Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Memories of Another day

Memories of Another day
While my Parents Pulin babu and Basanti devi were living

Friday, August 9, 2013

উচ্চবর্ণের দাপট, নয়া বিতর্ক রাজনীতিতে

উচ্চবর্ণের দাপট, নয়া বিতর্ক রাজনীতিতে

উচ্চবর্ণের দাপট, নয়া বিতর্ক রাজনীতিতে
অমল সরকার ও রাজা চট্টোপাধ্যায়

শ্রেণিসংগ্রামের আদর্শে পরিচালিত সিপিএমে এ বার জাতপাতের নজিরবিহীন অভিযোগে দলের রাজ্য নেতৃত্বকে বিঁধলেন বিতর্কিত নেতা আবদুর রেজ্জাক মোল্লা৷ তাঁর বক্তব্য, রাজ্য সিপিএমের নেতৃত্ব ব্রাহ্মণ-কায়স্থদের মতো কিছু উচ্চবর্ণের মানুষের দখলদারিতে পরিণত হয়েছে৷ অথচ, যাঁরা দলের জন্য নিয়মিত ঘাম-রক্ত ঝরাচ্ছেন, তাঁরা উপেক্ষিত৷ দলকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে নেতৃত্বে তুলে আনতে হবে দলিত, সংখ্যালঘুদের৷
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এই বিতর্ক এ যাবত্‍ অনালোচিত থাকলেও বিষয়টার গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না৷ রেজ্জাক মোল্লা এই প্রসঙ্গে নিজের দলকে কাঠগড়ায় তুললেও রাজ্য-রাজনীতির ছবির দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয় এই দোষে কমবেশি দুষ্ট প্রায় সব রাজনৈতিক দলই৷ ২০১১ সালে রাজ্যের সংখ্যালঘু ও তপসিলি জাতি-উপজাতির ভোটের একটা বড় অংশ নিজের ঝুলিতে টেনে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সাম্রাজ্যকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কিন্ত্ত তাঁর দলের শীর্ষ নেতৃত্বেও উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণ নেতারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ৷ প্রদেশ কংগ্রেস বা রাজ্য বিজেপিও ব্যতিক্রম নয়৷ আর সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর ১৯ সদস্যের মধ্যে একমাত্র সংখ্যালঘু প্রতিনিধি মহম্মদ সেলিম৷ 
সিপিএম নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে রেজ্জাক সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোটে দলীয় কর্মী খুনের পরিসংখ্যান হাজির করেছেন৷ তাঁর কথায়, 'পঞ্চায়েত ভোট পর্বে আমাদের যে ৫২ জন পার্টি কর্মী খুন হয়েছেন, তাঁদের অর্ধেকের বেশি মুসলিম৷ বাকিরা তপসিলি ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ৷ একজনও উচ্চবর্ণের মানুষ নেই৷' প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রীর মূল অভিযোগ, পার্টিকে রক্ষা করতে যাঁরা প্রাণ দিচ্ছে, নেতৃত্বে তাঁরা নেই৷ বৃহস্পতিবার 'এই সময়'কে রেজ্জাক ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই ইস্যুতেই চলতি মাসের শেষে রাজ্য কমিটির পরবর্তী বৈঠকে সরব হতে চলেছেন তিনি৷ ওই বৈঠকেই পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল পর্যালোচনা করা হবে৷ রেজ্জাক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ওই বৈঠকে নিজের বক্তব্য লিখিত আকারে পেশ করবেন তিনি৷ সিপিএম সূত্রের খবর, ওই বৈঠকেই রেজ্জাকের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবিও উঠতে পারে৷ তবে এ নিয়ে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই তিনি বলছেন, 'পার্টি তাড়িয়ে দিলে দেবে৷ আমার কিছু যায় আসে না৷'
