনের মানুষ যেন পাতাল ফুঁড়ে উঠে আসবে, তখন মধ্যাহ্নে নামবে অন্ধকার৷ যেমন ঘটেছিল মহাভারতে৷ কাক, চিল, শকুন উড়ে বেড়াবে আকাশে৷
লিঙ্গভেদ ও গণতন্ত্র
স্বৈরতন্ত্রে কোনও লিঙ্গভেদ নেই৷ হিটলার বা মুসোলিনি শুধু পুরুষ বলেই ফ্যাসিস্ট, এমন নয়৷ মহিলা শাসক হলে ব্যতিক্রমী কিছু হত বলে মনে হয় না৷ যদি ক্ষমতায় না-থাকতে পারা যায় তা হলে স্বৈরতন্ত্রীর মাংসাশী সাঙ্গপাঙ্গরাই তাকে খেয়ে ফেলবে৷ এটা এক ধরনের কমপ্লেক্স, যা প্রতিনিয়ত ঈর্ষা, ক্রোধ ও হিংসা (jealousy) তৈরি করতে থাকে৷ কাছের লোক একটু শক্তি (power) অর্জন করলে তাঁকে দল থেকে হয় তাড়িয়ে দিতে হয় না হয় নিশ্চিহ্ন ও নিখোঁজ করে দিতে হয়৷ স্বৈরতন্ত্রের একটাই আইডেন্টিটি৷ ক্ষমতা বা পাওয়ার৷ এটা এক ধরনের ফ্যান্টাসি যা কোনও যুক্তির ধার ধারে না৷ নারসিসিজম্ বা আত্মরতিতে আবদ্ধ এই পরিচয়৷ ড. জনসন এ জন্যই বলেছিলেন, এই সব ক্ষমতার ফ্যান্টাসি যুক্তিতে ধ্বংস করে দেয় এবং 'সেটাই হল উন্মাদের পাঠক্রম, যা আত্মধ্বংসী' এবং যা শান্ত নির্মল পারিপার্শ্বকে ধ্বংস করে দেয়৷ আর শাসকের 'নারী' হওয়া মানেই রাষ্ট্রের বা রাজ্যের সব মেয়েরা নিরাপদ তেমন হওয়া প্রায় অসম্ভব৷ পুরুষ নিয়ন্ত্রিত সমাজ ব্যবস্থায় 'স্বৈরতন্ত্রী' শাসকের অস্ত্র হল লুম্পেন, লেঠেল, গুন্ডা ও মর্ষকামী বিকৃত রুচি ও নারী-ধর্ষণকারী৷ 'স্বৈরতন্ত্রী'-র ধর্মই এদের প্রশ্রয় দেওয়া৷ রাজা ডানকানকে হত্যা করার ক্ষেত্রে লেডি ম্যাকবেথের ভূমিকা এ প্রসঙ্গে স্মর্তব্য৷
উন্মাদের পাঠক্রম
পল পট যেমন দলকে ব্যবহার করে স্বৈরতন্ত্র চালিয়েছিল, স্বৈরতন্ত্রী শাসকও দলকে ব্যবহার করে নিশ্চয়ই৷ একা তো সব কিছু করা যায় না! কিন্ত্ত দলের সেই সব লোক শাসকের ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকবে, আবার অন্যদেরও সন্ত্রস্ত করে রাখবে৷ এখানে তাই প্রথমে ব্যক্তি অর্থাত্ স্বৈরতন্ত্রী শাসক, তার পর প্রতীক এবং তার পর স্বৈরতন্ত্রী শাসকের নিজস্ব চার বা পাঁচজনের কোর গ্রুপ (সেখানে লোক বদলাতে পারে, কিন্ত্ত কয়েকজন সব চাইতে নির্ভরযোগ্য সদস্য থাকবেন যেমন গোয়েবল্স, হিমলার)৷ পার্টির নিজস্ব বাহিনী থাকবে, গুপ্ত খুনি থাকবে৷ এদের লেলিয়ে দেওয়া হবে৷ লেলিয়ে দিতে হবে না, প্রশ্রয় দিয়ে ও ছেড়ে দিলেই হবে নিরীহ নারী-পুরুষের দিকে৷ কোনও মাংসাশী প্রাণী পুষতে গেলে তাকে মাংস খাওয়াতে হয়, আলো হাওয়ায় খেলতে দিতে হয়, গরিব ভিখিরিকে ভয় পাওয়ানোর ট্রেনিং দিতে হয়৷ ঠিক সে রকম ভাবে