ছুটন্ত ট্রেন থামিয়ে লাইন পারের চেষ্টা, মৃত ৩৭ পুণ্যার্থী
পাটনা: ঘণ্টায় আশি কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা সাক্ষাত্ মৃত্যুকে হাত দেখিয়ে থামানোর চেষ্টা করেছিলেন ওঁরা৷ পারেননি৷ রাজ্যরানি এক্সপ্রেস অন্তত ৩৭ জন পুণ্যার্থীকে ছিটকে-পিষে দিয়ে তবে থেমেছে৷ মৃত্যুদূতের উপর অবশ্য শোধ তুলে নিয়েছে উন্মত্ত জনতা৷ পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে ট্রেনটা, বেধড়ক মারে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন চালক৷ ভেঙে ছত্রখান করে দেওয়া হয়েছে স্টেশনও, গুম করা হয়েছে রেলের বেশ কিছু আধিকারিককে৷
ঘটনাস্থল, বিহারের খাগারিয়া জেলায়৷ পাটনা থেকে শ' দু'য়েক কিলোমিটার দূরে অখ্যাত স্টেশন ধামারাঘাট হল্ট৷ সকাল তখন আটটা চল্লিশ৷ সবে এসে থেমেছে দু' দিকের দু'টি লোকাল ট্রেন, দলে দলে নামছেন শিবভক্ত কানওয়ারিয়ারা৷ ওঁদের পঞ্জিকা অনুযায়ী শ্রাবণ মাসের শেষ দিন, তাই কাছেই কাত্যায়নীর থানে পুজো চড়াতে যাবেন৷ ওভারব্রিজ নেই, তাই ওঁরা মন্দিরে যাবেন লাইন পেরিয়েই৷ যাত্রী নামিয়ে একটি লোকাল সবে রওনা দিয়েছে৷ দু'টি ট্রেনের মাঝের লাইনে সিগন্যাল তত ক্ষণে সবুজ৷ আসছে পাটনাগামী রাজ্যরানি এক্সপ্রেস৷ ধামারাঘাটে দাঁড়ানোর কথাই নয় তার৷ পুণ্যার্থীরা কিন্ত্ত হাত দেখিয়ে ট্রেন থামানোর চেষ্টা করেছিলেন৷ হয়তো ভেবেছিলেন, এতগুলো লোককে লাইন পেরোতে দেখলে ট্রেন কি আর না-থেমে পারবে? ভুল ভেবেছিলেন৷ রেল কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী চালক ইমার্জেন্সি ব্রেক কষেছিলেন বটে, কিন্ত্ত তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে৷ ধাবমান মৃত্যু এসে পড়েছে ঘাড়ের উপর৷ মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ভয়ে কাঁটা পুণ্যার্থীরা লাইন থেকে আর নড়তেই পারেননি৷ রাজ্যরানি মুহূর্তে পিষে দিয়ে গিয়েছে ওঁদের৷
রেল ও রাজ্য প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্য বলছে, দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৭ জন৷ এঁদের মধ্যে ৩০ জনই মহিলা৷ পুরুষ ৪ জন, শিশু ৩টি৷ আহতের সংখ্যা ৪০৷ দু'টি কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ এক, আহতদের অনেকেরই অবস্থা সঙ্কটজনক৷ আর দুই, গাড়ি চলাচল করতে পারে, ধামারাঘাটের সবচেয়ে কাছে এমন সড়ক নয় নয় করেও ৬ কিলোমিটার দূরে৷ তার উপরে চারপাশের অনেক এলাকাই প্রবল বর্ষণে জলে ডুবে৷ ফলে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে উদ্ধারকারী দল বা অ্যাম্বুল্যান্সকে৷
