Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Memories of Another day

Memories of Another day
While my Parents Pulin babu and Basanti devi were living

Wednesday, August 14, 2013

জগদীশ ভগবতী ‘বনাম’ অমর্ত্য সেন বিতর্ক, নাকি মিডিয়ার বানানো ‘ঝগড়া’?

জগদীশ ভগবতী 'বনাম' অমর্ত্য সেন বিতর্ক, নাকি মিডিয়ার বানানো 'ঝগড়া'?

এ পর্যন্ত পড়ে গপ্পের ল্যাজামুড়ো নিয়ে যাঁদের বিভ্রান্তি যাচ্ছে না তাঁদের জন্যে উপলক্ষটা খোলসা করে বলি৷ বহুল প্রচারিত আন্তর্জাতিক সাপ্তাহিক 'দ্য ইকনমিস্ট' পত্রিকায় জঁ্য দ্রেজ ও অমর্ত্য সেন রচিত সম্প্রতি প্রকাশিত ভারত-বিষয়ক বই 'অ্যান আনসার্টেন গ্লোরি'র আলোচনা বেরোয়৷ সেখানে জগদীশ ভগবতী ও অরবিন্দ পানাগরিয়া প্রণীত আর একটি ভারত-বিষয়ক সম্প্রতি প্রকাশিত বইয়ের প্রসঙ্গ আনেন আলোচক৷ তিনি মন্তব্য করেন, ভগবতী ও পানাগরিয়া শ্রম ও জমির বাজারে দ্রুত সংস্কার এনে আর্থনীতিক বৃদ্ধিকে আরও ঠেলে তোলার পক্ষে সওয়াল করেছেন, কারণ তাঁরা মনে করেন আর্থনীতিক বৃদ্ধির হার বাড়িয়েই দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং জীবনযাত্রা মান বাড়ানোর কথা ভাবতে হবে৷ এ প্রসঙ্গে আলোচক লেখেন, দ্রেজ এবং সেন 'আরও এগিয়ে ভাবতে চান'৷ 

এই 'আরও এগিয়ে' শব্দবন্ধই সম্ভবত ভগবতীকে উত্তেজিত করে৷ খুঁচিয়ে ঘা করার মতো৷ ভগবতী ও সেন দু'জনেই প্রায় সমবয়সী৷ দু'জনেই খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ, এক সময়ে দিল্লি স্কুল অফ ইকনমিক্স-এ সহকর্মীও ছিলেন৷ ভগবতী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, বর্তমানে রয়েছেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ আর অমর্ত্য সেন হার্ভার্ডে৷ দু'টিই যাকে বলে 'আইভি লিগ' বিশ্ববিদ্যালয়৷ অর্থাত্‍ সব মিলিয়ে দু'জনেই সমান ওজনদার৷ ফলে 'দ্য ইকনমিস্ট' পত্রিকায় পর পর এক সপ্তাহের ব্যবধানে এঁদের দু'টি পত্র প্রকাশিত হয় যখন, তত্‍ক্ষণাত্‍ খবর হয়ে যায়৷ 

কী ছিল পত্র দু'টিতে? ভগবতী লেখেন, 'সেন এবং দ্রেজ 'আরও এগিয়ে ভাবতে চান' এই মন্তব্যে আমি বিভ্রান্ত৷ সেন কখনওই আর্থনীতিক বৃদ্ধির সপক্ষে কোনও নীতির জন্যে সওয়াল করেননি৷ অতি সম্প্রতি অবশ্য বৃদ্ধির প্রতি 'আলগোছে উদাসীন ফুল ছঁুড়তে শিখেছেন' ('বিলেটেডলি লান্র্‌ট টু গিভ লিপ সার্ভিস টু গ্রোথ')৷' এর পর অমর্ত্য সেন আর নিশ্চুপ থাকতে পারেননি৷ ভগবতী দীর্ঘকাল ধরেই যে কোনও উপলক্ষে অমর্ত্য সেনকে এক হাত নিয়ে থাকেন৷ স্বাধীন ভারতের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে ১৯৯৭-এ 'টাইমস লিটারারি সাপ্লিমেন্ট'-এর এক বিশেষ সংখ্যা বেরোয়৷ ভগবতী সেখানে স্বাধীনতা-উত্তর পরিকল্পিত অর্থনীতিকে বর্ণনা করেছেন 'এক পেছু হটার যন্ত্র' বলে৷ আর এমন আশ্চর্য যন্ত্রের পেছু হটার দক্ষতার জন্য তিনি পুরোপুরি দায়ী করেছেন অমর্ত্য সেন সহ অন্য ভারতীয় অর্থনীতিবিদদের, যাঁরা কোনও-না-কোনও ভাবে এই যন্ত্রে জ্বালানি জুগিয়ে গিয়েছেন বলে তিনি মনে করেন৷ বছর তিনেক পরে দেখছি পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন ভাষণে আবার অমর্ত্য সেনকে তুলোধোনা করেছেন৷ সমাবর্তন ভাষণের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জুড়ে ব্যক্তিবিশেষের দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা শুধু অভূতপূর্বই নয়, অদ্ভুত৷ মজার ব্যাপার, ভগবতীর এই ধারাবাহিক আক্রমণ- হ্যাঁ আক্রমণই বলা যায় একে- এত কাল প্রায় এক তরফাই হয়ে এসেছে৷ এই প্রথম অমর্ত্য সেন প্রত্যুত্তর দিলেন ('সম্ভবত এই শেষ', সাক্ষাত্‍কারে বলেছেন তিনি)৷ বৃদ্ধির প্রতি ইদানীং 'লিপ সার্ভিস' দিতে শিখেছেন- কথাটি যথেষ্ট উস্কানিমূলক৷ ১৯৬০-এ তাঁর 'চয়েস অফ টেকনিক্স' থেকে ১৯৭০-এ তাঁর সম্পাদিত 'গ্রোথ ইকনমিকস'- এই গোটা সময়টা অমর্ত্য সরাসরি আর্থনীতিক বৃদ্ধি নিয়েই তত্ত্বালোচনায় রত ছিলেন৷ পরবর্তী কালেও তিনি কখনওই বলেননি যে মানবকল্যাণে আর্থনীতিক বৃদ্ধি অপ্রয়োজনীয়৷ 

