Sanjay Joshi interviewed on Cinema of Resistance
সর্বত্র এই উত্সব ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে৷ দেশের ছোটো শহরে, গ্রামে, শিল্পাঞ্চলে৷ জানালেন সঞ্জয় যোশী৷ আলাপে সৌমিত্র দস্তিদার
সৌমিত্র দস্তিদার: আপনি তো অন্য ধারার ছবি নির্মাতাদের কাছে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি৷ মূল ধারার বাইরে গিয়ে তাদের ছবি বিপণন ও প্রদর্শনের এক বিকল্প পরিসর তৈরি করে দিয়েছেন৷
সঞ্জয় যোশী: এ ভাবে বলবেন না৷ এটা একটা সম্মিলিত প্রয়াস৷ অনেকে মিলে এই ভাবনাটা ভেবেছি ও সবাই মিলে কাজটা একটু একটু করে করার চেষ্টা করি৷ তবে যতটা ভাবি, তার সিকিও এখনও করে উঠতে পারিনি৷
এই ভাবনা বা প্রেরণা কী ভাবে পেলেন?
আমি অনেক দিন ধরেই জনসংস্কৃতি মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত৷ সক্রিয় কর্মী৷ ওই সংগঠনটি ভাকপা মালে অর্থাত্ সি পি আই এম এল লিবারেশন-এর সাংস্কৃতিক সংগঠন৷ ২০০৫-এ এলাহাবাদে এক সম্মেলনে যাই৷ সেখানে সংস্কৃতির বিভিন্ন মাধ্যম নিয়েই কথাবার্তা হচ্ছিল৷ আমার ভাবনায় ছিল নতুন প্রজন্মকে টানতে সিনেমা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম৷ জনসংস্কৃতি নেতৃত্বকে বিষয়টি বোঝাই৷ তারাও খুব উত্সাহী হন৷ ওই সময় থেকেই সিনেমা অফ রেজিস্টান্স-এর জন্ম৷
তা হলে কী এটা বলা যায় যে আপনাদের সংগঠনও লিবারেশনেরই শাখা সংগঠন?
না, তা একেবারেই নয়৷ বরং বলতে পারেন জনসংস্কৃতি মঞ্চের সঙ্গে আমাদের যোগ আছে৷ তা সে তো গণসংগঠন৷ নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমাদের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই৷ আমাদের সঙ্গে তো প্রচুর তথ্যচিত্র নির্মাতা বা অন্য ধারার পরিচালক যাদের অনেকে লিবারেশনের রাজনীতির সমর্থন করেন না, তারাও তো আছেন৷ নব্বই দশকের যে নয়া উদারবাদী অর্থনীতি এ দেশে জন্ম নিয়েছে, তার প্রভাবে দেশে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য প্রকট হচ্ছে৷ কৃষি শিল্পে সঙ্কট তীব্র হচ্ছে৷ জল, জঙ্গল, জমিন থেকে আদিবাসী জনজাতির লোকে উচ্ছেদ হচ্ছে৷ পাশাপাশি সারা ভারতে প্রতিরোধ আন্দোলনও জোরালো হচ্ছে৷ এই প্রতিরোধী ভারত যাদের ক্যামেরায় ধরা দিচ্ছে আমরা তাদের পাশে আছি৷ থাকবও৷
আপনাদের মূল কৃতিত্ব কি অন্য ধারার ফিল্মমেকারদের বিপণন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা?