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ৮০ জন মানুষকে প্রবল গতিতে ছিটকে-পিষে-দলেমুচড়ে দিয়ে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায় রাজ্যরানি৷ সম্ভবত ইমার্জেন্সি ব্রেকের টানে৷ তাতে কি আর জনতার রাগ বাগ মানে? তত ক্ষণে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় মানুষ৷ কেবিন থেকে টেনে নামিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় ট্রেনচালককে৷ শেষ পর্যন্ত তাঁর কী অবস্থা হয়েছে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি আছে৷ কারণ, স্থানীয় সাংসদ বলেছেন, গণপ্রহারে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে চালকের৷ রেলের আধিকারিকদের অবশ্য দাবি, স্থানীয় হাসপাতালে চিকিত্সা চলছে তাঁর৷
এতেও রাগ পড়েনি ধামারাঘাটের মানুষের৷ জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে খাক করে দেওয়া হয়েছে পুরো রাজ্যরানিকে৷ যাত্রীরা লটবহর নিয়ে কোনও মতে পালিয়ে বেঁচেছেন৷ সঙ্গে আগুন দেওয়া হয় দাঁড়িয়ে থাকা লোকালেও৷ ভস্মীভূত হয়েছে তার পাঁচটি কামরা৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আট কিলোমিটার দূর থেকে দেখা গিয়েছে পুড়তে থাকা দুই ট্রেনের ধোঁয়া, এতটাই ছিল আগুনের তেজ৷ ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছে ধামারাঘাট স্টেশনও৷ হাতের কাছে ছ'-সাত জন যাঁদেরই পেয়েছে, রেলের আধিকারিকদের গুম করেছে জনতা৷ পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে বাকি আধিকারিকরা পালাতে বাধ্য হনঘটনাস্থল থেকে৷ কেটে দেওয়া হয় অন্যান্য স্টেশনের সঙ্গে ধামারাঘাটের টেলি-যোগাযোগও৷ ফলে অত জন মানুষ রক্তাক্ত অবস্থায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে লাইনের আশপাশে পড়ে থাকলেও, সেদিকে নজর ফেরানোর সুযোগই হয়নি কারও৷
রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী ঘটনাস্থলে রওনা হওয়ার আগে বহরমপুরে বলেন, 'অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা৷ যাঁরা জখম হয়েছেন, তাঁদের চিকিত্সার সব দায়িত্ব রেল মন্ত্রক গ্রহণ করেছে৷ দুর্ঘটনার কারণ, চালক ব্রেক কষা সত্ত্বেও কেন প্রাণহানি এড়ানো গেল না তা জানতে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷'
এই ঘটনার পরে সুর চড়া করেছে রাষ্ট্রীয় জনতা দল ও লোক জনশক্তি পার্টি৷ লালুপ্রসাদ যাদব ও রামবিলাস পাসওয়ান, অবিলম্বে নীতীশ কুমারের পদত্যাগ দাবি করেছেন৷ লালুর কথায়, 'এই ঘটনা প্রমাণ করে দিয়েছে রাজ্য কী অসম্ভব সুশাসনে আছে৷ নৈতিক দায় নিয়ে তাঁর সরে দাঁড়ানো উচিত৷ উচ্চ পর্যায়ের তদন্তেরও নির্দেশ দেওয়া উচিত৷' নীতীশ ঘটনাস্থলে না গেলেও এই ঘটনায় গভীর দুঃখপ্রকাশ মৃতের পরিবারবর্গকে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করেছেন৷ তদন্তও করে দেখারও আশ্বাস দিয়েছেন৷ রেল মন্ত্রকও ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে বলে জানানো হয়েছেমন্ত্রকসূত্রে৷
বিহারে অবশ্য ঝুঁকি নিয়ে এই রেল-যাত্রার অপেক্ষা কোনও নতুন ঘটনা নয়৷ এর আগেও ট্রেনে উঠতে দেওয়ার দাবিতে রাজধানী এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনকেও পাথর মেরে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ একই রকম অভিজ্ঞতা অন্য এক্সপ্রেস ট্রেনেরও হয়েছে৷ সাধারণ মানুষের দাবি, যে সব স্টেশনে দাঁড়ানোর কথা নয়, সে সব জায়গাতেও দূরপাল্লার ট্রেনকে দাঁড়াতে দিতে হবে৷ সে ভাবেই ট্রেন দাঁড় করাতে গিয়ে প্রাণ গেল এতগুলো মানুষের৷ এ ভাবে বিপদ মাথায় করে ঝুঁকির যাতায়াত না বন্ধ হলে কি ভবিষ্যতেও এড়ানো যাবে এ রকম ঘটনা? প্রশ্ন থাকছেই৷