কিছু মানুষ ও বুদ্ধিজীবীদের পুষতে হয় এই শাসককে৷ এ কথা কৌটিল্য তার অর্থশাস্ত্রে বলে গিয়েছে৷ আরও বলেছেন যে গুপ্তচর হল শাসকের একটি বড়ো শক্তি৷ ম্যাকডাফ্ প্রসঙ্গে ম্যাকবেথ বলেছিল, 'আই হ্যাভ কেপ্ট আ সারভ্যান্ট ফিইড ইন হিজ হাউস৷' স্বৈরতন্ত্রী শাসকের আরও একটি বড়ো অবদান সন্ত্রাসের সঙ্গে সঙ্গে অপসংস্কৃতিকে প্রশ্রয় দেওয়া এবং মূল্যবোধ ধ্বংস করা৷ নাটক, সাহিত্য, সিনেমার উপর কড়া নজর রাখা৷ এটাই হল উন্মাদের পাঠক্রম৷
নিরো, রোম এবং সেনেকা
রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাট নিরো স্বৈরতন্ত্র ও স্বেচ্ছাচারিতার আর এক মূর্ত প্রতীক৷ তাঁর সম্পর্কে সবাই একটি কথাই বলেন, রোম যখন পুড়ছিল, সম্রাট নিরো তখন বেহালা বাজাচ্ছিলেন৷ এই বেহালা বাজানো স্বৈরতন্ত্রীর এক চূড়ান্ত নারসিসিজমের প্রতীক অথবা এ-যেন সম্ভাব্য ধ্বংসের ও আত্মহত্যার প্রতীক৷ এই নিরো প্রকাশ্যে আত্মহত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন দার্শনিক ও নাট্যকার সেনেকাকে৷ অথচ, সেনেকা ছিলেন তাঁর পরম প্রিয় গৃহশিক্ষক (টিউটর)৷ ক্যালিগুলার মৃত্যুর পর নিরোর পিতার আদেশ অমান্য করতে পারেননি সেনেকা৷ তিনি নিরোর গৃহশিক্ষক হতে চাননি, তবু তাঁকে সে দায়িত্ব নিতে বাধ্য করা হয়েছিল৷ পরবর্তিকালে কী ভাবে যেন রটে গেল, সেনেকা সম্রাট নিরোকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করছেন৷ সেই সব ঘটনার পরও নিরো সেনেকাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলেন, বলেছিলেন যে যাই বলুক তাঁর প্রিয় গুরুকে তিনি চিরকাল একই সম্মান দেবেন৷ সে দিনই কিছুক্ষণ পরে আদেশ বেরোল প্রকাশ্যে, স্বজন-পরিজন পরিবৃত হয়ে আত্মহত্যা করতে হবে সেনেকাকে৷
ষড়যন্ত্র
স্বৈরতান্ত্রিক শাসকের চিরকালই বিরোধীদের দমন করার একটি-ই অস্ত্র: ষড়যন্ত্র, হত্যার ষড়যন্ত্র, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র৷ রাজতন্ত্রে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় আসার দৃষ্টান্ত অগণ্য৷ গণতন্ত্রেও এ দৃষ্টান্তের অভাব নেই৷ দলভাঙা, দলগড়া- এটা যেন রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, খেলা ভাঙার খেলা৷ ঔরঙ্গজিব নিজে খুনী ও ষড়যন্ত্রী ছিলেন বলে নিজের ছায়াকে ভয় পেতেন৷ আর শেক্সপিয়র তাঁর ম্যাকবেথ নাটকে দেখিয়েছেন, লেডি মাকবেথ কী ভাবে রাত্রে হেঁটে বেড়াতেন অজ্ঞানে, ডানকানের হত্যার দৃশ্যের সংলাপ বলতেন৷ চিকিত্সক হতবাক হয়ে বলে উঠেছিলেন: এ তো ভয়ঙ্কর নির্মম অপরাধের যন্ত্রণা৷ আত্মহত্যা করেছিলেন লেডি ম্যাকবেথ৷ আত্মহত্যা করেছিলেন মহানায়ক অ্যাডলফ হিটলার, রক্তস্রোত বইয়ে দিয়েছিলেন যিনি পৃথিবীতে৷ কিন্ত্ত থেকে গেল একটি ভয়ঙ্কর শব্দ: ষড়যন্ত্র৷