তবে রেজ্জাকের সমর্থনে এ দিনই মুখ খুলেছেন সিপিএমের রাজ্য কন্ট্রোল কমিশনের চেয়ারম্যান আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি বিশ্বাস৷ তিনি বলেন, 'পার্টি কর্মীর মৃত্যুর পরিসংখ্যান আমার জানা নেই৷ তবে সংখ্যালঘুরা সুযোগ পেলেও দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি থেকে আজকের সিপিএম, এই দীর্ঘ সময়ে তপসিলি সম্প্রদায়ের একজনকেও পার্টির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য করা হয়নি৷' তিনি বলেন, প্রয়াত রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাস ছিলেন কায়স্থ৷ পার্টি যে ব্রাহ্মণ্যবাদে আচ্ছন্ন সেই নিয়ে বছরখানেক আগেই দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু এবং সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছিলেন বলেও জানিয়েছেন কান্তিবাবু৷ তবে সেই চিঠির উত্তর আজও পাননি তিনি৷ একই সঙ্গে তাঁর সোজাসাপটা চ্যালেঞ্জ, 'এই অভিযোগ মিথ্যা হলে পার্টি যেন আমাকে শাস্তি দেয়৷' রেজ্জাক মোল্লা নিজের পার্টির দিকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুললেও নিম্নবর্গের প্রতি বঞ্চনা নিয়ে আঙুল তুলেছেন সব দলের বিরুদ্ধেই৷ তাঁর বক্তব্য, বামফ্রন্টের মতো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভাতেও ব্রাহ্মণ-কায়স্থদেরই পাল্লাভারি৷ একইভাবে তিনি কংগ্রেস, বিজেপির বিরুদ্ধেও আঙুল তুলেছেন৷ যদিও জ্যোতি বসু-বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মন্ত্রিসভার চাইতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যাবিনেটে সংখ্যালঘু, তপসিলি জাতি-উপজাতি এবং সর্বোপরি মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব অনেক বেশি৷ তৃণমূলের শীর্ষস্তরেও সংখ্যালঘু নেতাদের গুরুত্ব অন্য দলের তুলনায় বেশি৷ 
তবে সিপিএমের প্রসঙ্গে রেজ্জাক মোল্লা সরাসরি কারও নাম করেননি৷ কিন্ত্ত বর্তমান নেতৃত্বের একটা বড় অংশের সঙ্গে তাঁর সংঘাতের ইতিবৃত্তে নজর রেখে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, তিনি নিশানা করতে চেয়েছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসু, নিরুপম সেনের মতো নেতাদেরই৷ ফলে, পার্টির রাজ্য কমিটির বৈঠকের আগে ফের নয়া বিতর্ক উজিয়ে দলকে বিড়ম্বনায় ফেললেন ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক৷ 
রেজ্জাকের এই বক্তব্য এক বাক্যে মেনে না নিলেও সমস্যা যে রয়েছে সে কথা মানছেন অনেকেই৷ তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'সর্বোচ্চ স্তরের নেতৃত্বে একজন দু'জনই থাকে৷ কিন্ত্ত আমাদের দলে নির্ণায়ক কমিটিতে সব শ্রেণির মানুষের প্রতিনিধিত্ব আনুপাতিক হারেই রয়েছে৷' প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য অবশ্য মেনে নিয়েছেন তাঁদের দলের নেতৃত্বে নিম্নবর্গের প্রতিনিধি প্রায় নেই৷ তবে দলে সংখ্যালঘুদের গুরুত্ব দেওয়া হয় না এ কথা মানতে চাননি তিনি৷ যদিও প্রদীপবাবুর যুক্তি মানতে চাননি কংগ্রেসেরই আর এক নেতা আবদুল মান্নান৷ বিজেপি নেতা তথাগত রায় বলেছেন, 'আমাদের দলে এই ধরনের জাত-কুলের রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হয় না৷ যোগ্য ব্যক্তিই নেতা হন৷'