দেখুন, সেই কাজটা কিন্ত্ত অন্য দু'একটা সংগঠনও করছে৷ দিল্লির ম্যাজিক ল্যান্টার্ন, কৃতী আরও কেউ কেউ আছে- যারা ডিভিডি বিক্রি বা স্ক্রিনিং-এরও ব্যবস্থা করে দেয়৷ আমরা কিন্ত্ত সেখানেই থেমে নেই৷ যেহেতু আমরা গণ-আন্দোলনকে বিকশিত করতে সিনেমাকে ব্যবহার করছি তাই শুধু বছরে একটা উত্সব বা নির্দিষ্ট কিছু ডি ভি ডি বিক্রি না করে আমরা লাতিন আমেরিকান অন্য ধারার সিনেমা পরিচালক ফ্রান্সিস বিররি যেমন বলতেন 'অ্যাকটিভ সিনেমার জন্যে চাই অ্যাকটিভ দর্শক'৷ আমরা এই ক'বছরে দেশের বিভিন্ন শহরে সে রকম দর্শকও অল্প হলেও তৈরি করতে পেরেছি৷ সিনেমা অফ রেজিস্ট্যান্স-এর সেটাই সবচেয়ে বড়ো কৃতিত্ব৷
এ কথাটা অবশ্য আমাদের বন্ধু সঞ্জয় কাকও বলেছেন, যে যোশীরা এমন সব জায়গায় সিনেমাকে নিয়ে গিয়েছে যেখানে সে অর্থে ভালো সংস্কৃতির কোনও পরিসরই ছিল না৷ সঞ্জয় এ-ও বলেছে যে ছোটো ছোটো শহরে ওই উত্সব যখন হয় তখন সত্যি সত্যি গোটা এলাকা কোন জাদুমন্ত্রে যেন জেগে ওঠে৷ দূরদূরান্ত থেকে লোকে সিনেমা দেখতে আসে৷ ডিভিডি কেনে, সব মিলিয়ে মেলা মেলা পরিবেশ৷ জনগণের উত্সব৷ তাই?
একশো ভাগ সত্যি৷ দু'হাজার ছয় থেকে উত্সব করছি৷ এখন চোদ্দ সাল৷ এই ন'বছরে কোথায় না কোথায় পৌঁছেছি৷ গোরখপুর, ভিলাই, আজমগড়, বেরিলি, নৈনিতাল, বালিয়া, লখনৌ, উদয়পুর, এলাহাবাদ৷ এক গোরখপুরেই জনগণের দাবিতে দু'দুবার উত্সব করেছি৷ প্রথম বারের অভিজ্ঞতা এখনও মনে আছে৷ গো-বলয়ের ও সব জায়গা সবাই জানেন দক্ষিণপন্থী৷ নব্য হিন্দুত্ববাদীদের শক্ত ঘাঁটি৷ ছবি দেখাবার জায়গাই পাওয়া কঠিন৷ আমাদের কর্মীরাও চিন্তায় ছিলেন কাজটা করা যাবে কি না৷ হিন্দু যুব ব্রিগেড হুমকিও দিয়ে রেখেছিল- এখানে এ সব চলবে না৷ কিন্ত্ত আমরা সাহস করে দেখিয়ে ছিলাম- জনগণ সঙ্গে থাকলে সব কিছুই সম্ভব৷ শতধারা নামে একটি সংগঠন তথ্যচিত্রের উত্সব করছে যাদবপুরের ইন্দুমতী সভাঘরে৷
এত এত উত্সবে আপনারা টাকা পান কী ভাবে?
এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন৷ আমরা কখনও কোনও কর্পোরেট স্পনসরশিপ নিই না৷ আক্ষরিক অর্থে জনগণের উত্সব করি জনগণের কাছ থেকে চাঁদা তুলে৷ আমাদের কর্মীরা জানে অনেক জায়গায় বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা মোটা টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়েছে, আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি৷ মনে আছে, আজমগড়ে কী ভাবে উত্সব করব ভাবছি, সেখানকার ধর্মনিরপেক্ষ নামী ডাক্তাররা সব শুনে বললেন আমরা আছি তোমরা এগিয়ে যাও৷ ভালো সংস্কৃতির চর্চা হলে আমাদের শহরের সুনাম বাড়বে৷ মিডিয়ার দৌলতে কাইফি আজমির শহরকে এখন লোকে জানে ডাকাতদের, স্মাগলারদের জায়গা বলে৷ কতটা সুনাম ফেরাতে পেরেছি জানি না কিন্ত্ত প্রগতির সঙ্গে সামান্য হলেও একটা হাওয়া তুলতে পেরেছি৷
কাইফি আজমির কথায় মনে পড়ে গেল আপনারা তো সিনেমার পাশাপাশি কবিতাকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছেন৷
আমরা আই পি টি-এর সোনার যুগের মতো শিল্পসাহিত্যের সব প্রগতিশীল ধারাকেই সমান প্রয়োজনীয় মনে করি৷ সিনেমা অফ রেজিস্ট্যান্স আসলে ম্যাকডোনাল্ডাইজেশন ও দক্ষিণপন্থী সংস্কৃতির বিপরীতে জনগণের শ্রমজীবীর সংস্কৃতির পাশে৷ যা উন্নত সমাজ নির্মাণে ভূমিকা নেয়৷ আমরা সিনেমা উত্সবের সঙ্গেই ছোটো ছোটো চারটে বইও বের করেছি৷ তার দুটো সিনেমা নিয়ে৷ অন্য দু'টি কবিতার৷ আরও কিছু লেখা, গদ্য পদ্য প্রবন্ধও আগামী দিনে করার ইচ্ছে আছে৷ কিছু কাজও এগিয়েছে৷
আপনারা শুনেছি ছোটো শহরের পাশাপাশি গ্রাম ও শিল্প এলাকাতেও ছবি দেখান?