পরিবর্তন ও একটি নৃশংস (আত্ম)হত্যা
সেনেকা এই সময় বুঝেছিলেন ব্যর্থতা কাকে বলে৷ তাঁর প্রিয় ছাত্র এবং সম্রাট নিরোকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার জন্য সেনেকাকে এক ভয়ঙ্কর প্রাণদণ্ড দিলেন৷ প্রকাশ্যে আত্মহত্যা করতে হবে সেনেকাকে৷ নিরো রাত্রিবেলা ছদ্মবেশে ঘুরতেন রোমে৷ নির্জনে পেলেই নিরপরাধকে হত্যা করতেন৷ নিরোর মতিগতি ভালোই জানতেন সেনেকা৷ কিন্ত্ত তাঁর কোনও উপায় ছিল না আত্মরক্ষার৷ প্রথমে হাতের শিরা কেটে ফেললেন সেনেকা, তাতেও মৃত্যু দ্রুত হল না, তখন হেমলক খাওয়ানোর অনুরোধ জানালেন সেনেকা৷ কেননা সক্রেটিস ছিলেন তাঁর এক অনন্য আদর্শ, কিন্ত্ত সে মৃত্যুও যথেষ্ট তাড়াতাড়ি হচ্ছে না, তখন বিষবাষ্প গ্রহণ করে মারা গেলেন সেনেকা৷ সেনেকা নিশ্চয়ই বুঝতেন, চক্রবত্ পরিবর্তন্তে সুখানি চ দুখানি চ৷ আর এই পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছিলেন: 'সমাজের আলোড়নে উত্পন্ন হয় এক ধরনের অনিশ্চয়তা, তখন মানুষ আশা করে সেটা ভালোর জন্যই হবে, মনের মধ্যে আবার অন্য আশঙ্কা কাজ করে, এই পরিবর্তন ভয়ঙ্কর খারাপ হবে না তো?' (সেনেকা, অন অ্যাংজাইটি)৷
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত
কী ভাষায় কথা বলে? নিরো বা হিটলারের মতো চরিত্র, অথবা কল্পনার লেডি ম্যাকবেথ- ইতিহাসের পাতা খুঁজে দেখলেন অনিল আচার্য
ক্রোধাদ্ভবতি সম্মোহঃ সম্মোহাত্ স্মৃতিবিভ্রমঃ৷
স্মৃতিভ্রংশাদ্ বুদ্ধিনাশো বুদ্ধিনাশাত্ প্রণশ্যতি৷৷
শ্রীমদ্ভগবগীতা, সাংখ্য-যোগ (দ্বিতীয়োহধ্যায়ঃ; শ্লোক ৬৩)
ক্রোধ থেকে ব্যর্থতা জন্মায়, না ব্যর্থতা থেকেও ক্রোধ জন্মায়? ক্রোধ যেখানে শেষ ফল বা এন্ড প্রডাক্ট, ব্যর্থতা সে ক্ষেত্রে উত্সমুখ৷ আবার ক্রোধের বশবর্তী হয়ে সিদ্ধান্ত এবং সেই সিদ্ধান্তের ফলে যে চূড়ান্ত বিফলতা বা ট্রাজেডি সেটা অবশ্যই তীব্র ব্যর্থতাবোধের জন্ম দিয়ে থাকে৷ কিং লিয়ারের কথা ভাবলে দেখা যাবে, রাজা বিশ্বাসস্থাপনে ভুল করছেন৷ একটি সাধারণ সত্য যা কর্ডেলিয়া বলেছিল আত্ম-অহঙ্কারে সেটাও তিনি গ্রহণ করতে অক্ষম, ফলে তিনি ভয়ানক ক্রুদ্ধ হচ্ছেন৷