বছর দশেক আগে শহিদ মিনারে এক জনসভায় সিপিএমকে মনুবাদী পার্টি বলে মন্তব্য করে এ রাজ্যের তপসিলি, দলিতদের জোটবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতী৷ জাতপাতের রাজনীতি নিয়ে সিপিএমে কারও প্রকাশ্যে মুখ খোলার নজির না থাকলেও পার্টির অভ্যন্তরে দীর্ঘ দিন ধরেই এ ব্যাপারে চাপা ক্ষোভ রয়েছে৷ সম্প্রতি জ্যোতি বসুকে নিয়ে এক নিবন্ধে দলের অন্দরের ক্ষোভের কথা ফাঁস করেছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী কান্তিবাবুই৷ তিনি লিখেছেন, '৭৭ সালে প্রথম বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভাতে গোড়ায় একজনও তপসিলি সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন না৷ এ নিয়ে পার্টিতে শোরগোল শুরু হলে তিনি সে কথা জ্যোতি বসু এবং প্রমোদ দাশগুপ্তকে জানান৷ এর কিছু দিন পর, তাঁকেই মন্ত্রিসভায় নেওয়া হয়৷ রেজ্জাকের অভিযোগের অভিঘাতে নড়ে গিয়েছে দলের আদর্শগত প্রচারের ভিতও৷ তাঁর বক্তব্য, 'যাঁরা দলের হয়ে জানপ্রাণ দিচ্ছেন, নেতৃত্বে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব প্রয়োজন৷ এটা যত দিন পর্যন্ত না-হবে, তত দিন ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা দিবাস্বপ্ন হয়েই থাকবে৷' 
তা হলে কি মুসলিম প্রতিনিধিদের নেতৃত্বে আনার কথা বলছেন? প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রীর উত্তর, 'না৷ আমি সে কথা বলছি না৷ কিন্ত্ত শ্রেণি ও জাতিগত প্রশ্নকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই৷' তাঁর বক্তব্য, এ রাজ্যে মুসলিমদের একটা বড় অংশ দলিত হিন্দু, যাঁরা বিভিন্ন সময়ে ধর্মান্তরিত হয়েছেন৷ রেজ্জাকের যুক্তি, 'এঁদেরকেই তুলে আনতে হবে৷ নইলে শুধুমাত্র মুখে শ্রেণি সংগ্রামের বুলি আউড়ে কী হবে?' প্রসঙ্গত, সিপিএমের বর্তমান রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে এখন একমাত্র সংখ্যালঘু মুখ মহম্মদ সেলিম৷ তিনি জন্মসূত্রে উর্দুভাষী মুসলমান৷ তার আগে ছিলেন মহম্মদ আমিন৷ তিনিও জন্মসূত্রে উর্দুভাষী৷ সম্পাদকমণ্ডলীর বাকিদের বড় অংশ ব্রাহ্মণ ও কায়স্থ৷ তপসিলি একজনও নেই৷ দলের বিগত রাজ্য সম্মেলনের আগে কোনও বাঙালি মুসলমানকে সম্পাদকমণ্ডলীতে নেওয়ার দাবি ওঠে৷ উঠে আসে রেজ্জাক মোল্লার নামও৷ কিন্ত্ত শেষ পর্যন্ত জায়গা হয় সেলিমের৷ পরে রেজ্জাকের জেলা দক্ষিণ ২৪ পরগনার সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীকেও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে আনা হয়েছে৷ 
পঞ্চায়েত ভোটে বিপর্যয়ের জন্যও এ দিন নেতাদের একহাত নিয়েছেন রেজ্জাক৷ বলেছেন, 'আমি আর কাউকে সিপিএমের জন্য জান দিতে বলি না৷ কারণ, বাঁচানোর ক্ষমতা আমার নেই৷ আমাদের নেতাদের ৯০ শতাংশই বাস করেন শহর, আধাশহরে৷ সেখানে পর্যাপ্ত পুলিশ আছে, মিডিয়া আছে৷ সেই ঘেরাটোপে থেকে এঁরা গ্রামে যান, জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়ে আসেন৷ আর ঘরে ফিরে নাকে তেল দিয়ে ঘুমোন৷ গ্রামে রোজ কত বোমা-গুলি চলে তা ওঁরা জানেন?' 
তাঁর কথায়, 'দলের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, নেতা নেই৷' সম্প্রতি দলের নিচুতলার কয়েকজন নেতা-কর্মীকে বহিষ্কারের কথা শোনা গিয়েছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর মুখে৷ বলেছেন, 'যে সব নেতা-কর্মীর মুখ দেখেই জনতা বিরূপ হচ্ছেন, তাঁদের সরাতে হবে৷' এই প্রসঙ্গেই নাম না করে রেজ্জাক নাম না-করেও রেজ্জাক পাল্টা বলছেন, 'এলাকার কমরেডরা দলের সমস্যা নয়৷ যে নেতারা এ সব কথা বলছেন, তাঁরা আয়নায় আগে নিজেদের মুখ দেখুন৷' 

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...