পেঁয়াজ, জামাই এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র সংঘাতসমূহ
অনেক আগে, ১৯৯৮ সালে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র চোখে জল এনেছিল, হয়েছিল পতনের কারণ৷ এবার দেশ আর একটা লোকসভা নির্বাচনের প্রস্ত্ততি নিচ্ছে৷ অনুপান হিসেবে দিল্লি-সহ কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটও রয়েছে৷ আর আবারও পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী, প্রায় রকেট গতিতেই৷ মনে রাখা ভালো, উত্তর ভারতীদের প্রধান সবজিই হল পেঁয়াজ৷ আপনাদের, অর্থাত্ বাঙালিদের রান্নাতেও পেঁয়াজের বিবিধ ব্যবহারের কথা কারও অজানা নয়৷ 'বহুস্তরীয় বাল্ব' দিয়ে আপনারা যে সব সুস্বাদু পদ তৈরি করেন, তা উপভোগ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে৷ কিন্ত্ত কত দিন পারবেন, তা হলফ করে বলতে পারি না৷ কেননা, প্রায় প্রতিটি নির্বাচনের আগেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়াটা একটা অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে৷ প্রাকৃতিক বা অর্থনৈতিক কারণ যাঁরা দর্শাচ্ছেন, তাঁদের বলি, আপনারা কিন্ত্ত একটা বড় বিষয় এড়িয়ে যাচ্ছেন!
বিজেপি কিন্ত্ত এবার খুশি৷ অন্তত তেমনটাই হওয়া উচিত৷ পেঁয়াজের ঝাঁঝ যে কী ভাবে চোখে জল আনতে পারে, তার হাতেগরম প্রমাণ তো তারা পেয়েইছে৷ এবার তাদের জায়গায় কংগ্রেস৷ ঠিক ১৯৯৮ সালে তারা যেমন ছিল, হুবহু সেই জায়গায় সনিয়া গান্ধীর দল৷ কিন্ত্ত গত কয়েক বছরে যা ঘটেছে, তাতে ১৯৯৮-এর কংগ্রেসের তুলনায় বিজেপি-র অনেক মজবুত জায়গায় থাকা উচিত ছিল৷ প্রতিদিন একটি করে কেলেঙ্কারি৷ অবস্থা এমন যে আম-আদমি এখন 'কেলেঙ্কারি-ক্লান্ত'৷ এর সঙ্গে যোগ করুন রবার্ট ভদরার জমি কেলেঙ্কারি৷ ইউপিএ চেয়ারপার্সন সনিয়া গান্ধীর জামাই তিনি! ওই, সত্যজিত্বাবু বলে গিয়েছিলেন না, '…রাজার জামাই', কতকটা তেমনই আর কী৷
জামাই বাবাজীবনের জন্য সমস্যাটা জটিলতর হয়েছে গুরগাঁওয়ের সাংসদ রাও ইন্দ্রজিত্ সিংয়ের দাবিতে৷ গুরগাঁওয়ের জমি ঘিরেই প্রশ্নের মুখে ভদরা৷ এবার রাও ইন্দরজিত্ সিং বলেছেন, আইএএস অফিসার খেমকার তোলা অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত৷ ভূপিন্দর সিং হুডার সরকার কী ঝামেলাতেই না ফেলল ভদরাকে৷
প্রত্যাশিত ভাবেই এটা আদতে হরিয়ানায় দুই নেতার কর্তৃত্বের লড়াই৷ ব্যাপারটা এত বড় হয়েছে কারণ এখানে রবার্ট ভদরার মতো নাম জড়িয়েছে৷ দলের শাসক পরিবারের দিকে আঙুল? ছোট-বড়-মাঝারি সব নেতা-ই এবার মুখপাত্র হয়ে সংবাদমাধ্যমে সাফাই গাইছেন দিবারাত্র৷ দুষ্টু রাজনীতিককে উচিত শিক্ষা দিতেই হবে৷ নিজের রাজ্যে জমি দখলের লড়াই করছিলে, করো৷ কোন সাহসে কোনও দিন অন্যায় করতে পারে না, এমন একটা পরিবারকে নিয়ে টানাটানি! ঘটনা হল, অন্যান্য কেলেঙ্কারির মতো এটিও এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছে যে, এবার ক্লান্তি আসছে৷