ভালোবাসার কনিষ্ঠা কন্যার কাছ থেকে বাস্তবোচিত ব্যাখ্যা তিনি গ্রহণ করতে পারছেন না৷ প্রত্যাশা ও যৌক্তিকতার মধ্যে এক বিরাট ব্যবধান থেকে যাচ্ছে৷ আর এই ব্যর্থতার ফলে জন্মাচ্ছে বিপুল ক্রোধ, সেই ক্রোধের বশবর্তী হয়ে তিনি নির্বাসিত করছেন কর্ডেলিয়াকে৷ অন্য দুই কন্যা গনেরিল ও রিগান-এর ছলনাতে তিনি বিমুগ্ধ৷ বাস্তবতার ক্ষেত্রটি অনুধাবন করতে পারছেন না৷ রাজত্ব ও রাজ্যবাসীকে সমর্পণ করছেন এমন দুই কন্যার হাতে যারা নৃশংস ও অত্যাচারী এবং শাসন ক্ষমতা দখল করতে চায় ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে৷ বাস্তবতা উপলব্ধির ব্যর্থতা থেকে ক্রোধ এবং ক্রোধ থেকে গৃহীত সিদ্ধান্তে উন্মাদ হয়ে গেলেন লিয়র৷ ক্রোধজাত দুর্বিবেচনায় তাঁর প্রিয়তম কন্যারও মৃত্যুর কারণ হলেন তিনি৷
ক্রোধাদ্ভবতি সম্মোহঃ সম্মোহাত্ স্মৃতিবিভ্রমঃ৷
স্মৃতিভ্রংশাদ্ বুদ্ধিনাশো বুদ্ধিনাশাত্ প্রণশ্যতি৷৷
শ্রীমদ্ভগবগীতা, সাংখ্য-যোগ (দ্বিতীয়োহধ্যায়ঃ; শ্লোক ৬৩)
ক্রোধ থেকে ব্যর্থতা জন্মায়, না ব্যর্থতা থেকেও ক্রোধ জন্মায়? ক্রোধ যেখানে শেষ ফল বা এন্ড প্রডাক্ট, ব্যর্থতা সে ক্ষেত্রে উত্সমুখ৷ আবার ক্রোধের বশবর্তী হয়ে সিদ্ধান্ত এবং সেই সিদ্ধান্তের ফলে যে চূড়ান্ত বিফলতা বা ট্রাজেডি সেটা অবশ্যই তীব্র ব্যর্থতাবোধের জন্ম দিয়ে থাকে৷ কিং লিয়ারের কথা ভাবলে দেখা যাবে, রাজা বিশ্বাসস্থাপনে ভুল করছেন৷ একটি সাধারণ সত্য যা কর্ডেলিয়া বলেছিল আত্ম-অহঙ্কারে সেটাও তিনি গ্রহণ করতে অক্ষম, ফলে তিনি ভয়ানক ক্রুদ্ধ হচ্ছেন৷
ভালোবাসার কনিষ্ঠা কন্যার কাছ থেকে বাস্তবোচিত ব্যাখ্যা তিনি গ্রহণ করতে পারছেন না৷ প্রত্যাশা ও যৌক্তিকতার মধ্যে এক বিরাট ব্যবধান থেকে যাচ্ছে৷ আর এই ব্যর্থতার ফলে জন্মাচ্ছে বিপুল ক্রোধ, সেই ক্রোধের বশবর্তী হয়ে তিনি নির্বাসিত করছেন কর্ডেলিয়াকে৷ অন্য দুই কন্যা গনেরিল ও রিগান-এর ছলনাতে তিনি বিমুগ্ধ৷ বাস্তবতার ক্ষেত্রটি অনুধাবন করতে পারছেন না৷ রাজত্ব ও রাজ্যবাসীকে সমর্পণ করছেন এমন দুই কন্যার হাতে যারা নৃশংস ও অত্যাচারী এবং শাসন ক্ষমতা দখল করতে চায় ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে৷ বাস্তবতা উপলব্ধির ব্যর্থতা থেকে ক্রোধ এবং ক্রোধ থেকে গৃহীত সিদ্ধান্তে উন্মাদ হয়ে গেলেন লিয়র৷ ক্রোধজাত দুর্বিবেচনায় তাঁর প্রিয়তম কন্যারও মৃত্যুর কারণ হলেন তিনি৷