নিশ্চয়৷ উত্তর ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামে আমরা এম এস সথ্যুর 'গর্ম হাওয়া' দেখিয়েছি৷ মারুতি শ্রমিকদের ধর্মঘটের সময় আমরা প্রতিরোধের সিনেমা নিয়ে সঙ্গে থেকেছি৷
এ বার কলকাতার পিপলস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল নিয়ে কিছু বলুন৷
কলকাতায় এই পিপলস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল কনসেপ্টটাই নতুন৷
একটু থামাচ্ছি৷ তার কারণ কনসেপ্টটা এ শহরেও ঠিক নতুন নয়৷ ডকুমেন্টারিওয়ালা বলে একটা সংগঠন এর আগে দু'হাজার ছয় সাত আটে রাজাবাজার, পার্ক সার্কাস বস্তি ও ময়দানে খোলা মাঠে পর্দা টাঙিয়ে অন্য ধারার সিনেমার উত্সব করেছে৷ তবে তা শুধুই ডকুমেন্টারি৷ এ ছাড়া লীলা মোচ্ছব ও আলতামিরাও কিন্ত্ত আপনাদের কাজটাই নীরবে করছে গত এক দেড় বছর ধরে৷ ডকুমেন্টারিওয়ালা এ বছরও ২৯ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি ত্রিকোণ পার্কে পর্দা টাঙিয়ে যৌনকর্মীদের সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির উত্সব- প্রতিবাদে নারী প্রতিরোধে নারী, রোজ এক ঘণ্টা ধরে বিকল্প ধারার তথ্যচিত্র দেখাচ্ছে৷ বোধ হয় এগুলো আপনার ঠিক জানা নেই৷
ঠিকই৷ এত সব তথ্য আমাকে কেউ জানায়নি৷ তবে আমরা ২০, ২১, ২২ জানুয়ারি যাদবপুরে ত্রিগুণা সেন ভবনে যে উত্সব করেছি সকাল দশটা থেকে রাত ন'টা অবধি সেখানে তথ্যচিত্র, অন্য ধারার সিনেমার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে গণআন্দোলন নিয়ে সিরিয়াস সেমিনারও হয়েছে৷ উদ্বোধন করেছেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এখানে পুরনো ক্লাসিকও দেখানো হয়েছে৷ আবার সাম্প্রতিক বিষয় নিয়েও একদম নতুন ছবিও রাখা হয়েছিল৷ রঞ্জন পালিত, বসুধা যোশীর ভয়েসেস ফ্রম বালিয়াপাল, শ্রীপ্রকাশ, মঞ্জিরা দত্ত, বিরজু টোপ্পোর ফিল্মের সঙ্গে সঞ্জয় কাক, মারুতি শ্রমিকদের সংগ্রাম ও সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মুজফফরপুর গণহত্যা নিয়ে তৈরি নকুল সিং সোনির ডকুমেন্টারি, পস্কো কৃষক সংগ্রাম নিয়ে সূর্যশঙ্কর দাসের তথ্যচিত্রও দেখানো হয়েছে৷ আর একটা কথা৷ এই পিপলস ফেস্টিভ্যাল উত্সর্গ করা হয়েছিল বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিনের জন্ম শতবর্ষে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে৷
কলকাতায় বাজেট কত?