ঘটনাস্থল, বিহারের খাগারিয়া জেলায়৷ পাটনা থেকে শ' দু'য়েক কিলোমিটার দূরে অখ্যাত স্টেশন ধামারাঘাট হল্ট৷ সকাল তখন আটটা চল্লিশ৷ সবে এসে থেমেছে দু' দিকের দু'টি লোকাল ট্রেন, দলে দলে নামছেন শিবভক্ত কানওয়ারিয়ারা৷ ওঁদের পঞ্জিকা অনুযায়ী শ্রাবণ মাসের শেষ দিন, তাই কাছেই কাত্যায়নীর থানে পুজো চড়াতে যাবেন৷ ওভারব্রিজ নেই, তাই ওঁরা মন্দিরে যাবেন লাইন পেরিয়েই৷ যাত্রী নামিয়ে একটি লোকাল সবে রওনা দিয়েছে৷ দু'টি ট্রেনের মাঝের লাইনে সিগন্যাল তত ক্ষণে সবুজ৷ আসছে পাটনাগামী রাজ্যরানি এক্সপ্রেস৷ ধামারাঘাটে দাঁড়ানোর কথাই নয় তার৷ পুণ্যার্থীরা কিন্ত্ত হাত দেখিয়ে ট্রেন থামানোর চেষ্টা করেছিলেন৷ হয়তো ভেবেছিলেন, এতগুলো লোককে লাইন পেরোতে দেখলে ট্রেন কি আর না-থেমে পারবে? ভুল ভেবেছিলেন৷ রেল কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী চালক ইমার্জেন্সি ব্রেক কষেছিলেন বটে, কিন্ত্ত তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে৷ ধাবমান মৃত্যু এসে পড়েছে ঘাড়ের উপর৷ মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ভয়ে কাঁটা পুণ্যার্থীরা লাইন থেকে আর নড়তেই পারেননি৷ রাজ্যরানি মুহূর্তে পিষে দিয়ে গিয়েছে ওঁদের৷
রেল ও রাজ্য প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্য বলছে, দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৭ জন৷ এঁদের মধ্যে ৩০ জনই মহিলা৷ পুরুষ ৪ জন, শিশু ৩টি৷ আহতের সংখ্যা ৪০৷ দু'টি কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ এক, আহতদের অনেকেরই অবস্থা সঙ্কটজনক৷ আর দুই, গাড়ি চলাচল করতে পারে, ধামারাঘাটের সবচেয়ে কাছে এমন সড়ক নয় নয় করেও ৬ কিলোমিটার দূরে৷ তার উপরে চারপাশের অনেক এলাকাই প্রবল বর্ষণে জলে ডুবে৷ ফলে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে উদ্ধারকারী দল বা অ্যাম্বুল্যান্সকে৷
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ৮০ জন মানুষকে প্রবল গতিতে ছিটকে-পিষে-দলেমুচড়ে দিয়ে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায় রাজ্যরানি৷ সম্ভবত ইমার্জেন্সি ব্রেকের টানে৷ তাতে কি আর জনতার রাগ বাগ মানে? তত ক্ষণে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় মানুষ৷ কেবিন থেকে টেনে নামিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় ট্রেনচালককে৷ শেষ পর্যন্ত তাঁর কী অবস্থা হয়েছে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি আছে৷ কারণ, স্থানীয় সাংসদ বলেছেন, গণপ্রহারে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে চালকের৷ রেলের আধিকারিকদের অবশ্য দাবি, স্থানীয় হাসপাতালে চিকিত্সা চলছে তাঁর৷