যে বা যিনি মানুষের ভালো করার জন্য রাজ্যশাসনের মতো গুরুদায়িত্ব পালন করতে অভিলাষী হবেন, ক্রোধ তাঁর পক্ষে বিষবত্৷ কিং লিয়র-এর ভুল হওয়া আর একজন সাধারণ মানুষের ভুল হওয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য থেকে যায়৷ সাধারণ একটি মানুষের ভুলে তাঁর নিজের বিপুল ক্ষতি হতে পারে৷ কিন্ত্ত যাঁরা রাজ্য শাসন করেন তাঁদের ক্রোধ থেকে সম্মোহ আর সম্মোহ থেকে বুদ্ধিনাশ হয়৷ পরিশেষে যে ট্র্যাজেডি ঘটে তার ফলে কোটি কোটি মানুষের সর্বনাশ ঘটে যেতে পারে৷ কিং লিয়ার-এর ক্ষেত্রে রাজা তো আর গণতন্ত্রে যেমন নির্বাচিত শাসক হয় তেমন নয়৷ গণতন্ত্রে নির্বাচিত শাসক হিসেবে অ্যাডলফ হিটলারের কথা বলা যেতে পারে৷ জার্মানির সাধারণ মানুষের মনে হয়েছিল হিটলার হবেন এমন শাসক যিনি জার্মানদের হাতে সম্মান পুনরুদ্ধার করতে পারবেন৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত ও অপমানিত জার্মানির পক্ষ থেকে যথোপযুক্ত প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারবেন৷ হিটলারের বক্তৃতা মাতিয়ে দিয়েছিল পুরো জার্মান জাতিকে৷
সে সব বক্তৃতার অসারতা দেখিয়েছেন চার্লি চ্যাপলিন তাঁর 'দি গ্রেট ডিক্টেটর' চলচ্চিত্রে৷ অথচ, ফ্যাসিবাদ তো ন্যাশনাল সোস্যালিজম-এর কথাই বলে৷ জার্মান জাতির পুনরুত্থানের স্বপ্ন, স্বপ্নই তো সেটা৷ আর সেই পুনরুত্থানের স্বপ্নের সঙ্গে জড়িয়ে এক পুঞ্জীভূত ক্রোধ৷ ব্যক্তিগত ও জাতীয় ক্রোধ তৈরি করছে সম্মোহ এবং সেখান থেকেই অ্যাডলফ হিটলার পাচ্ছেন গণতান্ত্রিক সমর্থন, অর্থাত্ ভোট পেয়ে দখল করছেন পার্লামেন্ট৷ পেয়ে যাচ্ছেন জার্মান জাতিকে সম্পূর্ণ করতলগত করার ক্ষমতা৷ সেখান থেকেই সৃষ্টি করছেন এক উন্মাদনা এবং একনায়কতন্ত্র৷ 'হের হিটলার' ধ্বনি ছড়িয়ে পড়ছে সারা জার্মানিতে৷ যাঁরা বুঝতে পারছেন, জার্মানি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন৷ বিপন্ন বিরোধীরা, বিপন্ন ইহুদিরা৷
সারা জার্মানি জুড়ে একজনের কাট-আউট, ফ্যুহ্রার স্বয়ং৷ অন্য কোনও নেতা নেই, অন্য কোনও বিরোধী নেই৷ বিরোধিতার অর্থ গুপ্ত হত্যা৷ কোনও বিচার নেই৷ কেননা বিচারালয় নেই৷ জাতীয় ক্রোধ থেকে সম্মোহ, সম্মোহ থেকে গোটা জার্মান জাতি যেন উন্মাদ হয়ে গিয়েছিল৷ হিটলার যেন সেই উন্মাদনা ও পাগলামির সৃষ্ট এক দানব৷
বিরোধী বনাম স্বৈরতন্ত্র
কী করছিল তখন সোস্যালিস্ট, কমিউনিস্ট, সোস্যাল ডেমোক্র্যাট্স ও ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটরা? নিজেদের মধ্যে কলহ করছিল৷ হিটলারের যখন উত্থান হচ্ছিল, তখন একে অপরের দুর্দশায় মজা পাচ্ছিল৷ তার পর তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল৷ যাঁরা কফিনবদ্ধ হলেন তাঁদের কথা স্বতন্ত্র৷ অনেকে দেশত্যাগ করলেন তাঁদের কথা না হয় বাদ দিলাম৷ বাকি সবাই প্রাণের ভয়ে নাত্সি দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলেন৷ প্রাণের ভয় বড়ো ভয়৷ সেই ভয়কে কাজে লাগিয়েছিলেন হিটলার৷ একনায়কতন্ত্রীরা গণতন্ত্র মানার ভান দেখিয়ে ক্ষমতা দখল করে, কিন্ত্ত এক বার ক্ষমতায় এলে গণতন্ত্র ধ্বংস করা এবং স্বৈরতন্ত্র কায়েম করাই তাঁদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়৷ হিটলারের গেস্টাপো বাহিনী কী ভয়ঙ্কর ভাবে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও নিধন করেছে, তা বিভিন্ন চলচ্চিত্রে বিদ্যমান৷ কিন্ত্ত এ-কথাও সত্য যে যেখানেই স্বৈরতন্ত্র কায়েম হয় সেখানে আবির্ভাব হয় এক দল নরপশুর৷ ক্ষমতার অধিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের যদি গণতান্ত্রিক উদ্দেশ্য ও দর্শন না থাকে, দেখা যাবে, অযোগ্য লোকে ভরে যাবে প্রশাসন, অশিক্ষিত ও অন্ধকার মনের মানুষ যেন পাতাল ফুঁড়ে উঠে আসবে, তখন মধ্যাহ্নে নামবে অন্ধকার৷ যেমন ঘটেছিল মহাভারতে৷ কাক, চিল, শকুন উড়ে বেড়াবে আকাশে৷
লিঙ্গভেদ ও গণতন্ত্র
স্বৈরতন্ত্রে কোনও লিঙ্গভেদ নেই৷ হিটলার বা মুসোলিনি শুধু পুরুষ বলেই ফ্যাসিস্ট, এমন নয়৷ মহিলা শাসক হলে ব্যতিক্রমী কিছু হত বলে মনে হয় না৷ যদি ক্ষমতায় না-থাকতে পারা যায় তা হলে স্বৈরতন্ত্রীর মাংসাশী সাঙ্গপাঙ্গরাই তাকে খেয়ে ফেলবে৷ এটা এক ধরনের কমপ্লেক্স, যা প্রতিনিয়ত ঈর্ষা, ক্রোধ ও হিংসা (jealousy) তৈরি করতে থাকে৷ কাছের লোক একটু শক্তি (power) অর্জন করলে তাঁকে দল থেকে হয় তাড়িয়ে দিতে হয় না হয় নিশ্চিহ্ন ও নিখোঁজ করে দিতে হয়৷ স্বৈরতন্ত্রের একটাই আইডেন্টিটি৷ ক্ষমতা বা পাওয়ার৷ এটা এক ধরনের ফ্যান্টাসি যা কোনও যুক্তির ধার ধারে না৷ নারসিসিজম্ বা আত্মরতিতে আবদ্ধ এই পরিচয়৷ ড. জনসন এ জন্যই বলেছিলেন, এই সব ক্ষমতার ফ্যান্টাসি যুক্তিতে ধ্বংস করে দেয় এবং 'সেটাই হল উন্মাদের পাঠক্রম, যা আত্মধ্বংসী' এবং যা শান্ত নির্মল পারিপার্শ্বকে ধ্বংস করে দেয়৷ আর শাসকের 'নারী' হওয়া মানেই রাষ্ট্রের বা রাজ্যের সব মেয়েরা নিরাপদ তেমন হওয়া প্রায় অসম্ভব৷ পুরুষ নিয়ন্ত্রিত সমাজ ব্যবস্থায় 'স্বৈরতন্ত্রী' শাসকের অস্ত্র হল লুম্পেন, লেঠেল, গুন্ডা ও মর্ষকামী বিকৃত রুচি ও নারী-ধর্ষণকারী৷ 'স্বৈরতন্ত্রী'-র ধর্মই এদের প্রশ্রয় দেওয়া৷ রাজা ডানকানকে হত্যা করার ক্ষেত্রে লেডি ম্যাকবেথের ভূমিকা এ প্রসঙ্গে স্মর্তব্য৷
