Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Memories of Another day

Memories of Another day
While my Parents Pulin babu and Basanti devi were living

Monday, August 19, 2013

ছুটন্ত ট্রেন থামিয়ে লাইন পারের চেষ্টা, মৃত ৩৭ পুণ্যার্থী

ছুটন্ত ট্রেন থামিয়ে লাইন পারের চেষ্টা, মৃত ৩৭ পুণ্যার্থী

ছুটন্ত ট্রেন থামিয়ে লাইন পারের চেষ্টা, মৃত ৩৭ পুণ্যার্থী
পাটনা: ঘণ্টায় আশি কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা সাক্ষাত্‍ মৃত্যুকে হাত দেখিয়ে থামানোর চেষ্টা করেছিলেন ওঁরা৷ পারেননি৷ রাজ্যরানি এক্সপ্রেস অন্তত ৩৭ জন পুণ্যার্থীকে ছিটকে-পিষে দিয়ে তবে থেমেছে৷ মৃত্যুদূতের উপর অবশ্য শোধ তুলে নিয়েছে উন্মত্ত জনতা৷ পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে ট্রেনটা, বেধড়ক মারে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন চালক৷ ভেঙে ছত্রখান করে দেওয়া হয়েছে স্টেশনও, গুম করা হয়েছে রেলের বেশ কিছু আধিকারিককে৷ 



ঘটনাস্থল, বিহারের খাগারিয়া জেলায়৷ পাটনা থেকে শ' দু'য়েক কিলোমিটার দূরে অখ্যাত স্টেশন ধামারাঘাট হল্ট৷ সকাল তখন আটটা চল্লিশ৷ সবে এসে থেমেছে দু' দিকের দু'টি লোকাল ট্রেন, দলে দলে নামছেন শিবভক্ত কানওয়ারিয়ারা৷ ওঁদের পঞ্জিকা অনুযায়ী শ্রাবণ মাসের শেষ দিন, তাই কাছেই কাত্যায়নীর থানে পুজো চড়াতে যাবেন৷ ওভারব্রিজ নেই, তাই ওঁরা মন্দিরে যাবেন লাইন পেরিয়েই৷ যাত্রী নামিয়ে একটি লোকাল সবে রওনা দিয়েছে৷ দু'টি ট্রেনের মাঝের লাইনে সিগন্যাল তত ক্ষণে সবুজ৷ আসছে পাটনাগামী রাজ্যরানি এক্সপ্রেস৷ ধামারাঘাটে দাঁড়ানোর কথাই নয় তার৷ পুণ্যার্থীরা কিন্ত্ত হাত দেখিয়ে ট্রেন থামানোর চেষ্টা করেছিলেন৷ হয়তো ভেবেছিলেন, এতগুলো লোককে লাইন পেরোতে দেখলে ট্রেন কি আর না-থেমে পারবে? ভুল ভেবেছিলেন৷ রেল কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী চালক ইমার্জেন্সি ব্রেক কষেছিলেন বটে, কিন্ত্ত তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে৷ ধাবমান মৃত্যু এসে পড়েছে ঘাড়ের উপর৷ মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ভয়ে কাঁটা পুণ্যার্থীরা লাইন থেকে আর নড়তেই পারেননি৷ রাজ্যরানি মুহূর্তে পিষে দিয়ে গিয়েছে ওঁদের৷ 



রেল ও রাজ্য প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্য বলছে, দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৭ জন৷ এঁদের মধ্যে ৩০ জনই মহিলা৷ পুরুষ ৪ জন, শিশু ৩টি৷ আহতের সংখ্যা ৪০৷ দু'টি কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ এক, আহতদের অনেকেরই অবস্থা সঙ্কটজনক৷ আর দুই, গাড়ি চলাচল করতে পারে, ধামারাঘাটের সবচেয়ে কাছে এমন সড়ক নয় নয় করেও ৬ কিলোমিটার দূরে৷ তার উপরে চারপাশের অনেক এলাকাই প্রবল বর্ষণে জলে ডুবে৷ ফলে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে উদ্ধারকারী দল বা অ্যাম্বুল্যান্সকে৷ 