খুব বেশি হলে পঁচানব্বই হাজার থেকে এক লাখ৷ সবই কিন্ত্ত সেই জনগণের কাছ থেকে চাঁদা তুলে৷
সঞ্জয় যোশী চলচ্চিত্রনির্মাতা ও বিকল্প চলচ্চিত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী
সৌমিত্র দস্তিদার: আপনি তো অন্য ধারার ছবি নির্মাতাদের কাছে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি৷ মূল ধারার বাইরে গিয়ে তাদের ছবি বিপণন ও প্রদর্শনের এক বিকল্প পরিসর তৈরি করে দিয়েছেন৷
সঞ্জয় যোশী: এ ভাবে বলবেন না৷ এটা একটা সম্মিলিত প্রয়াস৷ অনেকে মিলে এই ভাবনাটা ভেবেছি ও সবাই মিলে কাজটা একটু একটু করে করার চেষ্টা করি৷ তবে যতটা ভাবি, তার সিকিও এখনও করে উঠতে পারিনি৷
এই ভাবনা বা প্রেরণা কী ভাবে পেলেন?
আমি অনেক দিন ধরেই জনসংস্কৃতি মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত৷ সক্রিয় কর্মী৷ ওই সংগঠনটি ভাকপা মালে অর্থাত্ সি পি আই এম এল লিবারেশন-এর সাংস্কৃতিক সংগঠন৷ ২০০৫-এ এলাহাবাদে এক সম্মেলনে যাই৷ সেখানে সংস্কৃতির বিভিন্ন মাধ্যম নিয়েই কথাবার্তা হচ্ছিল৷ আমার ভাবনায় ছিল নতুন প্রজন্মকে টানতে সিনেমা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম৷ জনসংস্কৃতি নেতৃত্বকে বিষয়টি বোঝাই৷ তারাও খুব উত্সাহী হন৷ ওই সময় থেকেই সিনেমা অফ রেজিস্টান্স-এর জন্ম৷
তা হলে কী এটা বলা যায় যে আপনাদের সংগঠনও লিবারেশনেরই শাখা সংগঠন?
না, তা একেবারেই নয়৷ বরং বলতে পারেন জনসংস্কৃতি মঞ্চের সঙ্গে আমাদের যোগ আছে৷ তা সে তো গণসংগঠন৷ নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমাদের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই৷ আমাদের সঙ্গে তো প্রচুর তথ্যচিত্র নির্মাতা বা অন্য ধারার পরিচালক যাদের অনেকে লিবারেশনের রাজনীতির সমর্থন করেন না, তারাও তো আছেন৷ নব্বই দশকের যে নয়া উদারবাদী অর্থনীতি এ দেশে জন্ম নিয়েছে, তার প্রভাবে দেশে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য প্রকট হচ্ছে৷ কৃষি শিল্পে সঙ্কট তীব্র হচ্ছে৷ জল, জঙ্গল, জমিন থেকে আদিবাসী জনজাতির লোকে উচ্ছেদ হচ্ছে৷ পাশাপাশি সারা ভারতে প্রতিরোধ আন্দোলনও জোরালো হচ্ছে৷ এই প্রতিরোধী ভারত যাদের ক্যামেরায় ধরা দিচ্ছে আমরা তাদের পাশে আছি৷ থাকবও৷
আপনাদের মূল কৃতিত্ব কি অন্য ধারার ফিল্মমেকারদের বিপণন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা?