উন্মাদের পাঠক্রম
পল পট যেমন দলকে ব্যবহার করে স্বৈরতন্ত্র চালিয়েছিল, স্বৈরতন্ত্রী শাসকও দলকে ব্যবহার করে নিশ্চয়ই৷ একা তো সব কিছু করা যায় না! কিন্ত্ত দলের সেই সব লোক শাসকের ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকবে, আবার অন্যদেরও সন্ত্রস্ত করে রাখবে৷ এখানে তাই প্রথমে ব্যক্তি অর্থাত্ স্বৈরতন্ত্রী শাসক, তার পর প্রতীক এবং তার পর স্বৈরতন্ত্রী শাসকের নিজস্ব চার বা পাঁচজনের কোর গ্রুপ (সেখানে লোক বদলাতে পারে, কিন্ত্ত কয়েকজন সব চাইতে নির্ভরযোগ্য সদস্য থাকবেন যেমন গোয়েবল্স, হিমলার)৷ পার্টির নিজস্ব বাহিনী থাকবে, গুপ্ত খুনি থাকবে৷ এদের লেলিয়ে দেওয়া হবে৷ লেলিয়ে দিতে হবে না, প্রশ্রয় দিয়ে ও ছেড়ে দিলেই হবে নিরীহ নারী-পুরুষের দিকে৷ কোনও মাংসাশী প্রাণী পুষতে গেলে তাকে মাংস খাওয়াতে হয়, আলো হাওয়ায় খেলতে দিতে হয়, গরিব ভিখিরিকে ভয় পাওয়ানোর ট্রেনিং দিতে হয়৷ ঠিক সে রকম ভাবে কিছু মানুষ ও বুদ্ধিজীবীদের পুষতে হয় এই শাসককে৷ এ কথা কৌটিল্য তার অর্থশাস্ত্রে বলে গিয়েছে৷ আরও বলেছেন যে গুপ্তচর হল শাসকের একটি বড়ো শক্তি৷ ম্যাকডাফ্ প্রসঙ্গে ম্যাকবেথ বলেছিল, 'আই হ্যাভ কেপ্ট আ সারভ্যান্ট ফিইড ইন হিজ হাউস৷' স্বৈরতন্ত্রী শাসকের আরও একটি বড়ো অবদান সন্ত্রাসের সঙ্গে সঙ্গে অপসংস্কৃতিকে প্রশ্রয় দেওয়া এবং মূল্যবোধ ধ্বংস করা৷ নাটক, সাহিত্য, সিনেমার উপর কড়া নজর রাখা৷ এটাই হল উন্মাদের পাঠক্রম৷
নিরো, রোম এবং সেনেকা
রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাট নিরো স্বৈরতন্ত্র ও স্বেচ্ছাচারিতার আর এক মূর্ত প্রতীক৷ তাঁর সম্পর্কে সবাই একটি কথাই বলেন, রোম যখন পুড়ছিল, সম্রাট নিরো তখন বেহালা বাজাচ্ছিলেন৷ এই বেহালা বাজানো স্বৈরতন্ত্রীর এক চূড়ান্ত নারসিসিজমের প্রতীক অথবা এ-যেন সম্ভাব্য ধ্বংসের ও আত্মহত্যার প্রতীক৷ এই নিরো প্রকাশ্যে আত্মহত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন দার্শনিক ও নাট্যকার সেনেকাকে৷ অথচ, সেনেকা ছিলেন তাঁর পরম প্রিয় গৃহশিক্ষক (টিউটর)৷ ক্যালিগুলার মৃত্যুর পর নিরোর পিতার আদেশ অমান্য করতে পারেননি সেনেকা৷ তিনি নিরোর গৃহশিক্ষক হতে চাননি, তবু তাঁকে সে দায়িত্ব নিতে বাধ্য করা হয়েছিল৷ পরবর্তিকালে কী ভাবে যেন রটে গেল, সেনেকা সম্রাট নিরোকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করছেন৷ সেই সব ঘটনার পরও নিরো সেনেকাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলেন, বলেছিলেন যে যাই বলুক তাঁর প্রিয় গুরুকে তিনি চিরকাল একই সম্মান দেবেন৷ সে দিনই কিছুক্ষণ পরে আদেশ বেরোল প্রকাশ্যে, স্বজন-পরিজন পরিবৃত হয়ে আত্মহত্যা করতে হবে সেনেকাকে৷