অতএব, একজন বলছেন তুমি বৃদ্ধিকে কখনওই গুরুত্ব দাওনি, আর একজন বলছেন 'দিয়েছি'৷ এ ভাবে আর কতক্ষণ তর্ক চলতে পারে? অতএব, মোকদ্দমাটা তখনকার মতো হয়তো মিটেও যেত৷ কিন্ত্ত দু'দিন পরেই টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানে অমর্ত্য সেনকে জিজ্ঞেস করা হয় নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আপনি কী বলেন৷ সেন স্পষ্টই জানিয়ে দেন তথাকথিত 'গুজরাট মডেল' নিয়ে তিনি উত্‍সাহিত নন৷ এবং নরেন্দ্র মোদীকে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও চান না৷ ওদিকে জানুয়ারিতে দেওয়া এক সাক্ষাত্‍কারে ভগবতী নরেন্দ্র মোদী এবং গুজরাটের উন্নয়নের প্রভূত প্রশংসা করেছিলেন৷ ব্যস, দু'য়ে দু'য়ে চার হয়ে গেল৷ ভগবতী-বিজেপি, সেন-কংগ্রেস এমন নানা অদ্ভুত সমীকরণ আছড়ে পড়তে লাগল মিডিয়ার আঙিনায়৷ রাজনীতির ডামাডোলে পাণ্ডিত্যের সূক্ষ্ম যুক্তি খাবি খেতে থাকে৷ অমর্ত্য সেনের ভারতরত্ন কেড়ে নেওয়া উচিত এমন হুমকিও শোনা যায়৷ 

অমর্ত্য সেন এবং তাঁর সহযোগী জ্যঁ দ্রেজ যে ধরনের নীতির পক্ষে বার বার বলে থাকেন তার কিছু কিছু ইউ পি এ জমানায় যে করার চেষ্টা হয়েছে তা যেমন সত্যি, আবার যতটা করা উচিত ছিল তা হয়নি, দারিদ্র্য হ্রাস হয়েছে মন্থর গতিতে- এই সব নিয়ে কঠোর সমালোচনাও রয়েছে তাঁদের সাম্প্রতিক বইয়ে৷ নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করছেন মানেই অমর্ত্য সেন রাহুলের সমর্থক- এমন যুক্তি উদ্ভট৷ আবার নরেন্দ্র মোদীর আমলে গুজরাটের আর্থনীতিক প্রগতির প্রশংসা করছেন বলেই ভগবতী মোদিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান, এমন সিদ্ধান্তও সমান উদ্ভট৷ সংস্কার-উত্তর ভারতবর্ষে মনমোহন সিংহের নেতৃত্বেরও ভগবতী প্রশংসা করতেন এবং নিজেকে সহযোগী বলে মনে করতেন৷ দলীয় রাজনীতি এবং ২০১৪-র নির্বাচন এ সবের সঙ্গে সেন-ভগবতী বিতর্ককে জোর করে ঘেঁটে দিলে দু'জনের প্রতিই অবিচার করা হয়৷ 