এতেও রাগ পড়েনি ধামারাঘাটের মানুষের৷ জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে খাক করে দেওয়া হয়েছে পুরো রাজ্যরানিকে৷ যাত্রীরা লটবহর নিয়ে কোনও মতে পালিয়ে বেঁচেছেন৷ সঙ্গে আগুন দেওয়া হয় দাঁড়িয়ে থাকা লোকালেও৷ ভস্মীভূত হয়েছে তার পাঁচটি কামরা৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আট কিলোমিটার দূর থেকে দেখা গিয়েছে পুড়তে থাকা দুই ট্রেনের ধোঁয়া, এতটাই ছিল আগুনের তেজ৷ ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছে ধামারাঘাট স্টেশনও৷ হাতের কাছে ছ'-সাত জন যাঁদেরই পেয়েছে, রেলের আধিকারিকদের গুম করেছে জনতা৷ পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে বাকি আধিকারিকরা পালাতে বাধ্য হনঘটনাস্থল থেকে৷ কেটে দেওয়া হয় অন্যান্য স্টেশনের সঙ্গে ধামারাঘাটের টেলি-যোগাযোগও৷ ফলে অত জন মানুষ রক্তাক্ত অবস্থায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে লাইনের আশপাশে পড়ে থাকলেও, সেদিকে নজর ফেরানোর সুযোগই হয়নি কারও৷
রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী ঘটনাস্থলে রওনা হওয়ার আগে বহরমপুরে বলেন, 'অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা৷ যাঁরা জখম হয়েছেন, তাঁদের চিকিত্সার সব দায়িত্ব রেল মন্ত্রক গ্রহণ করেছে৷ দুর্ঘটনার কারণ, চালক ব্রেক কষা সত্ত্বেও কেন প্রাণহানি এড়ানো গেল না তা জানতে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷'
এই ঘটনার পরে সুর চড়া করেছে রাষ্ট্রীয় জনতা দল ও লোক জনশক্তি পার্টি৷ লালুপ্রসাদ যাদব ও রামবিলাস পাসওয়ান, অবিলম্বে নীতীশ কুমারের পদত্যাগ দাবি করেছেন৷ লালুর কথায়, 'এই ঘটনা প্রমাণ করে দিয়েছে রাজ্য কী অসম্ভব সুশাসনে আছে৷ নৈতিক দায় নিয়ে তাঁর সরে দাঁড়ানো উচিত৷ উচ্চ পর্যায়ের তদন্তেরও নির্দেশ দেওয়া উচিত৷' নীতীশ ঘটনাস্থলে না গেলেও এই ঘটনায় গভীর দুঃখপ্রকাশ মৃতের পরিবারবর্গকে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করেছেন৷ তদন্তও করে দেখারও আশ্বাস দিয়েছেন৷ রেল মন্ত্রকও ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে বলে জানানো হয়েছেমন্ত্রকসূত্রে৷
বিহারে অবশ্য ঝুঁকি নিয়ে এই রেল-যাত্রার অপেক্ষা কোনও নতুন ঘটনা নয়৷ এর আগেও ট্রেনে উঠতে দেওয়ার দাবিতে রাজধানী এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনকেও পাথর মেরে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ একই রকম অভিজ্ঞতা অন্য এক্সপ্রেস ট্রেনেরও হয়েছে৷ সাধারণ মানুষের দাবি, যে সব স্টেশনে দাঁড়ানোর কথা নয়, সে সব জায়গাতেও দূরপাল্লার ট্রেনকে দাঁড়াতে দিতে হবে৷ সে ভাবেই ট্রেন দাঁড় করাতে গিয়ে প্রাণ গেল এতগুলো মানুষের৷ এ ভাবে বিপদ মাথায় করে ঝুঁকির যাতায়াত না বন্ধ হলে কি ভবিষ্যতেও এড়ানো যাবে এ রকম ঘটনা? প্রশ্ন থাকছেই৷
No comments:
Post a Comment