দেখুন, সেই কাজটা কিন্ত্ত অন্য দু'একটা সংগঠনও করছে৷ দিল্লির ম্যাজিক ল্যান্টার্ন, কৃতী আরও কেউ কেউ আছে- যারা ডিভিডি বিক্রি বা স্ক্রিনিং-এরও ব্যবস্থা করে দেয়৷ আমরা কিন্ত্ত সেখানেই থেমে নেই৷ যেহেতু আমরা গণ-আন্দোলনকে বিকশিত করতে সিনেমাকে ব্যবহার করছি তাই শুধু বছরে একটা উত্সব বা নির্দিষ্ট কিছু ডি ভি ডি বিক্রি না করে আমরা লাতিন আমেরিকান অন্য ধারার সিনেমা পরিচালক ফ্রান্সিস বিররি যেমন বলতেন 'অ্যাকটিভ সিনেমার জন্যে চাই অ্যাকটিভ দর্শক'৷ আমরা এই ক'বছরে দেশের বিভিন্ন শহরে সে রকম দর্শকও অল্প হলেও তৈরি করতে পেরেছি৷ সিনেমা অফ রেজিস্ট্যান্স-এর সেটাই সবচেয়ে বড়ো কৃতিত্ব৷
এ কথাটা অবশ্য আমাদের বন্ধু সঞ্জয় কাকও বলেছেন, যে যোশীরা এমন সব জায়গায় সিনেমাকে নিয়ে গিয়েছে যেখানে সে অর্থে ভালো সংস্কৃতির কোনও পরিসরই ছিল না৷ সঞ্জয় এ-ও বলেছে যে ছোটো ছোটো শহরে ওই উত্সব যখন হয় তখন সত্যি সত্যি গোটা এলাকা কোন জাদুমন্ত্রে যেন জেগে ওঠে৷ দূরদূরান্ত থেকে লোকে সিনেমা দেখতে আসে৷ ডিভিডি কেনে, সব মিলিয়ে মেলা মেলা পরিবেশ৷ জনগণের উত্সব৷ তাই?
একশো ভাগ সত্যি৷ দু'হাজার ছয় থেকে উত্সব করছি৷ এখন চোদ্দ সাল৷ এই ন'বছরে কোথায় না কোথায় পৌঁছেছি৷ গোরখপুর, ভিলাই, আজমগড়, বেরিলি, নৈনিতাল, বালিয়া, লখনৌ, উদয়পুর, এলাহাবাদ৷ এক গোরখপুরেই জনগণের দাবিতে দু'দুবার উত্সব করেছি৷ প্রথম বারের অভিজ্ঞতা এখনও মনে আছে৷ গো-বলয়ের ও সব জায়গা সবাই জানেন দক্ষিণপন্থী৷ নব্য হিন্দুত্ববাদীদের শক্ত ঘাঁটি৷ ছবি দেখাবার জায়গাই পাওয়া কঠিন৷ আমাদের কর্মীরাও চিন্তায় ছিলেন কাজটা করা যাবে কি না৷ হিন্দু যুব ব্রিগেড হুমকিও দিয়ে রেখেছিল- এখানে এ সব চলবে না৷ কিন্ত্ত আমরা সাহস করে দেখিয়ে ছিলাম- জনগণ সঙ্গে থাকলে সব কিছুই সম্ভব৷ শতধারা নামে একটি সংগঠন তথ্যচিত্রের উত্সব করছে যাদবপুরের ইন্দুমতী সভাঘরে৷
এত এত উত্সবে আপনারা টাকা পান কী ভাবে?
এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন৷ আমরা কখনও কোনও কর্পোরেট স্পনসরশিপ নিই না৷ আক্ষরিক অর্থে জনগণের উত্সব করি জনগণের কাছ থেকে চাঁদা তুলে৷ আমাদের কর্মীরা জানে অনেক জায়গায় বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা মোটা টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়েছে, আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি৷ মনে আছে, আজমগড়ে কী ভাবে উত্সব করব ভাবছি, সেখানকার ধর্মনিরপেক্ষ নামী ডাক্তাররা সব শুনে বললেন আমরা আছি তোমরা এগিয়ে যাও৷ ভালো সংস্কৃতির চর্চা হলে আমাদের শহরের সুনাম বাড়বে৷ মিডিয়ার দৌলতে কাইফি আজমির শহরকে এখন লোকে জানে ডাকাতদের, স্মাগলারদের জায়গা বলে৷ কতটা সুনাম ফেরাতে পেরেছি জানি না কিন্ত্ত প্রগতির সঙ্গে সামান্য হলেও একটা হাওয়া তুলতে পেরেছি৷
কাইফি আজমির কথায় মনে পড়ে গেল আপনারা তো সিনেমার পাশাপাশি কবিতাকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছেন৷
আমরা আই পি টি-এর সোনার যুগের মতো শিল্পসাহিত্যের সব প্রগতিশীল ধারাকেই সমান প্রয়োজনীয় মনে করি৷ সিনেমা অফ রেজিস্ট্যান্স আসলে ম্যাকডোনাল্ডাইজেশন ও দক্ষিণপন্থী সংস্কৃতির বিপরীতে জনগণের শ্রমজীবীর সংস্কৃতির পাশে৷ যা উন্নত সমাজ নির্মাণে ভূমিকা নেয়৷ আমরা সিনেমা উত্সবের সঙ্গেই ছোটো ছোটো চারটে বইও বের করেছি৷ তার দুটো সিনেমা নিয়ে৷ অন্য দু'টি কবিতার৷ আরও কিছু লেখা, গদ্য পদ্য প্রবন্ধও আগামী দিনে করার ইচ্ছে আছে৷ কিছু কাজও এগিয়েছে৷
আপনারা শুনেছি ছোটো শহরের পাশাপাশি গ্রাম ও শিল্প এলাকাতেও ছবি দেখান?