প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ৮০ জন মানুষকে প্রবল গতিতে ছিটকে-পিষে-দলেমুচড়ে দিয়ে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায় রাজ্যরানি৷ সম্ভবত ইমার্জেন্সি ব্রেকের টানে৷ তাতে কি আর জনতার রাগ বাগ মানে? তত ক্ষণে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় মানুষ৷ কেবিন থেকে টেনে নামিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় ট্রেনচালককে৷ শেষ পর্যন্ত তাঁর কী অবস্থা হয়েছে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি আছে৷ কারণ, স্থানীয় সাংসদ বলেছেন, গণপ্রহারে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে চালকের৷ রেলের আধিকারিকদের অবশ্য দাবি, স্থানীয় হাসপাতালে চিকিত্‍সা চলছে তাঁর৷ 



এতেও রাগ পড়েনি ধামারাঘাটের মানুষের৷ জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে খাক করে দেওয়া হয়েছে পুরো রাজ্যরানিকে৷ যাত্রীরা লটবহর নিয়ে কোনও মতে পালিয়ে বেঁচেছেন৷ সঙ্গে আগুন দেওয়া হয় দাঁড়িয়ে থাকা লোকালেও৷ ভস্মীভূত হয়েছে তার পাঁচটি কামরা৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আট কিলোমিটার দূর থেকে দেখা গিয়েছে পুড়তে থাকা দুই ট্রেনের ধোঁয়া, এতটাই ছিল আগুনের তেজ৷ ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছে ধামারাঘাট স্টেশনও৷ হাতের কাছে ছ'-সাত জন যাঁদেরই পেয়েছে, রেলের আধিকারিকদের গুম করেছে জনতা৷ পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে বাকি আধিকারিকরা পালাতে বাধ্য হনঘটনাস্থল থেকে৷ কেটে দেওয়া হয় অন্যান্য স্টেশনের সঙ্গে ধামারাঘাটের টেলি-যোগাযোগও৷ ফলে অত জন মানুষ রক্তাক্ত অবস্থায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে লাইনের আশপাশে পড়ে থাকলেও, সেদিকে নজর ফেরানোর সুযোগই হয়নি কারও৷ 



রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী ঘটনাস্থলে রওনা হওয়ার আগে বহরমপুরে বলেন, 'অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা৷ যাঁরা জখম হয়েছেন, তাঁদের চিকিত্‍সার সব দায়িত্ব রেল মন্ত্রক গ্রহণ করেছে৷ দুর্ঘটনার কারণ, চালক ব্রেক কষা সত্ত্বেও কেন প্রাণহানি এড়ানো গেল না তা জানতে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷' 



এই ঘটনার পরে সুর চড়া করেছে রাষ্ট্রীয় জনতা দল ও লোক জনশক্তি পার্টি৷ লালুপ্রসাদ যাদব ও রামবিলাস পাসওয়ান, অবিলম্বে নীতীশ কুমারের পদত্যাগ দাবি করেছেন৷ লালুর কথায়, 'এই ঘটনা প্রমাণ করে দিয়েছে রাজ্য কী অসম্ভব সুশাসনে আছে৷ নৈতিক দায় নিয়ে তাঁর সরে দাঁড়ানো উচিত৷ উচ্চ পর্যায়ের তদন্তেরও নির্দেশ দেওয়া উচিত৷' নীতীশ ঘটনাস্থলে না গেলেও এই ঘটনায় গভীর দুঃখপ্রকাশ মৃতের পরিবারবর্গকে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করেছেন৷ তদন্তও করে দেখারও আশ্বাস দিয়েছেন৷ রেল মন্ত্রকও ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে বলে জানানো হয়েছেমন্ত্রকসূত্রে৷ 



বিহারে অবশ্য ঝুঁকি নিয়ে এই রেল-যাত্রার অপেক্ষা কোনও নতুন ঘটনা নয়৷ এর আগেও ট্রেনে উঠতে দেওয়ার দাবিতে রাজধানী এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনকেও পাথর মেরে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ একই রকম অভিজ্ঞতা অন্য এক্সপ্রেস ট্রেনেরও হয়েছে৷ সাধারণ মানুষের দাবি, যে সব স্টেশনে দাঁড়ানোর কথা নয়, সে সব জায়গাতেও দূরপাল্লার ট্রেনকে দাঁড়াতে দিতে হবে৷ সে ভাবেই ট্রেন দাঁড় করাতে গিয়ে প্রাণ গেল এতগুলো মানুষের৷ এ ভাবে বিপদ মাথায় করে ঝুঁকির যাতায়াত না বন্ধ হলে কি ভবিষ্যতেও এড়ানো যাবে এ রকম ঘটনা? প্রশ্ন থাকছেই৷

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...