ষড়যন্ত্র
স্বৈরতান্ত্রিক শাসকের চিরকালই বিরোধীদের দমন করার একটি-ই অস্ত্র: ষড়যন্ত্র, হত্যার ষড়যন্ত্র, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র৷ রাজতন্ত্রে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় আসার দৃষ্টান্ত অগণ্য৷ গণতন্ত্রেও এ দৃষ্টান্তের অভাব নেই৷ দলভাঙা, দলগড়া- এটা যেন রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, খেলা ভাঙার খেলা৷ ঔরঙ্গজিব নিজে খুনী ও ষড়যন্ত্রী ছিলেন বলে নিজের ছায়াকে ভয় পেতেন৷ আর শেক্সপিয়র তাঁর ম্যাকবেথ নাটকে দেখিয়েছেন, লেডি মাকবেথ কী ভাবে রাত্রে হেঁটে বেড়াতেন অজ্ঞানে, ডানকানের হত্যার দৃশ্যের সংলাপ বলতেন৷ চিকিত্সক হতবাক হয়ে বলে উঠেছিলেন: এ তো ভয়ঙ্কর নির্মম অপরাধের যন্ত্রণা৷ আত্মহত্যা করেছিলেন লেডি ম্যাকবেথ৷ আত্মহত্যা করেছিলেন মহানায়ক অ্যাডলফ হিটলার, রক্তস্রোত বইয়ে দিয়েছিলেন যিনি পৃথিবীতে৷ কিন্ত্ত থেকে গেল একটি ভয়ঙ্কর শব্দ: ষড়যন্ত্র৷
পরিবর্তন ও একটি নৃশংস (আত্ম)হত্যা
সেনেকা এই সময় বুঝেছিলেন ব্যর্থতা কাকে বলে৷ তাঁর প্রিয় ছাত্র এবং সম্রাট নিরোকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার জন্য সেনেকাকে এক ভয়ঙ্কর প্রাণদণ্ড দিলেন৷ প্রকাশ্যে আত্মহত্যা করতে হবে সেনেকাকে৷ নিরো রাত্রিবেলা ছদ্মবেশে ঘুরতেন রোমে৷ নির্জনে পেলেই নিরপরাধকে হত্যা করতেন৷ নিরোর মতিগতি ভালোই জানতেন সেনেকা৷ কিন্ত্ত তাঁর কোনও উপায় ছিল না আত্মরক্ষার৷ প্রথমে হাতের শিরা কেটে ফেললেন সেনেকা, তাতেও মৃত্যু দ্রুত হল না, তখন হেমলক খাওয়ানোর অনুরোধ জানালেন সেনেকা৷ কেননা সক্রেটিস ছিলেন তাঁর এক অনন্য আদর্শ, কিন্ত্ত সে মৃত্যুও যথেষ্ট তাড়াতাড়ি হচ্ছে না, তখন বিষবাষ্প গ্রহণ করে মারা গেলেন সেনেকা৷ সেনেকা নিশ্চয়ই বুঝতেন, চক্রবত্ পরিবর্তন্তে সুখানি চ দুখানি চ৷ আর এই পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছিলেন: 'সমাজের আলোড়নে উত্পন্ন হয় এক ধরনের অনিশ্চয়তা, তখন মানুষ আশা করে সেটা ভালোর জন্যই হবে, মনের মধ্যে আবার অন্য আশঙ্কা কাজ করে, এই পরিবর্তন ভয়ঙ্কর খারাপ হবে না তো?' (সেনেকা, অন অ্যাংজাইটি)৷
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত
No comments:
Post a Comment