নিশ্চয়৷ উত্তর ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামে আমরা এম এস সথ্যুর 'গর্ম হাওয়া' দেখিয়েছি৷ মারুতি শ্রমিকদের ধর্মঘটের সময় আমরা প্রতিরোধের সিনেমা নিয়ে সঙ্গে থেকেছি৷
এ বার কলকাতার পিপলস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল নিয়ে কিছু বলুন৷
কলকাতায় এই পিপলস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল কনসেপ্টটাই নতুন৷
একটু থামাচ্ছি৷ তার কারণ কনসেপ্টটা এ শহরেও ঠিক নতুন নয়৷ ডকুমেন্টারিওয়ালা বলে একটা সংগঠন এর আগে দু'হাজার ছয় সাত আটে রাজাবাজার, পার্ক সার্কাস বস্তি ও ময়দানে খোলা মাঠে পর্দা টাঙিয়ে অন্য ধারার সিনেমার উত্সব করেছে৷ তবে তা শুধুই ডকুমেন্টারি৷ এ ছাড়া লীলা মোচ্ছব ও আলতামিরাও কিন্ত্ত আপনাদের কাজটাই নীরবে করছে গত এক দেড় বছর ধরে৷ ডকুমেন্টারিওয়ালা এ বছরও ২৯ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি ত্রিকোণ পার্কে পর্দা টাঙিয়ে যৌনকর্মীদের সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির উত্সব- প্রতিবাদে নারী প্রতিরোধে নারী, রোজ এক ঘণ্টা ধরে বিকল্প ধারার তথ্যচিত্র দেখাচ্ছে৷ বোধ হয় এগুলো আপনার ঠিক জানা নেই৷
ঠিকই৷ এত সব তথ্য আমাকে কেউ জানায়নি৷ তবে আমরা ২০, ২১, ২২ জানুয়ারি যাদবপুরে ত্রিগুণা সেন ভবনে যে উত্সব করেছি সকাল দশটা থেকে রাত ন'টা অবধি সেখানে তথ্যচিত্র, অন্য ধারার সিনেমার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে গণআন্দোলন নিয়ে সিরিয়াস সেমিনারও হয়েছে৷ উদ্বোধন করেছেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এখানে পুরনো ক্লাসিকও দেখানো হয়েছে৷ আবার সাম্প্রতিক বিষয় নিয়েও একদম নতুন ছবিও রাখা হয়েছিল৷ রঞ্জন পালিত, বসুধা যোশীর ভয়েসেস ফ্রম বালিয়াপাল, শ্রীপ্রকাশ, মঞ্জিরা দত্ত, বিরজু টোপ্পোর ফিল্মের সঙ্গে সঞ্জয় কাক, মারুতি শ্রমিকদের সংগ্রাম ও সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মুজফফরপুর গণহত্যা নিয়ে তৈরি নকুল সিং সোনির ডকুমেন্টারি, পস্কো কৃষক সংগ্রাম নিয়ে সূর্যশঙ্কর দাসের তথ্যচিত্রও দেখানো হয়েছে৷ আর একটা কথা৷ এই পিপলস ফেস্টিভ্যাল উত্সর্গ করা হয়েছিল বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিনের জন্ম শতবর্ষে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে৷
কলকাতায় বাজেট কত?
খুব বেশি হলে পঁচানব্বই হাজার থেকে এক লাখ৷ সবই কিন্ত্ত সেই জনগণের কাছ থেকে চাঁদা তুলে৷
সঞ্জয় যোশী চলচ্চিত্রনির্মাতা ও বিকল্প চলচ্চিত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী
No comments:
Post a Comment