রাজনীতির অনাবশ্যক মশলার ছিটে সরিয়ে নিলে বিতর্কের যে নির্যাসটুকু পড়ে থাকে তার গুরুত্ব কতটুকু? এখানে সে বিষয়ে কিঞ্চিত্‍ আলোচনা করা যাক৷ 

জাতীয় আয়ের বৃদ্ধি উন্নয়নের ন্যূনতম শর্ত৷ এ বিষয়ে সেন ও ভগবতীর ভিন্ন মত থাকতে পারে না৷ তা হলে তর্কটা কোথায়? উন্নয়ন বলতে যদি দারিদ্র্য দূরীকরণ, নাগালের মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এসব বোঝায়, তা হলেও জাতীয় আয়ের বৃদ্ধি আবশ্যিক৷ জাতীয় উত্‍পাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সরকারের আয়ও বাড়ে, আর এই বর্ধিত আয় থেকে সরকার জনগণের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং অন্যান্য অবশ্যপ্রয়োজনীয় বিষয়ে খরচা করতে পারে৷ 'করতে পারে' মানে যে 'করবেই' এমনটা অবশ্য বলা যায় না৷ এখানেই সম্ভবত তাঁরা ভিন্নমত৷ ভগবতী বলেন, আর্থনীতিক বৃদ্ধির সঙ্গে যা যা সুফল দেখতে পাওয়ার কথা সংস্কার-পরবর্তী ভারতবর্ষে, তা হয়েছে৷ দারিদ্র্য কমেছে, স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় উন্নতি হয়েছে৷ যতটা উন্নতি হওয়ার কথা তা যদি না হয়ে থাকে তার কারণ সংস্কারের রথ তেমন ছুটছে না৷ আরও উন্নতি চাইলে আরও সংস্কার চাই৷ সেন বলেন, বৃদ্ধি তো হল অনেক- প্রায় আড়াই দশক ধরে ছয়-সাত শতাংশ হারে৷ তবু মানুষের ন্যূনতম চাহিদাটুকু মিটল কই? দেশবাসীর অর্ধেকের জন্যে শৌচালয়ই নেই৷ স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয় মোট জাতীয় উত্‍পাদনের দুই শতাংশেরও কম৷ বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই এর থেকে বেশি৷ সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যয়বৃদ্ধির পক্ষে সওয়ালকেই ভগবতী খানিক মুচড়িয়ে তাঁর আক্রমণ শানান৷ বলেন, অমর্ত্য সেন ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দিতে চান৷ আগে বৃদ্ধি না আগে সরকারি ব্যয়বৃদ্ধি? 

বৃদ্ধির লক্ষ্য আর পুনর্বণ্টনের মধ্যে যে সর্বদা বিরোধের সম্পর্কই দেখা যায় তা কিন্ত্ত নয়৷ ভূমিসংস্কার করে জমির পুনর্বণ্টন হলে যে মোট কৃষি উত্‍পাদন বেড়ে যেতে পারে তা অনেক দিন আগে থেকেই জানা আছে৷ গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে গবেষণায় দেখা গিয়েছে ছোটো জোতের উত্‍পাদনশীলতা বড়ো জোতের থেকে বেশি৷ পরবর্তী কালে শিক্ষা বা মানবপুঁজি নিয়ে গবেষণায়ও দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির বৃদ্ধির হারকে অনেকটাই মানবপুঁজি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে৷ অর্থাত্‍ সরকার যদি শিক্ষাপ্রসারে ব্যয় করে, তার ফলে আর্থনীতিক বৃদ্ধির হার বাড়তে পারে৷ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির অভিজ্ঞতায় এর প্রমাণ রয়েছে৷ ভগবতীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা যায় যে তিনি এ দিকটায় একেবারেই গুরুত্ব দিতে চান না৷ 

অর্থনীতির আলোচনায় ব্যক্তিবিশেষের বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়ার যে সংস্কৃতি আমাদের সমাজে চালু আছে তা যতটুকু হলে স্বাস্থ্যকর বলা যায় তা থেকে যেন বেশিই ছাড়িয়ে গিয়েছে৷ জ্ঞানচর্চায় আপ্তবাক্যের স্থান নেই৷ ভগবতী কিংবা সেন যখন তাঁদের গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন তা কিন্ত্ত একটি সামাজিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যায়৷ তাঁদের ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ সেমিনার-কনফারেন্সে সহকর্মীদের ফেলা সার্চলাইটের মধ্যে দিয়ে ক্রমশ সামাজিক চেহারা পায়৷ তাঁদের বক্তব্য যখন গণপরিসরে এসে পড়ে তখনও তেমনই সামাজিক প্রক্রিয়া আমরা আশা করতে পারি৷ যা জাজমেন্টাল নয়, অ্যানালিটিকাল৷ 

লেখক ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, কলকাতা-র অধিকর্তা 

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...