এমন সুযোগও নিতে না-পারাটা নিঃসন্দেহে বিজেপি-র ব্যর্থতা৷ একটা সময় ছিল, দেশের প্রতি প্রান্তেই বিজেপি নেতারা সমস্বরে কথা বলতেন৷ আজ আর সে দিন নেই৷ প্রত্যেকে আলাদা আলাদা করে নিজের হিসেব কষে কথা বলেন৷ একে অপরের সঙ্গে টেক্কা দেওয়ার খেলায় এমনই মাতোয়ারা নেতারা যে কংগ্রেস তার বিরোধীদের এই অবস্থায় হাসছে৷ কেলেঙ্কারির সুবাদে আজ ইউপিএ-কে বলা হয় 'ইউনাইটেড প্লান্ডার অ্যালায়েন্স'৷ বিজেপি নেতারাই হয়তো এমন কটাক্ষ হাওয়ায় ভাসিয়েছেন৷ তাঁরা নিজেরা জানেন কি, তাঁদের ডাকা হয় 'ভারতীয় ঝগড়া পার্টি' নামে? এ জন্য অন্য কাউকে দোষ দিয়ে লাভ নেই৷ নিজেদের ইগো-সর্বস্বতায় তাঁরা ভুলে যান, একদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, দলের আগে দেশ, ব্যক্তির আগে দেশবাসী৷
দুই দাদার যখন এই অবস্থা, ভাইরা চুপচাপ বসে, এমন ভাবার কারণ নেই৷ দিল্লির দখলদারিতে নিজেদের ভূমিকা দেখতে পেয়ে যারপরনাই আনন্দিত ছোট দলগুলি নিজেদের রাজ্যে যে যার মতো করে লড়াই করছে৷ দুর্গাশক্তি মামলায় বাপ-বেটায় এমন কীর্তি করল যে, অনেক দিন পর সংবাদপত্রগুলিও দেখলাম মায়াবতীকে নিয়ে গাদা গাদা নিউজপ্রিন্ট খরচা করছে৷ নরেন্দ্র মোদীর সব উদ্যোগে জল ঢেলে মহারাষ্ট্রে রাজ আর উদ্ধব একে অপরকে খুঁচিয়ে চলেছে৷ এতে যে এনসিপি আর কংগ্রেসেরই ফায়দা, সেটা ভালো ভাবে বোঝা সত্ত্বেও৷ বিহারে নীতীশও বেকায়দায়৷ বিজেপি-র সঙ্গে গাঁটছড়া ছিন্ন করার পর এখন নিজের দলের মন্ত্রীদেরই সামাল দিতে নাভিশ্বাস উঠছে তাঁর৷ অনেকেই বলছেন, 'কাজটা ভালো হল না মুখ্যমন্ত্রীজি৷'
এমন একটা নির্বাচনের সামনে আমরা দাঁড়িয়ে, যেটি একাধিক কারণে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হয়ে উঠতে পারে৷ স্বাভাবিক ভাবেই প্রচুর যুদ্ধ এবং ছায়াযুদ্ধ হবে৷ অনেক কেঁচোর মেরুদণ্ড গজাবে৷ কখনও সেটা হবে যর্থার্থ কারণে৷ অন্যায়ের প্রতিবাদে উঠে আসবে অনেক মুখ৷ আবার অনেকে হাওয়ার দিকেই নিজেদের ভাসিয়ে দেবে৷ একটা কঞ্চির গা বেয়ে টিকে থাকবে৷ দূর থেকে দেখলে ভ্রম হবে, কেঁচোর বুঝি শিরদাঁড়া হল!
আমরা যাঁরা এই তামাশার দর্শক, আসুন, সকলে একটু জমিয়ে বসি৷ ভুয়োদের বাদ দিয়ে সাচ্চা লোককে বেছে নিতে হবে৷ এমন একজনকে বাছা প্রয়োজন যিনি এই ক্রমপতন রোধ করবেন৷ উদাসীন হওয়ার সুযোগ নেই৷ আর যাঁরা ধাপ্পাবাজ, তাঁদের বুঝিয়ে দিতে হবে, পেঁয়াজের আসল ঝাঁঝ কাকে বলে!
ব্লগের কোনও লেখার দায় এই সময়-এর নয়। প্রতিটি ব্লগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব।
http://author.blogs.eisamay.indiatimes.com/rajeshkalra/entry/onion_prices_hit_record_high
No comments:
Post a Comment